1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
২৬ আশ্বিন, ১৪৩১
Latest Posts

পিলপের গ্যাস

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শনিবার, ২ জুন, ২০১৮
  • ৭১৪ সংবাদটি পড়া হয়েছে

স ফি য়া র র হ মা ন

ভাদ্র মাসে নারকেল গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়,তাতে নারকেলের ফলন বেশি হয়। এই কাজে যারা পারদর্শি তাদের আগে না চাইতে পাওয়া যেত,যুগ বদলেছে এখন ডেকেও পাওয়া যায় না। কুরবান গাজীর তিনটে নারকেল গাছ। ভাদ্রমাস পার হতে গেল অথচ গাছ পরিস্কার করা হল না। চিন্তিত মনে নারকেল গাছের গুড়ায় ঘুরাঘুরি করে। স্ত্রী আসমা বেগম এদৃশ্য দেখে ব্যাঙ্গাত্বক গলায় বলে, মদ্দ মানুষ হয়ে জম্মায় চাও। গাছে উঠে যাও, নিজে নিজে ছাফ কর।’
তুমি-আমি আজ থেকে চব্বিশ বছর আগে এই দিনে পৃথিবীতে জোড় মানিক হয়ে পথ চলার চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেছিলাম। সুখে-দুখে পথ চলেছি পৃথিবীর পথে।
কুরবান গাজী ফিক করে হেসে বলল, ‘কতাডা ঠিক কইছাও বউ, পারা উচিৎ ছিল কিন্তু গাছের মাথার দিক তাকালি যে মাথা ঘোরে। হুড়–ম করে পড়লি কী তুমার সুখ হবেনে?’
‘এমনি-এমনি কলাম, তুমি বাঁচে থাক কুদার বাপ।’
কুরবান গাজী ভোর বেলা ঘরের দরজা খুলতেই আশ্চার্য হল। উঠানে দাঁড়িয়ে আছে রোহিতা গ্রামের মফেজ মোড়ল। নারকেল গাছের মাথার দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। কুরবান গাজীর ডাকে মফেজ মোড়ল সম্বিত ফিরে পেল। নারকেল গাছ সুন্দর করে পরিস্কার করায় এই এলাকায় তার জুড়ি নেই। এ যেন না চাইতেই এক কাঁধি।
কুরবান গাজী গাছ পরিস্কারের দর নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছিল কিন্তু মফেজ মোড়লের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। দরাদরি করলেই অনাকাঙ্খিত ধন ফসকে যেতে পারে। মফেজ মোড়ল আগে লুঙ্গি গুটিয়ে কাছা মেরে গাছে উঠতো এখন ছেলের বাদ দেওয়া থ্রি কোর্য়াটার প্যান্ট পরে গাছে চড়ে। গাছে উঠার আগে বড় একটা পান সময় নিয়ে গুন্ডি খয়ের তামাক জর্দ্দা পানের যাবতীয় মসলা সাজিয়ে মুখে ভরে দেয়। এ নিয়ে কেউ কোন কথা বললে মফেজ মোড়ল এক গাল হেসে বলে,‘সুদ খাব না, ঘুস খাব না, খাব একটা পান,তা মকসায়ে মজা করে না খালি হয়।’
আল্লাহ রসূলের নাম নিয়ে এক দলা থুথু হাতের তালুতে নিয়ে দুই তালু ঘসে মফেজ মোড়ল নারকেল গাছে উঠলো। আকাশ মেঘলা কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। হঠাৎ বেশ জোরে মেঘ ডাকলো,পর পর আরও দুইটা ডাক দিল। মফেজ মোড়ল বিদ্যুৎ বেগে সড়াৎ করে গাছ থেকে নেমে এল। কুরবান গাজীর বারান্দায় বসে হাঁফাতে লাগল। এর মধ্যে আশপাশের আরও কয়েকজন জড়ো হল। কুরবান গাজীর বাপ নেয়ামত গাজী অ্যাজমার রোগী সে একদমে কিছুক্ষণ কেশে নিয়ে বলল, ‘বাবারে একটু ম্যাগ না ডাকতি এত ভয় পাও? আমরা যখন মাঠে কাজ করতাম,কত ঝড়-বৃষ্টি এই পিটির উপর দিয়ে চলে গেছে। ভয় কারে কয় জানতাম না। বাপ মার নাবি ছাবালরা অল্পে ভয় পায়। বাবাজি কী তোমার মার প্যাট পুচা(সর্বশেষ) ছাবাল (ছেলে) ?’
উপস্থিত সবাই জোরে হেসে উঠলো, ছোটরা কিছু না বুঝেই হাসতে থাকে।
মফেজ মোড়লের একটা গুণ আছে, যেভাবেই হোক দুনিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারে। সব শুনে মুরব্বির উপর রাগ হল কিন্তু প্রকাশ করতে পারল না। বিজ্ঞের মত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে বলল, ‘শোন বাবাজি তোমাদের সেই যুগ এখন আর নেই। বৃটিশ আমলে সরকার রাস্তায় রাস্তায় পিলপে (সীমানা পিলার) পুতে ছিল। তারমধ্যে গ্যাস (ম্যাগনেট) ছিল। এখন দেশে শোর (শুয়োর) কুমে গেলিও চোর বাড়ে গেছে। পিলপে সব তুলে নিয়ে ভারতে বিক্রি করেছে, পিলপের গ্যাস বারুই গেছে। এই গ্যাস আগে বাজ(বজ্রপাত) পড়া থামাতো, এখন থামানোর কিছু নেই। ঝমাঝম মাথায় পড়ে, দেখতিছাও না মানুষ মরে বেছাপ্পর হয়ে যাচ্ছে। আমার কী গাছে বসে মততি কচ্চাও।’
পিলপের গ্যাসের এই গল্প এক কান হতে সাত কান হয়ে গেল। ধীরে ধীরে মফেজ মোড়লের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়লো। সেই থেকে মফেজ মোড়লের নাম রুপান্তরিত হয়ে- হয়ে গেল পিলপের গ্যাস। মফেজ মোড়ল এখন পথে-ঘাটে বের হলে বিশেষ করে শিশু কিশোররা দূর থেকে বলে, ‘ঐ যে পিলপের গ্যাস যায়’ বলেই ঝোঁপ ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd