প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গণস্বাস্থ্যের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষায় গঠিত পারফরম্যান্স কমিটি। বুধবার (১৭ জুন) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে তারা প্রতিবেদন জমা দেন।
কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুম। করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট (র্যাপিড ডট ব্লট) কার্যকর কি-না, এই কিট করোনা শনাক্তে ব্যবহারের উপযোগী কি-না, তা বলে দেবে এই প্রতিবেদন।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জাগো নিউজ জানান, বুধবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের জন্য খুবই সীমিত সংখ্যক গণমাধ্যমকে ডাকা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানিয়েছে, কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিটের ব্যাপারে তাদের অবস্থান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, বিএসএমএমইউর পারফরম্যান্স কমিটির কাছ থেকে ইতিবাচক রিপোর্ট এলেই তারা দ্রুত নিবন্ধন দেয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর গত ৩০ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে বিএসএমএমইউতে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার অনুমতি দেয়।
গত ২ মে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে। পরে বিএসএমএমইউতে কিট জমা দেয় গণস্বাস্থ্য।
ডেক্স রিপোর্ট : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে। করোনা নেগেটিভ হলেও তার শরীরে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব আগের তুলনায় বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) বিকেলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেরিভায়েড ফেসবুক পেজে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার আপডেট শিরোনামে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মামুন মোস্তাফিজ বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বাস্থ্যের অবস্থা আজ কিছুটা চিন্তাযুক্ত। তার নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। অবস্থা বিবেচনায় নতুন করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডা. জাফরুল্লাহ সবার দোয়া চেয়েছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বর্তমানে ওনার নিজের স্থাপিত প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মামুন মোস্তাফিজ ও অধ্যাপক ডা. নাজিব মোহাম্মদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
নিজস্ব প্রতিনিধি : করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে আমেনা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ১১টায় তিনি মারা যান। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মফিজুল মোড়লের স্ত্রী। মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম জানান, গত রোববার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমেনা বেগম (৩৮) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেনা বেগম রাতে মারা যান। তিনি আরো জানান, ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এখনও তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জয়ন্ত সরকার জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মৃতের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরো জানান, মৃত ওই নারীর বাড়িসহ তার আশোপশের কয়েকটি বাড়ি লক ডাউন করা হয়েছে। এনিয়ে সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে আরো ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত মোট ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৩ জনের। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২১ জনের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কর্যালয়ে এসে পৌছেছে। এরমধ্যে ৮৫ টি রিপোর্ট পজিটিভ বাকী সব নেগেটিভ এসছে।
করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সংক্রমণের ভিত্তিতে ঢাকা শহরের ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
এদিকে, রেড জোন চিহ্নিত এলাকাগুলোতে সরকারি নির্দেশাবলী যথাযথভাবে নিশ্চিতের উদ্দেশে সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে।মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইতোমধ্যে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার পরীক্ষামূলক রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হয়েছে। সে এলাকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত নাসিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবরস্থানে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু স্বাক্ষরিত।গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থান জামে মসজিদে জানাজা শেষে সেখানেই নাসিমকে দাফন করা হয়।
শ্রদ্ধা জানানোর সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে অধ্যাপক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চলে যান বলে জানান মিন্টু। তিনি বলেন, হাসপাতালে আরো ৪ থেকে ৫ দিন থাকবেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর টেস্টের রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এন্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে বাংলাদেশ জার্নালকে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার।
মহিবুল্লাহ খন্দকার বলেন, পরীক্ষায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা নেগেটিভ পাওয়া গেছে। আর পরীক্ষায় তার দেহে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গত ৫ জুন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। ওই দিন থেকেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজের স্থাপিত প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ব্রিগেডিয়ার অধ্যাপক ডা. মামুন মুস্তাফি, অধ্যাপক ডা. নজীবের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।
গত ২৪ মে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা শনাক্ত হয়।
ন্যাশনাল ডেক্স : দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক মন্ত্রী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জননেতা মোহাম্মদ নাসিম।
আজ সকালে প্রথমে রাজধানীর সোবহানবাগ মসজিদে নামাযে জানাজা শেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিজ বাড়িতে। এরপর সকাল সাড়ে দশটায় বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সকাল সাড়ে দশটায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ’র পক্ষে তার সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সামরিক সচিব, এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা দলের পতাকা মুড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নামাজে জানাজায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হলেও প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় নিতে শত শত নেতাকর্মীর ঢল নামে বনানী কবরস্থানে। বনানীতে মানুষের ঢল যেন না নামে সেজন্য রাস্তায় চেক পোস্ট বসানো হয়। তারপরও মানুষের ঢল নামে।
গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর একটি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে মোহাম্মদ নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলেসহ অসংখ্য নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বনানীতে জানাজার আগে তার বড় সন্তান সাবেক এমপি প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয় দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আমি তার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, মানুষ ভুলে উর্ধ্বে নয়, আমার বাবারও ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে সন্তান হিসেবে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাই। আপনাদের প্রিয় নেতাকে ক্ষমা করে দেবেন।
সিরাজগঞ্জবাসীর উদ্দেশে নাসিমপুত্র জয় বলেন, সিরাজগঞ্জের মানুষের দাবি ছিল আমার পিতাকে একনজর শেষ দেখার। কিন্তু করোনাভাইরাসের কথা চিন্তা করে সিরাজগঞ্জবাসীর লাখ লাখ মানুষের দাবি পুরণ করতে পারিনি। আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।
বনানী কবরস্থানে নামাজে জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান প্রমুখ।
পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
ন্যাশনাল ডেক্স : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) নাজমুল হক সৈকত গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ধারণা করছি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আগে থেকেই ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান শেখ মো. আবদুল্লাহ। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের আগে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি।
গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি।
মোহাম্মদ নাসিম (২ এপ্রিল ১৯৪৮ – ১৩ জুন ২০২০) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালেও স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে ছিলেন।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলারকাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী[৩] এবং মাতা আমেনা মনসুর। পিতা মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[৪]
পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ সালে নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। ঐ নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিমকে মনোনয়ন পান এবং বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
ব্যক্তিগত জীবন
পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ।
মৃত্যু
রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। ওই দিনই কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এর চার দিন পর, চিকিৎসার সময় তার ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এরপর ৪ জুন অবস্থার উন্নতি হয়, তবে পুনরায় ৫ জুন ভোরে তিনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে আইসিইউতে রাখা হয়। তার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বোর্ড গঠিত হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস অনুপস্থিত পাওয়া যায়। ১২ জুন পরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পরে পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ ১৩ই জুন ঢাকায় বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ন্যাশনাল ডেক্স : সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রাজনীতির সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম সম্পৃক্ত হন ষাটের দশকে। শুরুর দিকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ করতে শুরু করেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের দোসরা এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।Image caption জনসভায় ভাষণ দানরত মো. নাসিম।
উনিশশো পঁচাত্তর সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের হত্যাকাণ্ড ও জেলখানায় আরো তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর পিতা এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন।
পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।
ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেকজন নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছেলে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’১৯৭৫ সালের পর তাকে বেশ একটা দুঃসময় পার করতে হয়। আমাদের সবাইকেই সেটা করতে হয়েছে। ৭৮ সালের দিক থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। নেত্রী আসার পর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে আসার পর) তিনি সবসময় নেত্রীর সঙ্গেই থেকেছেন।‘’
‘’একাত্তর সালে মুক্তিসংগ্রামের সময় কলকাতায় আমরা এক বাড়িতে থাকতাম। জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে আমরা তাকে আমাদের বড় ভাইয়ের মতো মনে করতাম। তিনিও সেভাবেই আমাদের খোঁজখবর রাখতেন। তাকে দেখেছি, যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশেও শক্ত মন নিয়ে দাঁড়াতে পারতেন, কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রশাসক হিসাবেও তাকে সফল দেখতে পেয়েছি।‘ছবির কপিরাইট Facebook Image caption প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মো. নাসিম।
‘’তিনি অনেক সময় গর্ব করেই বলতেন,আমি কোন বেঈমানের সন্তান নই, আমি বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত আদর্শের সৈনিক, তার সন্তান।‘’ বলছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
উনিশশো একাশি সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে মোহাম্মদ নাসিম যুব সম্পাদক হন। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসেন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ১৯৮৭ তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তার আগের বছর, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতির ক্ষেত্রে সারাজীবন সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ষাটের দশক থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একটা রাজনীতিক পরিবারের বেড়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে সাজা পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সম্মুখ সারিতে ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটা সংগ্রামের সাথে তিনি সামনের কাতারে ছিলেন।‘’
আওয়ামী লীগের ‘৯২ ও ‘৯৭ সালের জাতীয় সম্মেলনে তাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।ছবির কপিরাইট Facebook
উনিশশো ছিয়ানব্বই, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একসময় তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজনীতিতে তাদের পরিবারের ভূমিকা নিয়ে ‘সংসদে তিন প্রজন্ম’ নামের একটি বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের ভূমিকা নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। তিনি তিন সন্তানের জনক।
তাঁর নির্বাচনী এলাকা কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’তার পিতাকে যেমন এলাকার লোক দরকারের সময় পেতো, তেমনি তাকেও আমাদের যেকোনো দরকারে সবসময় কাছে পেয়েছি। প্রতিমাসে কয়েকবার তিনি এলাকায় আসতেন। তিনি বিদেশে থাকলেও আমাদের ফোন করে এলাকার খোঁজখবর নিতেন। দলমত নির্বিশেষে এখানকার সবাই জানে, তার মতো নেতা পাওয়া যায় না।‘’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।
রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি এইচএসসি পড়ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। একবছর পরে তিনি ছাড়া পান।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিযানে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
সেই সময় অবৈধভাবে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালে মোহাম্মদ নাসিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত ওই সাজা ও মামলা বাতিল করে দেন।
কিন্তু মামলায় সাজা হওয়ার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। সেই আসনে তার ছেলে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। মামলা ও সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকেন।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রী না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
ন্যাশনাল ডেক্স : জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম।রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সকল ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ন্যাশনাল ডেক্স : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই। তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আজ শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন।মোহাম্মদ নাসিম স্ত্রী, তিন ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ নাসিম।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা রয়েছে-এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক চিন্তার ঘাটতি থাকছে।
বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তার কোন ছাপ না থাকায় ঢিলঢালা সাধারণ ছুটি থেকে শুরু করে তা প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতা চোখ পড়ছে।
আসলে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব থাকছে কিনা- এবং পরিস্থিতি সামলানোটা সরকারের জন্য কি কঠিন হয়ে উঠেছে—এনিয়ে নানা আলোচনা এখন চলছে।
এপ্রিলের শেষে সাধারণ ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস খোলার কারণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। সমালোচনার মুখে আবার গার্মেন্টস বন্ধ করা হলে শ্রমিকরা ঢাকা ছেড়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছুটা ক্ষোভের সাথে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত না করার কথা তুলে ধরছিলেন।
“একটা ন্যাশনাল কমিটি ফর্ম করা হয়েছে। ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে। কিন্তু ন্যাশনাল কমিটিতে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের নলেজে নাই। কখন ফ্যাক্টরি খোলা হবে বা খোলা হবে কিনা-সে বিষয়ে আমরা জানি না। মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে বা আলোচনা-সে বিষয়েও আমরা জানি না। এবং কখন রাস্তা খুলে দেবে বা বন্ধ করবে- এ বিষয়ও আমরা জানি না। আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, তাদেরকে আমি সদুত্তর দিতে পারি না।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। যদিও নানা আলোচনার মুখে মন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির প্রধান হলেও স্বাস্থ্য বিষয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ।
তার এই ব্যাখ্যার পরও সরকারের সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
দুই মাস পর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় কি কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে-এ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
“করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে আলোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব অবহিত হয়েই এই সাধারণ ছুটিসহ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা যারা অত্যন্ত কাছাকাছি এবং সশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেগুলো আছে, তারা সকলে মিলেই কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।”
বাংলাদেশে ক্ষতি মোকাবেলায় গত ৫ই এপ্রিল ৭২,৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যদিও প্রতিমন্ত্রী মি: হোসেন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় তদারকি করছেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধীদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব না থাকায় এবং আমলা নির্ভরতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না।
সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। (ফাইল ছবি)
“এখানে আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি যে, সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে জনগণের চিন্তাভাবনার বাইরে। এবং জনগণ যেটা চাচ্ছে, তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”
“আমরা প্রথম থেকেই যেটা লক্ষ্য করেছি, এখানে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে একটা প্রভাব থাকা উচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, সেটা নাই। এখন পর্যন্ত যেভাবে হয়ে আসছে, তাতে মনে হয়েছে যে শুধু গুটিকতক চাটুকার আমলা এবং আর অদৃশ্য কোন শক্তি আছে কিনা জানি না। তাদের দ্বারাই যেন সিদ্ধান্তগুলো আসছে।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় সরকারের রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এই সরকারেরই গত ১১ বছরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল।
কিন্তু তারা এখন পার্থক্য দেখছেন করোনাভাইরাস দুর্যোগ সামলাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেছেন, এখন সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন
“অন্যান্য সময় আমরা দেখেছি, যদিও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নির্ভর দল, কিন্তু তারপরও অন্যান্য সময়ে তারা সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দেখেছি যে, কোন এলাকায় মন্ত্রী এমপি বা রাজনৈতিক নেতারা নেই। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররাও নেই।”
“আর ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়গুলোতো আমরা জানি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শেখ হাসিনাকে এককভাবেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং উনি এককভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছেন।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিতরেও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা নানা আলোচনা রয়েছে।
দলটির মাঠের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।
“আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে এই কঠিন সময়ে তিনি কিন্তু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সত্যিকার অর্থে তার নির্দেশগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতাম বা পারি তাহলে এই সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা কথা বলি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদিও এখানে সরাসরি জড়িত কম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।
মি: আহমেদ আরও বলেছেন, “তবে আমি মনে করি অতীতেও দুর্যোগে রাজনৈতিক নেতৃত্বই কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আমি এটুকুই বলবো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশগুলো পালন করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সম্পৃক্ত হয়, তারা যদি কাজ করে বা এখন যা করে চলেছে, তাহলে সমস্যাটা সমাধানে আমরা সক্ষম হব।”
লকডাউন না বলে সরকার সাধারণ ছুটি দিয়েছিল ৬৬দিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন।
তাদেরও অভিযোগ রয়েছে যে, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর জন্য তাদের পরামর্শ আমলে না নিয়ে অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ড চালু করা হয়েছে।
সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহিদুল্লাহ বলেছেন, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে দেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“আমাদের বক্তব্য ছিল, লকডাউনটা হলে প্রপার লকডাউন হতে হবে। যেমন আমরা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন করলাম। কিন্তু সেভাবে না করে, প্রথম তিন সপ্তাহ যদি কঠোরভাবে লকডাউন করা হতো, তারপর আস্তে আস্তে শিথিল করলে ফলাফলটা আরও ভাল পাওয়া যেতো। যেটা হয়ে গেছে। এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, জোন লকডাউন যেটা করা হচ্ছে, সেটাও প্রপার ওয়েতে করা হলে এথনও এই রোগটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।”
সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা বা সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হচ্ছে।
ন্যাশনাল ডেক্স : ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতিয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরেরে জন্য ৫৬৮,০০০ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তাকে করোনাকালে দেশের অর্থনীতির সকল খাতের চাকাকে সচল রাখার একটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হিসেবে দেখছে দেশের ব্যবসায়ীমহলের একাংশ। তাদের মতে অপ্রদর্শিত অর্থবিনিয়োগের সুযোগ অর্থ পাচারের প্রবণতা কমাবে। তবে পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বাজেটকে ইতিবাচক বললেও উৎসে কর না বাড়ানো এবং নগদ প্রণোদনায় কর অব্যাহতি চেয়েছে।
এদিকে, তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল করোনাকালে তাদের ভাষায় অবাস্তব এবং অবাস্তবায়ন যোগ্য এই বাজেট প্রস্তাবে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে প্রস্তাবিত বাজেটের ৯৯ শতাংশই মানুষের স্বার্থ বিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন। এটি একটি আশান্বিত বাজেট হলেও তা বাস্তবায়ন দুরূহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি এক অনলাইন ব্রিফিং সদ্য ঘোষিত এই বাজেটকে গতানুগতিক বলে আখ্যায়িত করে বলেছে করোনার ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে ধরনের ইনোভেটিভ বাজেট দরকার ছিল সেটি হয়নি। করোনাকালে সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বাস্থ্যখাতকে বিবেচনা করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে এবারের বাজেটে অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয় । দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন বাজেটে এ বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয় নাই। বাজেট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সরকারের নির্দেশে মোবাইল সেবায় বর্তমান ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি হারে সম্পূরক শুল্ক কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এর প্রতিবাদ করে গ্রাহকরা বলেছেন এর ফলে সাধারন মানুষ দুর্দশায় পড়বে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরেরে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের জন্য মোট ৫৬৮,০০০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন মোট বাজেটে রাজস্ব ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৬২,৮৫৫ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০৫,১৪৫ কোটি টাঁকা। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরেরে বাজেটে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। বৈশ্বিক মহামারীর কারনে থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করার মত পরিস্থিতি কবে হবে সেই নিশ্চয়তা না থাকলেও তিনি আগামী অর্থ বছরেরে জন্য ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা স্থির করেছেন। তবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্যও ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা স্থির করা হলেও অর্থমন্ত্রী বলেন করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতির হিসেব-নিকেশ সম্পূর্ণভাবে ওলটপালট করে দেয়ায় প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে তা ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভয়েস অফ অ্যামেরিকার সাথে কথা বলেছেন বেসরকারি অর্থনৈতিক থিংক ট্যাঙ্ক পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বাজেটকে বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে গতিশীল হতে হবে এবং একই সাথে দুর্নীতিকে নির্মূলের প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশে কিছু হলেই আজকাল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়; এতে নিঃন্দেহে তার ওপর বাড়তি দায়বদ্ধতা ও চাপ আরোপ করা হয়। তার পরও তাকে উদ্দেশ করেই এই লেখা। লিখছি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। শুধু একটি এলাকার বাঁধের কথাই বলছি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে, আমাদের আইলা-পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রেক্ষাপটে রেখে। একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৯ সালে আইলার পরপরই দ্রুততর-পুনর্বাসন কার্যক্রমের তদারকি করতে গিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও এর ইউনিয়নগুলোর সকল চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর-মেম্বার ও ভুক্তভোগী জনগণ এক আলোচনায় আমাকে জানান যে তারা ত্রাণসাহায্য চান না, বরং চান যত দ্রুত সম্ভব আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত, যাতে তারা ঘরে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ প্লাবিত, ঘরবাড়ি জমিজিরাত ফেলে বিভিন্ন বাঁধ ও সড়কের অস্থায়ী ঝুপড়িতে আর বিভিন্ন শহরের বস্তি এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। আইলার আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ও খুলনার কয়রা উপজেলার বাঁধগুলোর অনেক স্থানে ভেঙে গিয়েছিল: যেগুলোর কিছু মেরামত করা সম্ভব হলেও শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকার ভাঙনগুলো মেরামত করতে আমাদের বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএলের পক্ষ থেকে আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্থানীয়, জেলা, বিভাগীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে ও ইউএনও-ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অগত্যা আমাদের সংবাদ সম্মেলন, মিডিয়া ভিজিট, সমাবেশ, মিছিল, বাস্তুচ্যুতদের শোভাযাত্রা, কলসি নিয়ে সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট আর খুলনায় সাত দিনব্যাপী আইলা-মঞ্চ সংগঠিত করতে হয়েছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলী পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট ২৪ জনকে আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বাঁধ ভাঙন-মেরামত আর ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন-অভিবাসন বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার সমস্ত সংবাদের কপি পাঠিয়েছি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আর তার সারবক্তব্য পাঠিয়েছি ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে। নিজে তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির সঙ্গে দেখা করেছি দু’বার। আমাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি ওইসব এলাকায় পরিদর্শনেও গিয়েছেন। তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাউবোর খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে পাঁচবার কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বিভাগীয় প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছিল দু’বার। আমাদের অনুরোধে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল বাঁধ মেরামতের জন্য। কিন্তু তারও কোনো সুষ্ঠু ব্যবহার হয়নি। এজন্য মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তার দ্বিতীয় পরিদর্শনে প্রকাশ্যে-জনসমক্ষে উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সবশেষে, অগত্যা আমরা বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরের সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন; তারা বাঁধ মেরামত করেছিলেন এবং তিনি নিজে সে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উপরন্তু পরিবারপিছু ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিলেন ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য। ষাটের দশক থেকে নির্মিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধগুলোর একটা সমস্যা আছে। এগুলোর ডিজাইনে জোয়ার-ভাটাকে বিবেচনায় না নেওয়ায় নদীর তলদেশগুলো উঁচু হয়ে গেছে; ফলে নদীর বাইরের বসতভিটা-জমিজিরাতের উচ্চতা নদীপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে কমে গেছে; আর তার ফলে বাঁধ ভাঙনের মতো ঘটনা ঘটলে সহজেই বসতভিটা-জমিজিরাতে দিনে দু’বার নদীর লবণ-পানি ঢোকে আর বেরোয়; আর তার ফলে ভাঙনগুলো আরও প্রসারিত হতে থাকে। আগে প্রয়োজনে পানি ঢোকানো আর বের করার জন্য স্লুইচগেট ছিল, দেখভালের জন্য লোকও ছিল; বর্ণিত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সে লোকবলও প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাউবো বাংলাদেশের বাঁধগুলোর নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এর কাঠামোগত সমস্যা হলো ভাঙন-নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মেরামতের জন্য বাজেট তৈরি করে প্রকল্প দাখিল করলে এটা সরকারের বরাদ্দ পায়; এ প্রক্রিয়ায় বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু বাস্তবে ভাঙন একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা, কোন ঘূর্ণিঝড়ে কোন বাঁধের কোথায় কতটুকু বিস্তৃতিতে ভাঙবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। এ কাঠামোগত বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার ফলে পাউবো বাঁধ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এর ফলে অবশ্য তাদের দুর্নীতি করার সুযোগও বেড়ে যায়। বাঁধগুলো ভেঙে যায় প্রধানত সেসব স্থানে যেখানে এটা দুর্বল থাকে। নিজে অসংখ্য স্থানে ঘুরে ঘুরে বাঁধগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। বাঁধগুলো দুর্বল হয় মূলত দুই জায়গায়; যেখানে বাঁধ ফুটো করে পাইপ ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের জমিতে পানি আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, আর যেখানে নলকূপ বসানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় ক্ষেত্রে পাউবোর কর্মকর্তারা চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা পান। আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা। বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের যারা ঠিকাদার, তারা স্থানীয় নন। ফলে যে ঠিকাদার কাজ পান, তিনি ‘বিক্রি’ করে দেন আরেক ঠিকাদারের কাছে। আবার তিনি আরেকজনের কাছে। এভাবে ঠিকাদার রি-চক্রে বাঁধের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট কাজটি আর হয় না; ড্রেজিংয়ে যেমন তেলচুরি, বাঁধ সংস্কারেও তেমনি মাটি চুরি হয়। নদীতে বা বাঁধ-ভাঙন স্থানে মাটি ফেলার হিসাব রাখার কোনো উপায় নেই। বাঁধের উচ্চতা, উপরে-নিচে তার প্রশস্ততা ও বরাদ্দের তথ্য দিয়ে আমরা একবার ৩০টি স্থানে সাইনর্বোড স্থাপন করেছিলাম, যদিও তা পাউবো বা ঠিকাদারের করার কথা, ঠিকাদাররা সেগুলো তাদের নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে অপসারণ করেছিল। দুর্যোগকালে বসতভিটা-জমিজিরাত রক্ষায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগে জনগণ সবার আগে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে যান। এসময়কালে আমরা দেখেছি, চেয়ারম্যান-মেম্বার-জনগণ সকলে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মজুরের মতো গায়ে-গতরে খেটে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। তারা কখনও সফল হন, কখনও হন না। তাদের পরিশ্রমকে নিজেদের কাজ বলে চালিয়ে দেয় পাউবো। আম্পান-পরবর্তীকালেও জনগণ ও স্থানীয় সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁধ মেরামত করেছেন। এর বাইরে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে পাউবোও কাজ করছে; শ্যামনগরের কাশিমারী ইউনিয়নে রিং বাঁধের কাজ অংশত সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন এখনও পুরোটা প্লাবিত। এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আশা করছি। আর দীর্ঘমেয়াদে, আমরা দাবি করছি, ১. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের কাজ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে প্রদান করতে হবে ও তার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে; ২. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে; ৩. রিং বাঁধের বাইরে জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও পুনর্বাসন করতে হবে; ৪. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে; ৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে; ৬. সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এসব প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করেছি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ও সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দুটি শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ক্ষমতাসীন দল ও জোটের সংসদ সদস্য ও সংশ্নিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি, অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি আর ভুক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএল
ক্যাব, কেন্দ্রিয় কমিটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম স্বাক্ষরীত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সারাদেশ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মহামারি কবলিত। দেশবাসী গৃহবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড স্তব্ধ। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। জনবল ছাটাই চলছে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষে কতদিন দেয়া সম্ভব হবে তাও ভাবার বিষয়। টাকা ছাপিয়ে কেবলমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন সমাধান নয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণ অসম্ভব। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ ধ্বস নামবে। উন্নয়ন খাত কোন অর্থ পাবে না। এমন অবস্থায় রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব চাহিদা ব্যাপক হারে কমানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। করোনা মহামারি মোকাবেলায় সরকার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদন খাত আর্থিক প্রণোদনা পাবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন পলিসিতে ব্যাপক রদবদলের প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান উন্নয়ন নীতি ও কৌশল নিয়ে সরকারের পক্ষে এখন আর আগানো সম্ভব নয়, তা আর বলার বা ভাবার অপেক্ষায় নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অপেক্ষা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে আরও অনেক বেশি বিপর্যস্ত। এমন আশঙ্কায় আমরা ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। তবে কৃষি এবং কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদন ব্যহত হবে না। সেজন্য বিপণন ব্যবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা দরকার।
বাস্তবে দেখা যায়, এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের নিকট আর্থিক ঋণ বা অনুদান চাচ্ছে। রাজস্ব ব্যয় বা চাহিদা কমানোর কোন পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সরকার যেসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণ করে, সেসব খাত এখন অব্যাহত রাজস্ব ঘাটতির শিকার। সে ঘাটতি মোকাবেলায় তাঁরা এখন সরকারেরই মুখাপেক্ষী। ফলে সরকার ক্রমাগত আর্থিক চাপ বৃদ্ধির শিকার। উল্লেখ্য যে, ধারনা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত করোনা মহামারিতে চলতি বছরে যে রাজস্ব ঘাটতির শিকার হবে, তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। অনুরূপ ক্ষয়-ক্ষতি গ্যাস খাতেও হবে। উভয় ঘাটতি বিদ্যমান অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিদ্যমান ও করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতি একদিকে যেমন মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে উভয়খাতে তেমন ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তরল জ্বালানির আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে সে দরপতন সমন্বয় করে তরল জ্বালানির মূল্যহার যেমন কমানো যায়, তেমন জ্বালানি খাতে করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতিও সমন্বয় করা সম্ভব।
অতএব আলোচ্য প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস এবং ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানির দাম কমানো এখন জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তার ভোগ ব্যয় এখন খুবই সীমিত। ফলে সরকারের রাজস্ব আসছে না। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্যহার যদি না কমে, তাহলে ভোক্তার ভোগ ব্যয়বৃদ্ধি পাবেনা। ফলে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি- এসব প্রবাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। তাই সর্বাগ্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পণ্য ও সেবার দাম কমাতে হবে।
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্যহার পর্যালোচনায় দেখা যায় ঃ ১. ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাজনিত কারণে রাজস্ব আহরণ বিঘিœত হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া ভর্তুকি বৃদ্ধি পাবে। ২. এ যাবৎ গ্যাসে কোন রাজস্ব ঘাটতি ছিল না। এ খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি গ্রিডে যোগ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরকারকে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশী ভর্তুকি দিতে হবে। করোনাজনিত কারণে গ্যাস খাতে রাজ্স্ব ঘাটতি আরোও বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে। ৩. জ্বালানি তেল বরাবরই লোকসানে ছিল। বিগত বছরগুলিতে দরপতনের কারণে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস পায়। কিন্তু তা মূল্যহারে যৌক্তিক সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র বিপুল পরিমাণে লাভ হয়। করোনাজনিত কারণে আমদানি বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র লাভের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে-লাভে করোনা জনিত রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় হবে এবং তেলের মূল্যহারও কমানো যাবে। ৪. তেলের দাম বেড়েছে, দামের সমতা রক্ষায় গ্যাসের দাম বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এলপিজি’র দাম বাড়িয়েছে। তেল ও এলপিজি’র দরপতন হওয়ায় আমদানি ব্যয় কমলেও তেলের দাম কমেনি। এলপিজি’র দাম বেড়েই চলেছে। ৫. বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত শতভাগ কয়লা যে ওজন ও আদ্রতায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির নিকট থেকে ক্রয় করে, সেই ওজন ও আদ্রতায় খনি কোম্পানি চীনা কোম্পানিকে ৮৫ ডলার মূল্যহারে বিল দেয়। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকট সে কয়লা বিক্রি করে ভ্যাটসহ প্রায় ১৫০ ডলার মূল্যহারে। কয়লা উৎপাদনে খনিকোম্পানির কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। চীনা কোম্পানির নিকট থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি কয়লা নেয় বলা চলে। অতএব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক নয়। যৌক্তিক হলে এ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কম হতো। ৬. মূল্যহার বেড়েছে বিদ্যুতে ০.৩৫ টাকা এবং গ্যাসে ৫ টাকা। গ্যাসে বছরে সবাসাকুল্যে ভর্তুকি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এ- ভর্তুকি বাড়বে। গণশুনানিতে প্রমান পাওয়া যায়, মোট গ্যাসের প্রায় ৫৬ শতাংশ তিতাসে ব্যবহার হয়। মুনাফাসহ তার বিতরণ মার্জিন ইউনিট প্রতি দরকার ৫ পয়সা। অথচ দেয়া হয়েছে ২৫ পয়সা। এমন অসংগতি সঞ্চালন, অন্যান্য বিতরণ ও গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিতেও বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাতেও তা বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাত এর বাইরে নয়। ৭. আইওসি’র গ্যাস কেনা হয় ২.৫৫ টাকা মূল্যহারে। অথচ বাপেক্সের গ্যাস কেনা হয় ৩.০৪ টাকা মূল্যহারে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠনের শর্ত লংঘন করে এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নিয়োজিত দেশীয় কোম্পানি সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ না করে সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়া হয়। তাতে গ্যাসের মূল্যহার কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়। ৮. বিনিয়োগকৃত মুলধনের ওপর তিতাস সুদ পায় ১৮ শতাংশ। সঞ্চালন ও অন্যান্য বিতরণ ও উৎপাদন কোম্পানি পায় ১২%। অথচ বিদ্যুৎ খাতভূক্ত সব কোম্পানি পায় ১০%। ব্যাংক আমনতের ওপর সুদ ৬%-এ নামানো হলেও ওইসব সুদ কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার কমানো হয়নি। তাছাড়া তিতাসে গ্যাস চুরির প্রতিকার করা হয়নি। বরং মিটারবিহীন চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ হিসাবে বেশী দেখানোর সুযোগ রেখে গ্যাস চুরির সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। সিস্টেমলস সুবিধা অন্য সব কোম্পানিকে দেয়া না হলেও তিতাসকে দেয়া হয়েছে ২%। এসব অসংগতি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নিয়ামক। ৯. গ্যাসের উৎস নিশ্চিত না করেই পশ্চিমাঞ্চালে বিতরণ লাইন বসানো হয়েছে ৭ জেলায়। সেসব লাইনে গ্যাস নেই। এমন অনেক সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্বল্প ব্যবহৃত। ক্ষেত্র বিশেষে অব্যবহৃত। বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা, এমনি কি সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এমন অবস্থা দেখা যায়। করোণার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পাওযায় এ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সরবরাহে সম্পদ যে অনুপাতে ব্যবহার হবে সে অনুপাতে সম্পদের অবচয় ব্যয় ধরে মূল্যহার নির্ধারণ হয় না। সমূদয় সম্পদ মূল্য ধরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয়হার বৃদ্ধি পায়। ্সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায়এখন আরো বৃদ্ধি পাবে। ১০. করোণার কারণে রাজ্স্ব ঘাটতি বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে। হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায ২২ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। বিপুল পরিমাণ উৎপাদনক্ষমতা উৎপাদনে নেই। স্বাভাবিক অবস্থায়ও চাহিদার তুলনায় উৎপাদনক্ষমতা উদ্বৃত্ত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির কথাও বলা হচ্ছে। গণশুনানীতে প্রমাণিত হয়, চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বছরে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তাদের অর্থে বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয়। এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসাবে বিনিয়োগ করা বিধান ছিল। সে বিধান পরিবর্তণ করে অনুদানের পরিবর্তে সুদে বিনিয়োগ করার বিধান করা হয়। তাতে উৎপাদনে অযৌক্তিকভাবে ব্যয়বৃদ্ধি পায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মেয়াদ উত্তীর্ণ অর্থাৎ ২০ বছরের উর্দ্ধে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট উৎপাদনে রেখে অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি করা হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা । ১১. গণশুনানিতে প্রমাণ পাওয়া যায়, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ হ্রাস করা হলে বছরে যথাক্রমে প্রায় ১০ ও ১২ হাজার কোটি সাশ্রয় হতে পারে। ১২. অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত হলে প্রাক্কলিত রাজস্ব চাহিদা প্রায় ১০% গ্যাস ও তেলে, কয়লায় ৪০% এবং বিদ্যুতে ৫% হ্রাস পেতো। বিদ্যমান অবস্থায় রাজস্ব চাহিদা হ্রাসের পরিমান হতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি এসব গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনা হলে বিদুৎ ও জ্বালানীর সরবরাহ ব্যয় অনেক কমে আসবে। ঘাটতি হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে। ১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশী প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ভোক্তার জমানতের অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ হলে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমবে এবং সুদ বাবদ ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় মূল্যহার কমানো যাবে। ১৪. গণশুনানিতে পেট্রোবাংলা, তিতাস, জিটিসিএল, এনএলডিসি, বড়পুকুরিয়া খনির দুর্নীতিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়। সেসব দুর্নীতি ও অপরাধ মুক্ত হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় যৌক্তিক হবে এবং মূল্যহার বৃদ্ধির প্রবণতা হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে। ১৫. তাছাড়া বিগত গণশুনানিসমূহে প্রমাণ পাওয়া যায়, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয়হার হ্রাস পাবে এবং মূল্যহার কমানো যাবে। সে লক্ষ্যে বিগত একাধিক গণশুনানিতে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দূর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়।
অতএব বিদ্যুতে ও জ্বালানির দাম কমানোর জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে নি¤œরূপ প্রস্তাব করা হলো ঃ ১. সকল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে এবং ২০ বছরের বেশী বয়সী সরকারি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে উৎপাদনের বাইরে রেখে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণক্রমে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানো প্রস্তাব করা হলো, ২. বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও গ্যাস উন্নয়ন উভয় তহবিলের অর্থ সুদে বিনিয়োগের পরিবর্তে যথাক্রমে পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানে অনুদান হিসাবে বিনিয়োগক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ৩. বিদ্যুৎ/গ্যাস সরবরাহে সম্পদ অর্জন অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা রোধ করা হলে সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পায় এবং মূল্যহার কমানো যায়। ফলে সম্পদ যে অনুপাতে বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহার হয়, অবচয় ব্যয় সেই অনুপাতে ধরে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় নির্ধারণক্রমে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ৪. বিদ্যুৎ উপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার কমিয়ে যৌক্তিক করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ৫. ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় রহিত করে এবং সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্যহারে তেলের আমদানি ব্যয় হ্রাস সমন্বয় করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ৬. মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইন মতে বিইআরসি কর্তৃক এলপিজি ও জ্বালানী তেলের মূল্যহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হলো, ৭. বিগত গণশুনানীতে বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ যৌক্তিক করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ৮. অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর লক্ষ্যে ঃ (ক) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত করা এবং (খ) সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনার প্রস্তাব সরকারের নিকট পেশ করার প্রস্তাব করা হলো। ৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থ ও ভোক্তার জামানতের অর্র্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, ১০. বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে অর্জিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হলো, ১১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত দুর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ার প্রস্তাব করা হলো। ১২. ওইসব কমিটি কর্তৃক প্রণীত কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসির অনুমোদনক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতভূক্ত সকল ইউটিলিটি ও সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিককরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হলো। ১৩. বিগত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব মতে ডিপিএম-এর পরিবর্তে ওটিএম-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সকল ক্রয় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হলো।’
চাঁদপুরে দায়িত্ব পালনকালে শুক্রবার বিকালে আবুল খায়ের (৪০) নামে জেলা কারাগারের এক কারারক্ষীর মৃত্যু হয়ছে।
আবুল খায়রের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়, দুই বছর আগে চাঁদপুর জেলা কারাগারে আবুল খায়রে যোগদান করনে। শুক্রবার বিকালে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র্কতব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের র্কতব্যরত চিকিৎসক সৈয়দ আহাম্মদ কাজল জানান, কারারক্ষী আবুল খায়েরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে র্হাট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়ছেে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লিবিয়ায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৬ বাংলাদেশি। এছাড়া আরও ১১ জনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করা হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে রয়েছে দেশের চারটি ট্রাভেল এজেন্সি ও অর্ধশতাধিক দালাল চক্র।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য উদঘাটন করেন। এর ভিত্তিতে চার ট্রাভেল এজেন্সি ও ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি।
সিআইডির এক সূত্রে জানা যায়, অর্গানাইজড ক্রাইমের হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের উপপুলিশ পরিদর্শক এএইচএম রাশেদ ফজল বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেছেন। মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে করা মামলাটিতে চারটি ট্রাভেল এজেন্সিসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০-৩৫ জনকে।
মামলার এজাহারের ভাষ্য মতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আসামিরা হতাহতরাসহ আরও অনেককে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় অবৈধভাবে পাচার করেন। এর মধ্যে ২৬ জনকে লিবিয়ায় হত্যা করা হয়েছে, পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১১ বাংলাদেশি।
এই ঘটনার পেছনে রাজধানীর নাভীরা লিমিটেড এবং ফ্লাইওভার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে বলে সিআইডির তদন্তে উঠে আসে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক শেখ মো. মাহবুবুর রহমান ও শেখ সাহিদুর রহমান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার মুকুন্দপুরের মৃত আব্দুল মোতালেব শেখের ছেলে। এ দুটি ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়াও পুরানা পল্টনের স্কাই ভিউ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও বাংলামোটরের লালন নামের আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সির নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিআইডির হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের অনুসন্ধান বলছে, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকসহ অন্য আসামিরা প্রলোভন দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রতারণামূলকভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের পাচার করেছে। কিন্তু সেখানে পাঠিয়ে তাদেরকে কম বেতনে কঠিন শ্রমের কাজে নিয়োজিত করা হতো।
অর্গানাইজড ক্রাইমের হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ভাইস স্কোয়াডের উপ পুলিশ পরিদর্শক এএইচএম রাশেদ ফজল জানান, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভুক্তভোগীদের লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে আটকে রাখে। মে মাসের মাঝামাঝি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায়। সেখানে আসামিরা লিবীয় সহযোগীদের মাধ্যমে তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। সেসব ছবি দেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসিমেদের সঙ্গে দরকষাকষির মধ্যে এক সুদানি স্থানীয় মানবপাচারকারীকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ নিহত মানবপাচারকারীর স্থানীয় সহযোগীরা গত ২৮ মে আসামিদের সহায়তায় হতভাগ্য পাচারকৃতদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় তাদের গুলিতে জুয়েল, মানিক, আসাদুল, আয়নাল মোল্লা, জুয়েল-২, মনির, মনির-২, সজীব, ফিরোজ, শামীম, আরফান, রহিম, রাজন, শাকিল, আকাশ, সোহাগ, মো. আলী, সুজন. কামরুল, রকিবুল, লাল চন্দ ও জাকির হোসেনসহ মোট ২৬ বাংলাদেশী নিহত হন। এছাড়া গুরুতর আহত হন আরও ১১ জন।