Category: রাজনীতি

  • বঙ্গবন্ধু অমরই থাকবেন

    বঙ্গবন্ধু অমরই থাকবেন

    হাসানুল হক ইনু

    ‘বেইমানের প্রাণভিক্ষা নাই; সাপের শেষ রাখতে নাই’- এ কথাটা স্মরণে রাখতে আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ওমর চাচা।

    ওমর চাচার সতর্কবাণীর যথার্থতা অনুধাবন করতে পারলাম যখন ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হত্যা একটা বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। একটা ঐতিহাসিক বিরাট বেইমানির ঘটনা।

    ১৯৭৫ সালে যখন এ কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে, তখন ওপারে কলকাতায় লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর বন্ধু কথাসাহিত্যিক মনোজ বসুকে ফোনে বলেন, ‘আসুন আমরা দুজনে বসে কাঁদি’। তাঁদের কান্না পেয়েছিল, আর বাংলাদেশের মানুষ স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল।

    সাম্প্রতিককালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে ঘরের শত্রু বিভীষণ। ঘরের ভিতর থেকে শত্রুতা না করলে বাইরের শত্রু সুযোগ পায় না। সে সুযোগটা তারা করে দিয়েছিল। … পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যা করে নাই, ঘরের আপনজন হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা মানুষরাই জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে’ এটা মর্মান্তিক। এ বিশ্বাসঘাতকরাই পরাজিত পাকিস্তানপন্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।

    ১৯৭৫ সালে শুধু একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা ঘটায়নি। ঘাতকরা, অবৈধ দখলদাররা, সামরিক শাসকরা জাতির আত্মাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। সাম্প্রদায়িকতার ছুরিতে বিদ্ধ হয় জাতির আত্মা। রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ’৭৫ থেকে ২১ বছরের সামরিক শাসন বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত করে রাখে। ’৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন তখন নির্বাসন থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন শুরু হয়।

    ১৫ আগস্টের কলঙ্কজনক ঘটনা ছাড়াও বাংলাদেশের বুকে আরও চারটি কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। তা হলো- ১৯৭১-এ মহাযুদ্ধের মাঠে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা, ’৭৫ থেকে উপর্যুপরি অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের ঘটনা, সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল চার নীতি ছেঁটে ফেলা ও সাম্প্রদায়িকতা আমদানি এবং ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলার ঘটনা। এ পাঁচ কলঙ্কের ছাপ ললাটে নিয়ে তাই বাংলাদেশ এগোনোর চেষ্টা করছে।

    আজও বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার ছুরিতে বিদ্ধ জাতির আত্মার রক্তক্ষরণ ও পাঁচ কলঙ্ক মোছার কঠিন সংগ্রামের ভিতর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবস পালন করছে

    এখনো সাম্প্রদায়িকতার, সামরিক শাসনের সব চিহ্ন মোছা শেষ হয়নি। এখনো সামরিক শাসকদের ‘একটু গণতন্ত্র, একটু ধর্মতন্ত্র, একটু সামরিকতন্ত্র’-এর গোঁজামিলতত্ত্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল ছড়াচ্ছে। এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে চিনলেই বাংলাদেশকে চেনা হবে। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন। বঙ্গবন্ধু হলেন একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি দেশ, বাঙালি জাতীয়তার একটি মহাকাব্য, একটি আন্দোলন, জাতি নির্মাণের কারিগর, ঠিকানা প্রদানের সংগ্রাম, একটি বিপ্লব, একটি অভ্যুত্থান, একটি ইতিহাস, বাঙালি জাতির ধ্রুবতারা : জাতির উত্থান, রাজনীতির কবি, জনগণের বন্ধু, রাষ্ট্রের স্থপতি, স্বাধীনতার প্রতীক, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

    ১৯৪৭ সালের ঐতিহাসিক ভুল শোধরান বঙ্গবন্ধু। যে হিন্দু ও মুসলিম ভারতে আলাদা হয়ে পড়ে, সেই তাদের সবাইকে একত্রিত করে এক অখ- বাঙালি জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি মানুষ, আমি বাঙালি, আমি মুসলমান’। বাংলাদেশের জনগণকে বঙ্গবন্ধু তিন ধাপে তাদের পরিচয় সাজাতে বললেন- আগে মানবতা, তারপর জাতিসত্তা, তারপর ধর্ম। এটাই হলো বঙ্গবন্ধু রচিত বাঙালির বাংলাদেশ উত্থানের, প্রতিষ্ঠার, স্বশাসনের স্বাধীনতার মহাকাব্য। সবাই বাঙালি হয়ে গেল। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের আলখাল্লা ফেলে দিল।

    অসাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্ত্বা, উপনিবেশিকতা, বিদেশি দখলদারিত্ব প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ধারণা খুবই স্বচ্ছ ছিল। সুতরাং কেবল ধর্মের মাপকাঠিতে কখনই রাজনীতি সাজাননি। তাই দেশ স্বাধীনের আগে এবং পরে তিনি সেভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। নীতির প্রশ্নে কখনই দিধাগ্রস্ত ছিলেন না।

    তাই ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আমি জানতে চাই, কেন সৌদি আরব স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি?’

    বাদশাহ ফয়সাল বলেন, ‘আপনি সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে “ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ” করতে হবে। ’

    বঙ্গবন্ধু জবাব দেন, ‘এ শর্ত বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশের জনগণের প্রায় অধিকাংশই মুসলিম। আমাদের প্রায় ১ কোটি ভিন্নধর্মের নাগরিকও রয়েছে। সবাই একসঙ্গে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে বা যুদ্ধের ভোগান্তিতে পড়েছে। তা ছাড়া সর্বশক্তিমান আল্লহ শুধু মুসলিমদের জন্যই নন। তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা। তা ছাড়া আপনার দেশের নামও তো “ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরব” নয়। আরব বিশ্বের একজন গুণী ও খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ প্রয়াত বাদশাহ ইবনে সৌদের নামে নাম রাখা হয়েছে “কিংডম অব সৌদি আরব”। আমরা কেউই এ নামে আপত্তি করিনি। ’

    জাতির পিতার প্রত্যুৎপন্নমতিত্বও ছিল বিস্ময়কর। নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুব গাওয়ান যখন বললেন, ‘অবিভক্ত পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ, কেন আপনি দেশটাকে ভেঙে দিতে গেলেন!’ উত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শুনুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি! আপনার কথাই হয়তো ঠিক, অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিল। তার চেয়েও শক্তিশালী হয়তো হতো অবিভক্ত ভারত। কিন্তু সেসবের চেয়েও শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া, আর মহাশক্তিশালী হতো এক জোট এই বিশ^টি। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি! সবকিছু চাইলেই কি পাওয়া যায়?’

    বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ভিত্তিতে স্বশাসনের পক্ষে দাঁড়াতে ঘোষণা দিলেন; সামরিক স্বৈরতন্ত্র হটানোর কথা বললেন; গণতন্ত্রের ওপর দাঁড়াতে বললেন। গণসংগ্রাম-নির্বাচন-সশস্ত্র যুদ্ধ এ তিনের অপূর্ব সমন্বয় করলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনকে গণরায়ে রূপান্তর করলেন। অসহযোগ আন্দোলনের নামে স্বশাসিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেন। নিরস্ত্র জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামের মানস গঠনের রাজনীতি উপহার দিলেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু তাই আধুনিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক আর বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর অনেক অবদান রয়েছে, কিন্তু যা বঙ্গবন্ধুকে আলাদাভাবে মহিমান্বিত করে, তা হলো, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা উপহার দেন, বাঙালিদের এক যোদ্ধা জাতিতে পরিণত করেন, আধুনিক বাঙালি জাতীয়তার জন্ম দেন এবং তার ভিত্তিতে একটি জাতিরাষ্ট্র তৈরি করে দেন এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এক মহান রাজনৈতিক কৌশলবিদ।

    সংস্কৃত প্রবচনে আছে-

    ‘রতœ কর্ষতি পুরঃপরমেক।

    স্তদ গতানুগতিকো ন মহার্ঘ্য’

    অর্থাৎ, ‘একজনই আগে পথ তৈরি করে দেন। পরে সে পথ দিয়ে যাতায়াত করার লোক দুর্লভ হয় না। ’

    বঙ্গবন্ধু হলেন সেই নেতা, যিনি ৪ হাজার বছরের এ ভূখন্ডের ইতিহাসে শুধু পথের দিশা দেন না, তিনি পথ তৈরি করে পথ ও পরিক্রমায় গন্তব্যও নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধু তেমনই দ্রষ্টা ও স্রষ্টা। বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা পথ দিয়েই কোটি কোটি বাঙালি হাঁটছে এবং শেখ হাসিনা সে পথেই হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

    ফরাসি লেখক মালরোর জীবনের শেষ রচনায় Rope and Mice-এ লিখেছেন, একজন শিল্পীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তাঁর পায়ের আঙ্গুলগুলো কোনোরকম একটু মাটি স্পর্শ করে আছে। শিল্পী তাঁর স্বভাব অনুযায়ী ওই অবস্থাতেই আঙ্গুল দিয়ে কয়েকটি ইঁদুরের ছবি আঁকেন। আর আশ্চর্যের বিষয় ইঁদুরগুলো অলৌকিকভাবে প্রাণ পেয়ে গেল এবং ফাঁসির রজ্জু কেটে শিল্পীকে মুক্ত করে দিল।

    বঙ্গবন্ধুর পায়ের আঙ্গুলগুলো যদি মাটি স্পর্শ করত, তাহলে কী হতো? বঙ্গবন্ধু পায়ের আঙ্গুল দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রই আঁকতেন। যে মানচিত্র জুড়ে থাকত বঙ্গবন্ধুর বিশাল শরীর। কবি রফিক আজাদের ভাষায়, ‘স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে পড়ে আছে বিশাল শরীর। ’

    কবি বাবলু জোয়ার্দারের ভাষায়,

    ‘সে ছিল দীঘল পুরুষ-

    হাত বাড়ালেই ধরে ফেলতো

    পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল,

    সাড়ে সাত কোটি হৃদয়,

    ধরে ফেলতো বৈশাখী মেঘ অনায়াসে। ’

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বরে অবস্থান করেন। পালাননি। গ্রেফতার হন। তিনি ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কিন্তু আমার দেশবাসীকে পরিত্যাগ করে আমি কেমন করে যাব? আমি তাদের নেতা। আমি সংগ্রাম করব। মৃত্যুবরণ করব। পালিয়ে কেন যাব?’ তিনি সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কখনই পিঠ দেখাননি। সেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বন্দুক দেখে ঘাবড়ে যাননি, পিছটান দেননি। মাথা উঁচু করে হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘কী চাস?’ সব গুলি বুকে লেগেছে, একটা গুলিও পিঠে নয়। এই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু।

    বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সাধারণ রাজনীতিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন, জাতির জনক…। পদত্যাগ নয়, দেহত্যাগই জাতির জনকের অন্তিম কর্তব্য। ’ … ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় … কাঁদো প্রিয় দেশ। কাঁদো মুক্তিদাতা মুজিবের জন্য। তাঁর সেই পরিচয়টাই ইতিহাসে অমর হবে। কাঁদো তার সহমৃতা সাধ্বী সহধর্মিণীর জন্যেও, বালক পুত্রের জন্যেও। কাঁদো কাঁদো প্রিয় দেশ। ’

    কিন্তু এখনো দেশ কলঙ্কমুক্ত নয়। এখনো সাম্প্রদায়িকতার ছুরিকাবিদ্ধ জাতির আত্মার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, যুদ্ধ এখনো চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন কেবল তখনই নিরাপদ হবে যখন বাংলাদেশের কপাল থেকে যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা, সামরিক শাসন, সংবিধান থেকে চার মূলনীতির বিসর্জন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা- এ পাঁচ কলঙ্কের ছাপ মোছা হবে, জাতির আত্মায় বিদ্ধ সাম্প্রদায়িকতার ছুরিটাকে সম্পূর্ণরূপে টেনে তুলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হবে। অপসৃত হবে বৈষম্যের পাহাড়। সে মাহেন্দ্রক্ষণেই বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে আলোর পথে হাসতে হাসতে দাঁড়াবে।

    ২০২০-এর আগস্টে নিশ্চয় জনগণ স্বীকার করবে বঙ্গবন্ধুকে খুন করে সমাজ থেকে নির্বাসিত করা যায়নি, ’৭৫-পরবর্তীতে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার হাত ধরে স¦গৃহে প্রত্যাবর্তন করছেন, স্বমহিমায়। বাংলাদেশ আবার বাংলাদেশের পথে চলতে শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু অমর ছিলেন, অমরই থাকবেন।

    লেখক : হাসানুল হক ইনু, এমপি, সভাপতি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

  • জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভা :‘স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উপকূলে টেকসই ভেড়ী বাঁধ নির্মান এবং বিচার বর্হিভুত হত্যা বন্ধ করুন’

    জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভা :‘স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উপকূলে টেকসই ভেড়ী বাঁধ নির্মান এবং বিচার বর্হিভুত হত্যা বন্ধ করুন’


    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, উপকূলে টেকসই ভেড়ী বাঁধ নির্মান ও বিচার বর্হিভুত হত্যা বন্ধের দাবীতে জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাসদ সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ। জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলীর পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, শ্যামনগর উপজেলা সাধারন সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান, তালা উপজেলা সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন, আশাশুনি উপজেলা সাধারন সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল আলিম প্রমুখ।
    সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসের এই সংকট কালে স্বাস্থ্য বিভাগের সীমাহীন দুর্নীতির খরর দেশ বাসীকে উৎবিগ্ন করে তুলেছে। এমনিতেই সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগের দুনীতি ও চিকিৎসা নিয়ে সাতক্ষীরার মানুষরা উদ্বিগ্ন ছিল, তার মধ্যে কেন্দ্রিয়ভাবে বিভিন্ন অপকর্মের প্রকাশিত চিত্র প্রমানিত করে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল স্তরে দুনীতির শিকড় বাসা গেড়ে বসেছে। এ দায় থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রি বাদ পড়তে পারেন না। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ দায় কাধে নিয়ে অবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিত।
    সভায় বক্তরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সাতক্ষীরার উপক’লের মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুকিযুক্ত হয়ে পড়েছে। বিগত আম্ফানে বিধ্বস্থ ভেড়ীবাধের অনেক স্থানে এখনও রিংবাধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামপ্রতিক জোয়ারের পানিতে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার ভেড়ীবাধ ভেঙে আবারও ডুবে গেছে বিস্তৃন্য এলাকা। এলাকার মানুষের পক্ষ হতে টেকসই স্থায়ীত্বশীল ভেড়ি বাধের দাবী জানানো হলেও দশ বছরে সেই দাবী প্রতি সামান্য সম্মান দেখানো হয়নি। অথচ সরকারের উর্ধতন পর্যায় থেকে বার বার আশ^াস দেওয়া হয়েছে যে, দ্রুত বাধ নির্মানের কাজ শুরু হচ্ছে। এই বাস্তবতাহীন বক্তব্য সরকারের ভামুর্তিকে আরো ক্ষুন্ন করেছে। মানুষের মধ্যে অবিশ^াসের অবস্থা তৈরী হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর আজ স্থায়ী জলবদ্ধার করাল গ্রাসে আক্রান্ত। শত শত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জলামগ্ন হয়ে থাকলেও বাস্তব সম্মত কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় মানুষের দুর্ভোগ আরো তীব্র হচ্ছে। অথচ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ নানান অপকর্ম ও দুনীতি বিষয় আজ প্রকাশ্য নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করে স্থায়ীত্বশীল ভেড়ী বাঁধ নির্মান করে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাতক্ষীরার সদরকে জলবদ্ধতার অভিসাপ মুক্ত করতে আন্তনদীর সংযোগ সৃষ্টিসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহন করার জোর দাবী জানান।
    সভায় নেতৃবন্দ বলেন, দেশে বিচার বহিঃভূত (ক্রস ফায়ার) হত্যার প্রবনতা এত বেড়ে গেছে যে, সাধারন মানুষদের কখন কিভাবে আইন শৃংখলা বাহিনীর এ হত্যার শিকার হতে হয়, এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। একটি স্বাধীন দেশে এটি চলতে পারে না। সম্প্রতি সিনহা হত্যার মাধ্যমে এটির নগ্নতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সকল মহল থেকে আজ এ ধরনের কার্যক্রমের রাশ টেনে ধরার জোর দাবী উঠেছে।
    সভায় আগামী ৩১ অক্টোবর জাসদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী যথাযথ ভাবে পালনের লক্ষ্যে পুরা অক্টোবর মাস ব্যপি প্রচার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।

  • সাতক্ষীরার বাঁকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক মান্নান বহিষ্কার

    সাতক্ষীরার বাঁকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক মান্নান বহিষ্কার

    নিজস্ব প্রতিনিধি : বাঁকাল জেলেপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (হিন্দুদের) বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে।
    প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো। যার স্মারক নং- বা,আ,যু-০০৮/২০২০, তারিখ-০৩.০৮.২০২০ ।
    উল্লেখ্য , গত ৩০ জুন বৃহস্পতিবার রাতে যুবলীগ নেতা মান্নানের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার মুজিবর পেশকারের পক্ষে সদর উপজেলার বাঁকাল জেলেপাড়ায় নিরঞ্জন মাখাল ও পূর্ণিমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে বাধা দেওয়ায় নিরঞ্জন মাখাল, তার স্ত্রী অহল্যা, সহদেব মাখাল ও বলরাম মাখালকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এঘটনায় স্থানীয়রা ওই রাতেই সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে ঝাঁটা মিছিল করলে পুলিশ মুজিবর ও তার ছেলে শুভকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর অদৃশ্য কারনে ওই রাতেই তাদের আবার ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টায় বিষয়টি নিয়ে থানায় বসাবসির কথা থাকলেও বেলা ১২ টা পর্যন্ত হামলাকারি পক্ষ থানায় আসেননি। এক পর্যায়ে নিরঞ্জন মাখাল বাদি হয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানসহ পাঁচজনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ১৬জনকে আসামী করে থানায় একটি এজাহার জমা দিলে পুলিশ গত পহেলা আগষ্ট মামলাটি রেকর্ড করেন। যার মামলা নং-২। এ ঘটনায় জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানসহ পাঁচ আসামীর গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গত সোমবার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি প্রাণনাথ দাসের সভাপতিত্বে মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রণজিৎ ঘোষ, জেলা যুব মহাজোটের সভাপতি সন্দীপ বর্মণ, যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য মিলন রায়, মিঠুন ব্যাণার্জী প্রমুখ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।

  • বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদ স্হায়ী কমিটির সদস্য সহসভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. হাবিবুর শওকত আর আমাদের মাঝে নেই

    বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদ স্হায়ী কমিটির সদস্য সহসভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. হাবিবুর শওকত আর আমাদের মাঝে নেই

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আইন বিষয়ক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধে ৯নং সেক্টরের পটুখালী-গলাচিপা সাব সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার, সাগরপারের যুদ্ধখ্যাত পানপট্টি যুদ্ধসহ পটুখালী হানাদারমুক্ত করার যুদ্ধের দুঃসাহসী নায়ক এড. হাবিবুর রহমান শওকত আজ (৩ জুলাই) বিকাল ৩:৪১ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিট-২ এর আইসিইউ-তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না…..রাজেউন)।

    তিনি গত ১৯ জুলাই করোনয় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট-২ এ ভর্তি হয়েছিলেন। ১৪ দিন যুদ্ধ করে আজ তিনি করোনার কাছে পরাজিত হন। তার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৪ এপ্রিল, ১লা বৈশাখ তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা ও জামাতাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

    এড. হাবিবুর রহমান শকত একজন বিরল দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৩ জুন ১৯৭১ তারিখে ‘বিলোনিয়া ব্রীজ’ ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২নং সেক্টরে যুদ্ধ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে নিজের এলাকায় যুদ্ধ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। জে. ওসমানীর নির্দেশে ৯নং সেক্টরের পটুখালী-গলাচিপা সাব-সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ সাগরপারের যুদ্ধখ্যাত পানপট্টি সম্মুখ যুদ্ধসহ পটুয়াখালী হানাদারমুক্ত করার যুদ্ধে দুঃসাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এড. হাবিবুর রহমান শওকত ‘তৃণমূলে যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নতকরণে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নির্যাতিত-ধর্ষিত পরিবারের সদস্যদের গণশুনানী করেন’। তার এই পদক্ষেপ ‘তৃণমূলে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিতকরণে পটুয়াখালী মডেল’ হিসাবে পরিচিতি পায়। তার উদ্যোগে এই গণশুনানীতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তদন্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের-তদন্ত-বিচার করে, বিচারে ৮ জন যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। ১৬ ডিসেম্বরের পর এড. হাবিবুর রহমান শওকত পটুয়াখালী ট্রেজারি থেকে লুট হয়ে যাওয়া ৩৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেন। উক্ত জেলা প্রশাসক ও কতিপয় অফিসারের যোগসাজসে এই স্বর্ণ আত্মসাৎ করলে তিনি দুর্নীতির মামলা করেন। মামলায় উক্ত জেলা প্রশাসকের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ ৭ বছর দন্ড হয়। এড. হাবিবর রহমান শওকত ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাসদের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি পটুয়াখালী জেলা জাসদের সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

    তিনি স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে তিনি নির্যাতিত-অনির্বাচিত-সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলন, তেল-গ্যাস-বন্দর-বিদ্যুৎ-সুন্দরবন-জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।

    করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি দাফনের প্রটোকল মেনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ রাতেই রায়েরবাজার কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. হাবিবুর রহমান শওকতের মৃত্যুতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ অব: বীরউত্তম ও সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবিব, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবার-স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

    অনুরূপ পৃথক শোক বার্তায়, জাতীয় নারী জোটের আহবায়ক আফরোজা হক রীনা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, জাতীয় কৃষক জোটের সভাপতি নুরুল আমিন কাওছার এবং সাধারণ সম্পাদ আশেক এলাহী, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবীব শামীম এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হক ননী এড. হাবিবুর রহমান শওকতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও তার পরিবার-আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু-স্বজন-সহযোদ্ধাদে প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

  • জাপায় রাঙ্গা বাদ, বাবলু মহাসচিব

    জাপায় রাঙ্গা বাদ, বাবলু মহাসচিব

    ন্যাশনাল ডেস্ক: জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিবের পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুকে মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

    রবিবার (২৬ জুলাই) এক সাংগঠনিক আদেশে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুকে পার্টির মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন তিনি।

    দলটির যুগ্ম-দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম ব্রেকিংনিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

    উল্লেখ্য যে, জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু মহাসচিব হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপির স্থলাভিষিক্ত হবেন। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১(১) ক উপধারা এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ আদেশ অদ্য ২৬ জুলাই ২০২০ থেকে কার্যকর হবে।

  • আজ কর্নেল তাহের  দিবস

    আজ কর্নেল তাহের দিবস

    আজ ইতিহাসের কালো দিন। কর্নেল তাহের হত্যা দিবস। জাতীয় বীর, সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম কর্নেল আবু তাহের কে পাকিস্তান ফেরত অফিসারদের তুষ্ট করতে আগে থেকেই নির্দ্ধারিত মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। পৃথিবীর সকল মূল্যবোধ কে বির্সজন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ^াস ঘাতক জিয়া সাজানো আদালতে ১৭ জুলাই ফাসির রায় ঘোষনা দিয়ে ২১ জুলাই রায় কার্যকর করেন। পৃথিবীর কোন সমর নায়ক জিয়ায়মত এত হিং¯্র কাজ করেছে কিনা সেটি ইতিহাস সাক্ষ্য যে, রায় ঘোষনার ৩ দিন পরেই কার্যকর করার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন । মামলার প্রধান বাদী রায় শুনে মন্তব্য করেন ‘‘ ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই প্রহসন মূলক মামলায় তাহেরের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে প্রহসনমুলক মামলার প্রধান অভিযোগকারী কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটার ছিলেন এ টি এম আফজাল। তিনি তাহেরের মৃত্যুদন্ডের রায় শুনে নিজেই সবচেয়ে বেশী অবাক হন। তিনি একজন প্রসেকিউটর হিসাবে কখনও মৃত্যুদন্ড দাবী করেন নি। তার মতে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ তাহেরকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তার জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া সম্ভব ছিল না- দেশে সে ধরনের কোন আইনই ছিল না। তাহেরের ফাঁসির আদেশ কার্যকরের দশদিন দিন পর আইন মন্ত্রণালয় আইনের ২০ তম সংশোধনী ধারা জারী করে এই আইনগত অসংগতি দুর করে।’ যা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত তথাকথিত বিচারের নামে এক ঐতিহাসিক অবিচারের মাধ্যমে বিপ্লবী কর্নেল তাহেরকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে।
    এ মামলা প্রসংগে পরবর্তিতে ঘোষিত রায়ে আদালত বলেন. ‘কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদন্ড ঠান্ডা মাথায় খুন’। আদালত রায়ে উল্লেখ করে, ‘ এ মামলার সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য দিক হচ্ছে আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাংবাদিক মি. লরেন্স লিফসুলৎজের সাক্ষ্য ও বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদেও লিখিত বইয়ে এ বিচার (সামরিক আদালতের বিচার) নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার ‘ডেমোক্র্যাসি এন্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপসেন্ট: এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এন্ড মিলিটারী ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে অত্যান্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদেও তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার মনোস্থিও করেছিলেন। জেনারেল মজ্ঞুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফসুলৎজ একই বক্তব্য তার সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। ’ রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জেনারেল জিয়ার অতিঘনিষ্টজন ছিলেন। এই মাসলার শুনানীর এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পওে আদালত তার লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন যে, এই বক্তব্য তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে শুনেছেন।’ এছাড়া তৎকালিন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. এম এম শওকত আলীর এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের লিখিত দাবীসহ উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদেও মতামতের ভিত্তিতে আদালত এই সিন্ধান্তে এসেছে যে, কর্নেল তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুর মূল আসামি জেনারেল জিয়াউর রহমান।’
    জাতী আজ তার শেষ্ঠ সন্তানকে জাতীয় বীরের মর্যাদায়ে আসিন করে যথাযত সম্মানের মাধ্যমে স্মরন করছে। আর আদালতের রায়ে হত্যাকারী জেনারেল জিয়া একজন ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ।

  • জাসদ নেতা সুরত আলী গাজীর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা কমিটির শোক

    জাসদ নেতা সুরত আলী গাজীর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা কমিটির শোক


    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: কলারোয়া উপজেলা জাসদের সহ-সভাপতি এবং জয়নগর ইউনিয়নের সভাপতি সুরত আলী গাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা জাসদের নেতৃবৃন্দরা।

    বিবৃতিতে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে জাসদ নেতারা বলেন, সুরত আলী গাজী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-‘জাসদ’র একজন পরীক্ষিত নিবেদিত প্রাণ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাসদ একজন দক্ষ নেতাকে হারাল। রাজনৈতিক অঙ্গণে তার অভাব কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

    বিবৃতিদাতারা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লস্কর, সমাজসেবা সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বীনা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পাপিয়া আহমেদ, তালা উপজেলা জাসদের সভাপতি বিশ্বাস আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, কলারোয়া উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, দেবহাটা উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওহাব, আশাশুনি উপজেলার আহবায়ক মো. সুরাত উজ্জামান, সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম রুবেল, কালিগঞ্জ উপজেলা জাসদের সভাপতি শেখ মোদাচ্ছের হোসেন জান্টু, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, শ্যামনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম কামরুজ্জামান, যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি অনুপম কুমার অনুপ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম আবদুল আলীম প্রমুখ।

  • সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চু  : তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা

    সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চু : তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা


    ———————————————————
    আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম
    ———————————————————

    জাসদ পরিবারে আমাদের সবার প্রিয় খিচ্চু ভাইয়ের ছবি হয়ে যাওয়ার ১০ বছর হলো আজ ১৬ জুলাই। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর ছাত্র নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শ্রমিক নেতা, জননেতা ও জাসদের দুই মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক। ২০১০ সালের এইদিন রাতে মিরপুর রূপনগরে বাসায় আকস্মিকভাবে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাঁর হার্টে সামান্য সমস্যা ছিল; এজন্য একটা স্টেন্টও বসানো হয়েছিল; তারপর ভালই ছিলেন; কার্ডিওলজিস্টের সাথে নিয়মিত ফলো-আপ করতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য— দীঘল দেহের মানুষটিকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। পৃথিবীতে সব শূন্যস্থানই পূর্ণ হয় সময়ের সাথে। কিন্তু কিছু শূন্যস্থান পূর্ণ হবার পরও শূন্য হবার দাগচিহ্ন থেকে যায়।

    জাসদের রাজনীতি ও সংগঠনে খিচ্চু ভাই চলে যাওয়ার শূন্যস্থানে অমোচনীয় দাগচিহ্ন থেকে গেছে। কারণটা কী? খিচ্চু ভাই ছিলেন দলকেন্দ্রীক মানুষ, সাধারণ কর্মীকেন্দ্রীক মানুষ, দলের অফিসকেন্দ্রীক মানুষ। সহজেই দলের যে কেউ খিচ্চু ভাইয়ের কাছে যেতে পারতেন। নির্ভয়ে কথা বলতে পারতেন। এর জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা লাগতো না, আয়োজন করা লাগতো না, ঘটা করাও লাগতো না। যে কারণে কথা— তার সহজ উত্তর ও সরল সমাধান পেতেও সময় লাগতো না। কারণ, খিচ্চু ভাই রাজনীতি ও দল করাকে জটিল-কঠিনভাবে দেখতেন না।

    তাঁর কাছে রাজনীতি করা ও দল করার মানেই ছিল দলের বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া, মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করা। মানুষের বিপদে-সংকটে পাশে-সাথে থাকা। মানুষের মনের মধ্যে যে কথাগুলো ঘুরপাক খায়— সেগুলো যেন তারা গুছিয়ে বলতে পারেন সেটা শিখিয়ে দেয়া। এটুকু করতে পারলেই রাজনীতি ও দলের কাজ করা শুরু হয়ে গেলো। এটা করার সিদ্ধান্ত নেয়া আর লেগে থাকাটাই হচ্ছে কঠিন। যিনি পারেন— তিনি নিজের ক্ষুদ্র পরিসরে কর্মী আর কর্মী থেকে নেতা হন— ধীরে ধীরে তাঁর পরিসর বাড়ে— বড় নেতা হন। তিনি বলতেন নেতা মানে পদ না, দায়িত্ব।

    খিচ্চু ভাইয়ের মনের চিন্তা, মুখের কথা, বক্তৃতার ভাষা, কাজ, আচরণ, চালচলন ও জীবনযাপনের এক ও অভিন্ন দর্শন ছিল। আর তা হলো— দেশপ্রেম ও সমাজতন্ত্র। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তিনি অকৃতদার ছিলেন। তাঁর জীবনযাপনের চাহিদা ছিল খুব সামান্য ও সাধারণ। খিচ্চু ভাই ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক হবার সকল লোভের উর্ধে ছিলেন। তাঁর এই জীবনদর্শনের ভিত্তি ছিল সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে খিচ্চু ভাইয়ের কোনো ছাড় ছিল না।

    জাসদের প্রতিষ্ঠাতা, পিতৃপুরুষ ও বড় বড় নেতারা তাদের নিজেদের দলকে পরিত্যাগ-পরিত্যক্ত করে নিজেদের সুবিধামতো দল করেছেন, বিভিন্ন দলে চলে গিয়েছেন। কিন্তু খিচ্চুভাই জাসদকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন।

    কীভাবে তাঁর এই জীবনের শুরু?

    ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার রতুয়ায় নানাবাড়িতে তাঁর জন্ম। জন্মের ১৮ মাস পর মা শেখ সাইরুন্নেসা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন পাকশিতে স্বামী সৈয়দ শামসাদ আলীর কাছে। খিচ্চু ভাইরা ছিলেন ৫ ভাই ও ৩ বোন। তাঁর বাবা রেলওয়ের প্রথম শ্রেণির কন্ট্রাক্টর ছিলেন। খিচ্চু ভাইয়ের বাবা-দাদার আদিবাড়ি পশ্চিমবঙ্গ— অধুনা ঝাড়খন্ডের রাজমহলে। তাঁর বাবা রেলওয়ের কন্ট্রাক্টরি ব্যবসার কারণে পাকশিতে চলে আসেন ১৯৩৫ সালে। পাকশি কেন বিখ্যাত সবারই জানা। পদ্মা নদীর উপর ব্রিটিশরাজ নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাকশিতেই। আর এই ব্রিজকে কেন্দ্র করে বৃটিশ আমল থেকেই পাকশি একটি রেল সিটি। আধুনিক শিল্প নগরী।

    খিচ্চু ভাইয়ের বাবা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের জেলখাটা কর্মী। তাঁর দাদা সৈয়দ গওহর আলী ও দাদার বাবা সৈয়দ আনোয়ার আলী ছিলেন রাজমহলে বড় ভূস্বামী। তারা মালদা শহরে একটি বড় বাসভবন নির্মান করে সেখানেই বসবাস করতেন। বর্তমানে মালদা জেলা সার্কিট হাউস ভবনটিই ছিল খিচ্চু ভাইয়ের দাদার বাসভবন।

    পাকশির নাগরিক পরিবেশেই খিচ্চু ভাইয়ে শৈশব-বাল্য-কৈশোর-যৌবন কেটেছে। পাকশির চন্দ্ররভা স্কুলে তিনি লেখা পড়া করেন। ৯ম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। সে বছরই পুলিশী নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে একুশের প্রভাতফেরি করতে গিয়ে গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক ও বি.কম. পাস করেন। ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে ঈশ্বরদী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।

    ষাটের দশকে ঈশ্বরদী ছিল চীনপন্থী বাম অধ্যুষিত এলাকা। এ এলাকায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করা অত্যন্ত দরূহ ছিল। খিচ্চু ভাইয়ের হাত ধরেই ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে।

    ১৯৭০ সালের ৭ জুন স্বাধীকার দিবসে ছাত্রলীগ কর্তৃক জয়বাংলা বাহিনীর মার্চপাস্টে প্রথম প্রদর্শনের পর ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীনতার পতাকা প্রদর্শন করেন। তার দুদিন পর ৪ মার্চ পাকশি রেলওয়ে ময়দানে খিচ্চু ভাই স্থানীয়ভাবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।

    ১৯৭১ এর ২৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঈশ্বরদীর বাঁশের বাধা নামক স্থানে সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং খিচ্চু ভাইয়ের সহযোদ্ধা রঞ্জু ও গফুর শহীদ হন। এরপর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে রিট্রিট করে ভারতে চলে যান।

    ভারতে এফএফ-এর ট্রেনিং নিয়ে ৩০ জনের ট্রুপস নিয়ে আবার দেশের অভ্যন্তের প্রবেশ করেন। তিনি এফএফ ঈশ্বরদী থানার কমান্ডারের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে বিএলএফ-ও তাকে ঈশ্বরদী থানার কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়। মুক্তিযুদ্ধে খিচ্চু ভাইসহ মাত্র কয়েকজন ব্যতিক্রম আছেন— যাঁরা একই ব্যক্তি হিসেবে এফএফ ও বিএলএফ দুই বাহিনীর থানা কমান্ডারের দায়িত্ব পান; এবং এসব ক্ষেত্রে দুই বাহিনী একই কমান্ডে মুক্তিযুদ্ধ করে।

    খিচ্চু ভাইয়ের দুর্ভাগ্য সদ্য স্বাধীন দেশে তিনি বেশিদিন এলাকায় থাকতে পারেননি। আওয়ামী লীগ ও চীনপন্থী আলাউদ্দিন বাহিনী তাঁকে হত্যা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এরকম পরিস্থিতিতে দলের নির্দেশে ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। মোহাম্মদ শাহজাহান ও রুহুল আমিন ভুইয়ার সাথে শ্রমিক লীগের কাজের সাথে যুক্ত হন। জাসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে তিনি তাতে শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৩ সালে জাসদের ভাঙ্গন হলে তিনি জাসদ (রব) গ্রপের সাথে যুক্ত ছিলেন।

    ১৯৯৭ সালে জাসদ ঐক্যবদ্ধ হবার পর তিনি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০২ সাল এবং ২০০৫ সালের কাউন্সিলে পরপর দুইবার জাসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৪ দল গঠনের উদ্যোগের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ১৪ দলে জাসদের প্রতিনিধি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পিপলস ফোরাম-বিবিপিপিএফ-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

    সাধারণ থেকে রাজনীতিতে অসাধারণ হবার অনন্য নজির খিচ্চু ভাই। জাসদের সংগ্রামী রাজনীতি ও গণমানুষের রাজনীতির প্রতীক হয়েছিলেন তিনি।

    ভুলি নাই, ভুলবো না— খিচ্চু ভাই।
    অভিবাদন আপনাকে।
    আপনি আমাদের কাছে এখন শুধু ছবি নন। একজন আদর্শ।

  • আগামীকাল ১৬ জুলাই জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদকবীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী

    আগামীকাল ১৬ জুলাই জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদকবীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী

    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আগামীকাল ১৬ জুলাই জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রয়াত নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে আগামীকাল ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি পালন করা হবে। এবার করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করা হচ্ছে।

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চু ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক নেতা। তিনি সমাজতন্ত্রকে শুধু মঞ্চের বক্তৃতার কথা হিসাবে না নিয়ে জীবনদর্শন হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তার জীবনযাপন-সংস্কৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ও নৈতিকতা বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তি অর্জণের কোনো চেষ্টা করেননি। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম-স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীন দেশে প্রথম বিরোধী দল জাসদ গঠন-সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী আন্দোলন-গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী প্রগতিশীল আন্দোলন-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন-১৪ দল গঠনসহ জাতীয় রাজনীতিকে প্রগতিশীল ধারায় পরিচালিত করতে অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুর সংগ্রামী আদর্শবাদী জীবন জাসদের নেতা-কর্মীদের চলার পথে প্রেরণার উৎস।

    তারা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির কর্মসূচির অনুসরণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের সকল জেলা ও উপজেলা কমিটিকে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মাধ্যমে প্রয়াত নেতা সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ খিচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের আহবান জানান।

  • জাসদের শোক: বীর মুক্তিযোদ্ধা  দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু

    জাসদের শোক: বীর মুক্তিযোদ্ধা দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক শোকবার্তায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিল্পপতি ব্যবসায়ী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা, একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন চ্যানেলের মত দুইটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম গড়ে তোলার জন্য নুরুল ইসলাম বাবুলকে দেশবাসী স্মরণে রাখবেন।

  • জাসদের নবীনদের জন্য…

    জিয়াউল হক মুক্তা

    এক.
    সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে সর্বদলীয় বিপ্লবী সরকার গঠনের আহ্বান ও দেশ পুনর্গঠনের ১৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-যুব-তরুণশক্তি। বঙ্গবন্ধু তা শোনেন নি। ফলে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। জাসদ একটি সমাজতান্ত্রিক গণসংগঠন; এর লক্ষ্য সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আনুষ্ঠানিকভাবে দল গঠনের আগে থেকেই জাসদ-ছাত্রলীগ-শ্রমিকলীগ-কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের ওপর শাসকদের খড়্গ নেমে এসেছিল— এরপর তা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭৪-এর ১৭ মার্চের পর। ১৯৭৩-এর নির্বাচনে জাসদ মাত্র দুটি আসন পায়— জাসদের প্রার্থীদেরকে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে অপহরণ করা, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা, ভোট ডাকাতি করা আর ভোটের ঘোষিত ফলাফলও পাল্টে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে— যেমন, খোন্দকার মোশতাকের বিপরীতে আব্দুর রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে বেতারে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, কিন্তু পরে হেলিকপ্টারে করে সব ব্যালটবাক্স ঢাকায় এনে পুনর্গণনার মাধ্যমে মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় । ১৯৭৫-এ বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে আইনী রাজনীতির অধিকার হরণ করা হয়। পুরো সময়জুড়ে খুন-গুম-সন্ত্রাস-নিপীড়ন-রক্তক্ষরণ হয়ে ওঠে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ভাগ্য। সমাজতন্ত্রের পথে এ বৈপ্লবিক সংগ্রামের সময় দলের নেতাকর্মীগণ দল ত্যাগ করেন নি।

    দুই.
    ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খোন্দকার মোশতাকের আমলে খুন-গুম-সন্ত্রাস-নিপীড়ন-রক্তক্ষরণ থেমে থাকে নি। আওয়ামী লীগের তখন কোন অস্তিত্ব ছিল না। জাসদকে মোকাবেলা করতে হয়েছে মোশতাকের আক্রমণ [যারা ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘প্রেরণার মুখ’ নামে জাসদের শহীদদের অসম্পূর্ণ তালিকাটি দেখেছেন— দেখতে পাবেন খোন্দকার মোশতাক কোথায় কাদের হত্যা করেছেন। এখানে অন্য একটি উদাহরণও দেয়া যাক। বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ দিন পর ১৯৭৫ সালের ৩০ আগস্ট খোন্দকার মোশতাকের শাসনামলে জাসদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার তার বেইজ-এলাকা রংপুর থেকে গ্রেফতার হন ও অমানুষিক নিপীড়নের শিকার হন। ২৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয় এক সপ্তাহ ও ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার জেল-হত্যার পরপরই তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে জিয়ার সামরিক আদালতের রায়ে তাকে দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৭৭ সালের ১৩ জুলাই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।] এ সময়ও দলের নেতাকর্মীগণ দল ত্যাগ করেন নি। এ পর্যায়ে বিপর্যস্ত জাসদ পুরোপুরি উঠে দাঁড়াতে না পারলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বক্তব্য রেখেছে। তাত্ত্বিকভাবে মনে করেছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে অন্যদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

    তিন.
    ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের নেতৃত্বে ও জাসদ-গণবাহিনী-সৈনিকসংস্থার উদ্যোগে সংঘটিত মহান সিপাহী-জনতার বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেন। সুপরিকল্পিতভাবে দলকে ছিন্নভিন্ন নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেন। কর্নেল তাহেরকে হত্যা ও দলের প্রধান নেতাদের কারাগারে অন্তরীণ করেন। সারা দেশে গুপ্তহত্যা, বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা, হুমকি, বিনা বিচারে আটক ও লোভ দেখানোর মাধ্যমে জাসদের অনেককে জিয়া নিজ শিবিরে সমবেত করেন। এমনকি নেতৃত্বের কারো কারো মধ্যে জিয়ার সাথে আপোষের প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। দলে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। জিয়া এমনকি একটি শিখন্ডি জাসদও বানানোর চেষ্টা করেন। জিয়ার বিরুদ্ধে দল কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নি। দলের হাজারো নেতা-কর্মী জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে নিজেদের জীবন রক্ষা করেন। ৭ নভেম্বরের মহান সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার পর জাসদ এসময়ও গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। ১৯৭৯-র সংসদে জাসদ ৮টি আসন পায়।

    চার.
    ১৯৮০ সালে দল ভেতর থেকে দ্বিমুখী সংকটে পড়ে। একদিকে, সিরাজুল আলম খানের গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব ও কর্মসূচি— যা কাউন্সিলে [এর সুবিধাবাদী অংশগুলো বাদ দিয়ে] সংশোধন করে গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে, জাসদ মেজর এম এ জলিল ও আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে ১০ দলীয় ঐক্যজোট গঠনের উদ্যোগ নিলে ‘চেতনার আশি সাল, জাসদ হলো বাকশাল’ শ্লোগান দিয়ে দলের একটি অংশ সে ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সে সময় মতাদর্শ ও অতীত আন্দোলনের মূল্যায়ন নিয়ে দলে একটি অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম চলমান ছিল। সে সংগ্রামের একটি ধারা— দল ও ছাত্র সংগঠনের জনপ্রিয় নেতা আফম মাহবুবুল হক ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সামনে রেখে খালেকুজ্জামান ও মুবিনুল হায়দার চৌধুরীরা— আওয়ামী লীগ আমলে নিগৃহীত নেতা-কর্মীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ১০ দলীয় ঐক্যজোট গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁরা আরও বলেন জাসদের ভেতরে থেকে বিপ্লব করার প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব নয়। তাঁরা দলত্যাগ করেন। ব্যাপক সংখ্যক তরুণের দলত্যাগে দলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাঁরা বাসদ গঠন করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে আওয়ামী লীগের সাথে ঐক্যকে নাজায়েজ বলে যাঁরা বাসদ গঠন করলেন, ১৯৮৩ সালে তাঁরাই আবার জাসদ ও আওয়ামী লীগের সাথে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটে যোগ দিলেন।

    পাঁচ.
    ১৯৮১ সালে সিরাজুল আলম খান দলে দ্বিতীয় আঘাত হানেন— তিনি তত্ত্ব দেন, দেশ ও জাতি গঠনে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিঃশেষিত হতে চলেছে এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। জাসদ তার মতের দ্বিতীয় অংশ গ্রহণ করলেও প্রথমাংশ গ্রহণ করে নি। ১৯৮১-র বিশেষ কাউন্সিলে দল ‘সমন্বয় কমিটির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ ও ‘১৮ দফা কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবের আলোকে পেশাজীবীদের একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে সংসদে ২০০ প্রতিনিধি প্রেরণের রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৮০ সালে মেজর এম এ জলিল ত্রিদলীয় ঐক্যজোট থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পর থেকে মেজর এম এ জলিল ও আসম আব্দুর রবের দ্বন্দ্ব তীব্রতর হতে থাকে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখলের জন্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন; আসম আব্দুর রব তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, গর্ত থেকে মাথা বের করলে তা ফাটিয়ে দেয়া হবে।

    ছয়.
    ১৯৮২ সালে সাত্তার সরকার উচ্ছেদ করে এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর জাসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৩-র মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিরাজুল আলম খান ও জলিল-রব সর্বাত্মক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন; এ আন্দোলনকে সিরাজুল আলম খান ক্ষমতার অংশীদার হবার জন্য এরশাদের সাথে দরকষাকষির উপায় হিসেবে ভাবছিলেন। কিন্তু দলের অপরাপর নেতৃত্ব দলের তাত্ত্বিক নির্দেশনা অনুযায়ী ‘গণঅভ্যুত্থান’-এর মাধ্যমে এরশাদকে উৎখাতের পক্ষে অবস্থান নেন; কোনো দরকষাকষির মাধ্যমে নয়। ১৯৮৩-র মার্চের প্রথম দিকে সিরাজুল আলম খান সব পক্ষকে ‘ধৈর্য ও সহনশীলতা’র মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান ও পরে সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বাড়াবাড়ি বলেন; রাষ্ট্র ও দেশ পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্বের তত্ত্ব হাজির করেন; এবং ক্যান্টনমেন্টগুলোতে বৈঠক করতে থাকেন। আসম আব্দুর রবও ১৯৮৩-র ছাত্র আন্দোলনের ওপর থেকে আগ্রহ হারান; যদিও তিনি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার জন্য ইতোমধ্যে গঠিত ১৫ দলের ১১ দফায় জাসদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন। আসম আব্দুর রব— মেজর এম এ জলিলকে নেতৃত্ব থেকে অপসারন করতে— সিরাজুল আলম খান [তাঁর দিক থেকে দলের ওপর তাঁর তৃতীয় আঘাত], শাজাহান সিরাজ ও মীর্জা সুলতান রাজার সমর্থন পান।

    সাত.
    দলের ওপর সিরাজুল আলম খানের চতুর্থ আঘাত— ১৯৮৩-র মার্চের শেষের দিকে তিনি আকস্মিকভাবে জাতীয় কমিটির সভায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে জাসদ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের সকল কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কমিটি তাঁর এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে জাতীয় কমিটির সভায় এসে মতামত জানানোর অনুরোধ করে তাঁর কাছে প্রতিনিধি-দল পাঠায়। তারপরও তিনি সে সভায় আসেন নি। এদিকে জলিল-রবের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে দল কর্তৃক মেজর জলিলের এককভাবে বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দানের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। রব তাতেও সন্তুষ্ট হন নি। পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন— পত্রিকায় বলেন যে তিনি মনযোগ দিয়ে সংসার করবেন, সাংবাদিকতা করবেন ও চাকুরি করবেন। জাসদ অপরাপর দলকে নিয়ে ১৫ দলের নেতৃত্বে সামরিক শাসন বিরোধী গণ-আন্দোলন অব্যাহত রাখে।

    আট.
    এর মধ্যে মেজর এম এ জলিলও জাসদ ত্যাগ করেন ও অন্য দল গঠন করেন। তাঁর দলত্যাগ দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো প্রভাব না ফেললেও এতে দলের ইমেজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

    নয়.
    পদত্যাগের কিছু দিন পর আসম আবদুর রব পাল্টা ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৮৪ সালে আবার জাসদ গঠন করেন ও উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এরশাদের শাসনপ্রক্রিয়াকে বৈধতা দেন । সিরাজুল আলম খানও তাঁকে সহায়তা দিতে থাকেন; এটা দলের ওপর তাঁর পঞ্চম আঘাত। খান-রব তাঁদের কাল্টের অনুসারীদেরকে সাথে পান। খান-জলিল-রবের দলত্যাগে দলের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হয় ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কিন্তু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাসদের আপোষহীন আন্দোলনের ফলে সারা দেশে তরুণদের মধ্যে জাসদ আবারও জায়গা করে নেয়।

    দশ.
    ১৯৮৬ সালে শাজাহান সিরাজ ও মীর্জা সুলতান রাজা আওয়ামী লীগ ও সিপিবিকে অনুসরণ করে এরশাদের অধীনে সংসদ নির্বাচনে যেতে দল ত্যাগ করেন ও আলাদা জাসদ গঠন করেন। জাসদের মতো ১৫ দলও ভেঙে যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল নির্বাচনে যায়; জাসদের নেতৃত্বে ৫ দল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৯৮৮-র সংসদ নির্বাচনে ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দল অংশগ্রহণ করে নি। আসম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজ প্রমুখগণ তাতে অংশগ্রহণ করেন ও ধিকৃত হন।

    এগারো.
    ১৯৯০ সালে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতনে দল একটি রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব প্রদান করার পরও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল কোনো আসন না পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মীগণ আশাহত হন। এ প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীন সাংগঠনিক বিরোধে ঢাকায় ছাত্রলীগের শক্তিশালী অবস্থান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    বারো.
    ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে— দলের বড়-মাঝারি-ছোট নেতা এবং আগের এক দশকের বেশি সময়ের ছাত্রলীগের বিখ্যাতসব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ প্রায় সকলে— আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেন। যাঁদের কাছে দলের প্রত্যাশা ছিল যে তাঁরা জাসদ নেতৃবৃন্দের টিম-মেট হয়ে দলকে নেতৃত্ব দেবেন— তাঁরা ব্যবসা, চাকুরি ও পড়াশোনার জন্য দল ছেড়ে চলে যান। ওই এক দশকের সকল ছাত্রনেতৃত্বের মধ্যে দলে রয়ে যান একমাত্র একজন— শিরীন আখতার। দলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ নূরুল আম্বিয়াও সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবসা করতে চলে যান। কাজী আরেফ আহমেদ ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে দল হতাশার-সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন সারাদেশের তরুণ-সংগঠকদের নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্দোলন এগিয়ে নিতে দল সারাদেশে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। জাসদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী আরেফ আহমেদ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতৃত্ব হিসেবে ভূমিকা রাখেন।

    তের.
    শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলতে জাসদ বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করে। বাম ফ্রন্ট নিয়ে দলে ভিন্ন মত থাকলেও দলকে সে প্লাটফর্মে যুক্ত থাকতে হয়েছে। বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য এক ধরনের ‘মার্কটাইম’ নীতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ১৯৯৬-এর নির্বাচনেও দল কোন আসন না পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে হতাশা আরও গভীর হতে থাকে।

    চৌদ্দ.
    ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আসম আবদুর রবের একটি নির্ধারক ভোটের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায়। আসম আবদুর রব সরকারের মন্ত্রীসভায় স্থান পান। জাসদ ১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ও বাসদ (মাহবুব)-এর একাংশকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাসদের যাত্রা শুরু করে। দল বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। সারা দেশে দলে সাড়া পড়ে।

    পনের.
    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা, ৩ নভেম্বরের ক্যু ও ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার পর থেকে জাসদ সবসময় যে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে— তা হলো, আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার ঐক্যের রাজনীতি। আসম আবদুর রব মন্ত্রীসভায় থাকলেও সে ঐক্যকে আদর্শিক ভিত্তি দিতে এবং রাজনৈতিকভাবে কাঠামোবদ্ধ করতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। দলের সভাগুলোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সে আদর্শিক-রাজনৈতিক-সাংগঠনিক চুক্তির উদ্যোগ নেয়ার ফলে— জাসদ ঐক্যের মাত্র চার বছরের মাথায় ২০০১ সালে আসম আবদুর রব আবারও আগের বারের মতোই রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। দলের কাউন্সিলে তাঁর চেয়ার ফাঁকা রেখে অধিবেশন সম্পন্ন হয়। তিনি দলে ফিরে আসেন নি। অনেক পরে, আগের মতোই, আবার তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি নামে একটি দল গঠন করেন।

    ষোল.
    ২০০১ সালের পর থেকে জাসদ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক-কৌশলগত কর্মসূচি পালনের ধারাবাহিকতায়— আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে, জাসদ ও ১১ দলের মধ্যে এবং জাসদ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও ১১ দলের মধ্য ২৩ দফার রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে— জামাত-যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্লাটফর্ম ১৪ দল গড়ে তোলায় উদ্যোগী ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। এক সাথে আন্দোলন, এক সাথে নির্বাচন ও এক সাথে দেশ পরিচালনার জন্য ১৪ দল ঐকমত্যে পৌঁছে।

    সতের.
    ২০০৮ সালে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাসদ তিনটি আসন পায়; এর মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী না দিয়ে জাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়; একটিতে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে জাসদ নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। সরকার পরিচালনার এক পর্যায়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কৃষিতে সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বর্ধিত বরাদ্দ, পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এবং স্বনির্ভর জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মতো জাতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়; সংবিধান বাহাত্তরের মূল চেতনায় ফেরত যায়। কর্নেল তাহের হত্যার বিচার হয়। যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী-আগুনসন্ত্রাসী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিরোধ আন্দোলন ও বিচারিক উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়।

    আঠারো.
    ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদ পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে; সাথে যোগ হয় একটি সংরক্ষিত আসন— শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম-এর স্ত্রী লুৎফা তাহেরকে দলের পক্ষে সে সংরক্ষিত আসনে মনোনীত করা হয়। পূর্বোক্ত আন্দোলন ও উদ্যোগগুলো অব্যাহত থাকে।

    উনিশ.
    ২০১৫ সালে দলের জাতীয় কমিটির এক সভায় দলের নাম পরিবর্তন ও সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে পরিত্যাগের দাবি জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব শরীফ নূরুল আম্বিয়া; তাঁর সাথে যোগ দেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জনাব নাজমুল হক প্রধান— তিনি দলের নাম পাল্টে ‘জাতীয় সমতা দল’ রাখার প্রস্তাব করেন। অবিলম্বে সরকারের মন্ত্রীসভা ও ১৪ দল থেকে দলকে সরে এসে বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলন করার দাবী জানান ডা. মুশতাক হোসেন। এবং জাগতিক সুবিধার জন্য এ দুই পক্ষের সাথে যোগ দেন জনাব মইনউদ্দিন খান বাদল। সব মিলিয়ে তাঁরা তিন পক্ষ এক হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০১৬ সালের কাউন্সিলে দলের ঘোষিত রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। দলের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন অনুমোদন না করে তা প্রত্যাখ্যান করে। দলে আদর্শহীন-সুবিধাবাদী ধারার জনাব মইনউদ্দিন খান বাদল, সমাজতন্ত্র-বিরোধী পুঁজিবাদী আদর্শের প্রতিভু জনাব শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও জনাব নাজমুল হক প্রধান এবং অতি-বাম চিন্তার ডা. মুশতাক হোসেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মধ্য-বাম চিন্তার নেতা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে হাসানুল হক ইনুকে ব্ল্যাকমেইল করতে তারা কাউন্সিল কক্ষ ত্যাগ করেন এবং মাঝরাতে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। দলের অফিস, নির্বাচনী প্রতীক এবং এমনকি নামও [যা তারা পরিবর্তনের দাবি করেছিলেন] দখলের জন্য তারা বিবিধ প্রয়াস চালান। কিন্তু আইন প্রত্যেক ক্ষেত্রে জাসদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা এখন বাজাসদ নামে নিবন্ধনহীন একটি কথিত রাজনৈতিক দল।

    কুড়ি.
    ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী-আগুনসন্ত্রাসী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে রাজনৈতিক প্রতিরোধ আন্দোলন ও বিচারিক উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়— তাতে এরা কিছুটা পিছু হঠেছে; কিন্তু বিপদ কাটে নি। যে কোনো সময় এরা চাকু মারতে পারে। তাই জাসদ মনে করে এ আন্দোলন একদম ছেড়ে দেয়া যাবে না; বরং এখন দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হব। এখন লড়াইয়ের প্রথম ফ্রন্ট হবে দুর্নীতি-দুঃশাসন-অপশাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সুশাসন-সমতা-সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম।

    একুশ.
    কালের যাত্রায় অনেকে হারিয়ে যাবেন— এই স্বাভাবিক। কিন্তু জাসদকে হারাতে হয়েছে অনেক অনেক বেশি। জাসদ নেতাকর্মীগণ যেমন হত্যা-খুনের শিকার হয়েছেন; তেমনি পথ চলতে গিয়ে ভিন্নমতের কারণেও অনেকে পথহারা হয়ে হারিয়ে গিয়েছেন। অনেকে হারিয়ে গিয়েছেন জীবন-জীবীকার কঠিন সংগ্রাম করতে গিয়ে। কেউ কেউ ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন সুবিধাবাদের হাত ধরে। অতীতে আন্দোলনে যে যতোটুকুই ভূমিকা রাখুন না কেন— জাসদ তাঁদের প্রত্যেকের ভূমিকাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। জাসদ তাঁদের প্রত্যেককে নতশীরে ভালোবাসা জানায়। যাঁরা এখনও বেঁচে আছেন কিন্তু নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন কিংবা অন্য দলে আছেন— তাঁদের সকলের জন্য জাসদের দরজা সকল সময় খোলা। কারোর প্রতি জাসদের কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই; কষ্ট-অভিমান থাকলেও থাকতে পারে। জাসদের প্রধান দুটি চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য হলো— (১) অন্যান্য দল যখন পুরো-দল একসাথে মিলেমিশে আপোষের পথে যায় [যেমন ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ ও সিপিবির নেতৃত্বে ৮ দল এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যোগ দেয়], জাসদ-কর্মীগণ তখন যেটাকে ন্যায্য মনে করেন, তার সাথেই থাকেন; বারবার ভাঙন ও দলত্যাগের মধ্য দিয়ে শক্তিক্ষয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও গণমানুষের অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলনে এ পর্যন্ত জাসদ কখনো অনুপস্থিত থাকে নি। এটা জাসদের একটি সাংগঠনিক-দুর্বলতাও বটে। আর— (২) এই দলে কাল্ট বা ব্যক্তিপূজার কোনো জায়গা নেই; যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নির্মাণ করেছিলেন, তাঁরা সে বঙ্গবন্ধু ও ক্ষমতার মোহ ছেড়ে ১৯৭২ সালে জাসদ গঠন করেন। তাঁরা আবার তাঁদের একচ্ছত্র নেতা সিরাজুল আলম খানের সব সিদ্ধান্তকেও অন্ধভাবে অনুসরন করেন নি। জাসদ আপোষহীন কর্মীদের দল।

    বাইশ.
    ফলে আজকাল যাঁরা জাসদের প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্য চান, তাঁরা কি ১৯৯৭ সালের ঐক্যের কথা ভুলে গিয়েছেন? দেখেছেন, আসম আবদুর রব কীভাবে তাঁর প্রথম দলত্যাগকে দ্বিতীয়বার অনুসরণ করেছেন? তাই বলি— রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া সাংগঠনিক ঐক্য অর্থহীন; অকার্যকর; এমনকি ক্ষতিকরও বটে!!!

    জিয়াউল হক মুক্তা
    প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ
    কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি
    ৮ জুলাই ২০২০; ঢাকা।

  • সুপরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে: জাসদ

    সুপরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে: জাসদ


    পাটখাতের পুনর্জাগরণের চেষ্টার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে বর্ণনা করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
    দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার রোববার এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল গুলোকে ‘এন্টারপ্রাইজ’ হিসাবে পরিচালনারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
    বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে যখন পাটের জিনোম আবিস্কৃত হয়েছে, পাটের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে, তখন পাটকল বন্ধ করে দেওয়া এবং পাট অর্থনীতিকে পরিত্যক্ত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”
    সরকার লোকসানে থাকা ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘দ্রুত’ এ পাটকল গুলো সচল করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। পিপিপির উদ্যোগের সমালোচনা করে জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আদমজী বন্ধ হবার পর সেখানে আধুনিক পাট কারখানা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, আদমজীর জমিতে শিল্প প্লট করে আর কারখানার সবকিছু স্ক্র্যাপ করে জমি আর স্ক্র্যাপের হরিলুট হয়েছে। পিপিপির অধীনে সরকারের পাটকলগুলো চালু করার সদিচ্ছাও আদমজীর মত হরিলুটের খেলায় হারিয়ে যাবে।”
    আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে।
    “গত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে পুঞ্জীভূত লোকসান ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিমান বা বিদ্যুতের কুইক রেন্টালসহ বড় লোকসানি খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ লোকসান বা অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা পাটশিল্পের ৫০ বছরের পুঞ্জিভূত লোকসানের চাইতেও বেশি।”
    পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে যে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা থেকে মাত্র ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং ২৫ হাজার শ্রমিককে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে মজুরি দিয়ে লাভজনকভাবে ‘পরিচালনা করা সম্ভব’ ছিল বলে মনে করেন জাসদ নেতারা।

  • পাটশিল্পকে গলাটিপে মেরে সৎকারের পথ থেকে সরে আসুন: জাসদ


    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং পিপিপির অধীনে পরিচালনার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে নিজ হাতে গলা টিপে পাটশিল্পকে মেরে ফেলা ও সৎকারের আয়োজন থেকে ফিরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান। তারা বলেন, পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমুলকভাবে পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছে। পাটশিল্পের আধুনিকায়ন ও বহুমুখীকরণ না করে, পাট কেনায় যথাসময়ে টাকা বরাদ্দ না দিয়ে, পাটকেনায় দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ না করে, কারখানাগুলি পরিচলনে দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ না করে পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছে। তারা বলেন, পাটশিল্পের লোকসানকে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হিসাবে চিন্থিত করা হয়েছে। গত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে পুঞ্জিভূত লোকসান ১০হাজার ৫০০ কোটি টাকাসহ ব্যাংক ঋণের পরিমান ৫০ হাজার কোট টাকা। কিন্ত বিমান বা বিদ্যুতের কুইক রেন্টালসহ বড় লোকসানি খাতে প্রতি বছর অর্থাৎ এক বছরে যে পরিমান লোকসান বা অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা পাটশিল্পের ৫০ বছরের পুঞ্জিভূত লোকসানের চাইতেও বেশি। ২৫ টি কারখানা মানে শুধুমাত্র ২৫হাজার শ্রমিকই পাটশিল্প মানে বিশাল পাট অর্থনীতি। এককোটি পাটচাষী থেকে শুরু করে চট উৎপাদনের মাঝখানে, অগ্র ও পশ্চাতে আরও এককোটি মানুষ পাটকেন্দ্রিক অর্থনীতি-জীবন-জীবিকার সাথে যুক্ত।
    তারা বলেন, আদমজী বন্ধ হবার পর সেখানে আধুনিক পাটকারখানা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, আদমজীর জমি শিল্পপ্লট করে আরে কারখানার সবকিছু স্ক্র্যাপ করে জমি আর স্ক্র্যাপের হরিলুট হয়েছে। তারা বলেন, সরকারের পিপিপির অধীনে পাটকলগুলি চালু করার সদিচ্ছাও আদমজীর মত হরিলুটের খেলায় হারিয়ে যাবে। তারা পাটকলগুলি বন্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রতিটি পাটকারখানাকে একটি এন্টারপ্রাইজ হিসাবে পরিচালনার করার জন্য সরকার ও শ্রমিকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করার দাবি জানান। তারা বলেন, ২৫টি পাটকল বন্ধের জন্য যে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা থেকে মাত্র ১২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২৫টি পাটকল আধুনিকায়ন করে ২৫ হাজার শ্রমিককে মাসে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে লাভজনকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। তারা বলেন প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে যখন পাটের জেনম আবিস্কৃত হয়েছে, পাটের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে তখন পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং পাট অর্থনীতিকে পরিত্যক্ত করার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

  • বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কার্স-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর কেন্দ্রীয় কমিটি ও ফেডারেশনের ঢাকা নগর কমিটি গঠিত

    বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কার্স-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর কেন্দ্রীয় কমিটি ও ফেডারেশনের ঢাকা নগর কমিটি গঠিত

    প্রেস বিজ্ঞপ্তি: জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে পর্যটন খাতের অবদানের স্বীকৃতি, করোনায় কর্মহীন পর্যটন শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বাসনে প্রণোদনা প্রদান, ছাঁটাই বন্ধ ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সম্প্রতি সেগুন বাগীচাস্ত ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে “বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কাস-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    “বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কাস-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর আহবায়ক মোহা: রাশেদুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভা থেকে মো: রাশেদুর রহমান কে আহবায়ক, আহসান হাবিব সেফ, ফারহানা ইয়াসমিন, মো: শামীম আহমেদ, সাহিদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, শরিফ আহমেদ, মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, খালেকুজ্জামান লিপন, মো: ইকবাল হোসেন কে যুগ্ম আহবায়ক এবং আহসান হাবিব বুলবুল কে সদস্য সচিব এবং ২০ জন নির্বাহী সদস্যসহ মোট ৩১ সদস্যের “বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কাস-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর কেন্দ্রীয় কমিটি এবং

    মো: মুরাদ দেওয়ান সেফ কে আহবায়ক, রবিউল আউয়াল শেফ, মো: সালামত উল্লাহ, আরাফাত রুবেল, উমর ফারুক, আরিফ খান, নাজমুল ইসলাম, মো; সাজ্জাদ কে যুগ্ম আহবায়ক, খালেকুজ্জামান লিপন কে সদস্য সচিব ও ১২ জন নির্বাহী সদস্যসহ মোট ২১ সদস্যের “বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কাস-এমপ্লয়িজ ফেডারেশন” এর ঢাকা নগর কমিটি গঠিত হয়।

  • করোনায় মারা গেলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তফরিদপুর জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ জি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম: জাসদের শোক

    করোনায় মারা গেলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তফরিদপুর জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ জি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম: জাসদের শোক

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ বৃহস্পতিবার ০২ জুলাই ২০২০ এক শোকবার্তায় গেলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত, মুক্তিযুদ্ধে ৯নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর জয়েন্ট নেভাল কমান্ডার, নৌ-কমান্ডো হিসাবে দুঃসাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ফরিদপুর জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ জি মুহম্মদ খুরশিদ আলমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বার্ধক্যজনিত ও বাতজ্বরের ব্যাথা নিয়ে ঢাকার মিরপুরের একটি হাসপাতালে ক্যাপ্টেন এ জি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় করোনা সংক্রামন সনাক্ত হলে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত বুধবার থেকে তিনি আইসিইউতে ছিলেন। তিনি আজ ২ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন(ইন্না…..রাজেউন)। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তিন কণ্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

    জাসদ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ক্যাপ্টেন এ জি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম বাবুল খুরশীদ আলমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাতীয় বীর ক্যাপ্টেন এ জি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাদের অন্যতম। তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে চুপ করে বসে থাকেননি। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক পথে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারা বলেন, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এই মহান জাতীয় বীর মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসিক ভুমিকা পালন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য স্বাধীন দেশে ক্ষমতার লোভ-মোহ-অংশীদারিত্ব ত্যাগ করে প্রথম বিরোধী ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী দল জাসদ গঠন এবং ফরিদপুর জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলা, ১৯৭৩ সালে ১ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, পরবর্তীতে জেল-জুলুম সহ্য করেও স্বৈরশাসন ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সমাজবদলের লক্ষ্যে আপোষহীন ভুমিকা পালনের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকিবেন।

    বার্তা প্রেরক

    সাজ্জাদ হোসেন

    দফতর সম্পাদক

  • উন্নয়ন- প্রবৃদ্ধি, বৈষম্য ও বাজেট

    উন্নয়ন- প্রবৃদ্ধি, বৈষম্য ও বাজেট

    জিয়াউল হক মুক্তা

    গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার- অর্থনৈতিক ইতিহাস বলে যে, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি কখনোই উন্নয়নের সমার্থক নয়, কিংবা উন্নয়ন পরিমাপের জন্য প্রবৃদ্ধিই একমাত্র সূচক নয়; বরং উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ হারে বৃদ্ধি পায় বৈষম্য। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়; উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতিতে মানুষে-মানুষে বৈষম্য বেড়েই চলছে। তবে চাইলে প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বৈষম্য মোকাবিলা করা সম্ভব।

    বৈষম্যের রয়েছে বিবিধ মাত্রা- আয়ের বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, নারী-পুরুষ বৈষম্য, কেন্দ্রিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, নারী-পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, গ্রাম ও শহরের বৈষম্য, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যের বৈষম্য ইত্যাদি। এসব বৈষম্যের মধ্যে আবার রয়েছে ক্রসকাটিং সম্পর্ক; যেমন, আয়ের বৈষম্য প্রভাবিত হতে পারে নারী-পুরুষ বৈষম্য দ্বারা, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বৈষম্য প্রভাবিত করতে পারে আয়ের বৈষম্য ইত্যাদি। বহুমাত্রিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমতার সমাজ নির্মাণ করতে হলে তাৎক্ষণিক এবং আশু বা স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি বহুমাত্রিক নীতি-কৌশল-কর্মসূচি-প্রকল্প গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। যদিও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মতো শোনাবে- আয় বৃদ্ধি পেলে মানুষের ক্ষমতা ও অভিগম্যতা বাড়ে, যা অপরাপর বৈষম্য কমাতে কিছুটা সহায়তা করে।

    অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ চমৎকার সাফল্য প্রদর্শন করার সাথে সাথে তীব্রগতিতে নাগরিকদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য বাড়ার কথাটি কোনো নিন্দুকের মনগড়া ভাষ্য নয়, বরং সরকারি পরিসংখ্যানের। ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউসহোল্ড ইনকাম-এক্সপেনডিচার সার্ভে [এইচআইইএস] বা খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং এর অনুসরণে ২০১৬ সালে পরিচালিত আরও একটি জরিপের তথ্য অনুসারে উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এমনকি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও অব্যাহতভাবে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

    কোনো দেশের আয়-বৈষম্য কতটা তা পরিমাপ করা হয় জিনি সহগ দিয়ে। জিনি সহগের মান যত কম হয়, আয়-বৈষম্য তত কমে; আর এর মান যত বেশি হয় আয়-বৈষম্য তত বাড়ে। এটা শূন্য হলে বোঝায় যে, দেশের সকলের মধ্যে চরম সমতা বিরাজ করছে; আর এর মান বাড়তে বাড়তে শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) বা বেশি হলে বোঝায় যে, দেশে আয়-বৈষম্য চরমতম অবস্থায় পৌঁছেছে।

    পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৪ সালে দেশে জিনি সহগের মান ছিল ০.২৪। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ০.৪৫৮। ২০১৬ সালে তা আরও বেড়ে হয়েছে ০.৪৮৩। ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ১০% পরিবারের হাতে ছিল আয়ের ৩৮.১৬%। এ সময় সবচেয়ে সম্পদশালী ৫% পরিবারে আয় বেড়ে হয়েছে ২৭.৯%, যেখানে সবচেয়ে গরিব ৫% পরিবারে আয় কমে হয়েছে ০.২৩% মাত্র। আয়-বৈষম্যের এ চিত্র শহরের চেয়ে গ্রামে আরও বেশি তীব্র। এ সময় গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগ ০.৪৩ থেকে ০.৪৫-এ এবং শহরাঞ্চলে ০.৪৫ থেকে ০.৫-এ বর্ধিত হয়। গবেষকরা জানান যে, বাংলাদেশে যেহেতু গবেষণার সময় ধনী পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, সেহেতু বৈষম্যের সত্যিকার চিত্র আরও ভয়াবহ বলে অনুমান করা অসঙ্গত নয়।

    ২০১৮ সালে আয়-বৈষম্যের উল্লিখিত চিত্রের ওপর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি চারটি পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছে। প্রথমত, দেশে আয়-বৈষম্য ছয় বছরে অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ সময়ে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক অংশটি আরও দরিদ্র হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত আরও সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যেই আয় আরও কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং চতুর্থত, দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি।

    আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনের মধ্যে সম্পর্কহীনতার কথা বলছেন; প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসৃজন ও প্রকৃত মজুরি বাড়েনি। ফলে দেশ দারিদ্র্য বিমোচনে শ্নথগতি ও অসমতার বৃদ্ধিতে তীব্রগতির অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আমার দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে কম বরাদ্দের পাশাপাশি সুযোগের অসমতা আর সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিও আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ। অর্থনীতিবিদদের মতে, আর্থিক খাতে ধনীরা বেইলআউট, ঋণ, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ, কর মওকুফ, ভর্তুকি, লাইসেন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে সহায়তা পান, গরিবরা তা পান না। উপরন্তু গরিবের জন্য যে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে তাও দুর্নীতির কারণে কমে যায়।

    বর্তমান অর্থমন্ত্রী যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের পরও কেন আয়-বৈষম্য বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা হবে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে খতিয়ে দেখার খবরের কথা কারও জানা নেই এবং ২০২০-২১ সালের বাজেটেও আয়-বৈষম্য নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; বরং আয়-বৈষম্য বাড়ানোর পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে।

    প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদ আহরণের জন্য প্রত্যক্ষ করের বদলে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়ানো হয়েছে; সব জনগণের ওপর ভ্যাটের মতো নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মিত আয়কর প্রদানকারীদের ওপর ডাবল ট্যাক্সেশনের নামান্তর ও গরিবের সামান্য আয়ের ওপর হিংস্র থাবা বসানোর নামান্তর। এর পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। করমুক্ত আয়সীমা সামান্য বাড়ানো হলেও নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য তা নাভিশ্বাসের নামান্তর; করমুক্ত আয়সীমা দশ লাখ টাকা করতে হবে। আগে আয়করের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩০%, তা ২৫%-এ নামিয়ে এনে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে; এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ ৩০% আয়কর আদায়ের বিধান পুনর্বহাল করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ও লুটপাটের অর্থ পুনরুদ্ধার করতে হবে।

    বাজেটের আয়ের ক্ষেত্রে উল্লিখিত জনবান্ধব পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরই মধ্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি সংসদে বাজেট আলোচনাকালে চার ধরনের ‘সর্বজনীন’ কর্মসূচি গ্রহণ, তার জন্য বর্ধিত বরাদ্দ প্রদান ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন; এগুলো হলো- সর্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি, সর্বজনীন সামাজিক-সুরক্ষা কর্মসূচি এবং সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি। এবারের বাজেটে এসব খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রুটিন-বৃদ্ধির বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ পায়নি। আয়-বৈষম্য বিবেচনায় জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে নগদ সহায়তা বা কার্ড প্রদানের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা বা নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। জাসদ এসব খাতে বর্ধিত বরাদ্দকে ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং বিনিয়োগ হিসেবে দেখে, যা পরে বহুগুণে ফেরত আসে।

    বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্রভাবে বিরাজমান আয়-বৈষম্য নিরসনে বাজেটের আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রে সমান্তরাল জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি আশু বা স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি নীতিকাঠামো বিবেচনা করতে হবে; গাছের শেকড় কেটে আগায় জল ঢাললে চলবে না; আশু বা স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে দুর্নীতি-দুঃশাসন-লুটপাট-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি-সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের পদক্ষেপ, এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে দেশের সংবিধান নির্দেশিত সমাজতান্ত্রিক নীতি-আদর্শের প্রয়োগ- আয়-বৈষম্যসহ সব ধরনের বৈষম্য মোকাবিলার জন্য।

    সাধারণ সম্পাদক, সিএসআরএল; জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক

    সংগৃহিত: দৈনিক সমকাল

  • পাটকল বন্ধ করার পায়তারার প্রতিবাদ জাসদের

    পাটকল বন্ধ করার পায়তারার প্রতিবাদ জাসদের

    প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে সরকারের ভিতরের একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের পায়তারা তীব্র প্রতিবাদ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি।

    শনিবার (২৭ জুন) এক বিবৃতিতে জাসদ নেতৃবৃন্দ এ প্রতিবাদ জানান।

    নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ বছরে পাটকলগুলিকে লাভজনকভাবে পরিচালনা বিষয়ে সরকার, বিজেএমসি, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দফায় দফায় আলোচনায় পাট ক্রয়ে লোকসান-দুর্নীতি বন্ধে মৌশুমে যথাসময়ে কাঁচাপাট ক্রয় করা, কারখানা পরিচলন ব্যয়ে দুর্নীতি বন্ধ, পণ্য মোড়কে পাট ব্যবহার আইন ২০১০ প্রণয়ন করা, পাটকলগুলিকে আধুনিকায়ন করা, পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণসহ বাস্তবসম্মত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও প্রবস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু সরকারের ভিতরের এক গোষ্ঠী সেই সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করে পাটকলগুলিকে অচল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। পাটগুলিকে অচল রেখে অলাভজনক করে ফেলার দায়িত্ব শ্রমিকদের না। পাটক্রয়, কারখানা পরিচালনা করা, উৎপাদিত পণ্য বিপননের কোনো ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

    তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে পাটের জেনোম আবিস্কার হয়েছে ও প্রধানমন্ত্রী যখন পাটের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন তখন পাটকল ও পাটশিল্প ধ্বংসের জন্য অন্তর্ঘাত চালানো হচ্ছে। তারা পাটকল বন্ধ করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা, পাটকলগুলিকে আধুনিকায়ন, পাট ক্রয়ে দুর্নীতি বন্ধ, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ করা, পণ্যের মোড়কে পাট ব্যবহার আইন ২০১০ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনভাতাসহ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যায়াচুইটির টাকা পরিশোধ করার দাবি জানান।

  • জাসদ ঢাকা মহানগর উত্তরের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রুবি আক্তারের(৫৫) মৃত্যুতে জাসদের শোক

    জাসদ ঢাকা মহানগর উত্তরের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রুবি আক্তার(৫৫) আজ শনিবার ২৭ জুন ২০২০ রাত ৩টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার মহাখালী নিকেতন বাজারগলি নিজবাসায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, দুই ছেলে এবং ১ কণ্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বাদ আছর নিকেতন বাজারগলি লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে নামাজে জানাজা শেষে নিকেতন কবর স্থানে দাফন করা হবে।


    শোক:

    জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ শনিবার ২৭ জুন ২০২০ এক বিবৃতিতে জাসদ ঢাকা মহানগর উত্তরের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রুবি আক্তারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অনুরুপ এক শোক বার্তায় জাসদ মহানগর সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মীর হোসাইন আক্তার এবং যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আকতার, জাসদ ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি শফি উদ্দিন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম ইদ্রিস আলী বলেন, রুবি আক্তারের মত সাহসী নেত্রীর মৃত্যুতে আমরা একজন প্রিয় সহকর্মীকে হারালাম। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।বার্তা প্রেরকসাজ্জাদ হোসেন
    দফতর সম্পাদক