অপরিকল্পিত ও ধীর গতিতে চলেছে পাইকগাছার কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ


এপ্রিল ১২ ২০১৮

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার ও এডিপি’র অর্থায়নে আরবান সেন্টার স্কীম সিটি রিজিয়ন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট(সিআরডিপি) আওতায় পাইকগাছার কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়নে বিভিন্ন ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদ ১ বছর আগে শেষ হলেও অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শম্ভুক গতির অপরিকল্পিত কাজের সর্বশেষ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী বর্ষা মওসুমের আগেও তা শেষ হবেনা। অন্যদিকে বাজার অভ্যন্তরে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা বাচাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে স্থানীয় তহশীলদার পানি নিষ্কাষণের ড্রেন নির্মাণে গলি রাস্তাগুলো ব্যবহার করছে। কোথাও কোথাও ড্রেণ গুলি স্বর্পাকৃতিতে করা হচ্ছে। আর এমনটি হলে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি তলিয়ে ফের সেখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ভবিষ্যতে রাস্তা নির্মাণে চরম সংকটের আশক্সক্ষা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সচেতন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, এলজিইডি খুলনার তত্বাবধানে ৭ কোটি ১৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ২ শ’ ৮৪ টাকা ৮৯ পয়সা বরাদ্দের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায় খুলনার রুপসা উপজেলার যোগীহাটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইইএল এন্ড এফটি(জভি)। গত ৫ জুলাই ১৬’ থেকে শুরু করে কাজটি শেষ করার কথা ছিল গত ৪ জানুযারি১৭’ কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের প্রায় ১ বছরেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও প্রথম থেকেই মন্থর গতি, পরিকল্পনাহীনতা, অনিয়ম থেকে শুরু করে নানা সংকটে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের আওতায় কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়নে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন ও সুষ্ঠু চলাচলের জন্য কংক্রিট সড়ক নির্মানের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বাজারের বিভিন্ন স্থানে একযোগে খুঁড়ে রাখলেও একই গতিতে কাজ করতে না পেরে মূলত পিছিয়ে পড়ে তারা। বিশেষ করে গত বর্ষা মৌসুমে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ময়লা পানির-কাদার উপর ঢালই’র কাজ করে। কখনো কখনো বৃষ্টির মধ্যেও ঢালাইয়ের কাজ করে। এতে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে চলতি শুষ্ক মওসুমে এক সাথে বিভিন্ন এলাকা খুঁড়ে মাটি উঁচু-নিচু করে রেখে বাণিজ্যিক কেন্দ্রটির স্বাভাবিক গতিতে মারাতœক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। বাজারের ইজারাদারের অতিরিক্ত চাপ ও অনুপ্রবেশে প্রতিবন্ধকতার দরুণ ইতোমধ্যে বাজার থেকে পার্শ্ববর্তী কাশিমনগর এলাকায় চলে গেছে মাছ কাটা ব্যবসায়ীরা। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতি ও রবিবার সাপ্তাহিক হাটবারে বিভিন্ন জেলাসদর থেকে আগত মালামালসহ হাটুরিয়াদের দূর্ভোগের অন্ত নেই। অনেক পাইকাররা হাটে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি কাঁচামালের উর্দ্ধগতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা চলতি উৎপাদন মৌসুমেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম দিকে সদরের পালপাড়া ও কালীবাড়ি সড়ক দু’টির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিলেও ব্যস্ততম কলেজ রোড,পুলিশ ফাঁড়ি রোড,প্রেস ক্লাব রোড,কাপড় পট্টি থেকে অধিকাংশ রোড গুলির কোন কাজই শুরু করতে পারেনি তারা। আর কোন কোন সড়কে কাজ শুরু করলেও তা শেষ না কওে আরেকটি শুরু করেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন খাময়োলীপনা ও পরিকল্পনাহীনতায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন কপিলমুনিবাসী। ভ্যান,সাইকেল থেকে শুরু করে মালবাহী কোন বাহনই ঢুকতে পারছেনা বাজার অভ্যন্তরে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের এমন ছন্নছাড়া গতিতে মোটেও ভাল নেই কপিলমুনির মানুষ। তারা এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যাপারে কপিলমুনির হাট ইজারাদার মাসুম মোড়ল বলেন, অধিক টাকায় হাট ইজারা নিয়ে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন তিনি। অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজের অগোছালো ব্যবস্থাপনায় হাটের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হওয়ায় কোন ভাবেই আসল টাকা বাঁচানো তার জন্য দূরুহ হয়ে পড়েছে। আসন্ন বর্ষা মওসুমের আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ এগিয়ে নিতে না পারলে খানা-খন্দকে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পাওে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে উন্নয়ন কাজের মন্থর গতির সুযোগে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখলে শুরু হয়েছে মহোৎসব। সরকারের সকল প্রকার নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে যে যার মত আরসিসি বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। খোলা চাঁদণীতে রুম-রুম করে ঘর নির্মাণ করে চলে গেছে স্থায়ী দখলে। একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারি সম্পত্তিতে অনেকেই নির্মাণ করেছেন পাকা ইমারত। হাটের জায়গা দখল করে কেউ নির্মাণ করেছেন ঘরের সিঁড়ি। বন্দোবস্তের বাইওে এস দখল করেছেন যাতায়াতের মূল রাস্তা। দীর্ঘ দিন পর বাজার উন্নয়নে চলমান কাজের স্বার্থে ও প্রত্যক্ষ্য-পরোক্ষাভাবে দখল ও দখল কাজে সহযোগিতা করতে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তাই মুখ খুলছেননা কেউ।
এ ব্যাপারে কপিলমুনি হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, অবৈধ দখলদারদেও উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সঠিক সময়েই তার বাস্তবায়ন হবে।
এ ব্যাপারে কপিলমুনি ভূমি অফিসের তহশীলদার জাকির হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়টি তার দেখার কথা না। বিষয়টি তার হলে অবশ্যই ইউএনও স্যার তাকে জানাতেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাজের যথাযথ তদারকিহীনতাকেই দায়ী করছেন কেউ কেউ। তারা আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রকল্পের সমুদয় কাজের দাবি জানিয়েছেন।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন