Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
মুক্তিযুদ্ধ Archives - Page 2 of 8 - Daily Dakshinermashal

Category: মুক্তিযুদ্ধ

  • আজ ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস

    আজ ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস


    মশাল প্রতিবেদক: আজ ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ইশতেহার ঘোষনা দিবস। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও উপস্থিতিতে সেখানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।
    বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। পল্টন ময়দানের সমাবেশে ছাত্র নেতারা শপথ গ্রহণ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামের।
    এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পল্টনে বিশাল জনসভা আয়োজন করা হয়। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়। গাঢ় সবুজের জমিনের উপর লাল সূর্য এবং লাল সূযের উপর বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র সংবলিত জাতীয় পতাকা নির্দ্ধারন করা হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি মৌলিক নীতি ও ৫৬,০০০ বর্গমাইলের এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সীমানা নিদ্ধারিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের ইশতেহারে উত্থাপন করা হয়।
    ইশতেহারটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ- করতালির মাধ্যমে প্রস্তাব গৃহীত হলে ‘জয় বাংলা’ ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব’, ‘শেখ মুজিবের পথ ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পল্টন ময়দান ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। উপস্থিত লাখ লাখ জনতা হাত তুলে এই ইশতেহার সমর্থন করেন।
    অবস্থা বেগতিক দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় পার্লামেন্টারি পার্টিগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক ডাকেন । কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়ার সেই বৈঠক ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘জনতার ওপর গুলিবর্ষণের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো আলোচনায় বসবেন না।’ নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩ তারিখের জনসভা থেকে ৭ মার্চে রেসকোসের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক জনসভার ঘোষনা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পাকস্তানী শাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করবো।’
    উত্তাল মাচের ৩ তারিখ বাংলার মাটি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়। বাঙালি অবাঙালি সংঘর্ষে চট্টগ্রামে নিহত হন ১২০ জন। আহত হন ৩৩৫ জন। এদের বেশিরভাগই পাক সেনাদের গুলিতে ৭১ নিহত হন। বাঙালি নিধনের এই ঘটনায় সারাদেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।

  • গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য ৩০ লাখ গণস্বাক্ষরযুক্ত আহ্বান জাতিসংঘে পাঠানোর সিদ্ধান্ত

    গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য ৩০ লাখ গণস্বাক্ষরযুক্ত আহ্বান জাতিসংঘে পাঠানোর সিদ্ধান্ত

    • নির্মূল কমিটির তিন দশকে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

    মশার ডেস্ক: গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আগামী এক বছরের মধ্যে ৩০ লাখ গণস্বাক্ষরযুক্ত আহ্বান জাতিসংঘে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

    ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সন্ত্রাসী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার সর্ববৃহৎ নাগরিক সংগঠন নির্মূল কমিটি ৩০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে কেন্দ্র ও বিভিন্ন শাখার উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনের নেতারা।

    মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্র ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্মদিনের অনুষ্ঠানসূচী শুরু হয়।

    বিকালে সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। আলোচনায় অংশ নেন নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতশিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌসী লাকী, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্যাহ, ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজমের সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী বিদ্যুৎ দেবনাথ, নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালী, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল প্রমুখ।

    স্বাগত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির ৩০ বছরের আন্দোলনের দীর্ঘ পদযাত্রায় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও সাফল্যের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মূল কমিটি আগামী এক বছরে ১৯৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৩০ লক্ষ নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জাতিসংঘ সহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকারের নিকট পাঠাবে।

    তিনি বলেন, ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন এবং বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের মার্চে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হলেও সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

    শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ও পাকিস্তানপন্থীরা প্রথম থেকেই ’৭১-এর গণহত্যার দায় শুধু অস্বীকার করছে না, বরং এই মুক্তিযুদ্ধকালে তথাকথিত পাকিস্তানিদের হত্যার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে দায়ী করছে। নির্মূল কমিটি দীর্ঘকাল পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে ’৭১-এর নৃশংসতম গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে গণহত্যাকারীদের বিচারের পক্ষে দেশে ও বিদেশে জনমত সৃষ্টির কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও সরকার সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে অন্তিমে বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে গণহত্যাকারী পাকিস্তানের মিথ্যা বয়ান সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর জন্য আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবার সহ গোটা জাতির কাছে দায়ী থাকতে হবে।’

    প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটা গণমানুষের কাছে পৌঁছুতে পারত না। গণমানুষ যদি আন্দোলিত না হত তাহলে হয়ত আমাদের দল এবং সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে হয়তো এভাবে উদ্যোগ নিত না। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, কবি সুফিয়া কামাল, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সহ যারা নির্মূল কমিটির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের সবার প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আজকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে নির্মূল কমিটি যে প্রস্তাব করেছে সে প্রস্তাবের সাথে আমি একমত পোষণ করি। দ্রুতই মন্ত্রীপরিষদে নির্মূল কমিটির এই দাবীর বিষয়ে আমি কথা বলব।

    মুনতাসীর মামুন বলেন, আর কোনো সংগঠন একটানা ত্রিশ বছর একটি আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেনি। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন এমন একটি আন্দোলন যেখানে সব সময় দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষেরা যুক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে নির্মূল কমিটি গর্ব করতেই পারে। আমাদের সফলতা অনেক, ব্যর্থতার দায় আমরা নেব না কারণ, যখন আমরা দেখি একজন শাহরিয়ার কবির এদেশে স্বাধীনতা পদক পান না, কিন্তু এমন অনেককে পদকটি দেয়া হয়েছে তাদের আমরা চিনি না, ফলে নির্মূল কমিটির যদি কোনো ব্যর্থতা থেকে থাকে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার রাজনীতির বিষয়। নির্মূল কমিটি কখনও ক্ষমতা চায়নি, নির্মূল কমিটি ঘাতক-দালালদের বিচারের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে, আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

    জাফর ইকবাল বলেন, নির্মূল কমিটির এই বিশাল কর্মকা-ে অনেকেই জড়িত। তাদের সবার কাছে এই দেশ কৃতজ্ঞ থাকবে। আমি শাহরিয়ার কবিরের নাম আলাদাভাবে মনে করিয়ে দিতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের জন্য একজন মানুষের এত তীব্র ভালবাসা থাকতে পারে, নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না! জোট সরকারের আমলে প্রতিহিংসার কারণে শাহরিয়ার কবির জেল খেটেছেন। এই দেশকে ভালবাসার জন্য একজন মানুষকে কত কষ্ট করতে হয়, আমি নিজের চোখে দেখেছি। যুদ্ধাপরাধী শর্ষিনার পীরকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে এই দেশকে অনেক বড় অপমান করা হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মানিত করার বেলায় শাহরিয়ার কবিরকে কারও চোখে পড়ে না ভেবে আমি মাঝে মাঝে অবাক ও হতাশ হয়ে যাই!

    কাজী মুকুল বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তি ওয়াজ ও দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে তৃণমূলে বিস্তার ঘটাচ্ছে। নির্মূল কমিটিকে এই অপশক্তি প্রতিরোধে তৃণমূলে সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৌলবাদী অপশক্তির অপপ্রচার বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপশক্তি ‘সাইবার জেহাদ’ মোকাবেলার জন্য নির্মূল কমিটি একটি সাইবার বাহিনী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশে বিদেশে নির্মূল কমিটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। আগামী সম্মেলনের আগে এই সংখ্যা ১০ লক্ষে উন্নীত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।

    সভায় অন্যান্য বক্তা নির্মূল কমিটির আন্দোলনের ৩০ বছরের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরে বলেন, একটি সংগঠন ও আন্দোলন কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে নির্মূল কমিটি। তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে নির্মূল কমিটির ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আন্দোলন আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

  • স্বাধীনতা সংগ্রামে সাতক্ষীরার দলিত জনগোষ্ঠীর ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ন নেই

    স্বাধীনতা সংগ্রামে সাতক্ষীরার দলিত জনগোষ্ঠীর ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ন নেই

    রঘুনাথ খাঁ ঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাতক্ষীরার দলিত জনগোষ্ঠীর ভূমিকার যখাযথ মূল্যায়ন নেই। অনেকেই ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেছেন পাক হানাদার, দেশীয় রাজাকার ও আল বদরদের বিরুদ্ধে। আবার অনেকেই নিজের জীবন বিপন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। এরপরও তাদের মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম ওঠেনি। বুকের মধ্যে যন্ত্রণা জিয়িয়ে রেখেই সীমাবদ্ধ থেকেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার দলিত সম্প্রদায়ের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ কিম্বা বীরঙ্গনার তালিকাতেও স্থান হয়নি ওইসব দলিত মানুষের। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে এইসব মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী লগ্নেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তণ খুব কমই ঘটেছে।
    সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়ার (আমতলা) রাজেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে অরুণ দাস। কোন রকমে হাতে খড়ি দিয়েই তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যায়। বিয়ে করেন সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান কলেজের পাশে। চার ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ ৭০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অরুন দাস।
    মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে যেয়ে রোববার সকালে নিজ বাড়িতে বসে রাধা রানী দাস বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পরই স্বামী অরুন দাসের সঙ্গে তিনিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহকুমার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদে চলে যান। সেখানে তাকে রেখে স্বামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য তকিপুর ক্যাম্পে নাম লেখান। সেখান থেকে স্বামী বিহারের চাকুলিয়ায় যেয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর তিনি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা শুনতে পান যে অরুন মারা গেছে। তবে দু’ মাস পর বসিরহাটের ইটিণ্ডায় তাকে একজন দেখে তাদেরকে খবর দেয়। সেখান থেকে অরুন চলে আসে বাংলাদেশে। কলারোয়া সীমান্তের কাকডাঙা, সাতক্ষীরা সদরের বালিয়াডাঙাসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় অরুন। সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে মুক্তিযোদ্ধা সোনা ভাইয়ের সঙ্গে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল অরুন।
    রাধা রানী দাস আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তার ভাসুর, দেবরসহ অন্যদের সঙ্গে সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন। এসে দেখেন তাদের বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির কিছুটা জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছিল আকবর ও আলতাফের বাবা সেকেন্দার আলী। স্বামীর পৈতৃক ১৯ বিঘা জমি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট তৈরির জন্য সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করা হয়। স্বামী কোন টাকা না নিলেও কাগজপত্র যাঁচাই করে জানতে পারেন যে কে বা কাহারা ওই জমির বাবদ সরকারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা তুলে নিয়েছেন। ভিটা বাড়ির দেড় শতক জমি বিক্রি করলে আরো দেড় শতক জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছেন স্থানীয় এক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। নীচু জাতের মানুষ বলে ছেলে ও মেয়েরা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি। তাই সরকাইরভাবে কোন চাকুরি পায়নি। বর্তমানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর সৌজন্যে মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। কোন রকমে পাঁচ ইঞ্চি গাথুনির উপর টিনের চাল দিয়ে তাদের বাসবাস। এরপরও রাস্তার ধারের জায়গা বলে অনেকেরই প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস পড়ছে ওই জমির উপর। দলিত শ্রেণীর মানুষ হওয়ায় ছেলেদের সন্তানরাও স্কুল পাঠশালায় নানাভাবে অপদস্ত হয়। ফলে তাদের শিক্ষাঙ্গনে টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তার স্বামীর সহযোদ্ধা শহরের পলাশপোলের কাছেদ আলীও গত বছর মারা গেছে। এ ছাড়াও যারা তার স্বামীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে তাদের কেউ আর বেঁচে নেই বললে চলে।
    তালা উপজেলার হরিহর নগরের পদ ঋষি দাসের ছেলে শম্ভু দাস বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলা সনের ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক তাদের কাছে বড় দুঃসময় গেছে। ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে ফেরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সুজাত মাষ্টার, আবু জাফর, আবুল খায়ের ও বাগেরহাটের রামপালের বাচ্চু মিঞাসহ কয়েকজন তাকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা করেছিল। তাদের মাধ্যমে তিনিসহ একই গ্রামের জয়হরি দাসের ছেলে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই মৃত্যুবরণকারি সুধীর দাস, একই বছরে মৃত্যুবরণকারি একই গ্রামের মান্দার দাসের ছেলে মান্দার দাস, যোগীনাথ দাসের ছেলে নিতাই দাস, বাংলা ১৪০৬ সালে মৃত্যুবরণকারি যোগী চন্দ্র ঋষীর ছেলে গণেশ দাস, মুড়োগাছার নটোবর দাসের ছেলে ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরণকারি ভবেন দাস ও একই গ্রামের ভদ্রকান্ত দাসের ছেলে জিতেন্দ্র নাথ দাস ও হরিহর নগরের খাদালে দাসের ছেলে কানু দাসসহ কয়েকজন ওই সব মুক্তিযোদ্ধাদের আহবানে সাড়া দিয়ে তাদের গোপন আস্তানায় যাতায়াতি করতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মুড়োগাছা থেকে নৌকাযোগে তাদেরকে বাথুয়ারডাঙাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন। রাতভর বিভিন্ন মুক্তি ক্যাম্পে অবস্থান করতেন তারা। একপর্যায়ে প্রতিদিন ভোর না হতেই আবারো ওইসব মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তারা নৌকাযোগে এলাকায় ফিরতেন। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের গুরুত্বসহকারে দেখতে হতো। এভাবে তারা তিনটি মাস কাটালেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদেরকে কেউ মনে রাখেনি। অনেক রাজাকার টাকা দিয়ে যাচাই – বাছাই তালিকায় নিজেদের নাম ঢুকিয়ে সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করছে। অথচ গত বছর তারা সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলেও কোন সাড়া মেলেনি। সম্প্রতি আবারো শুরু হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই এর কাজ। গতবার কোন সাড়া না পাওয়ায় তাার আর কোন আবেদন করেননি। আবেদন করেও কোন লাভ হবে বলে মনে করেন না তারা। তাদের ধর্মের উচ্চ বর্ণের অনেক রাজনৈতিক নেতা উপজেলায় থাকলেও নীচু জাতি হিসেবে তাদের উন্নয়ন তারাও প্রত্যাশা করেন না। তছাড়া এখন ভোটে জিততে ভোটার লাগে না। আগে অন্ততঃ জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য পাঁচ বছর পরপর অনেকেই তাদের বাড়িতে পদধুলি দিতেন। এখন নাকি ভোটের আগেই বাক্স ভরে যাওয়ায় তাদের কাছে আসা লাগে না। তাই সরকরি ও বেসরকারি সূযোগ সুবিধাও তারা পান না বললেই চলে।
    একই এলাকার জিতেন্দ্র নাথ দাস বলেন, হয়ত তারা যুদ্ধ করতে যান নি। আবার নেননি প্রশিক্ষণও। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে যেভাবে তাদের ছাদ হয়ে ছিলেন তাকে অনেকেই কোন ভাল কাজ বলে মনে করেন না। নীচু জাতিরা কোন ভাল কাজ করতে পারে এমনটি কেউ মানতে চায় না। ফলে তাদের যে দূঃখ সেই দূঃখই রয়ে গেছে। স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তণ ঘটেনি।
    মুক্তিযোদ্ধা,গোবিন্দ কর্মকার বলেন,ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদী ইতিহাস বিভিন্ন নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে স্থান দিতে যেভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী ইতিহাস নির্মাণও একইভাবে উপক্ষো করেছে নিম্নবর্ণের মানুষের অবদান ও অংশগ্রহণ। উভয় ইতিহাসেই প্রবল শ্রেণীর প্রাধান্য লক্ষ্যনীয়। ব্রিটিশ বিরোধী প্রেক্ষাপটে যে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়েছিল সেই জাতীয়তাবাদের পরিসর নির্মিত ইতিহাস নিম্নবর্ণের মানুষের ঐতিহাসিক ও স্থানিক অবদানকে অস্বীকার করেছে। সব সময় তাদের অবস্থা ছিল নিকৃষ্ট অন্যের ভূমিকায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই জাতীয়তা ধারাটিই স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে রচনার মূল ধারায় পরিণত হয়েছে। একক ও আধিপত্যশীল জাতীয়তাবাদি চিন্তা চেতনায় অভ্যস্ত এই গোষ্ঠী রচনায় তাই প্রধান প্রধান জাতীয়দাবাদী দলগুলোর অবদান ও ভূমিকার সমান্তরালে ক্রিয়াশীল সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা অনুচ্চারিত থেকেছে। ইতিহাসে স্থান পেয়েছে সামরিক ও বেসামরিক আমলা, উচ্চ শ্রেণির পেশাজীবী, রাজনৈতিক এলিট ও বুদ্ধিজীবী এর বাইরে কারো অবস্থান ইতিহাস স্বীকার করতে নারাজ। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পরও এই ইতিহাস নির্মাণের সংস্কৃতি অব্যহত রয়েছে এবং ইতিহাস নির্মাণের অচিহ্নিতায়ন জারি রয়েছে।
    এ ব্যাপারে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার বলেন, হরিহরনগর ও মুড়োগাছা এলাকার দলি ত জনগোষ্ঠীর অনেকেই সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দিন রাত কাজ করেছেন। সরকারের উচিত তাদেরকে সহযোগী বা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের জীবনধারার মান উন্নয়নে সহায়তা করা।

  • আশাশুনির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ভিক্ষার ঝুলি হাতে, থাকেন সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের পরিত্যক্ত গ্যালারির নীচে পলিথিন ঘেরা ঝুপড়িতে

    আশাশুনির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ভিক্ষার ঝুলি হাতে, থাকেন সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের পরিত্যক্ত গ্যালারির নীচে পলিথিন ঘেরা ঝুপড়িতে

    রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা ঃ একাত্তরে অস্ত্রহাতে বীরের মতো যুদ্ধ করে যে বাঙ্গালি সন্তানেরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন তাদেরই একজন সাতক্ষীরার আবদুল হামিদ। ভাগ্য বিড়ম্বনায় মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর এই সময়েও তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি। বাড়িঘর জমি সব হারিয়ে তার আশ্রয় এখন সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের পরিত্যক্ত গ্যালারির নিচে পলিথিন ঘেরা ঝুপড়িতে।
    সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের নাংলা গ্রামের হারেজ মোল্লার ছেলে আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদের বড় ভাই ফজল আলী সানা ও একমাত্র বোন অমেলা। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের নানা জেহের আলী গাজীর বাড়ি থেকে হায়াতখালি মাধ্যমিকম বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালিন পার্শ্ববর্তী গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের আহবানে ’৭১ এ নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করাকালিন মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আব্দুল হামিদ। ভারতের বহেরায় মাসব্যাপি প্রশিক্ষন গ্রহন করে অস্ত্র হাতে নিয়ে মাতৃভূমি থেকে শত্রুনিধন যুদ্ধে নেমে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদ। ৮ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের বাহিনীর সদস্য হিসাবে আবদুল হামিদ খুলনার চুকনগর, খুলনা ও বাগেরহাটের কয়েকটি স্থানে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তার সহযোগী ছিলেন কয়রার কেরামত আলী ও আব্দুল জব্বার। চাচা রাজাকার আলী সানা খুলনায় রেল লাইনে ফেলে বাবা হারেজ মোল্লাকে হত্রা করে। বড় ভাই ফজর আলীকে ভাতের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হতা করে আলী সানা। পৈতৃক ২০ বিঘা নয় শতক জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখলে রেখেফে আলী সানার আট ছেলে। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরলেও জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে আলী সানার ভয়ে সুন্দরবনে পালিয়ে যান তিনি। পরে সেখান থেকে ফিরে জমির মায়া ও বাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন পথ ছিল না। ১৯৭৮ সালে প্রতাপনগরের রুইয়ার বিলের মান্দার সানার মেয়ে মোমেনাকে বিয়ে করেন আব্দুল হামিদ। তাদের কোন সন্তান নেই। স্থানীয় মেম্বরের কথামত নাংলা গ্রাম ছেড়ে বাস করেন ৩৫ বছর আগে তেকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের পরিত্যক্ত গ্যালরির নীচে পলিথিন ঘিরে। জমি নিয়ে মামলা করে মাঝে মাঝে গ্রামে যেতেন। গত চার বছর যাবৎ শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন ন্ াতিনি। স্ত্রী মোমেনা তাকে নিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালান। স্টেডিয়ামের নীচ থেকে অনেকেই তাদেরকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রয়াত আইনজীবী অ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তী তাদেরেক থাকতে সহায়তা করেন। অনেকেই স্বামী আব্দুল হামিদকে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য মোমেনাকে প্রস্তাব দেয়। বয়সের ভারে ও অসুস্থতার কারণে লাঠির উপর ভর করে ভিক্ষা করে সংসার চালানো ও ঔষধ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া যেখানে বসবাস করেন সেখানে কোন গরম কাপড় ও একটি মাদুরও না থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে হামিদ দম্পতির। অথচ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হামিদের নাম নেই। কোনো ভাতাও পান না তিনি। যুদ্ধকালিন যে সার্টিফিকেট ও অন্যান্য দালিলিক কাগজপত্র পেয়েছিলেন তাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এখন সেই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সারা শরীর কাঁপতে থাকে তার।
    আবদুল হামিদ সানা সোমবার দুপুরে ভিক্ষা করে বাসায় ফেরার পর এ প্রতিবেদকে বলেন, শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রয়োজনে তার সম্পর্কে যাঁচাই করে দেখা হোক। অন্যের দয়ায় বেঁছে থাকতে চান না তিনি। ফিরে পেতে চান পৈতৃক ভিটা। সরকারি কোন ভাতা না পেলেও করোনাকালিন পরিস্তিতিতে সেনাবাহিনী তাকে দু’ বার চাল দিয়েছে।

    মোমেনা খাতুন বলেন, তাদের কোন সন্তান নেই। স্যাতসেতে জায়গায় থেকে তার স্বামী আব্দুল হামিদের দিনের পর দিন শরীর ভেঙে পড়ছে। এখন ভিক্ষা করতে নিয়ে যাওয়া ও কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বামী মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা পেলে তিনি খুশী হবে। পেতে চার থাকার মত একটু জায়গা।
    সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের স্টেডিয়ামের পাশের কয়েকজন দোকানী বলেন, আশাশুনির বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের কষ্টের জীবন দেখা যায় না। তারা সরকারের কাছে আব্দুল হামিদের আশ্রয় দাবি করেন।
    আনুলিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোক্তার হোসেন বলেন, আব্দুল হামিদ নামের কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম তাদের জানা নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন কয়রা ও সাতক্ষীরায় আব্দুল হামিদকে তাদের চেনার কথা নয়। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
    আশাশুনি উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার আব্দুল হান্নান বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সহযোগী হিসেবে কয়রার মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলী ও আব্দুল জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হলে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে যোগ্য মর্যাদা দেওয়ার জন্য তিনি সব ধরণের চেষ্টা চালাবেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি পলাশপোলে যেয়ে আব্দুল হামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার সময় হামিদের শারীরিক অবস্থা ও বাসস্থান দেখে কষ্ট পেয়েছেন। আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবদ্দশায় সম্মান না পেলেও রাজাকারপন্থিরা আর্থিক সুবিধা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন।
    আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরে আব্দুল হামিদ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে তিনি উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডারসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে যদি তিনি মুক্তিযোদ্ধা নাও হন তাহলেও তাকে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রির গৃহযোজনার আওতায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

  • ঐতিহাসিক সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আজ

    ঐতিহাসিক সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আজ

    আজ ৭ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। আজ ওড়ানো হয় লাল-সবুজ পতাকা। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের জেলা সাতক্ষীরা। এ জেলার দামাল ছেলেরা সেদিন থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তি পাগল জনতারা।
    এই দিনটিকে স্মরণ করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। এ উপলক্ষ্যে আজ সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে।
    ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশের সাহসী সন্তানরা দেশকে মুক্ত করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। পাক হানাদার ও তাদের দোসররা মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছিল। ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। শত্রুর বুলেটের এত সব আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা মুক্তির সংগ্রাম ছেড়ে পিছু হটেনি। তারা পাকিস্তানী বাহিনীর মোকাবেলা করেছিল বারংবার।


    ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিল বের হয়। সে মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তির সংগ্রাম।


    অষ্টম ও নবম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় । এ সময় পাক সেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন আরও দুইজন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য । এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

    মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার বীর সন্তান শহীদ হন

    শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজউদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুনার রশিদ, প্রমুখ।

    মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার বীর সন্তান শহীদ হন


    তবে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সাতক্ষীরার বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অযতেœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন। তাই বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
    এ ছাড়া সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে রাজাকারের নাম উল্লেখ থাকায় তা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান না মুক্তিযোদ্ধারা।
    সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু জানান, প্রতিবছর ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের আয়োজনের যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করা হয়।
    সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার (চলতি দায়িত্বে) এস.এম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কালেক্টরেট চত্বরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে বিদ্যমান বির্তক নিরসন করার জন্য সেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করে অচিরেই তা উদ্বোধন করা হবে।

  • শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করছে সরকার


    ন্যাশনাল ডেস্ক: শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
    সোমবার (২৩ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন- মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঁঞা। উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত।কমিটিতে গবেষক সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন।

  • আশাশুনিতে পুলিশ কতৃক বীর মুক্তিযোদ্ধার অপমানিত : আত্মহত্যার ঘোষণা

    আশাশুনিতে পুলিশ কতৃক বীর মুক্তিযোদ্ধার অপমানিত : আত্মহত্যার ঘোষণা

    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আশাশুনিতে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে পুলিশের অসাদাচারণ ও মুক্তিযোদ্ধার মনোগ্রাম খুলে ফেলা ও অপমান করার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ চন্দ্র মন্ডল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সোমবার দুপুরে আশাশুনি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত. মানিক চন্দ্র মন্ডলের পুত্র দীনেশ চন্দ্র মন্ডল লিখিত বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি রবিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় ডায়াং চায়না মটর সাইকেল যোগে বাড়ী থেকে আশাশুনিতে আসার সময় আশাশুনি বাইপাস হাইওয়ে ৪ রাস্তার মোড়ে পৌছালে এসআই জুয়েল আমাকে গাড়ী থামাতে বলেন। তার নির্দেশমত গাড়ী থামাই। পরে এক কনস্টেবল সোহাগ আমাকে বলে এই গাড়ী রাস্তার পাশের্^ আন। আমি বলি কাকা কি হয়েছে বলেন ? তিনি বলেন রাস্তার উপরে কথা বলবো না। গাড়ী রাস্তার পাশে আন। এরপর তিনি রুক্ষ মেজাজে বলেন, এই বালের লাইট লাগাইছ কেন? তখন আমি বলি কাকা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। আমার ছেলে পুলিশে চাকরি করে। ভদ্রভাবে কথা বলেন। তখন সে বলে ওই বালের পরিচয় বাদ দে! বুকের মধ্যে ওই সব বাল-ছাল (মুক্তিযোদ্ধার মনোগ্রাম) গালাইছ কেন। ও সব খুলে ফেলো। এই বলে গাড়ীর লাইটটা প্লাস দিয়ে কেটে দেয়। পরে হর্ণ কাটার জন্য প্লাস বাহির করে একটি হর্ণ কাটতে যায়। আমি তখন বাঁধা দেই। সে বলে দুটি হর্ণ রাখা যাবে না। আমি বলি ৮০ সিসি চায়না গাড়ীতে কোম্পানী ২টি হর্ণ লাগাইয়া দিয়েছে। এটা আপনি কাটবেন কেন ? সে বাঁধা না মানলে, আমি বলি ঘটনাটি আমি এসপিকে বলব। সে তার পরিহিত পান্টের চেইন খুলে দিয়ে আমাকে বলে আমার বাল ছিড়ে নিশ।’ এ সময় সেখানে শতাধিক পথচারী উপস্থিত ছিল। আশপাশের্^র দোকানদারও আমার সঙ্গে কি ব্যবহার হয়েছে, তা দেখেছে। ঘটনাটি শুধু আমার সঙ্গে ঘটে নাই। আমার আগে অপর এক মুক্তিযোদ্ধা আফসার গাজীকেও একইভাবে অপমান করা হয়েছে বলে ওই সময় জেনেছি। তিনি বক্তব্যের এক পর্যয়ে কান্নাজনিত কন্ঠে বিষের বোতল এক হাতে নিয়ে বলেন, এহেন অপমান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের জন্যে অতীব দুঃখজনক আত্মহত্যার শামিল। ওই পুলিশ কনস্টেবল কোন পরিবার থেকে এসেছে, কার ইন্ধনে এ সব কথা বলেছে, বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য এবং ন্যায় বিচার পাইবার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সঠিক বিচার যদি না পাই তাহলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো। এ ঘটনায় তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধা আফছার আলী গাজী বিষয়টি লিখিতভাবে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আলিফ রেজাকে অবহিত করেন। থানা অফিসার ইনচার্জ গোলাম কবির ছুটিতে থাকায় ইউএনও’র মোবাইলে তাকে অবহিত করেছি। তিনি সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে আমাকে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাতক্ষীরা জেলা কমান্ডের সাবেক সহকারী কমান্ডার আব্দুল করিম, আফছার আলী গাজী, আব্দুস ছাত্তার গাজী, সিরাজুল ইসলাম সানা, জি,এম আব্দুল গণি, মাষ্টার আকবর আলী গাজী, কার্ত্তিক চন্দ্র মন্ডল প্রমুখ।

  • মারা গেলেন জিয়াউদ্দিন তারিক আলী

    মারা গেলেন জিয়াউদ্দিন তারিক আলী

    মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

    জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার বেলা ১১টার আগে আগে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী।

    “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।”

    সারওয়ার আলী জানান, সোমবার বিকালে তারিক আলীর মরদেহ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। সেখানে ট্রাস্টি ও জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সীমিত পরিসরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

  • সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যু

    সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যু

    করোনা আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসর প্রাপ্ত লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর। শনিবার ( সেপ্টেম্বর) সকাল টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

    অসুস্থ অবস্থায় গত রোববার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আবু ওসমানকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ৮৪ বছর বয়সী আবু ওসমান দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। 

    স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।

    এদিকে, মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে একইভাবে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

    লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি বর্তমানে চাঁদপুর জেলা পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

    আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার মদনেরগাঁও গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ চৌধুরী এবং মায়ের নাম মাজেদা খাতুন৷ নিজ গ্রাম মদনেরগাঁওয়ের ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।

    ১৯৪৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামে মানিকরাজ জুনিয়র হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন৷ পরে ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে ঢাকা কলেজে এইচএসসি সম্পন্ন করতে পারেন নি তিনি। পরে ১৯৫৪ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৫৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন।

    ১৯৫৭ সালে আবু ওসমান ঢাকা এয়ারপোর্টে ‘এয়ারপোর্ট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এই পদের প্রশিক্ষণে থাকাকালীনই তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশনের জন্য প্রদত্ত পরীক্ষায় পাস করায় আন্তঃবাহিনী নির্বাচন বোর্ডে উপস্থিত হবার জন্য আহ্বান পান। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাটে অবস্থিত অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে (ওটিএস) যোগ দেন। সেখানে ৯ মাসের কঠিন প্রশিক্ষণের পর ১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

    মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট-এর সংবাদ পেয়ে ২৬ মার্চ সকালে বেলা ১১টায় তিনি চুয়াডাঙার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সসৈন্য যোগ দেন। 

    পরে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার তাকে দক্ষিণ পশ্চিমাংশের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেন৷ মে মাসের শেষার্ধে প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনকে দুই ভাগ করে ৮নং ও ৯নং সেক্টর গঠন করেন এবং ৮নং সেক্টরের দায়িত্বে আবু ওসমানকে নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সে সময় ওই সেক্টরের অপারেশন এলাকা ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর ও পটুয়াখালী জেলা। মে মাসের শেষে অপারেশন এলাকা সংকুচিত করে কুষ্টিয়া ও যশোর, খুলনা জেলা সদর, সাতক্ষীরা মহকুমা এবং ফরিদপুরের উত্তরাংশ নিয়ে এই এলাকা পুনর্গঠন করা হয়। এই সেক্টরের প্রধান ছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর এম এ মঞ্জুর।

  • আজ কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদের নিখোঁজ হওয়ার দিন: বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদ আজাদের প্রতি

    আজ কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদের নিখোঁজ হওয়ার দিন: বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদ আজাদের প্রতি

    ঢাকার সবচেয়ে বড় লোক পরিবারের ছেলে মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদ। তখনকার দিনে এলভিস প্রিসলির গান শোনার জন্য এক ধাক্কায় ১০০০ টাকার রেকর্ড কিনে আনতো।
    .
    তাঁদের বাড়িতে হরিণ ছিল, সরোবরে সাঁতার কাটত ধবল রাজহাঁস, মশলার বাগান থেকে ভেসে আসত দারুচিনির গন্ধ। (ডাকে পাখি খোলো আঁখি, এই গানটার শুটিং হয়েছিল তাদের বাড়িতে)।
    .
    আজাদ ক্লাস সিক্সে পড়ে, সেন্ট গ্রেগরি। ১৯৬০ এর দশক। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করবেন। আজাদের মা বললেন, তুমি বিয়ে করবে না, যদি করো, আমি একমাত্র ছেলে আজাদকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করলে আজাদের মা সাফিয়া তার বালকপুতের হাত ধরে ওই রাজপ্রাসাদ পরিত্যাগ করেন এবং একটা পর্ণকুটীরে আশ্রয় নেন। ছেলেকে লেখাপড়া শেখান।
    .
    আজাদ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করে।
    তাঁর বন্ধুরা যোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ফিরে এসেছে আগরতলা থেকে, ট্রেনিং নিয়ে। তার ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করে। বন্ধুরা আজাদকে বলল, চল, আমাদের সাথে, অপারেশন করবি। তুই তো বন্দুক পিস্তল চালাতে জানিস। তোর আব্বার তো বন্দুক আছে, পিস্তল আছে, তুই সেগুলো দিয়ে অনেকবার শিকার করেছিস।
    .
    আজাদ বলল, এই জগতে মা ছাড়া আমার কেউ নেই, আর মায়েরও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মা অনুমতি দিলেই কেবল আমি যুদ্ধে যেতে পারি।
    মাকে আজাদ বলল, মা, আমি কি যুদ্ধে যেতে পারি?
    মা বললেন, নিশ্চয়ই, তোমাকে আমার প্রয়োজনের জন্য মানুষ করিনি, দেশ ও দশের জন্যই তোমাকে মানুষ করা হয়েছে।
    .
    আজাদ যুদ্ধে গেল। দুটো অপারেশনে অংশ নিল। তাদের বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হলো। গেরিলারা আশ্রয় নিল।
    .
    ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট। ধরা পড়ে ক্র্যাক প্লাটুনের একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সেসময় আজাদকেও আটক করা হয়। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো রমনা থানা সংলগ্ন ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে।
    .
    গরাদের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা আজাদকে তাঁর মা চিনতে পারেন না। প্রচণ্ড মারের চোটে চোখমুখ ফুলে গেছে, ঠোঁট কেটে ঝুলছে, ভুরুর কাছটা কেটে গভীর গর্ত হয়ে গেছে।
    .
    –“মা, কি করব? এরা তো খুব মারে। স্বীকার করতে বলে সব। সবার নাম বলতে বলে।“
    –“বাবা, তুমি কারোর নাম বলোনি তো?
    –না মা, বলি নাই। কিন্তু ভয় লাগে, যদি আরও মারে, যদি বলে দেই…!
    .
    –বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম বলো না।
    –আচ্ছা মা। ভাত খেতে ইচ্ছে করে। দুইদিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিয়েছিল, আমি ভাগে পাই নাই।
    –আচ্ছা, কালকে যখন আসব, তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসব।
    .
    সাফিয়া বেগমের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাক, ছেলের গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেননি কোনোদিন। সেই ছেলেকে ওরা এভাবে মেরেছে… এভাবে…
    .
    মুরগির মাংস, ভাত, আলুভর্তা আর বেগুনভাজি টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে পরদিন সারারাত রমনা থানায় দাড়িয়ে থাকেন সাফিয়া বেগম, কিন্তু আজাদকে আর দেখতে পাননি। তেজগাঁও থানা, এমপি হোস্টেল, ক্যান্টনমেন্ট-সব জায়গায় খুজলেন, হাতে তখন টিফিন ক্যারিয়ার ধরা, কিন্তু আজাদকে আর খুঁজে পেলেন না।
    .
    ছেলে একবেলা ভাত খেতে চেয়েছিলেন। মা পারেননি ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে। সেই কষ্ট-যাতনা থেকে পুরো ১৪টি বছর ভাত মুখে তুলেন নি মা! তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ১৪ টা বছর ছেলেকে ভাত খাওয়াবেন বলে। বিশ্বাস ছিলো তাঁর আজাদ ফিরবে। ছেলের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪বছর তিনি কোন বিছানায় শোন নি।
    .
    শনের মেঝেতে শুয়েছেন শীত গ্রীষ্ম কোন কিছুতেই তিনি পাল্টান নি তার এই পাষাণ শয্যা। আর এর মুল কারণ আজাদ রমনা থানায় আটককালে বিছানা পায় নি।
    .

    ৩০ আগস্ট রাতে রুমী, আবু বকরদের মতো আজাদকেও রাজাকারদের সহযোগিতায় ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে পাকিস্থানী আর্মিদের দ্বারা অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয় বকর রুমি বদি সহ সাতজন । নাক-মুখ ফেঁটে রক্ত বের হয়েছে, কোটর থেকে চোখ খুলে এসেছে, হাড়গোড় ভেঙ্গে দিয়েছে, অসহ্য ব্যাথায় চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়েছে, এতকিছু সয়েও ওঁরা একটি বারের জন্যেও মুখ খুলেনি ।
    এরপর ওদের ভাগ্যে কি ঘটেছে কেউই জানেনা!
    .
    আজ কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদের নিখোঁজ হওয়ার দিন। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদ আজাদের প্রতি। সংকলিত।

  • সেক্টরের অধিনায়ক, মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোগামী নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

    সেক্টরের অধিনায়ক, মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোগামী নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

    শোক বিবৃতি
    ঢাকা, ২৫ আগস্ট ২০২০
    ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে ৪নং সেক্টরের অধিনায়ক, মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোগামী নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আজ (২৫ আগস্ট) সংগঠনের এক শোক বার্তায় বলা হয়-
    ‘১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে ৪নং সেক্টরের বীর অধিনায়ক, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে আমরা গভীরতম শোক প্রকাশ করছি।
    ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী তাঁর প্রধান সহযোদ্ধাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানপন্থী সামরিক শাসকরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ যেভাবে মৌলবাদীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ও দুর্বৃত্তায়ন করেছে তার বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের আন্দোলনে জেনারেল দত্ত ছিলেন একজন পুরোগামী নেতা। বিশেষভাবে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে তার অসামান্য সাহসী অবস্থান সব সময় আমাদের প্রেরণা জোগাবে।
    ‘আমরা মহান মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল দত্তের শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং তাঁর আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।’
    স্বাক্ষরদাতা-
    বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডাঃ আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, এডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাঃ ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, এডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, ডাঃ মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, সমাজকর্মী সরদার জাকির হোসেন খসরু, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, এডভোকেট দীপক ঘোষ, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বীর খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, কবি দিব্যেন্দু দ্বীপ, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, এডভোকেট কাজী মানসুরুল হক খসরু, এডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল প্রমুখ।
    (কাজী মুকুল)

  • মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত আর নেই

    মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীর উত্তম আর নেই৷  মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।  তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

    সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপংকর ঘোষ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, সি আর দত্ত বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন৷ গত ২০ আগস্ট বাথরুমে অসাবধানবশত তিনি পড়ে যান। এতে তার পা ভেঙে যায়। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

    চিত্ত রঞ্জন দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তার বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে তার বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন৷ হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন তিনি৷ পরবর্তীতে খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন৷ পরে এই কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন৷

    চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেনেন্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি৷ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালংয়ে একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি৷ এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে৷

    মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেন৷ সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান তিনি৷ চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা-বাগান৷ বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করে দিতেন৷ পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধের আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন৷ 

    চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন৷ সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন৷ ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার৷ এই বিষয়ে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার৷ পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠন করেন এবং নাম দেন বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চিত্ত রঞ্জন দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল। এছাড়া ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়৷ ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন৷ ১৯৭৯ সালে বি আর টি সির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন৷

    মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন৷ এছাড়া ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ানবাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি ‘বীরউত্তম সি আর দত্ত’ সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।

  • ২১ আগস্ট: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন

    ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ (২১ আগস্ট ২০২০) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
    নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল ’১৫ ও ২১ আগস্টের ঘাতকদের অভিন্ন রাজনীতি ও উদ্দেশ্য: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়।’
    সম্মেলনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, ব্যারিস্টার ডঃ তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লেখক মারুফ রসুল, কেন্দ্রীয় নেতা লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান (সুইডেন), সমাজকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া (যুক্তরাষ্ট্র), প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায় (ফ্রান্স), অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল (সুইজারল্যাণ্ড), সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), ডঃ একরাম চৌধুরী (অস্ট্রেলিয়া), ডঃ মুজিবুর দপ্তরি (ফিনল্যান্ড), নির্মূল কমিটির তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দেবনাথ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
    সভাপতির ভাষণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে যে রাজনীতি ইসলামের নামে স্মরণকালের নৃশংসতম গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর সরকার সাংবিধানিকভাবে যে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন, সেই মওদুদিবাদী, ওহাবিবাদী রাজনীতির ধারকরাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের হত্যা করে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মের নামে যাবতীয় সন্ত্রাস, হত্যা ও নির্যাতন নির্মূল করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার জন্য পাকিস্তানপ্রেমী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ’৭২-এর সংবিধান চেতনাগতভাবে পুনঃপ্রবর্তন করা না হলে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও ভিন্ন জীবনাধারার অনুসারীদের হত্যা ও সন্ত্রাস কখনও বন্ধ করা যাবে না।’
    বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া যেমন ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক একইভাবে তার সহধর্মিনী খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের গ্রেণেড বোমা হামলার নেপথ্য নায়িকা। বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের এই দুই প্রধান খলনায়ক ও খলনায়িকাকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নইলে বাংলাদেশে ধর্মের নামে হত্যা যেমন অব্যাহত থাকবে একইভাবে আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’
    জেনারেল আবদুর রশীদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সাফল্য প্রদর্শন করলেও এই সন্ত্রাসের দর্শন ও রাজনীতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে তেমন কোনও উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে সরকার ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
    সভায় অন্যান্য বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অবিলম্বে বাংলাদেশের মূল সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িকতার যাবতীয় কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্য আইন প্রণেতা এবং সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানান।

  • করোনা’য় মারা গেলেন দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গণি

    করোনা’য় মারা গেলেন দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গণি

    স্টাফ রিপোর্টার: মরণব্যাধী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গণি (৭০)।
    শুক্রবার ভোর ৪ টায় রাজধানীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
    মৃত্যুর আগে নমুনা পরীক্ষায় আলহাজ্ব আব্দুল গণি’র শরীরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায় বলে নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রনি।
    বিগত কিছুদিন যাবৎ জ্বরসহ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় নিজ বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার (৩ আগষ্ট) উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্দুল গণিকে রাজধানীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ঐদিনই করোনা পরীক্ষার জন্য আব্দুল গণি’র নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। নমুনা সংগ্রহের তিনদিন পর বৃহষ্পতিবার রিপোর্টে তার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সেখানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন থাকলেও, ক্রমশ শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে শুক্রবার ভোরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
    ইতোমধ্যেই আলহাজ্ব আব্দুল গণি’র মরদেহ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ী দেবহাটা উপজেলার চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন এবং বাদ মাগরিব জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
    আলহাজ্ব আব্দুল গণি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং একই সাথে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বরত বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা। পরপর টানা দু’বার তিনি নির্বাচিত হন দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
    এদিকে আলহাজ্ব আব্দুল গণি’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন, দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওনসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা।

  • পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদ নেতা এড হাবিবুর রহমান শওকত সমাহিত

    পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদ নেতা এড হাবিবুর রহমান শওকত সমাহিত

    গত সোমবার রাত ৮-৩০ টায় রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান চত্বরে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসন এড. হাবিবুর রহমান শওকতের মরদেহ জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে, পুষ্পস্তবক অর্পণ করে, পুলিশের একটি চৌকস দল বিউগলের করুণ সুরে গানস্যালুট দিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করে।
    এরপর জাসদ স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়াত নেতার মরদেহ জাসদের দলীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়। জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, জাতীয় যুব জোট, জাতীয় কৃষক জোট ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তার মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং তাকে শেষ অভিবাদন জানায়। এশার নামাজ শেষে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাত ৯ঃ২০টায় তাকে সমাহিত করা হয়।
    এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন মোল্লা, নুরুল আকতার, নাদের চৌধুরী, সাইফুজ্জামান বাদশা, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, রোকনুজ্জামান রোকন, সাজ্জাদ হোসেন, এড. মোহাম্মদ সেলিম, এড. মহিবুর রহমান মিহির, ইদ্রিস ব্যাপারী, আনিসুজ্জামান জম, সরদার খোরশেদ, রাশিদুল হাসান ননী, আলাউদ্দিন খোকন, আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, সৈয়দ নাভেদ হোসেন, রাশেদুল হাসান মানিক, শাহজামাল পিন্টু, আকরাম হোসেন সহ জাসদ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীগণ এবং মিসেস হাবিবুর রহমান শওকত, কন্যা ছুটি, পুত্র রাজি, জামাতা অপুসহ আত্মীয় স্বজন।
    এড. হাবিবুর রহমান শওকত গতকাল ৩ আগষ্ট ২০২০ সোমবার বিকাল ৩-৪১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট-২ এর আইসিইউ’তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট-২য়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার অবস্থা অবনতি হলে তাকে আইসিইউ’তে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসক ও নার্সগণ তাকে সুস্থ্য করে তুলতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার কন্যা ছুটি, পুত্র রাজি, জামাতা অপু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির দিন থেকে হাসপাতালে পিতার পাশে থেকে পিতার সেবা করেছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান শওকত করোনার বিরুদ্ধে ১৪ দিন তুমুল যুদ্ধ করেছেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সজ্ঞানে ছিলেন।
    তার সংকটাপন্ন অবস্থা শুনেই জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ও ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে তার অন্তিম মুহূর্তে তার শয্যাপাশে উপস্থিত হন এবং পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকেন।
    বিভিন্ন দল, সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের শোক
    বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. হাবিবুর রহমান শওকতের মৃত্যুতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু এমপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এম এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ অব: বীরউত্তম ও সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবিব, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ন্যাপ(মো), গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণ আজাদী লীগ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবার-স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
    এছাড়াও পৃথক পৃথক শোকবার্তায়, জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় নারী জোটের আহবায়ক আফরোজা হক রীনা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, জাতীয় কৃষক জোটের সভাপতি নুরুল আমিন কাওছার এবং সাধারণ সম্পাদ আশেক এলাহী, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(হা-ন) সভাপতি আহসান হাবীব শামীম এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হক ননী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. হাবিবুর রহমান শওকতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও তাঁর পরিবার-আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু-স্বজন-সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
    সংগ্রামী জীবন
    এড. হাবিবুর রহমান শওকত একজন বিরল দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তিনি ৩ জুন ১৯৭১ থেকে ১১ জুন তারিখে ‘বিলোনিয়া ব্রীজ’ ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২নং সেক্টরের ফরিদপুর কোম্পানীর কোর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে নিজের এলাকায় যুদ্ধ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি ৭০জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত কওে কোলকাতায় ৯নং সেক্টও হেড কোর্য়াটে যোগদান করেন। জে. ওসমানীর নির্দেশে ৯নং সেক্টরের সেক্টর ট্রুপসের পটুখালী-গলাচিপা সাব-সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার/সহ-অধিনায়ক ও সামরিক কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ সাগরপারের যুদ্ধখ্যাত পানপট্টি সম্মুখ যুদ্ধসহ পটুয়াখালী হানাদারমুক্ত করার যুদ্ধে দুঃসাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ যুদ্ধের বিজয় পটুয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করতে নিয়ামকের ভুমিকা পালন করে। এড. হাবিবুর রহমান শওকত ‘তৃণমূলে যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নতকরণে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নির্যাতিত-ধর্ষিত পরিবারের সদস্যদের গণশুনানী করেন’। তার এই পদক্ষেপ ‘তৃণমূলে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিতকরণে পটুয়াখালী মডেল’ হিসাবে পরিচিতি পায়। তার উদ্যোগে এই গণশুনানীতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তদন্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের-তদন্ত-বিচার করে, বিচারে ৮ জন যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। ১৬ ডিসেম্বরের পর এড. হাবিবুর রহমান শওকত পটুয়াখালী ট্রেজারি থেকে লুট হয়ে যাওয়া ৩৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেন। উক্ত জেলা প্রশাসক ও কতিপয় অফিসারের যোগসাজসে এই স্বর্ণ আত্মসাৎ করলে তিনি দুর্নীতির মামলা করেন। মামলায় উক্ত জেলা প্রশাসকের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ ৭ বছর দন্ড হয়। এড. হাবিবর রহমান শওকত ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাসদের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি পটুয়াখালী জেলা জাসদের সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদ এবং জাতীয় আইনজীবী পরিষদকে সংগঠিত করেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে তিনি নির্যাতিত-অনির্বাচিত-সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলন, তেল-গ্যাস-বন্দর-বিদ্যুৎ-সুন্দরবন-জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে ১ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের মূল সংগঠকের কাজ করতেন।
    জাসদ নিরবাচনী প্রতীক মশাল মামলার প্রধান কৌশলী ছিলেন করোনায় প্রয়াত জাসদের আরেক অভিভাবক এড. ইদ্রিসুর রহমান। সেই মামলায় জাসদের পক্ষে পেপারবুক তৈরি করেছিলেন এড. হাবিবুর রহমান শওকত। কুখ্যাত খুনি ওসি রফিক কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের স্বীকার চাঞ্চল্যকর ছাত্রনেতা মোমিন হত্যা মামলার প্রধান কৌশলী ছিলেন এড. হাবিবুর রহমান শওকত।

  • নৌকমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ চলে গেলেন

    নৌকমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ চলে গেলেন

    স্টাফ রিপোটার : সাতক্ষীরার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দিন আর নেই।(ইন্নালিল্লাহি—রাজিউন)। তিনি আজ শুক্রবার ২৪ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরা মেডিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি নৌ-কামান্ড ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আত্মঘাতী দলের সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে জেলা স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার এবং সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন বিশুদ্ধ, সৎ ও নির্ভিক দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ তে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
    পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ বাদ আছর তার নিজ গ্রাম সদর উপজেলার নেবাখালীতে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।