Blog

  • কলকাতায় গোপন কার্যালয় খুলেছে আ’লীগ

    কলকাতায় গোপন কার্যালয় খুলেছে আ’লীগ

    বিবিসি বাংলার অনুসন্ধান

    কলকাতা লাগোয়া উপনগরীটাতে শয়ে শয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রাত-দিন লাখ লাখ মানুষের ভিড় সেখানে। ব্যস্ত এই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে এমন কয়েকজন যাতায়াত করছেন, যাদের কয়েক মাস আগেও সেখানে দেখা যেত না। ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করেন, এমন বেশিরভাগই চেনেন না এই নবাগতদের, চেনার কথাও নয়।

    তবে এদের অনেকেই মাত্র এক বছর আগেও বাংলাদেশের সবথেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতা।

    তারা যে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াত করছেন কয়েক মাস ধরে, সেখানেই ‘দলীয় দফতর’ খুলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  এই ‘পার্টি অফিস’টি নতুন।

    এর আগে, ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা ভারতে অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দফতরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই

    বড় বৈঠকগুলি অবশ্য করতে হত কোনো রেস্তরা বা ব্যাঙ্কয়েট হল ভাড়া করে। সেকারণেই একটা নির্দিষ্ট ‘পার্টি অফিস’এর দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

    কীরকম সেই ‘পার্টি অফিস’?

    বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সার দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থার দফতর। করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তারমধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। শুধু বাইরে কেন, পাঁচশো বা ছয়শো স্কোয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে।

    কোনো সাইন বোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে।

    “বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখি নি খুবই সচেতন ভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দফতরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি,” বলছিলেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা।

    তিনিই জানালেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দফতরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলি, যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

    কারা যাতায়াত করেন ‘পার্টি অফিসে’?

    গত বছরের পাঁচই অগাস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলির অনেক শীর্ষ নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

    এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলি জানিয়েছিল যে অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র সহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় দুশো জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।

    এদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান।

    “এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশী বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০-১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যারা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন,” বলছিলেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।

    সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশেপাশেই।

    কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই ‘পার্টি অফিসে’ যাতায়াত করে থাকেন।

    “তবে অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেরকম প্রয়োজন, সেরকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তাও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস,” জানাচ্ছিলেন ওই নেতা।

    আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দফতরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

    দলেরও কোন স্তরের নেতা-কর্মীরা এই দফতরের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায় নি।

    কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দফতরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দফতর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।

    যেভাবে দল চলছে এক বছর ধরে

    গত একবছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন, আর বড় অংশ থাকেন কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে।

    তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্র লীগের সভাপতি সাদ্দাম হুসেইন বলছিলেন, “এই ধারণাটা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। মূল দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর কতজন নেতা-ই বা ভারত অথবা অন্যান্য দেশে রয়েছেন? বেশিরভাগ তো এখনও বাংলাদেশেই আছেন।”

    কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে আছেন বলে সেখান থেকেই যে রাজনৈতিক দিশা-নির্দেশ দেওয়া বা দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

    তবুও দু সপ্তাহ আগে পর্যন্তও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয় নি দল-নেত্রীর।

    গত ৩১শে জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা।

    আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন, তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।

    দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীরে দেখা সাক্ষাৎ এবং বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

    বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এরকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও।

    সেসব আলোচনাগুলিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী – যারা বাংলাদেশেই থেকে গেছেন, তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে।

    প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারছি, তাদের মতামত জানতে পারছি, কী করণীয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারছি।

    “এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের। কোনো একটা ব্যবস্থা বদলানোতে এই তরুণ প্রজন্মের বড় ভূমিকা থাকে। আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের কাছেই পৌঁছানোর চেষ্টা করছি,” বলছিলেন মি. দেবনাথ।

    ‘কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?’

    সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাঝে মাঝেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেফতার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছেন।

    “এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হল, ১৯৭১ এ যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হত? আমি ৭১-এর সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এরকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনও করছেন,” বলছিলেন প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।

    তার প্রশ্ন, “দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হত, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম – বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা – সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?”

    নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র লীগের সভাপতিও ভারতে

    বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র লীগের সভাপতি সাদ্দাম হুসেইন ভারতে অবস্থান করছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে।

    তিনি বলছিলেন, “গত একবছর ধরে ক্যাম্পাসটা খুব মিস করি। দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম তা নয়।

    “হাজার হাজার ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক তারা তো দেশে থেকেও ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না একবছর ধরে। তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হয় না, তারা পরীক্ষা দিতে পারেন না, পাশ করলেও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। এদের সবার শিক্ষাক্রমটাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে,” বলছিলেন মি. হোসেইন।

    “এটা যে শুধু ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে তা নয়। আওয়ামী লীগ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও এই একই ঘটনা হচ্ছে। শুধু যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তাও নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারে নি বহু ছাত্রছাত্রী – শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে,” বলছিলেন সাদ্দাম হোসেইন।

    অর্থায়ন কী ভাবে হচ্ছে?

    ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় প্রচার প্রচারণার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না ঠিকই, কিন্তু খরচ তো আছে।

    আবার যেসব নেতা কর্মীরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যক্তিগত খরচও চালাতে হয়। কীভাবে সেসবের জন্য অর্থের সংস্থান হচ্ছে?

    আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেছেন, দেশে,বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্খীরাই তাদের খরচ চালাচ্ছেন।

    দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের কথায়, “সাংগঠনিক ভাবে অগাস্টের পরে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই অন্ধকার অতিক্রম করা কঠিন কাজ। যেসব নেতা-কর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তারাই এই দু:সময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।”

    আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন, দেশ থেকে তার পরিবার-পরিজন এবং সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেন।

    “তবে এই একবছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে,” বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ।

    তার কথায়, “আমরা যে এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছি, বা ৭১-এর যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থী শিবিরে থাকছি তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যারা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের এখন কলকাতার গণ-পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।

    “যেমন আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়,” বলছিলেন মি. দেবনাথ।

    কিন্তু কতদিন থাকবেন তারা দেশ ছেড়ে?

    ওবায়েদুল কাদের বলছেন, “দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।”

     

    সৌজন্য : বিবিসি বাংলা

  • এইচটিআই এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন

    এইচটিআই এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন

    পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে রাজশাহী মহানগরীতে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের চারা বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন এইচটিআই (হ্যান্ডস টুগেদার ইনিশিয়েটিভস) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
    বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১১:০০টায় রাজশাহী শহরের সিএন্ডবি মোড় সংলগ্ন পলিমাটি চত্ত্বরে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ, রাজশাহী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুঃ রেজা হাসান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ, রাজশাহী’র সহকারী প্রকৌশলী এ,কে,এম আনোয়ার হোসেন এবং এইচটিআই এর উপদেষ্টা উপ প্রকৌশলী আলিফ মাহমুদ।
    এইচটিআই এর সভাপতি ও রেজিস্টার্ড নার্স, বিএনএমসি মো: নাহিদ হোসেন, নার্সিং শিক্ষার্থী মাহিম, ফারিয়া, সুরাইয়া, কোহিনুর,  সুমাইয়া, ঐশি, আশিক, ওমিও, সৈকত ও সাইফ এর সার্বিক সহযোগিতায় আম, আমড়া, জলপাই, কাঁঠাল, চালতা, পেয়ারা, মেহগনি ও অর্জুন গাছসহ ২৫০ টি বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি গাছ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হয়।
  • বৈকারি  ইউনিয়নে আসক ও স্বদেশ সংস্থার উদ্যোগে মানবাধিকার বিষয়ক সিভিক কমিটি গঠন।

    বৈকারি  ইউনিয়নে আসক ও স্বদেশ সংস্থার উদ্যোগে মানবাধিকার বিষয়ক সিভিক কমিটি গঠন।

    ৬ আগষ্ট বুধবার ২০২৫ স্বদেশ-সাতক্ষীরায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত ”জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের নারী পুরুষ এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা- নাগরিকতা প্রকল্পটি দাতা সংস্থা এম্বাসি অব সুইজারল্যান্ড ও গ্লোবাল এফেয়ার্স ক্যানাডা এর অর্থায়নে মানবাধিকার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী পুরুষ ও অন্যান্য প্রান্তিক জণগোষ্ঠিকে ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এরই অংশ হিসাবে আজ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী  ইউনিয়নে  মানবাধিকার  সংরক্ষন পরিষদের আহবায়ক সোঃ হাবিবুর রহমান এবং শারসিন সুলতানাকে মানবাধিকার নারী পরিষদের আহবায়ক করে ১২ জন করে মোট ২৪ জনের ২টি কমিটি গঠন করা হয়। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যয়ে এম.এন.পি ও এম.এস.পি স্থানীয় ভাবে জেন্ডার সমতা ও নারীর অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে যৌন হয়রানি (শারীরিক, মৌখিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সাইবার) এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য কাজ করবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আইন ও মানবাধিকার  লঙ্ঘন  প্রতিরোধ ও  এ বিষয় নিয়ে সচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে সকলের সামাজিক দায়বদ্ধতার মনোভাবকে প্রসারিত করার জন্য কাজ করবে। এছাড়াও মানবাধিকার সুরক্ষা-পরিবেশকে বিস্তৃতি ও অক্ষুন্ন রাখার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন অংশীজনকে সম্পৃক্ত করবে। এসময় উপস্থিত থেকে সহায়কের ভুমিকা পালন করেন নাগরিকতা প্রকল্পের প্রগ্রাম অফিসার মোঃ আজহারুল ইসলাম ও প্যারালিগ্যাল  শরিফুল ইসলাম।

  • শ্যামনগরে স্মার্ট হসপিটালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, বেসরকারি ক্লিনিক ও হোটেলে জরিমানা

    শ্যামনগরে স্মার্ট হসপিটালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, বেসরকারি ক্লিনিক ও হোটেলে জরিমানা

    সাতক্ষীরার শ্যামনগরে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ও মান নিশ্চিত করতে স্মার্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ হোসাইন। এ সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতে অভিযানে সহায়তা করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
    অভিযানকালে স্মার্ট হসপিটালের বিভিন্ন লাইসেন্স, অনুমোদনপত্র, চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত নথিপত্র ও কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হয়। একইসঙ্গে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মান পর্যবেক্ষণ করেন কর্মকর্তারা। সঠিক কাগজপত্র ও যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
    শুধু স্মার্ট হসপিটাল নয়, এদিন উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক, ওষুধের দোকান, খাবার হোটেল ও বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করা হয়।
    শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ‘মায়ের দোয়া হোটেল’ ও ‘বাংলালিংক হোটেল’কে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার পরিবেশনের দায়ে সতর্কতামূলকভাবে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বাজারের কয়েকটি খাবার হোটেলকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিন দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
    এ সময় অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
    অভিযানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে জনস্বাস্থ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা সেবার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান তুলে ধরা হয়।
  • সাতক্ষীরায় কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার: জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব

    সাতক্ষীরায় কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার: জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব

    সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিতে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ) পরিচালিত এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
    শ্যামনগরের ১৪টি গ্রামের ৩১ জন কৃষকের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল বুধবার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় শ্যামনগর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উপস্থাপন করেন বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন বারসিকের উপকূলীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।
    গবেষণায় দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা ধান ও সবজি চাষে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছেন, যার মধ্যে অনেক সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ও মারাত্মক বিষাক্ত পণ্যও রয়েছে। এসাটপ, ক্যারাটে, ডেল এক্সপার্ট, ফার্মকট, জোয়াস, কনজাপ্লাস, মিমটক্স, মর্টারসহ বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক সরাসরি ফসলে প্রয়োগ করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকরাই এসব স্প্রে করছেন এবং তারা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নন।
    ফলে অনেক কৃষক দীর্ঘদিন ধরে ত্বক, চোখ, শ্বাসতন্ত্র ও লিভারজনিত জটিলতায় ভুগছেন। কারও কারও চিকিৎসা ব্যয় ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ ব্যয় মেটাতে অনেককে সঞ্চয় ভাঙতে হয়েছে কিংবা ঋণ নিতে হয়েছে।
    এছাড়া কীটনাশকের প্রভাবে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং জলজ প্রাণির মৃত্যু, শিশু ও বৃদ্ধদের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি ক্ষেতের সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
    সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী কৃষক নজরুল ইসলাম, গহর কয়াল, গোপাল মন্ডল, কেনা মন্ডল ও কওছার তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা জানান, অধিক ফলনের আশায় বিক্রেতাদের পরামর্শেই এসব বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন।
    অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিলন, প্রতিমা রাণী চক্রবর্তী, স্থানীয় সাংবাদিক, যুব সংগঠক ও কৃষক প্রতিনিধিরা।
    বারসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে উপকূলীয় জনপদ ভয়াবহ সংকটে পড়বে। তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সহজ নির্দেশনা প্রদান, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার, স্প্রে কাজে নিয়োজিতদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন এবং জৈব কৃষি পদ্ধতির প্রসারে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা জোরদারের দাবি জানান।
    গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ব্যক্তি নয়, সমগ্র সমাজ ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে এখনই দায়িত্বশীল উদ্যোগ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।
  • বিশ্বকাপে ব্রাজিলীয় সমর্থকদের জন্য রেস্ট্রিকশন

    বিশ্বকাপে ব্রাজিলীয় সমর্থকদের জন্য রেস্ট্রিকশন

    আগামী বছরের ১১ জুন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত প্রতি আসরেই খেলেছে ব্রাজিল। যেখানেই সেলেসাওরা খেলুক, স্টেডিয়াম সবসময় ভরা থেকেছে। তবে আসন্ন বিশ্বকাপে সেটা দেখা না-ও যেতে পারে। কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে টুর্নামেন্টে সমর্থকদের নিয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।

    ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সান-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ফলে ব্রাজিলীয় সমর্থকদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিলীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছেন। যা বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েও কার্যকর থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

    এরইমধ্যে ওয়াশিংটনে সফররত ব্রাজিলীয় সিনেটরদের সীমিত মেয়াদের ভিসা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা এই জটিলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নেইমার জুনিয়র, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, রাফিনিয়া-অ্যালিসনদের মতো তারকা খেলোয়াড়দের মাঠের লড়াই ব্রাজিলীয় সমর্থকদের সরাসরি দেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে হয়তো তাদের টিভি স্ক্রিনের মাধ্যমেই প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে হবে।

    লাতিন আমেরিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তির দেশ ব্রাজিল। কিন্তু ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার পর আর কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেনি তারা। সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২ সালে। তবুও এবার তারকাসমৃদ্ধ দল নিয়ে শিরোপার আশায় বুক বেঁধেছে ব্রাজিল। তাই মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন জানাতে না পারলে তা হবে সমর্থকদের জন্য বড় হতাশা।

    উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে। এতে দুই দেশের সম্পর্কে আরও শীতলতা এসেছে বলে মত কূটনৈতিক মহলের। এখনো পর্যন্ত ফিফা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি, তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ফুটবল অঙ্গনে।

  • নিষিদ্ধ লীগ নেতা-কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর

    নিষিদ্ধ লীগ নেতা-কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর

    রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই বৈঠক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

    এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

    ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই মামলার তদন্ত করছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

    এই মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ‘তারা প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্য। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ওই গোপন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১৩ জুলাই ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

    মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে— এমন সংবাদের বিষয়ে আজ সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

    ওই ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এ রকম ঘটনা জানার পরে সেনাবাহিনীর হেফাজতেই তিনি আছেন। তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন বলেছেন, মেজর সাদিকের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভাটারা থানা এলাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেওয়া হয়। মেজর সাদিক সেদিন সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

    ওই কনভেনশন সেন্টারের ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে সারা দিন কনভেনশন হলের সব সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছিলেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীসহ সমবেতদের নাশকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। তবে সবগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

    মামলার তদন্ত সম্পৃক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা, উপস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রেপ্তার অন্যদেরও রিমান্ডে এনে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গোপন এই ষড়যন্ত্রে যাঁরা জড়িত ছিলেন, সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার আশঙ্কা, সতর্কতা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

    ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার আশঙ্কা, সতর্কতা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

    বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্য সাইবার হামলা সম্পর্কে সতর্ক করে আগাম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

    সোমবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এসএম তোফায়েল আহমদের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়।প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে জানা গেছে, অদূর ভবিষ্যতে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (Critical Information Infrastructure – CII) সাইবার হামলার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি স্তরের সাইবার হুমকির বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের সার্ভার, ডেটাবেইস এবং অন্যান্য সিস্টেমে প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট করার সুপারিশ করেছে। একইসাথে অপ্রয়োজনীয় পোর্টাল বন্ধ রাখা, ‘Least Privileged Access’ নীতি অনুসরণ, ডেটা ব্যাকআপ ও রিকভারির জন্য ৩-২-১ কৌশল বাস্তবায়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

    তথ্যপ্রযুক্তি সিস্টেমে কোনো অনিয়ম দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে Security Information and Event Management (SIEM) ও Network Intrusion Detection Systems (NIDS) ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

    হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধে Endpoint Detection and Response (EDR) প্রযুক্তির অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার এবং নিয়মিত থ্রেট সিগনেচার আপডেট রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইটি টিমগুলোকে সবসময় সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন যেকোনো ধরনের সাইবার হামলার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে।

    অস্বাভাবিক লগইন, অনুমোদনহীন ফাইল বা ডেটা পরিবর্তনের ঘটনাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। একইসাথে ব্যাংকগুলোকে বাহ্যিক কানেকশন নিবিড়ভাবে মনিটর করতে এবং রিমোট অ্যাকসেস, ভিপিএন এবং প্রিভিলেজড অ্যাকাউন্টসমূহ সীমিত ও নিয়মিত পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট জনবলসহ ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা নিরাপত্তা মনিটরিং সেন্টার (Security Operations Center – SOC) পরিচালনার ব্যবস্থা নিতে হবে।

    সংস্থাগুলোর সচলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের একটি শক্তিশালী ব্যাকআপ ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিয়মিত হালনাগাদ করা ব্যবসা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা (Business Continuity Plan – BCP) এবং দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা (Disaster Recovery Plan – DRP) প্রস্তুত রাখতে হবে।×

    বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে সাইবার ঝুঁকি থেকে আগেভাগেই সুরক্ষা দেওয়া এবং জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

  • মিয়ানমারে ডিসেম্বরে নির্বাচন, সেনাপ্রধানের নেতৃত্বেই অন্তর্বর্তী সরকার

    মিয়ানমারে ডিসেম্বরে নির্বাচন, সেনাপ্রধানের নেতৃত্বেই অন্তর্বর্তী সরকার

    আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে সামরিক জান্তা গতকাল দীর্ঘদিন ধরে চলা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে। বিরোধী দলগুলো এরই মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ নির্বাচনের উদ্দেশ্য মূলত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আরো শক্তিশালী করা। নির্বাচন উপলক্ষে গতকালই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জান্তা সরকারের এ পদক্ষেপে মিয়ানমারে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রকৃতপক্ষে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অভ্যুত্থানের হোতা ও জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং কার্যত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। একই সঙ্গে তিনি সশস্ত্র বাহিনীপ্রধানের দায়িত্বেও বহাল রয়েছেন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। যে পদটি তিনি আগে সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, সেনাপ্রধান ও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি দখলে রেখেছিলেন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মূল কাণ্ডারি ও মিন অং হ্লাইংয়ের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা নেয়ো সো।

    মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার যে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তা বাতিল এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে একটি নতুন বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন তদারকি করবে।

    মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুন বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে জারি থাকা জরুরি অবস্থার মেয়াদ সাত দফা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এদিন জান্তা সরকার জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচন আয়োজন ও প্রস্তুতি নেয়ার সময়।’

    ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকার মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জরুরি অবস্থা জারি করে। জরুরি অবস্থার আওতায় জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নির্বাহী, বিচার, আইন বিভাগসহ রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। তবে সম্প্রতি তিনি সংঘাত নিরসনের উপায় হিসেবে নির্বাচনের কথা বলে আসছেন।

    ওই অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে এক বহুমাত্রিক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এতে হাজারো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। গৃহযুদ্ধে বিভিন্ন আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এখনো চলছে। জান্তার সরকার দেশটির মাত্র ২১ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৭৯ শতাংশ এলাকা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে।

    এরই মধ্যে সেনা অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া সাবেক আইনপ্রণেতাসহ দেশটির বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ নির্বাচন বানচালের আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে। নির্বাচন ঘিরে মিয়ানমারের সংঘর্ষ আরো রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

  • ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

    ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

    এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি দেশের ওপর ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল (পারস্পরিক) শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্প একে বর্ণনা করেছেন দীর্ঘদিনের বাণিজ্যগত অসাম্য দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে।

    বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এ হার ঘোষণা করা হয়। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণায় করা হয়েছে।

    হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েক ডজন দেশের শুল্কের হার তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলংকার ওপর ২০ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

    এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি দেশের ওপর ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল (পারস্পরিক) শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্প একে বর্ণনা করেছেন দীর্ঘদিনের বাণিজ্যগত অসাম্য দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে। হোয়াইট হাউজের একটি তথ্যপত্র অনুযায়ী, নতুন আমদানি কর হারগুলো আজ শুক্রবার থেকেই কার্যকর হবে।

    এর আগে, গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।

    যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেয়া হয়।

    সেই সময়সীমা শেষে আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। সে হিসাবে আজ থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি করতে হবে।

    পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে। শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে টানা তিন দিন আলোচনা করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। গত মঙ্গল ও বুধবারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা করা হয়। এ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরো আছেন প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। দুদিনের বৈঠকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন।

    যুক্তরাষ্ট্রে সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলারের।

    যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যদি শুধু শুল্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে বিষয়গুলো অনেক সহজ হতো। কিন্তু দরকষাকষি শুধু শুল্ক নিয়ে নয়, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ চুক্তিতে থাকা বাণিজ্যিক বাধ্যবাধকতাবিষয়ক শর্ত, যা পুরো বিষয়টির জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বাধ্যবাধকতা আবার অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার বাইরে। এমনকি সেগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

    সূত্র আরো জানায়, দরকষাকষির আলোচনাটি শুল্কের চেয়েও বেশি বাণিজ্য বিধিমালাবিষয়ক। এমনকি সেগুলো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিকও না। অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও খাতসংশ্লিষ্টদেরও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয় রয়েছে। বাণিজ্যবিষয়ক কিছু শর্ত একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেয়া প্রায় অসম্ভব।

    এদিকে, এপ্রিলে ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, তিনি দুই শতাধিক চুক্তি করছেন। কিন্তু বাস্তবে ১২০ দিনে মাত্র ১১টি চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে একটি পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে।

    ২ জুলাই ট্রাম্পের ঘোষণায় ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬% থেকে কমিয়ে ২০% করা হয়েছে। তবে পলিটিকো জানিয়েছে, ভিয়েতনাম মাত্র ১১% প্রত্যাশা করেছিল। ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০% ঘোষণা করেন। ট্রান্সশিপমেন্টের ৪০% শুল্ক কীভাবে কার্যকর হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

    ইন্দোনেশিয়ার জন্য পাল্টা শুল্ক ৩২ থেকে ১৯ শতাংশে হ্রাস করা হয়েছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৯% পণ্যে শুল্ক বিলোপ ও নন-ট্যারিফ বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাকার্তা।

    ২৩ জুলাই চুক্তির আওতায় জাপানের ওপর শুল্ক ২৫% থেকে ১৫% করা হয়েছে। গাড়ি উৎপাদন খাতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বলেছেন, জাপান ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্রে, যার ৯০% মুনাফা পাবে আমেরিকানরা।

    চীনের সঙ্গে এখনো চুক্তি হয়নি, আছে কেবল মে মাস থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত একটি সাময়িক বিরতি। এখন চীনের ওপর ৩০% ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১০% শুল্ক বলবৎ। সর্বশেষ স্টকহোম বৈঠকে কোনো নতুন চুক্তি হয়নি।

    বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য একটি অতিরিক্ত ‘পেনাল্টি’ও থাকবে। আগে এ হার ছিল ২৬%। ট্রাম্প বলেন, ‘ভারতের শুল্কহার বিশ্বের সর্বোচ্চের মধ্যে একটি।’

    এদিকে শুল্ক থেকে বাঁচতে মেক্সিকোকে আরো ৯০ দিনের সময় দিয়েছেন ট্রাম্প। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউমের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে আগের বাণিজ্য চুক্তিটি আরো ৯০ দিনের জন্য বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেক্সিকোর সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি অন্য অনেক দেশ থেকে আলাদা, কারণ আমাদের মধ্যে সীমান্ত রয়েছে, যেখানে অনেক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, মেক্সিকো আগামী ৯০ দিন আগের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতনির ক্ষেত্রে নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করবে। এর মধ্যে রয়েছে ফেন্টানিলে ২৫ শতাংশ, গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ এবং স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও কপারের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক।

  • রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম

    রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম

    সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতিতে পড়েছে সরকার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারেনি রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের শেষ দুই মাস—মে ও জুনে এনবিআরজুড়ে আন্দোলনের কারণে অস্থিরতা দেখা দেয়। সাধারণত শেষ মাস জুনে রাজস্ব আহরণ বেড়ে থাকে। কিন্তু এবার আন্দোলনের প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট খাতে জুনের আহরণের চিত্র সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

    গত অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের সংশোধিত মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু আয় হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে মোট লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

    মাসভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুনেও রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুনে আহরণ হয়েছিল ৫৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুনে আহরণ হয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৯১ কোটি টাকা। ওই মাসে এককভাবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা অর্জিত টাকার চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।

    জুনে কাস্টমস খাতে আহরণের চিত্র থেকে আন্দোলনের প্রভাব স্পষ্ট। এ খাতে জুনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, কিন্তু আহরণ হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়েও কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুনে কাস্টমস খাতে আহরণ হয়েছিল ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে কাস্টমস খাতের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার বিপরীতে আহরণ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৯৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ৯৯ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।

    ভ্যাট খাতেও জুনে আহরণ কমেছে। ২৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায়ও কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আহরণ হয়েছিল ২০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ভ্যাট খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, আর আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ খাতে আহরণ হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।

    এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গড়ে ছয় মাসের মতো সময় আমরা স্থিতিশীল পেয়েছি। অর্থবছরের শেষ দুই মাস এনবিআরে আন্দোলনের অস্থিরতা ছিল। সিগারেট খাতে ব্যাপক কর ফাঁকি হয়েছে। আমরা এ খাতে রাজস্ব হারিয়েছি। বাজারে অবৈধ সিগারেটে সয়লাব। সিআইসি ও আয়কর গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। সেই কর আদায়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেলগুলো কাজ করছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরে আমরা এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’

  • আসনের সীমানা পরিবর্তনে বৈষম্যের শিকার আশাশুনি-শ্যামনগরের মানুষ

    আসনের সীমানা পরিবর্তনে বৈষম্যের শিকার আশাশুনি-শ্যামনগরের মানুষ

    সাতক্ষীরার দুটি সংসদীয় আসন পুনর্ববিন্যাস সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক খসড়া গেজেট প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈষম্যের শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তারা প্রকাশিত গেজেট বাতিল করে পূর্বের ন্যায় আসন বিন্যাসের দাবি জানিয়েছেন।

    এদিকে আসন বিন্যাসের খবর জানার পরপরই বুধবার রাতে শ্যামনগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তারা নির্বাচন কমিশনারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়। একই সাথে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে আশাশুনি উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে উপজেলা বিএনপি।

    সাতক্ষীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর উত্তরে যশোর, পূর্বে খুলনা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধে ভরপুর এ জেলা। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা গঠিত হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে ১টি আসন বিলুপ্ত করে, করা হয় ৪টি আসন। যা এই অঞ্চলের সঙ্গে বৈষম্য এবং মানুষের মধ্যে একটি ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ফের সাতক্ষীরার দুটি আসন বিন্যাসের খবরে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে।

    সাতক্ষীরা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ডক্টর মনিরুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আমরা প্রয়োজনে শ্যামনগরের সর্বস্তরের জনসাধারণকে সাথে নিয়ে শ্যামনগর থেকে ঢাকা পর্যন্ত লং মার্চ করব।

    শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সামিউল আযম মনির বলেন, আমরা এই আসন বিন্যাসের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনারের গেজেট বাতিল করে পূর্বের আসন বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।

    আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনারের এই সিদ্ধান্ত আমরা মানবো না। কেননা শ্যামনগরের সাথে আশাশুনি উপজেলার কোন যোগাযোগ নেই। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করব। এছাড়া নির্বাচন কমিশনারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছি।

    আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের আমির তারিকুজ্জামান তুষার বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এই আসন বিন্যাসের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আশাশুনিকে পূর্বের মতো আলাদা একটি আসন করে ৫ টি সংসদীয় আসন করা হোক। আশাশুনির সাথে শ্যামনগরকে নিয়ে আসন বিন্যাস আমরা মানব না। আমরা এ বিষয় নির্বাচন কমিশনের দ্রুত অভিযোগ করব।

    প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন জেলায় পরিবর্তন এনে বুধবার (৩০ জুলাই) সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকার। কিন্তু সেখানে আবারও সাতক্ষীরার মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে।

    শ্যামনগর দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি জনপদ। একইভাবে আশাশুনিও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি উপজেলা। দুটি উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান বা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। উপজেলা দুটির মানুষও কখন এমন আসন বিন্যাসের কথা চিন্তা করেনি। এখানে দুটি আলাদা সংসদীয় আসন অতিব জরুরি।

    ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক প্রতিটি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাতক্ষীরার মানুষ সবসময় সামনের কাতারে থেকেছে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের এই আত্মত্যাগ ও অবদানের মধ্যে ইতিহাসে সামনের পাতায় থাকবে সাতক্ষীরা। তাই ৪টি নয় ৫টি সংসদীয় আসন চায় সাতক্ষীরাবাসী। এটি এ অঞ্চলের প্রাণের দাবি।

    সাতক্ষীরার ৪টা আসনের মধ্যে তালা-কলারোয়া (১), সদর (২) আসন সীমানা নিয়ে কারোরই কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিপত্তি, ৩ এবং ৪ আসন নিয়ে। এই দুই আসনের সীমানা পরিবর্তন করে ৩টি আসন করা যায়। যেমনটি সাতক্ষীরার শুরু থেকে হয়ে আসছিল। ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণতা এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন করার জোর দাবি জানায়।

    কারণ, আসনের সীমানা পরিবর্তন করে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে সাতক্ষীরার মানুষের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈষম্য দূর করে, এই মজলুম জনপদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি সকলের। সাতক্ষীরার মানুষ প্রত্যাশা করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন আসন বন্টনের খসড়া পুনঃ বিবেচনা করবে। সেই সাথে সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন করে সীমানা নির্ধারণ করবে।

  • সাতক্ষীরায় ৩৯জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান

    সাতক্ষীরায় ৩৯জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান

    মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের “পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি এডুকেশন স্কিম (এসইডিপি)” প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরায় ২০২২-২৩ শিক্ষা বর্ষের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ।

    সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুফতী আব্দুল খায়ের এবং সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম টুকু, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম, সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোশাররফ হোসেন, সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ডঃ মুফতি আক্তারুজ্জামান, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান প্রমুখ।

    অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেন, রসুলপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুর রহমান, ঘোনা হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনারুল ইসলাম, অভিভাবক হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, মঞ্জুরানী দেবনাথ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাবেক সমন্বয়ক আরাফাত হোসেন, কৃতি শিক্ষার্থী ওয়ালিদ হাসান ও আনতারা আনিকা প্রমুখ।

    বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণিকক্ষে নয়, তাদের আচরণ, সততা, ও মানবিক গুণাবলি দিয়েও সমাজকে আলোকিত করবে। তাদের প্রতিভা যেন দেশ ও জাতির সম্পদ হয়ে ওঠে, সেই আশাই আজকের এই আয়োজনের মূল প্রেরণা।

    অনুষ্ঠানে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বোর্ড সেরা এসএসসি, দাখিল, ভোকেশনাল, এইচএসসি, আলিম ও কারিগরি পর্যায়ের ৩৯ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালের এসএসসি’র ১০ জন, এইচএসসি’র ১০ জন এবং ২০২৩ সালের এসএসসি’র ১০ জন ও এইচএসসি’র ৯ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এসব শিক্ষার্থীকে পূর্বেই তাদের ব্যাংক হিসাবে এককালীন বৃত্তি বাবদ এসএসসি পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা এবং এইচএসসি পর্যায়ে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়, যা ছিল তাদের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি।

    শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎসাহে ভরপুর এই অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র সম্মাননা প্রদানের আয়োজন ছিল না, বরং এটি ছিল এক মানবিক ও আলোকময় যাত্রার শুরু। অতিথিরা তাদের বক্তব্যে শিক্ষা, সততা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

    অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং জেলা শিক্ষা অফিস। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক।

  • কোস্ট গার্ডের অভিযানের সুন্দরবন থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

    কোস্ট গার্ডের অভিযানের সুন্দরবন থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

    সুন্দরবনের মাউন্দে নদী সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড।

    বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।

    তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার বিকালে কোস্ট গার্ড কৈখালী স্টেশনের সদস্যরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মাউন্দে নদী সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালীন সময়ে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আত্মসমর্পণ আহ্বানে কোস্টগার্ড দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এসময় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে বনের ভেতর পালিয়ে যায়।

    পরবর্তীতে ব্যাগটিতে তল্লাশি চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

  • নির্বাচন ফেব্রুয়ারির একদিন পরেও যাবে না: প্রেস সচিব

    নির্বাচন ফেব্রুয়ারির একদিন পরেও যাবে না: প্রেস সচিব

    প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী চার/ পাঁচ দিন দেশের জাতীয় রাজনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যেই জুলাই সনদ হয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা দিয়েছেন, সেটা ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

    নির্বাচন এ সময়সীমার মধ্যেই হবে। এ সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এ সময়সীমার একদিন পরেও নির্বাচন পেছাবে না, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোরটার্স ফোরাম- বিএসআরএফ এ সংলাপের আয়োজন করে।

    বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উবায়দল্লাহ বাদলের পরিচালনায় সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা নিজামুক হকসহ বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

    সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর দেশটা ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। দেশ থেকে টাকা কীভাবে পাচার হয়ে জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে পেরেছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সন্তোষজনক অবস্থায় এসেছে।

  • একদিনের ব্যবধানে খুমেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু

    একদিনের ব্যবধানে খুমেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু

    একদিনের ব্যবধানে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. রকমান (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

    এর একদিন আগে বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রতিকান্ত ডাকুয়া (৮৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

    খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় মো. রকমান নামে এক যুবক খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে করোনা ইউনিটের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি খুলনা মহানগরীর হরিণটানার রায়ের মহল এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ারের ছেলে। এ নিয়ে চলতি বছরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

  • গুমানতলী কামিল মাদ্রাসায় জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত

    গুমানতলী কামিল মাদ্রাসায় জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত

    জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুমানতলী কামিল মাদ্রাসার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো “জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান-২০২৫”। বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল ৯টায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
    কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর পরপর শুরু হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা—বিতর্ক, উপস্থাপনা, বক্তব্য প্রদান ও কবিতা আবৃত্তি। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের করণীয় বিষয়ক বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য ও উপস্থাপনা তুলে ধরে।
    বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পক্ষে দলের নেতৃত্ব দেন গুমানতলী কামিল মাদ্রাসার ছাত্র এবিএম কাইয়ুম রাজ। যুক্তিভিত্তিক উপস্থাপনা, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও বাস্তবমুখী বিশ্লেষণের জন্য তিনি বিচারকমণ্ডলীর বিশেষ প্রশংসা অর্জন করেন এবং তার দল বিতর্কে প্রথম স্থান লাভ করে।
    অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর কল্পনার বিষয় নয়—এটি বাস্তব। শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করাই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই আয়োজনের মাধ্যমে সেই দায়িত্ব কিছুটা হলেও আমরা পালন করতে পারছি।”
    তিনি আরও বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
    অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাদ্রাসার শিক্ষক আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী।
    সকালব্যাপী এই শিক্ষামূলক আয়োজনটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, পরিবেশ সচেতনতা এবং উপস্থাপনাশৈলী সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। আয়োজনটি ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন অনেকে।
  • ৯ দিনেও সাতক্ষীরার মা মোটরস এর মালিক জিল্লুর রহমানের টিকি স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন

    ৯ দিনেও সাতক্ষীরার মা মোটরস এর মালিক জিল্লুর রহমানের টিকি স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন

    নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট লাঞ্ছিত

    রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা ঃ জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতকারি সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত “মা মোটরস” এর স্বত্বাধিকারী ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমানের টিক্কি গত ৯ দিনেও স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন। টাকা দিয়েই তার অপরাধ হজম করে ফেলবে এবং তার টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ওই ব্যবসায়ি।
    সাতক্ষীরা শহরের লাবনী মোড় এলাকার আখের রস বিক্রেতা মঞ্জুর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, গত ২৩ জুলাই রাত ১০টার দিকে টাউন বাজার এলাকার “মা মোটরস” এর স্বত্বাধিকারী মেহেদীবাগ টিভি টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান লাল রং এর একটি বিশেষ প্রাইভেটকারে করে নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছালে একই দিক থেকে সাতক্ষীরা ফার্ম্মেসীতে ঔষধ কিনতে আসা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাইফ এর মটর সাইকেলের সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিল্লুর রহমান গাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে ওই ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাকে টেনে কৃষ্ণচুড়ার গাছের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন জিল্লুর। পথচারীদের বাধার কারণে জিল্লু তাকে ছেড়ে দিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে চলে যায়। পরে ওই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাকেসহ বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জিল্লুর পরিচয় জেনে বিষয়টি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বিষয়টি সেনাবাহিনীসহ আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। রাতেই জিল্লুর মা মোটরসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তালা লাগিয়ে দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অভিযান চালিয়েও বাড়িতে পাওয়া যায়নি জিল্লুরকে। এমনকি তার সকল মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান পায়নি আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা। হয়নি থানায় মামলা।
    এদিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাকারি জিল্লুর রহমানের উত্থানের কাহিনী অনুসন্ধানে যেয়ে জানা গেছে, তাদের জন্ম বরিশালে। ছোট বেলা থেকে তারা দুই ভাই ও এক বোন মায়ের হাত ধরে সাতক্ষীরায় আসে। মায়ের বাসস্টা-ে ছিল চায়ের দোকান। ওই এলাকা মাদক বিক্রির জন্য আলাদা পরিচিতি আছে। মাদকাসক্ত হয় তার ভাই টিটু। ২০১০ সালে সার্কিট হাউজ মোড়ে বন্ধু মোটরস এর সঙ্গে ক্ষুদ্র পরিসরে রিক-িশন মটর সাইকেল বিক্রি শুরু করে। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় সে অন্যত্র চলে আসে। একপর্যায়ে ২০১৪ সাল থেকে কাটিয়া টাউন বাজার এলাকায় মা মোটরস নামে একটি রিক-িশান মটর সাইকেল কেনা-বেচার দোকান নেয়। কিস্তি ভিত্তিক মটর সাইকেল বিক্রি করার নামে ক্রেতাদের ঠকানোই ছিল তার প্রধান কাজ ও আয়ের উৎস্য। কিস্তি বা বকেয়া আদায় করতে সে বাবু, হেলাল, বেলাল, শাহীনুর, আলোসহ ৮/১০ সদস্যের একটি বাহিনী তৈরি করে। শুধু জেলা নয়, জেলার বাইরেও তার বাহিনীর সদস্যরা অপারেশ চালিয়ে মটর সাইকেল কেড়ে নিয়ে বেকয়া টাকার সঙ্গে দৈনিক ৫০০ টাকা ভাড়া বা চড়া সুদে টাকা আদায় করতো সে। অনেকে চড়া সুদ দিতে না পেরে মারপিটের শিকার হয়েছেন। মারপিট ও প্রতারণার শিকার হয়ে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কাছে অভিযোগ করায় জিল্লুকে ২০১৬ সালে ধোলাই দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। বর্তমানে বাসস্টা- এলাকায় তার দুটি দোকান আছে। নেপথ্যে থেকে স্বজনদের মাধ্যমে সে মাদক ও সোনা পাচারের কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে হু-ি ব্যবসার। পিঠের চামড়া বাঁচাতে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে তার ভাই টিটুর মাধ্যমে ম্যানেজ করতো সে। গত ১০ বছরে জিল্লু তার বাড়ির পাশে ও বাইপাস সড়কে টাকা বাবুসহ একটি গোষ্ঠীর সহযোগিতায় কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার জমি ও ১০ টি আভ্যন্তরীন রুটের বাস কিনেছে। নিজের শক্তি সঞ্চয় করতে বিগত পৌরসভা নির্বাচনে ৯ নং পৌর কাউন্সিলর হিসেব নির্বাচন করেছে। প্রতিপক্ষ শফিক উদ দৌলার জনপ্রিয়তার কাছে দুই বছরে জনসম্পর্ক গড়ে তুলতে কোটি টাকা খরচ করেও হেরে যায় জিল্লু। মাদক, হু-ি ও সোনা পাচারের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে তার ব্যবসা বিস্তারে বিদেশে থাকা বোন সহযোগিতা করে থাকে বলে প্রচার দিয়ে থাকে জিল্লু।
    এদিকে গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জিল্লু নেতা পরিবর্তণ করে জেলা যুবদলের এক সাবেক নেতার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। তার মাধ্যমে প্রশাসনে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
    এদিকে জেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জিল্লুর গতিবিধির উপর নজর রাখছে প্রশাসন।
    তবে ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা জিল্লুর তার অবৈধ টাকা কাজে লাগিয়ে একটি মাধ্যম দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে নিজেকে বাঁচানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
    এ ব্যাপারে জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শাহীনুর রহমান বলেন, বিষয়টি বাদ দিলে হয় না!
    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর উপর জিল্লুর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।