Category: দুযোগ

  • সাগরে লঘুচাপ, মাছ ধরার সব নৌযানকে ফিরে আসার নির্দেশ


    ন্যাশনাল ডেস্ক: পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি পরবর্তীতে নিম্নচাপ ও আরও পরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশে পরিণত হতে পারে। দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করার পাশাপাশি তাদের আগামীকাল রবিবারের (২৩ মে) মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

    আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, লঘুচাপটি যদি শক্তিশালী হয়ে ওঠে তাহলে আগামী ২৬ মে বাংলাদেশের খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা প্রকাশ করছি আমরা।
    আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিশেষ সতর্ক বাতায় বলা হয়, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে এবং এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে এটি গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। চট্টগ্রাম, পায়রা, কক্সবাজার এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে মানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে আগামীকাল ২৩ মে মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
    এদিকে গতকাল সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কর্মসূচির পলিসি কমিটির সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, গতকাল আমরা জানতে পারি একটি লঘুচাপ তৈরি হবে।

  • ঘুর্নিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সভা

    ঘুর্নিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সভা


    মশাল ডেস্ক: তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঘুর্নিঝড় ‘ইয়াশ’ এর সতর্ক বার্তা দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরই মাঝে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ১ নং সতর্ক সংকেত জারি করে সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলারসমূহকে ফিরে আসার জন্য বলা হয়েছে। গতবছর সংঘটিত আম্ফানের মত এবারের ইয়াস যেন যান মালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিিিধদের পাঠানো খবর:
    আশাশুনি প্রতিনিধি জানান, আশাশুনিতে ঘূর্ণিঝড় ‘ইশ’ মোকাবেলায় ভার্চুয়ালী প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে আশাশুনি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এ সভায় জুম এর মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি। আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম এর সভাপতিত্বে ও আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খাঁন এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খান এর উপস্থাপনায় এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী ও মোসলেমা খাতুন মিলিসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। সভায় ঘুর্নিঝড় ‘যশ’ মোকাবেলায় উপকূলবর্তী আশাশুনি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সাইক্লোন সেল্টারসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বেড়ীবাঁধ নির্মাণ, সকল খাল উন্মুক্তকরণ, বিভিন্ন সড়কের পাশের মরা গাছ অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। জুম মিটিং এর মাধ্যমে অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবেলায় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, সকল জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে থেকে জানমাল রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
    দেবহাটা উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় জুম ক্লাউড মিটিং অ্যাপসের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ আহমেদ, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আব্দুল লতিফ, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, কুলিয়া ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিসের নিজাম উদ্দীন, সহকারী প্রোগ্রামার ইমরান হোসেন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফুলি সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঘূর্নিঝড়ের পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে সর্বোচ্চ জণসচেতনতা সৃষ্টি, পাঁচটি ইউনিয়নের পনেরটি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ অস্থায়ী সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে প্রস্তুত রাখা, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুইক রেসপন্স টিম ও কন্ট্রোল রুম চালু, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা, প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউটস, স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে দূর্যোগ কালীন কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ দ্রুত অপসারনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা, সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষদের জন্য খাবার, সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
    কালিগঞ্জ শহর প্রতিনিধি মুহিবুল্লাহ জানান, কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে ২২ মে শনিবার সকাল ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ মোকাবেলায় এক জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খন্দকার রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মিরাজ হোসেন খান এর সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী। সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্না চক্রবর্তী, কালীগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস ও তন্ময় হালদার, উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জোনাল অফিসার পঙ্কজ শিকদার, উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ সাইফুল বারি সফু, সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাশ বাচ্চু, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কালিগঞ্জ শাখার সভাপতি শেখ আনোয়ার হোসেন, দৈনিক দৃষ্টিপাত ব্যুরো প্রধান আশেক মেহেদী, নবযাত্রা কালিগঞ্জ ফিল্ড অফিস ম্যানেজার আশিক বিল্লাহ, কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ এবাদুল ইসলাম, নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, চাম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন, মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, রতনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন, কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান আকলিমা খাতুন লাকি, বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দিন সহ সাংবাদিকবৃন্দ ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে মরা রুগ্ন গাছগুলো কেটে অপসারণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

  • অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

    অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

    রিয়াদ হোসেন: দীর্ঘ সাত মাস বৃষ্টির দেখা নেই। এর উপর তীব্র তাপদাহে পুকুর খালের পানি শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে উঠছে না পানি। যার ফলে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ঘাস, পাট ও ভুট্টা চাষে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষকরা। সাধারনত মৌসুমের চৈত্র মাসে পাট বোপন করা হয়। মাস পার হতেই বৈশাখে দেখা মেলে বৃষ্টির। তবে এবছর তার কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। এমনকি আকাশেও মেঘের কোন ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে না। অনন্য বছর এই সময় পাট প্রায় এক হাতের মতো উঁচু হয়ে উঠে। তবে অনাবৃষ্টির কারনে এবার লক্ষমাত্রা অনেকটা হ্রাস পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

    সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে কিছুটা হেলে পড়েছে। রোজা থেকে মাঠে কাজ করছেন তালা উপজেলার দ: শাহাজাতপুরের শেখ রেজাউন উল্লাহ তিতু (৫৮)। বাড়ির পাশে দেড়বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় বীজ বোপনের পর দু’বার সেচ দিয়েছেন চারা পাটে। ইতোমধ্যে পনেরো থেকে ষোলো জন শ্রমিক খাটিয়েছেন পাটের পরিচর্চায়। তবুও অন্যবারের মতো পাট গাছের সৌন্দর্য আসছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। কৃষক তিতু জানান, বৈশাখ মাসের অর্ধেক। আকাশে মেঘের আনা গোনা নেই। যারা সেচ দিয়ে বীজ বপন করে ছিলেন প্রচ- তাপের কারণে কচি পাটগাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। আগে সেচ দিয়ে কেবল ধান চাষ করা হতো। এখন পাটেও নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। সেচ না দিলে পাটের গাছ ঢলে পড়ছে। সেচ আর শ্রমিক মিলে খরচও বেড়ে গেছে। ফলে অনেকটা ক্ষতির আশংকা করছি।
    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১,৫০০ হেক্টর। তবে তারা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারনে এই লক্ষমাত্রা কিছুটা কমবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, অনেকে তীব্র রোদে পাটের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে ভাল হওয়ার বদলে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তাপদাহে পাট গাছে পোকার উপদ্রব বেড়ে যাবে। ফলে পাটের কচি পাতা কুকড়ে যাবে। এ অবস্থায় কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।

  • সারা দেশে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস

    সারা দেশে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস


    ন্যাশনাল ডেস্ক: ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগের দু-এক জায়গায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
    শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
    পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

    অধিদপ্তর আরও জানায়, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় এই তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।
    তবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

  • আশাশুনিতে রিং বাঁধ সংস্কার, পানি প্রবেশ বন্ধ  : খাদ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস

    আশাশুনিতে রিং বাঁধ সংস্কার, পানি প্রবেশ বন্ধ : খাদ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস

    আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি সদরের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙ্গনকৃত পানি রক্ষা রিং বাঁধ অবশেষে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারে নদীর পানি আর ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু, মঙ্গলবার দুপুর থেকে ও বুধবার রাতের জোয়ার পর্যন্ত নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট, জেলেখালি, আশাশুনি পূর্বপাড়া বিল ও দূর্গাপুর মোট ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। পানি বন্দি হয়ে পড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। তলিয়ে যায় সুন্দরবন চিংড়ি পোনা হ্যাচারি, একটি মসজিদ, ৪টি মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক চিংড়ী ঘের, প্রায় কর্তন উপযোগী ধানের মাঠ, পুকুরসহ অসংখ্য কাচা পাকা বসতবাড়ী। এসব পানিতে তলিয়ে ফসল নদীতে ভেষে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জানাগেছে, কাচা-পাকা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে গেছে। বানভাষী মানুষসহ গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় কিছু মালামাল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার দ্রুত পাউবো’র বাঁধে অবস্থান নেয়। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভেতরে প্রবেশ করায় অধিকাংশ পরিবার তাদের বহু মূল্যবান জিনিস পত্র হেফাজতে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা সঠিক নিরুপনে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদের মাঠে নামতে দেখা গেছে। এ দিকে ভেতরে প্রবেশ করা পানি এখন সরানোর কোন পথ না থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকার বানভাসি পরিবারের মধ্যে সরকারি ও এনজিও’র পক্ষ থেকে কোন শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়নি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এনজি লিডার্সের পক্ষ থেকে বানভাষি এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও কোন খাদ্যে ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে পাউবো’র মূল বাঁধের উপর আশ্রায় নেয়া পরিবারগুলির মানুষ ও শিশুদের অর্ধহারে অনাহারে কষ্ট পেতে দেখা গেছে। মল ত্যাগের স্থান পানিতে ডুবে যাওয়ায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা না করায় সবচেয়ে বেশী সমস্যায় থাকতে হচ্ছে বানভাষী মানুষের। গত মঙ্গলবার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার পর রাত থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান সম সেলিম রেজা মিলন জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ও শ্রমিকের মুজুরী বাবদ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমিক প্রতি দিন ৭ কেজি চাউল সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, পাউবো কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে সদরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সার্বিক সহযোগীতায় এবং জোয়ারের পানির চাপ কম থাকায়, আপাতাত মূল রিং বাঁধের সুন্দরবন হ্যাচারী, সবুরের বাড়ী, রনজিৎ বৈদ্য, স্বপন মুহুরী ও অমল মন্ডল, ঋষি পাড়ার নিরান দাশ এবং পুলিন দাশের বাড়ী সংলগ্ন মোট ৬টি পয়েন্টের রিং বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। ফলে আপাতাত কয়েকটি পরিবার বাঁধের বাইরে পড়ায় তার পাউবো’র বাঁধে আশ্রায় নিয়েছে। ভেতরে আপাতাত আর এ গোনে খোলপেটুয়া নদীর পানি উঠার সম্ভবনা খিন হয়ে গেছে। এখন ওই রিং বাঁধ মেরামতের কাজ অব্যহত রয়েছে। তবে আগামী অমাবশ্যা গোনের আগেই যদি মূল বাঁধের কাজ না করা হয় তা হলে আবারো এমন ঘটনা ঘটতে সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাছাড়া জোয়ারে পানি কম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে পানি উঠা আপাতাত বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে মানিকখালি টু মরিচ্চাপ ব্রীজ পর্যন্ত পাউবো’র বেড়ীবাঁধ না থাকায় এলজিইডি কর্তৃক নির্মানাধী রাস্তা নীচু হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময় গোনে জোয়ারের চাপে মরিচাচাপ নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে বাজারের ব্যবসায়ীদের বেশ ক্ষতির শিকার হতে হয়। বাজার কমিটিসহ এলাকার সচেতন মহলের দাবী দ্রুত এ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির জলবায়ু পরিবর্তন রোধক ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
    প্রসঙ্গত: পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, সদরের মূল বেড়ী বাঁধে ভাঙ্গনের পর পাউবো’র পক্ষ হতে জিও ব্যগ সরবরাহ করে সদর ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে বাঁধ কাজ করা হয়েছে। কাজের জন্য গত ১৪ মার্চ টেন্ডার আহবান করা হয়, ২২ মার্চ ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। ৫৩৪ মিটার কাজের জন্য ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার জিও বস্তা ও বালি নিয়ে এলাকায় এসেছেন। হঠাৎ করে নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে রিং বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আগামী মরা গোণে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে।

  • ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন নাগরিক কমিটি

    ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন নাগরিক কমিটি


    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের আম্পান দুর্গত এলাকায়। পূর্ব থেকে ভাঙা বাঁধ এবং আমাবশ্যার জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বিভিন্নস্থানে নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট মাছের ঘের ফসলের জমি সব একাকার।
    জোয়ারের সময় ১২/১৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথায় এক ইঞ্চি জমি জেগে নেই। রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া সবকিছুই প্রায় বন্ধ। মানুষের বেঁচে থাকাটা এখন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। উক্ত দুই ইউনিয়ন ছাড়াও জেলার আশাশুনি শ্যামনগর উপজেলাসহ বিভিন্নস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
    এছাড়া ভাদ্র মাসের বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার জলাবদ্ধ এলাকাগুলো নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষের আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলো চিংড়ি ঘেরের বাঁধ দিয়ে বন্ধ করাসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে বন্ধ থাকায় সহসা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এমতাবস্তায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি জেলার মানুষের যান-মালের নিরাপত্তায় জরুরিভাবে

    ১. আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলাসহ শ্যামনগর ও আশাশুনির উপজেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া

    ২.পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রান্না করা খাবার বিতরণ করা৩. ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা

    ৪. নতুন করে আর কোন বেড়িবাঁধ যাতে না ভাঙে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া

    ৫. সাতক্ষীরা শহরসহ জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কাশনে যেখানে যে ধরণের বাধা রয়েছে তা দ্রুত অপসারণের দাবী জানাচ্ছে।

    সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সাতক্ষীরা শহরতলীর বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছে। নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলালের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটিতে আরো উপস্থিত ছিলেন সুধাংশু শেখর সরকার, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, এড. মনির উদ্দিন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, জহুরুল কবির, আসাদুজ্জামান সরদার, এড. রফিকুল ইসলাম ও এড. আবুল কালাম আজাদ।

  • গাবুরায় ও আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত

    গাবুরায় ও আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত


    নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্যামনগরের গাবুরায় প্রায় এক’শ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে সহস্্রাধিক বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। গতকাল দুপুরে কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের চাপে গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া গ্রামের ৬ টি স্থানে রিংবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
    স্থানীয়রা জানান, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে একই স্থানে বেঁড়িবাধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে হাজার হাজার এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সে সময় রিংবাধ দিয়ে কোন রকম বেঁড়িবাধটি টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ দুপুরের প্রবল জোয়ারে তা আবারও ভেঙে গেছে। তারা আরো জানান, এখনই যদি বেড়িবাধটি সংস্কার করা না হয় তাহলে পরবর্তী জোয়ারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে।
    স্থ’ানীয় গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত লেবুবুনিয়ার এই বেড়িবাধটি সংস্কারের জন্য সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারা এখনও কাজ শুরু করেননি। তার মধ্যে আজ দুপুরের জোয়ারে রিংবাধটি ভেঙে আবার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। তিনি আরো জানান, দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হলে গোটা গাবুরা ইউনিয়ন প্লাবিত হবে।
    সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ইতিমধ্যে বেঁড়িবাধ ভাঙন কবলিত লেবুবুনিয়ায় বালুর বস্তা পাঠানো হয়েছে। এখন জোয়ার চলছে। ভাটা শুরু হলেই বাধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, এখন বর্ষকাল চলছে। এ সময় নদীর পানি বেশী থাকার কারনে সেনাবাহিনী এখনও বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ শুরু করেননি। তারা শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সেখানে টেকসই বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে এই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা জানান।

    আশাশুনি সদর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রতিরক্ষা রিং বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নে নদীর পানির তোড়ে নতুন এলাকা প্লাবন শুরু হয়েছে। ৩ মাস পরে পুুরনো প্লাবিত এলাকাকে ছাড়িয়ে নতুন এলাকায় পানি ঢুকে শত শত নতুন ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের প্লাবিত করে পানি ছুটে চলেছে। উপজেলার আশাশুনি, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি গত ২০ মে আম্পানের তান্ডবে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আাসছে। বাঁধ সংস্কারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলেও গত ঈদ উল আযহার পূর্বে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। অনেক এলাকা রিং বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া মূল বাঁধেও ইতিমধ্যে কাজ করা হয়েছে। এতে এই ৩ ইউনিয়নের কিছু অংশের মানুষ প্রাথমিক ভাবে রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে নদীর পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুষুল ধারা বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, হরিশখালি, চাকলা এলাকায় প্রচুর পানি ঢুকে রিং বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। যার ফলে প্রতাপনগর ইউনাইটেড স্কুলের পেছনের কার্লভাটটির পাশের কার্পেটিং সড়ক ভেঙ্গে এলাকায় দুর্বার গতিতে পানি প্রবেশ করছে। হলদেপোতা-তেঁতুলিয়া-প্রতাপনগর মেইন সড়কের প্রতাপনগর অংশের উপর দিয়ে পানি অপর পাশে ঢোকায় সড়ক যোগাযোগ হুমকীতে পড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করে মানুষকে নাকানি চুপানি খাওয়াচ্ছে। এদিকে আশাশুনি সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাট গ্রামের পাউবো’র ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ২০ মে এলাকায় পানি প্রবেশ করে একাকার করে দিয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে রিং বাধ দিয়ে বিশাল এলাকাকে রক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে দয়ারঘাট হ্যাচারি ও স্কুলের সামনে রিংবাধ ভেঙ্গে এবং আরো কয়েকটি স্থানের বাধ ভেঙ্গে প্রচুর গতিতে নদীর পানি ভিতরে ঢুকছে। ফলে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০ মে’র পর থেকে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীও এলাকা ত্যাগ করেছেন। তারা শীত মৌসুমে বাঁধ নির্মানের জন্য আবার ফিরবেন বলে জানাগেছ। গত ২ দিনের নদীর পানির চাপ এতটা বেড়েছে যে, আগের তুলনায় বেশী গতিতে পানি ভিতরে ঢুকে ইতিমধ্যে মহিষকুড়, নাকতাড়া, বকচর ও বুড়াখারাটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। রাতের জোয়ারে শ্রীউলা গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ফলে ৩ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

    এদিকে আশাশুনি সদর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রতিরক্ষা রিং বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নে নদীর পানির তোড়ে নতুন এলাকা প্লাবন শুরু হয়েছে। ৩ মাস পরে পুুরনো প্লাবিত এলাকাকে ছাড়িয়ে নতুন এলাকায় পানি ঢুকে শত শত নতুন ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের প্লাবিত করে পানি ছুটে চলেছে। উপজেলার আশাশুনি, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি গত ২০ মে আম্পানের তান্ডবে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আাসছে। বাঁধ সংস্কারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলেও গত ঈদ উল আযহার পূর্বে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। অনেক এলাকা রিং বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া মূল বাঁধেও ইতিমধ্যে কাজ করা হয়েছে। এতে এই ৩ ইউনিয়নের কিছু অংশের মানুষ প্রাথমিক ভাবে রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে নদীর পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুষুল ধারা বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, হরিশখালি, চাকলা এলাকায় প্রচুর পানি ঢুকে রিং বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। যার ফলে প্রতাপনগর ইউনাইটেড স্কুলের পেছনের কার্লভাটটির পাশের কার্পেটিং সড়ক ভেঙ্গে এলাকায় দুর্বার গতিতে পানি প্রবেশ করছে। হলদেপোতা-তেঁতুলিয়া-প্রতাপনগর মেইন সড়কের প্রতাপনগর অংশের উপর দিয়ে পানি অপর পাশে ঢোকায় সড়ক যোগাযোগ হুমকীতে পড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করে মানুষকে নাকানি চুপানি খাওয়াচ্ছে। এদিকে আশাশুনি সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাট গ্রামের পাউবো’র ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ২০ মে এলাকায় পানি প্রবেশ করে একাকার করে দিয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে রিং বাধ দিয়ে বিশাল এলাকাকে রক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে দয়ারঘাট হ্যাচারি ও স্কুলের সামনে রিংবাধ ভেঙ্গে এবং আরো কয়েকটি স্থানের বাধ ভেঙ্গে প্রচুর গতিতে নদীর পানি ভিতরে ঢুকছে। ফলে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০ মে’র পর থেকে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীও এলাকা ত্যাগ করেছেন। তারা শীত মৌসুমে বাঁধ নির্মানের জন্য আবার ফিরবেন বলে জানাগেছ। গত ২ দিনের নদীর পানির চাপ এতটা বেড়েছে যে, আগের তুলনায় বেশী গতিতে পানি ভিতরে ঢুকে ইতিমধ্যে মহিষকুড়, নাকতাড়া, বকচর ও বুড়াখারাটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। রাতের জোয়ারে শ্রীউলা গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ফলে ৩ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

    আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরন চক্রবর্তী জানান, তার উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হিজলিয়া ও কোলা এবং আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত রিংবাধ ভেঙে দুটি ইউনিয়নের ৪/৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি।
    তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহি প্রকৌশলী সুধায়শ কুমার সরকার জানান, তিনি বর্তানে ট্রলার যোগে তার বিভাগের অশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন। পরিদর্শন শেষ না হলে তিনি কিছুই বলতে পারবেননা।

  • আম্ফান বিধ্বস্ত উপকূলে ভালোবাসার মঞ্চ

    আম্ফান বিধ্বস্ত উপকূলে ভালোবাসার মঞ্চ


    নিজস্ব প্রতিনিধি:
    জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বশেষে সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে আম্ফান বিধ্বস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভালোবাসার মঞ্চ। উপকূলের দূর্দশাগ্রস্থ অভাবী মানুষদের মাঝে কোরবানীর মাংস বিতরণের মধ্য দিয়ে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী মানবিক এ সংগঠণটি।
    শ্যামনগর উপজেলা সদরে নকিপুর খাদ্য গুদাম প্রাঙ্গনে ভালোবাসার মঞ্চের পক্ষ থেকে দুটি গরু কোরবানী করা হয়। পরে গাবুরা ইউনিয়নের দাতিনাখালী, হরিশখালি, তালা সদরের শিবপুর, মাঝিয়াড়া, খড়েরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে ওই মাংস বিতরণ করা হয়।
    এ সময় ভালোবাসার মঞ্চ বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বারী ওপেল, সদস্য শুভ এডাম, মো. ইসতিয়াক, সাতক্ষীরা শাখার উপদেষ্টা অ্যাড.শেখ তামিম আহম্মেদ সোহাগ, সভাপতি আকরামুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান, শ্যামনগর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বুলবুল, ভালোবাসার মঞ্চের সাতক্ষীরা শাখার কর্মী রবিউল ইসলাম শুভ, সাহাবুদ্দিন, ফারুক খাঁন, ইয়ারুল ইসলাম, জাহিরুল সরদার, রুবেল মোল্লাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

  • দু মাস পরও নোনা পানিতে ভাসছে প্রতাপনগরের জনপদ

    দু মাস পরও নোনা পানিতে ভাসছে প্রতাপনগরের জনপদ

    আশাশুনি প্রতিনিধি : দু মাস পরও নোনা পানিতে ভাসছে প্রতাপনগরের জনপদ। দিনে দুবারে ডুবে মানুষের আবাস। অথচ মাথা ব্যাথা নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কতৃপক্ষের।

    সাইক্লোন আম্পানের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো বসতবাড়িতে জোয়ার-ভাটায় পানি ওঠা নামা করে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাড়িতে। দুর্যোগের দু মাসেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি তারা। জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ির এক তৃতীয়াংশ। ভাটায় আবার সরে যায়। ফলে কোন উপায় না পেয়ে বাঁশ দিয়ে স্যাকো তৈরি ঘরের মধ্যে থাকা খাটের সাথে রাস্তা-ভেঁড়ীর সংযোগ করেছেন। এভাবে চরম দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন সেখানকার মানুষ। বাড়ির উঠানে পানি, ঘরেও মধ্যে পানি। তবে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
    আশাশুনি উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন প্রতাপনগরের সুভদ্রাকাটি, কুড়িকাউনিয়া, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গেলে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
    জানাগেছে, আম্পান তান্ডবে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা, কুড়িকাউনিয়া, দিঘলার আইট ও চাকলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া দয়ারঘাট ও জেলেখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দুই মাস অতিবাহিত হলেও এসব এলাকার অধিকাংশ স্থান এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। আম্পানের পর থেকে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণে নামে। প্রতাপনগর ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী ও দিঘলাই আইটের মধ্যে হরিষখালীতে বড় ভাঙ্গনের স্থানটি বাধা হলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কারণে সেটি পুনরায় ভেঙ্গে যায়। এছাড়া কুড়িকাউনিয়া ও চাকলায় এখনো বাধা হয়নি। একটি ছোট ভাঙ্গন বাধা হলেও বড় ভাঙ্গনের এলাকা দিয়ে জোয়ারের সময় পানি উঠে আবার ভাটায় সরে যায়। ফলে আম্পানের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখানকার ভেড়ীবাধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
    ভুক্তভোগীরা ভেড়ীবাধ নির্মান না হওয়ার পিছনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন কে দায়ী করে জানান, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভেড়ীবাধ নির্মানের প্রায় ১ তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাকী অংশের কাজ করতে গেলে তিনি বাধ দিয়ে বলেন এখানে কেউ কারো কাজ করার প্রয়োজন নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করবে। ওই রাতেই জোয়ারের ধাক্কায় পুরো ভেড়ীবাধটাই আবারো ভেঙে যায়। যে কারণে অত্র এলাকার শত শত মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর দুষিত পানির সাথে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেখানকার মানুষ। বিশেষ করে যোগাযোগ অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে সেখানে।
    যদিও ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কারনেই ওই বাধটি ভেঙেছে। এছাড়া ২ মাসেও ওই ঠিকাদার ৩৬৪ মিটার ভাঙ্গণে বাধ দিতে পারেনি।
    ঠিকাদার মোঃ কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, গত মাসে ২৪ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে আমি বাধ নির্মাণ কাজ শুরু করি। তাহলে দুই মাস হলো কিভাবে। তারপরও কাজ শুরুর পর মনে করেছিলাম ১৩ তারিখে চাপান দিতে পারবো। কিন্তু লোকবল এবং পরিবহন সংকট থাকায় পারিনি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বাধ পরিদর্শনে আসলে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেই দিনই চাপান দিতে বলেন। আমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চেয়ারম্যান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হন চাপান না দিলে ৪/৫টি ক্লোজার তৈরি হবে। এতে ক্ষতির আরো বাড়বে। নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যানের কথায় আমাকে চাপান দিতে বলেন। চাপান দেওয়ার পর জোয়ারে পানি উঠে এবং ভাটার সময় আমাদের চেম্বার ভেঙে বেরিয়ে যায়। এতে আমার প্রায় ৫০লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা নতুন করে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুতই বাঁধ নির্মাণ করে মানুষকে পানি বন্দি দশা থেকে মুক্ত করতে পারবো।
    সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার জানান, আমরা মানুষকে পানিবন্দি দশা থেকে মুক্ত করতে আমরা ১১টি পয়েন্টে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ভেড়ীবাধ নির্মাণ করতে গিয়ে সেনাবাহিনও হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মুল টার্গেট জনগনকে পানি মুক্ত করা।

  • প্রতাপনগরে চাপান দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভেসে গেছে আম্ফান বিধ্বস্থ ভেড়ী বাঁধ

    আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিষখালীতে পাউবোর বেড়িবাঁধ সুপার সাইক্লোন আম্পানের তান্ডবে ভেঙে যাওয়ার ৫৩ দিন পর বাঁধা সম্ভব হলেও টিকিয়ে রাখা গেল না। বাঁধের কাজ শেষ করে শ্রমিকরা বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে জোয়ারের পানির চাপে তা ভেসে গেছে। ফলে প্রতাপনগরবাসী আবারও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার-ভাটার সাথে একাকার হয়ে গেল। গত ৫৩ দিন এলাকার মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এলাকার হাজার হাজার মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে ১৩ জুলাই বাধের ক্লোজারে চাপানের কাজ শেষ করেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ভাঙন আটকানোর পর লক্ষ্য করা গিয়েছিল, জোয়ারের চাপে বাঁধটি হালকা ভিতরে চেপে গেছে। অবস্থা দৃষ্টিতে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় জেনারেটরের আলো জ্বালিয়ে কিছু শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রাখা হয়। কিন্তু না সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে পুনরায় বাঁধটি ভেঙে এলাকা প্ল¬াবিত হয়ে যায়। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োগকৃত সলিউশন ফোর্স্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, গেলো সোমবার আমি বাঁধ চাপান দিতে চায়নি। ক্লোজার-এর কাজ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার আমি বাঁধ চাপান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ বাঁধ সংস্কার নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন উপস্থিত হন। তাদের সিদ্ধান্ত মত চাপান কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাঁধ চাপান দিয়ে পানি আটকানোর পর আমি অনেক শ্রমিক মজুরি দিয়ে জেনারেটর মাধ্যমে রাতেও কাজ চালিয়ে বাঁধ আটকাতে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করি কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

  • সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ৬ জনসহ জেলায় মোট ৮৫ জন করোনা আক্রান্ত

    সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ৬ জনসহ জেলায় মোট ৮৫ জন করোনা আক্রান্ত

    নিজস্ব প্রতিনিধি : করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ
    হাসপাতালের আইসোলেশনে আমেনা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
    সোমবার রাত ১১টায় তিনি মারা যান।
    তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মফিজুল মোড়লের স্ত্রী।
    মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম জানান,
    গত রোববার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমেনা বেগম (৩৮) মেডিকেল কলেজ
    হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
    আমেনা বেগম রাতে মারা যান। তিনি আরো জানান, ওই দিনই তার নমুনা
    সংগ্রহ করে খুলনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এখনও তার নমুনা পরীক্ষার
    রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
    সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জয়ন্ত সরকার
    জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মৃতের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
    তিনি আরো জানান, মৃত ওই নারীর বাড়িসহ তার আশোপশের কয়েকটি
    বাড়ি লক ডাউন করা হয়েছে।
    এনিয়ে সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জনের
    মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে আরো ৬
    জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত মোট ৮৫ জনের
    করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৩
    জনের। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২১ জনের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কর্যালয়ে
    এসে পৌছেছে। এরমধ্যে ৮৫ টি রিপোর্ট পজিটিভ বাকী সব নেগেটিভ
    এসছে।

  • করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রেখে আমলা নির্ভরতা কেন?

    করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রেখে আমলা নির্ভরতা কেন?

    ন্যাশনাল ডেক্স :

    বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা রয়েছে-এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

    খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক চিন্তার ঘাটতি থাকছে।

    বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তার কোন ছাপ না থাকায় ঢিলঢালা সাধারণ ছুটি থেকে শুরু করে তা প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতা চোখ পড়ছে।

    আসলে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব থাকছে কিনা- এবং পরিস্থিতি সামলানোটা সরকারের জন্য কি কঠিন হয়ে উঠেছে—এনিয়ে নানা আলোচনা এখন চলছে।

    এপ্রিলের শেষে সাধারণ ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস খোলার কারণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। সমালোচনার মুখে আবার গার্মেন্টস বন্ধ করা হলে শ্রমিকরা ঢাকা ছেড়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছুটা ক্ষোভের সাথে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত না করার কথা তুলে ধরছিলেন।

    জাহেদ মালিক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী

    “একটা ন্যাশনাল কমিটি ফর্ম করা হয়েছে। ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে। কিন্তু ন্যাশনাল কমিটিতে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের নলেজে নাই। কখন ফ্যাক্টরি খোলা হবে বা খোলা হবে কিনা-সে বিষয়ে আমরা জানি না। মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে বা আলোচনা-সে বিষয়েও আমরা জানি না। এবং কখন রাস্তা খুলে দেবে বা বন্ধ করবে- এ বিষয়ও আমরা জানি না। আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, তাদেরকে আমি সদুত্তর দিতে পারি না।”

    স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। যদিও নানা আলোচনার মুখে মন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির প্রধান হলেও স্বাস্থ্য বিষয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ।

    তার এই ব্যাখ্যার পরও সরকারের সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

    দুই মাস পর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় কি কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে-এ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

    “করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে আলোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব অবহিত হয়েই এই সাধারণ ছুটিসহ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা যারা অত্যন্ত কাছাকাছি এবং সশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেগুলো আছে, তারা সকলে মিলেই কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।”

    শেখ হাসিনা, করোনাভাইরাস,
    বাংলাদেশে ক্ষতি মোকাবেলায় গত ৫ই এপ্রিল ৭২,৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    যদিও প্রতিমন্ত্রী মি: হোসেন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় তদারকি করছেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

    বিরোধীদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব না থাকায় এবং আমলা নির্ভরতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি,
    সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। (ফাইল ছবি)

    “এখানে আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি যে, সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে জনগণের চিন্তাভাবনার বাইরে। এবং জনগণ যেটা চাচ্ছে, তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”

    “আমরা প্রথম থেকেই যেটা লক্ষ্য করেছি, এখানে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে একটা প্রভাব থাকা উচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, সেটা নাই। এখন পর্যন্ত যেভাবে হয়ে আসছে, তাতে মনে হয়েছে যে শুধু গুটিকতক চাটুকার আমলা এবং আর অদৃশ্য কোন শক্তি আছে কিনা জানি না। তাদের দ্বারাই যেন সিদ্ধান্তগুলো আসছে।”

    শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় সরকারের রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এই সরকারেরই গত ১১ বছরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল।

    কিন্তু তারা এখন পার্থক্য দেখছেন করোনাভাইরাস দুর্যোগ সামলাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেছেন, এখন সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিতে হচ্ছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন

    “অন্যান্য সময় আমরা দেখেছি, যদিও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নির্ভর দল, কিন্তু তারপরও অন্যান্য সময়ে তারা সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দেখেছি যে, কোন এলাকায় মন্ত্রী এমপি বা রাজনৈতিক নেতারা নেই। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররাও নেই।”

    “আর ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়গুলোতো আমরা জানি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শেখ হাসিনাকে এককভাবেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং উনি এককভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছেন।”

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিতরেও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা নানা আলোচনা রয়েছে।

    দলটির মাঠের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

    সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।

    “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে এই কঠিন সময়ে তিনি কিন্তু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সত্যিকার অর্থে তার নির্দেশগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতাম বা পারি তাহলে এই সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা কথা বলি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদিও এখানে সরাসরি জড়িত কম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

    তোফায়েল আহমেদ
    সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।

    মি: আহমেদ আরও বলেছেন, “তবে আমি মনে করি অতীতেও দুর্যোগে রাজনৈতিক নেতৃত্বই কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আমি এটুকুই বলবো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশগুলো পালন করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সম্পৃক্ত হয়, তারা যদি কাজ করে বা এখন যা করে চলেছে, তাহলে সমস্যাটা সমাধানে আমরা সক্ষম হব।”

    লকডাউন না বলে সরকার সাধারণ ছুটি দিয়েছিল ৬৬দিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন।

    তাদেরও অভিযোগ রয়েছে যে, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর জন্য তাদের পরামর্শ আমলে না নিয়ে অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ড চালু করা হয়েছে।

    সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহিদুল্লাহ বলেছেন, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে দেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

    “আমাদের বক্তব্য ছিল, লকডাউনটা হলে প্রপার লকডাউন হতে হবে। যেমন আমরা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন করলাম। কিন্তু সেভাবে না করে, প্রথম তিন সপ্তাহ যদি কঠোরভাবে লকডাউন করা হতো, তারপর আস্তে আস্তে শিথিল করলে ফলাফলটা আরও ভাল পাওয়া যেতো। যেটা হয়ে গেছে। এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, জোন লকডাউন যেটা করা হচ্ছে, সেটাও প্রপার ওয়েতে করা হলে এথনও এই রোগটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।”

    সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা বা সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হচ্ছে।

  • দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধ ব্যবস্থাপনা

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধ ব্যবস্থাপনা

    জিয়াউল হক মুক্তা

    বাংলাদেশে কিছু হলেই আজকাল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়; এতে নিঃন্দেহে তার ওপর বাড়তি দায়বদ্ধতা ও চাপ আরোপ করা হয়। তার পরও তাকে উদ্দেশ করেই এই লেখা। লিখছি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। শুধু একটি এলাকার বাঁধের কথাই বলছি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে, আমাদের আইলা-পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রেক্ষাপটে রেখে।
    একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৯ সালে আইলার পরপরই দ্রুততর-পুনর্বাসন কার্যক্রমের তদারকি করতে গিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও এর ইউনিয়নগুলোর সকল চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর-মেম্বার ও ভুক্তভোগী জনগণ এক আলোচনায় আমাকে জানান যে তারা ত্রাণসাহায্য চান না, বরং চান যত দ্রুত সম্ভব আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত, যাতে তারা ঘরে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ প্লাবিত, ঘরবাড়ি জমিজিরাত ফেলে বিভিন্ন বাঁধ ও সড়কের অস্থায়ী ঝুপড়িতে আর বিভিন্ন শহরের বস্তি এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন।
    আইলার আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ও খুলনার কয়রা উপজেলার বাঁধগুলোর অনেক স্থানে ভেঙে গিয়েছিল: যেগুলোর কিছু মেরামত করা সম্ভব হলেও শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকার ভাঙনগুলো মেরামত করতে আমাদের বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএলের পক্ষ থেকে আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্থানীয়, জেলা, বিভাগীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে ও ইউএনও-ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
    অগত্যা আমাদের সংবাদ সম্মেলন, মিডিয়া ভিজিট, সমাবেশ, মিছিল, বাস্তুচ্যুতদের শোভাযাত্রা, কলসি নিয়ে সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট আর খুলনায় সাত দিনব্যাপী আইলা-মঞ্চ সংগঠিত করতে হয়েছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলী পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট ২৪ জনকে আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বাঁধ ভাঙন-মেরামত আর ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন-অভিবাসন বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার সমস্ত সংবাদের কপি পাঠিয়েছি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আর তার সারবক্তব্য পাঠিয়েছি ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে। নিজে তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির সঙ্গে দেখা করেছি দু’বার। আমাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি ওইসব এলাকায় পরিদর্শনেও গিয়েছেন।
    তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাউবোর খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে পাঁচবার কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বিভাগীয় প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছিল দু’বার। আমাদের অনুরোধে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল বাঁধ মেরামতের জন্য। কিন্তু তারও কোনো সুষ্ঠু ব্যবহার হয়নি। এজন্য মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তার দ্বিতীয় পরিদর্শনে প্রকাশ্যে-জনসমক্ষে উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছিলেন।
    সবশেষে, অগত্যা আমরা বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরের সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন; তারা বাঁধ মেরামত করেছিলেন এবং তিনি নিজে সে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উপরন্তু পরিবারপিছু ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিলেন ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য।
    ষাটের দশক থেকে নির্মিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধগুলোর একটা সমস্যা আছে। এগুলোর ডিজাইনে জোয়ার-ভাটাকে বিবেচনায় না নেওয়ায় নদীর তলদেশগুলো উঁচু হয়ে গেছে; ফলে নদীর বাইরের বসতভিটা-জমিজিরাতের উচ্চতা নদীপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে কমে গেছে; আর তার ফলে বাঁধ ভাঙনের মতো ঘটনা ঘটলে সহজেই বসতভিটা-জমিজিরাতে দিনে দু’বার নদীর লবণ-পানি ঢোকে আর বেরোয়; আর তার ফলে ভাঙনগুলো আরও প্রসারিত হতে থাকে। আগে প্রয়োজনে পানি ঢোকানো আর বের করার জন্য স্লুইচগেট ছিল, দেখভালের জন্য লোকও ছিল; বর্ণিত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সে লোকবলও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
    পাউবো বাংলাদেশের বাঁধগুলোর নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এর কাঠামোগত সমস্যা হলো ভাঙন-নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মেরামতের জন্য বাজেট তৈরি করে প্রকল্প দাখিল করলে এটা সরকারের বরাদ্দ পায়; এ প্রক্রিয়ায় বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু বাস্তবে ভাঙন একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা, কোন ঘূর্ণিঝড়ে কোন বাঁধের কোথায় কতটুকু বিস্তৃতিতে ভাঙবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। এ কাঠামোগত বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার ফলে পাউবো বাঁধ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এর ফলে অবশ্য তাদের দুর্নীতি করার সুযোগও বেড়ে যায়।
    বাঁধগুলো ভেঙে যায় প্রধানত সেসব স্থানে যেখানে এটা দুর্বল থাকে। নিজে অসংখ্য স্থানে ঘুরে ঘুরে বাঁধগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। বাঁধগুলো দুর্বল হয় মূলত দুই জায়গায়; যেখানে বাঁধ ফুটো করে পাইপ ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের জমিতে পানি আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, আর যেখানে নলকূপ বসানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় ক্ষেত্রে পাউবোর কর্মকর্তারা চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা পান।
    আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা। বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের যারা ঠিকাদার, তারা স্থানীয় নন। ফলে যে ঠিকাদার কাজ পান, তিনি ‘বিক্রি’ করে দেন আরেক ঠিকাদারের কাছে। আবার তিনি আরেকজনের কাছে। এভাবে ঠিকাদার রি-চক্রে বাঁধের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট কাজটি আর হয় না; ড্রেজিংয়ে যেমন তেলচুরি, বাঁধ সংস্কারেও তেমনি মাটি চুরি হয়। নদীতে বা বাঁধ-ভাঙন স্থানে মাটি ফেলার হিসাব রাখার কোনো উপায় নেই। বাঁধের উচ্চতা, উপরে-নিচে তার প্রশস্ততা ও বরাদ্দের তথ্য দিয়ে আমরা একবার ৩০টি স্থানে সাইনর্বোড স্থাপন করেছিলাম, যদিও তা পাউবো বা ঠিকাদারের করার কথা, ঠিকাদাররা সেগুলো তাদের নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে অপসারণ করেছিল।
    দুর্যোগকালে বসতভিটা-জমিজিরাত রক্ষায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগে জনগণ সবার আগে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে যান। এসময়কালে আমরা দেখেছি, চেয়ারম্যান-মেম্বার-জনগণ সকলে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মজুরের মতো গায়ে-গতরে খেটে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। তারা কখনও সফল হন, কখনও হন না। তাদের পরিশ্রমকে নিজেদের কাজ বলে চালিয়ে দেয় পাউবো। আম্পান-পরবর্তীকালেও জনগণ ও স্থানীয় সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁধ মেরামত করেছেন। এর বাইরে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে পাউবোও কাজ করছে; শ্যামনগরের কাশিমারী ইউনিয়নে রিং বাঁধের কাজ অংশত সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন এখনও পুরোটা প্লাবিত। এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আশা করছি।
    আর দীর্ঘমেয়াদে, আমরা দাবি করছি, ১. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের কাজ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে প্রদান করতে হবে ও তার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে; ২. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে; ৩. রিং বাঁধের বাইরে জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও পুনর্বাসন করতে হবে; ৪. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে; ৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে; ৬. সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
    এসব প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করেছি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ও সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দুটি শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ক্ষমতাসীন দল ও জোটের সংসদ সদস্য ও সংশ্নিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি, অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি আর ভুক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে।
    সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএল

  • বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    প্রতিটি সংকটে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়। জলবায়ু পরিবর্তনও তার ব্যতিক্রম নয়

    জহুরুল কবীর: ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।

    জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদী বিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ আরও প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। তবে উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগ ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

    বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    অনেক সময় বন্যার কারণে নদী ভাঙন হয়। আবার নদী ভেঙেও লোকালয় প্লাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

    ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

    বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত।

    অতিরিক্ত গরমও জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক ধরনের প্রভাব। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে মানুষের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ, আর এক্ষেত্রে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    এসব লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুদের। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    দুর্যোগের সময়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া, যৌন নিপীড়নের শিকার, শিশু শ্রম, পাচার এবং অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি থাকে

    বাংলাদেশে নারী-পুরুষ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ছেলে ও মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়। শিশুর বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে তাদের অসহায়ত্বও ভিন্ন ধরনের হয়, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েক বছরে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর (ডিআরআর) ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

    উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ বহু ভবন নির্মাণ করেছে যা ঘুর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে দুর্যোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন হারানোর হার ক্রমশ বাড়ছে।

    সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

    এই বিপুল ‍বিনিয়োগের সঙ্গে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি হতে হবে।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণের যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি

    সমাধান

    দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়ায় কমিউনিটির সামলে নেওয়ার সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ

    ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থিতি সামালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগে গতানুগতিক জরুরি ‘সাড়া ও ত্রাণ’ ভিত্তিক কার্যক্রম থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের আরও সমন্বিত ও টেকসই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।

    বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাক্টের আওতায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের একযোগে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

    উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির দিক দিয়ে অনেক কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছে। এসব দুর্যোগ সম্পর্কে জ্ঞান ও জানাবোঝাও বেড়েছে।

    উল্লেখযোগ্য তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার অনেক বিষয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ।

    ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত সাত লাখ রোহিঙ্গার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যখন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা যোগাড় করা হচ্ছিল সেই সময় বাংলাদেশ সরকার শুধু ইউনিসেফ ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার সামান্য সহায়তা নিয়ে খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে বন্যায় বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে রক্ষা করে।

    সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেয়া, সমাজের সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিশুকেন্দ্রিক পরিকল্পনার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজও করা হয়

    এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনার বিষয়গুলো হল-

    # দুর্যোগের সময় ও পরবর্তীতে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।

    # দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণের উৎস নিশ্চিতে বিনিয়োগ।

    # নীতি নির্ধারণ ও উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়াদি ও তাদের প্রয়োজন মেটানোর পদক্ষেপ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।  

    ইউনিসেফের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এজেন্ডায় দুর্যোগকালে সব বয়সী শিশুরা যেসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার সবই  বিবেচনায় নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত প্রয়োজনগুলো যাতে মেটানো যায় সে লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক (ডেটা সিস্টেমের) সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    পানীয় জলের উন্নততর অবকাঠামো এবং স্কুলে স্কুলে পৃথক ল্যাট্রিন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিরাপদ পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মেয়ে ও নারীদের উপযোগী স্থাপনা প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি এবং এমনকি শিশুদেরও সহায়তা নেওয়া হয়।

    নির্দিষ্ট বয়সভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের জন্য ইউনিসেফের কার্যক্রমের কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হল:

    নবজাতক, ছোট শিশু ও তাদের মায়েরা

    বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত সমস্যাগুলো সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ইউনিসেফ। তাপদাহ, নতুন নতুন এলাকায় রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং দুর্যোগকালে আহতদের চিকিৎসা প্রভৃতি বর্তমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় নিয়ে আসা যায়।

    সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের পাঠ্যসূচিতে জরুরি পরিস্থিতির প্রস্তুতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দুর্যোগে অসহায় এলাকাগুলোতে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণে ইউনিসেফের সহায়তা কাজে লাগানো হয়।

    দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে কমিউনিটি রেডিও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ গর্ভধারণকালে হাইপারটেনশন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার জন্য যে সমস্যায় ভোগেন অনেক মা, সে সম্পর্কিত তথ্য ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে।

    দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এইচআইভির ওষুধ ও সেবা সহজলভ্য করার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    স্কুলের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। কোনো একটি দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রতিরোধে পাইলট প্রোগ্রামে সহায়তা করা হচ্ছে।

    বাবা-মার সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বাবা-মার প্রশিক্ষণে জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুর সুরক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

    দুর্যোগ পরিস্থিতি ও এর পরেও শিশুর জন্য সেবাগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অংশীদারদের নিয়ে ইউনিসেফ জেলা পর্যায়ে ‘জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার’ জন্য পলিসি ও ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করেছে।

    সংকটের ঝুঁকি বাড়ায় দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে ইসিডি সেবাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও টেকসই পদ্ধতি বের করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করছে ইউনিসেফ।

    শিশুর খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখার উদ্যোগে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। দুর্যোগের সময়ে ভুক্তভোগীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতেও সহায়তা দেওয়া হয়। জলবায়ু সহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবন ও চাষেও উৎসাহ দেয় ইউনিসেফ।

    দুর্যোগকালে দূষিত পানির মাধ্যমে প্রায়ই পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাইজিন (ওয়াশ) স্থাপনা নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্থাপনা যাতে জলবায়ু সহিষ্ণু করা যায় সেজন্য গবেষণা ও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। জলাবদ্ধতা, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা ও খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিতে এমএআর সিস্টেম ও অন্যান্য জলবায়ু সহিষ্ণু পানি প্রযুক্তির উন্নয়নেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইউনিসেফ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে উন্নততর রান্নার চুলার ব্যবহার উৎসাহিত করছে।

    প্রাথমিক স্কুলবয়সী শিশু

    পরিবেশগত জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহীত পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসৃত হওয়া উচিত, যাতে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের জন্য জেলা পর্যায়ে সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাজ করে ইউনিসেফ।

    আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার দ্বিতীয় দফার এই সুযোগে তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির স্থাপনা বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সে বিষয়েও শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়। ‘লিটল ডক্টর প্রোগ্রামের’ আওতায় প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্য বিধি শেখানো হয়।

    বাবা-মার একজন আছেন এমন শিশু এবং দুঃস্থ মায়েদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। সংকটের আগে, সংকটকালে ও পরে এসব সেবা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে কাজ করছে ইউনিসেফ।

    পরিবর্তনের দূত হিসেবে কিশোর-কিশোরী

    মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নাজুক এলাকাগুলোতে) জীবন-দক্ষতা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে ইউনিসেফ। সান্ধ্যকালীন স্কুল ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুল এভাবে বিকল্প উপায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের পরীক্ষামূলক উদ্যোগে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। বিশেষ পরিস্থিতিতে শ্রম বাজারে ঢুকে পড়া শিশুর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যও রয়েছে এই উদ্যোগের পেছনে।

    জীবন-দক্ষতা শিক্ষায় বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেমন পাচার, শহুরে সেন্টারে স্থানান্তর, আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস ও যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেদের রক্ষার কৌশল শেখানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও এইচআইভি নাজুকতার মধ্যে সম্পর্ক বের করতেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    দুর্যোগের পর কিশোরী মেয়েরা বাল্য বিয়ে, শিক্ষার সুযোগ হারানো ও অন্যান্য বঞ্চনার ঝুঁকিতে থাকে। ইউনিসেফ শিক্ষক ও কমিউনিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দেয় যাতে মেয়েদের শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত মোবাইল টিম ও শিশুবান্ধব অন্যান্য উদ্যোগে নিপীড়ন, সহিংসতা ও জরুরি পরিস্থিতিতে উপেক্ষার বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য কিশোরী মেয়েদের সক্ষম করে তোলে।

    আরও কিশোর-কিশোরী এবং রেডিও শোনা গ্রুপগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উদ্যোগগুলোতে আরও সম্পৃক্ততা চায় ইউনিসেফ। শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বড় কারণ। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণে কমিউনিটির সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ সাঁতার প্রোগ্রাম চালানো হয়।

    লোকজনের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামনের কাতারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং শহর ও পৌরসভায় মেগা ফোন, সৌরশক্তি চালিত রেডিওর সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউনিসেফ।

    নীতি ও সচেতনতা

    ইউনিসেফের সংগ্রহে মনস্তাত্ত্বিক ও বিনোদনমূলক নানা ‘কিট’ বা উপকরণ রয়েছে এবং সেগুলো ইতোমধ্যে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে দেওয়াও হয়েছে। এটা জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুদের ‘ন্যূনতম সেবা প্যাকেজের’ অন্তত তিনটি উপকরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।

    ইউনিসেফ শহরাঞ্চলে শিশুদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের শিশুকেন্দ্রিক অভিযোজন ও স্কুল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

    প্রান্তিক লোকজনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিয়ে শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তহবিল সংগ্রহেও সহায়তা করে ইউনিসেফ।

    ইউনিসেফ তার ডিজাস্টার অ্যাক্ট ২০১০ এর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় শিশুবান্ধব প্রস্তুতি, সাড়া প্রদান, সুরক্ষা ও ঝুঁকি প্রশমনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার চালাচ্ছে।

  • তালায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উত্তরণের ত্রাণ সহায়তা

    তালায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উত্তরণের ত্রাণ সহায়তা

    তালা প্রতিনিধি: তালায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত একশত পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ । শুক্রবার (৫ জুন) সকালে ‘স্টার্ট ফান্ড এবং ইউকে ইন বাংলাদেশ’ এর সহযোগিতায় ‘উত্তরণ’ উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে উক্ত ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেয়। তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার, উত্তরণ কর্মকর্তা মোঃ রেজওয়ান উল্লাহ, পার্থ কুমার দে, তীর্থ কুমার দে, খান মোঃ আল আমীন, এনামুল ইসলামসহ সংস্থার স্টাফরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রত্যেক পরিবারের মাঝে নগদ ৩ হাজার টাকা, ১০টি সাবান, ১ কেজি ডিটারজেন্ট, ২ প্যাকেট ন্যাপকিন, ৫০ টি মাস্ক, ১টি মগ, ট্যাপসহ বালতি এবং ১টি করোনা সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করা হয়। উল্লেখ্য, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে জরুরী ত্রাণ সহায়তার অংশ হিসেবে উক্ত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

  • জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জুম মিটিং

    জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জুম মিটিং

    জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালয়ের সভাপতিত্বে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ পরবর্তী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রণ বিতরণ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাতক্ষীরা-২ নির্বাচনী এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি,  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, মেয়র সাতক্ষীরা পৌরসভা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান,  ডিডি এন এস আই, উপপরিচালক- স্থানীয় সরকার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ডিআরআরও এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ জুমের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন।