ইংরেজী Humming অর্থ গুনগুন করা। ছোট এ পাখি যখন প্রচন্ড গতিতে পাখা নাড়ে তখন গুনগুন শব্দ হয়, এজন্য এ পাখিকে হামিং বার্ড বলা হয়। এদের স্বভাবে রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর সবথেকে ছোট প্রজাতির হমিং বার্ড পাওয়া যায় কিউবায়। দুই গ্রামের কম ওজন এবং আড়াই ইঞ্চির কম লম্বাকৃতির এই পাখির ডিমের আকৃতি মটরের দানার মত। সবচেয়ে বড় প্রজাতির হামিং বার্ডকে জায়ান্ট হামিং বার্ড বলা হয়, যারা লম্বায় মাত্র আট ইঞ্চি এবং ওজনে ১৮ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।
এদের পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ পাখির লোম সবুজ রংয়ের হয় এবং পাখার উপরের দিক নীল বর্নের আর নিচের দিকটা ধূসর সাদা বর্ণের হয়। অপরদিকে স্ত্রী পাখির গায়ের রং নীলচে সবুজ হয় এবং লেজে সাদা ফোটা দাগ থাকে। হামিং বার্ডের দুইটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এরা একটানা বহুদিন না খেয়ে থাকতে পারে এবং এরা কোথাও না থেমে হাজার মাইল পাড়ি দিতে পারে। এর রহস্য হিসেবে বিজ্ঞানীরা জানান, হামিং বার্ড সেকেন্ডে ১২ থেকে ৯০ বার পাখা ঝাপ্টাতে পারে। অন্যান্য পাখিরা ডানা মেলে শুধুমাত্র সামনের দিকে উড়তে পারে। কিন্তু হামিং বার্ড সামনে পিছনে, ডানে বামে, উপরে নিচে সব দিকে উড়ে যেতে পারে। এদের এরুপ উড়ার রহস্য লুকিয়ে আছে এর ডানার গঠন, কাঁধের জোর এবং অতি শক্তিশালী পেশীর মাঝে। এরা এত দ্রুত উড়তে পারলেও অন্যান্য পাখির মত এরা হাঁটতে পারে না এবং বেশি সময় দাড়িয়েও থাকতে পারে না।
খাবার দাবারের বেলাতেও এই পাখি বেশ বিলাসী। এদের প্রধান খাদ্য মধু। হামিং বার্ডদিনে প্রায় ১৫০০ ফুল থেকে মধু আহরন করে। মধু খাওয়ার সময় এরা ফুল থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখে এবং শূন্যে ভাসমান অবস্থায় মধু সংগ্রহ করে। লাল রংয়ের ফুলই এদের পছন্দনীয়। কিছু পাখি পোকা মাকড়ও খাবার হিসেবে গ্রহন করে।
এরা সাধারনত গাছের ডালে বাসা বেঁধে থাকে। বাসা তৈরির জন্য শুকনো ঘাস, লতাপাতা, গাছের বাকল, ছত্রাক, মাকড়সার জাল, শেওলা ব্যবহার করে থাকে। তবে বাসা বাঁধার জন্য স্ত্রী পাখিরাই কাজ করে, পুরুষ পাখিদের এ ব্যপারে কোন মাথাব্যাথা নেই। এদের বাসা আকারে কাপের মত হয়। একটি স্ত্রী হামিং বার্ড প্রতিবারে ২ টি ডিম পাড়ে । দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে ডিম থেকে ছোট হামিং বার্ড বের হয় যা প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ছয় থেকে সাত দিন সময় নেয়। এদের গড় আয়ু তিন থেকে পাঁচ বছর।
Category: বিশেষ সংবাদ
-
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম পাখি হামিং বার্ড
-
জুলফিকার শাহাদাৎ এর কবিতা
অথৈ নদে রোহিঙ্গারা
এই যে পাহাড়, আকাশ-মাটি কিংবা নদীর জল
কার নিয়মে, কার হুকুমে চলছে অবিরল
নেই কোথাও দেয়াল কারো কিংবা কোনো ভাগ
পাইনা খুঁজে তাদের মাঝে রাগ বা অনুরাগ।কে দিয়েছে এই মহা-ধন, কার কাছে আজ ঋণী
তাঁর পরিচয়, বিচার দিনের মহান মালিক যিনি।
তাঁর কাছে নেই উঁচু-নিচু কিংবা জাতের ভেদ
তাঁর কাছে নেই ধনী গরীব ভিন্ন পরিচ্ছেদ।তাঁর পৃথিবী ভাগ করে আজ আমরা রাজা-রানী
কারো জন্য সুখ খুঁজে দিই, কাউকে পেরেশানি
কেউ ভরা পেট, কেউ হা-ভাতে কেমন নীতিমালা!
দুঃশাসনের এই জগতে বাড়ছে শুধুই জ্বালা।এই পৃথিবী সবার জন্য, সবার সমান ভাগ
দেয়াল দিয়ে কোন কাপুরুষ দেখাচ্ছে দেমাগ!
