1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন
২৭ আষাঢ়, ১৪৩২
Latest Posts
📰সাতক্ষীরায় ব্র্যাকের উদ্যোগে ৫শ শতাধিক মানুষের মাঝে ফ্রি চুক্ষ চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত📰সুধীজনদের সাথে তালায় নবাগত ইউএনও’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত📰শ্যামনগরের মানিকখালী-রমজাননগর সড়কের কালভার্টে বেহাল দশা, চলাচলে ঝুঁকি📰আশাশুনি দারিদ্র বিমোচন কার্যালয় ও ৩ অফিস পানির সাথে যুদ্ধ করে চলছে📰সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন📰সাংবাদিক গাজী মোক্তার হোসেনের মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক ফোরামের গভীর শোক প্রকাশ 📰সাতক্ষীরায় জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন📰এসএসসির ফল প্রকাশ ১০ জুলাই📰উপজেলায় অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে নীতিগতভাবে একমত দলগুলো📰গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯২

রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরচিন্তা

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শনিবার, ৮ মে, ২০২১
  • ৪৯২ সংবাদটি পড়া হয়েছে


বীরেন মুখার্জী

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ধর্ম-দর্শন নিয়ে আমাদের সমাজে নানান মত চালু আছে। এই পরিবার বংশানুক্রমিক উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী হয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মধর্মের প্রবক্তা ছিলেন। ব্রাহ্মধর্ম মূলত ১৯০০ শতাব্দীর বাংলার একটি ধর্মীয় আন্দোলন। ব্রাহ্মধর্মের অনুগামীরা ‘ব্রাহ্ম’ নামে পরিচিত। ব্রাহ্মধর্ম হিন্দুধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলেও রাজা রামমোহন একসময় হিন্দুধর্মের ভেতর থেকেই উক্ত ধর্মকে সংস্কার করতে উদ্যোগী হন। তবে তার উত্তরসূরি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এ সময় বেদের অভ্রান্ততা অস্বীকার করেন, ফলে এর মাধ্যমে ব্রাহ্মসমাজ মূলধারার হিন্দুধর্ম থেকে বেরিয়ে আসে বলে ধারণা করা হয়। যদিও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছু হিন্দু রীতিনীতি রক্ষা করেছিলেন। তৎকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় অগ্রগামী এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করা রবীন্দ্রনাথ, ঠাকুর পরিবারের ধর্মীয় বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেছেন। নিজে ব্রাহ্ম হওয়া সত্ত্বেও সাহিত্যকর্মে হিন্দুধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। তাহলে রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরচিন্তায় কোন বিশেষ ধর্ম-দর্শন ক্রিয়াশীল ছিল- এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।
অস্বীকারের সুযোগ নেই, যেকোনো সৃষ্টিকর্মের নেপথ্যে একটি বিশেষ ভাব, চিন্তা-দর্শন, মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। স্রষ্টার মনের ভাব, চিন্তা-দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি তার সৃষ্টিকর্মে প্রতিফলিত হবে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ নাস্তিক হলে, তার সৃজনকর্মেও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা নাস্তিক্য চিন্তাচেতনার প্রকাশ ঘটে। আস্তিকের সৃষ্টিকর্মেও স্বাভাবিকভাবেই আস্তিক্য ভাব-দর্শনের প্রতিফলন ঘটে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিপ্রাচুর্যে আস্তিক্যবাদী দর্শনের সন্ধান মেলে। রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। ধর্ম পালনে তার অনীহা না থাকলেও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সজ্ঞানে পরিহার করতেন। তবে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠে এটি স্পষ্ট হয়, জীবনের একটি পর্যায়ে এসে তিনি অরূপের সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘আধ্যাত্মিক সাধনা কখনোই রূপের সাধনা হইতে পারে না। তাহা সমস্ত রূপের ভিতর দিয়া চঞ্চল রূপের বন্ধন অতিক্রম করিয়া ধ্রুব সত্যের দিকে চলিতে চেষ্টা করে। ইন্দ্রিয়গোচর যে কোনো বস্তু আপনাকেই চরম বলিয়া স্বতন্ত্র বলিয়া ভান করিতেছে, সাধক তাহার সেই ভানের আবরণ ভেদ করিয়া পরম পদার্থকে দেখিতে চায়।’ (রূপ ও অরূপ)। আমরা দেখতে পাই, যিশুখ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও নিয়েও নানান সময় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।

নিজের মৃত্যুর আগেই রবীন্দ্রনাথকে আপনজনদের লোকান্তরিত হওয়ার অভাবনীয় দৃশ্যগুলো অবলোকন করতে হয়েছে। যে কারণে মৃত্যুচিন্তাও তার পরমার্থ সাধনার একটি অন্যতম বিষয় হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা কখনো মর্ত্যচেতনা, আত্মচেতনা, কখনো ব্যঙ্গ কৌতুক, আবার কখনো প্রেম ও সৌন্দর্য চেতনার সঙ্গে বিশ্বচেতনায় সমকালসংলগ্ন হয়ে উঠেছে। উপনিষদের ঋষিসুলভ প্রত্যয়ও তার কবিতায় উচ্চকিত হয়েছে। সুফিবাদের ধারা, কবির ও রামপ্রসাদ সেনের আলিঙ্গন তাকে ঋদ্ধ করেছে। বাংলার বাউল-ফকিরদের দ্বারাও সমৃদ্ধ হয়েছেন তিনি। বাউলের ‘মনের মানুষে’র মতোই তিনি ‘জীবনদেবতা’ সৃষ্টি করেছেন। খেয়া-গীতাঞ্জলি-গীতিমাল্য-গীতালি কাব্য এবং অন্যান্য রচনায়ও অধ্যাত্মচেতনা প্রকাশিত হয়েছে। কবির অধ্যাত্মসাধনা নিঃসন্দেহে সর্বজনীনচেতনা দ্বারা পরিশুদ্ধ। তার বিশ্বাসগুলো পৃথিবীর মানুষের জন্য কতটুকু জরুরি? তার আধ্যাত্মিকতায় মানবতার জন্য যে কাতরতা, তা সর্বযুগের সর্ব মানুষের হয়ে উঠেছে কি? এসব প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণ করলে কবির আধ্যাত্মিক চেতনার সর্বজনীন রূপ আবিষ্কার করা সম্ভব। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম ভাবের গভীরতা, ভাষার মাধুর্য এবং বিষয় বিন্যাসের চমৎকারিত্বে আমাদের চিন্তাকে পৌঁছে দেয় এমন এক স্তরে যেখানে আমাদের চেনা অনুভূতিগুলো আমাদের ভেতর এক অসাধারণ বিশ্বের সন্ধান দেয়। কবির রচনাকর্ম নানান নাটকীয়তা, রহস্যময় মহাজাগতিক আবহের মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে স্র্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের অভিপ্রায়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
ঈশ্বরচিন্তা বলতে সেই বাস্তবতাকে বোঝানো হয়, যা আমাদের প্রতিদিনের স্থূলতা থেকে অনেক দূরের। এটি হচ্ছে সেই গহিন পথ, যার দ্বারা একজন ব্যক্তির বেঁচে থাকা কিংবা তার অস্তিত্ব আবিষ্কারের প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়। ধ্যান, প্রার্থনা, প্রত্যাশা দিয়ে একজনের অন্তরজীবনের উন্নতি হতে পারে। আধ্যাত্মিকতার বাস্তবতা হতে পারে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং এই সংযোগ ব্যক্তি থেকে প্রসারিত হতে পারে মানবসমাজ, প্রকৃতি, বিশ্বলোক ও ঈশ্বরের সিংহাসন পর্যন্ত। জীবনে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণাও হতে পারে পরমার্থ সাধনা। যে বিশ্বাস ধারণ করে ঈশ্বর সম্পর্কে অন্তর্নিহিত ভাবনা কিংবা বিশ্বের সীমানা ছাড়িয়ে অসীমের জন্য কাতরতা, তারই নাম কি আধ্যাত্মিকতা? বিশ্লেষকদের মতে, প্রচলিত ধারণায় আধ্যাত্মিকতা বা পরমার্থ সাধনাকে ধর্মীয় জীবনেরই অংশ বলা হয়। আর আধ্যাত্মিকতা বিশ্লেষণে গুরুত্ব পায় মানবতাবাদ, প্রেম, সমবেদনা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, পরিতৃপ্তি, দায়িত্ব, সংগতি, অপরের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রভৃতি। রবীন্দ্রসাহিত্যে এসব বৈশিষ্ট্যের সম্মিলন লক্ষ করা যায় গভীরভাবে।
বলাই বাহুল্য, আস্তিক্যবাদী দর্শন মানে প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে প্রার্থনা ও ধ্যানের মাধ্যমে ঈশ্বরকে স্মরণ করা। আবার মৃত্যুর পরে কী কী ঘটবে, এসব চিন্তাও অধ্যাত্ম চেতনারও অংশ। আধ্যাত্মিক জীবনের পথ বিচিত্র। ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নিজেকে তৈরি করা, নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি জগতের সঙ্গে মিলতে চাওয়ার জন্য সুশৃঙ্খলভাবে ধ্যান, প্রার্থনা, নৈতিকতার উন্নতি সাধন ইত্যাদি। আধ্যাত্মিকতার লক্ষ্য হচ্ছে ভেতরের জীবন ও বাইরের জীবনের উন্নতি। প্রেম ও করুণা ধারায় সিক্ত হলে আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি ঘটে। আধ্যাত্মিকতা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও জড়িত। আধ্যাত্মিকতাকে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন ‘পবিত্রতার স্মারক’। পূজা ও নৈবেদ্যের মধ্যে সেই স্মারক লুকিয়ে থাকতে পারে। মানুষে মানুষে মৈত্রী, সাম্য, ঐক্য ও পারস্পরিক বিশ্বাস এই চেতনার প্রধান দিক। রবীন্দ্রসাহিত্যে এই চিন্তার উপস্থিতি থাকলেও অধ্যাত্ম্য বা ধর্মীয় চেতনার আড়ালে-আবডালে রবীন্দ্রনাথ কখনোই সন্ন্যাসী কিংবা সাধক ছিলেন না। বিশেষ কোনো ধারার অধ্যাত্মসাধনায়ও নিজেকে নিমগ্ন করেননি। তিনি ছিলেন কবি। নিজের চেতনার অধ্যাত্ম-অনুভূতিগুলো শিল্পচেতনার মধ্য দিয়ে কাব্যরূপে প্রকাশিত করেছেন। বলা যায়, উপনিষদের ধর্মীয় আরাধনার পথ বেয়ে তিনি মানুষের ধর্মে উপনীত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আধ্যাত্মিকতায় আমাদের আর কিছু দেয় না, আমাদের ঔদাসীন্য আমাদের অসাড়তা ঘুচিয়ে দেয়। অর্থাৎ তখনই আমরা চেতনার দ্বারা চেতনাকে, আত্মার দ্বারা আত্মাকে পাই। সেই রকম করে যখন পাই তখন আর আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে সমস্তই তার আনন্দরূপ।’ রবীন্দ্রনাথ আস্তিক ছিলেন বলেই বিশ্বাস করতেন ‘আধ্যাত্মিকতা’ মানুষের চেতনাকে ঈশ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। যার মাধ্যমে স্রষ্টার আনন্দরূপই প্রত্যক্ষ করা য়ায়। জীবনব্যাপী এ সত্যই তিনি বহন করেছেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd