Blog

  • নজরুল প্রেমে নার্গিস ও কিছু প্রাসঙ্গিকতা

    নজরুল প্রেমে নার্গিস ও কিছু প্রাসঙ্গিকতা

    কাজী নজরুল ইসলাম মোসলেম ভারতে লিখছেন তুখড়ভাবে। সারা ভারতে না হলে আফজালুল হকের মোসলেম ভারত সমস্ত পশ্চিমবঙ্গে নজরুলের লেখা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ সময় আফজালুল হক নজরুলকে মোসলেম ভারতে আফিসিয়াল কাজে বসিয়ে দিলেন। দিন রাত পত্রিকার কাজ করতে হয়। এমনি কাজের প্রবল চাপে তিনি হাফিয়ে ওঠেন। দেখা গেল আর কোন নতুন লেখা তৈরি করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আফজালুল হক এবং আলী আকবর খানের পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিনের জন্য হাওয়া বদলাতে যান দেওঘরে। দেওঘর থেকে লেখা নজরুল লেখবেন তার সব মোসলেম ভারতের জন্য কলকাতায় পাঠিয়ে দেবেন, বিনিময়ে আফজালূল হক প্রতিমাসে একশত টাকা পাঠাবেন। এখানে আফজালূল হকের মুখ্য যে উদ্দেশ্য ছিল তা হলো নজরুলকে নিয়ে ব্যবসা করা। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। দেওঘরে গিয়ে আশানুরূপ রচনা তাঁর দ্বারা সম্ভব হয়নি। কাজী নজরুল ইসলাম এসময় দেওঘরে যা রচনা করেছিলেন তা হলো ¯েœহভীতু (ওরে এ কোন সুরধ্বনি নামলো আমার সাহারায়), প্রতিবেশিনী (আমার ঘরের পাশ দিয়ে সে), মুক্তিধারা (লক্ষী আমার! তোমার পথে আজকে অভিসার), ছলকুমারী (কত ছল করে সে বারে বারে), অকেজোর গান (ঐ ঘাসের ফুলে মটর শুটির ক্ষেতে)। তিন মাসে তিনি মাত্র পাঁচটি গান রচনা করেন। বোধ করি নজরুল ইসলাম অসুস্থ্য হবার আগ পর্যন্ত আর কখনো এত দীর্ঘ সময়ে এত অল্প রচনা তিনি করেননি। শীতকালে নজরুল এই হাওয়া পরিবর্তন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। আর তারই প্রমাণ দেওঘর থেকে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা নজরুলের এই চিঠিÑ
    ‘টাকা ফুরিয়ে গেছে, আফজাল কিংবা খান যেন শীগগীরই টাকা পাঠায়, খোঁজ নিবি আর বলবি আমার মাঝে মানুষের রক্ত আছে। আজ যদি তারা সাহায্য করে সে সাহায্য সুদে আসলে পুরে দেব।
    (মুজফ্ফর আহমদ “কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি কথা/পূর্বোক্ত” পৃষ্ঠা নং ১০৬)
    মুজফ্ফর আহমদ এবং তাঁর এক বন্ধু ইমদাদুল্লাহ নজরুলকে দেখতে গিয়েছিলেন। দেওঘরে নজরুলের অবস্থা সুবিধাজনক না দেখে মুজফ্ফর আহমদ ইমদাদুল্লাহর কাছ থেকে টাকা ধার করে নজরুলকে কলকাতা নিয়ে আসেন। তখন মুজফ্ফর আহমদ থাকতেন ১৪/২ চেতলাহাঁট রোডের বাড়িতে। তিনি নজরুলকে সে বাড়িতে উঠালেন। পরদিন সকাল বেলা আফজালুল হক এসে তাকে বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এই বাড়িতে ছিল ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি’, আর এ সাহিত্য সমিতির বাড়িতে কুমিল্লা (ত্রিপুরা) থেকে আগত শিশু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা আলী আকবর খান থাকতেন। তিনিও নজরুলকে দেওঘরে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন। আলী আকবর খান ঐ বাড়িতে থাকাকালে এক সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে নজরুল তাকে সেবা সুশ্রƒষা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলেন। সে কারণে নজরুলকে তিনি বেশ ¯েœহ করতেন। এসব কারণে দেওঘরে থেকে ফিরে নজরুল তাদের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ সময় নজরুলকে দিয়ে খান সাহেব শিশু পাঠ্য পুস্তকের জন্য ‘লিচু চোর’ সহ আরও কয়েকটি ছড়া লিখিয়ে নেন। পরে তিনি নজরুলকে তার দেশের বাড়ি যাবার প্রস্তাব দেন। আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে তার বাড়িতে যাওয়া উচিত কিনা সে সম্পর্কে মুজফ্ফর আহমদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানিয়ে ছিলেন।
    ‘দেখ ভাই, আমার পরামর্শ যদি শুনতে চাও, তবে তুমি কিছুতেই আলী আকবর খানের বাড়িতে যেও না। তিনি অকারণে অনর্গল মিথ্য কথা বলে যান, যেন অভিনয় করছেন এই রকম একটা ভাব তার কথাবার্তার ভিতর দিয়ে সর্বদা প্রকাশ পায়। কি মতলবে তিনি তোমায় তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান তা কেউ জানে না। তিনি তোমাকে একটা বিপদেও ফেলতে পারেন।
    (মুজফ্ফর আহমদ “কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি কথা/পূর্বোক্ত” পৃষ্ঠা নং ১২৩)
    তারপরেও ১৯২১ সালের ১৫ এপ্রিল কাজী নজরুল ইসলাম আলী আকবর খানের সাথে চট্টগ্রাম মেলে যাত্রা করেন। পথে রচনা করেছিলেন ‘নীলপরি’ (ঐ সর্ষে ফুলে ফুটালো কার/হলুদ রাঙা উত্তরী/ঐ আকাশ গাঙে পাল তুলে যায়/ নলি সে পরীর দূর তরী/ তার অবুঝ বীণার সবুজ সুরে) কবিতাটি। যা পরে ছায়ানট কাব্য গ্রন্থে সংকলিত হয়।
    পূর্ব বাংলার সে নৈসর্গিক দৃশ্য তা নজরুলের এই কবিতায় ধরা পড়েছে। ছোটবেলায় একবার তিনি ময়মনসিংহ এসেছিলেন। তার পর এই দ্বিতীয়বার তার পূর্ব বাংলায় আগমন। কিন্তু এবারের আগমন ও প্রত্যাগমন ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে ট্রাজেডিপূর্ণ। কুমিল্লায় পৌঁছে আলী আকবর খান ট্রেন থেকে নেমে নজরুলকে প্রথমে নিয়ে যান কান্দির পাড়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসায়। ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের পুত্র বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ছিলেন আলী আকবর খানের সহপাঠী। তখন এই পরিবারের সাথে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। আলী আকবর খান বীরেন্দ্রের মা বিরোজা সুন্দরী দেবীকে মা ডাকতেন, সে সুবাদে এবার তিনি নজরুলেরও মা হলেন। বিরোজা সুন্দরী দেবী ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক এবং ¯েœহময়ী রমণী। এ পরিবারের আরো ছিলেন বীরেন্দ্রর দুটি বোন-কমলা সেনগুপ্ত (বাচ্চি) ও অঞ্জলি সেনগুপ্ত (জটু), বীরেন্দ্রের বিধবা জেঠিমা গিরিবালা দেবী এবং তার একমাত্র সন্তান আশালতা (দুলি) (যে পরে প্রমীলা দেবী) এবং বীরেন্দ্র বাবুর স্ত্রী ও পুত্র রাখাল। ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত সবাই ছিলেন সংস্কৃতিমনা। বিশেষ করে এ বাড়ির ছোট মেয়েরা (দুলি, বাচ্চি ও জুট) ছিল সংগীতে মুখর। নজরুলকে পেয়ে তারা অল্পদিনেই আপন করে নিলেন। কয়েকদিন কুমিল্লায় কাটানোর পর বৈশাখের শুরুতেই আলী আকবর খানের সাথে তিনি তার দৌলতপুর গ্রামের বাড়িতে যান। আলী আকবর খানের গৃহকর্তী ছিলেন তার বিধবা বড় বোন। পাশেই ছিলেন আর এক বিধবা বোন মুন্সী আবদুল খালেকের স্ত্রী, ঐ বোনের এক পুত্র জাহাজে কাজ করতেন। সে কারণে তিনি সবসময় বাহিরে থাকতেন। আর ছিল এক কন্যা সৈয়েদা। সৈয়েদা মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। নজরুল এ বাড়িতে অতিথি হবার পর আবদুল খালেকের স্ত্রী এবং সৈয়েদা প্রায়ই এ বাড়িতে আসা যাওয়া করতে থাকেন। নজরুলের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতাও হয়ে যায় তাদের। পরে এক সময় সৈয়েদা নজরুলের কাছে গান শিখতে আসে নিয়মিত। নজরুলের দৌলতপুরের কয়েকটি রচনায় ঐ ঘনিষ্ঠতার ছায়া পড়ে। ১৩২৮ সালের বৈশাখ মাসে দৌলতপুরে রচিত ‘হারামনির হার’ কবিতায় দেখি চির দুরন্ত কবিকে ঘরের মায়ায় মুগ্ধ করেছে।
    তোরা কোথা হতে কেমনে এসে
    মনিরমালার মতো আমার কণ্ঠে জড়ালি
    আমার পথিক জীবন এমন করে
    ঘরের মায়ায় মুগ্ধ করে বাঁধন পরালি।
    একই পরিস্থিতিতে জ্যৈষ্ঠমাসে রচিত আর একটি কবিতা হলো ‘মানস বধূ’। এ কবিতায় কবির বেদনার ছাপ পরেছে। তবে তার মধ্য থেকে এক বধূর মূর্তি স্পষ্ট।
    সে যেন কোন দূরের মেয়ে আমায় কবি মানস বধূ
    বুক পোড়া আর মুখ ভরা তার পিছলে পড়ে ব্যাথার মধু
    নিশিথে রােেতর স্বপন হেন
    পেয়েও তারে পাইনি যেন
    মিলন মোদের স্বপন কোলে কাঁদনভরা চুমোয় চুমোয়
    নাম হারা সে আমার প্রিয়া, তারেই চেয়ে জনম গোয়ায়।
    ১৩২৮ সালের বৈশাখ মাসে দৌলতপুরে রচিত অবেলার গান, হার মানার হার, অনাদৃতা, বিদয়া বেলায়, পাপড়ি খোলা এবং জৈষ্ঠ্য মাসে রচিত বেদনা অভিমান, হারামনির হার, মানস বধু, বিধুরা পথিক প্রিয়া। কবিতাগুলি ছায়ানট কাব্যে সঙ্কলিত। এছাড়া একই সময়ে শিশুদের জন্যও তিনি রচনা করেন লাল সালাম এবং মুকুলের উদ্বোধন।
    মূলত, আলী আকবর খানের যে উদ্দেশ্যে নজরুলকে কুমিল্লাতে আনা- তা হলো তাকে দিয়ে কিছু শিশু পাঠ্য পুস্তক উপযোগি ছড়া কবিতা লিখিয়ে নিয়ে ব্যবসা করে যাওয়া। কিন্তু তার সেই উদ্দেশ্য সফল না হওয়াতে খান সাহেব কৌশলে মন ঘোরালেন অন্যদিকে। তার ভাগ্নী সৈয়েদাকে নজরুলের সাথে অবাধ সম্পর্কের টার্গেটে এ বাড়িতে নিয়ে আসলেন, আর নজরুলও দিন দিন সৈয়েদার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলেন। নজরুল তার নাম পাল্টিয়ে রাখলেন নার্গিস আশার খানম। এক পর্যায়ে আলী আকবর খানের উদ্যোগে তাদের মধ্যে বিবাহ স্থির হয়। নজরুল এ সময়ে তার বিয়ের খবর কোলকাতার বন্ধুবান্ধবদের লিখে জানান। কোলকাতার সাহিত্যিক বন্ধুরা এ সংবাদ শুনে অবাক হলেও তাদের বিবাহের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে নজরুলকে পত্র দেন। পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ১৯২১ সালের ৫জুন নজরুলকে লিখলেন।
    ‘যখন আজ তোর চিঠিতে জানলুম যে, তুই স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে বরণ করে নিয়েছিস, তখন আমার অবশ্য কোন দুঃখ নেই। তবে একটা কথা- তোর বয়স আমাদের চেয়ে ঢের কম, অভিজ্ঞতাও তদনুরূপ, ফিলিংস এর দিকটা অসম্ভব রকম বেশী, কাজেই ভয় হয় যে হয়ত দুটো জীবনই ব্যর্থ হবে।’   (নজরুল রচনা সম্ভার, ঢাকা ২৫মে ১৯৬৯)।
    তবে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের ঐ পত্রে নজরুলের প্রেরীতে চিঠির একটা উদ্ধৃতিতেও মেনে যাতে নজরুলের সৈয়েদা সম্পর্কে মনোভাব স্পষ্ট,
    ‘যাকে পেয়েছিস তিনিই যে তোর চির জনমের হারানো গৃহলক্ষী এ কথা যদি ককেটুকু সত্যি হয়, তাহলে তোর সৌভাগ্যের সত্যই ঈর্ষা হচ্ছে…। লিখেছিস এক অচেনা পল্লীবালিকার কাছে এত বিব্রত আর অসাবধান হয়ে পড়েছিস, যা কোন নারীর কাছে কখনও হইনি। জেনে খুশীই হলাম যে তার বাইরের ঐশ্বর্যও যথেষ্ঠ’। পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের এই চিঠিতে নজরুলের উদ্বৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সৈয়েদার চেহারাও ছিল বেশ আকর্ষণীয়। ১৩জুন ওজেদ আলী লিখেছিলেন;
    ‘নিভৃত পল্লীর যে কুটির বাসিনী (দৌলতপুরের দৌলতখানার শাহজাদী বলাই বোধ হয় ঠিক না?) সাথে আপনার মনের মিল ও জীবনের যোগ হয়ে গেছে, তাকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রীতিপূর্ণ আদাব জানাবেন।’
    সৈয়েদা মাত্র ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া জানতো। তাই জনরুলের সাথে তার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলে সৈয়েদার মামা আলী আকবর খান সৈয়েদাকে নজরুল ইসলামের সহযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিজ হাতে শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সবকটি উপন্যাস বুঝিয়ে-বুঝিয়ে পড়িয়ে বাস্তব জীবন সম্বন্ধে তাকে জ্ঞান দান করেন। এ ব্যাপারটি খান সাহেবের সংসারের কর্তী তার বিধবা বোনের খুব অপছন্দ ছিল, কিন্তু তার করার কিছু ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নজরুলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তখন নজরুলেরও করার কিছু ছিল না। কারণ তাদের বিয়ে সমাগত। বিয়ে ঠিক হয়েছিল ৩রা আষাঢ় ১৪২৮ শুক্রবার। এই বিয়ে উপলক্ষ্যে একটা নিমন্ত্রণপত্র বিভিন্ন কাগজে ছাপা হয়েছিল। পত্রটি হলো;
    বিনয় সম্ভাষণ পূর্বক নিবেদন,
    জগতের পুরোহিত তুমি, তোমার এ জগৎ মাঝারে
    এক চায় একেরে পাইতে, দুই চায় এক হইবারÑরবীন্দ্র
    এ বিশ্ব নিখিলের সকল শুভ কাজে যাঁর প্রসন্ন কল্যাণ আঁখি অনিখিল হয়ে জেগে রয়েছে, তাঁর ওই মহাকাশের মহা সিংহাসনের নীচে আমার মাথা নত করে আমি আপনাদের জানাচ্ছি যে আমার পরম আদরের কল্যাণীয়া ভাগ্নী নার্গিস আশার খানমের বিয়ে বর্ধমান জেলার ইতিহাস প্রখ্যাত চুরুলিয়া গ্রামের দেশ বিখ্যাত পরম পুরুষ, অভিজাত্য গৌরবে পরম গৌরবান্বিত, আয় মাদার মরহুম মৌলভী কাজী ফকির আহমদ সাহেবের দেশ বিশ্রুত মুসলিম কুল গৌরব মুসলিম বঙ্গের রবি কবি সৈনিক নবযুগের ভুতপূর্ব সম্পাদক কাজী নজরুলস ইসলামের সাথে। বাণী দুলাল দামাল ছেলে বাংলার এই তরুণ সৈনিক কবি ও প্রতিভান্বিত লেখকের নতুন করে নাম বা পরিচয় দেয়ার দরকার নেই। এই আনন্দঘন চির শিশুকে যে দেশের সকল লেখক-লেখিকা সকল কবি যুবকেরা ভালবাসা দিয়েছিলেন সেই বাঁধনহারা যে দেশমাতার একেবারে বুকের কাছটিতে প্রাণের মাঝে নিজের আসনখানি পেতে চলেছে এর চেয়ে বড় পরিচয় তার আর নেই। আপনারা আমার বন্ধু, বড় আপন জন। আমার এ গৌরব আমার এ সম্পদের দিনে আপনারা এসে আনন্দ করে আমার কুঠিরখানিকে পূর্ণানন্দ দিয়ে ভরাট করে তুলুন। তাই এ আমন্ত্রণ।
    বিয়ের দিন আগামী ৩রা আষাঢ়, শুক্রবার নিশীথ রাতে।
    আরজ
    দৌলতপুর, ত্রিপুরা বিনীত
    ২৮শে জৈষ্ঠ্য ১৩২৮     আলী আকবর খান
    (সূত্র: আবদুল আজীজ আল আমান’ নজরুল পরিক্রমা’ কলকাতা ১৩৭৬)
    এই নিমন্ত্রণপত্র নজরুল ইসলামের বংশ এবং নিজের পরিচয়ে বেশ অহমিকার ছাপ স্পষ্ট যাতে তাঁর অনেক বন্ধু বান্ধব সাহেব, আপনার পত্রাদি যে মোটেও পাওয়া যাইতেছে না তাহার কারণ কী? খান সাহেবের নিমন্ত্রণপত্র পাইয়াছিলাম, পত্রখানায় আপনারই মুসবিদা করা দেখিলাম। পত্রের ভাষা দুই এক জায়গায় বড় অসংযত হইয়াছে একটু যেন কেমন দাম্ভিকতা প্রকাশ পাইয়াছে। আপনার হাত দিয়া অমোন লেখা বাহির হওয়া কিছুতেই ঠিক হয় নাই। আমার বড় ভয় হইতেছে যে খান সাহেবের সংশ্রবে আপনিও না শেষে দাম্ভিক হইয়া পড়েন। অন্যে বড় বলিলে গৌরবের কথা হয়। আর নিজেকে নিজে বড় বলিলে অগৌরবের মাত্রা বাড়িয়ে যায়। “মোহাম্মদী” কে বিবাহের কথা ছাপিতে অনুরোধ করাটা ঠিক হইয়াছে কি? তারাতো নিজে হইতেই খবর ছাপিতে পারিতেন। বাস্তবিক আমার প্রাণে বড় লাগিয়াছে বলিয়া আমি এত কথা বলিলাম। এই নিমন্ত্রণ পত্র আবার ‘অপূর্ব নিমন্ত্রণপত্র” শিরোনামে বাঙালিতে মুদ্রিত হইয়াছে। দেখিলাম। বাঙালিকে কে পাঠাইল?
    (কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা/পূর্বোক্ত ভূমিকা ১৯৬৯)
    আসলে মুজফ্ফর আহমদের চিঠিতে আমরা যা পাই তাই ঠিক। কারণ কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি ও জীবন পর্যালোচনা করলে কোথাও তাঁর মধ্যে দাম্ভিকতার চিহ্ন পাওয়া যায় না। কুমিল্লায় থাকাকালীন সময়ে নজরুলের মধ্যে যে অহংকার জন্ম নিয়েছিলো তা সব আলী আকবর খানের জন্য। মুজফ্ফর আহমদ ছিল তাঁর খুব কাছের বন্ধু। তাই তার প্রাণে লাগাটাই স্বাভাবিক।
    সেকথা এখানেই থাক। নজরুলের বিয়েতে আলী আকবর খান কান্দির পাড় থেকে ইন্দ্র কুমার সেন গুপ্তের পরিবার নিয়ে আসলেন। বিয়ের আসরে আরো ছিলেন বাঙ্গোরার জমিদার রায় বাহাদুর রূপেন্দ্রলোচন মজুমদার এবং বাঙ্গোরার হাই স্কুলের হেড মাস্টার অবনীমোহন মজুমদার। ঘটনার চক্রান্তে সে বিয়ে হয়নি। এই ঘটনা অনুসন্ধান করে মুজফ্ফর আহমদ লিখেছেন ‘কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সৈয়েদা খাতুন ওরফে নার্গিস বেগমের বিয়ে হয় নি এ সম্বন্ধে আমি স্থির নিশ্চিন্ত হইয়াছি। ইন্দ্র কুমার সেনের বাসা হইতে যে কয়জন নিয়ন্ত্রিত দৌতপুরে গিয়েছিলেন সন্তোস কুমার সেন নামক এক ১৫/১৬ বছর বয়সের বালক ছিলেন। অবশেষে সন্তোষের সাথে আমার কথা হয়, তার দেওয়া তথ্য থেকে বুঝা যায় আলী আকবর খানও এ বিয়ে ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলেন। তার কাবিননামায় একটা শর্ত ছিল। তা হলো নার্গিসকে নিয়ে সে কুমিল্লাতে থাকতে পারবে কিন্তু ইচ্ছামত যেখানে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না। যা কাজী নজরুল ইসলামের গৌরবে বেশ বেধেছিল আর বাধাটাই স্বাভাবিক।
    এমন এক দূরন্ত কবিকে ঘর জামাই করে ঘরের কোনে বন্দি হওয়া কখনও সম্ভব নয়। সেবার কুমিল্লাতে বন্যা উঠেছিল। এমনি রাতে বিয়ের আসর হতে উঠে কুমিল্লার ১০/১২ মাইল পথ পায়ে হেটে কান্দির পাড়ে বিরোজা সুন্দরী দেবীর বাড়ি উঠেন। আবার বিরোজা সুন্দরী দেবীর প্রবন্ধ থেকেও এমনি তথ্য পাওয়া যায়।
    ৩রা আষাঢ় দিবাগত রাতে বিরোজা সুন্দরী দেবীর নিকট বিদায় নিতে এসে বললো, ‘মা আমি এখনি চলে যাচ্ছি,’ ঐ অবস্থায় তাকে ফেরানোর কথাই ওঠে না। তিনি বললেন, তুমি বাইরের ছেলে কুমিল্লার পথঘাট চেনো না। যাও যদি বীরেন্দ্রকে নিয়ে যাও। সে কুমিল্লায় জন্মেছে আর কুমিল্লায় মানুষ হয়েছে। এ দেশের লোকজনকে চেনে। সে কাদা বিছানো পথে হেটে পরদিন সকাল বেলা কান্দির পাড়ে এসে পৌঁছালো। এমনিভাবে বিয়ের রাতে শাহ্ নজর ও বাসরের পরিবর্তে নজরুলকে হাঁটু কাদা পাড়ি দিতে হয়েছিল। পরদিন নজরুলের জিনিসপত্র বিরোজা সুন্দরী নিয়ে যান। আলী আকবর খান নজরুলের জিনিসপত্র তল্লাসি করে কিছু চিঠি এবং কাগজপত্র রেখে দেন। এর পরে নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের আর কখনও দেখা হয়নি। এখানে নজরুল যে নার্গিসকে ভালবাসতেন একথা সত্য তবে মুজফ্ফর আহমদ নার্গিসকে অভিনেত্রী ও আলী আকবর খানকে অভিনেতা আখ্যা দিয়েছেন। মূলত: আলী আকবর খান ভাগ্নীকে নজরুলের সাথে বিয়ে দিয়ে নজরুলের মত একজন প্রতিভাবান লেখককে হাতের মুঠোয় পুরে প্রকাশনা জগতে একচেটিয়া ব্যবসা করে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নজরুল তা বুঝতে পারেন নি। আলী আকবর খান এবং নার্গিস আশার খানমের আচরণে নজরুলের পৌরষ যে প্রচণ।ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি তা বিরোজা সুন্দরী দেবীর বাড়িতে থাকাকালীন কিছু সামাল দিতে পেরেছিলেন। কিছুদিন পর তিনি সেখান থেকে মুজফ্ফর আহম কে একটা পোস্টকার্ডে লেখেন তিনি যেন কুমিল্লাতে এসে তাঁকে নিয়ে যান। তিনি আলী আকবর খান দ্বারা প্রভাবিত এবং অপমানিত, দারুন অসুস্থ। এ সংবাদ পেয়ে মুজফ্ফর আহমদ ফকির দাস গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ৩০ টাকা ধার করে ১৯২১ সালের ৬ জুলাই কুমিল্লায় এসে পৌঁছান। এখানে এসে দেখেন বিরোজা সুন্দরী পরিবারের ¯েœহমমতায় দৌলতপুর বিরহ অনেকটা সামলে উঠেছেন। তারা ৮ জুলাই কুমিল্লা থেকে কলকাতায় রওয়ানা দেন। চাঁদপুরে এসে টাকা ফুরিয়ে গেলে চাঁদপুর ডাকবাংলোয় উঠেন, আর কলকাতায় আফজালুল হককে টাকার জন্য টেলিগ্রাম করেন। তার অনুরোধে কুমিল্লার আরশাদ উদ্দিন চৌধুরী চাঁদপুর হরদয়াল নাথকে টেলিগ্রাম করে ভাড়ার টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। পরে তার টাকায় তারা কলকাতা পৌঁছান। এরই মধ্য দিয়ে কুমিল্লার বেদনা বিধুর ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে।
    নজরুল কুমিল্লা থেকে কলকাতায় ফেরেন। কলকাতায় ফেরার পথে ১৭ দিনে ৪টি গান রচনা করেন। পরশপূজা (আমি এদেশ হতে বিদায় যেদিন নেব প্রিয়তম…), মনের মানুষ (ফিরিনু যেদিন দ্বারে-দ্বারে কেউ কি এসেছিল…), বিজয় গান (ঐ অভ্রভেদী তোমার ধ্বজ উড়লো আকাশে…), এবং পাগল পথিক (এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলোক বন্ধিনি মার আঙিনায়…)। এর ৮ বছর পরে নজরুল প্রমিলা দেবীকে বিয়ে করেন।
    নজরুল ফিরে এসে কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদের সাথে জ্জ সি, তালতলার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। দুমাস পরে সেপ্টেম্বর মাসের এক রাতে আলী আকবর খান একদিন ঐ বাড়িতে যান। তিনি একটা মিটমাট করে নজরুলকে ফিরিয়ে নিতে চান। কিন্তু সফল হন না। খান সাহেব নিজে নজরুলের পাশে খাটের উপর বসলেন। তার হাতে ১০ টাকার নোটের একটা বড় বান্ডিল ছিল। সেটা বার বার নাড়াচাড়া করছিলেন। খান চলে যাবার পরদিন নজরুল বিরোজী সুন্দরীকে লিখলেন ‘মা খান সাহেব আমাকে নোটের তোড়া দেখিয়ে গেল’।
    নজরুল নার্গিসকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে ঢাকায় নিয়ে আলী আকবর খান নার্গিসকে কাছে ডাকলেন এবং নিজের প্রকাশনা দপ্তর, ঢাকার দোতলা বাড়ি তার নামে লিখে দিলেন। পরে তাকে অনেক শিক্ষিত করে তুললেন। নার্গিস অনেক শিক্ষিত হয়েছিল বটে কিন্তু নজরুলের উপযোগী হয়েছিল কিনা তাতে সন্দেহ আছে। দৌলতপুর ঘটনার ১৫ বছর পর নজরুল ০১/০৭/৩৭ তারিখে নার্গিসের একটা চিঠির উত্তর দেন। চিঠিটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করলে নজরুল নার্গিসের সম্পর্ক স্পষ্ট। সে চিঠিতে সম্বোধন ছিল কল্যাণীয়াসু। তিনি লিখেছিলেন;
    ‘১৫ বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিাধারায় প্লাবন নেমেছিল। তা তুমি হয়তো স্মরণ করতে পারো। যাক তোমার অনুযোগ অভিযোগের উত্তর নেই। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে তুমি যদি আমার মুখটি কল্পনা করে থাকো তাহলে আমায় ভুল বুঝবে। আর তা মিথ্যা।’
    চিঠিতে নার্গিসের প্রতি কোন অনুযোগ ও অভিযোগ ছিল না। একটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি নিয়েই লিখেছিলেন। ১৫ বছর পর নার্গিসের সাথে তার কোন যোগাযোগ না থাকলেও নার্গিসের প্রতি ভালবাসা ও অসীম বেদনার অকপট স্বীকৃতি;
    ‘আমার অন্তর্যামীই জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা- কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমি নিজেই পুড়ছি। তা নিয়ে তোমায় কোনদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি আগুনের এই পরশমনি না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না, ধুমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যাণরূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথম দেখেছিলাম, সে রূপকে আমার জীবনে সর্বপ্রথম ভালবাসার অঞ্জলী দিয়েছিলাম সেরূপ আজো স্বর্গের পারিজাত-মন্দারের মত চির অম্লাণ হয়ে আমার বক্ষে আছে।’
    নজরুলের এই চিঠিতে যেমন নার্গিসের প্রতি ভালবাসা ও অসীম বেদনা স্পষ্ট তেমনি তার অভিভাবকের প্রতি তার অভিযোগও স্পষ্ট।
    ‘তুমি ভুলে যেও না আমি কবিÑ আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর কুৎসিতের সাধণা আমার নয় আমার আঘাত বর্বর কা-পুরুষের আঘাতের মত নিষ্ঠুর নয়। আমার অন্তর্যামী জানেন (তুমি কি শুনেছ জানিনা) তোমার বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই, দাবীও নেই।’ উদ্বৃতিতে স্পষ্ট তার অভিভাবক আলী আকবর খান সম্বন্ধে নজরুলের মন্তব্য। নার্গিসের চিঠিতে আত্মহত্যার কথাও হয়তো ছিল যার উত্তর নজরুল সহজভাবে দিয়েছিলেন ‘আত্মহত্যা মহাপাপ, এ অতি পুরনো কথা হলেও পরম হত্যা। আত্মা অবিনশ্বর, আত্মাকে কেউ হত্যা করতে পারে না।’
    এই চিঠিতে নার্গিসের প্রতি নজরুলের আরো অনুভব মেলে
    ‘হঠাৎ মনে পরে গেল পনের বছর আগের কথা। তোমার জ্বর হয়েছিল, বহুসাধনার পর আমার তুষিত দুটি কর তোমার শুভ্র সুন্দর ললাট স্পর্শ করতে পেরেছিল, তোমার ললাটের স্পর্শ যেন আজো অনুভব করতে পারি। মনে হয় যেন কালকের কথা। মহাকাল যে স্মৃতি মুছে ফেলতে পারে না। কি উদগ্র অতৃপ্তি কি দূর্দমনীয় প্রেমের জ্বরই সেদিন এসেছিল, সারারাত আমার চোখে ঘুম ছিল না। যাক আজ চলেছি, জীবনের অস্তমান দিনে শেষ রশ্মি ধরে ভাটার ¯্রােতে। তোমার ক্ষমতা নেই সেই পথ থেকে ফেরানোর। আর তার চেষ্টা করো না। তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক।
    নজরুল নার্গিসের পত্র পাবার পর একটি গানও রচনা করেছিলেন (যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই কেন মনে রাখো তারে…)। নজরুল নার্গিসের সম্পর্ক ও এই সম্পর্কে জীবনে প্রতিফলন নার্গিসের কাছে লেখা নজরুলের প্রথম ও শেষ চিঠি থেকে বুঝা যায়। তবে একথা সত্য যে নজরুল নার্গিসের বিয়ে না হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী নার্গিসের মামা আলী আকবর খান।
  • তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রত্যাহার করতে হবে

    শহর প্রতিনিধি: সংবিধানে বলা হয়েছে জনগন সকল ক্ষমতার মালিক। প্রশাসনিক ব্যাক্তিরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনতার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর আচারণ জনগণের প্রতিনিধিদের মর্যাদা ও সম্মানহানীর কারণ হলে অপমানিত হয় জনসাধারণ। যা তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আচরণে মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয়েছে। ফলে স্থানীয় জনগণের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় তালার সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদমুখর হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জনপ্রতিনিধিদের দাবি অবিলম্বে নির্বাহী অফিসারকে প্রত্যাহার করা না হলে জনতাকে সাথে নিয়ে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে।
    গতকাল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহীদ স.ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে তালা উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিত বক্তব্যে নির্বাহী অফিসারের অনিয়ম দুর্নীতি ও বিধিবহির্র্ভূত আচারণের তথ্য তুলে ধরেন।
    লিখিত বক্তব্যে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ তোপ দাগলেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের সাথে যোগ দিলেন তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
    তারা ঘুষ দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা অসদাচরন ও নানা অনিয়মের কারণে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রত্যাহার দাবি করেছেন। এ ছাড়া তার স্বেচ্ছাচারের প্রতিবাদে ৩ জুন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। পরদিন ৪ জুন এক সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন । শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, দুইজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১২ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ সময় তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উপস্থিত থেকে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও চেয়ারম্যানগণ বলেন, ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে যোগদানের পর থেকে নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন ঘুষ গ্রহণ ও নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করছেন। ভ্রাম্যমান আদালতের ভয় দেখিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদকে ভীতিকর জায়গায় পরিণত করেছেন।
    তাকে ‘দুস্কৃতিকারী’ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৪ জুন মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি কয়েকজন চেয়ারম্যানকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে উদ্যত হন। এমন কি তাদেরকে আটকে রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন।
    অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, নির্বাহী অফিসার আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই নিজের খেয়াল খুশীমতো যাবতীয় সিদ্ধান্ত পরিষদের ওপর চাপিয়ে দেন। বিভিন্ন প্রকল্প এবং ইজারাসহ নানা খাতে তাকে নির্ধারিত ঘুষ দিতেই হয়। তিনি বিনা কারণে জনপ্রতিনিধিদের সাথে অসদাচরণ করেন। এমনকি কথায় কথায় তেড়ে আসেন।
    এ প্রসঙ্গে তারা তালা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা মৎস্য অফিসার, নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান ও ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে তার অসৌজন্যমূলক আচরণ এমনকি মারপিট করতে যাওয়ার বিষয়ও তুলে ধরেন।
    সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইউএনও ফরিদ হোসেন তালা উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীর কাছে এখন এক আতংক হিসাবে দেখা দিয়েছেন। তার সাথে বসে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার কোনো পরিবেশ নেই। সংবাদ সম্মেলনে তালা উপজেলার ১২ টি ইউনয়নের চেয়ারম্যানগন ছাড়াও দুই ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইকতিয়ার হোসেন ও জেবুন্নেসা খানম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের চার সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন।
    তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর জুন মাস আসতেই পরিষদের কয়েকজন সদস্য কিছু অনিয়মতান্ত্রিক কাজ আদায়ের জন্য এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। এবারও তারা একইভাবে তাদের তদবির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব কথা বলছেন। তিনি কোনো ধরনের ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত নন।’

  • জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    শ্যামনগর সংবাদদাতা: শ্যামনগর জলবায়ু পরিষদের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে প্রগতি’র মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জলবায়ু পরিষদ সভাপতি সাবেক উপাধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাসদের সভাপতি শেখ হারুনর রশিদ, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান শাহানা হামিদ, অধ্যাপক দেব প্রসাদ মন্ডল, জাসদ নেতা আলতাফ হোসেন, প্রগতির সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু সাইদ, সাংবাদিক রনজিৎ বর্মন প্রমুখ।
    সভায় বক্তারা বলেন, আইলার আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। উপজেলার নদী সংলগ্ন ইউনিয়ন গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ি রমজাননগসহ উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধের সংস্কার করা হয়নি। এখনও আইলার দুর্গত অনেক পরিবার বেড়ী বাঁধে রয়ে গেছে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউপিতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
    উল্লেখ্য, ২৫ মে ২০০৯ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আইলার আঘাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় উপকুলীয় এলাকা। উপকুলীয় এলাকার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলায় মারাতœক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন তলিয়ে যায় পানির নিচে। অর্ধশত মানুষ মারা যায়। হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প, পুকুর, ফসলের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে যায়। জলচ্ছাসে কাঁচা ও আধা পাকা ঘর বিদ্ধস্ত হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়ে বহু মানুষ।

  • ভাল্লাগেনা

    ভাল্লাগেনা

    আম্মু আমার ভাল্লাগেনা
    করতে লেখাপড়া,
    যোগ-বিয়োগের অংক লাগে
    ভীষণ রকম কড়া।
    বইয়ের গাদা দেখলে যে হয়
    চক্ষু ছানাবড়া।।

    দোহাই আমায় দাওনা তুমি
    লেখাপড়ার তাড়া,
    পড়ার কথা শুনলে গায়ের
    লোম হয়ে যায় খাড়া,
    বলবে আমায় অন্য কথা
    পড়ার কথা ছাড়া।

  • ওরা ইতিহাস হয়

    ওরা ইতিহাস হয়

    মিছিলে স্লোগান ধরে সব ভাই
    মিছিলে আওয়াজ তোলে রব ভাই
    রাজপথে অবরোধ চলছে ;
    রাষ্ট্র ভাষার কথা বলছে।

    মিছিলের মুখে ছিল জব্বার
    ভাষাটার দাবী ছিল সব্বার
    মিছিলের পিছে ছিল কালামে,
    দুই পাশে রফিক আর সালামে।

    হঠাৎ মিছিল থামে গুলিতে
    বাঙালির বুকে পিঠে খুলিতে
    রক্তে রঙিন হয় রফিকে,
    ঢলে পড়ে জব্বার ও শফিকে।

    সেই থেকে ওরা ইতিহাস হয়;
    শহিদের সম্মানে বেঁেচ রয়।

  • আমাদের নজরুল

    আমাদের নজরুল

    বাংলার বুলবুল,
    আমাদের প্রিয় কবি
    বিদ্রোহী নজরুল।

    লিচুচোর ভোর হলো
    আরো কত ছড়া,
    লেখাগুলো ভারি মজা
    যেন রসে ভরা।

    প্রতিবাদ ছিলো তার,
    জেলে যেতো বার বার।
    তবু কবি করতো না ভয়,
    নির্ভয়ে লেখা লিখে
    আনতো বিজয়।

    সেই কবি মান করে
    বলে নিতো কথা,
    কেটে ছিলো চুপচাপ
    বড় নীরবতা।

    আমাদের সেই কবি
    আছে হৃদয় জুড়ে,
    ভুলবো না কিছুতেই
    থাকুক যত দূরে

  • মেঘ আসবে

    মেঘ আসবে

    মেঘ উড়ে যায় মেঘের বাড়ি
    খুশির নূপুর পায়ে
    মেঘ হয়ে যায় পরির মেয়ে
    শহর থেকে গায়ে।

    মেঘ ছুটে যায় দূরের গ্রামে
    মেঘ শোনে না বারণ
    মেঘরা আসবে আমার বাড়ি
    নেই তো কোনো কারণ।

  • মা ও মাতৃভূমি

    মা ও মাতৃভূমি

    ছোট্ট খোকা স্বপ্নে সেদিন গেল পরির দেশে
    শুভ সম্ভাষণ জানাল হাজার পরি এসে ।
    পরিরা তো বড্ড খুশি মানবখোকা পেয়ে
    সবাই মিলে কী আনন্দ করল নেচে-গেয়ে !

    পরির রানী বলল এসে আমার সাথে চলো
    তোমার কী কী প্রিয় জিনিস, কী খেতে চাও বলো ।
    এমন কিছু চাও যদি চাও পাওনি কভু কাছে
    সেই জিনিসও দেবো এসো আমার দেশে আছে ।

    সোনার খাটে আরাম করে ঘুমুবে রোজ রাতে
    পরিখুকি করবে বাতাস, সুখ পাবে খুব তাতে ।
    সারাবেলা ঘুরবে তুমি সোনার জুতো পায়
    রুপোর সড়ক, হীরের পাহাড়-যেইখানে মন চায় ।

    খিদে পেলে মুখের কাছেই পাবে মজার ফল
    তৃষ্ণা পেলেই আকাশ থেকে পড়বে মুখে জল ।
    মনটা তোমার ভরবে খোকা হরেক ফুলের ঘ্রাণে
    দিবস-যামি সুখের দোলা লাগবে দেহে-প্রাণে ।

    বলল খোকা, এই দেশেতেই থাকব এসব পেলে
    কাটবে জীবন অনেক সুখে নিত্য হেসে-খেলে ।
    খোকার কথায় সকল পরি খুব আনন্দ পায়
    পরিরাজ্যে থাকুক খোকা-সেই তো ওরা চায় ।

    অবশেষে পরির দেশে থেকেই গেল খোকা
    কত্ত রূপের দেশ যে এটা, যায় না লেখাজোখা ।
    হাজার পরি নৃত্য করে খোকার চতুর্পাশে
    পরিরানীর আদরে সে সুখের ভেলায় ভাসে ।

    সোনার খাটে ঘুমায় খোকা, রুপোর থালায় খায়
    এরচে’ বেশি সুখের জীবন কেউ কখনো পায় ?
    কিন্তু সেদিন হঠাৎ খোকার মনটা হলো ভার
    অনেক সুখের পরির দেশে ভাল্লাগে না তার ।

    রূপভরা ওই দেশটাজুড়ে ঘুরল যথাতথা
    খোকার মনে পড়ল তবু মা ও মাটির কথা ।
    আর দেরি নয়, একনিমিষেই নিজের দেশে ফেরা
    বুঝল খোকা মাদর আদর ও মাতৃভূমিই সেরা ।

    মাতৃভূমির সুখের সমান নেইকো প্রিয় সুখ
    এই ভুবনে মায়ের মতো নেইকো প্রিয় মুখ ।

  • রূপকথা ও নীল প্রজাপতি

    রূপকথা ও নীল প্রজাপতি

    রূপকথা সেদিন ফুলবাগানে হাঁটছিল। চারিদিকে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। মনকাড়া সব ফুল। গোলাপ বেলী, রজনীগন্ধা, গাঁদা, অপরাজিতা, জবা, সূর্যমূখী আরো কত কি! ফুলের সুবাসে তার মন মৌ মৌ করতে লাগলো। সে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলো- ফুল এত সুন্দর হয় কেন? কোথা থেকে পায় এত রূপ? কী অপরূপ সুবাস। ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। একটু আগেই তো ওর মন খারাপ ছিল। আম্মু বকা দিয়েছে। চুলের ঝুঁটি বাঁধতে চায়নি বলে। সে বলেছিল- আম্মু আমার চুলে খোঁপা করে দাও। আমি ফুল গুঁজব। কিন্তু অতটুকুন চুলে কি খোঁপা হয়! ঝুঁটি হয়। রূপকথাও নাছোড়বান্দা। তাকে খোঁপা করে দিতেই হবে। শেষমেশ আম্মুর বকুনি খেয়েই থামলো সে।

    রূপকথার বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। এখন থেকেই সাজুগুজু ওর খুব পছন্দ। সারাক্ষণ ড্রেসিংটেবিলের সামনে ঘুরঘুর করে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়। টিপ পরে। আব্বু এক ডজন চুড়ি এনে দিয়েছে। টুকটুকে লাল। সেই চুড়ি পরেই সারাক্ষণ রিন্-ঝিন ছন্দে ঘরময় ঘুরে বেড়ায়।

    একদিন আম্মুর মেকাপ বক্স নাগালে পেয়েছিল। হাতে যেন চাঁদ পেয়েছিল। আম্মু ঘরে ঢুকেই দেখে অর্ধেক মেকাপ শেষ। আর রূপকথা রঙ মেখে সং সেজে বসে আছে।

    ফুলবাগানে এসে ওর মনটা ভালো হয়ে গেল। নেচে নেচে খেলতে লাগলো। ভাবলো- ফুল নিয়ে একটা কবিতা বানালে কেমন হয়। সে বাবার কাছ থেকে কবিতা বানানো শিখে ফেলেছে। বাবা বলেছে ছন্দ দিয়ে কবিতা বানাতে হয়। রূপকথা কবিতা বানাতে চেষ্টা করলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলো। কিন্তু ভাব এল না। ভাব না এলে কবিতা হয় না। সে মনে মনে বলল- আয় কবিতা আয়। হঠাৎ এক লাইন চলে এল-

    “ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত”

    তারপরে কি? কি হতে পারে পরের লাইন? আর মেলাতে পারলো না। সে আবার ঘুরতে শুরু করে দিল। হঠাৎ একটা নীল প্রজাপতিকে দেখতে পেল। জবা ফুলের উপর খেলছে। আর ওমনি পরের লাইন মিলে গেল –

    “ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো”

    বাহ! কী চমৎকার মিল। তারপর আবার ভাবতে লাগল। চার লাইন কবিতা আজ সে মেলাবেই। কবিতাটা বাবাকে শোনালে খুব খুশি হবে। খেলতে খেলতে ভাবতে ভাবতে এক সময় সে চার লাইন কবিতা বানিয়েই ছাড়লো।

    “ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
    ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
    মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
    আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”

    বাহ! কী চমৎকার! নিজেকেই বাহবা দিল। বাবা নিশ্চই খুব খুশি হবে। সে কবিতাটা জোরে জোরে পড়তে লাগল আর নেচে নেচে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। হঠাৎ দেখতে পেল, নীল প্রজাপতিটা তার দিকেই আসছে। রূপকথা অবাক হল। ভাবলো- বাব্বা কি সাহস! আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছে না।

    এক সময় প্রজাপতিটা রঙিন পাখা দুলিয়ে উড়তে উড়তে ওর কাঁধে এসে বসলো। রূপ ভীষণ অবাক হলো। সে কোন নড়াচড়া না করে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয় গেল। ভাবলো- ইস! এই মুহুর্তে বাবাকে যদি ডাকা যেত। তাহলে নিশ্চই একটা ছবি তুলে দিত। প্রজাপতির সঙ্গে ছবি। ক’জনের আছে এমন ছবি। বাবা সারাক্ষন রূপকথার ছবি তোলে। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ক্লিক! ক্লিক! তবে প্রজাপতির সঙ্গে ছবি তোলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাও আবার বসেছে কাঁধের উপর।

    হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল ওর। আম্মু একদিন বলেছিল- প্রজাপতি গায়ে বসলে তার বিয়ে হয়ে যায়। কথাটা ভেবেই সে লজ্জা পেল। তাহলে কী ওর বিয়ে হবে। ছি ছি! কি ভাবছে এসব। ও তো এখনো খুব ছোট। এখনো ছোট কাকুরই বিয়ে হয়নি। সে প্রজাপতিটাকে আড়চোখে দেখতে লাগল। কী অররূপ! একটু নড়াচড়া করলেই হয়তো ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

    হঠাৎ রূপকথাকে হতবাক করে দিয়ে প্রজাপতিটা কথা বলে উঠল- এ্যাই তোমার নাম কি? রূপকথা প্রথমে ভয় পেয়ে গেল। কে কথা বলল? বাগানে ও আর প্রজাপতি ছাড়াতো কেউ নেই। প্রজাপতি কি কথা বলতে পারে নাকি? ওর গা কেঁপে উঠলো। ভূতটুত নয় তো। প্রজাপতি আবারো কথা বলে উঠলো- কী ব্যাপার! এই মেয়ে তোমার নাম বলছ না কেন?

    আ-আ-আমি রূপকথা। রূপকথা তোতলাতে তোতলাতে বলল।
    ও। আমার নাম টুং। প্রজাপতি জানালো।
    টুং নামটা রূপকথার বেশ পছন্দ হলো। প্রজাপতি আবার জানতে চাইলো-
    তুমি ফুলবাগানে কি করছ?
    আমি খেলছি।
    আর আমি ঘুরছি।

    কিছুক্ষন যেতেই দু’জনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। এবার রূপ জনতে চাইলো- তুমি রোজ এখানে আসো?
    প্রজাপতি বলল- এই বনেই তো আমাদের বাড়ি। তবে এদিকটাতে খুব একটা আসা হয় না। আমরা থাকি ওই যে গোলাপবনটা দেখতে পাচ্ছ, ওদিকটাতে।
    আজ এলে যে……
    আজ এসেছিলাম আমার ভাইকে খুঁজতে।
    ও তোমার ভাইও আছে?
    থাকবে না কেন? আমার ভাইয়ের নাম টাং। আমরা দু’ভাইবোন। টুং আর টাং। দুয়ে মিলে টুংটাং।

    প্রজাপতির কথাগুলো রূপকথার খুব ভালো লাগলো। ওর কথাগুলো কেমন যেন বড়দের মতো। কড়াকড়া। রূপ আবার জানতে চাইলো-
    তোমার বাবা-মা আছে?
    হ্যা আছেই তো। তবে আজ তারা বেড়াতে গেছে। মনে হয় সর্ষে ক্ষেতে। অনেক মধু সেখানে। খুব মিষ্টি।
    তুমি তাহলে একা?
    না, আমার ভাইটা আছে। তবে ও পালিয়েছে। ওকে খুঁজতেই এদিকে আসা। বাবা মা বাসায় নেই। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।
    তুমি বড়দের মতো করে কথা বলছ। শুনতে ভালোই লাগছে। রূপকথা বলল।
    হ্যা, আমি তো বড়ই। টাং এর বড় বোন আমি।
    ও হ্যা। এজন্যই বড়দের মতো।
    তোমার ভাই নেই?
    না আমার কোন ভাই নেই। আমি একা। বাবা-মায়ের একমাত্র।
    হুম! বাবা-মায়ের আদর তাহলে একাই খাচ্ছ?
    রূপকথা হেসে ফেলল- হ্যা খাই তো।

    প্রজাপতি বলল- আচ্ছা কিছুক্ষণ আগে তুমি বিড়বিড় করে কি বলছিলে?
    ও, ওটা কবিতা।
    কবিতা?
    হ্যা, আমিই বানিয়েছি।
    তুমি কবি তাহলে। অনেক গুণ তোমার মধ্যে।
    ধন্যবাদ। রূপ বলল।
    আচ্ছা কবিতাটা একটু শোনাও তো। ভাল করে শুনি।
    রূপকথা প্রজাপতিকে কবিতা শোনাতে লাগল-

    “ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
    ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
    মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
    আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”

    কবিতা শুনে প্রজাপতি চটে গেল। বলল- কি বললে? কি বললে তুমি? তুমি প্রজাপতি? তোমার রঙিন পাখা? তাহলে আমি কি?
    রূপকথা ঘাবড়ে গেল- না না এটা তো কবিতা। কবিতা তো এমনই হয়। মনের কল্পনা। বাবা বলেছে কল্পনা দিয়েই কবিতা লিখতে হয়।

    প্রজাপতি বলল- তা কল্পনা আর খুঁজে পেলে না? আমাদের কেন কল্পনা করবে? তুমি তো মানুষ। প্রজাপতির মতো কেন হতে চাইবে। কই আমি তো মানুষের মতো হতে চাই নি।
    তুমি কবি হলে ঠিকই আমাদের মতো হতে চাইতে। রূপকথা আরো বলল-
    শোন। তোমরা তো খুব সুন্দর, অপরূপ তোমাদের রূপ। রঙিন তোমাদের পাখা। কোন শাসন-বারণ নেই। লেখাপড়া নেই। আম্মু জোর করে খাওয়ায় না। সারক্ষণ উড়ে উড়ে ফুলের বনে ঘুরে বেড়াও। আর ফুলের মধু পান কর। তাই তো আমি তোমাদের মতো হতে চেয়েছি।

    রূপের কথাগুলো প্রজাপতির ভালো লাগলো। বলল- ও, এবার বুঝতে পেরেছি। তোমরা আমাদের খুব পছন্দ কর।
    হ্যা করি তো।
    প্রজাপতি বলল- ঠিক আছে। ঠিক আছে। তবে তোমাকে আর প্রজাপতির মতো হতে হবে না। তুমিও খুব সুন্দর মানুষ। অনেক ভাল। এখন থেকে তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পার।

    ঠিক আছে বন্ধু। রূপকথা প্রজাপতিকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে খুব খুশি হল।
    প্রজাপতি আরো বলল- এখন থেকে প্রতিদিন এখানে এসো। তোমার সঙ্গে গল্প করব। আর ঐ গোলাপ গাছটা দেখছ, ওখান থেকে একটা লাল গোলাপ নিয়ে যেও। বন্ধুর জন্য আমার উপহার।
    রূপকথা বলল- ঠিক আছে বন্ধ্।ু
    আর একটা কথা। আমাদের বন্ধুত্বের খবর আমার ভাই টাং যেন না জানে। ও খুব পাজী। তাহলে বাবা-মা’কে বলে দেবে।
    ঠিক আছে। কেউ জানতে পারবে না।
    ওই তো আমার ভাইটা এদিকেই আসছে। আমাকে এখনই উঠতে হবে। দেখে ফেললে ঝামেলা করবে। প্রজাপতি টাং কে দেখালো।
    রূপকথা দেখতে পেল- একটা হলুদ পজাপতি ওদের দিকেই আসছে।

    নীল প্রজাপতিটা উড়তে উড়তে রূপকথাকে বলল- তোমার কবিতাটা আমি মুখস্ত করে নিয়েছি। ওটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন থেকে আমি ওটা সুর করে বলব আর ঘুরে বেড়াব।
    ঠিক আছে বন্ধু। এখন থেকে কবিতাটা তোমার। তুমি আমাকে গোলাপ উপহার দিয়েছ। আমি তোমাকে দিলাম কবিতা।

    সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। প্রজাপতি উড়তে উড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। রূপকথা শুনতে পেল আম্মু ডাকছে- মামনি চলে এসো। এখনই সন্ধ্যা নামবে।

  • ভোমরা স্থলবন্দরে ৮ ট্রাক শুকনা মরিচ মালিক বিহীন পড়ে আছে

    নিজস্ব প্রতিনিধি: গত একমাস সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ০৮ ট্রাক শুকনা মরিচ (ঝাল) অবৈধভাবে আমদানি হয়ে ইয়াডে পড়ে আছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই পন্যের প্রকৃত কাগজপত্র ও মালিক কাউকে পাচ্ছে না বলে দাবি করলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অন্য রকম। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘কাস্টমস ইয়ার্ড ও ব্যবসায়ী যোগসাজস করে উক্ত ঝাল বন্দরে প্রবেশের পর তা জানাজানি হওয়ায় কেউ দায় দায়িত্ব না নেয়ায় এখন আর মালিক খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ৩১ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির টার্গেট ভেস্তে যেতে বসেছে এই চক্রটির।’ ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা বখতিয়ার আহম্মেদ গত বুধবার রাতে গনমাধ্যমকে জানান, গত মাসের ২৬ ও ২৮ তারিখে ৪ ট্রাক করে মোট ৮ ট্রাক শুকনা ঝাল বন্দরে প্রবেশ করে। এরপর ওই ঝালের ট্রাক আজও ইয়ার্ডের মধ্যে অবস্থান করছে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র কেউ দাখিল করেননি বলে জানান। এমনকি কোন সিএন্ডএফ এজেন্ট এই পন্যটি প্রবেশ করিয়েছে তাও বলতে পারে না কাস্টম ও ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিষয়টি নোট থাকার কথা থাকলেও সেখানেও তেমন কোন তথ্য মিলছে না। ভোমরা বন্দরের একজন ব্যবসায়ী (ঝাল আমদানিকারক) জানান, প্রতিটি ট্রাকে ১৮ টন করে ঝাল রয়েছে। প্রতি টনে সরকার রাজস্ব পায় ২১ হাজার ৩৪৫ টাকা। সে হিসেবে ৮টি ট্রাকে থাকা ঝাল থেকে সরকার রাজস্ব পাবে প্রায় ৩১ লাখ টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কাস্টমস, ইয়ার্ড, আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট যৌথভাবে এই পন্য পরিকল্পনা করে অবৈধভাবে প্রবেশ করায়। কিন্তু যে কারণেই হোক দরদামের মিটমাট না হওয়া এবং বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এখন আর এই পন্যের মালিক মিলছে না।’ সার্বিক বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা।

  • ঘরে ফিরতে পারেনি অনেকেই

    ঘরে ফিরতে পারেনি অনেকেই

    ঘূর্ণিঝড় আইলার ৯ বছরে খুলনার কয়রা উপজেলার শত কিলোমিটার ওয়াপদার বেঁড়ীবাঁধ অধিকাংশই অরক্ষিত থাকায় যে কোন মহুর্তে ঘটে যেতে পারে আরও একটি আইলা। ৯ বছর আগে জৈষ্ঠের এক দুপুরে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের উপকুলবর্তী এলাকায় আঘাত এনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। সে দিন সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে উপকূল এলাকায় ওয়াপদার বেঁড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্রবাল জোয়ারে লবন পানি ঢুকে পড়ে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে এবং ভেসে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ী, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ পানিতে ভেসে মারা যায় বৃদ্ধ ও শিশু সহ ৪১ জন। ধ্বংস হয় অধিকাংশ পাকা ও কাচা রাস্তা তবে ক্ষতির পরিমাণ আজও প্রকাশ করেনি সরকারি অথবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া গৃহ হারা অনেকেই আজও বাস করছে ওয়াপদা বেঁড়ীবাঁধ অথবা সরকারি কোন জায়গায়। ২৫ মে ২০০৯ দুপুরে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের মধ্যে আইলার পানিতে ভেসে যায় কয়রা সদর, মহারাজপুর, উঃবেদকাশি, দঃবেদকাশি, মহেশ্বরীপুর ও বাগালী ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে অনেক এলাকায় আইলার স্মৃতি এখনও বহন করে চলেছে রাস্তাঘাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মন্দির ও নিম্ম মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরবাড়ী। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ভাবে আইলার স্মৃতি আজও বয়ে চলেছে সর্বনাসা পবনা বাঁধের পাশ্ববর্তী পূর্ব মঠবাড়ী গ্রামে। এখানে প্রতাপ স্মরণী হাইস্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ উত্তরচক কামিল মাদ্রাসায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম খেয়া নৌকা পারাপার। অথচ পূর্ব মঠবাড়ী গ্রামের এই রাস্তাটি ইট বিছানো পাকা রাস্তা ছিল এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় চলাচল করত প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীসহ হাজার হজার মানুষ কিন্তু সেখানে এখন ৪০ থেকে ৫০ ফুট পানি থাকায় পাশাপাশি ৩ টি খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শতশত কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জীবনের ঝুকি নিয়ে এসব খেয়া নৌকায় পারাপার হতে। কিন্তু আইলার ৯ বছর পরও নির্মাণ হয়নি মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব মঠবাড়ী গ্রামের এই রাস্তাটি। অনুরুপ আইলায় গৃহহারা হয়ে ৪নং কয়রা লঞ্চঘাটের পাশে, পবনা, দশাহালিয়া ও পাতাখালী গ্রামে বেঁড়ীবাঁধের উপর আজও অনেকেই বাস করছে। অপর দিকে উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়ীয়া ও কয়রা নদীর শত কিলোমিটার ওয়াপদার বেঁড়ীবাঁধ অধিকাংশ এলাকায় ঝুকিপূর্ণ হলেও সরকারি বরাদ্ধ না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে অধিক ঝুকিপূর্ণ বেঁড়ীবাঁধের মধ্যে দঃ বেদকাশি জোড়শিং, আংটিহারা, মাটিয়াভাঙ্গা, চরামুখা ও খাসিটানা। উঃ বেদকাশি ইউনিয়নের গাববুনিয়া, কাটকাটা, গাজী পাড়া, গাতিরঘেরি ও কাটমারচর। কয়রা ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ২নং কয়রা, হরিণখোলা ও ৪নং কয়রা লঞ্চঘাট। মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী, দশহালিয়া, আটরা, গোবিন্দপুর ও লোকা। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখ পাড়া, নয়ানি, হড্ডা ও কালীবাড়ী লঞ্চঘাট। এসব এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে আমাবশ্যা ও পূর্ণিমায় অধিক জোয়ারের সময় অনেক স্থান দিয়ে বেঁড়ীবাঁধ ছাপিয়ে লবন পানি ভেতরে প্রবেশ করে। এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় শাখা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ঝুকিপূর্ণ বেঁড়ীবাঁধের যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দরকার সে পরিমাণ অর্থ না পাওয়ায় অনেক এলাকা অরক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেন জরুরি কোন বরাদ্দ এই মহুর্তে না থাকায় ক্ষতি গ্রস্থ এলাকার জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছে কিন্তু অর্থ পেতে দেরি হওয়ায় এবং চাহিদা মত অর্থ না পাওয়ায় সময় মত কাজ করা সম্ভব হয় না। উপজেলা চেয়ারম্যান মাওঃ আখম তমিজউদ্দীন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন ইউনিয়নের বেঁড়ীবাঁধের ঝুকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি, সচিব মহোদয় কয়রা উপজেলার ঝুকিপূর্ণ বেঁড়ীবাঁধ পরিদর্শনের জন্য খুব শীঘ্রই কয়রা উপজেলায় আসবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইউনিয়নে এবং স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা জানান,বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে এবং গৃহহারাদের সেখানে পূর্ণবাসন করা হবে। তবে দঃ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামছুর রহমান জানান তার ইউনিয়নে চারদিকে নদী বেষ্ঠিত এবং অধিকাংশ বাঁধ অরক্ষিত থাকায় ইউনিয়নের ৩২ হাজার জনগণ সব সময় আতঙ্কের মধ্যে আছে। অথচ পাউবোর কর্মকর্তাদের বার বার জানানো সত্বেও গুরুত্ব না দেওয়ায় যে কোন মহুর্তে ভেসে যেতে পারে সমগ্র ইউনিয়ন।

  • এতিম শিশুদের সাথে ইফতার মাহফিলে এমপি রবি

    ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশুদের সাথে ইফতার মাহফিলে মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনসহ অতিথিবৃন্দ।

  • পুনর্বাসিত হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের হাজার হাজার পরিবার

    পুনর্বাসিত হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের হাজার হাজার পরিবার

    আজ ভয়াল ২৫ মে। সর্ব গ্রাসী আইলার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আইলা কবলিত হাজার হাজার পরিবার এখনও পূর্নবাসিত হয়নি। আশ্রয়হীন জনপদে এখনও চলছে অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান ও খাবার পানির জন্য তীব্র হা-হা-কা-র। সর্বগ্রাসী আইলা আজও উপকুলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার, হাজার মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

    জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহুর্তের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকুলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ল-ভ- হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার।

    লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকুল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সর্বনাশা ‘আইলা’র আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। প্রলংয়করী আইলা আঘাত আনার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার এতটুকু থামেনি। দু‘মুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল।

    আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখনও ঠিকমত সংস্কার হয়নি। ফলে উচ্চ বিত্ত থেকে শুরু করে নিম্মবিত্ত সবাই চালাচ্ছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত আইলা কবলিত এ বিশাল জনপদে খুবইকম সংখ্যক সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

    আইলা’র ভয়াবহতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নে বসবাসরত মানুষের চোখে মুখে এখনও ভয়ংকর সেই স্মৃতি। আইলার আঘাতের পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভীদ শুন্য হয়ে পড়ে।

    কৃষি ফসল ও চিংড়ী উৎপাদন বন্ধ থাকায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মহীন মানুষ অনেকেই এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছে। অপরদিকে, বনদস্যুদের অত্যাচারে সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর উপর নির্ভরশীল এ এলাকার মানুষের জীবন যাপন দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে।

    ফলে বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছেননা উপকূলীয় এ জনপদের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। আইলার পরপরই কিছু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজের বিনিময় খাদ্য প্রকল্পের কাজ হলেও এখন আর কোনো কাজ হচ্ছে না। আর এ কারণেই ক্রমে ক্রমে বাড়ছে দরিদ্র ও হত দরিদ্রের সংখ্যা।
    এদিকে, আইলার ৯ বছর অতিবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলোর ভয়াবহ ফাঁটল দেখা দেয়ায় এবং সংস্কার না করায় সামান্য ঝড় কিম্বা বৃষ্টিতে ঝূঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষের। তাই উপকূলীয় এ জনপদের মানুষের সরকােেরর কাছে দাবি টেকসই উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও বেকার জনগোষ্ঠির কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা।

  • সাতক্ষীরা পৌরসভার খসড়া বাজেট পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় শীর্ষক সভা

    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম সাতক্ষীরা শহর উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক পৌর বাজেট ২০১৮-১৯ প্রণয়নে আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেডের সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরা পৌরসভার আসন্ন খসড়া বাজেট পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় শীর্ষক শহর পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র মো. তাজকিন আহমেদ চিশতী।

    এসময় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ বলেন, পৌর-সেবাসমূহ নাগরিকদের কাছে সহজপ্রাপ্য করা, পৌরসভার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পৌর সম্পদ সমূহের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পৌর-বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। মেয়র জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে জিআইজেড বিভিন্ন কর্মসুচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাতক্ষীরা পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্যে জিআইজেড ও জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

    তিনি সাতক্ষীরা শহরকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউ মার্কেট থেকে রাজ্জাক পার্ক পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডার, রাজ্জাক পার্কের সৌন্দর্য বর্ধন, প্রাণসায়ের খালের পাশের রাস্তার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা বলেন এবং বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

    সভায় সকল কাউন্সিলরগণ, টিএলসিসির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ পৌরসভার সকল কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে মতামত প্রদান করেন। সমগ্র অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেড’র উপদেষ্টা রতন মানিক সরকার। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে জিআইজেডের সহায়তায় সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃক পৌর মেয়র এর সভাপতিত্বে সকল ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি প্রাক বাজেট সংলাপ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

    কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি নিরসনে দরিদ্র এলাকা/বস্তি ভিত্তিক জলবায়ুপরিবর্তন অভিযোজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।সি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম সাতক্ষীরা শহর উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক পৌর বাজেট ২০১৮-১৯ প্রণয়নে আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেডের সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরা পৌরসভার আসন্ন খসড়া বাজেট পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় শীর্ষক শহর পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র মো. তাজকিন আহমেদ চিশতী। এসময় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ বলেন, পৌর-সেবাসমূহ নাগরিকদের কাছে সহজপ্রাপ্য করা, পৌরসভার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পৌর সম্পদ সমূহের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পৌর-বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। মেয়র জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে জিআইজেড বিভিন্ন কর্মসুচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাতক্ষীরা পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্যে জিআইজেড ও জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

    তিনি সাতক্ষীরা শহরকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউ মার্কেট থেকে রাজ্জাক পার্ক পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডার, রাজ্জাক পার্কের সৌন্দর্য বর্ধন, প্রাণসায়ের খালের পাশের রাস্তার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা বলেন এবং বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। সভায় সকল কাউন্সিলরগণ, টিএলসিসির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ পৌরসভার সকল কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে মতামত প্রদান করেন। সমগ্র অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেড’র উপদেষ্টা রতন মানিক সরকার। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে জিআইজেডের সহায়তায় সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃক পৌর মেয়র এর সভাপতিত্বে সকল ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি প্রাক বাজেট সংলাপ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

    কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি নিরসনে দরিদ্র এলাকা/বস্তি ভিত্তিক জলবায়ুপরিবর্তন অভিযোজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।সি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম সাতক্ষীরা শহর উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক পৌর বাজেট ২০১৮-১৯ প্রণয়নে আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেডের সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরা পৌরসভার আসন্ন খসড়া বাজেট পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় শীর্ষক শহর পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র মো. তাজকিন আহমেদ চিশতী।

    এসময় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ বলেন, পৌর-সেবাসমূহ নাগরিকদের কাছে সহজপ্রাপ্য করা, পৌরসভার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পৌর সম্পদ সমূহের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পৌর-বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। মেয়র জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে জিআইজেড বিভিন্ন কর্মসুচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাতক্ষীরা পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্যে জিআইজেড ও জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

    তিনি সাতক্ষীরা শহরকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউ মার্কেট থেকে রাজ্জাক পার্ক পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডার, রাজ্জাক পার্কের সৌন্দর্য বর্ধন, প্রাণসায়ের খালের পাশের রাস্তার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা বলেন এবং বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

    সভায় সকল কাউন্সিলরগণ, টিএলসিসির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ পৌরসভার সকল কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে মতামত প্রদান করেন। সমগ্র অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেড’র উপদেষ্টা রতন মানিক সরকার। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে জিআইজেডের সহায়তায় সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃক পৌর মেয়র এর সভাপতিত্বে সকল ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি প্রাক বাজেট সংলাপ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি নিরসনে দরিদ্র এলাকা/বস্তি ভিত্তিক জলবায়ুপরিবর্তন অভিযোজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।সি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম সাতক্ষীরা শহর উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক পৌর বাজেট ২০১৮-১৯ প্রণয়নে আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেডের সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরা পৌরসভার আসন্ন খসড়া বাজেট পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় শীর্ষক শহর পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র মো. তাজকিন আহমেদ চিশতী।

    এসময় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ বলেন, পৌর-সেবাসমূহ নাগরিকদের কাছে সহজপ্রাপ্য করা, পৌরসভার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পৌর সম্পদ সমূহের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক পৌর-বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। মেয়র জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে জিআইজেড বিভিন্ন কর্মসুচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাতক্ষীরা পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্যে জিআইজেড ও জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

    তিনি সাতক্ষীরা শহরকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউ মার্কেট থেকে রাজ্জাক পার্ক পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডার, রাজ্জাক পার্কের সৌন্দর্য বর্ধন, প্রাণসায়ের খালের পাশের রাস্তার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা বলেন এবং বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। সভায় সকল কাউন্সিলরগণ, টিএলসিসির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ পৌরসভার সকল কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে মতামত প্রদান করেন। সমগ্র অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন আরআইইউডি প্রকল্প জিআইজেড’র উপদেষ্টা রতন মানিক সরকার। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে জিআইজেডের সহায়তায় সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃক পৌর মেয়র এর সভাপতিত্বে সকল ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি প্রাক বাজেট সংলাপ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি নিরসনে দরিদ্র এলাকা/বস্তি ভিত্তিক জলবায়ুপরিবর্তন অভিযোজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।

  • দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স. ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন লুৎফুন্নেছা বেগম

    দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স. ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন লুৎফুন্নেছা বেগম

    ডেস্ক রিপোর্ট: দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ স. ম আলাউদ্দীন হত্যা মামলায় আরো একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

    নিহত স. ম আলাউদ্দিনের স্ত্রী দৈনিক পত্রদূতের প্রকাশক ও সম্পাদক লুৎফুন্নেছা বেগম মামলায় ২২তম সাক্ষী হিসেবে জেরা ও জবানবন্দি প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার জনাকীর্ণ আদালতে বিজ্ঞ দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার উক্ত জবানবন্দি ও জেরা গ্রহণ করেন। আগামী ২৯ জুন আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

    ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত অবস্থায় ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান পত্রিকার সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ স. ম আলাউদ্দীন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই স. ম নাসির উদ্দীন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ৫দিন পর পুলিশ শহরের সুলতানপুর থেকে যুবলীগ কর্মী কাজী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং সাইফুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কাটা রাইফেলসহ পাইপগান, বন্দুক, ইয়ারগান, গন্ধক, মোমছাল, রাইফেলের বাট, স্প্রিংসহ বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।

    দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি সুলতানপুরের সাইফুল্লাহ কিসলু (বর্তমানে মৃত) তার ভাই খলিলুল্লাহ ঝড়–, তার আর এক ভাই মোমিন উল্লাহ মোহন, আলিপুরের আব্দুস সবুর, নগরঘাটার আব্দুর রউফ, তার শ্যালক আবুল কালাম, সুলতানপুরের কাজী সাইফুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, এসকেন্দার মির্জা ও প্রাণসায়রের সফিউর রহমানকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন পিপি এড. ওসমান গনি। তাকে সহায়তা করেন এড. আজাহারুল ইসলাম ও এড. ফাহিমুল হক কিসলু। আসামী পক্ষে ছিলেন, যশোরের এড. হাসান ইমাম, এড. আব্দুল মজিদ, জিএম লুৎফার রহমান প্রমুখ।

  • না ফেরার দেশে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি

    সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত মুক্তামনি।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার সকালে বিরল রোগ হেমানজিওমায় আক্রান্ত মুক্তামনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছে।

    মুক্তামনি তার নিজ বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে মারা যায়। এ খবর জানাজানি হতেই সাতক্ষীরার মানুষ শোকাতুর হয়ে ওঠেন। মুক্তামনির বাড়িতে তাকে শেষ বারের মত দেখতে শতশত মানুষ সকাল থেকেই ভীড় জমাতে শুরু করেছে। মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল।

    উল্লেখ্য, কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে ১৩ বছরের মুক্তামনির দেহে দেড় বছর বয়সে একটি মার্বেলের মতো গোটা দেখা যায়। সেটি ধীরে-ধীরে বড় আকার ধারণ করতে থাকে। এক সময় তার ডান হাতটি একটি গাছের ডালের আকার ধারন করে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুক্তামনির রোগের কথা প্রচারিত হলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ছয় মাসের চিকিৎসায় খানিকটা উন্নতি হওয়ায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মুক্তামনিকে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি পাঠানো হয়। বাড়ি আসার পর থেকে তার অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। তার দেহে নতুন করে পচন ধরে। পোকা জন্মায়, রক্ত ঝরে। তার ওষুধপত্র বন্ধ হয়ে যায়। দিনে একবার করে তার ড্রেসিং করা হতো।

    মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন মুক্তামনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, বুধবার সকাল সোয়া ৮ টার দিকে মুক্তা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। এদিকে, মুক্তামনির মৃত্যুতে সাতক্ষীরাজেলাসহ দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

  • শ্যামনগরের ৫ জয়িতার গল্প

    রাবেয়া খাতুন
    নির্যাতনের বিভিষীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী, তিনি বলেন আমি রাবিয়া খাতুন, পিতা- রফিকুল ইসলাম, গ্রাম- চালিতাঘাটা। নির্যাতনের বিভিষীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছি। আমার পিতা একজন অতি দরিদ্র দিন মজুর। আমরা ২ বোন ১ ভাই। সবার বড় আমি। আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার পিতা আমার লেখাপড়ার খরচ বহন করতে না পারায় ২০১৪ সালে বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মিঠু গাজীর সাথে আমার বিবাহ দেয়। বিবাহের পর থেকেই আমার স্বামী আমাকে আমার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে বলে। আমি তখন বলি আমার পিতা একজন অতি দরিদ্র দিন মজুর। তিনি যৌতুকের টাকা দিতে পারবেন না। তখন থেকে শুরু হয় আমার উপর অমানবিক নির্যাতন। এর মধ্যে আমার গর্ভে একটি সন্তান আসে। তখন আমার স্বামী ও শ্বশুর সহ বাড়ির লোকজন গভের সন্তান নষ্ট করতে বলে। আমি রাজি না হলে আমার স্বামী আমাকে মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠাই। বাবার বাড়ি আসার কিছুদিন পরে আমার একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করে। আমার ছেলের বয়স ৩ মাস হলে আমি স্বামীর বাড়ি ফিরে যাই। চিন্তা করি সন্তানের মায়ায় স্বামী ও শ্বশুর সহ বাড়ির লোকদের মন ভালো হতে পারে। আমার ছেলেকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পর আমার উপর আবার নির্যাতন চালতে থাকে এবং আমার সন্তান ও আমাকে হত্যা করার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। একদিন রাতে আমার স্বামী আমাকে ঘুমের মধ্যে শ্বাস রোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলে পরে লাঠি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জখম করে। রক্তাক্ত অবস্থায় আমার পিতা আমাকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি এবং সাতক্ষীরা কোর্টে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করি। বর্তমানে মামলাটি সাতক্ষীরা কোটে বিচারাধীন। আমি আমার অতীতের সমস্ত গ্লানী ভুলে বর্তমানে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছি। একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে সেলাই প্রশিক্ষন গ্রহণ করি এবং তারা আমাকে একটি সেলাই মেশিন প্রদান করে। বর্তমানে আমি বাবার বাড়িতে সেলাই মেশিনে কাজ করে নিজের ও সন্তানের খরচ বহন করছি। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আমার সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলব। তাই নিজেকে আমি একজন জয়িতা নারী মনে করি।
    সেলিনা সাঈদ
    আমি সেলিনা বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামন্য অবদান রেখে সাফল্য অর্জনকারী নারী। আমি সেলিনা বেগম, পিতা- মরহুম শামসুর রহমান, মাতা- মোমেনা বেগম, গ্রাম- বড় ভেটখালী, ইউপি সদস্য মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড। সমাজ উন্নয়নে আমার কর্মকান্ড আমার জীবনটা জন্ম থেকেই অভিশপ্ত। শিশু কালে বুঝিনি অনাহারকৃষ্ট জীর্ন-শীর্ন শরীর নিয়ে কারণে নানা ভাবে শারীরিক, মানসিক ও অমানবিক নির্যাতন করে। দীর্ঘ ৬ বছর পর আমার পিত্রালয়ে ফিরে যায়। আমার তখন ১ ছেলে এবং আমি গর্ভবতী। শেষে জন্ম নিল ১ মেয়ে। মেয়েটা ১৯ দিন পর মারা গেল। তারপর আবার শুরু হলো মানসিক নির্যাতন। আজ বিয়ে করে কাল বিয়ে করে এভাবে ভয় দেখাতে লগলো। আমি উপয়ান্ত না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি লেখাপড়া শিখব। মানুষের কাছে আর মাথানত করবো না। আমি শক্তি অর্জন করবো। আমি আমার পিতাকে বললাম আবার আমি পড়শুনা করবো। আমার পিতা আমার কথা শুনে অবাক হলেন এবং সম্মতি দিলেন। তারপর থেকে আবার আমার শিক্ষাজীবন শুরু হলো। দেবহাটা টাউন শ্রীপুর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম ১৯৮১ সালে ১০ জানুয়ারী। ১৯৮৩ সালে পরীক্ষা দিয়ে ১ বিষয় ফেল করি। তারপর আমি আবার কাশিমাড়ী হাইস্কুলে এসে ভর্তি হই ও পাশ করি। মেট্রিক পরীক্ষা যখন দিই আমার পেটে তখন আবার ও সন্তান এসেছে এবং মেট্রিক পরীক্ষার ২৬ দিন পর আমার ছোট ছেলের জন্ম হয়। মহসীন কলেজে ভর্তি হই। একই বছরে আবার পিটিআই পড়ি তখন আমার ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৭ মাস। ওকে রেখে আমি পিটিআই হোস্টেলে যেয়ে উঠি। খুব কষ্ট করে পিটিআই পাশ হলো। সেই থেকে যশোর যেয়ে কোর্স করতে লাগলাম। যশোর যেয়ে টাইপিষ্ট ভর্তি হলাম। টাইপিষ্ট শিখে চাকুরি করতে লাগলাম। সেখান থেকে অন্যত্র চাকুরির চেষ্টা করতে লাগলাম। ১৯৮৯ সালে শেষ দিকে দরখাস্ত করলাম এবং এফডব্লিওএ- লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হয়ে চাকুরী জীবন শুরু হলো। ০১/০১/৯০ তারিখে আমি চাকুরিতে যোগ দিলাম তখন আমার বেতন ছিল মাত্র ১২৮০ টাকা। আমি খুব খুশি হলাম যে, আমার কারো দ্বারে হাত পাততে হবে না। আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করলাম। আমার চাকুরির বেতনের টাকা যতই আসুক না কেন সেটা আমি আমার স্বামীর হতে তুলে দিব। কিন্তু আমার স্বামী ১৯৮৫ সাল থেকে অন্য মেয়ের দিকে নজর দিতে থাকলো ও আমার সঙ্গে বিবাদ কলহ করতে লাগলো। আমার স্বামী আমাকে অকথ্য নির্যাতন করতো। ব্লু-ফ্লিম দেখে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিত মানুষের কাছে। ২০০৯ সালে আমাকে না জানিয়ে ২য় বিয়ে করে। যেই থেকে আমি এ বিষয় জানতে পারলাম আমাকে আরও মানবিক নির্যাতন করতে থাকলো। অদ্যবধি আমাকে ছাড়িয়া ছোট বউয়ের সাথে থাকতে শুরু করলো। সেই থেকে আমার কোন ভরন পোষন সে করে না এবং আমাকে ঋণে জর্জরিত করে চলে গেল। সেই সব ঋণ আমাকে পরিশোধ করতে হলো। আমি খুব কষ্টের মধ্যে আছি। দিন কারো জন্য বেধে থাকে না। আমার এই পরিণতি দেখে আমার পিতা আমার ছোট বোনদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমার এক বোন ঢাকা ইংরেজী আল মানারাত স্কুলে শিক্ষাকতা করে। অংকে অনার্স, ইংরেজীতে অনার্স, এম এ। এক বোন সাতক্ষীরা প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার। ১ বোন দেবহাটা চেয়ারম্যানের বউ টাউন শ্রীপুর প্রাইমারি শিক্ষক। এই দুই বোন এমএ পাশ করেছে। পরিশেষে আমি চাই সে ভালো থাকুক আর আমি ভালো আছি। আগামীতে আমার জীবনে যতই ঝড় বাধা বিঘœ আসুক না কেন আমি ভয় পাই না। আমি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে চাই।
    আসমা বেগম
    আমি আসমা বেগম, আমার পিতা তাবলীগ জামাত করতেন। মেয়েদের লেখাপড়া শিখাবার কোন ইচ্ছা ছিল না। মেয়েদের কোন রকম বাংলা শিখলেই হলো। বিধাতার লিখন না যায় খন্ডন। আমি নবম শ্রেণীতে পড়তে পড়তে আমার পড়া বন্ধ হয়ে গেল। ১৯৭৬ সালে ইং ২৩ এপ্রিল রোজ শুক্রবার মোঃ রাজাগুলা বাহারের সাথে আমার বিবাহ হয়। বিয়ের পর যৌতুক না দেওয়ার
    শেফালী বেগম
    আমি শেফালী বিবি, স্বামী- ছবেদ আলী গাজী, গ্রাম- দাতিনাখালি। আমি আমার নিজ ভাগ্য উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের হাল ধরে আর্থিকভাবে লাভবান হই। সুন্দরবন সংরক্ষন ও বনজীবিদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য এলাকার বন নির্ভর নারীদের নিয়ে বনজীবি নারী উন্নয়ন সংগঠন গড়ে তুলে কাঠ বর্হির্ভূত বনজ সম্পদ দ্বারা কেওড়ার চকলেট, শুকনা আচার, জেলী (টক, ঝাল,মিষ্টি), জেলী (টক, মিষ্টি) ও কেওয়ার নোড়া এবং সুন্দরবনের সংগৃহীত মধু পরিশুদ্ধ করে বোয়েম জাত, মোম দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের মোমবাতি, শোপিচ, সীট তৈরি, আরি-জুরি ও বাটিক বুটিকের কাজ করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে অর্গানিকভাবে প্রস্তুতকৃত এসব পন্য আধুনিকতার ছোয়ায় বোয়েম/প্যাকেট জাত করে বিক্রয় করি। এসকল পন্য বিক্রয়ের লভ্যংশ বাঘ বিধবা ও বনজীবি নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যয় করেছি। আমি নিজের প্রচেষ্টায় অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করে এলাকায় একটি রোল মডেলে পরিণত করছি।

    হামিদা রহমান
    আমি হামিদা রহমান, স্বামী – মোঃ ছাবিলুর রহমান সরদার, পিতা- মৃত পরান আলী গাজী, মাতা- মৃত বিবিজান, গ্রাম- জয়নগর। বিবাহের পর হতে নি¤œ আয়ের পরিবারের স্বামী সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করি। আমার স্বামী পর পর দুই মেয়াদে মেম্বর ছিলেন। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা। সেমতে তাদের পড়া লেখা করায়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে সুখ শান্তিতে বসবাস করছে। আজ আমি গর্বিত মা। আনন্দে বুকটা ভরে যায়। শতকাজের মাঝে যখন সন্তানদের মুখের হাসি দেখি তখন নিজেকে একজন গর্বিত মা হিসাবে মনে করি। আজ আমি একজন গর্বিত মা হিসাবে আল্লাহর নিকট শুকুরিয়া আদায় করি। দোয়া করি সব পিতামাতা যেন তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।