Category: লোক সংস্কৃতি

  • বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব আজ শুরু

    বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব আজ শুরু

    মারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

     দোল পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিবছর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব। সাধু-গুরু, লালনভক্তদের সরব উপস্থিতি, গান ও গ্রামীণ মেলায় জমজমাট হয়ে ওঠে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। তবে এবার রমজানের কারণে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে এক দিনই উদযাপিত হবে লালন স্মরণোৎসব। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। কেবল আলোচনা অনুষ্ঠান ও বাউলদের আপ্যায়নের মধ্য দিয়েই কাল শুক্রবার শেষ হবে আয়োজন। তবে সাধুসঙ্গ চলবে রীতি অনুসারে।

    আজ সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন লেখক-চিন্তক ফরহাদ মজহার। উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচকও তিনি। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান। গতকাল বুধবার ছেঁউরিয়ার আখড়াবাড়িতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তৌফিকুর রহমান। এ সময় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, কুমারখালীর ইউএনও মিকাইল ইসলামসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এই স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে।

    এদিকে উৎসব উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই আখড়াবাড়িতে আসতে শুরু করেছেন লালন ভক্ত বাউল ফকিররা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে লালনের গান। উৎসবে আসা শহীদুল সাধু বলেন, সারাবছর এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। দোল উৎসবে দেশ-বিদেশের বাউল ও সাধুরা আখড়াবাড়িতে আসে। একে অপরের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়।

    কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাজারসংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য। আগত বাউল সাধক, ভক্ত, অনুরাগী এবং দর্শনার্থীদের সহযোগিতার জন্য গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। (সৗজনে –  দৈনিক সমকাল)।
  • সাতক্ষীরায় শীতের আগমনে গ্রামবাংলায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

    সাতক্ষীরায় শীতের আগমনে গ্রামবাংলায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

    মশাল ডেস্ক: ঋতু শরৎকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। বৈচিত্রপূর্ণ ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

    পুবালি বাতাসে অপরুপ সৌন্দর্যে সকলের মন মাতিয়ে তুলছে মিষ্টি খেজুর রসের ঘ্রাণ। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ ও সন্ধ্যায় চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম। এবার কিছুটা আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত।
    আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ।

    কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীন জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছ কমছেই।

    এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন।
    যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হলেও বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এ ছাড়া খেজুরর পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার। কিন্তু জয়বায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

    তবে যে ভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই এই দেশে আর খেজুর গুড়ের ব্যবসা হবে না বলে মনে করেন গাছিরা। বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পন্ন খেজুরের গুড়ের দাম এবছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা নেয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছি এই ব্যবসা।
    এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ জানায়, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে।

    এদিকে সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

  • ৩শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলার উদ্বোধন

    ৩শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলার উদ্বোধন

    নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাতক্ষীরার ৩শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসন ও সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়োজনে সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এঁর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে ও বেলুন ফেস্টুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
    প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি রবি বলেন, “দীর্ঘ ২ বছর পর ব্যাপক পরিসরে এই ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলাটি উদ্বোধন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এই মেলাটি এ জেলার ঐহিত্য বহন করে চলেছে। আমরা ছোটবেলা থেকে এ মেলা দেখে আসছি। আগে এই মেলাটি শহর জুড়ে হতো। দেশী বিদেশী বহু মানুষের আনা গোনা হতো এই মেলায়। গুড়পুকুরের মেলার আজকের এই উদ্বোধন দেখে মনে হচ্ছে আগের রুপে ফিরে এসেছে গুড়পুকুরের মেলা।”
    এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. সজীব খান, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আরিফুর রহমান, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসান, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ-দৌলা-সাগর, পৌরসভার ৮নং কাউন্সিলর শফিকুল আলম বাবু, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মারুফ হাসান, মহিলা কাউন্সিলর নুরজাহান বেগম নুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর বিন সেলিম যাদু, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী হাশিম উদ্দিন হিমেল, সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন হোসেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুসফিকুর রহমান মিল্টন, মেলা কমিটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক শিকদার প্রমুখ।

    এবারের মেলায় শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের পুরো জায়গা জুড়ে থাকছে প্রায় ২০০টি মনোহারি পণ্যের স্টল। রয়েছে নাগর দোলা, ঘোড়ার গাড়ি। এছাড়া লৌহজাতদ্রব্য, বাঁশ ও বেতের দোকান, নার্সারি দোকান, শিল্পকলা একাডেমির সামনে নাগরদোলা ও রেলগাড়ি, নৌকা, শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টির দোকান। রয়েছে শিশুদের জন্য ব্যাপক বিনোদন। তাছাড়াও রয়েছে নানা বয়সী মানুষের জন্য বিনোদন। তবে এবারের মেলায় জুয়া, হাউজি, লটারি, র‌্যাফেল ড্র, লাকি কুপন, ফড়, চরকি, নগ্ন নৃত্য এবং অননুমোদিত যাত্রাগান, পুতুল নাচ বন্ধ থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মেলা চলবে মাসব্যাপী।
    উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মেলা চলাকালীন সার্কাস প্যান্ডেলে এবং সাতক্ষীরার রকসি সিনেমা হলে জঙ্গীরা বোমা হামলা চালায়। বোমা হামলায় নিহত হয় ৩ জন। আহত হয় অর্ধশতাধিক। এর পর থেকে মেলায় বহিরাগত ব্যবসায়ীদের আসা অনেকটা কমে যায়। করোনার পরবর্তী দীর্য় ২ বছর পর মেলা জাঁকজকমভাবে উদ্বোধন করা হল।

  • কলারোয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প

    কলারোয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প


    খোরদো (কলারোয়া) প্রতিনিধি: বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় ঐতিহ্য গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় গাছপালা। এক সময় এ দেশেরই বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশের তৈরি হতো হাজারো পণ্য। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের জিনিস। এখন সেই বাঁশ তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত। বাসা-বাড়ি কিংবা অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে সবকিছুই। এর ব্যতিক্রম নয় কলারোয়া উপজেলাও। তারপরও কলারোয়ায় উপজেলার গুটি কয়েক মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশের শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কলারোয়ায় বাঁশ শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাষ্টিক ও লোহার তৈরি পন্য। তাই বাঁশের তৈরি মনকারা সেই পন্যগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কদর না থাকায় গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরী বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আকর্ষনীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছে। শত অভাব অনটনের মাঝেও জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ নেই বললেই চলে। এছাড়া তৈরি পণ্যের ন্যায্য মজুরিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীর দাপটে চারুশিল্পের চাহিদা দিন-দিন কমে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের তৈরী চারুশিল্প। তাই কলারোয়ায় প্রসিদ্ধ বাঁশ শিল্পীরা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ের জন্য বাপদাদার রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশ শিল্প হয়তো আগামী দিনে এ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জন্য বাঁশ বাগান টিকিয়ে রাখা জরুরি।এখনো বাঁশ পণ্যের চাহিদা থাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলারোয়ায়, খোরদো, যুগিখালী আঞ্চলিক সড়কের পাশেই পাটুলী বাজার, শাকদাহ বাজার, কুশোডাঙ্গা বাজার, কাজির হাটসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজারে এর কদর রয়েছে ব্যাপক। বাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুঁড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখার র‌্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসে আছেন এ পেশার কারিগররা। বিশেষজ্ঞদের ধরনা, সরকারী কোন সহায়তা পেলে হয়তো ফিরে পেতে পারে গ্রামগঞ্জের এই চিরচেনা শিল্পটি।

  • আবার জমবে মেলা……….

    রুবেল হোসেন

    বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার লোকমান হোসেন খানের আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা অঘ্রাণে নবান্নে উৎসবে …… গানটি বাংলা লোক সংগীতকে করেছে ঐশ্বর্যমন্ডিত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের যে কালজয়ী গানগুলো সীমাহীন দুঃখ ও অপার শঙ্কার মধ্যেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগাত, আশা জাগাত মনে যে একদিন প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন হবেই, তেমনি একটি গান প্রয়াত লোকমান হোসেন খানের ‘আবার জমবে মেলা বটতলা-হাটখোলা অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে……’। এমন অনেক গান বীর যোদ্ধাদের দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করত একাত্তরে, উৎসাহ যোগাত মহারণে ঝাপিয়ে পড়তে। সাহস জোগাত বাঁচার। বর্তমান সময়ে সকলের মাঝে উদ্দীপনা সঞ্চারের জন্য গানটি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রায় দুই বছর সারাবিশ্ব মহামারীর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। মৃত্যুও মিছিল বেড়েই চলেছে। আমাদেও দেশেও ক্রমাগত মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে আজ থেকে ১ সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেছে সরকার। সবকিছু না থামলেও স্বাভাবিক গতি শ্লথ হয়েছে । ঋতু পরিক্রমায় চৈত্র্য সংক্রান্তির মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে একটি বছর। পূর্ব আকাশে উদিত হয়েছে নতুন বছরের গনগনে সূর্যের। বছর ঘুওে এলো আরও একটি বৈশাখ, আরও একটি বছর। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও মঙ্গলবার শোভাযাত্রার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখকে বরণ কওে নিতে পারছি না। মহামারী করোনার কারণে গত বছর উৎসবে মাতেনি চারুকলা। বৈশাখী রঙের পোশাক, বাহারী সাজ আর মুখোশে সুসজ্জিত মঙ্গল শোভাযাত্রা রাজপথে বের হয় নি। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ব্যস্ততা চোখে পড়েনি চারুকলার শিল্পীদের। এত সবের মধ্যেও আমরা আশাবাদী হতে চাই। আধার কাটবেই, প্রভাত একদিন আসবে। আবার আমরা শামিল হবো মঙø শোভাযাত্রায়, রমনার বটমূলে, ছায়ানট আর বকুলতলায়। বিষাদের সুর লোপ পাবে, চারিদিকে বাজবে আনন্দেও গান। আজ পহেলা বৈশাখ একটি সর্বজনীন আনন্দমুখর উৎসব, যে উৎসবে এ দেশের ধনী-গরিব, উচ্চ-নীচ সব মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে, ঝেড়ে ফেলে সব সঙ্কীর্ণতা-মলিনতা ও পশ্চাদমুখিতা দৃপ্ত পদভারে এগিয়ে যাব সম্মুখপানে। মহামারী করোনার পর ‘আবার জমবে মেলা, বটতলা-হাটখোলা…। নতুন আশার আলো নিয়ে হাজির বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এই দিনটি আনন্দ ও উল্লাসের সঙ্গে পালিত হয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৪ বা ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ হিসেবে পালিত হয়। ১৪২৮ সনের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তির পর শুরু হলো বাংলা নববর্ষ ১৪২৯।
    বাংলা সনের প্রবর্তক হিসেবে মোঘল সম্রাট আকবরের নামই বেশি শোনা যায়। তবে অনেকের মতে, বাংলা পঞ্জিকা উদ্ভাবক সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্ক। পরবর্তী কালে সম্রাট আকবর সেটিকে খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশে ব্যবহার করতে শুরু করেন। আকবরের সময় প্রচলিত ক্যালেন্ডারের নাম ছিল তারিখ-এ-এলাহি। মনে করা হয়, বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন- বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ।
    ভারতবর্ষে মোঘল শাসনকালে খাজনা দিতে সমস্যায় পড়তেন কৃষকরা। খাজনা শোধে কৃষকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কারণে বর্ষ পঞ্জিতে সংস্কার আনেন সম্রাট আকবর। শুরুতেই এই বছরের নাম দেওয়া হয়েছিল ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দে পরিণত হয়।
    পহেলা বৈশাখ শহুরে সংস্কৃতি না গ্রামীন সংস্কৃতি সে আলোচনায় যেয়ে লাভ নেই। গ্রামে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে উঠার সুবাদে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি কালি মন্দির সংলগ্ন গায়ের প্রাচীন বটতলায় মেলা বসতো। মেলায় গ্রামীণ যাত্রাপালা, জারি গাণের আসর বসতো। আমরা মেলায় যেতাম। মেলার সবথেকে আকর্ষনীয় ছিলো মিঠাই খাওয়া ও নাগরদোলায় চড়া। টেপা পুতুলের বাহারি পশরা সাজিয়ে বসতে দোকানিরা। কিনতে ভিড় জমাতাম আমরা। জমে উঠতো রীতিমত প্রতিযোগীতা। পহেলা বৈশাখ গায়ের দোকানগুলোও সাজতো বাহারি সাজে। মাইকে বাজতো বাংলা লোক সংগীত, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, পুথি, বাউল ইত্যাদি। পুরাতন হিসাব মিটিয়ে নববর্ষের নতুন খাতা খুলতেন দোকানীরা। চিরায়ত সে প্রথা হালখাতা নামে পরিচিত।
    কালক্রমে অপসংস্কৃতি, কুশিক্ষার প্রভাবে, বিশ্বায়নের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে নববর্ষের সেই আমেজ। আগে যেখানে মেলা বসতো তার সিংহভাগ জায়গায় এখন মেলা বসে না। হালখাতা তো এখন সারা বছর হয়। কিন্তু দোকান থেকে আর গ্রামীন লোকসুর ভেসে আসে না। অশ্লীল চেচামেচি আর নারী বিদ্বেষী কথায় কান ঝালাপালা করে। বারবার আঘাত এসছে বাঙলা সংস্কৃতির উপর। অস্তাকূড় থেকে উঠে আসা একদল খল নববর্ষ উদযাপন করা হারাম ফতোয়া দিয়ে নিজ নিজ অনুসারীদের তা বর্জন করার আহবান জানিয়েছেন। এই সব শয়তানেরা বহুবার বিশ্বশান্তির মঙ্গল কামনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় তা প্রতিহতের হুমকি দিয়েছে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আকা দেয়ালচিত্র রাতের আধাওে পোড়া মবিল দিয়ে মুছে দেয় মৌলবাদীরা। ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখের দিন ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ঘটনাস্থলে দুইটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং ১০-১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
    বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাতজন প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরো তিন জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। যে ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন তাদের উদ্দেশ্য বাঙালী সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেশকে পাকিস্তান- আফগানিস্তান বানানো। পরবর্তীতে এই ঘটনায় মুফতি হান্নানকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়।

    এত কিছুর পরেও তারুণ্য থামেনি, বীর বাঙালী থামেনি। মঙ্গল শোভাযাত্রা থামেনি। মৌলবাদীদের উদ্ভট চেহারা আর হুমকিতে কর্ণপাত না করে বাঙালী সম্মুখপাণে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে গতবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় নি। করোনার প্রকোপ ও সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে না। রমনার বটমূল, বকুল তলা সুরের মুর্ছনায় ভাসবে না। তারপরও আমি আশাবাদী আগামী বছর আমরা নতুন উদ্যামে আবার মিলিত হবো। আবার জাগবে প্রাণের গান। আজ শুভ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। বৈশাখ তুমি এসো শান্তির বাতাশ নিয়ে। এসে মহামারীযুক্ত ধরাকে ধুইয়ে দাও। গ্লানি জরা সবকিছু মুছে দাও। এবারই বিদায় হোক মহামারী। আবার জমুক প্রাণের মেলা। বারবার কানে ভাসছে আবার জমবে মেলা……
    আবার মেলা জমবে সবকিছু স্বভাবাবিক হবে এ আমার দৃড় বিশ্বাস।

    লেখক: সাধারণ সম্পাদক, আশাশুনি উপজেলা সাহিত্য পরিষদ

  • উৎসবহীন বাংলা নববর্ষ আজ

    উৎসবহীন বাংলা নববর্ষ আজ

    ন্যাশনাল ডেস্ক: আজ বুধবার উৎসবহীন বাংলা নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৭ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৮। আজ সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে।
    স্বাভাবিকভাবেই সে স্বপ্ন, করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বিশ্ব-নতুন বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ দ্বিতীয়বারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।

    আজ পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতার কথা দেশ। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী জুড়ে থাকার কথা মঙ্গল শোপভাযাত্রা নিয়ে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এখন চলছে করোনাকাল। মানুষের পৃথিবীতে এখন চলছে অনিশ্চিত সময়।
    এর আগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে আজ থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন ও সাধারণ ছুটি যা চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এবার তাই কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী রমণার বটমূলে হচ্ছে না ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে সরকারি এবং বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
    এদিকে আজ বাংলা নববর্ষের দিন সনাতন বাইরে না গিয়ে নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করে উৎসব পালনের আহবান জানানো হয়েছে।
    বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাবেন।
    কৃষি কাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
    ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
    পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করবার আর কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা পায় এবং জাতি হয় ঐক্যবদ্ধ।

  • ৪৭ বছরের সাধনার কোন মূল্য পাইনি শিল্পী ও সুরকার আজিজুর রহমান !

    ৪৭ বছরের সাধনার কোন মূল্য পাইনি শিল্পী ও সুরকার আজিজুর রহমান !

    জহুরুল কবীর :

    মোঃ আজিজুর রহমান। প্রখ্যত শিল্পী ও সুরকার। পিতা আব্দুল ওয়াহেদ ওমাতা মোহর জান বিবি।পুত্র মোঃ আজমীর হোসেন রাজা ও শরীফ হোসেন রানা ও কন্যা মোছাঃ লাবণী ইয়াসমীন।
    শিল্পী ও সুরকার আজিজুর রহমান ১৯৫২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ভারতে  উত্তর চব্বিশ পরগনার গাইঘাটা থানার বিষ্ণুপুর নাগবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি, মামা নাট্যশিল্পী গাজী রহিম বক্স’র বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। ভারতের চব্বিশ পারগনা জেলার বিষ্ণুপুর নাগবাড়ি প্রাইমারি স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ও বিষ্ণুপুর খাঁঠুরিয়া হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা সোনাবাড়িয়া নিজ পিতৃনিবাসে চলে আসেন এবং কলারোয়া পাইলট হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে কলারোয় পাইলট স্কুল থেকে প্রাইভেট ভাবে মেট্রিকুলেশন ও খুলনা সুন্দরবন কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে আইএসসি পাশ করেন। মোঃ আজিজুর রহমান প্রাইমারি শিক্ষার পাশাপাশি মামা নাট্য শিল্পী রহিম বক্স গাজীর অনুপ্রেরণায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী উস্তাদ বিমলইন্দু বিশ্বাস কাছে হাতেখড়ি দেন। কিংবদন্তি সংগীত সাধক শ্যামল মিত্রের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন।পরবর্তিতে কাওয়ালী ঠুংরী সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী আমেনা বেগম ও উস্তাদ ঋষিকেশ ব্যানার্জি (বেহালা বাদক) এর নিকট দীর্ঘকাল সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেন।শিল্পী ও সুরকার মোঃ আজিজুর রহমান ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরা সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “শিল্পীচক্র”-এর তরুণ সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং খুলনা বেতারে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন। তিঁনি ১৯৭৩ সালের ২২শে জুন খুলনা বেতারে গীতিকার সায়েলা চৌধুরীর কথায় ও নিজের করা সুরে আধুনিক বাংলা গান “ তুমি আকাশের নীল – আমি শুধুই চেয়ে থাকি” পরিবেশন করেন।১৯৯১ সালে খুলনা বেতার থেকে এনওসি নিয়ে ঢাকা বাংলাদেশ বেতারে নিয়োমিত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন।

    শিল্পী ও সুরকার আজিজুর রহমানের সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাত করেণ জনাব, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি।


    মোঃ আজিজুর রহমান ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরার প্রখ্যাত গীতিকার সোনালী ব্যাংকের জিএম জনাব শেখ ফজলুর রহমানের লেখা গান “আমার নিজের জ্বালানো দীপের আগুনে একটু জ্বলতে দাও”-এ  প্রথম সুরারোপ করেন এবং প্রখ্যাত শিল্পী আব্দুল জব্বার বাংলাদেশ বেতারে পরিবেশন করেন।
    এপর্যন্ত তিনি অনেক গুণীজন খ্যাতিমান গীতিকারদের গানে সুরারোপ করেছেন। তারমধ্যে শেখ ফজলুর রহমান, অচিন্ত কুমার ভৌমিক, আব্দুর রশিদ,  সাইফুল ইসলাম সরদার, মোহাঃ রেজাউল করিম, অসিত কুমার মিত্র, আ.ব.ম. সালাউদ্দীন, বাসন্তী গমেজ, সিদ্দিক আবু বক্কর, ভারতের প্রখ্যাত গীতিকার হাবিবুর রহমান, মোকাম আলী খান, প্রাণকৃষ্ণ সরকার,  প্রমুখ বিখ্যাত গীতিকারের অসংখ্য গানে তিঁনি সুরারোপ করেছেন। 
    এছাড়া তাঁন সুরারোপিত গানে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী হৈমন্তী শুকলা, সুবীরনন্দি, বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শিল্পী বাসন্তী গমেজ, তৌহিদা আক্তার রাত্রি, আব্দুল জব্বার, সাবরিনা ইয়াসমিন, সঞ্জয় কুমার প্রমুখ শিল্পীগণ সুরকার আজিজুর রহমানের সুরারোপিত গান গেয়েছেন। 
    শিল্পী ও সুরকার মোঃ আজিজুর রহমান ২০১২ সালে “সর্বভারতীয়া সঙ্গীত একাডেমি এবং সঙ্গীত সংসদ এ্যওয়ার্ড”; ২০০৭ সালে ঢাকায় মাননীয় বিচারপতি হাবিবুর রহমান এর নিকট হতে “অনিন্দ সঙ্গীত সংসদ এ্যাওয়ার্ড” লাভ করেন। এছাড়া ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা নজরুল একাডেমি ও ২০১৭ সালে শিল্পী ঐক্য জোট শিল্পী ও সুরকার মোঃ আজিজুর রহমানকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন।তবে, একাধিকবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আবেদন করা সত্বেও তিঁনি অদ্যাবধি কোন জাতীয় পর্যায়ের সন্মান পান নি।
    সম্প্রতি সুরকার মোঃ আজিজুর রহমান মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে গীতিকার প্রাণ কৃষ্ণ সরকার রচিত  “হাজার বছরের সেরা বাঙালি” নামে দশটি গানের একটি এ্যালবাম তৈরি করেন এবং জয়টিভিতে শিল্পী সাবরিনা ইয়াসমিন প্রমা ও পূজা রানী কর্মকারের পরিবেশন করেন।
    শিল্পী ও সুরকার মোঃ আজিজুর রহমান বাবার ইন্তেকালের পর সংসারের হাল ধরেন। ১৯৭৬ সালে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে লেখাকার হিসেবে যোগদান করেন পরে ১৯৯২ সালে পদন্নোতি পেয়ে ঢাকা ৭২ গ্রিন রোডের ডিজাইনার অফিসে নকশাকার হিসেবে যোগদান করেন। গত ২০১০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।  
    সঙ্গীতজ্ঞ আজিজুর রহমানের হাতে ৬৮ বছর বয়সে বহু গুণী শিল্পী তৈরি হয়েছেন। তার হাতে গড়া শিল্পীদের মধ্যে চৈতালি মুখুর্জি, বিশ্বনাথ দেবনাথ, সায়মা সুলতানা, তৈহিদা আক্তার রাত্রি, সাবরিনা ইয়ামিন প্রমা, অম্রিতা দত্ত, আমজাদ হোসেন, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ শিল্পীরা তার হাতে গড়া একেকটা নক্ষত্র। 
    শিল্পী আজিজুর রহমান এপর্যন্ত বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে “ হাজার  ভীড়ের মাঝে- কথা সাইফুল ইসলাম সরদার; আমার নিজের জ্বালানো দীপের আগুনে- কথা শেখ ফজলুর রহমান; ওগো নদী জানি তীর ভেঙ্গে তুমি তীর ভেঙ্গে  সুখ পাও- কথা অচিন্ত কুমার  ভৌমিক; সবাই বোললো মুছে ফেলো সিথীর সিদুর- কথা মোকাম আলি খান উল্লেখযোগ্য। 
    সদা হাস্যোজ্বল সদালাপী নির্লোভ এই মানুষটি যেন সভ্যতার প্রতিক। কারো কৃতকর্মকে তিনি কখনো ছোট করে দেখেন না। বরং ভূওসি প্রসংশায় তাকে আরও উদ্বুদ্ধ করেন। কেউ কোন কবিতা গান লিখলে তিঁনি স্বপ্রনদিত হয়ে মনের মাধুর্য মিশিয়ে সুর করে থাকেন এবং নিজের কণ্ঠে শ্রোতাদের শোনাতে ভালবাসেন। মিত্রতা প্রেমি মানুষটির যেন শত্রু বলতে কেউ নেই।
    ২০০৭ সালে এক বিশেষ সংকটময় মূহুর্তে  শিল্পী ও সুরকার মোঃ আজিজুর রহমান সাংস্কৃতিক জগত থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রাককালে হাই কোর্টের বিচারপতি ততকালীন জেলা ও দায়রাজজ জনাব আশিষ রঞ্জন দাসের অনুপ্রেরণা সহযোগিতা ও অনুরোধে সঙ্গীত চর্চা অব্যাহত রাখেন।

