Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
amerca Archives - Daily Dakshinermashal

Tag: amerca

  • ইউক্রেনের হামলায় ক্রিমিয়া সেতু ক্ষতিগ্রস্ত

    ইউক্রেনের হামলায় ক্রিমিয়া সেতু ক্ষতিগ্রস্ত

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের হামলায় ক্রিমিয়া সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
    একজন রুশ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার এই কথা জানিয়েছেন।  
    এই সেতু ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সংযুক্ত করেছে। যার আংশিক রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
    ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার নিয়োগকৃত গভর্ণর সার্গেই আকসিনভ টেলিগ্রামে বলেছেন, রাতে সেতুতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
    ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলে অবস্থিত ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে।

  • বিভিন্ন সমস্যা ও গেজেট প্রকাশে অস্বাভাবিক কালক্ষেপনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

    বিভিন্ন সমস্যা ও গেজেট প্রকাশে অস্বাভাবিক কালক্ষেপনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত


    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি ও আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার আলোকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত সমস্যাসহ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বিরাজিত সমস্যাদির সমাধন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন পূর্বক গেজেট প্রকাশে অস্বাভাবিক কালক্ষেপনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
    বৃহস্প্রতিবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স (আইডিইবি) এর আয়োজনে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
    মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স (আইডিইবি) সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো: আব্দুর রশিদ, সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল আক্তার অপু, সাধারণ সম্পাদক এম. এম. এ জায়েদ বিন গফুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান শিমুল, যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা, কাউন্সিলর শেখ রফিকুল ইসলাম, তুশার রাম চৌধুরি প্রমূখ।


    এসময় বক্তার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি ও আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটির আলোকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত সমস্যা সমাধন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন পূর্বক গেজেট প্রকাশে লক্ষে সদয় নির্দেশনা প্রদানের বিনীত অনুরোধ জানায়।
    মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

  • আশাশুনিতে উপজেলা  পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতা ও শিখন বিনিময় সভা 

    আশাশুনিতে উপজেলা পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতা ও শিখন বিনিময় সভা 


    আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির (ইউএনসিসি) সাথে পি পি ই পি পি প্রকল্পের পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতা ও শিখন বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উন্নয়ন (একটি আর্থ সামাজিক প্রতিষ্ঠান) ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ানুর রহমান।এফসিডিও ও পিকেএসএফ এর অর্থায়নে সভার শুরুতে প্রকল্পের পরিচিতি ও কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন উন্নয়নের টি ও (নিউট্রেশন) সাইদুর রহমান।বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্ত্তী ও মোসলেমা খাতুন মিলি, মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসূন কুমার মন্ডল, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম আজিজুল ইসলাম, ওসি’র প্রতিনিধি এস আই আবু হানিফ, শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।বক্তারা পুষ্টি বিষয়ক গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাথওয়েজ টু প্রসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল (পিপিইপিপি) প্রকল্পের মাসিক মিটিং নিয়মিত করণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার প্রচারণা করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

  • আশাশুনির শ্রীকলস গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ৩ ভাইয়ের ঘর পুড়ে ছাই 

    আশাশুনির শ্রীকলস গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ৩ ভাইয়ের ঘর পুড়ে ছাই 

     
    আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ৩ ভাইয়ের ঘর পুড়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলা সদরের শ্রীকলস গ্রামে। আশাশুনি ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের আধা ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম মোড়ল জানান, খবর পেয়ে দুটি ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রীকলস গ্রামের মৃত আফিল গাজীর ছেলে জয়নাল হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের ২ বসত ঘর, ২ রান্না ঘর ও ১ টি বাথরুমে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেলেও প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

  • আশাশুনিতে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন,  গণহত্যা ও  মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি সভা

    আশাশুনিতে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, গণহত্যা ও মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি সভা


    আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩ উদযাপনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিপা রানি সরকার, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস মোসলেমা খাতুন মিলি, মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসূন কুমার মন্ডল, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম আজিজুল ইসলাম, ওসি’র প্রতিনিধি এস আই আবু হানিফ, শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। সভায় ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, জন্মদিনের কেক কাটা, মসজিদ মন্দির ও গীর্জায় দোয়া ও প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এছাড়া জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ পরিবেশন করা। ২৫ মার্চ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকা, ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা সহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহিত হয়।

  • Untitled post 19732

    বহি:শক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

    বহি:শক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বহিরাগত শক্তির যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ চাইনা। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ^াসী। কিন্তু বহি:শক্তির যে কোন আক্রমণ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীকে পর্যাপ্ত সক্ষম করে তুলতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।”
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’ এর ‘দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রুপান্তরিত করতে চাই। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।
    তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জণগণের পাশে আছে। যেকোন দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয় বিদেশেও।
    শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বন্ধু প্রতীম কোন দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষী বাহিনী গৌরবজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার কাজে সফলভাবে অংশগ্রহণের উল্লেখ করেন।
    তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তার হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ তার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের’।
    অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জীপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তাঁর সাথে ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।

    মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা এদেশকে গড়ে তুলেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময়ই তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন এবং সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেন।
    সরকার প্রধান বলেন, ১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি’র শুভ উদ্বোধন করেন এবং কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনামলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। তিনি ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘১৯৭৫ সালে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কলঙ্কলিপ্ত হয় । জাতির পিতাকে হত্যার পর সমস্ত উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেমে যায় এবং আমাদের স্বাধীনতার আদর্শ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়’।
    শেখ হাসিনা বলেন, তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বচিত করা হলে ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর ১৯৮১ সালে একরকম জোরকরেই দেশে ফিরে আসেন। এমন একটি দেশে ফেরেন যেদেশে তাঁর পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিলনা। খুনীদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ’৭১ এর পরাজিত শক্তি এবং ’৭৫ এর ঘাতকরা রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় তিনি ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই দীর্ঘ সময় আর দেশে ফিরতে পারেননি তাঁরা। 
    তিনি বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণ আড়াই হাজার বছরে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ^ ঐতিহ্যে ঠাঁই পেয়েছে সে ভাষণ এবং জয়বাংলা শ্লোগানও এই দেশে নিষিদ্ধ ছিল। ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ  সরকার গঠন করলে মানুষ আবার সেই সত্য ইতিহাস জানার সুযোগ পায়। পাশাপাশি তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সুপ্রশিক্ষিত এবং শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
    প্রথম মেয়াদে সরকারে থাকার সময় তাঁরা ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
    তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছি। আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছি।
    তিনি বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে তাঁর সরকার সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্তকরণ এবং  প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক এবং যুগোপযোগী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করার পদক্ষেপ নেয়া হেেয়ছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’- এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐহিত্যপূর্ণ। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সকলকে আমার আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 
    তিনি তাঁর গৃহহীণ ভূমিহীনকে ঘর করে দেয়ার আশ্রয়ন প্রকল্পসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং দেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করেন।
    তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতি দেশ ও জাতির আস্থার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পর্যন্ত ৩৫টি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট জাতীয় পতাকা অর্জন করেছে, ২০১৪ সালে আমার হাতে এ প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩টি রেজিমেন্টের জাতীয় পতাকা গ্রহণের স্মৃতি আজ মনে পড়ছে।
    প্রধানমন্ত্রী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান। তাদের সময়ে তারাও এই বাহিনীকে উন্নত করতে যতাযথ পরিশ্রম করেছেন। নিশ্চই আপনাদের সেই অভিজ্ঞতা আজকের প্রজন্ম স্মরণ করবে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
    তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আনন্দ ও উৎসবমুখর পুনর্মিলনী অবসরপ্রাপ্ত ও চাকুরিরত সর্বস্তরের সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ আরও সুদৃঢ় করবে এই প্রত্যাশা করছি। আমাদের দেশ প্রেমিক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যগণ জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ অর্পিত সকল দায়িত্ব সফলতার সাথে পালনে সক্ষম হবে এবং কর্মজীবনে সকল ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে বলেই আমি বিশ^াস করি।
    তিনি আজকের অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন করায় সেনাবাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেও ধন্যবাদ জানান।
    করোনা মহামারী দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ^মন্দা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য সকলকে কৃচ্ছতা সাধন এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবানেরও পুনরোল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
    তিনি বলেন, এটা ততদিন অব্যাহত রাখতে হবে যতদিন না এই যুদ্ধ থামে এবং এই মন্দার কবল থেকে বিশ^ মুক্তি পায়। তাঁর সরকার দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছে, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু এজন্য সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

  • বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মো. মোসলেম’র সুস্থ্যতা কামনা

    বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মো. মোসলেম’র সুস্থ্যতা কামনা

    সাতক্ষীরা জেলা জেএসডি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মো. মোসলেম’র সুস্থ্যতা কামনা

    বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল ফেডারেশন এর সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ, সাতক্ষীরা ফ্রেন্ডস্ ড্রামেটিক ক্লাব এবং সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি’র সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মো. মোসলেম শারীরিক অসুস্থ্য হয়ে সাতক্ষীরা চায়না-বাংলা (সিবি) হসপিটালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর আশু সুস্থ্যতা কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীর জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীর জেলা কমিটির আহবায়ক এটিএম রইফ উদ্দিন সরদার ও সদস্য সচিব ডা. মো. মুনসুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বিবৃতিদাতারা হলেন- বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীর জেলা কমিটি’র সদস্য মনিন্দ্র নাথ ম-ল, মো. বায়েজীদ হাসান, ডা. মো. নুর উদ্দীন, মো. আলাউদ্দিন, আহাজ উদ্দিন সুমন, মধুসুদন বিশ্বাস, ডা. সুদয় কুমার ম-ল প্রমূখ।

  • কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা ও প্রজ্ঞা

    কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা ও প্রজ্ঞা

    কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা ও প্রজ্ঞা

    জিয়াউল হক মু্ক্তা*
    স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গোপন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ বা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ বা ‘নিউক্লিয়াস’ প্রথম দিকে ছিল তিন জনের একটি ফোরাম; এটি গঠন করেন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। এর গঠন প্রক্রিয়ায় সিরাজুল আলম খান প্রথমে দলে ভেড়ান আব্দুর রাজ্জাককে; পরে সিরাজুল আলম খান আব্দুর রাজ্জাকের সাথে পরামর্শক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সাথে নেন কাজী আরেফ আহমেদকে। উল্লেখ্য, এখানে এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বতঃপ্রণোদিত স্বাধীনতা-সংগ্রামী; এঁদেরকে কাউকে কারোর বোঝাতে হয়নি কেন স্বাধীনতা দরকার।

    ইতিহাসের ইচ্ছানিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় আবহমান সময় এঁদের জন্ম দিয়েছেন বাংলার মানুষের মুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে। এঁরা ছিলেন আমাদের ভূমির রেভ্যুলুশনারি ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস— যাঁরা রেভ্যুলুশনারি মাসকে নির্দেশনা দিয়েছেন ইতিহাসে মানুষের জয়যাত্রা এগিয়ে নিতে। আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন তো সারা দুনিয়ার সকল মানুষের মুক্তি আন্দোলনেরই একটি আঞ্চলিক সংস্করণমাত্র— বাঙালি জাতীয়তাবাদের যা অন্যতম প্রধান উপাদানও বটে। যদিও এ দেশের আঠারো ও উনিশ শতকের লেজওয়ালা কম্যুনিস্টদের মস্তিষ্ক এটা উপলব্ধি করার মতো ততোটা বিকশিত হয়ে ওঠেনি তখনও পর্যন্ত।
    ১৯৬২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে গঠিত নিউক্লিয়াস পরে আরও দু’জনকে অন্তর্ভুক্ত করে: একজন আবুল কালাম আযাদ [১৯৬৪] ও অপরজন চট্টগ্রামের আব্দুল মান্নান [১৯৬৫]। পরে আবুল কালাম আযাদ নিউক্লিয়াসের কজ ও কাজের প্রতি আনুগত্য বহাল রেখে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি নেন নিজের পারিবার-সদস্যদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে আয়রোজগারে যুক্ত হতে। উল্লেখ্য, নিউক্লিয়াসের সদস্যদের কোন সার্বক্ষণিক পেশায় যুক্ত হওয়া আর প্রেম-ভালোবাসা-বিয়ে ও পারিবারিক দায়বদ্ধতায় জড়ানো ছিল নিষিদ্ধ। নিউক্লিয়াস আব্দুল মান্নানকে অব্যাহতি দেয় তাঁর কাজের ধীরগতি ও অনিয়মিত যোগাযোগের জন্য।
    উল্লেখ্য, আবুল কালাম আযাদ ছিলেন এমন এক তরুণ, যিনি দারিদ্র্যের তীব্র কষাঘাতে মাত্র সাত বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে জন্মস্থান নোয়াখালি থেকে অভিবাসী হন অনেক দূরের যশোরে অন্যের বাড়িতে রাখালবৃত্তি করে নিজের খাওয়াদাওয়া নিশ্চিত করতে ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি কোনোদিন পাঠ্য বই কিনতে পারেননি; এ সময় তিনি রাখালবৃত্তি ছেড়ে টিউশনি শুরু করেন এবং তা অব্যাহত রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যুক্ত হবার আগ পর্যন্ত। ১৯৬২ সালে তিনি প্রবেশিকা পাশ করেন, এবং এ সময়ই তিনি বৃহত্তর যশোর-খুলনা জেলায় শিক্ষা আন্দোলন সংগঠিত করে ছাত্রলীগের ব্যাপকভিত্তি দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ও নিউক্লিয়াসভুক্ত হন। তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বহু লোমহর্ষক প্রত্যক্ষযুদ্ধের সামরিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আন্দোলন, প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের দাবিদাওয়া অর্জনের একচ্ছত্র নেতৃত্ব অর্জন করেন ও সেসব দাবি আদায়ে সফল হন। স্মর্তব্য, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সালকালপর্বে জাসদ তাঁর নেতৃত্বাধীন শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনকে নিরঙ্কুশ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করে। 
    পরবর্তী জীবনে আবুল কালাম আযাদ যেহেতু কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না, তাই তাঁকে স্মরণ করার কেউ নেই। সেজন্যই, কাজী আরেফ আহমেদ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তাঁর প্রসঙ্গ এল বলে— সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাঁর সম্পর্কে কিছুটা জানিয়ে রাখছি। এ মহান জাতীয় বীরকে ভুলে গেলে আমাদের জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের কন্টেন্ট ও এসেন্স আমরা বুঝতে পারবো না।
    আবুল কালাম আযাদের অনন্য কীর্তির একটি হলো, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণার আগেই, ১৯৬৫ সালের নভেম্বরে সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে তিনি পূর্ব-বাংলার সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের আঞ্চলিক বৈষম্যের ওপর একটি গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেন; এ প্রবন্ধটি ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় আলোচিত হয়; মূল প্রবন্ধ ও ছাত্রলীগের বর্ধিত সভার আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি পুস্তিকাও রচিত হয়; ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকাসহ এ পুস্তিকা সারা পূর্ববাংলায় প্রচারিত হয়। এর ফলে পরে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণা করলে তা সাথে সাথে পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক বৈষম্য বিষয়ে জ্ঞাত ছাত্রলীগের কাছে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বা অধিকারের সনদ হিসেবে গৃহীত হয়। 
    ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণার পর আওয়ামী লীগসহ কোন রাজনৈতিক দল একে সমর্থন করেনি। কাজী আরেফ আহমেদ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগরের সে সময়ের সভাপতি হিসেবে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে ৬ দফার পক্ষে সর্বপ্রথম বিবৃতি দেন; তিনি হলেন ৬ দফার প্রথম সমর্থক। নিউক্লিয়াসের নিয়ন্ত্রণাধীন ছাত্রলীগ ছিল সর্বপ্রথম সংগঠন যা ৬ দফাকে সমর্থন করে রাজনৈতিক অবস্থান নেয়। নিউক্লিয়াসপন্থি এমএ আজিজের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ১৩ ফেব্রুয়ারি ৬ দফার পক্ষে বিবৃতি প্রদান করে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে— এ ৬ দফা নিয়ে বিরোধের ফলে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল; ৬ দফাপন্থি আওয়ামী লীগ আর পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট বা পিডিএম-এর ৮ দফাপন্থি আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল। 
    এখানে মাঝখানে একটু বিনোদনের জন্য একটি বিশেষ বিষয়ের দিকে তাকানো যাক। কাজী আরেফ আহমেদ ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থিদের সাথে অন্যান্য দল-মতের কোন ধরনের গুন্ডামি সহ্য করতেন না; তিনি নিজে গুন্ডা ধরনের ব্যক্তি ছিলেন না, কেননা গুন্ডারা সবসময় এক্সপোজড হয়ে যায় এবং যা তাঁর [কাজী আরেফ আহমেদ-এর] চরিত্র ও কাজের ধরনের বিরোধী; তিনি ছিলেন নিজেকে এক্সপোজ করার ঘোর বিরোধী এবং তিনি চলাফেরা করতেন ভীষণ সন্তর্পনে। কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি নিজে ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থি অংশের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতেন; আর পরবর্তীকালে তিনি লালন-পালন করেছেন সেসব নিবেদিতপ্রাণ সাহসী তরুণদের যারা ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থিদেরকে এনএসএফ ও ছাত্র ইউনিয়নের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন, প্রয়োজনে কাউন্টার-অ্যাটাক করতেন। 
    ৬ দফা ঘোষণার পর আবুল কালাম আযাদ আবারও সিরাজুল আলম খান ও নিউক্লিয়াসের নির্দেশে রচনা করেন মুক্তিপাগল তরুণদের জন্য আবেগময় এক বই: সংগ্রামী বাঙলা। ‘সংগ্রামী বাঙলা’য় বাংলার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি— শেষ অধ্যায়ের আগের অধ্যায়ে ৬ দফা ব্যাখ্যা করা হয় ও ১৯৬৬-র ৭ জুনের হরতালের ওপর আলোকপাত করা হয়; আর শেষ অধ্যায়ে দেড় পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলার নেতা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এতে আবেগময় ভাষায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা হয়, “শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শৈশব গ্রাম-বাংলার বুকেই কাটান। তিনি এদেশের মাটির মানুষ। সকালে পান্তা খেয়ে স্কুলে যাওয়া, ছুটির দিনে মাঠে ও নদীর ধারে ঘুরে বেড়ানো আর মাছ ধরা ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় শখ। বাংলার ধূলিকণা আর ঝড়-ঝঞ্ঝায় প্রস্তুত হয়েছে মুজিবের অনু-পরমানু। তিনি বাংলার মাটির মানুষ। গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষ। বাংলার নেতা।” তবে এ বইয়ের এমনকি বাংলাদেশ সংস্করণেও কেন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চের পরিবর্তে ১৯২২ সালের ২২ নভেম্বর লেখা রয়েছে তা রহস্যজনক বৈকি! হতে পারে এটা সার্টিফিকেটে দেয়া জন্ম তারিখ।
    সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে ১৯৬৭ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এ বইয়ের প্রকাশক ছিলেন তোফায়েল আহমদ। এপ্রিলে পাকিস্তান সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে; কিন্তু ছাত্রলীগ এর প্রচার-প্রচারণা ও ব্যবহার অব্যাহত রাখে। সারা জীবন সিরাজুল আলম খানকে গুরু মেনে অসংখ্য বক্তৃতা দেয়া তোফায়েল আহমদ সম্প্রতি বিশেষ মহলকে খুশি করে কিছু প্রাপ্তিযোগের আশায় সিরাজুল আলম খানের বিরুদ্ধে অশালীন ও স্ববিরোধী বক্তব্য রেখেছেন— যা খুবই দুঃখজনক। সে যাক। বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রত্যেক গবেষক-পাঠককে মনে রাখতে হবে— তৎকালে বিরাজমান কোন লেখক-বুদ্ধিজীবীর রচনা নয়— ১৯৬৫ সালের নভেম্বরে আবুল কালাম আযাদ ও নিউক্লিয়াস/ছাত্রলীগের প্রযোজনায় আঞ্চলিক বৈষম্য বিষয়ক প্রবন্ধ ও পুস্তিকা, ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু-ঘোষিত ছয় দফা ও ১৯৬৭ সালে আবুল কালাম আযাদের বই ‘সংগ্রামী বাঙলা’ ছিল বাঙালির নিজস্ব নির্ধারক রাজনৈতিক-সাহিত্য যা স্বাধীনতা সংগ্রামকে শাণিত করেছিল। সে যাক। ফেরা যাক মূল প্রসঙ্গে। 
    ৬ দফার পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নেয়া সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও আবুল কালাম আযাদ ১৯৬৪—১৯৬৫ সময়কালে জেলে অন্তরীণ থাকায় কাজী আরেফ আহমেদকে শুধু ঢাকা মহানগর নয়, বরং সারা দেশে নিউক্লিয়াসের সাংগঠনিক কাজের দেখভাল করতে হয়; অবশ্য এ সময় তিনি কারাগরে অন্তরীণ সিরাজুল আলম খানের সাথেও কিছুটা যোগাযোগ রাখতেন। নিউক্লিয়াসের উল্লিখিত তিন জন জেলে থাকার পরও কাজী আরেফ আহমেদের একক নেতৃত্বে কেবলমাত্র ঢাকাতেই নিউক্লিয়াসের অনুসারীর সংখ্যা চার/পাঁচ শ’তে উন্নীত হয়; বর্ণিত তিন জন জেলে যাবার আগে সারা পূর্ব বাংলায় নিউক্লিয়াসের অনুসারীর সংখ্যা ছিল তিন শত আর ঢাকায় তা ছিল দুই শত।
    পরে আব্দুল মান্নানের অব্যাহতি ও আবুল কালাম আযাদের কাঠামোগত বিযুক্তির ফলে ১৯৬৯ সালের সূচনায় নিউক্লিয়াস আবার সেই প্রতিষ্ঠাকালীন তিন সদস্যের কেন্দ্রীয় কাঠামোয় পরিণত হয়। শুরু থেকেই এ কেন্দ্রীয় কাঠামোর সদস্যদের কাজের কঠোর শ্রেণিবিভাজন না থাকলেও, কাজী আরেফ আহমেদের প্রধান দায়িত্ব ছিল ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের দেখভাল করা। স্বাধীনতা-পূর্বকালের কাজী আরেফ আহমেদের— স্বভাবগতভাবে যিনি ছিলেন অর্ন্তমুখি— ব্যক্তি-চরিত্রের প্রধানতম শক্তি ছিল তাঁর তীব্র তীক্ষ্ন ইনট্যুইশন বা সজ্ঞা। সিরাজুল আলম খান সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর জীবনালেখ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘুরে ফিরে বারবার কাজী আরেফের এই সজ্ঞা বা ইনট্যুইশন ও এর ঐতিহাসিক উপযোগিতার আবশ্যিকতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। 
    সিরাজুল আলম খান বলেছেন যে ১৯৬২-র শেষ দিকে “… খুবই তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন অথচ স্বল্পভাষী এক তরুণ কাজী আরেফ আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে তখন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। মাত্র আইএ পাশ করে বিএ ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। আরেফের মধ্যে ঘটনার ভেতরে না থেকেও আড়াল-অন্তরাল থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও কাজ করার যোগ্যতাসম্পন্ন একজন তরুণকে খুঁজে পেলাম। সাধারণ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠি।”
    কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা বা ইনট্যুইশন সম্পর্কে তিনি আরও বলছেন, “প্রাথমিকভাবে দেখলাম ছাত্র হিসেবে অতি মেধাবী না হলেও কাজ করার যে দক্ষতা এবং শৃঙ্খলা ও নিপুণতা আরেফের আছে তা এর আগে আমি আর কারো মধ্যে দেখিনি। আমরা দুইজন যখন আলাপ করতাম অনেক সময় প্রাথমিকভাবে দ্বিমত করলেও সিদ্ধান্তের পর মুহূর্তে সিদ্ধান্তের আগের দ্বিমতকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে সিদ্ধান্তভিত্তিক কাজ করার মানুষও আমি এর আগে পাইনি। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেককে সে সন্দেহের চোখে দেখতো। এটা ছিল তার স্বভাবজাত।” 
    তাঁর এ সজ্ঞা বা ইনট্যুইশনের বিষয়টি আমরা একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মের যারা তাঁর সাহচর্য পেয়েছি, তারাও কিছুটা জেনেছি ও উপলব্ধি করেছি। তাঁর এ সজ্ঞা বা ইনট্যুইশন তাঁর চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠেছিল তাঁর অন্য একটি স্বভাবের কারণে— সেটা হলো তাঁর বস্তুনিষ্ঠ বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা। এ বিষয়ে আবারও সিরাজুল আলম খানের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে; তিনি বলেছেন, “দেখেছি, আমরা অনেক সময় কোনো বিষয়ে উপস্থিত ও আবেগনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও, আরেফের একটি গুণ ছিল এই যে, কোনো ধরনের আবেগকেই সাধারণত সে গুরুত্ব দিতো না। বরং যে-কোনো বিষয়ের ভালো ও মন্দ দিকগুলো অত্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তারপর তার নিজের সিদ্ধান্তে আসতো। আরেফের এই বিশেষ গুণটি বহু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘নিউক্লিয়াস’-এর কাজে লেগেছে।”  
    তো আবারও যাওয়া যাক নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় কাঠামো বিষয়ে। নিউক্লিয়াসের একটি সৌন্দর্য ছিল, তা হলো এর প্রত্যেক সদস্যের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা। এটা উপলব্ধ যে কাজী আরেফ আহমেদই সম্ভবত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ভেটো ক্ষমতার প্রয়োগ করতেন সবচেয়ে বেশি, ফলে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হলেও চূড়ান্ত বিচারে তা নিউক্লিয়াসকে ব্যাপক যথার্থতা প্রদান করেছে, তা সিরাজুল আলম খান নিজেও স্বীকার করেন। এক পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও কাজী আরেফ আহমেদের ভেটোর ফলে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এ ভেটোটি ছিল কেন্দ্রীয় কমান্ড প্রসঙ্গে; সারা দেশে নিউক্লিয়াসের অধঃস্তন সদস্য, সেল ও উপকমিটিগুলোতে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নিতেন সশ্লিষ্ট উর্ধতন সংগঠক। 
    তবে নিউক্লিয়াসের তিন সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমান্ড একজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কাজী আরেফ আহমেদ তাঁর ব্যাপারে ভেটো দেননি: তিনি হলেন মনিরুল ইসলাম বা সকলের প্রিয় মার্শাল মনি। মার্শাল মনি ১৯৬০ সালে প্রবেশিকা পাশের পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাত্রলীগে যুক্ত হন ও ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তাঁকে নিউক্লিয়াস কেন্দ্রীয় কমান্ডে যুক্ত করা হয়। সিরাজুল আলম খান জানাচ্ছেন, “মার্শাল মনি ছাড়া আর কাউকে ‘নিউক্লিয়াস’-এর মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশীদার করা হয়নি।” তাঁকে নির্বাচন করাটা ছিল নিউক্লিয়াসের এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। 
    সে সময় ৬ দফা ভিত্তিক স্বাধীনতা আন্দোলন দ্রুত ব্যাপ্তি পাচ্ছিল; সিরাজুল আলম খান ও আব্দুর রাজ্জাককে অভ্যন্তরীণভাবে আপওয়ার্ড কম্যুনিকেশনসে ও ক্ষেত্রবিশেষে এক্সটার্নাল কম্যুনিকেশনসেও জোর দিতে হচ্ছিল। তখন কাজী আরেফ আহমেদ নিয়োজিত ছিলেন তাঁদের তিনজনের পক্ষে ছাত্রলীগের দেখভাল করার জন্য আর ছাত্রলীগের কমিটিভুক্ত ছিলেন বিধায় মার্শাল মনি ছিলেন ছাত্রলীগে নিউক্লিয়াসের প্রধান ব্যক্তিত্ব। মার্শাল মনি তাঁর ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র’ বইটির উৎসর্গপত্রে লিখেছেন, “এই লেখার বহু তথ্য অকথিত ইতিহাসের অংশ। যে-অংশের অনেক স্থানেই আমার প্রবেশাধিকার না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনের সুদীর্ঘ দিনের বন্ধু কাজী আরেফ আহমেদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জানার সুযোগ ঘটেছে। যা এ লেখার মূল বিষয়ের বিস্তৃতিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। এ লেখাটি তাই তার প্রতি উৎসর্গ করাটাই শ্রেয়।” আমরা নিজেরাও কাজী আরেফ আহমেদের মুখে বহুবার শুনেছি: ‘আমার দোস্ত মার্শাল মনি’। তাঁদের এ বন্ধুত্ব, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে— কীর্তিময় এক বন্ধুত্ব। 
    কীভাবে? ইচ্ছে করলে অনেক উদাহরণ দেয়া যায়, তবে এখানে শুরুতে মাত্র তিনটি বিশেষ বিষয় উল্লেখ করবো। 
    প্রথমত, মার্ক্সিয় দর্শনের তৃতীয় সূত্রের বরাতে বলা যায়— পরিমাণের গুণে উত্তরণ। ছাত্রলীগ ততোদিনে অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলোকে ছাড়িয়ে দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠনে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী ছাত্র ইউনিয়নের ব্যাঙ্গোক্তির ভাষায় ছাত্রলীগ ছিল তথাকথিত আঞ্চলিকতাবাদ ও প্রাদেশিকতাবাদের দোষে দুষ্ট একটি সংগঠন। হ্যাঁ, ছাত্রলীগের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনের স্পৃহাকে ছাত্র ইউনিয়ন তাই মনে করতো। 
    তখনও ছাত্রলীগ স্বাধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে যে পরিমাণ উচ্চকণ্ঠ ছিল, সে পরিমাণ উচ্চকন্ঠ ছিল না স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। নিউক্লিয়াসের একদম শুরুর দিকে, এমনকি সিরাজুল আলম খান নিজেও সমাজতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন না; সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, কাজী জাফর আহমেদ, হায়দার আকবর খান রনো ও মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের সাথে বিতর্ক করতে করতে ও তাঁদের দেয়া বইপত্র পড়তে পড়তে তিনি সমাজতন্ত্রের দীক্ষা নেন। শুরুর দিকে, তাঁর নিজের ভাষায়, ‘মূলত কমিউনিজমের বিরোধিতা করার জন্যই আমি এসব বই [সমাজতান্ত্রিক সাহিত্য] পড়ার প্রয়োজন মনে করেছিলাম’। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সক্রিয় স্বাধীকার ও স্বায়ত্তশাসনপন্থি স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা ছাত্র ইউনিয়নের দিকে টিপ্পনি কাটতো: ‘হো হো মাও মাও, চিন যাও ব্যাঙ খাও।’ 
    স্বাধীকার-স্বাধীনতাপন্থি ছাত্রলীগ সদস্যদের বা নিউক্লিয়াস অনুসারীদের— স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকল্প নেই— এমন দীক্ষায় দীক্ষিত করেন মার্শাল মনি। বলা চলে স্বাধীনতার লক্ষ্যে যে হাজার হাজার ছাত্র-তরুণ-যুবদের সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগের পতাকাতলে আকৃষ্ট ও সমবেত করেছিলেন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাঁরা স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে ছাত্রলীগে যোগদান করেছিলেন— মার্শাল মনি তাঁদের চেতনাজগতের গুণগত রূপান্তর ঘটান, তিনি তাঁদেরকে সমাজতন্ত্রের দীক্ষায় শিক্ষিত নিষ্ঠাবান এক যোদ্ধাবাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। এ কাজে তাঁর সাথে টিম-আপ হয়েছিলেন ছাত্রলীগের স্বতঃপ্রণোদিত ও স্বশিক্ষিত এক গুচ্ছ সাহসী তরুণ। নিউক্লিয়াসের পক্ষে ছাত্রলীগের এ আদর্শগত রূপান্তরের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে মার্শাল মনি কাজী আরেফ আহমেদ ও নিউক্লিয়াসের অনুমোদন পান, প্রেরণা পান। নিউক্লিয়াস কেন্দ্রীয় কমান্ডের পক্ষে কাজী আরেফ আহমেদ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন মার্শাল মনির সাথে।
    যদিও ১৯৬৩ সাল থেকেই নিউক্লিয়াসের সুকৌশলী নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের দীক্ষায় দীক্ষিত সদস্যগণ সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ নেন ১৯৭০ সালের ২০ মার্চের কাউন্সিল থেকে। এ কাউন্সিলে নির্বাচিত ৪৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৮ জনই ছিলেন স্বাধীনতাপন্থি ও সমাজতন্ত্রী; বাকি ৭ জন ছিলেন স্বায়ত্তশাসনপন্থি। স্বায়ত্তশাসনপন্থিদের নেতৃত্ব দিতেন নূরে আলম সিদ্দিকী আর স্বাধীনতাপন্থি ও সমাজতন্ত্রীদের নেতৃত্ব দিতেন মার্শাল মনি। স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে নীতিগত ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে— ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ও ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত ছাত্রসভার মাধ্যমে। বর্ধিত সভা ও কেন্দ্রীয কমিটির সভার ট্যাকটিক্যাল দিকটি ছিল— সারা দেশে স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের বার্তা শক্তিশালীভাবে প্রচার করা। বর্ধিত সভার এক পর্যায়ে প্রথম দিন সন্ধ্যায় কাজী আরেফ আহমেদ টিএসসিতে মার্শাল মনিকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পক্ষে আলোচনা পরিচালনা করতে বলেন; মার্শাল মনি গণপ্রজাতন্ত্রকে কোয়ালিফাই করে ‘স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা পরিচালনা করতে চাইলে কাজী আরেফ তা অনুমোদন দেন। সভায় স্বপন কুমার চৌধুরী এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সংঘটিত এ আলোচনা আওয়ামী রাজনৈতিক-সাংগঠনিক পরিমণ্ডলে সারা দেশের স্বাধীনতাপন্থি নেতা-কর্মী-সংগঠক-সদস্যদের বিশেষ বার্তা প্রদান করে। ২০২১ সালে এ গল্প খুব সাধারণ মনে হলেও ১৯৭০ সালে উত্থাপিত এ প্রস্তাব ও বিতর্ক ছাত্রলীগের ক্লাইমেক্স ছাপিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও ক্রাইসিস তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খানের আলোচনার মধ্য দিয়েও এ ক্লাইমেক্স ও ক্রাইসিসের অবসান হয়নি। অবশেষে ১৭ সেপ্টেম্বর মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ আয়োজিত শিক্ষা দিবসের আলোচনায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এমএ আজিজ স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে নিজের কঠোরতম সমর্থন ব্যক্ত করায় সেসবের আপাত-অবসান ঘটে। বঙ্গবন্ধু নিজেও হাফ ছাড়েন। 
    উল্লেখ্য, মার্শাল মনি ও তাঁর টিমের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক দীক্ষায় শিক্ষিত এ ছাত্র-তরুণ-যুবগণ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং তাঁরাই ১৯৭২ সালে সারা দেশে জাসদ গঠনে নেতৃত্ব দেন। আরও উল্লেখ্য, নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে এ বিএলএফ গঠন করা হয়েছিল অনেক আগেই, ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে, আর প্রায় একই সময়ে বিএলএফ-এর সামরিক শাখা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল জয় বাংলা বাহিনী। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে বিএলএফ বিস্তারিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল, সেসব পরে আলোচনা করা যাবে; তবে এখানে এটুকু বলে রাখা যাক যে বঙ্গবন্ধু বিএলএফ-এর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বিএলএফ-এর অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ অভ্যন্তরীণভাবে সমন্বয়ের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ।  
    দ্বিতীয়ত, ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যারিষ্ঠতা অর্জন বিষয়। ছাত্রলীগের আঞ্চলিক-বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭০-এর নির্বাচনকে বঙ্গবন্ধু ও নিউক্লিয়াস এক দফা স্বাধীনতার দিকে জনগণের ম্যান্ডেট নেবার কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ও নিউক্লিয়াস এতটাই শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিলেন যে এমনকি সত্তরের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ মারা যাওয়া সত্ত্বেও উপদ্রুত এলাকা ছাড়া সর্বত্র নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁরা অনড় থাকেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ এ নির্বাচন বর্জন করে। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সিরাজুল আলম খানের নির্বাচিত প্রায় দুই শত নবীন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন; অবশ্য এর অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু সিরাজুল আলম খানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের সংগ্রামী অংশের মাধ্যমে সারা দেশে আওয়ামী লীগের পুরোনো নেতৃত্ব প্রতিস্থাপন করে আওয়ামী লীগের দখল নেয়ার জন্য। 
    সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রায় দেড় হাজার বিএলএফ কর্মীকে তিন থেকে পাঁচ জনের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে সারা দেশের সকল প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারের কাজে নিয়োগ দেয়া হয়। এ কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় মার্শাল মনিকে, তাঁকে সহযোগিতা করেন আফম মাহবুবুল হক। মার্শাল মনিকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়ায় নিঃসন্দেহে কাজী আরেফ আহমেদের ভূমিকা ছিল বলে ধরে নেয়া যায়, কেননা ইতোপূর্বে নিউক্লিয়াসের পক্ষে তিনিই ছিলেন মার্শাল মনির তথা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অভিভাবক।
    তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও শাসন-প্রশাসন বিষয়ে [ক] বিএলএফ-এর চার প্রধানের ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এর সুপারিশ, [খ] জানুয়ারির শেষে সিরাজুল আলম খানের দেয়া ১৫ দফা সুপারিশ, [গ] ছাত্রলীগের মার্চ মাসের বর্ধিত সভা ও সাধারণ সভার সুপারিশ, [ঘ] আসম আব্দুর রব ও শাহজাহান সিরাজের দেয়া মে মাসের সুপারিশ ও [ঙ] ৭ জুন আবারও ছাত্রলীগ কর্তৃক দেয় সুপারিশ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ না করায় এবং জুলাই মাসে ছাত্রলীগের সম্মেলনে নিরপেক্ষ না থেকে সংখ্যালঘুদের উপদলীয় সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের সমর্থন দেয়ায়, কাঠামোগতভাবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে নিউক্লিয়াসের দু’জন— সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরেফ আহমেদ— প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এটা মনে রাখতে হবে যে তাঁরা দু’জন জাসদ গঠনে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও [তৃতীয়জন, আব্দুর রাজ্জাক দল গঠন বিষয়ে একমত হননি], সিদ্ধান্তের জন্য দাবি/চাপ এসেছিল সারা দেশের হাজার হাজার স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেই— যাঁরা সকলে ছিলেন মার্শাল মনির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় দীক্ষিত। 
    উল্লিখিত তিনটি বিশেষ বিষয়ের পাশাপাশি ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা ও প্রজ্ঞার আরো দুটো বিশেষ বিষয়ের উল্লেখ করতে হয়। 
    প্রথমত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মহান সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের পরাজয়ের পর কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির ও জাসদীয় রাজনীতির পক্ষে এক উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেটা হলো মোশতাক-জিয়া চক্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পাকিস্তানপন্থার বিরুদ্ধে জাসদ ও আওয়ামী লীগসমেত মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা— যদিও জাসদ ও আওয়ামী লীগ ১৯৭২ থেকে পরস্পরবিরোধী রাজনীতির চর্চা করেছে। অতীত ক্ষত ও বিরোধ ভুলে জাতীয় প্রয়োজনে ঐক্যের রাজনীতি পরিচালনা বিষয়ে তাঁর এ প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত— যদিও বারবার তা বিবিধ ষড়যন্ত্রে মুখ থুবড়ে পড়েছে— বাংলাদেশের রাজনীতিতে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার আলোকে ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে জাসদ ও আওয়ামী লীগসমেত গঠিত হয়েছিল ১০ দলীয় ঐক্যজোট ও পরে এরশাদ ক্ষমতায় আসলে গঠিত হয়েছিল ১৫ দল। তাঁর দেখানো পথেই— তাঁর প্রয়াণের পর— সর্বশেষ বিএনপি-জামাত-জঙ্গির বিরুদ্ধে জাসদ আওয়ামী লীগের সাথে গঠন করেছে ১৪ দল। ১৪ দল এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফলতম একটি আদর্শগত জোট। 
    আর দ্বিতীয়ত, ১৯৯০ সালে অবৈধ সামরিক জান্তা এরশাদের পতনের পর, সূচিত আংশিক গণতন্ত্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি নিউক্লিয়াসের পুরোনো সহকর্মী আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নেতৃত্বে রেখে যুদ্ধাপরাধ বিচারের আন্দোলন এগিয়ে নিতে গঠন করেন ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন জাতীয় সমন্বয় কমিটি’; জাসদের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হিসেবে তিনি ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হিসেবে আব্দুর রাজ্জাক এ ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র ‘স্টিয়ারিং কমিটি’র সদস্য হিসেবে মূল নীতি-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে লিয়াঁজো রাখেন; এবং সংগঠিত করেন ঐতিহাসিক গণআদালত। ক্রমে এ আন্দোলন বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে এবং জাতীয় রাজনীতির নির্ধারক উপাদানে পরিণত হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে সূচিত হয় যুদ্ধাপরাধ বিচারপ্রক্রিয়া। একদম শুরু থেকেই জাসদ একনিষ্ঠভাবে সারা দেশে এ আন্দোলনে যুক্ত থাকে। 
    স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াস গঠনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের বাইরে এখানে কাজী আরেফ আহমেদের সজ্ঞা ও প্রজ্ঞার পাঁচটি উদাহরণ আলোচনা করা হলো। সংক্ষেপে এগুলো হলো— [১] নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মার্শল মনিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে ভেটো প্রদান না করে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা, [২] মার্শাল মনি ও তাঁর টিম কর্তৃক ছাত্রলীগের রাজনৈতিক-দার্শনিক রূপান্তরে সম্মতি ও সহযোগিতা দেয়া ও স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা, [৩] জাসদ গঠন বিষয়ে সিরাজুল আলম খানের সাথে যৌথ-সিদ্ধান্ত নেয়া, [৪] ১৯৭৫ সালের পর আবারও মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের রাজনীতির সূচনা করা, এবং [৫] যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলন সংগঠিত করা। 
    এগুলো ছাড়াও বাঙালির জাতীয় মুক্তি আন্দোলন পরিচালনায় ও বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালনার লক্ষ্যে তাঁর ছোট-বড় আরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। যেমন বলা যায় পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষা প্রচলনের লক্ষ্যে তাঁর উদ্যোগে ও নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলা ভাষা প্রচলন আন্দোলন। তাঁর এ আন্দোলনী-প্রয়াসেই পূর্ব বাংলায় উর্দু ও ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় সাইনবোর্ড ও গাড়ির নাম্বার প্লেট লেখা হতে থাকে। তিনি ছিলেন সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অস্ত্র আমদানি ও প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য নিউক্লিয়াস মনোনীত কেন্দ্রীয় ব্যক্তি; যদিও একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের কারণে তা বিলম্বিত/স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। 
    ঘাতকের বুলেট কাজী আরেফ আহমেদকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। ওই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান উপদেষ্টা/কার্যালয়ের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে বাংলাদেশের এক বড় অংশকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করছিলেন— কেননা এ সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানপন্থা-দক্ষিণপন্থার ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দক্ষিণপন্থার বিদ্যমানতা বহাল রাখতে চাইছিল।  
    কাজী আরেফ আহমেদ চলে গেছেন মহাকালের পথে; কিন্তু আমরা জানি মহাকাল তাঁকে হারিয়ে ফেলতে পারবে না, লুকিয়ে রাখতে পারবে না। যতো দিন বাংলা ও বাঙালি থাকবে— ততো দিন উদ্ভাসিত থাকবেন বাঙালির জাতীয় বীর কাজী আরেফ আহমেদ। বীরের মৃত্যু নেই। শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ অমর হোন। জয় বাংলা। 
    * লেখকঃ জিয়াউল হক মুক্তা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জাসদের মুখপত্র ‘লড়াই’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক।

  • তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ২৯ মার্চ

    তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ২৯ মার্চ

    তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ২৯ মার্চ

    জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ২৯ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। 
    বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।
    তারেক-জোবায়দা পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গেজেট প্রকাশ করায় বিচারক মামলার পরবর্তী কার্যকম অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।
    এরআগে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে ৩০ জানুয়ারি এ গেজেট প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। 
    গেজেটে বলা হয়েছে, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আদালত বিশ্বাস করার যুক্তিসংঘত কারণ রয়েছে যে, তারা গ্রেফতার ও বিচার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। সেহেতু তাদের ধার্য তারিখের (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে।
    তারও আগে গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান তাদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
    ওইদিন তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের কোনো মালামাল পাননি বলে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর বিচারক মামলার পরবর্তী প্রদক্ষেপ হিসেবে বিজি প্রেসের মাধ্যমে তাদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। 
    গত বছরের ১ নভেম্বর তারেক রহসান ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় পুলিশ এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আদালত তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসিকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
    মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে এই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
    এদিকে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। 
    উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন।

  • বেলুন প্রসঙ্গে কি যুদ্ধে জড়াবেন চীন-যুক্তরাষ্ট্র?

    বেলুন প্রসঙ্গে কি যুদ্ধে জড়াবেন চীন-যুক্তরাষ্ট্র?

    বেলুন নিয়ে চীনের সাথে সংঘাতে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র : বাইডেন

    : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বুধবার বলেছেন, গত সপ্তাহে চীনের একটি বেলুন গুলি করে ভূপাতিত করা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনের সাথে সংঘাতে জড়াতে চাচ্ছে না। খবর এএফপি’র।
    তিনি পিবিএস’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমরা চীনের সাথে পুরোপুরি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা দ্বন্দ্বে জড়াতে চাচ্ছি না এবং এখন পর্যন্ত এটাই হয়েছে।’
    এরআগে, বেলুন উড়ানোর ঘটনার বৈশ্বিক প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে নাড়া দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র উদ্ধারকৃত ধ্বংসাবশেষ মূল্যায়ন করে মিত্রদের তথ্য দিচ্ছে।
    ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন এবং আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সাথে তথ্য শেয়ার করেছি।’
    ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা করছি কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এই বিস্তৃত কর্মসূচির একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। এটা পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।’
    এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে গিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বেলুনগুলোকে একটি বহরের অংশ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তারা বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে এমন বেলুন শনাক্ত করে আসছিল।
    গত সপ্তাহে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বহনকারী একটি বিশাল সাদা বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার পর বাইডেন তার সামরিক বাহিনীকে আটলান্টিকের পূর্ব উপকূলে এটিকে গুলি করার নির্দেশ দেয়।
    এ ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়, বেলুনটি নিছক আবহাওয়া গবেষণার কাজে পরিচালনা করা হচ্ছিল। তবে, পেন্টাগন এটাকে একটি উচ্চ প্রযুক্তির গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
    বেলুনটি অধিকাংশ বিমানের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতায় ভেসে যাচ্ছিল এবং এটা একেবারে স্পর্শকাতর একটি মার্কিন সামরিক স্থাপনার উপর দিয়ে সরাসরি অতিক্রম করছিল।

  • সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

    সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশবাসীকে তাদের কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
    তিনি বলেন, “ শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারা দেশে কর দিতে সক্ষম যারা, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। সরকার আপনার পরিষেবা এবং কল্যাণে আপনার অর্থ ব্যবহার করবে।”
    রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।
    তিনি আরো বলেন, “কাজেই, আমাদের সেগুলির (অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার) মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।”
    প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয় সারা দেশেই আমি সকলকে বলবো যারা কর দেবার সামর্থ রাখেন, আপনারা দয়াকরে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।
    তিনি বলেন, যেহেতু বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিষের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্বেও এগুলো অধিকমূল্যে কিনে নিয়ে আসছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে , ৮শ’ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮শ’ ডলার । আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সখানে ভর্তুতি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে, কৃষিতে তাঁর সরকার ভর্তুতি দিচ্ছে, করোনাকালিন ব্যবসায়ীদেও শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য তাঁর সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এভাবেই সরকার সকলকে দু:সময়ে তাঁর ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।
    তিনি বলেন “এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারবো। তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবো ।”
    তিনি আরো বলেন, আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরের সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন। এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করেনা, ভুমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে তাঁর সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। আর্থিক সহাযতা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের তৃণমূল পর্যায়েরও উন্নয়ন নীতির কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অর্থনীতির গতিশীলতা তৈরী হয়েছে।
    তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি যে গত ১৪ বছরে আমুল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালভাবে চালাই তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে কারণ তারাতো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাটা পাওয়ার জন্যই তারা করবে।
    প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
    অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।
    অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
    প্রধানমন্ত্রী এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত ১২ তলা রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন।
    ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনও করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন বা এজন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।
    তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে কোন জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোন ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে- আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে। আজবে রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এই সুফলটা ভোগ করছে তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্রতো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারেনা। আর অন্যের কাছে আমরা হাতও পাতবো না।
    তিনি বলেন, যাদের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবনতা রয়েছে- সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে, তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয়- সেজন্য আর করের পরিমানটাও এমন রাখতে হবে- যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে পারে। মানুষকে জানাতে হবে, ব্যাপক প্রচার করা দরকার।
    করোনা অভিঘাত এবং এর পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মানুষ কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পড়লেও, তাঁর সরকারের শাসনামলে সার্বিক আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন।
    এটার আরো ব্যাপক প্রচারণার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
    সরকার প্রধান বলেন, কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অবরোধ ও পাল্টা-অবরোধের বাস্তবতায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখা ও বেগবান করার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎসই হচ্ছে রাজস্ব আহরণের প্রধান ক্ষেত্র। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় করহার না বাড়িয়ে বরং ক্ষেত্র বিশেষে করহার যৌক্তিকীকরণ করা, করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রদানে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই মূল্যস্ফীতিতে করহার আমরা বাড়াতে চাইনা, কিন্তু করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চাই সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
    তিনি বলেন, দ্বিতীয় বার তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসে সকলের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি সকলকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় এবং তাঁর সরকারই প্রথম চালু করেন যে- প্রত্যেক সংসদ সদস্যকেও আয়কর দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আগে কর দিলেও সংসদ সদস্য হিসেবে তাদের কর রেয়াত ছিল। তাঁর সরকারই প্রধানমন্ত্রীরও কর দেয়ার ব্যবস্থা করেন শুধুমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া। ফলে করদাতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ই-টিনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে সক্ষম করদাতাগণকে কর নেটের আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগ কর্তৃক নন ফাইলার কোম্পানী-এর রিটার্ন দাখিলের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য ই-ফাইলিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অনুসৃত ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসেস’ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সরকার।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালি ব্যাংকসহ সকল তফসিলি ব্যাংক, বেপজা, সিসিআইএন্ডই, বিআরটিএ, আইএটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমের ইন্টারফেসিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
    কেবল চট্টগ্রাম নয়, মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোকেও তিনি এরসঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান। এরফলে আমাদের বিরাট অংকের রাজস্ব আয় হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
    সরকার প্রধান বলেন, ই-এলসি ব্যবস্থাপনা মনিটরিং, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও মেনিফেস্ট ডাটা শেয়ারিং-এর মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন ও কন্টেইনার ম্যানেজমেন্টও এর ফলে সহজ হয়েছে। এছাড়া, পেপারলেস কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণ, অথরাইজড ইকনোমিক অপারেটর ব্যবস্থা, অটোমেটেড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর লক্ষ্যে কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট স্থাপন ইত্যাদি আধুনিকায়ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ সকল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস সম্ভব হবে, যা আমদানি-রপ্তানিতে আরও গতিশীলতা আনবে। দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে টিআরএস (টাইম রিলিজড স্টাডি) সম্পন্ন করা হয়েছে।
    দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরোক্ষ কর ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে- সরকার প্রধান বলেন, আধুনিক বিনিয়োগ ও রাজস্ব-বান্ধব আইনটি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। জনগণ এখন অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন এবং অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারছে এবং ‘ইএফডিএমএস’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি। আয়কর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত মোট রাজস্বে আয়করের অবদান শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনা অতিমারি দুর্যোগের মধ্যেও আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের অধিক। কল্যাণমুখী ও জনবান্ধব কর আইন প্রণয়ন সমাজে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার। কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব কর নীতি, কর আইনের প্রয়োগ, সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা দূরীকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেজন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

  • জেলা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শুরা অধিবেশন

    জেলা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শুরা অধিবেশন

    ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার ২০২৩ সেশনের শুরা অধিবেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। ০৪-০২-২০২৩ তারিখ বিকাল ৩.৩০ মিনিটে জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি গাজী মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান সঞ্চলনায় জেলা মজলিসে শুরা অধিবেশন সম্পূর্ণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় স্কুল ও কলেজ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম খলিল। শুরা কমিটিতে যারা মনোনীত হয়েছে মোঃ সজীব বাবু, মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোঃ আল আমিন মোঃ সজীব মোঃ হাবিবুর রহমান মোঃ মমতাজুল ইসলাম মোঃ মোখলেসুর রহমান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোঃ আশিকুর রহমান মোঃ ইসমাইল মোঃ আমানুল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সার্বিক পরিচালনা করেন মোঃ মাকছুদুর রহমান জুনায়েদ।ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার ২০২৩ সেশনের শুরা অধিবেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। ০৪-০২-২০২৩ তারিখ বিকাল ৩.৩০ মিনিটে জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি গাজী মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান সঞ্চলনায় জেলা মজলিসে শুরা অধিবেশন সম্পূর্ণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় স্কুল ও কলেজ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম খলিল। শুরা কমিটিতে যারা মনোনীত হয়েছে মোঃ সজীব বাবু, মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোঃ আল আমিন মোঃ সজীব মোঃ হাবিবুর রহমান মোঃ মমতাজুল ইসলাম মোঃ মোখলেসুর রহমান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোঃ আশিকুর রহমান মোঃ ইসমাইল মোঃ আমানুল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সার্বিক পরিচালনা করেন মোঃ মাকছুদুর রহমান জুনায়েদ।

  • বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে জাতির পিতা অমর হয়ে রয়েছেন : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

    বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে জাতির পিতা অমর হয়ে রয়েছেন : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

    আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অমর হয়ে রয়েছেন।
    তিনি বলেন, ‘পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙ্গালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। যুগে যুগে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে অমর।’
    কক্সবাজারের রামু উপজেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু উৎসব ২০২৩’ এর ৬ষ্ঠ দিন শুক্রবার রাতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. হাছান মাহমুদ একথা বলেন।
    ‘আজ বাংলাদেশে খালি পায়ে বা ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। প্রতিটি জনপদ উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘এতো উন্নয়ন হয়েছে যে আকাশ থেকে আজ কক্সবাজারকে চেনা যায় না। এটাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন। এ বছরেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিকেএসপি, ক্যান্টনমেন্ট প্রতিষ্ঠা-এসব স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা।’
    তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান এ সময় বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করেন ও নৌকা মার্কায় ভোট চান। তিনি বলেন ‘বিএনপি শীতের পাখি, তাদের দেখা যায় শুধু ভোটের সময়। করোনার সময় বিএনপিকে দেখা যায়নি, তখন কেবল আওয়ামী লীগ নেতাদেরই মানুষের পাশে দেখা গেছে। এতো বড় বড় উন্নয়ন কেবল বর্তমান সরকারই করেছে। এই উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও সকলকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানাই।’
    গভীর রাত অবধি কয়েক হাজার মানুষের এ মেলায় কক্সবাজার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সভাপতিত্বে উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট ফরিদুল আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
    ২৯ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ দিনের এই উৎসবে প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান, কবিতা, নাটক, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ উপভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন।

  • আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সপ্তম সভা ৭ ফেব্রুয়ারি  

    আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সপ্তম সভা ৭ ফেব্রুয়ারি  

    একাদশ জাতীয় সংসদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সপ্তম সভা আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
    আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় , আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
    দলের সংসদীয় দলের সেক্রেটারী ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা গুপ্তচর বেলুন ট্র্যাক করছে : পেন্টাগন

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা গুপ্তচর বেলুন ট্র্যাক করছে : পেন্টাগন

    পেন্টাগন বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা একটি চীনা গুপ্তচর বেলুনকে ট্র্যাক করছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ওপর দিয়ে উড়ছিল। বেলুনটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর পারমাণবিক অস্ত্র সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
    একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুরোধে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটি নামিয়ে আনার কথা বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এটি মাটিতে থাকা অনেক লোককে বিপদে ফেলবে। 
    ওই কর্মকর্তা বলেন, বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমে উড়ে গেছে যেখানে ভূগর্ভস্থ সাইলোসে স্পর্শকাতর বিমানঘাঁটি এবং কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেছেন,‘স্পষ্টতই, এই বেলুনের উদ্দেশ্য নজরদারির জন্য এবং বর্তমান ফ্লাইট পথ এটিকে বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর সাইটে নিয়ে যায়।’ 
    তবে পেন্টাগন এটাকে বিশেষ বিপজ্জনক গোয়েন্দা হুমকি তৈরি করেছে বলে মনে করে না।
    কর্মকর্তা বলেন,‘আমরা মূল্যায়ন করি যে বুদ্ধিমত্তা সংগ্রহের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বেলুনের সীমিত সংযোজন মূল্য রয়েছে।’ 
    বেলুনটি ‘কয়েকদিন আগে’ মার্কিন আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা এর আগে থেকে এটিকে ভালোভাবে ট্র্যাক করছিল।
    বাইডেন এটি মোকাবেলার বিকল্পগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর বুধবার ফিলিপাইনে সফররত অস্টিন পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন।
    আলোচনা চলাকালীন মন্টানার উপরে থাকা অবস্থায় বেলুনটি পরীক্ষা করার জন্য যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করা হয়েছিল।
    তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, পেন্টাগনের সিদ্ধান্ত ছিল ‘সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ পতিত হয়ে মাটিতে থাকা মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।’ 
    পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার নিশ্চিত করেছেন, বেলুনটি এখনও মার্কিন আকাশে ট্র্যাক করা হচ্ছে।
    ‘বেলুনটি বর্তমানে বাণিজ্যিক এয়ার ট্র্যাফিকের ওপরে একটি উচ্চতায় ভ্রমণ করছে। এটি মাটিতে থাকা মানুষের জন্য সামরিক বা শারীরিক হুমকি তৈরি করতে পারে। 
    রাইডার এক বিবৃতিতে বলেন, চীন অতীতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নজরদারি বেলুন পাঠিয়েছিল। 
    সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন,এটি মার্কিন আকাশে অনেক বেশি সময় ধরে রয়েছে। ‘তবে আমরা স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহের বিদেশী গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। 
    তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে ধীরে ধীরে উত্তেজনার মধ্যে বেলুনের উপস্থিতি দেখা যায়।’                                               
    চীন বলেছে, তারা একদিন স্বাধীনভাবে শাসিত দ্বীপটিকে মূল ভূখন্ডের সাথে পুনরায় মিলিত করার প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করতে হলেও করবে।