Site icon Daily Dakshinermashal

সাতক্ষীরার আম ইউরোপের পথে

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরার আম বিদেশ পথে যাত্রা শুরু করেছে। শনিবার সদর উপজেলা ধুলিহর গ্রামের আমচাষি জাহাঙ্গীরের বাগান থেকে হিমসাগর আম রফতানির মধ্যদিয়ে এ যাত্রার শুরু। দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আমের এ বিদেশ যাত্রা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক ড. আজাহার আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস, সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান, সলিডারিডাডের কান্ট্রি ডিরেক্টর সেলিম রেজা হাসান প্রমুখ।
চলতি মৌসুমে আমচাষি জাহাঙ্গীরের বাগান থেকে চার মেট্রিক টন আম রফতানির মধ্য দিয়ে জেলার আম রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়। এসব আম যাচ্ছে ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও স্পেনে। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
রফতানি মৌসুমের প্রথম দিনেই আম পাঠাতে পেরে আমচাষি জাহাঙ্গীর হোসেন এক গণমাধ্যমকে বলেন, গত মৌসুমের শেষ দিন থেকেই চলতি মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন ও রফতানি করে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি মণ আম তিন হাজার ২৫০ টাকা দরে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে কিনেছে। লোকাল বাজারে যা দুই হাজার ২০০ টাকা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। এ জেলার আম অন্যান্য জেলার চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে পাকে। খেতেও বেশ স্বুস্বাদু। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রফতানির বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৪০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগান।

দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র পাল্টে দিতে পারে ‘লেবুয়াত ধান’

ডেস্ক রিপোর্ট: বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াত শেখ উদ্ভাবিত ‘লেবুয়াত ধান’ পাল্টে দিতে পারে দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। এমনটাই মনে করছে বাগেরহাটের সাধারণ কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
সম্প্রতি এমন একটি বিস্ময়কর জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের কৃষক লেবুয়াত শেখ। আর এই বিশেষ জাতের ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় কৃষক লেবুয়াত শেখের বাড়ি ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক সাধারণ মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও কৃষকরা এই ধানের বীজ সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা নতুন এই জাতের ধানের নামকরণ উদ্ভাবক কৃষক লেবুয়াত শেখের নাম অনুসারে ‘লেবুয়াত ধান’ করেছেন।
এই ধান কেজিপ্রতি ৪’শ টাকা দরে অনেকে সংগ্রহ করেছেন। এখনও তার বাড়িতে শত শত কৃষক এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে ভিড় জমাচ্ছেন। শুধু সাধারণ কৃষক নয় নতুন এই জাতের ধান নিয়ে উৎসুক বাগেরহাটের কৃষি বিভাগও।
মাত্র ৩ ছড়া (ধানের শীষ) ধান দুই বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১‘শ মণ। খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই জাতের ধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলে পাল্টে যাবে খাদ্য উৎপাদনের চিত্র।
কৃষি বিভাগের মতে, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের একজন আদর্শ কৃষক লেবুয়াত শেখ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধান ও মাছের চাষ এবং মাছের ব্যবসা করে জীবন ধারণ করেন। স্থানীয় বেতাগা বাজারে তার একটি মাছের আড়তও রয়েছে। তিনি ও তার স্ত্রী স্থানীয় আইপিএম ক্লাবের সদস্য।
কৃষক লেবুয়াত শেখ জানান, ২০১৬ সালে তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি ক্ষেতে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধানের চাষ করেন। মাঠে ধান কাটতে থাকা দিনমজুরদের তার মা ফাতেমা বেগম পানি খাওয়ানোর জন্য যান। এসময় তিনি (ফাতেমা বেগম) সেই ধানের ক্ষেতের মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে অনেক বড় ধানের শীষ (ছড়া) দেখতে পান। তিনি আর একটু সামনে গিয়ে আরো দু‘টি শীষ দেখতে পান। এই শীষগুলো নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পরে তিনি এই ধানগুলো সংরক্ষণ করার জন্য লেবুয়াতকে নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালে মাত্র ১ শতক জমিতে তিনি ওই ধান রোপন করে সেখান থেকে ২.৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। এবছর তিনি ৭৫ শতক জমিতে সেই ধান রোপন করেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথম থেকেই তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
লেবুয়াতের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘দুই বছর আগে ধানের ভেতর পাওয়া একটি বড় ধরনের ধানের বাইল (শীষ) একটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করি। পরের বছর এই ধান থেকে ৩ আঁটি পোতা হয়। সেখান থেকে যে ধান হয় তা আবার পরের বছরের জন্য বীজ হিসেবে রেখে দেই। সেখান থেকে আজ এতগুলো ধান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যেকোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়। যা বেড়ে ৮/১২টি হয়েছে। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। এক একটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬- ৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১২‘শটি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম। ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিপ ( ছড়ার সাথের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়া দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কা- ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। একর প্রতি ফলন প্রায় ১৩০ মণ। অন্য যেকোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
অপরদিকে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধান প্রতি ছড়ায় ১৮০ থেকে ২৫০টি দানা হয়। এই ধানের বীজ প্রতিবারই বাজার থেকে কিনতে হয়। হেক্টর প্রতি এই ধান উৎপাদন হয় ৫ টন। একই জমিতে কৃষক লেবুয়াত উদ্ভাবিত জাতের ধানের উৎপাদন ১১ টন।
চাকুলী গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, এই ধান নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। মাত্র ৩টি শীষ থেকে আজ ৭৫ শতক জমিতে এই ধানের চাষ করেছেন লেবুয়াত। আর এই ভিন্ন জাতের ধান দেখতে প্রতিদিনই অনেক লোক বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন। এবং তারা ধান সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তিনি সরকারিভাবে কৃষক লেবুয়াতের নামেই এই ধানের নামকরণের জন্য সবার কাছে দাবি জানান।
কৃষানী রীনা বেগম জানান, সকলের আগ্রহ এখন লেবুয়াতের ধানের দিকে। এই ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই অনেক লোক আসছে। তিনি নিজেও প্রতিকেজি ৪শ টাকা দরে ৪ কেজি ধানের বীজ কিনেছেন বলে জানান।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, প্রথমে তারা লেবুয়াতের ধানের ক্ষেতে গিয়ে ধানের নমুনা দেখে অবাক হয়ে যান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে তার পরামর্শে লেবুয়াতকে হাতে কলমে ও সর্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোতাহার হোসেন জানান, স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে খবর পেয়ে তিনি নিজে সার্বক্ষণিক এই ধানের ক্ষেতে বিশেষ নজরদারি করেছেন। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা লেবুয়াতের এই ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করে ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কৃষক লেবুয়াতের উদ্ভাবিত এই বিশেষ জাতের নানা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি অনেক বেশি লবণ সহিষ্ণু জাত। গাছের কা- অনেক বেশি মোটা ও শক্ত, ফলে ঝড়ে হেলে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বৈরী আবহাওয়ায়ও পাতায় কোনো স্পট নেই। এই জাতের ধানের শীষ ( বাইল) অনেক বেশি লম্বা।
গবেষণা করে এটি যদি কৃষকদের জন্য উপযোগী হয় তাহলে সারাদেশে এই জাত ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বাগেরহাট জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত এটি একটি নতুন জাতের ধান। এই ধান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালনো হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে যে এত উন্নত ধরনের ধান উদ্ভাবন হয়েছে তা স্থানীয়দের মাঝে চমক সৃষ্টি হয়েছে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে এটি ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা হবে।

Exit mobile version