Category: জাতীয়

  • করোনায় তরুণরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত

    করোনায় তরুণরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত

    ন্যাশনাল ডেক্স: করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে তরুণরাই এগিয়ে রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ ও যুবকরা।

    শুক্রবার (৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান। 

    তিনি বলেন, তরুণ ও যুবকদের করোনায় আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। এরপরই আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছেন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তাদের আক্রান্তের হার ২৭ শতাংশ। তরুণ-যুবকরা বেশি আক্রান্ত হলেও মত্যু হারে এগিয়ে ৬০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধরা।

    করোনা সংক্রমণের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন ।

    ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘লিঙ্গভেদে শনাক্তের হার পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

    তিনি বলেন, ‘২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরই আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই বয়সী মানুষদের অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই বয়সের মানুষেরা কর্মস্থলে বেশি থাকেন। বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করেন, কাজের জন্যই হোক বা অন্য কারণেই হোক। যেহেতু তরুণ বয়স, তারা অনেক সময় সতর্কতা ও সচেতনতাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করেন না। এ জন্য ২১ থেকে ৩০ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারা সতর্ক হোন, সচেতন থাকেন। আপনার কারণে যেন আপনার পরিবারের অন্য কেউ যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।’

    করোনায় মৃতদের বয়সের হার তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃতের হার শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সীদের ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

    তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর হার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারাও অনেক বেশি সচেতন থাকবেন।

  • সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী না‌সি‌মের শারী‌রিক অবস্থার অবন‌তি

    সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী না‌সি‌মের শারী‌রিক অবস্থার অবন‌তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক

    প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থা সংকটাপন্ন।

    • এর আগে জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে গত সোমবার দুপুরে নাসিমকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে ওই পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে বলে নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় জানিয়েছিলেন।

    তিন দিন পর তার স্বাস্থ্যের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও আজ শুক্রবার সকালে ব্রেইন স্টোক করে অবস্থা অবনতির দিকে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তানভীর শাকিল জয়।

    তিনি বলেন, সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল, আব্বুর অবস্থা ভালোর দিকে ছিল। আজকে সকালে হঠাৎ করে ব্রেইন স্টোক করেছে, এখন অপারেশন চলছে। বাবার সুস্থতার জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন তিনি।

    আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নাসিমকে শুক্রবার সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ার কথা থাকলেও অবস্থা অবনতির দিকে যাওয়ার কারণে নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, ‘কাল রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল নাসিম ভাইকে সিএমএইচে নেয়া হবে, কিন্তু সকালে অবস্থা ক্রিটিক্যাল দিকে থাকায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালেই অপারেশন করা হচ্ছে।’

    ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

    ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভায় না থাকলেও পরের মেয়াদে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।

    নাসিমের সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাহিদ মালেক এই সরকারে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।

  • ৩০ জুন পর্যন্ত দেওয়া যাবে জরিমানা ছাড়া বিদ্যুৎ বিল

    কোনো রকম বিলম্ব মাসুল বা জরিমানা ছাড়া ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

    আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

    নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ বিল যাঁদের বেশি এসেছে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রত্যেকের বিল সমন্বয় করা হবে। কাউকে বাড়তি বিল দিতে হবে না।

    দীর্ঘ ছুটি ও ঈদের পর এই প্রথম সচিবালয়ে অফিস করলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

    নসরুল হামিদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল জুনের মধ্যে পরিশোধ করলে বিলম্ব মাসুল দিতে হবে না।

    প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল নিয়ে নানা ভোগান্তির কথা আমাদের কানেও আসছে। কারও কোনো বাড়তি বিল করা হলে তা পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, এই সময় ঝুঁকি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বিল দিতে হবে না। আমরা ৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলের বিলম্ব মাসুল মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

    প্রসঙ্গত, কোভিড– ১৯ সংক্রমণের কারণে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এই তিন মাসের বিল নেওয়া বন্ধ রাখে সরকার। সূত্র:প্রথম আলো

  • জাসদের ঈদ শুভেচ্ছা

    জাসদের ঈদ শুভেচ্ছা

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ শনিবার এক বিবৃতিতে দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের মধ্যে এবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য রমযান ও ঈদ এসেছে। তাই এবারের রমযান ও ঈদ অন্য রকম রমযান ও ঈদ। রমযান মাসে দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকাসহ সংযমের প্রকৃত চেতনায় মুসলমানরা এবার রমযান পালন করেছেন। আর রমযানের সংযমের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবারের ঈদও সংযমের ঈদ। এবারের ঈদ আনন্দের ঈদ নয়, শপিং-কেনাকাটা-নতুন পোশাক পড়া- ভূরিভোজন-রসনাবিলাসের ঈদ না। এবার ঈদ আনন্দের খরচ বাঁচিয়ে করোনা সংকটে বিপর্যস্ত কর্মহীন-আয়হীন-নিরুপায়-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই ঈদের আনন্দ। এবারের রমযান ও ঈদ বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সংযম ও আনন্দ প্রকাশের এই নতুন ধারা শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে। জাসদ নেতৃদ্বয় ঈদে দেশের মুসলমান সম্প্রদায়সহ সকল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সুস্থতা, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করেন।

  • করোনায় আক্রান্ত হয়ে  জাসদ নেতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক সুমন মাহমুদের মৃত্যুতে জাসদের শোক

    করোনায় আক্রান্ত হয়ে জাসদ নেতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক সুমন মাহমুদের মৃত্যুতে জাসদের শোক

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক শোকবার্তায় সাবেক জাসদ নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক সুমন মাহমুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। তারা বলেন, ৬০ দশকে ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে সুমন মাহমুদ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, বিএলএফ-এর সদস্য হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, জাসদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাসদের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৭৯-৮১ সালে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সক্রিয় দলীয় রাজনীতি ছেড়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে যুক্ত ছিলেন। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে আসগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার ২২ মে ২০২০ বিকাল ৪টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন(ইন্না…রাজেউন)। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী প্রফেসর ডা. পারভীন শাহীদা আকতার দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।

  • এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ৩১ মে

    এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ৩১ মে

    নিজস্ব প্রতিবেদক :

    আগামী ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করবেন।

    বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন-সংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    জানা গেছে, চলতি বছর এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফল দেয়া হবে। আর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা মেনেই শিক্ষার্থীদের ফল সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আর কোনো অবস্থাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল প্রকাশের দিন জমায়েত হওয়া যাবে না। 

    এদিকে ফল সংগ্রহে পরীক্ষার্থীদের জন্য এসব নির্দেশনা জারি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। একই সাথে এসএমএস এর মাধ্যমে ফল পেতে শিক্ষার্থীদের প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে।

    কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোন অবস্থাতেই পরীক্ষা কেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল পাঠানো হবে না।

    বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ফল পেতে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এসএমএস করতে হবে। এ জন্য SSC লিখে স্পেস দিয়ে কারিগরি বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর অর্থাৎ Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফল প্রকাশ হলেই ফিরতি এসএমএসে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীর ফল জানানো হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকেও পরীক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবেন।

    এসএসসির ফল পেতে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এসএমএস করতে হবে। এ জন্য SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর অর্থাৎ ঢাকা বোর্ড হলে Dha লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফল প্রকাশ হলেই ফিরতি এসএমএসে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীর ফল জানানো হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকেও পরীক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবেন।

    দাখিলের ফল পেতে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এসএমএস করতে হবে। এ জন্য Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর অর্থাৎ Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফল প্রকাশ হলেই ফিরতি এসএমএসে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীর ফল জানানো হবে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও পরীক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবেন।

  • আজ ৫মে ২০১৩ হেফাজতের সহিংস রাজনৈতিক উত্থান দিবস

    আজ ৫মে ২০১৩ হেফাজতের সহিংস রাজনৈতিক উত্থান দিবস

    আজ ৫মে ২০১৩ হেফাজতের সহিংস রাজনৈতিক উত্থান দিবস।
    হেফাজতের তান্ডবে বাংলাদেশরে জনগণ সহ বিশ্ববাসী হতবাক। হেফাজতের সহিংস উত্থানের প্রলয়ংকারী প্রভাব বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশের জনগনকে।

  • ঢালাওভাবে শপিংমল দোকানপাট খুলে জনসমাগমের সুযোগ দেয়া আত্মঘাতী। এবারের ঈদ আনন্দের ঈদ না: জাসদ

    ঢালাওভাবে শপিংমল দোকানপাট খুলে জনসমাগমের সুযোগ দেয়া আত্মঘাতী। এবারের ঈদ আনন্দের ঈদ না: জাসদ


    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ মঙ্গলবার ৫ মে ২০২০ এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকার সক্রামক রোগ প্রতিরোধ নির্মূল আইন ২০১৮ জারি করে সমগ্র দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছে ও দফায় দফায় ছুটি বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরে থাকা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হবার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করেছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। ঔষধ-খাদ্যপণ্য-নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট, শপিংমল, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধ রেখেছে। মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়, জুম্মার জামাত-তারাবির জামাত-ঈদের জামাতসহ অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ে জনসমাগম বন্ধ রেখেছে। মৃত ব্যক্তির জানাজা-দাফন-দাহ-শেষকৃত্যে আপনজনসহ জনসমাগম বন্ধ রেখেছে। অঞ্চলভিত্তিতে লকডাউন করেছে। একই নগর-শহর-জেলা-উপজেলার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল-যাতায়ত বন্ধ রেখেছে। ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে যাওয়া বন্ধ রেখেছে। এসব সরকারী নির্দেশ কার্যকর করতে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। পুলিশ সাথে সেনাবাহিনী বাহিনী রাস্তায় টহল দিচ্ছে। সরকারের এতো বাস্তব, যৌক্তিক ও কঠোর পদক্ষেপের পরও আইইডিসিআর আশংকা করছে মে মাসে সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ হাজার অতিক্রম করবে।

    জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে ঢালাওভাবে শপিং মল, দোকানপাট খুলে দিয়ে জনসমাগমের সুযোগ দেয়া হবে আত্মঘাতী। তারা ঈদ শপিংয়ের জন্য ১০ মে থেকে ঢালাওভাবে শপিং মল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি সনির্বন্ধ আহবান জানান।

    জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, এবারের ঈদ আনন্দের ঈদ না, শপিংয়ের ঈদ না। জাসদ নেতৃদ্বয় এই সংকটেও যাদের শপিংয়ের সামর্থ্য আছে তাদেরকে শপিংয়ের অর্থ দিয়ে শপিং না করে কর্মহীন আয়হীন নিরূপায় অসহায় মানুষের পাশে খাদ্য সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর আহবান জানান। তারা বলেন, কর্মহীন আয়হীন নিরূপায় অসহায় মানুষরা ঈদের দিন দুই বেলা পেটভরে খেতে পারলে সেটাই হবে এবারের ঈদের সব চেয়ে আনন্দ।

  • মহামারীর মধ্যে এবি পার্টি কেন: উদ্বেগ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির

    দেশ যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের একাংশ নতুন দলের আত্মপ্রকাশ করে মানুষকে ‘প্রতারিত করছে’ বলে মনে করছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

    তাদের এ ধরনের তৎপরতার ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে নির্মূল কমিটি।

    রোববার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  আয়োজিত এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।

    ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসবিরোধী যুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর একাংশের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতারা।”

    নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশে ও বিদেশের ৪৫টি শাখার নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নেন।

    সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে দুই পর্বে স্কাইপেতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব।

    দ্বিতীয় পর্বের প্রধান বক্তা ছিলেন চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।

    সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় নির্মূল কমিটির চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি’।

    সম্মেলনে নির্মূল কমিটির কেন্দ্র ও জেলা/উপজেলা পর্যায়ের নেতা ছাড়াও বহির্বিশ্বের শাখাগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও ভারতীয় শাখার নেতারা অংশ নেন।

    শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ‘সংস্কারপন্থিরা’ ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি) নামের নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেন। তারা বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার’ বাস্তবায়ন করতে চান।

  • সাংবাদিক কাজল উদ্ধার ,  হাতকড়া পরিয়ে পীঠমোড়া বেঁধে আদলতে হাজির

    সাংবাদিক কাজল উদ্ধার , হাতকড়া পরিয়ে পীঠমোড়া বেঁধে আদলতে হাজির


    আজ (৩ মে) বেনাপোল বন্দরের নো-ম্যানস হতে বিজিবি তাকে গ্রেফতার করে। অথচ সে নিখোজ হয়েছে সেটি গণমাধ্যমের ফলে সকলে জ্ঞাত। এবিষয়ে তার পরিবার নিখোজের মামলা করেন। তাকে উদ্ধারের জন্য সাংবাদিক সমাজসহ অনেকেই মানববন্ধন করেন। দাবী জানিয়ে বিবৃতি দেন জাসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই। পুলিশএর পক্ষ হতে বলা হয়ে ছিল যে কাজলকে উদ্ধার করার জন্য সকল ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ সেই কাজর উদ্ধার হলেন অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপরাধে। শুধু তাইনয় তাকে যশোর আদালতে তোলাহলো হ্যান্ডকাপ পরানো ও পীঠমোড়া দিয়ে বাধা অবস্থায়। এ প্রসংগে সাংবাদক গৌরাঙ্গ নন্দী তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের এই দিনে (মে ০৩, ২০২০) সাংবাদিক কাজলকে হাতকড়া পরিয়ে যশোরের আদালতে তোলা হ’ল। যতদূর জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ। তাঁকে বেনাপোল বন্দরের নো-ম্যানস্ ল্যান্ড হতে বিজিবি গ্রেফতার করে। আচ্ছা, আমরা সকলেই কি জানিনা, সে নিখোঁজ ছিল! হয়তো অনেকেই জানিনা। কিন্তু তিনিতো গ্রেফতার হওয়ার পর জেনেছি, তিনি একজন সাংবাদিক। তাঁকে কি এভাবেই হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল?? তিনি কি কোন দাগী আসামী? পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল?? ছবিতে পিঠমোড়া দিয়ে হাতকড়া পরানো কাজল শশ্রুমন্ডিত, একজন পুলিশ সদস্য তাঁর বাম হাতটি ধরে আছে।

  • জাসদ: হাসপাতালের পর হাসপাতাল থেকে রোগি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়িদের কঠোর শাস্তি দাবি

    জাসদ: হাসপাতালের পর হাসপাতাল থেকে রোগি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়িদের কঠোর শাস্তি দাবি

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ ৩ মে ২০২০ রবিবার এক বিবৃতিতে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট রোগির সাথে না থাকায় সরকারি ও প্রাইভেট মালিকানা নির্বিশেষে হাসপাতালের পর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া, রাস্তায় অজানা গন্তব্যে ঠেলে দেয়া, এম্বুলেন্সে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুরমুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্ধেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

    জাসদ নেতৃদ্বয় যে সকল হাসপাতাল রোগিদের চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে সেই সকল হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ ও মালিকদের কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

    জাসদ নেতৃদ্বয় অভিযোগ করে বলেন, কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া কোভিডের লক্ষ্মণ ও উপসর্গ আছে এমন রোগিদেরও ফিরিয়ে দিচ্ছে আর নন-কোভিড হাসপাতালগুলো কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া সাধারণ রোগি এবং কোভিডের লক্ষ্মণ ও উপসর্গ আছে এমন রোগিদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। তারা বলেন, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টেস্টের উপর সবচাইতে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেই চলেছে, সেখানে দেশে সাধারণ রোগিরাই টেস্টের অভাবে হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

    জাসদ নেতৃদ্বয় চিকিৎসাসেবা খাতের এই অমানবিক দশা এবং অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা অবিলম্বে দূর করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তারা কোনো অজুহাতেই যেন আর একজন রোগিকেও কোনো হাসপাতাল থেকে রাস্তায় অজানা গন্তব্যে ঠেলে দেয়ার অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও দায়িত্বশীল সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

  • করোনাকাল, লোকজ্ঞান ও প্রকৃতির বিজ্ঞান

    করোনাকাল, লোকজ্ঞান ও প্রকৃতির বিজ্ঞান

    পাভেল পার্থ

    করোনাকালে আবারো স্পষ্ট হয়ে ওঠছে লোকজ্ঞান ও প্রকৃতির শক্তি। কিন্তু অধিপতি পাটাতনে এই জ্ঞানভাষ্য অস্বীকৃতই থেকে যাচ্ছে। কারণ কী? লোকায়ত জ্ঞানের সাথে বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির ঐতিহাসিক বিরোধ? নাকি এখনো বড় হয়ে থাকছে নির্দয় শ্রেণিপ্রশ্ন? ঐতিহাসিকভাবেই অসুখ ও মহামারী সামালে গ্রাম-বাংলায় গড়ে ওঠেছে নানা লোকভাষ্য, বিজ্ঞান ও সুরক্ষাবিধি। কলেরা থেকে কালাজ্বর কী বসন্তের সেইসব কাল সামাল দিতে লড়েছিল গণমানুষের বিজ্ঞানশক্তি। অথচ এই করোনারকালে আমরা সেইসব লোকায়ত প্রচেষ্টাগুলোকে একত্র করতে পারিনি। সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন বা ঘরবন্দি এবং লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা। করোনা মোকাবেলায় এখনো এই তিনটি বিষয়ই বৈশ্বিকভাবে মানছে সবাই। মহামারী বা কঠিন অসুখ মোকাবেলায় এই পদ্ধতিগুলোই তো ঐতিহাসিকভাবে লোকায়ত জ্ঞানের উদ্ভাবন। এককভাবে কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নয়, এসবের চল শুরু হয়েছিল সামষ্টিকভাবে মানুষের লোকায়ত জীবনের যৌথতায়। এখনো এর টাটকা প্রমাণ বয়ে চলেছে অনেক সমাজ।

    মহামারী মোকাবেলার লোকবিজ্ঞান
    এই যে বলা হচ্ছে মানুষ লকডাউন মানছে না, সঙ্গনিরোধ করছে না। কিন্তু কারা মানছে না একবার কী তলিয়ে দেখা যায়? দেশের গরিষ্ঠভাগ আদিবাসীরাই কিন্তু মানছে এই লকডাউন ও সঙ্গনিরোধ। এইসব শব্দ অনেক গ্রাম কী পাড়ায় পৌঁছানোর আগে থেকেই নিজেরা এই সুরক্ষাবিধি তৈরি করেছে নিজেদের মত করেই। ব্যক্তি নয়, মহামারী মোকাবেলাকে লোকায়ত জ্ঞানে সামষ্টিক কাজ হিসেবে দেখা হয়। আর লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যার প্রধান সূত্র। চাকমা তালিক, মারমা বৈদ্য, মান্দি খামাল কি মণিপুরী মেইবাদের চিকিৎসাবিদ্যা কী গ্রামীণ কবিরাজি সবই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেয়। অসুস্থ ও আক্রান্তের ইতিহাস, তার পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজে নানামুখী সম্পর্ক এসব জানতে চায়। আর এই লোকায়ত চিকিৎসায় গুরুত্ব পায় প্রাকৃতিক জিনসম্পদ। একতরফাভাবে ‘ভেষজ বা টোটকা চিকিৎসা’ নামে এই লোকায়তবিজ্ঞানকে দাবিয়ে রাখলেও সহ¯্র বছর ধরে এই বিজ্ঞানই দুনিয়াকে দিয়ে চলেছে বেঁচে থাকবার সব অবিস্মরণীয় পথ্য ও জোগান। এই করোনাকালেও অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানী, চিকিৎসক কী গণমাধ্যম পরামর্শ দিচ্ছে গরম পানি, ভিটামিন সি, আদা, রসুন, কাঁচা হলুদ, নিম, কালোজিরা, আমিষ, গোলমরিচ, লবঙ্গে গ্রহণের মতো নানা লোকবিধির। এইসব কার আবিষ্কার? কার উদ্ভাবন? করোনার মতো লক্ষণে এইসব পথ্য ও সুরক্ষাবিধি তো লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যার নিজস্ব ফসল। তার মানে এই দাঁড়ায় শ্রেণিপ্রশ্নে নি¤œবর্গের হলেও লোকায়ত জ্ঞান অভিজ্ঞতাই এই করোনাকালে বিশ্বের লাখো মানুষের সহায় হচ্ছে। কিন্তুসংকট সামালে নি¤œবর্গের এই জ্ঞানভাষ্য ও বিধির অবিস্মরণীয় অবদানকে আমরা তো এখনো মর্যাদা দিতে শিখিনি। অনৈতিহাসিক করে রাখি এর ভূমিকা।

    লোকায়ত লকডাউন
    আদিবাসীরা কেন নিজেদের মতো লকডাউন চালু করতে পেরেছে? নতুন অসুখ আর মহামারী থেকে বাঁচতে আদিবাসী সংস্কৃতিতে হাজার বছর ধরেই লকডাউন, আইসোলেশন, সঙ্গনিরোধের চল আছে বলেই এটি এসব সমাজে এতোটা সহজ হচ্ছে। বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় ¤্রােদের ভেতর অসুখ ও মহামারী থেকে বাঁচার জন্য গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার যে কৃত্য পালিত হতো একসময় তার নাম আং ডুব। আশেপাশে কোথায় মহামারীর বিস্তার হলে গ্রামের লোকেরা একত্র হয়ে কিছুদিন গ্রামেক বিচ্ছিন্ন রাখার প্রস্তুতি নিতেন। জংগলের ঝিরি-ছড়া থেকে ভোর বেলা ¯œান সেরে তুলে আনা হতো ছোট ছোট পাথর। এইসব পাথরে মহামারী তাড়ানোর মন্ত্র লেখা হতো সুইয়ের আঁচড়ে। গ্রামের সবাই কাপাস তুলোর সূতা দিয়ে গ্রামের চারধারে বাঁধন দিতেন। গ্রামের সকল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হতো। প্রতিটি প্রবেশপথে মাটির তলায় গুঁজে রাখা হতো মন্ত্রপুত পাথর। চলতি করোনাকালেও ¤্রােরা আংডুব কৃত্যের মাধ্যমে পূুয়াভং বা গ্রাম লকডাউন করেছেন। রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাংখোয়া আদিবাসীরাও একসময় বড়ধরণের অসুখ ও মহামারী সামাল দিতে নানা কৃত্য পালন করতো একসময়। ঝিরি থেকে ছোট পাথর সংগ্রহ করা হয় এবং এই পাথরে মহামারীর বিরুদ্ধে মন্ত্র আঁকা হয়। পাংখোয়া ভাষায় এই কৃত্যকে ‘লুংতেরঙেট ইন তোয়ালে রিত’ বলে। এরপর শুরু হয় গ্রামবন্ধের কাজ। পাংখোয়া ভাষায় একে খোয়া খার বলে। খোয়াখারের সময় ঘরে বহিরাগত কেউ গ্রামে ঢুকতে পারে না, গ্রাম থেকে কেউ বাইরেও যেতে পারে না। এমনকি গ্রামের ভেতরেও যারা থাকে তাদেরও ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘরের সামনে জ্বালানো আগুনে হাত-পা সেঁকে ঘরে ঢুকতে হয়। পাংখোয়া ভাষায় এই রীতিকে বলে ‘মেই রাকান’। লকডাউনের মান্দি কৃত্যের নাম দেনমারাংআ, লেঙাম ভাষায় খাং চোনং, চাকমারা বলে আদাম বন গারানা, খাসিরা বলে খাং খারদেপ সোনং, কোচ-বর্মণদের ভেতর গেরামপূজার মাধ্যমে ও ত্রিপুরাদের ভেতর কের পূজার মাধ্যমে গ্রাম লকডাউন করা হয়। কেবল আদিবাসী সমাজ নয়, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র কি সংহিতাতে মহামারী নির্মূলে লকডাউন ও সঙ্গনিরোধের কথা উল্লেখ আছে। তার মানে কোনো রোগ বিস্তার ও সংক্রমণ রোধে এই লকডাউন ‘বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা’ প্রদত্ত কোনো নতুন ধারণা নয়। এটি জনসমাজে প্রচলিত মহামারী সামালের এক লোকায়ত কায়দা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা যার নাম দিয়েছি ‘লকডাউন’।

    চেনা পথ্য, জানাশোনা চিকিৎসক
    কেবল বহুজাতিক ভ্যাকসিন কী করোনা সামাল দিতে পারে? সমাজের খাদ্যাভাস, স্বাস্থ্যবিধি, জীবনযাপনের ধরণ এবং এমনকি মানুষের জিনগতবৈচিত্র্যও এখানে প্রভাব রাখে। মঙ্গোলিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, তাইওয়ান, মিয়ানমার কিন্তু বেশ যুতসইভাবেই সামাল দিচ্ছে এই সংকট। উত্তর-পূর্ব ভারতেও এর ব্যাপক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি। ঠিক যেমন এখনো বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সংক্রমণ কম। কিংবা শ্রীলংকা কিভাবে সামাল দিচ্ছে এই করোনাকাল? উল্লিখিত দেশগুলোর খাদ্যসংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যবিধির অনেকখানিই এখনো প্রকৃতিনির্ভর এবং ভেষজপন্থী। মানুষের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা তৈরিতে এই প্রকৃতিবিজ্ঞানের নিশ্চিত ভূমিকা আছে। লোকায়ত স্বাস্থ্যবিধির মূলে আছে পথ্যের সাথে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। কিন্তু আজকের চিকিৎসাদুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানির শিশি বোতল কী প্যাকেটে কী থাকে আমরা ক’জন তার খোঁজ রাখি? এমনকি গ্রামীণ সমাজের এক একজন অভিজ্ঞ লোকায়ত চিকিৎসক চারধারের মানুষের বেড়ে ওঠার সাথে জড়িত। রোগ নির্ণয় ও লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসায় তাই রোগীর ইতিহাস ও নির্ঘন্ট নানাভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তৈরি হয়। কিছু অভিজ্ঞ আদিবাসী লোকায়ত চিকিৎসকের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, করোনার লক্ষণের মতো রোগের পথ্য ও বিধি কিছুটা তাদের জানা। মহামারীর মতো এক নির্দয় পরিস্থিতি সামালে আজকে এমন লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যাকেও সামগ্রিক কৌশলে যুক্ত করা জরুরি। এমনকি আর্য়ুবেদ, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও গ্রামীণ কবিরাজিওকে। হয়তো করোনা মোকাবেলার এভাবেই রাষ্ট্রীয় বহুত্ববাদী চিকিৎসার রূপ তৈরি হতে পারে।

    অসুখের দর্শন
    আদিবাসীসহ গ্রামীণ নি¤œবর্গ মনে করে মানুষের অসুখ হলো প্রকৃতির কোনো যন্ত্রণার নির্দেশনা। বৃক্ষের বর্ষবলয়ে যেমন খরা কী প্লাবণের দাগ থাকে, মানুষের শরীর কী স্মৃতিতেও অসুখের দাগ রয়ে যায়। অসুখ ও মহামারী সম্পর্কিত লোকায়ত কৃত্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসব কৃত্যে উচ্চারিত প্রার্থনায় কেবল মানুষ নয় চারধারের প্রাণের সুস্থতার প্রার্থনা জানানো হয়। বাঁশের মড়ক যেমন ইঁদুর-বন্যা কী শকুনের অনুপস্থিতি যেমন গরুর অ্যানথ্রাক্স। নির্দয়ভাবে কাটা হলে গাছ, সমূলে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য বিস্তার ঘটলে একসময় মানুষও রেহাই পাবে না। আদিবাসীরা অনেক আগে থেকেই এই হুঁশিয়ারি দুনিয়াকে জানিয়ে আসছিলো। নয়াউদারবাদী দুনিয়া কথা শোনেনি। কেবল করোনা নয়, প্রমাণিত হয়েছে গরিষ্ঠভাগ মহামারীর পেছনে আছে বন্যপ্রাণীর দশাসই বাজার। করোনাকালে আমাদের অসুখের দর্শনটা বদলানো দরকার। প্রকৃতির শরীরেই মানুষের অসুখের চিহ্ন আছে। সেই লক্ষণ বোঝার মতো দক্ষতা ও সাহস তৈরি হোক প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিদ্যায়।

    ভোগ নয়, সুরক্ষাই জীবনের নীতি
    করোনাকালে দিনাজপুরের সাঁওতাল সমাজ বাহা পরবে পবিত্র জাহেরথানে সম্মিলিত প্রার্থনা করে শালফুল গ্রহণ করেছে। প্রকৃতির কোনো স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ কী রঙ নি¤œবর্গের সমাজে গ্রহণের আগে নতজানু হতে হয়। প্রার্থনা করতে হয়। আর এভাবেই তৈরি হয়েছে সকল লোকায়ত কৃত্য। কোন মাসে, কোন ঋতুতে কি কি বিধিনিষেধ তা এখন কয়জন জানে? আর মানেইবা কতজন? নয়াউদারবাদী জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন সারাবছর বাজারমুখী শস্যফসল মেলে। কোনোকিছু দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোন ঋতু। লোকায়ত জীবনের বীক্ষা ভোগ নয়, সুরক্ষা। প্রাণ ও প্রকৃতির ভেতর সম্পর্ককে বোঝার জন্য একটা জীবনের সাথে আরেকটা জীবনের যোগাযোগ। লোকায়ত জ্ঞান আর প্রকৃতির বিজ্ঞানের এই সুরক্ষানীতিই আজ আমাদের করোনার নিদান থেকে আবারো তরতাজা করে তুলতে পারে। যদি আমরা ভোগকে বাতিল করে নতজানু হই সুরক্ষামিছিলে।

    গবেষক ও লেখক। ই-মেইল: ধহরসরংঃনধহমষধ@মসধরষ.পড়স

  • করোনা কালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষি খাতে করণীয় প্রস্তাব

    গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন: মাহা মির্জা

    সাধারণভাবে অনিশ্চয়তায় ভরা কৃষকদের জন্য করোনাকালে বিপর্যয় গভীর সংকট তৈরি করেছে। এই সংকটের উৎস কৃষিখাতে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈরী নীতি এবং করোনা কারণে বিদ্যমান বিধিনিষেধ। এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই লেখায় কৃষি খাতের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন করণীয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

    দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৮ ভাগ কৃষিতে নিযুক্ত। এই কৃষকদের বড় অংশই জমির মালিক নন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রিপোর্ট (২০১৮) অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ২ কোটি ৪৩ লাখের বেশি মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে পারিবারিক সহকারী : ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার জন বা প্রায় ৩৫ শতাংশ; স্ব-কর্মসংস্থান: ৮১ লাখ ৭৭ হাজার বা প্রায় ৩৩ শতাংশ; কৃষিশ্রমিক: ৭২ লাখ ৯১ হাজার জন বা প্রায় ৩০ শতাংশ; এবং অন্যান্যভাবে নিয়োজিত: ১ লাখ ৬৮ হাজার শ্রমিক।

    দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বছরের পর বছর কৃষিতে ব্যক্তিগত লোকসানের ভার বইতে হচ্ছে কৃষককে। অথচ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা এফএওর (২০১৯)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষক ২০১৭ সালে যে কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছেন, তার আর্থিক মূল্য প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। অনেকের মতেই, জমির মালিকানার পরিবর্তন বা ভূমি সংস্কার ছাড়া বাস্তবে কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব না। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় অন্ততপক্ষে বর্গা কৃষককে কীভাবে সরকারি ঋণ ও প্রণোদনার আওতায় আনা যায়, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবে কৃষিকাজ কিছুটা চলমান থাকায় সকল কৃষক যদিও কর্মহীন হয়ে পড়েননি, তবে পরিবহন সংকটের কারণে উৎপাদিত ফসল ও সবজি ঠিক সময়মতো বাজারজাত করতে না পারায় এবং দুর্যোগের সুযোগে ফড়িয়াদের সিন্ডিকেটের ফলে সবজির দাম পড়ে যাওয়ায় দেশের প্রতিটি অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন।

    বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বজনকথার পক্ষ থেকে কৃষি খাতের জন্যে একটি দুর্যোগকালীন সহায়তা প্রস্তাব তৈরী করা হয়। প্রস্তাবে কৃষি খাতের বহুমুখী বাস্তবতা ও চাহিদা বিবেচনা করে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, এবং দীর্ঘমেয়াদি করণীয়গুলো উত্থাপন করা হলো।

    স্বল্পমেয়াদে করণীয়

    বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কৃষকের পক্ষে তাদের উৎপাদিত শস্য/সবজি পাইকারি বা খুচরা বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছেনা। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকের দুরবস্থার খবর আসছে। উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনকারী কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় টমেটো, শশা, বেগুন, লাউ, কুমড়া, মরিচ সহ নানারকমের সবজির দাম কেজিতে মাত্র ৪-৫ টাকায় নেমে এসেছে। দিনাজপুরের কৃষক ৫০ পয়সা কেজিতে শশা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন এমন খবরও আমরা পাচ্ছি। পরিবহন সংকটের পাশাপাশি ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেও কৃষক দাম পাচ্ছেননা এমন অভিযোগও আছে।

    উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনকারী কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় টমেটো, শশা, বেগুন, লাউ, কুমড়া, মরিচ সহ নানারকমের সবজির দাম কেজিতে মাত্র ৪-৫ টাকায় নেমে এসেছে। দিনাজপুরের কৃষক ৫০ পয়সা কেজিতে শশা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন

    এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবজি-কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে এবং উৎপাদিত সকল শস্য নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে স্বল্পমেয়াদে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

    ১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাইকারি বাজার চালু রাখা

    বর্তমানে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে খুচরা বাজার সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত চালু থাকে। অথচ পাইকারি বাজারগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে পাইকারি বাজার গুলো ন্যূনতম ৫ ঘন্টা চালু রাখা জরুরি। বহু এলাকায় ক্ষেত থেকে সবজি বা অন্যান্য পচনশীল শস্য পাইকারি বাজার পর্যন্ত পরিবহণ করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যান নেই। কাজেই বিদ্যমান ২-৩টি ভ্যানকে ১০ থেকে ১৫ বার ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। কাজেই পাইকারি বাজারগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে পৌরসভার অধীনে থাকা গাড়ি গুলো কাজে লাগাতে হবে। প্রশাসনের কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি করবেন।

    ২. জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার মাঠগুলোকে বাজার হিসাবে কাজে লাগানো

    বাজারে অতিরিক্ত জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার ভিতরের খোলা মাঠগুলোকে বিভিন্ন এলাকার বাজার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মহাখালী, সায়দাবাদ এবং কারওয়ান বাজারে ইতিমধ্যেই বাজার বসানোর পর্যাপ্ত জায়গা আছে। এছাড়াও ঢাকার অন্যান্য খালি মাঠগুলোকেও বাজার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশাসনের কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি করবেন। এছাড়াও প্রতিটি এলাকার ওয়ার্ড কমিশনের পক্ষ থেকে এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা/মাছ, ফল বা সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত শ্রমজীবীদের কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না।

    মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয়

    ১. আসন্ন বোরো মৌসুমে ক্ষেতমজুর সংকট ও করণীয়

    দেশে প্রায় ৪৭-৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এই বিপুল পরিমাণ ধান কাটার ক্ষেত্রে প্রতিবছরই ক্ষেতমজুর সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা বলছে, হাওড় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার মোট বোরো আবাদ হয়েছে নয় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে, যার অর্ধেক সমতলে, বাকিটা মূল হাওড়ে। এসব জমির ধান কাটতে মোট শ্রমিকের প্রয়োজন প্রায় ৮৪ লাখ জন। কিন্তু সেখানে শ্রমিকের ঘাটতি আছে ১৫ লাখ জনের বেশি, যা মোট প্রয়োজনের ১৮ শতাংশ। ফলে এ সময়ে প্রায় ২৫ দিনের জন্যে প্রতিদিন প্রায় ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে সেখানে (বণিক বার্তা, এপ্রিল ১৬, ২০২০)।

    বর্তমানে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। চলতি মৌসুমে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক যেতে পারছেন না সেখানে। ফলে এবার শ্রমিক সংকট আরো তীব্র হবে। অবশ্য সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের ধান কাটার কাজে লাগানো হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শ্রমিক সংকট এড়াতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দেশের শ্রম উদ্বৃত্ত জেলাগুলো থেকে শ্রমিকদের হাওড় অঞ্চলে পাঠানোর জন্য তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা শ্রম উদ্বৃত্ত জেলা বিশেষ করে মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় হাওড়ে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার তালিকা করেছে। এরই মধ্যে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা তাদের তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন (বণিকবার্তা, এপ্রিল ১৬, ২০২০)।

    এক্ষেত্রে এক অঞ্চলের শ্রমিক অন্য অঞ্চলে পরিবহণের কাজটি করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিবহণ (ট্রাক/বাস) ব্যবহার করতে হবে। ঠাসাঠাসি বা গাদাগাদি করে শ্রমিক পরিবহণ করা যাবেনা। সেই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে। হাওড় অঞ্চলে যেসব ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত নন, তাদের বোরো ধান কর্তনকালীন কৃষি শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত করা যেতে পারে। এছাড়া কেউ কেউ মনে করেন, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে শ্রমিক পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশের বড় পরিবহণ ব্যবসায়িদের কাজে লাগানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে শ্রমিক ঘাটতি অঞ্চলে যাতায়াদের ক্ষেত্রে এসব পরিবহণ ভূমিকা নিতে পারে।

    ২. ধান/চাল কেনা ও সরকারের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো

    এবারে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা প্রায় ২ কোটি টন। অথচ সরকার ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে মাত্র ১৯ লাখ টন, যা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। সরকারকে ধাপে ধাপে ধান কেনার লক্ষমাত্রা বাড়াতে হবে। এদিকে সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২০ লাখ টনের কিছু বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি ধান-চাল কেনা শুরু করলে তা রাখবে কোথায়? অনেকেই প্রস্তাব করেছেন, প্রশাসনিক তালিকা তৈরি করে বোরো মৌসুমের ধান কৃষকদের কাছেই রেখে দেয়া যেতে পারে। সরকার ধাপে ধাপে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই এই ধান কিনে নেবে। আর দীর্ঘমেয়াদে সরকারের নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

    কৃষকের ধান মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো

    পূর্বের মতো প্রতি গৃহস্থ ঘরে একাধিক ধানের গোলা না থাকায় কৃষক পর্যায়ে ধান রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা সেটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাব এসেছে: ক) উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব অডিটরিয়াম বা কমিউনিটি সেন্টার আছে সেগুলো ২-৩ মাসের জন্যে ভাড়া নিয়ে দ্রুত ধানের গুদামে পরিণত করে ফেলা যেতে পারে। খ) কৃষকদের টিন ও আনুষঙ্গিক কিছু উপকরণ প্রণোদনা আকারে দিলে কৃষক নিজের সুবিধা অনুযায়ী ধানের গোলা বা ছোট ছোট গুদামঘর তৈরি করে নিতে পারে। গ) প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বা ইউনিয়ন অফিসগুলোর সামনে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়ে খালি পড়ে থাকা মাঠে অস্থায়ী ধান গুদাম তৈরি করাও দুরূহ নয়। এছাড়া ধানের গুদামঘর তৈরি ও তার ব্যবস্থাপনা কারিগরী দিক থেকে কঠিন কোন কাজ নয়। কৃষকরাই পালা করে এসব গুদামের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবেন।

    এর পাশাপাশি ধান থেকে চাল তৈরির সবগুলো বড় মিলকে আগামী কয়েক মাস সরকারের নিবিড় নজরদারিতে রেখে কাজে লাগাতে হবে। সরকার তার ক্রয়কৃত ধান নির্ধারিত দাম দিয়ে চাল করিয়ে নিবে এবং নিয়মিত বিতরণ করে যাবে। এছাড়া স্থানীয় চাতালগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে লাগাতে হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

    সরকারি গুদামের সক্ষমতা বৃদ্ধি

    দীর্ঘমেয়াদে সরকারি গুদামের সক্ষমতা ধাপে ধাপে বাড়াতে হবে। প্রতি জেলায় সরকারি গুদাম এবং সবধরনের পচনশীল সবজির জন্যে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টন ধান মজুদের কাঠামোগত সক্ষমতার জন্যে কৃষক পর্যায়ে বা কমিউনিটি পর্যায়ে বিনিয়োগ করতে হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারকে ন্যূনতম এক কোটি টন ধান মজুদ করার কাঠামোগত সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে।

    চালের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা

    বেসরকারি মিলগুলোর ধারণ সক্ষমতা প্রায় ১ কোটি টন। এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ লক্ষ টন স্থান খালি আছে। করোনাকালীন সময়ে সরকারি গুদামের চাল দুস্থদের মধ্যে বিতরণের পর সরকারি মজুদ কমে যাওয়ায় বেসরকারি চাল ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখতে হবে। বড় মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারি দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। এই ধরণের সখ্যতার ভিত্তিতেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। ভবিষ্যতে সরকারকে এই ধরণের সিন্ডিকেট ভাঙতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করতে হবে।

    ৩. কৃষি খাতে সরকারের করোনা-কালীন প্রণোদনা বাস্তবে কে পাবে?

    সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪ শতাংশ সুদে মোট পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে কৃষককে। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রকৃত কৃষক বা বর্গা কৃষক এই সরকারি ঋণ পর্যন্ত আদৌ পৌঁছাতে পারবে কিনা? গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সম্পর্কিত সার্কুলারে বলা হয়েছে, শস্য ও ফসল খাত ব্যতীত কৃষির অন্যান্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাত, যেমন: হর্টিকালচার (মৌসুমি ফুল ও ফল চাষ), মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে এই ঋণ দেওয়া হবে। এবং কোনো খাতে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। এছাড়াও সার্কুলারে আরো উল্লেখ করা আছে, ঋণ নেয়ার ১৮ মাসের মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে হবে। প্রথম ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড থাকবে (কিস্তি দিতে হবেনা)। পরবর্তী ১২ মাসে বারো কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

    সম্প্রতি প্রথম আলোর একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনে সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরেন এভাবে: ‘‘মূলত, কৃষিঋণ-নীতিমালা অনুযায়ী কৃষকের উৎপাদিত ফসল বন্ধক রেখে কৃষিঋণ নিতে হয়। এর সরকারি নাম হলো ‘শস্য বন্ধকি দলিল’। অর্থাৎ কৃষক তাঁর শস্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখবেন। ধান বা যেকোনো শস্য বিক্রি করে ঋণের টাকা আবার ফেরত দেবেন। কৃষক ঋণ পাবেন কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী। এ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ একর বা ১৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। সে জন্য তাঁদের জমির দলিল বন্ধক রাখতে হবে। যাঁদের জমি নেই, তাঁরাও এই ঋণ পাবেন, তবে সে ক্ষেত্রে কৃষককে জমি লীজের চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে প্রান্তিক ভূমিহীন চাষি কখনোই চুক্তি করে জমি লিজ নেন না। আর অকৃষক জমির মালিক লিখিত চুক্তির মাধ্যমে কোনো চাষিকে জমি বর্গা দেন না।… কারণ লিখিত চুক্তির মাধ্যমে জমি বর্গা দিলে সরকারকে ফি দিতে হয়। সেই ফি জমির মালিককেই পরিশোধ করতে হয়। ফলে, এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ থেকে বর্গা চাষির ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শুধু তা-ই নয়, কৃষকদের সবচেয়ে বড় অংশ ধান চাষ করেন। কোনো এলাকায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বড় একটি অংশ ব্যাংক পর্যন্ত যান ঋণের জন্য, তাহলে ওই অঞ্চলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশই কেবল ধানচাষিরা পাবেন। এছাড়াও, বাংলাদেশে জেলাভেদে ফসলের উৎপাদনও ভিন্ন হয়। ফলে, সারা বাংলাদেশের কৃষকের জন্য গড় এই বেঁধে দেওয়া শতাংশ হার কৃষকের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়” (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)।

    এতে আরও বলা হয়েছে, “এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তা হলো যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকে, তারা এই ঋণ প্যাকেজের আওতায় আসবে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পাবে। অর্থাৎ যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করেন, তিনি পাবেন সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। আর যিনি কৃষকের ফসল কম টাকায় কিনে বেশি টাকায় বিক্রি করবেন, সেই মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা ঋণ পাবেন পাঁচ কোটি টাকা। অথচ বহুকাল ধরে দাবি জানানো হচ্ছে, কৃষকের উৎপাদিত ফসল কীভাবে সরাসরি ক্রেতার কাছে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা সরকারিভাবে গড়ে তোলা হোক। উল্টো এই ঋণব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পোক্ত করা হয়েছে” (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)।

    প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৮ ভাগ কৃষিতে নিযুক্ত। এর বড় অংশের হাতে নিজের জমি নেই। জমির মালিকদের একটি বড় অংশই অকৃষক। বড় ধরনের জমির মালিকানার পরিবর্তন বা ভূমি সংস্কার ছাড়া বাস্তবে কৃষকের জন্য কিছু করা সম্ভব না। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায়ও যদি কৃষকের জন্য কিছু করতে হয়, তাহলে বর্গা কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা করতে হবে।

    কৃষি খাতে প্রণোদনার ধরণ কেমন হওয়া উচিত?

    বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ওঠার পরপরই কৃষক পরবর্তী মওসুমের ধান আবাদের প্রস্তুতি নেবে। সেক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সরকারি সাহায্য নিশ্চিত করতে হবে। যেমন: ক) জমির লিজ মূল্য দিতে গিয়ে কৃষকের আয়ের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যায়। এটা এলাকা ও জমির ধরন ভেদে কম-বেশি হলেও বাৎসরিক গড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। যা কৃষককে অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। কমপক্ষে আগামী ১ বছর জমির লিজমূল্য সরাসরি ভর্তুকি হিসাবে উৎপাদক কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে এবং জমির মালিকরা যেন কোনভাবেই লিজ মূল্য বাড়াতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি কৃষির শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য নতুন বাস্তবতার নিরিখে দীর্ঘমেয়াদে ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। খ) কৃষি উপকরণ যেমন সার-বীজ-কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি উৎপাদক কৃষকের হাতে ভর্তুকি পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি বাজারজাতকারীদের উপর কড়া নজরদারী রাখতে হবে যেন এ সময়ে কোনভাবেই এসব পণ্যের দাম বেড়ে না যায়। গ) ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি কমপক্ষে আগামী ১ বছর বন্ধ রাখতে হবে। উৎপাদক কৃষকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে এবং বিনাসুদে সরকারী ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

    ৪. কৃষকের ঋণের জাল

    আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এর ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, এবং দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে প্রায় ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। এসব ঋণের সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি কৃষি ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশ হলেও কৃষকের মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ আসে কৃষি ব্যাংক থেকে (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)। ইফপ্রির সমীক্ষা অনুযায়ী: কৃষক মোট ঋণের ৩৬ শতাংশ নেয় এনজিও থেকে; আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১৯ শতাংশ; জমির মালিকের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১৫ শতাংশ; মহাজন বা দাদন থেকে ১১ শতাংশ এবং বিভিন্ন সমিতি থেকে আসে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ। এদিকে সরকারের কৃষি ব্যাংকের ৬ শতাংশ ঋণের সবচেয়ে বড় অংশটি পান বড় চাষিরা, যা প্রায় ১৫ শতাংশ। বড়, মাঝারি ও ছোট চাষি মিলে মোট ঋণের ৩৬ শতাংশ পান। আর প্রান্তিক চাষি পান মাত্র ৫ শতাংশের মতো। বর্গা চাষি, অর্থাৎ অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষ করেন—এমন কৃষকেরা এই ঋণ পান না। ফলে তাঁদের এনজিওসহ অন্য উৎসের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয় (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০।)

    বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, এবং দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে প্রায় ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। এসব ঋণের সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ।

    এক্ষেত্রে সরকারি ঋণের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় ঋণদান সমিতি ও গ্রামে সঞ্চয়ী সমিতিগুলোর জন্য প্রণোদনা ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ক্ষৃদ্র ঋণের বিকল্প মডেল হিসাবে সমবায় গঠনের দিকে জোর দিতে হবে। পুরনো ধারার সমবায়ের বদলে নতুন বাস্তবতার নিরিখে নতুন ধরনের কৃষি ও গ্রামীণ সমবায় গঠনে জোর দিতে হবে।

    ৫. দুর্যোগকালীন কৃষি সহায়তা প্রসঙ্গে

    কৃষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রায় কখনোই বিবেচনায় নেয়নি। বলা হয়, যুগে যুগেই কৃষি অরক্ষিত ও অনিশ্চিত জীবিকা। ঝড়, বন্যা, শিলাবৃষ্টি, পোকার আক্রমণ এসব প্রাকৃতিক কারণেই কৃষকের ঝুঁকি সীমাহীন। কৃষক বাজারদরের কাছেও জিম্মি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে এমন একটি দেশও নেই, যেখানে কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। পার্থক্য হলো কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চিত-এই বাস্তবতা বহু দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে স্বীকৃত। তাই ঝুঁকি নিয়ে ফসল ফলানোর জন্য কৃষিতে বিপুল প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। কখনো ভর্তুকি, কখনো শস্যবিমা, কখনো রিস্ক কাভারেজ (ঝুঁকি মিটিয়ে দেওয়া), কখনো প্রাইস লস কাভারেজ (দাম পড়ে যাওয়ার লোকসান মেটানো), কখনো সরাসরি অর্থ প্রদান ইত্যাদি বিভিন্নভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়। বাংলাদেশে প্রান্তিক ও বর্গাচাষী কৃষিতে বিনিয়োগ করেন মূলত ঋণ করে ও বিকল্প পেশা থেকে আয় করে। ফলে বোরো মৌসূমে কাল বৈশাখী/শীলা বৃষ্টি/ পোকার আক্রমণ এবং বোরো পরবতী মৌসুমে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকের পক্ষে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষকদের দুর্যোগকালীন সহায়তা কী কী ধরনের হতে পারে এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভাবে একটি বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

    মাহা মির্জা: লেখক, গবেষক
    ইমেইল: maha.z.mirza@gmail.com

    তথ্যসূত্র:
    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’। ২০১৮।
    আরিফুজ্জামান, মোঃ। ‘কৃষিঋণ কৃষককে কতটা রক্ষা করবে?’ প্রথম আলো। ১৭ এপ্রিল, ২০২০।
    শাহীন, সাইদ। ‘হাওরে দিনে ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিক প্রয়োজন।’ বণিক বার্তা। এপ্রিল ১৬, ২০২০।
    এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন: সাইদ শাহীন, আবুল কালাম আজাদ, এবং আলতাফ পারভেজ।

    (সর্বজনকথা অনলাইন বিশেষ সংখ্যা)

  • স্বাস্থ্যখাতের দূর্নীতি নিয়ে জাসদের ক্ষোভ ও মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্নতোলা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা   গ্রহণের দাবী

    স্বাস্থ্যখাতের দূর্নীতি নিয়ে জাসদের ক্ষোভ ও মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্নতোলা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ বৃহস্পতিবার ৩০ এপ্রিল এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সরবারহকৃত এন-৯৫ মাস্কের নামে মানহীন নকল মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্নতোলা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ করোনাকালেও স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক জরুরি কেনাকাটায় ভয়ানক দূর্নীতির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিজেদের দূর্নীতি ও লুটপাটের দায় আড়াল করতে এবং তাদের অপরাধের নিশানা ও চিন্থ মুছে ফেলতে চিকিৎসকদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে, চাপের মধ্যে রাখছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরবারহকৃত নকল ও মানহীন মাস্ক, পিপিই, গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর কারণেই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথমসারির যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, করোনাকালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেনাকাটায় দূর্নীতি-লুটপাট চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ও পরিকল্পিতভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জঘন্য অপরাধের সমতুল্য। জাসদ নেতৃদ্বয় মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্নতোলা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ঐ পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিনিসহ সমগ্র চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেনাকাটার সাথে যুক্ত ভয়ংকর দূর্নীতিবাজ-লুটেরা কর্মকর্তাদের অবিলম্বে অপসারণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

  • মহান মে দিবস উপলক্ষে জাসদের বিবৃতি

    মহান মে দিবস উপলক্ষে জাসদের বিবৃতি

    মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি মহান মে দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী, মেহনতি মানুষের প্রতি সংগ্রামী শুভেচ্ছে জানিয়েছেন। তারা বলেন, সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশের সকল মানুষ এক ভয়ংকর করোনা মহামারীকাল অতিবাহিত করছে। এই বৈশ্বিক মহামারী সংকটে সবচাইতে বেশি সংকট, দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা, বিপর্যয়, অসহায়, নিরুপায় অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী-শ্রমজীবী-কর্মজীবী-মেহনতি মানুষ। তারা করোনা সংক্রমনের ঝুঁকির সাথে আয় সংকট, খাদ্য সংকট ও চাকুরিহীনতার ঝুঁকির মধ্যে অমানবিক জীবনযাপন করছে। জাসদ নেতৃদ্বয়, এই করোনা সংকটকালে সরকারী-বেসরকারী-ব্যক্তি মালিকানা নির্বিশেষে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানি সকল কল-কারখান-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মচারী যেন অনাহারে না থেকে, চাকুরিচ্যুৎ না হয়, পাওনা বেতন থেকে বঞ্চিত না হয় এবং লকডাউনকালে তাদের খাদ্যত্রান সহায়তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

  • অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আর নেই

    অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আর নেই

    বাংলাদেশের অগ্রগণ্য প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। সোমবার রাত ২টার পর ঘুমের মধ্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়।

    ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী মৃত্যু পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।

    একুশে পদক পাওয়া এই শিক্ষককে ২০১৮ সালে সরকার জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

    বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে যেসব বড় বড় ভৌত অবকাঠামো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করা এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৯৩ সালে যাদের হাত দিয়ে বাংলাদেশের ইমারত বিধি তৈরি হয়েছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরী তাদের একজন।

    দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। আর এখন পদ্মার ওপরে দেশের সবচেয়ে বড় যে সেতু তৈরি হচ্ছে, সেই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও তিনি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

    ১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী ও হায়াতুন নেছা চৌধুরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় ৷

    বাবার বদলির চাকরির কারণে তার শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রাথমিক শেষ করে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ভর্তি হলেও পরে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে। প্রথমে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে সেইন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন।

    ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তখনকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ)। ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন।

    ১৯৬৪ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান জামিলুর রেজা চৌধুরী। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬৮ সালে সেখানেই পিএইচডি শেষ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘শিয়ার ওয়াল অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস অব হাইরাইজ বিল্ডিং’।

    পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে আবার বুয়েটে শিক্ষকতা শুরু করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। পদোন্নতির ধারায় ১৯৭৬ সালে হন অধ্যাপক।

    ২০০১ সাল পর্যন্ত বুয়েটে অধ্যাপনা করার সময় বিভিন্ন সময়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক ছিলেন তিনি। পরে ওই কম্পিউটার সেন্টারই বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজিতে পরিণত হয়। 

    বুয়েট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০১ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সেই দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন।

    বিশেষজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়েও সরকারের বিভিন্ন পরামর্শক প্যানেলে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ডাক পড়েছে।

    তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সফটওয়্যার রপ্তানি এবং আইটি অবকাঠামো টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর। ১৯৯৯ সালে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা করার জন্য যে কমিটি করেছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরীকেই তার আহ্বায়ক করা হয়। ২০০১ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর আইটি টাস্কফোর্সেরও সদস্য করা হয়।

    পুরকৌশলের এই শিক্ষক নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

    ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করতে হয়েছিল তাকে। 

    যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো জামিলুর রেজা চৌধুরী নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটিতেও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

    বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডসহ নানা আয়োজনে জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন নেতৃত্বের ভূমিকায়।

    বহুতল ভবন নির্মাণ, স্বল্প খরচে আবাসন, ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নকশা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ইমারত রক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রকৌশল নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৭০টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তার।

    কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ২০১৭ সালে সরকার তাকে একুশে পদক দেয়। ২০১৮ সালের জুনে আরও দুইজন শিক্ষকের সঙ্গে তাকেও জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করা হয়।

    ওই বছরই জাপান সরকার জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সম্মানজনক ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান, গোল্ড রেইস উইথ নেক রিবন’ খেতাবে ভূষিত করে। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি তিনি।

    দীর্ঘ এই পথযাত্রায় জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গী ছিলেন তার স্ত্রী সেলিনা চৌধুরী। তাদের মেয়ে কারিশমা ফারহিন চৌধুরীও একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, আর ছেলে কাশিফ রেজা চৌধুরী কম্পিউটার প্রকৌশলী।

    ( বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হতে গৃহীত)

  • মুজিব বাহিনীর সেই দু্র্ধর্ষ কমান্ডার : শেখ জামালের জন্মদিন আজ

    মুজিব বাহিনীর সেই দু্র্ধর্ষ কমান্ডার : শেখ জামালের জন্মদিন আজ



    **************************
    রুদ্র সেজান হক : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৬৭ তম জন্মদিন আজ ২৮ এপ্রিল।

    ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন শেখ জামাল।

    শেখ জামালের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ছিল ঘটনাবহুল। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাকী সদস্যদের মতই গৃহবন্দী ছিলেন। মধ্য আগস্টের একদিন সকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব দেখতে পান ছেলে ঘরে নেই। বেগম মুজিব তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। সারাবিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গায়েব করেছে।

    গৃহবন্দি দশা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তখনকার উত্তর প্রদেশের দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর হয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তিনি সমন্বিতভাবে
    মুজিব বাহিনীর হয়ে ৫ নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। তবে কোনো এক কৌশলগত কারণে এ কথা চেপে রেখেছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকার।

    শেখ জামাল অত্যন্ত চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন, মনের কথা মনেই রাখতেন সহজে বের করতেন না। ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি অত্যন্ত পড়ুয়া প্রকৃতির ছিলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন।

    ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে পালিয়ে শেখ জামাল সরাসরি চলে গিয়েছিলেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। তারপর ট্রেনিং শেষ করবার পর তাকে মুজিব বাহিনীতে নেওয়া হয়। সেখানেই যুদ্ধের বাকি সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন জামাল। কিন্তু জামালের এই খবরটা সঙ্গত কারণেই একেবারে চেপে যায় স্বাধীন বাঙলা প্রবাসী সরকার, কারণ এই ইস্যুতে প্রবাস সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।

    ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাবমেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের।

    যুদ্ধশেষে সদ্য কমিশন পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংকোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। পরিবারের সকলকেই সুখবরটি দিতে বাড়িতে এসেছিল। ১৪ আগস্ট রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বেগম মুজিব নাকি স্নেহভরে তাকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতটুকু থেকে ভোরে যাস।’ জামালের ক্যান্টনমেন্টে আর যাওয়া হয়নি।

    পরদিন রাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার শেখ জামালসহ তার পরিবার। এভাবেই থেমে যায় এই টগবগে তরুণের আলো।

    আজকের দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানীর শেখ জামালের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও তার পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শহীদ শেখ জামালের জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দলের সব সহযোগী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

    পাদটীকা
    ********
    শেখ জামাল আগরতলা থেকে বিমানে উত্তর প্রদেশ- এর দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানেই আজকের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কামরুল আনাম খান খসরু, মোস্তফা মহসীন মন্টু, শেখ মারুফ, অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শেখ শহীদুল ইসলাম, আ ফ ম মাহবুবুল হক, খোন্দকার মোজাম্মেল হক, আহসান উল্লাহ মনি, কুদরতে এলাহি পনির, সিদ্দিক জামাল নান্টুসহ ছাত্রলীগের নেতারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের সময় মান্নান চৌধুরী এবং শেখ মারুফ ছিলেন শেখ জামালের রুমমেট।
    ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, কাজী আরেফ আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মনিরুল হক চৌধুরী, মার্শাল মনি, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত প্রমুখ ছিলেন প্রথম সারির কমান্ডার।
    তখনকার চার বিভাগের সামরিক অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমদ। মুজিব বাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ভারতীয় মেজর জেনারেল সুজন সিং ওবান।

    ( আজকের সূর্যোদয় অনলাইন হতে গৃহীত)

  • করোনাকাল

    করোনাকাল

    মো. আহাদ উল্লাহ

    যিনি একজন ডাক্তার এবং সাথে যদি অধ্যাপক লেখা থাকে উনি এই করোনাকালের মূহুর্তে মেজর জেনারেলের মতো দায়িত্ব পালন করার কথা। সমস্ত সম্মানীত অধ্যাপকেরাই এই যুদ্ধের নেতৃত্বে থাকার কথা। সচিব, মন্ত্রী, সরকার এরা শুধুই রসদ সরবরাহ করবে। ৮মার্চের আগেই বাংলাদেশ উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে সতর্ক বার্তা দিয়েছিল WHO. আশ্চর্যের বিষয় হলো ৪৫দিন পরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে মেডিঃ অধ্যাপকদের নিয়ে। বলেছিলাম সরকার করোনার পিছু পিছু হাটছে, এইভাবে হেটে দেড় হাজার মাইল পিছনে পড়ে গেছে। এখন দৌড়াচ্ছে। আইইডিসিআর-এর দুই দুইজন রোগতত্ত্বের অধ্যাপক দিয়ে কতজনের কাশি হল, জ্বর হলো, গলা ব্যথা হলো, মারা গেলো, দুঃখ প্রকাশ এগুলো বলাচ্ছে। ব্রিফিংয়ে যে কি মজা পাইলো, রিজভী সাহেবের মতো। মাঝে মাঝে মন্ত্রী মহোদয়ও বুলেটিন পড়ছেন। মাননীয় মন্ত্রী হচ্ছেন এ যুদ্ধের জেনারেল। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব স্পোকম্যান হতে পারতেন সাথে বিটিভি থেকে দুজন ঘোষক নিতে পারতো। মনে হচ্ছে কোথাও একটি সমস্যা আছে। আসলে সংবাদ দেয়ার বা পাঠ করার জন্য অধ্যাপকদের এখন সময় নয় বা মানায় না। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (IEDCR) যে জনবল তাতে এই করোনা যু্দ্ধের জন্য প্রাথমিকভাবে ঠেকিয়ে রাখার জন্য একটি পদাতিক ডিভিশন দরকার। এই প্রতিষ্ঠানটি স্রেফ একটি বিগ্রেডের মতো, অনেক প্রকার বিগ্রেড ও রেজিমেন্ট নিয়ে তো একটি ডিভিশন। যেমন সেনা বাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন, সাভার। এই ডিভিশন শুধু ঢাকাকে রক্ষা করবে, তার জন্য সব আছে তাদের। তো, সারা দেশ! iedcr এরাতো সারাদেশে রোগ/রোগী চিহ্নিত করার ও গবেষণা করার একচ্ছত্র দায়িত্ব নিয়েছে, আর কেউ করবে না। বড় সমস্যা এই জায়গায়। এখন হযবরল। হ্যা সরকারী ভাবেই হবে, প্রতিটা সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে অঞ্চল ভাগ করে গাইড লাইন দিয়ে আগেই প্রস্তুত করা যেত। তা করা যেত, করবে না। এখন গলায় কাটা আটকে গেছে, বিড়ালের পা ধরবে, মাসিকে গিয়ে বলে আসবে, মুটি মুটি সাদা ভাত গিলেও তো হবে না। সারাদেশে ডাক্তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে তাই মনে হয়। আমাদের যেহেতু চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত নয়, স্যাম্পল টেস্ট করেই কন্ট্রোল করে ফেলা যেত।
    দঃ কোরিয়া জার্মানির রাস্তার গাড়ী চালকের পর্যন্ত স্যাম্পল নিয়ে রেন্ডম টেস্ট করে ভাল ও আক্রান্তদের আলাদা করে সবকিছু এখন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ভয়ের বিষয় হলো যাকে টেস্ট করা হলো এবং সে পজেটিভ হলো- সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশন ( সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া) করার কথা। টেস্ট করার আগের সমস্ত কন্ট্রাক্ট পারসন কে কে ছিল! এই প্রশ্নের উত্তরটা আইইডিসিআর দিচ্ছে না। বলছে কোয়ারান্টাইন (যে সময় পর্যন্ত রোগ সংক্রামণ আশঙ্কায় পৃথক রাখা হয়)এর কথা। সেটা কে বাস্তবায়ন করবে। যদি করেই থাকে ছড়ালো কেন? পুলিশ মিলিটারি দায়ী? প্রশাসন?
    দায়টা আমাদেরও নিতে হবে। পুলিশ ঘরে ঢুকিয়ে গেলো, বসে রইলাম। আরে! মনে হল পুলিশের কাঁধে তো পুরানো বন্দুক! ধূররর! এ বন্দুকের গুলি ফুটে না, কিছুই করতে পারবে না। সামনে একজন সাংবাদিক বা ক্যামেরাম্যান থাকলে তো কথাই নেই। পিটাবে দূরের থাক, দুইহাত জোড় করে বলবে ঘরে যান, বাবা ঘরে যান। মজাই আলাদা! পাবলিক মজা লুটছে!
    এদিকে ফেসবুকাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এক ভিক্ষুককে নিয়ে। আরে! লোকটি পুঁজিবাদী বিশ্বের সব খবর রাখে। সে তো জানেই ইনভেস্ট একটা করলে প্রণোদনা পাবেই। তো পেয়েছে। কোটিপতিরা যেরকম পাবে, হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা।
    মেম্বার, চেয়ারম্যান, ডিলার সবই তো চলতি সরকারের দলীয় লোক। কোনোভাবে হয়তো জেনে গেছে শেখের বেটি তাদের কোনো প্রণোদনা দিবেন না। তাই নিজেরাই চাল ডাল তেল নুন যা পারছে নিজ হাতে প্রণোদনা নিয়ে নিচ্ছে। ভাগে যারা কম পেয়েছিল তারাই পুলিশকে বলে দিয়েছে; করোনাকাল যাক টের…। চলবে…।
    পুনশ্চঃ সারা গিলবার্টের টিকা সফল হলে কিরকম হবে এই গ্রহ ? পুরুষতান্ত্রিকদের মহিষ শক্তির দাপটওয়ালা, ওয়াজআলাদের চেহারা, স্বৈরাচারী শাসকদের ফরমান কোথায় যায়, সেটাও করোনাকালের মধ্যে হিসাবটা সবাই লিখে রাখবেন যেহেতু গিলবার্ট একজন নারী।

    (+ প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের গণসাংস্কৃতিক বিভাগের দায়িত্বে)