তালা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলেক্ষ্যে ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পাখির অভয়াশ্রম কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় পাখিদের অভয়াশ্রম করতে গাছে গাছে মাটির ভাড় টানানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৫ জুন) সকালে উপজেলা প্রসাশনের সহযোগিতায় তালা ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে পাখির অভয়াশ্রম কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মোঃ আব্দুল জব্বার, তালা ব্লাড ব্যাংকের এডমিন প্যানেল সমন্বয়ক অসিম রায়, এডমিন প্যানেল সদস্য সৌমেন মজুমদার, এসএম নাহিদ হাসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন সৈকত, মডারেটর মঈনুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম মাহিন, অমিত বিশ্বাস, জুবায়ের ইসলাম, তালা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবক জয়স্ত শীল মিন্টু, সৌমিক, শামীম, রাজা, তানভীর, নাজমুল, সবুজ, মোঃ আব্দুল্লাহ প্রমুখ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক সবুজ ও আব্দুল্লাহ’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরের বিভিন্ন গাছে ৭১ টি কৃত্রিম পাখির বাসা স্থাপন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, ২০২০ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হল “প্রকৃতির জন্য সময়”। বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ এর তান্ডবে মানুষ যখন বিপর্যস্ত, তারই মধ্যে প্রকৃতি যেমন একের পর এক তার বিমূর্ত রুপ দেখিয়ে চলেছে ঠিক তেমনি প্রকৃতির ওপর চালানো অবিচার কমে আসায় প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরেছে। ফিরেছে স্বমহিমায়। এই বাস্তবতা থেকে নতুন করে শিখতে শুরু করেছে মানুষ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মানুষ যেমন ঘরবাড়ি হারিয়েছে, ঠিক তেমনি ঘরবাড়ি হারিয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখিরাও। তাই পাখিদের অভয়াশ্রম বানানোর উদ্যোগ নেয় তালা ব্লাড ব্যাংক।
এ বিষয়ে এডমিন প্যানেল সদস্য এস এম নাহিদ হাসান বলেন, “উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা এজেলার মানুষসহ সকল প্রাণীকুল প্রতিটা মুহুর্ত নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকছে। সাম্প্রতি হয়ে যাওয়া আম্ফান অনেক গাছপালা ধ্বংস করেছে। এতে পাখি তারা বাসা হারিয়েছে। প্রাণীকুলের এ ছোট প্রাণিটার বাসা করে দেওয়ার এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা উপজেলা চত্বরে ১০০ পাখির বাসা বানাবো। প্রয়োজনে এটা বাড়াবো।
Category: পরিবেশ/প্রতিবেশ
-

তালায় বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পাখির অভয়াশ্রমের উদ্বোধন
-

করোনাকালে শংকিত প্রাণবৈচিত্র্য ও মাতৃভাষা
পাভেল পার্থ
করোনাকালে কত শংকা আর আহাজারি চারদিকে। করোনার নিদান মানুষের সংসার ও চৌহদ্দি চুরমার করে দিচ্ছে। অপরদিকে জাগছে বাস্তুসংস্থানের আরেক মায়াময় চিত্রকলা। করোনাকালে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রশ্নে সজাগ দুনিয়া। জাতিসংঘ পরপর দুটি বৈশ্বিক দিবসের প্রতিপাদ্যেও বিষয়টি ধরবার চেষ্টা করেছে। ২২ মে প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রকৃতির মাঝেই সকল সমাধান’ আর ৫ জুন পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণবৈচিত্র্য উদযাপন’। প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে অধিপতি ব্যবস্থার মনস্তত্ত্ব¡ ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে এই করোনাকালে বহু আলাপ তুলেছি। প্রতিবেশ প্রশ্নে আমাদের প্রবল মানুষকেন্দ্রিক চিন্তা আজ এক জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি। করোনাকালের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যকে নাভিকুন্ডে রেখে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির পরস্পরনির্ভরশীল একটা সম্পর্ককে আজ বুঝতে চাইবো আবার। বোঝার চেষ্টা করবো একটি পাখি বা মানুষ হারিয়ে গেলে কী হয়? হয়তো অনেক কিছুই। খাদ্যশেকলে টান লাগে, বাস্তুতন্ত্রে চির ধরে। কিন্তু মানুষের সংস্কৃতিতে এর রক্তক্ষয়ী দাগ লাগে। যার যন্ত্রণা সইতে হয় মাতৃভাষাকে। প্রকৃতিতে থেকে ‘নানিদ মাছ’ হারিয়ে গেলে মানুষের ভাষিক সংস্কৃতি থেকেও তা হারিয়ে যায়। আবার যে মানুষের মাতৃভাষায় ‘নানিদ’ আছে সেই মানুষ হারিয়ে গেলে তার নানিদময় ভাষাটিও নিখোঁজ হয়। দুনিয়ায় অজ¯্র প্রাণপ্রজাতি যেমন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার রেখায়, তেমনি অনেক মাতৃভাষাও এমনি হারানোর শংকায়। করোনাকালে ‘প্রাণবৈচিত্র্য প্রশ্নটি’ তাই প্রকৃতি ও সংষ্কৃতির এক জটিল সম্পর্ক থেকেই পাঠ হওয়া জরুরি। করোনাকালে দুনিয়া থেকে নিদারুণভাবে হারিয়ে গেছেন লাখো মানুষ। একইসাথে হারিয়ে মালয়েশিয়া থেকে হারিয়ে গেছে সুমাত্রা গন্ডার, হারিয়ে গেছে কত শস্যকণা, পতঙ্গ কী অণুজীব। মানুষসহ প্রাণবৈচিত্র্য নয়, করোনাকালে আমরা হারিয়েছি একটি মাতৃভাষাও। আন্দামান দ্বীপের ‘সারে’ ভাষাটিও হারিয়ে গেছে করোনাকালে, শেষ সারেভাষীর মৃত্যুর ভেতর দিয়ে। করোনার নিদানে তাই প্রাণের বৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের বৈচিত্র্যের প্রান্তিকতাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কে কীভাবে কেন ঝুঁকিপূর্ণ? সরীসৃপ, পাখি, পতঙ্গ, স্তন্যপায়ী থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা ও আদিজ্ঞান চর্চাকারী সকলকেই বিশেষভাবে বোঝাটা জরুরি। বাংলা বাঘ কী শকুন, ইরাবতী ডলফিন কী চামচ ঠুঁটো বাটান পাখি যেমন সংখ্যায় কম এবং বিলুপ্তির আশংকায় তাই এদের সুরক্ষায় আমাদের বিশেষ মনোযোগ থাকে। একইভাবে রাষ্ট্রের যেসব ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা একেবারেই তলানিতে এবং আদি লোকজ্ঞান চর্চাকারী যারা একেবারেই গোণাগুনতির ভেতরেই পড়েন না সেই সংস্কৃতির সুরক্ষাপ্রশ্নেও আমাদের বিশেষ কারিগরি ও মনোযোগ জরুরি। শেরপুরের মারগ্যান কোচভাষী পরিবার মাত্র ২৮, বান্দরবানের রেংমিটচাভাষী মাত্র ৩০ জন কিংবা দিনাজপুরের কড়াভাষী ৯৮ পরিবার। করোনাকালে ভাষিক সুরক্ষার প্রশ্নে অন্য অনেকের চেয়ে এই মানুষদের সংকট অনেক জটিল এবং এই মাতৃভাষাগুলিও বিপদাপন্ন। করোনাকালে আন্দামান-নিকোবর, আমাজন অরণ্য কী পাপুয়া দ্বীপপুঞ্জসহ দুনিয়াময় বিপদাপন্ন ভাষিক জনগোষ্ঠীর তরে বিশেষ সুরক্ষা মনোযোগ তৈরির দাবি ওঠছে। বাংলাদেশসহ দুনিয়াময় এই মনোযোগের একটা বৈশ্বিক কাঠামো জোরালো হওয়া জরুরি। আর করোনাকালের পরিবেশ দিবসে এটিই প্রাণবৈচিত্র্য উদযাপনের এক বিশেষ বার্তা। মানুষকেন্দ্রিক প্রবল বাহাদুরির বাইরে গিয়ে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল ব্যাকরণ থেকেই আজ আমাদের প্রাণের বৈচিত্র্যকে বুঝতে হবে।
প্রাণ, প্রকৃতি ও মাতৃভাষা
অভিন্ন যমজেরা যেমন হয়। একজন চোট পেলে আরেকজন কঁকিয়ে ওঠে। কারো বুকে ব্যথা হলে আরেকজন তড়পায়। ভাষা ও প্রাণবৈচিত্র্যও তেমনি অভিন্ন যমজ। একজন আরেকজনের লগে জড়াজড়ি করে, পালককুসুম মেলে বিকশিত করে যোগাযোগের ময়দান। ভাষা তাই কোনোভাবেই একপাক্ষিক, একসূত্রীয় কোনো মাধ্যম নয়। বনপাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে উজান থেকে ভাটিতে সংসার সাজায় নদী। নদীসংসারের চারধার জুড়ে অববাহিকা থেকে অববাহিকায় সেই নদী ঘিরে নি¤œবর্গের জীবনে তৈরি হয় নদীভাষার এক অবিস্মরণীয় ব্যাকরণ। লুটতরাজ রাষ্ট্র কী উন্নয়নের বাণিজ্যদম্ভ যখন সেই নদীকে ফালি ফালি করে হত্যা করে, গুম করে, দখল করে তখন কিন্তু নদীঅববাহিকার নদীভাষা বদলে যেতে বাধ্য হয়। নদী অববাহিকার আপন ভাষা তখন আর যোগাযোগের আপন ‘ঠাহর’ হিসেবে বিরাজিত থাকে না। মেঘকণা, রোদ্দুর, পাথর, অবিরাম জলরাশি, হাজারো ধানের জাত, পাখি, পতঙ্গ, বাঘ কি কুমির, সাপ ও সরীসৃপ, বৃক্ষগুল্মলতা, মাটি, কেঁচো, মানুষ, ব্যাঙের ছাতা কি উঁইঢিবি প্রাণের এমনতর শতকোটি বিন্যাসই তৈরি করেছে মানুষের ভাষাপরিসর। প্রাণবৈচিত্র্যের একটি প্রাণের বিলুপ্তি মানে ভাষা থেকে তার সকল আমেজ ও অস্তিত্ব¡ মুছে যাওয়া। আমন মওসুমের এক ছোট্ট আকারের ধান পিঁপড়ারচোখ। ধানের খোসায় পিঁপড়ার চোখের মতো কালো বিন্দু আছে বলেই এই ধানের এমন নাম। ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চল এ ধানের আদিবসত। পিঁপড়ারচোখ ধানটি হারিয়ে গেছে। অধিকাংশ সময়ই এসব ঘটনাকে কেবলমাত্র প্রাণবৈচিত্র্যের বিলুপ্তি, পরিবেশ বিপর্যয়, উৎপাদন জটিলতা, কৃষি ঐতিহ্য এসব দিয়েই ব্যাখা করা হয়। কিন্তু একটি ধান হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোনো ভাষায় ওই ধানসম্পর্কিত রূপকল্প ও শব্দবিন্যাসের যে পরিবর্তন ঘটে আমরা ‘ভাষা পরিসর কী প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার’ আলাপে কখনোই তা দেখতে পাই না। এখন পিঁপড়ারচোখ বলতে ধান নয়, কেবলমাত্র পিঁপড়া নামক এক ক্ষুদে পতঙ্গের চোখকেই আন্দাজ করতে হবে।একটি পাখি হারিয়ে গেলে কি হয়?
এই যে করোনাকালে সুমাত্রা গন্ডার হারিয়ে গেলো দুনিয়া থেকে তাতে কী এমন হলো? কিংবা আমাজন কী অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে হারালো কত জানা-অজানা প্রজাতি তাতে কী হবে? হচ্ছে তো বটেই হবে আরো হয়তো অকে কিছুই। দুনিয়ার বাস্তুশেকলে চির লাগবে। প্রকৃতিতে বেসামাল বিশৃংখলা তৈরি হবে। ঠিক যেমন করোনার নিদান। একটি ভাইরাস বাদুড় কী বনরুইয়ের সাথে মিলেমিশে ছিল। হয়তো কোনো সমাজ লোকজ্ঞানে সেসব ব্যবহারও করতো। কিন্তু মানুষ যখনি বাণিজ্য শুরু করলো, মুনাফার বাহাদুরি করলো তখনি এই ভাইরাস মানুষের জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠলো। কোনো এলাকা থেকে একটি পাখি হারিয়ে গেলে ওই এলাকার মানুষের ভাষা থেকেও ওই পাখিটি হারিয়ে যায়। ওই পাখি সম্পর্কিত সকল বিশ্বাস-আচার-রীতি হারিয়ে যায়। আমরা বনরুইয়ের কথা টেনেছিলাম। একটাসময় দেশের বর্ষারণ্য, শালবনসহ গ্রামীণ অরণ্যে বনরুই নামে এক প্রাণি ছিল। প্রাণিটির নিদারুণ বিলুপ্তি দেশের অধিকাংশ জাতির ভাষা থেকে এই শব্দ ও বনরুইকেন্দ্রিক ধারণাসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে। মান্দিদের আ.চিক ভাষায় বনরুই মানে কাওয়াথি এবং কোচ ভাষায় কাওতাই। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মান্দি ও কোচ শিশুদের মাতৃভাষা থেকে শব্দদ্বয় নিদারুণভাবে হারিয়ে গেছে। আজকের কোচ শিশুরা বুঝবেই না ‘ওলামাখরাই’ কী? কারণ লজ্জাবতী এই বানরটি প্রায় দুই দশক আগে শালবন থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।করোনা-উত্তর দুনিয়ায় ভাষা ও প্রকৃতি
দেশের মঙ্গোলয়েড মহাজাতির অংশ খাসি, মান্দি, ¤্রাে ও মারমা ভাষায় এক বহুল ব্যবহৃত শব্দ ‘চি’। খাসি ভাষায় এর মানে ভাত, মান্দি ভাষায় জল, ¤্রাে ভাষায় গাছ আর মারমা ভাষায় এর মানে ঔষধ। একই শব্দ, একই উচ্চারণ ব্যঞ্জনা নানান জাতির নানান ভাষায় নানান অর্থ নিয়ে দাঁড়ায়। এটিই ভাষার রূপ, আর ভাষার এই রূপশরীর গড়ে তুলেছে চারধারের প্রাণের অবারিত রূপঐশ্বর্য। ইংরেজিসহ ভাষিক বাহাদুরি প্রতিদিন নি¤œবর্গের ভাষাসমূহকে গলাটিপে হত্যা করছে। প্রতি দু’সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। গত ১০০ বছরে প্রায় ৪০০০ ভাষা হারিয়ে গেছে। এই করোনাকালে দুনিয়া থেকে কত যে মাতৃভাষা হারাবে কে জানে? কত প্রান্তিক ভাষিক জনগোষ্ঠী সংকটে পড়বে কত রকেমর কে তার খোঁজ রাখবে? কিংবা করোনা-উত্তর দুনিয়া যদি আরো মুনাফার জন্য উন্মত্ত হয়, আরো কারখানা চাঙ্গা করে, আরো কার্বন ছড়িয়ে দেয়, আরো জংগল ও জলাভূমি দখল করে তবে প্রাণবৈচিত্র্য আরো হুমকীর সম্মুখীন হবে। প্রাণ-প্রকৃতির সেই বিনাশও বিপদাপন্ন ভাষাসমূহের টিকে থাকাকে আরো জটিল প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে। তার মানে করোনা-উত্তর সময়ে প্রাণবৈচিত্র্যের সুরক্ষা কৌশলকে আমাদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির চলমান প্রান্তিকতার ময়দান থেকেই পাঠ করতে হবে এবং বৈশ্বিক অবস্থান জোরালো করতে হবে।লীচোর চলে যাওয়া ও বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রশ্ন
বলা হয়ে থাকে চর্চাকারীর সংখ্যার উপরে কোনো ভাষা টিকে থাকার শর্ত জড়িত। ৫০০০ চর্চাকারী থাকলেও সেই ভাষা টিকবে কিনা তা নিয়ে শংকা থাকে। ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপের গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের সারে ভাষার শেষ চর্চাকারী ছিলেন রাজা জিরোকের কন্যা লীচো। করোনাকালে ৪ এপ্রিল তিনি মারা যান। মৃত্যু ঘটে একটি জীবন্ত মাতৃভাষার। লীচো ও সারে ভাষার মৃত্যু আমাদের করোনাকালে আবারো এক বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রান্তিকতাকে আমরা কীভাবে দেখবো? কীভাবে বুঝবো? কেমন উন্নয়ননীতি বহাল রাখবো? কেন বাঘ কী শকুন বা সারে ভাষা কী কোনো আদিবাসী জীবন একই নয়াউদারবাদী ব্যবস্থার ভেতর থেকেও প্রান্তিক হয়ে থাকে? মুষড়ে পড়ে, মুর্মূষু হয়ে ওঠে? দেশ থেকে দুনিয়া এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর ওপরই নির্ভর করছে এই মাতৃদুনিয়ায় সকলের বিকশিত হওয়ার ধারাপাত।
…………………………………………….
গবেষক ও লেখক। ধহরসরংঃনধহমষধ@মসধরষ.পড়স -

আসছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, সাতক্ষীরা, খুলনা দিয়ে ঢুকতে পারে দেশে
সাতক্ষীরার খবর ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে আভাস দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
থাইল্যান্ড ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে আমফান। আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবারে এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, গত বছরের নভেম্বরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের ওপরও আছড়ে পড়তে পারে নতুন এই ঘূর্ণিঝড়।
এ ব্যাপারে শনিবার রাত ৮টায় আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৮০ শতাংশ। বর্তমানে নিম্নচাপটির যে গতিমুখ রয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পথ নির্দেশ করছে। তবে গতিপথ যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। আর যে গতিতে এগোচ্ছে সেই গতি ধরে রাখলে ১৯ কিংবা ২০ মের দিকে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
গত বছরের ১০ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে আগানোর পরও বাঁক বদল করে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। ৮১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঝড়ের প্রভাবে প্রচণ্ড বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশ উপকূলের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনা, বাগেরহাট ও পটুয়াখালীতে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়, গাছাপালা উপড়ে পড়ে এবং কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রবিবার নাগাদ ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। মঙ্গলবার নাগাদ এর গতি ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে স্থলভাগের দিকে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এর গতি কমতে থাকবে।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, শনিবার দুপুরে ওই গভীর নিম্নচাপটি উড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে এক হাজার ৬০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সমুদ্র উপকূল থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, আমফানের প্রভাবে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে গাঙ্গেয় উপকূলের সব এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে এটি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড়টি কোনদিকে বাঁক নেয় তার ওপর।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উড়িষ্যার পারাদ্বীপের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশ দিয়ে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আমফানের গতিপ্রকৃতিও সেই রকম বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা মনে করলেও এটি বুলবুলের পথ অনুসরণ করবে কিনা তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
-

করোনাকাল, লোকজ্ঞান ও প্রকৃতির বিজ্ঞান
পাভেল পার্থ
করোনাকালে আবারো স্পষ্ট হয়ে ওঠছে লোকজ্ঞান ও প্রকৃতির শক্তি। কিন্তু অধিপতি পাটাতনে এই জ্ঞানভাষ্য অস্বীকৃতই থেকে যাচ্ছে। কারণ কী? লোকায়ত জ্ঞানের সাথে বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির ঐতিহাসিক বিরোধ? নাকি এখনো বড় হয়ে থাকছে নির্দয় শ্রেণিপ্রশ্ন? ঐতিহাসিকভাবেই অসুখ ও মহামারী সামালে গ্রাম-বাংলায় গড়ে ওঠেছে নানা লোকভাষ্য, বিজ্ঞান ও সুরক্ষাবিধি। কলেরা থেকে কালাজ্বর কী বসন্তের সেইসব কাল সামাল দিতে লড়েছিল গণমানুষের বিজ্ঞানশক্তি। অথচ এই করোনারকালে আমরা সেইসব লোকায়ত প্রচেষ্টাগুলোকে একত্র করতে পারিনি। সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন বা ঘরবন্দি এবং লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা। করোনা মোকাবেলায় এখনো এই তিনটি বিষয়ই বৈশ্বিকভাবে মানছে সবাই। মহামারী বা কঠিন অসুখ মোকাবেলায় এই পদ্ধতিগুলোই তো ঐতিহাসিকভাবে লোকায়ত জ্ঞানের উদ্ভাবন। এককভাবে কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নয়, এসবের চল শুরু হয়েছিল সামষ্টিকভাবে মানুষের লোকায়ত জীবনের যৌথতায়। এখনো এর টাটকা প্রমাণ বয়ে চলেছে অনেক সমাজ।
মহামারী মোকাবেলার লোকবিজ্ঞান
এই যে বলা হচ্ছে মানুষ লকডাউন মানছে না, সঙ্গনিরোধ করছে না। কিন্তু কারা মানছে না একবার কী তলিয়ে দেখা যায়? দেশের গরিষ্ঠভাগ আদিবাসীরাই কিন্তু মানছে এই লকডাউন ও সঙ্গনিরোধ। এইসব শব্দ অনেক গ্রাম কী পাড়ায় পৌঁছানোর আগে থেকেই নিজেরা এই সুরক্ষাবিধি তৈরি করেছে নিজেদের মত করেই। ব্যক্তি নয়, মহামারী মোকাবেলাকে লোকায়ত জ্ঞানে সামষ্টিক কাজ হিসেবে দেখা হয়। আর লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যার প্রধান সূত্র। চাকমা তালিক, মারমা বৈদ্য, মান্দি খামাল কি মণিপুরী মেইবাদের চিকিৎসাবিদ্যা কী গ্রামীণ কবিরাজি সবই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেয়। অসুস্থ ও আক্রান্তের ইতিহাস, তার পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজে নানামুখী সম্পর্ক এসব জানতে চায়। আর এই লোকায়ত চিকিৎসায় গুরুত্ব পায় প্রাকৃতিক জিনসম্পদ। একতরফাভাবে ‘ভেষজ বা টোটকা চিকিৎসা’ নামে এই লোকায়তবিজ্ঞানকে দাবিয়ে রাখলেও সহ¯্র বছর ধরে এই বিজ্ঞানই দুনিয়াকে দিয়ে চলেছে বেঁচে থাকবার সব অবিস্মরণীয় পথ্য ও জোগান। এই করোনাকালেও অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানী, চিকিৎসক কী গণমাধ্যম পরামর্শ দিচ্ছে গরম পানি, ভিটামিন সি, আদা, রসুন, কাঁচা হলুদ, নিম, কালোজিরা, আমিষ, গোলমরিচ, লবঙ্গে গ্রহণের মতো নানা লোকবিধির। এইসব কার আবিষ্কার? কার উদ্ভাবন? করোনার মতো লক্ষণে এইসব পথ্য ও সুরক্ষাবিধি তো লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যার নিজস্ব ফসল। তার মানে এই দাঁড়ায় শ্রেণিপ্রশ্নে নি¤œবর্গের হলেও লোকায়ত জ্ঞান অভিজ্ঞতাই এই করোনাকালে বিশ্বের লাখো মানুষের সহায় হচ্ছে। কিন্তুসংকট সামালে নি¤œবর্গের এই জ্ঞানভাষ্য ও বিধির অবিস্মরণীয় অবদানকে আমরা তো এখনো মর্যাদা দিতে শিখিনি। অনৈতিহাসিক করে রাখি এর ভূমিকা।লোকায়ত লকডাউন
আদিবাসীরা কেন নিজেদের মতো লকডাউন চালু করতে পেরেছে? নতুন অসুখ আর মহামারী থেকে বাঁচতে আদিবাসী সংস্কৃতিতে হাজার বছর ধরেই লকডাউন, আইসোলেশন, সঙ্গনিরোধের চল আছে বলেই এটি এসব সমাজে এতোটা সহজ হচ্ছে। বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় ¤্রােদের ভেতর অসুখ ও মহামারী থেকে বাঁচার জন্য গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার যে কৃত্য পালিত হতো একসময় তার নাম আং ডুব। আশেপাশে কোথায় মহামারীর বিস্তার হলে গ্রামের লোকেরা একত্র হয়ে কিছুদিন গ্রামেক বিচ্ছিন্ন রাখার প্রস্তুতি নিতেন। জংগলের ঝিরি-ছড়া থেকে ভোর বেলা ¯œান সেরে তুলে আনা হতো ছোট ছোট পাথর। এইসব পাথরে মহামারী তাড়ানোর মন্ত্র লেখা হতো সুইয়ের আঁচড়ে। গ্রামের সবাই কাপাস তুলোর সূতা দিয়ে গ্রামের চারধারে বাঁধন দিতেন। গ্রামের সকল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হতো। প্রতিটি প্রবেশপথে মাটির তলায় গুঁজে রাখা হতো মন্ত্রপুত পাথর। চলতি করোনাকালেও ¤্রােরা আংডুব কৃত্যের মাধ্যমে পূুয়াভং বা গ্রাম লকডাউন করেছেন। রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাংখোয়া আদিবাসীরাও একসময় বড়ধরণের অসুখ ও মহামারী সামাল দিতে নানা কৃত্য পালন করতো একসময়। ঝিরি থেকে ছোট পাথর সংগ্রহ করা হয় এবং এই পাথরে মহামারীর বিরুদ্ধে মন্ত্র আঁকা হয়। পাংখোয়া ভাষায় এই কৃত্যকে ‘লুংতেরঙেট ইন তোয়ালে রিত’ বলে। এরপর শুরু হয় গ্রামবন্ধের কাজ। পাংখোয়া ভাষায় একে খোয়া খার বলে। খোয়াখারের সময় ঘরে বহিরাগত কেউ গ্রামে ঢুকতে পারে না, গ্রাম থেকে কেউ বাইরেও যেতে পারে না। এমনকি গ্রামের ভেতরেও যারা থাকে তাদেরও ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘরের সামনে জ্বালানো আগুনে হাত-পা সেঁকে ঘরে ঢুকতে হয়। পাংখোয়া ভাষায় এই রীতিকে বলে ‘মেই রাকান’। লকডাউনের মান্দি কৃত্যের নাম দেনমারাংআ, লেঙাম ভাষায় খাং চোনং, চাকমারা বলে আদাম বন গারানা, খাসিরা বলে খাং খারদেপ সোনং, কোচ-বর্মণদের ভেতর গেরামপূজার মাধ্যমে ও ত্রিপুরাদের ভেতর কের পূজার মাধ্যমে গ্রাম লকডাউন করা হয়। কেবল আদিবাসী সমাজ নয়, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র কি সংহিতাতে মহামারী নির্মূলে লকডাউন ও সঙ্গনিরোধের কথা উল্লেখ আছে। তার মানে কোনো রোগ বিস্তার ও সংক্রমণ রোধে এই লকডাউন ‘বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা’ প্রদত্ত কোনো নতুন ধারণা নয়। এটি জনসমাজে প্রচলিত মহামারী সামালের এক লোকায়ত কায়দা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা যার নাম দিয়েছি ‘লকডাউন’।চেনা পথ্য, জানাশোনা চিকিৎসক
কেবল বহুজাতিক ভ্যাকসিন কী করোনা সামাল দিতে পারে? সমাজের খাদ্যাভাস, স্বাস্থ্যবিধি, জীবনযাপনের ধরণ এবং এমনকি মানুষের জিনগতবৈচিত্র্যও এখানে প্রভাব রাখে। মঙ্গোলিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, তাইওয়ান, মিয়ানমার কিন্তু বেশ যুতসইভাবেই সামাল দিচ্ছে এই সংকট। উত্তর-পূর্ব ভারতেও এর ব্যাপক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি। ঠিক যেমন এখনো বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সংক্রমণ কম। কিংবা শ্রীলংকা কিভাবে সামাল দিচ্ছে এই করোনাকাল? উল্লিখিত দেশগুলোর খাদ্যসংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যবিধির অনেকখানিই এখনো প্রকৃতিনির্ভর এবং ভেষজপন্থী। মানুষের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা তৈরিতে এই প্রকৃতিবিজ্ঞানের নিশ্চিত ভূমিকা আছে। লোকায়ত স্বাস্থ্যবিধির মূলে আছে পথ্যের সাথে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। কিন্তু আজকের চিকিৎসাদুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানির শিশি বোতল কী প্যাকেটে কী থাকে আমরা ক’জন তার খোঁজ রাখি? এমনকি গ্রামীণ সমাজের এক একজন অভিজ্ঞ লোকায়ত চিকিৎসক চারধারের মানুষের বেড়ে ওঠার সাথে জড়িত। রোগ নির্ণয় ও লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসায় তাই রোগীর ইতিহাস ও নির্ঘন্ট নানাভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তৈরি হয়। কিছু অভিজ্ঞ আদিবাসী লোকায়ত চিকিৎসকের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, করোনার লক্ষণের মতো রোগের পথ্য ও বিধি কিছুটা তাদের জানা। মহামারীর মতো এক নির্দয় পরিস্থিতি সামালে আজকে এমন লোকায়ত চিকিৎসাবিদ্যাকেও সামগ্রিক কৌশলে যুক্ত করা জরুরি। এমনকি আর্য়ুবেদ, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও গ্রামীণ কবিরাজিওকে। হয়তো করোনা মোকাবেলার এভাবেই রাষ্ট্রীয় বহুত্ববাদী চিকিৎসার রূপ তৈরি হতে পারে।অসুখের দর্শন
আদিবাসীসহ গ্রামীণ নি¤œবর্গ মনে করে মানুষের অসুখ হলো প্রকৃতির কোনো যন্ত্রণার নির্দেশনা। বৃক্ষের বর্ষবলয়ে যেমন খরা কী প্লাবণের দাগ থাকে, মানুষের শরীর কী স্মৃতিতেও অসুখের দাগ রয়ে যায়। অসুখ ও মহামারী সম্পর্কিত লোকায়ত কৃত্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসব কৃত্যে উচ্চারিত প্রার্থনায় কেবল মানুষ নয় চারধারের প্রাণের সুস্থতার প্রার্থনা জানানো হয়। বাঁশের মড়ক যেমন ইঁদুর-বন্যা কী শকুনের অনুপস্থিতি যেমন গরুর অ্যানথ্রাক্স। নির্দয়ভাবে কাটা হলে গাছ, সমূলে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য বিস্তার ঘটলে একসময় মানুষও রেহাই পাবে না। আদিবাসীরা অনেক আগে থেকেই এই হুঁশিয়ারি দুনিয়াকে জানিয়ে আসছিলো। নয়াউদারবাদী দুনিয়া কথা শোনেনি। কেবল করোনা নয়, প্রমাণিত হয়েছে গরিষ্ঠভাগ মহামারীর পেছনে আছে বন্যপ্রাণীর দশাসই বাজার। করোনাকালে আমাদের অসুখের দর্শনটা বদলানো দরকার। প্রকৃতির শরীরেই মানুষের অসুখের চিহ্ন আছে। সেই লক্ষণ বোঝার মতো দক্ষতা ও সাহস তৈরি হোক প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিদ্যায়।ভোগ নয়, সুরক্ষাই জীবনের নীতি
করোনাকালে দিনাজপুরের সাঁওতাল সমাজ বাহা পরবে পবিত্র জাহেরথানে সম্মিলিত প্রার্থনা করে শালফুল গ্রহণ করেছে। প্রকৃতির কোনো স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ কী রঙ নি¤œবর্গের সমাজে গ্রহণের আগে নতজানু হতে হয়। প্রার্থনা করতে হয়। আর এভাবেই তৈরি হয়েছে সকল লোকায়ত কৃত্য। কোন মাসে, কোন ঋতুতে কি কি বিধিনিষেধ তা এখন কয়জন জানে? আর মানেইবা কতজন? নয়াউদারবাদী জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন সারাবছর বাজারমুখী শস্যফসল মেলে। কোনোকিছু দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোন ঋতু। লোকায়ত জীবনের বীক্ষা ভোগ নয়, সুরক্ষা। প্রাণ ও প্রকৃতির ভেতর সম্পর্ককে বোঝার জন্য একটা জীবনের সাথে আরেকটা জীবনের যোগাযোগ। লোকায়ত জ্ঞান আর প্রকৃতির বিজ্ঞানের এই সুরক্ষানীতিই আজ আমাদের করোনার নিদান থেকে আবারো তরতাজা করে তুলতে পারে। যদি আমরা ভোগকে বাতিল করে নতজানু হই সুরক্ষামিছিলে।গবেষক ও লেখক। ই-মেইল: ধহরসরংঃনধহমষধ@মসধরষ.পড়স
-
বিশ্ব পানি দিবস : জলবায়ু পরিষদ এর দাবী
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে বিশ্বজুড়ে পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে ২.১ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি সেবা থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় ‘পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন’ প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস। দিবসটির লক্ষ্য একবিংশ শতাব্দীতে পানি সংকট মোকাবেলায় প্রকৃতির সমন্বয়ে কিভাবে পানি ব্যবহারের উপযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় তা খুঁজে বের করা এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানে জনসচেতনতা বাড়ানো।
এ বছরের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন’, যার অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি হলো লবনাক্ততা, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবলতা বেড়ে যাওয়া, হিমবাহ দ্রুত গলতে থাকা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে উপকূলীয় এলাকার নিরাপদ পানির উৎসগুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
গ্রীণহাউজ গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পানির অপব্যয় বেশি হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনভাবে পানি দূষণের বিবিধ কারণসমুহ গুরুতর হচ্ছে। কিন্তু এলাকা ভেধে এক এক এলাকার নিরাপদ পানির সমস্যা এক এক রকম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে স্থানীয় জনগনের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য এলাকার প্রয়োজন ও বাস্তবতার নিরিক্ষে পরিকল্পনা করা উচিৎ।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের ১.২ বিলিয়ন মানুষ। ১.৮ বিলিয়ন মানুষ ভূমিক্ষয় ও মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত এবং কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ বনভূমি ক্ষয়িষ্ণু পর্যায়ে রয়েছে। মানুষের পরিবেশবিরোধী কর্মকা-ের ফলে উনিশশ’ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে মোট জলাভূমির ৬৪ থেকে ৭১ শতাংশই হারিয়ে গেছে। কৃষি ভূমির মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৪০ বিলিয়ন টন টপসয়েল বিলীন হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে, অপরদিকে ভূ-উপরিস্থে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস থাকায় তা পানি দূষণে ভূমিকা রাখছে।
নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে। এছাড়া, প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের ফলে ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকট ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে।
নদীভাঙন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ভাঙন, বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি, সম্পদ হারিয়ে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ভাঙন ও চিংড়ি চাষের কারণে উপকুলীয় এলাকায় পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে উপকুলের ৯৫ শতাংশ মানুষ। নারীদের পানি সংগ্রহের জন্য ৪-৫ কিমি পাড়ি দিতে হয়। ২০ শতাংশ নারী লবণাক্ততার কারণে অকাল গর্ভপাতের শিকার হন; ৩ শতাংশ শিশু মারা যায়। পানি সংকটের কারণে পানিবাহিত সংক্রামক রোগ ডায়ারিয়া, কলেরার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে পানি সংকটজনিত অধিকাংশ সমস্যা দূর করা সম্ভব। নদীমাতৃক এই দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওরসহ এর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি সরবরাহ জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এবং দূর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খরা, বন্যা ও সুনামির মতো চরম বিপর্যয়ের প্রভাব হ্রাসে বনভূমি, জলাভূমি ও ম্যানগ্রোভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নদ-নদী, বনভূমি, জলাভূমি, পাহাড় প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে ‘স্থানীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করে পানি সংকটসহ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
পানি দিবসে জলবায়ু পরিষদের দাবিসমূহঃ
ক্স অবিলম্বে ‘স্থানীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়ণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবার জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং নারী ও শিশুদের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
ক্স উপক’লীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন রোধ করে সুষ্ঠ ও নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং ঝুকিমুক্ত বেড়িবাঁধের প্রয়োজনে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। -

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা বাড়ছে
সাতক্ষীরায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হলেও শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা যতই বাড়ছে শীতের তীব্রতা ততই বাড়ছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। বেলা ১১ টার দিকে হালকা কুয়াশার সাথে সূর্য়ের দেখা মিললে কমছেনা ঠান্ডা।
এদিকে, ঠান্ডাজনিত কারনে শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর-সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ বেশি বেড়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, আজ শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস।সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, শীতের তীব্রতায় ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তাই শিশুদের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঠান্ডা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
-

ঘনবসতী এলাকায় ইটভাটা নির্মান ॥ কয়লার পরিবর্তে কাঠ ॥ ধোয়া ও ধুলায় পরিবেশ নষ্ট কুল্যায় ইট ভাটার মাটি বহনকারী গাড়ীতে নষ্ট হচ্ছে সরকারী রাস্তা
আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনি উপজেলার কুল্যায় ইট ভাটার মাটি বহনকারী গাড়ীর চাকায় নষ্ট হচ্ছে সরকারী এলজিইডি রাস্তা। ইট ভাটার স্বার্থে মাটি বহন করায় একটি দিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে সরকারী রাস্তা, তেমনি অন্যদিকে চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চলাচলরত সাধারণ পথচারীদের। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কুল্যা-গুনাকরকাটি ব্রীজ মোড় থেকে কুল্যা রাজবংসী পাড়া পর্যন্ত সরকারী এলজিইডি ইটের সোলিং রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, কুল্যার কুলতিয়া মোড়স্থ এইচ বি এফ ইট ভাটা কর্তৃপক্ষ বেতনা নদীর চর থেকে মাটি কেটে অবৈধ যান ট্রাকটারের মাধ্যমে উক্ত বেতনা নদীর ওয়াপদা রাস্তার উপর দিয়ে অতিরিক্ত মাটি লোড নিয়ে যাতায়াত করায় সরকারী এলজিইডি ইটের সোলিং রাস্তাটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ওয়াপদা সড়কটি দিয়ে কুল্যা রাজবংসী পাড়া, কুল্যা, পশ্চিম পাড়ার সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা চলাচলসহ স্থানীয় আমতখালী বিলের কৃষি কাজে ব্যবহৃত ছোট যান চলাচল করে থাকে। বেতনা নদীর ওয়াপদা রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত মাটি লোড নিয়ে অবৈধ যান ট্রাকটার চলাচল করায় পথচারী ও স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া উক্ত এইচ বি এফ ইট ভাটার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ। ভাটা পাশ্ববর্তী বসবাসকাটি কয়েক জন ব্যক্তি জানান, ঘনবসতী এলাকায় ইট ভাটা নির্মান করায় এবং ঝিঁকঝাঁক হাওয়ায় ভাটা না থাকার কারণে কয়লার পরিবর্তে কাঁচা কাঠ পোড়ানোর ফলে ও ইট ভাটার রঙ্গিন ধুলার কারণে কোমলমতি ছেলে মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। কয়েকজন কৃষক জানান, ইট ভাটা কর্তৃপক্ষ কৃষকদের মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখিয়ে ধান চাষে বাঁধা গ্রস্থ করছে ফলে ক্রমস কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। এমতাবস্থায় সরকারী এলজিইডি সড়ক নষ্ট, পরিবেশ নষ্ট, ফসলী জমি নষ্টকারী ইট ভাটার বিরুদ্ধে অতিদ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসক এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
-
বিনেরপোতার ‘অবৈধ ইটভাটা’ খোদেজা ব্রিকস গুড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজাহার আলী শহরতলীর বিনেরপোতায় খোদেজা ব্রিকসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
এসময় খোদেজা ব্রিকস এর লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ইট ভাটাটি অবৈধ ঘোষণা পূর্বক সকল কার্যক্রম বন্ধ করে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজাহার আলী জানান, সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোস্তফা কামালের নির্দেশে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করা হয়। খোদেজা ব্রিকস এর লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তা বন্ধ ঘোষণা করে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জনস্বার্থে জেলার সকল অবৈধ ইটভাটায় এই অভিযান পরিচালিত হবে।
-

জি২০-এর সবচেয়ে বেশি কয়লানির্ভর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কয়লার ব্যবহার কমানোর অঙ্গীকার করে আসছে বিশ্বের অন্যতম জোট জি২০। কিন্তু জোটটির দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্বালানি খাত সবচেয়ে বেশি কয়লানির্ভর। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ফিনটোয়েন্টিফোরডটকম।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাথাপিছু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণও জি২০ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ বলে ব্রাউন টু গ্রিন রিপোর্টে দেখা গেছে। বর্তমানে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লাচালিত কেন্দ্র থেকে আসে।
জি২০-এর জলবায়ু কার্যক্রমের বার্ষিক পর্যলোচনা ও জলবায়ু নীতিমালা, অর্থায়ন ও দুর্বলতাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিভিন্ন সূচক নিয়ে ব্রাউন টু গ্রিন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, জি২০ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস থেকে প্রাপ্তির চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত রাখায় বেশি ব্যয় করছে। প্রতিবেদনের লেখকরা জানান, কেবল দুটি জি২০ অর্থনীতি—কানাডা ও ফ্রান্স জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকিতে ব্যয়ের তুলনায় কার্বন প্রাইসিং স্কিমগুলো থেকে বেশি আয় করছে। এর মানে হলো, জি২০ দেশগুলো এখনো প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থিক প্রবাহ তৈরি করতে পারেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ইউনিভার্সিটি অব কেপটাউনের এনার্জি সিস্টেমস রিসার্চ গ্রুপের গবেষক ব্রাইস ম্যাককল বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় শিল্পের কার্বন নিঃসরণ ‘ভীতিকর’ স্তরে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের শিল্প নিঃসরণের মাত্রা জি২০ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চে রয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সে তুলনায় এ চিত্র খুবই দুঃখজনক।
ফরাসি দূতাবাসের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে আরো অংশগ্রহণ করেছিল পরিবেশবাদী সংস্থা ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি ও আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক আইএমএসিএলআইএম।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি দক্ষিণ আফ্রিকা। চুক্তিটিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
-
নীল নদে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে আফ্রিকার বৃহত্তম ড্যাম
নীল নদে বৃহত্তম ড্যাম নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া। আফ্রিকার দ্রুত সমৃদ্ধিশালী দেশটির ড্যামটি এ নদের জলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। বিশেষত এ ড্যামের ফলে মিসর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপি।
মিসর ছাড়া সুদানও এ ড্যামের ফলে সংকটে পড়বে বলে অভিযোগ জানিয়েছে দেশটি। এ ড্যাম কী কী রকমের সংকট তৈরি করতে পারে তা নিয়ে কায়রোয় গত সোমবার দুদিনের আলোচনায় বসেছে সুদানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলো।
৬ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার (৪ হাজার ১৬০ মাইল) দৈর্ঘ্য নিয়ে নীল বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম নদ। ওই অঞ্চলের শুষ্ক দেশগুলোর জলের প্রধান উৎস এ নদ। চাষাবাদ ছাড়া জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রতিবেশী দেশগুলো এ নদের ওপর বড় রকমভাবে নির্ভরশীল।
এ নদের নিষ্কাশন অববাহিকা ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার (১১ লাখ ৬০ বর্গমাইল)। ওই অঞ্চলের বুরুন্ডি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তানজানিয়া ও উগান্ডা—এ ১০টি দেশের দাবি রয়েছে নীল নদের জলে।
নীলের প্রধান দুটি উপনদী মিসর হয়ে উত্তর দিকে বয়ে যাওয়া ও ভূমধ্য সাগরে পড়ার আগে সুদানের রাজধানী খার্তুমে মিলিত হয়েছে। এ উপনদী দুটি স্বেত নীল (হোয়াইট নীল) ও আকাশি নীল (ব্লু নীল) নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, নীল নদ হয়ে বছরে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়।
এদিকে ২০১১ সালে ‘গ্র্যান্ড রেনেসাঁ ড্যাম’ নামে নীল নদে আফ্রিকার বৃহত্তম ড্যাম নির্মাণ শুরু করে ইথিওপিয়া। দেশটির সুদান সীমান্ত থেকে এ ড্যামের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এ ড্যাম নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪২০ কোটি ডলার (৩৭০ কোটি ইউরো)। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্প থেকে প্রাথমিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পটির পুরো কার্যক্রম শুরু হবে ২০২২ সালে।
উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের শুষ্ক দেশগুলোর মধ্যে মিসর অন্যতম। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন, চাষাবাদসহ প্রয়োজনীয় জলের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে।
এ নদের ওপর দেশটির আইনি অধিকার রয়েছে বলে দাবি করে আসছে কায়রো। ১৯২৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী দেশটি নীলের জলের বড় হিস্যা পায়। এছাড়া এ নদে কোনো প্রকল্প নির্মাণে ভেটো দেয়ার অধিকার রয়েছে মিসরের। অন্যদিকে ১৯৫৯ সালের আরেক চুক্তিতে কায়রো ও খার্তুম নীলের জলের যথাক্রমে ৬৬ ও ২২ শতাংশ হিস্যা পাবে স্থির হয়।
এদিকে মিসর ও সুদানকে বাদ দিয়ে ২০১০ সালে নীল নদ অববাহিকার অন্য আটটি দেশ ‘কো-অপারেটিভ ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। নীলে কায়রো ও খার্তুমের বড় ধরনের অধিকার থাকা সত্ত্বেও উভয় দেশকে বাদ দিয়ে ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০১১ সালে সেখানে ড্যাম নির্মাণ শুরু করে ইথিওপিয়া।
নিজেদের প্রয়োজনীয় জলসংস্থানের পথে এ ড্যাম বাধা তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে কায়রো। এ নদের জলে কায়রোসহ পূর্ব আফ্রিকার উল্লিখিত দেশগুলোর অধিকার থাকায় একটি সমঝোতায় না পৌঁছলে তা বড় সংকট তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের’ চলতি বছরের মার্চের প্রতিবেদনে।
এদিকে আগামী তিন বছরের মধ্যে ড্যামটির পুরো কার্যক্রম শুরু করতে চায় ইথিওপিয়া। অন্যদিকে ড্যামটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম ১৫ বছরের আগে শুরু না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে মিসর।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির জলবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীর প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি নাগাদ নীল নদের জল সমস্যা সমাধান করতে চায় মিসর, ইথিওপিয়া ও সুদান।
-

বায়ুদূষণের ফলে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছেন গর্ভবতী মায়েরা
বিশেষ রিপোট: বায়ুদূষণের ফলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন গর্ভবতী মায়েরা। এমনকি শিশুরাও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষণ কমাতে না পারলে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। এমনকি এই দূষণ যদি স্থায়ী হয় তাহলে শিশুদের ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি অটিস্টিক হতে পারে। পরিস্থিতি উত্তরণে বায়ুদূষণ কমাতে এখনই নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। শিশু হাসপাতালের পরিচালক শফি আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, বায়ুদূষণের ফলে শিশুদের প্রথমে কাশি হবে। পরে দীর্ঘমেয়াদি তারা আক্রান্ত হবে। এতে করে শিশুদের ফুসফুসে ক্যানসার, লিভার ও কিডনিতেও ক্যানসারসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। বায়ুদূষণের ফলে গর্ভবতী মায়ের পেটের শিশু অটিস্টিক হয়ে জন্ম নিতে পারে। বায়ুদূষণের প্রভাব প্রথমে স্বল্পমেয়াদি হলেও পরে এটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করে। ছোট শিশুদের মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শুধু ধুলাবালুতেই নয়, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা, পুরান ঢাকার শত শত মিল-কারখানার কারণেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। এটা নীরব ঘাতক। এখন থেকে যদি সরকার সতর্কমূলক ব্যবস্থা না নেয়, মিল কলকারখানা সরিয়ে না নেয়—তাহলে বহু মানুষ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হবেন।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।
বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাইদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এখন অনেক বেশি রোগী আসছে। শিশুদের জন্য বায়ুদূষণ ভয়াবহ ক্ষতিকর। এখন প্রতিরোধ না করতে পারলে এটা মরণব্যাধিতে রূপ নিতে পারে। এখানে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন কিছুই করার থাকে না। ফলে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
হেলথ ইফেক্টস ও হেলথ মেট্রিকসের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগে বায়ুদূষণে সবার ওপরে ছিল চীন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চীনকে টপকে স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণ ও পরিবেশ ক্ষয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণি। শহরের দশ লাখ দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সিসাদূষণের কারণে এখন মারাত্মক ঝুঁঁকিতে আছে। এসব কারণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্মপরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম এর মতে, বায়ুদূষণের ফলে নিউরোলজিক্যাল ঝুঁকি ভয়াবহ। এর ফলে মানুষের মতিভ্রম হয়। বুদ্ধি হ্রাস পায়। শারীরিকভাবে একজন অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। বিকলাঙ্গ হতে পারেন। এই ধরনের রোগী এখন বাড়ছে। ব্রেন বেঁচে থাকে অক্সিজেনের কারণে। সেটা না পেলে কীভাবে বেঁচে থাকবে। এটা এখন ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে অন্য সময়ের (এপ্রিল-অক্টোবর) চেয়ে শীতের সময় (নভেম্বর-মার্চ) বায়ুদূষণের মাত্রা (পার্টিকেল ম্যাটার বা পিএম ২.৫-এর নিরিখে) বাড়ে প্রায় পাঁচ গুণ। এ সময় বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণিকা অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। অপেক্ষাকৃত স্থূল বস্তুকনিকা পিএম-১০ এর মাত্রাও অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বায়ূদূষণে প্রথমে চোখের ক্ষতি হয়। ধুলাবালি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ধীরে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। এছাড়া দূষিত বাতাসে থাকা সিসা মানবদেহে প্রবেশ করে যে কোনো ধরনের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। বায়ুদূষণ মা ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্যও বড়ো ধরনের হুমকি।
-
সাতক্ষীরায় সড়কের উপরে ফেলে রাখা অচল বাস-ট্রাক : ভোগান্তিতে পথচারি সাধারণ মানুষ
সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কের উপরে বছরের পর বছর ফেলে রাখা অচল যানবাহন বাস-ট্রাকের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচালিত সাধারণ মানুষ।এসব দেখার জন্য কেউ নেই।
বুধবার (৬ নভেস্বর)বিকালে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা মোড় থেকে সদরের আলিপুর চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের উপরে যত্রতত্র ভাবে কয়েক বছর ধরে কয়েকটি অচল বাস-ট্রাক বিপদজনক ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে।
শহরের বাঁকালে সড়কের উপরে ফেলে রাখা একে ট্রাভেলসের বাসটির ছবি তুলতে দেখে একজন অজ্ঞাত পথচারী মোটরসাইকেল থামিয়ে বলেন, অনেক বছর ধরে গাড়িটাে এভাবে রাস্তার ধারে পড়ে আছে। পথচারী ওই ব্যক্তি আরো বলেন, সড়কে ফেলে রাখা গাড়ি গুলো একে ট্রাভেলস এর মালিক চয়নের। তিনি বলেন ব্যাংক লোনের টাকায় কেনা এসব গাড়ি গুলি এখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা।
এ সময় অজ্ঞাত আরো কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন,ঢাকাগামী বিভিন্ন কোম্পানির বাস সারাদিন ধরে বাঁকাল সড়কের উপরে ফেলে রাখায় সৃষ্টি হয় যানজটের। আশঙ্কা থাকে দুর্ঘটনার। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পথচারীরা বলেন অনতিবিলম্বে সড়কের উপর থেকে এসব অচল গাড়িগুলো অপসারণ করা ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।
-

সদর উপজেলার ২২ গ্রাম পানি নিচে : অপসারণ দাবিতে পানি কমিটির সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২২টি গ্রাম এখনও পানির নিচে রয়েছে। এসব গ্রামের তিন হাজারেরও বেশি পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। পানি জমে থাকার কারণে এবার এসব গ্রামের বিলগুলিতে বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষকরা এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। এলাকাজুড়ে রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকটও।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রিয় পানি কমিটি। তারা বলেছেন এবার সাতক্ষীরায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২০০০ মিমির কম ১৫০২ মিমি হলেও গ্রামগুলো পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে নিকটস্থ নদী বেতনা ও মরিচ্চাপের পানিতে। এসব নদী পলিযুক্ত হয়ে উঁচু হয়ে পড়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিন আগের টানা বুষ্টির পানি। ফলে এলাকা জুড়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতক্ষীরা সদর, ব্রম্মরাজপুর ও ধুলিহর ইউনিয়নের এসব গ্রামে নিরাপদ খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি পাম্প বসিয়েও একই এলাকার ২৬ টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ দূষন শুরু হয়েছে। এই পানি ব্যবহারের ফলে গ্রামবাসীর দেহে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ এলাকায় কাজ না থাকায় পুরুষ মজুরি ২০০ টাকা ও মহিলা মজুরি মাত্র ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পানিবাহিত নানা রোগ ছাড়াও এ এলাকায় সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে পানি অপসারনের বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে এলাকার কৃষি ও আর্থ সামাজিক খাত লন্ডভন্ড হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। তারা আরও জানান, গত প্রায় ২৫ বছর সাতক্ষীরাসহ পাশর্^বর্তী জেলার ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আছে। এর সাথে যুক্ত হলো আরও ২২টি গ্রাম। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে গদাইবিল, রাজারবাগান প্রামানিকপাড়া, কুলিনপাড়া, বদ্দিপুর তালতলা, কলোনিপাড়া, বসতিপাড়া, শাল্যে, বেড়াডাঙ্গি, পূর্ব মাছখোলা, পশ্চিম মাছখোলা, চেলেরডাঙ্গা, ওমরাপাড়া, মল্লিকপাড়া, জেয়ালা, গোবিন্দপুর, ধুলিহর সানাপাড়া, বাঁধনডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, দহকুলা, দামারপোতা, বড়দল ও বালুইগাছা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, বেতনা-মরিচ্চাপঅববাহিকা পানি কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জোয়ার্দার, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, মীর জিল্লুর রহমান, নাজমা আক্তার, দিলীপ কুমার সানা প্রমূখ। -

বন্যপ্রাণী বাঁচাতে একাই বানালেন ১,৩৬০ একরের বন
সময়টা ১৯৭৯ সাল। বন্যার পানিতে ভেসে বিপুল সংখ্যক সাপ এসে জমা হয় ভারতের আসামের গুয়াহাটির ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জোরহাটের একটি বালুচরে। যখন বন্যার পানি অনেকটা নেমে গেল, তখন জাদব পায়েং নামের ১৬ বছর বয়সী স্থানীয় এক কিশোর খেয়াল করলো সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছে অগণিত মৃত সরীসৃপের দেহ। সেসময় এই বালুচরে কোনো গাছ ছিল না, ফলে প্রচণ্ড রৌদ্রতাপে মারা গিয়েছিল সাপগুলো। ছোট ছেলেটি তখন সাপগুলোর প্রাণহীন রূপ দেখে কষ্টে কেঁদে ফেলে। এতগুলো সাপ কেবল ছায়ার অভাবে মারা গেল! যদি এখানে গাছপালা থাকতো তাহলে হয়ত এ ঘটনা ঘটতো না।
পায়েং এ বিষয়ে স্থানীয় বনবিভাগকে সতর্ক করে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়, এখানে তারা গাছ লাগানোর পদক্ষেপ নেবে কিনা। কিন্তু বনবিভাগ জানায়, অনুর্বর এই মাটিতে কিছুই জন্মাবে না। তারা উল্টো পায়েংকে সেখানে বাঁশগাছ লাগিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে বলে। এ কথায় ভীষণ কষ্ট পেলেও পায়েং ঠিকই বালুচরের মাটিতে গাছ লাগায়। পায়েং জানায়, এ কাজে তাকে কেউই সাহায্য করেনি। এমনকি আগ্রহও দেখায়নি। পায়েং সিদ্ধান্ত নেয় এখানে গড়ে তুলবে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল, যাতে প্রাণীরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে বালুচরে এসে থাকতে শুরু করে যাতে নতুন বনভূমির বাস্তুতন্ত্র তৈরিতে পূর্ণাঙ্গ সময় কাজ করতে পারে।
পায়েং নিজ হাতে বীজ বপন করতো ও সকাল-বিকাল গাছে পানি দিত। কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটি বাঁশঝাড়ে রূপান্তরিত হয়। এরপর পায়েং ঠিক করলো এখানে অন্য ধরনের গাছও লাগাবে। সে বিভিন্ন গাছ সংগ্রহ করে লাগাতে শুরু করে। শুধু গাছই লাগায়নি, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে ও বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য সেখানে পিঁপড়ার জন্ম, বাসস্থান ও বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করে। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ছায়াহীন বালুচরটি প্রাণীদের বেঁচে থাকার ও জীবনধারণের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশে পরিণত হয়। অবিশ্বাস্যভাবে, যে জায়গায় পায়েং একা হাতে গাছ লাগিয়েছিল, তা ৩০ বছর পর রূপান্তরিত হয়েছে ১,৩৬০ একরের জঙ্গলে!
তার এই পদক্ষেপে এই অঞ্চলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হয়েছে। ‘মোলাই অরণ্য’ নামে পরিচিত এই বন এখন শকুন, হরিণ, গণ্ডার, বাঘ ও হাতি সহ বিপন্ন অনেক প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এছাড়াও এখানে আসে অনেক অনেক অতিথি পাখি।
২০০৮ সালে এ অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে তাণ্ডব তৈরি করে প্রায় ১০০ বন্য হাতি মোলাই বনে প্রবেশ করার পর পায়েংয়ের এই বন সম্পর্কে আসামের বন বিভাগ প্রথম জানতে পারে। তখন সহকারী বন সংরক্ষক গুনিন সাইকিয়া প্রথমবারের মতো পায়েংয়ের সাথে দেখা করতে যান।
সাইকিয়া বলেন, বন্য হাতি স্থানীয় যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি করেছিল, তারা বনটি কেটে ফেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে পায়েং বলেছেন, বন কেটে ফেলার পরিবর্তে যেন তাকেই হত্যা করে ফেলা হয়। পায়েং গাছ ও বনের জীবজন্তুকে নিজের সন্তানের মতোই পালন করেন। আর আমরাও বনের ভেতর প্রবেশ করে অবাক হই। প্রায় ৩০ বছর ধরে পায়েং যে বন তৈরি করেছেন তা অন্য কোনো দেশে করলে হয়ত তাকে বীরপুরুষ খেতাব দেয়া হতো।
-

বুধহাটার পাইথালীতে সরকারী পুকুর থেকে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে বাজার, সড়ক ও সরকারী স্থাপনা
আশাশুনি প্রতিনিধি :
বুধহাটা ইউনিয়নের পাইথালী বাজারের সরকারী পুকুর থেকে অবৈধ্য ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পাইথালী বাজার, সরকারী এজিইডি সড়ক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন হুমকির মুখে আছে। বালু উত্তোলনের ফলে এসকল এলাকা ও প্রতিষ্ঠান যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারার আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মহল
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের পাইথালী বাজারের সরকারী জেলা পরিষদ পুকুরের ভূ-গর্ভ থেকে অবৈধ্য ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে পাইথালী বাজার, সরকারী এজিইডি সড়ক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন হুমকির মুখে আছে। বালু উত্তোলনের ফলে এসকল এলাকা ও প্রতিষ্ঠান যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মহল। জানাগেছে পাইথালী বাজারের সরকারী জেলা পরিষদ পুকুরের ভূ-গর্ভ থেকে অবৈধ্য ভাবে বালু উত্তোলন করে পুকুরের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় সুব্রত কুমার দে’র একটি গভীর গর্ত বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভরাট করছে মেশিন মালিক ও ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, এর আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় একমাস আগে বাবু গোহ এবং উৎপদ নন্দি বাশ বাগান, দুলাল দে’র পুকুর ও আশ পাশের বহু পুকুর, খানা, নিচু এলাকা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে উক্ত সরকারী পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাট করা হয়েছে। শনিবার বিকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের মধ্যে একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ্য ভাবে বালু উত্তোলন করছে। সরকারী নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ড্রেজার মেশিন মালিক বহাল তবিয়তে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে সদ্য খননকৃত জেলা পরিষদের পুকুরের চার পাশের ঢালের মাটি ধ্বস নেমে পুকুরে পড়ছে। পুকুরের পশ্চিম পাশে একটি সরকারী এলজিইডি সড়ক, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদসহ পুকুরের আশ পাশে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে কিনা বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৬২নং আইনে সু-স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ হইতে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি পাকা স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটার সীমানার মধ্যে থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করিলে বা এই আইন বা বিধান লংঘন করিলে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এক্সিকিউটিভ বডি) অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করিবেন। কিন্তু উন্মুক্ত সরকারী পুকুর থেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা এবং প্রশাসনকে নিরব ভূমি পালন করার দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়িিট নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে বুধহাটা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা মনিরুজ্জামান বলেন, কিছুদিন আগে অভিযোগ পেলে পুকুর থেকে বালু উত্তোলন বন্দ করে দিয়েছিলাম। যদি তারা নির্দেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। -

সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এই দুর্যোগের সম্ভাব্য আঘাত হানার বিষয়ে জনগণকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে। জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি এবং কালিগঞ্জে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন,সাতক্ষীরা জেলাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে ।সাতক্ষীরা থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ।এছাড়া মাছ ধরা সব নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয় থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় তিনি জানান জেলার ১৩৭ টি সরকারি সাইক্লোন সেন্টার এবং বেসরকারি পর্যায়ের আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে স্কুল ,কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি সেন্টার দুর্যোগ কবলিত জনগণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে । নদী ও সমুদ্রে থাকা মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারগুলিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশাশুনি ও শ্যামনগরে ৩৬৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। এসব উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্ক সংকেত হিসাবে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রক্ষায় সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে এক বা একাধিক মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত ওষুধ খাবার স্যালাইন মজুদ রাখা হয়েছে। জলযান ও স্থল যান, শুকনো থাবার , শিশু খাদ্য এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলা এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনায় ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড,বিজিবি, আনছার ভিডিপি , রেড ক্রিসেন্ট , স্কুল কলেজের স্কাউট টীম এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ও তাদের সহযোগী কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নারী শিশু প্রতিবন্ধী গর্ভবতী মা , রোগগ্রস্থ মানুষ এবং বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের উদ্ধারে অতি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান,জনগণের জানমালের পাশাপাশি গবাদি পশুর জীবন রক্ষায় উঁচু জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিকটেই যাতে পশু খাদ্য মেলে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সতর্কতা প্রচারের জন্য পাড়ায় পাড়ায় মসজিদের মাইক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর এবং সব উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। তিনি জানান সাতক্ষীরার মাঠভরা পাকাধান সম্ভব হলে দুই দিনের মধ্যে কেটে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলির নির্বাহী অফিসারগন ফণীর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় পৃথক পৃথক সভা করেছেন।