Notice: Trying to get property 'post_content' of non-object in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
মশাল সাহিত্য Archives - Page 3 of 7 - Daily Dakshinermashal

Category: মশাল সাহিত্য

  • দৈনিক দক্ষিণের মশাল সাহিত্য পাতার জন্য লেখা আহ্বান

    দৈনিক দক্ষিণের মশাল সাহিত্য পাতার জন্য লেখা আহ্বান। কবিতা, ছোটগল্প, ছড়া, পদ্য, নিবন্ধ, প্রবন্ধ ইত্যাদি। ঠিকানা ই-মেইল নং dmnews.sat@gmail.com
    সাহিত্য সম্পাদক
    দৈনিক দক্ষিণের মশাল
    সাহিত্য পাতা

  • বিজয় এলেই


    সুকৃতি ভট্টাচার্য্য

    বিজয় এলেই কানে বাজে
    সেই সুর সেই শব্দ,
    না বলা অনেক ব্যথা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
    বিজয় তুমি কৃষক শ্রমিক কুলি মজুরের
    বিজয় তুমি বিপ্লবী মায়ের অহংকার।

    অনেক জীবনের দামে কেনা তুমি
    আকাশে বাতাসে তোমারই প্রতিধ্বনি

    মাঠ ঘাট পথিক শূন্য
    বুলেটের শব্দে পাখির ঝাঁক বাসা ছেড়ে
    বেভুল আকাশে উড়ছিল।
    অনেক জীবনের দামে কেনা তুমি
    লাখো শহীদের রক্তে কেনা ইতিহাস।

    ষোলই ডিসেম্বর ভুলবো না তোমায় কোনদিন,
    তোমাকে আনতে রক্তের নদীতে সাঁতার কেটেছি
    বিজয় তুমি আর্তনাদের সুরেলা গান
    বিজয় তুমি সব ভুলে আনন্দের বড় স্থান।

  • ট্রেনটি চলে

    নিরঞ্জন সরকার

    ট্রেনটি চলে ট্রেনটি চলে
    বাতাসের সমুদ্রে ভাসিয়ে বেলুন
    উলঙ্গ রথে ট্রেনটি চলে।
    চার হাত থেকে ছয় ইঞ্চি কম
    মাটি ছুঁয়েই জীবন,
    এক মুঠো ভাত, হাতে নিয়ে
    লক্ষ যোনি কাটে।
    বৃষ্টির ফোটায়
    সময় দৌড়াতে থাকে।
    চাঁদ আর সূর্যের পদধ্বনিতে
    চলন্ত বগীর শরীরে
    হেঁটে চলে যৌবন,
    নদীতে জোয়ার আসে
    ফসল ফলে,
    ট্রেনটি চলে।
    বুকের উপর দিয়ে চলে অন্ধকার।
    সব কটা জানালায়
    সোনালী রোদ্দুর ডানা মেলে,
    নীড়হারা কোকিলের চোখে
    সন্ধ্যা নামে।
    পাখিটা মারা যায়!
    আবার আমি
    স্টেশনে অপেক্ষায় আছি
    ট্রেনটি চলে, ট্রেনটি চলে ।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ভূমিকা অনস্বীকার্য

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ভূমিকা অনস্বীকার্য


     ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার সম্পৃক্ততা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের ইতিহাস অভিন্ন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রায় সব আন্দোলনই অঙ্কুরিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী প্রাঙ্গণে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম।

    একটি জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও জ্ঞান চর্চার প্রধান বাতিঘর হিসেবে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পালাবদলের প্রধানতম কেন্দ্র হিসেবে বিগত একশ বছরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পথচলায় রয়েছে বৈচিত্রময় আড়ম্বর।

     সাতক্ষীরার নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠাতা খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভুমিকা শীর্ষক এক সেমিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এম.পির সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক ড. আবদুল মজিদ, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রাক্তন সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ,সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ হাবিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মজিবর রহমান, কোলকাতা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি অধাপক গোলাম মহিউদ্দীন। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিউিটের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, খানবাহদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এ.এফ.এম এনামুল হক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ মো. এনামুল হক। বক্তারা আরো বলেন, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একবারে সূচনালগ্ন হতে প্রতিষ্ঠার দিন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ, বলিষ্ঠ-সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা। অনুষ্ঠানে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ রচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাপর্বে খান বাহাদুর আহ্ছান‌উল্লার ভুমিকা ও আহ্ছান‌উল্লা ইন্সটিটিউট এর মহা পরিচালক এ এফ এম এনামুল হক রচিত খান বাহাদুর আহ্ছান‌উল্লা রচনা অভিধান শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

  • সাতক্ষীরার পথে পথে একুশে ————————– —সুভাষ চৌধুরী

    সাতক্ষীরার পথে পথে একুশে ————————– —সুভাষ চৌধুরী


    গৌরব অহংকার আর গরিমার আরও একটি দিন পার করছি আমরা। ভূবনজোড়া একুশে উদযাপন আমাদের গরিমাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। অহংকারে আমরা আরও বিকশিত হয়েছি , পুস্পের মতো আরও সহ¯্র পাপড়ি নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছি আমরা, বাঙ্গালিরা। মহান একুশে পালিত হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে। আফ্রিকার দেশ সিওরলিয়ন পালন করছে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে মর্যাদা পাওয়া আমাদের বাংলা ভাষার জন্য আত্মদানকারীদের স্মরণ করে।
    ভাষা ক্রমবিকাশশীল, ভাষা ক্রমসম্প্রসারনশীল, ভাষা ক্রমবর্ধনশীল। ভাষা ক্রমবিবর্তনশীল। ভাষার আদান প্রদান ,ভাষার চর্চা, ভাষার অনুশীলন, ভাষার প্রকাশ, ভাষার গবেষণা ভাষাকে আরও বিকশিত করে। ভাষার ডালপালা বিস্তৃত হয়। ভাষা নিঃসন্দেহে পূর্নাঙ্গভাবে প্রস্ফুটিত হয়। ভাষার অবিরাম চর্চায় শব্দকোষ বাড়ে, ভাষার বাঁধন বলিষ্ঠ হয়। একদিন এই ভাষা বাংলা নিশ্চয়ই খিড়কি পুকুর থেকে নদী, নদী থেকে সাগর , মহাসাগরে পরিণত হবে। এ কারণেই তো একুশের জন্ম হয়েছিল। এই একুশে নিয়ে আমাদের কত যে ভালবাসা তার পরিমাপ নিশ্চিত করা যাবেনা। এই ভাষা নিয়ে আমাদের কত যে প্রেম , কত যে ভালবাসা , কত যে আশা প্রত্যাশা তারও শেষ নেই। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’। সালাম, জব্বার,রফিক ,সফিক, বরকতরা তো সে কারণেই বুক পেতে দিয়েছিল। তাদের ঝরা রক্তে প্রস্ফুটিত হয়েছে শাপলা , শতদল। ‘যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে , যে শিশুর মায়া মমতায় আমার বিশ্ব ভোলে , সেই শান্তির প্রহর গুনি’ । মাতৃভাষার জন্য সেদিনের ছাত্র জনতা এই জন্যই তো প্রাণ দিতে পিছ পা হয়নি। মাতৃভাষাকে মায়ের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অবিরাম সংগ্রাম আমাদের চলার পথকে সুগম করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। অস্ত্র হাতে আমাদের লড়তে শিখিয়েছে। একাত্তরে মহান স্বাধীনতার লাল সৃুর্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার শক্তি সাহস যুগিয়েছে। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার সাহস দেখিয়ে আমরাই চুড়ান্ত মুক্তির পথের সিঁড়ি বেয়ে চলতে শিখেছি। আমরাই বিশ্বকে শিখিয়েছি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আমরা। কারণ বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণ, বাংলা আমাদের মান, বাংলা আমাদের অহংকার। এই ভাষায় কথা বলি, এই ভাষায় মা ডাকি, এই ভাষায় প্রেম নিবেদন করি , এই ভাষায় শিশুকে আদর ¯েœহ করি, শিশু এই ভাষায় মা ডাকে । এই ভাষায় আমরা খুনসুটি পাড়ি, এই ভাষায় আড্ডাবাজি করি, এই ভাষায়ই আমাদের রং তামাশা । এই বাংলা ভাষায় প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করি, এই ভাষায় আমাদের হাসি আমাদের কান্না। এই ভাষায় গান গাই, এই ভাষায় বাঁশের বাঁশরী বাজাই। এই ভাষাই আমাদের সভ্যতা গড়েছে , সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ গড়েছে। বাংলা ভাষা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। বাংলা ভাষাতেই আমরা ডুবে যাই সঙ্গীত ভূবনে।
    মহান একুশে পালনে সে কি উচ্ছাস। রাজশাহী কলেজে মানব মিনার তৈরি করে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন ৫২ তে ,তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আমরা মানব প্রাচীর দেখেছি। মহান বিজয় দিবসে কোটি জনতা বাংলাদেশের মানচিত্র রচনা করেছে, এক কন্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গেয়ে উঠেছে । রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা মানব প্রাচীর তৈরি করে তাদের প্রাণোচ্ছাস প্রকাশ করেছে। সেখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এই ভাষার সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের রক্ত ,হাসি, কান্না , ভালবাসা ও অহংকার। দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের দাসিয়ারছড়া ও পাটগ্রামে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীও বিন¤্র শ্রদ্ধায় পালন করছেন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। তারা ইট মাটি কাগজ কিংবা কদলি বৃক্ষ দিয়ে হাতে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভাষা শহীদদের প্রতি । যশোরের বেনাপোল সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন দুই বাংলার মানুষ। ভাষার জন্য , মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা জানাতে , বাংলাভাষাকে তার যথাযথ মর্যাদা দিতে , ভাষা শহীদদের সম্মানিত করতে দুই দেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল হাতে নিয়ে ভুলে যান সব সীমারেখা। তারা একাকার হয়ে প্রত্যুষে গেয়ে ওঠেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি’। বাংলা ভাষা আমাদের সকল শক্তির উৎস। বাংলা ভাষা আমাদের সাহস, আমাদের প্রেরণা , বাংলা আমাদের ভালবাসা।
    গত বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে আমি উত্তরবঙ্গের বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে বাসে চড়েছিলাম সাতক্ষীরার উদ্দেশে। পথে পথে আমি দেখেছি অগনিত মানুষকে ভাষা শহীদদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাতে। শত শত শিক্ষার্থীর হাতে ফুল। তারা ফুল দিচ্ছে শহীদ বেদিতে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে চলা শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রজ রফিক শফিক জব্বার বরকত সালামদের সালাম জানাতে কেমন এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুখে বাজছে ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। স্কুল কলেজ মাঠে কাগজের তৈরি শহীদ মিনার গড়ে ফুল দিচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। পাশেই মাইকে ক্ষনে ক্ষনে বেজে উঠছে ‘ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে , তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’। ‘আমরা হারবোনা হারবোনা , তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না’। শহীদ মিনার চত্বরে মাটিতে নুইয়ে পড়ে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা দেখেছি। তারা তাদের তুলির আঁচড়ে গড়ে তুলছে এক একটি শহীদ মিনার , কখনও বা ভাষা শহীদদের অবয়ব। পথের ধারে পাশে উন্মুক্ত প্রান্তরে আলোচনা সভা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আবারও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার জোরালো দাবি। ইংরাজী নয়, বাংলায় আদালতের রায় লেখার দাবিতে সোচ্চার তারা। সকল বিষয়ের পাঠ্যকে বাংলায় উন্নীতকরনের দাবি। গৃহ কোণ থেকে বাংলাকে পূর্ন মাত্রায় খোলা বাতাসে নিয়ে আসতে হবে। সব সরকারি অফিস আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বাংলাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যে উদভাসিত ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু মাত্র একটি দিনেরই নাম নয় ,বাঙ্গালির জাগরনের একটি স্মারক। এই প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে ধারাবাহিকভাবে এই স্মারক বয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যেই বাংলাকে আরও উন্মুক্ত প্রান্তরে নিয়ে যেতে হবে।
    পথে পথে আমি দেখেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতা, নান্দনিক হস্তলেখা প্রতিযোগিতা , দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতা। জাতীয় পতাকাকে অর্ধনমিত রেখে শহীদদের প্রতি জাতির বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন দেখেছি আমি। ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দেখেছি বিশেষ প্রার্থনা। হাতছানি দিয়েছে। আমার প্রাণ ভরে উঠেছে যখন দেখেছি চার দিকে ফুলের পাহাড় , এক একটি ফুলই যেনো এক একটি শহীদ মিনার, ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে যে মিনার।
    সাতক্ষীরায় শহীদ বেদিতে জমেছে ফুলের পাহাড়। শহীদ রাজ্জাক পার্কে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা , সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শিশুদের আবুত্তি,সুন্দর হাতের লেখা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার চিহ্ণ। ততক্ষণে নিজের মোবাইল ফোনে ছোট্ট একটি বার্তা পৌঁছেছে ‘ জান দিয়েছি ,দেইনি তবু বাংলা ভাষার মান, নির্ভয়ে তাই গাইতে পারি এমন ভাষার গান’।
    পত্র পত্রিকায় পড়েছি ‘সেই পাকিস্তান, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, যারা আমাদের ভাষা শহীদদের বুকে গুলি করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল, এবার তারা করাচি , ইসলামাবাদ ও লাহোরে নানা আয়্জোনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বলে বিবিসিকে খবর দিয়েছেন পাকিস্তানি সাংবাদিক মনির আহমেদ’। বহু ভাষার দেশ প্রতিবেশি ভারতও পূর্ন মর্যাদায় পালন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমার প্রত্যয় জেগেছে বাংলা তার আপন মহিমায় এভাবেই হয়ে উঠবে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ, একটি মহাসমুদ্র । আর মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ২১ ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলা ভাষার জয়গান গেয়েছেন। তারা বলেছেন বাংলা ভাষায় আমরা এক । আমি দেখেছি ইট কাদামাটি কলাগাছ আর লাল কালো কাপড়ের ক্যানভাসে ঘেরা নিজেদের হাতে তৈরি শহিদ মিনারে শিশু কিশোরদের পুস্পার্ঘ অর্পণের সেকি উচ্ছাস। কন্ঠে তাদের কালজয়ী গান ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি’।
    ——– সুভাষ চৌধুরী , সাতক্ষীরা করেসপন্ডেন্ট , এনটিভি ও দৈনিক যুগান্তর।

  • কথা ছিলো

    আরশি গাইন

    কথা ছিলো ফিরে আসবো

    বৃষ্টির শব্দের মতো আওয়াজ তুলে
    নদী আর পাহাড়ের কাব্য লিখবো
    কথা ছিলো
    তোমার ভালোবাসার রোদ্দুরে শুকিয়ে নেবো
    ভিজে যাওয়া আমার বাড়িঘর
    কথা তো থাকেই
    একদিন আকাশের হাত ধরে
    নীল ছড়াতে ছড়াতে ধূসর জীবনে ফোটানোর কথা ছিলো নীলপদ্ম ঠিকানাহীন ভাবনার ছুটি দেয়া সময়কে ঝেড়ে ফেলে আর একবার রঙ
    ছিটাবো ইচ্ছে মতো

    ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়ির মতো দুজনের ছেঁড়া পথ আবার মিলবে
    বেলা শেষে

