সংবাদদাতা: সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দক্ষিণ তালপট্টি এলাকায় বাঘের আক্রমণে রেজাউল ইসলাম (৩২) নামের এক মৌয়াল নিহত হয়েছেন। একই এলাকায় তার বাবাও বাঘের আক্রমণে নিহত হন। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা জেলার বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন এর এসও আবু সাঈদ জানান, রেজাউল ইসলামসহ কয়েকজন মৌয়াল গত ৩ মে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু আহরণের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে যায়। ঈদের দিন শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ তালপট্টি এলাকায় মধু সংগ্রহকালে বাঘের আক্রমণের শিকার হন মৌয়াল রেজাউল। তবে অন্যান্য মৌয়ালদের প্রতিরোধে বাঘ রেজাউলের মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। রেজাউলের সাথে থাকা মৌয়ালরা মরদেহ উদ্ধার করে শনিবার দুপুরে লোকালয়ে নিয়ে আসে। দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
মৃত রেজাউল ইসলামের স্ত্রী, বাঘ বিধবা মা, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মৃত রেজাউল ইসলামের মা রিজিয়া বেগম লিডার্স বাঘ বিধবা দলের একজন সদস্য। বাঘ বিধবা রিজিয়া বেগমের একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে লিডার্স পরিবারের পক্ষ থেকে লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
Category: সুন্দরবন
-
বাঘের আক্রমনে মৌয়াল নিহত
-

সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গিয়ে মৌয়াল নিহত, পৃথক ঘটনায় আহত ১
- অনলাইন ডেস্ক:
সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে হাবিবুর রহমান (২৭) নামে এক মৌয়াল নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের হোগলদড়া খাল সংলগ্ন এলাকায় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তিনি।
নিহত হাবিবুর রহমান শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাঙ গ্রামের আজিজ মোল্লার ছেলে।
নিহত হাবিবুর রহমানের ভাই আনিস মোল্লা জানান, তারা সাতজন এক সাথে গত ১ এপ্রিল মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে যান। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা মধু আহরণের জন্য হোগলদড়া খালে নৌকা বাধেন। এসময় তার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান একা একা আগেই বনে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি বনে উঠেই দেখেন তার ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। এসময় তার সামনে দিয়ে আক্রমণকারী বাঘটি চলে যায়। পরে নিহত হাবিবুরের মরদেহ নিয়ে লোকালয়ে ফেরেন তারা।
বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এদিকে, সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গিয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাছিকাটা এলাকায় বাঘের আক্রমণে আহত হন রবিউল শেখ (২২) নামে এক মৌয়াল। বুধবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহত রবিউল শেখকে নিয়ে লোকালয়ে ফিরেছেন তার সহকর্মীরা।
আহত রবিউল শেখ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরার হালিম শেখের ছেলে।রবিউল শেখের শ্বাশুড়ি ঝর্না খাতুন জানান, গত ১ এপ্রিল তার জামাতা রবিউল শেখ অন্যান্য মৌয়ালদের সাথে মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে যায়। মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে কাছিকাটা এলাকায় মধু আহরণকালে একটি বাঘ রবিউলের উপর হামলে পড়ে। কোন মতে প্রাণে বেঁচে আসলেও তার গলার একটি অংশ রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টাইগার টিমের সহায়তায় বাঘের আক্রমণে আহত রবিউলকে লোকালয়ে আনা হয়েছে।
-

সুুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের পৃথক দুটি আক্রমণে এক নিহত, এক জন আহত
বিশেষ প্রতিনিধি: সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু সংগ্রহ করতে যেয়ে হাবিবুর রহমান (২৭) নামের এক মৌয়াল বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। বুধবার সকালে সুন্দরবনের হোগলডাঙা এলাকায় মধু সংগ্রহকালে তিনি বাঘের কবলে পড়েন। বেলা সাড়ে বারটার দিকে স্থানীয়রা বনবিভাগের সহায়তা নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে অর্ধ খাওয়া মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় ফিরে আসে।
রমজাননগর ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, কৈখালী স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে ৪ এপ্রিল সহযোগীদের সাথে উপজেলার মীরগাঙ গ্রামের হাবিবুর রহামন সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। বুধবার সকালে আকস্মিকভাবে বাঘ তার উপর হামলে পড়ে এবং ধরে নিয়ে বনের গভীরে চলে যায়। এক পর্যায়ে সহযোগী মৌয়ালদের মাধ্যমে হাবিবুরকে বাঘে নিয়ে যাওয়ার খবরে স্থানীয়রা সুন্দরবনে ঢুকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে সুন্দরবনের কাছিকাটা পারাদুনি এলাকায় মধু সংগ্রহ করার সময় সোরা গ্রামের রবিউল ইসলাম বাঘের হামলায় আহত হন। বাঘ রবিউলের ঘাঁড়সহ মাথায় দাঁত বসিয়ে দিয়েছে। এছাড়া পিঠ ও হাতে নখের আঁচড় দিয়ে মারাত্বকভাবে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, সুন্দরবনে বাঘের আত্রমনের দুটি পৃথক ঘটনায় দুইজন হতাহতের খবর লোকমুখে শুনেছেন। তাদেরকে ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে যদি তারা পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে থাকে। -
সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
মশাল ডেস্ক: আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। শুক্রবার (২ এপ্রিল) সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা করে জেলা প্রশাসন।
বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার পর্যটকবাহী কোনো নৌযানকে পাশ দেয়া হয়নি। বন বিভাগ থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সকল নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ -

সুন্দরবন: প্রকৃতির নীরব বিস্ময়ের গল্প
তানভীর মাহতাব আবীরআপডেট: ১১ মার্চ ২০২০, ১০: ৩৩ অ+অ-

সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি সিডর কিংবা আইলার তাণ্ডবের কথা মনে পড়ে? ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে।
সিডরের চোখের আয়তন ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার। তবে ভয়াবহতার দিক থেকে সিডরের কারণে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা ছিল, বাস্তবে হয়েছে তার অনেক কম। কারণ সিডরের প্রথম বাধা ছিল সুন্দরবন। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের বাধা পেয়ে সিডর অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সুন্দরবন না থাকলে সিডরের ধাক্কা লাগত খোদ রাজধানী পর্যন্ত। সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে সিডরের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমে গিয়েছিল। ঠিক একইভাবে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র সামনেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রকৃতির এই অপার বিস্ময়। এক সমীক্ষা বলছে, সুন্দরবনের কারণে আইলার গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার ও জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা চার ফুট কমে গিয়েছিল। এভাবেই বারবার নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে প্রকৃতি ও জীবনকে বাঁচিয়ে যাচ্ছে নীরব এই বিস্ময়। আচ্ছা কেন নীরব বিস্ময় বলা এই বনকে? কেনই–বা বাংলাদেশের গর্বের জায়গা সুন্দরবন? চলুন জেনে নেওয়া যাক সুন্দরবনের গল্প।
নামের রহস্য
সুন্দরবনের নাম ‘সুন্দরবন’ হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ যায় না। তবে প্রচলিত ধারণা মতে, এই বনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা সুন্দরীগাছের (Heritiera fomes) নামানুসারে এই বনের নামকরণ। তবে অনেকের মতে, স্থানীয় আদিবাসীরা এই বনকে ডাকতো ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে। এই নামটিই পরবর্তী সময়ে বর্তমান রূপ পেয়েছে।
একটুখানি ইতিহাস
সুন্দরবনের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না, তবে ধারণা করা হয়, হিমালয়ের ভূমিক্ষয়জনিত পলি, বালু ও নুড়ি হাজার বছর ধরে বয়ে চলা পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র কর্তৃক উপকূলে চরের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় লবণাক্ত জলের ধারায় সিক্ত হয়েছে এ চর এবং জমা হয়েছে পলি। কালাতিক্রমে সেখানে জন্ম নিয়েছে বিচিত্র জাতের কিছু উদ্ভিদ এবং গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত পানির বন। সম্ভবত ১২০৩ সালে মোগল এক রাজা পুরো সুন্দরবন ইজারা নেন। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবনসহ পুরো বাংলার দায়িত্ব নেওয়ার আগে মোগল রাজাদের অধীনেই ছিল এই বন। এই কোম্পানিই প্রথম সুন্দরবনের মানচিত্র তৈরি করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে, যা বাংলাদেশের সমগ্র বনভূমির ৪৪ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য ও ২০১২ সালে তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকাকে ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেসকো।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার কী নেই সুন্দরবনে
পৃথিবীর অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনভূমির উদ্ভিদের তুলনায় সুন্দরবনের উদ্ভিজ্জের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কেননা, সুন্দরবনের বুক চিরে শুধু নোনাপানি নয়, ক্ষেত্রবিশেষে প্রবাহিত হয় স্বাদু পানির ধারা। এই বৈশিষ্ট্যই সুন্দরবনকে পৃথক করেছে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বন থেকে। এ বনের পূর্বাঞ্চলীয় অভয়ারণ্যে গাছপালার বৈশিষ্ট্য কিছুটা বেশি। এখানে জন্মে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, কেওড়া, আমুর, গোলপাতা। পশ্চিমাঞ্চলীয় অভয়ারণ্যে বেশি দেখা যায় গেওয়া, গরান, হোন্তাল। দক্ষিণাঞ্চলীয় অভয়ারণ্যে বেশি দেখা যায় গেওয়াগাছ। এই অঞ্চলের লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় অন্যান্য সাধারণ গাছ তেমন একটা জন্মাতে দেখা যায় না। সুন্দরবনে সঠিক কত প্রজাতির গাছ আছে বলা মুশকিল। সর্বশেষ ১৯০৩ সালের জরিপ বলছে, ৩৩৪ প্রজাতি। ম্যানগ্রোভ বনের ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্য ৩৫টিরই দেখা মেলে এই বনে।প্রাণীবৈচিত্র্যের কথা লিখতে গেলে প্রথমেই আসে অনিন্দ্যসুন্দর বেঙ্গল টাইগারের (Panthera tigris) কথা। সুন্দরবন তথা গোটা বাংলাদেশেরই অহংকার জাতীয় এই পশু। একটা সময় সুন্দরবনজুড়ে অসংখ্য বিচরণ চোখে পড়ত এই বাঘের। কিন্তু অবৈধ শিকার, খাদ্যের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জরিপে পুরো সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৭০টি, এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে আছে ১০৬টি। বাঘ ছাড়াও সুন্দরবনে আছে প্রায় ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। যার মধ্যে চিত্রাহরিণ, মায়াহরিণ, রেসাস বানর, বনবিড়াল, লেপার্ড, বন্য শূকর উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আছে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী। সুন্দরবনে সাপের প্রচুর আনাগোনা দেখা যায়। এর মধ্যে আছে শঙ্খচূড়, রাসেলস ভাইপার, অজগর ও ব্যান্ডেড ক্রেইট।
অর্থনীতিতে সুন্দরবন
পর্যটনের এক আদর্শ স্পট সুন্দরবন। প্রতিবছর এই খাত থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই বনের ওপর নির্ভরশীল। এই বনের জ্বালানি, নদীগুলোর বিশাল মৎস্যসম্পদ, মধু ও মোম এবং বন্য প্রাণী থেকে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক আয় প্রায় ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের রক্ষা করে যাচ্ছে সুন্দরবন। গবেষণা বলছে, এই বন প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে ৩ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার সম্পদ। আরও চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, সুন্দরবন বছরে গড়ে প্রায় ১৬ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ধরে রাখতে সক্ষম, আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার।কেমন আছে সুন্দরবন?
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই বনের ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আজও লড়াই করে যাচ্ছে সুন্দরবন। গত বছরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর শক্তি যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল, তখন ঘণ্টায় দেড় শ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল এ ঝড়। তবে উপকূল অতিক্রম করার আগে আগে এর শক্তি কিছুটা কমে আসে। সুন্দরবন ঘেঁষে খুলনার কয়রা দিয়ে যখন অতিক্রম করছিল ঝড়টি সে সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৩ কিলোমিটার ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ এই গতি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সুন্দরবনের বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা বলছেন।বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মঈন উদ্দিন খান বলেন, বুলবুলের কারণে সুন্দরবনের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।
এমন করে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বন। নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়, হারায় অসংখ্য উদ্ভিদ আর প্রাণীর জীবন। বাঁচিয়ে দেয় খুব স্বার্থপর এই আমাদের।
প্রায়ই এই বনের নদীগুলোয় তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে নদীগুলো দূষিত হয়ে যাওয়ায় মৎস্যসম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের কাছে সরকারের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবেশবাদী দল আন্দোলন করছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সুন্দরবনের ইউনেসকো হেরিটেজ থেকে প্রকল্পটি যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত। তাই এই প্রকল্পের জন্য বনের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।প্রতিবছর সুন্দরবনে হেক্টরপ্রতি গড়ে ২৭ হাজার ৭৫০ চারা উৎপন্ন হয়। এ কারণেই এত সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করেও সুন্দরবন বেঁচে আছে প্রকৃতির নিয়মে। মানুষের কল্যাণের স্বার্থেই এই বনের বেঁচে থাকা জরুরি। কারণ সুন্দরবন বেঁচে থাকলেই বাঁচবে বাংলাদেশ, বাঁচবে এ দেশের জীববৈচিত্র্য আর এ দেশের মানুষ।
তথ্যসূত্র: আবহাওয়া বিভাগ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বন বিভাগ ও গুগল।
লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
-

‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প’ : পরিকল্পনা
i) সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, প্রকৃতি পর্যটন উন্নয়ন, বনজসম্পদ রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বন ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র্য উন্নয়নের জন্য ‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প’ প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ-প্রকল্পের অধীন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত উল্ল্যেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ:
- সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ নিশ্চিতকরনের জন্য পুকুর খনন, টহলফাঁড়ি নির্মাণ, ফাইবার বডি ট্রলার ক্রয়, পন্টুন গ্যাংওয়ে নির্মাণ, বুষ্টির পানি সংরক্ষণ আধার এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
- সুন্দরবন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর টেকসই জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিতকরনের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০,০০০ নির্ভরশীল জনেগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ৩০,০০০ সম্পদ সংগ্রহকারীর আইডি কার্ড প্রদান;
- সহব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের মাধ্যমে সুন্দরবন সুরক্ষায় সহায়তা করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের সদস্যকে ভাতা প্রদান;
- সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল/ নদীসমূহ পুনর্খনন করা;
- বিজ্ঞানভিত্তিক বন-ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের বনজসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, বাস্তসংস্থান সংক্রান্ত সার্ভে ও তথ্য সংগ্রহ করা;
- ২০২১-২২ সনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে বাঘ মনিটরিং (পরিবীক্ষণ) কার্যক্রম সম্পন্ন করা;
ii) সুন্দরবনে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন (Ecotourism) সুবিধা সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং সুন্দরবনের সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসকরনের মাধ্যমে সুন্দরবনের সুরক্ষায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ‘সুন্দরবনে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন (ইকোট্যুরিজম) সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। এ-প্রকল্পের অধীন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত উল্লেখ্যযোগ্য কাযক্রমসমূহ:
- প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে বিদ্যমান প্রকৃতি নির্ভর পর্যটন কেন্দ্র, যেমন: করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, হিরনপয়েন্ট, দুবলারচর, কলাগাছিয়া ইত্যাদি এলাকার সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে;
- সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নতুন ৪টি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র যথা: শরণখোলা, আন্ধারমানিক, কালাবগী ও শেকেরটেক ইকোটুরিজম কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হবে;
- প্রকল্পের মাধ্যমে সহব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত বননির্ভর জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে প্রকৃতি পর্যটনের মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
iii) সুন্দরবনে ডলফিন সার্ভের মাধ্যমে নতুন ডলফিন হটসুট নির্ণয় পূর্বক সংরক্ষক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
iv) সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ ও কাকড়া স্টক জরিপ করা হবে।
-

৬৫ দিন পর সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি প্রদান
নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বিভিন্ন নদী খালে দীর্ঘ ৬৫ দিন জেলেদের মাছ-কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকার পর গত পহেলা সেপ্টেম্বর হতে পুনরায় বন বিভাগের পক্ষ হতে অনুমতি প্রদান শুরু হয়েছে। এতে করে সুন্দরবন উপকূলীয় পেশাদার জেলেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ শুরু করেছে। সুন্দরবনে পুনরায় মাছ-কাঁকড়া আহরণ শুরু করতে পেরে জেলে পরিবারের মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা যায়, গত পহেলা সেপ্টেম্বর হতে অদ্যবধি আড়াই হাজার জেলে প্রবেশ ফি দিয়ে সুন্দরবনের ভেতর প্রবেশ করেছে। যা বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুন। মাছ আহরনের জন্য জন প্রতি প্রবেশ ফি ৭ টাকা এবং কাঁকড়া আহনের জন্য ৬ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। একজন জেলে সর্বোচ্চ ৭ দিন সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া আহরণ করতে পারবে। এসময়ে আহরিত মাছ-কাঁকড়ার পরিমান হিসাব করে সরকারি রাজস্ব দিতে হবে জেলেদের।
দীর্ঘদিন পর সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া আহরণ করতে পেরে তারা আনন্দিত। জনজীবনে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে জেলে পরিবার।দীর্ঘদিন পর পুনরায় অনুমতি দেওয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া নদী খালে প্রচুর পরিমান মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছে। জেলেদের যাতে নিরাপদে মাছ-কাঁকড়া আহরণ করতে পারে সে জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে বন বিভাগ সুত্রে প্রকাশ।
-

সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
মশাল ডেস্ক: সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণি প্রজননকেন্দ্র করমজলের কুমির পিলপিলের ৪৪টি ডিমে মাত্র ৪টি ছানা ফুটেছে। গতকাল শনিবার সকালে নতুন ইনকিউবেটরে রাখা ১১টি ডিম থেকে মাত্র চারটি বাচ্চা জন্ম নেয়। ৪৪টি ডিম থেকে মাত্র ৪টি কুমির ছানা ফোটায় হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিদের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত বনকর্মীরা। তবে প্রাণি সম্বদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন বয়স বৃদ্ধি হওয়ার কারণে করমজলের মা কুমির দুটির ফার্টিলিটি (বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা) অনেক কমে গেছে।
এর আগে এবছরের ১২ জুন দুপুরে প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে নিজের বাসায় ৪৪টি ডিম দেয় পিলপিল। ডিমগুলোর মধ্যে ২১টি ডিম পিলপিলের নিজে বাসায়, ১২টি পুরোতন ইনকিউবেটরে এবং ১১টি নতুন ইনকিউবেটরে রেখে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। এর মধ্যে নতুন ইনকিউবেটরে রাখা ১১টি ডিমের মধ্যে ৪টি ডিমে বাচ্চা ফুটেছে।
এছাড়াও এবছরের ২৯ মে অন্য কুমির জুলিয়েট ৫২টি ডিম দিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ১৪টি ডিম জুলিয়েটের জুলেয়েটের বাসায়, ২৬টি পুরোতন ইনকিউবেটরে এবং ১২টি নতুন ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু জুলেয়েটের ৫২টি ডিমে কোন বাচ্চা ফোটেনি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির ।
আজাদ কবির বলেন করমজল দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এখান প্রজননের জন্য দুটি মা কুমির রয়েছে। আমরা খুব যত্নের সাথে এই কুমিরের প্রজননের চেষ্টা করি। কুমির ডিম পাড়ার পর থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু জুলেয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমিরেরই অনেক বয়স হয়েছে। যার ফলে তাদের ডিমে ফার্টিলিটি হার খুবই কম। তিনি আরও বলেন, এখানে বর্তমানে পুরোনো যে ইনকিউবেটর রয়েছে সেগুলো অনেক সেকেলে। নতুন যে ইনকিউবেটরটি তৈরি করা হয়েছে তার ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২৪টি। এ ধরনের আরও দুএকটি ইনকিউবেটর তৈরি করা গেলে সফলতা আসলেও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, কুমির খুবই সেন্সিটিভ প্রাণি। এর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে অনেককিছু মানতে হয়। আর মা কুমির পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর থেকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, কুমির গুলোর বয়স হওয়ার কারণে ফারটিলিটি কমে গেছে।আমরা চেষ্টা করছি মা কুমির দুটোকে পরিবর্তণ করে নতুন করে মা কুমির আনার। করমজলই বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। ২০০০ সালে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের শুরু হলে এখানে কুমির প্রথ, ডিম দেয় ২০০৫ সালে। এখন পর্যন্ত করমজলে বিভিন্ন সময় ২৯২টি কুমিরের ছানা জন্ম নিয়েছে। যার মধ্যে ১৯৫টি ছানা এখনও প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে। ৯৭টি কুমিরের ছানা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে।
-
পশ্চিম সুন্দরবনে ৫টি নৌকা আটক ও জাল জব্দ
বিশেষ প্রতিনিধি: বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জ পশ্চিম সুন্দরবনের গহিনে জেলেরা বিনা অনুমতিতে অনুপ্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার সময় ৫টি নৌকা আটক করেছেন। গতকাল সোমবার ভোরের দিকে কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা এম,এ সাঈদ ও মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির ওসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সদস্যরা সুন্দরবনের হাড়িভাঙা নদী ও টেরকাটির খাল থেকে নৌকাগুলি আটক করার সময় জেলেরা সুন্দরবনে পালিয়ে যায়। এসময়ে জেলেদের ব্যবহৃত ৫টি নৌকা, ১ হাজার মিটার জাল ও দা সহ আনুসাঙ্গিক জিনিষ পত্র জব্দ করা হয়। সাতক্ষীরা সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা এম,এ হাসান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবৈধভাবে জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার সময় তাদের ব্যবহৃত মালামাল আটক করা হয়। তবে জেলেরা পালিয়ে যায়। এঘটনায় বন আইনে মামলা হয়েছে। -
একজন দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সাধারণ মানুষের কথা ও প্রত্যাশা
অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীপৃথক সৃজনশীল প্রাকৃতি বৈশিষ্ঠ মন্ডিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলীয় এ অঞ্চলের ভুমি গঠনের সাথে রয়েছে জোয়ার ভাটার প্রভাব। সাগরের লবণপানি আর উজানের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা পৃথক এক প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকার বিকাশ ঘটে। পলি অবক্ষেপনের মাধ্যমে গঠিত ভূমির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার পূর্বে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ করায় ভূমি বসে যেয়ে নদী পাড় অপেক্ষা বাঁধের মধ্যের জমি নিচু হয়ে যায়। পাশাপাশি পলি জমিতে না পড়তে পেরে নদীর মধ্যে পড়ায় নদীর তলদেশও উচু হতে শুরু করে। যা আজ এলাকার জন্য ভয়াবহ অবস্থা তৈরী করেছে।
ষাটের দশকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উপকূল অঞ্চল দিয়ে ভেড়ীবাধ নির্মানের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি জমিতে নোনা পানি উঠা বন্ধ করা ও অধিক ফসল উৎপাদন। কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন কাঠামো গড়ে তোলা। রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষের এ দপ্তরের নাম ছিল ইপি-ওয়াপদা { ইস্ট পাকিস্তান ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভল্পমেন্ট বোর্ড সংক্ষেপে ইপি-ওয়াপদা। পরবর্তিতে পাওয়ার ডেবলম্পমেন্ট বোর্ড কে পৃথক করা হয়। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড – পাউবো কিন্তু এখনো ওয়াপদা নামে সমাধিক প্রচারিত}। উপকুলীয় বাঁধ নির্মানের সময়ে ফসল উৎপাদন, কৃষির ফলন বৃদ্ধি, নোনা পানি ঠেকানো নানান কথা বলা হলেও বলা হয়নি এ বাঁধ নির্মানে এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় কোন বিরূপ ক্রিয়া তৈরী হবে কিনা ? কতদিন নোনা পানির প্রভাব মুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে ?
উপকূলীয় বাঁধ এর নির্মানকালিন ত্রুটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ৭০ দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে ৮২-৮৩ সালে মারাত্মক আকার ধারন করে। কৃষি উৎপাদন নেমে আসে নিন্মস্তরে আর তৈরী হতে থাকে অঞ্চল ভিত্তিক জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে চিংড়ী চাহিদা তৈরী হয়। ব্যবসায়ীরা তখন চিংড়ী উৎপাদনে কৃষি জমির উপর নজর দেন। যে জমিতে সারা বছর শ্রম ও অর্থ ঘাটিয়ে দেড় হাজার টাকা পাওয়া ছিল কষ্টকর সেখানে ৩০০০ টাকা অগ্রিম জমির মালিককে প্রদান করার প্রলোভনে পড়ে বৃহৎ জমির মালিকরা (এ শ্রেনী ছিল সরসরি জমি বিচ্ছিন্ন), চিংড়ী ঘের করার জন্য কৃষি জমি লীজ প্রদানে আগ্রহী হয়ে উঠে। ফলে ক্ষুদ্র কৃষক, মাঝারী কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও অল্প জমির মালিকরা বিপদে পড়ে। এসময় এলাকাতে চিংড়ী বিরোধী আন্দোলনও গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা অবস্থায় বাঁঁধ বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রধান অনুসংগ হিসেবে আজ উপক’লীয় বাঁধ প্রতীয়মান। আর সে কারনে স্থায়ীত্বশীল পরিবেশ বান্ধব, জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু বাঁধ নির্মানের দাবী দক্ষিণ পশ্চিম উপক’লীয় ভুক্তভোগিক সকল পর্যায়ের মানুষের।
মুলতঃ উপক’লীয় বাঁধ নির্মানের পিছনে বৈশি^ক অনৈতিক বানিজ্যিক আকাংখায় কাজ করে। ফলে ষাটের দশকের নির্মিত উপকূলীয় বাঁধ তৈরীর ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ, নদীর প্রবাহ, ভুমি গঠন প্রক্রিয়া, পলি অবক্ষেপন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ঠ এলাকার জীববৈচিত্র ইত্যদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় না। নদীর সাথে প্লাবনভুমির সংযোগ খাল সমুহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। নদীর মধ্যে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া, কোথাও প্রবাহবান নদীর দু মুখ বেধে দেওয়া হয়। অভ্যন্তরিন যে গেট সমুহ নির্মাণ করা হয়, তা আকারে অনেক ছোট । এবং শুধু মাত্র একমুখ ফ্লাসগেট তৈরী করা হয়।
ভেড়ী বাঁধ নির্মানের পে এটিকে টেকসই করা বা কোন জটিলতা ঘটলে নিরসনের পন্থা বিষয় নিয়ে কোন স্থায়ীত্বশীল কর্মপন্থা প্রস্তুত করা হয় না। পাউবোর মত অনুযায়ী, প্রতিবছর বাঁধের ১০ হতে প্রায় ২০ পার্সেন্ট পর্যন্ত মাটির ক্ষয় হওয়ার প্রবনতা থাকে। অন্যদিকে চিংড়ী চাষের কারনে বাঁধের অপ-ব্যবহার করা হয়। নিবিচারে বাঁধ কাটা, নিজেদের মত নিজস্ব পানি উত্তোলন পথ নির্মাণ, নদীর চরের বনাঞ্চল ধ্বংশ করা কারনে বাধঁ পুবোপুরি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ২০০৯ এর আইলায় দেখা যায় যেখানে যেখানে চিংড়ী ঘেরে পানি উত্তোলনের জন্য ভেড়ীবাধ কাটা হয়েছিল, সেই সকল স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। পাউবোর কিছু বিধি আছে বাঁধকে এ ধরনের অপ-ব্যবহার রোধ করার জন্য। কিন্তু পাউবোর অসৎ ব্যবস্থাপনা এ সকল বিধিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে চিংড়ী চাষ বিরোধী সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে।
বাঁধ ভাঙ্গন একটা নিত্য সঙ্গি হলেও ২০০৭ সিডোর ও ২০০৯ এর আইলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে ভঙ্গুর বাঁধ ব্যবস্থাপনার অবস্থা মানুষ অনুধাবন করা শুরু করে। বিশেষ করে ২০০৯ আইলার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্থায়ী বাধ নির্মানের প্রয়োজনীয়তার দাবীটি প্রাধান্য পায়। ২০০৯ মে তে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নভেম্বরের মধ্যে নির্মান করা হবে বলে প্রত্যশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু ডিশেম্বর শেষে এসে যখন বাঁধ নির্মানের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হয়, তখন স্থানীয় ভুক্তভোগি মানুষের নেতৃত্বে ‘আইলা বিধ্বস্থ বাঁধ নির্মান গণ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ভাঙ্গা বাধ নির্মানের দাবী বাস্তবায়নের দাবী তোলা হয়।এ কমিটির উদ্যোগে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ১০ জানুয়ারী২০১০ প্রথম সংবাদ সম্মেলন কওে বাধ নির্মানের দাবী করা হয় এবং ১৪ জানুষায়ী ২৪ ঘন্টায় দু বার জলে ডুকে যাওয়া গাবুরা পদ্মপুকুরের হাজার মানুষ শ্যামনগর সদরে বাঁধ নির্মানে দাবীতে মানব বন্ধন করে। এখানে তৎকালিন সাতক্ষীরা -৪ এর এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আসেন এবং দ্রুত বাধ ভেঙ্গে থাকা স্থান সমুহ সংযুক্ত কওে মজবুত স্থায়ী বাধ দেওয়ার উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেন। এর পর থেকে প্রতিশ্রুতি আসতে থাকে। আন্দোলনের তীব্রতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপন্ াসংসদীয় কমিটি, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ঠ বক্তিরা আসেন আর প্রতিশ্রুত ব্যক্ত করেন। কিন্তু কাজের গতি না হওয়ায় মানুষের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সাতক্ষীরা গণ অনেশন, ঘেরাওসহ সকল ভুক্তভোগি মানুষর কর্মসুচির সাথে স্থানীয় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানায়। এ সময় দাবী তোলা হয় প্রধানমন্ত্রিকে দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনের। জনদাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রি ২৩ সেপ্টেম্বর১০ শ্যামনগরে আসেন। নকিপুর হরিচরন হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি ১৫ জানুয়ারী ১১ মধ্যে বাধ নির্মান সম্পন্ন হবে বলে ঘোষনা দেন। কিন্তু বাঁধের ভাঙ্গা সমুহে ক্লোজার দিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে মধ্যে নির্মান শেষ হয়।
বাঁধ নির্মানের আন্দোলন দু পবে বিভক্ত করা যায়। ২০১০ হতে ২০১৪ পর্যন্ত এবং ২০১৬ থেকে ২০২০। প্রথম পর্বে শুধু আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ সংস্কারের দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে সাতক্ষীরাতে আইলা বিধ্বস্থ বাধ নির্মান গণসংগ্রাম কমিটি ও খুলনাতে আইলা সংহতি পরিষদ এবং ঢাকাতে সিএসআরএল এর নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন করা হয়। এ সময় স্মারক লিপি প্রদান, সমাবেশ, মানববন্ধন, নীতি নির্দ্ধারকদের সাথে ঢাকাতে সংলাপ, গণশুনানী, খুলনা-৫, খুলনা-৬ এর এমপি মহোদয়দের ঢাকাতে সংলাপ, টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নেওয়া, ঢাকা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে প্রথীক অবস্থান, থালা বাসন নিয়ে পিকসারপ্যালেসের সামনে ভুক্ষাদের অবস্থান, জাতীয় দৈনিকে জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন, সকল তথ্য নিয়মিত প্রধান মন্ত্রির দপ্তরে সংরক্ষন, ৩০ হাজার পোস্ট কার্ডএ ভুক্তভোগিদের প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি, দুযেৃাগ মন্ত্রি, পরিবেশ মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী, জাতীয় বিশেজ্ঞ নেতৃৃন্দেও সাথে স্থানীয় ভুক্ত ভোগি মানুষদের সংলাপ প্রভৃতি । এ পর্যায়ে বাধের ডিজাইন পরিবর্তন করা ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ নির্মানের দাবীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্বে আন্দোলনটি দেশের খ্যাতনামা গবেষকবৃন্দ যুক্ত করে শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) কয়রা (খুলনা)তে বাঁধ, খাওয়ার পানি সহ স্থানীয় প্রধান সমস্যগুলো সামনে নিয়ে আসা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি সমুহ চিহ্নিত করা হয়। যেখানে স্থায়ী বাঁধ ও নিরাপদ পানিকে গুরুত্ব প্রদান করে দলিল তৈরী করা হয়। এ র্পায়ে উপক’ল ও উত্তোর বঙ্গেরবাধ নিয়ে যৌথ সামাজিক আন্দোলন শুরু করা হয়। এ আন্দোলনের সুচনা স্থানীয় জলবায়ু পরিষদ’র নেতৃত্বে করা হয়। এক্ষত্রে স্থায়ী বাধ নির্মান ও বাঁধ তদারকির সাথে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করা এবং প্রধান সমস্যা হিসেবে সুপেয় পানির চাহিদাকে চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায়ে ৩০ জন ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, তিন জন জাতীয় সংসদ সদস্যদেও মাধ্যমে জাতীয় সংসদে বক্তব্য প্রদান, জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নীতি নিদ্ধারকদের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংলাপ ইত্যাদি।
ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের ফলে আমফানের পরে প্রধান সমস্যা হিসেবে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী প্রচারনার প্রথমে চলে আসে। নিরাপদ পানির সংকটও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের কর্মসুচি বাস্তবায়ন কতৃপক্ষকে মূল কর্মসুচি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভবনা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। সফলতার জায়গা হচ্ছে এতদিন শ্যামনগর, কয়রার মানুষের প্রধান দাবী থাকলেও শহর কেন্দ্রিক নাগরিক আন্দোলনের দাবীর সাথে এটি কম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল কিন্তু এ বাওে প্রথম থেকেই সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি স্থায়ী বাধ নির্মানের দাবীকে এক নম্বও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত কওে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। যা সাতক্ষীরা সকল সুধি ও প্রশাসনকে দাবীর পক্ষে ঐক্যমত্য হতে সহায়ক হয়।উপকূলের প্রধান সমস্যা সমুহ বলতে গেলে আজ চিহ্নিত। প্রয়োজন এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে যথাযত কতৃপক্ষের কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ। এক্ষত্রে জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রির হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে কোন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ফলে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের স্থায়ীত্বশীল টেকসই ভেড়ী বাধ নির্মান ও নিরাপদ পানির স্থায়ী সমাধান বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রিও হস্তক্ষেপ এর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সৃষ্টি। আর এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ সৃষ্টি কর্মসুচি।
জলবায়ু পরিবর্তরেনর ঝুঁকি এর আজ উপক’লের একটি জীবন্ত সমস্যা। উপক’লের মানুষদের এ ঝুঁকির সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে হবে। বড় প্রাকৃতিক দুযোগ বাদ দিয়েও নদীর জোয়ারের পানির প্রভাবে প্রায়শঃ বাঁধ ভেঙ্গে এলাকার সকল উন্নয়ন জীববন-জীবিকাকে ধ্বংশ করে দিয়ে থাকে। গত দশ বছরে শুধু পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের ভেড়ীবাধ ভেঙ্গেছে ১০ বারের মত নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে, ১৮টি অধিক স্পটে। ফলে বর্তমান ভঙ্গুর বাঁধ দিয়ে কোন মতেই উপক’লের জীবন-জীবিকা ও সরকারী উন্নয়ন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
পাউবোর নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমুহ একমাত্র উপক’লীয় ভেড়ীবাধে কাজ করার অধিকার প্রাপ্ত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিজেরা কাজ করে না। লীজ, সাব লীজ কখনো কখোনো লেবার সরদার দিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে। কাজের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যান্ত নিন্মমানের হয়। আবার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে না পাওয়ায় কাজের বিষয়ে কথা কলার সুযোগও থাকে না। পাউবো ঝুকিপূর্ণ বাধ নিয়ে বার বার স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ হতে তাগাদা দিলেও কোন কাজ কওে না। তাদের নিয়ম বাধ ভেঙ্গে গেলে তবে দরপত্র প্রদানের মাধ্যমে কাজ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ কাউকে কাজের বিষয়ে জ্ঞাত করা হয় না।
বর্তমান আম্ফানে ভেঙ্গে যাওয়া অধিকাংশ স্থানগুলো স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে জনগন স্বর্তফুর্ত ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাধ দিয়ে পানি আটকেছে। বরাবরেরমত পাউবো একইস্থানে ডিপিএম এর মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ কয়েক সপ্তাহ ধরে পানির সাখে লড়াই করে যে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পানি আটকালো তাদেও নুন্যতম আর্থিক সহযোগিতা করা বা নুন্যতম আলোচনা করার ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে ৬৬ সালে বাঁধ নির্মান সম্পন্ন হওয়ার পর হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আজকের অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে অগনিতবার বাঁধ ভেগে গেছে। বাঁধ ভেগে গেলে বাধ সংলগ্ন এলাকার মানুষদের জমি ছেড়ে দিয়ে পিছনে চলে আসতে হয়। ভাঙ্গন থেকে শত শত মিটার পিছন দিয়ে রিং বাধ কার হয়। এ রিং বাধ করার জন্য যাদেও জমি নেওয়া হয় বা বাধ ভেঙ্গে নদীর গর্ভে যাদেও জমি চলে যায় সে সকল ক্ষতিগ্রস্থ বা নিঃশ^ মানুষদেও ক্ষতিপূরনের কোন ব্যবস্থা পাউবোর নেই। অথচ সরকারের সকল নির্মানে ক্ষতিপূরন করার বিধি ব্যবস্থার আইন রয়েছে।
সামগ্রিক বিচেনায় পাউবোর ভেড়ী বাধ ব্যবস্থার পদ্ধতি, নিয়মিত সংস্কার ও তদরকির বিষয় দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লীয় অঞলের জীববৈচিত্র, প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির আলোকে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয় দাবী একজন উপক’লের মানুষ হিসেবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। গবেষনা ভিত্তিক নয়, অভিজ্ঞার আলোকে স্বচোখে দৃশ্যমান সংকটের নিরসনে নিন্ম লিখিত প্রস্তাব সমুহ দাবী হিসেবে উপস্থাপন ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করার প্রয়োজনী কর্মসুচি গ্রহণ জরুরী।
১. দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’ল তথা উপক’লের জন্য পৃথক একক কতৃপক্ষ তৈরী বা গঠন
২. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে
৩. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারকে প্রদান ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে;
৪. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে;
৫. বাধঁ ভেঙ্গে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ জমি ও মানুষের তালিকা প্রস্তুত ও প্রয়োজনীয় ক্ষতি পূরন প্রদান ও পূর্ণবাসন করতে হবে।
৬. . জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে;
৭. পাউবো কতৃক টেন্ডার পদ্ধতি পরিবর্তনসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৮. উপক’লে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির স্থায়ী সমাধানের পন্থা জাতীয় নীতিমালায় সম্পৃক্ত করা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. উপক’লের সাথে যুক্ত সকল মন্ত্রনালয়কে সংযুক্ত করে আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে (ভুমি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, পানি সম্পদ, জলবায়ু ও পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, স্ব-রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মন্ত্রনালয়)
১০. বিশেষ দুর্গত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা ও বিশেষ বরার্দ্দ এডিবিতে রাখা। -

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘুর্নিঝড় আম্পান দুর্গত এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ
এলাকা ঘোষনা, উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, ঝড়-জলোচ্ছাস,
নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষকে
রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে
জেলা নাগরিক কমিটি। সোমবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে
বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, মমতাজ আহমেদ বাপী,
এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, আবুল হোসেন, আব্দুল
বারী, এম কামরুজ্জামান, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছাস ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর বাঁধ
ভেঙে প্লাবিত হওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত
যুদ্ধ করে চলেছে। এক সময় অন্য জেলা থেকে লোক না এলে এ এলাকার ধান কাটা
হতো না সেই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের নানামুখি উদ্যোগ নেয়ার সত্বেও এই এলাকায় দারিদ্র
পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষাসহ অন্যান্য সূচকেও এই এলাকা
পিছিয়েই থাকছে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
মানববন্ধন থেকে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ
প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন এবং
সেই অথরিটিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এবং বিভিন্ন
দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর
প্রদান করা হয়। -

আবারও লোকালয়ে চিত্রা হরিন, পরে সুন্দরবনে অবমুক্ত করন
স্টাফ রিপোটার ঃ আবারও পথভুলে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে একটি চিত্রা হরিণ। পরে তাকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়। বুধবার ভোরে শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া নামক গ্রামে হরিনটি পথ ভুলে চলে আসে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরে মুন্সিগঞ্জ ফরেস্ট স্টেশন ও কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা আবু সায়ীীদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে যান। পরে সিপিপি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় হরিণটি ধরে তারা তাকে আবারও সুন্দর বনে অবমুক্ত করেন।
এ ব্যাপারে ষ্টেশন কর্মকর্তা আবু সায়ীদ জানান, হরিণটি উদ্ধার করে তৎক্ষণাৎ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বিপরীতে গহীন সুন্দরবনের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২০ এপ্রিল সোমবার কোবাদক স্টেশন থেকে লোকালয়ে আসা একটি হরিণও উদ্ধার করে বন বিভাগের সহযোগিতায় সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়। -

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন এর কর্তৃক স্টেশান/আউটপোস্ট এবং সুন্দরবন এলাকায় অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সুন্দরবন ও তৎসংলগড়ব এলাকায় অসহায় ও দুস্থ জেলেসহ নি¤ড়ব আয়ের মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্যর্থে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের আওতাধীন বিসিজি স্টেশান রুপসা কর্তৃক জাবুসা ও বাঘমারা সংলগড়ব এলাকায় এবং বিসিজি স্টেশান সরণখোলা কর্তৃক দোনা ও পাতাবাড়িয়া এলাকায় দরিদ্র স্থানীয় অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। বিসিজি স্টেশান ও আউটপোস্ট এর মাধ্যমে উল্লেখিত এলাকাসমূহে স্থানীয় অসহায় ও দুস্থ নি¤ড়ব আয়ের পরিবারের মাঝে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে ত্রান সামগ্রী ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। দেশে সার্বিক করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবন ও তৎসংল গড়ব এলাকায় অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে কোস্ট গার্ডের এই ত্রান সামগ্রী বিতরণ কার্যμম অব্যাহত থাকবে। -

শ্যামনগর থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর হাড়, দাঁত, চামড়া ও মাথাসহ আটক-১
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ অভিযানে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর হাড়, দাঁত, চামড়া, হরিণের মাথাসহ আমজাদ খান (৫৬) নামে এক ব্যক্তি আটক করেছে। রোববার বিকালে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক আমজাদ খান ৯ নং সোরা গ্রামের মৃত গহর আলীর ছেলে।
বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার বিকালে ৯নং সোরার আমজাদ খানের বাড়িতে অভিযান চালায় বন বিভাগ, শ্যামনগর থানা ও বুড়িগোয়ালিনী নৌ পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল। এ সময় তার বাড়ির উঠানের ময়লার স্তুপ থেকে বিভিন্ন পশুর চামড়া এবং ঘরের ভিতর থেকে হাড়, দাঁত, হরিণের মাথাসহ আমজাদ খানকে আটক করা হয়।
তিনি আরো জানান, জব্দকৃত পশুর চামড়া ও হাড় ল্যাবে পাঠিয়ে কোনটি কোন প্রাণীর তা নিরুপণ করা হবে। -

সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করার গল্প নিয়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার শুটিং শুরু সাতক্ষীরায়
সুন্দবনকে জলদস্যু মুক্ত করার গল্প নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে শুরু হয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত নির্মাতা দীপংকর দীপনের দ্বিতীয় সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’র শুটিং। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি-হরিনগরে শুক্রবার দুপুরে র্যাব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই সিনেমার শুটিং উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিনে শুটিংয়ে অংশ নেন মনোজ প্রামাণিক ও সামিনা বাশার।
সুন্দরবনকে জলদুস্যমুক্ত করার অভিযানের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’। র্যাব ওয়েলফেয়ার কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অর্থায়নে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করছে থ্রি হুইলারস লিমিটেড।
সিনেমার নির্মাতা দীপংকর দীপন সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ চলচ্চিত্র দেখে বিনোদন পাওয়ার জন্য। আমরা এবারের সিনেমায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল প্রান্তিক মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা ও সুন্দরবন জলদুস্য মুক্তকরণে সরকার বিশেষ করে র্যাবের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তিনি জানান, প্রথম দফায় মোট ১৬ দিন শুটিং হবে। এর মধ্যে ১১ দিন শুটিং হবে সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে। প্রথম দিন শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন, মনোজ প্রামাণিক ও সামিনা বাশার। পরদিন শনিবার থেকে রিয়াজ-সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া ও তাসকিনসহ ইউনিটের সবাই শুটিংয়ে অংশ নেবেন। সাতক্ষীরায় এ সিনেমাটির শুটিং চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২০ সালের ঈদুল আযহায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা দীপংকর দীপন। -
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে জেলে আহত
আব্দুল জলিল :
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে আশরাফুল ইসলাম খোকন নামে এক জেলে মারাত্মক আহত হয়েছেন।
শুক্রবার সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আঠারোবেকির রাজাখালী খালে কাকড়া ধরার সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তিনি।
আহত বনজীবী আশরাফুল ইসলাম খোকন শ্যামনগর উপজেলার মিরগাং গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে।
রমজাননগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়াইল্ড টিমের টেংরাখালী ভিটিআরটি দলনেতা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সকালে বনে কাঁকড়া ধরার সময় হঠাৎ পাশ থেকে একটি বাঘ হামলে পড়ে আশরাফুল ইসলাম খোকনের উপর। এসময় বাঘ খোকনের মুখে থাবা দেয়। খোকন কাদায় পড়ে গেলে তার সঙ্গী বনজীবী বাবু তাৎক্ষণিক চিৎকার ও বৈঠা দিয়ে ডিঙ্গির গায়ে শব্দ করলে বাঘ ঘাবড়ে গিয়ে তাকে ছেড়ে বনের মধ্যে চলে যায়। তাৎক্ষণিক সে আহত খোকনকে ডিঙ্গিতে তুলে বন থেকে বেরিয়ে আসে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে ওয়াইল্ড টিমের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
তিনি আরও জানান, খোকনের মুখে ও গলা বাঘের নখের আঘাতে চিরে গেছে। গলার আঘাত গুরুতর। রক্ত ঝরছে। তবে, খোকন কথা বলতে পারছে না। কাগজে লিখে জানাচ্ছে তার বর্তমান অবস্থা।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রফিক আহমেদ ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, তাকে বর্তমানে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।




