Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
বিশেষ সংবাদ Archives - Page 50 of 74 - Daily Dakshinermashal

Category: বিশেষ সংবাদ

  • সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    ন্যাশনাল ডেক্স : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই। তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আজ শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। 

    গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন।মোহাম্মদ নাসিম স্ত্রী, তিন ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।

    ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ নাসিম।

  • করোনা ভাইরাস: হজ পালন করতে পারবেন না মালয়েশিয়ার নাগরিকরা

    করোনা ভাইরাস: হজ পালন করতে পারবেন না মালয়েশিয়ার নাগরিকরা

    মক্কা

    ন্যাশনাল ডেক্স :

    মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের নগারিকদের এবছর হজের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়েছে।

    হজ পালন করতে গিয়ে নাগরিকদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

    মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া থেকে প্রতিবছরই বহু মানুষ হজ করতে সৌদি আরবে যান। এবছর মালয়েশিয়ার আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষের হজ করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

    বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়া আগেই জানিয়েছে তারা এবছর তাদের নাগরিকদের হজ করতে যাওয়ার অনুমতি দেবে না।

    প্রতিবছর সারাবিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করতে সৌদি আরব যান।

    তবে কয়েকদিন আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক খবরে প্রকাশিত হয় যে, প্রত্যেক দেশ থেকে যে পরিমাণ হজযাত্রী যাওয়ার কথা অন্যান্য বারের তুলনায় এবার তার ২০ শতাংশ মানুষ আসতে অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর এক লাখের বেশি মানুষ হজে যান, কাজেই বাংলাদেশ থেকে এবার হজ পালন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাও বাধার মুখে পড়তে পারেন।

    তবে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ মানুষ এবার হজ করতে যাওয়ার অনুমতি পাবেন এবং সেটি কোন ভিত্তিতে নির্ধারন করা হবে, সেবিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি বলে মঙ্গলবার বিবিসিকে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

    করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি আরব।

    মার্চের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন ও ধর্মীয় সব কর্মকাণ্ড বন্ধের বিরল ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরব।

    এর কয়েকদিন পর সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দাদের জন্যেও ওমরাহ হজ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।

    মসজিদে নামাজ পড়া এমনকি ঈদের জামাতের উপরেও বিধিনিষেধ ছিল।

    একই সময়ে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে দেশটি। সেখানে বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি ছিল।

    সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৮৫৭ জন।

  • করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রেখে আমলা নির্ভরতা কেন?

    করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রেখে আমলা নির্ভরতা কেন?

    ন্যাশনাল ডেক্স :

    বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা রয়েছে-এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

    খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক চিন্তার ঘাটতি থাকছে।

    বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তার কোন ছাপ না থাকায় ঢিলঢালা সাধারণ ছুটি থেকে শুরু করে তা প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতা চোখ পড়ছে।

    আসলে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব থাকছে কিনা- এবং পরিস্থিতি সামলানোটা সরকারের জন্য কি কঠিন হয়ে উঠেছে—এনিয়ে নানা আলোচনা এখন চলছে।

    এপ্রিলের শেষে সাধারণ ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস খোলার কারণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। সমালোচনার মুখে আবার গার্মেন্টস বন্ধ করা হলে শ্রমিকরা ঢাকা ছেড়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছুটা ক্ষোভের সাথে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত না করার কথা তুলে ধরছিলেন।

    জাহেদ মালিক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী

    “একটা ন্যাশনাল কমিটি ফর্ম করা হয়েছে। ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে। কিন্তু ন্যাশনাল কমিটিতে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের নলেজে নাই। কখন ফ্যাক্টরি খোলা হবে বা খোলা হবে কিনা-সে বিষয়ে আমরা জানি না। মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে বা আলোচনা-সে বিষয়েও আমরা জানি না। এবং কখন রাস্তা খুলে দেবে বা বন্ধ করবে- এ বিষয়ও আমরা জানি না। আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, তাদেরকে আমি সদুত্তর দিতে পারি না।”

    স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। যদিও নানা আলোচনার মুখে মন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির প্রধান হলেও স্বাস্থ্য বিষয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ।

    তার এই ব্যাখ্যার পরও সরকারের সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

    দুই মাস পর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় কি কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে-এ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

    “করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে আলোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব অবহিত হয়েই এই সাধারণ ছুটিসহ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা যারা অত্যন্ত কাছাকাছি এবং সশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেগুলো আছে, তারা সকলে মিলেই কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।”

    শেখ হাসিনা, করোনাভাইরাস,
    বাংলাদেশে ক্ষতি মোকাবেলায় গত ৫ই এপ্রিল ৭২,৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    যদিও প্রতিমন্ত্রী মি: হোসেন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় তদারকি করছেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

    বিরোধীদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব না থাকায় এবং আমলা নির্ভরতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি,
    সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। (ফাইল ছবি)

    “এখানে আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি যে, সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে জনগণের চিন্তাভাবনার বাইরে। এবং জনগণ যেটা চাচ্ছে, তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”

    “আমরা প্রথম থেকেই যেটা লক্ষ্য করেছি, এখানে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে একটা প্রভাব থাকা উচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, সেটা নাই। এখন পর্যন্ত যেভাবে হয়ে আসছে, তাতে মনে হয়েছে যে শুধু গুটিকতক চাটুকার আমলা এবং আর অদৃশ্য কোন শক্তি আছে কিনা জানি না। তাদের দ্বারাই যেন সিদ্ধান্তগুলো আসছে।”

    শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় সরকারের রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এই সরকারেরই গত ১১ বছরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল।

    কিন্তু তারা এখন পার্থক্য দেখছেন করোনাভাইরাস দুর্যোগ সামলাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেছেন, এখন সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিতে হচ্ছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন

    “অন্যান্য সময় আমরা দেখেছি, যদিও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নির্ভর দল, কিন্তু তারপরও অন্যান্য সময়ে তারা সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দেখেছি যে, কোন এলাকায় মন্ত্রী এমপি বা রাজনৈতিক নেতারা নেই। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররাও নেই।”

    “আর ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়গুলোতো আমরা জানি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শেখ হাসিনাকে এককভাবেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং উনি এককভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছেন।”

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিতরেও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা নানা আলোচনা রয়েছে।

    দলটির মাঠের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

    সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।

    “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে এই কঠিন সময়ে তিনি কিন্তু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সত্যিকার অর্থে তার নির্দেশগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতাম বা পারি তাহলে এই সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা কথা বলি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদিও এখানে সরাসরি জড়িত কম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

    তোফায়েল আহমেদ
    সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।

    মি: আহমেদ আরও বলেছেন, “তবে আমি মনে করি অতীতেও দুর্যোগে রাজনৈতিক নেতৃত্বই কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আমি এটুকুই বলবো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশগুলো পালন করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সম্পৃক্ত হয়, তারা যদি কাজ করে বা এখন যা করে চলেছে, তাহলে সমস্যাটা সমাধানে আমরা সক্ষম হব।”

    লকডাউন না বলে সরকার সাধারণ ছুটি দিয়েছিল ৬৬দিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন।

    তাদেরও অভিযোগ রয়েছে যে, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর জন্য তাদের পরামর্শ আমলে না নিয়ে অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ড চালু করা হয়েছে।

    সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহিদুল্লাহ বলেছেন, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে দেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

    “আমাদের বক্তব্য ছিল, লকডাউনটা হলে প্রপার লকডাউন হতে হবে। যেমন আমরা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন করলাম। কিন্তু সেভাবে না করে, প্রথম তিন সপ্তাহ যদি কঠোরভাবে লকডাউন করা হতো, তারপর আস্তে আস্তে শিথিল করলে ফলাফলটা আরও ভাল পাওয়া যেতো। যেটা হয়ে গেছে। এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, জোন লকডাউন যেটা করা হচ্ছে, সেটাও প্রপার ওয়েতে করা হলে এথনও এই রোগটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।”

    সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা বা সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হচ্ছে।

  • প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল

    প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল

    ন্যাশনাল ডেক্স : ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতিয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরেরে জন্য ৫৬৮,০০০ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তাকে করোনাকালে দেশের অর্থনীতির সকল খাতের চাকাকে সচল রাখার একটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হিসেবে দেখছে দেশের ব্যবসায়ীমহলের একাংশ। তাদের মতে অপ্রদর্শিত অর্থবিনিয়োগের সুযোগ অর্থ পাচারের প্রবণতা কমাবে। তবে পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বাজেটকে ইতিবাচক বললেও উৎসে কর না বাড়ানো এবং নগদ প্রণোদনায় কর অব্যাহতি চেয়েছে।

    এদিকে, তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল করোনাকালে তাদের ভাষায় অবাস্তব এবং অবাস্তবায়ন যোগ্য এই বাজেট প্রস্তাবে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে প্রস্তাবিত বাজেটের ৯৯ শতাংশই মানুষের স্বার্থ বিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন। এটি একটি আশান্বিত বাজেট হলেও তা বাস্তবায়ন দুরূহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি এক অনলাইন ব্রিফিং সদ্য ঘোষিত এই বাজেটকে গতানুগতিক বলে আখ্যায়িত করে বলেছে করোনার ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে ধরনের ইনোভেটিভ বাজেট দরকার ছিল সেটি হয়নি। করোনাকালে সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বাস্থ্যখাতকে বিবেচনা করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে এবারের বাজেটে অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয় । দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন বাজেটে এ বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয় নাই। বাজেট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সরকারের নির্দেশে মোবাইল সেবায় বর্তমান ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি হারে সম্পূরক শুল্ক কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এর প্রতিবাদ করে গ্রাহকরা বলেছেন এর ফলে সাধারন মানুষ দুর্দশায় পড়বে।

  • করোনা সংক্রমণের নিরিখে এ বার ব্রিটেনকে পিছনে ফেলল ভারত!

    করোনা সংক্রমণের নিরিখে এ বার ব্রিটেনকে পিছনে ফেলল ভারত!

    স্পেন, ইটালিকে টপকে গিয়েছিল আগেই। করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমণের নিরিখে এ বার ব্রিটেনকে পিছনে ফেলল ভারত। উঠে এল বিশ্বের চতুর্থ স্থানে। সংক্রমিতের হিসাবে আমেরিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পরই এখন ভারত।

    তবে শুধু ব্রিটেনকে টপকে যাওয়া নয়। দেশে রোজদিন সংক্রমণের গতি বৃদ্ধি জাগাচ্ছে নতুন শঙ্কা। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। আজ শুক্রবারও তার অন্যথা হল না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৯৫৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। দেশে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বৃদ্ধি এই প্রথম ১০ হাজার ছাডাল। এই বৃদ্ধির জেরে কোভিড-১৯-এ মোট আক্রান্ত হলেন দু’লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন। ব্রিটেনের মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ ৯৩ হাজার।মৃত্যুতেও আজ শুক্রবার তৈরি হল নতুন রেকর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবারই কোভিডে মোট মৃত্যুর হিসাবে কানাডাকে পিছনে ফেলেছিল ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৬ জনের। এই বৃদ্ধির জেরে করোনা দেশে মোট আট হাজার ৪৯৮ জনের প্রাণ কাড়ল।

  • বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি)র চেয়ারম্যান নিকট ক্যাব এর আবেদন “করোনা ভাইরাস কবলিত বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করে  বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমান”

    বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি)র চেয়ারম্যান নিকট ক্যাব এর আবেদন “করোনা ভাইরাস কবলিত বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমান”

    ক্যাব, কেন্দ্রিয় কমিটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম স্বাক্ষরীত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সারাদেশ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মহামারি কবলিত। দেশবাসী গৃহবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড স্তব্ধ। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। জনবল ছাটাই চলছে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষে কতদিন দেয়া সম্ভব হবে তাও ভাবার বিষয়। টাকা ছাপিয়ে কেবলমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন সমাধান নয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণ অসম্ভব। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ ধ্বস নামবে। উন্নয়ন খাত কোন অর্থ পাবে না। এমন অবস্থায় রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব চাহিদা ব্যাপক হারে কমানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
    করোনা মহামারি মোকাবেলায় সরকার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদন খাত আর্থিক প্রণোদনা পাবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন পলিসিতে ব্যাপক রদবদলের প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান উন্নয়ন নীতি ও কৌশল নিয়ে সরকারের পক্ষে এখন আর আগানো সম্ভব নয়, তা আর বলার বা ভাবার অপেক্ষায় নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অপেক্ষা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে আরও অনেক বেশি বিপর্যস্ত। এমন আশঙ্কায় আমরা ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। তবে কৃষি এবং কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদন ব্যহত হবে না। সেজন্য বিপণন ব্যবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা দরকার।

