যুদ্ধ নিঃসন্দেহে অমানুষের পরিচয়। যুগে যুগে যত যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে তার ভয়াবহতা যেমন আছে তেমনি কিছু রঙ্গ রসিকতাও হয় যা যুদ্ধ পরিবর্তীতে চায়ের আসর জমে ওঠে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের দেশেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে ছিল যা দাদী নানীরা তাদের নাতি নাতনিদের এখন গল্প আকারে বলে শোনায়।
গল্পগুলো সত্য তবে ক্ষেত্র বিশেষ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
একাত্তরের যুদ্ধের সময় পাকিস্থানী আর্মিরা যে এলাকা দখল করে রাখত সেখানে বাঙ্গালীদের অবাঁধে চলাফেরা করতে হলে তৎকালীন আঞ্জুমান অফিস থেকে পাকিস্থানীদের পক্ষে আছি এই মর্মে আইডেনটিটি কার্ড বা পরিচয় পত্র দিত। এটা জীয়ন কাটি হিসাবে জীবন বাঁচাত। পাকিস্থানী সাধারণ সৈন্যেরা অধিকাংশ গজ মূর্খ ছিল। তারা বলত ডান্ডি কার্ড। যশোর জেলার ঝিকরগাছা বাজারের কপোতাক্ষ নদের রেল ব্রীজের উপরে আর্মি টহল দিত। সাথে থাকত গন্ডমূর্খ রাজাকার, মুজাহিদ, আলবদর। গ্রাম গঞ্জ থেকে যেই বাজারে আসত তার ডান্ডি কার্ড দেখাতে হতো। না থাকলে মার, নির্যাতন তো থাকতোই, সন্দেহ হলে অনেক সময় ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলত।
একদিন কাশেমপুরের ইচড়েপাঁকা দীন মোহাম্মদ রেশন কার্ড নিয়ে ডিলারের কাছ থেকে চাল আটা তুলতে এল। পাকা উপাধি পাওয়ার কারণ মূর্খ হলেও উপস্থিত বুদ্ধি ছিল খুব বেশি। এলাকার লোকে তাকে উপাধি দিল, “ইচড়েপাঁকা” দীন মোহাম্মদ।
প্যাকেট হাতে দীন মোহাম্মদকে দেখার সাথে সাথে এক পাঞ্জাবী সৈন্য ডাক দিল এ ……….. বাঙ্গালী এদার আও। দীন মোহাম্মদ লক্ষ্মী ছেলের মত কাছে চলে এল। তোম ডান্ডি কার্ড কই হায়? দীন মোহাম্মদ মনে মনে বলল, সর্বনাশ কার্ড তৈরিতো করিনি, এখন উপায়! তাড়াতাড়ি প্যাকেট থেকে রেশন কার্ড বের করে দিল। পাঞ্জাবী সৈন্য গোঁপ পাকিয়ে, চোখ রাঙ্গিয়ে বলল, এ ………….. কিতনা ডান্ডি কার্ড হ্যায়? দীন মোহাম্মদ হাসি হাসি মুখ করে বলল, “স্যার এ ……….. হোল ফ্যামিলিকা ডান্ডি কার্ড হ্যায়”। সৈন্য তো গ-মূর্খ, পাশে তখন রাজাকার নেই। সৈন্য বলল, হোল ফ্যামিলিকা ডান্ডি কার্ড, ঠিক হ্যায় যো”। দীন মোহাম্মদ উপস্থিত বুদ্ধিতেই সে যাত্রা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল।
বিশু মোড়ল যশোর জেলার মনিরামপুর থানার এনায়েতপুর গ্রামে বাড়ি। এখনো জীবিত আছেন। সকাল বেলা পান্তা ভাত আর খেজুরের গুড় হলে যথেষ্ট। সারাদিন মাঠে কাজ করে বেড়ায়। যুদ্ধের সময় একদিন গ্রামে পাকিস্থানী সৈন্যসহ রাজাকারেরা চলে এল। যে যেভাবে পারে জীবন বাঁচাতে পালায়ে গেল। বিশু মোড়ল বাড়ীর কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ তাকে ঘেরাও করে ধরল। ধরেই বুঝতে পারল, দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষ। তবুও পুকুর পাড়ের সেই ব্যাঙ ও দুষ্টু ছেলেদের মত দুষ্টামী শুরু করে দিল। গাছের সাথে বেঁধে গুলি বিহীন রাইফেল নিয়ে গুলির প্রস্তুতি নিল। গাছের সাথে পাথরের মত বিশু মোড়ল দাঁড়িয়ে আছে। বিশু মোড়লের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা একবার সমস্বরে অ্যা—করে কেঁদে উঠেছিল। পাঞ্জাবীদের তাড়া খেয়ে চুপ করে বসে আছে। স্ত্রী চিকন সুরে একবার কান্নার চেষ্টা করে ছিল। রাজাকারের থাপ্পড় খেয়ে মাথা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে। অপলক চোখে চেয়ে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই। এবার রাইফেল বুকে চেপে ধরে ঘোড়াকল কট করে টান দিল। গুলির শব্দ হল না। হাসির রোল উঠল। তবে বিশু মোড়লের দ’ুকান দিয়ে চো ……….. করে শব্দ বের হল। সেই থেকে বিশু মোড়ল কালা হয়ে স্বাধীন দেশে এখনো বেঁচে আছে।
এনায়েতপুর গ্রামে বক্স নামের একজন আঁধা পাগল ছিল। সারাদিন খাওয়ার ধান্দায় এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াত। একদিন এনায়েতপুর বাজারে বসে আছে এমন সময় পাকিস্থানী সৈন্যরা তাকে ধরে ফেললো। উর্দুতে যা কিছু জিজ্ঞাসা করে, না বুঝে শুধু বলতে থাকে, স্যার নৌকায় ভোট দিছি। স্যার নৌকায় ভোট দিছি।। মনে করেছে এতেই সে রক্ষা পাবে। সৈন্যরা বাংলা কথা বললেও বুঝতে পারে এ নৌকায় ভোট দিয়েছে। রাজাকারদের হুকুম দেয় ইনকো মুমে (মুখে) লাথ মার। লাথি খেতে খেতে মুখ ফুলে গেল। এবার হুকুম দিল গান্ধা মাট্টি মুমে মারদো (পঁচা কাদা মুখে মাখাও)।
আচ্ছামত কাঁদা মাখিয়ে ছেড়ে দিল। বক্স বাড়ি ফিরে এলে নিজের ছোট সন্তানেরাও ভূত মনে করে ভয়ে চিৎকার করে ওঠলো।
মদনপুর গ্রামের আব্দুল গফুর। এখন শিক্ষকতা করেন। গফুর মাষ্টার বললে সকলেই চেনে। যুদ্ধের সময় গফুর মাষ্টার যুবক। যুদ্ধে যাওয়ার সময় কিন্তু এত ভীত ছিল যে সারাদিন ঘরের ভিতর লুকিয়ে থাকত। গ্রাম গঞ্জে তখন প্রায়ই রাত হলে গুজব ছড়াত রাজাকার এসে গেছে। আর যায় কোথায়। যে যে দিকে পারে ভোঁ দৌড়। তখন গ্রাম গঞ্জে স্যানিটারী পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না। খড় গাদা, বিচালি গাদা, ঝোপ ঝাড়ের পাশেই পায়খানা করে রাখত। গফুর মাষ্টার প্রায়ই দৌড়ে খড় বিচালি গাদার পাশে পালাত। ভয় কেটে গেলে দেখা যেত গফুর মাষ্টারের গায়ে পায়খানা লেগে আছে। মাষ্টারের মা সেই রাতে গালি গালাজ করে গোসল করায়ে তবে ঘরে তুলতো।
মদনপুর গ্রামের কাদের সরদার পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে করে সকাল বেলা গরু ছাগল নিয়ে মাঠে ঘাস খাওয়াতে যেত। তখন ফসল উঠার পর মাঠ পড়ে থাকত, ঘাস জম্মাতো। শুকনো বিলের মধ্যে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার গরু ছাগল ছেড়ে দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাস খাওয়াতো রাখাল ছেলেরা। একদিন বিকেলবেলা বিলের ধারের রাস্তা দিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যসহ রাজাকারের দল যাচ্ছে। কাদের সরদার দেখতে পেয়ে ওরে বাবারে বলে দিল দৌড়। সাথে তার সহকর্মীরাও দৌড় ধরলো। রাখাল দৌড় দিলে তার গরু ছাগল ও কিছুই না বুঝে দৌড়াতে থাকে। সমস্থ বিলের গরু ছাগল আর রাখালেরা প্রাণপণে গ্রামের দিকে দৌড়াচ্ছে। চৈত্রের ধুলায় মানুষ পশু চেনা যাচ্ছে না। রাজাকারেরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খিল খিল করে হাসছে। পাঞ্জাবী সৈন্যরা অনর্গল গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে দৌড়ের বেগ আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুলির শব্দে গ্রামও জনশূণ্য হয়ে গেল। অস্থিরতার মধ্যে রাত এসে শেষ হয়ে গেল। সকাল বেলা পরিস্থিতি শান্ত হলে দেখা গেল বিলের মধ্যে কয়েকটা গরু ছাগল গুলি খেয়ে মরে পড়ে আছে।
কাদের সরদারের সমবয়সী সাত্তার সরদার। জন্মের পর মাকে হারায়। মা বিষাক্ত সাপের কামড়ে রাতে মরে ছিল। সকালবেলা সাত্তার সরদার মৃত মায়ের বুকের দুধ খেয়ে ছিল। এই জন্য নাকি পাগলাটে এবং গোয়ার স্বভাবের হয়েছে। যুদ্ধের সময় সাত্তার কিশোর বয়সের। একদিন শেষ বিকেলে বাঁশগাছে উঠে গরুর জন্য বাঁশের পাতা ভাঙছে। এ কারণে বাঁশগাছ বেঁকে এসেছে। মনের আনন্দে গুন গুনিয়ে গান গাইছে আর পাতা ভাঙছে। এমন সময় দেখে একটা গেছো সাপ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাত্তার সাপের খুব ভয় পেত। কারণ তার মা সাপের কামড়ে মারা গিয়েছে। উরি— উরি— শব্দ করতে করতে বাঁশের শেষ মাথায় সরে আসছে। গাছ ক্রমে মাটির দিকে নুইয়ে আসছে। এক সময় ধপ করে মাটিতে এসে পড়ল। ঐ সময় একদল রাজাকার ঐ পথ দিয়ে অতি গোপনে গ্রামের স্কুলের মাঠের দিকে এগুচ্ছিল। সাত্তারকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেললো এবং স্কুলের মাঠে নিয়ে গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম মার দিয়েছিল। পরে গ্রামের লোকের অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে পাগল প্রমাণ করায় ছাত্তার এযাত্রা মাফ পায়। এখনও সাত্তার সরদার আমাবস্যা পূর্ণিমায় রাজাকারের মার খাওয়া ব্যথা অনুভব করে। আজও বলে বেড়ায় সাপের হাত থেকে মুক্তি পেলেও রাজাকারের হাত থেকে সেদিন মুক্তি পায়নি।
একাত্তরের যুদ্ধের সময় বিহারীদের সাথে যোগ দিয়ে কিছু বাঙালি বিহারী সেজেছিল। ঐ সময় ঝিকরগাছার পুরন্দপুরের রউফ ছিল পেশায় নাপিত (নরসুন্দর)। ওর ভীমরতি ধরল, বিহারীদের সাথে যোগ দিয়ে মুজাহিদ হয়ে গেল। কালো প্যান্ট শার্ট পরে রাইফেল কাঁধে নিয়ে বাংলাকে উর্দ্দুতে রূপ দিয়ে কথা বলতে শুরু করল। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে ডাক দেয় ভাইও এদারছে আও। গুল্লি¬ করে গা ইত্যাদি। বেনেয়ালী স্কুলে অধিকাংশ সময় থাকে। একদিন রাতে মুক্তিসেনা রকেট জলিলের অতর্কিত আক্রমনে দিশেহারা হয়ে বুদিহাটা বিলের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। দেশ স্বাধীনের পর মাথা খারাপ হয়ে যায়। লোকে ক্ষ্যাপাত ‘গুল্লি করেগা’ বলে। পিছন দিক থেকে কাছে গিয়ে গুল্লি করেগা বললে পাগলামী শুরু করে দিত। যতদিন বেঁচে ছিল সবাই গুল্লি করেগা রউফ বলে ডাকত।
যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল। বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য আসতে লাগল। রিলিফ চুরিও হতে লাগল। যশোর জেলার আঞ্চলিক ভাষায় এই চুরিকে বলে মেরে খাওয়া। গম, কম্বল যে যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে মেরে খাচ্ছে। আছর আলী বাজার থেকে শুনে এসেছে চীন ভেটো দিয়েছে। বাড়ী এসে প্রতিবেশীদের সামনে বলল, দেশ চলবে না, চীন ভেটো দিয়েছে, তাও মেরে খেয়ে ফেলেছে।
Category: মশাল সাহিত্য
-

একাত্তরের রঙ্গ ব্যঙ্গ
-

কবিতার জন্মঘর
ভাবনার অভিব্যক্তিকে শিল্পিত রূপে প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো কবিতা। যাতে মনের আলো আঁধারি ক্যানভাসে নান্দনিকতার আঁচড়ে জীবন কথনের ছবি আঁকা হয়। আর সে ছবিতে থাকে আস্বাদনের ব্যঞ্জনায় চির নতুনের এক অনিবার্য সন্নিবেশ। যা বুঝবার কোনো চূড়ান্ত পর্যায় থাকে না। বিজ্ঞান অঙ্ক বা অন্য কোনো বিষয় একবার বুঝে গেলে তার মধ্যে নতুন করে বুঝবার আর কিছু থাকে না। কিন্তু কবিতা বোদ্ধা পাঠক যতোবার পড়বেন বা গুণি আবৃত্তি শিল্পীর কন্ঠে যতোবার শুনবেন ততোবার বোধের সীমানা প্রসারিত হতে থাকবে। সেক্ষেত্রে কবিতা বুঝবার চূড়ান্ত কোনো পর্যায় থাকে না। কবিতা পড়লে বা আবৃত্তি শুনলে মনের মধ্যে যে অনুভূতির নীরব বা সরব উপস্থিতি টের পাওয়া যায় তাই হলো ওই কবিতার অর্থ। সেখানে একটা কবিতার অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকমের হতে পারে। মূলত চেতনার অভিব্যক্তিকে নাড়া দিয়ে মনের ঘুমান্ত সত্তাকে জাগিয়ে তোলে কবিতা। দেহ ও মন নিয়ে যেমন পুরো একটি মানুষ, তেমনি কাব্যভাষাও কাব্য ভাবনা নিয়ে গোটা একটা কবিতা। কবিতা তৈরি হয় ভাব, ভাষা, ছন্দ অলঙ্কারের পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্যদিয়ে; আর কবির তৃতীয় নেত্রের প্রসাদে ব্যঞ্জনায় ও ইঙ্গিতে ধীরে ধীরে কাব্যশরীরের সঞ্চারিত হয় মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণ যা শুধু কবির একার নয়। লক্ষ জনের প্রাণেও স্বোত্তরণের প্রেরণা জোগায়। কিন্তু কবিতার সেই মৃতুঞ্জয়ী প্রাণ, প্রতিষ্ঠায় কবির যে ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয় তা নিতান্তাই এক আধ্যাত্মিক পথে হেঁটে পৌঁছাতে হয় সেই মহাশক্তির মুখোমুখি। তারপর যন্ত্রণা আর নিজের ভেতর উথাল পাথাল এক ভাবনা জ্বালাতে থাকে।
একজন কবি যখন কবিতা রচনা করেন তার অনেক আগে থেকে তাঁর ওপর ভর করে শৈল্পিক এক ভাব। আর সে ভাব কোথা থেকে আসে, কী ভাবে আসে সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়তো কোনো দিনই হবে না। তবে একথা সত্য কবি কখনো ইচ্ছে করলেই কবিতা লিখতে পারেন না। তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন রাতের পর রাত। সাধনা করতে হয় অনিন্দ্য এক সুন্দরের। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীতে তার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। তিনি লিখলেন, ‘বসে আছি হে কবে শুনিব তোমার বাণী/তুমি যাহা বলিবে তাই বলিব আমি কিছুই না জানি।’ ভাব না আসা পর্যন্ত তাঁর কিছুই করার থাকে না। ইচ্ছে করলেই লেখা যেতে পারে, তবে তা কতোটা কবিতা হয়ে ওঠে তা পাঠকই ভালো বুঝবেন। চলতে থাকে তার ভাবের একাগ্র সাধনা।
তারপর এক শুভক্ষণে যখন কুয়াশাছন্ন ধোঁয়াশার মধ্যদিয়ে সেই অলৌকিক ভাবের রশ্মি কবির মনমন্দিরে প্রবেশ করে। আর তখনি শুরু হয় কবির অন্তর্সত্তার অমীমাংসিত ব্যবচ্ছেদ। তখন ভাবকে বাণীতে রূপান্তরের জন্য তিনি পাগল হয়ে ওঠেন। সৃষ্টির তাড়নায় আত্মহারা হয়ে যান। নিজেকে ভাব আর বাণীর সেতুতে বাঁধতে মরিয়া। পৃথিবীর আর কোনো ভাবনা স্পর্শ করতে পারে না তখন কবিকে। পুড়তে থাকেন অলৌকিক এক সৌন্দার্যের আগুনে। আর সে যন্ত্রণা ঘণিভূত হতে থাকে বোঝা না বোঝার আলো আঁধারি ক্যানভাসে। নিজেকে হারিয়ে কবিমন মুহূর্তে ঈশ্বর হয়ে, ভাঙাগড়ার খেলায় মেতে ওঠেন। বারবার নিজেকে ভেঙে গড়তে থাকেন আপন মনে। কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নিজের প্রতি। কী এক সুন্দর যেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন, বুঝতে পারছেন অথচ ধরতে পারছেন না। এই না ধরতে পারার যন্ত্রণা তাকে সমাজ থেকে ছিটকে ফেলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে তখন তিনি হয়তো পাগল। যে সুন্দরের আরাধনায় তিনি পাগল, যার রূপ নির্মাণে দিন নেই রাত নেই নাওয়া নেই খাওয়া নেই। তাকে ধরতেই হবে। সমস্ত পৃথিবী এমনকি তার বাইরেও কবিমন দৌড়াতে থাকে। তারপর এক সময় ধরা দেয় সেই কাক্সিক্ষত সুন্দর। ভাব রূপ পায় বাণীতে। রচিত হয় কবিতা। কবি মুক্তি পান সৃষ্টির যন্ত্রণা থেকে। হেসে ওঠে তাঁর নতুন পৃথিবী।
মনের নান্দনিক নির্যাস আর ঐশ্বরিক ভাবের মিলনক্ষেত্রে শিল্পের যে সুন্দর ধরা দেয়, তার অনিবার্য গাঁথুনি কবিকে মুক্তি দেয় সব অন্তর ব্যবচ্ছেদের অমীমাংসিত যাতনা থেকে। আর তখন সমুদ্র মন্থনের মতো নিজেকে আবিষ্কার করেন মহাজাগতিক এক পবিত্রতায়।
এখানেই শেষ নয়। চলতে থাকে অলঙ্করণের কাজ। নিজের শব্দভা-ার থেকে শব্দ সাজাতে চলে ভাঙাগড়ার আরেক খেলা। যতোক্ষণ না অনিবার্য শব্দের সন্নিবেশে সব চাইতে সুন্দরতম উপস্থাপন ধরা না দিচ্ছে ততোক্ষণ কবি নিজের প্রতি কোনোভাবেই সন্তুষ্টু নন। এক্ষেত্রে একটা কবিতার জন্য কবিকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শ্রম দিতে হয়। সে শ্রম নির্মোহ এবং একান্তই শিল্পর জন্য দিয়ে থাকেন। তারপর আবার একদিন কবি নিজেকে আবিষ্কার করেন তাঁর পূর্ণ সৃষ্টির মধ্যে। সব থেকে বেরিয়ে এসে আবার মিশে যান সামাজিক মিছিলে। তখন তিনি নিজের লেখা কবিতা পড়ে অবিভূত হন। কী তাঁর সৃষ্টি। এযেন তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিলো না। যতোবার পড়েন নিজের কবিতা ততোবারই আবিষ্কার করেন নতুন নতুন বিষয়। প্রসারিত হতে থাকে ভাবনার মহাজগৎ। এভাবেই সাধারণ মানুষ থেকে একজন কবি আলাদা।
ব্যাপারটা যদি ধর্মের সাথে বিচার করি তবে দেখবো কবি আর নবী দুজনের কাছে আসে ঐশ্বরিক শিল্প। নবীর কাছে আসে বাণী। যা হুবহু লিপিবদ্ধ করতে হয়। তার কোনো অংশ বা অংশবিশেষ কোনোভাবেই পরিবর্তন পরিমার্জন বা সংশোধনযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে কবির কাছে আসে ভাব। আর সে ভাবকে বাণীতে রূপন্তরের দায়িত্ব কবির। ভাবকে বাণীতে রূপান্তর এবং তাতে অলঙ্করণের নেশা যখন কবিকে গ্রাস করে তখন তিনি শুধু ঐশ্বরিক ভাবের বাহন নন, নিজেও ঈশ্বর হয়ে ওঠেন। নবীর জগৎ সসীম, কবির জগৎ অসীম। নবী শুধু স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর বাণী প্রচার করেন। আর কবি ভাবের রথের সারথী হয়ে চষে বেড়ান বিশ্বব্রহ্মা-। চাষ করেন অনাগত শিল্পের। -

পৃথিবীর পরিচিত ভোর
এই মাঝ রাতে যখন
বন বিড়ালটাও গভীর ঘুমে মগ্ন
যখন পরিচিত চোখ মুখগুলো
রাত্রির ছাউনির নিচে শান্তির ঘুমে বিভোর
তখনো সেই মাঝ রাতে আমি জেগে আছি
কিন্তু কেনো?
সে উত্তর বেড়াতে গ্যাছে পশ্চিমের-
পরিচিত পিসির বাড়ি
যেখানে এখনো দিনের দেবতা হাঁসে
বৌদির কপালে আকা সকালের টিপে
আর রাত্রিগুলো ভোর হয় হলুদ জোছনায় ভিজে
তাই তো এখনো রাত্রি জাগতে ভালোলাগে-
ভালোলাগে ভুল করে-করে
নিজের ভুল ভাঙতে-আর ভুল ভাঙার পথকে
নতুনের হাত ধরাতে
যে হাত খুলে দেবে সব অন্ধ হৃদয়ের বন্ধ দোর
ফিরে পাবে পৃথিবী তার পরিচিত ভোর। -

অভিযোজন
আমার ভিতর একটা বাবুইপাখি ছিলো,
হাতে ছিলো সরল বুননশৈলী
একটা খরগোশ ছিলো , আর ছিলো কচ্ছপ,
নিজের ভিতরে দৌড়ঝাঁপ করে গড়পড়তা জীবন।
দৌড় দেখে যারা যারা হাততালি দিয়েছেন
তাদের অনেকেই ছিলেন মাংসাশী।শরীরে এখন শজারুর ঢাল আঁকতে জানি,
জিহ্বাকে লম্বালম্বি দুভাগ করে
দাঁতের নিচে খনন করতে পারি হেমলকের কুয়ো,
শিখেছি গোলাপকে ধুতরায় রূপান্তরের মন্ত্র,
বুকের ভিতর গজিয়ে নিতে জানি প্রকা- আর্সেনাল,
এখন গর্জন দিয়ে বার্তালাপ শুরু করে
মাংসাশীদের চিনে নিতে পারি সহজে। -

যদি কথা দাও
যদি কথা দাও সাজাবো সুখের নীড়
মখমল দিনে উড়াবো রঙিন ঘুড়ি
সন্ধ্যায় দেখবো উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল
মধ্যরাতে গাবো ঘুম পাড়ানিয়া গান।
স্মৃতির মিনারে জমে থাকা কালো ব্যথা
জল-জোছনায় ধুয়ে দেবো সারা রাত
ভালবাসার চিঠি দেবো আকাশের গায়ে
আলোয় ভরাবো পৃথিবীর নাভিমূল।
যদি কথা দাও ভাসাবো প্রীতির খেয়া
দেবো পথ পাড়ি যার নেই কোন সীমা
আঙিনায় খুলে দেবো সুন্দরের ডালা
স্বপ্নের মাঝেই স্বপ্ন হয়ে কাটাবো সময়।নিরবতা ভেঙে যদি কথা দাও তবে
আবার ফিরবো রূপকথার নায়ক হয়ে। -

শহীদ
টিকিট কাটিনি, তবুও
কার অপেক্ষায় জানি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেন?সহজ অংকের বুকে বুলেট লাগলে সাইরেন থেমে যায়
খুলে রাখি যুদ্ধের পোশাক
ঝর্ণার জলে ধুয়ে নিই রক্তাক্ত বুক
বেয়নেট খুলে নরম বিছানায় শুয়ে পড়ি।রেল লাইনের পাশে গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকে প্রেয়সী
সান্ধ্য প্রদীপের সাথে গল্প সাজান মা
ঘামে ভেজা চশমা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে
রক্তে ভেজা নক্ষত্র চিনতে ভুল হয় বাবার। -

মাৎস্যন্যায়
কিছু বড় মাছেদের বিকট রক্ত চক্ষু
কাছে এলেই নেমে আসে খড়্গ।কিছু সন্ন্যাসী মাছ বুকে ওম রেখে হাত বাড়ায়
কিছু নকল ওম অবিকল আসলের মতো।আলো আঁধারের তরঙ্গ না জেনে
সাঁতার শিখেছি আমি ছোট মাছ।কিছু ছোট মাছ বুক পেতে দেয় মধ্যস্রোতে
আলিঙ্গনে ভুলে যাই চোরাবালি রাত। -

বাংলা বানান নিয়ে কিছু কথা
ভাষার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখে তার শুদ্ধ চর্চার অন্যতম শর্ত হলো সে ভাষার বিশুদ্ধ বানানরীতি নিশ্চিতকরণ এবং তার ব্যবহারে সচেতন হওয়া। পৃথিবীর কোনো ভাষাই বিশৃঙ্খলতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি আর পারবেও না। যে ভাষার ব্যাকরণগত নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই সে ভাষা টিকে থাকতে পারে না। আবার একথাও মনে রাখা দরকার নদী যেমন চলার পথে বাঁকে বাঁকে তার ভা-ার থেকে অনেক কিছু ফেলে যায়। আবার কখনো সখনো নতুনকে গ্রহণ করে। তেমনি গতিশীল ভাষা চলার পথে অনেক কিছু ফেলে যায় আবার সময়ের প্রয়োজনে অনেক নতুনকে সাদরে গ্রহণ করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভাষার পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সেটা যদি সঙ্গত কারণে এবং যৌক্তিকতার সাথে আসে তবে সে পরিবর্তনকে মেনে নেয়া প্রত্যেকের কর্তব্য।
বাংলা ভাষার বানান নিয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন কথা উঠলেও আমি মনে করি বাংলা একাডেমি প্রমিত বানানের যে নিয়ম করে দিয়েছে তা আমাদের অনুসরণ করা কর্তব্য। যাতে ব্যাকরণসিদ্ধ পূর্বের নিয়মকে বলবৎ করা হয়েছে। আবার যে সব বানান দুই রকমভাবে প্রচলিত আছে বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য সে সব বানান একটা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বানানের যাতে কোনো বিভ্রাট না ঘটে সেজন্য বিকল্পহীন বানানরীতি করেছে বাংলা একাডেমি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলা একাডেমির বানানরীতি যাদের সর্বাগ্রে অনুসরণ করার কথা সেই সব সরকারি দফতর তোয়াক্কা করছে না প্রমিত বানানে। আর কেনোই বা করবে ভুল বানানের জন্য সেসব দফতরের কর্তাদের তো আর কৈফিয়ত দিতে হয় না। অন্যদিকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বানান নিয়ে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। যে যার ইচ্ছে মতো বানান লিখছেন। এ বিষয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। নব্বইয়ের দশকেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় তিনটা ভুল বানানের জন্য এক নম্বর কাটা হতো, কিন্তু এখন বানানের জন্য কোনো নম্বর কাটা হয় না। ফলে শুরু থেকে তারা বানানের প্রতি উদাসিন অবস্থায় বেড়ে উঠছে। যা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে উদ্বেগজনক। চলতি পথে পোস্টার ব্যানার এর কথা নাইবা বললাম।
আবার এসবের বাইরেও বাংলা বানানের নিয়ম না জানার কারণে অনেকে শুদ্ধ বানান লিখতে চাইলেও পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে বলবো যদি একটু কষ্ট করে আমরা বাংলা একাডেমি প্রণিত বাংলা বানানের নিয়ম জেনে শুদ্ধ বানান লিখতে অভ্যস্ত হই তাতে আমাদেরই ভাষার ব্যবহার শুদ্ধ হবে।
বাংলা একাডেমির নিয়মানুযায়ী আমরা যদি সামান্য কিছু সরল ব্যাকরণিক সূত্র মনে রাখতে পারি তবে কখনোই বানানে ভুল হবে না। আসুন বাংলা একাডেমির সে সূত্রগুলো নিয়ে এবার কথা বলি।
ই, ঈ, উ, ঊ এবং এদের কার চিহ্নের ব্যবহার ঃ বাংলা বানানে যেসব শব্দে দুটোরই ব্যবহার আছে সেসব শব্দে দীর্ঘ বাদ দিয়ে হ্রাস্য লিখতে হবে। অর্থাৎ ই,উ এবং তাদের কার চিহ্ন ি ু লিখতে হবে। সকল অতৎসম শব্দ অর্থাৎ তৎভব, দেশি, বিদেশি শব্দে ঈ, ঊ না হয়ে ই, উ এবং তাদের কারচিহ্ন ি ু হবে।
এই নিয়মে ‘ইদ’ ‘ইদগাহ’ ইমান’ ‘ঈ’ দিয়ে লেখা যাবে না। যদিও বহুল প্রচলিত তবুও আমাদের বানানরীতিতে তা ভুল। আর এই ভুলটা দীর্ঘদিন প্রচলেনের কারণে শুদ্ধটা কেউ মেনে নিতে চাইছেন না। যদিও ভাষার ক্ষেত্রে কোনো ভুল বানান দীর্ঘদিন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত থাকে তবে ওই ভুলটাই ভাষা গ্রহণ করে শুদ্ধতার মর্যাদা দেয়। যেহেতু বাংলা একাডেমির নির্দিষ্ট একটি নিয়মে ‘ঈদ’ ফারসি শব্দ হবার কারণে ‘ইদ’ হবে সেহেতু আমরা সঙ্গত বানানটার চর্চা শুরু করতে পারি। সে ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকাগুলোকে বেশি ভূমিকা রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।
‘কি’ এবং ‘কী’ এর ব্যবহার পূর্বনির্ধারিত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এ শব্দটা অহরহ ভুল করে থাকেন অনেকে। এখানে যা মনে রাখতে হবে তা হলো সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া বিশেষণ ও যোজক পদ রূপে কী শব্দটা ‘ঈ’ কার হবে। অন্য ক্ষেত্রে অব্যয়রূপে আসলে সেখানে ই কার হবে। যেমন- ‘তুমি কী সুন্দর!, ‘তুমি কি সুন্দর ?’ মনে রাখার জন্য আরো সহজ উপায় হলো যে ‘কি’ এর জবাব ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ হবে সে ‘কি’ তে ‘ই-কার হবে। আর যেখানে কোনো প্রশ্ন বা জবাবের বিষয় থাকবে না সেখানে ঈ-কার হবে। অনুরূপ অতৎসম শব্দের সাথে যদি ‘আলী’ প্রত্যয় যুক্ত হয় তবে তা হ্রাস ই-কার ি হবে। যেমন-সোনালি, রূপালি। পদাশ্রিত নির্দেশকটি ই-কার ি হবে যেমন-লোকটি, কলমটি।
উচ্চারণের নিয়মানুযায়ী ‘অ’ যখন ‘ও’ হয়ে যায় তখন ওই শব্দে ও-কার লেখা যাবে। যেমন- কোনো।
রেফের এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব কখনোই হবে না। এখানে মনে রাখা দরকার দ্বিত্বব্যঞ্জনবর্ণের একটি ব্যঞ্জন লুপ্ত হয়ে পূর্বের ব্যঞ্জনবর্ণে রেফের রূপ ধারণ করেছে। যেমন ‘কাত্তিক’ শব্দটি ‘কার্তিক’ লিখতে হবে। কিন্তু ‘কার্ত্তিক’ লেখা যাবে না। সন্ধির ক্ষেত্রে ক- বর্গ যদি পরে থাকে অর্থাৎ ক, খ, গ, ঘ এ চারটি বর্ণ পরে থাকলে তৎসম শব্দে পূর্বের ‘ম’ এর স্থলে ‘ং’ (অনুস্বর) লিখতে হবে। যেমন সম+গীত=সংগীত। কিন্তু দুঃখের বিষয় সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সেটি ভুল করে থাকে। সন্ধিবদ্ধ না হলে ‘ঙ’ লিখতে হবে। যেমন-শঙ্কা, ব্যাঙ্ক, অঙ্ক। এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বাংলাদেশের সংবিধানে অনুস্বর ‘ং’ দিয়ে লেখা আছে সে জন্যে নিয়ম ছাড়ায় ‘বাংলাদেশ’ লিখতে হবে। তৎসম শব্দে মূল শব্দের সাথে যদি ‘ইন’ প্রত্যয়ান্তে ঈ- কার ‘ ী ’ হয় এবং সেটি সমাসবদ্ধ হলে ই- কার ‘ ি ’ লিখতে হবে। তবে সমাসবদ্ধ ছাড়া দীর্ঘ ঈ-কার ‘ ী’ থাকবে। যেমন গুণী- গুণিজন, প্রাণী- প্রাণিসম্পদ। আবার একই শব্দে যদি ‘ত’ প্রত্যয় যুক্ত হয় সেক্ষেত্রেও হ্রস্ব ই-কার হবে। যেমন-মন্ত্রী-মন্ত্রিত্ব, প্রতিযোগী- প্রতিযোগিতা। শব্দের শেষে কোনো অবস্থাতে বিসর্গ ঃ থাকবে না।
মূর্ধন্য ‘ণ’ এবং দন্ত্যন ‘ন’-এর ক্ষেত্রে তৎসম বানানে ব্যাকরণসিদ্ধ পূর্বের সকল নিয়ম বলবৎ থাকবে। সেখানে ণ- ত্ব বিধান ষ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ র, ঋ, ষ এর পরে মধূর্ন্য ‘ণ’ লিখতে হবে। ট-বর্গের সাথে ‘ন’ যুক্ত হলে তা মর্ধূন্য হবে। যেমন-কণ্ঠ, ঘণ্টা। আর অতৎসম শব্দের বানানে অর্থাৎ তৎভব, দেশি, বিদেশি শব্দে কখনোই মূর্ধন্য ‘ণ’ হবে না। সেখানে সর্বদায় দন্ত্যন লিখতে হবে। তবে অতৎসম শব্দে ট-বর্গের সাথে যদি ‘ন’ যুক্ত হয় তবে তাও দন্ত্যন লিখতে হবে।
শ, ষ, স এ তিনটি বর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিদেশি শব্দে কখনোই মূর্ধন্য- ষ লেখা যাবে না। যদি ইংরেজি শব্দে ঐঝ হয় এবং আরবি শব্দে ‘শিন’ হয় তবে তালব্য ‘শ’ লিখতে হবে। অন্য সব ক্ষেত্রে দন্ত্যস লিখতে হবে।
এবার আসা যাক কোন শব্দ একসাথে লিখতে হবে কোন শব্দ একসাথে লেখা যাবে না। যে সব শব্দ সমাসবদ্ধ তা একসাথে লিখতে হবে। যেমন-উদ্বেগজনক। বিশেষণ পদ সাধারণত পরবর্তী পদের সাথে যুক্ত হবে না। যেমন- শুভ সকাল।
না বাচক ‘না’ শব্দের পরে সম্পূর্ণ আলাদা পদ হিসেবে বসবে। আবার না বাচক ‘নি’ সমাসবদ্ধ হিসেবে আসলে পূর্বপদের সাথে যুক্ত হবে। এছাড়াও পূর্বে না বাচক উপসর্গ উত্তর পদের সাথে যুক্ত থাকবে। যেমন ‘জানি না, বলা হয়নি, নাবালক। অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ প্রত্যয় শব্দের সাথে কার চিহ্ন রূপে না বসে পূর্ণ বর্ণ লিখতে হবে। যেমন- আজও। নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের কার চিহ্ন যুক্ত না হয়ে পূর্ণ বর্ণ লিখতে হবে। যেমন- অবশ্যই।
ক্রিয়া পদে হ্রস্ব ই এবং অন্তস্থো ‘য়’ এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বাক্যে কর্তা যদি উত্তম পুরুষ হয় তবে ক্রিয়া পদে হ্রস্ব ই হবে। আর কর্তা যদি নাম পুরুষ হয় তবে অন্তস্থো ‘য়’ হবে। যেমন ‘আমি দেখতে চাই’। বাক্যে ‘আমি’ উত্তম পুরুষ তাই ক্রয়াপদ ‘চাই’ তে হ্রস্ব ই হয়েছে। আবার ‘সে’ আমাকে দেখতে চায় বাক্যে ‘সে’ নাম পুরুষ হওয়াতে ক্রিয়াপদ ‘চায়’ তে অন্তস্থো ‘য়’ হয়েছে।
এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অসচেতনতার কারণে আমরা বিশেষণ এর সাথে ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত করে বিশেষণ করার চেষ্টা করি। যা ভুল। শুধুমাত্র বিশেষ্য পদের সাথে ‘তা’ প্রত্যয়যুক্ত করে বিশেষণ করা যেতে পারে। যেমন ‘দারিদ্র্য’ শব্দটি বিশেষণ। তার সাথে ‘তা’ প্রত্যয়যুক্ত করে ‘দারিদ্র্যতা’ লেখার কোনো প্রয়োজন নেই। সেটা হবে সম্পূর্ণ ভুল। যদি লিখতে হয় তবে এর বিশেষ্য ‘দরিদ্র’ শব্দের সাথে ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত করে দরিদ্রতা লিখতে হবে। অনুরূপ ‘দৈন্য’ এর সাথে তা প্রত্যয় যুক্ত করা যাবে না। করতে হবে ‘দীন’ এর সাথে ‘দীনতা’।
এ সব ছাড়াও অনেক শব্দ বানানের কারণে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। আর সে ভুলগুলো অনেক গুণিমানুষও করে থাকেন। যেমন-‘পাশ’ শব্দের অর্থ পার্শ্ব এবং ‘পাস’ শব্দের অর্থ উত্তীর্ণ। ‘মানসিক’ অর্থ মনসংক্রান্ত আবার ‘মানুষিক’ অর্থ মানুষ দ্বারা। এখন মানসিক নির্যাতন আর মানুষিক নির্যাতন এর পার্থক্য আমরা স্পষ্ট হতে পারি। চন্দ্রবিন্দু’র কারণে অর্থ পরিবর্তন হয় যেসব শব্দ তার মধ্যে কয়েকটি হলো- ফোটা (প্রস্ফুটিত), আঁধার (অন্ধকার), আধার (খাদ্য, পাত্র), আশ (আকাক্সক্ষা, আঁশ (তন্তু), কাটা (কর্তন), কাঁটা (কণ্টক) এভাবে অনেক শব্দ আছে যার সঠিক ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
মনে রাখতে হবে আলোচিত সকল নিয়মের বাইরে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নামে যে বানান লেখেন সে ক্ষেত্রে সেই বানানই লিখতে হবে।তথ্য সূত্র:
১) বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানোর নিয়ম
২) বানান বোধনী
৩) বাংলা ব্যাকরণের মূল পাঠ।
ভাষার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখে তার শুদ্ধ চর্চার অন্যতম শর্ত হলো সে ভাষার বিশুদ্ধ বানানরীতি নিশ্চিতকরণ এবং তার ব্যবহারে সচেতন হওয়া। পৃথিবীর কোনো ভাষাই বিশৃঙ্খলতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি আর পারবেও না। যে ভাষার ব্যাকরণগত নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই সে ভাষা টিকে থাকতে পারে না। আবার একথাও মনে রাখা দরকার নদী যেমন চলার পথে বাঁকে বাঁকে তার ভা-ার থেকে অনেক কিছু ফেলে যায়। আবার কখনো সখনো নতুনকে গ্রহণ করে। তেমনি গতিশীল ভাষা চলার পথে অনেক কিছু ফেলে যায় আবার সময়ের প্রয়োজনে অনেক নতুনকে সাদরে গ্রহণ করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভাষার পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সেটা যদি সঙ্গত কারণে এবং যৌক্তিকতার সাথে আসে তবে সে পরিবর্তনকে মেনে নেয়া প্রত্যেকের কর্তব্য।
বাংলা ভাষার বানান নিয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন কথা উঠলেও আমি মনে করি বাংলা একাডেমি প্রমিত বানানের যে নিয়ম করে দিয়েছে তা আমাদের অনুসরণ করা কর্তব্য। যাতে ব্যাকরণসিদ্ধ পূর্বের নিয়মকে বলবৎ করা হয়েছে। আবার যে সব বানান দুই রকমভাবে প্রচলিত আছে বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য সে সব বানান একটা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বানানের যাতে কোনো বিভ্রাট না ঘটে সেজন্য বিকল্পহীন বানানরীতি করেছে বাংলা একাডেমি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলা একাডেমির বানানরীতি যাদের সর্বাগ্রে অনুসরণ করার কথা সেই সব সরকারি দফতর তোয়াক্কা করছে না প্রমিত বানানে। আর কেনোই বা করবে ভুল বানানের জন্য সেসব দফতরের কর্তাদের তো আর কৈফিয়ত দিতে হয় না। অন্যদিকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বানান নিয়ে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। যে যার ইচ্ছে মতো বানান লিখছেন। এ বিষয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। নব্বইয়ের দশকেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় তিনটা ভুল বানানের জন্য এক নম্বর কাটা হতো, কিন্তু এখন বানানের জন্য কোনো নম্বর কাটা হয় না। ফলে শুরু থেকে তারা বানানের প্রতি উদাসিন অবস্থায় বেড়ে উঠছে। যা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে উদ্বেগজনক। চলতি পথে পোস্টার ব্যানার এর কথা নাইবা বললাম।
আবার এসবের বাইরেও বাংলা বানানের নিয়ম না জানার কারণে অনেকে শুদ্ধ বানান লিখতে চাইলেও পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে বলবো যদি একটু কষ্ট করে আমরা বাংলা একাডেমি প্রণিত বাংলা বানানের নিয়ম জেনে শুদ্ধ বানান লিখতে অভ্যস্ত হই তাতে আমাদেরই ভাষার ব্যবহার শুদ্ধ হবে।
বাংলা একাডেমির নিয়মানুযায়ী আমরা যদি সামান্য কিছু সরল ব্যাকরণিক সূত্র মনে রাখতে পারি তবে কখনোই বানানে ভুল হবে না। আসুন বাংলা একাডেমির সে সূত্রগুলো নিয়ে এবার কথা বলি।
ই, ঈ, উ, ঊ এবং এদের কার চিহ্নের ব্যবহার ঃ বাংলা বানানে যেসব শব্দে দুটোরই ব্যবহার আছে সেসব শব্দে দীর্ঘ বাদ দিয়ে হ্রাস্য লিখতে হবে। অর্থাৎ ই,উ এবং তাদের কার চিহ্ন ি ু লিখতে হবে। সকল অতৎসম শব্দ অর্থাৎ তৎভব, দেশি, বিদেশি শব্দে ঈ, ঊ না হয়ে ই, উ এবং তাদের কারচিহ্ন ি ু হবে।
এই নিয়মে ‘ইদ’ ‘ইদগাহ’ ইমান’ ‘ঈ’ দিয়ে লেখা যাবে না। যদিও বহুল প্রচলিত তবুও আমাদের বানানরীতিতে তা ভুল। আর এই ভুলটা দীর্ঘদিন প্রচলেনের কারণে শুদ্ধটা কেউ মেনে নিতে চাইছেন না। যদিও ভাষার ক্ষেত্রে কোনো ভুল বানান দীর্ঘদিন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত থাকে তবে ওই ভুলটাই ভাষা গ্রহণ করে শুদ্ধতার মর্যাদা দেয়। যেহেতু বাংলা একাডেমির নির্দিষ্ট একটি নিয়মে ‘ঈদ’ ফারসি শব্দ হবার কারণে ‘ইদ’ হবে সেহেতু আমরা সঙ্গত বানানটার চর্চা শুরু করতে পারি। সে ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকাগুলোকে বেশি ভূমিকা রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।
‘কি’ এবং ‘কী’ এর ব্যবহার পূর্বনির্ধারিত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এ শব্দটা অহরহ ভুল করে থাকেন অনেকে। এখানে যা মনে রাখতে হবে তা হলো সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া বিশেষণ ও যোজক পদ রূপে কী শব্দটা ‘ঈ’ কার হবে। অন্য ক্ষেত্রে অব্যয়রূপে আসলে সেখানে ই কার হবে। যেমন- ‘তুমি কী সুন্দর!, ‘তুমি কি সুন্দর ?’ মনে রাখার জন্য আরো সহজ উপায় হলো যে ‘কি’ এর জবাব ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ হবে সে ‘কি’ তে ‘ই-কার হবে। আর যেখানে কোনো প্রশ্ন বা জবাবের বিষয় থাকবে না সেখানে ঈ-কার হবে। অনুরূপ অতৎসম শব্দের সাথে যদি ‘আলী’ প্রত্যয় যুক্ত হয় তবে তা হ্রাস ই-কার ি হবে। যেমন-সোনালি, রূপালি। পদাশ্রিত নির্দেশকটি ই-কার ি হবে যেমন-লোকটি, কলমটি।
উচ্চারণের নিয়মানুযায়ী ‘অ’ যখন ‘ও’ হয়ে যায় তখন ওই শব্দে ও-কার লেখা যাবে। যেমন- কোনো।
রেফের এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব কখনোই হবে না। এখানে মনে রাখা দরকার দ্বিত্বব্যঞ্জনবর্ণের একটি ব্যঞ্জন লুপ্ত হয়ে পূর্বের ব্যঞ্জনবর্ণে রেফের রূপ ধারণ করেছে। যেমন ‘কাত্তিক’ শব্দটি ‘কার্তিক’ লিখতে হবে। কিন্তু ‘কার্ত্তিক’ লেখা যাবে না। সন্ধির ক্ষেত্রে ক- বর্গ যদি পরে থাকে অর্থাৎ ক, খ, গ, ঘ এ চারটি বর্ণ পরে থাকলে তৎসম শব্দে পূর্বের ‘ম’ এর স্থলে ‘ং’ (অনুস্বর) লিখতে হবে। যেমন সম+গীত=সংগীত। কিন্তু দুঃখের বিষয় সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সেটি ভুল করে থাকে। সন্ধিবদ্ধ না হলে ‘ঙ’ লিখতে হবে। যেমন-শঙ্কা, ব্যাঙ্ক, অঙ্ক। এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বাংলাদেশের সংবিধানে অনুস্বর ‘ং’ দিয়ে লেখা আছে সে জন্যে নিয়ম ছাড়ায় ‘বাংলাদেশ’ লিখতে হবে। তৎসম শব্দে মূল শব্দের সাথে যদি ‘ইন’ প্রত্যয়ান্তে ঈ- কার ‘ ী ’ হয় এবং সেটি সমাসবদ্ধ হলে ই- কার ‘ ি ’ লিখতে হবে। তবে সমাসবদ্ধ ছাড়া দীর্ঘ ঈ-কার ‘ ী’ থাকবে। যেমন গুণী- গুণিজন, প্রাণী- প্রাণিসম্পদ। আবার একই শব্দে যদি ‘ত’ প্রত্যয় যুক্ত হয় সেক্ষেত্রেও হ্রস্ব ই-কার হবে। যেমন-মন্ত্রী-মন্ত্রিত্ব, প্রতিযোগী- প্রতিযোগিতা। শব্দের শেষে কোনো অবস্থাতে বিসর্গ ঃ থাকবে না।
মূর্ধন্য ‘ণ’ এবং দন্ত্যন ‘ন’-এর ক্ষেত্রে তৎসম বানানে ব্যাকরণসিদ্ধ পূর্বের সকল নিয়ম বলবৎ থাকবে। সেখানে ণ- ত্ব বিধান ষ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ র, ঋ, ষ এর পরে মধূর্ন্য ‘ণ’ লিখতে হবে। ট-বর্গের সাথে ‘ন’ যুক্ত হলে তা মর্ধূন্য হবে। যেমন-কণ্ঠ, ঘণ্টা। আর অতৎসম শব্দের বানানে অর্থাৎ তৎভব, দেশি, বিদেশি শব্দে কখনোই মূর্ধন্য ‘ণ’ হবে না। সেখানে সর্বদায় দন্ত্যন লিখতে হবে। তবে অতৎসম শব্দে ট-বর্গের সাথে যদি ‘ন’ যুক্ত হয় তবে তাও দন্ত্যন লিখতে হবে।
শ, ষ, স এ তিনটি বর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিদেশি শব্দে কখনোই মূর্ধন্য- ষ লেখা যাবে না। যদি ইংরেজি শব্দে ঐঝ হয় এবং আরবি শব্দে ‘শিন’ হয় তবে তালব্য ‘শ’ লিখতে হবে। অন্য সব ক্ষেত্রে দন্ত্যস লিখতে হবে।
এবার আসা যাক কোন শব্দ একসাথে লিখতে হবে কোন শব্দ একসাথে লেখা যাবে না। যে সব শব্দ সমাসবদ্ধ তা একসাথে লিখতে হবে। যেমন-উদ্বেগজনক। বিশেষণ পদ সাধারণত পরবর্তী পদের সাথে যুক্ত হবে না। যেমন- শুভ সকাল।
না বাচক ‘না’ শব্দের পরে সম্পূর্ণ আলাদা পদ হিসেবে বসবে। আবার না বাচক ‘নি’ সমাসবদ্ধ হিসেবে আসলে পূর্বপদের সাথে যুক্ত হবে। এছাড়াও পূর্বে না বাচক উপসর্গ উত্তর পদের সাথে যুক্ত থাকবে। যেমন ‘জানি না, বলা হয়নি, নাবালক। অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ প্রত্যয় শব্দের সাথে কার চিহ্ন রূপে না বসে পূর্ণ বর্ণ লিখতে হবে। যেমন- আজও। নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের কার চিহ্ন যুক্ত না হয়ে পূর্ণ বর্ণ লিখতে হবে। যেমন- অবশ্যই।
ক্রিয়া পদে হ্রস্ব ই এবং অন্তস্থো ‘য়’ এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বাক্যে কর্তা যদি উত্তম পুরুষ হয় তবে ক্রিয়া পদে হ্রস্ব ই হবে। আর কর্তা যদি নাম পুরুষ হয় তবে অন্তস্থো ‘য়’ হবে। যেমন ‘আমি দেখতে চাই’। বাক্যে ‘আমি’ উত্তম পুরুষ তাই ক্রয়াপদ ‘চাই’ তে হ্রস্ব ই হয়েছে। আবার ‘সে’ আমাকে দেখতে চায় বাক্যে ‘সে’ নাম পুরুষ হওয়াতে ক্রিয়াপদ ‘চায়’ তে অন্তস্থো ‘য়’ হয়েছে।
এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অসচেতনতার কারণে আমরা বিশেষণ এর সাথে ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত করে বিশেষণ করার চেষ্টা করি। যা ভুল। শুধুমাত্র বিশেষ্য পদের সাথে ‘তা’ প্রত্যয়যুক্ত করে বিশেষণ করা যেতে পারে। যেমন ‘দারিদ্র্য’ শব্দটি বিশেষণ। তার সাথে ‘তা’ প্রত্যয়যুক্ত করে ‘দারিদ্র্যতা’ লেখার কোনো প্রয়োজন নেই। সেটা হবে সম্পূর্ণ ভুল। যদি লিখতে হয় তবে এর বিশেষ্য ‘দরিদ্র’ শব্দের সাথে ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত করে দরিদ্রতা লিখতে হবে। অনুরূপ ‘দৈন্য’ এর সাথে তা প্রত্যয় যুক্ত করা যাবে না। করতে হবে ‘দীন’ এর সাথে ‘দীনতা’।
এ সব ছাড়াও অনেক শব্দ বানানের কারণে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। আর সে ভুলগুলো অনেক গুণিমানুষও করে থাকেন। যেমন-‘পাশ’ শব্দের অর্থ পার্শ্ব এবং ‘পাস’ শব্দের অর্থ উত্তীর্ণ। ‘মানসিক’ অর্থ মনসংক্রান্ত আবার ‘মানুষিক’ অর্থ মানুষ দ্বারা। এখন মানসিক নির্যাতন আর মানুষিক নির্যাতন এর পার্থক্য আমরা স্পষ্ট হতে পারি। চন্দ্রবিন্দু’র কারণে অর্থ পরিবর্তন হয় যেসব শব্দ তার মধ্যে কয়েকটি হলো- ফোটা (প্রস্ফুটিত), আঁধার (অন্ধকার), আধার (খাদ্য, পাত্র), আশ (আকাক্সক্ষা, আঁশ (তন্তু), কাটা (কর্তন), কাঁটা (কণ্টক) এভাবে অনেক শব্দ আছে যার সঠিক ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
মনে রাখতে হবে আলোচিত সকল নিয়মের বাইরে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নামে যে বানান লেখেন সে ক্ষেত্রে সেই বানানই লিখতে হবে।তথ্য সূত্র:
১) বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানোর নিয়ম
২) বানান বোধনী
৩) বাংলা ব্যাকরণের মূল পাঠ। -

তালায় সিকান্দার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত
তালা প্রতিনিধি: শুক্রবার সন্ধ্যায় তালার তেঁতুলিয়ায় পক্ষকালব্যাপি সিকান্দার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া।
সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেনের পরিচালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, কবি সিকান্দার আবু জাফরের ছোট ভাই, একুশে পদক প্রাপ্ত চিত্র শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল হক, তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা আ’লীগ নেতা ফিরোজ কামাল শুভ্র, তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সরদার মশিয়ার রহমান প্রমুখ।সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক হোসেন ও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুস সামাদকে সিকান্দার পদকে ভুষিত করা হয়।
-
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা অবৈধ্য গাইড বই বাজারজাত করতে সাতক্ষীরায় আসছেন বিএনপি নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা গাইড বই বাজারজাত করতে সাতক্ষীরায় আসছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। ওই প্রতিনিধি দলের সাথে সফর সঙ্গী হিসাবে আসছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা মমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঢাকার বিএনপি নেতা কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল।
কয়েকজন পুস্তক ব্যবসায়ী জানান, কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল ঢাকা মহানগরের সূত্রাপুুর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং ২০১৩-১৪ সালে সুত্রাপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার অভিযোগ থাকায় তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। কিন্তু তিনি পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটনের আর্শীবাদ পুষ্ট হওয়ায় নাশকতার আসামি হয়েও বুলবুল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনোনীত হন। দায়িত্ব পাওয়ার পরে বুলবুল স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রকাশনীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সারা বাংলাদেশব্যাপি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ নোট-গাইড সহায়ক পাঠ্য বইয়ের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।২০১৬-২০১৭ ও ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও তার আর্শীবাদ পুষ্ট পুস্তক ব্যবসায়ীরা তার কথামত জেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্য তালিকায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই অন্তর্ভুক্ত করে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেরুয়াারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মো. জাকির সাতক্ষীরায় অসাধু পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের স্বাধীনতা বিরোধী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই বাজারজাত বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সাতক্ষীরার পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির বর্তমান আহবায়ক যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় অন্যতম প্রধান আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপন ভাইপো ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম বাবু ও যুগ্ম আহবায়ক(১) বিএনপি-জামায়াত পন্থী কাইয়ুম সরকারকে চিঠি দিয়ে অবগত করেন।
কিন্তু এখনও জেলার পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এই বই বাজারজাত করে ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত রেখেছে। আর তাদের ওই স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই বাজারজাত করতে সার্বিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরায় আগমন করছেন বিএনপি নেতা বুলবুল।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতা বুলবুল সাতক্ষীরার উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে ওই সব গাইড জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার তদবির নিয়ে আসছেন। আর এ কারণে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সংঘস্মারক ও সংঘবিধির ১৩ ধারা মোতাবেক সদস্য পদের অযোগ্যতা। জ) কোন প্রকাশনী ও পুস্তক ব্যবসায়ী টাকার বিনিময়ে বই পাঠ্য করাইলে তার সদস্য পদ থাকবে না। ট) গ্রন্থসত্ত্ব আইন: রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বই প্রকাশ ও বিক্রয় করিলে। কিন্তু সারা দেশব্যাপি প্রকাশকরা টাকার বিনিময়ে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় বই পাঠ্য করায়। ফলে সংঘবিধি ১৩ জ ও ১৩ ট অনুযায়ী কোন প্রকাশনীর সদস্যপদ থাকার কথা না।
এঘটনায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আগে বিএনপি করতাম। এখন করি না।’ ১৩’র জ ও ট সম্পর্কে বললে তিনি এড়িয়ে যান। এঘটনায় সাতক্ষীরার পুস্তক ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে, সাতক্ষীরার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোন বই পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলার সচেতন মহল। -

জনতোপের মুখে দূর্ণীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধের কাগজপত্র গ্রহণ করতে বাধ্য হলেন ডিডিএলজি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সদরের লাবসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় টনক নড়ে প্রশাসনের। ফলে গতকাল পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান। তিনি এসেই বলেন, ‘আমি রুটিন মাফিক পরিদর্শনে এসেছি।’ এসময় ইউপির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ও স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে পালাতক চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধের দূর্ণীতির অভিযোগ সম্বলিত কাগজপত্র তার নিকট জমা দিতে গেলে তিনি ‘নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যে মিলমিশ করে নিতে বলেন’।
উক্ত তদন্ত কর্মকর্তার দূর্ণীতিবাজ বিএনপির সন্ত্রাসী নেতার পক্ষ গ্রহণ করায় প্রথম থেকেই উপস্থিত জনতা ও ইউপি সদস্যরা মনে মনে ক্ষব্ধ হতে থাকে। এমতাবস্থায় তদন্ত কর্মকর্তার উক্ত কথায় সবাই বিক্ষেভে ফেটে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান অভিযোগ গ্রহণ করেণ।
গত সোমবার বিকেলে লাবসা ইউনিয়ন পরিষদ পরির্দশনে আসেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সচিব আব্দুর রাজ্জাক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বাবু, মেম্বর মাসুদা বেগম, ফেরদৌসী ইসলাম, রামপ্রসাদ সরকার, সাঈদ আলী সরদার, মোঃ আজিজুল ইসলাম, মোঃ আসাদুজ্জামান, মোঃ কাজী মনিরুল ইসলাম, জামির হোসেন, আব্দুল হান্নান প্রমুখ। উপস্থিত ইউপি সচিবসহ ইউপি সদস্যবৃন্দ প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে ডিডিএলজির সামনে লিখিত মতামত ব্যক্ত করেন।
তদন্তকালে ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৩৭ লক্ষ টাকা এবং হাটের ১২ লক্ষ টাকার প্রকল্পের সকল ফাইল আমার নিকট থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের নিকট নিয়ে নেন। যা তার নিজ হেফাজতে আছে।
বর্তমান সরকারের উর্দ্ধতন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা কিভাবে ২০১৩ সালের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত বর্তমানে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও দূর্ণীতিবাজ চেয়ারম্যানের পক্ষে ভূমিকা গ্রহণ করায় স্থানীয় জনগণ ও সুধীমহলের মধ্যে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মত তদন্তকর্মকর্তার ভূমিকা বতর্মন সরকারের রাজনৈতিক চেতনার প্রতিপক্ষ!উল্লেখ্য, সম্প্রতি লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজ না করে ১২লক্ষ ১৫হাজার ৮৮৮ টাকা এবং হাট ইজারা থেকে পাওয়া ৩৭লক্ষ ২৮হাজার ৭২৩টাকা মোট ৪৯লক্ষ ৪৪হাজার ৬১১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। এঘটনায় রোববার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম নাশকতা মামলায় পলাতক থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বাবু এ ঘটনায় রবিবার বিকেলে জরুরি সভার আহ্বান করেন। সভায় চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের দুর্নীতি তুলে ধরেন ইউপি সদস্যরা।
তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে রাজি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রমে আলিম চেয়ারম্যানের দূর্ণীতির বিষয়টি প্রাধান্য পায় এবং সকল কাগজপত্র গহণপূর্বক জেলা প্রশাসকের নিকট বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে উপস্থিত সদস্য ও জনগণকে আশ্বস্ত করে এলাক ত্যাগ করেন। স্থানীয় অভিজ্ঞ মহলের অভিমত চেয়ারম্যানের দূর্ণীতির সহযোগী ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাক লাবসা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকলে তদন্ত নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
-

পাইকগাছায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: পাইকগাছায় মিড-ডে-মিল কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সরল দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে খাবার পরিবেশন করেন মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জি,এম,এম, আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কাউন্সিলর গাজী আব্দুস সালাম, প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান, আমজাদ আলী গাজী। বক্তব্য রাখেন, শিক্ষক মুজিবর রহমান, ফাতেমা খাতুন, ছায়রা বেগম, আব্দুস সালাম, সমীরণ, খাবার প্রদানকারী অজিয়ার রহমান, পায়েল জামান, শিক্ষার্থী আসমা ও পলি খাতুন।
-

আজকের দিনটি কেমন যাবে?
আজ আপনার জন্ম হলে পাশ্চাত্য মতে আপনি কুম্ভ রাশির জাতক জাতিকা। আপনার ওপর প্রভাবকারী গ্রহ ইউরেনাস ও শনি। ১৭ তারিখে জন্ম হবার কারণে আপনার উপর শনির প্রভাব প্রবল। আপনার শুভ সংখ্যা: ৮,১৭,২৬। শুভ বর্ণ: নীলা ও গোলাপী। শুভ বার ও গ্রহ : রবি ও শনি। শুভ রতœ: গার্নেট ও নীলা।
চন্দ্রাবস্থান:আজ চন্দ্র তুলা রাশিতে অবস্থান করবে। ৬ষ্ঠী তিথি সকাল : ০৯:৫৬ পর্যন্ত, পরে ৭মী তিথি চলবে।
মেষ রাশি (২১ মার্চ-২০ এপ্রিল):আজ বন্ধের দিনে মেষ রাশির জাতক জাতিকারা সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। জীবন সাথীকে নিয়ে বই-মেলায় ঘুরতে যেতে পারেন। খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায় ভালো আয় হতে পারে। আজ অংশীদারী ব্যবসায় অংশীদারের সাথে কোনো নতুন সাইট ভিজিটে যেতে পারেন। অবিবাহিতদের বিয়ের যোগ প্রবল।
বৃষ রাশি ( ২১ এপ্রিল-২০ মে):আজ বৃষ রাশির জাতিকারা সাংসারিক কাজে খুব ব্যস্ত থাকতে পারেন। গৃহে কোনো অতিথির আগমনের সম্ভাবনা। কাজের লোকেদের ওপর অকারনে চেচামেচি না করাই ভালো। আপনার মূল্যবান দ্রব্যাদি সাবধানে রাখুন। বাহিরে বেড় হওয়ার সময় মূল্যবাণ দ্রব্যাদি সতর্কতার সাথে বহন করুন। হটাৎ ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।
মিথুন রাশি (২১ মে-২০ জুন): মিথুনের বন্ধুরা আজ সন্তানের সাথে ভালো সময় কাটাতে পারেন। প্রেমিক প্রেমিকাদের বই মেলায় বেড়াতে যাওয়ার যোগ প্রবল। পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো পার্কে বেড়ানোর সুযোগ চলে আসবে। শিল্পীদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে। চিত্রকর ও নাট্যাভিনেতারা বন্ধের দিনেও ব্যস্ত সময় পার করবেন।
কর্কট রাশি (২১ জুন-২০ জুলাই): পারিবারিক কাজে ব্যস্ততার দিন। গৃহ সংস্কার বা কোনো ফার্ণিচার মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। বাড়ীতে আত্মীয় স্বজনের আগমন হতে পারে। পারিবারিক পরিবেশ অনুকূল থাকবে। মায়ের শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয়ে উঠবে। যানবাহ লাভের যোগ প্রবল। কোনো আত্মীয়র সহায়তায় কিছু সম্পত্তি সংক্রান্ত কাজের সমাধান হতে পারে।
সিংহ রাশি (২১জুলাই-২১ আগষ্ট): আজ সিংহ রাশির জাতক জাতিকাদের সাহস ও পরাক্রম বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবেশীদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ভালো সংবাদ আশা করা যায়। ছোট ভাই বোনের সাথে কোনো মেলায় বেড়াতে যেতে পারেন। সাংবাদিক ও প্রকাশকদের কাজের চাপ বৃদ্ধি পাবে।
কন্যা রাশি (২২ আগষ্ট-২২ সেপ্টেম্বর): আর্থিক অবস্থা ভালো হয়ে উঠবে। আজ খাদ্য ব্যবসায়ী ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা ভালো আয় করতে পারবেন। খুচরা বিক্রেতাদের বেচাকেনা বৃদ্ধি পাবে। বাড়ীতে শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর আগমন হতে পারে। আজ কোনো ব্যক্তিগত ধারের টাকা ফেরত পেতে পারেন।
তুলা রাশি (২৩ সেপ্টেম্বর-২১ অক্টোবর): আপনার প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে। কোনো আলোচনা সভায় আপনার সিদ্ধান্তকে সকলে মেনে নিতে পারেন। শারীরিক অবস্থা ভালো হয়ে উঠবে। মনের জোর ফিরে পাবেন। কোনো বন্ধুর সাহায্য পেতে পারেন। ব্যবসায়ীরা কোনো সুদূর পরিকল্পনা করতে চলেছেন। কাজ কর্মে জীবন সাথীর সাহায্য পাবেন।
বৃশ্চিক রাশি (২২ অক্টোবর-২০ নভেম্বর): আজ কোথাও ভ্রমনে যেতে পারেন। বৈদেশীক কাজে ব্যবসায়ীদের বিদেশ যাওয়ার যোগ প্রবল। ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায় কোনো চুক্তি করতে পারেন। বিদেশ থেকে কোনো ভালো সংবাদ পেতে পারেন। কোনো আত্মীয়র দেশে আগমনের যোগ দেখা যায়।
ধনু রাশি (২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর): আজ বড় বোনের বিয়ের যোগ প্রবল। বন্ধুর সাথে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকতে হতে পারে। ব্যবসায় কিছু লাভের আশা করা যায়। বিদ্যার্থীরা কিছু অর্থ সাহায্য পেতে পারেন। ঠিকাদারদের আজ কোনো মিটিং এ অংশ নেবার সম্ভাবনা প্রবল।
মকর রাশি (২১ ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি): সামাজিক কাজে ব্যস্ততা বাড়বে। কোনো স্কুল কলেজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। সরকারী চাকরীজীবীদের ভ্রমনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক কোনো নেতার সাথে আজ দেখা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিদেশ সংক্রান্ত কাজে কোনো পরিকল্পনা সফল হতে পারে।
কুম্ভ রাশি (২১ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি): আজ ধর্মীয় ও আধ্যাত্মীক কাজে কোথাও যেতে পারেন। কোনো মাজার বা দরগাহতে জিয়ারতের সম্ভাবনা বেশী। বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো পরীক্ষা প্রস্তুতি বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে চলেছেন। জীবীকার জন্য হটাৎ করে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন। বৈদেশীক কাজের সাথে সম্পৃক্তদের দিনটি ব্যস্ততায় কাটবে।
মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ): রাস্তাঘাটে কোনো প্রকার হয়রাণির শিকার হবার আশঙ্কা রয়েছে। কোনো পরিচিতজনকে দেখতে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বিনিয়োগের সুযোগ পেয়ে যাবেন। মামলা মোকর্দ্দমা ও আইনগত জটিলতা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশে কর্মরত বন্ধুদের ছুটির প্রচেষ্টা সফল হতে পারে।
জ্যোতিষ শাস্ত্রী ফকির ইয়াসির আরাফাত মেহেদী
সাংগঠনিক সম্পাদক (বাংলাদেশ এস্ট্রলজার্স সোসাইটি)
মোবাইল: ০১৭১৬-৬০৮০৮২
-

তালায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন
তালা প্রতিনিধি ( সাতক্ষীরা) : তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এতে সভাপতিত্বে করেন।
এ সময় সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের এ ঋণ জাতি কোন কিছুর বিনিময়ে শোধ করতে পারবেনা। তিনি বলেন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা বৃদ্ধি করেছে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জমা পড়ে ৪শ’ ৪১টি এবং তলিকাভুক্তদের মধ্য থেকে অভিযোগ আসে ৫৬জনের বিরুদ্ধে। কমিটির সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়। অনলাইনে জমাকৃত আবেদনের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন এবং জামুকায় সরাসরি আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন এবং সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি জি.এম.এ সবুর, জেলা কমান্ডারের প্রতিনিধি মঈনুল ইসলাম, তালা উপজেলা কমান্ডার মফিজ উদ্দিন, মুবিম এর প্রতিনিধি শেখ আবুল খায়ের ও জামুকা প্রতিনিধি এম এম ফজলুল হক।
-

তালায় ছাগল পালনে যুব নারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন
তালা প্রতিনিধি (সাতক্ষীরা) : জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে উন্নত পদ্ধতিতে ছাগল পালনের মাধ্যমে যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবারের জীবন যাত্রার মানোন্নয়’র লক্ষ্যে তালায় যুব নারীদের ছাগল পালনে প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এশিয়া ফারমার-টু-ফারমার প্রোগ্রামের আওতায় স্বেচ্ছায় কারিগরী সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে সাস কর্তৃক আয়োজিত ‘‘ক্লাইমেট স্মার্ট গোট রিয়ারিং ফর ইয়ুৎ এন্টারপ্রেনারশীপ ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা- সাস’র প্রশিক্ষণ কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন আমেরিকার বিশেষজ্ঞ এবং ফারমার-টু-ফারমার ভলান্টিয়ার ড. পিটার অগাস্টাস ফ্লানাগান। তার বক্তব্য ও আলোচনাকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রশিক্ষনার্থীদের নিকট উপস্থাপন করেন এশিয়া ফারমার-টু-ফারমার প্রোগ্রামের এসিস্ট্যান্ট কান্ট্রি ডাইরেক্টর ড. এস এম শামছুর রহমান।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে সাস কর্মকর্তা এ.কে.এম গোলাম ফারুক, মো. শাহ আলম, রুহুল আমীন, আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- সাস এর উপকারভোগী ২০জন নারী অংশগ্রহণ করছে। ৩ দিনের এই প্রশিক্ষণ ২টি ব্যাচে অনুষ্ঠিত হবে এবং ৪০ জন যুব নারী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করবে।
-

পাইকগাছার সাম্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় সেরা
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: আন্তঃপ্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জেলার পর এবার বিভাগীয় পর্যায়েও চিত্রাংকনে সেরা হয়েছে পাইকগাছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাম্য সরকার।
বৃহস্পতিবার খুলনা মডেল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার ১০জন প্রতিযোগীর মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা নির্বাচিত হয় সাম্য সরকার। সে পাইকগাছা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের স্কুল শিক্ষক বিমল কুমার সরকার ও পুষ্প রানী সরকারের একমাত্র ছেলে। সাম্য একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী হলেও চিত্রাংকনে তার অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। এর আগে সে গত ৭ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে সেরা হয়। আগামী যেকোন সময় সাম্যকে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে হবে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ কুমার মন্ডল জানিয়েছেন।
এদিকে অসাধারণ কৃতিত্ব ও সাফল্যের জন্য সাম্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন খুলনা-৬ সংসদ সদস্য এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ স.ম. বাবর আলী, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর, উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলাম ও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষক মন্ডলী।
-

৬ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহত ২০০
এসবিএন : ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০ জন মানুষ নিহত ও ৪৩৮৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
১৬ ফেব্র“য়ারি বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
এসময় মন্ত্রী জানান, ২০১৩ সালে ঘুর্ণিঝড় মহাসেনে ১৭ জন নিহত এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬০ কোটি টাকা এবং ২০১৪ সালে বন্যায় নিহতের সংখ্যা ৬৯, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১২৮০ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে ঘুর্ণিঝড় কোমেনে নিহতের সংখ্যা ৯ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপিত হয়নি। ২০১৬ সালে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুতে নিহতের সংখ্যা ২৭ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১২৭ কোটি টাকা, একই বছর বন্যায় নিহতের সংখ্যা ৭৮ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৮১৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনার (বরিশাল-৬) আরেক প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান জানান, সৌদি আরব সরকারের অনুদানে প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
-

রাখাইনে সেনা অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা মিয়ানমারের
এসবিএন : রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের
বুধবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল হয়েছে। সামরিক বাহিনীর শুরু করা ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শেষ হয়েছে, সান্ধ্য আইন শিথিল করা হয়েছে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য সেখানে শুধু পুলিশ উপস্থিত আছে।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট দফতরের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ও উত্তর রাখাইনে সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে, কিন্তু ওই এলাকার ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’ বজায় রাখার স্বার্থে সামরিক বাহিনী অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে তারা।
গত বছরের ৯ অক্টোবর রাখাইন সীমান্তে একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। হামলায় পুলিশের ৯ সদস্যসহ ১৪ জন নিহত হন। হামলার পর রাখাইনে সহিংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ধরপাকড়, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে দমন-পীড়নের মুখে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে মিয়ানমার।