এসবিনিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথ ধরেই বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশ হিসাবে আপন মহিমায় অধিষ্ঠিত হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধীদলসহ সকলকে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদের ২০১৭ সালের প্রথম অধিবেশনে (শীতকালীন) রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদ দেশের আপামর জনসাধারণের আশা–আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আলোকিত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্খা বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি তার ১১৪ পৃষ্ঠার ভাষণে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম ও অর্থনীতি, ব্যবসা–বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, পররাষ্ট্রনীতি, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নারী ও শিশু খাতে উন্নয়ন, ক্রীড়া, যুব উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, অভিবাসীদের উন্নয়ন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং জন প্রশাসন খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
ভাষণের শুরুতে তিনি সকল সংসদ সদস্য ও দেশবাসীর প্রতি ইংরেজি সববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
এছাড়া তিনি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহীদকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি সার্বভৌম দেশ ও স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান ও লাল–সবুজ পতাকা অর্জিত হয়েছে।
তিনি চার জাতীয় নেতা– সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। যারা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এবং ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা সমুন্নত রাখার লড়াইয়ে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের তিন মহান পুরুষ– শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। যারা জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্ট সংঘটিত বর্বর হত্যাযজ্ঞ ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেদিন শাহাদাতবরণ করেছিলেন তাঁর মহিয়সী সহধর্মিনী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও পারভীন জামাল রোজী, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁদের সবাইকে অত্যন্ত দুঃখ–ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এছাড়াও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় শহীদ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ বিভিন্ন সময় গ্রেনেড হামলা ও আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প–২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য–আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য–আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে ২০৪১ সালের দিকে। তিনি দৃঢ়ভাবে আস্থা প্রকাশ করেন সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাঙ্খা পূরণে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাটছি, সে পথ ধরেই বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশ হিসাবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। ‘রূপকল্প–২০২১’ এবং দিনবদলের সনদের ভিত্তিতে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং এ কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আর্থ–সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে দেশে নাশকতার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশসমূহের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় জুড়ে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং দেশ পরিচালনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শেষে সংসদের কার্যক্রম ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
Leave a Reply