নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় কৃষকের মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫নভেম্বর) এসএসিপি প্রকল্পের অর্থায়নে ও কৃষিগবেষণা কেন্দ্র বেনারপোতা সাতক্ষীরা সহযোগিতায় ঘেরের বাঁধে সবজি চাষ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বিএআরআই উদ্ভাবিত আম ও মাল্টার মাতৃবাগান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোসা: তাজকেরা খাতুন। পরিদর্শনের সময় কৃষি মন্ত্রালয়ের যুগ্ন সচিব কৃষকদের সাথে সবজি চাষের বিভিন্ন দিক নিয়ে মত বিনিময় করেন এবং তাদের কাজের প্রশংসা করেন এবং কৃষি বান্ধব সরকারের কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সহযোগি তার কথা তুলে ধরে উৎসাহ প্রদান করেন।
এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা বেনারপোতার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মোশাররফ হোসেন। তিনি এ প্রকল্পের আওতায় বিগত খরিফ-১ ও খরিফ-২ মৌসুমে সম্পাদিত কাজের বিবরণ তুলে ধরেন এবং আসন্ন রবি মৌসুমে গৃহীত গবেষণা কর্মসূচী অবহিত করেন। এ সময় তিনি এসএসিপি প্রকল্পের অর্থায়নে অত্র কেন্দ্রে স্থাপিত গ্রীষ্মকালিন টমেটোর মাঠপরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশকরেন এবং এর চাষ বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় উপস্থিত আরও ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: নুরুলইসলাম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ী খুলনার উপ-পচিালক কৃষিবিদ মো: হাফিজুর রহমান এছাড়া বিএডিসি ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Category: কৃষি
-

সাতক্ষীরায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের কৃষকের মাঠ পরিদর্শন
-

পশু পালন ও সবজি চাষে স্বাবলম্বি হচ্ছেউপকূলীয় আশাশুনির দু’ইউনিয়নের নারীরা
জহুরুল কবীর : উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলারদুই ইউনিয়নের নারীরা পশু পালন ও সবজি চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছে। পুরুষ প্রধান সংসারের গৃহিনীরা সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও আশাশুনির প্রতাপনগর ও আনুলিয়া ইউনিয়নের গৃহিনীরা সংসারের কাজের ফাঁকে (অবসর সময়ে) বাড়ির মধ্যে পশু পালন ও সবজী চাষে আত্মনিয়োগ করে জীবন মান উন্নয়নে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে সংসারে নিজের কর্মের গুরুত্ব অপরিহার্য করার পাশাপাশি সামাজিকভাবে পরিবারকে দিন বদলের যাত্রায় সংযুক্ত করে সম্মানজনক পর্যায়ে নিতে সহযোগিতা দিয়ে আসছে এসব নারীরা।
আশাশুনি উপজেলা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় লবণাক্ততায় ভরা। এখানের জীবন যাত্রা এখন লবণপানির মাছ চাষ ও কৃষি নির্ভর হলেও অনেক ভূমি এখনো পতিত থাকে। মানুষের একটি বড় অংশ কর্মহীন এবং অধিকাংশ গৃহিনীরা শুধুমাত্র গৃহস্থলী কাজ নিয়েই সময় কাটায়। এসব গৃহিনীদের মধ্যে একজন হলেন প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা গ্রামের রঞ্জন মন্ডলের স্ত্রী মলিনা ম-ল। তিনি বলেন, এনজিও ফ্রেন্ডশিপের সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনায় সবজীচাষ করে সংসারের চাহিদা পুরনের পরও ৫/৬ হাজার টাকার সবজী বিক্রয় করেছেন। এই টাকা থেকে ১১টি হাঁসের বাচ্চা ও ২টি রাজ হাঁস ক্রয় করে ফার্ম করেছেন। ফ্রেন্ডশিপের দেয়া ছাগল লালন পালন করে গাভীন হয়েছে। খুব শীঘ্রই তিনি ছাগলের বাচ্চা পাবেন। সবজী বিক্রয়ের টাকা ও হাঁসের ডিম বিক্রয় করে তিনি সংসার খরচ নির্বাহসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি টাকা সঞ্চয়করছেন।
একই গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডলের স্ত্রী তাপসী বলেন, গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি ফ্রেন্ডশিপের দেওয়া ছাগল পালন করে ২টি বাচ্চা পেয়েছে। একটি বিক্রিকওে মেয়ের জামাইকে স্বর্ণের আংটি দিয়েছেন। সবজী চাষ করে সংসারের চাহিদা পুরনের পর এক বছওে ৭ হাজার টাকার সবজী বিক্রি করেছেন। এই টাকা দিয়ে ২৩টি হাঁস-মুরগি কিনেছেন। প্রতিদিন ৬টি করে ডিম দিচ্ছে, সামনের সপ্তাহ থেকে আরও ৬/৭টি ডিম বেশি আসবে বলে তিনি জানান।
উপজেলার অপর ইউনিয়ন আনুলিয়ার ঘাসটিয়া গ্রামের রাজু রানী জানান, সবজী চাষের মাধ্যমে সংসারের চাহিদা পুরণ তিনি করে ৯ হাজার টাকার সবজী বিক্রি করেছেন। একটি ছাগল লালন পালন করে সেখান থেকে ৪টি বাচ্চা হয়েছে। একই গ্রামের অনুপমা রানী হালদারর ১টি ছাগল পুশে ৫টি বাচ্চা পেয়েছে। আরও একটি ছাগল তিনি ক্রয় করেছেন। সবজী চাষ করে ৫০০০ টাকা সবজী বিক্রি করেছেন।
স্বাবলম্বি এসব নারীরা বলেন, আমরা মেয়ে হিসাবে সংসারে স্বামীর মুখাপেক্ষী হয়ে ছিলাম। প্রয়োজনীয় কিছু পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। আজ আমরা নিজেরা আয় করছি, সংসার চালানোয় অংশীদার হয়েছি। নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি, সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোয় ব্যয় করছি। আমরা সবাই ফার্ম তৈরি করতে আগ্রহী। মেয়েরা এখন সংসারে বোঝা নয়, তারাও সংসারের হাল ধরতে পারে এ আত্মবিশ্বাস সংসার ও সমাজে প্রমাণিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে অলাভজনক ও অরাজনৈতিক বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ চর ও উপকূলীয় এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত জনগণের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সমমর্যাদাসহ পূর্ণ জীবনমান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এসব মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। ঞৎধহংরঃরড়হ ঋঁহফ চৎড়লবপঃ (অঝউ) এর মাধ্যমে সংস্থাটি আনুলিয়া ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের ঘাসটিয়া, ভোলানাথপুর, নয়াখালী, নাকনা, দরগাতলা আইট গ্রামে প্রত্যেক কমিটিতে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট ৬টি ডিএমসি কমিটি গঠন করেছে। এদেরকে নিয়ে কমিটি প্রতি সপ্তাহে একটি করে মিটিং করে থাকে। এদেরকে পশু পালন ও সবজী চাষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব অসহায় দুস্থ সদস্যদের প্রত্যেককে একটি করে ছাগী ছাগল বা ভেড়া এবং মৌসুম ভিত্তিক উন্নতমানের ২১ প্রকারের বীজ, কীটনাশক ফাঁদ ও ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদবৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন যেমন- বাল্য বিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন বন্দ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার নিয়মসহ বিভিন্ন শিক্ষা মূলক আলোচনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণে উপজেলা কৃষি অফিসার ও মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রজেক্ট ম্যানেজার শহীদুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় প্রজেক্টের ফ্যাসিলেটেটর আঃ মান্নান, আসাদুল হাসানের সহযোগিতায় আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ইউনুস আলীর তত্ত্বাবধানে এলাকার ১৮০ জন সদস্য পারিবারিক শিক্ষা প্রহণ এবং পশু পালন ও সবজী চাষ করে নিজেদের খাদ্য চাহিদা ও পুষ্টি পুরণে সক্ষম হয়েছেন। সাথে সাথে আর্থিক লাভবান হয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য ভিত তৈরিতে এগিয়ে এসেছেন। তাদের দেখাদেখি এলাকার অনেক পরিবারের নারীরা একাজে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। ফলে এলাকার নারী সমাজ স্বাবলম্বি হচ্ছে। -

দেবহাটায় কৃষি বিভাগের সহায়তায় দুগ্ধ খামার ও চাষাবাদে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রতিবন্ধী মেহেদী
স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘলঘলিয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মেহেদী। বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের সংসারের বড় ছেলে সে। জন্ম থেকেই মেহেদী সম্পূর্ন বাকপ্রতিবন্ধী এবং চল্লিশ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী।
মেহেদী জন্মের পর কখনো কথা বলতে পারেনি, একই সাথে সম্ভবত পুষ্টিহীনতার কারনে তার রয়েছে শারিরীক প্রতিবন্ধকতা। চলাফেরা করতে গেলেই সারা শরীর কাঁপতে থাকে মেহেদীর। প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য মেহেদী গত দুবছর আগেও মেহেদী তার পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে ছিল। সহায় সম্বল বলতে বসতভিটা এবং মৎস্য চাষযোগ্য ছোট্ট একটি ঘের ছাড়া তেমন কিছুই ছিলোনা মেহেদীর পরিবারের।
বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মেহেদীকে নিয়ে তার পরিবার যখন সীমাহীন দুশ্চিন্তায় ভুগছিল ঠিক সেই সময়ে মেহেদীকে বুকে টেনে নেন দেবহাটার উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোস্তাক আহমেদ।
তিনি মেহেদীকে স্বাবলম্বী করে তুলে একটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গত দুই বছর ধরে নিরালস পরিশ্রম করে আসছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তিনি একের পর এক প্রশিক্ষণ দিয়ে একজন দক্ষ দুগ্ধ খামারী এবং সফল সবজি ও মৎস্য চাষী হিসেবে মেহেদীকে গড়ে তুলেছেন। সঠিক উপায়ে কিভাবে মৎস্য ও সবজি চাষ এবং দুগ্ধ খামারের পরিচর্যা করতে হয়, তাও মোস্তাক আহমেদ নিজেই শিখিয়েছেন মেহেদীকে।
দীর্ঘ দু’বছর অক্লান্ত প্রচেষ্টার পর উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোস্তাক আহমেদের উদ্যোগটি সফলতা পেয়েছে। প্রতিবন্ধী মেহেদী এখন তাদের মৎস্য ঘেরে মাছ চাষ এবং একই সাথে ঘেরের ভেড়ি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনাতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে। সে এখন একজন দক্ষ কৃষক।
ঘেরে মাছের খাদ্য দেওয়া, সবজির পরিচর্যাসহ যাবতীয় কাজ নিজে হাতেই করছে মেহেদী। পরিবারের দারিদ্রতা লাঘবের জন্য বাড়ীতেই স্বল্প পরিসরে একটি দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছে সে। ওই খামারে বাচ্চাসহ একটি গাভীও রয়েছে মেহেদীর।
গাভীর জন্য নিয়মিত ঘাস ও খড় কাটা, এমনকি গাভীর পরিচর্যা থেকে শুরু করে দুধ দোহনের যাবতীয় কাজ অনায়েসেই করছে মেহেদী।
উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোস্তাক আহমেদ তার পাশে থাকায় এবং কৃষি বিভাগের মাধ্যমে একের পর এক প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য আজ মেহেদীতে একজন দক্ষ সবজি ও মৎস্য চাষী এবং দুগ্ধ খামারী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মেহেদীর বাবা আবুল কাশেমসহ পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিবন্ধী হওয়া স্বত্ত্বেও কেবলমাত্র মানুষের ইচ্ছা শক্তি এবং প্রচেষ্টা থাকলেই যে সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেবহাটার মেহেদী। সে এখন স্বাবলম্বী। সে আজ আর পরিবারেরও বোঝা নয়, সমাজেও বোঝা নয়। -

সুপরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে: জাসদ
পাটখাতের পুনর্জাগরণের চেষ্টার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে বর্ণনা করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার রোববার এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল গুলোকে ‘এন্টারপ্রাইজ’ হিসাবে পরিচালনারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে যখন পাটের জিনোম আবিস্কৃত হয়েছে, পাটের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে, তখন পাটকল বন্ধ করে দেওয়া এবং পাট অর্থনীতিকে পরিত্যক্ত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”
সরকার লোকসানে থাকা ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘দ্রুত’ এ পাটকল গুলো সচল করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। পিপিপির উদ্যোগের সমালোচনা করে জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আদমজী বন্ধ হবার পর সেখানে আধুনিক পাট কারখানা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, আদমজীর জমিতে শিল্প প্লট করে আর কারখানার সবকিছু স্ক্র্যাপ করে জমি আর স্ক্র্যাপের হরিলুট হয়েছে। পিপিপির অধীনে সরকারের পাটকলগুলো চালু করার সদিচ্ছাও আদমজীর মত হরিলুটের খেলায় হারিয়ে যাবে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে।
“গত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে পুঞ্জীভূত লোকসান ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিমান বা বিদ্যুতের কুইক রেন্টালসহ বড় লোকসানি খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ লোকসান বা অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা পাটশিল্পের ৫০ বছরের পুঞ্জিভূত লোকসানের চাইতেও বেশি।”
পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে যে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা থেকে মাত্র ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং ২৫ হাজার শ্রমিককে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে মজুরি দিয়ে লাভজনকভাবে ‘পরিচালনা করা সম্ভব’ ছিল বলে মনে করেন জাসদ নেতারা। -

ভারত থেকে চারা আনলেন, গড়ে তুললেন আঙুরের বিশাল বাগান
কৃষি ডেস্ক: আঙুর ফল চাষ করে বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় মামা-ভাগ্নে। বাণিজ্যিক চাষ করে দেশে আঙুরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলেও তাঁরা মনে করেন।
আঙুর চাষি আমিরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের জন্য তিনি ভারত ভ্রমণ করে মুম্বাইয়ের নাছিকের আঙুর বাগানে চাষ সম্পর্কে জানেন। সেখান থেকে ২৫টি আঙুরের চারা কিনে দেশে ফেরেন। চার দিন সংরক্ষণে রেখে গাছগুলো রোপণ করেন পাঁচ কাঠা জমির ওপর। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা চাইলে তিনি বাগানে আসেননি। পরবর্তী সময় চারটি আঙুরগাছের চারা মারা যায়। এরপর তিনি কৃষিতে অভিজ্ঞসম্পন্ন ভাগ্নে তরিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের প্রচেষ্টায় আঙুরগাছ পরিচর্যা শুরু করেন। ছয় মাস পর কয়েকটি গাছে কিছু আঙুর ফল আসে। অল্প ফল ধরায় হতাশ না হয়ে ভারতীয় আঙুর চাষির পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবার পরিচর্যা শুরু করেন। এ বছর আঙুরগাছের মাচায় গাছগুলোর ডালে ডালে থোকায় থোকায় আঙুরে ভরে যায়। আঙুরের পরিপক্বতা এসেছে এবং পাকা আঙুরগুলো মিষ্টিও হয়। আঙুরের একটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি আঙুর পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন চাষি। তিনি আরো জানান, দুই বিঘা জমিতে আঙুর চাষ করলে তাতে চারা কেনা থেকে পরিচর্যা শেষে ফল পাওয়া পর্যন্ত খরচ হবে মাত্র এক লাখ টাকা। ফলন ভালো হলে বছর শেষে প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার আঙুর ফল বেচতে পারবেন।
তিনি মনে করেন দেশে আঙুরের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। আঙুর চাষের সফলতার গল্প শুনে দর্শনাসহ আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ মামা-ভাগ্নের আঙুর বাগানে ভিড় জমাচ্ছেন। বাগান ঘুরে দেখে আঙুর চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয়রা।
আঙুর চাষে সফলতার খবর শুনে দর্শনায় আঙুর বাগানে ছুটে আসেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, মামা-ভাগ্নের বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে সার্বিক সহযোগিতা করবে কৃষি অফিস।
-

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘুর্নিঝড় আম্পান দুর্গত এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ
এলাকা ঘোষনা, উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, ঝড়-জলোচ্ছাস,
নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষকে
রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে
জেলা নাগরিক কমিটি। সোমবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে
বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, মমতাজ আহমেদ বাপী,
এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, আবুল হোসেন, আব্দুল
বারী, এম কামরুজ্জামান, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছাস ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর বাঁধ
ভেঙে প্লাবিত হওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত
যুদ্ধ করে চলেছে। এক সময় অন্য জেলা থেকে লোক না এলে এ এলাকার ধান কাটা
হতো না সেই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের নানামুখি উদ্যোগ নেয়ার সত্বেও এই এলাকায় দারিদ্র
পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষাসহ অন্যান্য সূচকেও এই এলাকা
পিছিয়েই থাকছে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
মানববন্ধন থেকে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ
প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন এবং
সেই অথরিটিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এবং বিভিন্ন
দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর
প্রদান করা হয়। -

সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (০৬ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টায় সদর উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে লাবসা ব্লকের নলকুড়া মাঠে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে মাঠ দিবসে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) জসিম উদ্দিন, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন, আধুনিক প্রযুক্তর মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মো. শামিউর রহমান, লাবসা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়া বাবু, উপসহকারি কৃষি অফিসার অমল ব্যানার্জী, উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. আনিছুর রহমান, উপসহকারি কৃষি অফিসার আব্দুস সাত্তার ও ব্লকের কৃষক মো. আরিজুল ইসলাম প্রমুখ। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মাঠ দিবসে ৫০ জন কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেয়। -

সাতক্ষীরায় বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল আমন ধান চাষে কৃষক প্রশিক্ষণ
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের সম্প্রসারণযোগ্য জাত সমূহের পরিচিতি, চাষাবাদ পদ্ধতি, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বীজ সংরক্ষণ কৃষক প্রশিক্ষণ সোমবার (০১ জুন) সকাল ১০টায় বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা’র হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র আয়োজনে, বিনা উপকেন্দ্র’র উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. রোক্নূজ্জামান’র সভাপতিত্বে কৃষক প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন,‘খাদ্য উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কৃষিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশের কোন জমি অনাবাদী না রেখে প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন। অধিক ফসল উৎপাদনে স্বল্প মেয়াদকাল জাতের বীজ উদ্ভাবন করছে বিনা।’ যে জমিতে ১টি ফসল হয় সে জমিতে ২টি ফসল, যে জমিতে ২টি ফসল হয় সেই জমিতে ৩টি ফসল এবং যে জমিতে ৩টি ফসল হয় সে জমিতে ৪টি ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের কাজ করতে হবে। দিন দিন দেশের কৃষকরা বিনা উদ্ভাবিত বীজের প্রতি নির্ভরশীল হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কোন জমি অনাবাদী না রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন।’ তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষয় ক্ষতি পোষাতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রতি গুরুত্ব দিতে কৃষকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন, এআরই বিভাগ বিনা ময়মনসিং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আল-আরাফাত তপু, বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, ফার্ম ম্যানেজার মো. ফররুখ আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের সম্প্রসারণযোগ্য জাত সমূহের পরিচিতি, চাষাবাদ পদ্ধতি, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বীজ সংরক্ষণ কৃষক প্রশিক্ষণে সরকারি নির্দেশনা মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০০ জন কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেয়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রিপন হোসেন। -

সাতক্ষীরায় শ্রমিক সংকটে নিজেই মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটলেন এমপি রবি
মাহফিজুল ইসলাম আককাজ ঃ সাতক্ষীরায় শ্রমিক সংকটে মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটলেন সাতক্ষীরা ০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। মঙ্গলবার (১২ মে) বিকালে করোনা ভাইরাস’র প্রভাবে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে সদরের বাঁকাল বাঁশতলা এলাকায় মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটার ব্যবস্থা করেন এমপি রবি। এসময় এমপি রবি বলেন,‘ এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও করোনা আতঙ্কে মিলছে না ধানকাটা শ্রমিক। বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক। জননেত্রী শেখ হাসিনার আহবানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মাঠে গিয়ে স্বেচ্ছায় কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা আরও যেন উৎসাহ পায় সে কারণে আমি মেশিন দিয়ে মাঠে গিয়ে ধান কাটলাম। করোনার কারণে কৃষকরা যখন দিশেহারা তখন বিনাপারিশ্রমিকে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ধান কেটে দিচ্ছেন।’
শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নিজেই মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটলেন এমপি রবি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র ভারপ্রাপ্ত উপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ জসিম উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশিদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আনিছুর রহমান, দৈনিক যুগেরবার্তা পত্রিকার সম্পাদক আবু নাসের মো. আবু সায়ীদ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু সায়ীদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন, দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পত্রিকার সিনিয়র সহ-সম্পাদক শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু, উপ-সহকারি কৃষি অফিসার রঘুজিৎ গুহ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য কাজী কামরুজ্জামান, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর বিন সেলিম যাদু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান মিন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আনিছুর রহমান প্রমুখ। -

তালায় বোরো ধান কিনতে লটারির মাধ্যমে ১৭১৬ কৃষক নির্বাচন
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালায় চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধান কেনার জন্য ১৭১৬ জন কৃষককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে। ৭২৩৩ জন কৃষকের তালিকা করে লটারির মাধ্যমে ১৭১৬ জন নির্বাচিত কৃষকের মাধ্যমে ১৭১৬ টন ধান ক্রয় করা হবে। সোমবার (১১ মে) সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই লটারি অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় উপস্থিত ছিলেন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানউপজেলা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আবুহেনা মোস্তফা কামাল, উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ,সাতক্ষীরা জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মিকাইলসহ কৃষি ও খাদ্য অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের নির্দেশনায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে অ্যাপস’র মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। কোনো কৃষক কোনো কারণে ধান দিতে না পারলে অতিরিক্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।
তিনি আরো জানান, প্রতি কৃষকের কাছ থেকে এ বছর ২৬ টাকা কেজি দরে এক টন করে মোট ১৭১৬ টন ধান ক্রয় করা হবে। -

সাতক্ষীরায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনল সেনাবাহিনী
স্টাফ রিপোটার ঃ সাতক্ষীরায় অনুকূল আবহাওয়ায় এবার প্রচুর সবজি উৎপাদন হলেও করোনার কারনে সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকের এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি লাঘব করতে সরাসরি মাঠ থেকে সবজি কিনছেন যশোর সেনানিবাস। মঙ্গলবার সকালে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে তারা প্রায় ৫মণ সবজি ক্রয় করেন। কৃষকদের এই দুঃসময়ে এভাবে পাশে দাঁড়ানোয় সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সাইদুর রহমান জানান, যশোরে সেনানিবাসের জন্য প্রচুর পরিমাণ সবজির চাহিদা রয়েছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে সেই চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে এক মাস সবজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তিনি আরও জানান, কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম বঞ্চিত হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন মূলত সেই জন্যই সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ -

নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ক মতবিনিময় , ৩১ মে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত
স্টাফ রিপোটার ঃ সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী ৩১ মে থেকে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি আম ভাঙা ও বাজারজাত করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া কোন বাগানের আম যদি আগে পাকে, তবে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বাগান পরিদর্শন করে অগ্রিম আম ভাঙার সিদ্ধান্ত দেবেন।
সোমবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
আরও বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলামসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও আম চাষীবৃন্দ।
সভায় সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, চাষীই মূল শক্তি। চাষীরাই দেশের প্রাণ। তাদের রক্ষা করেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে, অবশ্যই উৎপাদিত আমের গুণাগুণ রক্ষা করে।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে। এই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসায়ী ও ফল চাষীদের নিয়ে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সকলকেই সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। -
করোনা কালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষি খাতে করণীয় প্রস্তাব
গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন: মাহা মির্জা
সাধারণভাবে অনিশ্চয়তায় ভরা কৃষকদের জন্য করোনাকালে বিপর্যয় গভীর সংকট তৈরি করেছে। এই সংকটের উৎস কৃষিখাতে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈরী নীতি এবং করোনা কারণে বিদ্যমান বিধিনিষেধ। এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই লেখায় কৃষি খাতের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন করণীয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৮ ভাগ কৃষিতে নিযুক্ত। এই কৃষকদের বড় অংশই জমির মালিক নন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রিপোর্ট (২০১৮) অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ২ কোটি ৪৩ লাখের বেশি মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে পারিবারিক সহকারী : ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার জন বা প্রায় ৩৫ শতাংশ; স্ব-কর্মসংস্থান: ৮১ লাখ ৭৭ হাজার বা প্রায় ৩৩ শতাংশ; কৃষিশ্রমিক: ৭২ লাখ ৯১ হাজার জন বা প্রায় ৩০ শতাংশ; এবং অন্যান্যভাবে নিয়োজিত: ১ লাখ ৬৮ হাজার শ্রমিক।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বছরের পর বছর কৃষিতে ব্যক্তিগত লোকসানের ভার বইতে হচ্ছে কৃষককে। অথচ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা এফএওর (২০১৯)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষক ২০১৭ সালে যে কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছেন, তার আর্থিক মূল্য প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। অনেকের মতেই, জমির মালিকানার পরিবর্তন বা ভূমি সংস্কার ছাড়া বাস্তবে কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব না। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় অন্ততপক্ষে বর্গা কৃষককে কীভাবে সরকারি ঋণ ও প্রণোদনার আওতায় আনা যায়, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবে কৃষিকাজ কিছুটা চলমান থাকায় সকল কৃষক যদিও কর্মহীন হয়ে পড়েননি, তবে পরিবহন সংকটের কারণে উৎপাদিত ফসল ও সবজি ঠিক সময়মতো বাজারজাত করতে না পারায় এবং দুর্যোগের সুযোগে ফড়িয়াদের সিন্ডিকেটের ফলে সবজির দাম পড়ে যাওয়ায় দেশের প্রতিটি অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বজনকথার পক্ষ থেকে কৃষি খাতের জন্যে একটি দুর্যোগকালীন সহায়তা প্রস্তাব তৈরী করা হয়। প্রস্তাবে কৃষি খাতের বহুমুখী বাস্তবতা ও চাহিদা বিবেচনা করে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, এবং দীর্ঘমেয়াদি করণীয়গুলো উত্থাপন করা হলো।
স্বল্পমেয়াদে করণীয়
বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কৃষকের পক্ষে তাদের উৎপাদিত শস্য/সবজি পাইকারি বা খুচরা বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছেনা। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকের দুরবস্থার খবর আসছে। উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনকারী কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় টমেটো, শশা, বেগুন, লাউ, কুমড়া, মরিচ সহ নানারকমের সবজির দাম কেজিতে মাত্র ৪-৫ টাকায় নেমে এসেছে। দিনাজপুরের কৃষক ৫০ পয়সা কেজিতে শশা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন এমন খবরও আমরা পাচ্ছি। পরিবহন সংকটের পাশাপাশি ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেও কৃষক দাম পাচ্ছেননা এমন অভিযোগও আছে।
উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনকারী কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় টমেটো, শশা, বেগুন, লাউ, কুমড়া, মরিচ সহ নানারকমের সবজির দাম কেজিতে মাত্র ৪-৫ টাকায় নেমে এসেছে। দিনাজপুরের কৃষক ৫০ পয়সা কেজিতে শশা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন
এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবজি-কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে এবং উৎপাদিত সকল শস্য নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে স্বল্পমেয়াদে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাইকারি বাজার চালু রাখা
বর্তমানে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে খুচরা বাজার সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত চালু থাকে। অথচ পাইকারি বাজারগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে পাইকারি বাজার গুলো ন্যূনতম ৫ ঘন্টা চালু রাখা জরুরি। বহু এলাকায় ক্ষেত থেকে সবজি বা অন্যান্য পচনশীল শস্য পাইকারি বাজার পর্যন্ত পরিবহণ করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যান নেই। কাজেই বিদ্যমান ২-৩টি ভ্যানকে ১০ থেকে ১৫ বার ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। কাজেই পাইকারি বাজারগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে পৌরসভার অধীনে থাকা গাড়ি গুলো কাজে লাগাতে হবে। প্রশাসনের কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি করবেন।
২. জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার মাঠগুলোকে বাজার হিসাবে কাজে লাগানো
বাজারে অতিরিক্ত জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার ভিতরের খোলা মাঠগুলোকে বিভিন্ন এলাকার বাজার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মহাখালী, সায়দাবাদ এবং কারওয়ান বাজারে ইতিমধ্যেই বাজার বসানোর পর্যাপ্ত জায়গা আছে। এছাড়াও ঢাকার অন্যান্য খালি মাঠগুলোকেও বাজার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশাসনের কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি করবেন। এছাড়াও প্রতিটি এলাকার ওয়ার্ড কমিশনের পক্ষ থেকে এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা/মাছ, ফল বা সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত শ্রমজীবীদের কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না।
মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয়
১. আসন্ন বোরো মৌসুমে ক্ষেতমজুর সংকট ও করণীয়
দেশে প্রায় ৪৭-৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এই বিপুল পরিমাণ ধান কাটার ক্ষেত্রে প্রতিবছরই ক্ষেতমজুর সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা বলছে, হাওড় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার মোট বোরো আবাদ হয়েছে নয় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে, যার অর্ধেক সমতলে, বাকিটা মূল হাওড়ে। এসব জমির ধান কাটতে মোট শ্রমিকের প্রয়োজন প্রায় ৮৪ লাখ জন। কিন্তু সেখানে শ্রমিকের ঘাটতি আছে ১৫ লাখ জনের বেশি, যা মোট প্রয়োজনের ১৮ শতাংশ। ফলে এ সময়ে প্রায় ২৫ দিনের জন্যে প্রতিদিন প্রায় ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে সেখানে (বণিক বার্তা, এপ্রিল ১৬, ২০২০)।
বর্তমানে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। চলতি মৌসুমে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক যেতে পারছেন না সেখানে। ফলে এবার শ্রমিক সংকট আরো তীব্র হবে। অবশ্য সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের ধান কাটার কাজে লাগানো হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শ্রমিক সংকট এড়াতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দেশের শ্রম উদ্বৃত্ত জেলাগুলো থেকে শ্রমিকদের হাওড় অঞ্চলে পাঠানোর জন্য তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা শ্রম উদ্বৃত্ত জেলা বিশেষ করে মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় হাওড়ে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার তালিকা করেছে। এরই মধ্যে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা তাদের তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন (বণিকবার্তা, এপ্রিল ১৬, ২০২০)।
এক্ষেত্রে এক অঞ্চলের শ্রমিক অন্য অঞ্চলে পরিবহণের কাজটি করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিবহণ (ট্রাক/বাস) ব্যবহার করতে হবে। ঠাসাঠাসি বা গাদাগাদি করে শ্রমিক পরিবহণ করা যাবেনা। সেই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে। হাওড় অঞ্চলে যেসব ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত নন, তাদের বোরো ধান কর্তনকালীন কৃষি শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত করা যেতে পারে। এছাড়া কেউ কেউ মনে করেন, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে শ্রমিক পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশের বড় পরিবহণ ব্যবসায়িদের কাজে লাগানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে শ্রমিক ঘাটতি অঞ্চলে যাতায়াদের ক্ষেত্রে এসব পরিবহণ ভূমিকা নিতে পারে।
২. ধান/চাল কেনা ও সরকারের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো
এবারে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা প্রায় ২ কোটি টন। অথচ সরকার ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে মাত্র ১৯ লাখ টন, যা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। সরকারকে ধাপে ধাপে ধান কেনার লক্ষমাত্রা বাড়াতে হবে। এদিকে সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২০ লাখ টনের কিছু বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি ধান-চাল কেনা শুরু করলে তা রাখবে কোথায়? অনেকেই প্রস্তাব করেছেন, প্রশাসনিক তালিকা তৈরি করে বোরো মৌসুমের ধান কৃষকদের কাছেই রেখে দেয়া যেতে পারে। সরকার ধাপে ধাপে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই এই ধান কিনে নেবে। আর দীর্ঘমেয়াদে সরকারের নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
কৃষকের ধান মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো
পূর্বের মতো প্রতি গৃহস্থ ঘরে একাধিক ধানের গোলা না থাকায় কৃষক পর্যায়ে ধান রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা সেটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাব এসেছে: ক) উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব অডিটরিয়াম বা কমিউনিটি সেন্টার আছে সেগুলো ২-৩ মাসের জন্যে ভাড়া নিয়ে দ্রুত ধানের গুদামে পরিণত করে ফেলা যেতে পারে। খ) কৃষকদের টিন ও আনুষঙ্গিক কিছু উপকরণ প্রণোদনা আকারে দিলে কৃষক নিজের সুবিধা অনুযায়ী ধানের গোলা বা ছোট ছোট গুদামঘর তৈরি করে নিতে পারে। গ) প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বা ইউনিয়ন অফিসগুলোর সামনে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়ে খালি পড়ে থাকা মাঠে অস্থায়ী ধান গুদাম তৈরি করাও দুরূহ নয়। এছাড়া ধানের গুদামঘর তৈরি ও তার ব্যবস্থাপনা কারিগরী দিক থেকে কঠিন কোন কাজ নয়। কৃষকরাই পালা করে এসব গুদামের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবেন।
এর পাশাপাশি ধান থেকে চাল তৈরির সবগুলো বড় মিলকে আগামী কয়েক মাস সরকারের নিবিড় নজরদারিতে রেখে কাজে লাগাতে হবে। সরকার তার ক্রয়কৃত ধান নির্ধারিত দাম দিয়ে চাল করিয়ে নিবে এবং নিয়মিত বিতরণ করে যাবে। এছাড়া স্থানীয় চাতালগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে লাগাতে হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
সরকারি গুদামের সক্ষমতা বৃদ্ধি
দীর্ঘমেয়াদে সরকারি গুদামের সক্ষমতা ধাপে ধাপে বাড়াতে হবে। প্রতি জেলায় সরকারি গুদাম এবং সবধরনের পচনশীল সবজির জন্যে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টন ধান মজুদের কাঠামোগত সক্ষমতার জন্যে কৃষক পর্যায়ে বা কমিউনিটি পর্যায়ে বিনিয়োগ করতে হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারকে ন্যূনতম এক কোটি টন ধান মজুদ করার কাঠামোগত সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে।
চালের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা
বেসরকারি মিলগুলোর ধারণ সক্ষমতা প্রায় ১ কোটি টন। এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ লক্ষ টন স্থান খালি আছে। করোনাকালীন সময়ে সরকারি গুদামের চাল দুস্থদের মধ্যে বিতরণের পর সরকারি মজুদ কমে যাওয়ায় বেসরকারি চাল ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখতে হবে। বড় মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারি দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। এই ধরণের সখ্যতার ভিত্তিতেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। ভবিষ্যতে সরকারকে এই ধরণের সিন্ডিকেট ভাঙতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করতে হবে।
৩. কৃষি খাতে সরকারের করোনা-কালীন প্রণোদনা বাস্তবে কে পাবে?
সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪ শতাংশ সুদে মোট পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে কৃষককে। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রকৃত কৃষক বা বর্গা কৃষক এই সরকারি ঋণ পর্যন্ত আদৌ পৌঁছাতে পারবে কিনা? গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সম্পর্কিত সার্কুলারে বলা হয়েছে, শস্য ও ফসল খাত ব্যতীত কৃষির অন্যান্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাত, যেমন: হর্টিকালচার (মৌসুমি ফুল ও ফল চাষ), মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে এই ঋণ দেওয়া হবে। এবং কোনো খাতে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। এছাড়াও সার্কুলারে আরো উল্লেখ করা আছে, ঋণ নেয়ার ১৮ মাসের মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে হবে। প্রথম ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড থাকবে (কিস্তি দিতে হবেনা)। পরবর্তী ১২ মাসে বারো কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সম্প্রতি প্রথম আলোর একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনে সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরেন এভাবে: ‘‘মূলত, কৃষিঋণ-নীতিমালা অনুযায়ী কৃষকের উৎপাদিত ফসল বন্ধক রেখে কৃষিঋণ নিতে হয়। এর সরকারি নাম হলো ‘শস্য বন্ধকি দলিল’। অর্থাৎ কৃষক তাঁর শস্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখবেন। ধান বা যেকোনো শস্য বিক্রি করে ঋণের টাকা আবার ফেরত দেবেন। কৃষক ঋণ পাবেন কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী। এ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ একর বা ১৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। সে জন্য তাঁদের জমির দলিল বন্ধক রাখতে হবে। যাঁদের জমি নেই, তাঁরাও এই ঋণ পাবেন, তবে সে ক্ষেত্রে কৃষককে জমি লীজের চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে প্রান্তিক ভূমিহীন চাষি কখনোই চুক্তি করে জমি লিজ নেন না। আর অকৃষক জমির মালিক লিখিত চুক্তির মাধ্যমে কোনো চাষিকে জমি বর্গা দেন না।… কারণ লিখিত চুক্তির মাধ্যমে জমি বর্গা দিলে সরকারকে ফি দিতে হয়। সেই ফি জমির মালিককেই পরিশোধ করতে হয়। ফলে, এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ থেকে বর্গা চাষির ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শুধু তা-ই নয়, কৃষকদের সবচেয়ে বড় অংশ ধান চাষ করেন। কোনো এলাকায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বড় একটি অংশ ব্যাংক পর্যন্ত যান ঋণের জন্য, তাহলে ওই অঞ্চলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশই কেবল ধানচাষিরা পাবেন। এছাড়াও, বাংলাদেশে জেলাভেদে ফসলের উৎপাদনও ভিন্ন হয়। ফলে, সারা বাংলাদেশের কৃষকের জন্য গড় এই বেঁধে দেওয়া শতাংশ হার কৃষকের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়” (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)।
এতে আরও বলা হয়েছে, “এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তা হলো যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকে, তারা এই ঋণ প্যাকেজের আওতায় আসবে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পাবে। অর্থাৎ যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করেন, তিনি পাবেন সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। আর যিনি কৃষকের ফসল কম টাকায় কিনে বেশি টাকায় বিক্রি করবেন, সেই মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা ঋণ পাবেন পাঁচ কোটি টাকা। অথচ বহুকাল ধরে দাবি জানানো হচ্ছে, কৃষকের উৎপাদিত ফসল কীভাবে সরাসরি ক্রেতার কাছে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা সরকারিভাবে গড়ে তোলা হোক। উল্টো এই ঋণব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পোক্ত করা হয়েছে” (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৮ ভাগ কৃষিতে নিযুক্ত। এর বড় অংশের হাতে নিজের জমি নেই। জমির মালিকদের একটি বড় অংশই অকৃষক। বড় ধরনের জমির মালিকানার পরিবর্তন বা ভূমি সংস্কার ছাড়া বাস্তবে কৃষকের জন্য কিছু করা সম্ভব না। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায়ও যদি কৃষকের জন্য কিছু করতে হয়, তাহলে বর্গা কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা করতে হবে।
কৃষি খাতে প্রণোদনার ধরণ কেমন হওয়া উচিত?
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ওঠার পরপরই কৃষক পরবর্তী মওসুমের ধান আবাদের প্রস্তুতি নেবে। সেক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সরকারি সাহায্য নিশ্চিত করতে হবে। যেমন: ক) জমির লিজ মূল্য দিতে গিয়ে কৃষকের আয়ের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যায়। এটা এলাকা ও জমির ধরন ভেদে কম-বেশি হলেও বাৎসরিক গড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। যা কৃষককে অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। কমপক্ষে আগামী ১ বছর জমির লিজমূল্য সরাসরি ভর্তুকি হিসাবে উৎপাদক কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে এবং জমির মালিকরা যেন কোনভাবেই লিজ মূল্য বাড়াতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি কৃষির শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য নতুন বাস্তবতার নিরিখে দীর্ঘমেয়াদে ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। খ) কৃষি উপকরণ যেমন সার-বীজ-কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি উৎপাদক কৃষকের হাতে ভর্তুকি পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি বাজারজাতকারীদের উপর কড়া নজরদারী রাখতে হবে যেন এ সময়ে কোনভাবেই এসব পণ্যের দাম বেড়ে না যায়। গ) ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি কমপক্ষে আগামী ১ বছর বন্ধ রাখতে হবে। উৎপাদক কৃষকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে এবং বিনাসুদে সরকারী ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. কৃষকের ঋণের জাল
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এর ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, এবং দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে প্রায় ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। এসব ঋণের সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি কৃষি ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশ হলেও কৃষকের মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ আসে কৃষি ব্যাংক থেকে (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০)। ইফপ্রির সমীক্ষা অনুযায়ী: কৃষক মোট ঋণের ৩৬ শতাংশ নেয় এনজিও থেকে; আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১৯ শতাংশ; জমির মালিকের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১৫ শতাংশ; মহাজন বা দাদন থেকে ১১ শতাংশ এবং বিভিন্ন সমিতি থেকে আসে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ। এদিকে সরকারের কৃষি ব্যাংকের ৬ শতাংশ ঋণের সবচেয়ে বড় অংশটি পান বড় চাষিরা, যা প্রায় ১৫ শতাংশ। বড়, মাঝারি ও ছোট চাষি মিলে মোট ঋণের ৩৬ শতাংশ পান। আর প্রান্তিক চাষি পান মাত্র ৫ শতাংশের মতো। বর্গা চাষি, অর্থাৎ অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষ করেন—এমন কৃষকেরা এই ঋণ পান না। ফলে তাঁদের এনজিওসহ অন্য উৎসের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয় (প্রথম আলো, এপ্রিল ১৭, ২০২০।)
বাংলাদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, এবং দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে প্রায় ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। এসব ঋণের সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ।
এক্ষেত্রে সরকারি ঋণের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় ঋণদান সমিতি ও গ্রামে সঞ্চয়ী সমিতিগুলোর জন্য প্রণোদনা ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ক্ষৃদ্র ঋণের বিকল্প মডেল হিসাবে সমবায় গঠনের দিকে জোর দিতে হবে। পুরনো ধারার সমবায়ের বদলে নতুন বাস্তবতার নিরিখে নতুন ধরনের কৃষি ও গ্রামীণ সমবায় গঠনে জোর দিতে হবে।
৫. দুর্যোগকালীন কৃষি সহায়তা প্রসঙ্গে
কৃষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রায় কখনোই বিবেচনায় নেয়নি। বলা হয়, যুগে যুগেই কৃষি অরক্ষিত ও অনিশ্চিত জীবিকা। ঝড়, বন্যা, শিলাবৃষ্টি, পোকার আক্রমণ এসব প্রাকৃতিক কারণেই কৃষকের ঝুঁকি সীমাহীন। কৃষক বাজারদরের কাছেও জিম্মি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে এমন একটি দেশও নেই, যেখানে কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। পার্থক্য হলো কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চিত-এই বাস্তবতা বহু দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে স্বীকৃত। তাই ঝুঁকি নিয়ে ফসল ফলানোর জন্য কৃষিতে বিপুল প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। কখনো ভর্তুকি, কখনো শস্যবিমা, কখনো রিস্ক কাভারেজ (ঝুঁকি মিটিয়ে দেওয়া), কখনো প্রাইস লস কাভারেজ (দাম পড়ে যাওয়ার লোকসান মেটানো), কখনো সরাসরি অর্থ প্রদান ইত্যাদি বিভিন্নভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়। বাংলাদেশে প্রান্তিক ও বর্গাচাষী কৃষিতে বিনিয়োগ করেন মূলত ঋণ করে ও বিকল্প পেশা থেকে আয় করে। ফলে বোরো মৌসূমে কাল বৈশাখী/শীলা বৃষ্টি/ পোকার আক্রমণ এবং বোরো পরবতী মৌসুমে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকের পক্ষে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষকদের দুর্যোগকালীন সহায়তা কী কী ধরনের হতে পারে এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভাবে একটি বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
মাহা মির্জা: লেখক, গবেষক
ইমেইল: maha.z.mirza@gmail.comতথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’। ২০১৮।
আরিফুজ্জামান, মোঃ। ‘কৃষিঋণ কৃষককে কতটা রক্ষা করবে?’ প্রথম আলো। ১৭ এপ্রিল, ২০২০।
শাহীন, সাইদ। ‘হাওরে দিনে ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিক প্রয়োজন।’ বণিক বার্তা। এপ্রিল ১৬, ২০২০।
এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন: সাইদ শাহীন, আবুল কালাম আজাদ, এবং আলতাফ পারভেজ। -

কৃষকদের উৎপাদিত ধানের লাভ জনক মূল্য নিশ্চিত, রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও সুদমুক্ত ঋণদানসহ বিভিন্ন দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
