অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। কিন্তু এই সুযোগে একটা উগ্র ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট শক্তি এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে তাদের হীন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা দেশকে একটা চূড়ান্ত নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবে এবং দেশে একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর ও গভীর সমবেদনা জানিয়ে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ
তারা বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে ঢাকায় ও সারা দেশে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ছায়ানট ভবন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু কণ্ঠস্বর, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীরের ওপর হামলা করা হয়েছে, তাঁকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহে কথিত ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগ তুলে একজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির প্রেক্ষিতে আগেও বিভিন্ন মহল থেকে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল। এরপর হাদির মৃত্যু, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা লুট অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিহত করতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে আর একদিনও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই দায়িত্বে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যু গোটা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতির চিত্র পুনরায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষ একটা নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল।
কিন্তু গত দেড় বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের একের পর এক ব্যর্থতা সেই আশাকে দূরাশায় পরিণত করেছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে, মব সন্ত্রাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তারা বলেন, সরকারের তরফ থেকে এগুলো বন্ধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ তো নেওয়া হয়নি। বরং কখনও কখনও প্রেসার গ্রুপ বলে এতে মদদ যোগানো হয়েছে, প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুন ইত্যাদি ঘটনা এই সরকারের আমলেও অতীতের ফ্যাসিবাদি আমলের মতোই ঘটে চলেছে। ওসমান হাদির মতো জুলাই আন্দোলনের একজন সম্মুখযোদ্ধার মৃত্যু এর সর্বশেষ সংযোজন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে বানচাল করে নিজেদের হীন স্বার্থ-সুবিধা চরিতার্থ করতে একটি মহল এই নৈরাজ্যকে উসকে দিচ্ছে। তাই অবিলম্বে এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করুন, হাদির হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তৎপর হোন। কেননা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে অহেতুক কোন উগ্র গোষ্ঠীর প্ররোচনায় পা না দিয়ে হত্যাকারীদের ধরতে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করুন, গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণকে সোচ্চার থাকতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্কাফী রতন, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
রিপোর্টার 





















