ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত কর্মশালায় ঘেরে ভাঙান মাছ চাষ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন এবং ভাঙান মাছের চাষ পদ্ধতি ও বাবস্থাপনার উপর চাষি সহায়িকা বিতরণ


জুন ১১ ২০২৪

Spread the love

 

 

সংবাদবিজ্ঞপ্তি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞানবিভাগ সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা্র ঘেরে ভাঙান মাছের পাইলট চাষ প্রকল্পের (Project title: Optimization of grey mullet (Mugil cephalus) mariculture in different culture techniques) সমাপ্তি ও ফলাফল প্রচার বিষয়ক কর্মশালা ১০ জুন সোমবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পিজ্জামিলান, আল-বারাকাএর কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি অর্থায়ন করে মৎস্যঅধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিনফিসারিজ প্রকল্প।

 

কর্মশালায় উপকূলীয় এলাকায় ভাঙানমাছ চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক চাষি সহায়িকার মোড়কউন্মোচন করাহয় এবং পরবর্তীতে এই চাষি সহায়িকা বিভিন্ন চাষি ও অন্যান্যঅংশীজনদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া এই চাষিসহায়িকাটির উপরভিত্তিকরে তৈরি একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে এইপ্রকল্পের একজন সুবিধাভোগী চাষি ভাঙানমাছ  চাষবিষয়কঅভিজ্ঞতা এইকর্মশালায় তুলে ধরেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে ভাঙান মাছ চাষবিষয়ক উন্মুক্তআলোচনা ও প্রশ্নোত্তরপর পরিচালনা করা হয় । যেখানে কর্মশালায় উপস্থিত বিভিন্ন অংশীজন ভাঙানমাছ চাষ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

 

মূলত উপকূলীয় এলাকার ঘেরে লাভজনকভাবে ভাঙানমাছচাষ পদ্ধতির আবিষ্কার করতে এই গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়। তিনটি ভিন্ন চাষ পদ্ধতিতে (সনাতন,উন্নত-সনাতন ওআধা-নিবিড়) ৯ টি পুকুরে বিভিন্ন ঘনত্বে অন্যান্য মাছের সাথে ভাঙান মাছ চাষ করাহয় এবং সবচেয়ে লাভজনক চাষপদ্ধতিতে (উন্নত-সনাতনচাষপদ্ধতি) ভাঙান মাছ চাষের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় ভাঙান মাছ চাষ জনপ্রিয়করার জন্য এইমাছ চাষ পদ্ধতির চাষি সহায়িকা চাষি ও অন্যান্য অংশীজনদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

 

ভেটকির বিকল্প ভাঙান

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের মুখ্যগবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন,ভাঙান মাছ বিভিন্ন মাত্রার লবনাক্ততা সহ্য করতে পারে বিধায় অন্যান্য মাছের তুলনায় ভাঙান ঘেরে চাষেরজন্য অধিক উপযুক্ত। উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ত পানির ঘের/পুকুরে বাগদা চিংড়ির সাথে অন্যান্য মাছ যেমন, পারশে, টেংরা, ভেটকি,তেলাপিয়া, খল্লা, ইত্যাদি চাষ হয়ে থাকে । বর্ষা মৌসুমে পানির লবণাক্ততা কমে গেলে অন্যান্য স্বাদু পানির প্রজাতি যেমন, গলদাচিংড়ি, রুই, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, কাতলা, ইত্যাদি চাষ হয় । মাঝারি লবণাক্ত ঘেরগুলোতে বড় সাদা মাছ হিসেবে অন্যান্য মাছের সাথে ভেটকি মাছেরচাষ হয়। কিন্তু ভেটকি খুব রাক্ষুসে স্বভাবের এবং উৎপাদন খরচ অনেক বেশি (এফসিআর ৩ এর বেশি) হওয়ায় খামারিরাএর বিকল্প খুঁজছে । ভাঙান এক্ষেত্রে একটি কার্যকারী বিকল্প হতে পারে। এছাড়া ভেটকি মাছের মতোঅত্যধিক মাত্রার রাক্ষুসে স্বভাবের না হওয়ায় চিংড়ির সাথে এই মাছ চাষকরা অধিক লাভজনক। যদিও ভাঙানমাছ সুবিধাভোগী খাদক হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রয়োজনে অন্যান্য ছোট মাছ খেয়ে থাকে, কিন্তু চাষ শুরুর প্রথমেই মাছ ছাড়ার সময় ভাঙান ও চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের পোনার আকার বিবেচনায় মজুদ করলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয় না। সুতরাং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাঙান মাছচাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব।

 

জলবায়ু সহনশীল উপায় হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় ঘেরে ভাঙান মাছ চাষ

 

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন হিসেবে জলবায়ুসহনশীল উপায় হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় ঘেরে ভাঙানচাষ করা যেতে পারে যা কিনা উপকূলীয় এলাকার মৎস্য চাষিদের জীবিকার উন্নয়নে কাজ করতে পারে। কারণ এ মাছটি তাপমাত্রা, লবনাক্ততার অনেক তারতম্যের মধ্যে ও চাষাবাদ করা যায়।

 

কারা উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রেখেছেন

 

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রকল্পের মুখ্যগবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানবিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুলইসলাম। প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করেন উক্ত প্রকল্পের কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গৌতম কুমার কুন্ডু।

 

এছাড়া স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অপর্ণা বর্মণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মৎস্য বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মশালার উপস্থাপনা করেন উশরিকা ইসলাম, মাস্টার্স শিক্ষার্থী, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া গবেষণায় সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেন মোঃআসিফহাসান,  সৈকতদাস, মোঃ ইসমাম ইবনে হায়দার এবং মোঃ জাফরুল ইসলাম।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ মনিরুল ইসলাম, উপ পরিচালক, মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রন, মৎস্য অধিদপ্তর, খুলনা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান এবং খুলনা বিভাগীয় উপ প্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি।

 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা  মোঃ শফিকুল ইসলাম, দেবহাটা উপজেলার জেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন, আশাশুনি উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা        সত্যজিৎ মজুমদার, শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার, কালীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা, কলারোয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্যকর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ মন্ডল এবং তালাউপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা  স্নিগ্ধা খাঁ  বাবলী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের সুবিধাভোগী চাষিগণ, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা হতে আগত বিভিন্ন অংশীজন (ঘেরখামারি, হ্যাচারিমালিক, কম্পানিরপ্রতিনিধি, ইত্যাদি), এনজিওকর্মী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন