1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন
২৪ আশ্বিন, ১৪৩১
Latest Posts
📰সরকারি হিসাবে ডিমের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ৩০ শতাংশ বেশি📰পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন হপফিল্ড ও হিন্টন📰সাতক্ষীরায় ৫১তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৪ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা 📰সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসায় প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত📰আশাশুনিতে নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের মতবিনিময় সভা 📰সাতক্ষীরায় সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় নারী নেতৃত্বের প্রচার ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে সমমনা প্লাটফর্মের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত📰সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স মাধ্যমিক স্কুলে গণসচেতনতা মূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত 📰সে সবসময়ই চিটার: তমা📰ফিটনেস ট্রেনারকে ক্যাটরিনার ‘হুমকি’, কিন্তু কেন?📰‘বিয়ে দিয়ে দেবে নাকি’, বাড়িতে অতিথিদের ভিড়ে চিন্তায় শ্রাবন্তী

বই লেখার গল্প

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
  • ৫৭৫ সংবাদটি পড়া হয়েছে

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল : আমাদের বই মেলাটি নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ ব্যাপার। পৃথিবীর অন্যান্য বই মেলায় শুধু বই বেচাকেনা হয়। একুশের বই মেলা দেখলে মনে হয় এখানে বই বেচাকেনাটি বুঝি মূল লক্ষ্য নয়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে উৎসব। বই মেলার কোনো একটা কোনায় গালে হাত দিয়ে বসে মেলায় আসা মানুষগুলোকে দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া যায়।

বই মেলায় কত রকম স্টল, আর তার ভেতর কত রকম বই! যারা বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন তারা হয়তো কখনও কল্পনাও করতে পারেন না যে, এর প্রত্যেকটা বইয়ের পিছনে লেখকের একটা গল্প আছে। এখন বই ছাপানো খুব সোজা হয়ে গেছে, যে কেউ চাইলেই গ্রন্থকার হতে পারে। যখন বিষয়টি এত সোজা ছিল না তখনও আমাদের পরিবারে গ্রন্থকারের জন্ম হয়েছে। তাই আমরা খুব ভালো করে জানি একটা বইয়ের পেছনে কত রকম গল্প থাকতে পারে।

আমার পরিবারের প্রথম গ্রন্থকার ছিলেন আমার বাবা। সেই ছোট থেকে দেখে আসছি, সময় পেলেই উবু হয়ে লিখছেন। নানা রকম পত্রপত্রিকায় সেই লেখা ছাপা হত। পুলিশে চাকরি করতেন। আমার ধারণা যারা পুলিশে চাকরি করে তারা হয়তো মানবচরিত্রের বিচিত্র উদাহরণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখার সুযোগ পায়। তাই আমার বাবার লেখা অনেকগুলো গল্প ছিল এই পুলিশজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। আমার বাবা যখন বগুড়া ছিলেন তখন তাঁর ইচ্ছে হল যে, তাঁর লেখা গল্পগুলো নিয়ে একটা বই বের করবেন।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে একটা বই ছাপানো ছিল রীতিমতো একটা চ্যালেঞ্জ। বাবার পরিচিত একজন প্রেস মালিক ছিলেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে বই ছাপানোর ব্যবস্থা করলেন। বাসার কাছে পরিচিত একজন শিল্পী বইয়ের কভার করে দিলেন। বাবা পুলিশে চাকরি করেন। সময়টা পাকিস্তানি আমল। তাই নিজের নামে বই ছাপানো যাবে না। একটা ছদ্মনামে বই ছাপানো হল। একদিন বাঁধাই হয়ে বই বাসায় এল। তখন আমাদের কী উত্তেজনা!

তারপর কত ঝড়-ঝাপটার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। পরিবার কত বার কত ভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে! তারপরেও কীভাবে কীভাবে জানি বাবার লেখা বইয়ের দুটি কপি রক্ষা পেয়েছে। একটির বেশিরভাগ উই খেয়ে ফেলেছে; অন্যটা মলাটবিহীন অবস্থায় অক্ষত আছে। আমরা সময় পেলে মফস্বলের একটা প্রেসে ভাঙ্গা টাইপে নিউজপ্রিন্টে ছাপানো সেই বইটা সস্নেহে নেড়েচেড়ে দেখি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাঝে মাঝেই নামিদামি প্রকাশকেরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা আমার বাবার বইটা পুনঃমুদ্রণ করতে চান। আমরা কখনও দেইনি। তার কারণ, প্রকাশকেরা আসলে বইটি আমার বাবার বই হিসেবে ছাপতে চান না, হুমায়ূন আহমেদের বাবার বই হিসেবে ছাপতে চান।

আমার বাবা তাঁর প্রকাশিত বইটি প্রথমবার হাতে নিয়ে কী রকম আনন্দ পেয়েছিলেন, সেটি এখন আর আমরা কোনোদিন জানতে পারব না। কিন্তু আমার মায়ের অভিজ্ঞতাটুকু আমি জানি। আমার মা খুব বেশি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু অসম্ভব বই পড়ার নেশা ছিল। আমার বাবার উৎসাহে এক দুই বার ছোটখাট গল্পও লিখেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রথম সত্যিকারের লেখাটি লিখেছিলেন আমেরিকাতে বসে। আমি তখন আমেরিকা থাকি। আমার মা বেড়াতে এসেছেন। নাতি-নাতনির সাথে সময় কাটানো ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। আমি তাঁকে কম্পিউটারে বাংলা টাইপ করা শিখিয়ে দিয়েছি। তখনও বাংলায় কম্পিউটারে টাইপ করার প্রচলন হয়নি। তাই আমার মায়ের কম্পিউটারে বাংলা লেখা দেখে দেশে সবাই রীতিমতো বেকুব হয়ে গেল।

তখন একদিন আমার স্ত্রী আমার মাকে বলল তাঁর বিস্ময়কর জীবনের ঘটনাগুলো লিখে রাখতে। আমার মা তখন সত্যি সত্যি লিখতে শুরু করলেন। আমি সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতাম। দেশে ফিরে আসার সময় আমি আমার মায়ের কাছে পাণ্ডুলিপিটি দিয়ে দিলাম, ইচ্ছে করলে কোনো প্রকাশককে যেন দিতে পারেন। সেই পাণ্ডুলিপি কখনও কোনো প্রকাশককে দেওয়া হয়নি, বই হিসেবেও প্রকাশ হয়নি।

তারপর বহুকাল কেটে গেছে। আমি দেশে ফিরে এসেছি এবং কয়েক বছর পর হঠাৎ করে আমার মায়ের লেখা সেই পাণ্ডুলিপিটির কথা মনে পড়ল। আমি সেটার খোঁজ করতে লাগলাম এবং শেষ পর্যন্ত সেটা খুঁজে পাওয়া গেল। উইপোকা বেশ খানিকটা খেয়ে ফেলেছে, কিন্তু তারপরেও সেটা পড়া যাচ্ছে। আমি সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলাম। তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে বইটি ছাপতে রাজি হলেন।

বইয়ের ছাপার কাজ যখন শেষের দিকে, বইটি বাঁধাই হওয়ার অপেক্ষা, তখন হঠাৎ আমার মায়ের কাছ থেকে আমি একটা ফোন পেলাম। মা খুব অসুস্থ। ভালো করে কথা বলতে পারেন না। ফোন করে আমাকে বললেন, “বাবা, তোকে একটা কথা বলার জন্যে ফোন করেছি।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী কথা?”

মা বললেন, “বাবা, যদি কখনও ভুল করে তোদের মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে মাপ করে দিস।”

আমি ভয়ানক চমকে উঠলাম। ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি এসব কথা বলছেন কেন?”

আমার মা প্রশ্নের উত্তর দিলেন না, আমার থেকে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিলেন।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মানুষ মৃত্যুর আগে এই ভাষায় কথা বলে। তাহলে কি আমার মা বুঝতে পেরেছেন তিনি আর বেঁচে থাকবেন না?

আমি খানিকক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইলাম। তারপর সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, “আমার মায়ের বইটি এখন কোন পর্যায়ে?”

তিনি বললেন, “ছাপাছাপির কাজ শেষ, বই বাঁধাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।”

আমি বললাম, “যেভাবেই হোক এই মূহূর্তে দুটো বই বাঁধাই করে আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। খুবই জরুরি।”

ফরিদ আহমেদ আমার অনুরোধটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে নিলেন এবং সাথে সাথে প্রথম দুটি বই বাঁধাই করে রীতিমতো ছুটতে ছুটতে আমার মায়ের কাছে গিয়ে দুটি বই তাঁর হাতে তুলে দিলেন। আমার ‘মৃত্যুপথযাত্রী’ মা বই দুটি হাতে নিলেন এবং পুরোপুরি সুস্থ হলে গেলেন।

এই ঘটনাটি নিয়ে আমরা সবাই আমার মাকে অসংখ্যবার হাসি-তামাশা করেছি। আমার মা সেই হাসি-তামাশা মেনে নিয়েছেন। না মেনে উপায় কী? একজন নূতন লেখকের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের প্রথম কপিটি হাতে নেওয়ার যে তীব্র আনন্দ সেটি সেই লেখক ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।

আমাদের পরিবারের সত্যিকারের প্রথম গ্রন্থকার ছিল আমার অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশের কত মানুষ তাঁর কতঁ লেখা কত বার পড়েছে। কিন্তু আমি রীতিমতো অহংকার করে বলতে পারি, তাঁর প্রথম লেখাটি সবার আগে পড়েছিলাম আমি। হুমায়ূন আহমেদ তখন মহসিন হলে থাকে, আমি থাকি সূর্যসেন হলে (পরে আমি ফজলুল হক চলে গিয়েছিলাম)।

যাই হোক, একদিন ভোরবেলা হুমায়ূন আহমেদ আমার হলে এসে আমার কাছে খবর পাঠাল, আমি নিচে নেমে এলাম। সে আমাকে হাতে লেখা কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, “কাল রাতে আমি এটা লিখে শেষ করেছি। পড়ে দেখ।”

আমি কাগজগুলো নিয়ে ছয় তলায় নিজের রুমে গেলাম। ছোট একটি উপন্যাস। কিছুক্ষণের মাঝে পড়া শেষ হয়ে গেল এবং আমি অনেকক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। উপন্যাসটির নাম ‘নন্দিত নরকে’ এবং সেটি পড়ে আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের পরিবারে একজন অসাধারণ সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে।

আমার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হল। আহমেদ ছফা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসটি বই হিসেবে প্রকাশ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সেটি ছিল হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বই এবং দেখতে দেখতে সে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে গেল।

আমার ধারণা বেশিরভাগ মানুষ জানে না হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বই ‘নন্দিত নরকে’ এর প্রচ্ছদটি একেঁছিলাম আমি এবং ভাস্কর শামীম সিকদার।

এবারে আমি আমার নিজের বইয়ের গল্পগুলোর কথা বলতে পারি। সবাই তো তার প্রকাশিত বইয়ের গল্প বলে আমি অপ্রকাশিত বইগুলোর গল্প বলি।

আমি প্রথমবার গ্রন্থকার হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম যখন আমি ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ি। একটা কিশোর উপন্যাস লেখা শেষ করে কী করব বুঝতে না পেরে সেটা একটা খামে ভরে একজন ‘লেখক-প্রকাশক’এর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। তাঁর পরিচয় দিলে সবাই চিনবে, তাই সেটা আর বলছি না। আমার পাণ্ডুলিপির প্যাকেট পাওয়ার প্রায় সাথে সাথে তিনি আমাকে চিঠি লিখলেন। চিঠিতে তিনি লিখলেন, আমার উপন্যাসটি তাঁর পছন্দ হয়েছে, তবে আমি যদি কাগজের দামটি দিই তাহলে তিনি বই হিসেবে প্রকাশ করবেন। কাগজের দাম কত সেটাও তিনি লিখে দিলেন, তিনশত টাকা।

টাকার পরিমাণ এখন খুব বেশি মনে না হলেও তখন আমার কাছে সেটা অনেক। কাজেই সেই টাকা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

আমার সেই কিশোর উপন্যাসটি আর বই হিসেবে প্রকাশিত হল না। তবে সেটি নিয়ে আমার খুব দুঃখ ছিল না। কারণ সেই ‘লেখক-প্রকাশক’ চিঠিতে আমাকে একটা ভবিষ্যদ্বাণী লিখে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “আপনি বড় হলে একজন সত্যিকারের শিশুসাহিত্যিক হতে পারবেন।”

তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণীতেই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। চিঠিটা বুকপকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এবং বন্ধুবান্ধবদের দেখাই। তারা হিংসার দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের শিশুসাহিত্যিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।

মজার ব্যাপার হল, বেশ কয়েক বছর পর কীভাবে কীভাবে জানি আমার বাবা জানতে পারলেন যে, তিনশ টাকা কাগজের দাম দিলেই আমার একটা বই বের হয়ে যেত। আমার বাবা খুব অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি সেটা কোনো দিন তাঁকে বলিনি কেন। তাহলে বাবা আমাকে সেই টাকা দিতেন।

আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি, কিন্তু উত্তরটা আসলে খুব সহজ। যত ছোটই হই না কেন, তবুও তো আমি লেখক। লেখক কেন নিজের টাকা দিয়ে বই ছাপাবে?

আমার দ্বিতীয় যে পাণ্ডুলিপিটা কোনো দিন বই হিসেবে তার চেহারা দেখাতে পারেনি, সেটা আমি লিখেছিলাম যখন আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। সেটি কী নিয়ে লিখেছিলাম এত দিন পরে আমার আর মনে নেই। আমার ভাইবোনের কোনো একজন সেই পাণ্ডুলিপিটার একটুখানি পড়ে সেটা নিয়ে কোনো একটা মন্তব্য করল। মন্তব্যটা আমার পছন্দ হল না। তাই আমি একটা ম্যাচ, একটা মোমবাতি এবং উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটা নিয়ে ছাদে গেলাম। মোমবাতিটি জ্বালিয়ে উপন্যাসের একটা একটা পৃষ্ঠা মোমবাতির শিখায় ধরতে লাগলাম এবং সেটা দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল।

যতদূর মনে পড়ে আমার সাথে ছোট আরও একজন ছিল এবং আগুন দিয়ে একটা উপন্যাস জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তার উৎসাহের সীমা ছিল না।

তৃতীয় যে বইটি প্রকাশিত হতে পারেনি সেটি খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা। বাংলা একাডেমিতে হে ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছি। সেখানে একজন ভারতীয় মানুষের সাথে দেখা। তিনি আমাকে খুঁজে বের করে বললেন, আমার কিছু বই ইংরেজিতে অনুবাদ করে কোনো একটা বড় প্রকাশনী থেকে বিদেশি পাঠকের জন্যে প্রকাশ চান। আমি আনন্দের সাথে রাজি হলাম। ভদ্রলোক আমার কাছে কোনো একটা বইয়ের নাম জানতে চাইলেন। আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা আমার কিশোর উপন্যাস ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এর নাম বললাম।

কিছুদিনের ভেতরেই সেই বিখ্যাত প্রকাশনী থেকে একজন আমার সাথে যোগাযোগ করলেন। অনুবাদটি তারা গ্রহণ করলেন এবং চুক্তিপত্র হিসেবে ছোট ছোট টাইপে লেখা কাগজপত্র পাঠাতে শুরু করলেন। আন্তর্জাতিক মানের বড় প্রকাশনী থেকে বই বের করতে হলে কত রকম কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয় তখন সেটা আমি জানতে পারলাম।

যখন আমরা চুক্তির একেবারে শেষ মূহূর্তে পৌছেছি তখন সেই বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে ই-মেইল পাঠালেন। তিনি লিখলেন, তারা বইটির দুটি পরিবর্তন করতে চান। ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ নামটি খুব সাদামাটা, তারা এর পরিবর্তে আরও জমকালো একটা নাম দিতে চান। এছাড়াও ‘রাশেদ’ নামটি খুব প্রচলিত নাম নয়। তারা সেই নামটির পরিবর্তন করে ‘রশীদ’ করে দিতে চান।

খুবই স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল সেই আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর বড় কর্মকর্তাকে কিলিয়ে ভর্তা করে দিই! সেটি বাস্তবজীবনে করা সম্ভব নয়। তাই আমি পাল্টা ই-মেইলে তাদের সাথে আমার চুক্তি বাতিল করে দিয়ে বললাম, “আপনাদের আমার বই প্রকাশ করতে হবে না। আমার দেশের ছেলেমেয়েরা এই বইটি পড়লেই আমি খুশি।”

শুধু এইটুকু লিখেই অবশ্যি আমি তাদের ছেড়ে দিইনি, একজন লেখককে কী বলা যায় এবং কী বলা যায় না তার উপরে অনেক লম্বা লম্বা উপদেশ দিয়েছিলাম।

আমার ই-মেইল পেয়ে তারা নড়েচড়ে বসে ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে আরও লম্বা ই-মেইল পাঠিয়ে বইটি ছাপানোর জন্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করার জন্যে অনেক ঝুলোঝুলি করেছিল। আমি আর রাজি হইনি।

আন্তর্জাতিক প্রকাশনী থেকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ হয়ে আমার বই বিদেশি পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হবে কে বলেছে? আমাদের দেশের একটা ছেলে বা মেয়ে আমার লেখা একটা বই পড়লেই আমি খুশি।

একজন মানুষ তার একটি জীবনে এর থেকে বেশি আর কী চাইতে পারে? (সংগৃহীত)

লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd