Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
মুক্তিযুদ্ধ Archives - Page 3 of 8 - Daily Dakshinermashal

Category: মুক্তিযুদ্ধ

  • একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্ক্তিযোদ্ধা গণমানুষের নেতা সকলের  খায়ের ভাই চলে গেলেন সকলকে কাদিয়ে

    একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্ক্তিযোদ্ধা গণমানুষের নেতা সকলের খায়ের ভাই চলে গেলেন সকলকে কাদিয়ে

    সাতক্ষীরাবাসিকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি, একাত্তরের রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ফিংড়ি ইউনিয়নের পাঁচ বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, একাত্তরের ঘাত দালাল নিমূল কমিটির সাবেক জেলা আহ্বয়ক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, ভূমিহীন আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, দক্ষ সংগঠক, গণমানুষের নেতা মো. আবুল খায়ের সরদার (৭৭)। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাত ৯:১৫ মিনিটে নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না এলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার জোহর নামাজের পর মরহুমের জানাজা নামাজ গাভা আইডিয়াল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের গাভা গ্রামের রজব আলী সরদার ও আছিয়া বেগমের জ্যৈষ্ঠ পুত্র ছিলেন আবুল খায়ের সরদার। তিনি ফিংড়ি ইউনিয়নের পাঁচ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৭০ দশকের শেষের দিকে ফিংড়ি ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল বারি সরদারের মৃত্যুর পর তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর একাধারে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ১৯৯৬ সালে আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরআগে তিনি ১৯৮৬ সালে তৎকালীন আশাশুনি সংসদীয় আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন।
    আবুল খায়ের সরদার ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি নির্যাতীত নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আজীবন নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। অন্যায়ের কাছে আপোষ করেননি কখনো। ভূমিহীন আন্দোলনের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন আবুল খায়ের সরদার। একজন দক্ষ ন্যায় বিচারক ও সদালাপি মানুষ হিসেবে গোটা এলাকায় তার সুনাম সবার মুখে। তিনি ছিলেন গাভা আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া গাভা দাখিল মাদ্রাসা, গাভা হাইস্কুল, জিফুলবাড়ি দরগাহ শরীফ আলিম মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যংদহা গণগ্রন্থাগার, বিভিন্ন ক্লাবসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে ছিল তার নাড়ির সম্পর্ক। ফিংড়িসহ সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি ছিলেন একজন উন্নয়নকামী মানুষ। গরীব, দুস্থ, অসহায় মানুষের সুখ দু:খের সাথী হিসেবে তিনি আমরণ কাজ করে গেছেন। গত বছর তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এরআগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে তিনি অবিরাম কাজ করেছেন। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটা জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
    এদিকে আবুল খায়ের সরদারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক আবু রায়হান তিতু, সদস্য সচিব লায়লা পারভীন সেঁজুতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, ফিংড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সামছুর রহমান, সুজন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক শেখ হেদায়েতুল ইসলাম ও মো. আবু ছালেকসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ।

  • শ্যামনগরে দুই মুক্তিযোদ্ধার মাসিক সম্মানি ভাতা স্থগিত


    বিশেষ প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলায় তালিকা ভুক্ত দুই মুক্তিযোদ্ধার মাসিক সম্মানি ভাতা সাময়িক ভাবে স্থগিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়। গত ১৫ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে বাজেট অধিশাখা হতে ৪৮/০০/০০০০/০০৬/৯৯/০০৫/১৮/১৭ নং স্মারকে ওই দুই মুক্তিযোদ্ধার মাসিক সম্মানি ভাতা স্থগিত করা হয়। তাহারা হলেন-মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৭০৩৯, বাতিলকৃত সিরিয়াল নং-৩৩৯) এবং মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী (মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৬৫৩৪, বাতিলকৃত সিরিয়াল নং-৩৪৮) এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী বলেন, লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সনদপত্র না থাকার কারনে তাদের মাসিক সম্মানি ভাতা সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে ।

  • বগুড়ায় প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা সাইদুজ্জামানের করোনায় মৃত্যু

    বগুড়ায় প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা সাইদুজ্জামানের করোনায় মৃত্যু

    বগুড়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক সাইদুজ্জামান তারা (৭০) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

    গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গতকাল বিকেলেই তাঁর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে।

    বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক হাতিয়ার’-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন সাইদুজ্জামান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

    বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. খায়রুল বাশার মোমিন তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। কদিন আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ২৪ জুন তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এরপর ২৫ জুন রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়ার সময় তিনি মারা যান।

    বগুড়া থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘দৈনিক বাংলাদেশ’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন এই প্রবীণ সাংবাদিক। পরবর্তীতে একাধিক দৈনিকে কাজ করেছেন। 

    তাঁর মৃত্যুতে বগুড়া প্রেসক্লাব ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে বগুড়ার সাংবাদিক মহলে।

  • বাজেটের উপর আলোচনায় হাসানুল হক ইনু: করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না, দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না

    বাজেটের উপর আলোচনায় হাসানুল হক ইনু: করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না, দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক  ইনু এমপি আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় বলেছেন, করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না, দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না। ক্যাসিনো বন্ধে যেভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছিল ঠিক তেমনভাবে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজদের উপর বুলডোজার চালাতে হবে। তিনি স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভয়ংকর দুর্নীতি দূর করার দাবি জানান। তিনি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-সংক্রমণরোগ বিশেষজ্ঞ-ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে লাল-হলুদ-সবুজ জোন ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা এবং প্রধানমমন্ত্রীকে নিয়মিত রিপোর্টের ব্যবস্থার দাবি জানান। জনাব ইনু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লক্ষ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা আর করোনা মোকাবেলায় বাজেটে ১০হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব, এডিবির প্রকল্প বাদ রেখে হিসাব করলে বাজেট দেখে মনে হয় দেশে ও দুনিয়ায় করোনা বলে কিছু নাই। তিনি বলেন, বাজেটে বরাদ্দ খাতের অগ্রাধিকার সঠিকভাবে নির্ণয় করা হলেও গতবারের তুলনায় বৃদ্ধির পরিমাণ ও হার খুবই গতানুগতিক, ছঁকেবাধা নিয়ম মাফিক বৃদ্ধি। তিনি সর্বজনীন জনস্বাস্থসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ছঁকের বাইরে গিয়ে বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে  বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি বলেন, করোনার অভিঘাতে নতুন করে যারা কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরবে, যে প্রবাসীরা দেশে ফিরবে, শ্রম বাজারে নতুন করে যে ২৬ লাখ যুবক প্রবেশ করবে তাদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, কৃষি-মৎস্য-পোল্ট্রি-প্রাণী সম্পদ খাত সংকটে অর্থনীতিকে যে শক্তি দেয় সেই কৃষি ও কৃষির উপখাত, কৃষক ও খামারীদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। তিনি শিক্ষা ও গবেষনা খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। জনাব ইনু বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে আয় ও অর্থসংস্থান নিয়ে এখন চিন্তা করার সময় না। ঋণ করতে যখন হচ্ছেই তখন একটু বেশি ঋণ করলে ক্ষতি নাই। ঋণ করে আমরা ঘি খাচ্ছি না। বিদেশে, সেকেন্ড হোমে, বেগমপল্লীতে পাচারও করছি না। তিনি বলেন, তারেক-কোকোর বিদেশে পাচার করা টাকা সরকার ফেরত আনতে পারলে বেগমপ্ললী, সেকেন্ডহোমওয়ালাদের পাচার করা টাকাও ফেরত এনে বাজেটে ব্যয় করতে পারবে। তিনি আয়করের জাল বৃদ্ধি, সবাইকে আয়কর প্রদানে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ট্যাক্সদাতাদের পিছনে ধাওয়া না করে ১ কোটি টাকা ব্যক্তিগত আয়কর দিতে পারে কিন্ত আয়কর দেয় না এমন কয়েক লাখ ট্যাক্স ফাঁকি দাতা ধরার জন্য শক্ত জাল পাতার আহবান জানান। তিনি বলেন,  স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষনা খাতে ব্যয়কে ব্যয় হিসাবে হিসাব না করে বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়লে এসব খাত মূলধন ফেরত দেয়াসহ বহুগুণ লাভ জাতিকে ফিরিয়ে দিবে। জনাব ইনু বলেন, করোনা ধনী গরীব সবাইকে সমান করে দিয়েছে। করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সমাজতন্ত্রের পথে হাটতে হবে। সমাজতন্ত্রের আলোকে সর্বজনীন জনস্বাস্থ্যসেবা, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জনাব ইনু বক্তৃতার শুরুতে করোনা আত্মোৎসর্গকারী প্রথম সারির যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, সংবাদ গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং করোনা আক্রান্ত সকলের সুস্থতা কামনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও  আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের  শুভেচ্ছা জানান।

  • কামাল লোহানী আর নেই

    কামাল লোহানী আর নেই

    করোনায় আক্রান্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী আর নেই। আজ শনিবার সকাল ১০টার পরে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কামাল লোহানীর ছেলে সাগর লোহানী এ কথা জানান।
    কামাল লোহানীর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে গতকাল শুক্রবার জানান তাঁর মেয়ে ঊর্মি লোহানী। কামাল লোহানী ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যাতেও ভুগছিলেন।

    কামাল লোহানীকে উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছেন সুলতানা কামাল (বামে)


    শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কামাল লোহানী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
    কামাল লোহানীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    ঊর্মি লোহানী গতকাল জানান, কামাল লোহানীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ১৭ জুন সকালে তাঁকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল কোভিড টেস্টের ফলাফল হাতে পান তাঁরা। রিপোর্টে কামাল লোহানীর কোভিড-১৯ পজিটিভ বলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রথমে কামাল লোহানীকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেখানে কোনো সিট পাওয়া যায়নি।


    ঊর্মি লোহানী জানান, কামাল লোহানী অনেক দিন ধরেই ফুসফুস ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। শুরুতে লকডাউনে চিকিৎসা করাতেও বেশ সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার সমস্যা ছিল। টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করানো হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থা বেশ গুরুতর হয়ে পড়লে গত ১৮ মে তাঁকে রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে ২ জুন তাঁকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল। পরে আবার ভর্তি করাতে হয়েছে।


    কর্মজীবনে কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু করেন। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
    উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা কামাল লোহানী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুবার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে এবং ছায়ানটের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

  • নাসিমকে শ্রদ্ধা জানাতে বনানীতে করোনামুক্ত জাফরুল্লাহ

    নাসিমকে শ্রদ্ধা জানাতে বনানীতে করোনামুক্ত জাফরুল্লাহ

    আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত নাসিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবরস্থানে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি।

    জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু স্বাক্ষরিত।গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

    আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থান জামে মসজিদে জানাজা শেষে সেখানেই নাসিমকে দাফন করা হয়।

    শ্রদ্ধা জানানোর সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে অধ্যাপক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

    মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চলে যান বলে জানান মিন্টু। তিনি বলেন, হাসপাতালে আরো ৪ থেকে ৫ দিন থাকবেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

    গতকাল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর টেস্টের রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এন্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে বাংলাদেশ জার্নালকে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার।

    মহিবুল্লাহ খন্দকার বলেন, পরীক্ষায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা নেগেটিভ পাওয়া গেছে। আর পরীক্ষায় তার দেহে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

    গত ৫ জুন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। ওই দিন থেকেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজের স্থা‌পিত প্র‌তিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতা‌লে ব্রিগেডিয়ার অধ্যাপক ডা. মামুন মুস্তাফি, অধ্যাপক ডা. নজীবের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।

    গত ২৪ মে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা শনাক্ত হয়।

  • বাংলাদেশের ইতিহাস মোহাম্মাদ নাসিম

    বাংলাদেশের ইতিহাস মোহাম্মাদ নাসিম

    ডেক্স রিপোর্ট :

    মোহাম্মদ নাসিম (২ এপ্রিল ১৯৪৮ – ১৩ জুন ২০২০) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালেও স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে ছিলেন।

    জন্ম ও শিক্ষা জীবন

    মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী[৩] এবং মাতা আমেনা মনসুর। পিতা মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[৪]

    পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

    রাজনৈতিক জীবন

    ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

    ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

    ১৯৮৬ সালে নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। ঐ নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিমকে মনোনয়ন পান এবং বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

    ব্যক্তিগত জীবন

    পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ।

    মৃত্যু

    রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। ওই দিনই কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এর চার দিন পর, চিকিৎসার সময় তার ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এরপর ৪ জুন অবস্থার উন্নতি হয়, তবে পুনরায় ৫ জুন ভোরে তিনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে আইসিইউতে রাখা হয়। তার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বোর্ড গঠিত হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস অনুপস্থিত পাওয়া যায়। ১২ জুন পরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পরে পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ ১৩ই জুন ঢাকায় বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

  • মোহাম্মদ নাসিম: রাজনীতিতে পাঁচ দশকের বেশি পথচলা

    মোহাম্মদ নাসিম: রাজনীতিতে পাঁচ দশকের বেশি পথচলা

    ন্যাশনাল ডেক্স : সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

    সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

    রাজনীতির সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম সম্পৃক্ত হন ষাটের দশকে। শুরুর দিকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ করতে শুরু করেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

    মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের দোসরা এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।Image caption জনসভায় ভাষণ দানরত মো. নাসিম।

    উনিশশো পঁচাত্তর সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের হত্যাকাণ্ড ও জেলখানায় আরো তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর পিতা এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন।

    পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।

    ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেকজন নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছেলে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’১৯৭৫ সালের পর তাকে বেশ একটা দুঃসময় পার করতে হয়। আমাদের সবাইকেই সেটা করতে হয়েছে। ৭৮ সালের দিক থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। নেত্রী আসার পর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে আসার পর) তিনি সবসময় নেত্রীর সঙ্গেই থেকেছেন।‘’

    ‘’একাত্তর সালে মুক্তিসংগ্রামের সময় কলকাতায় আমরা এক বাড়িতে থাকতাম। জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে আমরা তাকে আমাদের বড় ভাইয়ের মতো মনে করতাম। তিনিও সেভাবেই আমাদের খোঁজখবর রাখতেন। তাকে দেখেছি, যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশেও শক্ত মন নিয়ে দাঁড়াতে পারতেন, কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রশাসক হিসাবেও তাকে সফল দেখতে পেয়েছি।‘ছবির কপিরাইট Facebook Image caption প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মো. নাসিম।

    ‘’তিনি অনেক সময় গর্ব করেই বলতেন,আমি কোন বেঈমানের সন্তান নই, আমি বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত আদর্শের সৈনিক, তার সন্তান।‘’ বলছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

    উনিশশো একাশি সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে মোহাম্মদ নাসিম যুব সম্পাদক হন। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসেন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ১৯৮৭ তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

    তার আগের বছর, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।

    আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতির ক্ষেত্রে সারাজীবন সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ষাটের দশক থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একটা রাজনীতিক পরিবারের বেড়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে সাজা পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সম্মুখ সারিতে ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটা সংগ্রামের সাথে তিনি সামনের কাতারে ছিলেন।‘’

    আওয়ামী লীগের ‘৯২ ও ‘৯৭ সালের জাতীয় সম্মেলনে তাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।ছবির কপিরাইট Facebook

    উনিশশো ছিয়ানব্বই, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একসময় তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

    রাজনীতিতে তাদের পরিবারের ভূমিকা নিয়ে ‘সংসদে তিন প্রজন্ম’ নামের একটি বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের ভূমিকা নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। তিনি তিন সন্তানের জনক।

    তাঁর নির্বাচনী এলাকা কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’তার পিতাকে যেমন এলাকার লোক দরকারের সময় পেতো, তেমনি তাকেও আমাদের যেকোনো দরকারে সবসময় কাছে পেয়েছি। প্রতিমাসে কয়েকবার তিনি এলাকায় আসতেন। তিনি বিদেশে থাকলেও আমাদের ফোন করে এলাকার খোঁজখবর নিতেন। দলমত নির্বিশেষে এখানকার সবাই জানে, তার মতো নেতা পাওয়া যায় না।‘’

    ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

    রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি এইচএসসি পড়ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। একবছর পরে তিনি ছাড়া পান।

    ১৯৭৫ সালে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিযানে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

    সেই সময় অবৈধভাবে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালে মোহাম্মদ নাসিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত ওই সাজা ও মামলা বাতিল করে দেন।

    কিন্তু মামলায় সাজা হওয়ার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। সেই আসনে তার ছেলে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। মামলা ও সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকেন।

    ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রী না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

  • একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম: প্রধানমন্ত্রী

    একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম: প্রধানমন্ত্রী

    ন্যাশনাল ডেক্স : জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম।রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সকল ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।

    তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’

    প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

  • সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    ন্যাশনাল ডেক্স : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই। তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আজ শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। 

    গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন।মোহাম্মদ নাসিম স্ত্রী, তিন ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।

    ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ নাসিম।

  • ভারত স্বাধীনতার  বীর যোদ্ধা প্রফুল্ল চাকী র আজ প্রয়ান দিবস

    ভারত স্বাধীনতার বীর যোদ্ধা প্রফুল্ল চাকী র আজ প্রয়ান দিবস

    বাংলা মায়ের সাহসী সন্তান, ভারত বর্ষে জবরদখলকারী ও অত্যাচারী ইংরেজদের উৎখাত করে তদানিন্তন ভারত মাতার স্বাধীনতার যোদ্ধা, অগ্নীযুগের বিপ্লবী ছিলেন প্রফুল্ল চাকী।তিনি বগুড়া শহরের অনতিদুরে বিহার গ্রামে ১০-১২-১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহন করেন।বাবা ঈশান চন্দ্র চাকী বৃটিশদের অধীনে বগুড়া ও রংপুরে আদালতে চাকরী করতেন।প্রফুল্ল চাকী তার গ্রামের পাশে নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ বিদ্যালয়,বগুড়া শহরের মাইনর স্কুল এবং ১৯০২ সালে রংপুর জেলা স্কুলে পড়াবস্থায় বিপ্লবী জিতেন্দ্র নারায়ন রায়,বিপ্লবী অবিনাশ চক্রবর্তী, বিপ্লবী ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী দের সঙ্গে পরিচয় হয়ে স্বাধীনতার জন্য যুগান্তর দলে যোগ দেন।১৯০৬ সালে বিপ্লবী বারিন ঘোষের সঙ্গে কলকাতা চলে যান। পূর্ববঙ্গ এবং আসামের গভর্নর জেনারেল জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার প্রথম দায়িত্ব তার উপর অর্পন করা হয়।তারপর বিপ্লবী ক্ষূদীরামের সঙ্গী হয়ে ৩০-৪-১৯০৮ সালে অত্যাচারী ম্যাজিষ্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য মোজাফ্ফরপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে ওৎপেতে ছিলেন।ম্যাজিষ্ট্রেটের ঘোড়ার গাড়ী মনে করে অন্য গাড়ীতে বোমা মেরে উড়িয়ে দিলে দুই জন ইংরেজ মহিলা মারা যায়।ক্ষূদীরাম ও প্রফুল্ল ভিন্য পথে কলকাতায় ফেরার সময় পুলিশ কর্মকর্তা নন্দলাল ব্যানার্জী মোকামা রেলষ্টেশনে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করে। গ্রেপ্তার এড়াতে ২-৫-১৯০৮ তাং বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী নিজ মাথায় গুলি চালিয়ে আত্নউৎসর্গ করেন।অত্যাচারী ইংরেজরা তার মাথা কেটে বগুড়ায় তার পরিবারকে দেখাতে এনেছিল।বিপ্লবী রনেশ গাঙ্গুলী এবং বিপ্লবী শ্রীশচন্দ ৯-১১-১৯০৮ সালে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা নন্দলালকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে প্রফুল্ল চাকীর হত্যার বদলা নিয়েছিল।স্বাধীনতার এই বীর যোদ্ধার আজ প্রয়ান দিবসে তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরন করছি।

    (সুপ্রিয় জালাল ভাইয়ের ফেসবুক থেকে)

  • মুজিব বাহিনীর সেই দু্র্ধর্ষ কমান্ডার : শেখ জামালের জন্মদিন আজ

    মুজিব বাহিনীর সেই দু্র্ধর্ষ কমান্ডার : শেখ জামালের জন্মদিন আজ



    **************************
    রুদ্র সেজান হক : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৬৭ তম জন্মদিন আজ ২৮ এপ্রিল।

    ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন শেখ জামাল।

    শেখ জামালের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ছিল ঘটনাবহুল। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাকী সদস্যদের মতই গৃহবন্দী ছিলেন। মধ্য আগস্টের একদিন সকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব দেখতে পান ছেলে ঘরে নেই। বেগম মুজিব তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। সারাবিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গায়েব করেছে।

    গৃহবন্দি দশা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তখনকার উত্তর প্রদেশের দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর হয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তিনি সমন্বিতভাবে
    মুজিব বাহিনীর হয়ে ৫ নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। তবে কোনো এক কৌশলগত কারণে এ কথা চেপে রেখেছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকার।

    শেখ জামাল অত্যন্ত চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন, মনের কথা মনেই রাখতেন সহজে বের করতেন না। ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি অত্যন্ত পড়ুয়া প্রকৃতির ছিলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন।

    ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে পালিয়ে শেখ জামাল সরাসরি চলে গিয়েছিলেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। তারপর ট্রেনিং শেষ করবার পর তাকে মুজিব বাহিনীতে নেওয়া হয়। সেখানেই যুদ্ধের বাকি সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন জামাল। কিন্তু জামালের এই খবরটা সঙ্গত কারণেই একেবারে চেপে যায় স্বাধীন বাঙলা প্রবাসী সরকার, কারণ এই ইস্যুতে প্রবাস সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।

    ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাবমেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের।

    যুদ্ধশেষে সদ্য কমিশন পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংকোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। পরিবারের সকলকেই সুখবরটি দিতে বাড়িতে এসেছিল। ১৪ আগস্ট রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বেগম মুজিব নাকি স্নেহভরে তাকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতটুকু থেকে ভোরে যাস।’ জামালের ক্যান্টনমেন্টে আর যাওয়া হয়নি।

    পরদিন রাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার শেখ জামালসহ তার পরিবার। এভাবেই থেমে যায় এই টগবগে তরুণের আলো।

    আজকের দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানীর শেখ জামালের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও তার পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শহীদ শেখ জামালের জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দলের সব সহযোগী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

    পাদটীকা
    ********
    শেখ জামাল আগরতলা থেকে বিমানে উত্তর প্রদেশ- এর দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানেই আজকের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কামরুল আনাম খান খসরু, মোস্তফা মহসীন মন্টু, শেখ মারুফ, অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শেখ শহীদুল ইসলাম, আ ফ ম মাহবুবুল হক, খোন্দকার মোজাম্মেল হক, আহসান উল্লাহ মনি, কুদরতে এলাহি পনির, সিদ্দিক জামাল নান্টুসহ ছাত্রলীগের নেতারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের সময় মান্নান চৌধুরী এবং শেখ মারুফ ছিলেন শেখ জামালের রুমমেট।
    ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, কাজী আরেফ আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মনিরুল হক চৌধুরী, মার্শাল মনি, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত প্রমুখ ছিলেন প্রথম সারির কমান্ডার।
    তখনকার চার বিভাগের সামরিক অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমদ। মুজিব বাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ভারতীয় মেজর জেনারেল সুজন সিং ওবান।

    ( আজকের সূর্যোদয় অনলাইন হতে গৃহীত)

  • সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী’র তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা প্রদান

    সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী’র তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা প্রদান


    নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা স্বরুপ তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা প্রদান করেছেন ভোমরা ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভার অর্থ দিয়ে ক্রয় করা ১ মেঃ টন চাউল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন মুক্তিযোদ্ধার পুত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বাবলু।
    এসময় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী যেমন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তেমনি বর্তমান দূর্যোগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জননেত্রী শেখ হাসিনার আহবানে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে তার তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রদান করেছেন। আমরা আশাবাদী বর্তমান এই দূর্যোগ প্রতিরোধে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী’র মত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন সহায়তা প্রদান করে এগিয়ে আসবে অসহায় মানুষের সেবা করতে। সরকারের পাশা পাশি সমাজের বিত্তবানরা যদি মানব সেবায় স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে তাহলে অসহায় মানুষদের ঘরে ফেরানোর পাশা পাশি করোনা প্রতিরোধে আমরা খুব দ্রুত সফল হবো ইনশাল্লাহ।’
    এসময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আল ফেরদাউস আলফা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রশিদ, সাবেক ছাত্র নেতা জি এম ওয়াহিদ পারভেজ, সাবেক ছাত্র নেতা শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শিমুন শামস্ প্রমুখ।

  • যুদ্ধকালীন খুনী-ডাকাত, ধর্ষণকারী মোহাম্মদ আলী এখন মুক্তিযোদ্ধা, অত্যাচারের হাত থেকে বাাঁচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    যুদ্ধকালীন খুনী-ডাকাত, ধর্ষণকারী মোহাম্মদ আলী এখন মুক্তিযোদ্ধা, অত্যাচারের হাত থেকে বাাঁচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা সদরের শিবপুর গ্রামের যুদ্ধকালীন সময়ের ডাকাত, লুণ্ঠনকারী, খুনী এখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। শিবপুর গ্রামের মৃত. হাজের আলী বিশ্বাসের ছেলে বর্তমান নামধারী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের যুদ্ধকালীন সময়ের তা-বলীলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজও অনেক ভুক্তভোগীরা। তবে এখন সেই মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ আর হতাশা যুদ্ধকালীন সময়ের মোহাম্মদ আলীর হাতে খুন হওয়া ওমর আলী সরদারের স্ত্রী তফুরোন বিবিসহ তার হাতে ক্ষতিগ্রস্থদের। মোহাম্মদ আলীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে বুধবার বিকেল ৪টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তালার মাঝিয়াড়া বাজার এলাকার রওশন আরা বেগম।
    সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা নামধারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস আমার নাবালিকা মেয়ে মনজিলা খাতুন (১৩) কে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বেপোরোয়া মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস আমাকে ও আমার মেয়েরেক খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে তালার শিবপুর গ্রামের মৃত. এজাহার আলী সরদারের ছেলে ওমর আলী সরদারকে রাতের আধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর বাড়ির পাশে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মরদেহ টুকরো টুকরো করে দেয়। ডাকাত মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের সঙ্গে ছিল তার সহযোগীরা। স্বামীহারা তফুরোন বিবি যুদ্ধকালীন সময়ে স্বামী ওমর আলীকে হারিয়ে আজও কষ্টে বেঁচে আছেন। পাশ্ববর্তী ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত. সুধীর হোড়ের ছেলে জয় হোড়ের বাড়িতে ডাকাতি করার সময় মোহাম্মদ আলীকে জয় হোড় চিনতে পারায় জয় হোড়কে গুলি করে। এতে জয় হোড় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। জয় হোড় এখনো সেই ক্ষত নিয়ে জীবিত। মাঝিয়াড়া গ্রামের মির্জা নজরুল ইসলাম নজুর বাড়িতে ডাকাতিকালে মোহাম্মদ আলীকে চিনে ফেলায় মির্জা নজরুল ইসলামের মাতাকে কুপিয়ে জখম করে। একই গ্রামের মরহুম আব্দুল হান্নান চিশতির বাড়িতে শুপারী চুরিকালে হাতেনাতে আটক হয়। আটক হওয়ার পর এই ঘটনায় কারাগারেও যেতে হয় মোহাম্মদ আলীকে। মরহুম আব্দুল হান্নান চিশতির ছেলে উপজেলা আ.লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইদ্রিস আজও মোহাম্মদ আলীকে রাজাকার হিসেবে সম্বোধন করেন।
    ২০০৪ সালে ১৮ নভেম্বর তালার মাঝিয়াড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান যুদ্ধকালীন সময়ে মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের খুন, ডাকাতি, চুরি, লুণ্ঠনসহ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতনের বাস্তব ঘটনা তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে সিদ্দিকুর রহমান উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস তালার বারুইহাটি গ্রামের তফেল জোয়াদ্দার, আনছার আলী বিম্বাস, আজেদ আলী মোড়ল, মাঝিয়াড়া গ্রামের মৃত. ছবেদ আলী মির্জার বাড়ি তিন বার, মৃত. আব্দুর রশিদ মির্জার বাড়ি দুইবার, শেখ আশরাফ আলীর বাড়িতে দুইবার, তার ছেলে শেখ সিদ্দিকীর বাড়িতে দুইবারসহ গোপালপুর গ্রামের ৭/৮টি হিন্দু বাড়িতে একাধিকবার ডাকাতি করেন। এছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে মদ, জুয়া, নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষনের কথাও তুলে ধরে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তভূক্তির না করাসহ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
    লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, ২০০৯ সালে ১৫ অক্টোবর তালা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অমল কান্তি ঘোষ তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেন। উপজেলার ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষতির আবেদনে বলা হয় ভূয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উত্তোলন করেছেন মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস। ভূয়া তথ্যে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠিয়ে ভাতা উত্তোলন করছেন মোহাম্মদ আলী। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে তালা সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন মোহাম্মদ আলী। যার নং ৩৬/২০০৫ ইং। তবে বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন। যুদ্ধকালীন সময়ে মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস তৎকালীন বিতর্কিত বামফ্রন্ট (নকশাল) কামেল বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিল। এই আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভন্ন দপ্তরে পাঠান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অমল কান্তি ঘোষ। মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে মোস্তফা বিশ্বাস ৩ বছর আগে ফেন্সিডিলসহ সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। সম্প্রতি ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপলপুর গ্রামের কালিপদ বিশ্বাসের ছেলে বিধান বিশ্বাসের জমি দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে চাঁদা চায়। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য সঞ্চয় দের বাঁধার কারণে সম্ভব হয়নি। বাস্তব এ ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাসহ তালাবাসীর সর্বজন স্বকৃত। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় নকশাল বাহিনীর সদস্য হয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম চলে যায় এই মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের। গেজেট নং ২৩০৯। মুক্তিবার্তা নং ০৪০৪০৬০১৯৯। আমি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের মুক্তিযোদ্ধা নামধারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের যুদ্ধকালীন সময়ে ডাকাত, খুনী, ধর্ষণকারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের ঘটনাবলী তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
    সংবাদ সম্মেলনকালে রওশন আরা বেগমের নাবালিকা মেয়ে মনজিলা খাতুন, মোহাম্মদ আলীর হাতে খুন হওয়া ওমর আলীর স্ত্রী তফুরোন বিবি, নির্যাতনের স্বীকার হামিদা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

  • মুক্তিযোদ্ধা শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর  শোক, উপজেলা আওয়ামী লীগের  তিনদিনের কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে দাফন আজ। পরিবারের পাশে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি

    মুক্তিযোদ্ধা শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক, উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনদিনের কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে দাফন আজ। পরিবারের পাশে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি


    কালিগঞ্জ ব্যুরো: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিগঞ্জ ইউনিটের কমান্ডার আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারী তিনদিন ব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অংশ হিসেবে দলীয় কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়সহ সকল ইউনিয়ন কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকল ইউপি চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাল ব্যাজ ধারণ ও শোকবইতে স্বাক্ষর। এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকেও  তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে।

    উল্লেখ্য, মরহুমের বড় মেয়ে ওয়াহিদা সুলতানা শিউলী কানাডা থেকে ফেরার পর মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বলে মরহুমের পরিবার পক্ষ হতে জানানো হয়েছে। এছাড়া সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত উপজেলা সোহরাওয়ার্দী পার্কে ওয়াহেদুজ্জামানের মৃতদেহ রাখা হবে। সেখানে দলীয় নেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

    বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শেখ ওয়াহেদুজ্জামান ১৯৫১ সালে উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ৯ম সেক্টরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসেবে কালিগঞ্জের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ওই পদে আন্তরিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি কালিগঞ্জ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

    গত রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেখ ওয়াহেদুজ্জামান আকষ্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করার পর রাত ১১ টায় তার মৃতদেহ সাতক্ষীরা হিমঘরে রাখা হয়। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সুযোগ প্রদানের লক্ষে সোমবার বিকেলে মৃতদেহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশবাহী গাড়িতে করে কালিগঞ্জে আনা হয়। আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর পছন্দের স্থান হিসেবে মহৎপুর সরকারি কবরস্থানে নির্দিষ্ট স্থানে দাফনের জন্য একদিন আগেই কবর খনন সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

    মরহুর আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মেহদেী হাসান সুমন তার পিতার রূহের মাগফিরাত কামনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক,
    শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি

    কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে রবিবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
    এছাড়াও গভীর শোক জানিয়েছেন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ আংশিক-শ্যামনগর) আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার। শপথ গ্রহণ শেষে ঢাকায় অবস্থানকালে এমপি এসএম জগলুল হায়দার রবিবার সন্ধ্যায় আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে রাতেই তিনি কালিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সোমবার ভোরে তিনি কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের বাজারগ্রাম রহিমপুরে অবস্থিত শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর ‘কিছুক্ষণ’ নামক বাড়িতে যান। এসময় তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি মরহুমের বড় ছেলে কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মেহেদী হাসানকে সান্ত¡না দেন এবং সুখে-দু:খে পরিবারটির পাশে থাকার আশ^াস প্রদান করেন।
    এদিকে রবিবার রাতে আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর জানার পরপরই তার বাড়িতে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব নজরুল ইসলামসহ জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ মরহুমের বাসভবনে যেয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন। উপজেলাবাসীর রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে খ্যাত বর্ষিয়ান জননেতা আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

  • যুদ্ধাপরাধী বাকী-রোকন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে

    যুদ্ধাপরাধী বাকী-রোকন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে


    আমির হোসেন খান চেীধুরী: মহান বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকী আজ। সাতক্ষীরার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী বাকী, কসাই রোকন ও বর্বর টিক্কা তথা জহুরুল’র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অকাট্য প্রমাণ ১৯৭১ সালের ১৭ অগাস্ট দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯ অগাস্ট সাতক্ষীরা শহরের ডায়মন্ড/স্টার হোটেল বর্তমানে মেহেদি সুপার মার্কেট)’র পিছনে তোলা আটককৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উপর নির্মম নির্যাতন করা রাজাকারদের একটি ছবি। প্রকাশিত ছবিটিতে দেখা যায় আটককৃত ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সাতক্ষীরা শহরে এনে ২ দিন পর ১৯ অগাস্ট ডায়মন্ড/স্টার হোটেল’র পিছনে রান্নাঘরের সামনে পায়ের কাছে বসিয়ে রাজাকাররা নিজেরা অস্ত্রসহ উদ্ধত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিক ও দুর্লভ এই ছবিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন মামলায় দালিলিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
    উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক মণ্ডল, বুলারটি গ্রামের এম আবদুল্লাহ হিল বাকি, পলাতক দুই আসামি একই উপজেলার দক্ষিণ পলাশপোল গ্রামের খান রোকনুজ্জামান ও বৈকারীর জহিরুল ইসলাম ওরফে টেক্কা খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে।
    আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, আটক, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়জনকে হত্যা, দুজনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।
    অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনী গঠন করে এর নেতৃত্ব দেন খালেক মণ্ডল। এরপর অন্য আসামিদের নিয়ে তৎকালীন সাতক্ষীরা সদর মহকুমা এলাকায় এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৬০ জন সাক্ষী রয়েছেন।
    ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দৈনিক দক্ষিণের মশালে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় সাতক্ষীরাবাসী তথা সাতক্ষীরার সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষগুলোকে এই ঘৃণ্য খুনী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আন্দোলনকে বেগবান করতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলোÑ
    মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের অন্য সকল অঞ্চলের মত সাতক্ষীরাতেও ছিল স্বাধীনতার পক্ষে প্রাণ উৎসর্গ করতে ঝাপিয়ে পড়া এক ঝাঁক তরুণ। আবার এখানকার মাটি ও পথের সাথে অপরিচিত পাকিস্তানি বাহিনীকে সকল প্রকার সহযোগিতা করতেও গড়ে ওঠে দালালদের সমন্বয়ে রাজাকার-আলবদর-আলশামস-শান্তি বাহিনী।
    এই ছবির ইতিহাস জানতে আমরা কথা বলি সেই মহান মুক্তিযোদ্ধাদের একজনের সাথে, যাদের দলের ২ জনকে বুধহাটায় হত্যা করে বাকি ৫ জনকে রাজাকাররা আটক করে সাতক্ষীরায় এনে এই ছবিটি তুলেছিল। এই ছবিতে থাকা (নিচে বসা বাম দিক থেকে প্রথম) ইমাম বারী সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার সন্তান। ১৯৭১ সালে যশোরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অবস্থায় যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ছিলেন যুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডের প্রথম ব্যাচের যোদ্ধা। দীর্ঘ ৩ মাসের ট্রেনিং শেষে তাদেরকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য সাফল্য ‘অপারেশন জ্যাকপট’র জন্য পাঠানো হয়। মংলায় ৮টি জাহাজ বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার পর ইমাম বারী ও তার দল ফিরছিলেন সাতক্ষীরার দিকে। পথিমধ্যে ১৭ অগাস্ট ১৯৭১ ভোর রাতে বুধহাটা বেতনা নদীতে তাদের নৌকা ঘিরে ফেলে আলিপুরের কুখ্যাত রাজাকার বাকীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী। নদীর দুই পাড় দিয়ে ক্রমান্বয়ে রাজাকাররা গুলি করতে থাকলে এক পর্যায়ে গুলি শেষ হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের। ফলে তাদেরকে আটকাতে সমর্থ হয় রাজাকাররা। এরপর কী হয়েছিল শোনা যাক মুক্তিযোদ্ধা ইমাম বারীর মুখ থেকেই:
    “প্রথমেই বাকী রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় উঠেই কোন কথা বলার আগেই তার নিকট থাকা থ্রি নট থ্রি রাইফেল তাক করে ৭ জনের মধ্যে সবচেয়ে সুঠামদেহী মুক্তিযোদ্ধা যশোরের আফতাফকে সরাসরি বুকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ আফতাফ গগণবিদারি চিৎকার করতে করতে নদীতে পড়ে ভেসে গেল। শহিদ আফতাফের লাশ আর পাওয়া যায়নি। এরপর আমাদের ৬ জনকে বাকীর দল চোখ বেঁধে নদীর পাড়ে একটি একতলা বাড়িতে আটকে রাখে। কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাদের উপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চলতে থাকে। এরপর পলাশপোলের রোকনুজ্জামান খান এসে আমাদের দলের সিরাজকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সিরাজ কাটিয়ার ছেলে, আমার সাথেই যশোর পলিটেকিনিকের ছাত্র ছিল, রোকন তাকে জিজ্ঞাসা করল বাড়ি কোথায়। সিরাজ মনে করল তাকে তো হত্যা করবেই সুতরাং ভুল ঠিকানা বললে তার পরিবারের সদস্যদের হয়ত আর খুঁজে পাবে না। অত্যাচারও করতে পারবে না। সিরাজ তার বাড়ি সুলতানপুর বলে জানালো। কিন্তু রোকন খান শহরের ছেলে হওয়ায় তার প্রকৃত ঠিকানা জানত। ভুল ঠিকানা বলায় সিরাজকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গিয়ে বেড়িবাঁধের উপর দাঁড় করিয়ে রাইফেল তুলে বুকে গুলি করল রোকন খান। তৎক্ষণাৎ শহিদ হন আমার সাথী সিরাজ।
    এরপর রোকন একটি লাঠি দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মেরে বলল তুইও আছিস এই দলে, আগে জানলেতো তোকেই মেরে ফেলতাম। প্রসঙ্গত: রোকন আমার সহপাঠি ছিল। এরপর কীভাবে যেন সাতক্ষীরায় পাকিস্তানি মিলিটারির কাছে খবর যায় আমাদের আটক হওয়ার। ফলে আমাদেরকে একটি হলুদ গাড়িতে করে সাতক্ষীরা ডায়মন্ড হোটেলের টর্চার সেলে এনে আটকে রাখা হয়। পথিমধ্যে ধূলিহর থেকেও কয়েকজনকে তুলে আনা হয়। ডায়মন্ড (স্টার হোটেলও বলা হত) হোটেলে আমাদেরকে পিলারের সাথে বেঁধে রাখা হয়। অনেককে ঘরে ঝুলানো হুকের সাথে ঝুলিয়েও নির্যাতন করা হত। এই হোটেলের অনেকগুলো রুমে অসংখ্য যুবতী মেয়েকেও আটকে রাখা হয়েছিল। যাদেরকে নিয়মিত ধর্ষণ করত পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা। আমাদেরকে আনার ২ দিন পর ১৯ অগাস্ট হোটেলের পিছনে নিজেদের পায়ের কাছে বসিয়ে রাজাকাররা ছবিটি তোলে। রাজাকাররা এলিট স্টুডিওর হামিদ ভাইকে ডেকে এনে ছবিটি তোলায়। ছবিটি আজ এক প্রামাণ্য দলিল।”
    তিনি যোগ করেন, “আমাদেরকে আটকে রাখাকালীন একদিন খালেক ম-ল ও টিক্কা(জহুরুল) এসে কয়েকজন আটককৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তুলে নিয়ে যায়। অন্য রাজাকাররা আমাদের জানায় তাদেরকে বিনেরপোতায় হত্যা করা হবে। এরপর একদিন আমাদেরকে যশোরে পাকিস্তানি বাহিনীর আস্তানায় পাঠানো হয়। যশোরের শংকরপুর যেখানে বর্তমানে বাসস্ট্যান্ড সেখানে আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে একদিন ভোর বেলা যখন সৈনিকেরা প্যারেড করছিল তখন আমরা পালিয়ে আসি এবং পুনরায় যুদ্ধে যোগ দিই। সে আরেক ইতিহাস।”
    আজ মহান বিজয় দিবসের ৪৮তম এই বার্ষিকীতে দ্রুত বিচারিক কাজ শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সাতক্ষীরায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকলে।

  • নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত

    নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত


    নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে । দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
    এরপর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
    সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোাশরফ হোসেন মশু, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাতক্ষীরাস্থ উপ-সচিব শাহ আব্দুল সাদী প্রমুখ। এর আগে শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের কবর জিয়ারত ও পুস্প মাল্য অর্পন এবং জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বাহী লাঠিখেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়।

  • ৭ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভায়


    আব্দর রহিম: ৭ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ঘন্টা ব্যাপি মুক্তিযোদ্ধাদের লাঠি খেলা প্রদর্শণ করে। পরে শিল্পকলা একাডেমীতে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোশরফ হোসেন মশু, সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আব্দুল সাদী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাসানুল ইসলাম, কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, দেবহাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণি, তালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মফিজুর রহমান, আশাশুনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল হান্নান, শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার দেবীরঞ্জন মন্ডল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহবায়ক আবু রায়হান তিতু, সদস্য সচিব লায়লা পারভীন সেঁজুতি। উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু সায়ীদ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, হাসনে জাহিদ জজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের যুগ্ম আহবায়ক এস এম গোলাম ফারুক, রেজাউল ইসলাম রিয়াজ, সদস্য আব্দুর রহিম, বাবলুর রহমান বাবু, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মেহেদীআলী সুজয়, সদস্য কাজি ফখরুল ইসলাম রিপনসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। আমি গর্বিত যে, আমি নিজেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জেলা প্রশাসক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা থাকবে। এছাড়া কোন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কেউ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দ্বারা হয়রানি হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ সকলকে মনে রাখতে হবে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন বাজি রেখে দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করেছিল। তাদের এ ত্যাগ কখনও ভোলার নয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আরিফ আদনান ও আসফিয়া সিরাত। ৭ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।