অপাঠ্য লেখার কারণে বিশ্বে বছরে ৭ হাজার রোগীর মৃত্যু


ফেব্রুয়ারি ১২ ২০১৭

Spread the love

বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া : দেশ থেকে আসার পর ভেবেছিলাম দেশ নিয়ে আরো কটি লেখা লিখবো। দুটি বিষয় নিয়ে লেখার পর ইউরোপ-আমেরিকায় এত কিছু ঘটে চলেছে যে লেখার বিষয় গেছে পাল্টে। ভাবছি এবার লিখবো ’হাতের লেখা’ নিয়ে। ভাবছেন এটা একটা লেখার বিষয় হলো নাকি। আমরা তো সবাই জানি কারো হাতের লেখা সুন্দর হয়, কারো মোটামুটি, পড়ার মত, কারো পড়ার অনুপযোগী, কারো একেবারে বাজে। আমার হাতের লেখার দশা এমনই যে কখনো-সখনো নিজে নিজের লেখাই উদ্ধার করতে পারিনে। হাতের লেখা কেমন সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ যা তা হচ্ছে পড়ার উপযোগী কিনা। বিশেষ করে কোন কোন পেশা আছে যেখানে হাতের লেখার উপর নির্ভর করে মানুষের বাঁচা-মরা। ভাবছেন মশকরা করছি? মোটেই নয়। সে কথায় একটু পরে আসছি।

এখন তো হাতের লেখার চল প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। শৈশবে হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যে, মনে পড়ে, একই বাক্যকে দশ বার করে এক পৃষ্ঠায় লিখতাম। বানান ভুল করলে এই ধরনের শাস্তির প্রচলন ছিল আমাদের সময়ে। তাতে বানান যেমন একদিকে শুদ্ধ হতো, তেমনি হাতের লেখাও সুন্দর হতে সহায়কের ভূমিকা পালন করতো। আমাদের দেশে স্কুলগুলোতে এখন তেমন ’সিস্টেমের’ চল আছে কিনা জানা নেই। প্রেমের চিঠির (প্রেম পত্র) ভাষা যেন সুন্দর হয়, হাতের লেখা যেন প্রেমিকের মন কাড়ে সেই জন্যে আমাদের সময় যারা প্রেম করতো, আমার বিশ্বাস সবার এই প্রচেষ্টা থাকতো, অচেতনভাবে হলেও। চিঠির ভেতর কয়েকটি গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি, কিংবা একটু সুগন্ধি ছড়িয়ে দেয়া, দুটি ঠোঁটের লাল লিপিস্টিকের ছাপ কিংবা তীর বিদ্ধ হার্ট কত কী ছিল। কেবল প্রেমের চিঠির কারণে কবিতা, উপন্যাস ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখেছি অনেককে। দেখেছি তাদের সেখান থেকে ধার করা লাইন নিজের বলে চালিয়ে দিত। ভাষা জানুক আর না জানুক, প্রেমিক বা প্রেমিকাকে লেখা চিঠি সুন্দর হতে হবে, হতে হবে কাব্যে ভরা। এই প্রেমের চিঠি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কত না দুষ্টমি করেছি। এখন মনে পড়লে হাসি পায়। আমার এক কাকা ছিলেন, দূর সম্পর্কীয়। বয়সে আমার চাইতে বছর কয়েক বড়, কিন্তু শারীরিক গঠনে ছোট। তার ছিল না টাকা পয়সার অভাব, অভাব যা ছিল তা হলো লেখাপড়া। কলমের ধার একেবারে ছিলনা বললেই চলে। তার সব ভাইয়েরা ব্যবসা করেন তখন, বাড়ীর আর্থিক অবস্থাও অতি সচ্ছল। ওই কাকা প্রেম করতো স্কুল পড়ুয়া তার প্রতিবেশী এক মেয়ের সাথে। মেয়েটি আমার চেনা। দেখতে চোখে পড়ার মত। সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। দুপুর নাগাদ বাসায় ফিরতাম। বাবার ছিল সরকারী বড় বাসা। বাসায় ঢুকেই বা দিকে আমার ছোট্ট কামরা। ছিল বাইরের দিকে কাঠের জানালা। জানালা খুলেই নেট। রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের মত ছিল একটি খোপ, তাতে হাত ঢুকিয়ে দেয়া যেত। জানালার দিকে থাকতো মাথা। দুপুরে ইউনিভার্সিটি থেকে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেব, এমন সময় এসে হাজির হতো আমার সেই প্রেমিক কাকা। এসেই বলতো, বাজি (বাবাজি) চল। সে কখন আসবে সে আগেভাগে বলে রাখতো, উদ্দেশ্যও। তারপর দুজন রিক্সা নিয়ে সোজা নিউ মার্কেট। দোতলায় উঠে ’ডায়মন্ড’ রেস্তোরাঁ। সব সময় ভীড় লেগেই থাকতো এই রেস্টুরেন্টে। ঢুকেই হাতের বাদিকে সারিবদ্ধ কয়েকটি কেবিন। পর্দা টাঙানো। স্কুল-কলেজ থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আসা ছেলে-মেয়েরা সাধারণত: সেখানে বসতো, যতক্ষণ সম্ভব গল্প গুজব করতো, নিবিড় হয়ে পাশাপাশি বসে, কিংবা মুখোমুখি। আমি আর কাকা ঢুকে পড়তাম তেমনি একটি খালি কেবিনে। ওয়েটার কাছে এলে কাকা কখনো কাটলেট, কখনো চপ অর্ডার দিতেন চায়ের সাথে। খাবার আসার সাথে সাথে কাকা পর্দা টেনে দিতেন। পকেট থেকে বের করতেন কাগজ আর কলম। বলে, লেখ। আমি খেতে খেতে লিখে যাই তার প্রেমের চিঠি। মাঝে মাঝে সে বলে তার মনের কথা আর আমাকে মনে করিয়ে দেয় বারবার, ’একটু গুছিয়ে, সুন্দর করে লিখে দিও, বাবাজি’। প্রায়শ: এমন হতো, অর্ধেক পাতা লিখে চুপ করে আছি, কলম এগুচ্ছে না। কৌতূহলী কাকা প্রশ্ন করে, কী হলো? লিখছো না কেন? ’সামনে টেবিলের উপর খালি প্লেট দেখিয়ে বলি, কাটলেট-চা দুটোই তো শেষ। সেই কারণে কলম এগুচ্ছে না। উচ্চারণ করা যায়না এমন ধরনের একটা গালি দিয়ে ওয়েটারকে ডাকতো। এভাবে যে তার কত চপ আর কাটলেট খেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। এখন ভাবি তেমনটি করা বোধকরি ঠিক হয়নি।

সে দিনও নেই, সেই প্রেম পত্রও নেই। এখন তো আর প্রেম পত্র লেখা হয় না। এখন পাঠানো হয় খুদে বার্তা; স্কাইপ, ফেইসবুক, হোয়াটস্যাপ এখন দখল করে নিয়েছে হাতের লেখা চিঠির স্থান। এখনকার ছেলেমেয়েদের যদি বলা হয়, ‘পেন ফ্রেন্ডশিপ’, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বেশীর ভাগই অবাক তাকিয়ে থাকবে, যেন উদ্ভট কিছু একটা বলা হচ্ছে। এখন লেখালেখি যা হয়, তা কম্পিউটারের মাধ্যমে। এই যে লিখছি বছরের পর বছর এই ‘কলামে’, লিখি ল্যাপটপে। ফলে হাতের লেখার চর্চা উঠেছে একেবারে শিকেয়। ফলাফল হাতের লেখার শ্রী, যা কোনো কালেই ছিলনা, তার বারোটা বেজে গেছে। আমারটা তাও কষ্ট করে হলেও উদ্ধার করা যায়। কিন্তু আমার চেনা জানা দশ বার জন ডাক্তারের (বাংলাদেশী) হাতের লেখা আমি কেন, মরণের ওপার থেকে নেমে এসে আমার বাবাও উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন না সে আমি কোন দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারি। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার যে অশিক্ষিত ছেলেটি বা কর্মচারীটি ওষুধের দোকানে চাকরী করে, সে ডাক্তারের ওই হিজিবিজি আঁচড় পড়তে পারে। অন্তত: আপাত:দৃষ্টিতে তাই মনে হয়। প্রশ্ন – সে কি সব আদৌ ঠিকঠাক পড়তে পারে? পারে না। গেল বছর সেপ্টেম্বরে আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন (আই ও এম) চালিত এক জরীপে দেখা যায়, ফি বছর কেবল আমেরিকায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে অপাঠ্যযোগ্য হাতের লেখার কারণে প্রায় ১৫ লক্ষ রোগী অসুস্থ হন। ওই জরীপে আরো জানা যায় গোটা বিশ্বে প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পেরে ভুল ঔষধ খেয়ে মারা যান ৭ হাজার মানুষ। ভাবা যায় ? নাকি এটি কোনভাবে গ্রহণ ও ক্ষমা করা যায়? বাংলাদেশে এই নিয়ে কোন জরীপ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হলে এই সংখ্যা যে আকাশ ছোঁয়া হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা দেশের আনাচে-কানাচে, শহরে, রাজধানীর হাজার হাজার ঔষুধের দোকানে যে সমস্ত বিক্রেতা আছে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু থাকতে পারে তা আমাদের সবার জানা। সমস্যা হলো, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই যে ডাক্তারের হাতের লেখা প্রেসক্রিপশন পড়তে পারবে তার নিশ্চয়তা কি? আমি তো পারিনে। বাংলাদেশের ডাক্তারদের হাতের লেখার এমনই দুর্দশা যে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। গেল মাসে হাইকোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বলে আদেশ দিয়েছে যে মন্ত্রণালয় যেন ৩০ দিনের মধ্যে সহজে পড়া যায় এমন করে লেখার জন্যে ডাক্তারদের নির্দেশ জারী করে। ত্রিশ দিন পার হয়ে গেছে। জানিনে মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে হাই কোর্টের দেয়া নির্দেশ পালন করেছে কিনা। ডাক্তারের হাতের লেখা নিয়ে মার্কিন লেখক, সাংবাদিক আর্ল উইলসনের (১৯০৭-১৯৮৭) একটি প্রচলিত কথা এখানে উল্লেখ না করে পারছিনা। তিনি বলেছিলেন, “ডাক্তারের হাতের লেখা প্রেসক্রিপশন আপনি হয়তো পড়তে নাও পারেন, কিন্তু লক্ষ্য করবেন তিনি যে বিল লিখেন তা কিন্তু সুন্দর করে টাইপ করা।’’

হল্যান্ডে অনেক আগ থেকে ডাক্তারদের হাতের লেখা প্রেসক্রিপশন নিষেধ করা হয়েছে। এখানে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন লিখেন কম্পিউটারে। আমাদের দেশে সব ডাক্তারের কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান আছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। দেখার বিষয় সব ডাক্তার, বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জের ডাক্তারদের পক্ষে তা সম্ভব কিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলছি বটে কিন্তু এখনো অনেক জরুরী ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হচ্ছে না। চিকিৎসার স্বার্থে ডাক্তারদের হাতের লেখা স্পষ্ট করে লেখা যেন বাধ্যতামূলক করা হয় তার ব্যবস্থা নেয়া যে খুব জরুরী হাইকোর্টের নির্দেশ তাই বলে দেয়। কি জানি তারা (ডাক্তাররা) আবার বেজার হন কিনা? বেজার হলে আমার ঘর থেকেই শুরু হবে। কেননা ঘরেই রয়েছে ডাক্তার, বড়দা। হাইকোর্টের নির্দেশ যদি তাদের ’ইগোতে’ লাগে তাহলে তারা আন্দোলনও করতে পারেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেন। প্রয়াত নাট্যকার ও লেখক হুমায়ুন আহমেদ তার এক নাটকের মূল চরিত্র, ডাক্তারকে (আফজাল হোসেন) একটু বোকা কিছিমের দেখিয়েছিলেন। ডাক্তারদের গায়ে লাগলো, তারা মিছিল বের করলেন এর প্রতিবাদে। কদিন আগে দেখলাম ডাক্তাররা প্রতিবাদ করেছেন পাঠ্য বইয়ে ডাক্তারদের ’অর্থ লিঞ্ঝু’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে। হাতের আঙ্গুল সব সমান নয় যেমন, তেমনি সব ডাক্তারকে ঐভাবে চিত্রায়িত করা হয়তো সঠিক হয়নি। কিন্তু কথাটা কি একেবারে উড়িয়ে দেবার মত? দেশের কজন ডাক্তার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন মানবতার সেবাই তাদের লক্ষ্য। এই প্রসঙ্গে সেদিন এক প্রবাসী বাংলাদেশী বললেন, ’ কথায় আছে থানার ধারে কাছে কানা যায় না। কিন্তু অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে ডাক্তারের কাছে মরাও যায় না।’ ব্যাখ্যা করতে বললে তিনি বলেন, ’ নেহায়েৎ অপারগ না হলে ডাক্তারের কাছে কেউ যেতে চায় না। কারণ সে জানে ডাক্তারের কাছে গেলে তাকে ’চেঁছে’ দেয়া হবে, অর্থাৎ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এই টেস্ট, ওই টেস্ট, ফী ইত্যাদি করতে করতে তাকে অনেকটা মেরে ফেলার মত।

হাইকোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন ডাক্তারদের হাতের লেখা উন্নত করার জন্যে। আবেদন জানাবো, ডাক্তারদের (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) রোগীর সাথে ভালো আচরণ কিভাবে করতে তার উপর ’কোর্স’ চালু করতে। ইউরোপে ডাক্তারের ব্যবহারে রোগীর অসুখ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। বাংলাদেশে এর ঠিক উল্টো। এ আমার দু -দিকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। হল্যান্ডের কথা বলি- ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করলেন তার সহকারীকে ফোন করে. নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময় আপনি গেলেন তার চেম্বারে। অপেক্ষা করছেন বসার কামরায়। নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তার তার কামরা থেকে বেরিয়ে রোগীর নাম ধরে ডাক দিলেন। রোগী এগিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন। সহাস্যে ডাক্তার রোগীকে নিয়ে তার কামরায় গেলেন। রোগীর সমস্যা শুনে ডাক্তার তার কী সমস্যা, কী করতে হবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। প্রয়োজনে সামনে কম্পিউটারের স্ক্রীনে দেখিয়ে দেবেন। আর আমাদের দেশে? কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া, ডাক্তার রোগীর সমস্ত সমস্যা শোনার আগেই কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং জাতীয় হাতের লেখায় এক ফর্দ ঔষুধ লিখে দিয়ে বলবেন, অমুক ক্লিনিক থেকে এটা-ওটার টেস্ট করিয়ে আনবেন, তারপর আবার আসবেন। কিছু যদি জিজ্ঞেস করতে যান, ডাক্তার এমন একটা ভাব করবে যেন আপনি প্রশ্ন করে মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছেন। এই অভিজ্ঞতা আমার নিজের, অসুস্থ মা এবং বাবার সাথে হাসপাতাল আর প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তারের (প্রফেসর) সাথে দেখা করতে গিয়ে। এই নিয়ে লিখতে গেলে কম করে হলেও কয়েক দফায় লিখতে হবে। সে সম্ভব না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে কেবল এটাই ডাক্তারদের বলবো, ’অর্থ কামান, কোন সমস্যা নয়। এই অর্থ কামানোর জন্যে আমার মত অনেকের ইউরোপ আসা। কিন্তু রোগীরা আপনাদের কাছ থেকে একটু সহানুভূতিসম্পন্ন ব্যবহার আশা করেন। পেশাটিকে একটু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখুন। চিকিৎসা মহৎ পেশা। মানুষ খুব অসহায় হয়ে আপনাদের কাছে যান। তাদের ভালোবাসুন, পেশার মহত্বকে আরো মহৎ করে তুলুন। মানুষ তো মানুষের জন্যেই, তাই নয় কি?

(সংগৃহীত)

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন