Blog

  • সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা ও নদী ব্যবস্থাপনা ঃ আদি যমুনা-ইছামতি আখ্যান

       অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী

    দক্ষিণে সাগর। সাগর পাড়ে সুন্দরবন। অসংখ্য নদী সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান। যা সাগর থেকে উৎপত্তি এবং সুন্দরবন সংলগ্ন। এ নদীসমূহ উত্তর মুখে সাগরের জোয়ারের বর্ধিত পানি নিয়ে ধাবিত হয়েছে। আবার সাগরের ভাটার টানে উপরের সকল পানি নিয়ে সাগরের বুকে ফিরে এসেছে। এটাই এলাকার নদী সমূহের বৈশিষ্ট্য।
    উত্তরে হিমালয় পর্বত। হিমালয়ের বরফগলা পানি নীচের দিকে নেমে দক্ষিণ দিকে ধাবিত হয়েছে। নানান বাক নিয়ে বাধা পেরিয়ে দক্ষিণের সাগরের স্রোতধারার সাথে মিলিত হয়েছে। দক্ষিণ-উত্তর এ দু’ধারার মিলনের গতিপ্রগতিতে সৃষ্ট হয়েছে অসংখ্য নদী, খাল, ভ‚মি, জনপদ আর সভ্যতা। বাংলাদেশ এ দু’ধারার মধ্যবর্তী। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লীয় অঞ্চল গড়ে উঠেছে সাগর-পর্বতে অপূর্ব জলকেলির মধ্য দিয়ে।
    হিমালয় পর্বত থেকে নেমে আসা প্রধান জলধারাটি গঙ্গা। গঙ্গার প্রধান শাখা ভাগিরথি নদী। ভাগিরথির প্রধান ধারা নানান বাঁক ও স্থান ঘুরে শ্যামনগরের (সাতক্ষীরা) মধ্যদিয়ে সাগরের সাথে মিলেছে। আর এই যাত্রা পথে কখনও যমুনা, কখনও ইছামতি, কখনও আদি যমুনা হয়ে ছুটেছে সাগরের দিকে। ভাগিরথির এ চলার পথে গড়ে উঠেছে নানান সভ্যতা, জনপদ ও ঐতিহ্য। গঙ্গা-ভাগিরথির প্রধান ধারা সাতক্ষীরার আদি যমুনা নদী। ফলে শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী হচ্ছে গঙ্গা-ভাগিরথির সাগর সংগমের শেষ প্রান্ত।
    অনেকের মধ্যে সংশয় আছে যমুনা নদী নিয়ে। মূলত; সিরাজগঞ্জের পার্শ্বদিয়ে প্রবাহিত বিশাল ও প্রবাহময় যমুনা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। যমুনা ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গার সাথে উত্তরবঙ্গের বঙ্গবন্ধু সেতুর যমুনার কোন সম্পর্ক নেই। ইতিহাস বলে সিরাজগঞ্জ সংলগ্ন যমুনার উৎপত্তি সাতক্ষীরার যমুনার অনেক পরে। সে কারণে বর্তমানে সাতক্ষীরার যমুনাকে আদি যমুনা বলা হয়। আজ অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অস্তিত্ব সংকটে আদি যমুনা। অবশ্য এলাকাবাসীর আন্দোলনের ফলে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে আদি যমুনা।

    শ্যামনগর-কালিগঞ্জের (সাতক্ষীরা) আদি যমুনা নদী পরিচয় তুলে ধরতে এ অঞ্চলের প্রথম ঐতিহাসিক সতীষ চন্দ্র মিত্র তাঁর যশোর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন:
    “এ যমুনা সেই যমুনা।
    যে যমুনা তটে ইন্দ্রপুরিতুল্য রাজপাট বসাইয়া কুরুপাবে ইন্দ্রপ্রস্ত
    হস্তিনাপুরে রাজুসুয়া যজ্ঞ সুসম্পন্ন করিয়াছিলেন,
    যে কালিন্দীতটে বংশীবটে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমধর্ম্মের অপূর্ব্ব লীলাভিনয়
    হইয়াছিল,
    যে যমুনা তীরে দিল্লী-আগ্রায় মথুরা-প্রয়াগে হিন্দু-মুসলমান,
    বৌধ্য-খৃষ্টান, মোঘল-ইংরেজ
    শত শত রাজরাজেস্বর সমগ্র ভারতের
    রাজদণ্ড পরিচালনা করিতেন,
    এ সেই একই যমুনা।
    সেই তমালকদম্ব পরিশোভিত, ককিল-কুজন-মুখরিত,
    নির্মল সলিলে প্রবাহিত
    তটশালিনী সুন্দর যমুনা।”

    গঙ্গা, ভাগিরথি নামে সপ্তগ্রাম (পশ্চিমবাংলা) পর্যন্ত আসে। এখান হতে যমুনা নামে প্রথমে চব্বিশপরগানা ও নদীয়া এবং পরে চব্বিশ পরগানা ও যশোরের সীমানার মধ্যবর্তী দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। যমুনা ক্রমে চৌবাড়িয়া, জলেশ্বর, ইছাপুর ও গোবরডাঙ্গা ঘুরে চারঘাটের কাছে টিপির মোহনায় এসে ইছামতি নাম ধারণ করে। ইছামতি সোজা দক্ষিণ দিক দিয়ে যাত্রা শুরু করে বশিরহাট, টাকি হয়ে বাংলাদেশের দেবহাটার ধার দিয়ে কালিগঞ্জের বসন্তপুর-দমদমের মধ্য দিয়ে নাজিমগঞ্জের পূর্বধার হয়ে শ্যামনগরে ভুরুলিয়া দিয়ে শ্যামনগরে প্রবেশ করে। এখান থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে বংশীপুর (যেখানে বারুণের-ন হয়) যেয়ে দু’ভাগ হয়ে যমুনা নামে ডানমুখো হয়ে রমজাননগরের সোনাখালী ও শ্যামনগরের চিংড়ীখালির মধ্য দিয়ে মাদার নদীর সাথে মেলে। বংশীপুরে যমুনার অপর এক অংশ ইছামতি নাম নিয়ে বাম দিয়ে কদমতলী হয়ে মালঞ্চ হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনে প্রবেশ করা দু’ধারাই মালঞ্চ নামে আড়পাংশিয়া নদী হয়ে সাগর সংগমের প্রাক্কালে আবার যমুনা নাম ধারণ করে।

    ইছামতির বসন্তপুর-দমদম এলাকা হতে শুরু করে মাদার নদীর সংযুক্তি পর্যন্ত আদি যমুনা প্রায় ৩২ কিলোমিটার। এ নদীর সাথে ৪০টির বেশী বিল ও একই পরিমান খালের সংযোগ রয়েছে। মূলত উপকূলীয় বাঁধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ পথ দিয়ে ইছামতির মিষ্টি পানির প্রবাহ সাগরে এবং সাগরের প্রবাহ ইছামতিতে আসা যাওয়া করতো। এ আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে নদী ও সংযুক্ত খালসমূহের নাব্যতা স্বভাবিক, পরিবেশ সহিষ্ণু ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত ছিল।

    আদি যমুনা নদী হলো সবচেয়ে ঐতিহ্য ও ইতিহাসখ্যাত নদী। এক সময় ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী হয়ে জাহাজ ভরে সওদা আসতো। বারো ভূইয়ার অন্যতম স্বাধীন নৃপতি প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল এ যমুনা কূলে। ‘যমুচ্ছোপ্রসঙ্গমে প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসপ্রসিদ্ধ যশোহর ও ধুমঘাটের রাজধানী ছিল।’ এখনও টিকে আছে নৌপ্রতাশ্রয় জাহাজ ঘাটা। সনাতনী ধর্ম বিশ্বাসীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বারুণের ¯œান এ যমুনাতে হয়ে আসছিল। এ যমুনা কূলে গড়ে উঠেছিল যশোরেশ্বী কালি মন্দির, ঐতিহাসিক মসজিদ ও উপমহাদেশের প্রথম র্গীজা। আদি যমুনা নদী সংলগ্ন জমিদার বাড়ি। শ্যামনগরের প্রধান মহাশ্মশান। এই যমুনা কূলে ছিল দোলযাত্রা উৎসব। যমুনা নদী থেকে মোঘল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তৈরি করা ‘মাটির গড়’।

    ইছামতির কালিগঞ্জের দমদম (ভাড়াশিমলা) ও বসন্তপুর (মথুরেশপুর) মধ্য এলাকা হতে শুরু হওয়া আদি যমুনা নদী দু’কিলোমিটর পর নাজিমগঞ্জের পার্শ্ব দিয়ে দক্ষিণ মুখো বাঁক নিয়ে শ্যামনগরের মধ্যদিয়ে সাগর মুখে ধাবিত হয়েছে। নাজিমগঞ্জের পার্শ্বের এ বাঁক হতে সোজা পূর্ব দিক মুখ করে বৃটিশ নীল কুঠিয়ালরা ব্যবসার সুবিধার জন্য আঠারো শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে একটি সংযোগ খাল খনন করে। যেটি পরবর্তীতে কাকশিয়ালী নদী নামে পরিচিতি পায়। যোগাযোগের জন্য এ নদীটি কাটলেও পরবর্তীতে এ নদী উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীর প্রবাহ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। তৈরী করে উপক‚লীয় এলাকার আন্তঃনদী সংযোগ।

    ইছামতি নদীর আদি যমুনা ছাড়াও আরো একটি ক্ষীণ শাখা ছিল। যেটা কালিন্দি নামে রায়মঙ্গলের সাথে যুক্ত হয়েছে। বসন্তপুরের উত্তর-পশ্চিম ধার দিয়ে চলে যাওয়া কালিন্দি প্রতাপাদিত্যের সময়ে সাধারণ খাল ছিল। বৃটিশ সরকার ১৮১৬ সালে কোলকাতার সাথে যোগাযোগ সহজ করতে কালিন্দি হতে একটি খাল কেটে বড় কলাগাছির নদীর প্রবাহের সাথে যুক্ত করে। এটি সাহেবখালির খাল নামে পরিচিত। এ খাল কাটার ফলে ইছামতির পানি ভাটায় এ পথে যাওয়া শুরু করলে কালিন্দি বড় হতে শুরু করে। এর আগেই গুড্ডল্যাড সাহেব যখন চব্বিশ পরগানার কালেক্টর তখন যমুনা থেকে একটি খাল কেটে বাশতলা দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর সাথে যুক্ত করে। যা কাকশিয়ালীর খাল (এড়ড়ফষধফ পৎববশ) বলে পরিচিত। এরপর আরো নদীপথ সংক্ষিপ্ত করতে হাসনাবাদ খাল খনন করা হয়। বৃটিশ সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক কারণে এ তিনটি সংযোগ খাল কাটায় আদি ইছামতি-যমুনা নদীর প্রবাহ অনেকাংশে কমে যায়।

    গুড্ডল্যাড সাহেব ইছামতি হতে আসা আদি যমুনা নদীর নাজিমগঞ্জ বাজারের উত্তরপূর্ব ধার হতে কাকশিয়ালী খালটি খনন করে চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুরের ত্রিমোহনীতে গুতিয়াখালী ও হাবড়া নদীর সাথে যুক্ত করে। আগেই এখান থেকে ধারা ছিল। ফলে এলাকাটি ত্রিমোহনী হিসেবে পরিচিত ছিল। এ সংযোগে ইছামতির সাথে হাবড়া ও গুতিয়াখালী নদীর সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পথ তৈরী হয়। সংযুক্ত খালটি গুতিয়াখালি নদীর সাথে মিশে ঘুরে দক্ষিণ মুখো হয়ে (উপরে বর্ণিত) কালিগঞ্জের বাঁশতলা ও আশাশুনির শ্রীউলার মধ্যবর্তী নদী গলঘেসিয়ার সাথে মিশে খোলপেটুয়ার সাথে যুক্ত হয়।
    আদি যমুনা নদী হতে খনন করে কাকশিয়ালি খালকে চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুরের ত্রিমোহনীতে গুতিয়াখালী ও হাবড়া নদীর সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে এখানে এসে কাকশিয়ালির মাধ্যমে ইছামতি-যমুনার সংযোগ সংযুক্ত হয়। কাকশিয়ালির একটি ধারা গুতিয়াখালি নদীর সাথে মিশে ঘুরে দক্ষিণ মুখ্ োহয়ে কালিগঞ্জের বাঁশতলা ও আশাশুনির শ্রীউলার মধ্যবর্তী নদী গলঘেসিয়ার সাথে মিশে খোলপেটুয়ার সাথে যুক্ত হয়। খোলপেটুয়া সাগর থেকে উঠে আসা অন্যতম প্রধান জোয়ার ভাটার নদী। আর একটি ধারা উজিরপুরের নিকট হাবড়া নদীর সাথে মিলিত হয়ে উত্তর-পশ্চিম মুখো হয়ে দেবহাটার কুলিয়াব্রিজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত লাবণ্যবতী নদীর সাথে মিলিত হয়। লাবণ্যবতী নদী ইছামতির কোমরপুর (দেবহাটার) হতে উঠে আসা একটি প্রবাহমান সংযোগ নদী।

    আগে থেকেই উজিরপুরের নিকট হতে হাবড়া নদী উত্তর-পশ্চিম মুখো হয়ে দেবহাটার কুলিয়া ব্রিজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত লাবণ্যবতী নদীর সাথে মিলিত ছিল। লাবণ্যবতী নদী ইছামতির কোমরপুর (দেবহাটার) হতে উঠে আসা একটি প্রবাহমান সংযোগ নদী। (ইছামতি নদীর কোমরপুর ***(যেখানে ¯øুইসগেট) কুমরোর খাল কুলিয়া ব্রিজের কাছে লাবণ্যবতী, টিকেট হয়ে কোলকাতার খাল হয়ে কদমখালি হয়ে বাকালের খাল মরিচ্চাপ নদীর সাথে যুক্ত। মরিচ্চাপের এল্লারচর এলাকা হতে খাজুর ডাঙ্গি পর্যন্ত কেটে বেতনার সাতে যুক্ত) লাবণ্যবতী নদী সাতক্ষীরা শহরের পশ্চিমাংশের খালসমূহের সাথে সংযুক্ত। কাকশিয়ালী ত্রিমহোনীতে যুক্ত হওয়ায় হাবড়ার এ শাখার প্রবাহ আরো গতিশীল হয়। ইছামতি নদীর পানি কোমরপুর দিয়ে ঘুরে আবার মরিচ্চাপে পড়ার পথ তৈরী হয়। দু’ধারার হাবড়া নদীর অপর ধারা উত্তর-পূর্ব মুখী হয়ে বদরতলা, শোভনালী, ব্যাংদহ হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত ছিল। মরিচ্চাপ সাগরযুক্ত খোলপেটুয়ার সাথে মিলিত প্রবাহমান নদী। অন্যদিকে মরিচ্চাপ নদীর সাথে সাতক্ষীরার বেতনা নদীর সংযোগ আগে থেকে ছিল।

    কাকশিয়ালী নদীর ধারা ত্রিমোহনীতে যুক্ত হওয়ায় মরিচ্চাপের প্রবাহ ইছামতির (কালিগঞ্জ) প্রবাহের সংযোগে সকল নদীর সংযোগ তৈরি করে। নদীসমূহকে প্রবাহময় করে। নদীপথে যোগাযোগের একটি আন্তঃঅঞ্চলীয় ব্যবস্থাপনা তৈরী হয়। পরবর্তীতে প্রাণসায়ের খনন করা হলে এ সংযোগ আরো গতিময় হয়। তখন বেতনা প্রবাহ খেজুর ডাঙ্গি হয়ে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে এল্লাচ্চর হয়ে মরিচ্চাপে পড়া সহজ হয়।
    ইছামতি, বেতনা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, লাবণ্যবতী, যমুনা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে সাতক্ষীরা, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর এ অঞ্চলের নদীর প্রবাহের মধ্যে একটি আন্তঃসংযোগ তৈরি করে। ফলে সাগরের সংযোগের সাথে ইছামতি, বেতনা ও মরিচ্চাপের সংযোগ তৈরি হয়। অন্যদিকে ইছামতি প্রবাহ সরাসরি সাতক্ষীরার বিভিন্ন নদীর মাধ্যমে মরিচ্চাপে পড়ে। ফলে এলাকাতে একটি সৃজনশীল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে। এক নদীতে জোয়ার হতো তখন অন্যটায় ভাটা হতো। আর এভাবেই নদীসমূহে সকল সময় জোয়ার-ভাটার প্রবাহ থাকায় শুধু প্রধান নদী নয় অভ্যন্তরীণ সকল নদী খালের সচল ও গতিশীলতা তৈরী করে।

    উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ করার সময় এ নদীসমূহের প্রবাহ বিবেচনা না করে, নদীর পানির সাথে আসা পলি ব্যবস্থাপনার বিষয় এবং এলাকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিবেচনা না করে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও ¯øুইস গেট নির্মাণ করে এ অঞ্চলের নদীর প্রবাহ ধ্বংস করা হয়। উপকূলীয় অঞ্চলকে নিক্ষেপ করা হয় এক বৈরী পরিবেশের মধ্যে। ভেঙে যায় সৃজনশীল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। নষ্ট হয় খাদ্য নিরাপত্তা বলয়।

    আগেই বলা হয়েছে, ইছামতি-আদি যমুনা নদী শুধু শ্যামনগর-কালিগঞ্জ উপজেলার নদী নয়, আজ সাতক্ষীরা, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও পানি প্রবাহের একমাত্র সম্ভাবনাময় ধারা। আর এ বাস্তবতার নিরিখে ইছামতি-যমুনার প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জেলার ঝুঁকিতে থাকা প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করা অনেকাংশে সম্ভব। এই সঙ্গে ইছমতির কোমপুরের দেবহাটার নিকট নির্মিত ¯ইসগেটটিও পরিবর্তন করে প্রবাহ স্বাভাবিক চলাচলের ব্যবস্থা করলে সামগ্রিক সাতক্ষীরা নিরাপদ হতে পারে জলাবদ্ধতার হাত থেকে।
    ইছামতির জলধারাকে ব্যবহার করে কালিগঞ্জ-শ্যামনগরকে যেমন প্রবাহময় করা যায়, তেমনি ত্রিমোহনীর মাধ্যমে দেবহাটা, সাতক্ষীরা ও আশাশুনির নদীসমূহের প্রবাহ পূর্বের ন্যায় সচল করা গেলে আজকের সবচেয়ে বড় সংকট জলাবদ্ধতার অভিশাপ মুক্ত করা সম্ভব। পাশাপাশি নদীসমূহের নাব্যতাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।


    নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে সভ্যতা। উপক‚লীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনাও তৈরি হয় নদীর প্রবাহের মধ্য দিয়ে। কিন্তু উন্নয়ন পরিকল্পনায় কখনও নদীর অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সড়ক পথের উন্নয়নের নামে ব্যাপকভাবে নদীকে আটকে দেওয়া হয়। উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীকে ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় আয়োজন হলো ষাটের দশকের উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ।
    আবহমান কালধরে জোয়ার ভাটার প্রবাহের সাথে আসা পলি উপক‚লীয় অঞ্চলে ভ‚মি গঠন করে। পলি ভ‚মি গঠন যেমন করেছে তেমনি জমির উর্বরতাকে ধরে রাখতেও ভ‚মিকা রেখেছে। সাগরের লোনা পানি আর উপরের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা তৈরি। যার শুরু এলাকার ভ‚মিগঠন হতে। জোয়ার ভাটার প্রবাহ নদীসমূহের নাব্যতা বজায় রাখে। প্রবাহের কারণে নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা স্বাভাবিক থাকায় প্রাকৃতিক কারণে নদী গতিপথ পরিবর্তন না করলে সে নদী মরে যাওয়া ঘটনা ছিল বিরল।
    দেশ বা রাষ্ট্রের উন্নয়নে সড়ক, রেল ও আকাশপথ নিয়ে যত তোড়জোড় করা হয়েছে নদীপথ নিয়ে তার সিকিও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নদী সকল সময় থেকেছে আলোচনার বাইরে। অথচ স্বল্প ব্যয়ে ও পরিবেশ সহযোগী হিসেবে যোগযোগের মাধ্যম হিসেবে নদী পথের বিকল্প নেই। দেশের নদীর পানিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে যে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল সেটি কখনও নেওয়া হয়নি। বিবেচনায় নিয়ে আসা হয়নি যে প্রবাহময় নদীর পানিও সম্পদ। মাছে ভাতে বাঙালির মাছের অস্তিত্ব যে নদী কেন্দ্রিক সেটি ভুলে আছেন তথাকথিত উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
    পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। এ বনের জীববৈচিত্র্যের স্থায়ীত্ব নির্ভরশীল নদীর প্রবাহের উপর। লোনা ও মিষ্টি পানির সংমিশ্রণ সুন্দরনের সম্পদের বিকাশের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনের সকল এলাকায় একই ধরনের বৃক্ষ হয় না। পানির মান তথা লোনার তীব্রতার কম বেশীর কারণে অঞ্চল ভেদে বৃক্ষের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে থাকে। কিন্ত দেশের উন্নয়নের ধারক ও পরিবেশ সংরক্ষণের সিলমারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে নদী মারা ও নদীর প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করার কোন উদ্যোগ প্রতিরোধে ভ‚মিকা না নিয়ে আজ জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার নানান আয়োজনে ব্যস্ত। মিষ্টি পানির প্রবাহ সাগরের লোনা পানির সাথে মিশ্রণে প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক রেখে যে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা আবহমান কাল ধরে চলে আসছিল, তা বন্ধ করার মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুরু করা হয়েছে ব্যাপকভাবে সুন্দবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সোচ্চার হয়ে উঠার আহŸান।
    মানুষ বসতি গড়ে ওঠে নদীর প্রবাহকে বিবেচনায় করে। নদীক‚লে মানুষ নির্মান করে আবাস, বাজার ইত্যাদি। পৃথিবীর সকল প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে প্রবাহময় নদীর সন্নিকটে। তেমনিভাবে উপক‚লে যখন মনুষ্য বসতি নির্মিত হয়েছে তখনও নদীর প্রবাহ ও নদীপথকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাগর, বন আর ভ‚মি সমানভাবে বিচরণ ক্ষেত্র ছিল উপক‚লীয় মানুষের। এককভাবে কোনটির উপর নির্ভর থাকেনি। একটা সময় বন তার জীবিকার ক্ষেত্র, একসময় নদীসাগর আর এক সময় ভ‚মি বা কৃষি। তবে কৃষিতে বেশী সময় থাকতো মানুষ। নদীর প্রবাহ কেন্দ্র করে শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-সভ্যতা, পেশা তৈরি করে নিয়ে আবহমানকাল ধরে উপক‚লে বসবাস করে আসছে মানুষ। কিন্তু মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পেশা কোনটাই বিবেচনা করা হয়নি উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণের সময়।
    যোগাযোগের উন্নয়ন, অধিক ফসল ফলানো, বসতি নিরাপদ করা, নানান মিষ্টি কথার মালা সাজিয়ে জোয়ার ভাটার প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করে নদী মারার আয়োজন শুরু করা হয়। নদী মারার আয়োজনে পথ প্রশস্ত হয় বহুজাতিক কোম্পানির বাজার সম্প্রসারণের। টেকসই দেশীয় ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া থামিয়ে রাসায়নিক সার-কীটনাশক যুক্ত হইব্রিড বীজ আমদানি করা হয়। দেশীয়ভাবে উৎসাহিত করা হয় নদী দখলের। ভ‚মি দস্যুদের দখলে চলে যায় নদীরক‚লসহ প্রবাহ বিচ্ছিন্ন অধিকাংশ নদী। সম্পদশালীদের সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্র হয়ে যায় অবৈধভাবে নদী দখল। আর সব সময় এ দখলের সহযোগী হয়েছে প্রশাসন বা রাষ্ট্রযন্ত্র। রাজস্ব আয়ের নামে নদী, জলাশয় সব সময় বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমির পরিমান স্ফীত করার ক্ষেত্র হলো মরে যাওয়া নদী খাল আর মজে যাওয়া নদীর চর।
    উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরার ভ‚মির গঠনে প্রধান ভ‚মিকা রাখে গঙ্গা-পদ্মা-গড়াই-ভৈরব-কপোতাক্ষ এবং গঙ্গা-ভাগিরথি-যমুনা-ইছামতি-যমুনা-মাদার, এ দু’প্রবাহ। গঙ্গার প্রধান এ দু’শাখার পানি সাগরে গেছে সাতক্ষীরার উপর দিয়ে। পশ্চিমে কালিন্দি আর পূর্বে কপোতাক্ষ এবং মধ্যে খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, মাদার সাগর সংযুক্ত নদী। আর এ নদীগুলোর শেষ ভাগে সাগরক‚লে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। সুন্দরবন যখন সমগ্র এলাকা ঢেকে রাখে তখনও এ ধারার অস্তিত্ব ছিল। তবে মাঝে মধ্যে নদীর প্রবাহ কোনটার বেশী কোনটার কম হয়েছে। যে কালিন্দি একসময় খাল ছিল এখন সেটি বড় নদী। আবার আদি যমুনা ছিল সবচেয়ে বৃহৎ, সেটি আজ অস্তিত্বের লড়াই করছে। চুনার নদী উৎস বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কপোতাক্ষ ভৈরবের সাথে সংযোগ হারিয়ে মরতে বসেছে। মরিচ্চাপ প্রবাহহীন প্রায়। এসকল ঘটনার পিছনে মনুষ্য সৃষ্ট নানান ঘটনা যেমন ছিল, তেমনি প্রাকৃতিক ঘটনাও ভ‚মিকা রাখে। তবে সকল ক্ষেত্রে ছিল নদীকে পরিকল্পনাহীনভাবে ব্যবহার করা। নদীর পানির প্রবাহমানতাকে বিবেচনা না করা। নদীর পলির বিষয় মাথায় না রাখার বাস্তব বিবর্জিত কর্মকাÐ বাস্তবায়ন।


    উপক‚লীয় নদীর প্রবাহের সাথে পানি ও পলি ব্যবস্থাপনা বিবেচনা না করার ফলে আজ জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি। এ অঞ্চলের উপর দিয়ে গঙ্গার প্রধান দু’শাখার জলধারা সাগরে যুক্ত হয়েছে। আবার সাগর যুক্ত থাকায় জোয়ার ভাটার প্রভাবে নদীসমূহ ছিল প্রবাহমান। গঙ্গার পানি সাগরে যাওয়া ও সাগরের জোয়ার ভাটার প্রবাহের অসংখ্য নদী খাল তৈরি হয় এলাকাতে ।
    সংকটের পটভ‚মি তৈরি হয় নদীর উপর অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বন্ধ করা, নদী-খাল মাছ চাষের নামে লিজ দেওয়া ও অবৈধ দখল হওয়ার ফলে। পানি নিষ্কাশনের নদীসমূহ লিজ দেওয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে উন্নয়নের নামে অপ-উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মাধ্যমে উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধ্বংস করার মধ্যদিয়ে। নদীর করুণ মৃত্যু শুরু এ প্রতিষ্ঠানটির হাত দিয়ে। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের নামে নদীর বুকে নির্মাণ করে স্থাপনা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এলাকার জীববৈচিত্র্য, স্থায়ীত্বশীল জীবন জীবিকার বিষয় অজ্ঞতা হেতু স্থাপনা নির্মাণে একের পর এক অনুমতিপত্র প্রদান করেন। নদী ধ্বংসের আরো একটি কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একমুখী ¯ইস্যু গেট। সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা তৈরির সময় নদীর প্রশস্ততা বিবেচনা না করে নদী অপেক্ষা অনেক ছোট করে কালর্ভাট ও পুল নির্মাণ করে।
    এলাকার প্রধান দু’নদী কপোতাক্ষ ও ইছামতি এ অঞ্চলের ভ‚মি গঠনে ভ‚মিকা রাখে। সাগর সংলগ্ন হওয়ায় জোয়ার ভাটার প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে এ দ্বীপাঞ্চল গঠনে। সাগরযুক্ত নদীগুলো হলো- খোলপেটুয়া, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ, চুনা, আড়পাংশিয়া প্রভৃতি। কপোতাক্ষ ইছামতির যুক্ত নদীসমূহ বেতনা, শালিখা, লাবণ্যবতী, আদি যমুনা, মরিচ্চাপ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি খাল কেটে নদী প্রবাহের সাথে যুক্ত করা হয়, যেগুলো পরবর্তীতে আন্তঃনদী সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। যেমন- প্রাণ সায়ের (বেতনার সাথে মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ), কোলকাতার খাল (লাবণ্যবতীর সাথে এল্লারচর হয়ে মরিচ্চাপ নদীর সাথে যুক্ত), কাকশিয়ালী (কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ এলাকার আদি যমুনা নদী হতে শুরু হয়ে উজিরপুরের ত্রিমোহনীর সাথে যুক্ত)। এর বাইরে আরো অসংখ্য নদী খাল রয়েছে। সকল খাল নদী পরস্পর যুক্ত এবং একে অন্যের পানি কখনও নিজে ধারণ করেছে, কখনও বহন করে নিয়ে প্রবাহের ধারা সচল রেখেছে। মিষ্টি ও লোনা পানির সংমিশ্রণে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে।
    বর্তমানে প্রবাহমান একমাত্র নদী ইছামতি। উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় বছরের ৭-৮ মাস উজানের পানি প্রবাহ থাকে এই নদীতে। ১৯৭২-৭৩ সালে স্থানীয় জনগণের প্রবল বাধা উপেক্ষা করে ইছামতি-লাবণ্যবতী নদীর সংযোগস্থল দেবহাটার শাখরায় ১৫ ভেন্টের একটি ¯øুুইস গেট নির্মাণ করা হয়। একই সময়ে ইছামতির ভাতশালা নামক স্থানে সাপমারা নদীর সংযোগ স্থলে আরো একটি ¯øুইস গেট নির্মাণ করা হয়। লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর অপর প্রান্তে মরিচ্চাপের সংযোগস্থলে টিকেট, কামালকাটি, শালখালী, বালিথাসহ বিভিন্ন স্থানে আরো অসংখ্য ¯øুইস গেট নির্মাণ করা হয়। আর এ কারণেই অল্প দিনের মধ্যেই লাবণ্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ নদী এবং তার অসংখ্য শাখা খাল অস্তিত্ব হারায়। যার প্রভাবে বেতনা ও খোলপেটুয়া নদীও নাব্যতা হারায়। ইছামতির কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুরের উত্তর ধারা আদি যমুনা নাম নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারের পূর্ব পার্শ দিয়ে শ্যামনগরের মধ্যদিয়ে মাদার নদীর সাথে মিশে সাগরে যুক্ত হওয়ায় প্রবাহময় ছিল। উপক‚লীয় বাধ নির্মাণের সময় কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ বাজারের পাশে আড়াআড়ি আদি যমুনার উপর বাধ নির্মাণ করে এবং সেখানে ৪ ফ্কোরের একটি ¯ইস্যু গেট নির্মাণ করে নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। আদি যমুনা ও মাদার নদীর সংযোগস্থলে আড়াআড়ি বাধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে আদি যমুনা নদীর প্রবাহ নষ্ট হয়ে যায় এবং নদী নাব্যতা হারায়। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক নির্মাণের সময় শ্যামনগর শ্মশানের সামনে আদি যমুনার উপর কোনধরনের পানি চলাচলের পথ না রেখে রাস্তা তৈরি করে। যা নদীকে দু’খণ্ড ভাগ করে দেয়।
    ইছামতির বাংলাদেশে প্রবেশস্থলই একমাত্র যায়গা যেখানে উপক‚লীয় বাধ হয় নি। ফলে এ পথে ইছামতির প্রবাহ সচল আছে। ইছামতির সম্মুখ ভাগ কালিন্দি নামে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে রায়মঙ্গলে যুক্ত হয়ে সাগরে মিশেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ মুন্সিগঞ্জ-যশোর সড়ক নির্মাণকালে সাতক্ষীরার বেতনা, লাবণ্যবতী, কোলকাতার খাল, প্রাণসায়ের ও আদি যমুনাসহ অসংখ্যা নদী খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে ও কোথাও পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় গত দুই দশক ধরে মানুষ ইছামতি নদীর সাথে সাতক্ষীরার অন্যান্য নদীগুলোর পূর্বের ন্যায় জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। কারণ ইছামতির জোয়ারের পানি ভাটি হয়ে নামতো লাবণ্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, আদি যমুনা ও মাদার নদী দিয়ে। আবার এসব নদীর জোয়ারের পানি ইছামতি নদীতে ভাটি হয়ে নামতো। আর এর সাথে দূরবর্তী হলেও সংযোগ ছিল বেতনা এবং কপোতাক্ষের। যত প্রকল্পই নেয়া হোক না কেন জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি ছাড়া বর্তমান সমস্যা সমাধান নয়।
    বেতনা নদীর একটি শাখা সাতক্ষীরার খেজুর ডাঙ্গি এলাকা হয়ে কদমতলা ঝাউডাঙ্গা হয়ে সোনাই নদীতে যুক্ত হয়। এ নদী থেকে একটি খাল কেটে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে এল্লাচর হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়। যেটি প্রাণ সায়ের নামে পরিচিত। বেতনার পানি প্রাণসায়ের দিয়ে মরিচ্চাপে ও একইভাবে সোনাই নদীর পানিও প্রাণসায়ের হয়ে চলাচল করায় সাতক্ষীরা সদরের লাবসাসহ সমগ্র এলাকা ছিল অবাধ প্রবাহ যুক্ত এলাকা। এলাকাতে আগে কখনও পানি জমা হয়নি বা জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। কিন্তু বেতনা ও প্রাণসায়ের এই সংযোগ খালের খেজুরডাঙ্গিতে ৬ ভেন্টের ¯øুইস গেট নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই নদী মরে স্থায়ী জলবদ্ধতার দিকে এগুতে থাকে।
    সামগ্রিক ভাবে সাতক্ষীরাকে বিরূপ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, নদীর ধ্বংস আর জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে ইছামতি নদীর প্রবাহ সাগরে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করে জোয়ার ভাটার প্রবাহের বাধা অপসারণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি পথই জলমগ্ন অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এটা নীতি নির্ধারক মহল যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন তত দ্রুত মানুষ নিষ্কৃতি পাবে এই সংকট থেকে। গড়ে উঠবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সক্ষম পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। এ জন্য প্রয়োজন সামগ্রিক মাস্টার প্লান। গবেষণা ও অব্যাহত প্রচার ধর্মী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নীতি নির্ধারকদের উপর চাপ রাখতে হবে।

    বর্তমানে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
    ১. নাজিমগঞ্জের পাশের ¯øুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার ভাটার প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
    ২. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী গুতিয়াখালি-গলঘেসিয়া-খোলপেটুয়া নদীর প্রবাহকে সচল করা।
    ৩. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী-হাবড়া-লাবণ্যবতী(কুলিয়া ব্রিজের নীচ দিয়ে)-ইছামতি নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
    ৪. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী-হাবড়া-(বদরতলা, শোবনালী, ব্যংদহ হয়ে)-মরিচ্চাপ নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
    ৫. বেতনা-প্রাণসায়ের-মরিচ্চাপ নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক করা।
    ৬. বেতনা-খোলপেটুয়া নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
    ৭. কোমপুরের ¯øুইস গেট অপসারণপূর্বক সরাসরি পানির প্রবাহ চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
    ৮. ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী সংযোগ সচল করে সাগরে যুক্ত করা।
    ৯. হাবড়া-বদরতলা-শোভনালী-ব্যাংদহ হয়ে মরিচ্চাপের সংযোগ গতিময় করার ব্যবস্থা করা
    ১০ এসএ খতিয়ান অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহ্নিত করে, সরকারি দখলে নিয়ে আসা।
    ১১. দেবহাটার শাখরা-কোমরপুরে ¯øুইস গেট অপসারণ করে লাবণ্যবতী নদী হয়ে টিকেট এবং কোলকাতার খাল সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়রের মধ্য দিয়ে খেজুরডাঙ্গির ¯øুইস গেট অপসারণ করে বেতনার সাথে যুক্ত করা।
    ১২. দেবহাটার হাড়দ্দহা ¯øুইস গেট অপসারণ করে ইছামতির প্রবাহ সাপমারা হয়ে পারুলিয়া ব্রিজের নিচ
    দিয়ে কামালকাটি হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত করা।
    ১৩ . কালিগঞ্জের ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী সংযোগ সচল করে সাগর যুক্ত করা।
    ১৪. কালিগঞ্জে ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী নদী চাম্পাফুলের পাশ দিয়ে বুধহাটা খাল হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত করে প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
    ১৫. বেতনা-প্রাণসায়র-এল্লারচর হয়ে মরিচ্চাপ সংযুক্ত প্রবাহ সচল করা।
    ১৬. নদীগুলোর জোয়ার-ভাটার বাধা অপসারণ করা এবং যেখানে সম্ভব সেখানে একটির সাথে অন্যটির
    পূর্বের মত সংযোগ স্থাপন করা।
    ১৭. অপরিকল্পিত ¯ø্ইুস গেট, কালর্ভাট, ব্রিজ ও বাঁধ অপসারণ করা।
    ১৮. এলাকাতে কোন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হলে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে অবকাঠামো
    নির্মাণ করা।
    (উপরিউক্ত বিষয়ে তথ্যভিত্তিক সমালোচনা প্রত্যাশা রইলো) লেখক: সম্পাদক, দৈনিক দক্ষিণের মশাল 213 Views

    নিউজটি ফেইসবুকে শেয়ার করুন 169shares

  • সাতক্ষীরায় ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক


    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ঃ সাতক্ষীরা শহরের বাঁকাল এলাকা থেকে ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। শনিবার মধ্যরাতে শহরের অদূরে বাঁকাল কোল্ডষ্টোরের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক মাদক ব্যবসায়ীর নাম মোঃ নান্নু মিয়া (৪২) । সে ঢাকা পল্লবির মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি মটরসাইকেল ও ২২ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়।
    জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহরিয়ার হাসান জানান, সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে মটরসাইকেলযোগে ফেন্সিডিল আনা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের অদূরে বাঁকাল কোল্ডষ্টোরের সামনে ডিবি পুলিশের একটি টহল দল অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে নান্নু মিয়া নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে তার মটরসাইকেলে তল্লাশি চালিয়ে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ২২ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

  • ‘বাংলাদেশ রিভার ফোরাম-২০১৮’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

    ‘বাংলাদেশ রিভার ফোরাম-২০১৮’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত


    ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে দিন ব্যপি পিকেএসএফ অডিটোরিয়ামে “ লিসেনিং টু দা গ্রাসরুট’ শ্লোগানকে সামনে নিয়ে দেশব্যপি গড়ে উঠা নদী রক্ষা আন্দোলন সমুহের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ রিভার ফোরাম-২০১৮’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রিভাররিন পিপউলস এর আয়োজিত সম্মেলনে তৃণমুল পযায়ের ৭০টি অধিক নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ঠ  অর্থনীতিবীদ ড. খলিকুজ্জামান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মুজিবর রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশি কবীর, অক্সফ্যামের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এমডি আকতার, পিকেএসএফ এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মো. জসিমুদ্দিন, পরিবেশ আইনজীবী আব্রাহিম লিং কং প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দের রিভাররিন পিপলসে এর সেক্রেটারী জেনারেল শেখ রোকন।

    আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, বড়াল নদী রক্ষা কমিটির সম্পাদক মো. মুজিবর রহমান, বুড়িগজ্ঞা বাচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মিহির দত্ত প্রমুখ তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সম্মেলনে।

    সমাপনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিভারাইন পিপলসের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক  ড. এমডি মাসুদ পারভেজ আলম, প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ এর ব্যাবস্থাপনা  পরিচালক ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল করীম । এ পর্বের বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য এমডি. আলাউদ্দীন, বেলার নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রেজয়ানা হাসান, বাপার জেনেরেল সেক্রেটারী ডা. আব্দুল মতিন ও রিভারাইন পিপলসের ডিরেক্টর আনোয়ার হোসেন।

  • নির্বাচনী ইশতেহারে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনাকে সংযুক্ত করতে হবে

    নির্বাচনী ইশতেহারে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনাকে সংযুক্ত করতে হবে

    নিজস্ব প্রতিনিধি: উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে ঘরে-ঘরে সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরায় সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’ শনিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় চার নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা’কে সংযুক্তি এবং পরবর্তিতে সরকারি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’র সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।

    লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) অভীষ্ট-৬, ‘সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়:নিষ্কাশণের টেকসই ব্যাবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ’-এর জন্য বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ওয়াশ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে পথ চলার এখনও অনেক বাকী’

    তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষের পানিতে অভিগম্যতা থাকলেও লবণাক্ততা, আর্সেনিক ও আঞ্চলিক দূর্গমতা বিবেচনায় সুপেয় নিরাপদ পানিতে ৬০ ভাগ মানুষের অভিগম্যতা নাই।’
    তিনি দেশের স্যানিটেশন সেবার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘খোল স্থানে মলত্যাগের হার শূণ্যের ঘরে এনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত হয়েছে তবে নিরাপদ ও টেকসই স্যানিটেশন সেবার আওতায় এসেছে মাত্র ৪৭ ভাগ। এ প্রেক্ষাপটে স্যানেটিশন ব্যাবস্থাপনার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এজন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার প্রত্যাশা করে।

    সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহারে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতকে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঘরে ঘরে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণ। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ। সরকারি পুকুর, খাল ও জলাধার উদ্ধার করে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকল প্রতিষ্ঠানে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করা। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকা এবং শহরের বস্তি ও নিন্ম আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। জলাভূমি রক্ষা করে যে কোন উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা, পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে নতুন স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন স্থাপনাগুলোকে সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

    সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, প্রথম আলোর প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যাণার্জি, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারী, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক ফাহিমুল হক কিসলু, সুশীলনের উপ-পরিচালক মোস্তফা আখতারুজ্জামান, ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরাম’ সাধারণ সম্পাদক মিসেস চন্দ্রিকা ব্যাণার্জি, আশ্রয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুন প্রমুখ।

  • শোভনালীতে ছাত্রীকে উত্যক্ত করায় যুবককে গণধোলাই

    আশাশুনি ব্যুরো: আশাশুনি উপজেলার শোভনালীতে মাদরাসা ছাত্রীকে উত্যক্ত করা ও ফেসবুকে ছাত্রীর ছবি পোষ্ট করার অপরাধে একজনকে গণ ধোলাই দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে ইউনিয়নের বসুখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

    উত্যক্তের শিকার বসুখালী দাখিল মাদরাসার ১০ শ্রেণির ছাত্রী ও তার পিতা জানান, একই গ্রামের হামিদ উল্লাহ গাজীর ছেলে ফরহাদ দেড় বছর আগে থেকে মেয়েটিকে স্কুলে যাতয়াতের পথে কু-প্রস্তাব ও উত্যক্ত করে আসছিল। গরীব ও অসহায় পরিবারের মেয়ের অভিভাবকরা লোক লজ্জা ও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিকারের চিন্তা না করে সতর্কতার সাথে মেয়েকে মাদরাসায় যাতয়াতের ব্যবস্থা করেন।

    এক মাস আগে ফরহাদের স্বামী পরিত্যাক্তা মা মেয়ের পিতার কাছে মোবাইল করে ছেলের পিতার পরিবার খারাপ, তার সাথে যেন মেয়ের বিয়ে না দেয়, তিনি নিজে ১৮ বছর ঐ সংসারে নির্যাতন ও অমর্যাদা নিয়ে কিভাবে কাটিয়েছেন তা বর্ণনা দিয়ে সতর্ক করে দেন। মেয়ের পিতা ছেলের মাকে তাদের ছেলেকে আটকাতে অনুরোধ করেন। তাদের মেয়ের ছেলের সাথে কোন যোগাযোগ নেই, তাকে ভয়ভীতি ও উত্যক্ত না করে সেজন্য অনুরোধ জানান। মেয়ের পিতা আরও বলেন, ৪/৫ দিন আগে আবারও ছেলের মার সাথে কথা হলে তিনি ছেলে উত্যক্ত করতে গেলে বেধে রাখার নির্দেশ দেন। উত্যক্তের শিকার মেয়ে বলে, তাকে ছেলেটি উত্যক্ত করার পাশাপাশি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে এসিড নিক্ষেপ করার হুমকী দিয়েছে। ক্লাশ রুমে গিয়েও উত্যক্ত করেছে। ফলে অভিভাবকরা মেয়েকে মাদরাসায় পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে উক্ত ফরহাদ তার ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে মেয়ের ছবি পোষ্ট করলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
    শুক্রবার সকালে ফরহাদ মেয়েদের বাড়ির এলাকায় গেলে এলাকাবাসী বসুখালী বাজারে ফরহাদকে আটকে গণপিটুনি দেয়। এলাকার জনপ্রিতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তি ও সর্বস্তরের মানুষের সামনে থেকে ফরহাদের পিতা ক্ষমা প্রার্থনা করে ছেলেকে নিজের জিম্মায় নিয়ে যান এবং আর কখনো মেয়ের পিছু নেবেনা বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহবাজ হোসেনসহ এলাকার শত শত মানুষ অভিযোগ ও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত ফরহাদ বলেন, মেয়েটির সাথে তার সম্পর্ক আছে, মেম্বারের সাথে শত্রুতার কারনে পরিকল্পিত ভাবে ঘটনাটি ঘটান হয়েছে।

    এক মাস আগে ফরহাদের স্বামী পরিত্যাক্তা মা মেয়ের পিতার কাছে মোবাইল করে ছেলের পিতার পরিবার খারাপ, তার সাথে যেন মেয়ের বিয়ে না দেয়, তিনি নিজে ১৮ বছর ঐ সংসারে নির্যাতন ও অমর্যাদা নিয়ে কিভাবে কাটিয়েছেন তা বর্ণনা দিয়ে সতর্ক করে দেন। মেয়ের পিতা ছেলের মাকে তাদের ছেলেকে আটকাতে অনুরোধ করেন। তাদের মেয়ের ছেলের সাথে কোন যোগাযোগ নেই, তাকে ভয়ভীতি ও উত্যক্ত না করে সেজন্য অনুরোধ জানান।

    মেয়ের পিতা আরও বলেন, ৪/৫ দিন আগে আবারও ছেলের মার সাথে কথা হলে তিনি ছেলে উত্যক্ত করতে গেলে বেধে রাখার নির্দেশ দেন।

    উত্যক্তের শিকার মেয়ে বলে, তাকে ছেলেটি উত্যক্ত করার পাশাপাশি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে এসিড নিক্ষেপ করার হুমকী দিয়েছে। ক্লাশ রুমে গিয়েও উত্যক্ত করেছে। ফলে অভিভাবকরা মেয়েকে মাদরাসায় পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে উক্ত ফরহাদ তার ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে মেয়ের ছবি পোষ্ট করলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।


    শুক্রবার সকালে ফরহাদ মেয়েদের বাড়ির এলাকায় গেলে এলাকাবাসী বসুখালী বাজারে ফরহাদকে আটকে গণপিটুনি দেয়। এলাকার জনপ্রিতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তি ও সর্বস্তরের মানুষের সামনে থেকে ফরহাদের পিতা ক্ষমা প্রার্থনা করে ছেলেকে নিজের জিম্মায় নিয়ে যান এবং আর কখনো মেয়ের পিছু নেবেনা বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

    বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহবাজ হোসেনসহ এলাকার শত শত মানুষ অভিযোগ ও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

    অভিযুক্ত ফরহাদ বলেন, মেয়েটির সাথে তার সম্পর্ক আছে, মেম্বারের সাথে শত্রুতার কারনে পরিকল্পিত ভাবে ঘটনাটি ঘটান হয়েছে।

  • সাতক্ষীরায় ইসলামী আন্দোলন’র বিক্ষোভ মিছিল

    নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘মুক্তির মূলমন্ত্র, ইসলামী শাসনতন্ত্র’ এই শ্লোগানে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

    মিছিলে নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুফতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তোছাদ্দেক হোসেন খোকা।

    মিছিলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের হাত পাখার প্রার্থী এফ.এম আছাদুল হক, সাতক্ষীরা-৩ আসনের প্রার্থী ও জেলা সহ-সভাপতি ড. মো. ইছহাক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি হাফেজ মো. শহিদুল ইসলাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো. ছারোয়ার আলম, সহ-সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. মোবাশ্শীরুল ইসলাম (তকী), ইসলামী শাসনতন্ত্র-ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো. ফজর আলী, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ।

    মিছিল শেষে দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে নেতৃবৃন্দ।

  • এবার দূর্গাপূজায় হচ্ছে না দুই বাংলার মিলন মেলা

    মশাল ডেস্ক: এবার দূর্গাপূজায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মিলনমেলা হচ্ছে না। দেশের স্ব-স্ব সীমানায় প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। রবিবার সাকলে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের টাকী বিএসএফ ক্যাম্পে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ের পতাকা বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির টাউনশ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার আমিনুল ইসলাম।

    তিনি জানান, দূর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উভয় দেশের স্থানীয় উর্দ্ধতন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে পতাকা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দশমীর দিন দু’দেশের মধ্যকার মিলনমেলা নিয়ে আলোচনা করা হয়। দু’দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবছর দু’দেশের মধ্যে মিলনমেলা না হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিজয়া দশমীর দিনে কোন নৌকা নদীর সীমানা অতিক্রম করতে পারবেনা। এছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সকল নৌকাকে নদী থেকে ফিরে আসতে হবে।

    বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মান্নান আলী, টাউনশ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার আমিনুল ইসলাম, দেবহাটা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইয়ামিন আলী, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী প্রমুখ।

    ভারতের পক্ষে ছিলেন এসডিপিও মহাকুমা অফিসার আশিষ মর্জি, হাসনাবাদ থানার ওসি সাহেব রাও, টাকী বিএসএফ ক্যাম্পের সিও প্রেম সিংহ, এসআই দেবদুলাল মন্ডল, টাকী পৌরসভার মেয়র সোমনাথ চট্টপাধ্যায়, বিএসএফের পোস্ট কমান্ডার হুসিয়ার সিংহ প্রমুখ।

  • জলবায়ু পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

    জলবায়ু পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

    শ্যামনগর ব্যুরো: সিএসআরএল, প্রকাশ, ব্রিটিশ কাউন্সিল-এর সহযোগিতায় শ্যামনগরে উপজেলা জলবায়ু পরিষদের বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে শনিবার শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

    অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জলবায়ু পরিষদের সভাপতি সাবেক উপাধ্যক্ষ নাজিম উদ্দীন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার।

    মানবজীবনে দুর্যোগ অবধারিত, প্রায়শই একে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ এর মাধ্যমে এর ক্ষতি, প্রাণহানী ও সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। জলবায়ু পরিষদ, জলবায়ু ঝুকি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচী গুলোতে এবং বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সংযুক্ত করার দাবি তুলে ধরে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।

    জীবনযাত্রার স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারোভিযান-পত্র পাঠ করেন অধ্যাপিকা শাহানা হামিদ। বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুণ-অর রশিদ, শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এস কে সিরাজ, সাধারন সম্পাদক জাহিদ সুমন, এসময় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এম কামরুজ্জামান সহ সকল সাংবাদিকগণ ও জলবায়ু পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

  • শ্যামনগরে পূজামণ্ডপের সামনে বোমা বিস্ফোরণ

    নিজস্ব প্রতিনিধি: শ্যামনগরে পূজামণ্ডপের সামনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে চারটি তাজা হাত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

    স্থানীয়রা জানান, রাতে সবাই কাজ শেষ করে বাড়ি গেলে বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ে। এমন সময় হঠাৎ বিকট আওয়াজে একটি বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা চারটি তাজা বোমা ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে চারটি বোমা উদ্ধার করে।

    এদিকে, খবর পেয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য স.ম জগলুল হায়দার ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন এবং পুলিশ পরিদর্শক আনিছুর রহমান মোল্লা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

    এ সময় সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দার এ ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। তিনি উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সাধরণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বোমা বিষ্ফোরণ ঘটানো হতে পারে।’

    এবিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কাজ শুরু করে দিয়েছে।’

  • বিশ্ব ডিম দিবস পালিত

    শহর প্রতিনিধি: ‘সুস্থ সবল জাতি চাই, সব বয়সেই ডিম খাই’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জেলায় বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

    প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই জায়গায় আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

    সদর উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জিল্লুুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরেশ চন্দ্র দাস।

    সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, তালা উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস, উপ-সহাকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আফছার আলী প্রমুখ।

    বক্তারা এ সময় সুস্থ ও সবল জাতি গঠনে সব বয়সের মানুষকে ডিম খাওয়ার আহবান জানান।

  • দেবহাটায় শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

    সখিপুর প্রতিনিধি: দেবহাটায় দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শ্রমিকলীগের ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে পারুলিয়া শহীদ আবু রায়হান চত্বর থেকে উপজেলা শ্রমিক লীগের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি উপ-শহর প্রদক্ষিণ করে।

    র‌্যালি শেষে শহীদ আবু রায়হান চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আবু তাহের। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, পারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর প্রমুখ।

    অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পারুলিয়া ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনতাজ উদ্দীন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষ, উপজেলা তাঁতীলীগের সদস্য সচিব ও ইউপি সদস্য আকবর আলী, উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, এশারাত আলী, আয়ুব হোসেন, কবির হোসেন, মনিরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম বাবু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মাছুরা সাথী, কোষাধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন, কুলিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি পরান চন্দ্র সরকার, সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম, পারুলিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব অজিয়ার রহমান, সখিপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল গাজী, দেবহাটা সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, কুলিয়া ৯নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন প্রমুখ। আলোচনা শেষে অতিথিবৃন্দ প্রতিষ্ঠাবাষিকীর কেক কাটেন।

    অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন উপজেলা শ্রমিকলীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আরিফ।

  • জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপি-জামায়াতের ১০১ জনের নামে মামলা

    জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপি-জামায়াতের ১০১ জনের নামে মামলা


    শহর প্রতিনিধি: নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে আবারও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান ও পৌর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হবিসহ বিএনপি ও জামায়াতের ১০১ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে।

    সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর চেকপোস্ট এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামী করা হয়েছে। আলিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানসহ এ মামলায় ইতিমধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মহিদুল ইসলাম জানান, উল্লিখিত আসামিরা নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে জড়ো হলে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। এসময় আলিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নাশকতার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

    এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, যুবদল সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মুকুল, বিএনপি নেতা আইনাল ইসলাম নান্টা, কামরুজ্জামান ভুট্টো, কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. আব্দুস সাত্তার, কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্র দলের সভাপতি, আলিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা আর্জেদসহ বিএপি-জামায়তের ৬১ জন।

    পুলিশ আরও জানায়, এ মামলায় বাকী আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

  • কাশিমাড়ীতে ওয়ার্ড যুবলীগের আলোচনা সভা

    বি.এম জালাল: শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যলায় উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সোমবার বিকালে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

    আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এস এম জাহিদুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাশিমাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি স.ম রেজাউল ইসলাম।

    বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন পাড়, সহ-সভাপতি মুজিবর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভপতি ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।

  • এলাকার জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা সমাধানে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-আসাদুজ্জামান বাবু

    এলাকার জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা সমাধানে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-আসাদুজ্জামান বাবু

    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেছেন, ‘আমি মনোনয়ন পেলে জনগণের কল্যাণে আরও কাজ করতে পারবো। এলাকার জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা সমাধানে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বুধবার সাতক্ষীরা শহরে নির্বাচনী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শেষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠে গণসংযোগে তিনি এ কথা বলেন।

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এ গণসংযোগে তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী সরকার উন্নয়নের সরকার। এ সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়নি এমন কোন খাত নেই। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার কোন বিকল্প নেই। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।’

    বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ থেকে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে প্রায় পাঁচ হাজার মোটরসাইকেল। কয়েক ঘন্টা পর শোভাযাত্রাটি আবারও সরকারি কলেজ মাঠে এসে সমাবেত হয়।

    শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুস সেলিম, জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, ফিরোজ হোসেন, ফারাহ দীবা খান সাথী, কৃষক লীগ নেতা মনজুর হোসেন প্রমুখ।

  • সরকারি নিয়মনীতি না মেনেই চলছে শ্যামনগরের বেশিরভাগ ক্লিনিক

    ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: ‘ভুল অপারেশনে প্রাণ গেল রোগীর’ এমন শিরোনামে প্রতিনিয়তই প্রকাশিত হচ্ছে খবর। যোগ্য ডাক্তার ও নার্সের অভাবে জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকসমূহে এরকম ঘটনা ঘটছে অহরোহ। মানব সেবার নামে ক্লিনিকগুলো যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যু ফাঁদ। এসব ফাঁদে পড়ে রোগীকে ভোগান্তিতো পোহাতে হয়ই রোগীর পরিবারের সদস্যরাও ক্লিনিকের খরচ বহন করতে করতে দিশেহারা। এমন দৃশ্য এখন জেলার সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। আর এর মূল কারণ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সেবার নামে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে পরিচালিত হওয়া জেলার এসব ক্লিনিকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ‘দৈনিক দক্ষিণের মশাল’ এ ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

    শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে সরকারি নীতিমালা না মেনে এম.বি.বি.এস ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স ও লাইসেন্সবিহীন চলছে কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকের বেশিরভাগ কাজ চলে স্বল্প শিক্ষিত নার্স দিয়ে।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্লিনিকই চালানো হচ্ছে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পাস নার্স দিয়ে। এসব ক্লিনিকে ডাক্তারের কাজ শুধুমাত্র অস্ত্রপচার পর্যন্ত। অস্ত্রপচারের পর ইনজেকশন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করেন অদক্ষ নার্সরা।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার ১৩ টি ক্লিনিকের মধ্যে ১১ টি ক্লিনিকই চলছে নাম মাত্র ডাক্তার আর গুটিকতক অদক্ষ নার্স দিয়ে। এসব ক্লিনিক চালাতে ক্লিনিক মালিকরা সহযোগীতা নিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু নেতাদের।

    সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক একজন এম.বি.বি.এস ডাক্তার ও একজন ডিপ্লোমা নার্স থাকতে হয়। থাকতে হয় নবায়ন লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, নারকুটি লাইসেন্স, ইনকামটেক্স ও ফায়ারসার্ভিস লাইসেন্স। এরপর অপারেশন থিয়োটারে (ওটি) এসি, হাউড্রোলিক টেবিলসহ সকল সার্জিকাল যন্ত্রপাতি থাকার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিকে এসবের বেশিরভাগই নেই।

    তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত আরজি ক্লিনিক নার্সিং হোম, নওয়াবেঁকিতে দুইটি শামিমা ও ডাক্তার ফার্নান্দো নববে মাদার এন্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, বংশীপুরে তিনটি শ্যামনগর ন্যাশনাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বংশীপুর নার্সিং হোম ও জননী নার্সিং হোম। শ্যামনগর সদরে সুন্দরবন নার্সিং হোম, নগর হাসপাতাল ও সেবা ক্লিনিক সরকারি কোন নিতিমালা না মেনেই নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে তাদের ক্লিনিক ব্যবসা। রোগীদের জীবন নিয়ে ডাক্তার বিহীন ক্লিনিকগুলো খেলা করে গেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ।

    এসব ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ডাক্তার অপারেশন করে রেখে চলে যায় এরপর নার্স দিয়ে তাদের সেবা করানো হয়। পরেরবার ডাক্তারের দেখা পেতে সময় লাগে ৩-৪ দিন। ডাক্তার যখন নতুন রোগীদের অপারেশন করতে আসেন তখন ভর্তি রোগীদের এক নজর দেখে যান।
    অবৈধভাবে ক্লিনিক চালানোর কারণ জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিকরা বলেন, ‘একজন এম.বি.বি.এস ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স সর্বক্ষণ রেখে রোগীদের চিকিৎস্য দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। তবে ডাক্তার প্রতিদিন তাদের ক্লিনিকে এসে রোগীদের দেখে যায়। এছাড়া সব প্রকার লাইসেন্স সরকারিভাবে বন্ধ আছে।’

    ডাক্তার, নার্স ও লাইসেন্সবিহীন এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণ জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার তওহিদুর রহমান বলেন, ‘যে সময় আমি ক্লিনিক পরিদর্শন করতে যায় সেসময় ক্লিনিকে ডাক্তার ও নার্স উপস্থিত থাকে এজন্য কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। তবে যদি কোন ক্লিনিক সরকারি নিয়মনীতি না মেনে কার্যক্রম চালিয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সাতক্ষীরায় এবার ৫৭৭টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: শরতের আগমনে কাশফুলকে আর আগের মত সাতক্ষীরার মাঠে দেখা মেলে না। এরপরও শারদীয়া দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা শরৎকালকে মনে করিয়ে দেয় বাঙালিদের। শাস্ত্রমতে আগামী ৮ অক্টোবর সোমবার পূণ্য মহালায়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যধামে দেবীপক্ষের শুরু। আর ১৫ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর শুরু।

    ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ উক্তি আর ঢাক ও কাসির বাজনা ছাড়াও মায়েদের কপাল সিন্দুরে রাঙানোর মধ্য দিয়ে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয়া দূর্গাপূজা।

    সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৫৭৭টি সার্বজনীন ও পারিবারিক মন্দিরে দূর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১০৬টি, তালায় ১০৬টি, পাটকেলঘাটায় ৭৮টি, আশাশুনিতে ১০৭টি, শ্যামনগরে ৬৬টি, কালিগঞ্জে ৪২টি ও দেবহাটায় ২১টি দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

    বুধবার দিনব্যাপী পুরাতন সাতক্ষীরার বেশিরভাগ মন্দিরে দেখা গেছে শিল্পীরা মাটির কাজ শেষে প্রতিমা রঙ করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কয়েকটি মণ্ডপে মাটির কাজ শেষে রঙ দেওয়ার আগে প্রতিমা শুকিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন শিল্পীরা।

    স্থানীয়রা জানান, শরৎকাল মাঝামাঝির দিকে হলেও শিশিরের কোন দেখা নেই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের দেখা নেই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম। এবার মা আসছেন দোলায় ও যাবেন গজে। ফলে মহালয়া শেষ না হতেই ঝড়ের দেখা মিলতে পারে। তবে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এবারের দূর্গাপূজা মিলন মেলায় পরিণত হবে। তবে দেবহাটা সীমান্তের ইছামতী নদীতে দুই বাংলার মিলন মেলা না হওয়ায় উভয় পারের বাঙালিরা খানিকটা হতাশার মধ্যে রয়েছেন।

    পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি সার্বজনীন দূর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব ব্যানার্জী জানান, এবার মায়ের বাড়িতে মূল প্রতিমার সঙ্গে ২২৫টি অতিরিক্ত মূর্তি তৈরির কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষে মঙ্গলবার রঙ টানার প্রাথমিক স্তরের কাজ শেষ হয়েছে। এবার প্রতিমা তৈরির খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকায় এবার তাদের মণ্ডপে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। দর্শনার্থীরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা দর্শন করতে পারে সেজন্য স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।

    ভাস্কর অনিল সরকার জানান, দুই মাস আগে থেকে মায়ের বাড়িতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা। ছয়জন সহযোগীকে নিয়ে তিনে মঙ্গলবার প্রতিমার গায়ে প্রথম পর্বের রঙ টানার কাজ শেষ করেছেন। অতিরিক্ত ২২৫টি মূর্তি মায়ের বাড়ির দূর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ। যথাসময়ে প্রতিমা নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

    বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহসভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মন্ডল জানান, অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার মনোবাসনা নিয়ে এবার মা দূর্গা দোলায় চেপে মর্তে আসছেন। যথাযোগ্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা ও আড়ম্বরের সঙ্গে এবার শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৮ অক্টোবর সোমবার মহালায়ার মধ্য দিয়ে মহামায়ার আগমনী বার্তা নিয়ে পূজা আনন্দে মেতে উঠবে সাতক্ষীরাবাসী। মহামায়ার আগমনে বিনাশ হবে অশুভ শক্তি। তবে গত বছরে আশাশুনির কচুয়া ও কল্যাণপুরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা যাতে এবার না ঘটে সেজন্য তারা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পূজার আগে সদরের ওয়ারিয়ায় রাধা গোবিন্দ মন্দিরের মূর্তিতে যেভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন। তবে পূজা মণ্ডপগুলো যথাসময়ে জেলা প্রশাসন ও হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তা পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

    সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার জানান, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। এ পূজাকে ঘিরে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’

  • সাতক্ষীরায় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন

    সাতক্ষীরায় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন

    এস.এম. হাবিবুল হাসান ও মো. মুশফিকুর রহমান (রিজভি): ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এবং উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে সারাদেশের সাথে একযোগে সাতক্ষীরায়ও ৪র্থ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

    সমগ্রদেশের সাথে মিল রেখে সাতক্ষীরার সকল উপজেলায় বৃহস্পতিবার উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করা হয়।  জেলায় উন্নয়ন মেলার প্রধান উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ।

    প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের চিত্র জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে হবে।’অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে যদি এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তবে ২০৪১ নয় ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।’

    অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে যদি এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তবে ২০৪১ নয় ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।’

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাগর থেকে মহাকাশ পর্যন্ত জয় করেছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অল্পদিনেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।’

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ প্রমুখ।

    অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটিলিয়নের ল্যফটেনেন্ট কর্ণেল মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তহমিনা খাতুন, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু প্রমুখ।

    মেলায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২ জন উপকারভোগীকে আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেন। এবারের মেলায় জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক স্টল অংশগ্রহণ করেছে। মেলা চলবে আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।