কেন বধ্যভূমি চাই


এপ্রিল ১৪ ২০২৩

অধ্যাপক ইদ্রিস আলী---

হাজার বছরের ইতিহাসের পরিক্রমায় সমাজ সভ্যতার বিকাশে একটি জাতি আত্মমর্যাদা নিয়ে দাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। কৃষি ভিত্তিক সমাজ কাঠামোয় বাঙ্গালী জাতি বারবার ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা করেছে।আদি পাল যুগ থেকে শুরু করে এই বাঙ্গালীজাতীর পরিচয়,পরিচিতি, পালবংশের দীর্ঘ চার শত বছর স্বশাসন,সভ্যতার বিকাশ,দাক্ষিনাত্যের সেনবংশের কাছে পরাজয়,দীর্ঘ দিনধরে বিদেশি দেরদ্বারাশাসিত হওয়া,ধাপে ধাপে শোষন বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, চল্লিশ সালের লাহোর প্রস্তাব,১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে আন্দোলন, ২৯৫২ সালে সালাম রফিক বরকতে আত্মাহুতি, ১৯৬৯ সালে গনঅভ্যুত্থান,১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন সব বাঙ্গালী জাতির আত্মপরিচয় আত্মমর্যাদার স্মৃতি চিহ্ন। পৃথিবীর বুকে মাথাউচু করে দাড়ানো জাতিই হলো বাঙালী জাতি।প্রজন্মেরপর প্রজন্ম বেঁচে থাকে ইতিহাস নিয়ে।ইতিহাসের সত্য মিথ্যা ভালোমন্দ নিয়ে সংস্কৃতি সভ্যতা গড়ে ওঠে।আজ আমরা কিদেখছি? নতুনপ্রজন্ম স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশী আগ্রহী নয়। যেমন করে আমরা বিদেশি দ্বারা শাসিত হয়ে অনেক কিছু ভুল জানি বা ভালো ভাবে জানি না,তেমনি বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস ও আমরা ভালো ভাবে জানি না বা জানতে পারিনা।এটা এক করুন বাস্তবতা। বাংলাদেশ সৃষ্টির শত্রুমিত্র না জানলে বাঙ্গালি জাতীয়বাদী চেতনা, মুক্তি যুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ চর্চার ক্ষেত্র তৈরী হবে কিভাবে? যে বাংলাদেশে ধনী গরীব বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন গতিশীল হওয়ার কথা,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেই শিক্ষা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন তর। আজ সাতক্ষীরা জেলায় ৭৮ টি ইউনিয়নে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শত শত স্থানে সাধারণ জনগণের উপর পাকহানাদার বাহিনী ওতাদের দোশরদের দ্বারা অমানুষিক নির্যাতন, হত্যা গুম অগ্নিসংযোগের স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। অত্যাচারের ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের এই ক্ষতচিহ্ন গুলো ভালোভাবে দরদদিয়ে উপস্থাপন করা হয়নি।কারণ এইজেলার অধিকাংশ সংসদীয় সিট গুলো প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংসদ সদস্য দ্বারা পরিচালিত হয়নি বা হতে পারেনি। মুক্তি যুদ্ধের চেতনার পক্ষে প্রচার খুবই দুর্বল। এইদেশটি কোনভাবে চলবে? জাতি রাষ্ট্র! না ধর্ম রাষ্ট্র। যারা ধর্মরাষ্ট্র চায়,তারাতো স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইতিহাস চর্চা হউক সেটা চাইবে না।কিন্ত যারামুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তারা তো চেষ্টা করবেন,স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য নতুন প্রজন্ম যাতে জানতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়া।”,সত্য যে বড়ই কঠিন, আমিকঠিনের ভালোবাসিলাম,সেকখনো করেনাবঞ্চনা” যারা শোষণ বঞ্চনার পক্ষে, তারা ইতিহাসের সত্য পাতাকে আড়াল করতে চায়,ছিঁড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু পারেনা। একটি অবাক করার মত বিষয় হলো সাতক্ষীরা জেলার অন্যান্য উপজেলায় কমবেশী বধ্যভূমি, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপিত হলেও সাতক্ষীরা সদরউপজেলায় কোন বধ্যভূমি, স্বাধীনতার স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে উঠেনি। এর কারণে র গভীরে প্রবেশ করলে দেখাযায় দেশ স্বাধীনের পর থেকে সংসদসদস্য ছিলেন কখনো জামাত নেতা কসাই খালেকমন্ডল,জামাত নেতা কাজীশামসুর রহমান, মুসলিম লীগেরর নেতা রাজিয়াফয়েজ।এমনকি মহাজোট সমর্থিতজাতীয়পার্টির এম এ জব্বার।এরা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংসদ সদস্য ছিলেন না। সংগত কারণে এইসদর উপজেলায় মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন বধ্যভূমি বা স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে উঠেনি। সাতক্ষীরা জেলায় সরকারি হাইস্কুলের পিছনে দিনেষকর্মকারের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়া প্রায়চারশ ‘ র মত নারীপুরুষকে পাক সেনারা নির্বিচারে গুলিকরে,বেয়নেটদিয়ে খুচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যাকরে। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। সাতক্ষীরার স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনও সাংবাদিক বৃন্দ,মুক্তি যোদ্ধারা সম্মিলিত ভাবে ২০১৪ সাল থেকে এই দিনেষকর্মকারের বাড়ীতে সংঘটিত হত্যাযগ্ঞস্থলে বধ্যভূমি গড়ে তোলার দাবী জানাচ্ছে।জনগনের চাপে জেলাপ্রশাসক মাঝে মাঝে বলে থাকেন খুবশিঘ্রই সংঘটিত স্থলে বধ্যভূমি হবে।কিন্তু হচ্ছেনা। আরও অবাক ব্যাপার হলো এখন সদরের সংসদসদস্য একজন মুক্তি যোদ্ধা। দুইবার পরপর সাংসদ। তিনি ও যাতে এইবধ্যভুমি গড়ে ওঠার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেন,এলাকাবাসী জোর দাবী জানাচ্ছেন। এছাড়াও, বড়বাজার ডায়মন্ড হোটেল, বাঁকাল ব্রীজ,বাদামতলা,,ঘোনার মোড়,ঝাউডাংগা,বিনেরপোতাসহ চালতেতলাসহ অসংখ্যেয় জায়গায় এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল। এসকল জায়গায় যদি বধ্যভূমি গড়ে উঠে,তাহলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। স্বাধীনতার শত্রু মিত্র চিনতে পারবে।বিদেশি দ্বারাশাসিত হলে যে ইতিহাস পড়ে তরুণপ্রজন্ম বড় হয়,সে ইতিহাস হয় কাপুরুষের ইতিহাস। আর প্রকৃত বাঙ্গালি জাতি তাদের নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা শাসিত হলে তরুণপ্রজন্ম হবে বিরের জাতি,সাহসী জাতি।তাই সর্বক্ষেত্রে বিদেশী প্রভাব মুক্ত শাসনও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস পড়াও চর্চার কোন বিকল্প নেই। এখন কার প্রজন্ম যদি এইজাতির বিকাশের ইতিহাস সম্পর্কে জানে,তাহলে আত্মমর্যাদা বাড়বে। প্রখ্যাত কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আমার পরিচয়ে যেমন করে বাঙালির পরিচয় তুলেধরেছেন,তেমনি আমরা বধ্যভূমির মাধ্যমে, স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে তোলার মাধ্যমে এই জাতির শত্রু মিত্রের ইতিহাস সম্পর্কে তরুণদের অবহিত করে আমরা হতে পারব জ্ঞান সমৃদ্ধ গর্বিত জাতি।বর্তমানে মহান সংসদে পঁচিশে মার্চকে গনহত্যাদিবস ঘোষণা করা হয়েছে,তাই এইজেলার যেখানে যেখানে হত্যা নির্যাতন সংঘটিত হয়েছিল, সেখানেই বধ্যভুমি গড়ে উঠা এখন সমায়ের দাবী। জেলায়বধ্যভুমি চাই,ইতিহাস সচেতনপ্রজন্ম চাই।জেলায় মুক্তি যুদ্ধের জাগরণচাই,অতিসত্বর বধ্যভূমি চাই।সাহসী প্রজন্মের জাগরণচাই,হত্যা গুমের হোতাদের চিনতে চাই,দ্রুত বধ্যভূমি স্থাপন চাই।বাদল বিনয়,দিনেশের মত সাহসী প্রজন্ম চাই,সাতক্ষীরায় বধ্যভূমি চাই। বঙ্গবন্ধুর মত সাহসী জাতি চাই,এইজেলায় স্মৃতি সৌধ চাই,বধ্যভূমি চাই। আসুন সাতক্ষীরা কে কলঙ্কমুক্ত করি,রাজাকারমুক্ত,দুর্নীতি মুক্ত হিসাবে গড়েতুলি।সকল প্রকারের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আলোকিত সাতক্ষীরা গড়েতুলি।জয় আমাদের নিশ্চিত।

অধ্যাপক ইদ্রিস আলী
সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি