সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি আকবর আলী অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে এলাকায় গিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তিনি বাড়িতে যায়। শুক্রবার (৩১ মার্চ) সারাদিন যুদ্ধকালীন অপরাধ সংঘটিত এলাকা নলতা হাটখোলায় জামায়াত নেতা আব্দুল্লার মালকানাধীন শাহী বস্ত্রলয়ের সামনে গিয়ে জামায়াত নেতাদের নিয়ে একত্রিত হয়ে মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেন।
এ ঘটনায় মামলার বাদী, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলায় রাজাকার আকবর আলীসহ একই অভিযোগে জড়িত থাকা আরো তিন আসামীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে তদন্ত শুরু হয় এবং ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মোট ২টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ-১ এ বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সময় ৪টার সময় রহমতুল্লা মোড়ল, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা মোড়লকে সঙ্গে করে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন নলতা হাটে বাজার করতে যান।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধা আনছারুল মাহমুদ নলতা হাটে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের একটি বাসে পাকিস্তানি সেনা থাকার সন্দেহে গ্রেনেড ছুড়ে। কিন্তু তাতে কেউ হতাহত হয়নি। গ্রেনেড ছুড়ার প্রতিশোধ নিতে বিকেল ৫টার দিকে আসামিরা পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে ইন্দ্রনগর মাদ্রাসায় একত্র হয়ে নলতা হাটে আক্রমণ করে। এ সময় রাজাকাররা স্বরাব্দীপুর গ্রামের মাদার আলী গাজীকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রাজাকারদের গুলিতে ইন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুল রহমান ওরফে মেদু মোড়ল ও রহমতুল্লাহ মোড়ল গুরুতর আহত হন। ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় নিজ বাড়িতে রহমতুল্লাহ মোড়লের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ- ২ এ বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৬ মে আনুমানিক ১২টার সময় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার ইন্দ্রনগর মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্প হতে আসামিরাসহ পাকিস্তানি সেনারা দেবহাটার হাদিপুর গ্রামের ঘোষবাড়িতে হামলা করে
সেখান থেকে নরেন্দ্রনাথ ঘোষকে আটক করে বাড়ির পেছনে নিয়ে গুলি হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা শরৎচন্দ্র ঘোষ, গোপিনাথ ঘোষ, হেমনাথ ঘোষ এবং ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসকে আটক করে বাড়ির দক্ষিণ দিকে ডোবায় নিয়ে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে রাখে। সেখানে নরেন্দ্রনাথ ঘোষের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাধা দিতে গেলে আসামিরা তাকে আটক করে নির্যাতন করে। ঘোষ বাড়ির মালামাল লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। মামলার তদন্ত করেন শাহজাহান কবীর। এ মামলায় ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে, ৭১ এ পিতাকে হত্যার দায়ে সাতক্ষীরা আদালতে ২০০৯ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার গোলাম মোস্তফার দায়েরকৃত মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর আকবর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও অন্য তিন আসামীর মধ্যে একই উপজেলার পূর্ব নলতা গ্রামের রাজাকার আব্দুল হামিদ খান ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ গ্রেফতার হয়।
২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আকবর আলীসহ ৩ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। গত বছরের ২৪ মার্চ আকবর আলী আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করিয়ে নেয়। শর্ত মতে ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ আকবর আলী দেদারছে সাতক্ষীরা, খুলনাসহ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান এলাকায়ও।
মামলার স্বাক্ষী আবুল হোসেন পাড় জানান, রাজাকার আকবর আলী আমার প্রতিবেশী। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাড়িতে এসেছেন। জামিনের সত্ত্ব অনুযায়ী তিনি বাড়িতে আসতে পারবেন না। তবে তিনি আদালতের আদেশ সামান্য করে বাড়িতে এসে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ সকালে থেকে তিনি নলতা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিকাল থেকে জামাতের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বাড়িতে মিটিং করছেন।
কালিগঞ্জ থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, রাজাকার আকবর আলী সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। সে বাড়িতে এসে মামলার সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। আগামীকাল সাক্ষীরা জিডি করবে। তারপরেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাজাহান কবীর বলেন, বিভিন্ন মারফত জানতে পেরেছি তিনি এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। তিনি এমন কর্মকান্ড করলে মামলার বিচারের ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া আদালতের সত্য ভঙ্গ করায় আদালতের ভিত্তি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
Category: যুদ্ধাপরাধ
-

সাতক্ষীরায় জামিনের শর্ত ভেঙে মহড়া দিচ্ছেন রাজাকার আকবর আলী
-

সাতক্ষীরায় যুদ্ধাপরাধ : জামায়াত নেতা খালেক মন্ডল ও রোকনের রায় আজ
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ দুই জনের রায় আজ ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার ২৪ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত ২২ মার্চ রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম।
গত বছরের ১১ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ দুই জনের মামলার শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।
২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। মামলায় তখন চার জন আসামি ছিলেন। এর মধ্যে খালেক মণ্ডল কারাবন্দি। বাকি দুই জন মারা গেছেন। খান রোকনুজ্জামান এখনও পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। যার মধ্যে ছয় জনকে হত্যা, দুই জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদরাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় ট্রাইব্যুনাল।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচ জনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী। এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়।
-
সাতক্ষীরায় যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরায় যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের নিজস্ব বাড়ি থেকে তাদের সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের সদস্যরা গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আবুল হাসেম (৭২) বুধহাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং চাপড়া গ্রামের মুজিবুর রহমান দনু (৭৫)।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পাইথালী গুড়গুড়ি তার নিজস্ব মৎস্য ঘের থেকে আবুল হাসেম কে এবং মুজিবুর রহমান দনুকে চাপড়া নিজ বাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, অপহরণ এবং নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রয়েছে। যে কারনে রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাদের কে গ্রেফতার করে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, অপহরণ এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাড. চমন আরা।
প্রায় এক মাস আগে ঢাকা থেকে পিবিআই একটা টিম তাদের বিষয়ে তদন্তে করেন বলে জানা গেছে। -

গোলাম আযম, মুজাহিদ ও মীর কাশেমসহ ৩ মানবতাবিরোধী অপরাধীর মামলার নথি জাতীয় আর্কাইভসে

অনলাইন ডেস্ক ॥ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের মামলার যাবতীয় নথিপত্র জাতীয় আর্কাইভসে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস উপলক্ষে বুধবার (৯ জুন) একটি ওয়েবিনারে এসব নথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নথি হস্তান্তর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম. সানাউল হক।
তিন মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম। সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী।
তদন্ত সংস্থা জানায়, ২০১৮ সালে ন্যাশনাল আর্কাইভস দিবসে মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল কাদের মোল্লা, চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের নিষ্পত্তি হওয়া চারটি মামলার নথিপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
তদন্ত সংস্থায় পরবর্তী মামলার বিচারিক কার্যক্রম চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পর নথিপত্র ন্যাশনাল আর্কাইভস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা অব্যাহত রয়েছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফিনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনার প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আলোচনায় অংশ নেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম. সানাউল হক।
-
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ‘বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক রশীদ হায়দারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ’
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ প্রখ্যাত লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক রশীদ হায়দারের (৮০) মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।’ আজ (১৪ অক্টোবর) সংগঠনের এক শোক বিবৃতিতে বলা হয়-মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ফুলার রোডে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক রশীদ হায়দারের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাওন্তী হায়দারের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।রশীদ হায়দার (১৫ জুলাই ১৯৪১-১৩ অক্টোবর ২০২০) একজন লেখক, ঔপন্যাসিক এবং গবেষক যিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ ১৩ খণ্ডে ‘স্মৃতি : ১৯৭১’। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে স্মৃতিকথা লিখিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর লেখালেখি এবং গবেষণা তরুণ প্রজন্মকে যুগ যুগ ধরে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে।‘বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবার পাশাপাশি আমরা তাঁর পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্য এবং সহযোগী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।’স্বাক্ষরদাতা-বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডাঃ আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, এডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাঃ ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, এডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, ডাঃ মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, এডভোকেট দীপক ঘোষ, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বীর খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, কবি দিব্যেন্দু দ্বীপ, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, এডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল প্রমুখ।
-
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে জাতিসংঘ ব্যর্থ হলে তাদের তৃতীয় দেশে স্থানান্তর করুক : নির্মূল কমিটি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আজ (২০ সেপ্টেম্বর) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ‘রোহিঙ্গা এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের দুর্দশা ঃ বিপণ্ন মানবতা’ শীর্ষক এক অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, মায়ানমার, তুরস্ক, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, জর্দান, আফগানিস্তান, রুয়াণ্ডা, ঘানা, চীন ও যুক্তরাজ্যের ১৬ জন মানবাধিকার নেতা, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী এবং ভুক্তভোগী শরণার্থী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জুম-এ আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন ‘বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন’-এর সদস্য সচিব বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক, কমিশনের অন্যতম সদস্য বৃটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস ও ব্যারিস্টার ডঃ তুরিন আফরোজ, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, তুরস্কের ‘টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম’-এর সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি এবং অতিথি বক্তা রুয়াণ্ডার গণহত্যার ভুক্তভোগী এমেরি মুগবা, আফগানিস্তানের ছাত্রনেতা সৈয়দ মসিহ উল্লাহ হাশিমি, তুরস্কের মানবাধিকার কর্মী সেরহান গোরেন, প্যালেন্টাইনের ছাত্রী লীনা এইসা, সিরিয়ার মানবাধিকার কর্মী রুলা নজর, ঘানার লেখক সাংবাদিক রাজাক মরিয়ম, প্যালেস্টাইনের ছাত্রনেতা রামি খলিলি, উইঘুর ছাত্রী সাবো কোসিমোভা ও তুরস্কের সঙ্গীত ও মঞ্চশিল্পী বিরডাল আরসালান।
সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে শাহরিয়ার কবির রোহিঙ্গা সহ বিশ্বব্যাপী শরণাথীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন জাতিসংঘ ও উন্নত দেশগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিরসনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দেশে ও বিদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক এক ডজনেরও বেশি সম্মেলন ও সেমিনারে বলেছি মায়ানমার যদি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না করে জাতিসংঘ তাদের তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করুক, যেভাবে অতীতে প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান ও ভূটানী শরণার্থীদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে জাতিসংঘে চীনের উপর্যুপরি বিরোধিতার কারণে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি স¤পূর্ণভাবে মায়ানমারের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী সেনাবাহিনী ও সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে। আমরা চাই রোহিঙ্গা সহ সকল শরণার্থীর দ্রুত নিজ বাসভূমে প্রত্যাবর্তন অথবা উন্নত বিশ্বে স্থানান্তকরণ। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ লক্ষ শরণার্থীর ভেতর শতকরা ৮৫ ভাগ আশ্রয় পেয়েছে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যাণ্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে শরণার্থী গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে চীনের অস্ত্র ও রাজনৈতিক মদদ না পেলে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী বাংলাদেশে কখনও নজিরবিহীন গণহত্যা করতে পারত না, এক কোটি নির্যাতিত মানুষকেও শরণার্থী হিসেবে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হত না। একইভাবে চীনের মদদেই মায়ানমারের সামরিক বাহিনী সেদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে, যার ফলে প্রায় ২০ লক্ষ রোহিঙ্গা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে, যাদের ভেতর ৭০ ভাগ অবস্থান করছে বাংলাদেশে।
বৃটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, ১৯৭১ সালে আমি অক্সফামের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশী শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছি। বর্তমানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করছি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য। ’৭১-এর বাংলাদেশী শরণার্থী এবং এখনকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতর পার্থক্য হচ্ছে ’৭১-এ সবাই দেশে ফেরার জন্য উন্মুখ ছিল। এখন নাগরিকত্বহারা রোহিঙ্গারা নির্যাতনের ভয়ে দেশে ফিরতে চাইছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মায়ানমারকে যদি বাধ্য করতে না পারে তাহলে জাতিসংঘকে এগিয়ে আসতে হবে রোহিঙ্গাদের উন্নত দেশে পুনর্বাসনের জন্য।
ব্যারিস্টার ডঃ তুরিন আফরোজ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে একটি বিশাল অগ্নিপরীক্ষা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা আসলেই ভিন্ন। আইসিসির প্রসিকিউটরদের চলমান তদন্তের ফলশ্রুতিতে আইসিসিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি একরকম অনিশ্চিত, কারণ মিয়ানমার এখনও রোম স্ট্যাটুটের অধীনস্ত সদস্য রাষ্ট্র নয়। একইভাবে, আইসিজেতে বিখ্যাত গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার মামলার শুনানী স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এবং তারপরও মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বিষয়টিকে সে মামলাতে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। সুতরাং, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনীতি নির্ভর হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের বাস্তবতায় সে সম্ভাবনার প্রত্যাশা বেশ ক্ষীণই বলা চলে।
সভায় বিভিন্ন দেশের শরণার্থী বক্তারা তাদের দীর্ঘদিনের দুর্দশার কথা তুলে ধরে তুরস্ক ও বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য। বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও শরণার্থীরা নির্মূল কমিটির অনলাইন বহুভার্ষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এ নিয়মিত লেকার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন। -

শোক : একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।’ আজ (৮ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের এক শোক বিবৃতিতে বলা হয়-
‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি, প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত্
’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের এক অকুতোভয় যোদ্ধা ছাড়াও জিয়াউদ্দিন তারিক আলী ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদ ও সাম্প্রাদয়িকতাবিরোধী নাগিরক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এই অসাম্প্রদায়িক নেতা মানবতার সেবায় তাঁর দেহদান করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও করোনা সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করায় তাঁকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবার পাশাপাশি আমরা তাঁর পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্য এবং সহযোগী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।’
স্বাক্ষরদাতা-
বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডাঃ আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, এডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাঃ ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, এডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, ডাঃ মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, এডভোকেট দীপক ঘোষ, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বীর খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, কবি দিব্যেন্দু দ্বীপ, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, এডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল প্রমুখ। -
২১ আগস্ট: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ (২১ আগস্ট ২০২০) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল ’১৫ ও ২১ আগস্টের ঘাতকদের অভিন্ন রাজনীতি ও উদ্দেশ্য: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়।’
সম্মেলনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, ব্যারিস্টার ডঃ তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লেখক মারুফ রসুল, কেন্দ্রীয় নেতা লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান (সুইডেন), সমাজকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া (যুক্তরাষ্ট্র), প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায় (ফ্রান্স), অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল (সুইজারল্যাণ্ড), সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), ডঃ একরাম চৌধুরী (অস্ট্রেলিয়া), ডঃ মুজিবুর দপ্তরি (ফিনল্যান্ড), নির্মূল কমিটির তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দেবনাথ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির ভাষণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে যে রাজনীতি ইসলামের নামে স্মরণকালের নৃশংসতম গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর সরকার সাংবিধানিকভাবে যে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন, সেই মওদুদিবাদী, ওহাবিবাদী রাজনীতির ধারকরাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের হত্যা করে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মের নামে যাবতীয় সন্ত্রাস, হত্যা ও নির্যাতন নির্মূল করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার জন্য পাকিস্তানপ্রেমী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ’৭২-এর সংবিধান চেতনাগতভাবে পুনঃপ্রবর্তন করা না হলে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও ভিন্ন জীবনাধারার অনুসারীদের হত্যা ও সন্ত্রাস কখনও বন্ধ করা যাবে না।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া যেমন ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক একইভাবে তার সহধর্মিনী খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের গ্রেণেড বোমা হামলার নেপথ্য নায়িকা। বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের এই দুই প্রধান খলনায়ক ও খলনায়িকাকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নইলে বাংলাদেশে ধর্মের নামে হত্যা যেমন অব্যাহত থাকবে একইভাবে আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’
জেনারেল আবদুর রশীদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সাফল্য প্রদর্শন করলেও এই সন্ত্রাসের দর্শন ও রাজনীতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে তেমন কোনও উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে সরকার ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সভায় অন্যান্য বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অবিলম্বে বাংলাদেশের মূল সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িকতার যাবতীয় কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্য আইন প্রণেতা এবং সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানান। -
মহামারীর মধ্যে এবি পার্টি কেন: উদ্বেগ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির
দেশ যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের একাংশ নতুন দলের আত্মপ্রকাশ করে মানুষকে ‘প্রতারিত করছে’ বলে মনে করছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
তাদের এ ধরনের তৎপরতার ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে নির্মূল কমিটি।
রোববার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসবিরোধী যুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর একাংশের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতারা।”
নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশে ও বিদেশের ৪৫টি শাখার নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নেন।
সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে দুই পর্বে স্কাইপেতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব।
দ্বিতীয় পর্বের প্রধান বক্তা ছিলেন চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় নির্মূল কমিটির চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি’।
সম্মেলনে নির্মূল কমিটির কেন্দ্র ও জেলা/উপজেলা পর্যায়ের নেতা ছাড়াও বহির্বিশ্বের শাখাগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও ভারতীয় শাখার নেতারা অংশ নেন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ‘সংস্কারপন্থিরা’ ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি) নামের নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেন। তারা বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার’ বাস্তবায়ন করতে চান।
-

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন আজ
একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। শুধু তাই নয়, তিনি একজন গুণী কথাসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ। তার বিখ্যাত গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। একাত্তরে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন। আজ ৩ মে অনন্য এই মহীয়সীর জন্মদিন। ১৯২৯ সালের এই দিনে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তাঁর জন্ম। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবার বলতে যা বোঝায়, সে রকম একটি পরিবারেই তিনি জন্মে ছিলেন। জাহানারা ইমামের ডাক নাম ছিল জুড়ু। তাঁর বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আর মা সৈয়দা হামিদা বেগম ছিলেন সুগৃহিনী। ১৯৪২ সালে জাহানারা ইমাম মাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএ পাস করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬০ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে বাংলায় এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মময় জীবনের প্রথম সময় কাটে ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২-১৯৬৬)এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬-১৯৬৮) হিসাবে তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শফি ইমাম রুমী শহীদ হন। এছাড়া যুদ্ধের সময় তাঁর স্বামী, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমামও ইন্তেকাল করেন। আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হতো। ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এ সময় খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে ২ এপ্রিল ১৯৯৪ সালে চিকিৎসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ডেট্টয়েট হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন জাহানারা ইমাম। ১৯৯৪ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠা
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়।
সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ গণ-আদালত-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
গণআদালতের রায় প্রতিষ্ঠা
জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এই গণআদালতের সদস্য ছিলেনঃ এডভোকেট গাজিউল হক, ডঃ আহমদ শরীফ, মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।
গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অ-জামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১২ এপ্রিল ১৯৯২ সালে গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবিসংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সাংসদ গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন।
জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপি গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। সরকার ৩০ জুন ১৯৯২ সালে সংসদে ৪ দফা চুক্তি করে। ২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ বাহিনী হামলা চালায় । পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম, এবং তাকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।
২৬ মার্চ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেত্রত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন, আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লা।
২৬ মার্চ ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের ২য় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা হচ্ছেনঃ শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, শামসুর রাহমান, শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।
-

যুদ্ধাপরাধী কায়সারের মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগে বহাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার জন্য আপিলটি আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্য তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। তখন রায়ের জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করে দেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ঐ সাজা বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি।