তাঁর যৌবন আর কতোকাল? ফিরতে হবে ঘরে
অথৈ নদে রোহিঙ্গারা মৃত্যু লড়াই করে। -
এসো পরিচিত হই সুকুমার রায় এর সাথে
সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) একজন বাঙালি শিশু সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তাঁর লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা “ননসেন্স” ধরণের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (অষরপব রহ ডড়হফবৎষধহফ) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর এতো বছর পরও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের একজন।
সুকুমার কলকাতা থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি. করার পর মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১-তে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ তে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। উপেন্দ্রকিশোর ঠিক সেই সময়েই শুরু করেছিলেন ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’। সুকুমার ফিরে তাতে লিখতে শুরু করেন। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলিতে। তাঁর প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল-তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।
পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মানডে ক্লাব নামে একই ধরণের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। সুকুমার রায় কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। -

বনের রাজা
আহমেদ সাব্বির
বনের রাজা বাঘ। বাঘের যেমন রাশভারী মেজাজ, তেমনি গট্ মট্ চলন। তাঁর ছায়াটি দেখলে বনের পশুদের পিলে চমকে যায়। গুটিসুটি মেরে গর্তে লুকায়। পাখিরা ফুড়–ৎ করে উড়ে পালায়। রাজামশাই একবার গর্জন করলে গোটা বন ঠক্ ঠক্ কওে কাঁপতে থাকে। আর তাঁর আদেশ অমান্য করলে নিশ্চিত মৃত্যু।
কিন্তু এক বনে বাস করতা এক বাঘ। বিশাল দেহ তাঁর। দেখতে ভয়ংকর। গায়ে হলুদ-ডোরা দাগ। সে ছিল বনের রাজা। কিন্তু রাজা হলে কি হবে? কেউ তাকে কানাকড়ি দাম দিত না। ভয় পাওয়াতো দূরের কথা, বনের হরিণ, শেয়াল, বানর, ময়ূও, গ-ার, কুমির, খরগোশ, হাতি সবই ছিল। কিন্তু ওরা কেউ বাঘকে রাজা বলে মানতো না। এজন্য বাঘের দুঃখের সীমা ছিল না। কী বিশাল দেহ তাঁর। পাকা শিকারীর মতো গোঁফ। গায়ে অসূরের মতো শক্তি। কিন্তু কোন মর্যাদা নেই তাঁর। সবাই তাকে উপহাস করতো।
একদিন ভোর বেলা। ঘুম থেকে জেগে বেশ জোরেশোরে একটা গর্জন করলেন রাজামশাই। অমনি ছুটে এলো গ-ার। রেগেমেগে বলল- এ্যাই! সাত সকালে অত জোরে চিৎকার করলি কেন? আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল।
রাজা মশাই বললেন- আমি তো বনের রাজা। আমি তো গর্জন করবই। গর্জন করাই তো আমার স্বভাব।
ক্স এ্যা.., খুব রাজাগিরি শিখেছিস না? গায়ে মানে না আপনি মোড়ল। ফের যদি কোনদিন চিৎকার করেছিস তো চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব।
গ-ারের কথা শুনে মহারাজ মনে মনে খুব দুঃখ পেলেন। সেদিন খুব খিদেও পেয়েছিল তাঁর। হাই তুলতে তুলতে তিনি ভাবলেন- অনেক দিন মাংস খাওয়া হয় না। আজ একটা হরিণ শিকার করলে মন্দ হয় না। অন্তত দু’তিন দিন ধরে খাওয়া যাবে। তিনি হাঁটতে হাঁটতে গভীর বনের দিকে চলে এলেন। হরিণ কোথায় পাওয়া যায় খুঁজতে লাগলেন। পথিমধ্যে দেখা হলো শিয়ালের সঙ্গে। সে ছিল ভিষণ চালাক। রাজাকে দেখে মাথা নিচু করে সালাম জানালো। বলর-
ক্স জয় হোক মহারাজের। তা পায়ে হেঁটে কোথায় চলেছেন হুজুর?
ক্স একটু হাঁটতে বের হলাম আর কি।
ক্স তা আমাকে খবর দিলেন না কেন? হাতি পাঠিয়ে দিতাম। ওর পিঠে চড়েই ভ্রমণে বের হতেন।
শিয়ালের কথা শুনে রাজামশাই আল্লদে গদ গদ হয়ে গেলেন। বললেন- সকাল থেকে শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল। ভাবলাম একটু হাওয়া খেয়ে আসি। তা তোমার খবর কি? পাঠশালা কেমন চলছে?
চলছে কোন রকমে আর কি?
কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে কিন্তু।
মহারাজ মহানুভব। আপনার মতো দয়ালু রাজা থাকতে আমাদের আর অসুবিধা কোথায়? কী মাহান! কী উদার! অন্যরা কেবল বুঝলো না।
বাঘরাজা বললেন- আচ্ছা এখানে হরিণ পাওয়া যাবে কোথায় বলতে পার? ক’দিন ধরে হরিণের মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। শিয়াল বলল- খুব পারি মহারাজ। তবে একটু দূরে। উত্তরের জঙ্গলে। আমার ডেরার কাছেই। আপনি চাইলে আমি পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু…….।
কিন্তু কি?
না মানে, আমার পায়ে বাতের ব্যথাটা বেশ বেড়েছে। গত রাত থেকে টনটন করছিল। হনুমানজির কাছথেকে তেলপড়া আনতেই এদিনে এসেছিলাম। বেয়াদবি মাফ করবেন হুজুর। অতটা পথ হেঁটে যেতে আমার খুব পেরেশানি হবে।
মহারাজ বললেন- তা তো ঠিকই। তুমি বরং এক কাজ করো। আমার পিঠেই চড়ে বসো। আমিই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
দুষ্টু শিয়াল বাঘের পিঠে চড়ে আমোদ করতে করতে নিজের ডেরার দিকে রওনা হলো। পথে দেখা হলো হাতির সঙ্গে। শিয়ালের কা- দেখে হাতি হেসে ফেলল। শিয়াল বলল- মহারাজের শরীরটা জমে গিয়েছিল। আমি একটু ব্যায়াম করাচ্ছি আরকি। ঠিক বলি নি মহারাজ? মহারা বললেন- হুমমম।বাঘরাজা হাঁটতে হাঁটতে উত্তরের জঙ্গলে এসে পড়লেন। একটু দূরে একটা হরিণকে তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে চরাতে দেখা গেল। শিয়াল বাঘের পিঠ থেকে লাফিয়ে নিচে নামলো। বলল- মহারাজ আপনি এখন যত খুশি হরিণ শিকার করুন। আপনাকে আর বিরক্ত করা সমিচীন হবে না। আমি বরং যাই। বলেই সে সুড়ুৎ করে একটা গর্তে ঢুকে পড়লো।
রাজামশাই হরিণ দেখে খুব খুশি হলেন। কিছুদূও এগিয়ে গিয়ে একটা ঝোঁপের আড়ালে তিনি ওৎ পেতে থাকলেন।
মা হরিণ তাঁর বাচ্চাদের খাওয়ানোর ফাঁকে নানা উপদেশ দিচ্ছিল। সইে সঙ্গে বনের পশুদের সম্পর্কেও একটা ধারণাও।
ক্স এই বনে অনেক হিং¯্র প্রাণি রয়েছে। ওরা যখন তখন তোমাদের খেয়ে ফেলতে চাইবে। কিন্তু তোমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের রক্ষা করে চলতে হবে। যখন ঘাস খাবে কিংবা বিশ্রাম নেবে তখনো চোখ-কান খোলা রাখবে। এমনকি পেটের মধ্যে ভুটভাট শব্দ হলেও লাফিয়ে উঠবে। তবে এই বনের রাজা বাঘ। তাকে ভয় না পেলেও চলবে। কারণ সে বোকা। চেহারটা ভয়ংকর হলেও বুদ্ধিটা তাঁর ভেড়ার মতোই। এই বনে কেউ তাকে ভয় পায় না। তোমরাও পাবে না।রাজা মশাই আড়ালে দাঁড়েয়ে হরিণ মায়ের সব কথাগুলো শুনে ফেললেন। তাঁর খুব অপমান বোধ হল। শিকারের ইচ্ছাটাই মরে গেল। তিনি ফরতে যাবেন এমন সময় দেখতে পেলেন- মাথার উপর একটা গাছের ডালে দুইটা বানর ভিষণ ঝগড়া করছে। ক্যাচ কুচ করে চিৎকার করছে। ভেংচি কাটছে। রাজা মশাই বিরক্ত হলেন। বললেন- এ্যাই, তোমরা ঝগড়া করছ কেন? দেখছ না নিচে রাজা দাঁড়িয়ে আছে।
বানর বলল- মাফ করবেন মাহারাজ। আপনাকে দেখে আমরা ভেবেছিলাম বনবিড়াল। আর আমার বউ ভেবেছিলো হুলো। সেটা নিয়েই আমাদের মধ্যে তর্কটা চলছিল।
রাজা বললেন- মূর্খ কোথাকার। তোমরা ঝগড়া বন্ধ কর। আমি ক্ষুধার্ত।
মহারাজ, যদি কিছু মনে না করনে আমি কি আপনাকে কলা খাওয়াতে পারি? গাছপাকা সবরি কলা। ভারী মিষ্টি।
ক্স চুপ কর হতভাগা। বনের রাজা খাবে কলা? সে কি কলা খায়?
মনের দুঃখে রাজা নিজের ডেরার দিকে ফিরতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা ঘণিয়ে এলো। তিনি ভাবলেন- বনের পশুরা যখন তাকে রাজার মর্যাদা দিতে চায় না তখন এই বনে না থাকাই ভালো। তিনি ঠিক করলেন অন্যত্র চলে যাবেন। হঠাৎ তিনি পেঁচার ডাক শুনতে পেলেন। সে হাঁপাতে হাঁপাতে রাজার সামনে এসে উপস্থিত হলো।
রাজা মশাই! রাজা মশাই!
কি সংবাদ বলো।
বনের একদল মানুষ ঢুকেছে। তাঁরা অন্ধকারে মশাল জ্বেলে কি যেন করছে।
কোথায় তাঁরা? নিশ্চই কোন মতলবে এসেছে।
ঐতো দক্ষিণের জঙ্গলে। নদীপাড়ে।
চলো, দেখে আসি।
রাজা দ্রুত বেগে পথ চলতে শুরু করলেন। বনের কাছাকাছি চলে আসতেই চোখে আলো এসে পড়লো। তিনি একটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে দেখতে পেলেন- দশ-বারো জন লোক। কালো পোশাক পরা। হাতে ভারী বন্দুক। সঙ্গে প্রকান্ড একটা লোহার খাঁচা আর একটা জাল। রাজা মশাই ভয় পেয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি দৌড়ে পালালেন।
পরদিন সকালবেলা। রাজামশাই ঘুম থেকে জেগে আড়মোড়া ভাঙছেন। এমন সময় খরগোশ এলো হাঁপাতে হাঁপাতে। বলল-
মহারাজ! সর্বনাশ হয়েছে। শিগগিরি চলুন আমার সাথে।
কেন কি হয়েছে?
বনের মধ্যে একদল মানুষ এসেছে। তাদের হাতে বন্দুক। তাঁরা হাতিমামাকে একটা লোহার খাঁচায় আটকে রেখেছে। অজগর আর গ-ারকে একটা জালে আটকে রেখেছে। ওরা ভিষণ কান্নাকাটি করছে।
বাঘরাজা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তিনি ভাবলেন- কেউ তাকে দাম দিক আর নাই দিক, সে তো বনের রাজা। প্রজাদেও বিপদে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর কর্তব্য।তিনি ছুটে চললেন দক্ষিণের বনে। সেখানে গিয়ে দেখলেন- সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছে। কান্নাকাটি করছে। হাতি চিৎকার দিয়ে খাঁচা ভাঙার চেষ্টা করছে। গ-ার আর অজগর শক্ত জালের মধ্যে মরার মতো শুয়ে আছে।
প্রজাদের বিপদ দেখে রাজা আর সইতে পারলেন না। তাঁর বুকটা হু হু করে উঠলো। ওদের বাঁচাতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচন্ড হুংকার দিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন মানুষগুলোর উপর। একটা মানুষ খুব দ্রুত বন্দুক তাক কওে গুলি ছুঁড়তে যাবে, এমন সময় গাছ থেকে বানর লাফিয়ে পড়লো। ছোঁ মেরে বন্দুক নিয়ে পালালো। মানুষদল বাঘের আক্রমণে নদীতে লাফিয়ে পড়ে পালালো।আটকে থাকা সব পশুদের মুক্ত করা হলো। খাঁচা খুলে বের করে আনা হলো হাতিকে। ইঁদুর এসে জাল কেটে গ-ার আর অজগরকে বের করে আনলো। বনের সবাই বাঘরাজার সাহস দেখে বিষ্মিত হয়ে গেল।
এতদিন তাঁরা রাজাকে শুধু অপমানই করেছে। কখনো তাকে রাজা বলে মান্য করেনি। এজন্য সবাই লজ্জিত হলো। তাঁরা বুঝতে পারলো তাদের মহারাজ মহৎ। তিনি দূর্বলের উপর দয়া করেন আর সবল শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পশুরা সবাই রাজার কাছে ক্ষমা চাইলো। বলল- মহারাজ, আমদের ক্ষমা করুন। আজ থেকে আর কখনো আপনাকে অমান্য করব না। আপনার হুকুমেই চলবে বনের পশুরা।
মহারাজ গম্ভীর স্বরে বললেন- ঠিক আছে। যাও তোমাদের ক্ষমা করা হলো।
সবাই তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো- জয় মহারাজের জয়! জয় বাঘবাহাদুরের জয়।
বাঘও তখন রাজার সম্মান ফিরে পেয়ে খুশিতে ডগমগ করতে লাগলেন। -
ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাব

ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাব (এফ.ডি.সি) এর ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। উপস্থিত অথিতিদেও মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাতক্ষীরা ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাবের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ, জেলা পুলিশ সুপার মো সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শাহ্ আবদুল সাদী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছাইফুল করিম সাবু প্রমুখ।
-
সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের ইফতার মাহফিল
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ১১ রমজান সোনালী ব্যাংকের দো-তলায় সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রিন্সিপ্যাল কমিটির সভাপতি মীর সাজ্জাদ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ নাছিম হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশিদ, জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মকসুমুল হাকিম, সাধারণ সম্পাদক এড. ওসমান গনি প্রমুখ। এসময় সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রিন্সিপ্যাল কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন পাওয়ার হাউজ মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রিন্সিপ্যাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম।
-
সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের ম্যানেজিং কমিটির সভা
শহর প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকালে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে এ সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব কাজী মুহম্মদ অলিলউল্লাহ, আলহাজ্ব মো. ফজলুর রহমান, আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা, আলহাজ্ব শেখ মামুনার রশিদ, আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক, আলহাজ্ব কাজী মনিরুজ্জাম মুকুল, নলতা কেন্দ্রীয় মিশনের ডা. নজরুল ইসলাম, মো. আমজাদ হোসেন, মুফতি আক্তারুজ্জামান, নব নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, যুগ্ম সম্পাদক মনোয়েম খান চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা, সহ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জিএম মাহাবুবর রহমান, আব্দুল আলিম, মুজিব হোসেন নান্নু, আলহাজ্ব মো. আব্দুল খালেক, অধ্যক্ষ হাফিজুল আল মাহমুদ, জুলফিকার হায়দার সাগর, হাসিবুর রহমান রনি প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.) এঁর প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র মোতাবেক এখানে সব কিছু বাস্তবায়ন করা হবে।’
সভায় সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন জামে মসজিদটি ২য় তলায় যেখানে ছিল সেখানেই স্থাপন করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং আগামী ৩ জুন নব নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। -

ভাল্লাগেনা
আম্মু আমার ভাল্লাগেনা
করতে লেখাপড়া,
যোগ-বিয়োগের অংক লাগে
ভীষণ রকম কড়া।
বইয়ের গাদা দেখলে যে হয়
চক্ষু ছানাবড়া।।দোহাই আমায় দাওনা তুমি
লেখাপড়ার তাড়া,
পড়ার কথা শুনলে গায়ের
লোম হয়ে যায় খাড়া,
বলবে আমায় অন্য কথা
পড়ার কথা ছাড়া। -

ওরা ইতিহাস হয়
মিছিলে স্লোগান ধরে সব ভাই
মিছিলে আওয়াজ তোলে রব ভাই
রাজপথে অবরোধ চলছে ;
রাষ্ট্র ভাষার কথা বলছে।মিছিলের মুখে ছিল জব্বার
ভাষাটার দাবী ছিল সব্বার
মিছিলের পিছে ছিল কালামে,
দুই পাশে রফিক আর সালামে।হঠাৎ মিছিল থামে গুলিতে
বাঙালির বুকে পিঠে খুলিতে
রক্তে রঙিন হয় রফিকে,
ঢলে পড়ে জব্বার ও শফিকে।সেই থেকে ওরা ইতিহাস হয়;
শহিদের সম্মানে বেঁেচ রয়। -

আমাদের নজরুল
বাংলার বুলবুল,
আমাদের প্রিয় কবি
বিদ্রোহী নজরুল।লিচুচোর ভোর হলো
আরো কত ছড়া,
লেখাগুলো ভারি মজা
যেন রসে ভরা।প্রতিবাদ ছিলো তার,
জেলে যেতো বার বার।
তবু কবি করতো না ভয়,
নির্ভয়ে লেখা লিখে
আনতো বিজয়।সেই কবি মান করে
বলে নিতো কথা,
কেটে ছিলো চুপচাপ
বড় নীরবতা।আমাদের সেই কবি
আছে হৃদয় জুড়ে,
ভুলবো না কিছুতেই
থাকুক যত দূরে -

মেঘ আসবে
মেঘ উড়ে যায় মেঘের বাড়ি
খুশির নূপুর পায়ে
মেঘ হয়ে যায় পরির মেয়ে
শহর থেকে গায়ে।মেঘ ছুটে যায় দূরের গ্রামে
মেঘ শোনে না বারণ
মেঘরা আসবে আমার বাড়ি
নেই তো কোনো কারণ। -

মা ও মাতৃভূমি
ছোট্ট খোকা স্বপ্নে সেদিন গেল পরির দেশে
শুভ সম্ভাষণ জানাল হাজার পরি এসে ।
পরিরা তো বড্ড খুশি মানবখোকা পেয়ে
সবাই মিলে কী আনন্দ করল নেচে-গেয়ে !পরির রানী বলল এসে আমার সাথে চলো
তোমার কী কী প্রিয় জিনিস, কী খেতে চাও বলো ।
এমন কিছু চাও যদি চাও পাওনি কভু কাছে
সেই জিনিসও দেবো এসো আমার দেশে আছে ।সোনার খাটে আরাম করে ঘুমুবে রোজ রাতে
পরিখুকি করবে বাতাস, সুখ পাবে খুব তাতে ।
সারাবেলা ঘুরবে তুমি সোনার জুতো পায়
রুপোর সড়ক, হীরের পাহাড়-যেইখানে মন চায় ।খিদে পেলে মুখের কাছেই পাবে মজার ফল
তৃষ্ণা পেলেই আকাশ থেকে পড়বে মুখে জল ।
মনটা তোমার ভরবে খোকা হরেক ফুলের ঘ্রাণে
দিবস-যামি সুখের দোলা লাগবে দেহে-প্রাণে ।বলল খোকা, এই দেশেতেই থাকব এসব পেলে
কাটবে জীবন অনেক সুখে নিত্য হেসে-খেলে ।
খোকার কথায় সকল পরি খুব আনন্দ পায়
পরিরাজ্যে থাকুক খোকা-সেই তো ওরা চায় ।অবশেষে পরির দেশে থেকেই গেল খোকা
কত্ত রূপের দেশ যে এটা, যায় না লেখাজোখা ।
হাজার পরি নৃত্য করে খোকার চতুর্পাশে
পরিরানীর আদরে সে সুখের ভেলায় ভাসে ।সোনার খাটে ঘুমায় খোকা, রুপোর থালায় খায়
এরচে’ বেশি সুখের জীবন কেউ কখনো পায় ?
কিন্তু সেদিন হঠাৎ খোকার মনটা হলো ভার
অনেক সুখের পরির দেশে ভাল্লাগে না তার ।রূপভরা ওই দেশটাজুড়ে ঘুরল যথাতথা
খোকার মনে পড়ল তবু মা ও মাটির কথা ।
আর দেরি নয়, একনিমিষেই নিজের দেশে ফেরা
বুঝল খোকা মাদর আদর ও মাতৃভূমিই সেরা ।মাতৃভূমির সুখের সমান নেইকো প্রিয় সুখ
এই ভুবনে মায়ের মতো নেইকো প্রিয় মুখ । -

রূপকথা ও নীল প্রজাপতি
রূপকথা সেদিন ফুলবাগানে হাঁটছিল। চারিদিকে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। মনকাড়া সব ফুল। গোলাপ বেলী, রজনীগন্ধা, গাঁদা, অপরাজিতা, জবা, সূর্যমূখী আরো কত কি! ফুলের সুবাসে তার মন মৌ মৌ করতে লাগলো। সে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলো- ফুল এত সুন্দর হয় কেন? কোথা থেকে পায় এত রূপ? কী অপরূপ সুবাস। ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। একটু আগেই তো ওর মন খারাপ ছিল। আম্মু বকা দিয়েছে। চুলের ঝুঁটি বাঁধতে চায়নি বলে। সে বলেছিল- আম্মু আমার চুলে খোঁপা করে দাও। আমি ফুল গুঁজব। কিন্তু অতটুকুন চুলে কি খোঁপা হয়! ঝুঁটি হয়। রূপকথাও নাছোড়বান্দা। তাকে খোঁপা করে দিতেই হবে। শেষমেশ আম্মুর বকুনি খেয়েই থামলো সে।
রূপকথার বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। এখন থেকেই সাজুগুজু ওর খুব পছন্দ। সারাক্ষণ ড্রেসিংটেবিলের সামনে ঘুরঘুর করে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়। টিপ পরে। আব্বু এক ডজন চুড়ি এনে দিয়েছে। টুকটুকে লাল। সেই চুড়ি পরেই সারাক্ষণ রিন্-ঝিন ছন্দে ঘরময় ঘুরে বেড়ায়।
একদিন আম্মুর মেকাপ বক্স নাগালে পেয়েছিল। হাতে যেন চাঁদ পেয়েছিল। আম্মু ঘরে ঢুকেই দেখে অর্ধেক মেকাপ শেষ। আর রূপকথা রঙ মেখে সং সেজে বসে আছে।
ফুলবাগানে এসে ওর মনটা ভালো হয়ে গেল। নেচে নেচে খেলতে লাগলো। ভাবলো- ফুল নিয়ে একটা কবিতা বানালে কেমন হয়। সে বাবার কাছ থেকে কবিতা বানানো শিখে ফেলেছে। বাবা বলেছে ছন্দ দিয়ে কবিতা বানাতে হয়। রূপকথা কবিতা বানাতে চেষ্টা করলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলো। কিন্তু ভাব এল না। ভাব না এলে কবিতা হয় না। সে মনে মনে বলল- আয় কবিতা আয়। হঠাৎ এক লাইন চলে এল-
“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত”
তারপরে কি? কি হতে পারে পরের লাইন? আর মেলাতে পারলো না। সে আবার ঘুরতে শুরু করে দিল। হঠাৎ একটা নীল প্রজাপতিকে দেখতে পেল। জবা ফুলের উপর খেলছে। আর ওমনি পরের লাইন মিলে গেল –
“ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো”
বাহ! কী চমৎকার মিল। তারপর আবার ভাবতে লাগল। চার লাইন কবিতা আজ সে মেলাবেই। কবিতাটা বাবাকে শোনালে খুব খুশি হবে। খেলতে খেলতে ভাবতে ভাবতে এক সময় সে চার লাইন কবিতা বানিয়েই ছাড়লো।
“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”বাহ! কী চমৎকার! নিজেকেই বাহবা দিল। বাবা নিশ্চই খুব খুশি হবে। সে কবিতাটা জোরে জোরে পড়তে লাগল আর নেচে নেচে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। হঠাৎ দেখতে পেল, নীল প্রজাপতিটা তার দিকেই আসছে। রূপকথা অবাক হল। ভাবলো- বাব্বা কি সাহস! আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছে না।
এক সময় প্রজাপতিটা রঙিন পাখা দুলিয়ে উড়তে উড়তে ওর কাঁধে এসে বসলো। রূপ ভীষণ অবাক হলো। সে কোন নড়াচড়া না করে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয় গেল। ভাবলো- ইস! এই মুহুর্তে বাবাকে যদি ডাকা যেত। তাহলে নিশ্চই একটা ছবি তুলে দিত। প্রজাপতির সঙ্গে ছবি। ক’জনের আছে এমন ছবি। বাবা সারাক্ষন রূপকথার ছবি তোলে। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ক্লিক! ক্লিক! তবে প্রজাপতির সঙ্গে ছবি তোলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাও আবার বসেছে কাঁধের উপর।
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল ওর। আম্মু একদিন বলেছিল- প্রজাপতি গায়ে বসলে তার বিয়ে হয়ে যায়। কথাটা ভেবেই সে লজ্জা পেল। তাহলে কী ওর বিয়ে হবে। ছি ছি! কি ভাবছে এসব। ও তো এখনো খুব ছোট। এখনো ছোট কাকুরই বিয়ে হয়নি। সে প্রজাপতিটাকে আড়চোখে দেখতে লাগল। কী অররূপ! একটু নড়াচড়া করলেই হয়তো ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
হঠাৎ রূপকথাকে হতবাক করে দিয়ে প্রজাপতিটা কথা বলে উঠল- এ্যাই তোমার নাম কি? রূপকথা প্রথমে ভয় পেয়ে গেল। কে কথা বলল? বাগানে ও আর প্রজাপতি ছাড়াতো কেউ নেই। প্রজাপতি কি কথা বলতে পারে নাকি? ওর গা কেঁপে উঠলো। ভূতটুত নয় তো। প্রজাপতি আবারো কথা বলে উঠলো- কী ব্যাপার! এই মেয়ে তোমার নাম বলছ না কেন?
আ-আ-আমি রূপকথা। রূপকথা তোতলাতে তোতলাতে বলল।
ও। আমার নাম টুং। প্রজাপতি জানালো।
টুং নামটা রূপকথার বেশ পছন্দ হলো। প্রজাপতি আবার জানতে চাইলো-
তুমি ফুলবাগানে কি করছ?
আমি খেলছি।
আর আমি ঘুরছি।কিছুক্ষন যেতেই দু’জনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। এবার রূপ জনতে চাইলো- তুমি রোজ এখানে আসো?
প্রজাপতি বলল- এই বনেই তো আমাদের বাড়ি। তবে এদিকটাতে খুব একটা আসা হয় না। আমরা থাকি ওই যে গোলাপবনটা দেখতে পাচ্ছ, ওদিকটাতে।
আজ এলে যে……
আজ এসেছিলাম আমার ভাইকে খুঁজতে।
ও তোমার ভাইও আছে?
থাকবে না কেন? আমার ভাইয়ের নাম টাং। আমরা দু’ভাইবোন। টুং আর টাং। দুয়ে মিলে টুংটাং।প্রজাপতির কথাগুলো রূপকথার খুব ভালো লাগলো। ওর কথাগুলো কেমন যেন বড়দের মতো। কড়াকড়া। রূপ আবার জানতে চাইলো-
তোমার বাবা-মা আছে?
হ্যা আছেই তো। তবে আজ তারা বেড়াতে গেছে। মনে হয় সর্ষে ক্ষেতে। অনেক মধু সেখানে। খুব মিষ্টি।
তুমি তাহলে একা?
না, আমার ভাইটা আছে। তবে ও পালিয়েছে। ওকে খুঁজতেই এদিকে আসা। বাবা মা বাসায় নেই। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।
তুমি বড়দের মতো করে কথা বলছ। শুনতে ভালোই লাগছে। রূপকথা বলল।
হ্যা, আমি তো বড়ই। টাং এর বড় বোন আমি।
ও হ্যা। এজন্যই বড়দের মতো।
তোমার ভাই নেই?
না আমার কোন ভাই নেই। আমি একা। বাবা-মায়ের একমাত্র।
হুম! বাবা-মায়ের আদর তাহলে একাই খাচ্ছ?
রূপকথা হেসে ফেলল- হ্যা খাই তো।প্রজাপতি বলল- আচ্ছা কিছুক্ষণ আগে তুমি বিড়বিড় করে কি বলছিলে?
ও, ওটা কবিতা।
কবিতা?
হ্যা, আমিই বানিয়েছি।
তুমি কবি তাহলে। অনেক গুণ তোমার মধ্যে।
ধন্যবাদ। রূপ বলল।
আচ্ছা কবিতাটা একটু শোনাও তো। ভাল করে শুনি।
রূপকথা প্রজাপতিকে কবিতা শোনাতে লাগল-“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”কবিতা শুনে প্রজাপতি চটে গেল। বলল- কি বললে? কি বললে তুমি? তুমি প্রজাপতি? তোমার রঙিন পাখা? তাহলে আমি কি?
রূপকথা ঘাবড়ে গেল- না না এটা তো কবিতা। কবিতা তো এমনই হয়। মনের কল্পনা। বাবা বলেছে কল্পনা দিয়েই কবিতা লিখতে হয়।প্রজাপতি বলল- তা কল্পনা আর খুঁজে পেলে না? আমাদের কেন কল্পনা করবে? তুমি তো মানুষ। প্রজাপতির মতো কেন হতে চাইবে। কই আমি তো মানুষের মতো হতে চাই নি।
তুমি কবি হলে ঠিকই আমাদের মতো হতে চাইতে। রূপকথা আরো বলল-
শোন। তোমরা তো খুব সুন্দর, অপরূপ তোমাদের রূপ। রঙিন তোমাদের পাখা। কোন শাসন-বারণ নেই। লেখাপড়া নেই। আম্মু জোর করে খাওয়ায় না। সারক্ষণ উড়ে উড়ে ফুলের বনে ঘুরে বেড়াও। আর ফুলের মধু পান কর। তাই তো আমি তোমাদের মতো হতে চেয়েছি।রূপের কথাগুলো প্রজাপতির ভালো লাগলো। বলল- ও, এবার বুঝতে পেরেছি। তোমরা আমাদের খুব পছন্দ কর।
হ্যা করি তো।
প্রজাপতি বলল- ঠিক আছে। ঠিক আছে। তবে তোমাকে আর প্রজাপতির মতো হতে হবে না। তুমিও খুব সুন্দর মানুষ। অনেক ভাল। এখন থেকে তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পার।ঠিক আছে বন্ধু। রূপকথা প্রজাপতিকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে খুব খুশি হল।
প্রজাপতি আরো বলল- এখন থেকে প্রতিদিন এখানে এসো। তোমার সঙ্গে গল্প করব। আর ঐ গোলাপ গাছটা দেখছ, ওখান থেকে একটা লাল গোলাপ নিয়ে যেও। বন্ধুর জন্য আমার উপহার।
রূপকথা বলল- ঠিক আছে বন্ধ্।ু
আর একটা কথা। আমাদের বন্ধুত্বের খবর আমার ভাই টাং যেন না জানে। ও খুব পাজী। তাহলে বাবা-মা’কে বলে দেবে।
ঠিক আছে। কেউ জানতে পারবে না।
ওই তো আমার ভাইটা এদিকেই আসছে। আমাকে এখনই উঠতে হবে। দেখে ফেললে ঝামেলা করবে। প্রজাপতি টাং কে দেখালো।
রূপকথা দেখতে পেল- একটা হলুদ পজাপতি ওদের দিকেই আসছে।নীল প্রজাপতিটা উড়তে উড়তে রূপকথাকে বলল- তোমার কবিতাটা আমি মুখস্ত করে নিয়েছি। ওটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন থেকে আমি ওটা সুর করে বলব আর ঘুরে বেড়াব।
ঠিক আছে বন্ধু। এখন থেকে কবিতাটা তোমার। তুমি আমাকে গোলাপ উপহার দিয়েছ। আমি তোমাকে দিলাম কবিতা।সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। প্রজাপতি উড়তে উড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। রূপকথা শুনতে পেল আম্মু ডাকছে- মামনি চলে এসো। এখনই সন্ধ্যা নামবে।
-
এতিম শিশুদের সাথে ইফতার মাহফিলে এমপি রবি
ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশুদের সাথে ইফতার মাহফিলে মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনসহ অতিথিবৃন্দ।
-
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টাইগাররাই এগিয়ে-পাইলট
ক্রীড়া ড্স্কে: প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইবার টি-টুয়েটির বিশ্বকাপটাও জিতেছে দলটি। এক সময় ক্রিকেট বিশ্বে ছড়ি ঘোরাতো তারাই। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তাদের সেই শক্তি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার ওপর দলে যারা ভালো খেলেন, তারাই দেশের হয়ে না খেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টুয়েন্টি লিগ খেলতেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাই এ সব কিছু বিবেচনা করে বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের চেয়ে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে টেস্টেও টাইগাররা এগিয়ে থেকে মাঠে নামবেন বলে বিশ্বাস করেন সাবেক এই অধিনায়ক।
টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য খুব বেশি নেই। কিন্তু তারপরও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেশ যুক্তি দিয়েই টাইগারদের এগিয়ে রেখেছেন পাইলট। পরিবর্তন ডট কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে বললেন, ‘টেস্ট ম্যাচে আমি বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবো। আমার কাছে মনে হয় বর্তমানে ওদের খেলোয়াড়রা টি-টুয়েন্টি খেলতে খুব পছন্দ করে। তাদের টেস্টের প্রতি আগ্রহ খুব কম। আর তাদের এখন যে সমস্ত উইকেট হয় তা প্রায় উপমহাদেশের মতোই। আর সেক্ষেত্রে আমাদের স্পিনাররা ভালো বল করবে। যদিও ওদেরও খুব ভালো খেলোয়াড় আছে। কিন্তু তারা দেশের হয়ে খেলে না। শুধু মাত্র আইপিএল, টি-টুয়েন্টি লিগগুলো খেলে বেড়াচ্ছে। আর এখন বাংলাদেশ অনেক প্রতিষ্ঠিত একটি দল। তারা প্রমাণও করেছে।’
সামনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর টাইগারদের। এ সিরিজ নিয়ে ভিন্ন ধরনের মতবাদ দিচ্ছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। অনেকেই উইন্ডিজকে এগিয়ে রাখলেও পাইলটের বাজি টাইগারদের পক্ষেই। সাকিব-মুশফিকদের সঙ্গে তরুণরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে জয় পাওয়া খুব কঠিন কিছু হবে না বলে মনে করেন সাবেক এ অধিনায়ক, ‘মাশরাফী, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, তামিম প্রত্যেকেই অসাধারণ পারফর্ম করছে। সাথে যদি আমাদের তরুণরা একটু অবদান রাখতে পারে। শুধু এক ম্যাচ না, ধারাবাহিক অবদান রাখতে পারলে আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব ভালো করবে বাংলাদেশ।’
আগামী জুনে পুর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সিরিজের জন্য এর মধ্যেই প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ দলে নিয়ে খুব একটা মন্তব্য করেননি পাইলট। তবে মার্শাল আইয়ুবকে এ দলে রাখলে ভালো হতো বলে মনে করছেন তিনি, ‘এখন তো মাত্র প্রাথমিক স্কোয়াড দিয়েছে। সেখানে প্রায় সব পারফরমারদের নিয়েছে। ১৫ সদস্যের দল দিলে বোঝা যাবে। আর দলে খুব বেশি বদলের জায়গা নেই। স্থায়ী কিছু খেলোয়াড় আছে। সামান্য দুই একজন হয়তো বদল হতে পারে। তবে আমার মনে হয় মার্শাল আইয়ুবকে রাখতে পারতো তারা। টেস্টের জন্য দারুণ একজন খেলোয়াড়। আরেকটা সুযোগ ওকে দেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।’
এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলবে টাইগাররা। ভারতের দেরাদুনে হবে সেই সিরিজ। সেখানে অবশ্য দুই দলেরই সমান সুযোগ দেখছেন পাইলট, ‘টি-টুয়েন্টি দিয়ে আসলে কোন দলকেই মূল্যায়ন করি না। আমার কাছে এটা ফানি গেমের মতো। যার যার দিনে তারা কাজে লাগায়। তবে এ সংস্করণে দুইটা দলের শক্তি প্রায় সমান। আফগানিস্তানকে ছোট করার কোন উপায় নেই। ওদের হার্ড হিটার আছে, ভালো স্পিনার আছে- মুজিব এবং রশিদ। এই দুই জন খেলোয়াড় যে কোন সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তারা কার্যকরী খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে পাকিস্তানের একটা ছোঁয়া আছে। দেখবেন চার ছয় খেলতে খুব পছন্দ করে। ওয়ানডেতে ওরা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে টি-টুয়েন্টিতে সমান সমান। বাংলাদেশ যদি গাণিতিক ক্রিকেট খেলে আমার মনে হয় কঠিন কিছু না আফগানিস্তানকে হারানো।’
-

রোদ্দুর : আ হ মে দ রি য়া জ
রোদ্দুর
আ হ মে দ রি য়া জ
রোদ্দুর নেবেন গো, রোদ্দুর? খাঁটি রোদ্দুর লাগবে কারো? নির্ভেজাল রোদ্দুর।
ফেরিঅলার হাঁকডাকে চমকে ওঠলেন বুড়োবুড়িরা। খাঁটি রোদ্দুর! এখনকার ছেলেপুলেরা তো রোদ্দুরই চেনে না। চিনবেই বা কেমন করে? তাঁরা যখন সেই ছোট্টটি ছিলেন, তখনই রোদ্দুর ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। তারাই ঠিক মতো মনে করতে পারেন না রোদ্দুর কেমন ছিল। ক’দিন আগে এমনি এক ফেরিঅলা এসেছিল রোদ্দুর নিয়ে। আহা! টাইটানের বুড়োবুড়িরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সে রোদ্দুর কেনার জন্য।
দরদামও শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। অনেকে আবার কিনেও ফেলেছিলেন। ভাগ্যিস সেই বুড়োটা হঠাৎ কোত্থেকে এসে হাজির হয়েছিল। থুত্থুরে বুড়ো। বয়স যে তার কতো নিজেও জানে না। মহাশূন্যের দীর্ঘ ভ্রমণের ধাক্কা সামলিয়ে কেমন করে টাইটানে হাজির হয়েছিল, কেউ জানে না।
লাঠিতে ভর দিয়ে ঠক ঠক শব্দে রোদ্দুরঅলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন বুড়ো। থমথমে গলায় বললেন, দেখি খানিকটা রোদ্দুর।
ফেরিঅলা এক মুঠো রোদ্দুর দিলেন বুড়োর হাতে। নাকের কাছে নিয়ে মুঠোভরা রোদ্দুরের গন্ধ শুঁকলেন বুড়ো। অনেকক্ষণ ধরে। সবাই বুড়োর দিকে তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে।
গন্ধ শোঁকা শেষ করে রোদ্দুরের দিকে তাকালেন পিট পিটে চোখে। এই প্রথম সবাই বুড়োর চোখ দুটো দেখল। আধবোঁজা। বুড়োর গলা আগের চেয়েও থমথমে শোনাল, এই বুঝি তোমার খাঁটি রোদ্দুর?
ফেরিঅলার কথা শোনা গেল না। চুপটি করে আছে সে।
বুড়ো আবার বললেন, সব আলো রোদ্দুর হয় না। এটা রোদ্দুর নয়। আলো। শুধুই আলো। এক বিন্দু রোদ নেই এটায়। পারমাণবিক বিস্ফোরণের আলোকে রোদ্দুর বলে চালিয়ে দিতে চাইছ? খাঁটি রোদ্দুরে কখনো ঘ্রাণ থাকে না। কিন্তু এই রোদ্দুরে আছে। দ্যাখো, তোমরা শুকে দ্যাখো।
সবাই শুঁকলো। সত্যিই তো! রোদ্দুরটাতে অনেক ঘ্রাণ। রোদ্দুরে যে ঘ্রাণ হয় না, এটাও ওদের মনে ছিল না। থুত্থুরে বুড়োটা এতকিছু মনে রাখল কেমন করে?
আজও রোদ্দুরঅলার চারপাশে ভিড়। সেই থুত্থুরে বুড়োটাও আছেন। আজও রোদ্দুরের ঘ্রাণ শুঁকলেন সেদিনের মতো। আজও সেদিনের মতো আধবোঁজা চোখের সামনে নিয়ে ভালো মতো দেখলেন মুঠোভরা রোদ্দুরটাকে। সঙ্গে সঙ্গে বুড়োর চোখ দুটো পাঁপড়ি মেলে দিল। বড় বড় চোখে বুড়ো তাকিয়ে রইলেন রোদ্দুরের দিকে। তারপর কাঁপতে কাঁপতে বললেন, হুঁ। একেবারে খাঁটি রোদ্দুর। এক বিন্দু ভেজাল নেই।
ফেরিঅলার দিকে তাকিয়ে বললেন, কোথায় পেলে ভাই এমন খাঁটি রোদটুকু?
ফেরিঅলার মুখে রহস্যময় হাসি। আর যারা ভিড় করেছিল, তারা এবার হুমড়ি খেয়ে পড়ল রোদ কেনার জন্য। এবার বেঁকে বসল ফেরিঅলা, আমি রোদ বেচব না।
সে কি! অবাক হলো সবাই। রোদ বেচবে বলে ফেরি করল এতক্ষণ, আর এখন বলছে বেচবে না। মগের মুল্লুক নাকি? মগের মুল্লুকখানা তো সেই কবে পৃথিবীতেই রেখে এসেছে সবাই। তবে?
শুরু হয়ে গেল হইচইÑকেন বেচবে না, শুনি?
Ñএকটুখানি বেচো না ভাই? আমার নাতিটাকে দেখাবো। ও জীবনে রোদ দেখেনি।
Ñএমন মিঠেরোদ ছোটবেলাতেও দেখিনি। মিঠেরোদের সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকতাম। দেখার সুযোগ পাইনি।
Ñবললেই হলো বেচবে না? জোর করে কিনব।
হঠাৎ খেপে উঠতে শুরু করল টাইটানের মানুষরা। এমনকি যারা জীবনে রোদ দেখেনি, তারাও খেপতে শুরু করল। তখনই হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ল রোদঅলাÑপৃথিবীটা যখন রোদে রোদে ভরা ছিল, তখন কোথায় ছিলে সবাই? কী করেছিলে মনে নেই? এই বুড়োরা, তোমাদের বলছি, ছোট থাকতে তো খুব রোদ ভালোবাসতে। আর বড় হয়ে কী হয়ে গিয়েছিলে সবাই, মনে নেই? এতটুকু দয়া দেখালে না গাছেদের। ছোটগাছ-বড়গাছ কেটে সাফ করে ফেললে। বড় বড় দালান বানালে। রোদ্দুরদের কথা একটুও ভাবলে না। এখন রোদের জন্য হাহাকার করছ। কেন? সরে যাও সবাই। এক ফোঁটা রোদও আমি বেচব না কারো কাছে। চলে যাও।
মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল সবাই। এমনকি সেই থুত্থুড়ে বুড়োটা পর্যন্ত। হঠাৎ থুত্থুড়ে সেই বুড়োটার হাত টেনে ধরল ফেরিঅলা। বলল, আপনি যাবেন না দাদু। আমি সবটুকু রোদ আপনাকে দিয়ে যাবো।
সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ভরে ওঠল থুত্থুরে বুড়োর মুখ। অবাক হয়ে ফেরিঅলার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, সত্যি!
ফেরিঅলা বলল, সত্যি।
হঠাৎ থুত্থুরে বুড়োর মুখটা মলিন হয়ে গেল। একরাশ কালো মেঘ যেন জড়ো হয়েছে বুড়োর চোখে-মুখে। বুড়োর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জানতে চাইল ফেরিঅলা, দাদু খুশি হননি?
বুড়ো বললেন, হয়েছি।
ফেরিঅলা বলল, তবে মুখটা অমন মলিন কেন?
বুড়ো বললেন, কিন্তু আমি যে তোমার ওই রোদটুকু কিনতে পারব না দাদু। আমার তো অতো টাকা নেই। টাইটানে আসতে গিয়ে সব খরচ হয়ে গেছে। তবে ওই রোদটুকু আমার দরকার। ভীষণ দরকার।
ফেরিঅলা বলল, এই সামান্য রোদ্দুরের বিনিময়ে আপনাকে কিছু দিতে হবে না দাদু। আপনি নিলেই আমি খুশি হবো। রোদ্দুরের ব্যবসা করে অনেক কামিয়েছি। আর চাই না।
আবার রোদ্দুরঅলাকে ঘিরে ভিড়টা জমে ওঠল। সবাই অবাকÑকেন ওই থুত্থুড়ে বুড়োটাকে এমনি এমনি রোদটুকু দিয়ে দিতে চাইছে?
কে যেন জানতে চাইল, কেন? রোদ দিয়ে কী করবে বুড়ো?
রোদ্দুরঅলা বলল, পৃথিবীতে যারা গাছ ভালোবাসতেন, এ বুড়ো তাদের একজন। এ বুড়োর মতো মানুষ না থাকলে পৃথিবীর বাকি রোদটুকুও থাকত না। তারই সামান্য প্রতিদান।
রোদ্দুর পেয়েই বুড়োর খুশি কে দেখে? সবার চোখের সামনে গায়ের ওপর মুড়ে রাখা চাদরের তলা থেকে একটা ছোট্ট চারা গাছ বের করল বুড়ো। চারাগাছটাকে মুখের সামনে তুলে এনে বলল, এবার তুই বড় হবি। রোদ ছাড়া তো এতদিন বড় হতে পারিসনি। এবার পারবি।
চারাগাছ দেখে সবার চোখ উঠে গেল কপালে। নতুন এ গ্রহটায় কেমন করে চারা গাছ নিয়ে এসেছে বুড়োটা?
সবার কাছে সেটাই একটা রহস