    বাস্তবে দেখা যায়, এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের নিকট আর্থিক ঋণ বা অনুদান চাচ্ছে। রাজস্ব ব্যয় বা চাহিদা কমানোর কোন পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সরকার যেসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণ করে, সেসব খাত এখন অব্যাহত রাজস্ব ঘাটতির শিকার। সে ঘাটতি মোকাবেলায় তাঁরা এখন সরকারেরই মুখাপেক্ষী। ফলে সরকার ক্রমাগত আর্থিক চাপ বৃদ্ধির শিকার। উল্লেখ্য যে, ধারনা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত করোনা মহামারিতে চলতি বছরে যে রাজস্ব ঘাটতির শিকার হবে, তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। অনুরূপ ক্ষয়-ক্ষতি গ্যাস খাতেও হবে। উভয় ঘাটতি বিদ্যমান অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিদ্যমান ও করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতি একদিকে যেমন মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে উভয়খাতে তেমন ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তরল জ্বালানির আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে সে দরপতন সমন্বয় করে তরল জ্বালানির মূল্যহার যেমন কমানো যায়, তেমন জ্বালানি খাতে করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতিও সমন্বয় করা সম্ভব।

    অতএব আলোচ্য প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস এবং ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানির দাম কমানো এখন জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তার ভোগ ব্যয় এখন খুবই সীমিত। ফলে সরকারের রাজস্ব আসছে না। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্যহার যদি না কমে, তাহলে ভোক্তার ভোগ ব্যয়বৃদ্ধি পাবেনা। ফলে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি- এসব প্রবাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। তাই সর্বাগ্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পণ্য ও সেবার দাম কমাতে হবে।

    বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্যহার পর্যালোচনায় দেখা যায় ঃ
    ১. ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাজনিত কারণে রাজস্ব আহরণ বিঘিœত হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া ভর্তুকি বৃদ্ধি পাবে।
    ২. এ যাবৎ গ্যাসে কোন রাজস্ব ঘাটতি ছিল না। এ খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি গ্রিডে যোগ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরকারকে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশী ভর্তুকি দিতে হবে। করোনাজনিত কারণে গ্যাস খাতে রাজ্স্ব ঘাটতি আরোও বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে।
    ৩. জ্বালানি তেল বরাবরই লোকসানে ছিল। বিগত বছরগুলিতে দরপতনের কারণে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস পায়। কিন্তু তা মূল্যহারে যৌক্তিক সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র বিপুল পরিমাণে লাভ হয়। করোনাজনিত কারণে আমদানি বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র লাভের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে-লাভে করোনা জনিত রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় হবে এবং তেলের মূল্যহারও কমানো যাবে।
    ৪. তেলের দাম বেড়েছে, দামের সমতা রক্ষায় গ্যাসের দাম বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এলপিজি’র দাম বাড়িয়েছে। তেল ও এলপিজি’র দরপতন হওয়ায় আমদানি ব্যয় কমলেও তেলের দাম কমেনি। এলপিজি’র দাম বেড়েই চলেছে।
    ৫. বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত শতভাগ কয়লা যে ওজন ও আদ্রতায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির নিকট থেকে ক্রয় করে, সেই ওজন ও আদ্রতায় খনি কোম্পানি চীনা কোম্পানিকে ৮৫ ডলার মূল্যহারে বিল দেয়। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকট সে কয়লা বিক্রি করে ভ্যাটসহ প্রায় ১৫০ ডলার মূল্যহারে। কয়লা উৎপাদনে খনিকোম্পানির কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। চীনা কোম্পানির নিকট থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি কয়লা নেয় বলা চলে। অতএব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক নয়। যৌক্তিক হলে এ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কম হতো।
    ৬. মূল্যহার বেড়েছে বিদ্যুতে ০.৩৫ টাকা এবং গ্যাসে ৫ টাকা। গ্যাসে বছরে সবাসাকুল্যে ভর্তুকি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এ- ভর্তুকি বাড়বে। গণশুনানিতে প্রমান পাওয়া যায়, মোট গ্যাসের প্রায় ৫৬ শতাংশ তিতাসে ব্যবহার হয়। মুনাফাসহ তার বিতরণ মার্জিন ইউনিট প্রতি দরকার ৫ পয়সা। অথচ দেয়া হয়েছে ২৫ পয়সা। এমন অসংগতি সঞ্চালন, অন্যান্য বিতরণ ও গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিতেও বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাতেও তা বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাত এর বাইরে নয়।
    ৭. আইওসি’র গ্যাস কেনা হয় ২.৫৫ টাকা মূল্যহারে। অথচ বাপেক্সের গ্যাস কেনা হয় ৩.০৪ টাকা মূল্যহারে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠনের শর্ত লংঘন করে এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নিয়োজিত দেশীয় কোম্পানি সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ না করে সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়া হয়। তাতে গ্যাসের মূল্যহার কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়।
    ৮. বিনিয়োগকৃত মুলধনের ওপর তিতাস সুদ পায় ১৮ শতাংশ। সঞ্চালন ও অন্যান্য বিতরণ ও উৎপাদন কোম্পানি পায় ১২%। অথচ বিদ্যুৎ খাতভূক্ত সব কোম্পানি পায় ১০%। ব্যাংক আমনতের ওপর সুদ ৬%-এ নামানো হলেও ওইসব সুদ কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার কমানো হয়নি। তাছাড়া তিতাসে গ্যাস চুরির প্রতিকার করা হয়নি। বরং মিটারবিহীন চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ হিসাবে বেশী দেখানোর সুযোগ রেখে গ্যাস চুরির সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। সিস্টেমলস সুবিধা অন্য সব কোম্পানিকে দেয়া না হলেও তিতাসকে দেয়া হয়েছে ২%। এসব অসংগতি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নিয়ামক।
    ৯. গ্যাসের উৎস নিশ্চিত না করেই পশ্চিমাঞ্চালে বিতরণ লাইন বসানো হয়েছে ৭ জেলায়। সেসব লাইনে গ্যাস নেই। এমন অনেক সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্বল্প ব্যবহৃত। ক্ষেত্র বিশেষে অব্যবহৃত। বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা, এমনি কি সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এমন অবস্থা দেখা যায়। করোণার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পাওযায় এ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সরবরাহে সম্পদ যে অনুপাতে ব্যবহার হবে সে অনুপাতে সম্পদের অবচয় ব্যয় ধরে মূল্যহার নির্ধারণ হয় না। সমূদয় সম্পদ মূল্য ধরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয়হার বৃদ্ধি পায়। ্সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায়এখন আরো বৃদ্ধি পাবে।
    ১০. করোণার কারণে রাজ্স্ব ঘাটতি বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে। হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায ২২ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। বিপুল পরিমাণ উৎপাদনক্ষমতা উৎপাদনে নেই। স্বাভাবিক অবস্থায়ও চাহিদার তুলনায় উৎপাদনক্ষমতা উদ্বৃত্ত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির কথাও বলা হচ্ছে। গণশুনানীতে প্রমাণিত হয়, চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বছরে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তাদের অর্থে বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয়। এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসাবে বিনিয়োগ করা বিধান ছিল। সে বিধান পরিবর্তণ করে অনুদানের পরিবর্তে সুদে বিনিয়োগ করার বিধান করা হয়। তাতে উৎপাদনে অযৌক্তিকভাবে ব্যয়বৃদ্ধি পায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মেয়াদ উত্তীর্ণ অর্থাৎ ২০ বছরের উর্দ্ধে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট উৎপাদনে রেখে অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি করা হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা ।
    ১১. গণশুনানিতে প্রমাণ পাওয়া যায়, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ হ্রাস করা হলে বছরে যথাক্রমে প্রায় ১০ ও ১২ হাজার কোটি সাশ্রয় হতে পারে।
    ১২. অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত হলে প্রাক্কলিত রাজস্ব চাহিদা প্রায় ১০% গ্যাস ও তেলে, কয়লায় ৪০% এবং বিদ্যুতে ৫% হ্রাস পেতো। বিদ্যমান অবস্থায় রাজস্ব চাহিদা হ্রাসের পরিমান হতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি এসব গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনা হলে বিদুৎ ও জ্বালানীর সরবরাহ ব্যয় অনেক কমে আসবে। ঘাটতি হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে।
    ১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশী প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ভোক্তার জমানতের অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ হলে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমবে এবং সুদ বাবদ ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় মূল্যহার কমানো যাবে।
    ১৪. গণশুনানিতে পেট্রোবাংলা, তিতাস, জিটিসিএল, এনএলডিসি, বড়পুকুরিয়া খনির দুর্নীতিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়। সেসব দুর্নীতি ও অপরাধ মুক্ত হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় যৌক্তিক হবে এবং মূল্যহার বৃদ্ধির প্রবণতা হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে।
    ১৫. তাছাড়া বিগত গণশুনানিসমূহে প্রমাণ পাওয়া যায়, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয়হার হ্রাস পাবে এবং মূল্যহার কমানো যাবে। সে লক্ষ্যে বিগত একাধিক গণশুনানিতে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দূর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়।

    অতএব বিদ্যুতে ও জ্বালানির দাম কমানোর জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে নি¤œরূপ প্রস্তাব করা হলো ঃ
    ১. সকল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে এবং ২০ বছরের বেশী বয়সী সরকারি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে উৎপাদনের বাইরে রেখে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণক্রমে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানো প্রস্তাব করা হলো,
    ২. বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও গ্যাস উন্নয়ন উভয় তহবিলের অর্থ সুদে বিনিয়োগের পরিবর্তে যথাক্রমে পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানে অনুদান হিসাবে বিনিয়োগক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ৩. বিদ্যুৎ/গ্যাস সরবরাহে সম্পদ অর্জন অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা রোধ করা হলে সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পায় এবং মূল্যহার কমানো যায়। ফলে সম্পদ যে অনুপাতে বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহার হয়, অবচয় ব্যয় সেই অনুপাতে ধরে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় নির্ধারণক্রমে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ৪. বিদ্যুৎ উপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার কমিয়ে যৌক্তিক করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ৫. ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় রহিত করে এবং সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্যহারে তেলের আমদানি ব্যয় হ্রাস সমন্বয় করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ৬. মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইন মতে বিইআরসি কর্তৃক এলপিজি ও জ্বালানী তেলের মূল্যহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হলো,
    ৭. বিগত গণশুনানীতে বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ যৌক্তিক করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ৮. অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর লক্ষ্যে ঃ (ক) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত করা এবং (খ) সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনার প্রস্তাব সরকারের নিকট পেশ করার প্রস্তাব করা হলো।
    ৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থ ও ভোক্তার জামানতের অর্র্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
    ১০. বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে অর্জিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হলো,
    ১১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত দুর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ার প্রস্তাব করা হলো।
    ১২. ওইসব কমিটি কর্তৃক প্রণীত কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসির অনুমোদনক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতভূক্ত সকল ইউটিলিটি ও সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিককরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হলো।
    ১৩. বিগত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব মতে ডিপিএম-এর পরিবর্তে ওটিএম-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সকল ক্রয় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হলো।’

  • ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী মানুষের মাঝে ঘর নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ

    ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী মানুষের মাঝে ঘর নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ

    প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী মানুষের মাঝে ঘর নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাতক্ষীরা ইউনিট। রোববার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১১২টি পরিবারের মাঝে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নুরুল হক, নির্বাহী সদস্য শেখ হারুন-উর-রশিদ ও জোৎস্মা আরা, উপপরিচালক হায়দার আলী, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল, প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন, যুব রেড ক্রিসেন্টের আশিক মনোয়ার, কামরুল ইসলাম, মিলন হোসেন. শেখ মুছা কাজিম, মনোয়ার হোসেন, মেহরাব হোসেন অপি, মুনতাছিম বিল্লাহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
    এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ট্রিপল, জারিকেন, স্যানিটাইজার, হাইজিন কিটস, শেল্টার ফিল্টারসহ ঘর নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

  • পীর সাহেব চরমোনাইয়ের পক্ষ থেকে আম্পান ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ টাকা প্রদান

    প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আজ মঙ্গলবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর আলহাজ্ব হজরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদরেজাউল করীম,পীর সাহেব চরমোনাই এর পক্ষ থেকে আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মানুষের মাঝে নগদঅর্থ প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর অধ ̈ক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালসাহেব, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারন সম্পাদক অধ অধ্যপক আব্দুল করীম শাহিন, ইসলামীযুব আন্দোলনকেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক খুলনা বিভাগ ডাঃ কাজী মো: ওয়েজকুরণী।প্রধান অতিথি তার বক্তবে ̈বলেন- সাতক্ষীরাতে মজবুত, টেকশই ও স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই। সাতক্ষীরা জেলাকে বন্যা মুক্ত রাখতে সরকারকে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের আহবান জানান। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি সাতক্ষীরা জেলা ছদর (সভাপতি) আলহাজ্ব শেখ আব্দুর রাজ্জাক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মুহাদ্দিস মোস্তফা শামছুজ্জামান, সেক্রেটারী মো: ছারোয়ার আলম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তোছাদ্দেক হোসেন খোকা, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মহিউদ্দীন আল ফারুক, ইসলামী যুব আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো: মুবাশশীরুল ইসলাম তকী,ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মো: কবিরুল ইসলাম, মাওঃ আব্দুল হান্নান, মাওঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, হাফেজ মোখলেছুর রহমান, মো: মনিরুল ইসলাম সহ শ ̈ামনগর উপজেলার নেতৃবৃন্দ। ইসলামী আন্দোনল বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে ঘূর্ণীঝড় আম্পানে দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের পাশে দাড়ানোর জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে। সেই সাথে সরকারকে দুর্গত মানুষের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থথা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।

  • জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

    জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

    জলবায়ু পরিবর্তন কি আদৌ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয়? এমন প্রশ্ন আপনার মনে দেখা দিতেই পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাদের অনেকের কাছেই খটোমটো বিজ্ঞান মনে হয়। এ কারণে বন্যা, খরা, ঝড়, নদী-ভাঙ্গন, মহামারী আর বিপন্ন জীববৈচিত্র্যের সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক খুঁজতে আমরা বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হই।

    কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনই ২১ শতকের সবচেয়ে বড় স্টোরি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদেরকেই সবচে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু লাভবান হয় সম্পদশালী ভোক্তাশ্রেণী, জ্বালানি কোম্পানি, ভারী শিল্প, পরিবহন এবং কাঠের ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এরাই সবচে বেশি গ্রীনহাউজ গ্যাস ছড়ায়। পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের আর সবার চেয়ে তারাই বেশি দায়ী।

    জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর নিছক পরিবেশের বিষয় নয়। এর সাথে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন জড়িত। আর এই সামাজিক ন্যায়বিচারই যুগে যুগে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তাই পরিবেশ নিয়ে রিপোর্টিংয়ের সময়, টাকা কোথায় যাচ্ছে শুধু সেদিকে নজর না দিয়ে, বরং কতটা দূষণ হচ্ছে, এর জন্য কারা দায়ী, সেখান থেকে কারা লাভবান হচ্ছে এবং কে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ – এমন বিষয়েও আমরা খোঁজখবর করি।

    কয়েক দশক আগেও জলবায়ূ পরিবর্তন সম্পর্কে সবার ধারণা ছিল অস্পষ্ট। একে নিতান্তই পরিবেশের বিষয় বলে মনে করা হত। কিন্তু এখন আর সেই অষ্পষ্টতা নেই। এখন বিষয়টিকে অবধারিত এক বৈশ্বিক ঘটনা হিসেবে দেখা হয় – যা অর্থনীতি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জীবনযাপন, খাবারের যোগান, এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত – আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয় হিসেবে আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

    এখানে জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ১০টি সম্ভাবনাময় পথের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকের মতে, “আমাদের সময়ে সবচেয়ে জরুরী স্টোরি এগুলোই।” এসব নিয়ে কোথাও কোথাও অনুসন্ধান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই তা অনুপস্থিত।

    জীবাশ্ম জ্বালানি

    গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী মূলত কয়লা, জ্বালানি তেল আর গ্যাসভিত্তিক শিল্প। এ কারণে তাদের নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হওয়া জরুরী।  এরিমধ্যে বড় জ্বালানি কোম্পানি নিয়ে একাধিক ভালো অনুসন্ধান হয়েছে। যেমন, এক্সনকে নিয়ে গভীর এই অনুসন্ধানের জন্য ইনসাইডক্লাইমেট নিউজ মনোনীত হয়, পুলিৎজার পুরষ্কারের ফাইনালিস্ট হিসেবে। কিন্তু এমন আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। বিশ্বের সবচে বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সৌদি এরামকো, সিনোপেক, চীনা ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম, কুয়েত পেট্রোলিয়াম – এমনকি তাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান লুকঅয়েল, টোটাল এবং এনির কথা, যারা ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়েও রাষ্ট্রগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

    তাই মানুষের জানা উচিত, এইসব প্রতিষ্ঠান বা তাদের এসোসিয়েশনগুলো নিজেদের পছন্দমত আইন প্রণয়ন, সরকারি ভর্তুকি আর নীতিমালার জন্য কোথায় তদ্বির করছে। জানা দরকার, তারা নিজেদের পক্ষে কথা বলার জন্য কোন রাজনীতিবিদকে টাকা দিচ্ছে; কীভাবে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে; জলবায়ূ পরিবর্তন প্রতিরোধে আনা আইন ঠেকিয়ে দিচ্ছে; পরিবেশবিরোধী গ্রুপগলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে অগ্রাহ্য করছে।

    আমাদের আরো যাচাই করা উচিত, “কার্বন বাবল”, অর্থাৎ জ্বালানি মজুত বেশি দেখিয়ে, তারা প্রতিষ্ঠানের সম্পদমূল্য বাড়িয়ে তুলছে কিনা। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে নতুন আর্থিক সংকট জন্ম দিতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদমূল্য নির্ধারিত হয়, তাদের খনিতে কত তেল-গ্যাস বা কয়লা মজুত আছে, এর উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি মজুতের একটি বড় অংশই “অব্যাবহৃত সম্পদ” হিসেবে মাটির নিচে রেখে দিতে হবে, কখনোই তোলা যাবে না। এমনটি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের শুধু যে সম্পদ কমে যাবে তা নয়, বরং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যে তাদের তৈরি পণ্যকে দায়ী করা হতে পারে, ঠিক যেভাবে মাস্টার সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বড় অংকের জরিমানা আদায় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।পড়ুন খনিজসম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জিআইজেএনের বিশেষ রিসোর্স

    সাধারণভাবে, কয়লা কোম্পানিগুলো গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ নজর পেয়েছে, কারণ কয়লা জীবাশ্ম জ্বালানিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণকারী। নানা সময়ে তেলের সংযোগলাইন এবং খনিখনন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কেননা তাদের কার্যক্রম থেকে নানা পরিবেশগত বিপদ যেমন বিস্ফোরণ, সংযোগ লাইন ছিদ্র হয়ে যাওয়া বা পানিতে দূষণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।

    কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে গণমাধ্যমে ততটা আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ গ্যাস পোড়ানোকে ”কম ক্ষতিকর” ভাবা হয়। এমনও বলা হচ্ছে, এই গ্যাসকে “ব্রিজ ফুয়েল” হিসেবে ব্যবহার করে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে পা বাড়াবো। কিন্তু তারপরও গ্যাসভিত্তিক শিল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধানতম বর্জ্য হল মিথেন। এটি একটি গ্রীনহাউজ গ্যাস। কার্বন ডাই অক্সাইডের মত দীর্ঘ সময় ধরে এটি পরিবেশে থাকে না, কিন্তু বাতাসকে উত্তপ্ত করার বেলায় এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় চার গুন শক্তিশালী। গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানিং বেশি মিথেন গ্যাস নির্গমন করছে, এমন প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তারা মিথেন লিকেজের পরিমান কমিয়ে আনার জন্য তৈরি আইনকে কোনো না কোনোভাবে প্রতিহত করছে। বিষয়টি নিয়ে কমবেশি সব দেশেই রিপোর্টিং হতে পারে।

    অন্যান্য দূষণপ্রবণ শিল্প

    জীবাশ্ম জ্বালানির পোড়ানোই জলবায়ূ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। কিন্তু আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের নিয়ে অনুসন্ধান হওয়া জরুরি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা পণ্যের সরবরাহ চেইন অনুসরণ করে এগুলেই বুঝতে পারবেন কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ গ্রীনহাউজ গ্যাস পরিবেশে ছড়াচ্ছে। তেমনই কয়েকটি শিল্পখাতের কথা এখানে আলাদা করে না বলা হচ্ছে।

    কৃষি, পশুসম্পদ ও বন

    বিশ্বে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের সিকিভাগই হয় মূলত কৃষি, বনজসম্পদ এবং জমির ব্যবহারে পরিবর্তনের কারণে। অথচ এই দিকে গণমাধ্যমের ততটা মনোযোগ নেই। শিল্প হিসেবে কৃষি পুরোটাই নির্ভর করে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর। রাসায়নিক সার তৈরি করতে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়াতে হয়। এটি বাতাসে গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম প্রধান উৎস। মাটির ব্যাকটেরিয়ায় আটকে থাকা তাপকে গ্যাস হিসাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যেও এমন সার দায়ী। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কৃষি আর খাদ্য নিরাপত্তা। তাই, সাংবাদিকরা খতিয়ে দেখতে পারেন,  পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি থাকার পরও কেন তার ব্যবহার নেই।সাংবাদিকরা খতিয়ে দেখতে পারেন,  পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি থাকার পরও কেন তার ব্যবহার নেই।

    পশুসম্পদের পরিচর্যাও অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শুনতে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু গরুর বায়ুত্যাগও এই বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে (নাসার তথ্য অনুযায়ী, গরু যে ঢেঁকুর তোলে, সেখান থেকে আরো বেশি মিথেন গ্যাস বের হয়)। মানব-সৃষ্ট গ্রীনহাউজ গ্যাসের ৮ শতাংশই আসে গরুর দুধ ও মাংস উৎপাদন শিল্প থেকে।  এছাড়া গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের যেসব বন একসময় “কার্বন শোষক” হিসেবে ব্যবহৃত হত – যারা  কার্বন ধরে রাখত – তাদেরকেও উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে গবাদি পশু পালন এবং সয়াবিন (বিশেষ করে আমাজন) ও পাম তেল চাষের মাধ্যমে (দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায়)।

    এই সমস্যার সমাধানের উপায়গুলো সাংবাদিকরা বাতলে দিতে পারেন – আমাদের খাবার কোথা থেকে আসছে, এটি কীভাবে তৈরি ও পরিবহন হচ্ছে এবং সেই প্রক্রিয়া গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনে কী ভূমিকা রাখছে – তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে।

    পরিবহন

    ব্যক্তিপর্যায়ে আমরা কোন ধরনের যানবহণ ব্যবহার করছি – সেই সিদ্ধান্তও জলবায়ূ পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বিমান চলাচল এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কতটা দায়ী, এ নিয়ে কমবেশি রিপোর্ট হয়েছে। এর বাইরেও অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। যেমন, বিমান বা জাহাজ চলাচল সার্বিকভাবে জলবায়ুর উপরে কী প্রভাব ফেলছে এবং এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত আইনী কাঠামো আছে কিনা, তা-ও রিপোর্টিংয়ের বিষয় হতে পারে। একইভাবে আবাসন নীতিমালা নিয়েও অনুসন্ধান হতে পারে। কারণ এর সাথে যোগাযোগব্যবস্থার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

    সিমেন্ট ও ভারিশিল্প

    জলবায়ূ পরিবর্তনের ওপর শিল্পের প্রভাব অনুসন্ধানের পুরনো বিষয়। কিন্তু খুব কম লোকই জানেন, সিমেন্ট শিল্প একাই বিশ্বের ৮ শতাংশ গ্রীনহাউজ গ্যাস উৎপাদনের জন্য দায়ী। যদি সব সিমেন্ট কারখানা বিশ্বের একটি দেশে অবস্থিত হত, তাহলে সেই দেশটি একাই ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে তিন নস্বর অবস্থানে থাকত। এবার চিন্তা করে দেখুন – ইস্পাত, রাসায়নিক, এসি অথবা ফ্রিজ তৈরির কারখানার মত বাদবাকি শিল্পগুলো কী করছে।

    আবাসন ও নির্মাণ

    রিয়েল এস্টেট ব্যবসা এই আলোচনায় বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার। এই কারণে না যে তারা প্রচুর কংক্রিট ব্যবহার করে, বরং আবাসন নীতির সাথে সম্পর্কিত পরিবহন ব্যবস্থা (যার সাথে গ্যাস নির্গমনের সম্পর্ক আছে)। রিয়েল এস্টেট এবং অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত জলবায়ু সুরক্ষা নীতিমালায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। নজর দেয়া দরকার, আমাদের সরকারগুলো এই বিষয়ে কোন সুরে কথা বলছে।অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের উচিত নগর পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা: সাগরের উচ্চতা কতটুকু বাড়লে বা পরিবেশগত ঝুঁকি ঠিক কোন মাত্রায় হলে, তাদের এলাকায় সেটি প্রভাব ফেলবে এবং তারা নীতিমালায় কীভাবে বিষয়টিকে আনছেন?

    জীবাশ্ম জালানিখাতের মতই আবাসনখাতও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে অবজ্ঞা করে আসছে। কিন্তু তাদের ভূমিকা নিয়ে ততটা কথাবার্তা হয় না। নর্থ ক্যারোলাইনাফ্লোরিডাসহ বেশকিছু এলাকায় দেখা গেছে, নির্মাণখাত কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞাননির্ভর মডেলকে এড়িয়ে গিয়ে বিধ্বংসী নীতিমালা তৈরিতে উৎসাহ যুগিয়েছে।

    তাই উপকূলীয় এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় রাস্তা, ব্রিজ ও বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মানের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আসলে কী করছেন, সেদিকে সাংবাদিকদের নজর দেয়া উচিত। অনেক সময় তারা ভবন তৈরি করে, সেটি চটজলদি বিক্রি করে দেন। কিন্তু সেই অবকাঠামোটি কোনদিন বিলীনও হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি অনেকটা “কার্বন বাবল” এর মত। এক্ষেত্রেও উপকূলবর্তী অঞ্চলে আবাসন ব্যবসায় ধ্বস নামতে পারে, যদি ক্রেতারা বুঝতে পারেন এই খাত ঝুঁকিতে আছে। আরো গভীরে যেতে চাইলে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নগরপরিকল্পনাবিদদের সাথে কথা বলতে পারেন। জলবায়ু ঝুঁকির বিষয়টি কীভাবে নীতিমালায় প্রতিফলিত হচ্ছে – এই প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারবেন।

    সরকারি নীতি-সহায়তা ও ভর্তুকি

    এরপরে আছে সরকারি খাত। সরকার সাধারণত বিভিন্ন নীতি-উদ্যোগের মাধ্যমে বেসরকারিখাতকে সহায়তা করে। ইদানিং সাংবাদিকরা তাদের রিপোর্টে তুলে আনছেন, কীভাবে জ্বালানি কোম্পানিগুলো সরকারী নীতিকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে তারা কীভাবে বাধা দিচ্ছে অথবা নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে তারা দূষণবিরোধী আইন ও প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দুর্বল করে ফেলছে – এমন অনেক বিষয়ই এখনো উন্মোচিত হয়নি।

    গ্রীনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে সরকার কীভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে – এই বিষয়টি এখনো খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না।  অন্তত একটি সমীক্ষা বলছে, সেই সহায়তার পরিমান বছরে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এই হিসাব অন্য দূষণবান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া সরকারী সহায়তাকে বাইরে রেখে। ফলে সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে অবস্থাকে আরো করুণ করে তুলছে। যেমন, কোনো কোনো দেশে মাছ ধরার ট্রলারের জন্যে সস্তায় পেট্রোল দেয় সরকার। কিন্তু এটি আবার মাছের জন্যেই হুমকিস্বরুপ। এখানেই প্রশ্ন ওঠে, সরকার কী আসলে জলবায়ু পরিবর্তনকে রুখতে চায় নাকি তার বিপরীত?

    বিদেশী সহায়তা, বিনিয়োগ রপ্তানি

    সাংবাদিকদের এখন আর শুধু নিজের দেশ নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। দেখতে হবে, তাদের সরকারগুলো অন্য দেশে গিয়ে কী করছে। যেমন: আমেরিকা যেমন নিজের দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে, এখন অন্য দেশে কয়লা রপ্তানি করছে। চীনও নিজের দেশে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনছে, তারা বিশ্বে অন্তত ২০০ কয়লাভিত্তিক প্রকল্প চালাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর জোট ওইসিডি, এভাবে ধনী দেশ থেকে কয়লা রপ্তানি বাধা দেয়ার জন্য একটি নীতি তৈরি করেছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে তারা সেটিকে কার্যকর করছে না। একইভাবে, বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলো প্যারিস চুক্তি অনুসরণ করার কথা বলেছিল। তারা এই নোংরা উন্নয়ন থেকে সরে আসারও ঘোষণা দিয়েছিল। এখন এসব বিষয়ও আমাদের নজরদারিতে আনা উচিত

    আইন ভেঙ্গে দূষণ মিথ্যা তথ্য প্রদান

    অনেক সময় ভালো নীতি প্রণয়নের পরও সরকার সেটি কার্যকর করতে হিমশিম খায়। বেশিরভাগ গ্রীনহাউজ গ্যাস খালি চোখে দেখা যায়না আর গন্ধহীন। ফলে মালিকপক্ষ এসব নির্গমনের কথা বেমালুম চেপে যান এবং সরকারের কাছে মিথ্যা রিপোর্ট জমা দেন। সম্প্রতি জানা গেছে, বিশ্বখ্যাত কিছু গাড়ি কোম্পানি তাদের গাড়ীতে আলাদা সফটওয়্যার বসিয়ে দূষণের মাত্রার ভূয়া তথ্য প্রকাশ করছিল। এই কোম্পানিগুলোই আবার গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শিথিল করার জন্য সরকারের কাছে তদ্বির করছিল।গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের হিসাব কে রাখছে – এই প্রশ্নটি গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে অগ্রগতির দাবিদার যে কোনো দেশের বেলায়ই প্রাসঙ্গিক এবং জরুরি।

    একসময় খবর বেরিয়েছিল বিশ্বের ওজন স্তর খুব দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, কারণ চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো শীতাতপ যন্ত্রে নিষিদ্ধ সিএফসি ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। পরে গ্যাস নির্গমনের তথ্য নিয়ে প্রতারলনার একই ধরনের অভিযোগ আসতে থাকে অন্য দেশ থেকেও। এমন আরো অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসবে যখন সবাই  গ্রীনহাউজ গ্যাসের ব্যাপারে সচেতন হবে। এইসব ক্ষেত্রে গ্যাস মাপা, সঠিক রিপোর্ট করা এবং তা যাচাই করার পদ্ধতি (এম আর ভি) নিয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু চুক্তি বিষয়ক আলোচনায় ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। তাই যখন কোনো দেশ দাবি করছে, সেখানে গ্যাস নির্গমন কমছে, তখন প্রশ্ন ওঠে গ্যাস নির্গমন কমছে না বাড়ছে “ সেটি মাপার দায়িত্ব” পালন করছে কে?

    কার্বন ক্রেডিট এবং অফসেট স্কিম

    গ্রীনহাউজ গ্যাসের নির্গমন যেমন নজরে রাখতে হবে, তেমনি “কার্বন ক্রেডিট” নামে পরিচিত নির্গমনরোধী উদ্যোগের দিকেও সমান মনোযোগ দিতে হবে। এর মাধ্যমে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি কার্বন নির্গমণ করছে, তারা ক্ষতিপূরণ দেয় এবং সেই টাকায় অন্য কোথাও কার্বন সংরক্ষণ বা নির্গমনরোধী প্রকল্পে সহায়তা করা হয়। যেহেতু পরিবেশ বৈশ্বিক একটি বিষয়, তাই এরকম উদ্যোগকে যৌক্তিক বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এর মধ্য দিয়ে দূষণকারীরা আরো বেশি লাগামহীন হয়ে পড়ে। এ ধরনের কিছু কিছু প্রকল্পকে প্রকৃতিবিনাশী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও সামান্য উপকার পাওয়া গেছে; কিন্তু অনেক জায়গায় লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। সুযোগ নিতে গিয়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধোঁকার আশ্রয়ও নিয়েছে। এখানেও প্রশ্ন উঠেছে: এসব পদক্ষেপ যে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনে “ভারসাম্য” আনবে, সেটি কে ঠিক করছে? উত্তরটি একেক দেশের বেলায় একেকররকম। কিন্তু কার্বন ক্রেডিট নিয়ে রিপোর্টিংয়ের শুরু হতে পারে, এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া  সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাকে জববাবদিহির আওতায় আনার মধ্য দিয়ে।

    খবরের পাতায় যা উপেক্ষিত

    জলবায়ু সংক্রান্ত সাংবাদিকতা অনেক সময় বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ায়।  কেননা, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। প্রযুক্তি দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তারপরও এটা বলা মুশকিল যে সেই দুর্যোগটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। বড়জোর এটা বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তার প্রভাব বা তীব্রতা বেড়েছে।

    সবমিলে, গণমাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে খুব ভাল কাজ  হচ্ছে। এখন আমরা এর “পরোক্ষ প্রভাব” নিয়ে অনেক রিপোর্ট দেখতে পাই, যেমন, জলবায়ু অভিবাসন এবং সম্পদের অভাব কীভাবে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তরপূর্ব আফ্রিকায় সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে। এইধরনের সাংবাদিকতা অন্যান্য অঞ্চলেও হওয়া উচিত। মধ্য আমেরিকাসহ কিছু অঞ্চলে এই বিষয়ে এখনো তেমন রিপোর্টিং হচ্ছে না। যেমন, সমুদ্রে এসিডের মাত্র বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গণস্বাস্থ্যে কী প্রভাব পড়ছে,  এমন বিষয় নিয়ে আরো অনুসন্ধান হওয়া দরকার। আবার কোনো কোন ক্ষেত্রে এর প্রভাবকে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে দেখানো হয়েছে।

    জলবায়ু বা দুর্যোগের বাইরেও আরো অনেক বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন সাংবাদিকরা। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ায় জঙ্গলে কয়েক বছর ধরে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হয়, এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। কিন্তু এজন্য বন-ব্যবস্থাপনা এবং সেখানে অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলা-ও যে দায়ী, সেটি খবরে ততটা আসে না। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানী এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ঘটনার সত্যিকার চিত্র পাওয়া যেতে পারে।গবেষণার পদ্ধতিগত দূর্বলতা নিয়ে কথা বললে আপনি নিজেও সাংবাদিক এবং তথ্যের উৎস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

    সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে শুধু যে উপকূলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন তা নয়। উপকূল থেকে দূরে, স্থলভাগের গভীরের মানুষও সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারেন বন্যা বা পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে। বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে, জেট স্ট্রিম বা পশ্চিম থেকে পূর্বমুখী বায়ূপ্রবাহ দূর্বল হয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে দক্ষিণের অঞ্চলেও ঠান্ডা বেড়ে যাচ্ছে। অথচ এই অঞ্চল ঘটনার উৎসের চেয়ে অনেক দূরে।

    একটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরি: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় আপনি যে ফলাফল দেখতে পান, তার বেশিরভাগই অনুমাননির্ভর।  এই অনিশ্চয়তা হয়ত আপনার রিপোর্টের দাবিকে কিছুটা দুর্বল করবে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্যনির্ভর লেখা, পাঠকের কাছে আপনার বিশ্বস্ততা বাড়বে। গবেষণার পদ্ধতিগত দূর্বলতা নিয়ে কথা বললে আপনি নিজেও সাংবাদিক এবং তথ্যের উৎস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

    পরিবেশবাদী সংগঠন ও কর্মী

    পরিবেশবাদী সংগঠন এবং তাদের কর্মীরাও অনুসন্ধানের বাইরে নন। খতিয়ে দেখা দরকার, তাদের উদ্দেশ্য কী বা তারা কোথা থেকে টাকা পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম মূলত নজর দিয়েছে “ক্লাইমেট ডিনায়ার” বা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে অস্বীকার করা গ্রুপগুলোর দিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের টাকায় চলা কিছু বেসরকারি সংগঠন আছে। এদের কাজই হল, গবেষণার নামে পরিবেশ ও গণস্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো। এটি  সবচেয়ে বেশি ঘটে তামাক কোম্পানিগুলোর বেলায়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কালো টাকা অর্থায়নের সুযোগ রেখে তৈরি একটি আইন, তাদের সাহায্য করছে টাকা যোগাতে।

    এবার নজর দেয়া যাক, “অন্যপক্ষ”, অর্থ্যাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সোচ্চার সংগঠনগুলোর দিকে। এদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত, প্রশ্ন করা উচিত, তাদের টাকা কোথা থেকে আসছে। অবশ্য বিশ্বের ৯৭ ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, জলবায়ুর পরিবর্তন সত্য এবং তা মানুষের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) বলছে, দিন দিন বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশবাদী গ্রুপগুলোর প্রতি জনসমর্থন বেশি।

    বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে সাংবাদিকদের করণীয় কী? ক্লাইমেট ডিনায়ারদের দাবি অনেক বিজ্ঞানী পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ তারা জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে টাকার বিনিময়ে গবেষণা করেন।  তাদের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দফায় দফায় চেষ্টা হয়েছে। ২০০৯ সালে একবার তো, অনেক বিজ্ঞানীর ইমেইল-ই হ্যাক করা হয়েছিল। তবে সেখানে দেখা যায়, তারা স্বাভাবিক নিয়মেই গবেষণা করছেন। জলবায়ু বিজ্ঞানের বিরোধীরা বরাবরই সেই গবেষণা পদ্ধতিকে হেয় করতে চেয়েছেন।  (ইমেইল ফাসকারীরা কিন্তু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।)

    পিয়ার রিভিউ বা পর্যালোচনা বরাবরই বিশ্বাসযোগ্য সত্য বের করে আনতে সহায়তা করে। যেমন, আইপিসিসি বলেছিল ২০৩৫ সালে হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করবে। তখন অনেকে প্রতিবাদ করেছিল। পিয়ার রিভিউর মাধ্যমে সেই ভুল সংশোধনও হয়েছিল। বেশকিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমে গেছে বা থেমে গেছে। পরে জানা গেল বাস্তবে তেমনটা নয়। আসলে, তথ্যের ঘাটতির কারণে পরিসংখ্যানে এমনটা দেখা গেছে।  তাই সাংবাদিকদের উচিত নতুন নতুন গবেষণার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা এবং বিশ্বাসযোগ্য গবেষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।

    নজর রাখুন সমাধানেও

    এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষ ততটা সচেতন নয়। এই মনোভাব যদি না বদলায়, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর প্রভাব এড়াতে পারব না। তাই সাংবাদিকদের উচিত সমাধানের উদ্যোগ নিয়েও নিজেদের অনুসন্ধান জারি রাখা। কারণ সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে, মানুষের মনোভাবও নেতিবাচক হবে। এখন নবায়নযোগ্য শক্তি – যেমন সৌর , বায়ূ বা জিওথার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প – আগের চেয়ে সাশ্রয়ী। কিন্তু অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পের মত সেখানেও দূর্নীতি বা সম্পদের অপব্যবহার হতে পারে।

    জল এবং পরমাণু বিদ্যুতের মত বিকল্প উৎস নিয়ে বিতর্ক আছে। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোন থেকে গ্রহনযোগ্য হলেও, এ ধরনের প্রকল্প স্থানীয় পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বড় বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয় জলবিদ্যুতে। কিন্তু এসব বড় বড় বাঁধ, বিপুল পরিমানে মিথেন গ্যাস নির্গত করে। যার ফলে পানির তলায় থাকা উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যান্য প্রকল্পের মত, এইসব বিকল্প শক্তির উৎস তৈরিতে এবং তা পরিচালনায় ব্যাপক পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি লাগে। আসলে, কোনো প্রকল্পের জীবনচক্র পুরোপুরি বিশ্লেষণ করা ছাড়া, জলবায়ুর ওপর তার প্রভাব মূল্যায়ন করা কঠিন।

    সমস্যা সমাধানের আরো কিছু বিকল্প আছে, যা বিবেচনায় নিতে হবে:

    জৈব জ্বালানি

    বলা হত, শস্য থেকে তৈরি জৈব জ্বালানি (যেমন ভুট্টা থেকে তৈরি বায়োইথানল) পরিবেশের জন্য ভালো। কারণ, এগুলো থেকে কম কার্বন নির্গত হয়। তাই একে দেখা হত, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে। কিন্তু নানা কারণে এই ধারণা ধোপে টেকেনি। বেশিরভাগ জ্বৈব জ্বালানি প্রকল্পে বড় আয়তনের জমি ও প্রচুর পানি দরকার হয়। এতে খাদ্য নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়ছে। তাছাড়া এর উৎপাদনও ব্যয়বহুল।

    জৈবজ্বালানি আগে প্রাণীর বর্জ্য থেকে তৈরি হত, যাকে আমরা জৈবগ্যাস নামে চিনি। বলা হয়, এটি জ্বালানির তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন উৎস। অনেকেই মনে করেন – ফেলে দেয়া খাবার, সেলুলোজ বা ছত্রাক থেকে তৈরি করা গেলে, হয়ত এই জৈব জ্বালানি ভবিষ্যতের জন্যেও খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তখন জমি এবং পানির প্রবাহও কম লাগবে। কেউ কেউ এসব থেকে বিমানের জ্বালানি তৈরিরও পরামর্শ দেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, নতুন নতুন এই বিকল্প যতটা না কাজের, তার চেয়ে অনেক বেশি নামে। এদিকেও সাংবাদিকদের নজর রাখতে হবে।

    কার্বন অপসারণ ওসংরক্ষণ

    সামনের দিনগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ হবে। কিন্তু এই টাকা কতটা দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে খরচ করা হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

    কার্বন সংরক্ষণের (কার্বনকে বাতাসে মিশতে না দিয়ে মাটি বা অন্য কোনো উপায়ে ধরে রাখা) দক্ষতাই আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।  এখন কার্বন ধরে রাখার জন্য বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে, বনকে রাখা হচ্ছে সুরক্ষিত। তাছাড়া বাড়তি উদ্যোগ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে বনায়ন কর্মসূচি। এসব উদ্যোগ বন রক্ষা এবং বনাঞ্চল হ্রাস কমাতে বড় অবদান রাখছে। কিন্তু বাতাসে কার্বন কমাতে এর ভূমিকা খুব একটা পরিষ্কার নয়। অনেকসময় তা বনের অধিবাসীদের জন্য ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হতে পারে।

    এছাড়া নির্গত গ্যাস থেকে কার্বন অপসারণ করে তাকে নতুন করে ব্যবহারের নানা উদ্যোগ আছে। জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সিসিএস (কার্বন নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণ) পদ্ধতি ব্যবহারে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে, তেল বা কয়লা পোড়ানোর সময় নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস থেকে কার্বন আলাদা করে ফেলা হয়। তারপর সেই কার্বনকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয় কিংবা ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেয়া হয়। “স্বচ্ছ-কার্বনমুক্ত” জ্বালানি উৎপাদনের কথা বলছে যেসব কোম্পানি, তারা মূলত এই সিসিএস পদ্ধতিই ব্যবহার করছে।

    কিন্তু, সিসিএসের সফলতা এখনো সন্দেহের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। কারণ এই পদ্ধতিতে ব্যাপক আয়োজন দরকার হয়। এটি ব্যয়বহুলও বটে। এছাড়া বাতাস থেকে কার্বন আলাদা করার আরো কিছু পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক পর্যায়েই আছে। এখানেও একই প্রশ্ন: কার্বন অপসারণের বিশাল এই খরচ কে বহন করবে?

    সামনে আমাদেরকে কার্বন অপসারণ এবং সংরক্ষণের  দিকেই এগোতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর নামে এরিমধ্যে অনেক সময় অপচয় হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবলোয় সই করা প্যারিস চুক্তিতে যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কার্বন নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাই আমাদের সামনে উপায় হল, “ঋণাত্মক নির্গমন” যা সম্ভব কেবলমাত্র কার্বন অপসারণের মাধ্যমে। তাই এদিকটাতেও নজর দিতে হবে।

    জলবায়ু অভিযোজন

    জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বিশ্বের মানব সম্প্রদায়কে যে বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তা একরকম ভীতিকর। এজন্য যে প্রতিরোধ-শক্তি বা যত রিপোর্টিং দরকার, তা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। যেমন, সুপেয় পানির সংকট। পানির প্রাপ্যতা, অভাব এবং বন্যা-ঝড়-খরায় তার ভূমিকাও রিপোর্টের বড় বিষয় হবে সাংবাদিকদের জন্য। একইভাবে গণমাধ্যমের মনোযোগে থাকবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি এবং সামলে ওঠার খবর।

    আমরা জানি, সামনে লাখো কোটি ডলার খরচ হবে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের প্রয়োজনে – সমুদ্রে বাঁধ আর বেলাভূমি তৈরিতে। কিন্তু সেই টাকা কতটা দক্ষতার সাথে খরচ হবে, এ নিয়েও সন্দেহ আছে। সাংবাদিকদের এদিকেও মনোযোগ দিতে হবে। দেখতে হবে, রাজনীতিক এবং পরিকল্পনাবিদরা কোন সমাধান বেছে নিচ্ছেন, যে প্রতিরোধ তৈরি হবে তা কি “ভারি” না “হালকা”; যে অবকাঠামো তৈরি হবে, সেটা কি সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা ২ ফুট বাড়বে ধরে নিয়ে তৈরি হচ্ছে, নাকি ৫ ফুট বাড়বে ধরে নিয়ে। সমাধানের প্রতিটি বিকল্প বেছে নেয়ার কার্যকারণ রিপোর্টের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

    তবে ভবিষ্যতে, জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া বড় বিষয় হয়ে উঠে আসবে। শুধু এখানে যত ক্ষতি হবে, তার কাছে বাকি সব কিছু ফিকে মনে হবে। কেবল মাত্র সম্পদশালী অঞ্চলের মানুষেরাই এই ক্ষতি সামাল দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করতে সক্ষম হবেন। সমাধানের আরেকটি উপায় হল, আগাম পরিকল্পনা করে মানুষকে সরিয়ে নেয়া। কিন্তু সেই পরিকল্পনা-ও যে সব সময় সফল হবে তা নয়। বরং অনেক জায়গাতেই ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সাংবাদিকদের তাই লেগে থাকতে হবে। দেখতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে কাদেরকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, ধনীদের নাকি গরীবদের।

    জিওইঞ্জিনিয়ারিং

    জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে রক্ষা করতে গোটা পৃথিবীর বায়ূস্তর নিয়ে বিশালাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন কয়েক ধরনের পরীক্ষা চলছে, কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে। দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, মানুষ এই পৃথিবীর গঠন-কাঠামো নিয়ে কতটা কারিগরী করতে পারে। এখন পর্যন্ত ফলাফল খারাপই মনে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে হয়ত কোনো দিন – কোনো দেশ, ব্লক, কোম্পানি বা তার চেয়েও শক্তিশালী কেউ সত্যিকার অর্থেই সফলভাবে জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করবে।

    ভূ-প্রকৌশলের তেমন একটি পদক্ষেপ হল, পৃথিবীর বায়ূস্তরে এরোসল ছড়িয়ে দেয়া। ভাবা হচ্ছে, সূর্যের আলোর তেজ কমাতে বায়ূমন্ডলে সোলার-শেডস বা ছাউনি তৈরির কথাও। কিন্তু সূর্যের আলো কমে গেলে তাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে কৃষি উৎপাদনের। সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি রুখতেও,  এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না। বিশ্বপর্যায়ে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাই এখনো এসব নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না।সাংবাদিক হিসেবে আমাদের কাজ হবে নিয়ত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর এই বিজ্ঞানকে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য করে তুলে ধরা, বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে মানুষের ওপর তার প্রতিক্রিয়া খুঁজে বের করা।

    পৃথিবী নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা শুনতে অবাক লাগছে?  ২০ বছর আগেও ”জলবায়ু অভিযোজন” শব্দটির কথা বলাই যেত না। সবাই মনে করতেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যেই অভিযোজনের কথা বলা হয়।  এখন জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অনেকেই একে “নৈতিক সমস্যা” হিসেবে দেখেন।  কিন্তু সংকট যত গভীর হবে, হয়ত জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মানুষের মনোভাবও তত দ্রুত বদলে যাবে। তাই সাংবাদিকদের খোঁজ রাখা দরকার, চলমান কোন পরীক্ষাটি, কবে বা কখন তত্ত্ব থেকে বাস্তবে রুপ নিচ্ছে।

    এতক্ষণ ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে সম্ভাব্য তালিকা দেয়া হল, তা দেখে লম্বা মনে হতে পারে।  কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন সবকিছুকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এটি সাগরতল থেকে আকাশের চূড়া, অর্থনীতি থেকে সমাজ – সব জায়গাতেই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

    আমরা নিজেরাই কীভাবে আমাদের চারপাশকে বদলে ফেলছি – তা হয়ত বুঝিয়ে বলতে পারেন বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং পরিবেশবাদীরা। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে আমাদের কাজ হবে নিয়ত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর এই বিজ্ঞানকে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য করে তুলে ধরা, বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে মানুষের ওপর তার প্রতিক্রিয়া খুঁজে বের করা। আর এ কারণেই, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সময়ের সবচে গুরুত্বপূর্ণ স্টোরি।

    লেখক: জেমস ফান হলেন আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক। এটি জিআইজেএনের সদস্য প্রতিষ্ঠান ইন্টারনিউজের একটি উদ্যোগ। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির গ্রাজেুয়েট স্কুলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

  • করোনার পিছনে বিল গেটসের হাত!

    করোনার পিছনে বিল গেটসের হাত!

    মারণ ভাইরাস করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে মানবজাতির সভ্যতা ও বিজ্ঞানের দম্ভ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছেন একটা ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরিতে। এখনও সফলতার মুখ দেখেননি। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র ভ্যাকসিন তৈরির সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। তবে আতঙ্কের পাশাপাশি চলছে গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার। গুজব রটেছে, করোনা ছড়ানোর পিছনে নাকি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের হাত রয়েছে!

    হাতেগোনা কয়েক জন নন, আমেরিকার ২৮ শতাংশ বাসিন্দাই একে সত্যি বলে মনে করেন। এমনটাই জানিয়েছে একটি সমীক্ষা। সেই সঙ্গে আরো গুজব রটেছে, কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে লোকজনের মধ্যে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানোর চেষ্টা করছেন বিল গেটস। যদিও গোটা বিষয়টিকেই অত্যন্ত অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিল গেটস স্বয়ং। বলেছেন, এ ধরণের ভুল তথ্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রত্যেকের জন্য বিপজ্জনক।

    করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক খোঁজার কাজে বরাবরই উদ্যোগী ছিলেন বিল গেটস। এ কাজে বিল ও তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস দু’জনেই সক্রিয়। এরই মধ্যে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষেধক তৈরির কাজে ৩০ কোটি ডলারের অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এই মহামারির পিছনে বিল গেটসের হাত রয়েছে বলে গুজব রটেছে কেন?

    ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারকারী ডানপন্থীদের দাবি, কোনো না কোন ভাবে এই মহামারি উৎসে জড়িত গেটস এবং তা ছড়ানোর পিছনেও তাঁরই হাত রয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন বিক্রি করে তার থেকে ফায়দা তুলতে চান বিল গেটস।

    ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ নামে একটি আন্তর্জাতিক মাকের্ট রিসার্চ এবং ডেটা অ্যানালিটিকস সংস্থার যৌথ সমীক্ষা রিপোর্টে দাবি, আমেরিকার ২৮ শতাংশ মানুষই এই ধারণায় বিশ্বাসী। রিপাবলিকানদের মধ্যে ৪৪ শতাংশও একে সত্যি বলে মনে করেন। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘ফক্স নিউজ’-এর ৫০ শতাংশ দর্শকই এই তথ্যে বিশ্বাস করেন বলে মত দিয়েছেন। যদিও এমএসএনবিসি নামে আর একটি টেলি-নেটওয়ার্কের ৬১ শতাংশ দর্শকই মনে করেন, এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।

    এ বিষয়ে বিল গেটস কী মনে করেন? গোটা বিষয়টিকেই অদ্ভুত বলে আখ্যা দিয়েছেন বিল গেটস। তাঁর কথায়, ‘আমি কখনই কোনো ধরনের মাইক্রোচিপ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নই। এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাটাও মুশকিল। ব্যাপারটা এতটাই নির্বোধ আর অদ্ভুত।’

    মহামারি নিয়ে অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই সচেতনতা প্রসারের কাজে জড়িত বিল গেটস। ২০১৫ সালে ‘টেড টকস’-এ সে বিষয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানেই বিশ্ব জুড়ে এক ভয়ানক মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন বিল গেটস। এ কাজে বিশ্বনেতাদের সক্রিয় হওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে ঘিরে ছড়িয়েছে গুজব।

    তবে এই গুজবের ফলে যে করোনার প্রতিষেধক খোঁজার কাজ ব্যাহত হবে না, সেটাই স্বস্তির বলে জানিয়েছেন বিল গেটস। তাঁর মতে, করোনার প্রতিষেধক তৈরি হলে প্রথমেই তা এমন দেশে পাঠানো উচিত, যেখানকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা প্রায় অসম্ভব। প্রতিষেধক তৈরি কাজে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আরো অতিরিক্ত ১৬০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিল ও মেলিন্ডার ফাউন্ডেশন। সূত্র- ইউএস টুডে, আনন্দবাজার।

  • বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    প্রতিটি সংকটে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়। জলবায়ু পরিবর্তনও তার ব্যতিক্রম নয়

    জহুরুল কবীর: ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।

    জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদী বিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ আরও প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। তবে উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগ ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

    বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    অনেক সময় বন্যার কারণে নদী ভাঙন হয়। আবার নদী ভেঙেও লোকালয় প্লাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

    ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

    বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত।

    অতিরিক্ত গরমও জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক ধরনের প্রভাব। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে মানুষের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ, আর এক্ষেত্রে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    এসব লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুদের। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    দুর্যোগের সময়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া, যৌন নিপীড়নের শিকার, শিশু শ্রম, পাচার এবং অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি থাকে

    বাংলাদেশে নারী-পুরুষ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ছেলে ও মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়। শিশুর বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে তাদের অসহায়ত্বও ভিন্ন ধরনের হয়, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েক বছরে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর (ডিআরআর) ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

    উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ বহু ভবন নির্মাণ করেছে যা ঘুর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে দুর্যোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন হারানোর হার ক্রমশ বাড়ছে।

    সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

    এই বিপুল ‍বিনিয়োগের সঙ্গে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি হতে হবে।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণের যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি

    সমাধান

    দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়ায় কমিউনিটির সামলে নেওয়ার সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ

    ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থিতি সামালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগে গতানুগতিক জরুরি ‘সাড়া ও ত্রাণ’ ভিত্তিক কার্যক্রম থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের আরও সমন্বিত ও টেকসই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।

    বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাক্টের আওতায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের একযোগে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

    উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির দিক দিয়ে অনেক কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছে। এসব দুর্যোগ সম্পর্কে জ্ঞান ও জানাবোঝাও বেড়েছে।

    উল্লেখযোগ্য তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার অনেক বিষয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ।

    ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত সাত লাখ রোহিঙ্গার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যখন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা যোগাড় করা হচ্ছিল সেই সময় বাংলাদেশ সরকার শুধু ইউনিসেফ ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার সামান্য সহায়তা নিয়ে খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে বন্যায় বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে রক্ষা করে।

    সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেয়া, সমাজের সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিশুকেন্দ্রিক পরিকল্পনার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজও করা হয়

    এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনার বিষয়গুলো হল-

    # দুর্যোগের সময় ও পরবর্তীতে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।

    # দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণের উৎস নিশ্চিতে বিনিয়োগ।

    # নীতি নির্ধারণ ও উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়াদি ও তাদের প্রয়োজন মেটানোর পদক্ষেপ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।  

    ইউনিসেফের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এজেন্ডায় দুর্যোগকালে সব বয়সী শিশুরা যেসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার সবই  বিবেচনায় নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত প্রয়োজনগুলো যাতে মেটানো যায় সে লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক (ডেটা সিস্টেমের) সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    পানীয় জলের উন্নততর অবকাঠামো এবং স্কুলে স্কুলে পৃথক ল্যাট্রিন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিরাপদ পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মেয়ে ও নারীদের উপযোগী স্থাপনা প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি এবং এমনকি শিশুদেরও সহায়তা নেওয়া হয়।

    নির্দিষ্ট বয়সভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের জন্য ইউনিসেফের কার্যক্রমের কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হল:

    নবজাতক, ছোট শিশু ও তাদের মায়েরা

    বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত সমস্যাগুলো সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ইউনিসেফ। তাপদাহ, নতুন নতুন এলাকায় রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং দুর্যোগকালে আহতদের চিকিৎসা প্রভৃতি বর্তমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় নিয়ে আসা যায়।

    সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের পাঠ্যসূচিতে জরুরি পরিস্থিতির প্রস্তুতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দুর্যোগে অসহায় এলাকাগুলোতে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণে ইউনিসেফের সহায়তা কাজে লাগানো হয়।

    দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে কমিউনিটি রেডিও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ গর্ভধারণকালে হাইপারটেনশন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার জন্য যে সমস্যায় ভোগেন অনেক মা, সে সম্পর্কিত তথ্য ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে।

    দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এইচআইভির ওষুধ ও সেবা সহজলভ্য করার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    স্কুলের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। কোনো একটি দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রতিরোধে পাইলট প্রোগ্রামে সহায়তা করা হচ্ছে।

    বাবা-মার সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বাবা-মার প্রশিক্ষণে জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুর সুরক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

    দুর্যোগ পরিস্থিতি ও এর পরেও শিশুর জন্য সেবাগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অংশীদারদের নিয়ে ইউনিসেফ জেলা পর্যায়ে ‘জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার’ জন্য পলিসি ও ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করেছে।

    সংকটের ঝুঁকি বাড়ায় দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে ইসিডি সেবাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও টেকসই পদ্ধতি বের করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করছে ইউনিসেফ।

    শিশুর খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখার উদ্যোগে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। দুর্যোগের সময়ে ভুক্তভোগীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতেও সহায়তা দেওয়া হয়। জলবায়ু সহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবন ও চাষেও উৎসাহ দেয় ইউনিসেফ।

    দুর্যোগকালে দূষিত পানির মাধ্যমে প্রায়ই পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাইজিন (ওয়াশ) স্থাপনা নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্থাপনা যাতে জলবায়ু সহিষ্ণু করা যায় সেজন্য গবেষণা ও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। জলাবদ্ধতা, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা ও খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিতে এমএআর সিস্টেম ও অন্যান্য জলবায়ু সহিষ্ণু পানি প্রযুক্তির উন্নয়নেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইউনিসেফ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে উন্নততর রান্নার চুলার ব্যবহার উৎসাহিত করছে।

    প্রাথমিক স্কুলবয়সী শিশু

    পরিবেশগত জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহীত পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসৃত হওয়া উচিত, যাতে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের জন্য জেলা পর্যায়ে সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাজ করে ইউনিসেফ।

    আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার দ্বিতীয় দফার এই সুযোগে তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির স্থাপনা বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সে বিষয়েও শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়। ‘লিটল ডক্টর প্রোগ্রামের’ আওতায় প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্য বিধি শেখানো হয়।

    বাবা-মার একজন আছেন এমন শিশু এবং দুঃস্থ মায়েদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। সংকটের আগে, সংকটকালে ও পরে এসব সেবা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে কাজ করছে ইউনিসেফ।

    পরিবর্তনের দূত হিসেবে কিশোর-কিশোরী

    মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নাজুক এলাকাগুলোতে) জীবন-দক্ষতা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে ইউনিসেফ। সান্ধ্যকালীন স্কুল ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুল এভাবে বিকল্প উপায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের পরীক্ষামূলক উদ্যোগে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। বিশেষ পরিস্থিতিতে শ্রম বাজারে ঢুকে পড়া শিশুর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যও রয়েছে এই উদ্যোগের পেছনে।

    জীবন-দক্ষতা শিক্ষায় বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেমন পাচার, শহুরে সেন্টারে স্থানান্তর, আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস ও যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেদের রক্ষার কৌশল শেখানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও এইচআইভি নাজুকতার মধ্যে সম্পর্ক বের করতেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    দুর্যোগের পর কিশোরী মেয়েরা বাল্য বিয়ে, শিক্ষার সুযোগ হারানো ও অন্যান্য বঞ্চনার ঝুঁকিতে থাকে। ইউনিসেফ শিক্ষক ও কমিউনিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দেয় যাতে মেয়েদের শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত মোবাইল টিম ও শিশুবান্ধব অন্যান্য উদ্যোগে নিপীড়ন, সহিংসতা ও জরুরি পরিস্থিতিতে উপেক্ষার বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য কিশোরী মেয়েদের সক্ষম করে তোলে।

    আরও কিশোর-কিশোরী এবং রেডিও শোনা গ্রুপগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উদ্যোগগুলোতে আরও সম্পৃক্ততা চায় ইউনিসেফ। শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বড় কারণ। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণে কমিউনিটির সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ সাঁতার প্রোগ্রাম চালানো হয়।

    লোকজনের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামনের কাতারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং শহর ও পৌরসভায় মেগা ফোন, সৌরশক্তি চালিত রেডিওর সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউনিসেফ।

    নীতি ও সচেতনতা

    ইউনিসেফের সংগ্রহে মনস্তাত্ত্বিক ও বিনোদনমূলক নানা ‘কিট’ বা উপকরণ রয়েছে এবং সেগুলো ইতোমধ্যে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে দেওয়াও হয়েছে। এটা জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুদের ‘ন্যূনতম সেবা প্যাকেজের’ অন্তত তিনটি উপকরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।

    ইউনিসেফ শহরাঞ্চলে শিশুদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের শিশুকেন্দ্রিক অভিযোজন ও স্কুল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

    প্রান্তিক লোকজনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিয়ে শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তহবিল সংগ্রহেও সহায়তা করে ইউনিসেফ।

    ইউনিসেফ তার ডিজাস্টার অ্যাক্ট ২০১০ এর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় শিশুবান্ধব প্রস্তুতি, সাড়া প্রদান, সুরক্ষা ও ঝুঁকি প্রশমনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার চালাচ্ছে।

  • শাহরুখের বেফাঁস মন্তব্যেই সম্পর্কে ফাটল, জুটি হিসেবে একটি মাত্র ফিল্ম করেছেন আমির-কাজল!

    শাহরুখের বেফাঁস মন্তব্যেই সম্পর্কে ফাটল, জুটি হিসেবে একটি মাত্র ফিল্ম করেছেন আমির-কাজল!

    ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ এবং আমির খানের যে খুব একটা দোস্তি নেই, সে কথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু শাহরুখের জন্য যে আমির খানের সঙ্গেও কাজলের ঠান্ডা লড়াই চলেছিল বেশ কিছু বছর ধরে তা কি আপনি জানতেন? সেই তিক্ততা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, দীর্ঘ দিন কথা বলেননি আমির-কাজল। একসঙ্গে ছবিতে অভিনয়! তাহয়েছিল অনেক পরে… কী হয়েছিল?

    ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ খান যখন ডেবিউ করেন, তাঁর আগে থেকেই ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেরাচ্ছিলেন আমির খান। সে সময় জুহি চাওলার সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু সিনেমা সুপারহিট। জুহি আর আমিরের বন্ধুত্বও বেশ জমে উঠেছে।

    ঠিক এমনই সময়ে জুহির সঙ্গে শাহরুখের একটি ছবির অফার আসে। ছবির নাম ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’। সেই ছবি চলাকালীন জুহির সঙ্গেও বেশ ভালই সখ্যতা গড়ে ওঠে শাহরুখের।

    জুহির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রেই শাহরুখের আলাপ হয় আমির খানের সঙ্গে। জুহিই আলাপ করিয়ে দেন। শাহরুখ এবং আমিরের মধ্যেও ভালই আলাপ জমে ওঠে। শাহরুখ তখন নতুন। ভবিষ্যতে তিনি কী কাজ করবেন, কী করবেন না সে বিষয়েও আমিরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন কিং খান।

    ঠিক এমন সময়েই শাহরুখের কাছে ‘বাজিগর’ ছবির অফার আসে। শাহরুখের চরিত্রটি নেগেটিভ। কিন্তু তা-ও চরিত্রটি করতে রাজি হয়ে যান এসআরকে। শাহরুখ শোনেন বিপরীতে একটি নতুন মেয়ে কাজ করবে। নাম কাজল।

    কাজল কেমন তা জানতে আমিরকেই জিজ্ঞাসা করেন এসআরকে। কাজলকে চিনতেন আমির। “সেলেবের(তনুজা) মেয়ে, তাই অ্যাটিটিউড প্রবলেম থাকতে পারে”, কাজল সম্পর্কে শাহরুখকে এমনটাই বলেন আমির।

    শুরু হয় ‘বাজিগর’-এর শুটিং। কাজলকে নিয়ে প্রথমে চিন্তায় থাকলেও দেখতে দেখতে শাহরুখ-কাজলের অফস্ক্রিন রসায়ন জমে ওঠে। সুপারহিট হয় ‘বাজিগর’ ছবিটিও। দেখতে দেখতে কাজল এবং শাহরুখ হয়ে ওঠেন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।

    একের পর এক ছবি করছেন। আর প্রত্যেক ক’টাই সুপারহিট। এমন সময়ে শাহরুখ তাঁর কেরিয়ারের প্রথম দিকে বলা আমিরের ওই কথাগুলো ফাঁস করে দেন কাজলকে। আমিরের কথায় তাঁর যে কাজল সম্পর্কে প্রথমে বেশ নেতিবাচক ধারণাই হয়েছিল, সে কথাও প্রিয় বন্ধুকে বলেন কিং খান।

    এ দিকে কাজল তো রেগে লাল। আমিরের সঙ্গে তখনও পর্যন্ত একটাও ছবি করেননি তিনি। তা সত্ত্বেও কেন আমির তাঁকে বাইরে থেকে দেখে এমন ‘আলটপকা’ মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে জবাব চান কাজল।

    আর ইন্ডাস্ট্রির অলিখিত প্রোটোকল অনুযায়ী, একজন অভিনেতা কখনওই আর এক জন অভিনেতা সম্পর্কে জনসমক্ষে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারেন না। আমির প্রোটোকল ভেঙেছেন, সে অভিযোগও আনেন কাজল।

    এ দিকে একদা বন্ধু শাহরুখও সমস্ত কথা কাজলকে ফাঁস করে দেওয়ায় শাহরুখের উপরেও রেগে যান আমির। সব মিলিয়ে শাহরুখ এবং আমিরের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। কাজল এবং আমিরের সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়। কাজল দীর্ঘদিন ছবি করতে চাননি আমিরের সঙ্গে। কথাও খুব একটা হত না তাঁদের।

    এর পর ১৯৯৭ সালে কাজলের কাছে ‘ইশক’ ছবির অফার আসে। কাজল ছাড়াও সেই ছবিতে ছিলেন জুহি চাওলা, আমির খান এবং অজয় দেবগণ। শোনা যায়, এই ছবিতে প্রথমে কাজলকে নেওয়ার কথা ভাবেননি পরিচালক। পছন্দ ছিলেন মনীষা কৈরালা।

    কিন্তু মনীষার ডেট ম্যাচ না করায়, এবং সে সময় অজয়ের অনুরোধে শেষমেশ কাজলকে নেওয়া হয় ওই ছবিতে। সে সময় অজয়ের সঙ্গে কাজলের প্রেম নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ গুঞ্জন।

    যাই হোক, একসঙ্গে সিনেমা করলেও আমির নয়, অজয়ের বিপরীতেই অভিনয় করেছিলেন কাজল। এমনকি সেটেও তাঁদের খুব একটা যে কথা হত, এমনটা নয়। এর পর আর আমিরের সঙ্গে আরও দীর্ঘ সময় ছবি করেননি কাজল। অজয়ের সঙ্গে বিয়ে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজল। সাল ২০০৬। কাজল ভাবেন অনেক হয়েছে, এ বার কামব্যাক করতে হবে তাঁকে।

    যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে তাঁর কাছে অফার যায় ফিল্ম ‘ফানা’-র। বিপরীতে আমির খান। আগে হলে হয়ত কাজল না করতেন। কিন্তু সেই সময় তাঁর কেরিয়ারের ক্ষেত্রে ওই ছবি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

    আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা-ই থাকুক না কেন, আমির যে শক্তিশালী অভিনেতা, তা সম্পর্কে ওয়াকিবহল ছিলেন কাজলও। তিনি রাজি হয়ে যান। আর সেই ছবি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। কেন যে এর আগে আমির-কাজল জুটি বাঁধেননি, প্রশ্ন তোলেন ফ্যানেরা।

    এর পিছনে যে দায়ি ছিলেন শাহরুখই তা কি আর ফ্যানেরা জানেতেন?

  • সাতক্ষীরায় জেলা বিএনপি’র জরুরি সভা

    সাতক্ষীরায় জেলা বিএনপি’র জরুরি সভা


    প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার বিষয়ে জেলা বিএনপির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী।
    সদস্য সচিব আব্দুল আলীম চেয়ারম্যানের সঞ্চালনায় সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়কদের নিয়ে জরুরি আলোচনা অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেয়া এবং এই খাদ্য সহায়তায় অর্থ বরাদ্দের জন্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
    উক্ত সভায় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, আশাশুনি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান কবির, জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহী মুন্না, আশাশুনি উপজেলা বিএনপি নেতা মশিউল হুদা তুহিন।

  • সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সভায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাধ সংস্কারে পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবী

    সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির এক সভা ৫ জুন বেলা ১০ টায় দৈনিক পত্রদূত অফিসে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম।
    সভায় গত ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এর নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকে সাতক্ষীরা শহর ও সংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে “সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
    সভায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা মরিচ্চাপ ও বেতনা নদী সংলগ্ন এলাকার ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৪ সালে প্রাথমিক সমীক্ষার পর ২০১৪ সালে এই প্রকল্পটি প্রণয়ন করে। দীর্ঘ দিন পর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হওয়ায় এটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হয়।
    সভায় আরো বলা হয়, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর একনেকের সভা শেষে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেড়িবাধ ভেঙে সমূদ্রের লবনাক্ত জোয়ারের পানি কৃষি এলাকায় ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তাঁর উদ্বৃতি দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
    প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এই প্রকল্পের এলাকায় নয়। বাঁধ ভেঙে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার ৪, ৭-২ ও ১৫ নম্বার পোল্ডারে অবস্থিত শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, শ্রীউলা, প্রতাপনগর, খাজরাসহ সংলগ্ন এলাকা।
    ফলে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পটি দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি আম্পানে ধ্বংশপ্রাপ্ত বেড়িবাধ সংস্কারে পর্যাপ্ত বরাদ্দের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের দৃষ্ঠিতে আনতে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহবান জানানো হয়। একই সাথে এ বছর বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা শহরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি না হয় সেজন্য এক্ষুণি উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানানো হয়।
    সভায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর নির্মাণে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সরকারী সহায়তা প্রদান এবং চিংড়িসহ অন্যান্য ফসল ও আমসহ মৌসুমি ফলের ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার চাষিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করারও দাবী জানানো হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানানো হয়।
    সভায় করোনা পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরার সরকারী হাসপাতালে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম আরো জোরদার করা এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানানো হয়।
    সভায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলার লাখ লাখ মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারীভাবে যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেশন কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের দাবী জানানো হয়।
    সভায় সাতক্ষীরার উন্নয়নে আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা এবং আম্পান ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
    সভায় উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, আব্দুল বারী, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সুধাংশু শেখর সরকার, মধাব চন্দ্র দত্ত, নিত্যানন্দ সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন, এড. মুনির উদ্দিন, গাজী শাহজাহান সিরাজ, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মরিয়ম মান্নান, কমরেড আবুল হোসেন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, শেখ শরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক তপন কুমার শীল, আসাদুজ্জামান লাভলু, এম জিললুর রহমান, এসএম রফিকুল ইসলাম, আলী নুর খান বাবলু ও আবুল কালাম আজাদ।
    সভায় করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে তায়েমা-আরিফুর রহিম ট্রাস্টের সহায়তায় ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা ও মাস্কসহ খাদ্য সামগ্রি সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করায় ট্রাস্টের সকলকেসহ নাগরিক কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

  • পরিবেশ, নদী দূষণ এবং সামগ্রিক ভাবনা

    পরিবেশ, নদী দূষণ এবং সামগ্রিক ভাবনা

    পরিবেশ সংক্রান্ত ইস্যু সমূহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন ইস্যুসমূহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপজাত ফলশ্রæতি, সুতরাং উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন না করে দূষণরোধ করা সম্ভব নয়।

    উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্যাস (উবগ) নিঃসরনে বাংলাদেশের ভূমিকা নগন্য হওয়া সত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা বাংলাদেশই অধিক ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহের অন্যতম যা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি¯^রূপ। জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টি নিমজ্জন বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে “জলবায়ু উদ্বাস্তুতে (পষরসধঃব ৎবভঁমবব) পরিণত করবে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নদ-নদী সমূহের অস্থিতিশীলতা সমান্তরালভাবে চলে। নদ-নদীর প্রতি এই উপমহাদেশের দেশসমূহ কর্তৃক অনুসৃত “বেড়ীবাঁধ পন্থা” (পড়ৎফড়হ অঢ়ঢ়ৎড়ধপয) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নদ-নদীসমূহের অস্থিতিশীলতার সমস্যাকে আরও তীব্র করছে এবং পলিমাটি ভরনকে বাধাগ্রস্থ করে নিমজ্জনের বিরুদ্ধে এই বর্মটিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

    প্রাকৃতিক সম্পদ বিবেচনায় প্রবাহমান নদীর পানির ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তার পাশাপাশি নদীর অধিকারও ¯^ীকৃত। নদীর অধিকার হচ্ছে পানির পরিবেশগত প্রবাহ (ঊ-ভষড়)ি অক্ষুন্ন রাখা অর্থাৎ যতটুকু প্রবাহ থাকলে তাকে নদী হিসেবে বিবেচনা করা যায়, আর দূষণমুক্ত রাখা। আবহমানকাল ধরে যে প্রবাহ নিয়ে নিভৃতে জনপদ থেকে জনপদে প্রাণের স্পন্দন সঞ্চার করে যাচ্ছে নদী তারও অধিকার আছে বাধাহীনভাবে সেই প্রবাহকে অটুট রাখবার। কিন্তু দখল-দূষণে নির্দয়ভাবে আমরা মাতৃসম নদীগুলোকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। অনুসন্ধান কিংবা বিশেষজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখলেও নদ-নদীর বিপর্যয়ের কারণ সবার কাছেই স্পষ্ট। কোনরূপ শোধন না করে লম্বা পাইপ বা ড্রেনের মাধ্যমে সোজা নদী কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাশয়ে ফেলে দেওয়া এই বর্জ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকারক রাসায়নিক হেভিমেটাল বহন করছে। যা পুরো ইকোসিস্টেমকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। আধুনিক কৃষি উৎপাদনের নামে অসচেতনভাবে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ক্ষেতে দেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বা সেচের পানির সঙ্গে তাও চলে আসছে নদী বা মুক্ত জলাশয়ে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, বাস ও চাষযোগ্য ভূমির ¯^ল্পতা নদী ও মুক্তজলাশয়ের দখল দূষণ-দুইকেই ত্বরাšি^ত করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুশাসন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবও এই সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে। নদীবক্ষে নদী তীরে বিশালাকার সিমেন্ট ও অন্যান্য ভারি শিল্প এখন হরহামেশাই গড়ে উঠছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নদী দখল-দূষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বাজার ও গৃহস্থালির বর্জ্য এমনকি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যও যাচ্ছে নদীতে। ক্রমাগত এসব আগ্রাসনে সর্বংসহা নদী-নদীগুলো আর কতকাল আত্মরক্ষা করবে তা নিয়ে গবেষক-বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের শেষ নেই। পরিবেশকর্মী হিসেবে আমরাও এই উদ্বেগে শামিল হয়েছি। নদ-নদীর ¯^াভাবিক টিকে থাকার উপর সভ্যতার অস্তিত্ব নির্ভর করে এই ¯^ীকৃত সত্যটি আমরা সবাই বারবার উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই।

    উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে নি¤œলিখিত পন্থাগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে:
    (১) পরিবেশ সংরক্ষণকে দেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করতে হবে এবং সে উদ্দেশ্যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের মধ্যে পরিবেশ বিবেচনাকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং সে উদ্দেশ্যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের মধ্যে পরিবেশ বিবেচনাকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণকে মূল ধারায় পরিণত করতে হবে।
    (২) দূষণের উদ্ভব ঘটে ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগের নেতিবাচক ‘বহিস্থঃ প্রতিফল’ (ঘবমধঃরাব বীঃবৎহধষরঃু) হিসাবে, সুতরাং ব্যক্তি ভোগের পরিবর্তে সামাজিক ভোগে উত্তরনের মাধ্যমে ‘বহিস্থঃ প্রতিফলকে’ অন্তর্গত বা অন্তস্থ করা সম্ভব এবং দূষণও।
    (৩) পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও উপযোগী আইনী কাঠামোর প্রয়োজন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ এলাকার দূষণ ও পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর তালিকা প্রণয়ন করতে হবে, তালিকাভুক্ত সমস্যাগুলোকে দুই (২) ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগে থাকবে সেসব সমস্যা যার নিরসন স্থানীয় উদ্যোগে সম্ভব, আরেক ভাগে থাকবে সেসব সমস্যা যার নিরসনের জন্য জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ প্রয়োজন এবং শেষোক্ত সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসমাজ কি ধরনের জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন মনে করে সেটাও লিপিবদ্ধ করতে হবে।
    (৪) জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুর্নাবসনের জন্য প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা (প্রতিবেশি দেশ সমূহ) নিশ্চিত করতে হবে এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইস্যুতে সর্বাপেক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ দেশ সমূহ এবং এ-৭৭ তে অন্তর্ভূক্ত সর্বাধিক অনুন্নত দেশসমূহের নেতৃত্ব দিতে হবে।
    (৫) শিল্প বর্জ্য দ্বারা ভূপৃষ্ঠস্থ পানির দূষণ রোধের উদ্দেশ্যে জরুরী ভিত্তিতে নদী-তীরবর্তী সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা (ঊঞচ) এর স্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
    (৬) উন্নত দেশ সমূহের বিভিন্ন নগর যেমন হলান্ডের আমস্ট্রারডাম এবং ইতালির ভেনিস খালের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী নদীগুলোর সাথে শহরের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট করেছে ঠিক তেমনি ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশেও অনুসরণ করা যেতে পারে; পাশিপাশি নদ-নদীর প্রতি “উমুক্ত পন্থা” অনুসরণের মাধ্যমে শহরের সাথে পাশ্ববর্তী নদ-নদীর সম্পর্ক বাড়াতে হবে। প্রয়োজনবোধে নতুন খাল খনন করতে হবে।
    (৭) নদী-নালা, খাল বিল ও অন্যান্য জলাভূমিকে সকল প্রকার অবৈধ ও অন্যান্য দখলমুক্ত করার জন্য সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
    (৮) সর্বোপরি তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ এলাকায় পরিবেশ ও নদী রক্ষার লক্ষ্যে সংঘটিত ও সংঘবদ্ধ হতে হবে।
    (৯) কৃষির সূত্রে সংঘটিত ভূপৃষ্ঠস্থ পানির রাসায়নিক দূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে কৃষিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ঔষধের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। এ উদ্দেশ্যে দানাদার পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ, সমšি^ত উদ্ভিদ পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, সমন্ধিত কীট পতংঙ্গ নিরোধ ব্যবস্থাপনা এবং জৈব চাষাবাদ ইত্যাদিকে উৎসাহিত করতে হবে।
    (১০) নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে শুকনো মৌসুমের প্রবাহের উপর নির্ভর না করে বর্ষাকালের পূর্ণ প্রবাহের উপর নির্ভর করতে হবে এবং এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উপাত্ত এবং পং (পধফধংঃৎধষ ংবৎাবৎ) ভূমি জরিপের উপর নির্ভর করতে হবে এবং সঠিকভাবে সীমানা চিহ্নিত করার পর এই সীমাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য উপযোগী কাঠামো নির্মাণ এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই সীমা লংঘন করে নদী দখল করা প্রতিহত করা যায়; তবে সীমা নিশ্চিতকারী কাঠামোকে এমন হতে হবে যাতে তা নদীখাত এবং নদীর প্লাবন ভূমির মধ্যে পানির চলাচলকে কোনভাবে বাধাগ্রস্থ না করে।

    পরিশেষে বলতে পানি কেন্দ্রিক সুষ্ঠুব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকারী কাঠামোসমূহকে জনগণকেন্দ্রিক চিন্তায় আবৃত করা দরকার। তবেই নদী বান্ধব, পরিবেশ বান্ধব বাংলাদেশকে, আমাদের অস্তিত্বকে আমরা ফিরে পাবো।

    (মনোয়ার হোসেন রনি)
    কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও
    ঢাকা বিভাগীয় সমš^য়কারী
    বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলন
    এবং
    আহবায়ক
    তুরাগ বাচাঁও আন্দোলন।
    মোবাইল নং- ০১৭৩৪৫০৪০৩০
    E-mail: ronee_r3@yahoo.com

  • ইটাগাছার শেখ শামসুর রহমান ওরফে সামু মিয়া’র মৃত্যুতে সাপ্তাহিক ইচ্ছেনদী পরিবারের পক্ষ থেকে শোক


    প্রেস-বিজ্ঞপ্তি ঃ সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক ইচ্ছেনদী পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রিয় সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার শেখ শামসুর রহমান ওরফে সামু মিয়া’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সাপ্তাহিক ইচ্ছেনদী পত্রিকার সম্পাদক মকসুমুল হাকিম, নির্বাহী সম্পাদক মো. আবু শোয়েব এবেল, চীফ এডিটর প্রকৌশলী শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু, বার্তা সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম আককাজ, খুলনা ব্যুরো চীফ কাজী আতিক, স্টাফ রিপোর্টার জিয়াউর বিন সেলিম যাদু, স্টাফ রিপোর্টার শেখ মাহফুজুর রহমানসহ সাপ্তাহিক ইচ্ছেনদী পরিবার। শেখ শামসুর রহমান ওরফে সামু মিয়া বার্ধক্যজনিত কারণে ২৯ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্না—রাজিউন) মুত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। কর্মজীবনে তিনি তৎকালীন মহাকুমা বাস-ট্রাক মিনিবাস সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন। সাতক্ষীরা পৌর সভার ইটাগাছা গ্রামের মরহুম রইচ উদ্দীনের পুত্র সামু মিয়া মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৫পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গত শনিবার দুপুর ২টায় পাউবো ময়দানে জানাজা নামাজ শেষে কামালনগর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আগামী শুক্রবার বাদজুম’আ শহরের সিএন্ডবি জামে মসজিদ ও বাঙালের মোড় জামে মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছে মরহুমের বড় পুত্র সাপ্তাহিক ইচ্ছেনদী’র স্টাফ রিপোর্টার ও ঠিকাদার শেখ মনিরুজ্জামান মন্টু।

  • করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ভাড়াটিয়াদের দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে মানবতার পরিচয় দিল তুফান কোম্পানী লিঃ

    করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ভাড়াটিয়াদের দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে মানবতার পরিচয় দিল তুফান কোম্পানী লিঃ


    সাতক্ষীরায় ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান তুফান কোম্পানী লিমিটেড তাদের দোকানের ভাড়াটিয়াদের দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে মানবতার পরিচয় দিলেন প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (০২ জুন) দুপুরে ভাড়াটিয়াদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তুফান কোম্পানী লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. আবুল কালাম বাবলা ঘোষণা দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিম কালাম তমাল। অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে স্ব উদ্যোগী হয়ে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে দোকান ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাকালীন এপ্রিল-২০২০ ও মে- এই দুই মাসের জন্য ২২টি দোকানের ভাড়া মওকুফ করে দিলেন।

  • সাতক্ষীরা জেলার এক হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন এনইউবিটিকে এর উপাচার্য

    সাতক্ষীরা জেলার এক হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন এনইউবিটিকে এর উপাচার্য

    নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনলোজি খুলনার উপাচার্য ও ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে এক্স স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ’র উদ্যোগে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার প্রলয়কারি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
    মঙ্গলবার সকালে তাঁর একটি প্রতিনিধি দল দূর্গত এলাকায় প্রায় এক হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।