দীপক রায় : ভালোবাসা মানুষকে আপন করতে শেখায়,বিশ্বাস করতে শেখায়, সৃষ্টি করতে শেখায়,শান্তি আনয়ন করতে শেখায়,বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। এই ভালবাসাবাসি শুধমাত্রু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর সকল প্রাণী একে অপরকে ভালবাসে এটাই চির সত্য। এই ভালবাসার ধরণ দেশভেদে স্থানভেদে সংস্কৃতি ভেদে পৃথক হতে পারে কিন্তু এর আবেদন অনুভুতি এক ও অভিন্ন। ভালোবাসা -ভালোবাসাই এর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীতে সভ্যতার আলো আসার পর থেকে আজ অবধি বহু স্বার্থক ভালবাসার সত্য ঘটনা রয়েছে যা একত্র করলে ভালোবাসার গল্পের একটা সু-উচ্চ পাহাড় হয়ে যাবে। যা আজও মানুষকে অনুপ্রানিত করে,আবেগাপ্লুত করে, মোহিত করে। এই ভালোবাসা কাউকে কাঁদায় কাউকে হাসায়, কাউকে পৃথিবীর সব সুখ উজাড় করে দেয়, কাউকে ভিখারী করে,কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কেউ ভালোবাসার মুর্তি গড়েছেন কেউ আবার পুড়িয়ে ছারখার করেছেন সবকিছু। ভালোবাসা পৃথিবীতে শান্তির বসন্ত যেমন এনেছে, তেমনি এনেছে যুদ্ধের বিভীশিখা। তাই কোনো এক গানে গীতিকার লিখেছেন———-
আমি হেলেন কিংবা নূরজাহানকে দেখিনি
ক্লিওপেট্রা মমতাজকেও নয়,
আমি তোমাকে দেখে জেনেছি-
কেন গড়েছিল তাজমহল
কেন পুড়ে ছিল ট্রয়।
এই ভালোবাসার শক্তি এত তীব্র যা মাপার মত কোনো যন্ত্র আজও পৃথিবীতে আবিস্কৃত হয়নি। অল্পে বলা যেতে পারে, এর গতি আলোর চেয়ে দ্রুত,একে দেখা যায়না ছোঁয়া যায়না শুধু অনুভব করতে হয়। সে জন্য মহান ভালবাসার কাহিনী যে দেশেরই হোক না কেন পৃথিবী শুদ্ধ মানুষকে আকর্ষণ করে,জিজ্ঞাসা বাড়ায় তারপর—?ঠিক তেমন-ই ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ভ্যালেনটাইনস ডে প্রাচীন রোমের কিছু অসাধারণ ভালোবাসার নিদর্শনের প্রতীক হিসাবে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দিনে কেউ নতুন করে ভলোবাসায় আবদ্ধ হয়,কেউ ভালোবাসার স্বপ্ন দেখে,কেউ আবার ৮০ বছর বয়সের স্ত্রীকে উপহার দিয়ে পুরোনো প্রেমকে আবার নবায়ন করে।
শোনাযায় প্রাচীন রোমে কুমারী মেয়েরা বিশেষ এক দিনে ভালোবাসার কাব্য লিখে জমা করত একটি মাটির পাত্রে। যুবকরা পাত্র থেকে তুলে নিত একটি লেখা। বিষয়টি ছিল লটারীতে ভাগ্য যাচাই-এর মত।যুবকের হাতে উঠে আসত যার লেখা সেই মেয়েটিকেই ভালোবাসত সে। তার সাথেই হতো যুবকের বিয়ে। ভাগ্য সুত্রেই মেয়েটি হতো তার জীবনসঙ্গী। যে দিনে এ কাজটি হতো সে দিনটি ১৪ ফেব্রুয়ারী।
১৪ ফেব্রুয়ারী নিয়ে আরও অনেক কথা রয়েছে। কিভাবে দিবসটি ভালোবাসা দিবস হলো তা অনেকটা অস্পষ্ট। এ নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী নানা ঘটনার কথা। ঘটনা যাই থাকুক ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা কাহিনী দিবস হিসাবে অম্লান।এর জন্ম যেভাবেই হোক না কেন ভালোবাসা দিবসকে ভালোবাসার মাধ্যমে পালন করতে চায় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ।
ভ্যালেন্টাইন দিবস নিয়ে আরেকটি গল্প শোনা যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের দুই সৃষ্ট রাজকের অস্তিত্ব ছিল এক সময়। দুশ খ্রীষ্টাব্দের এ দিনে রোমান স¤্রাট এদের একজনকে শিরোচ্ছেদ করেছিলেন, কারণ তিনি সৈনিক যুবকের বিয়ে নিষিদ্ধ করেছিলেন। আবার নিজেই বিয়ে করেছিলেন কোনো এক যুবতীকে।দ্বিতীয় ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে বলা হয় তিনি রোমানদের দেবী পূজার বিরোধিতা করতেন। এ অপরাধে তাঁকে বন্দি করলে রাজকের বন্ধুরা তাদের ভালোবাসার কথা লিখে কারাগারে ছুঁড়ে দিত। বলা হয় ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী তাকে হত্যা করা হয়। সেই থেকে দিনটি ভালোবাসা দিবস। পোপ ১ম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে ঘোষণা করেন। ভ্যালেন্টাইন ডে-কে ঘিরে মুখে মুখে ছড়ানো এসব ঘটনার কোনো প্রমান না থাকলেও প্রেমিক- প্রেমিকারা ১৪ ফেব্রুয়ারীকে এ দিনের মর্মার্থ লালন করে গভীর আগ্রহে,আন্তরিকতায় ও আবেগের সাথে। প্রিয়জনকে ফুলের শুভেচ্ছা ও বিভিন্ন উপহার দিয়ে আত্মতৃপ্ত হন অনেকে। কেউ আবার ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে ঘুরতে যান বহুদূর। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আবদ্ধ হন ক্যামেরার ফ্রেমে। অনেকে আবার ভালোবাসা দিবসেই জীবনসঙ্গীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এমনিভাবেই যুগ যুগ পার করল ভালোবাসা দিবস।
এই ভালোবাসা দিবস আছে থাকবে এবং এর আবেগ- অনুভূতি আরও ঘনিভুত হোক এটা আমরা সকলেই চাই। আজকের দিনে প্রেমিক-প্রেমিকা,বন্ধু-বান্ধব ছাড়া এই ভালোবাসা-বাসিতে যদি অন্যদেরও একটু যুক্ত করা যায় তাহলে মনে হয় দিবসটির গুরুত্ব, তাৎপর্য,মাহাত্ম আরোও বেড়ে যায়।ভালোবাসা শুধুমাত্র একটি উপলব্ধি নয়। এর অন্তরে নিহিত রয়েছে। সম্মান,বিশ্বাস,পবিত্রতা,নিঃস্বার্থপরতা,নির্লোভতা। এ ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা দিতে হবে মাতা-পিতাকে,ভাই-বোনকে,পাড়া-প্রতিবেশীকে,অন্য ধর্মের মানুষকে। ভালোবাসা দিবসে ভাবতে হবে ভন্ডামীহীন,মেকামোহীন নিখাদ ভালোবাসার কথা। প্রকৃত ভালোবাসার শক্তিই আনতে পারে বিশ্ব শান্তি তাই মানুষের আনন্দে আবেগে অনুভবে ভালবাসায় যুগ যুগ জিও থাকুক ভালোবাসা দিবস।
Leave a Reply