  • কলারোয়া সংবাদ

    কলারোয়া সংবাদ

    কলারোয়ায় জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত-৩
    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কলারোয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক নারীসহ ৩জন আহত হয়েছে। এঘটনার প্রতিকার চেয়ে কলারোয়ায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আহতরা হলেন, উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত আছির উদ্দীন বিশ^াসের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৬০), শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও শফিকুলের স্ত্রী রওশনারা খাতুন (৪০)। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের নূররালি বিশ^াস, ইলিয়াস হোসেন, ইকবাল হোসেন, শারুক হোসেন, রবিউল ইসলাম দলবদ্ধ হয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর বেলা ১টার দিকে রফিকুল ইসলামের জমিতে প্রবেশ করে জমির সীমানার খুটি উৎপাটন করে। এতে বাধা দিতে গেলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে লাটি সোটা নিয়ে হামলা করে। এঘনায় রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় ৫জনকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

    কলারোয়ায় ভারত-বাংলাদেশ বাউল মেলা অনুষ্ঠিত
    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ভারত ও বাংলাদেদের দুই বাংলা বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে কলারোয়া পাবলিক ইনস্টিটিউটের হলরুমে এ বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পাবলিক ইনস্টিটিউটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শেখ কামলার রেজার পরিচালনায় বাউল মেলায় উপস্থিত ছিলেন-কলারোয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলাম, প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, কলকাতার বাউল শুভ্রুত সেন, মানস সরকার, কুষ্টিয়ার বাউল অনু ফকির, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বাউল ফকির সমিতির সভাপতি মাস্টার আজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমির আলী ফকির, ইলিশপুরের ফকির মোতাহার সরকার, পাঁচপোতার আঃ খালেক ফকির, বাউল সংগঠক শেখ কান্তা রেজা, বাউল মিজান, আবু তালেব ফকির, সহিলুদ্দিন ফকির, রবিউল ফকির, কলারোয়া পৌর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী প্রমুখ।

    কলারোয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানে নির্যাতনে অসহায় যুবক হাসপাতালে
    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কলারোয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্যাতনে এক অসহায় যুবক জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবীতে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নামে শুক্রবার সন্ধ্যায় কলারোয়া থানা লিখিত ভাবে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান গাইনের ছেলে ইমরান হোসেন (৩২) শুক্রবার সকালে বোয়ালিয়ার ফকিরপাড়া মোড় থেকে ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক তাকে ধরে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যায়। সেখানে কোন কারন ছাড়াই ইমরান কে দড়ি দিয়ে বেধে বেধড়ক মারপিট করে জখম করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে কলারোয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনার সুষ্ঠ ও তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে আহত ইমরানের পিতা হাবিবুর রহমান গাইন বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের নামে কলারোয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারমান আফজাল হোসেন হাবিল বলেন-তার পরিষদের এক গ্রাম পুলিশকে সে পিটিয়েছে। ওই সময় মনিরুল ইসলামকে থানা পুলিশের কাছে দেওয়ার কথা বলছিলো সকলেই কিন্তু তিনি তা না করে ছেড়ে দিয়েছেন।