উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এশিয়ার বৃহত্তম সবুজ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন এই জেলায় অবস্থিত। এই উপকূলের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। শক্ষিাঙ্গণরে মহা পুরুষ খানবাহাদুর আহসান উল্লাহ এই শহরের গর্ব। তাছাড়া শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যপক ডাঃ এম আর খান, ডাঃ রুহুল হক (সাবেক মন্ত্রী) (অর্থপেডিক্স), শৈল্য চিকিৎসক ডাঃ শ্যামাপদ পাল, ডাঃ আজিজার রহমান; বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানি ড. এম মতিয়ার রহমান; বিশ্ব বিখ্যাত বাঘ শিকারী পচাব্দী গাজী; প্রথম মুসলিম মহিলা কবি আজিজুননেছা খাতুন; বাঙালি লেখক/কবি মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী; বিশিষ্ট সাহিত্যিক সিকান্দার আবু জাফর; সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবেদ খান; বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আব্দুল মোতালেব; বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব অমর মিত্র (৩০ আগস্ট, ১৯৫১) ও আবুল কাশেম মিঠুন, পরীমনি; প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও নীলুফার ইয়াসমীন; চিত্রনায়ক আমিন খান ও রানী সরকার; নাট্যশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তারিক আনাম খান, আফজাল হোসেন, ফাল্গুনী হামিদ ও মৌসুমী হামিদ; বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী (একুশে পদকপ্রাপ্ত) সৈয়দ জাহাঙ্গীর; আব্দুল জলিল (ঈশিকা); ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার; নারী ফুটবলার সাবিনা; রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীন (সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ-১৯৭০ ); এম মনসুর আলী (সাবেক মন্ত্রী), সৈয়দ কামাল বখত সাকি, সৈয়দ দীদার বখত; পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়; সাবেক সেনা প্রধান ভারতের শঙ্কর রায় চৌধুরী প্রমুখ জ্ঞানী-গুণিজন এই জেলার অহঙ্কার। ভোমরা স্থল বন্দর, চিংড়ি ও কাকড়া শিল্প এই জেলার বৃহৎ রাজস্ব আয়ের উৎস।
কপোতাক্ষ, ইছামতি (আদি যমুনা), কালিন্দী, কাকশিয়ালী, বেতনা(বেত্রাবতী), খোলপেটুয়া, গলঘেসিয়া, মরিচ্চাপ এই জেলার প্রধান প্রবহমান নদ-নদী সমুহ। এছাড়া প্রাণসায়র খাল জেলা শহরের প্রধান জল প্রবাহ।
নদীগুলোয় চলমান প্রবাহ না থাকায় নদীর তলদেশ উচুঁ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে নদীর পানি উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বসতি এলাকা অপেক্ষা নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদীগুলো ওভারফ্লো হয়ে পানি বসতি এলাকায় প্রবেশ করায় বছারের প্রায় ১২মাস উপকূলের অধিকাংশ ইউনিয়ন পানির নিচে থাকে। ফলে পয়নিষ্কাশনের মারাত্মক অসুবিধায় ভোগে এলাকার মানুষ। গৃহপালিত পশুর জীবন যাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এলাকায় কৃষি উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়েছে খুলনা সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। হাতে গোনা কিছু মানুষ জলে এবং জঙ্গলে কাজ করলেও তাতে পরিবারে স্বচ্ছতা ফেরে না। অভাবের তাড়ণায় পিতামাতা শিশু কিশোরদের লেখাপড়া বন্ধ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকের কাজে পাঠাতে বাদ্য হচ্ছে। গত বছর শ্যামনগরের কয়েকটি পরিবারের একাধিক শিশু ঢাকা গাজীপুর ইট ভাটায় দাদন খাটতে যেয়ে প্রাণ হারায়। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ হারে হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার হার। কর্মহীনতা যার প্রধান কারণ। সাতক্ষীরা উপকূলের নিন্ম শ্রেনীর বড় একটা গোষ্টি সুন্দরবন নির্ভর হয়ে হরে পড়েছে। কাঠ ও গোলপাতা কাটা, মধু আহরণ, পশু শিকার, মাছ ধরা ইত্যাদি এদের প্রধান পেশা হয়ে উঠেছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবন। জঙ্গলের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ায় জনপদে চলে আসছে বাঘ, হরিণসহ বনজ প্রাণী। যার জন্য বনজীবীরা বাঘের মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
সাতক্ষীরা এমন একটা জেলা যেখানে সরকারি বে-সরকারি কোন কলকারকাখা নেই। আশির দশকে তৎকালিন বস্ত্রমন্ত্রী এম মুনছুর আলী একটি টেক্সটাই মিল (সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস) প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তি সরকারের বাটপারেরা লুটপাট করে ধ্বংস করে দেয়। বর্তমানে এর (সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস) বিশাল জায়গা ছাড়া আর কিছু নেই। জেলার সামন্য একটা জনগোষ্টি ভোমরা স্থল বন্দরের সুবিধা ভোগ করে থাকেন।
শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য এই জেলায় কোন কর্মসংস্থান না থাকায় বৃহত্তর চাকরী প্রার্থি রাজধানি মুখি হয়ে ওঠে।
সাতক্ষীরা ভারত সীমান্ত ঘেসা হওয়ায় উৎপাদন মুখি অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান মূল্য সংকটে পড়ে। রাজধানি ঢাকা থেকে কাচামাল এনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে যে খরচ পড়ে দেখা গেছে পাশের রাষ্ট্র ভারতে তার দাম অনেক কম। আবার চায়না পণ্যের মূল্য আরো কম হওয়ায় ঢাকার মার্কেটেও স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য বেঁচা যায় না।
এরকম নানান সমস্যা ও জটিলাতার জেলা উপকূলীয় সাতক্ষীরা।
শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা থেকে সাতক্ষীরা বঞ্চিত। বিভিন্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সারা বছর আন্দোলন করলেও অদ্যবধি কোন জাতীয় বাজেটে দক্ষিণ উপকূলের জন্য বিশেষ কোন প্রকল্প গ্রহণ বা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
Leave a Reply