আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার সুপারিশ করেছেন কানাডীয় রাজনীতিক বব রে। একইসঙ্গে চলমান মানবিক সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ করেছেন রোহিঙ্গা সংকটে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো’র এই বিশেষ দূত। ৩ মার্চ মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রতিবেদনে তিনি এসব সুপারিশ করেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কানাডাভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম সিটিভি।
‘টেল দেম উই আর হিউম্যান’ শিরোনামের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কানাডাকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বব রে। আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও সুপারিশ জানান এই কানাডীয় রাজনীতিক।
বব রে বলেন, মিয়ানমারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কানাডা সরকার জানিয়েছে, তারা বব রে’র প্রতিবেদনটি পড়ে দেখছেন। এ নিয়ে আসন্ন দিন ও সপ্তাহগুলোতে তারা আরও বেশি কিছু করতে আগ্রহী।
বব রে’র প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে একইসঙ্গে এতে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি’র সম্মানজনক কানাডীয় নাগরিকত্ব বাতিল না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অক্টোবরে টরেন্টোর সাবেক এমপি বব রে-কে মিয়ানমারের বিশেষ দূত নিয়োগ দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তদন্ত শেষে এ সংকট নিয়ে তিনি প্রতিবেদন জমা দেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বব রে লিখেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কী ধরনের মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সরাসরি গুলি ও সামরিক সহিংসতা ছাড়াও আমি যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। শরণার্থী শিবিরে আসার পথে শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুর কথাও শুনেছি। প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট দেখার জন্য তাকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া না হলেও গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেখানে যান।
বব রে’র চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কানাডাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর আগ্রহ প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বব রে তার প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি, সংগঠন ও কোম্পানির বিরুদ্ধে কানাডা ও এর মিত্র দেশগুলোকে সুর্নিদিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন। মে মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকটকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছেন রে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে বর্তমানে অনেক কষ্টে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বাস করছেন। আগামী মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে। কানাডার সরকার এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কানাডা। এরপর বর্ষাকালে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল জোগানের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
Leave a Reply