Category: রাজনীতি

  • সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

    সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত


    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (০৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় ছাত্রলীগের জন্মদিন উপলক্ষে সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়স্থ বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের পাদদেশ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি অনুপম কুমার অনুপ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে ছাত্র নেতাদের স্লোগানে-স্লোগানে রাজপথ মুখরিত হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
    র‌্যালি শেষে শহরের দৈনিক ‘দক্ষিণের মশাল’ পত্রিকার বাণিজ্যিক কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত

    হয়।


    সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি অনুপম কুমার অনুপের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আবদুল আলীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, জেলা জাসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ জাকির হোসেন, যুব জোট সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষাল, জেলা জাসদের সদস্য জহুরুল কবির, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) তালা উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শামীম হোসেন, সদস্য আইয়ুব আলী অপু, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

    সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার আন্দোলনে রূপান্তরের কারিগর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে খুনি খন্দকার মোশতাকসহ আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষমতা দখল করলে ছাত্রলীগ খুনি খন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে কালবিলম্ব না করে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। খুনি মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়ন চলে। খুনি মোশতাকের পথ ধরে জিয়া ও এরশাদ দেশের উপর সামরিক শাসন চাপিয়ে দিলে ছাত্রলীগ জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মারমুখী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগই প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত করে। এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র গণআন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল, শাজাহান সিরাজ, ডাঃ মিলন, জাহাঙ্গীর, মুন্নাসহ ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী শহীদ হন।

    বক্তারা আরও বলেন, অতীতের গৌরব উজ্জ্বল সংগ্রাম ও চেতনাকে ধারণ করে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন) বৈষম্য-বেকার সৃষ্টির সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন, দুর্নীতি ও অপশাসনে শিক্ষার্থীদের জীবনের অপচয় বন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিরোধী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নির্মূল করার লক্ষ্যে অবিচল থেকে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

    ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

    e³viv AviI e‡jb, AZx‡Zi †MŠie D¾¡j msMÖvg I †PZbv‡K aviY K‡i eZ©gv‡b ˆeÁvwbK mgvRZ‡š¿ wek¦vmx evsjv‡`k QvÎjxM (nv-b) ˆelg¨-‡eKvi m…wói mgvR I wkÿv e¨e¯’vi cwieZ©b, `yb©xwZ I Ackvm‡b wkÿv_©x‡`i Rxe‡bi AcPq eÜ, BwZnvm-HwZn¨-ms¯‹…wZ we‡ivax ag©wfwËK ivRbxwZ wbg©~j Kivi j‡ÿ¨ AwePj †_‡K QvÎ Av‡›`vjb  M‡o †Zvjvi cÖ‡Póv Pvwj‡q hv‡”Q|

    QvÎjx‡Mi cÖwZôvevwl©Kxi Abyôv‡b mvZÿxiv †Rjv I wewfbœ Dc‡Rjv KwgwUi †bZvKg©xiv Dcw¯’Z wQ‡jb|

  • বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

    বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত


    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (০৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় ছাত্রলীগের জন্মদিন উপলক্ষে সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়স্থ বঙ্গবন্ধু মুরালের পাদদেশ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি অনুপম কুমার অনুপ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে ছাত্র নেতাদের স্লোগানে-স্লোগানে রাজপথ মুখরিত হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে শহরের দৈনিক ‘দক্ষিণের মশাল’ পত্রিকার বাণিজ্যিক কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

    সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি অনুপম কুমার অনুপের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আবদুল আলীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, জেলা জাসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ জাকির হোসেন, যুব জোট সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষাল, জেলা জাসদের সদস্য জহুরুল কবির, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) তালা উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শামীম হোসেন, সদস্য আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

    সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার আন্দোলনে রূপান্তরের কারিগর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে খুনি খন্দকার মোশতাকসহ আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষমতা দখল করলে ছাত্রলীগ খুনি খন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে কালবিলম্ব না করে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। খুনি মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়ন চলে। খুনি মোশতাকের পথ ধরে জিয়া ও এরশাদ দেশের উপর সামরিক শাসন চাপিয়ে দিলে ছাত্রলীগ জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মারমুখী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগই প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত করে। এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র গণআন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল, শাজাহান সিরাজ, ডাঃ মিলন, জাহাঙ্গীর, মুন্নাসহ ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী শহীদ হন।

    বক্তারা আরও বলেন, অতীতের গৌরব উজ্জ্বল সংগ্রাম ও চেতনাকে ধারণ করে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বৈষম্য-বেকার সৃষ্টির সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন, দুর্নীতি ও অপশাসনে শিক্ষার্থীদের জীবনের অপচয় বন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিরোধী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নির্মূল করার লক্ষ্যে অবিচল থেকে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

  • ৭ দলীয় জাতীয় সংহতি মঞ্চ গঠনের উদ্যোগ

    মাওলানা একেএম আশরাফুল হকের সভাপতিত্বে ‘দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ১২ দফা দাবিতে ঐকমত্য পোষণ করেন ৭টি দলের নেতারা।

    দাবিগুলো হচ্ছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা; সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত করা; জাতীয় জীবনে ইসলামী মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়া; দেশে সব ধরণের উগ্রতা, অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাস বন্ধ করা; ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সব আইন ও সাংবিধানিক ধারা বাতিল করা; ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইসলামবিরোধিতা বন্ধ করা; রাষ্ট্রের সব বিভাগে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা চালু করা; রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিধি-নিষেধ ও প্রতিবন্ধকতা বন্ধ করা; বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা।

    মতবিনিময় সভায় নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়াও ৭টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, প্যান ইসলামিক মুভমেন্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি, বিশ্ব মুসলিম পরিষদ, জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ এবং বাংলাদেশ আইডিয়েল পার্টির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

    সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা একেএম আশরাফুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ৭টি দল একত্রিত হলেও নতুন এ জোটে সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক যে কোন দল এতে যুক্ত হতে পারবে। জোটের প্রস্তাবিত নাম ‘জাতীয় সংহতি মঞ্চ’। শিগগিরই বৃহৎ পরিসরে বৈঠক করে এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।

  • দেবহাটায় রফিকুল-অজিয়ারকে হারিয়ে বিপুল ভোটে মুজিবর জয়ী

    দেবহাটায় রফিকুল-অজিয়ারকে হারিয়ে বিপুল ভোটে মুজিবর জয়ী

    এসএম নাসির উদ্দীন/এসকে অভি/কবির হোসেন: দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের কাঙ্খিত উপ নির্বাচনে আনারস প্রতিকের বিদ্রোহী সতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতিকের প্রার্থী অজিয়ার রহমানকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’বারের নির্বাচিত সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আলহাজ্ব মুজিবর রহমান। সর্বমোট ২৫ হাজার ৪শ ৬৪ ভোট পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আনারস প্রতিকের প্রার্থী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম ১২ হাজার ৯শ ৯৩ ভোট এবং অপর প্রতিদ্বন্দী এনপিপি’র আম প্রতিকের প্রার্থী অজিয়ার রহমান ৪০৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
    বৃহষ্পতিবার দিনভর দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন ভাবে উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহন শেষে সন্ধ্যায় উপজেলা সম্মেলন কক্ষে ফলফল সংগ্রহ শেষে বেসরকারিভাবে এতথ্য জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার ও রির্টার্নিং অফিসার নাজমুল কবীর।
    এরআগে বৃহষ্পতিবার সকাল ৯টা থেকে উৎসব মুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪০টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহন শুরু হয়। শুরু হয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে একটানা বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা ভোটগ্রহনে স্বতষ্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সাধারণ ভোটাররা।
    উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (উত্তর পাশের ভবন) কেন্দ্রে মুজিবর রহমানের নৌকা প্রতিক পেয়েছে ৩৬২ ভোট, রফিকুল ইসলামের আনারস প্রতিক পেয়েছে ১৪৩ ভোট এবং এনপিপির অজিয়ার রহমানের আম প্রতিক পেয়েছে ১১ ভোট, বহেরা এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (দক্ষিন পাশের ভবন) কেন্দ্রে নৌকা-১৬৯ ভোট, আনারস-১০২ ভোট, আম-৩ ভোট, পুষ্পকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-২৯২ ভোট, আনারস-৩৮৩ ভোট, আম-১১ ভোট, কুলিয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৩৪২ ভোট, আনারস-১৪১ ভোট, আম-৩ ভোট, কুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫৮৮ ভোট, আনারস-১৮৫ ভোট, আম-১৮ ভোট, টিকেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১২০২ ভোট, আনারস-২০৩ ভোট, আম-৫ ভোট, সেন্ট্রাল হাইস্কুল সুবর্নাবাদ কেন্দ্রে নৌকা-৭৪২ ভোট, আনারস-২১৭ ভোট, আম-৭ ভোট, গোবরাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা- ৮৫৮ ভোট, আনারস-২৫৭ ভোট, আম-৭ ভোট পেয়েছে।
    পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫৬০ ভোট, আনারস-২১৪ ভোট, আম-১০ ভোট, পারুলিয়া মৃধাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাইক্লোন শেল্টার) কেন্দ্রে নৌকা-১৭২ ভোট, আনারস-৬০০ ভোট, আম-১০ ভোট, মৃধাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নিচতলা উত্তর পাশের ভবন) কেন্দ্রে নৌকা-৭৭ ভোট, আনারস-৪০৬ ভোট, আম-৩ ভোট, পারুলিয়া এসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৮৭ ভোট, আনারস-৬৩৯ ভোট, আম-৯ ভোট, পারুলিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৪৯ ভোট, আনারস-৫২১ ভোট, আম-৮ ভোট, খেজুরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫৩৪ ভোট, আনারস-৯৬৬ ভোট, আম-১৯ ভোট, জেলিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (উত্তর পাশের ভবন) কেন্দ্রে নৌকা-৩৭৩ ভোট, আনারস-১৫০ ভোট, আম-১ ভোট, জেলিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (সাইক্লোন শেল্টার) কেন্দ্রে নৌকা-৭৯৯ ভোট, আনারস-২৬৫ ভোট, আম-১৩ ভোট, বড়শান্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৮৫৫ ভোট, আনারস-৭৩ ভোট, আম-১৯ ভোট, জোয়ার (১) গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫২৮ ভোট, আনারস-৫৮২ ভোট, আম-১১ ভোট পেয়েছে।
    সখিপুর ইউনিয়নের উত্তর সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫২৯ ভোট, আনারস-৬২৮ ভোট, আম-১১ ভোট, সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কেন্দ্রে নৌকা-২১৪ ভোট, আনারস-৪৫৩ ভোট, আম-১ ভোট, সরকারি খানবাহাদুর আহছানউল্লা কলেজ (পূর্ব পাশের ভবন) কেন্দ্রে নৌকা-৩৮১ ভোট, আনারস-৭৭৬ ভোট, আম-১০ ভোট, খানবাহাদুর আহছানউল্লা কলেজ (উত্তর পাশের ভবন) নৌকা-৩১৫ ভোট, আনারস-৬০০ ভোট, আম-৫ ভোট, ঈদগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৭২২ ভোট, আনারস-৩২৭ ভোট, আম-০২ ভোট, চন্ডীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১১৫৪ ভোট, আনারস-১০১ ভোট, আম-১ ভোট পেয়েছে। তবে সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহন চলাকালীন বেলা ১২টার দিকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাক-বিতন্ডতার সৃষ্টি এবং উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেখানে ভোটগ্রহন স্থগিত করে প্রশাসন।
    নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৮৫৯ ভোট, আনারস-৩১২ ভোট, আম-১০ ভোট, শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পূর্ব পাশের ভবন) কেন্দ্রে নৌকা-৭৭২ ভোট, আনারস-১৮৪ ভোট, আম-৫ ভোট, দক্ষিন পাশের টিনশেড ভবন কেন্দ্রে নৌকা-৯২৭ ভোট, আনারস-১৭১ ভোট, আম-৮ ভোট, দেবীশহর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৯৩১ ভোট, আনারস-১০০ ভোট, আম-৯ ভোট, বাবুরাবাদ ঢেপুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১৩০২ ভোট, আনারস-৬২ ভোট, আম-২ ভোট, হাদীপুর আহছানিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে নৌকা-৮০১ ভোট, আনারস-২৯২ ভোট, আম-৪২ ভোট, হাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৫৫৭ ভোট, আনারস-২৩২ ভোট, আম-৩৯ ভোট, উত্তর আষ্কারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১১৮১ ভোট, আনারস-৭৪ ভোট, আম-৯ ভোট, ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৬৫৮ ভোট, আনারস-৩২২ ভোট, আম-১১ ভোট, নওয়াপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা-৪৫৭ ভোট, আনারস-৪৯১ ভোট, আম-১১ ভোট পেয়েছে।
    দেবহাটা সদর ইউনিয়নের মধ্যে ভাঁতশালা সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৮১৪ ভোট, আনারস-৪৬৭ ভোট, আম-১৬ ভোট, ঘলঘলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১৫৬৩ ভোট, আনারস-১৫০ ভোট, আম- ভোট-০ ভোট, টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৭৭৩ ভোট, আনারস-৬০৭ ভোট, আম-১৩ ভোট, সুশীলগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-৪৬৭ ভোট, আনারস-৩৬৫ ভোট, আম-৩ ভোট এবং দেবহাটা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা-১৪৯৮ ভোট, আনারস-২৩৩ ভোট, আম- ৩২ ভোট পেয়েছেন। 

  • ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি হলেন মো. মহিবুল্লাহ

    গত ২০ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভা সংগঠনের কার্যালয়ে জেলা সভাপতি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতি বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর দায়িত্ব সাতক্ষীরা জেলা কমিটির ইনচার্জ, নড়াইল জেলা কমিটির ইনচার্জ ও মাঝে মাঝে যশোর জেলা কমিটির দায়িত্ব পালন করতে হয়।

    তাছাড়া সাতক্ষীরা তালা-কলারোয়ার সংসদীয় আসনের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে সাতক্ষীরা জেলা পার্টিকে পুরোপুরি সময় দেয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। যার কারনে পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেকারণে পার্টির সাংগঠনিক গতিশীলতা রক্ষা মতাদার্শিকভাবে পার্টিকে গড়ে তোলা এবং নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্যে আমাকে জেলা কমিটির সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সকল সদস্য একমত পোষণ করেন এবং জেলা কমিটির নতুন সভাপতি হিসেবে জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মো. মহিবুল্লাহকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করেন। নতুন সভাপতি সবার কাছে সহযোগিতা আশা করেন এবং তার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনে আশ্বাস দেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি

  • আমাদের নায়ক: হাসানুল হক ইনু

    আমাদের নায়ক: হাসানুল হক ইনু

    আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম ও জিয়াউল হক মুক্তা*

    এক.
    তিনি তখন ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত ঢাকার বিখ্যাত নটরডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। একবার একজন ফাদার বললেন যে ইউ বেঙ্গলিজ আর চিকেন হার্টেড। একজন শিক্ষার্থী তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করলেন; সহপাঠিদের সংগঠিত করলেন; ধর্মঘট ডাকলেন। ফলে সে ফাদারকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হলো। সদ্যতারুণ্যের এ শিক্ষার্থী আর কেউ নন, হাসানুল হক ইনু। হ্যাঁ, আমরা এখানে বলছি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের বর্তমান সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি’র কথা। আজ ১২ নভেম্বর ২০২০ তাঁর ৭৪তম জন্মদিন।

    দুই.
    হাসানুল হক ইনু পূর্ববাংলার একটি নীতিনিষ্ঠ ও শিক্ষিত পরিবারের একজন সন্তান। তখন তিনি পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান পরিসরে অ্যাথলেট হিসেবে নাম করছেন, প্রথম বিভাগে ফুটবল খেলছেন আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামি প্রতিষ্ঠানে রসায়ন-প্রকৌশল পড়ছেন— ১৯৬৮ সালে যোগ দিলেন ছাত্র-রাজনীতিতে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনের মাঠে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখলেন এবং ফলশ্রুতিতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর ভূমিকার ফলে তিনি অতি দ্রুত মনযোগ আকর্ষণ করেছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রবাহিনী ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ বা ‘নিউক্লিয়াস’ নেতৃত্বের; তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে হাসানুল হক ইনু নিবেদিতপ্রাণ-নির্লোভ-নিঃস্বার্থ একজন অ্যাকটিভিস্ট ও তাঁর ওপর ভরসা করা যায়, সেজন্য তাঁরা তাঁকে ‘নিউক্লিয়াস’ ও এর রাজনৈতিক-সামরিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট’ বা ‘বিএলএফ’ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করলেন। তিনি ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে সর্বপাকিস্তান আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পশ্চিম পাকিস্তান গিয়ে একজন দুঃসাহসী রোমান্টিক বিপ্লবী হিসেবে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে অস্ত্র সংগ্রহের একটি উৎস হিসেবে লান্ডিকোটালো খোলা বাজারকে এক্সপ্লোর করলেন; নমুনা হিসেবে সেখান থেকে একটি পয়েন্ট থ্রি টু ক্যালিবারের পিস্তলও নিয়ে এলেন বিমানবন্দর ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস-পিআইএ-র নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে।

    তিন.
    ১৯৭০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘জহুরের রক্ত— স্বাধীনতার মন্ত্র’ শ্লোগানে আয়োজিত ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’র সামরিক কুঁচকাওয়াজে তিনি নেতৃত্ব দেন; বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও এ কুঁচকাওয়াজের একজন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। এ বছর ৭ জুন পল্টন ময়দানের শ্রমিক সমাবেশে ‘জয়বাংলা বাহিনী’র সামরিক কুঁচকাওয়াজে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মঞ্চে দণ্ডায়মান বঙ্গবন্ধুকে সামরিক অভিবাদন জানান। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ৬ দফার চরমতম কট্টর সমর্থক ছিলেন চট্টগ্রামের এমএ আজিজ, যাঁর সাথে অনিবার্যভাবে গভীর সম্পর্ক ও যোগাযোগ গড়ে ওঠে নিউক্লিয়াস-এর; সে এমএ আজিজকে কারামুক্তির পর বুয়েটে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন হাসানুল হক ইনু ও বুয়েট ছাত্রলীগের সে সময়ের নেতৃত্ব; এ সম্বর্ধনাও ছিল ৬ দফা থেকে ১ দফার আন্দোলন-কৌশলের একটি অংশ । ১৯৭০ সালে বুয়েট ছাত্রলীগের সম্মেলনে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে প্রধান অতিথি করে নিয়ে যান, সেটা ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম বুয়েট আগমন; আর এ সম্মেলন থেকে হাসানুল হক ইনু মাত্র তিন বছরের স্বল্পকালীন ছাত্র-রাজনীতির জীবন থেকে বিদায় নেন।

    চার.
    ১৯৭১ সালের প্রথম তিন মাস তিনি ও সুনির্বাচিত অন্যান্য কয়েকজন কর্মী নিউক্লিয়াস নেতৃত্বের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রস্তুতির জন্য বোমা তৈরির রাসায়নিক উপাদান ও অস্ত্র সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হন; সাইন্স ল্যাবরেটরি লুটে নেতৃত্ব দেন হাসানুল হক ইনু। একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু বিএলএফ-এর জন্য ভারত থেকে যে অস্ত্রের চালান আনার ব্যবস্থা করেন, নিউক্লিয়াস নেতৃত্ব হাসানুল হক ইনুকে সে চালান ঢাকায় আনার দায়িত্ব প্রদান করেন; তবে একাত্তরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সে চালান আর আনা হয়নি। এভাবে রাজনীতিতে তাঁর সামরিক অভিজ্ঞতা বিকশিত ও সমৃদ্ধ হতে থাকে।

    ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে নিউক্লিয়াস নেতৃত্বের নির্দেশে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের গৌরবের অধিকারীও তিনি। এবিসি টেলিভিশনের একটি সংবাদের ভিডিও ও ন্যারেশন দেখাচ্ছে যে পল্টন ময়দানে দশ হাজারেরও বেশি মানুষের সামনে হাসানুল হক ইনু তাঁর সেমি-অটোমেটিক পিস্তল-প্যারাবেলাম বা ল্যুগার থেকে ফায়ার করে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছেন আর পতাকা তোলার সময় কামরুল আলম খান খসরু তাঁর রাইফেল থেকে গান ফায়ার করছেন; তখন মঞ্চে ছিলেন ডাকসু ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এ দিন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পতাকা লাগানো গাড়িতে করে ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করতে যান।

    পাঁচ.
    শুরু থেকেই একজন সাহসী কর্মী ও ছোট নেতা হিসেবে বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছেন হাসানুল হক ইনু। সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ ও মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি] তাঁর সরাসরি নেতা হলেও শেষের জন তাঁর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন; শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ-এর কাছ থেকে আদেশ-নির্দেশ না পেলেও তাঁদের সাথে তাঁর বরাবরই শ্রদ্ধা-স্নেহের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। বন্ধু ও তাঁর চেয়ে বড় নেতা হিসেবে তাঁর ওপর প্রভাব ফেলেছিলেন শরীফ নূরুল আম্বিয়া, আফম মাহবুবুল হক ও মাসুদ আহমেদ রূমী। বন্ধু শফিউল ইসলাম কামালের শর্তহীন সমর্থন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অসাধারণ প্রাপ্তি। যুদ্ধপূর্ব সে সময় সম্পর্কে আফম মাহবুবুল হককে হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, “মাহবুব, তুই যখন বটতলায় বক্তৃতা দিতি, আমি তখন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তোর বক্তৃতা শুনতাম। তুই ছিলি হিমালয়ের চূড়ায়, আর আমি ছিলাম ঘাসের কাছে।”

    ছয়.
    ১৯৬৮-৬৯-৭০ সালে তখন অপরাপর বাম ছাত্র সংগঠনের প্রভাব উতরিয়ে সারা দেশে ছাত্রলীগের প্রবল জোয়ার; লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ ছাত্র-তরুণের সংগঠন ছাত্রলীগে শত শত ক্যারিশমাটিক ছাত্র নেতৃত্বের সমাবেশে স্বাধীনতা আন্দোলন তখন রত্নগর্ভা; সে সময় মাত্র অল্প কিছুদিন আগে ছাত্রলীগে যোগ দেয়া হাসানুল হক ইনুর এতসব গৌরবময় কাজ করতে পারার সৌভাগ্যটি কারো প্রীতির ফলাফল ছিল না, তা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতি তাঁর আদর্শনিষ্ঠার অর্জন। ১৯৭০ সালে আন্দোলন-সংগামের সময় তিনি রসায়ন-প্রকৌশলের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন; কিন্তু অ্যাথলেট-ফুটবলার বা প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন ছেড়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি আত্মনিবেদন করেন; ঔপনিবেশিকতার কালে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রকৌশলবিদ্যার সোনালী পেশার হাতছানি উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন রাজনীতি। সে ‘অগ্নিঝরা সময়ের অবলম্বন’ হিসেবে তিনি প্রকাশিত-উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন। যে সময়ের সন্তান তিনি, সে সময় তাঁকে বেছে নিয়েছিল, তাঁর মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে।

    সাত.
    সুমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হাসানুল হক ইনু ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়ায় বিএলএফ-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্যাম্প ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিরাজুল আলম খান ও শেখ ফজলুল হক মনি— উভয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ দায়িত্বটি পালনের জন্য তাঁকেই যোগ্য মনে করেছিলেন; তাঁর উপরে আরও অনেক নেতা থাকতেও তিনি এ দায়িত্ব পেয়েছিলেন এজন্য যে সিরাজ-মনি উভয়ে বুঝেছিলেন— ইনু একজন নিউক্লিয়াসপন্থি হলেও মুক্তিযুদ্ধের সাধারণ স্বার্থকে তিনি উপদলীয় স্বার্থের উর্ধে রাখবেন। এছাড়াও তাঁর ভাষাগত দক্ষতা আর বিএলএফ নেতৃত্বের প্রতি রেজিমেন্টেড আনুগত্যও এক্ষেত্রে বিবেচিত হয়েছিল; তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন তিনি ক্যাম্পে ভারতীয় কর্তৃত্বের বদলে বাঙালির কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব বজায় রাখবেন। এ সময় রাজনীতি ও বয়সে তিনি তাঁর সিনিয়রদের চেয়ে স্পর্শকাতর কাজ ও পদে থাকায় কেউ মন খারাপ করেননি, প্রত্যেকে তাঁর যোগ্যতাকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এ ক্যাম্পের বিশেষত্ব ছিল সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ প্রদান। এখান থেকে তাঁর হাত দিয়ে বের হয়েছেন দশ হাজারের বেশি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের অক্টোবরে চার প্রধানের [সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ] ঐকমত্যের ভিত্তিতে জেলা পর্যায়ের শতাধিক প্রতিনিধিদের এক সভা থেকে বিএলএফ ‘মুজিব বাহিনী’ নাম গ্রহণ করে।

    আট.
    হাসানুল হক ইনু স্বাধীনতা অর্জনের রাজনীতির সমর্থনে নিজ পরিবার সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তিনি বাবা-মার অকুণ্ঠ সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছেন। আপন দুই ভাই ও অপরাপর কাজিনদেরও তিনি পাশে পেয়েছেন মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে। পারিবারিক নীতিনিষ্ঠা তাঁকে পথ দেখিয়েছে আজীবন। স্বাধীনতার পর জহুরুল হক হলে তোফায়েল আহমেদ একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তুমি কিসে চলাফেরা করো? তিনি বলেছিলেন রিকসায়। তোফায়েল আহমেদ তখন তাঁকে একটি জিপের চাবি দিয়ে বলেছিলেন, এটা তুমি ব্যবহার করবে। এ জিপ চালিয়ে বাসায় ফিরলে তাঁর বাবা তাঁকে বকাঝকা করেন; বলেন, দেশ স্বাধীন করেছো লুটের গাড়ি ব্যবহারের জন্য? দরকার হলে আমার গাড়ি চালাবে। বাবার নির্দেশে পরদিন সকালে তিনি জহুরুল হক হলে গাড়ীটি ফেরত দিয়ে আসেন।

    শুধু পরিবার নয়, সামাজিক সম্পর্কগুলোকেও তিনি তাঁর রাজনীতির পক্ষে সমবেত করতে পেরেছেন। একজন প্রকৌশলী হিসেবে তিনি সমগ্র প্রকৌশলী সমাজের সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছেন, এবং এখনও পাচ্ছেন। ব্যবহারিক রাজনীতিতে সোভিয়েতপন্থি-চীনপন্থি সমাজতন্ত্রীদের সাথে জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের আজীবনের বিতর্ক থাকার পরও সোভিয়েতপন্থি-চীনপন্থি প্রকৌশলীগণ তাঁকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন-সহযোগিতা প্রদান করেছেন ও করছেন। শিল্পী ও ব্যবসায়ী নিতুন কুণ্ডুর মতো মানুষও তাকে সকল সময় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ বা আইইবি’র একজন স্থায়ী ফেলো; এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিনি নিয়মিত সদস্য পদে নির্বাচন করেন।

    পাকিস্তানের ২২ পরিবারের একটির প্রধান ইস্পাহানি যেমন কমরেড মনি সিংহকে শ্রদ্ধা করতেন, সিপিবিকে সমর্থন-সহযোগিতা করতেন, এমনকি পার্টি অফিসের জন্য জায়গাও দিয়েছেন; তেমনি হাসানুল হক ইনুও বন্ধু শফিউল ইসলাম কামালের মাধ্যমে জহুরুল ইসলামের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন ও তাঁর স্নেহ পেয়েছিলেন, রাজনীতির জন্য তাঁর সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছিলেন।

    নয়.
    ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র সংগঠনের ছোট নেতা হাসানুল হক ইনু উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও বড় দায়িত্ব নেয়ার মতো আরও ম্যাচিওরিটি অর্জন করলেন। তাঁর ফেলো-ফিলিংস ছিল উচ্চতর; মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পুরো দেশ চষে দেখা করেছেন পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে। একইভাবে ১৯৮০ সালেও কারাগার থেকে বের হবার পর তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সহযোদ্ধাদের সাথে দেখা করেছেন। এটা এমন একটি মানবিক গুণ যা প্রত্যেক নেতৃত্বের থাকা উচিত।

    দশ.
    ১৯৭২ সালের ২৮ মে ‘জাতীয় কৃষক লীগ’ গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক তিনি এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন; ৮৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন গণপরিষদ সদস্য খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ; পাশাপাশি গণপরিষদের আরও অনেক সদস্য এর সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় কৃষক লীগ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল এবং পরবর্তীতে এর ‘সমাজতান্ত্রিক কৃষি বিপ্লব’-এর কর্মসূচি জাসদ রাজনীতির গ্রামীণ ভিত্তি অর্জনের প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠেছিল। সমাজতান্ত্রিক কৃষি বিপ্লবের কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন; জাসদ ঘরানার বিষয়ভিত্তিক তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মাণে এ ছিল তাঁর প্রথম প্রয়াস। পরবর্তীতে জাসদের বিভিন্ন দলীয় ও রাজনৈতিক সাহিত্য প্রণয়নের কমিটি/উপকমিটিগুলোতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন; বিশেষত গণআন্দোলনের ধরন নির্ধারণের বিষয়ে তিনি নির্ধারক ভূমিকা পালন করেন।

    এগারো.
    ১৯৭৩ সালে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জাসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলে তিনি এতে সদস্যপদ অর্জন করেন। পরবর্তীকালে গঠিত ‘বিপ্লবী গণবাহিনী’র ‘উপ-প্রধান’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম ছিলেন বিপ্লবী গণবাহিনীর প্রধান। খাস জমি বণ্টন ও কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কার্যক্রম পরিচালনা করায় গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী গণবাহিনী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৮৬ সালে তিনি জাসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সালকালপর্বে একাধিকবার কেন্দ্রীয় ৫ দলের সমন্বয়কারী এবং ১৯৯৪ সালে গঠিত বামগণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রথম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ঐক্যবদ্ধ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

    ২০০২ সাল থেকে তিনি দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর-ভেড়ামারা আসনের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য; মাঝে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং দেড় টার্ম তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। পাশাপাশি তিনি ‘খাদ্য, কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দল’-এর চেয়ারপারসন এবং ‘আদিবাসী বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় ক্যকাস’-এর কো-চেয়ারপরসন-এর দায়িত্ব পালন করছেন।

    বারো.
    জাসদের মূল নেতৃত্ব কারাগরে অন্তরীণ থাকার সময় সংঘটিত হয় সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড; এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে অনেক দল ও জাতীয় নেতৃত্ব উল্লসিত হয়েছে, কিন্তু তাদের মতো করে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে হারায়নি জাসদ, আগের রাজনৈতিক বিরোধ বা কোনো প্রতিহিংসা থেকে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়নি জাসদ [যদিও বাকশাল কায়েমের পর থেকে জাসদ ছিল নিষিদ্ধ আর দলের নেতৃত্ব ছিলেন কারাগারে]; বরং সঠিক রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পেরেছে, মোশতাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু-হত্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক নতুন রাজনৈতিক নির্দেশনা প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন কাজী আরেফ আহমেদ ও মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি], তাঁদের সাথে হাসানুল হক ইনুর সংযুক্তি ও ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য [সিরাজুল আলম খান তখন ভারতে আবস্থান করছিলেন; দেশে ফেরার পর তিনি গৃহীত রাজনৈতিক অবস্থান এনডোর্স করেন]। এভাবে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মেজর এমএ জলিল ও আসম আবদুর রব দায়িত্বে বহাল থাকা অবস্থায় তিনি দলের নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন।

    তের.
    কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম-এর সহকারী হিসেবে হাসানুল হক ইনু ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠনে অনন্য-সহচরের ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানপন্থার ঐক্যবদ্ধ প্রতিআক্রমণে অভ্যুত্থান হাতছাড়া হবার পর কর্নেল তাহের ও অপরাপর জাসদ নেতৃবৃন্দের সাথে তিনিও গ্রেফতার হন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন বিচার প্রহসনের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয় ও কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে হাসানুল হক ইনুকে সর্বোচ্চ সাজা [১২ বছরের কারাদণ্ড] প্রদান করা হয়। কারাগার থেকে তিনি মুক্তিও পান সবার শেষে। এ আদালতে কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের জবানবন্দিটি যেমন বৈপ্লবিক, হাসানুল হক ইনুর জবানবন্দিটিও সেরকম দৃঢ়চেতা এক বিপ্লবীর ভাষ্য।

    চৌদ্দ.
    ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল-কালপর্বেও, যখন তিনি কারাগারে, তখনও তিনি জাসদের উল্লেখযোগ্য বড় নেতা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন না; সারা দেশে নেতৃবৃন্দের মুক্তি চাওয়ার দেয়াল লিখনে তার নাম দেখা যেত বড় বড় ৫০ জন নেতার পর। কারাগারের দিনগুলোতে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেন ও লেখেন। লিগ্যাল সাইজের ঢাউস এক রেজিস্ট্রার খাতায় কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তাঁর তৈরি রচনাগুলোর ছোট্ট দুটো—’আশা করা কি অনুচিত’ ও ‘জীবনবোধের প্রশ্নে’— জাসদ থেকে প্রায় আশি শতাংশ তরুণের বাসদে যোগদানের পর জাসদের অবশিষ্ট তরুণদের শক্তি সঞ্চয় ও পুনরুত্থানের দার্শনিক অবলম্বন হয়ে ওঠেছিল। এগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের প্রকাশনা ‘ইশতেহার’-এ। আরও পরে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় এ দুটো রচনার সাথে বিশেষভাবে যোগ হয়েছিল ‘আন্দোলন শুরু হবে কোথা থেকে’ রচনাটি।

    ‘আশা করা কি অনুচিত’ রচনাটিতে, যতোদূর মনে পড়ে, একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি ‘আশা’কে ব্যাখ্যা করেছেন। এতে তিনি আশা করার ও আশাহত হবার পেছনে কারণ হিসেবে ব্যক্তি কর্তৃক বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ-অনুধাবনকে সামনে এনেছেন। তিনি বলার চেষ্ট করেছেন যে বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ-অনুধাবনকে সামনে না রেখে যদি কেউ আশা করেন, তিনি আশাহত হবেন। বাস্তবতার আলোকে কেউ যদি তার আশা রচনা করেন বা তার মাত্রা নির্ধারণ করেন, তার আশাহত হবার কোনো কারণ নেই। আশার সাবজেকটিভিটিকে তিনি অবজেকটিভিটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। ‘জীবনবোধের প্রশ্নে’ রচনায় তিনি কঠোর-কঠিন-রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হলে ভেঙে না পড়ে সে বাস্তবতা মেনে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। ‘আন্দোলন শুরু হবে কোথা থেকে’ রচনায় তিনি বলেছেন যে ব্যক্তিক-পারিবারিক-সামাজিক-জাতীয়-রাষ্ট্রীয় জীবনের যে কোনো অন্যায়-অবিচার-অনাচার-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ছোট ছোট প্রতিবাদ থেকেই বড় বড় জাতীয় আন্দোলন গড়ে ওঠতে পারে।

    হাসানুল হক ইনু সে সময় আমাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেছিলেন ও আমাদের নায়কে পরিণত হয়েছিলেন মূলত তিনটি কারণে— প্রথমত, জান্তা বিরোধী আন্দোলনে তাঁর আপোষহীন অবস্থানের কারণে; দ্বিতীয়ত, শহরভিত্তিক গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশলের সীমিত প্রয়োগের সৃজনশীল উদ্ভাবন এবং আন্দোলনকালে তার আলোকে পুলিশ-বিডিআর-সেনাবাহিনী-সরকারের বিরুদ্ধে কিছুটা বল প্রয়োগের রোমান্টিসিজমের আভাষ-ইঙ্গিত দেয়ার কারণে; আব তৃতীয়ত, তাঁর উল্লিখিত প্রবন্ধ তিনটির মাধ্যমে আমাদের কনভিন্স/সন্তুষ্ট করতে পারার কারণে।

    উল্লেখ্য, উল্লিখিত রচনা তিনটি ছাড়াও তাঁর ‘গতিময়তাই জীবন’, ‘বাম রাজনীতি’, ‘বিপ্লবের সমস্যা’, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বামপন্থিদের ভুমিকা প্রসঙ্গে’, ‘স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় কেন’ ইত্যাদি প্রবন্ধগুলো ছাত্রলীগ, শ্রমিক জোট ও জাসদের নতুন ও তরুণ কর্মীদের আদর্শিক দার্শনিক রাজনৈতিক মানস গঠনে নির্ধারক ভূমিকা রাখে। এসব রচনা সে সময় কুয়াত ইল ইসলাম সম্পাদিত জাসদের সাহিত্য পত্রিকা ‘গণসংস্কৃতি’তে প্রকাশিত হয়েছিল।

    পনের.
    ১৯৮০ সালে কারামুক্তির পর তিনি আওয়ামী লীগ ও বাকশাল শাসনামলে বিপর্যস্ত, মোশতাকের শাসনামলে সেসবের ধারাবাহিকতা, এবং জিয়ার শাসনামলে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নে ছিন্নভিন্ন দল পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু ও প্রায় পাঁচ দশকের সহযোদ্ধা শরীফ নূরুল আম্বিয়াকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম দলে এত বড় বড় নেতা থাকতে তাঁরা হাসানুল হক ইনুকে কেন নেতৃত্বে ঠেলে দিলেন? তিনি জবাবে বলেছিলেন যে গভীর অন্ধকারেও ইনু আলোর সন্ধান পান, চরম আশাহীনতার মধ্যেও তিনি আশা খুঁজে পান, বিপর্যয় থেকে অর্জন করেন পুনরুত্থানের শক্তি, ধ্বংসস্তুপ থেকে সংগ্রহ করেন নির্মাণের উপাদান, ফিরে এসে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে পারেন, চ্যালেঞ্জ গ্রহণের স্পর্ধা তিনি ভালোবাসেন। বিদ্যমানতার এমন দ্বান্দ্বিক অনুধাবনপ্রক্রিয়া এমনকি অধিকাংশ বাম-কমিউনিস্টের মধ্যেও দৃশ্যমান নয়; হাসানুল হক ইনুর ক্ষেত্রে তা সহজাত, স্বভাবজাত।

    ষোল.
    ব্যক্তিগত সম্পর্ককে তিনি খুব গুরুত্ব দেন, কিন্তু তার ভিত্তিতে কোনো রাজনৈতিক-সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন না। সিরাজুল আলম খানের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থা-ভরসা-বোঝাপড়া ছিল গভীর। এজন্য দলে তাঁর সমসাময়িক বন্ধুদের অনেকেই বাঁকা কথা বলতেও ছাড়েননি। অনেকেই বলতেন যে দাদা যা বলবেন তুই তো তাতেই হ্যাঁ বলবি, তাঁকেই সমর্থন দিবি। সিরাজুল আলম খান যখন গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকারের ধারণা উপস্থাপন করেন, তিনি ছাড়া আর কেউ তা নিয়ে মাঠে নামেননি; ১৮ দফার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে।

    কিন্তু সামরিক জান্তার সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে জান্তাকে সহযোগিতা করে উপর থেকে ১৮ দফা বাস্তবায়ন করার সিরাজুল আলম খানের কৌশলের তিনি বিরোধিতা করেন। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাধারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সাধারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিভিত হিসেবে শ্রেণিপেশার সংগঠন [শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদ বা স্কপ, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ১৭টি কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইত্যাদি] গড়ে তোলা, রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখোমুখি সার্বক্ষণিক গণঅভ্যুত্থানধর্মী আন্দোলন ও মারমুখি জনতার জঙ্গি অবস্থান তৈরি করা, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক শাসককে উচ্ছেদ করা ইত্যাদি প্রশ্নে হিমালয়ের মতো সিরাজুল আলম খানের অবস্থানের বিরোধিতা করতে ঘাসের মতো সামান্য হাসানুল হক ইনু সামান্যতম দ্বিধায় ভোগেননি।

    জাসদের ভাঙাগড়া নিয়ে কতোজনে কতোকিছু বলেছেন-লিখেছেন, কিন্তু এটাই ছিল জাসদের মধ্যকার মতাদর্শগত সংগ্রামের চতুর্থ অধ্যায়। আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম। জাসদের লাখো কর্মীর ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামের ধারাটি রক্ষা পেয়েছিল হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে, আর তাঁর নেতা হিসেবে তিনি সাথে পেয়েছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি], শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও অন্যদের; হিমালয়সম নেতৃত্ব সিরাজুল আলম খান প্রমুখদের বিপরীতে।

    [আর হ্যাঁ, এর আগে জাসদের মধ্যকার মতাদর্শগত সংগ্রামের প্রথমটি ছিল গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার বিষয়ে, দ্বিতীয়টি জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগ নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য বিষয়ে ও তৃতীয়টি ছিল দলের মধ্যে বিপ্লবী পার্টি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা বিষয়ে। এ বিতর্কত্রয়ের পরিণতিতে জাসদ থেকে আফম মাহবুবুল হক ও প্রমুখ এবং ছাত্রলীগ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না ও প্রমুখ আলাদা হয়ে বাসদ গঠন করেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন যে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিভিত তা তারা বুঝে উঠতে পারেন নি; বাসদ গঠনের সে উদ্যোগ চূড়ান্ত বিচারে টিকে থাকতে সহযোগিতা করেছিল খুনি জিয়াকে; আর বাসদও অল্প সময়ের মধ্যে স্ববিরোধী হয়ে ১৫ দলে আওয়ামী লীগ ও জাসদের সাথে আর ৫ দলে জাসদের সাথে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করেছিল।]

    হাসানুল হক ইনুর ব্যক্তিগত-সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে এখানে আরও একটা কথা বলা যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও তাঁর বন্ধু ও সহযোদ্ধা। ১৯৭০-এর ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’র কুঁচকাওয়াজে তাঁদের ভূমিকার কথা আগেই বলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে জাসদের একটি প্রতিনিধি দল শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি গল্পে গল্পে বলেছিলেন যে তিনি যখন ইডেন কলেজের ভিপি নির্বাচন করেন, হাসানুল হক ইনু তখন তাঁর বাবার গাড়ি চালিয়ে তাঁকে নিয়ে ক্যাম্পেইনে বের হতেন, শেখ হাসিনার তখন পারিবারিক বা দলগতভাবে গাড়ির ব্যবস্থা করার অবস্থা ছিল না। তবে, বহু বছর আগের এ ঘটনা মনে করতে গিয়ে শেখ হাসিনা কিছুটা ভুল বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা ভিপি হয়েছিলেন ১৯৬৬-৬৭ সালে, হাসানুল হক ইনু তখন ঢাকায় ছিলেন না। ১৯৬৯ সালে ইডেন কলেজ সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলের পক্ষে হাসানুল হক ইনু তাঁর বাবার গাড়ি চালিয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন। শেখ হাসিনা মনে না করিয়ে দিলে বিষয়টি হয়তো কারো মনেই আসতো না।

    সতের.
    দেশে সক্রিয় বিবিধ শক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকায় হাসানুল হক ইনু কখনোই সামরিক শাসকদের পাতা ফাঁদে পা দেননি। এরশাদ শাসনামলে ১৫ দল ভেঙে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবিসহ ৮ দল সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেও তিনি জাসদ ও ৫ দল নিয়ে তা বর্জন করেন। অবশেষে জয় হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানমূলক রাজনীতির; ১৯৮৬-র নির্বাচনের সংসদ টেকেনি। ১৯৮৮ সালে আপোষকামীদের ফিরে আসতে হয়েছিল রাজপথে। তেমনি, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত সরকারের কোনো ফাঁদে জাসদ ধরা পড়েনি বা তিনি পা দেননি।

    আঠারো.
    এরশাদ জান্তা স্বৈরশাসনবিরোধী ছাত্র-গণআন্দোলন দমন করতে আন্দোলনকারী শক্তির ওপর লেলিয়ে দিয়েছিলেন রগকাটা-হত্যাকারী জামাত-শিবিরকে। ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট সিলেটে জামাত-শিবিরের হামলায় শহীদ হন জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী মুনীর-তপন-জুয়েল। পরদিন এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় আবেগাপ্লুত-উত্তেজিত হাসানুল হক ইনুর ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়, তিনি মঞ্চের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। চিকিৎসকগণ আন্তরিকভাবে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেন; অফিশিয়ালি তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন; তারপরও একজন ইন্টার্ন ডাক্তার সিনিয়রদের অনুমতি নিয়ে কার্ডিয়াক-শক প্র্যাকটিস করার জন্য তাঁকে কার্ডিয়াক-শক দিলে মনিটরের সরল রেখাটি অতি ধীরে আবারও সর্পিলাকার হয়ে ওঠে, তাঁর প্রাণের সাড়া পাওয়া যায়।

    তাঁর হৃদপিণ্ড এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে বাইপাস বা স্টেন্টিংয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। চিকিৎসকগণ বলেছিলেন যে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই তিনি গাড়ি ড্রাইভ করা ও দিনে ১৬/১৮ ঘণ্টা কাজ করা শুরু করলেন। সে সময় তাঁর হার্টবিট ছিল ২২ পার মিনিট; ২০২০ সালে এখন তা সর্বোচ্চ ৩৮/৪০ পার মিনিট; একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে যা হওয়া উচিত ৬০ থেকে ১০০ পার মিনিট। পরে আমরা উপলব্ধি করেছিলাম ওষুধ-পথ্যের বাইরে তাঁর মধ্যকার অফুরান প্রাণশক্তির অধিকারী পরম রোমান্টিক মানসটিই তাঁর চরম শরীরীঝুঁকি উপেক্ষা করে তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

    তাঁর অসুস্থতার পর, এমনকি তার প্রায় এক দশক পরও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে যখন ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নেয়া জাসদের নতুন কর্মী-সদস্যদেরকে সাংগঠনিক প্রয়োজনে সকালে তাঁর বাসায় যেতে হতো ও তাঁর সাথে অফিসের উদ্দেশ্যে বা কাজে বের হতে হতো, তখনও দেখা গিয়েছে যে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হঠাৎ হঠৎ কেউ না কেউ এসে তাঁর ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করছেন— তুলসি-নিম-অর্জুন-পেয়ারা-সজনে-তেঁতুল-জলপাই-বেল-জাম প্রভৃতি গাছের পাতা-বল্কল-বীজ এসব দিয়ে বানানো তাঁর জন্য টোটকা ওষুধ নিয়ে। সে দৃশ্যটি ভালো লাগতো এজন্য যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস উৎরে হাসানুল হক ইনু সেসব গ্রহণ করতেন; খেতেন। কেউ কেউ আসতেন তাঁকে নিয়ে তাঁদের দোয়া বা স্বপ্নে দেখা তথ্যের কথা জানাতে। এসব দেখে-শুনে, তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে, কর্মীদের আপ্লুত হওয়া ছিল স্বাভাবিক। ওইসব ওষুধ বা দোয়া-দাওয়ার চেয়েও তাঁদের ভালোবাসার সর্বশক্তিমানতা তিনি উপলব্ধি করতেন নিশ্চয়; এরকম ভালোবাসা বিচারের কোনো মাপকাঠি মানবসমাজ এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। তাঁর সৌভাগ্য, তিনি আপাদমস্তক নিরাপদে ঢাকা রয়েছেন নিরঙ্কুশ ভালোবাসার চাদরে।

    উনিশ.
    ১৯৮০ সালে জেল থেকে বের হয়ে তিনি মনি সিংহ, মোহাম্মদ ফরহাদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল হক, আব্দুল মতিন, টিপু বিশ্বাস, দেবেন শিকদার ও আবুল বাশারসহ চিরায়ত ধারার বাম নেতাদের সাথে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দিনের পর দিন আলোচনা করে তাঁদের কাছে জাসদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেছেন, তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং বাম ঐক্যের সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সে কারণে চিরায়ত বাম ধারার বাইরের দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে ৮টি বামপন্থি দলের জোট ‘বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ গঠন করা হলে এর প্রথম আহ্বায়ক হিসেবে হাসানুল হক ইনুকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন বাম নেতৃবৃন্দ।

    বিশ.
    সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যের রাজনীতির কৌশল প্রণয়ন ও প্রয়োগে হাসানুল হক ইনু চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮২—১৯৯০ কালপর্বের পর সর্বশেষ ২০০২ সাল থেকে জাসদের একক-নিরলস প্রয়াস, ২০০৩ সালে জাসদ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রাথমিক ঐকমত্য ঘোষণা, আর ২০০৪ সালে জাসদ ও আওয়ামী লীগের সমান্তরাল ঐক্য-প্রয়াস এবং ১৪টি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ কর্মসূচি পালন, আর অবশেষে এসবের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দল গঠন ও এর যাত্রা শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় তিনি পালন করেন নির্ধারকের ভূমিকা। জামাত-জঙ্গি-বিএনপি’র বিরুদ্ধে এ ঐক্যের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে টানা তৃতীয় বারের মতো।

    এ ঐক্য প্রসঙ্গে জাসদ ও হাসানুল হক ইনুর মত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও জাসদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ‘কেন্দ্র’ বা ‘প্রধান শক্তি’; জাসদ যদি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে অপরাপর দলের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের পক্ষের পূর্ণাঙ্গ ঐক্য হিসেবে বিবেচিত হবে না; তেমনি আওয়ামী লীগও যদি জাসদকে বাদ দিয়ে অপরাপর দলের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করে তাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের পক্ষের পূর্ণাঙ্গ ঐক্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, রাজনৈতিক ঐক্যে ৯৯ পয়সা মানে ১ টাকা নয়; ৯৯ পয়সার মালিককে ১ টাকার মালিক হতে হলে ১ পয়সার মালিকের সাথে হাত মেলাতে হয়।

    একুশ.
    নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সময় তিনি সোশালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, প্যালেস্টাইন, ইরাক এসব দেশের বাম-সমাজতন্ত্রী-কমিউনিস্টদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। অনেক আঞ্চলিক নেতৃত্বের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। প্রতিবেশ-পরিবেশ, নদী ও পানি, উপআঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক বাণিজ্য, টেকসই উন্নয়ন, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে আঞ্চলিক পরিসরের বিবিধ আলোচনায় তিনি মৌলিক বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান রেখেছেন দশকের পর দশক ধরে। জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ, কৃষি ও নারী-শ্রমিক-যুব এসব বিষয়েও জাতীয় পরিসরে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান রেখেছেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলোও তাঁর ইনপুট পেতে পছন্দ করে।

    তিনি জাতিসংঘের ‘ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম’-এর একজন রিসোর্স পারসন এবং ‘বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম’-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

    বাইশ.
    একজন জননেতার ব্যস্ততা সত্ত্বেও হাসানুল হক ইনু সময় বের করে পড়াশোনার চেষ্টা করেন; তার জন্য অর্থ ও সময় ব্যয় করেন। জ্ঞানার্জনের পথে তিনি অন্ধকূপের বাসিন্দা নন; সমকালীন বিশ্লেষণ ও নতুন চিন্তা তিনি অনুধাবনের চেষ্টা করেন; ক্ষেত্রবিশেষে সেগুলো আত্মীকরণের চেষ্টাও করেন নিজের মূল মার্কসবাদি চিন্তাকাঠামো অক্ষুন্ন রেখে। রাজনৈতিক দর্শন ও তত্ত্ব, রাজনৈতিক ইতিহাস ও বিশ্বের সেরা নেতৃত্বের জীবনী পড়তে তিনি ভালোবাসেন; তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন সমরবিদ্যা, সমরকৌশল ও রাজনৈতিক কৌশলের মতো বিষয়গুলোয়। একুশ শতকে সূচিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তাঁর এ সময়ের অন্যতম প্রধান আগ্রহের বিষয়। শেখার জন্য তিনি যে কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন; নতুন বিষয় জানাশোনার বেলায় তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন কিশোর-তরুণদের সাহচর্য।

    একটা সময় ছিল, অন্ততপক্ষে ১৯৮৮-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত, তিনি ছিলেন নিয়মিতভাবে কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজেরও একনিষ্ঠ পাঠক। বেস্ট সেলার বই কেনা তাঁর অভ্যেস। এখনও পর্যন্ত তাঁর একমাত্র বিলাসিতা হলো যখন যে শহরে যান, সেখানকার অভিজাত বইয়ের দোকানে একবার ঢুঁ মারেন। নিজের জন্য বই কেনেন; নাম বলে দিলে আমাদেরও কিনে দেন।

    তেইশ.
    এখানে সংযোজন করে রাখা যাক যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর অ্যাজিটেশনাল ও সামরিক অভিজ্ঞতার সাথে অব্যাহত পড়াশোনার সংযোজন তাঁর মধ্যে যে সমরকৌশল বিকশিত করেছে তা অনন্য। গণআন্দোলনের সাথে শক্তি প্রয়োগের তাঁর সৃজনশীল ‘সিলেকটিভ অ্যান্ড এফেক্টিভ ফোর্স অ্যাপ্লিকেশন’ বিষয়ক চিন্তা তরুণদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী অ্যাজিটেশনাল গণআন্দোলনের দিনগুলোতে। পত্রিকায় তাঁর দেয়া সুতীক্ষ্ণ-ধারালো সাক্ষাৎকার আর জনসভার ভাষণগুলো আমাদের অ্যাজিটেশনাল করেছিল।

    তাঁর চিন্তায় প্রতিপক্ষ বা শত্রু শিবিরকে আতঙ্কিত করা বা ছত্রভঙ্গ করার উদ্ভাবনী শক্তিও রয়েছে। আজ থেকে সাড়ে সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের মতিঝিলের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে গুলির বদলে আলো-অন্ধকার-শব্দ ব্যবহারের কৌশল প্রয়োগ তাঁর সমরচিন্তার উজ্বল দৃষ্টান্ত। বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ করে পুরো এলাকা অন্ধকার করে দেয়া, অন্ধকারের ভেতর ফ্লেয়ার গান ব্যবহার করে অনেক বেশি আলো তৈরি করা, শব্দ বোমার ব্যবহার, নিরাপদ পশ্চাদপসরণের জন্য এক্সিট-পথ খুলে রাখা ইত্যাদি কৌশল তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঠিক সেভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল; একটিও বুলেট না ছুঁড়ে, একফোঁটা রক্তও না ঝড়িয়ে, তারা ছত্রভঙ্গ-তছনছ করে দিয়েছিল হেফাজতের দম্ভ আর খালেদার গোপন খায়েশ।

    চব্বিশ.
    লিসেনিং টু আদার্স যে নেতৃত্বের একটি বিশেষ গুণ তা তিনি উপলব্ধি করেন; তাই তিনি ধৈর্যশীল ও মনযোগী একজন শ্রোতা— যে কারও কাছ থেকে নতুন ও প্রয়োজনীয় কিছু জানতে/শুনতে পেলে তিনি তা নোট করে রাখেন। নোট রাখা তাঁর অভ্যাসগুলোর অন্যতম।

    বলার ক্ষেত্রে তিনি তাৎক্ষণিকতার অনুসারী নন; শ্রোতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তিনি তার যে কোনো বক্তব্যের জন্য সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন ও প্রস্তুতি নেন; পয়েন্ট হিসেবে নিজের বক্তব্য সাজিয়ে-গুছিয়ে নেন; পড়াশোনা না করে বা না বুঝে তিনি কোন বিষয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেন না। যারা তার দৈনন্দিন জীবন অনুসরণ করেছেন, তারা জানেন তিনি একসাথে অনেক ফাইল ও বইপত্র সাথে নিয়ে দিনের শুরু করেন, গাড়িতে বা অফিসে ওসব ফাইল ও বইপত্র তাঁর সাথে থাকে, যখন দরকার তখন তিনি সেসব ফাইল বা বইপত্র কনসাল্ট করেন।

    পড়া-শোনা-বলার সাথে সাথে তিনি প্রচুর লেখেনও। এ রচনায় আগেই তাঁর লেখা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁর লেখা একদিকে যেমন দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে তেমনি জাতীয় রাজনীতির পলিমিক্সে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে তাঁর ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা’, ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রামের নয়াকৌশল’, ‘তিন দাগে ঘেরা বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিষবৃক্ষ’ ও আরও বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ-সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

    ১৯৯৩-র সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯০-এর জানুয়ারি পর্যন্ত গণমাধ্যমগুলোতে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎগুলোর নির্বাচিত কয়েকটির সংকলন ‘ক্যান্টমেন্ট কিংবা বিদেশের দিকে তাকিয়ে আন্দোলনে জেতা যাবেনা’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ছোট ছোট বাক্যের কাটাকাটা জবাব দেয়া এসব সাক্ষৎকার যখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতো, আমরা সেগুলো থেকে দিক নির্দেনা পেতাম; রোমাঞ্চিতও হতাম খুব; আনন্দও পেতাম। রাগী সাপ্তাহিক বিচিন্তায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে—

    বিচিন্তা: আপনার নামে হুলিয়া। আপনাকে আমরা খুঁজে বের করেছি। পুলিশ কি আপনাকে খুঁজে বের করতে পারবে না?

    ইনু: পুলিশ পারেনা এটা বলবো না, পারে। তবে আমার মনে হয় সরকারের সর্বস্তরের যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না।

    বিচিন্তা: এর কারণ কী হতে পারে?

    ইনু: সরকারের প্রতি কর্মচারিদের সমর্থন নেই।

    নিজের আত্মগোপনে থাকার দক্ষতাকে তিনি পুলিশের অক্ষমতা না বলে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করা ও এর মাধ্যমে স্বৈরাচারের মনে আতঙ্ক তৈরি করায় এসব সাক্ষাৎকার ছিল দারুণ কৌশলী যোগাযোগ পদ্ধতি।

    পঁচিশ.
    নিজেকে তিনি সবসময় প্রকাশিত রাখেন; রাজনীতিতে ঘনিষ্ঠদেরও তা থাকতে বলেন। তিনি লো প্রাফাইল মেইনটেইন করেন; ঘনিষ্ঠদেরও বলেন যে ট্রাই টু মেইনটেইন লো প্রোফাইল। কর্মী হিসেবে আমরা তাঁর উভয় পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করি। তিনি এমন একজন রাজনীতিবিদ যাঁর কাছে যে কেউ প্রবেশাধিকার পান; তাঁর কাছে যেতে বা তাঁর সাথে কথা বলতে কারো কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয়না, অ্যাপয়েন্টমেন্ট দরকার হয়না; মন্ত্রী থাকাকালেও যে কেউ তাঁর কক্ষের দরোজা ঠেলে ভেতরে যেতে পারতেন; যে কোনো ব্যক্তি তাঁকে সরাসরি ফোন করতে পারেন, কথা বলতে পারেন।

    ছাব্বিশ.
    বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ষড়যন্ত্র’ একটি জনপ্রিয় শব্দ। এ বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, “শোন, রাজনীতিতে সবসময় সিন্ধান্ত নেবে প্রকাশ্য ও জ্ঞাত/জানাশোনা তথ্যের ভিত্তিতে; ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব অনুসরণ করে কখনোই কোনো পদক্ষেপ নিওনা।”

    সাতাশ.
    কোন বিশেষ বা কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি তাঁর চারপাশের নেতাকর্মীদের পরামর্শ চান। তাঁরাও হয়তো সে বিষয়কে কঠিন মনে করেন; সেজন্য তাঁরা দলের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাঁর কাছে সমাধানের ফর্মুলাটি সহজ; তিনি বলেন, “কমন সেন্স প্রয়োগ করো।” এভাবে, আগে তাঁর যে সহজাত দ্বান্দ্বিক অনুধাবন প্রক্রিয়ার কথা বলেছি, সে সাধারণ দ্বান্দ্বিকতার সাথে ‘কমন সেন্স’কে তিনি রাজনীতির প্রয়োজনীয় উপাদানে পরিণত করেন। রাজনীতিকে একটি কঠিন বা দুর্বোধ্য বিষয় হিসেবে পরিচিত করার ঘোর বিরোধী তিনি।

    আটাশ.
    তাঁর চরিত্রের একটি প্রধানতম বৈশিষ্ট হলো রাজনৈতিক বক্তব্যকে সহজবোধ্য-প্রতীকময়তায় আবদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত তিনি শব্দ-বাক্য-ভাষা ব্যবহারের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেন। রাজনৈতিক বক্তব্যকে জনপ্রিয় করতে তিনি একের পর এক শব্দ-বাক্য-ভাষা দিতে থাকেন জনমানসে, অপেক্ষা করেন কোনটি সকলের মনযোগ আকর্ষণ করে ও অর্থবোধক হয়ে ওঠে। এভাবে তিনি ক্যাম্পেইনের ভাষা তৈরি করেন, আর তারপর সেটার ব্যবহারে মরীয়া হয়ে ওঠেন। অতীতে সামরিক আইনের অধঃস্তন ‘নির্বাচন, সংসদ ও গণতন্ত্র’কে তিনি ‘স্বৈরাচারের সাজানো বাগান’ বলে অভিহিত করতেন; সামরিক আইনের অধঃস্তন সংসদের সদস্য ও নিষ্ক্রিয়-বিপ্লবী লেখকদের তিনি স্বৈরাচারের সাজানো বাগানের ‘ফুল’ বলে অভিহিত করতেন। সাম্প্রতিককালে তাঁর ব্যবহৃত শব্দসমূহের মধ্যে আগুন-সন্ত্রাস, তেঁতুল-হুজুর, সন্ত্রাসের-রানী, জঙ্গি-সঙ্গী, জঙ্গিমাতা ইত্যাদি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ শব্দগুলো শ্রোতার মানসে সুনির্দিষ্ট চিত্র-চরিত্র তুলে ধরে।

    উনত্রিশ.
    কর্পোরেট ম্যানেজমেন্টে ডেলিগেশন একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান, কিন্তু রাজনীতিতে তা অত্যন্ত দুর্লভ কিংবা প্রায় অদৃশ্য একটি গুণ; আর তা যদি হয় দলীয় সাহিত্য নিয়ে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। দলের পোস্টার-লিফলেটের বাইরে বিবিধ অপরাপর প্রকাশনার ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদককে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা প্রদান করেন। নিকট অতীতেও তিনি কখনও জানতেও চাননি যে দলের প্রকাশনায় কী কী যাচ্ছে ইত্যাদি। এর ফলে তিনি তাঁর আস্থার অপব্যবহারের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি একটি বারের জন্যও। দলের ছোট-বড় সকলকে তিনি ন্যায্য সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেন।

    ত্রিশ.
    মানবিক গুণাবলীর চর্চায় হাসানুল হক ইনু কোমল ও নিভৃতচারী। এমনকি আমরাও প্রায় সকল ক্ষেত্রে জানতে পারিনা যে স্বাস্থ্য-চিকিৎসা-পড়াশোনা-বিয়েশাদি-অভাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি কখন কাকে কীভাবে সহযোগিতা করেন। সহযোদ্ধা-সহকর্মীদের প্রতি তাঁর কমরেডশিপ অনন্য। অন্যদের প্রতি তার সৌজন্যবোধ এবং কথা-আচার-আচরণের পরিমিতিবোধ তাঁর সুশিক্ষা ও পরিশীলিত সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। নিজের ভুল-ত্রুটির প্রতি তিনি নির্মোহ; দলের সভা, কর্মীসভা ও ওয়ান-টু-ওয়ান আলোচনায় দ্বিধাহীনভাবে তাঁর সমালোচনা করা যায়, তাঁকে প্রশ্ন করা যায়, চ্যালেঞ্জ করা করা যায়, জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা যায়; তিনি মনযোগ দিয়ে সেসব শোনেন ও প্রয়োজনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পাবলিক ফিগার হিসেবে নিজ রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থানের জন্য তিনি প্রচুর সমালোচনারও মুখোমুখি হন, সে স্বাভাবিক কিন্তু ভিন্ন প্রসঙ্গ।

    তাঁর মানবিক গুণাবলীর মহত্তম দিকটি সম্ভবত তাঁর ধৈর্য, সহনশীলতা, ঔদার্য ও ক্ষমাশীলতা। আমরা আমাদের চোখের সামনে দেখেছি— কীভাবে তাঁকে এক্সপ্লয়েটকারীরা, তাঁর আনুকূল্য ও অনুগ্রহপ্রাপ্তরা, তাঁর সামনে চোখ উল্টে দিয়েছেন, তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন ও তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমরা দেখেছি, তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে বিপদে ফেলতে দলের সভার বাইরে যারা পত্রিকার অপ-সংবাদ ফটোকপি করে বিলি করেছেন, তাঁদেরকেও তিনি পরে আবার দলের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা করে দিয়েছেন। আমরা এও দেখেছি, যে মামলায় কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ও অন্যদের কারাদণ্ড হলো, সে মামলার রাজসাক্ষীদের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল, এ যুক্তিতে যে কী ভয়াবহতম নিপীড়নের ফলেই না তাঁরা রাজসাক্ষী হতে বাধ্য হয়েছিলেন!

    একত্রিশ.
    হাসানুল হক ইনু উপর থেকে নাজেল হওয়া বা চাপিয়ে দেয়া একজন নেতা নন। তিল তিল করে গায়ে-গতরে কষ্টকর খাঁটনি খেঁটে আর ছোট কর্মী হিসেবে বড় বড় দায়িত্ব পালন করে তৃণমূল থেকে ওঠে আসা একজন জাতীয় নেতা তিনি। তিনি যা কিছু অর্জন করেছেন, তা পরিশ্রম করে অর্জন করেছেন। অনেকে বলেন সিরাজুল আলম খান, মেজর জলিল ও আসম আবদুর রবের দলত্যাগের পর কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম [মার্শাল মনি], হাসানুল হক ইনু ও শরীফ নূরুল আম্বিয়ার টিমওয়ার্কের পরিণতি হচ্ছেন হাসানুল হক ইনু; কিন্তু এও তো সত্য যে সে টিমের কেউই আর দলে নেই; এমনকি গত প্রায় ৫০ বছরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের যারা দলে ও রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারতেন তাদের মধ্যে হাতে গোণা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ দলে নেই।

    সেজন্যই আমাদের অনুধাবনে হাসানুল হক ইনু একজন ‘স্বরচিত’ রাজনৈতিক নেতা। এ দল যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা পথ ছেড়েছেন; কর্মীদের প্রতিনিধি হয়ে হাসানুল হক ইনু দায়িত্ব নিয়ে সে দল ও রাজনীতি পরিচালনা করছেন। তিনি নিজে বারবার বলেন, “জাসদ কর্মীদের দল, আমি কর্মীদের নিযুক্ত পাহারাদার মাত্র।” তারপরও জাসদের সকল বড় আয়োজনে বক্তব্যের শুরুতে তিনি এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পথহারা সেসব বড় বড় নেতাদের প্রতি; সকলের প্রতি তাঁর বক্তব্য এই যে, জাসদের দরোজা সকলের জন্য খোলা— যে কারোর ফিরে আসার জন্য।

    বত্রিশ.
    বিশিষ্ট মার্কসবাদী লেখক বদরুদ্দিন উমর তাঁকে ‘মিসগাইডেড জিনিয়াস’ বলতেন। ভিন্ন পথের পথিক বদরুদ্দিন উমরের ব্যবহৃত ‘মিসগাইডেড’ শব্দটি আমরা অবলীলায় উপেক্ষা করতে পারি এবং ‘মিসগাইডেড জিনিয়াস’ অভিধাটিকে আমরা একটি ‘কমপ্লিমেন্ট’ হিসেবে গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

    তেত্রিশ.
    বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র এককালের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ সম্পর্কে হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন যে ফরহাদ ছিলেন ‘নীতির প্রশ্নে অনমনীয়, কৌশলে নমনীয়’। আমরা মনে করি এ কথাটি তাঁর বেলায় আরও বেশি করে প্রযোজ্য। এ নমনীয়তার ফলে তিনি ধীরে চলতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরে চলার নামে মার্কটাইম করতে, আর ক্ষেত্রবিশেষে সহযোদ্ধাদের মতামতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কালক্ষেপন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

    চৌত্রিশ.
    হাসানুল হক ইনু’র চিন্তা-লেখা-কাজে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের ‘টু ট্যাকটিকস অব সোশাল ডেমোক্রেসি ইন ডেমোক্রেটিক রেভ্যুলুশন’-এর প্রভাব রয়েছে। তাঁর মধ্যে তাৎক্ষণিকতা ও প্রয়োগবাদিতার বা প্রাগমাটিজমের ঝোঁকও রয়েছে, তাতে খুব একটি সমস্যা নেই; কিন্তু ‘নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য’ সাধনের ‘কাজ’— ঐতিহাসিক বস্তুবাদসিদ্ধ অনিবার্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্যাভিমুখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে— তাঁর প্রয়োগবাদিতাকে সীমাবদ্ধ করে, লক্ষ্যাভিমুখি পরিণতিতে যায়না। তাঁর প্রাগমাটিজম অনেক বেশি রোমান্টিসিজমতাড়িত।

    পঁয়ত্রিশ.
    ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুধাবনে তিনি পারঙ্গম; শ্রেণি বিভাজন বা সামাজিক স্তরবিন্যাসসমেত সমাজের দ্বন্দ্বগুলো তিনি স্পষ্ট ধরতে পারেন, শ্রেণিগুলোর ক্ষমতা বিশ্লেষণ করতে পারেন নিখুঁতভাবে, এবং সেভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেন; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভিত্তি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা অনুধাবনের বেলায় তাঁর মধ্যে অস্বচ্ছতা-দোলাচাল-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়; রসায়ন-প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও বস্তু ও শক্তি এবং প্রকৃতির নিয়মাবলীর অনুধাবনে তাঁর মধ্যে ভাববাদী বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। আতিপ্রাকৃতিকতায় বা ঐশ্বরিকতায় কেন সমর্পন করবেন নিজেকে? তিনি কেন হজ্ব করবেন? সময় ও অর্থের অপব্যয় করবেন? হ্যাঁ, জাসদ কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নয়, এর নেতাকর্মীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে, এবং তাঁরা তা পালন করতেই পারেন, এবং হাসানুল হক ইনুও তা করতে পারেন। তারপরও তাঁর কাছে নিখুঁত-প্রত্যাশা বেশি বলেই এ দার্শনিক প্রসঙ্গের অবতারণা। এখানে অন্যদের জন্য বলে রাখা ভালো যে হাসানুল হক ইনু ধর্মনিরপেক্ষতার অনুধাবনে সক্ষম; নিজ ধর্ম বিশ্বাসকে তিনি দল বা রাজনীতিতে ব্যবহার করেননা; অপরাপর ধর্মমতের প্রতি তিনি সহিষ্ণু; লিবারেশন থিওলজি বা মুক্তির ধর্মতত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি নিজ ও অপরাপর ধর্মমতের অনুষ্ঠানাদিতে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কথা বলেন। আমাদের তাতে আপত্তি নেই।

    ছত্রিশ.
    তিনি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন। বই কেনা ছাড়া তাঁর আর কোনো বিলাসিতা নেই। স্বাধীনতার পর থেকে তিনি সাধারণ দোকানের সাধারণ পাজামা-পাঞ্জাবি-স্যান্ডেল পরিধান করেন। সবাই যখন বোতলজাত পানি পান করতেন, জাসদ অফিসে তিনি পান করতেন ওয়াসার ট্যাপের পানি। তিনি স্বল্পাহারী; যখন মন্ত্রী ছিলেন বা এখনও যখন দলের সভাপতি, দুপুরে জাসদ অফিসের নিচের মান্নান-খোরশেদের ফুটপাতের দোকানের খাবারই তিনি খান। রাস্তার ধারের খাবার, বিশেষত মুড়িমাখা-চটপটি-ফুসকা কিংবা চানাচুর-চিড়াবাদাম-পুরি-সিঙ্গারা-সমুচা তাঁর পছন্দের খাবার। অসুস্থতার আগে তিনি ধূমপান করতেন, অন্যরা ট্রিপল ফাইভ সিগারেট পান করলেও তিনি পান করতেন ফিল্টারহীন সস্তা প্লেইন স্টার।

    সাঁইত্রিশ.
    অনেকের অভিযোগ তিনি এমপি-মন্ত্রী হবার লোভে নীতি বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগের দালালি করছেন। তাদের মনে রাখা উচিত ১৯৭২ সালে ক্ষমতাকে পায়ে দলে তিনি বিরোধী দলীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন; সামান্য আপোষ করলে ১৯৭৯ সালে এমপি হতে পারতেন; ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ ও সিপিবি’র মতো আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে নির্বাচন করলে এমপি হতে পারতেন। মনে রাখা দরকার যে হাসানুল হক ইনুর কর্মীর কর্মীরও দল ত্যাগ করে মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি সে পথে জাননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসন সমঝোতার আলোচনায় আওয়ামী লীগ তাঁকে ভেড়ামারা-মিরপুর ছেড়ে ঢাকার মিরপুরে নির্বাচন করতে চাপ দিয়েছিল, যেমন চাপ দিয়েছিল রাশেদ খান মেননকে বরিশাল ছেড়ে ঢাকার মতিঝিলে নির্বাচন করতে। সে আলোচনায় হাসানুল হক ইনু সাফ সাফ বলে দিয়েছিলেন যে তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন না।

    আর নীতির প্রসঙ্গে যদি বলতে হয়, অতিসংক্ষেপে বলা যায় সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের পথে সমাজের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সংগ্রামও একটি বিপ্লবী কর্তব্য; এটা আমাদের বানানো কথা নয়, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের ‘টু ট্যাকটিকস অব সোশাল ডেমোক্রেসি ইন ডেমোক্রেটিক রেভ্যুলুশন’-এর মূল কথা। বাংলাদেশের সমাজের গণতন্ত্রকে রক্ষা ও বিকশিত করতে ২০০২ সালের শুরু থেকে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাসদের পক্ষে নিরলস পরিশ্রম করে তিনি ১৪ দল গঠন ও এর রাজনীতির আদর্শিক ভিত্তি রচনায় নিয়ামক ভূমিকা রাখেন; সাম্প্রদায়িকতা-যুদ্ধাপরাধ-জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে ১৪ দলের ২৩ দফা জাতীয় ন্যূনতম কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখেন; এবং পরে সে নীতির আলোকে জামাত-বিএনপি-জঙ্গির ঐক্যের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ করেন। এ আপোষহীনতাকে যারা দালালি বলেন তারা সমকালের বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ, প্রতিক্রিয়াশীল।

    তাঁর সম্পর্কে আরেকটা কমন অপপ্রচার এ যে দলগতভাবে নির্বাচন করলে তাঁর জামানত থাকবে না। এখানে তাদের উদ্দেশ্যে বলি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি দলগতভাবে নির্বাচন করেছেন, একবারও জামানত হারাননি। যে দেশে প্রতীক দেখে কলাগাছকেও ভোট দেয়া হয়, সে দেশে ১৯৯১-এর পরের দুটো নির্বাচনে তিনি নিজ দলের প্রতীক মশালের ভোট বাড়িয়েছেন। এসব বানানো কথা নয়, নির্বচন কমিশনে তার রেকর্ড আছে।

    আটত্রিশ.
    হাসানুল হক ইনু অনেক কিছু দিয়েছেন; কিন্তু তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন; আর কোনো মানুষই জীবনদায়ী-জননী-প্রকৃতির ঋণ কোনোভাবেই শোধ করতে সক্ষম নন। তাই তাঁর মতো দুঃসাহসী রোমান্টিক বিপ্লবীর চুহাত্তরতম জন্মদিনেও আমরা জাসদ কর্মীরা দেখতে চাই বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন পুনর্গঠন করতে, সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে আর জাসদকে একটি আধুনিক সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার অধীনে দাঁড় করাতে তিনি আমাদের কতোটুকু কাজে লাগান আর কোথায় নিয়ে যান।

    উনচল্লিশ.
    বাবা এএইচএম কামরুল হক ও মা বেগম হাসনা হেনা হকের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে প্রথম সন্তান হাসানুল হক ইনু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ১২ নভেম্বর। তাঁর বাবা ছিলেন কর্ণফুলি পেপার মিলের জেনারেল ম্যানেজার। তাঁর স্ত্রী আফরোজা হক রীনাও একজন রাজনীতিক, তিনিও স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান কম্পিউটার প্রকৌশলী শমিত আশফাকুল হক; পুত্র শমিত ও পুত্রবধু চিকিৎসক নাহিদ ফারহানার রয়েছে এক পুত্র। এই পাঁচ জন নিয়ে হাসানুল হক ইনুর সংসার।

    তাঁর মমতাময়ী মা ১৯৭৬ সালের ৫ জানুয়ারি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর জেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও জিয়াউর রহমানের নির্দেশে জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ খবর জানানো থেকে বিরত থাকে; প্যারোলে মুক্তি দিয়ে মাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ দেয়া তো দূরের কথা, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বরিশাল জেলা কারাগারে পাঠানোর পরই কেবল মা’র মারা যাবার খবর তাঁকে জানানো হয় ছয় মাস পর। নোংরা জিয়া কতোটা বর্বর ও অসভ্য চরিত্রের ঘৃণ্য ও বিকৃতমানসের ব্যক্তি— এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তা পুরোপুরি প্রকাশ পায়।

    এরশাদ সামরিক জান্তার সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ তাঁকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজে না পেয়ে ১৯৮৬ সালে তুলে নিয়ে যায় ছোট ভাই মঞ্জুরুল হক টিংকুকে। ইলেকট্রিক শক দেয়া থেকে শুরু করে বরফখণ্ডের সাথে বেঁধে রাখাসহ বিভিন্ন পন্থায় টিংকুর ওপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায় ও চিরদিনের মতো এমন শারীরিক ক্ষতি করে যে তার ফলে পরে তার অকালমৃত্যু হয়।

    চল্লিশ.
    ২১ বছর বয়সে শুরু করে ৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন ঔপনিবেশিক-সামরিক-সেনাসমর্থিত-বেসামরিক স্বৈরশাসন আর গড়ে তুলেছেন গণপ্রতিরোধ-গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান-সশস্ত্রসংগ্রাম; দেখেছেন আশাহীনতার অন্ধকার আর আশার সূর্যোদয়; জয় আর পরাজয়; দেখেছেন অনেক নেতা-সহযোদ্ধা-কর্মী-সদস্য শাসকদের আক্রমণে দল ছেড়েছেন, অনেকে পায়ে পায়ে তাল মেলাতে না পেরে পথ ছেড়েছেন, অনেকে আপোষ করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতাও করেছেন কেউ কেউ, জীবিকা হারিয়েছেন বহুজন, সম্পদ ও সম্পর্ক হারিয়েছেন অসংখ্যজন এবং দেখেছেন অগণনজন প্রত্যেকে হারিয়েছেন একমাত্র জীবন। তাঁদের ও তাঁদের পরিবার-পরিজনদের জন্য তাঁর রয়েছে গভীর বেদনা ও সমবেদনা; কিন্তু তিনি নিজের রাশ টেনে ধরতে জানেন, তাই বিহ্বল হননা। তিনি তার সহকর্মীদের নির্দেশ দেন, “আর কিছু অর্জন হোক বা না হোক, অন্তত এঁদের জন্য যখন যেভাবে যতোটুকু পারো, কিছু কোরো।”

    একচল্লিশ.
    বেদনা ও সমবেদনায় ভারাক্রান্ত না হয়ে বা বিহ্বল না হয়ে তিনি এগিয়ে চলেন পরিবর্তনের সমুখপথে, সেসব বেদনা-সমবেদনার কারণেরে যুঝতে; ভবিষ্যতে আর যাতে বেদনা অর্জন ও সমবেদনা প্রকাশ করতে না হয়, সেজন্য। এরকম অনিশ্চিতি, বিধিনিষেধ, অসহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা আর নিরন্তর পথ চলা নিয়ে স্যাম কুক লিখেছেন-গেয়েছেন সৌল/রিদম অ্যান্ড ব্লুজ [আরঅ্যান্ডবি]— এ চেঞ্জ ইজ গনা কাম।

    ১৯৬৩ সালে স্যাম কুক গানটি লেখেন ও প্রথমবারের মতো গান; তিনি এটা নিবেদন করেছিলেন আমেরিকার বৈষম্য-বিরোধী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রতি। পরে জ্যাজ-ব্লুজ-সৌল-আরঅ্যান্ডবি ঘরানার আরও অনেক শিল্পী এটি গেয়েছেন; কেউ স্যাম কুকের ভাষা অপরিবর্তিত রেখে, কেউ একটি-দুটি শব্দ পাল্টে আর কেউবা দু’এক লাইন যোগ করে; কিন্তু প্রত্যেকে প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁদের নিজস্ব গায়কীর; ফলে প্রতিটি সংস্করণ ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দেয় বেদনামথিত কাঙ্ক্ষিত-পরিবর্তনের মূলে বিশ্বস্ত থেকে; তবে হ্যাঁ, স্যাম কুকের পাশাপাশি সিল-এর গাওয়াও দারুণ। ‘সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও নান্দনিক গুরুত্ব’ বিবেচনা করে আমেরিকার ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এর ‘ন্যাশনাল রেকর্ডিং রেজিস্ট্রি’ গানটি সংরক্ষণ করছে। হাসানুল হক ইনুর জন্মদিনে আমাদের নিবেদন এ সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক-নান্দনিক সৌল/রিদম অ্যান্ড ব্লুজ—

    I was born by the river in a little tent. Oh and just like the river I’ve been running ev’r since. It’s been a long time, a long time coming. But I know a change gonna come, oh yes it will.

    It’s been too hard living, but I’m afraid to die. ‘Cause I don’t know what’s up there, beyond the sky. It’s been a long, a long time coming. But I know a change gonna come, oh yes it will.

    I go to the movie and I go downtown. Somebody keep tellin’ me don’t hang around. It’s been a long, a long time coming. But I know a change gonna come, oh yes it will.

    Then I go to my brother. And I say brother help me please. But he winds up knockin’ me. Back down on my knees, oh.

    There have been times that I thought I couldn’t last for long. But now I think I’m able to carry on. It’s been a long, a long time coming. But I know a change is gonna come, oh yes it will. [Sam Cooke (1963): A Change Is Gonna Come]

    চুহাত্তরতম জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা, প্রিয় জননেতা হাসানুল হক ইনু। আপনি দীর্ঘজীবী হোন, যাতে স্বার্থপরের মতো আমরা আপনার সাহচর্য পাই আরও দীর্ঘদিন। আপনার জন্য আমাদের হৃদয়গভীরের ভালোবাসা অফুরান, প্রিয়তম কমরেড, আমাদের নায়ক।

    (লেখক: আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, সদস্য, স্থায়ী কমিটি; জিয়াউল হক মুক্তা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।)

    যুগবার্তার অন লাইন থেকে সংগৃহীত

  • জেএসডি স্থায়ী কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুল হাইয়ের ইন্তেকাল ঃ আ স ম রব এর শোক

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির জ্যেষ্ঠতম সহ-সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, দিনাজপুর জেলা জেএসডি সভাপতি এডভোকেট আবদুল হাই এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

    বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এডভোকেট আবদুল হাই দীর্ঘদিন যাবৎ গণমানুষের মুক্তির লড়াইয়ে নিজেকে  নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জড়িত রেখেছেন। ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম-লড়াইয়ে সাহসিকতার সাথে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি কাউন্সিল ২০১৯,এ তিনি কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

    শোক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আব্দুল হাই এর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের দল এবং দলীয় রাজনীতির কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি।

    উল্লেখ্য যে, এডভোকেট আবদুল হাই মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রাত ৮.৪৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি…………….রাজিউন)। মরহুমের ১ম নামাজে জানাজা আজ দুপুর ১২:৩০ মিনিটে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। বোচাগঞ্জ উপজেলার কনুয়া গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে বাদ আছর ২য় জানাজা শেষে তার মরদেহ দিনাজপুরের জিয়া হার্ট-ফাউন্ডেশন হিমাগারে রাখা হবে। আগামী ১৩ নভেম্বর, শুক্রবার বাদ জুম’আ পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ৫ মেয়েসহ অসংখ্য রাজনৈতিক সহচর, আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

  • মহানায়ক কর্নেল তাহের, বিশ্বাসঘাতক ও খলনায়ক জিয়া ইনু

    মহানায়ক কর্নেল তাহের, বিশ্বাসঘাতক ও খলনায়ক জিয়া ইনু

    • সাত নবেম্বরে জাসদের আলোচনা

    স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর কর্নেল তাহের বীরউত্তম ও জাসদের নেতৃত্বে সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা, অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সংবিধান লংঘন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে সেনাবাহিনীর ব্যবহার, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর অবসানের লক্ষ্যে সংগঠিত একটি ঐতিহাসিক মহান ঘটনা।

    তিনি বলেন, ৭ নবেম্বর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা বা অফিসার হত্যা, সৈনিক হত্যা, বিপ্লব ও সংহতি দিবস নয়। যারা এতদিন পর্যন্ত ৭ নবেম্বরকে চিহ্নিত করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসকে আড়াল এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনীসহ ষড়যন্ত্রকারী-খুনীদের আড়াল করা, তাদের পক্ষে ওকালতি করার ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়েছে।

    শনিবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে ৭ নবেম্বর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    দেরিতে হলেও ধামাচাপা দেয়া সত্য আজ প্রকাশিত উল্লেখ করে সাবেক এই তথ্য মন্ত্রী বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে এখন সবাই খুবই সুস্পষ্টভাবে বলছেন কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। কারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের নিরাপদে দেশত্যাগ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এমনকি খালেদ মোশাররফকে কার নির্দেশে কোন অফিসাররা হত্যা করেছে, খোদ খালেদ মোশাররফ এর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নামও আজ প্রকাশ করা হয়েছে।

    তিন নবেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা, ৭ নবেম্বর সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান দমন, খালেদ মোশাররফ হত্যা, জিয়ার শাসনামলে কর্নেল তাহেরকে সাজানো মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে প্রহসণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, সেনানিবাসগুলোতে শত শত অফিসার-সৈনিক হত্যার ঘটনার তদন্ত করে সত্য উদঘাটনে একটি ‘জাতীয় সত্য উদঘাটন কমিশন’ গঠন করার আহ্বান জানান।

    আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখে, দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শহীদ কর্নেল তাহেরের অনুজ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, নইমুল আহসান জুয়েল, সাইফুজ্জামান বাদশা, শরিফুল কবির স্বপন, রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।

    ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর সেই দিনের রাজনৈতিক সংকট ও শুন্যতায় শহীদ কর্নেল তাহের ও জাসদের নেতৃত্বে বিপ্লবী অভ্যূত্থান প্রচেষ্টা ইতিহাসের গতি পরিবর্তনের ঐতিহাসিক সুযোগ করেছিল। সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। কিন্তু জিয়া ও তার সহযোগী পাকিস্তান ফেরত পাকিস্তানপন্থী অফিসার এবং দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সেই মহান বিপ্লবী প্রচেষ্টাকে দমন করে দেশকে পাকিস্তানপন্থা ও চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে ঠেলে দেয়। জিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শুরু করে।

    গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির দীর্ঘদিনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ধারায় দেশ আজ পাকিস্তানপন্থা থেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামাত ও তাদের সঙ্গি জঙ্গিবাদী-উগ্রবাদীরা এখনও বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধকে চ্যালেঞ্জ করছে।

    ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পথে দেশকে ফেরানোর সংগ্রামের সাথে পাকিস্তানপন্থার রাজনীতিকে পরাজিত করা এবং সুশাসন-আইনের শাসন-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিপদকে খাটো করে দেখে আড়ালে রেখে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটকে আলাদাভাবে মোকাবেলা করার রাজনৈতিক কৌশল আত্মঘাতি ও ভ্রান্ত।

    ইনু বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা-সুশাসন-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদেরকে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতা এবং দুর্নীতি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই দুই ফ্রন্টে একইসাথে লড়াই করতে হবে।

    কর্ণেল তাহেরের বড় ভাই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যতই দিন যাচ্ছে শহীদ কর্নেল আবু তাহের একজন মহান বিপ্লবী হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। আজ বর্তমান প্রজন্মের তরুন-যুবকরা বিপ্লবী কর্নেল তাহেরকে বিপ্লবের প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করছে।

  • দেবহাটা উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মনি

    দেবহাটা উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মনি

    স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ ব্যাক্তিগত কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার দুপুর ৩.৩০ মিনিটে ধানমন্ডি-৩ নং অফিসের শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত সহকারী শামীম হোসেন ও আলাউদ্দীন মনিরুজ্জামান মনির মনোনয়ন পত্রটি জমা নেন।
    এরআগে গত দুদিনে একই পদের জন্য মনিরুজ্জামান মনি ছাড়াও দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। অপরদিকে সদ্য প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গনির পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রনিও দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের জন্য বর্তমানে ঢাকাতে পৌঁছেছেন বলে তার পারিবারিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

  • চার নেতা হত্যার পেছনে বড় ষড়যন্ত্র ছিলো

    চার নেতা হত্যার পেছনে বড় ষড়যন্ত্র ছিলো

    অনলাইন ডেস্ক:

    জাতীয় চার নেতা হত্যার পেছনে শুধু বিপদগামী সেনা সদস্যরাই নয়, এর পেছনে বড় একটি ষড়যন্ত্র ছিলো বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

    মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর এ কথা বলেন তিনি।

    তিনি বলেন, ‘জাতীয় চার নেতা হত্যায় যারা জড়িত তাদেরকে দেশে ফেরত আনার জন্য সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিক।’

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বিপদগামী সেনা সদস্যই নয়। জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পেছনে আরও বড় একটি ষড়যন্ত্র ছিলো। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের মুখোমুখী উন্মোচন করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

    এসময় জেলহত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

    শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ডাক্তার সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিম, কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন, কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন প্রমুখ।

    উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের এই দিনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন খুন হন অস্থায়ী সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, কৃষি ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান।

    কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিলে একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।

  • সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন : সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন ও সাধারন সম্পাদক শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল

    সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন : সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন ও সাধারন সম্পাদক শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল

    নিজস্ব প্রতিনিধি : “শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন-২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে শহরের মিনি মার্কেট চত্বরে উক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
    সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মধূ।
    অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পারিচালনা করেন, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আনোয়ার জাহিদ তপন। এ সময় সেখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
    কাউন্সিলে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ার জাহিদ তপন ও সাধারন সম্পাদক হয়েছেন শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল।

  • জাসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তরুণদের প্রতি –

    জাসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তরুণদের প্রতি –

    শিরীন আখতার

    ৩১ অক্টোবর ২০২০ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ-এর ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে যারা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ বা ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছেন, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যাঁরা পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে কাজ করেছেন, ১৯৬৬ সাল থেকে যাঁরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের টুল বা উপায় হিসেবে গ্রহণ করে নিবেদন করেছেন জীবনের সর্বস্ব, শিক্ষা-গণতন্ত্র-প্রগতি ও প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো যাঁরা বুদ্ধিমত্তার সাথে টেনে এনেছেন ‘স্বাধীনতা’র দিকে, যাঁরা ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ বা ‘জয়বাংলা বাহিনী’র উত্তরাধিকার হিসেবে নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক-সামরিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফ’ বা ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ও বিজয়ী হয়েছেন— তাঁরাই গঠন করেছেন জাসদ। এঁদের প্রায় সকলেই ছিলেন ছাত্র, তরুণ ও যুবক। জাসদ গঠনকারী নিউক্লিয়াসের ছাত্র-তরুণ-যুবকগণ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান প্রবর্তন করেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অভিধা দিয়েছেন, জাতীয় পতাকা তৈরি-প্রদর্শন-উত্তোলন করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনাক্রমে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করেছেন। অন্য কোন দল নয়। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে সমগ্র বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের লাল ঝাঁন্ডার এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল; লড়াই চলেছিল দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এ পতাকাতলে সমবেত হয়েছিলেন। এ সময় প্রায় ৯৮ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন এই তরুণগণ। তারুণ্যের জয়গানে দীপ্ত ছিল রাজপথ। শহরে- গ্রামে-গঞ্জে জ্বলে উঠেছিল অগ্নিমশাল। শ্রমিক-কৃষক-তরুণ-যুবগণ হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছিলেন চোরাকারবারী-মুনাফাখোর-মজুদদারদের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদদের লাশ, সে লাশের গন্ধ আকাশ-বাতাস তখনও ভরেছিল। অস্ত্র হাতে তরুণগণ লড়াই ছেড়ে ঘরে ঢুকে যেতে পারেননি। ক্ষমতা নির্মাণ করে জ্ঞান, সে জ্ঞান আবার ক্ষমতাকে যুক্তি ও ভিত্তি দেয়। বাংলাদেশের গত ৪৯ বছরের বড় একটা সময়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের জুন পর্যন্ত পাকিস্তানপন্থার সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র একটা ইতিহাস তৈরি করেছিল— যেখানে প্রজাতন্ত্রের জনক বঙ্গবন্ধুর সমান্তরাল নেতৃত্ব হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি জিয়াউর রহমানকে উপস্থাপন করা হয়েছিল শিক্ষাঙ্গণগুলোতে ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া— লও লও লও সালাম’ শ্লোগান দিয়ে।প্রশ্ন হতে পারে, নিউক্লিয়াসপন্থিরা স্বাধীনতার জন্য যদি এত কাজ করে থাকেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে তারা জাসদ গঠন করলেন কেন? এখানে নির্দ্বিধায় বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর আগের দশ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের রূপকার ও নিয়ামক ভূমিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল আওয়ামী রাজনীতির অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সুরা। ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠিত হতে পারেনি আর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নিউক্লিয়াস ও ছাত্র-তরুণ-যুবকদের কোনো প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করতে পারেননি; বিপ্লবোত্তর দেশে যেরকম হয়— সমাজের সেরকম আমূল পরিবর্তন হয়নি। বরং স্বাধীনতার পর থেকে জনপ্রশাসন, সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা বিভাগ ও সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে সংস্কৃতি-রাজনীতি পর্যন্ত সবকিছু পাকিস্তানপন্থার করায়ত্ব হয়েছিল। অনেক দুঃখভরে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন— মহামান্য, আপনি শেষ, আপনি পুরোনো জনপ্রশাসন বহাল রেখেছেন। পরিতাপের বিষয়, পুনর্বাসিত পাকিস্তানপন্থা প্রথমে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে; পরে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে হত্যা করেছে ও জাসদ-ধ্বংসে নিয়োজিত হয়েছে।নিউক্লিয়াসপন্থিদেরকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়ার পাশাপাশি জাসদ গঠনে ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী রাজনীতির সাথে নিউক্লিয়াসপন্থিদের মতাদর্শগত বিতর্ক ও ভিন্নমত— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ ও অবস্থান।বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৫ বছর ধরে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও জাসদকে অপরাপর দলকে সাথে নিয়ে লড়তে হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। নব্বইয়ের ছাত্র_গণঅভ্যুত্থানে_যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি তারা কিছুটা হলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ পেয়েছিল। সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই ছিল মুক্তিযুদ্ধে গড়া বাংলাদেশ ফিরে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এবারও সে তরুণ-যুবকগণ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন; এঁদের সাথে ছিলেন বুদ্ধিজীবী-নারী-শ্রমিক-কৃষক-সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। অভূতপূর্ব এ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য তরুণগণ আবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আপোষহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সেনাশাসনকে পরাজিত করে গণতন্ত্রের ঝান্ডা উড়িয়েছিলেন।কিন্তু গণতন্ত্রের নামে ১৯৯০ সাল থেকে ক্ষমতায় একবার মুক্তিযুদ্ধের দল একবার রাজাকারের দল— এই মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলতে থাকে, যে খেলায় গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রে অবিশ্বাসী রাজাকারের দল জামাত ও সামরিক স্বৈরাচারের গর্ভজাত দল বিএনপি জঙ্গিবাদ বিকশিত করতে থাকে। এরা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে জানে মেরে ফেলার মিশন নিয়ে মাঠে নামে।২০০২ সাল থেকে জাসদের প্রয়াসে, ২০০৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও জাসদের সমান্তরাল প্রয়াসে, ২০০৪ সালে ১৪টি দলের যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে, ২০০৭-২০০৮ সালের ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকাল উৎরিয়ে, ১৪ দলের সাথে অপরাপর দল নিয়ে ‘মহাজোট’ নামের নির্বাচনী সমঝোতা করে, ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয় ১৪ দল ও মহাজোটের সরকার। বিএনপি-জামাত জোট ১৪ দল ও মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পরিচালনা করে ৯৩ দিনের আগুনসন্ত্রাস; হত্যা করতে থাকে শিশু ও শ্রমিকসহ জনপরিবহনে ভ্রমণকারী সাধারণ নাগরিকদের।১৪ দল ও মহাজোট সরকার এখন তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। জামাত-বিএনপি কিছুটা কোনঠাসা হয়েছে; কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে; কিন্তু লড়াইয়ের মাঠে সামনে আনতে হবে দুনীতি-লুটপাট-দলবাজি-অনাচার-অত্যাচার-নিপীড়ন-ধর্ষণ প্রতিরোধে সুশাসন ও আইনের শাসনের সংগ্রাম ও সকল ধরনের ভেদ-বিভেদ-অসমতা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমাজ পরিবর্তনের সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম।আবারও এ সংগ্রামে প্রয়োজন তরুণ ও যুব সমাজের অংশগ্রহণ_ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো লড়াইয়ের সামনের কাতারে থেকেই পরাজিত করতে হবে সকল অত্যাচার-ধর্ষণ-নিপীড়নের হাত। তারুণ্যের জোরালো শক্তিশালী লৌহকঠিন ঐক্যের বন্ধন যদি তৈরি করা না যায় তাহলে মার খাবে গণতন্ত্র। পদদলিত হবে সমাজ পরিবর্তনের কলাকৌশল। তাই আজ ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তারুণ্যের অভিযাত্রা। তারুণ্যের এই অভিযাত্রা শুরু করতে চায় জাসদ।অতীতে জাসদ ইতিহাস চর্চার সময় পায়নি; আর জাসদ ইতিহাসের গৌরব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না; জাসদ চায় বর্তমানের সমস্যা মোকাবেলা করে ভবিষ্যৎ-যাত্রা। এ যাত্রায় জাসদ তরুণদের সাথে পেতে চায়; এখানে তরুণদের উপলব্ধি করতে হবে সামাজিক আন্দোলন দিয়ে অনেক কিছু অর্জন করা যায়, ক্ষমতা অর্জন করা যায় না; আর ক্ষমতা না থাকলে আমূল পরিবর্তন করা যায়না। ক্ষমতা অর্জন করতে, ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতা দিতে, অবশ্য-দরকার হলো রাজনৈতিক আন্দোলন। এ r জাসদ তরুণদের স্বাগত জানায়; জাসদ তরুণদের যে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে সবসময় প্রস্তুত; জাসদ রাজনীতির অ্যাজেন্ডায় তারুণ্যের দিকনির্দেশনা চায়।(লেখক: সংসদ সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ।)

  • হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর একদিনের রিমান্ডে

    হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর একদিনের রিমান্ডে

    অনলাইন রিপোর্টার ॥ নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

    সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

    তিনি বলেন, ধানমন্ডি থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আশফাক রাজীব হাসান সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীর রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এই আদেশ দেন।

    সোমবার সকালে হাজী সেলিমের ছেলে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। আসামিরা হলো, এরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন।

    রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ধানমন্ডি থানা পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি থানায় নিয়ে যায়। বর্তমানে গ্রেফতার মিজানুর ও গাড়ি ধানমন্ডি থানায় রয়েছে।

    ওয়াসিফ আহমদ এজাহারে অভিযোগ করেন, তিনি নীলক্ষেত থেকে বই কিনে মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে তার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। ওয়াসিফ আহমদ মোটরসাইকেল থামিয়ে গাড়িটির গ্লাসে নক করে নিজের পরিচয় দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চান। তখন এক ব্যক্তি বের হয়ে তাকে গালিগালাজ করে গাড়ি চালিয়ে কলাবাগানের দিকে আসেন। মোটরসাইকেল নিয়ে ওয়াসিফ আহমদও তাদের পেছনে পেছনে আসেন। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে গাড়িটি থামলে ওয়াসিফ মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান। তখন তিন-চার জন লোক গাড়ি থেকে নেমে বলতে থাকে, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বাইর করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বাইর করতেছি। তোকে আজ মেরেই ফেলবো। এই বলে তাকে কিলঘুষি দিতে থাকে। এরপর তারা পালিয়ে যায়।’

  • জেএসডি’র কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোসেন আর নেই

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, টি এন্ড টি কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক নেতা মোহাম্মদ হোসেন (৬৮) আর নেই। গত রাত ৩ টায় মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি…………….রাজিউন)। তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ কিডনী জনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। আজ সকাল ৮ টায় মগবাজার টিএন্ডটি কলোনী জামে মসজিদে মরহুমের ১ম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ বাদ আছর লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলাধীন চর সেকান্তর গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে ২য় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ অসংখ্য রাজনৈতিক সহচর, আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি জনাব আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ছানোয়ার হোসেন তালুকদার এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ হোসেন এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মোহাম্মদ হোসেন এর মৃত্যুতে রামগতির মানুষ একজন সাহসী, নির্মোহ রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবককে হারালো। নেতৃবৃন্দ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

  • তালায় জাতীয় ছাত্র সমাজের মতবিনিময় সভা

    তালায় জাতীয় ছাত্র সমাজের মতবিনিময় সভা


    বিশেষ প্রেিতবেদক,তালা:আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি,সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরল ইসলাম কে বিজয়ী করতে জেয়ালা নলতা ওয়ার্ড জাতীয় ছাত্র সমাজের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
    মঙ্গলবার জেয়ালা নলতা ওয়ার্ডের সভাপতি মোঃ রনি ইসলাম এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি,তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম।
    বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মোঃ আব্দুল হাকিম নিকারী,জাতীয় ছাত্র সমাজের তালা ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মোঃ জাহিদুল ইসলাম নিকারী, জাতীয় ছাত্র সমাজ নেতা মোঃ মুন্না নিকারী। সভায় জাতীয় পার্টি তালা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম কে বিজয়ী করতে সকলে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

  • তালায় জাতীয় ছাত্র সমাজের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

    তালায় জাতীয় ছাত্র সমাজের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

    বিশেষ প্রতিবেদক, তালা:আগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি,সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরল ইসলাম কে বিজয়ী করতে মুড়াকলিয়া উত্তর পাড়া জাতীয় ছাত্র সমাজের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
    গতকাল মতবিনিময় সভায় সদর ইউনিয়নের মুড়াকলিয়া উত্তরপাড়া জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন তালা উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম, নজরুল ইসলাম।
    বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মোঃ ইকবল হোসেন, মোঃ হারুন সরদার, মুড়াকলিয়া উত্তরপাড়া জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারন সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সহ- সভাপতি মোঃ আব্দুল গফুর, সহ- সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাজমুল ইসলাম, যুগ্ম- সম্পাদক সম্পাদক মোঃ জাহিদ হোসেন, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মুন্না গাজী, প্রচারসম্পাদক মোঃ মুশফিকুর রহমান, সদস্য মোঃ আরিফ বিল্লাহ,সরদার আরিফ প্রমুখ। সভায় আগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম কে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

  • সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা পন্ড

    সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা পন্ড

    ব্যানার ছিড়ে হট্টগোল; সম্পাদক শাহাজান লাঞ্ছিত

    জহুরুল কবীর : দ্বিধাবিভক্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের আহবানকৃত রোববারে বর্ধিত সভা পন্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
    প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আজ সকাল সাড়ে দশটায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী কর্তৃক আহবানকৃত বর্ধিত সভায় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের কযেক’শ অনুসারী ঢুকে পড়ে শুরুতেই। এ সময় সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী সভা শুরু করার চেষ্টা করলে কয়েকশ নেতাকর্মীর তোপের মুখে পড়েন। প্রতিবাদকারীরা মঞ্চের ব্যানার ছিড়ে ফেলে চেয়ার ভাংচুর করে। তারা জানতে চায় ব্যানারে কেন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম নেই। অবৈধ পন্থায় কেন শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানো হয়েছ? এসব প্রশ্ন করেই হট্টগোল শুরু করে মোঃ শহিদুল ইসলামের অনুসারীরা। এক পর্যায়ে তোপের মুখে সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী আহবানকৃত সভা স্থগিত ঘোষণা করেন।
    উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩নং সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ জানান, জনরোষের মুখে সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী বর্ধিত সভা স্থগিত করেছেন। এ ব্যাপরে ২ নং সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ জানান, ব্যানার ছিড়ে চেয়ার ভাংচুর করে সন্ত্রাসী স্টাইলে বর্ধিত সভা পন্ড করা হয়েছে। তারা সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলীকে ধাক্কাও দেয়, বিষয়টি দুঃখজনক।
    উল্লেখ্য, বিগত সম্মেলনে প্রয়াত আবুল খায়েরকে সভাপতি এবং মোঃ শহিদুল ইসলামকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ১৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্র থেকে আসা নেতারা।
    এ ঘটনার পর সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। কিন্তু গঠনতন্ত্রের আলোকে জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ সভায় পদত্যাগ পত্র উপস্থাপন ও সিদ্ধান্ত না নিয়ে তা পাঠানো হয় প্রয়াত সভাপতি আবুল খায়েরের কাছে। তিনি মোঃ শহিদুল ইসলামকে ৩নং সদস্য এবং শেখ আব্দুর রশিদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেন। এতেই ঘটে বিপত্তি। পরে শহিদুল ইসলাম কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চান।

  • কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশনা উপেক্ষিত; সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ দু’ভাগ হলো

    কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশনা উপেক্ষিত; সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ দু’ভাগ হলো




    সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও ২ নং সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ।

    জহুরুল কবীর: সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক গ্রুপের আহবানকৃত আজকের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি আবুল খায়েরের মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোননয়কে ঘিরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি শুরু হয়।
    তথ্যানুসন্ধানের জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক প্রক্রিয়া না মেনেই শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করে পত্র দিলেই বিপত্তি দেখা দেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দু’গ্রুপই জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পাল্টা-পাল্টি সভা ডাকে। পরে ২নং সহ-সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদের আহবানকৃত সভাটি হয় লেকভিউ মিলনায়তনে। সেখানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম। অপরদিকে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের আহবানকৃত সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা সদর ২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী।
    জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়নকে ঘিরে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মোঃ শহিদুল ইসলাম। শেখ আব্দুর রশিদ ইতোপূর্বে জানিয়েছেন বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের ব্যাপার। তারা নতুন করে মোঃ শহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানালে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ইতোপূর্বে সাতনদীকে বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি না থাকায় শহিদুল ইসলামের পদত্যাগ পত্রটি প্রয়াত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়েরের নিকট প্রেরণ করা হয়। প্রক্রিয়াগত ত্রুটির বিষয়টি পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সমাধানের পথ খোলা আছে।
    এদিকে দু’গ্রুপই তাদের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে মাঠে নেমেছে। শেখ আব্দুর রশিদ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী কর্তৃক সম্প্রতি বর্ধিত সভার পত্র প্রস্তুত করে। এ খবর জানতে পেরে তাৎক্ষনিক ভাবে গত সেপ্টেম্বরে সাতক্ষীরা বাসটার্মিনালের মালিক সমিতির সভাকক্ষে মোঃ শহিদুল ইমলামের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২৭জন সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ বক্তব্য দেন। আলোচনা শেষে তারা সিদ্ধান্ত নেন শেখ আব্দুর রশিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারা মানেন না। এবং তার সভাপতিত্বে বর্ধিত সভা আহবান করা হলে যেকোন মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে।
    সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বি এম মোজাম্মেল হক চলমান জটিল পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদকে ফোন দিয়ে আজকের আহবানকৃত বর্ধিত সভাটি বাতিল করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আজ শাহজাহান আলী কর্তৃক আহবানকৃত বর্ধিত সভা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হতে যাচ্ছে। অপরদিকে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের গ্রুপ গভীর রাত পর্যন্ত শহরের এক শীর্ষ নেতার বাসায় দীর্ঘ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহজাহান আলী’র আহবানকৃত বর্ধিত সভার কোন বৈধতা নেই। ফলে এ ধরনের সভা হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
    এদিকে, শাহজাহান আলী’র আহবানকৃত বর্ধিত সভায় বিতরণকৃত কার্ডে অতিথি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলামকে। পাশাপাশি ব্যানারে সাতক্ষীরা সদর ২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে অতিথি করা হয়েছে। সর্বশেষ একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে জেলার শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে আহবানকৃত সভাটি হতে যাচ্ছে। তবে সভায় দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থােনে।