Category: উপকুল

  • ফণি’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে

    ফণি’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরইমধ্যে ভোলা, চরফ্যাশন, পাথরঘাঁটা, কলাপাড়া, লালমোহন, মঠবাড়িয়া, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ‘ফণি’র অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে। যতটুকু শক্তি হারানোর কথা ছিল ততটুকু শক্তি হারায়নি ‘ফণি’। তাই শক্তি নিয়েই সন্ধ্যা নাগাদ এটি বাংলাদেশে আঘাত হানতে শুরু করতে পারে।

    শুক্রবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান।

    তিনি বলেন, জনসাধারণকে আমরা অতিদ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি। কেননা উচ্চগতির বাতাস ও দমকা ঝড়ো হাওয়ার সময় সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে। ফণি উপকূল অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

     ফণির প্রভাবে বাঁধ ভেঙে পটুয়াখালী ও বাগেরহাটের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরইমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর ও চট্টগ্রামকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

    এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি সকালে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে। এটি এখন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। পশ্চিমবঙ্গের হালদাবাড়ি, রায়দিঘী, ঝাড়খালি, পিরেজগঞ্জ, নামখানা, গঙ্গাসাগর, রোরখেলা ও কলকাতায় ফণির তাণ্ডব চলছে।

    ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ভারত অতিক্রম করে খুলনাসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শুক্রবার রাতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ সময় খুলনা বিভাগের যশোর-কুষ্টিয়া এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার পর ঝড়টি কিছুটা হালকা হয়ে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এর প্রভাবে সারাদেশে শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে ৫ তারিখ সকাল পর্যন্ত বিরতি দিয়ে চলবে।

    উপকূলীয় জেলাগুলোতে শুকনা খাবার, ওষুধ, পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব জেলা আক্রান্ত হতে পারে সেসব জেলায় নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।

    জেলা প্রশাসকদের ২০০ টন চাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে, পাশাপাশি প্রত্যেক ডিসিকে পাঁচ লাখ করে টাকা দেয়া আছে।

    ফণির আঘাতে সবচেয়ে বেশি আক্রন্ত হতে পারে এমন এলাকাগুলো হল-  খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, ফরিদপুর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও তার আশেপাশের এলাকা।

    আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া সাধারণত শুষ্ক থাকতে পারে। দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী পাঁচদিন তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে।

  • ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আতংকে দিশেহারা সাতক্ষীরার উপকূলের বাসিন্দারা

     নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার শ্যমনগর উপজেলার নদী উপকূলীয় মানুষেরা। শিশু ও বৃদ্ধদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া, গৃহপালিত পশু ও ফসল রক্ষা করা, আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাসহ সমগ্র বিষয় নিয়ে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন তারা। চিন্তায় পড়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রের দূরত্ব নিয়েও। মূলত ২০০৯ সালের আইলার পর থেকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের খবর শুনলেই আতকে ওঠেন তারা।
    শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বাজারের ব্যবসায়ী গৌতম কর্মকার বলেন, ‘ঝড়ের খবর শোনার পর থেকে ধান-চাল নিয়ে বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করতিছি। গুরুগুলো কি করবো সেই চিন্তা। কারণ একবার আইলায় ভেসে গিছিতো, এজন্যি ঝড়-তুফানের খবর শুনলেই ভয় হয়। গতকাল মাইকিং করার পর থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
    একই এলাকার ভ্যানচালক মতিয়ার রহমান শেখ বলেন, ‘আকাশে ম্যাঘ আছে আর আমরা ভ্যান চালায়ি ব্যাড়াচ্ছি কনে যাবো কি করবো টেনশনে আছি। বাড়ি বুড়ো-হাবড়া মানুষ আছে তারা হাওমাও করতি। কনে যাবো কি করবো বুজতি পারতি নি।’
    আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, আমাগির ওয়ার্ডের মদ্যি আশ্রয় কেন্দ্র নেই। চার-পাঁচ কিলো দূরি আছে তা সেখানে গিলিতো জাগা হবেনা। সেখানে ওই এলাকার লোকজন। আমরা খুব কষ্টের ভেতর আছি।’
    হরিনগর বাজার পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি অসিৎ কুমার বলেন, ভয়ংকর ঘূণিঝড় আর জলসাচ্ছ্বের খবর শোনার পর থেকে মানুষ একেবারে দিশেহারা হয়ে গেছে। কি করবে কি হবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। হরিনগর বাজার বা বাজারের আশেপাশে কোন সাইক্লোন শেল্টার নাই।
    তবে শ্যামনগরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ১৫৫টি সাইক্লোন শেল্টার। মজুদ রয়েছে ২০ মেট্রিক টন খাদ্য। জরুরি ভিত্তিতে আরো প্রায় ৬শ মেট্রিক টন খাদ্য শ্যামনগরে পৌছাবে।
    তিনি আরো বলেন, মাইকিং করে, পতাকা উড়িয়েসহ বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সতর্কবার্তা মানুষের কাছে পৌছানো হয়েছে। জরুরি উদ্ধারেও সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

  • সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি

    সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি

     দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ১-২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
    বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চসহ  অন্যন্য দিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার আকাশ মেঘলা ও বাসাতের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
    এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
    বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    সভায় বলা হয়, জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার, শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ওষুধের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়।
    সভায় বলা হয়, ইতোমধ্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্তণ কক্ষের ফোন নম্বর ০৪৭১৬৩২৮১।
    সভায় জানানো হয়, জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩২শ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১১৬ টন চাল, ১ লক্ষ ৯২হাজার টাকা, ১১৭ বান টিন, গৃণ নির্মাণে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুদ আছে।
    সভায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশংকা করে বলা হয়, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর সর্তক সংকেত আসলে উপকূলীয় মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে হবে। যতদূর সম্ভব দ্রুততার সাথে মাঠের ফসল ঘরে তুলতে হবে। সংকেত প্রচারে ইমামদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়ার ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সাতক্ষীরাজেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় একটি করে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।

    এছাড়াও ৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব সরকাবি কর্মকতা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৩ হাজার ৬৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।
    জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের সাইক্লোন সেল্টারগুলো প্রস্তুুত রাখার পাশাপাশি সেগুলোর চাবি দায়িত্বশীল লোকদের কাছে রাখতে হবে। যাতে সময় মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয় এবং মানুষ সঠিকভাবে সেখানে উঠতে পারে। এছাড়া প্রত্যেক মসজিদের মাইকে সতর্কতা বার্তা প্রচারের জন্য ইমাম ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
    এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার পায়ে হেটে উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ এলাকা মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, গাবুরা, রমজাননগর ইউনিয়নের মানুষকে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
    সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে সাতক্ষীরায় ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
    দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা এলাকার আবুল হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে সাতক্ষীরা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে। এই আইলার ক্ষত এখন কাটিয়ে উঠতে পারেন এই এলাকার মানুষ। রাস্তাঘাটের বেহলা দশা, বেঁড়িবাধ ঝুঁকির মধ্যে আকাশে মেঘ দেখলে আমাদের ঘুম হামার হয়ে যায়। আবার শুনতে পাচ্ছি ঘুর্ণিঝড় ‘ফেনী’ আসছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
    বুড়িগোলিনী স্টেশন কর্মকর্তা কবীর উদ্দিন বলেন, বনপ্রহীদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি নিয়ে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। বনের ভেতরে অবস্থান করা নৌযানগুলোকে লোকালয়ে আনার জন্য বনপ্রহরীদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।


    সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার ভাটার তুলনায় পানি দুই ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ১১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলো মেরামতের জন্য জিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
    শ্যানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুুতি আছে। আমাদের ১৪৩টি সিপিপি টিমের ২ হাজার ১০০স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ‘নবযাত্রা’ প্রকল্পের আওতায় আরও ১হজার ১০০জন কর্মী কাজ করছেন। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যদের প্রস্তুত থাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্র ও সাইক্লোন সেন্টারগুলো প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ উদ্ধার কালে সমস্যা না হয় সেই বিষয় মাথায় রেখে ইউপি মেম্বারের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ সদস্যরে একটি টিম করা হয়েছে।
    তিনি আরও বলেন, শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২টি মেডিকেল টিম ও উপজেলায় একটি একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপজেলার সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ১৫৫টি দ্বিতল সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে আমরা নির্দেশনা দেওয়া মাত্র তারা যেন সাইক্লোস সেল্টারে আসে। যারা আসবে না তাদের জোর করে সাইক্লোন শেল্টারে আনা হবে।


    জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম না করা পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দুটি জরুরী সভা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জান মালের ক্ষতি কমাতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং সাথে সাথে উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষ গুলোকে নিরাপদে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। এছাড়ার সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ফোন নাম্বার ০৪৭১-৬৩২৮১।
    প্রসঙ্গত: ২০০৯ সালের ২৫ মে এই দিনে ১৫ ফুট উচ্চতা বেগের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন উপকুলীয় উপকুলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায়। প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় আইলার আঘাতে তছনছ হয়ে যায় দক্ষিণ-উপকুলীয় সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের হাহাকার কমেনি। এর পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলিও ঝুকির মধ্যে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি নামক স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে জনবসতি গ্রাস করছে।
    এছাড়া বুড়িগোয়ালিনী, হরিনগরসহ প্রায় একশ’ কি. মি. বেড়ীবাঁধ হুমকির মুখে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কামালকাটি এলাকায় বেড়ীবাঁধ সংস্কারের কাজ হলে অন্যান্য বাঁধ গুলি কিছুদিন পর বেঙে যায়। আইলার পর থেকে খাবার পানির তীব্র সংকট ভূগছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। গাবুরা ইউনিয়নের ১৫ টি গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রামের মানুষদের খাবার পানির একমাত্র উৎস ‘পুকুর’। অনেকে মহিলাই ২/৩ কিঃমিঃ পাঁয়ে হেটে এক কলস পানি আনেন। নোংরা আবর্জনায় পরিপুর্ন হওয়ায়,এসব পানি পান করে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। কিছুটা স্বচ্ছল লোকেরা বিশ টাকা দরে পানির ড্রাম পাশের উপজেলা কয়রা থেকে কিনে আনছেন।

  • ‘ফণী’র প্রভাবে ৫-৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা’


    ডেস্ক রিপোর্ট:

    Dainik satkhira

    খুলনা ও তৎসংলগ্ন মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার এর জন্য ৪ হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে। তবে শক্তিশালী এই আঘাত হানার ফলে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল ১০টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে দেয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ক্রমিক নম্বর ২৮ (আটাশ)-এ এসব সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে।

    আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাংলাদেশে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থাকতে পারে। তবে সন্ধ্যার দিকে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।

    এবিষয়ে তিনি আরও বলেন, সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রতি ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার দুপুর নাগাদ ওরিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

    আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ ওই বিজ্ঞপিতে যা বলা হয়েছে-

    আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।

    ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

    উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

    উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

    উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

    ব্যাপক শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

    ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় বাংলাদেশে যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে

    এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র। দেশের সবগুলো প্রস্তুতি কেন্দ্র ইতোমধ্যেই সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত।

    ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর বরগুনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এলার্ট করা হয়েছে। কী কী করণীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকদের বলা হয়েছে তারাও সতর্ক আছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে মাইকিং সহ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে মাঠে নামার কাজও শুরু হবে।’

    এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
    এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টসহ আরও অনেক স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।

  • সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ভেড়ি বাধের বেহাল দসা

    সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ভেড়ি বাধের বেহাল দসা


    আব্দুল জলিল ঃ নদী ,নৌকা, জাল আর মাছ এদের নিত্য দিনের সঙ্গী। মানবতা এখানে বিপন্ন। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বেচে থাকার জন্য এরা জীবনের সাথে সংগ্রাম। সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার এই মানুষ গুলো জীবন কেড়ে নিয়ে ছিল আইলা ও সিডর । মুহুর্তেও মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল তাদের জীবন। বাড়িঘর,হাস মুরগী, ফসল, ঘের সবকিছু ভেসে গিয়ে ছিল। প্রান হারিয়ে ছিল অসংখ্যা মানুষ। সেই জের এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি তারা। সহায় সম্বল হরিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে । কিন্তু আজও বাধ গুলো সংস্কার হয়নি। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটে তাদের। যে কোন মূহুর্তে বাধ ভেঙ্গে আবার সব কিছু নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। জনপ্রতিনিধিরা বলছে বর্ষার আগে বাধ মেরামব করতে হবে। পাউবো কর্মকর্তারা বলছে অস্থায়ী ভাবে বাধ সংস্কার করার টেন্ডার হয়ে গেছে। তবে কাজ শুরু হয়নি আজও ।
    উপকূলীয় এলাকায় ঘুরে জানাযায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিশ অঞ্চলের সুন্দরবন ঘেষা উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা । এই জেলার শ্যামনগর. আশাশুনি দূযোগ প্রবন এলাকা । নদীতে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বহ করে তারা। দুবেলা পেট ভরে খাওয়ার জোটে না তাদের। আইলা ও সিডর তাদের সবকিছু কেড়ে নিযেছে । সেই ক্ষত আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি । আজ আবার তাদেও ঘুম কেড়ে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোডের ভেড়ি বাধ । বাধে ভাঙ্গন প্রকট আকার ধারণ করেছে । সব চেয়ে বেশি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে কপোতক্ষও খোলপেটুয়া নদীর গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি,ও প্রতাপনগর এলাকায়। যে কোন মুহুর্তে এই এলাকার বাধ ভেঙ্গে যেতে পারে। তবে মানুষের মত বাধ গুলো লড়াই করে টিকে আছে । জোয়ার বেশি হলে বাধ আর ধরে রাখা যাবে না । এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলছে বর্ষার আগে বাধ মেরা মত করতে হবে । আর পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তারা বলছে অস্থ্ায়ী ভাবে বাধ মেরা মতের জন টেন্ডের হয়ে গেছে ।
    শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার মতিন,আকবার ,রুহুল জানান, আগে দুইবার তারা ভেসে গেছে, অবদা বাধের ধারে খুপরি ঘরে বসবাস করে। এবার ভাঙ্গলে তাদের আর এদেশে বসবাস হবে না । সব হারিয়ে তারা এখন পথে বসেছে । তারা স্থ্য়াী ভবে বাধ নির্মানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান ।
    শ্যামনগর কাশিমাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রউফ জানান, উপকূলীয় বাধ গুলো খুবই ঝুকির মধ্যে রযেছে । আইলা ও সিডরের সময় যে লবন পানি ডুকে ছিল সেই রেষ এখন ও কাটিয়ে উঠতে পারিনি । সামনে কাল বৈশাকি ঝড় আসতেছে । কাশিমাড়ি উইনিয়নের ঝাপালি এলাকায় ভেড়ি বাধ ভেঙ্গে যায় তবে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের বিস্তর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। বষার আগে এই বাধ মেরামত করতে হবে ।
    সাতক্ষীরার শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোডের উপসহকারি প্রকৌশলী মাসুদ রানা জানান, অস্থায়ী ভাবে বাধ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে । স্থায়ী ভাবে বাধ মেরামতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে

  • হরিনগরে ভাঙন কবলিত পরিদর্শন করলেন সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি

    হরিনগরে ভাঙন কবলিত পরিদর্শন করলেন সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি

    মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর স্লুইজ গেট সংলগ্ন কর্মকার বাড়ীর সামনে পাউবোর উপকূল রক্ষাকারী বাঁধে মারাত্মক ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তে সম্পূর্ণ বাঁধটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। ফলে, যে কোন সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকা লবণ পানিতে প্লাবিত হয়ে শ্যামনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের কৃষি ফসল, খাওয়ার পানি, মৎস্য সম্পদ, রাস্তা-ঘাটসহ যাবতীয় অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার জানতে পেরে গত ২৪ জানুয়ারি সকালে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করতে আসেন। এলাকাবাসী সংসদ সদস্যকে যানমালে ক্ষয়ক্ষতি ও নিরাপত্তার কথা জানালে তিনি অতি শিঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোর কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে নির্দেশ দেন। তিনি পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধিন শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরেও পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন, মুন্সীগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।

  • সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে দুই গ্রাম ও শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত

    সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে দুই গ্রাম ও শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত

     
    আশাশুনি প্রতিনিধি: জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগেের হাইল চরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে দুই প্লাবিত ও শতাধিক ছোট বড় মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের হাইল চরের ১শত হাত বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
    প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, চাকলা বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ন অবস্থায় ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা হলেও তারা কোন ভুরুক্ষেপ করেনি। শুক্রবার গভীর রাতে কপতাক্ষ নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। নদীর পানি ঢুকে দুই গ্রাম প্লাবিত ও শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে।
    তিনি আরও জানান, বেঁড়িবাধটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হলেও তারা এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি। এলাকবাসিকে সাথে নিয়ে সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেঁড়িবাঁধটি সংস্কারের উদ্দ্যেগ নেওয়া হলেও কোন কপতাক্ষের প্রবল জোয়ারের চাপে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত বাঁধটি সংস্কার না হলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান।
    সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেছি। একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।

  • নির্বাচনী ইশতেহারে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনাকে সংযুক্ত করতে হবে

    নির্বাচনী ইশতেহারে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনাকে সংযুক্ত করতে হবে

    নিজস্ব প্রতিনিধি: উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে ঘরে-ঘরে সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরায় সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’ শনিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় চার নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা’কে সংযুক্তি এবং পরবর্তিতে সরকারি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’র সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।

    লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) অভীষ্ট-৬, ‘সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়:নিষ্কাশণের টেকসই ব্যাবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ’-এর জন্য বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ওয়াশ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে পথ চলার এখনও অনেক বাকী’

    তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষের পানিতে অভিগম্যতা থাকলেও লবণাক্ততা, আর্সেনিক ও আঞ্চলিক দূর্গমতা বিবেচনায় সুপেয় নিরাপদ পানিতে ৬০ ভাগ মানুষের অভিগম্যতা নাই।’
    তিনি দেশের স্যানিটেশন সেবার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘খোল স্থানে মলত্যাগের হার শূণ্যের ঘরে এনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত হয়েছে তবে নিরাপদ ও টেকসই স্যানিটেশন সেবার আওতায় এসেছে মাত্র ৪৭ ভাগ। এ প্রেক্ষাপটে স্যানেটিশন ব্যাবস্থাপনার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এজন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার প্রত্যাশা করে।

    সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহারে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতকে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঘরে ঘরে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণ। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ। সরকারি পুকুর, খাল ও জলাধার উদ্ধার করে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকল প্রতিষ্ঠানে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করা। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকা এবং শহরের বস্তি ও নিন্ম আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। জলাভূমি রক্ষা করে যে কোন উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা, পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে নতুন স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন স্থাপনাগুলোকে সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

    সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, প্রথম আলোর প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যাণার্জি, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারী, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক ফাহিমুল হক কিসলু, সুশীলনের উপ-পরিচালক মোস্তফা আখতারুজ্জামান, ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরাম’ সাধারণ সম্পাদক মিসেস চন্দ্রিকা ব্যাণার্জি, আশ্রয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুন প্রমুখ।

  • আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে তিন গ্রাম প্লাবিত

    আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে তিন গ্রাম প্লাবিত

    নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরার আশাশুনির হাজরাখালীতে খোলপেটুয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে তিনটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার।

    রবিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৪ নং পোল্ডারের কাছাকাছি হাজরাখালী নামক স্থানে প্রায় ৬০/৭০ ফুট এলাকা জুড়ে বেঁড়িবাধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। দ্রুত এ বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা না গেলে পরবর্তী জোয়ারে আরো নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হবে আশংক্সক্ষা করছেন স্থানীয়রা।

    জানা গেছে বাঁধটি ভাঙ্গার ফলে প্রায় ৬০/৭০ ফুট প্রসস্থ জায়গাজুড়ে নদীর পানি প্রবল বেগে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। যার ফলে ইতিমধ্যে মাড়িয়ালা, থানাঘাটা ও বকচর গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। বেড়িবাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা না গেলে পরবর্তী জোয়ারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।

    এ ব্যাপারে স্থানীয় শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও তারা তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। চলতি অমাবস্যার কারণে নদীতে জোয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই বাঁধটি নদী গর্ভে ধ্বসে পড়ে।

    তিনি আরো  জানান, বাঁধটি মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় গতকাল (১১ আগস্ট শুক্রবার) থেকে সেখানে স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ সংস্কারের প্রাণপন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। হঠাৎ দুপুরের প্রবল জোয়ারে তা ভেঙ্গে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়নি বলে তিনি আরো জানান।

    তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাঁধটি সংষ্কারের জন্য একজন ঠিকাদার ইতিমধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে। চলতি আমাবস্যা গণের পরপরই কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।

    এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

  • আজ বিশ্ব বাঘ দিবস : দু’দশকে বনদস্যুদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক বাঘ

    আজ বিশ্ব বাঘ দিবস : দু’দশকে বনদস্যুদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক বাঘ

    নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এদিনে ঘটা করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও নানা সংকটে গত দু’যুগে বনদস্যু ও চোরা শিকারীদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের রেকর্ড পরিমাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বন উজাড়, আন্তর্জাতিক বাজারে বাঘের চাহিদা এর অন্যতম কারণ।
    বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাঘের শাবক সর্বোপরি বাঘ শুমারী তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১৬ বছরে ৫৭ টি বাঘ হত্যার তথ্য থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা অনেক বেশী বলে জানিয়েছেন বনজীবিরা।
    বিভিন্ন সময়ে নানা গবেষণা, ব্যক্তি বা সংস্থা বাঘ হ্রাসের কারণ হিসেবে নানা মন্তব্য করলেও বনজীবি ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা আশংক্সক্ষাজনকহারে বাঘ হত্যার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনবিভাগসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দূর্বলতাকেই দায়ী করছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে গণনা শেষে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে মাত্র ১০৬টি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের শরু হওয়া বাঘ শুমারীর মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয় মে মাসে। তবে এখনো প্রকাশিত হয়নি শুমারীর প্রতিবেদন। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।
    প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে থাইল্যন্ডের হুয়ানে অনুষ্ঠিত হয় টাইগার রেঞ্জ দেশ সমূহের ‘এশিয়া মিনিষ্ট্রয়াল কনফারেন্স’। সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণে ৯দফা পরিকল্পনাসহ সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি বছর ২৯ জুলাই পালিত হবে বিশ্ব বাঘ দিবস। তখন থেকেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা।
    জানা যায়, বিগত ২০১৫ সালে মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে সবোর্চ্চ ৯ টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়। এর মধ্যে কয়রার গোলখালী থেকে অক্টোবর মাসে একসাথে ৩ টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হওয়ায় বনবিভাগের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন দেখা দেয়। ঐ বছরের ৮ আগস্ট ৬৯ পিচ বাঘের হাড়সহ কয়রার এনায়েত হোসেন ও বাবু হোসেন নামে দু’চোরা শিকারীকে খুলনার লঞ্চ ঘাট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের রমজাননগরের টেংরাখালী গ্রামের চোরা শিকারীদের দ্বারা পাচারকৃত ৪ টি বাঘের শাবক উদ্ধার হয় ঢাকার শ্যামলী থেকে।
    ২০১৫ সালের ২৬ জুলাইয়ের ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতির শুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মোট ১০৬ টি বাঘের অস্তিত্ব থাকলেও এর আগে ‘পাগ মার্ক’ পদ্ধতির শুমারী অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫০ টি। শুমারী অনুযায়ী মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবন থেকে বাঘ কমেছে ৩৪৪টি। ২০০৪ সালের এক গবেষনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ ১২১টি, স্ত্রী ২৯৮টি এবং বাচ্চা ২১টি। সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়েক বার বাঘ শুমারী হলেও বাঘের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

    ২০১৫ সালের ৬ জুলাই প্রকাশিত বাঘের ঘনত্ব শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয় অবৈধ শিকার, খাদ্যের অভাব ও প্রকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব কমেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বনদস্যুসহ চোরা শিকারীদের বাঘ শিকার, সুন্দরবনের ভেতরের নদী সমূহে নৌচলাচল ও বনের পাশে শিল্প অবকাঠামো নির্মাণ বাঘের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    ২০১৬ সালে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি অর্থায়নে ‘বাঘ প্রকল্পে’ ক্যামেরার সাহায্যে গণনার জন্য খুলনা বিভাগীয় বণ্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে গণনার কাজ শুরু করে এবং মে মাসে এর কাজ সম্পন্ন করে। এখনো তার ফলাফল পাওয়া যায় নি। তবে বাঘের সংখ্যা বাড়বে না কমতে পারে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও সুন্দরবনের ৩টি অভয়ারণ্য এলাকায় গাছের সাথে ক্যামেরা বেঁধে এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
    বন সংরক্ষক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মন্দিরা বলেন, সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি। খুলনা সার্কেলের উপ-বন সংরক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঘ গনণার প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে এখন অধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গণনা কার্যক্রম হচ্ছে। বাঘ প্রকল্পের গবেষনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল¬াহ আল মোজাহিদ বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাঘের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সরকার। তবে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক।
    পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল-আল-মামুন বলেন, বাঘ শুমারী একটা কঠিন কাজ। আধুনিক পদ্ধতি গনণা হচ্ছে। প্রতিবেদন প্রকাশ না হলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
    সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সূত্র জানায়, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের লোকালয়ে ঢুকে পড়ে গণ পিটুনি, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের জলোচ্ছ্বাসে, বার্ধক্যজণিত কারণে এবং চোরা শিকারীদের হাতে মোট ১৭ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে। এর মধ্যে বন সংলগ্ন মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়লে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা, স্বাভাবিক মৃত্যু হয় ৪ টি ও সিডরের জলোচ্ছ্বাসে ১ টি বাঘ মারা যায়। আর ৮ টি নিহত হয় চোরা শিকারীদের হাতে। একই সময়ে ১ নারী সহ মোট ২৬ জন বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে ময়না নামের মোংলার জয়মনি এলাকার বৃদ্ধা গ্রাামবাসী ছাড়া সবাই বনজীবি।
    সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, গত দু’দশকে পশ্চিম বন বিভাগে ১৫ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিহত হয়। এর মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে গণপিটুনির শিকারে নিহত হয় ৮ টি। এছাড়া ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় দু’দশকে সেখানে ২৩৪ জন নারী-পুরুষ বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই বনজীবি ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণকারী।
    সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(ডিএফও) মোঃ মদিনুল আহসান বলেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে সরকার ‘বাংলাদেশ টাইগার এ্যকশন প্ল্যান ২০০৯-১৭’ বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের আক্রমণ থেকে বন সংলগ্ন লোকালয়ের জানমাল এবং মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ রক্ষায় ৮৯ টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে মানুষের হাতে ৯ টি বাঘ মারা পড়েছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘ রক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআর) কাজ করছে। বাঘ অচেতনে তাদের ৬ টি বন্দুক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
    এদিকে সুন্দরবনের রেকর্ড সংখ্যক বাঘ হ্রাসের জন্য অন্যান্য কারণের সাথে বনজীবিরা জোর দিয়ে যোগ করেছেন বনদস্যুদের কথা। দীর্ঘ দিন সুন্দরবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাছ থেকে দেখেছেন অনেক কিছু। তারা বলছেন, প্রায় দু’যুগ ধরে সুন্দরবনে নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রায় ২ ডজন বনদস্যু বাহিনী। একই বনে বাঘের সাথে বসবাস দস্যুদেরও। সুন্দরবন অভ্যন্তরে অবাধ বিচরণ ও রাত্রি যাপনে বাঘের সাথে দেখা হলেই দস্যুরা তাদের হত্যা করে। এর সাথে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সুন্দরবনের বাঘের চাহিদার বিষয়টিকে যোগ করে এতে বনদস্যুদের দস্যুতা বৃত্তির পাশাপাশি অধিক মুনাফা লাভে বাঘ হত্যার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। অভিযোগ রয়েছে, বাঘ বিলুপ্তির জন্য দায়ী চোরা শিকারীদের গ্রেফতার ও মামলায় র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা দেখালেও বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তেমন কোন সফলতা নেই।

    এব্যাপারে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়ার ষাটোর্দ্ধ আনসার আলী, বনজীবি রাহুল, মান্নান, কওছার, রাশেদুল, আঃ করিম, খালেক গাজী, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামের আমিনুর, নওশাদ, সাত্তার, মুন্সীগঞ্জের দাউদ সানা, মন্তেজ, রাজ্জাক, মুনছুর, রমজাননগর গফুর, সিদ্দিক, জবেদ আলী, সফেদ আলীসহ শতাধিক বনজীবিরা জানান, সুন্দরবন থেকে বাঘ হ্রাসের কারণ হিসেবে গবেষক থেকে শুরু করে বনবিভাগ বা দেশী-বিদেশী সংস্থা যাই বলুক বাঘ হত্যার জন্য বনদস্যুরাই সবচেয়ে বেশী দায়ী।
    জানা গেছে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তে আন্তর্জতিক বাজারে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এ সুন্দরবনের বাঘের চামড়া থেকে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চড়া মূল্য থাকায় মূলত সুন্দরবনে বনদস্যুরা বাঘ হত্যায় মেতে উঠে। সুন্দরবন বনদস্যুদের এক সময়ের অভয়ারণ্য থাকায় ঐসময়ে ব্যাপক সংখ্যক বাঘ শিকার হয় তাদের হাতে। বর্তমানে সরকার সুন্দরবন রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তা বাঘ রক্ষায় ঠিক কি ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নির্ভর করবে চলতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে বাঘ শুমারীতে বাঘের প্রকৃত সংখ্যার উপর। তবে আশার কথা, বাঘ সংরক্ষণে মনিটরিং, টহল ব্যবস্থা জোরদার এবং বনরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কতগুলো বাঘ হত্যা করা হয়েছে বা কতটি মামলা হয়েছে এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও জনববল সংকটের বিষয়টি স্পষ্ট হয় বন কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। সর্বশেষ এমন পরিস্থিতিতে আজ ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।

  • পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ

    পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ

    কলাগাছি ট্যুরিজম সেন্টার

    মোঃ মুশফিকুর রহমান (রিজভি)/রাকিবুল হাসান: সাতক্ষীরা জেলার ব্যাবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন স্থান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে দেশের বৃহত্তম উপজেলা শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ।
    মুন্সীগঞ্জের উপজেলা সদর শ্যামনগর হলেও শিল্প-বানিজ্যে দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের স্থায়ী-অস্থায়ী আগমনের কারণে শ্যামনগর উপজেলা শহরকে টেক্কা দিয়ে মুন্সীগঞ্জ এখন শুধু শ্যামনগর নয় সমগ্র সাতক্ষীরা তথা বাংলাদেশের নাম করা স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। সুন্দরবনের গাঁ ঘেষা এ উপকূলীয় অঞ্চলটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারী কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্য উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নের আকাশ নীলা, বরসা ট্যুরিজম সেন্টার, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রিত কলাগাছি ট্যুরিজম সেন্টার ইতিমধ্যে ভ্রমণ পিঁপাসুদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
    একসময়ের অবহেলিত এ অঞ্চলটি এখন সাতক্ষীরার পর্যটন শিল্প এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। মাত্র দুই যুগের ব্যাবধানে পাল্টে গেছে এ মুন্সীগঞ্জের দৃশ্যপট। ১৯৯৫ সালের দিকে মুন্সীগঞ্জ বাজারে ছিল হাতে গোনা কয়একটি খড় পাতার ছাউনির দোকান ঘর। প্রতি বৃহস্পতিবাওে এখনে বসত সাপ্তাহিক হাট। কিন্তু এখন এখানে প্রতিদিন হাট বসে, পাওয়া যায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল। ১৯৯৫ সালে মুন্সীগঞ্জের অধিকাংশ সড়ক ছিল মাটির। বর্ষা মৌসুমে পায়ে হেটে এবং নৌকাযোগে যেতে হতো নীলডুমুর (বুড়িগোয়ালিনি) গাবুরা ও খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে। শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের যানবহন ছিল বাইসাইকেলের পিছনে টিউব এর গদি বসিয়ে তৈরি হেলিকপ্টার।
    চুনা, খোল পেটুয়া ও চাঁদনী মুখার পূর্বে কপোতক্ষ নদ পেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল না নদী পারাপারের পাঁকা ঘাট ও ট্রলার। নদীর চরে কাপড় গুটিয়ে নৌকায় চড়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার হয়ে জীবনযাপন করছে এই এলাকার মানুষ।

    সেসময় এ অঞ্চলে দেখা মিলতনা পর্যাটকদের। এ অঞ্চলের ৯৫ ভাগ মানুষ ছিল হত দরিদ্র। অধিকাংশ মানুষ ছিল সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের বাঘ-কুমিরদের সাথে লড়াই করেই তাদের জীবন চলত।

    বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়ার ফার্ম।

    কিন্তু মাত্র দু’যুগের ব্যাবধানে এখনকার মুন্সীগঞ্জ এবং ১৯৯৫ এর মুন্সীগঞ্জের মধ্য আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখন মুন্সীগঞ্জের চর্তুপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্য তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পর্যাটন কেন্দ্র ও শিল্প কল-কারখানা।

    এখানে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কাকড়া চাষের ফার্ম। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ কাকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। এখানেই গড়ে উঠেছে বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়ার ফার্ম।

    রয়েছে চিংড়ি চাষের ঘের ও চিংড়ি পোনা উৎপাদনের বিশ্বমানের হ্যাচারী।
    মুন্সীগঞ্জকে কেন্দ্র কওে গড়ে উঠেছে অগ্রনী ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যংক, গ্রামীন ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংক। শতাধিক বিমাসহ ছোট বড় দেশী-বিদেশী এনজিও।

    কাঁকড়ার ফার্ম।

    এখানকার নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও সন্তোষজনক। রয়েছে র‌্যাব-৬ এর ক্যাম্প, রয়েছে বিজিবি ১৭ কোম্পানির হেড কোয়ার্টার (নীলডুমুর)। মুন্সীগঞ্জ বাজারে রয়েছে বিজিবির ক্যাম্প। এছাড়াও নীলডুমুরে রয়েছে নৌ-পুলিশ ফাড়ি। যা এখন নৌ-থানা হিসেবে পরিচিত। এবং বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস ও বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সহ মুন্সীগঞ্জ বন টহল ফাড়ি।

    মুন্সীগঞ্জে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের রাত্রীযাপনের জন্যও রয়েছে সুন্দর ব্যাবস্থা। ভিআইপি গেস্টরুম বা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল আছে মুন্সীগঞ্জ সুশীলন টাইগার পয়েন্ট, বরসা রির্সোস সেন্টার ও আকাশ নীলায়।

    জেলায় বা উপজেলায় কোন ভিআইপির’র পদার্পণ হলেই তারা বেড়াতে যান মুন্সীগঞ্জে সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য। মুন্সীগঞ্জে চলতি বছরের প্রথম থেকেই দেশী-বিদেশীসহ ভিআইপিদের আগমন ঘটেছে উল্লেখ্যযোগ্য। বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে.এম নুরুল হুদা এবং সর্বশেষ গত ৩১ শে মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুশীলন টাইগার পয়েন্টে রাত্র যাপন করে ১লা এপ্রিল আকাশনীলা, কলাগাছিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেন।
    এখন নিয়মিত দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের পদাচারণায় মূখর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকা। হাজার হাজার পর্যটক ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী-পেশার আগমন ঘটছে মুন্সীগঞ্জ ও নীলডুমুরে। প্রতিদিন দেশী বিদেশী ভ্রমণার্থীরা উপচে পড়া ভিড় জমাচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত মুন্সীগঞ্জের আকাশ নীলা, কলাগাছি ও বেসরকারী সংস্থা বরষা ট্যুরিজম সেন্টারে। সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশ করে সন্দরবন দেখার জন্য সরকারিভাবে কোন লঞ্চ বা ট্রলার না থাকলেও বেসরকারী সংস্থা বরষার রয়েছে ছোট বড় কয়েকটি লঞ্চ। তবে আকাশ নীলা সুন্দরবনের গাঁ ঘেষে চুনা নদীর চর ভরাট করা যাইগায় নির্মিত হওয়ায় এখানের আকর্ষণ আবার পর্যটকদের ভিতর অন্যরকম।
    এ বিষয়ে প্রভাষক ড. এনামুল হক বলেন, সুন্দরবনের গাঁ ঘেষা অঞ্চলে বসে সুন্দরবনের দৃশ্য দেখতে খুব ভাল লাগে। এবং এখানে ভাস্কার্য নির্মিত সুন্দরবনের বাঘ হরিণ কুমিরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রণী পর্যাটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।
    সাতক্ষীরা-৪ আসনের সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন, মুন্সীগঞ্জের নাম আজ আর শুধুমাত্র শ্যামনগর ও সাতক্ষীরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এ মুন্সীগঞ্জ একদিন জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

  • ধরা-ছোয়ার বাইরে সুন্দরবনের দস্যুদের অস্ত্র সরবরাহককারী গডফাদাররা

    ধরা-ছোয়ার বাইরে সুন্দরবনের দস্যুদের অস্ত্র সরবরাহককারী গডফাদাররা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা সময় বনদস্যু বাহিনীর হাতে সম্পূর্ণ জিম্মি হয়ে পড়েছিল সুন্দরবনের পেশাজীবীরা। সরকারের আন্তরিকতায় বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ায় ধীরে-ধীরে দস্যু মুক্ত হচ্ছে গোটা সুন্দরবন অঞ্চল।
    সম্প্রতি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সুন্দরবনের শীর্ষ ২৬টি দস্যু বাহিনী। এই প্রক্রিয়ায় সুন্দরবনে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরমিাণ গোলাবারুদ উদ্ধার হলেও অস্ত্র যোগানদাতা গডফাদাররা গ্রেফতার না হওয়ায় পুরোপুরিভাবে বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনের দস্যুতা। এসব গডফাদাররাই আবারো নতুন নতুন বাহিনী তৈরি করে সুন্দরবনে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ফলে নতুন করে সুন্দরবনের পেশাজীবী জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
    সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট জেলে, বাওয়ালীরা জানায়, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের (সাতক্ষীরা রেঞ্জ) বনজীবীরা বর্তমানে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছোটভাই বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই বাহিনী পরিচালনা করছে শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি এলাকার মাজেদ ভাঙ্গির ছেলে জাকির ভাঙ্গি।
    এই ছোটভাই বাহিনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ জন। তাদের কাছে ডাবল ও সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, টুটুবোর রাইফলেসহ প্রায় ১৫টি অস্ত্র রয়েছে।
    সুন্দরবনের জেলে বাওয়ালীরা বলছেন, এসব বাহিনীর কেউ সরকারে কাছে আত্মসমর্পণ করলে বা সুন্দরবনে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে দস্যুদের দুই-একজন গ্রেফেতার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলওে দস্যুদের অস্ত্র যোগানদাতা গডফাদাররা সব সময় থেকে যায় ধরা-ছােঁয়ার বাইরে। যে কারণে সরকার চাইলেও সুন্দরবন থেকে দস্যুতা একেবারেই নির্মূল হচ্ছে না।
    র‌্যাব, পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব গডফাদারদের তথ্য, এদের মধ্যে কেউ কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও আইনের ফাঁক-ফোকরে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসে।
    সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা ও রমজাননগর ইউনিয়নের কিছু প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র যোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বহু আগে থেকেই। স্থানীয় জেলে বাওয়ালীরা জানায়, কিছু দিন আগে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু আলিফ ও মজনু বাহিনীর অন্যতম গডফাদার ছিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজুল, বকুল মেম্বর, কালিঞ্চি এলাকার জামু ও রমজাননগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লাল্টু। এদর মধ্য সিরাজুল ও জামু আলিফ বাহিনীর সাথ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু লাল্টু মেম্বর গত বছর র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পায়। মুন্সিগঞ্জের বকুল মম্বরকেও একবার আটক করছিল র‌্যাব। বর্তমানে সে ঐ এলাকায় র‌্যাবের সোর্স পরিচয়ে নানা অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
    নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থনীয় এক বনজীবী অভিযোগ করে জানান, অস্ত্র ব্যাবসায়ী রমজাননগর ইউনিয়নর টেংরাখালি গ্রামের লাল্টু মেম্বর র‌্যাবের হাতে আটক হয়ছিল এরপর জামিনে ফিরে আসে। কিছুদিন আগে সে সুন্দরবনে ছোটভাই বাহিনীর কাছে ৪টি অস্ত্র সরবরাহ করছে। সেই অস্ত্রের টাকা নিয়ে ছোটভাই বাহিনীর সাথে তার দন্দ্ব চলছে। ভেটখালি বাজারে লাল্টু মেম্বর ও ছোটভাই বাহীনির প্রধান জাকিরের ভাই ইউনুসের মধ্যে এই টাকা নিয়ে হাতাহাতিও হয়েছে। জেলে বাওয়ালীদর এসব অভিযাগের প্রমাণও মিলেছে অনুসন্ধানে।
    লাল্টু মেম্বরের অস্ত্র ব্যাবসার বিষয়টি জানার পর যোগাযোগ করা হয় বর্তমানে সুন্দরবনে থাকা বনদস্যু ছোটভাই বাহিনীর প্রধান জাকিরের সাথে। জাকির বলেন, কিছুদিন আগে লাল্টু মম্বরের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে চারটি অস্ত্র ও একশত পিছ গুলি কিনেছি। সে নিজে সুদরবনে এসে আমাকে অস্ত্র দিয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি ব্র্যাশ (অস্ত্র) ও কিছু গুলি কেনার জন্য ১০লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে অস্ত্র না দিয়ে তালবাহানা করায় আমি টাকা ফেরত চাইলে সে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে। এ নিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে তার হাতাহাতিও হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে লাল্টু মেম্বর বলেন, আমি এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি। সুন্দরবনের মূল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আমাকে ফাঁসানোর জন্যই র‌্যাবের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। র‌্যাব আমাকে আটক করেছিল। বর্তমানে আমি জামিনে বাড়িতে আছি। ছোটভাই বাহিনীর প্রধান জাকিরের সাথে নৌকার টাকা নিয়ে পূর্বের একটি লেনদেন আছে। এটি জাকির দস্যুতা করতে যাওয়ার আগের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে শ্যামনগর থানাতে বসাবসি হয়েছিল। তার অভিযোগ মিথ্যা আমি কোন অস্ত্রের ব্যাবসা করি না। প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসাতেই তাকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বলেন, আমি সুন্দরবনে কোন ব্যাবসা করি না। বনদস্যুদের সাথেও আমার কোন সম্পর্ক নেই। প্রশাসনের সাথে আমার সু-সম্পর্ক থাকায় অনেকে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে। এলাকার কোন জেলে বাওয়ালী বিপদে পড়লে আমি তাদের সগযোগিতা করি। এমনকি প্রশাসনের কেউ সুন্দরবনে অভিযান চালালেও তারা আমার সহযোগিতা নেয়। তবে সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সুন্দরবনে নিজেদের ব্যবসা ও অধিনস্থ জেলে বাওয়ালীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই দস্যু বাহিনী গঠন ও অস্ত্র সরবারহ করে লোকালয়ের ব্যবসায়ী গডফাদাররা। বনদস্যুদের মধ্যে কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে আবারো নতুন নতুন বাহিনী তৈরি করছে মূলত তারাই। বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্র ব্যাবসায়ি গডফাদাররা পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টর্গাডরে হাতে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে এসে আবারো তাদের কার্যক্রম চলমান রাখে। ফলে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের দস্যুতা একেবারেই বন্ধ হচ্ছে না।
  • খরস্রোতা বেতনা এখন শীর্ণকায় খাল!

    খরস্রোতা বেতনা এখন শীর্ণকায় খাল!

    নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘বেতনা বাঁচলে সাতক্ষীরা বাঁচবে’ এই স্লোগান ধারণ করে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন পালিত হয়েছে। শনিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ‘সাতক্ষীরা বেতনা বাঁচাও আন্দোলন ও সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ’।
    মানববন্ধনে বক্তারা  বলেন, বেতনা নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এর চরে গড়ে উঠছে বাড়ি-ঘর দোকান-পাট ও বাজার-ঘাট। এক কালের খরস্রোতা বেতনা এখন এক শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে। বেতনায় এখন আর নৌকা চলে না, বেতনায় জোয়ারভাটা খেলে না। এখন পায়ে হেটে বেতনা পার হওয়া যায়। এর দুই তীর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। বেতনায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষেও মেতে উঠেছেন প্রভাবশালীরা।
    মানববন্ধনে অভিযাগ করে বক্তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সব ধরণের সুবিধা নিয়ে দখলদারদের সহায়তা দিচ্ছে। ফলে বেতনা দিনেদিনে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ঝাউডাঙ্গা থেকে সুপারিঘাটা পর্যন্ত নদী জরুরি ভিত্তিত খনন প্রয়োজন দাবি করে তারা বলেন, ২০১৫ সালে বেতনা খননের নামে লুটপাট করা হয়েছে। এতে বেতনা তীরের মানুষের এতোটুকু উপকার হয়নি।
    তারা আরও বলেন ‘আমরা বেতনাকে দখলমুক্ত দেখতে চাই। বেতনা খনন চাই।’
    মানববন্ধনে বক্তব্য রাখন দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহি , এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, এ্যাড. ওসমান গনি, এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, স্বপন কুমার শীল, কল্যাণ ব্যানার্জি, আলি নুর খান বাবুল, আবদার রহমান প্রমূখ।
    তারা বেতনা রক্ষায় সরকারের দষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, বেতনা সংলগ্ন ১২ টি বিলের পানি এই নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়। বেতনার উপর তিনটি স্লুইস গেটের সবক’টি অকেজো হয়ে পড়েছে।
    1. তারা অবিলম্বে বেতনা খনন এবং বেতনা দখলমূক্ত করার দাবি জানান।
  • দেবহাটায় ইছামতি নদীর ভেড়ীবাঁধ ঝুকিপূর্ণ : বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক্ষা

    দেবহাটায় ইছামতি নদীর ভেড়ীবাঁধ ঝুকিপূর্ণ : বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক্ষা

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার গা ঘেষে বয়ে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত নদী ইছামতির কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
    চলতি বর্ষা মৌসুমে ভেড়ীবাধের ভাঙন ব্যাপক দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী। সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের খাওয়া ঘুম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ভেড়িবাধের সামান্য যে অংশটুকু এখনো অক্ষত আছে যদি পানির চাপে সেটুকুও ভেঙ্গে যায় তাহলে নাংলা, ছুটিপুর, ঘোনাপাড়সহ কয়েকটি গ্রাম ইছামতি নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে ফসলি জমি, প্রানহাণি ঘটতে পারে মানুষ সহ প্রাণী সম্পদের।
    পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রামবাসীর আতংক আরও বেড়ে চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ এবং গুটিকয়েক মানুষের ঠেলা জাল নদীতে ফেলার কারণে দেবহাটা উপজেলার চরকোমরপুর, ভাতশালা, টাউনশ্রীপুর, সুশীলগাতী, শীবনগর ও নাংলা সহ কয়েকটি স্থানের ভেড়ীবাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত বছরে যে সামান্য পরিমানের কাজ করা হয়েছিল সেসব স্থানে ছাড়াও নতুন নতুন স্থানে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
    গ্রামবাসীরা জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীপাড় থেকে বালু তোলার কারণে নদীর বাধঁ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানেও উপজেলার সুশীলগাতি এলাকায় মেশিনের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। বড় কোন জোয়ার বা বৃষ্টি হলেই ভেড়ীবাধঁগুলো যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
    ভেড়ীবাধঁঁ গুলির মধ্যে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ নাংলা ছুটিপুর, সুশীলগাতী এলাকার বিজিবি পোষ্টের সামনে, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা গ্রামের সামনের বাঁধ।
    এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভেড়ীবাধঁগুলো ঝুকির মধ্যে থাকে। পাউবো মাঝে মাঝে সংষ্কার কাজ করে কিন্তু সেটাও নামমাত্র। এর মধ্যে আবার প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও নদীর মাটি কেটে নিয়ে কতিপয় অসাধু মহল।
    গ্রামবাসী আরও জানান, চিংড়ি চাষীরা খেয়ালখুশীমত মূল বাধেঁর গা ঘেষে ছোট-ছোট বাঁধ দিয়ে মূল বাঁধের সর্বনাশ করছে। বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে পোনা ধরা এবং বালু তোলার কারণে বাঁধগুলো ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর আগে শীবনগরের পাশে রাজনগর মৌজা ইছামতির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
    এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
    নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লাভলু বিশ্বাস জানান, নাংলা এলাকার ভেড়ীবাধঁটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় তারা ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
    দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান জানান, নাংলা এলাকার ভেড়ীবাধঁ সংষ্কারের বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক কে সরেজমিনে দেখিয়েছেন। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
    এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ এর আওতাধীন ৩ নং পোল্ডারের কালীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও ওবায়দুল হক মল্লিক জানান, নাংলা এলাকার বাধঁ সংস্কারে এবং পাকা ব্লক দেয়ার জন্য প্রজেক্ট দেয়া আছে। বাজেট পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
    দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল আসাদ জানান, তিনি ইতিমধ্যে ভেড়ীবাধঁ সংষ্কারের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত গ্রামবাসী নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
  • হালদায় মা মাছের মৃত্যুর মিছিল : সংশ্লিষ্ঠরা উদ্বিগ্ন

    দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদী। মরে ভেসে উঠছে মা মাছ। ভেসে উঠছে মৃগেল, বড় বড় আইড়, কাতলা, বাইন, টেংরা, পুটি, চিংড়িসহ নানান প্রজাতির মাছ বা অন্য জলজ প্রাণী। তবে সবই মৃত। আর এই দৃশ্যদেখে কোপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হালদাপাড়ের মানুষের। কারণ ওদের বেঁচে থাকার অবলম্বন এই হাল নদীর মা মাছেরা। কদিন ধরে পানি ওপর মা মাছেরা মরে ভেসে উঠছে। এদিকে হালাদার এই বিপর্যয় দেখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে সচেতন মহলের। তারা বলছেন হালদা বাঁচাতে এখনই আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

    জানা গেছে, ক‘দিন আগের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে তলিয়েছে জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানের নিম্নাঞ্চল। ওই পানি নামার পর কয়েকদিন ধরে হালদার মাছ মরে ভেসে ওঠার বিষয়টি দৃষ্টিতে আসে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। একদিন আগে বৃহস্পতিবার অল্প পরিসরে দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার দেখা যায় মৃত্যুর মিছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রচুর মাছ ও জলজপ্রাণী মারা গেছে।

    হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, খবর পেয়ে হালদা-কর্ণফুলীর মোহনা থেকে নদীটি পরিদর্শন করেছি। দূষণে বিপর্যস্ত হালদার পানি। মাছ মরে ভেসে উঠছে। ২/৩ কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজির রুই মাছও রয়েছে এই মৃতমাছের সারিতে।

    তিনি বলেন, গবেষণার জন্য ১৫ কেজি ওজনের মৃগেল মাছ মাটি দিয়েছি। পরে কঙ্কাল সংগ্রহ করা হবে। এর আগে এই নদীতে কয়েক মাস আগে হালদার অনেক ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল।

  • আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে বিছট গ্রাম প্লাবিত

    আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে বিছট গ্রাম প্লাবিত

    নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে বিছট গ্রামসহ আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বিছট গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে এ প্লাবনের ঘটনা ঘটে।
    খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। বৃহস্পবিার দুপুরে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ নং পোল্ডারে বিছট গ্রামের সরদার বাড়ির সামনে প্রায় দেড়’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেঁড়িবাধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
    স্থানীয় এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল হাকিম জানান, ‘আগে থেকেই বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বেশ কিছুদিন আগে বাঁধটি সংষ্কারের জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও মূল ঠিকাদার এখানে কাজ করতে আসেনি। একাধিক হাত বদল হয়ে তৃতীয় একজন বাঁধ সংষ্কারের কাজ করতে আসলেও তেমন গুরুত্ব দেননি তিনি। কাজ ফেলে তিনি কয়েকদিন আগে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।’
    তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শুরু করলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। অমাবস্যার করাণে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুরের প্রবল জোয়ারের চপে হঠাৎ করেই বাঁধটি নদী গর্ভে ধ্বসে পড়ে। প্রায় দেড়’শ ফুট এলাকা দিয়ে নদীর পানি প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকছে। ইতিমধ্যে বিছট গ্রামের এক তৃতীয়ংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। বেড়িবাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা না গেলে পরবর্তী জোয়ারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।’
    আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর আলম জানান, প্রায় ৬ মাস ধরে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও বাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন উদ্যোগ নেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতির কারণেই আনুলিয়া ইউনিয়নবাসীর আজ এই দুর্দশা। তিনি জানান, এখনই বাঁধটি সংস্কার করতে না পারলে পরবর্তী জোয়ারে আনুলিয়া, নয়াখালী, বল্লভপুর, বাসুদেপুর, কাকবসিয়াসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে। তিনি আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেননি।
    এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন জানান, সংশ্লিষ্টদের দ্রুত রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাধ সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
    পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস.ও মশিউল আবেদীন জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা সংস্কারে রিং বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। জোয়ারের জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে।

  • নুরনগরে পুশ বিরোধী অভিযান

    নুরনগর প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার নুরনগরে বাগদা চিংড়ীতে অপদ্রব পুশ বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বখতিয়ার আহমেদ এই অভিযানে অংশ নেন। শ্যামনগর উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা সুজন সরকার এবং সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসেন সাগর এর নির্দেশে এই অভিযান চালানো হয়। গত ২৬শে মে উক্ত কর্মকর্তাগন নুরনগরে পুশ বিরোধী অভিযান চালান। এবং বিভিন্ন মৎস্য আড়ৎকে আর্থিক জরিমানা করেন। অভিযানে বাগদা চিংড়ীতে অপদ্রব পুশ করার ময়দার বস্তা, ময়দা জালানো হাড়ী, সিরিন্সসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়। বাগদা চিংড়ীতে অপদ্রব পুশ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনগন।

  • জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    শ্যামনগর সংবাদদাতা: শ্যামনগর জলবায়ু পরিষদের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে প্রগতি’র মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জলবায়ু পরিষদ সভাপতি সাবেক উপাধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাসদের সভাপতি শেখ হারুনর রশিদ, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান শাহানা হামিদ, অধ্যাপক দেব প্রসাদ মন্ডল, জাসদ নেতা আলতাফ হোসেন, প্রগতির সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু সাইদ, সাংবাদিক রনজিৎ বর্মন প্রমুখ।
    সভায় বক্তারা বলেন, আইলার আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। উপজেলার নদী সংলগ্ন ইউনিয়ন গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ি রমজাননগসহ উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধের সংস্কার করা হয়নি। এখনও আইলার দুর্গত অনেক পরিবার বেড়ী বাঁধে রয়ে গেছে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউপিতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
    উল্লেখ্য, ২৫ মে ২০০৯ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আইলার আঘাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় উপকুলীয় এলাকা। উপকুলীয় এলাকার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলায় মারাতœক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন তলিয়ে যায় পানির নিচে। অর্ধশত মানুষ মারা যায়। হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প, পুকুর, ফসলের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে যায়। জলচ্ছাসে কাঁচা ও আধা পাকা ঘর বিদ্ধস্ত হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়ে বহু মানুষ।