পরপর কয়েকটা ছবি ফ্লপ। ‘বাহুবলী টু’-র পর আর সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখেননি প্যান ইন্ডিয়া সুপারস্টার প্রভাস। কিন্তু তাতে হয়েছেটা কি? আগামী ছবির জন্য রাতারাতি নিজের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণি এই তারকা।
গত বছর প্রভাসের ‘আদিপুরুষ’ ছবিটিকে ঘিরে চর্চা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সম্প্রতি এই ছবিটিকে ঘিরে নতুন কোনো খবর উঠে আসেনি। তবে এই মুহূর্তে প্রভাসের পারিশ্রমিকের কারণে আবার ‘আদি পুরুষ’ আলোচনায় উঠে এসেছে। ওম রাউত পরিচালিত ‘আদি পুরুষ’ ছবির বাজেট বেশ বড়সড় তা আগেই খবরে উঠে এসেছিল। জানা গেছে, এই ছবির বাজেট ৪০০ কোটি রুপির থেকে বেশি। কিন্তু হঠাৎ ‘আদি পুরুষ’ ছবির বাজেট বেড়ে গেছে। এই ছবির মূল অভিনেতা প্রভাসের কারণেই তা হয়েছে বলে খবর। প্রভাস এই ছবির নির্মাতাদের কাছে আবার তাঁর পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।এখন তিনি এই ছবির জন্য ১২০ কোটি রুপি চাইছেন। প্রথমে এই তারকা ‘আদি পুরুষ’ ছবির জন্য ৯০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই প্রভাস তাঁর পারিশ্রমিক বাড়ানোর ফলে নির্মাতাদের মাথায় হাত। এই দক্ষিণি তারকার দাবি পূরণ করতে গেলে ছবির বাজেট এক লাফে ২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। এদিকে ‘আদি পুরুষ’ ছবির এক বড় অংশের শুটিং এখনো বাকি আছে। প্রভাসের এই দাবির প্রভাব ছবির সেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নির্মাতারা। তাই সব মিলিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। নির্মাতারা সবচেয়ে অবাক যে প্রভাসের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘রাধে শ্যাম’ বক্স অফিসে চূড়ান্ত ব্যর্থ।তারপরও প্রভাস তাঁর দর বাড়িয়েছেন। তবে ছবি ফ্লপ হওয়া সত্ত্বেও প্রভাসের তারকাখ্যাতি এক বিন্দুও কমেনি। আজও তাঁর অনুরাগীরা তাঁকে ঘিরে উন্মাদনায় ভাসেন। তবে এই প্যান ইন্ডিয়া সুপারস্টারের ভক্তরা এখন বেশ বিরক্ত। কারণ, ‘আদি পুরুষ’ ছবি সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য তাঁরা পাচ্ছেন না। তাই এখন নেট পাড়ায় প্রভাসের ভক্তরা ‘ওয়েকআপটিমআদিপুরুষ’ ট্রেন্ড শুরু করেছে। ২০২০ সালে প্রভাসের এই ছবির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর বেশ কিছুদিন এই ছবিকে ঘিরে কিছু খবর নেট দুনিয়ায় উঠে এসেছিল।আদি পুরুষ’ ছবির নির্মাতারা এই ছবিটিকে প্যান ইন্ডিয়া স্তরে আনতে চলেছে। ছবিটি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ভাষায় মুক্তি পাবে। ছবিতে রামের ভূমিকায় প্রভাস, সীতা রূপে কৃতি শ্যানন আর রাবণের চরিত্রে সাইফ আলী খানকে দেখা যাবে। ‘আদি পুরুষ’ ছবির প্রসঙ্গে প্রভাস প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এই ছবিটি ঘিরে আমি যথেষ্ট চাপে আছি। কারণ, আমি এমন একজনের ভূমিকায় আসতে চলেছি, তাঁকে সারা দেশ পূজা করে। তাই আমার দায়িত্ব অনেক বেশি। জানি না দর্শক আমাকে কীভাবে গ্রহণ করবেন।’
Category: ফিচার
-

রাতারাতি পারিশ্রমিক বাড়ালেন প্রভাস, বিপাকে নির্মাতারা
-

নতুন যে রোগ বাসা বেঁধেছে অভিনেত্রী শ্রুতির শরীরে
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: শরীর নিয়ে বেজায় কষ্ট পাচ্ছেন শ্রুতি হাসান। চিকিৎসক জানিয়েছেন শুধু ওষুধ নয়, শারীরিক সমস্যা কমাতে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা। তাই তিনি ওষুধের পাশাপাশি ইতোমধ্যে মন দিয়েছেন শরীর চর্চায়।
হঠাৎ করে এই শারীরিক সমস্যা ভাবাচ্ছে শ্রুতিকে। কাজ করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। নতুন ছবিতে কাজ করা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাকে। মন খারাপ শ্রুতির। কাজ করতে না পারলে অনুরাগীদের থেকে দূরে থাকতে হবে এই ভেবে চিন্তায় পড়েছেন কমল-কন্যা। তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্যই জিমেই এখন বেশি সময় কাটাচ্ছেন শ্রুতি। কী হয়েছে শ্রুতির? ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গেছে, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন শ্রুতি।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে শ্রুতি বলেছেন “হঠাৎ করেই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছি। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে। মন খারাপ, তবে ভেঙে পড়িনি। এখন নিয়ন্ত্রিত জীবন ও খাদ্যাভাসের মধ্যে রয়েছি। শরীর ঠিক না থাকলেও মনকে ভাল রাখার চেষ্টা করছি।”
সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজে শ্রুতি অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে। হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবির কাজ।
-

আম নিয়ে মাধুরীর আফসোস
বয়স ৫৫। তবে মাধুরী দীক্ষিতকে দেখে সেটা বোঝা কঠিনই বলা যায়। তাঁর পাঁড় ভক্তদের কাছে তিনি এখনো আটকে আছেন সেই নব্বই দশকেই। অনেক সাক্ষাৎকারেই নিজের বয়স ধরে রাখা নিয়ে কথা বলেছিলেন অভিনেত্রী। জানিয়েছেন, তাঁর তরুণ থাকার অন্যতম রহস্য তাজা সবজি ও নানা ধরনের ফল। অভিনেত্রীকে যাঁরা অন্তর্জালে অনুসরণ করেন, তাঁদের অবশ্য এ কথা অজানা নয়। কারণ, নিয়মিতই নিজের খাবারের ছবি পোস্ট করেন মাধুরী। বিশেষ করে ছুটির দিন রোববারে। তবে আজ রোববার না হলেও খাবারের ছবি পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী। সেটা আর কোনো ফল নয়, বাঙালির অন্যতম প্রিয় ফল আমের।বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক, টুইটারে আম নিয়ে দুটি ছবি পোস্ট করেছেন মাধুরী। যেখানে আমের মৌসুম শেষ হচ্ছে বলে আফসোস ঝরে পড়েছে তাঁর কণ্ঠে। মাধুরী লিখেছেন, ‘বিশ্বাসই করতে পারছি না আমের দিন শেষ হতে চলেছে। পরের মৌসুমের অপেক্ষা করতে হবে।’ পোস্টে মাধুরী হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন ‘ম্যাঙ্গো’, ‘আম’ ইত্যাদি।
অভিনেত্রী আম নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর অনেক ভক্তই পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন। অনেকে লিখেছেন, নিজেদের আমপ্রীতি নিয়ে। কেউ লিখেছেন নানা অসুস্থতা থাকায় আম খেতে না পারার আফসোসের কথা।কেবল খাবার নয়, মাধুরী নিয়মিতই সামাজিক মাধ্যমে নানা বিষয় নিয়ে পোস্ট দিয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও কাজ নিয়েও সরব অভিনেত্রী। ছোট পর্দায় রিয়েলিটি শোর বিচারকের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। চলতি বছর মাধুরী অভিনয় করেছেন নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘দ্য ফেম গেম’-এ। -

হোয়াইটওয়াশ হয়ে টেস্টে শততম হার বাংলাদেশের
হারটা একপ্রকার নিশ্চিতই হয়েছিল। সোমবার নুরুল হাসান সোহানের দারুণ ব্যাটিংয়ে ইনিংস হার এড়িয়ে ১২ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ রানের। এই লক্ষ্য পেরোতে মাত্র ১৭ বল খেলে গোটা ১০ উইকেটে জিতেছে উইন্ডিজ।এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দলকে হোয়াটওয়াশের স্বাদ দিয়ে সাদা পোশাকে টাইগারদের বিপক্ষে আধিপত্য ধরে রাখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ নিয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দলের বিপক্ষে শেষ ৪ দেখায় টানা ৪ পরাজয় বাংলাদেশের, সব মিলিয়ে ২০ টেস্টে এটি ১৪তম পরাজয়। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২২ বছরে ১৩৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে সাদা পোশাকে হারের সেঞ্চুরি পূর্ণ করল তারা। যেখানে ১০০ হারের বিপরীতে টাইগারদের জয় ১৬টি ও ড্র আছে ১৮টি।
ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে এ হার টেস্টে বাংলাদেশ দলের শততম। মাত্র ১৩৪ ম্যাচেই পরাজের সেঞ্চুরির স্বাদ পেল বাংলাদেশ দল।
সাকিব বাহিনী অ্যান্টিগায় তিনদিনেই পরাজিত হয়েছিল। সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচেও একই চিত্রনাট্য। ব্যাটারদের ভরাডুবিতে তিন দিনেই আবারো হারের শঙ্কা চেপেছিল। যদিও বৃষ্টি ভাগ্যে শেষমেশ তা হয়নি। খেলা গড়ায় চতুর্থ দিনে।
বৃষ্টির কারণে চতুর্থ দিনের দুটি সেশন মাঠেই গড়ায়নি। তৃতীয় সেশনে স্থানীয় সময় বিকেলে খেলা শুরু হতেই আবারো সেই বিপর্যয়। আগের দিনে বাকি থাকা চার উইকেট টিকল মাত্র ৫৪ বল। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ রানেই গুঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস।
যদিও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে ভর করে কোনো রকমে ইনিংস হারের লজ্জা এড়ায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা উইকেটকিপার এ ব্যাটার ৫০ বলে ৬০ রানের ক্যামিওতে দলকে লিড এনে দেন। তবে যোগ্য সঙ্গ না পাওয়ায় মাত্র ১২ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
সহজ লক্ষ্য পেরোতে ক্যারিবীয়দের খরচ করতে হয়েছে কেবল ১৭ বল। কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল।
-

এবার ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের জার্সিও নিলামে
রেকর্ডটার এখনো দুই মাসও হয়নি। ক্রীড়াঙ্গনের স্মারক বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ৯০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে পরা সেই বিখ্যাত জার্সি। যে জার্সি গায়ে চাপিয়ে সর্বকালের সেরা গোল এবং সর্বকালের সবচেয়ে বিতর্কিত গোল—দুটিই করেছেন ম্যারাডোনা।গত ৪ মে বিক্রি হওয়া সে জার্সির পর ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার আরেকটি জার্সি নিলামে উঠেছে |এ জার্সির মাহাত্ম্য আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে আরও বেশি। জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে এই জার্সি পরেই মাঠে নেমেছিলেন ম্যারাডোনা। হোর্হে বুরুচাগাকে দিয়ে গোল করিয়ে বিশ্বকাপ মাথার ওপর তুলে ধরা—সবই এই জার্সিতে। সে জার্সিই কাল মঙ্গলবার নিলামে উঠছে।
নিলাম প্রতিষ্ঠান জুলিয়েন বিক্রির জন্য তুলেছে এই জার্সি। এই প্রতিষ্ঠানের দাবি, প্রয়াত সাংবাদিক হোসে মারিয়া মুনিয়েজের কাছ থেকে জার্সিটা পেয়েছে তারা। নিলামে ম্যারাডোনার জার্সির পাশে লেখা বিবরণে বলা হয়েছে, ম্যারাডোনা এই জার্সি কালো একটা মার্কার দিয়ে সাক্ষর করেছেন এবং লিখেছেন, ‘হোসে মারিয়ার জন্য এটা। আমার ভালোবাসা নিও।’
এই জার্সি যে ১৯৮৬ সালের ২৯ জুনের সেই বিখ্যাত দিনের—সেটার প্রমাণ শুধু ম্যারাডোনার স্বাক্ষরই নয়। সেদিন মেক্সিকোর আজতেকা স্টেডিয়ামের কাঁদায় পড়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। জার্সির বুকের দিকটায় সে মাটির দাগও আছে। নিলামে ফাইনালের জার্সি ছাড়া ম্যারাডোনার আরও অন্তত ১৫টি জার্সি তোলা হয়েছে। তাতে আর্জেন্টিনা দলের জার্সি আছে, আছে বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলির জার্সি।আর্জেন্টাইন সময় কাল বেলা দুইটায় নিলাম শুরু হবে। অনলাইনে অংশ নেওয়া যাবে এই নিলামে।
-

আজ পঁচিশে বৈশাখ: রবীন্দ্র জয়ন্তী
ন্যাশনাল ডেস্ক: আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের এই প্রাণপুরুষ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।শুধু কবি পরিচয়েই নন, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই অঞ্চলের অন্যতম প্রভাববিস্তারী ব্যক্তিত্ব। তার রচিত দুটি গান ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অঞ্চল, তথা ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ নির্মাণেও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে রবীন্দ্রনাথের।
সংগীত, কবিতাসহ বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথের সমান বিচরণ। সাহিত্যের সীমা পেরিয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজচিন্তা, ধর্মসংস্কারেও রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় ছিলেন সমানতালে। তার চিত্রকলা আরও বিস্ময় জাগায় শিল্পপিয়াসী মানুষের মনে।
সাহিত্যকর্মের বাইরে তার অন্যতম কীর্তি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা। প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের আদলে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ শিক্ষায়তন।
অসামান্য সাহিত্যকর্মের নিদর্শন হিসেবে গীতাঞ্জলির ইংরেজি সংস্করণের জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পান। যা ছিল প্রথম কোনো এশীয়র নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি।
দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কবির জন্মদিন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো আয়োজন হচ্ছে না। তবে সরকারি ও বেসরকারি বেতার-টেলিভিশনে কবি স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। -

তুয়ারডাঙ্গা গ্রামে সুপেয় পানির সংকট
রুবেল হোসেন: আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের তুয়ারডাঙ্গা গ্রাম নদী বিল, খাল বেষ্টিত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। গ্রামের মানুষ দিনদিন লেখাপড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে এগিয়ে চলেছেন, কিন্তু সুপেয় পানির সমস্যা তাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
তুয়ারডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দীর্ঘদিনের। অনেক এলাকায় নিরাপদ পানির কোন সুব্যবস্থা নেই। এলাকার মানুষ পানির জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রাম বা বাজার থেকে পানি ক্রয় করে প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। যা অনেক ব্যয় বহুল ও কষ্টসাধ্য। এছাড়া গরমের সময় সকল পুকুর-ডোবা শুকিয়ে যাওয়ায় বেচে থাকা স্বল্প পানি দূষিত হয়ে পড়ে। তখন নিরাপদ পানির জন্য পোহাতে হয় নানা সমস্যা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করায় নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পানির অভাব পুরন করতে সক্ষম হয়না। ফলে প্রতিবছর অনেকেই নানারকম চর্মরোগ, ডায়রিয়া, আমাশয় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এলাকার জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দুস্থ ও গরীব জনসাধারণের পাশাপাশি সকল মানুষের আবশ্যিক অধিকার নিরাপদ পানি পান করার ব্যবস্থার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে। -

কলারোয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প
খোরদো (কলারোয়া) প্রতিনিধি: বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় ঐতিহ্য গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় গাছপালা। এক সময় এ দেশেরই বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশের তৈরি হতো হাজারো পণ্য। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের জিনিস। এখন সেই বাঁশ তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত। বাসা-বাড়ি কিংবা অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে সবকিছুই। এর ব্যতিক্রম নয় কলারোয়া উপজেলাও। তারপরও কলারোয়ায় উপজেলার গুটি কয়েক মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশের শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কলারোয়ায় বাঁশ শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাষ্টিক ও লোহার তৈরি পন্য। তাই বাঁশের তৈরি মনকারা সেই পন্যগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কদর না থাকায় গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরী বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আকর্ষনীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছে। শত অভাব অনটনের মাঝেও জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ নেই বললেই চলে। এছাড়া তৈরি পণ্যের ন্যায্য মজুরিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীর দাপটে চারুশিল্পের চাহিদা দিন-দিন কমে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের তৈরী চারুশিল্প। তাই কলারোয়ায় প্রসিদ্ধ বাঁশ শিল্পীরা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ের জন্য বাপদাদার রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশ শিল্প হয়তো আগামী দিনে এ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জন্য বাঁশ বাগান টিকিয়ে রাখা জরুরি।এখনো বাঁশ পণ্যের চাহিদা থাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলারোয়ায়, খোরদো, যুগিখালী আঞ্চলিক সড়কের পাশেই পাটুলী বাজার, শাকদাহ বাজার, কুশোডাঙ্গা বাজার, কাজির হাটসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজারে এর কদর রয়েছে ব্যাপক। বাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুঁড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখার র্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসে আছেন এ পেশার কারিগররা। বিশেষজ্ঞদের ধরনা, সরকারী কোন সহায়তা পেলে হয়তো ফিরে পেতে পারে গ্রামগঞ্জের এই চিরচেনা শিল্পটি। -

শুভ জন্মদিন, আগুনের ফুল-শিরীন আখতার
জিয়াউল হক মুক্তা
[বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের সকল সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আর শ্রমিক-নারী-কৃষক-কৃষিশ্রমিকের সুনির্দিষ্ট অধিকার আদায়ের আন্দোলনে-সংগ্রামে রাজপথের সাহসী নেতা শিরীন আখতারের জন্মদিন ১২ এপ্রিল। এ রচনায় তাঁর জীবনের ওপর সামান্য আলোকপাত করেছেন জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা।]
আজ আমাদের দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয় শিরীন আপার ৬৬তম জন্মদিন। ভীষণ এ মহামারীকালে ৬৭ বছর বয়সে পদার্পনের দিনেও তাঁর জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় কখনও থেমে যেতে নেই। সংগ্রাম চিরন্তন ও নিরন্তর, সংগ্রাম জীবনভর এই তাঁর জীবনের শিক্ষা অন্যদের জন্য।
খুব ছোটকালে ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সক্রিয় গোপন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’-এর একজন সক্রিয় অনুসারী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। সে সময় সমাজে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবারের একজন ‘মেয়ে’র জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ ছিল না। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করেন।
১৯৭১ সালের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি আজিমপুরের দুঃসাহসী নগর-গেরিলা গ্রুপ সবুজ-সজীব গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভুমিকা পালন করেন। সেসময় আজিমপুর কলোনির কিশোরীদের নিয়ে নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক দুঃসাহসী কাজের নেতৃত্ব দেন। ওই সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সে সময়ের কিশোরী লিনু হকের বই: মেয়ে বিচ্ছু।
স্বাধীনতার পর সে ধারাবাহিকতায় তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাসদ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে প্রকাশ্য কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধা দেয়া হতে থাকলে দলের সক্রিয় সকল নেতাদের মতো তাঁকেও আত্মগোপনে গিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ১৯৭৫ সালে নিষিদ্ধ হবার পর দল বিপ্লবী গণবাহিনী গড়ে তোলে। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল দলের অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থাটি সক্রিয় রাখা— বিশেষত উত্তরবঙ্গে। মনে রাখা দরকার সেটা টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না, ভালো সড়ক যোগাযোগেরও না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ দিন পর ১৯৭৫ সালের ৩০ আগস্ট খোন্দকার মুশতাকের শাসনামলে তিনি তার বেইজ-এলাকা রংপুর থেকে সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার হন ও অমানুষিক নিপীড়নের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয় এক সপ্তাহ ও ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার জেল-হত্যার পরপরই তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতের রায়ে তাকে দুবছরের সশ্রম কারাদ- ভোগ করতে হয়। ১৯৭৭ সালের ১৩ জুলাই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসুর ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদক পদে। ১৯৮২ সালে সামরিক জান্তা এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন ও স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৩-র ১৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ঐতিহাসিক মধ্য-ফেব্রুয়ারির সামরিক-স্বৈরশাসন বিরোধী জঙ্গি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুনতর গতি ও মাত্রা দেন।
১৯৮৭-র ১৪ জানুয়ারি সালে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেবার পর তিনি জাতীয় শ্রমিক জোটের মাধ্যমে শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন ও নেতৃত্ব দেন; সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও অব্যাহত রাখেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষদিকে তিনি তাঁর ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর বাবার বাসার নীচতলার ছোট একটি কক্ষে গড়ে তোলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘কর্মজীবী নারী’। তাঁর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের দুটো প্রধান নেতিবাচক প্রবণতাকে ছিন্নভিন্ন-তছনছ করে দেয়; ও পরে যুগপোযোগী করে তোলে।
প্রথমত, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন তখনও পর্যন্ত ছিল এলিট ও মধ্যবিত্তের অ্যাজেন্ডায় ফ্যাঁচফ্যাঁচে ‘পিতার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার চাই’ জাতীয় ইস্যুতে পরিপূর্ণ। তিনি সামনে টেনে আনলেন সমাজ বিকাশের এ পর্যায়ে সর্বহারা নারীর ইস্যু যে নারীর পিতার সম্পত্তিই নেই কিংবা যে নারী নিজেই সর্বহারা, শ্রম ছাড়া যার বিকোবার কিছু নেই— তাদের ইস্যু। বিকাশমান ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের নারীর ইস্যুর পাশাপাশি তিনি সামনে টেনে আনলেন সার্ভিস সেক্টরের নারীর ইস্যু; শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী নারীর সমমজুরি ও সমঅধিকারের ইস্যু। পরিবারে-কর্মক্ষেত্রে-সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের ইস্যুটিতেও তিনি ব্যাপকভাবে আলোকপাত করেন। তাঁর এসব বহুমাত্রিক উদ্যোগ পর্যায়ক্রমে সকল নারী সংগঠনকে বাধ্য করে তাদের নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করতে, নয়তো বিলুপ্ত হতে।
দ্বিতীয়ত, ডান-বাম নির্বিশেষ বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক নেতৃত্ব নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারগুলোর প্রতি চরম নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন; অপ্রকাশ্যে হয়তো এখনও অনেকেই তাই করেন। নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারের কথা [সমকাজে সমমজুরি ও সমঅধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশুযতœকেন্দ্র ইত্যাদি] সামনে আনলেই এ নেতৃত্বের সবাই-সমস্বরে চিৎকার করে উঠতেন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে যে শোষিত শ্রমিক তো শ্রমিকই তার আবার নারী-পুরুষ কী? হিমালয়সম এসব নেতৃত্বকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন মোটামুটি একা। স্থানীয়-জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিসরে তিনি এসব নিয়ে কাজ করেছেন নিরলস। এবং এরই মধ্যে তিনি এগুলোর বেশির ভাগেরই আইনগত স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। সকল শ্রমিক সংগঠনে নারী সেল গঠনের তাঁর যে প্রস্তাবনা, তাও অর্জিত হয়েছে।
খুব সংক্ষেপে বললে তিনি নারী আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন শ্রমিকের অ্যাজোন্ডায়, আর শ্রমিক আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন নারীর অ্যাজেন্ডায়। এটা বললে বাড়াবাড়ি হবে না মোটেই যে এদেশে এ রকম পারস্পরিক-মাত্রায় আর কেউ অবদান রাখতে পারেননি। হ্যাঁ, পরে অন্যরাও কেউ কেউ এসব করেছেন, কিন্তু শিরীন আখতারই হচ্ছেন পাইওনিয়ার, ভ্যানগার্ড।
শ্রমিক ও নারী আন্দোলনে তিনি আরও অনেক ভূমিকাই রেখেছেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর চাপিয়ে দেয়া কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির বিশিল্পায়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। নতুন শ্রম আইন অর্জন করেছেন। পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কাজ করেছেন। হাজার হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আইন সচেতনতা, সংগঠন ও নেতৃত্ব বিষয়ে। দেশের বৃহত্তম শ্রমখাত কৃষি শ্রমিকদের আইনগত স্বীকৃতি অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দিনাজপুরে ইয়াসমীন ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে রাজধানীতে সামগ্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে নারী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করায় ভূমিকা রেখেছেন; বিচার নিশ্চিত করেছেনৃ.. ইত্যাদি।
কর্মজীবী নারীর সভাপতি থাকার সময় তিনি জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি হন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাংগঠনিক কাঠামোয় যোগদান করেন। কিছুটা দ্বিধা ও লজ্জা লাগলেও একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে অপরাপর সকল ডান-বাম দলের মতোই জাসদের অভ্যন্তরেও পিতৃতান্ত্রিক-পুরুষতান্ত্রিক-পুঁজিতান্ত্রিক অধঃস্তনতার সংস্কৃতি কিছুটা বিরাজমান। সেই অধঃস্তনতার সংস্কৃতিকে মোকাবিলা করেই তিনি বিপুল ভোটে জাসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জাসদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৪ দলের যুদ্ধাপরাধ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধ নবতর আন্দোলনের সূচনা করছেন। সংগঠনের অভ্যন্তরে আদর্শবাদের চর্চায় গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বয়সে আমার আম্মার চেয়েও বড়; কিন্তু তাঁর তারুণ্য আজকের দিনের বয়সী তরুণদের চেয়ে অনেক অনেক উচ্চতর। এখনও তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেন। রাজনীতির জন্য শ্রম-সময়-মেধা দিতে গিয়ে তিনি তাঁর একমাত্র ছেলেকে ব্রেস্টফিড করাতে পারেননি— ঘটনাচক্রে তাঁর ছেলের এ অভিমানের কথা আমরা জেনেছি তাঁর মাতৃহৃদয়ে এ বিষয়ে চিনচিনে একটি ব্যথাও হয়তো রয়েছে। তবে তাঁর এ ঘটনাটির একটি মতবাদিক দিক রয়েছে পিতৃতন্ত্র-পুরুষতন্ত্র-পুঁজিতন্ত্র ‘মা’ ও ‘মাতৃত্ব’ একাকার করে ফেলে নারীকে গৃহবন্দী করার ও অধঃস্তন করার যুক্তি হিসেবে। মা শিশুর জন্ম দেন, এর জন্য জরায়ুর প্রয়োজন হয়; কিন্তু লালনপালনের জন্য জরায়ুর প্রয়োজন হয় না, তা যে কেউ করতে পারে; মাতৃত্বের সীমাবদ্ধতা ‘মা’র গুরুত্ব বা মহত্বকে খাটো করে না; সকল মা’ই মহিয়সী।
তাঁর ছেলে এখন একজন চিকিৎসক। তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম, ষাটের দশক থেকে মার্শাল মনি নামে পরিচিত। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস সংগঠিত ও সক্রিয় থাকলেও একে আদর্শবাদের ভিত্তিতে এক নতুন গুণগত মানে উত্তীর্ণ করতে প্রধান ভূমিকা রাখেন তিনি। সিরাজুল আলম খান সম্প্রতি বলেছেন যে তাঁদের তিনজনের সাথে মার্শাল মনি হচ্ছেন একজন যিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশীদার ছিলেন। মার্শাল মনিও একজন নিভৃতচারী সেজন্য বর্তমান সময়ের লোকজন তাঁকে খুব একটা চেনেন না। জনশ্রুতি আছে বঙ্গবন্ধু একবার সিরাজুল আলম খানকে বলেছিলেন, কীরে, তোর মার্শাল মনিকে তো আমাকে দেখালি না। আমরা সঠিক জানিনা তাঁর সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল কিনা। সে যাক, শিরীন আখতারের কথা বলতে গিয়েই তাঁর পরিবারের প্রসঙ্গটিও এসে গেল আশা করি তারা এতে কিছু মনে করবেন না।
একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৯৮ বা ১৯৯৯ সাল। কর্মজীবী নারীতে আমি তখন একজন কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করি। একটি প্রকল্প ছাড় করানোর জন্য মৎসভবনে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালকের সাথে দেখা করতে যাই আমি ও আরও একজন সহকর্মী। মহাপরিচালক সাহেব কর্মজীবী নারী সম্পর্কে এটাসেটা জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের সভাপতি কোন শিরীন আখতার? আমিও এটাসেটা বলে জবাব দেবার চেষ্টা করি, শিরীন আপার রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে গিয়ে; কিন্তু তিনিও নাছোড়বান্দা। আমার মুখ থেকে বের করে আনলেন যে এই শিরীন আখতার জাসদের শিরীন আখতার। তিনি তখন চিনলেন। আমি ভাবলাম মহাপরিচালক সাহেব মনে হয় ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন; তাই সাহস করে বললাম জাসদের শিরীন আখতারকে আপনি কীভাবে চেনেন? তিনি বললেন যে তিনি সে সময় রংপুর জেলখানার কর্মরত ছিলেন। তিনি বললেন, “আপনারা এ কালের তরুণরা কতোটা বুঝবেন জানি না; কিন্তু আগুনের মতো সুন্দরী একজন তরুণী গোপন রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে গিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ধরা পরে কারান্তরীণ আর সে কারার কর্মকর্তা আমি সে ঘটনা ভুলি কী করে?”
জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা শিরীন আপার জন্য। প্রথমে রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদার শেষ কথা দিয়ে শেষ করার কথা মনে এলেও পরে তা অপূর্ণাঙ্গ মনে হলো; তাঁর জন্য আমাদের নিবেদন আমার অসম্ভব প্রিয় গানগুলোর একটি নিনা সিমোনের মিসিসিপি গডড্যাম যা তাঁর ব্যক্তিক-আদর্শিক-রাজনৈতিক অবস্থান ও সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে।লেখক: প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
-