    কথা ছিলো
    ভেঙে যাওয়া বুকের উঠোনে
    চাষ করবো সোনালি রোদ্দুর
    অজানা গন্তব্য থেকে হেঁটে আসবে আমাদের অনাগত আগামী
    সূর্যের সাথে মিছিল করবো
    একটি সমুদ্র আর নিষ্কলঙ্ক আকাশের দাবিতে

    কথা তো থাকেই
    কিন্তু কোন্ কথা থাকে
    ধেয়ে আসা সুনামির সাথে
    নাচতে নাচতে যেসব কথারা
    হারিয়েছে ঘরে ফেরার পথ
    যার পায়ের নিচে বয়ে গেছে বিস্তৃর্ণ হাহাকার
    তার কথা তো আর থাকে না

  • কাছে চাই

    অনন্যা অনু

    একদিন শুধু একদিন তুমি জানতে চেয়ো কেমন আছি
    তোমার মাথার উপর এতোএতো মেঘ
    দুষ্ট রূপক মেঘেরা কেটে গেলে,
    বজ্রপাতের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলে
    একদিন জিজ্ঞেস করো কেমন আছি।
    জানি, চাঁদের পাড়ায় ভীষণ যুদ্ধ
    জোছনারা সব নিরুদ্দেশ,
    কথা না বলে দূর দিগন্তে বয়ে যায় উনপঞ্চাশ বায়ু
    ভেঙে ভেঙে পড়ে নদীর অহংকার
    হারিয়ে যায় বিশুদ্ধতা!
    এমন সময়ে নিজেকে নিজের সান্নিধ্য নিবিড় বোঝা যায়,
    এমন দুঃসময়ে তুমি একলা হলে
    একদিন জিজ্ঞেস করো আমি কেমন আছি।
    অজ¯্র পক্ষপাত ঘিরে আছে তোমার চারপাশ,
    দ্বিমুখো দৃষ্টিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তোমার অগোচরে বুঝি;
    তোমার ছয়টি ইন্দ্রিয় জেগে থাকে শুধু তোমার সাথে
    আঁধারের মধ্যমণি নীরবতা শুধু তোমার ডাকে সাড়া দেয়
    তোমাকে দশদিক থেকে ঘিরে ধরে ছয় রিপু,
    মাতাল নৃত্যে উল্লাস করে।
    জাগতিক ঈশ্বরের লালসার অসংখ্য কৃত্রিম বাহু থেকে মুক্তি পেতে
    আমাকে একবার তুমি আপন ভেবো সেদিন,
    শুধু একটিবারের জন্য বলো ‘তোমাকে একটু কাছে চাই’।

  • উচিত ছিল

    পদ্মনাভ অধিকারী

    কেউ বলছে,বাপ মরেছে
    কেউ বলছে,ভাতার।
    সেই জোয়ারে আম জনতা
    কাটছে মরণ সাঁতার।
    সাঁতার কাটে গরিব-দুখি
    কাটছে সাঁতার বোকা,
    নেতা কাটেন হাওয়ায় সাঁতার
    সব হারা খায় ধোঁকা!
    সাঁতার কেটে নেতা হোতা
    নিচ্ছে তুলে ফুল,
    ধোঁকা খেয়ে বোকার হদ্দ
    ছিঁড়ছে মাথার চুল।
    সাঁতার কেটে টাকার পাহাড়
    করছে ওরা লুট,
    হারা ধন ভাবে, ভুল করেছি
    উচিত ছিল শুট।

  • ডাক

    নয়ন আহমেদ

    ডাক দিয়েছে ভোর;আলো কুড়োতে যাবো।
    ডাক দিয়েছে রোদ;শুশ্রুষা বহন করতে যাবো।
    ডাক দিয়েছে প্রদীপ্ত সূর্য;অন্ধকার পরাজিত করতে বের হবো।
    ডাক দিয়েছে সবুজ পাতা;শান্তি ছড়িয়ে দিতে ছুটে যাবো।
    আমি এখনই একটা অপরিহার্য পৃথিবীর পা-ুলিপি প্রস্তুত করতে বের হবো।

    ডাক দিয়েছে ধানখেত।
    ডাক দিয়েছে নদী।
    ডাক দিয়েছে গোলাপ।
    ডাক দিয়েছে রজনীগন্ধা।
    আমি সমস্ত উচ্ছ্বাসের হৃৎপি- ভেদ করে ভালোবাসা ছড়াবো।

    সাক্ষী প্রসারিত রোদ,
    সাক্ষী বহমান নদী,
    সাক্ষী গ্রীবা উঁচু করা প্রেম,
    সাক্ষী উজ্জ্বল পার্থিবতা,
    আমি মানুষের আশা ও আশ্বাসকে হৃদয়-জমিনে রোপন করতে যাবো।

    যে আশায় জেগে ওঠে, আমি তাকে ভালোবাসি।
    যে কল্যাণ কামনা করে, আমি তাকে প্রীতি নিবেদন করি।
    যে কাঁধে বহন করে মানবতা, আমি তার স্তব করি।
    কেননা, সত্য তাকে প্রেমের লাল চাঁদরে আবৃত করেছে।
    সে সৈনিক হয়েছে;
    সে জীবন বহন করতে প্রতিজ্ঞা করেছে।
    সে সূর্যের সমান বয়সী হয়েছে।

    ডাক দিয়েছে পোড়া রুটির মতো একটা পৃথিবী।
    ডাক দিয়েছে একটা হাহাকার।
    ডাক দিয়েছে একটা বিপন্ন বিনয়।
    আমি আকাক্সক্ষার প্রতীক হবো।

    মানুষের কাছে ছুটে যাবো এখনই।

    আমি সূর্যের সমবয়সী।

  • রাফিয়া

    রাফিয়া

    গাজী আবদুর রহিম

    রাসেদ, রাফিয়াকে কল করে বলল, “তুমি আমাকে এই ভাবে ধোকা দিলে কেন? রাফিয়া, তুমি আমার সাথে এভাবে প্রেমের অভিনয় না করলেও পারতা?”
    রাফিয়া নরম গলায় জবাব দিল,”কিভাবে ধোকা দিলাম তোমাকে?কেন তুমি কি অন্য কোন ভাবে ধোকা পেতে চেয়েছিলে নাকি?”
    রাসেদ কন্ঠস্বর একটু নামিয়ে বলল, “তুমি আমাকে বলো নাই কেন, তুমি বিবাহিত? তোমার একটা মেয়েও আছে নাকি শুনলাম। কি যেন নাম? তুলনা না ভুলনা কি একটা হবে। ’

    রাফিয়া একটু রেগে গিয়ে বলল, “কে বলল, এসব বানোয়াট কথা? সব মিথ্যা”।
    রাসেদ বলল, “কে আর বলবে?তোমার আম্মু। অন্য কেউ বললে ত বিশ্বাস করতাম না”।
    রাফিয়া হিঁ হিঁ হিঁ করে হেঁসে দিয়ে বলল, “তুমি জানো না আমার আম্মুর ব্রেনের সমস্যা আছে?”
    রাসেদ বলল, “কই তুমি আগে বলো নাই তো। ঐ দিন না বললে, আমার আম্মু গুনবতী। আর কি কি যেন বলেছিলে, তেমন মনে নাই। আসলে সকালে ঠান্ডা ভাত খাইতো সেজন্য সব কথা তেমন মনে থাকে না। “

    রাফিয়া মুখ বেকিয়ে হেঁসে বলল, “তুমি যানও না,পাগলকে সামনা-সামনি পাগল বললে, পাগল রেগে গিয়ে উল্টা পাল্টা কাজ করে বসেন?”
    রাসেদ নিজেকে বোকা বানিয়ে বলল, “হ্যাঁ জানি। “
    রাফিয়া রেগে গিয়ে কলটা কেটে দিল। অপর পাশ থেকে রাসেদ তখনও হ্যালো হ্যালো বলতে থাকে।

    আজ শুক্রবার। কলেজ বন্ধ থাকায় রাসেদ, একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী পরে রাফিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হল। সে একটা সিএনজি ভাড়া করে রাফিয়াদের গেটের সামনে নামল। সিএনজি চালককে ভাড়া না দিয়ে চলে যাচ্ছিল রাসেদ। সিএনজি চালক রাসেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ভাই, ভারার টাহা না দিয়া চৈলা যান ক্যান। “

    রাসেদ পুরোনো একটা বিশ টাকার নোট সিএনজি চালককে দিয়ে বলেন, “ভাড়ার টাকা দিছি কিনা খেয়াল ছিল না, ভাই।”
    রাসেদ ধীরে ধীরে হেঁটে রাফিয়াদের ডাইনিং এর দরজার সামনে গিয়ে ভেতরে দেখতে লাগল। সে এবার যেটা দেখল, সেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে দেখল, তুলনা নামের সাড়ে তিন বছরের মেয়েটা আম্মু ডাকায়, রাফিয়া তাকে তুমুল বকাঝকা করছে। এ অবস্থায় রাফিয়ার আম্মু এসে রাফিয়াকে বলল, ‘তোর গর্ভে জন্ম নিল, আর তুই কিনা ওকে আম্মু ডাকার অপরাধে বকছিস। তুই আসলে কি যে নিষ্ঠুর। তুই মা নামের কলঙ্ক।’
    এসব কান্ড রাসেদ ডাইনিং এর বাইরে দাঁড়িয়ে দেখে, তার কলেজের হলে চলে আসল।

    রুমমেট রুমে না থাকায় রাসেদ একাকী ভাবতে লাগল। আমি অন্য যেদিন রাফিয়াদের বাসায় যাই, সেদিন বাচ্চাটা রাফিয়াকে আপি বলে ডাকে। আজ আমার অনুপস্থিতিতে আম্মু বলে ডাকল। রাফিয়া কি আমার থেকে টাকা নেওয়ার জন্য ভেলকি বাজি করছে। নাকি ওর পরিবারের সবাই পাগল। ধ্যাৎ এমন ভাবা ঠিক নয়। আমিও ত ভুল শুনতে পারি। নাকি ইদানিং রাত জেগে জেগে আমার ব্রেনের সমস্যা হয়েছে।

    সন্ধ্যাবেলা রাফিয়া রাশেদের কাছে কল দিল। রাসেদ দ্বিতীয়বারে কলটা রিসিভ করল। রাফিয়া অপরাধীর সুরে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে তুলনা আমার মেয়ে। আমার স্বামী এলএলএম পাশ করেও কোন কাজ পায় না। তাই আমি নিজের পড়ার খরচ নেওয়ার জন্য তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছি। তৌফিক বলেছে ও কোথায় নাকি শীঘ্র সহকারী আইনজীবি পদে নিয়োগ পাবে। তারপর তোমার সব টাকা আমি শোধ করে দিব। “

    রাসেদ বলল, “শোন পাগলীর কথা। তুমি বিপাকে পড়ে আমার থেকে টাকা নিয়েছ। ওই টাকা আমাকে শোধ দিতে হবে না। “
    এরপর রাফিয়ার কান্নার শব্দ শোনা গেল। তারপর কলটা কেটে গেল।
    পরদিন সকালবেলা রাসেদ তার পরিচিত শহর ছেড়ে বহুদূরে চলে যাবার জন্য বের হল। সে তার মোবাইলের ব্যাকপার্ট খুলে সিম দুটো বের করে একটা নদীতে ফেলে দিল। সে চায় না, তার সাথে রাফিয়ার আর কোন দিন দেখা হোক কিংবা কথা হোক। তবে রাসেদ মন থেকে কামনা করে, রাফিয়া তার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকুক। সে রাফিয়াকে ভুলে থাকতে চায়। কারণ সে রাফিয়াকে ভেবে নেশাগ্রস্থ হতে চায় না। সেজন্য সে প্রকৃতির মুক্ত আবহাওয়ার স্বাদ নিতে হাঁটতে থাকল নদীর পাড় দিয়ে।

  • আমি কারোর ছিলাম না

    স ম তুহিন

    যদি কখনো কোনো আলোচনায় আপনাকে ডাকে কমল কুমার মজুমদারের বিষয়ে কিছু বলার জন্যে, তখন কী করবেন ? প্রথম দিকে বলতে দিলে হালকা একটু কেশে ভূমিকা করবেন। যদি পরের দিকে বলতে বলে তখনও একটু কেশে সামনে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাঁকিয়ে, তাদের মনোভাব বুঝে বলবেন, ‘শুভেচ্ছা, সবাইকে। ভূমিকা ছাড়াই শুরু করছি, কেননা কিছু ইম্পটেন্ট কথা বলবো বলে স্থির করেছি, যদিও সময়ের অভাব। তাই অল্প সময় নিয়ে কথাগুলো শেষ করে দিচ্ছি। আসলে কমলকুমার মজুমদার ছিলেন ‘কাল্টফিগার’। ‘…লেখালেখির প্রথম পর্বের কয়েকটি লেখার কথা না ধরলে, বলা যায়, কমলকুমার মজুমদার ১৯৫৭-৫৮ সাল থেকে নিয়মিত লেখা শুরু করেন। বিখ্যাত গল্প ‘তাহাদের কথা’ বা ‘মতিলাল পাদরী’ লিখে ঐ পর্ব শুরু। অবশেষে ১৯৫৯ সালে লেখেন তাঁর নজর কাড়া ধ্রুপদী উপন্যাস ‘অন্তর্জলী যাত্রা’Ñ খ্যাতি ও নিন্দা সমান্তরালভাবে এসময় থেকেই তাঁর দিকে প্রবলভাবে আসতে থাকে। তিনি হ’য়ে ওঠেন সবচেয়ে বিতর্কিত এবং অন্যদ্বীপের একাকী লেখক। তিনি নিন্দা-স্তুতিকে সমানভাবে গ্রহণ করে বাকী জীবনটুকু স্বল্প হ’লেও মূলত লেখাতেই নিজেকে সমর্পিত করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে তাঁর লেখালেখির জীবন মোটামুটি কুড়িটি বছর। ‘মূলত’ বলতে হচ্ছে একারণে, যে, এসময়েতেও লেখালেখির পাশাপাশি নাটক প্রযোজনা করেছেন, ছবি এঁকেছেন, উড্কাট্-এ ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে, বই-এর অলংকরণ বা প্রচ্ছদও করেছেন। অবশ্য এসব ছাড়াও তাঁর অন্যান্য কার্যকলাপগুলি যেমন চলচ্চিত্র নির্মাণ, ডকুমেন্টরীর চিত্রনাট্য প্রস্তুত, শিল্পসমালোচক রূপে বিখ্যাত সাপ্তাহিকে যুক্ত হওয়া, ছবি-ছড়ার বই সংকলন ও সম্পাদনা এসব বিচিত্র কিন্তু সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে অনেক আগেই তিনি অর্জন করেছেন ‘কাল্টফিগার’-এর শিরোপা। ’ একটু থেমে সামনের দু’একজনের দিকে তাঁকিয়ে আবার বলবেন, ‘ভাবলে অবাক হ’তে হয় পুরোপুরি নাগরিক জীবন যাপন করে এই লেখক তাঁর সাহিত্যে বরাবর প্রান্তিক মানুষের কথা, তাদের জীবনের আলেখ্য শুনিয়েছেন তাঁর স্বল্পসংখ্যক পাঠককে নবতম ভাষায়, নতুনতম আখ্যানরীতিতে গড়পড়তা পাঠককুলকে ক্রমাগত অগ্রাহ্য করে, বাণিজ্যিক সাহিত্যের গড্ডালিকায় আদৌ গা না ভাসিয়ে। কিছুটা বেপরোয়া হয়েও। ’১
    এবার একটুখানি থেমে যাবেন আর ভাবখানা এমন করবেন একদমে অনেক বলেছি। একটু শ্বাস নিয়ে আবার যথারীতি চন্দ্রবিন্দু যোগ করে একটু ভাব এনে বলতে থাকবেন ‘…এঁর বই গোয়েন্দা লাগিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সাহিত্যের বড় গবেষকও এঁর নাম শোনেননি। … সদ্য তরুণ কবি ও লেখকেরা এঁর অন্ধ-ভক্ত। ইনি ইংরেজের অধীনে স্কুল-কলেজে পড়তে অস্বীকার করেছিলেন। ইংরেজি ভাষা না লিখে লিখেছেন সংস্কৃত ও ফরাসী। ইনি ইচ্ছে করে এমনই এক দূর্বোধ্য ভাষায় এঁর কাহিনীগুলি লেখেন যে সাধারণ পাঠকের পক্ষে তাতে দাঁত ফোটানো অসম্ভব। দূর্বোধ্যতায় ইনি জেমস জয়েসকেও ছাড়িয়ে গেছেন। কিন্তু যতœ করে যারা এঁর রচনা কিছুটাও পড়েছে তারাও স্তম্ভিত হয়ে স্বীকার করেছে যে এরকম রসবোধ ও বৈদগ্ধ্যের সম্মিলন খুব কমই দেখা যায় যে-কোনো সাহিত্যে। কিন্তু কমলকুমার মজুমদার চান না তাঁর লেখা দুশো তিনশো জনের বেশি পাঠক পড়ুক ! এরকম অদ্ভুত লেখক আর কোথাও আছে কিনা জানি না। ’২

    এ পর্যন্ত বলে একটু তাকিয়ে বুঝে নেবেন সামনের মানব-মানবীরা বিরক্ত কী না। বিরক্ত না হলেও আর এগোবেন না। বলবেন, সবশেষে আমি কমল মজুমদারের নিয়ে একটা কৌতুক, না ঠিক তাঁর কৌতুক নয় তাঁরই ঘটানো একটা মজার ঘটনা বলে শেষ করবো। বোন শানু লাহিড়ী লিখেছেন, “… একদিন বাস থেকে নেমে কী হাসি ! বাড়ির সামনেই বাস থামতÑ দাদা নামার সময় বলছে, ‘আস্তে আস্তে, একদম আস্তে, লেডিস হ্যায়। ’ দাদা নামার সঙ্গে সঙ্গে কন্ডাক্টর জিজ্ঞেস করল কই আপনার লেডিস ? দাদা বুকে হাত দিয়ে বলল, দিল মে। কন্ডাক্টর খুব হেসেছে, দাদাতো বটেই। ” কমল মজুমদারের নিজের ভাবনা ছিল এমন, ‘পৃথিবীতে আমার কেউ ছিল না বললে ভুল করা হবে, বলব, আমি কারোর ছিলাম না। ’
    ‘আকাশ ভোলা পাখির কি কেউ থাকে ! তার গান কি সবাই বোঝে !’ আমিও কি কিছু পেরেছি বোঝাতে ? অনেক বেশি ভালো থাকবেন সবাই।

    পাদটিকা : সুন্দর বক্তব্যের পর যখন বেরিয়ে এলেন বাইরে ঠিক সে সময় সুন্দর ছেলেটা জানতে চাচ্ছে ‘বলার সময় আপনি যে কাল্টফিগার বলেছিলেন ওটা কী Cult হবে, সেটার মানে কী ? কী বিপদ! বলবেন, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী স্যারের সম্পাদিত ফিফ্ট রিপ্রিন্ট জানুয়ারি দুই হাজার বারো’র-Bangla Academy English-Bangla Dictionary’র ১৮২ পাতাটা দেখলে বিস্তারিত পাবে।

    ১. সম্পাদকের কথা: প্রতিবিম্ব : কমলকুমার মজুমদার শতবর্ষ স্মরণ সংখ্যা, দ্বিতীয় পর্যায়, বৈশাখ ১৮২১, সম্পাদনা: প্রশান্ত মাজী, কলকাতা। পাতা: ৫।
    ২. শহর কেন্দ্রিক: সাহিত্যের কোনও শর্ত নেই: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দে’জ, কলকাতা: এপ্রিল ২০১১। পাতা: ১০৩।

  • সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শোক প্রস্তাব

    সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শোক প্রস্তাব

    নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির পাঠ কক্ষে সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, গাজী আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রাসেল, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক তৃপ্তি মোহন মল্লিক, কোষাধ্যক্ষ মোস্তফিজুর রহমান উজ্জল এবং নির্বাহী সদস্য মো. আমিনুল হক, প্রভাষক মো. রেজাউল করিম, অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার সহ-সম্পাদক শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি প্রমুখ। সভায় সদ্য প্রয়াত সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সাধারন সম্পাদক মরহুম এডভোকেট সামসুর রহমানের স্ত্রী ও সৃজনশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মি মোমতাজ নাহার ঝর্ণা মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহন করা হয়।

     

  • পিলপের গ্যাস

    পিলপের গ্যাস

    স ফি য়া র র হ মা ন

    ভাদ্র মাসে নারকেল গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়,তাতে নারকেলের ফলন বেশি হয়। এই কাজে যারা পারদর্শি তাদের আগে না চাইতে পাওয়া যেত,যুগ বদলেছে এখন ডেকেও পাওয়া যায় না। কুরবান গাজীর তিনটে নারকেল গাছ। ভাদ্রমাস পার হতে গেল অথচ গাছ পরিস্কার করা হল না। চিন্তিত মনে নারকেল গাছের গুড়ায় ঘুরাঘুরি করে। স্ত্রী আসমা বেগম এদৃশ্য দেখে ব্যাঙ্গাত্বক গলায় বলে, মদ্দ মানুষ হয়ে জম্মায় চাও। গাছে উঠে যাও, নিজে নিজে ছাফ কর।’
    তুমি-আমি আজ থেকে চব্বিশ বছর আগে এই দিনে পৃথিবীতে জোড় মানিক হয়ে পথ চলার চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেছিলাম। সুখে-দুখে পথ চলেছি পৃথিবীর পথে।
    কুরবান গাজী ফিক করে হেসে বলল, ‘কতাডা ঠিক কইছাও বউ, পারা উচিৎ ছিল কিন্তু গাছের মাথার দিক তাকালি যে মাথা ঘোরে। হুড়–ম করে পড়লি কী তুমার সুখ হবেনে?’
    ‘এমনি-এমনি কলাম, তুমি বাঁচে থাক কুদার বাপ।’
    কুরবান গাজী ভোর বেলা ঘরের দরজা খুলতেই আশ্চার্য হল। উঠানে দাঁড়িয়ে আছে রোহিতা গ্রামের মফেজ মোড়ল। নারকেল গাছের মাথার দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। কুরবান গাজীর ডাকে মফেজ মোড়ল সম্বিত ফিরে পেল। নারকেল গাছ সুন্দর করে পরিস্কার করায় এই এলাকায় তার জুড়ি নেই। এ যেন না চাইতেই এক কাঁধি।
    কুরবান গাজী গাছ পরিস্কারের দর নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছিল কিন্তু মফেজ মোড়লের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। দরাদরি করলেই অনাকাঙ্খিত ধন ফসকে যেতে পারে। মফেজ মোড়ল আগে লুঙ্গি গুটিয়ে কাছা মেরে গাছে উঠতো এখন ছেলের বাদ দেওয়া থ্রি কোর্য়াটার প্যান্ট পরে গাছে চড়ে। গাছে উঠার আগে বড় একটা পান সময় নিয়ে গুন্ডি খয়ের তামাক জর্দ্দা পানের যাবতীয় মসলা সাজিয়ে মুখে ভরে দেয়। এ নিয়ে কেউ কোন কথা বললে মফেজ মোড়ল এক গাল হেসে বলে,‘সুদ খাব না, ঘুস খাব না, খাব একটা পান,তা মকসায়ে মজা করে না খালি হয়।’
    আল্লাহ রসূলের নাম নিয়ে এক দলা থুথু হাতের তালুতে নিয়ে দুই তালু ঘসে মফেজ মোড়ল নারকেল গাছে উঠলো। আকাশ মেঘলা কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। হঠাৎ বেশ জোরে মেঘ ডাকলো,পর পর আরও দুইটা ডাক দিল। মফেজ মোড়ল বিদ্যুৎ বেগে সড়াৎ করে গাছ থেকে নেমে এল। কুরবান গাজীর বারান্দায় বসে হাঁফাতে লাগল। এর মধ্যে আশপাশের আরও কয়েকজন জড়ো হল। কুরবান গাজীর বাপ নেয়ামত গাজী অ্যাজমার রোগী সে একদমে কিছুক্ষণ কেশে নিয়ে বলল, ‘বাবারে একটু ম্যাগ না ডাকতি এত ভয় পাও? আমরা যখন মাঠে কাজ করতাম,কত ঝড়-বৃষ্টি এই পিটির উপর দিয়ে চলে গেছে। ভয় কারে কয় জানতাম না। বাপ মার নাবি ছাবালরা অল্পে ভয় পায়। বাবাজি কী তোমার মার প্যাট পুচা(সর্বশেষ) ছাবাল (ছেলে) ?’
    উপস্থিত সবাই জোরে হেসে উঠলো, ছোটরা কিছু না বুঝেই হাসতে থাকে।
    মফেজ মোড়লের একটা গুণ আছে, যেভাবেই হোক দুনিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারে। সব শুনে মুরব্বির উপর রাগ হল কিন্তু প্রকাশ করতে পারল না। বিজ্ঞের মত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে বলল, ‘শোন বাবাজি তোমাদের সেই যুগ এখন আর নেই। বৃটিশ আমলে সরকার রাস্তায় রাস্তায় পিলপে (সীমানা পিলার) পুতে ছিল। তারমধ্যে গ্যাস (ম্যাগনেট) ছিল। এখন দেশে শোর (শুয়োর) কুমে গেলিও চোর বাড়ে গেছে। পিলপে সব তুলে নিয়ে ভারতে বিক্রি করেছে, পিলপের গ্যাস বারুই গেছে। এই গ্যাস আগে বাজ(বজ্রপাত) পড়া থামাতো, এখন থামানোর কিছু নেই। ঝমাঝম মাথায় পড়ে, দেখতিছাও না মানুষ মরে বেছাপ্পর হয়ে যাচ্ছে। আমার কী গাছে বসে মততি কচ্চাও।’
    পিলপের গ্যাসের এই গল্প এক কান হতে সাত কান হয়ে গেল। ধীরে ধীরে মফেজ মোড়লের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়লো। সেই থেকে মফেজ মোড়লের নাম রুপান্তরিত হয়ে- হয়ে গেল পিলপের গ্যাস। মফেজ মোড়ল এখন পথে-ঘাটে বের হলে বিশেষ করে শিশু কিশোররা দূর থেকে বলে, ‘ঐ যে পিলপের গ্যাস যায়’ বলেই ঝোঁপ ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।

  • নয়ন আহমেদ এর কবিতা

    নয়ন আহমেদ এর কবিতা

    উচ্চতা

    একদা মৈনাক পাহাড়ে রেখে এসেছি উচ্চতা।
    মাপকাঠি,পরিমাপ
    দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিচয়;
    সমাহিত করে এসেছি এখানে-
    চুল্লির নৈকট্যে;
    গাহর্স্থ্য উত্তাপে।
    ভেবেছিলাম,উচ্চতাকে কখনো ভালোবাসবো না।
    উচ্চ হতে হতে একা হতে হয়।
    বিচ্ছিন্ন হতে হতে নিঃস্ব হতে হয়।
    ও পাহাড়, আমি এই চুল্লির পাশে হাঁটু মুড়ে বসে থাকলাম।
    প্রিয় হেস্তিয়া রাঁধছে অনিবার্য ব্যঞ্জন।
    আমি আর কোথাও যাবো না।

     

     

    প্রচারক

    বহুদিন প্রচার করেছি আর্তনাদ।
    অসুখী ছিলাম;
    কারখানা বানিয়েছিলাম।
    একটা কমলালেবুর পাশে শুশ্রƒষার কানাকানি স্থাপন করি নি।
    বড় মূর্খ ছিলাম!
    বহুদিন প্রচার করেছি হাহাকার।
    অসুস্থ ছিলাম।
    সন্দেহের দোকান খুলেছিলাম।
    একটা সূর্যের পাশে ঘরবাড়ির নিত্য সম্পর্ক বিস্তৃত করিনি।
    বড় অদক্ষ ছিলাম!

    আনন্দের নিজস্ব রঙ

    বাড়তে দিয়েছি আনন্দ;
    তোমরা ধান বুনে যেভাবে অপেক্ষা করো।
    হ্রস্ব করেছি বিষাদ;
    তোমরা শোক মুছে যেভাবে কবরস্তান থেকে ঘরে ফেরো।
    মূলত,এভাবে তোমরা জীবনের দিকে ফেরো।
    প্রত্যেকেই বিকিরণ করে এই নিজস্ব রঙ।
    কারণ, তারা পূর্ণ হতে চায়।
    রঙ প্রকাশ করে ভোর।
    রঙ প্রকাশ করে ইট,সুরকি।
    রঙ প্রকাশ করে রান্নার হাঁড়িপাতিল।
    রঙের উৎসব করে হেস্তিয়ার উনুন।
    তার মনোযোগ দ্বিধাহীন প্রচার করেছি।
    এই রঙের ভেতর ডুব দেওয়া লোকদের আমি পছন্দ করি।

  • জীবন যেখানে যেমন

    জীবন যেখানে যেমন

     

    ড. শা হ না জ পা র ভী ন

    মনিকা লিউনিস্কী যখন নিউইয়র্কে ক্লিনটনের সময় ঝড় তুলেছিল তখন মনিকা জেসিকা কাজের স্বার্থে তার নিক নেম জেসিকাকে ফিরিয়ে আনে। ও এখনও আঁচ করে মনিকার মতোই জেসিকা নামটাও তাকে আপাদমস্তক সন্দিহান সমীক্ষায় নিয়ে আসে। একই প্রশ্ন তাকে রিপিট করা হয়
    হটস ইওর নেম?
    জেসি
    কাম ফ্রম?
    বাংলাদেশ
    ইউ বাংলাদেশী?
    ইয়েস
    বাট!
    ও বুঝতো না। কেন ওকে ডানকিনেও একই প্রশ্ন করা হয়েছিল দ্বিতীয়বার। পিজাসপে তৃতীয়বার।
    অবশ্য সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে যে সে যেখানেই যাক না কেন, যে রেস্টুরেন্ট বা মার্কেটিং কোম্পানিতে যাক চাকরি তার প্রথম চান্সেই হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইন্টারভিউ লাগে না। মনিকা (জেসিকা) এসেছে উনিশ শ আটানব্বইয়ে। স্বামী মো. মনজুরুল ইসলামের সিটিজেনশিপ ভিসায়। সেই থেকে সে আছে এদেশে। কিন্ত এর আগে তাকে কাজ করতে হয় নি। পায়ের ওপর পা দিয়ে আয়েশ করে খেয়েছেন।
    সে এমনিতেই একটু নিরিবিলি। আরাম পিয়াসী। একটু অন্তর্মুখী। কাউকে ঘাটায় না। ঘাটতেও চায় না। দুটো সাদাভাত। কাচা ঝাল, পিয়াজ, খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে যে কোন ভর্তা আর ছোট মাছ চচ্চড়ি হলেই সে খুশি। তার কোন পিৎজা, সান্ডউচে মন নেই। তবে যে কোন জুস এর ব্যাপারে তার সব সময় একটু বাড়তি আকর্ষণ এবং কখনওই খানদানি বোরহানীতে না নেই।
    তাকে সুন্দরী বলা যায়। বরং নিঃসেন্দহে। সুন্দরীদের যে কয়টি প্রচলিত শর্ত আছে সবগুলিতেই তার প্লাস মার্ক। শুধুমাত্র উচ্চতায় টেনেটুনে পাশ। তা না হলে তার গোল্ডেন প্লাস কেউ ঠেকাতে পারত না। তবে এ নিয়ে তার আফসোস নেই। নেই কোন খারাপ লাগা কিংবা মন খারাপের সাতকাহন। কারণ জেসিকা মিয়া বাড়ির মো. বজলুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্রবধু। প্রথম পুত্রবধু শিরিনা আক্তার পলির থেকেও সে একটু মাথাতোলা। তাই আর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ, দেবরদের এই বিষয়টা নতুন করে মাথায় ঢোকে নি। তাই সারাজীবনের এই আক্ষেপ মুহূর্তেই মিলিয়েছে শতভাগ।
    তার খাড়া নাক, পটল চেরা ভাসা ভাসা দুটি গভীর চোখ, চিলের ডানার মতো উড়ন্ত ভুরু, উত্থিত চিবুকসহ তার টনটনে ব্যক্তিত্ব সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া তার রয়েছে দুধে আলতার ধবধবে ফর্সা রং। এতকিছু সত্বেও পিতবর্ণের ঘোলাটে চোখের মনি তাকে সন্দেহের মধ্যে আনে সহজেই। সে কি খাঁটি বাঙালি? নাকি টোটেম, ট্যাবু, দ্রাবিড়, না মোঙ্গলীয় কোন উপজাতি থেকে তার জিন এসেছে? সে যাই হোক।
    সব মিলিয়ে সে হ্যাপি।
    তার বাবা ছিলেন থানা ইঞ্জিনিয়র। সেই সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় থানায় তার বসবাস। ছোট বেলা থেকেই সে সকলের কাছে বাড়তি মনোযোগ পেতে অভ্যস্ত। তো বাংলাদেশের অসংখ্য থানায়-থানায় মনোযোগ পেতে-পেতে আজ নিউইয়র্কের ব্রুকলিনেও সে সমান্তরাল ভাবে আকর্ষিত।
    দীর্ঘদিন সে আমেরিকার স্থায়ী নাগরিক হলেও বাইরে সে খুব একটা কাজে যায় নি। তবে এবার কাজ করতে হবে। মেয়েটা এবার ভার্সিটিতে যাবে। ও পড়তো স্টাইফেসেন্ট হাইস্কুলে। ওখানকার এ প্লাস গ্রেডের ছাত্রী। এবার যাচ্ছে স্টোনিব্রোক ইউনিভার্সিটি। ছেলেটি ব্রোন্সসায়েন্স হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। ঔ পড়ছে স্টোনিব্রোক এ। নিউইয়র্কের কেন্দ্র লং আইল্যান্ড এর এক নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে শহরের দ্বিতীয় শ্রেণীর এ ভার্সিটিতে। অবশ্য হাভার্ট ভার্সিটি, কলম্বিয়া ভার্সিটিতে চান্স হয় নি বলে জেসিকার মোটেও মন খারাপ হয় নি। ব্রুকলিন থেকে টানা দুঘণ্টার ড্রাইভ শেষে উইকএন্ডে যখন ছেলেটি বাসায় আসে তখন সে অন্য গর্বে হেসে ওঠে। ছেলে জাকির ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও মেয়েটির ইচ্ছা মেডিক্যাল স্টাটাস। তারজন্য প্রয়োজন প্রচুর ডলার। এখানে উচ্চ শিক্ষা বাংলাদেশের মতো সকলের নাগালের মধ্যে থাকে না। এখন তো বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জ মফস্বলের কলেজগুলিতে অনার্স পড়ার সুযোগ আছে। কিন্ত এদেশে তা নয়। এখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রচুর খরচ লাগে।
    যেটি মধ্যবিত্ত সমাজে একজনের আয়ে সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই জেসিকা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। অবশ্য এটাও সঠিক যে টাকা থাকলেই ওর বাবা মেয়ের পেছনে খরচ করতে চাইতো না। মেয়ে বড় হয়েছে। তাকে হোস্টেলে পাঠানো যাবে না। এটাই তার একান্ত ইচ্ছে। মেয়েদের নিয়ে তার অযাচিত সন্দেহের বাতিক রয়েছে। এতদিন সে সন্দেহের মধ্যে রাখতো জেসিকাকে। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে মেয়ে তাহান। হাত খরচ চাইলেই উল্টাপাল্টা কথা–
    বয়ফ্রেন্ড নিয়ে লাঞ্চ করেছো?
    এত টাকা লাগে কেন?
    তুমি জানো আমি ডায়াবেটিকস। বাট এভরিডে আমি কিভাবে ব্রেকফাস্ট করি?
    অনলি ওয়ান ডলারের একটি ক্রোসেন ব্রেড এবং এক ডলারের একটি কফি। দুপুর না খেয়েই কেটে যায় আমার। রাতে জাস্ট একটা জাইরো।
    আমার মেয়ে হয়ে তোমার এত ফুটানি কোথা থেকে আসে?
    মেয়ে একদম চুপ।
    মুহূর্তকাল অপেক্ষা করেই ফেটে পড়ে।
    আর ইউ নো হট আর ইউ সেয়িং? হাউ ননসেন্স?
    ভাইয়াকে তুমি প্রতিদিন আমার ডাবল ডলার দাও। তখন? তখন তো
    নট এনি কোশ্চেন? হোয়াট হ্যাপেন্ড?
    তোমার একটি ডলারও আমি নিতে চাই না। আমি লোন নিব।
    সরকার বসে আছে ডলার নিয়ে। আমি আর্ন করে পেমেন্ট করব। ব্যস,
    ইটস মাই লাস্ট ডিসিশন।
    এই সব ঘটনার পর থেকেই জেসিকা তার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে।
    কাজ শুরু করেছে।
    পাপাইয়াচে কাজ করতে যেয়ে সে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে।
    নিজের চুল নিজে ছিড়ছে। কেন সে পড়াশোনাটা শেষ করে নাই?
    ওর বান্ধবী শিউলি। যাকে সে কোনওদিন গোনার মধ্যে রাখে নাই! অথচ সেই কিনা এখন এ গ্রেড টিচার। ছোটবেলায় জিয়ল মাছের মতো প্যাতপেতে ছিল। হাবলু। অথচ পড়াশোনার জোরে আজ সে হাইহিলে ঝড় তুলে স্কুল কাঁপিয়ে বেড়ায়। স্টুডেন্টস তার ভয়ে যখন-তখন ড্রেস নষ্ট করে ফেলে। সেই জিয়লের প্যাতপেতে শিউলি আজ পার্লারের কল্যাণে ঐশ্বরিয়ার গ্লোর কাছে কম্পিটিশনে নাম লেখাতে পারে?
    কেন? শুধু ঐ পড়াশোনার জোরেই তো? নাকি? তার কল্যাণেই তো আজ পোষ্ট পেয়েছে। আর পোষ্টটির কারণেই তো হাই সোসাইটিতে বর্তমান তালিকায় নাম লেখাতে
    পেরেছে। আর সবকিছু মিলে পেয়েছে গ্লোরিয়াস মুভমেন্ট।
    আর লায়লা। তারও একই অবস্থা। কালো ছিল বলে সময়মত বিয়ে হলো না। ঠিকই পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস করলো প্রশাসনে। বিয়ে করেছে কলিগকে। ব্যস। অথচ ও বলতো শুধু নাকের জায়গায় নাক আর চোখের কাছে চোখ থাকলেই হলো। তারপর ঘসে মেজে সুন্দরী হওয়া তো চোখের পলকের ব্যাপার। সত্যি তাই। লায়লা যেন বসরার ফুটন্ত গোলাপ। এই সাত সমুদ্র তের নদী দূরে থেকেও জেসিকা ফেসবুকের কল্যাণে প্রতিদিন তার ফুটন্ত গোলাপীয় ছবি আর স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে অস্থির। আর আমেরিকা বসে এই শুন্য দশকে ডিজিটাল সময়ে তার মেধাবী মেয়েকে টাকার অভাবে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করাবে এমন গাধা সে কোনওকালে ছিল না। বিশেষ করে যেখানে শ্রম দিলেই ঘন্টা মেপে আয় করা সম্ভব। তাহলে আর ঘরে বসে পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে থেকে ফেসবুক ঘেটে ঘেটে সময় নষ্ট কেন?
    জেসিকা এই বয়সে এসে বিষয়টি বুঝতে পারে। এতো আর বাংলাদেশ নয় যে ইচ্ছে থাকা সত্বেও যে কোনও বয়সে, যে কোনও শিক্ষায় ঘন্টা মেপে কাজ পাওয়া যায়? এর নাম আমেরিকা। সারা বিশ্বকে যারা শাসন করে ইচ্ছেমতো। সে আরও বুঝতে পারে যেসব মেয়েরা সুন্দরী তাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয় মাঝারি স্ট্যাটাস এর ছেলেদের সাথে। আর যেসব মেয়েরা সুন্দরী না হওয়ার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারে পরবর্তীতে তাদেরই ভাল বিয়ে হয় চোখ বন্ধ করে। না হলে নিতান্তই নিজের কলিগ তো থাকেই!
    আর জেসিকা! পড়াশোনাটা শেষ করতে পারেনি বলেই আজ এতো বিড়ম্বনার শিকার। পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি তার এই অতি মাত্রায় সুন্দরের কারণে। সেই ছোট বেলা থেকেই সবাই ওর মাথা চিবিয়েছে। আর একটু বড় হতেই শুরু হলো বিয়ের প্রস্তাব। যাকে মানায় সেও পাঠায় আবার যাকে মোটেও মানায় না সেও আসে!
    এভাবেই এসএসসি দেবার পর পরই তার বিয়ে হয়ে যায় একই এলাকার মনজুরুল এর সাথে। মনজুরুলের তখন দেবার মতো আলাদা কি পরিচয় ছিল? পরিচয় ছিল তার ভাইয়ের। তার বাবার। ও ছিল ঐ ফ্যামিলির ফ্যাশন সচেতন স্মার্ট যুবক সর্বস্ব। দেখতে তেমন সুদর্শন বলা যাবে না। তবে সায়ন্তনী জুতা ছাড়া তার চলতো না। ওয়ান ম্যান সো পারফিউম তাকে জানান দিতো সব সময়ে সে আছে। আর ছিল এক দঙ্গল বন্ধু সমাজ। ব্যস, বড় আপা পটে গেল! এখনও সময়-অসময়
    বলে জেসিকা। কি চাইছিলে তোমরা? সত্যিকারের বলো তো? আসলে তোমরা চাইছিলে সারাজীবন আমি তোমাদের হাতে পায়ের নিচে থাকি? সুন্দরী ছিলাম বলে সারাজীবন সমাজ তোমাদের চেয়ে আমাকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল তার প্রতিদান এইভাবে নিতে চাইছিলে?
    আবার নিজেই নিজের সাথে হাহা করে, হাহাকার করে। কি পাগল আমি? এই কি সম্ভব? কখনও সম্ভব ? কোনও দিন সম্ভব? নিজের মায়ের পেটের বোন। হাতে করে মানুষ করেছে। তাই কি সম্ভব?
    বলার জন্য বলা! মন যে কি বলে? সে বোঝে না কিছুই। আসলে ঐ সময়টা মনজুরুলের ফ্যামিলি ছিল কামারখালীতে সবদিক থেকে এগিয়ে। প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, কনস্ট্রাকশন ফার্ম কজনের ছিল। ও রকম একটা ভরা ফ্যামিলি রেখেই ওরা চলে এলো স্বপ্নের আমেরিকায়। কিন্ত এখানে ইচ্ছে করলেও পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে খাওয়া যায় না। বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাস করতে করতে আর্দালি, চাপরাসি সাথে নিয়ে বাজারের সবচেয়ে বড় আড় মাছটা কেনা যায় না। এখানে ঘন্টা হিসাবে কাজ করতে হয়। ইচ্ছে করলেই কাজে যেয়ে আয়েশ করে বসে থাকা যায় না। এই হচ্ছে এদেশ আর ওদেশের পার্থক্য।
    কিন্ত জেসিকা অনেকটাই এদেশের মতো। খাওয়া দাওয়া। চলা ফেরা। পোশাক পরিচ্ছেদে। লাইফ স্টাইলে এদেশীয়। চেহারার মধ্যে মঙ্গোলীয় একটা স্লাইড আগে থেকেই আছে। সব মিলিয়ে ও যেখানেই কাজে যায় ওকে নিয়ে একটা গসিপ চলে। ও কি সত্যিকারের বাঙালি নাকি ফেক বাঙালি! ও সময়-অসময়ে এসব ভাবতে বসে। পেছন থেকে তাড়া লাগায় মালিক কাম ম্যানেজার। এতো কি ভাবো? গার্বেজ করো। হাত লাগাও। জেসিকা নড়ে-চড়ে বসে। হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
    ঘড়িতে তখন অনেকটা অকারণ সময় পেরিয়েছে।

  • প্রার্থনাপর্ব-০৮: উৎসব

    হুমায়ূন আফতার এর কবিতা

    প্রার্থনাপর্ব-০৮: উৎসব

    হয়তো ততোখানি জমকালো হবে না আমাদের উৎসব
    পরিপূর্ণতা নাও পেতে পারে পারিবারিক ঐতিহ্যে,
    অথবা সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম আর পৃষ্ঠপোষকতার;
    জনাকীর্ন আনন্দদোলায় সাময়িক নৃত্যকলা
    প্রদর্শিত নাও হতে পারে; শুধু একমুঠো
    আজন্ম ভালোবাসার দৃঢ় অঙ্গিকারে
    প্রার্থনার সাথে সাদাকালো জীবন কাটানোর বিশ্বাসে
    শুধু একটি সরল প্রেমের আপোষ হতে পারে।
    প্রার্থনা- তোমার কপালে শ্বেত চুম্বন এঁকে
    আমি অর্জন করতে চাই প্রমিথিউসের শপথ শক্তি,
    তোমার আলিঙ্গন স্পন্দনে আমি খুঁজে পেতে চাই
    পূণর্বার বেঁচে উঠবার অফুরন্ত সম্ভাবনা।
    হয়তো এ উৎসবের ভিতরে লুকিয়ে আছে
    আরো আরো বৃহৎ প্রেমের উৎসব।

  • নিয়ম

    হুমায়ূন আফতার এর কবিতা

    নিয়ম

    গন্তব্যহীন যাত্রীর স্টেশান ছাড়া নেমে পড়াতে বিব্রত নই;
    উষ্ণ আবেগে মল্লার রাগে কবিতা ছেড়ে ধিনাক্ ধিনাক্
    নেচে উঠে কবি এক ঝলক্ উল্লাসিত হতেই পারেন।
    স্বদেশ প্রেমের রঙ করা মিছিলে বাইশের যুবক
    উচ্চ কণ্ঠে লাফাতেই পারেন,
    এতে রাষ্ট্রের পরিবেশ শৃঙ্খলাচ্যুত হবে না।
    এসো কর্মপ্রিয় উদ্যমি
    আমরা নিয়ম ভাঙার নিয়ম বানাই।