কী পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সেই ইতিহাস বিখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন?
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দিয়েছিলেন। ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক-মেশিনগানের হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ওই দিন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন বাকি ২টি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জেড এ ভুট্টো এবং পাকিস্তান সামরিক চক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
১ মার্চ : এই দিনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের।সারা দেশের মানুষ তাই রেডিও আর টেলিভিশন খুলে বসে থাকলো তার কথা শোনার জন্য।কিন্তু দেশবাসীকে হতাশ করে,ইয়াহিয়ার যায়গায় অন্য আরেকজন এসে ঘোষণা করলো,”পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করেছেন।তিনি পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছেন।”
তখন তীব্র ক্ষোভে ফেটে পরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি বাঙালি জনগণের মুক্তির ডাক দিলেন।সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন এটি কোন গণতন্ত্র নয় বরং এটি পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।আমরা বাঙালিরা ঘৃণাভরে এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলাম এবং ২ মার্চ ঢাকা ও ৩ মার্চ সারাদেশব্যাপী বাংলার সাধারণ মানুষ হরতাল পালন করবে।পরবর্তী দিক নির্দেশনার জন্য আপনারা(বাঙালিরা) ৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করুণ। এরপর বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য স্বাধীনতার স্লোগান দিল, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।” শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন ।গঠিত হলো স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
২ মার্চ : ঢাকা এদিন ছিলো হরতালের নগরী, মিছিলের নগরী এবং কারফিউর নগরী। দিনের হাইলাইট ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল থেকেই মিছিল ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়মুখী। স্মরণকালে এমন ছাত্র সমাবেশ দেখেনি কেউ! নিউমার্কেটের মোড় থেকে নীলক্ষেতের সড়ক দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত যার বিস্তার। এদিন বটতলায় ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, ওড়ায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। সমাবেশ শেষে বিশাল এক মিছিল রড ও লাঠি উচিয়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিন করে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এদিন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান কথাটা একরকম হাওয়া হয়ে যায় বাঙালীদের মুখ থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধ্যায় তার প্রেস কনফারেন্সে বারবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করেন।
সারা শহরে সরকারের পেটোয়া বাহিনী হরতাল ঠেকাতে মাঠে নামে। পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের বেশীরভাগই তেজগাঁও এলাকার। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র্ আজিজ মোর্শেদ ও মামুনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর আজিজ মারা যান।
সামরিক আইন প্রশাসকের তরফে এদিন কারফিউ জারি করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ মুজিবুর রহমান যাতে নিরস্ত্রদের উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয়। পরদিন ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে অর্ধদিবস (ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা) হরতালের ডাক দেন মুজিব।পরদিন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পল্টনে এক সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি।
৩ মার্চ : নিহতদের স্মরণে পালন করা হয় শোক দিবস । পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যে কোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।
৪ মার্চ : গন বিক্ষোভে টালমাটাল ছিল ৪ মার্চ ১৯৭১। দিন যতই যাচ্ছিল এক দফার দাবী অথ্যাৎ স্বাধীনতার আকাঙ্খার তীব্রতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল । এ দিন সামরিক জান্তার সান্ধ্যআইন ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ । খুলনায় বাঙালী অবাঙালীদের মাঝে সংঘর্ষ হয় এই দিন। ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় হরতালে দমন পীড়নের নিন্দা জানানো হয় । লাগাতার হরতালের এই দিনে ঢাকা সহ সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে । পূর্ব পাকিস্হান মহিলা পরিষদের নেত্রী কবি সুফিয়া কামাল ও মালেকা বেগম যৌথ বিবৃতিতে ৬ ই মার্চ বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহব্বান জানান । এই দিনে ঘটে এক গুরুত্বপূর্ন ঘটনা । এই দিনে রেডিও পাকিস্হান ঢাকা’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’। সে দিনের সেই ঘটনা চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে ।যা আমাদের মুক্তির পথকে এগিয়ে নেয় ।
৬ মার্চ : ৭ মার্চের একদিন আগে অর্থাৎ ৬ মার্চ জে. ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। ৬ মার্চ এও ঘোষণা করা হলো যে, ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সদর দপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে এই মেসেজ দেয়া হয় যে, ৭ মার্চ যেন কোনোভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণা না করা হয়। ৭ মার্চ জনসভাকে কেন্দ্র করে কামান বসানো হয়। এমনকি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়। মেজর সিদ্দিক সালিক তার গ্রন্থে লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ৭ মার্চের জনসভার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হলে তা শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিশ্বাসঘাতকদের (বাঙালি) হত্যার জন্য ট্যাংক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হবে। প্রয়োজন হলে ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে। শাসন করার জন্য কেউ থাকবে না কিংবা শাসিত হওয়ার জন্যও কিছু থাকবে না।”
৭ মার্চ : এমন এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চ রেসকোর্সে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত দিয়ে ভাষণের শেষাংশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। -

সে কোন সাধনা
দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘বল রে জবা বল, কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল’, কিংবা ‘আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন’— জনপ্রিয় এই শ্যামাসঙ্গীত লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। লিখেছেন আগমনি, দুর্গাস্তুতি, পদাবলি, কীর্তনও। গীতিকার, সুরকারের ধর্ম যে ভিন্ন, তা কখনও কেউ খেয়ালও করেনি— এটাই চিরকাল বাঙালির ধর্মীয় সঙ্গীত-জগতের ঐতিহ্য। ‘মা গো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়’ নজরুলের আর একটি বিখ্যাত গান। গানগুলির কথা শুনলেই বোঝা যায়, হিন্দু শাস্ত্র ও ধর্মীয় সাহিত্য সম্পর্কে কত গভীর জ্ঞান ও অনুভব ছিল তাঁর।
আর এক মুসলিম গায়ক শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিলেন। মহম্মদ কাসেম। তিনি অবশ্য শ্যামাসঙ্গীত গাইতেন, কে মল্লিক ছদ্মনামে। অনায়াসে, অন্তরের মাধুর্য ঢেলে তিনি গেয়েছিলেন, ‘দুঃখহরা তারা নাম তোমার, তাই ডাকি মা বারবার’, কিংবা, ‘আনন্দময়ী শ্যামা মা’কে আমি বড় ভালবাসি, হৃদয়ে উদয়া হলে হরজায়া কাজ কী আর আমার গয়া-বারাণসী।’ নজরুলের চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন কাসেম, জন্ম ১৮৮৮-তে। বর্ধমানের আদি বাসিন্দা, কলকাতায় থাকতেন ভাড়াবাড়িতে। বাড়ির মালিক মল্লিকদের পদবি নিয়েছিলেন। তাঁর গাওয়া শ্যামাসঙ্গীত, আগমনি গান আজও সাক্ষ্য বহন করে যে, সঙ্গীত-জগতে ধর্মের ভেদাভেদ অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। ধ্রুপদী সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও ‘আল্লা জানে, মৌলা জানে’ বন্দিশ যেমন হিন্দু ছাত্রেরা শিখেছে ও গেয়েছে, তেমনই আমির খান গেয়েছেন মালকোশের বিলম্বিত বন্দিশ ‘পাগলাগন দে মহারাজ কুঁয়ার’। বড়ে গুলাম আলি খান গেয়েছেন ভজন, ‘হরি ওম তৎসৎ’।
মানবজমিন
সনাতন পাল: কালীপুজো এলেই যাঁর নাম মনে আসে, তিনি শাক্ত কবি তথা সাধক রামপ্রসাদ সেন। তাঁর ভক্তিগীতিই ‘রামপ্রসাদী’ নামে পরিচিত। জন্ম সম্ভবত ১৭১৭-১৭২৩ সালের মধ্যে কোনও এক সময়ে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রামপ্রসাদ সংস্কৃত, বাংলা, ফারসি এবং হিন্দি— এই চারটি ভাষা খুব ভাল করে রপ্ত করেছিলেন। অতঃপর তাঁর সাহিত্য এবং সঙ্গীতচর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়।
বাবার মৃত্যুর পরে রামপ্রসাদ কেরানির কাজ নেন। হিসাবের খাতায় ভক্তিগীতি লিখতেন। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, রামপ্রসাদকে বিনা কর-এ ১০০ একর জমিও দান করেছিলেন। রামপ্রসাদ তঁার বিখ্যাত কাব্য ‘বিদ্যাসুন্দর’ কৃষ্ণচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধারা বাউল ও বৈষ্ণব কীর্তনের সুরের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগরাগিণীর সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন সুরের সৃষ্টি করেন, যা ‘রামপ্রসাদী’ সুর নামে প্রচলিত।
এই সুরে পরবর্তী তিন শতাব্দী গান রচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামও রামপ্রসাদী সুরে গীতিরচনা করেছেন।
তাঁর গানে কেবল ভাবাবেগই ছিল না, ফুটে উঠেছিল ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ছোঁয়া, মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির অবক্ষয়ের কথা। রামপ্রসাদ সেনের বহু জনপ্রিয় গানের মধ্যে একটি হল, ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না, এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা।’ আজকের দিনে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রেক্ষিতেও এমন ধারণা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
নাথপন্থী
ভাস্কর দেবনাথ: কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিন্দু পূজারি ব্রাহ্মণদের জন্য এক হাজার টাকা ভাতা ঘোষণা করেছে। এই বাংলা তথা ভারতে এমনও সম্প্রদায় রয়েছে, যা সুদীর্ঘ কাল ধরে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। নাথপন্থী সম্প্রদায়ের কত মঠ-মন্দির যে বেহাত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের ফলস্বরূপ বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম সমাজে প্রতিষ্ঠা পেল। সেই সময়ে বঙ্গদেশে পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ধর্মাচরণে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেননি। বরং অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন।
কথিত আছে, কালীঘাটের মা কালীর প্রতিষ্ঠা করেন নাথযোগী চৌরঙ্গীনাথ। হুগলির মহানাদে আছে জটেশ্বরনাথ শিবমন্দির, যেখানে আজও নাথপন্থী সেবায়েতগণ পরম্পরা মেনে পূজা করে আসছেন। নাথ সাধকেরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। আজও বঙ্গের অনেক স্থানে নাথ-যোগী দাদা গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ ‘মাছলন্দি পির’ নামে পূজিত হন। নিরাকার নিরঞ্জন এবং ধর্ম ঠাকুরের মিশ্রণের ফল হিসেবে উঠে এসেছিল লোকায়ত গ্রাম্য দেবতা ‘পঞ্চানন্দ’, যিনি পরবর্তীতে মহাদেবের সঙ্গে মিলে গিয়েছেন। মধ্যযুগের সমন্বয়ের এই আবহে ধর্মঠাকুর বা পঞ্চানন্দ দেবতার পূজারি হিসেবে নাথ-যোগী সেবায়েতদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সমাজের সর্বস্তরে। পূজার মন্ত্রেও ব্রাহ্মণ্যবাদী ছোঁয়া ছিল নামমাত্র। বরং নির্দ্বিধায় যবন শব্দ স্থান করে নিয়েছিল পূজামন্ত্রে।
আজকাল দলিত সাহিত্য চর্চা এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। চর্যাপদের যুগ থেকেই এই নাথপন্থী সম্প্রদায়ের সাহিত্য সাধনার খবর মেলে। মীননাথকে ‘বাংলা ভাষার প্রথম কবি’ বলেছেন বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক ড. শহিদুল্লাহ। কল্যাণী মল্লিকের সুবৃহৎ গবেষণাধর্মী নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস, দর্শন ও সাধনপ্রণালী বইতে নাথ সম্প্রদায়ের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। নাথ ধর্মের বিকাশ বঙ্গদেশ থেকেই। আজ এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
মানুষই বড়
পৃথা কুন্ডু: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে অজয় করের পরিচালনায় সপ্তপদী মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালের অক্টোবরে। এ বছর ৬০ বছরে পা দিল ছবিটি। শুধু একটি জনপ্রিয় কাহিনিচিত্র হিসেবেই নয়, এই ছবি স্মরণীয় বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী বার্তার জন্য। সাহেব-মেমরা বাঙালি আবাসিক ছাত্রদের পড়াশোনার অসুবিধেকে অগ্রাহ্য করে তারস্বরে ‘অন দ্য মেরি গো রাউন্ড’ গাইতে থাকলে, খোল-করতাল সহযোগে ‘এ বার কালী তোমায় খাব’ গেয়ে জবাব দিতে ভোলে না কৃষ্ণেন্দু আর তার বন্ধুরা। হাসি-তামাশার আঙ্গিকে উপস্থাপিত হলেও, এই সব দৃশ্যে প্রতিবাদের স্বর চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। কলেজের অনুষ্ঠানে সেই ‘ব্ল্যাকি’ কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গেই ওথেলো নাটকে অভিনয় করতে হয় রিনাকে। মনে রাখতে হবে, ওথেলো নাটকের বার্তা কিন্তু বর্ণবিদ্বেষকে ঘিরেই।
ছবিতে শেষ পর্যন্ত জন্মপরিচয়, ধর্ম নয়, মানুষই বড় হয়ে ওঠে। শেষে গির্জা-সঙ্গীতের সঙ্গে দূরে মিলিয়ে যায় চরিত্র দু’টি, কিন্তু এখানে গির্জা থেকে ভেসে আসা সুর কোনও বিশেষ ধর্মের প্রতীক নয়, বরং তা অনেক বেশি করে হয়ে ওঠে মনুষ্যত্বের, ভালবাসার চিরন্তন সঙ্গীত। আবহে অসামান্য কাজ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কৃষ্ণেন্দু যখন ধর্মান্তরিত হয় আর রিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে, আবহে মন্দিরের ঘণ্টা মিশে যায় গির্জার ঘণ্টায়। এই সুরেই যেন বাণীরূপ পায় ছবির মূল কথাটি— “মানুষের মধ্যে যে জীবন, সে যেখান থেকেই সৃষ্টি হোক, সেখানে ব্রাহ্মণ নেই, চণ্ডাল নেই, হিদেন নেই। সবার মধ্যে, সমান মহিমায় ভগবান আত্মপ্রকাশের জন্য ব্যাকুল।” আজকের দিনেও সমাজ, ধর্ম, জন্ম, কর্ম— সমস্ত দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে এই মনুষ্যত্বের, সম্প্রীতির বোধ একই রকম প্রাসঙ্গিক।
এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বিএফজেএ পুরস্কার পেয়েছিলেন উত্তমকুমার, আর সুচিত্রা সেনও পেয়েছিলেন মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। সর্বোপরি, জাতীয় স্তরে এই ছবিটি পেয়েছিল বাংলা ভাষায় ‘দ্বিতীয় সেরা’ কাহিনিচিত্রের মর্যাদা।
-

সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে আফ্রিকা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
জয়তী ঘোষ
ভাষান্তর: রুহিনা ফেরদৌস
( জয়তী ঘোষ: ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস অ্যাসোসিয়েটসের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি এবং ইনডিপেনডেন্ট কমিশন ফর দ্য রিফর্ম অব ইন্টারন্যাশনাল করপোরেট ট্যাক্সেশনের সদস্য)
কভিড মহমারী এবং চলমান জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি থেকে সহনশীলতার ছবক শেখাটা আমাদের উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে আফ্রিকায় খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সু-উদ্দেশ্যচালিত প্রচেষ্টাগুলো ক্ষুদ্র কৃষকদের আয় বৃদ্ধির বিপরীতে বৈশ্বিক কৃষি বাণিজ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থাকে আরো ভঙ্গুর করে তুলেছে।
লাখো মানুষ, যারা ক্ষুধার মাঝে নিমজ্জিত কিংবা ক্ষুধার হুমকিতে আছে, তাদের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ বা দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) এ বছর শান্তিতে নোবেল প্রদান করেছে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্ষুধার্ত মানুষদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর এজন্য দায়ী অকার্যকর বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা।
এমনকি কভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানার আগেও বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তার অভাবে ভুগছে, যার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বা ভয়াবহ অনাহারের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ। করোনা মহামারীর ফলে ২০২০ সালে নতুন করে অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ায় অবস্থার অবনতি ঘটেছে, যদিও এর আংশিক কারণ হচ্ছে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়া। তবে বৈষম্য বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের জীবিকা হারানোর কারণে প্রভাবের মাত্রাটা বেশি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতি আগে কিংবা এখনো প্রতিরোধযোগ্য। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দ্বিতীয় এ লক্ষ্যমাত্রা সত্যিকার অর্থেই অর্জনযোগ্য; কেননা বিশ্বে বর্তমানে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মৌলিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে সমর্থ। কিন্তু মহামারী শুরুর আগে থেকেই বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত। বেশির ভাগ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাই অস্থিতিশীল। খাদ্য ও আয়ের বণ্টন ব্যবস্থায় এতটাই বৈষম্য বিদ্যমান যে কোটি কোটি মানুষ স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যের চাহিদা পূরণে সমর্থ নয়। বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী যে সংস্থাগুলো রয়েছে, তারা উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার মধ্যে এমন একটি তির্যক রেখা টেনে রেখেছে যে ক্ষুদ্র কৃষক ও চূড়ান্ত ভোক্তারা তাতে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছেন।
খাদ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বৈষম্যগুলো খুব স্পষ্ট, এমনকি খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলগুলোয়ও প্রচুর অযৌক্তিকতা বিদ্যমান। আর তাই প্রায় ক্ষেত্রেই রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে কোনো এক অঞ্চলের কাঁচামাল অন্য দেশে বা বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে প্রক্রিয়াজাত হয়ে তা আবার উৎপাদিত অঞ্চল বা আশেপাশের এলাকাগুলোয় ফেরত আসছে।
বিশ্ব কেন এসডিজির দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জনের পথ থেকে সরে যাচ্ছে, তার একটি কারণ হচ্ছে নীতিনির্ধারকরা সমস্যাটিকে ভুলভাবে নির্ণয় করছেন। টেকসই খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ও সমবণ্টনের দিকে জোর না দিয়ে তারা কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও ব্যয় কমানোর মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাকে আরো বেশি ‘কার্যক্ষম’ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। এর ফলে ফলনের ওপর অতিমাত্রায় জোর দেয়া হচ্ছে। কৃষি-পরিবেশ, স্থানীয় পুষ্টি চাহিদা ও রাসায়নিকনির্ভর কৃষিতে বড় ধরনের প্রণোদনা প্রদানের মতো বিষয়গুলোর দিকে দেয়া হচ্ছে কম মনোযোগ।
এ প্রসঙ্গে আফ্রিকার সবুজ বিপ্লববিষয়ক জোট গ্রিন রেভল্যুশন ইন আফ্রিকার (এজিআরএ) উদাহরণ টানা যেতে পারে, ২০০৬ সালে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এটি শুরু হয়। এজিআরএ কর্মসূচির অধীনে একরপ্রতি ফলন বাড়াতে একচেটিয়াভাবে উচ্চফলনশীল বাণিজ্যিক বীজ, কৃত্রিম সার ও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারকে সমর্থন করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, এর সমর্থকদের ব্যাপক অর্থে অসচেতন বলেই মনে হয়। কেননা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এর আগে এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশে একই ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে মাঝারি গোছের ফলাফল পাওয়া গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা বড় বড় পরিবেশগত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
প্রাথমিকভাবে ২০২০ সাল নাগাদ আফ্রিকার দুই কোটি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০টি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল এজিআরএ। পরে ২০২০ সালের মধ্যে তিন কোটি কৃষক পরিবারের জন্য ফলন ও আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছিল। তবে সময়সীমার কাছাকাছি চলে আসায় এজিআরএ এখন তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে গিয়ে অধিক বিনয়ের সঙ্গে আয় বৃদ্ধি (পরিমাণ উল্লেখ না করে) এবং ২০২১ সালের মধ্যে আফ্রিকার ১১টি দেশের খামার আছে এমন তিন কোটি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। নিজেদের কাজ ঘিরে সমালোচনার সাম্প্রতিক এক জবাব দিতে গিয়ে আগের তুলনায় আরো বেশি সতর্ক হয়ে তারা দাবি করছে যে, তাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যক্ষভাবে ৯০ লাখ এবং অপ্রত্যক্ষভাবে ২ কোটি ১০ লাখ কৃষকের কাছে পৌঁছানো (যদিও কারণগুলো অস্পষ্ট)।
লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিচ্যুতি সত্ত্বেও এজিআরএ এখনো তাদের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেনি। সুতরাং কৃষকদের আয়ের পরিমাণ, ফলন বৃদ্ধি ও খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক নির্ভরযোগ্য অনুমানভিত্তিক তথ্যও তাদের কাছে নেই। তবে এজিআরএর তালিকাভুক্ত ১৩টি দেশের প্রধান শস্য উৎপাদন, ফলন এবং সংগ্রহবিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোয় স্বতন্ত্র গবেষকরা বিভ্রান্তিকর কিছু উপসংহারে পৌঁছেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে ক্ষুদ্র কৃষকদের আয় বৃদ্ধির সামান্য তথ্যই আছে। বিপরীতে দেখা গেছে এজিআরএ তালিকাভুক্ত দেশগুলোয় অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ (এজিআরএর পক্ষ থেকে বিশ্লেষণটিকে চরম ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হলেও পাল্টা কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা সরবরাহ করতে পারেনি)।
উৎপাদন সম্পর্কিত গবেষণা থেকে উঠে এসেছে দেশগুলোয় এজিআরএর কার্যক্রম শুরুর পর প্রথম ১২ বছর ধরে গড়ে প্রত্যেক বছরে প্রধানতম শস্যের উৎপাদন ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, অবশ্য তাদের কার্যক্রম শুরুর আগের ১২ বছর ধরেও উৎপাদন একই হারে বাড়ছিল। ১৩টি দেশের মধ্যে আটটি দেশে উৎপাদন কমেছে, তিনটি দেশে ফলন কমেছে। এমনকি যেসব দেশে প্রধান প্রধান ফসলের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণ বেড়েছিল—যেমন জাম্বিয়া, মূলত বপনক্ষেত্রের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ভুট্টার উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে—সেখানে ক্ষুদ্র উৎপাদকদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের পরিমাণ বেশি ছিল।
তদুপরি, প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে যে বিভিন্ন দেশে সবুজ বিপ্লব অনুশীলনের মাধ্যমে যে নেতিবাচক ফলাফল বা প্রভাব পড়েছে, এজিআরএ দেশগুলোয়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। জমিতে পুষ্টিকর ও ঋতুভিত্তিক স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী শস্য যেমন জোয়ার (ভুট্টাজাতীয় খাদ্যশস্য) চাষের বদলে উচ্চফলনশীল ভুট্টা চাষ করা হয়। ফলে কৃষকদের আরো ব্যয়বহুল বীজ কিনতে হয়েছে, যার খরচ মেটাতে প্রায়ই তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। একটি মাত্র ফসল উৎপাদন এবং অতিমাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার (যেমন পেট্রোলিয়ামজাতীয় সার বা কৃত্রিম সার) মাটির ক্ষারত্ব বাড়িয়ে উর্বরা শক্তি হ্রাস এবং ভবিষ্যতের চাষাবাদকে প্রভাবিত করাসহ অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে। মনোকালচার বা একটি মাত্র শস্য উৎপাদন কাসাভা (গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ) কিংবা মিষ্টি আলুর মতো মূল ফসলের উৎপাদন কমিয়ে খাদ্যতালিকাকে অপুষ্টিকর ও বৈচিত্র্যহীন করে তুলেছে।
সুত্র : বণিক বার্তা
-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী।।।
১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছিলো, একটা ছেলে যদি একজন মেয়ের সাথে কথা বলতে চায়, তবে তাকে প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রক্টর অনুমতি দিলেই সে কথা বলতে পারবে। এছাড়া নয়। এমনকি তার ক্লাসের কোন মেয়ের সাথেও না।
ডিসেম্বর ১৯২৭, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছর পর। একদিন কোলকাতা থেকে একজন যুবক এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখবেন। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে সে ঘুরতে বের হলো। তখন কার্জন হল ছিলো বিজ্ঞান ভবন।
ঘুরতে ঘুরতে যখন কার্জন হলের সামনে এসে পড়লো তারা, সে যুবক দেখলো দূরে একটা থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর সুতির শাড়ি পরা এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে? তখন তার বন্ধুরা বলল, এ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। তখন সেই যুবক বলে, সত্যি? আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলব। তখন সে যুবক মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য একটু এগিয়ে গেলে তার বন্ধুরা তাকে বাঁধা দেয়। বলে, না তুমি যেওনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলার অনুমতি নেই। তুমি যদি ওর সাথে অনুমতি ছাড়া কথা বলো তবে তোমার শাস্তি হবে।
সেই যুবক বলল, “আমি মানি নাকো কোন বাঁধা, মানি নাকো কোন আইন।”সেই যুবক হেঁটে হেঁটে গিয়ে সেই মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। তারপর তাকে বলল, আমি শুনেছি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। কি নাম আপনার? মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল, ফজিলাতুন্নেছা। জিজ্ঞাসা করলো, কোন সাবজেক্টে পড়েন? বলল, গণিতে। গ্রামের বাড়ি কোথায়? #টাঙ্গাইলের_করটিয়া। ঢাকায় থাকছেন কোথায়? সিদ্দিকবাজার। এবার যুবক বললেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী, আপনার সাথে কথা বলে আমি খুব আপ্লুত হয়েছি।
আজই সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। মেয়েটি চলে গেলো। এই সব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর স্যার দেখছিলেন। তার ঠিক তিনদিন পর। ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৭, কলা ভবন আর বিজ্ঞান ভবনের নোটিশ বোর্ডে হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হলো যুবকের নামে। তার নাম লেখা হলো, তার বাবার নাম লেখা হলো এবং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলো, এই যুবকের আজীবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
তারপরে এই যুবক আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। সেইদিনের সেই যুবক, বৃদ্ধ বয়সে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেন। যে যুবকটা আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করেননি, তার মৃত্যুর পরে তার কবর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেই যুবকের নাম, #বিদ্রোহী_কবি_কাজী_নজরুল_ইসলাম।
পুনশ্চ: মেয়েটি ফজিলাতুন্নেসা জোহা,
কবি নজরুল ওনাকে নিয়ে ‘বর্ষা বিদায়’ কবিতা লেখেন।টাঙ্গাইলের সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে জন্ম নেয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোক উদ্ভাসিত কারি, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ।
বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯৪৮-৫৭)। তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্রী যিনি উচ্চ শিক্ষার্থে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান।
বেগম ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায় কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে….
“ বেগম ফজিলতুন্নেসা অসামান্য সুন্দরীও ছিলেন না অথবা বীনানিন্দিত মঞ্জুভাষিণীও ছিলেন না। ছিলেন অঙ্কের এম এ এবং একজন উচুঁদরের বাক্পটু মেয়ে ”জন্ম বেগম ফজিলতুন্নেসার জন্ম ১৮৯৯ সালে টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে। পিতার নাম ওয়াজেদ আলী খাঁ, মাতা হালিমা খাতুন।। ওয়াজেদ আলী খাঁ মাইনর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।শিক্ষাঃ-
মাত্র ৬ বছর বয়সে ওয়াজেদ আলী খাঁ ফজিলতুন্নেসাকে করটিয়ার প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিনি ১৯২১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক ও ১৯২৩ সালে প্রথম বিভাগে ইডেন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ফজিলাতুন্নেছা ১৯২৫ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে গণিত শাস্ত্রে এমএ-তে ফার্স্ট ক্লাশ
ফার্স্ট (গোল্ড মেডালিস্ট) হয়েছিলেন।অতঃপর তিনি ১৯২৮ সালে বিলেতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য গমন করেন।
নিখিল বঙ্গে তিনিই প্রথম মুসলিম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। উপমহাদেশে মুসলিম মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলাত থেকে ডিগ্রি এনেছিলেন। তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে করটিয়ার #জমিদার_মরহুম_ওয়াজেদ_আলী_খান_পন্নী (চাঁদ মিয়া) বিশেষ উৎসাহ ও অর্থ সাহায্য করেন।বিলেতে তাঁর অবস্থান কালীন সময়ে ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে প্রথম ডিপিআই।
পরিবারঃ-
————-
বিদেশে পড়ার সময় ফজিলতুন্নেসার সাথে খুলনা নিবাসী আহসান উল্ল্যাহর পুত্র জোহা সাহেবের সাথে ফজিলাতুন্নেছার পরিচয় হয়। পরে উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।কর্মজিবনে তার অসামান্য অবদান লন্ডন থেকে ফিরে ১৯৩০ সালে তিনি কলকাতায় প্রথমে স্কুল ইন্সপেক্টরের চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালের আগস্টে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ-সেবক-সংঘে’র বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে তাঁর বক্তব্যটি নারী জাগরণের মাইল ফলক হয়ে আছে।
এই অধিবেশনে তিনি বলেন ‘নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন ও বলেন। নারী সমাজের অর্ধাঙ্গ, সমাজের পূর্ণতালাভ কোনোদিনই নারীকে বাদ দিয়ে সম্ভব হতে পারে না।
সেই জন্যেই আজ এ সমাজ এতোটা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন,
The highest form of society is one in which every man and woman is free to develop his or her individuality and to enrich the society what is more characteristic of himself or herself.কাজেই এ সমাজের অবনতির প্রধান কারণ নারীকে ঘরে বন্দি করে রেখে তার Individuality বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রাখা। নারী-শিক্ষা সম্বন্ধে এতোটা কথা আজ বলছি তার কারণ সমাজের গোড়ায় যে-গলদ রয়েছে সেটাকে দূরীভূত করতে না-পারলে সমাজকে কখনই সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারা যাবে না।’
তিনি ১৯৩৫ সালে বেথুন কলেজে গণিতের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।
বেথুন কলেজে চাকুরিরত অবস্থায় দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে এসে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ১৯৪৮ সালে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষা ছিলেন।বেগম ফজিলাতুন্নেছার অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক বিভাগসহ ইডেন কলেজ ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়।১৯৫২ সালে ইডেন কলেজের মেয়েরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কলেজের অভ্যন্তর থেকে মিছিল বের করার প্রস্ত্ততি নিলে উর্দুভাষী এক দারোগা হোস্টেলে ঢুকে মেয়েদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করার এক পর্যায়ে খবর পেয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা কলেজে এসে তার বিনানুমতিতে কলেজ প্রাঙ্গণে ঢোকার জন্য দারোগাকে ভৎসনা করে হোস্টেল থেকে বের করে দেন নিজের দৃঢ়তা ও প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে।
নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি সম্পর্কে সওগাতসহ অনেক পত্রিকায় তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প প্রকাশিত হয়।
মৃত্যুঃ
এই বিদুষী নারী ১৯৭৭ সালে ২১ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। এই মহীয়সী নারীর স্মৃতি রক্ষার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮৭ সালে ফজিলাতুন্নেছার নামে হল নির্মাণ করা হয়। -

সাধু সাবধান: হাসানুল হক ইনু কি ট্যাংকে উঠে উল্লাস করেছেন?
জিয়াউল হক মুক্তা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর জাসদের বর্তমান সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ট্যাংকের উপর ওঠে নেচে উল্লাস করেছিলেন— এ প্রচারণার শুরু হয়েছিল জামাত-শিবিরের ‘বাঁশেরকেল্লা’ নামের ফেইসবুক পেইজ থেকে; এজন্য বাঁশেরকেল্লা একটি ট্যাংকের উপর কালো শার্ট-প্যান্ট পরিহিত গোঁফওয়ালা একজন সৈনিকের ছবির মুখমণ্ডল গোল দাগ দিয়ে ফটোশপে একটি তীর চিহ্ন এঁকে তীরের পেছনে হাসানুল হক ইনুর বর্তমান সময়ের একটি ছবি যোগ করে বাজারে ছেড়েছিল; একই ছবির দ্বিতীয় ম্যানিপুলেশনে তীর চিহ্ন ছিল না— সৈনিকের মুখমণ্ডল গোল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে উপরের দিকে একটি বক্সে হাসানুল হক ইনুর বর্তমান সময়ের ছবি যোগ করা হয়েছে। বাঁশেরকেল্লার এ ফটোশপ-ম্যানুফ্যাকচার্ড বা ফটোশপ-ম্যানিপুলেটেড ছবি ও/বা বক্তব্য ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল শত্রুপক্ষের অনেক ইতর ও মিত্রপক্ষের অনেক আহাম্মকের দল। বিষয়টি আলোচনা করা যাক।
এক.
বাঁশেরকেল্লা প্রকাশিত ছবিটির প্রচারকারী গণশত্রুরা ও অন্যদিকে আহাম্মকেরা বঙ্গবন্ধু-হত্যা বিষয়ে একটি বিকৃত অথচ শক্তিশালী রাজনৈতিক মত তৈরি ও প্রকাশ করে চলেছে এখনও পর্যন্ত— আর তা হলো, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর দেশে উল্লাস হয়েছিল। কিন্তু আদতে তা নয়; হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ছিল থমথমে ভাব; সামরিক আইন জারি ছিল; কারফিউ জারি ছিল; জনগণ নিজ গৃহে অবরুদ্ধ ছিলেন; জনগণের কোন সংগঠিত প্রতিবাদ হয়নি সত্য, কিন্তু জনগণ তাতে উল্লাসও করেননি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এরকম কোন উল্লাসের খবর বা ছবিও কোনোদিন প্রকাশিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার মধ্য দিয়ে কোন ধরনের ভীতি তৈরি ও প্রচার করা হয়েছিল তা মেজর ডালিমের বেতার-বক্তব্যে খুব পরিষ্কারভাবে শোনা যায়; বর্তমানে ইউটিউবে সহজলভ্য অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বক্তব্যের এক অংশে ডালিম বলছেন, “বাংলাদেশ পুলিশ, বিডিআর ও রক্ষীবাহিনীর সিপাহী ভাইগণ, আপনারা সবাই সেনা বাহিনীর সঙ্গে যোগদান ও সহযোগিতা করুন। যাহারা অসহযোগিতা করিবেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে তাহাদের চরম দণ্ড দেওয়া হইবে।” অপরাপর বাহিনীগুলোকে সেনা বাহিনীর দেয়া এ হুমকি সাধারণ নাগরিকদের মনে কী প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে তা খুব সহজেই অনুমেয়।দুই.
খুনি মেজর রশীদ-ফারুকরা ট্যাংক নিয়ে বেরিয়েছিল রাতে; বাঁশেরকেল্লা প্রকাশিত-প্রচারিত ফটোশপ-ম্যানিপুলেটেড ছবিটি দিনের বেলার।তিন.
১৫ আগস্ট থেকে ট্যাংকগুলোর অবস্থান ছিল ঢাকার চারটি স্থানে— বঙ্গভবন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, শাহবাগে বাংলাদেশ বেতার ও শের-ই-বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরে। এ চারটি অবস্থানের বাইরে সেদিন বা সমকালে ঢাকায় ট্যাংকের আর কোন মুভমেন্ট হয়নি।চার.
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল কায়েমের পর থেকে জাসদ ছিল নিষিদ্ধ ও গোপন দল; আর ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাসদের শীর্ষনেতৃবৃন্দ ছিলেন কারাগারে অন্তরীণ। কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি], হাসানুল হক ইনু প্রমুখগণ ছিলেন আত্মগোপনে। ক্যুদেতার পর ১৫ আগস্ট ভোরে বেতার ভাষণে রাজনৈতিক কার্যক্রম ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আরোপিত পূর্বতন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি বা জাসদকেও প্রকাশ্য করা হয়নি। আত্মগোপনে থাকা জাসদের কারো পক্ষে প্রকাশ্যে আনন্দ-উল্লাস করার কোন প্রশ্ন আসেনা।পাঁচ.
আত্মগোপনে থাকা কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি], হাসানুল হক ইনু ও অন্যরা ১৬ আগস্ট বৈঠকে ব্যস্ত থাকেন ও মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন; মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারপত্র তৈরি করেন।ছয়.
১৯৭৫ থেকে পরবর্তী প্রায় ৩৫/৪০ বছর পর্যন্ত আর বাঁশেরকেল্লার ফটোশপ-ম্যানিপুলেটেড ছবি প্রকাশ পর্যন্ত কোথাও কোনোদিন কারো কোন কথায়-লেখায়-ছবিতে বা পত্রপত্রিকায় এমন কিছু প্রচারিত হয়নি যে জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লাস করেছে বা হাসানুল হক ইনু বা জাসদের অন্য কোন নেতা-কর্মী উল্লাস করেছেন।সাত.
বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর তাঁর নিজের দলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ক্ষমতাবান সমস্ত লোকজন মোশতাকের সাথে ছিলেন; আর মাওলানা ভাসানী, হাজি মোহাম্মদ দানেশ ও আতাউর রহমান খান মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন; ন্যাপের মহিউদ্দিন আহমেদ মোশতাকের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন গিয়েছিলেন। জাসদ বা জাসদের কারান্তরীণ নেতৃবৃন্দ বা হাসানুল হক ইনু মোশতাককে অভিনন্দন জানাননি; সমর্থন করেননি।আট.
খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনকালে— আওয়ামী লীগ ও বাকশাল সরকার কর্তৃক আটককৃত হাজার হাজার জাসদ নেতা-কর্মীর একজনও কারাগার থেকে মুক্তি পাননি; বরং মোশতাক বিরোধী অবস্থান নেয়ায় সারাদেশে জাসদের শতাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হন ও সহস্রাধিক নেতা-কর্মী নতুন করে কারান্তরীণ হন।নয়.
১৯৭৫ সাল থেকে ২০২০ সাল— এ ৪৫ বছরে প্রকাশিত জাসদের অভ্যন্তরীণ বা উন্মুক্ত কোন দলীয় সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকে সমর্থন জানানো হয়নি বা এ ঘটনার পক্ষ নেয়া হয়নি বা মোশতাক সরকারের ৮৩ দিনের কোন কার্যক্রমকে সমর্থন জানানো হয়নি; বরং মোশতাক সরকারের বিরোধীতার প্রমাণ আছে ভুরি ভুরি।দশ.
১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে হাসানুল ইনু জাতীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিপ্লবী গণবাহিনীর রাজনৈতিক কমিসার ছিলেন। একজন জননেতার যে ট্যাংকের উপর ওঠে উল্লাস করা সাজে না তা হাসানুল হক ইনু জানতেন। শত্রুদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত দোদুল্যমান মিত্ররা এসব বিশ্বাস করার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও বালখিল্যতা প্রদর্শন করলে তাদের প্রতি করুণাবর্ষণ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।এগারো.
১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদ আওয়ামী লীগ ও বাকশালের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনা করেছে; কিন্তু রাজনৈতিক সংগ্রামের বিপরীতে ১৯৭৫ সালে ও পরবর্তীতে সামরিক শাসনের আবির্ভাব হলে জাসদ সকল সময় সামরিক শাসকদের বিরোধীতা করেছে। জাসদ ও আওয়ামী লীগ পরস্পরের ব্যাপারে গভীরভাবে খোঁজ খবর নিয়েই সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করেছে— জিয়ার সামরিক শাসনামলে গঠন করেছে ১০ দলীয় ঐক্যজোট, এরশাদের সামরিক শাসনামলে গঠন করেছে ১৫ দল ও খালেদা জিয়ার আমলে গঠন করেছে ১৪ দল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে জাসদের সংশ্লিষ্টতার কণা-পরিমাণ প্রমাণ থাকলে এ ঐক্য হতো না।বারো.
২০০১ সাল থেকে জাসদের বিরতিহীন প্রচেষ্টার ফলে ২০০৪ সালে গঠিত হয় ১৪ দল; কুখ্যাত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও এ ঐক্য বহাল থাকে; ২০০৯ সালে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১৪ দল ও মহাজোট সরকার গঠন করে। নির্বাচনের আগে-পরে ও সরকারে থেকে বিএনপি-জামাত-জঙ্গির বিরুদ্ধে জাসদের অনমনীয় ও দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের ফলে— মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিভক্ত করার লক্ষ্যে, আওয়ামী লীগ ও জাসদের ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে— বাঁশেরকেল্লা যে ফটোশপ-ম্যানিপুলেটেড ছবি ও কাহিনী তৈরি করে— ডান-বাম নির্বিশেষে জাসদ-বিরোধীগণ ও আওয়ামী লীগের আহাম্মকগণ সে ছবি ও গল্প বিশ্বাস ও প্রচার করেন।তের.
ডান-বাম নির্বিশেষে জাসদ-বিরোধীদের কথা না হয় বাদ দেয়া গেল, আওয়ামী লীগের আহাম্মকরাও যখন এ বিষয়ে শেখ হাসিনার মনযোগ আকর্ষণ করেন, তখন তা থেকে মনে হয় এ যেন মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি, যেন শেখ হাসিনার চেয়েও তারা বঙ্গবন্ধুর খাঁটি অনুসারী; এভাবে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন; আহাম্মকেরা মনে করেন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান শেখ হাসিনার চেয়েও তারা পাওয়ার-পলিটিক্সের ইকুয়েশন ভালো বোঝেন।চৌদ্দ.
আহাম্মকের দলের আচরণ থেকে মনে হয় যে তারা জাসদ ও আওয়ামী লীগের ঐক্য মানতে পারছেন না; মনে হয় যে জাসদ ও বিএনপি মধ্যে ঐক্য হলে যেন এরা খুশি হতেন।পনের.
আহাম্মকের দল ভুলে যান যে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টিকে থাকা সামরিক স্বৈরশাসনের অবসানের পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ একবারের জন্যও এককভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ছিলো তারা ক্ষমতায় যাবে; কিন্তু তা হয়নি; বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গঠনের মতো সংখ্যাধিক্য ছিলোনা; জাসদের সমর্থনেই সরকার গঠন করতে হয়েছিল। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা না নেয়ায় ২০০১ সালে আবার ক্ষমতায় আসে জামাত-বিএনপির চার দল। ২০০১ সাল থেকে জাসদের নিরলস প্রয়াসে ২০০৪ সালে প্রথমে জাসদ ও আওয়ামী লীগ ঐক্য করে ও পরে ১৪ দল ও মহাজোট গঠন করে; এ ঐক্যের ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে। এ ঐক্য গত ১২ বছর ধরে দেশ-জনতা-অর্থনীতি-রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনছে।ষোল.
শত্রুপক্ষের ইতরগণ ও মিত্রপক্ষের আহাম্মকগণ বলে থাকেন যে আওয়ামী লীগ দয়া করে জাসদকে এমপি ও মন্ত্রি দিয়েছিল। বলে থাকেন যে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে পা দিয়ে জাসদ থেকে এমপি-মন্ত্রি হয়েছেন। না, তা নয়; বরং জাসদসহ ১৪ দলের ঘাড়ে পা দিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। জাসদ থেকে মন্ত্রি-এমপি হওয়া কারো বা কোন দলের দয়া নয়; এ ছিল জাসদ ও আওয়ামী লীগ ও অপরাপর দলের ২৩ দফাভিত্তিক রাজনৈতিক চুক্তির অংশ— একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন ও একসাথে সরকার গঠনের চুক্তির দায়বদ্ধতা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে জাসদকে মন্ত্রি পরিষদে নেয়া হয়নি, পরে অবশ্য বিবিধ কারণে নেয়া হয়েছে; যে আয়োজন শুরু থেকেই অনুসৃত হওয়া উচিত ছিল। এবং তা এখনও অনুসৃত হওয়া উচিত।সতের.
২০০৯ সালের কথা না হয় বাদ দেয়া গেল। কিন্তু ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতৃত্বে ১৪ দল ও মহাজোটের নির্বাচন হলো কেন? আওয়ামী লীগ জোট ভেঙে দিল না কেন? একা নির্বাচন করলো না কেন? কারণ এখনও এ ঐক্যের প্রয়োজন আছে এবং নিকট ভবিষ্যতেও তার প্রয়োজন আছে।বঙ্গবন্ধুতনয়া জননেত্রী প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান। তিনি জানেন কী করতে হবে। টোকাইদের পরামর্শে তিনি চলেন না। সুতরাং— জামাত-বিএনপি-জঙ্গি-তেঁতুলরা জাসদ ও আওয়ামী লীগের ঐক্য ভাঙার জন্য যতোই উস্কানী দিন না কেন, সে উস্কানীতে জাতীয় পার্টির কেউ কেউ যতোই হাউ কাউ করুন না কেন, ন্যাপ-সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেকগণ বঙ্গবন্ধু-প্রেমিক সেজে যতোই চোথা লিখুন না কেন, আর আওয়ামী লীগের আহাম্মকগণ যতোই শক্রুদের ফাঁদে পা দিয়ে গাঁড়লগিরি করুন না কেন— ঐক্য বহাল থাকবে। আহাম্মকদের কথায় কর্ণপাত করেননি শেখ হাসিনা বা হাসানুল হক ইনু; বরং একবার এ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠলে শেখ হাসিনা তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদককে ডেকে এসব অহেতুক ও অর্থহীন বিতর্ক বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। জাসদ নেতা-কর্মীগণও দলের সভাপতির নির্দেশে এগুলো নিয়ে সম্মুখসমরে লড়াই করেননি। বাঁশেরকেল্লার ষড়যন্ত্র কোন কাজে আসবে না; ক্ষমতায় একবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আর একবার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি— অপরাজনীতির এ মিউজিক্যাল-চেয়ার খেলা তছনছ করে দিতে হবে। জাসদ আশা করে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জামাত-বিএনপি-জঙ্গি-তেঁতুলদের রাজনীতি থেকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠাতে হবে, এবং পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু কথিত ‘চাটার দল, চোরের দল ও নরপশুর দল’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশে সুশাসন কায়েম করতে হবে। শেখ হাসিনাও তাতে একমত। সুতরাং— সাধু সাবধান।
[জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা রচিত ও শীঘ্র প্রকাশিতব্য “অবরুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও সংশপ্তক জাসদ” রচনার অংশবিশেষ।]
-

শরীরের উচ্চতা মাত্র তিন ফুট, বহু বঞ্চনা সহ্য করে আজ তিনি IAS অফিসার
বিশেষ রিপোট: কথাতেই বলে রূপ নয় গুন দিয়ে বিচার করো। কিন্তু এখনো আমাদের সমাজের তথাকথিত কিছু মানুষ গুনকে ছেড়ে রূপকেই বড় করে দেখে। এবার সমাজের সেইসব মানুষের মুখ বন্ধ করে সবার উদাহরণ হয়ে উঠল উত্তরাখণ্ডের আরতি। মাত্র তিন ফুঁট উচ্চতা নিয়ে রাজস্থান ক্যাডারের আইএএস অফিসার সে।
তথাকথিত সমাজের কুটকাচালি থেকে বাদ যায়নি তিন ফুঁট উচ্চতার অারতিও। গোটা সমাজ আরতিকে বৈষম্যের চোখে দেখত। তার উচ্চতা নিয়ে হাঁসাহাঁসি করত তারাও। তবে, সেইসব হাসির ঊর্ধ্বে গিয়েই এক নজির গড়েছে উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা আরতি ডোগরা। আরতি ডোগরা এখন রাজস্থান ক্যাডারের আইএএস অফিসার। আরতির উচ্চতা কম হলেও তিনি এখন গোটা দেশের মেয়েদের রোল মডেল।
গোটা সমাজ যখন আরতিকে নিয়ে ঠাট্টা করত তখন নিজেদের নিজের মেয়েকে ক্রমাগত সাহস জুগিয়ে গেছে তার মা-বাবা। আরতির বাবার রাজেন্দ্র ডোগরা সেনার একজন অফিসার। তার মা কুমকুম ডোগরা একজন স্কুল শিক্ষিকা। আরতির জন্মের সময়েই ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন যে, সে বাচ্চাদের সাথে সাধারণত ভাবে স্কুলে পড়াশুনা করতে পারবে না। সে বড় হল কিন্তু তার উচ্চতা বাড়ল না। আর যা নিয়ে সমাজ তাকে বঞ্চনা করতে ছাড়েনি। কিন্তু হাল ছাড়েনি আরতির মা-বাবা। তাঁদের একটাই কথা , আমাদের এই সন্তানই আমাদের সব স্বপ্ন পূরণ করবে। মা বাবার সেই কথা রেখেছে আরতী। এখন সকলের মুখে মুখেই শুধু আরতির নাম। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পছন্দ করেন তাঁকে।
তবে, বর্তমানে আরতি নিজের কার্যকালে অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। এখন মানুষের মুখে মুখে তার নাম। কিন্তু তবুও কোন মানুষকেই অছ্যুত হিসেবে দেখেননি সে। আরতির কাছে সবাই সমান। উনি যেই বঞ্চনা ছোট বেলায় সহ্য করেছেন, সেই বঞ্চনার শিকার কাউকে হতে দেবেন না প্রতিমুহূর্তে এমনটাই বলেন তিনি। (সংকলিত) -

করোনা : ঢাকা বাঁচলেই দেশ বাঁচবে
নাজমুল হক : শরীরে কোনো উপসর্গ ছাড়াই বিশ্বে করোনভাইরাসে অনেকেই
সংক্রমিত হয়েছেন। পরীক্ষা করার পরই কেবল ধরা পড়েছে। যারা
উপসর্গবিহীন, তাদের মধ্যে থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি
এখন ওপেন সিক্রেট। উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা দিন
দিন বেড়েই চলেছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি শামান
চীন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন প্রকোপের শুরুতে ৮৬ শতাংশ
সংক্রমণ এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘটেছিল, যারা ডাক্তার দেখানোর মত
অসুস্থ বলে নিজেদের বোধই করেননি। কোভিড ১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর
জাতীয় হিসাব ও বিশ্লেষণ এই গবেষণাপত্রটি সায়েন্স ম্যাগাজিনে
প্রকাশিত হয়েছে এবং নীরব বাহকদের সম্পর্কে সতর্কতাবাণী
হিসেবে জনপ্রিয়ও হয়েছে। কিন্তু কতজন রোগাক্রান্ত, তার চেয়ে বড়
প্রশ্ন কারা অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছেন?
করোনাভাইরাসের সামান্য উপসর্গে জ্বর ছাড়া আর কিছু থাকে না
এবং অধিকাংশ সময়েই আর সব ঠিক থাকলে জ্বর কেউ মাপেনও না।
আবার সিজেন পরিবর্তনের কারণে জ্বর মনে হতেই পরে। তথ্য গোপন করার
প্রবণতা আমাদের দেশে অহরহ হচ্ছে। দেশে এই মুহূর্তে করোনা
সংক্রমণের সব পথই খোলা। এতে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে রোগটির সংক্রমণ
বাড়ছে। ঈদের পরের এই মাসটা দেশে করোনার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ মাসে সংক্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে, রোগটির প্রকোপ
কমাতে অনেক বেশি সময় লাগবে।
ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর,
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নরসিংদী রয়েছে আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোও নানান পদক্ষেপগ্রহণ করছে। কিন্তু কিছুই যেন কাজে আসছে না। তারপরও বিভিন্ন
অযুহাতে কর্মস্থল ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম থেকে মানুষ
ফিরছে নিজ জেলায়। গণপরিবহন চালু হওয়ায় এখন মানুষের চলাচলেও নেই
কোন নিয়ন্ত্রণ। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একসময়
দেশে করোনা ঘনীভূত মহামারীর দিকে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন
বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একসময় আর কোনো কিছুতেই রোগটি
নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তখন হার্ড ইমিউনিটি (অর্থাৎ রোগীর শরীরে
সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা) হবে একমাত্র উপায়।
করোনা আক্রান্তদের বয়সভিত্তিক বিভাজন দেখলে বোঝা যায়, পরিবারের
কারো করেনা আক্রান্ত হলে তার থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছড়াচ্ছে। তার তার থেকে প্রতিবেশীদের। পরিবারে কোন
সদস্যের মধ্যে সামান্য লক্ষণ ধরা পড়লেই তিনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ২/৩ দিন
পরে নমুনা দিচ্ছেন। আবার নমুনা দেয়ার পরেও ক্ষেত্র বিশেষ ২/১ দিন পরে
রিপোর্ট জানা যাচ্ছে। ভিতরের এই সময়টাতেই আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবার
বা অফিসে বা মহল্লায় অহরহ মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। ফলে তারাও
ঝুঁকিতে পাড়ছে। এ থেকে উত্তোরণ হতেই হবে।
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে কিছু মানুষ সবকিছু ফাঁকি দিয়ে
গ্রামে-শহরে যাবেই। আমরা প্রতিদিনই করোনার আপডেট নিচ্ছি
কিন্তু সচেতনতা মানছি কতটুকু? বিভিন্ন অজুহাতে কারণে-
অকারণে আমরা বাহিরে যাচ্ছি। তবে ঢাকা বিভাগের বাহিরের
প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও ভিন্ন। গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বাহিরে
থাকা মানুষের সংস্পর্শে এসে। এটা কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না।
দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর সদস্যরাও আক্রান্ত হওয়ায় তারাও অনেকটা
পিছুটান দিয়েছে। নিজে সচেতন না হলে আইনপ্রয়োগ করে
কতটুকু সচেতন করা সম্ভব?
ঢাকা বিভাগের মানুষ বেশি আক্রান্ত। সরকার এলাকাভিত্তিক লক ডাউন
শুরু করছে। ঢাকার বাহিরে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগই
বাহিরে থেকে আগতরা। আবার তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরাও আক্রান্ত
হচ্ছে। তাই করোনা মহামারি বন্ধ করতে ঢাকা বন্ধ করতেই হবে।