স্টাফ রিপোটার ঃ কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের লাভ জনক মূল্য নিশ্চিত, খেতমজুরদের সারা বছরের কাজ, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কৃষক ও বর্গাচাষীদের সুদমুক্ত ঋণদানসহ বিভিন্ন দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। জাতীয় কৃষক সমিতি ও বাংলাদেশ ক্ষেত মজুন ইউনিয়ন সাতক্ষীরার ব্যানারে সোমবার বেলা ১১ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শহরের ওয়ার্কাস পার্টির ছাদের উপর উক্ত মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা-১ (তালা+কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি কমরেড এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল, জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, জাতীয় কৃষক সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি অধ্যাপক সাবীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ ময়নুল হাসান, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি অজিত কুমার রাজবংশী, সাধারণ সম্পাদক নির্মল সরকার, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা এ সময় বর্তমান বোরো মৌসুমে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত, কৃষি ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত, খেতমজুরদের সারাবছরের কাজ, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কৃষক ও বর্গাচাষীদের সুদমুক্ত ঋণ, ১২০০ টাকা ধানের মূল্য নির্ধারণ, উৎপাদিত ৫০% ধান কৃষক ও বর্গাচাষীর নিকট থেকে ক্রয়ের জোর দাবী জানান। -
করোনাকালে কৃষি ও কৃষকের অধিকার এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা

আমরা সম্পদের দিক দিয়ে কখনো হয়তো অতটা বিত্তশালী ছিলাম না, কিন্তু সবাই মিলে খেয়ে পরে বাঁচবার জন্য যতটুকু দরকার, পরম করুণাময় তা আমাদের উদার হস্তেই দিয়েছিলেন। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই সোনার বাংলা। এই মাটিতে আসলেই সোনা ফলে- ফলায় সোনার কৃষকেরা আর মায়াবতী কিষাণিরা।
বিনা পরিশ্রমে খেয়ে পরে কখনো বাঁচতে চায়নি আমাদের আকাশের মত বিশাল আর মাটির মত নরম এই কৃষকেরা। সকাল-সন্ধ্যা, নিশি-ভোর পরিশ্রম করে দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা চেয়েছে শুধু, পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকবার অধিকারটাই চেয়েছে কেবল। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা সবসময়ই অবহেলিত, বেঁচে থাকবার নিরন্তর সংগ্রামে পরাজিত যোদ্ধা… বন্যা-খরা-ঘূর্ণিঝড়কে তারা মোকাবেলা করতে পারলেও, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা কখনো নেই তাদের। যে বছর অতি ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে, সেই বছরই নিম্ন মূল্যের কারণে সেই হাসি মিইয়ে যায় অচিরেই। রাষ্ট্রের কত শত নীতি-প্রণোদনার কথা শুনে এই কৃষকেরা, ফি বছর আশায় বুক বাধে। এবার আমাদের দুঃখের দিন ফুরোলো বলে… গত বছরের বঞ্চনার দুঃখ ভুলে আবার মাটিতে আশার বীজ বুনে। কিন্তু তাদের দুঃখের এই চক্র যেন শেষ হবার নয়। এই নির্মম খেলার অমোঘ শিকার আমাদের চিরদুখী কৃষকেরা..
গাইবান্ধা জেলার আদর্শ চাষী আমির হোসেন, বংগবন্ধু পুরস্কারপ্রাপ্ত। অবহেলিত উত্তরবংগের মানুষ। করোনাভাইরাসে উনার ক্ষেত ও কৃষির অবস্থা জানাচ্ছেন বাংলার মানুষকে। জাগোনিউজের সৌজন্যে করোনা’কালে কেমন আছেন, এর জবাব কৃষক আমির হোসেন এর বরাতেই শুনি আমরাঃ
“আসলে কথা বলতে আমার নিজেরি কান্দন বাইর হয়। তার কারণ, আমরা বিভিন্ন টেলিভিশনের খবরে শুনি যে, ঢাকাতে করল্লার কেজি ১০০ টাকা, পটলের কেজি ১৫০ টাকা; আপনার বেগুনের কেজি ৬০টাকা, টমেটোর কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি ১০০ টাকা। কিন্তু আমরা যে গাইবান্ধা, অবহেলিত অঞ্চল উত্তরবংগের মানুষ; আমার টমেটোর কেজি ৩টাকা, পাইকারি ১.৫ টাকা; করল্লা হল ৩ টাকা, পাইকারি ২টাকা। বেঁচবার না পারি, হাটে নাই মানুষ; যদি পুলিশ এসে দেখে এক গলিতে মানুষ, ধরে দাবাড়; মানুষ যেভাবে সেভাবে জানের ভয়ে দৌড়ায়। কিছুক্ষণ পর দেখে-টেখে আমরা বাড়িত নিয়ে এসে গরুকে খিলাই; গরু তো টমেটো ও খায় না, কুত্তা ও খায় না ।
সরকার যদি তামাম কিছু কন্ট্রোল এভাবে করতে পারে, সরকার ওখান থেকে যদি সেনাবাহিনী দিয়া বা তার অন্য বাহিনী দিয়া বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল থেইকা, হাট-বাজার দিয়া আমার কাঁচা সবজি, শসা, টমেটো, বেগুন, ক্ষিরা, আপনার তরমুজ, আপনার বাংগী নিয়া শহরের মধ্যে দিলে তাওত আমরা বাঁচি। তাও তো আমরা ৬০ এর জায়গায় ৩০ পামু।
কিন্তু এগুলার ব্যবস্থা নাই, এগুলো মরার ব্যবস্থা ছাড়া আর তো কোন ব্যবস্থা দেখিনা। এখন কি কব। এখন কও, একটাই আছে- গামছা গলার সাথে দড়ি লাগাই দিয়া ফাঁস টাংগিয়ে আমাদের ঝোলা লাগবে। এছাড়া বাংলাদেশের কৃষকের আর বাঁচবার উপায় নাই। সরকার যদি পদক্ষেপ না নেয় কৃষকের… লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ কইরা শ শ মণ টমেটো, শ শ মণ করল্লা, শ শ মণ মিষ্টি কুমড়া… যে ঢাকাত কালকেই খবরে কইল মিষ্টি কুমড়া ২০০ টাকা পিস, আমরা’ত ১৫ টাকা পিস, ৫ টাকা পিস নেবার লোক নাই। আমার গুলো দেখে কে?
সরকার যদি সব টেকেল করতে পারে, তো গাড়ি পাঠায় দেখ, আর আলগোছ বিভিন্ন জেলা থেকে শহরে নিয়ে যাক। তাও আমরা বাঁচমু। না হলে আমাদের মরণ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে অতি তাড়াতাড়ি আমাদের বাঁচার তাগিদে কি করবে, সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি; সরকার যেন কৃষক বাঁচায়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে রুই-কাতলা বাঁচবে। তা না হলে এই দেশে আর থাকা যাবে না…।”
আসলেই আমাদের কৃষকেরা একদম ভাল নেই। সরকার যেন কৃষক আর কৃষি বাঁচাবার উদ্যোগ নেয় অতি সত্বর। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করে কৃষির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে। সরকার যদি সব পারে, তাহলে আমাদের কৃষকদের পণ্যের নিশ্চয়তা দেবার বন্দোবস্ত করতে কেন ব্যর্থ হয় বারবার। কৃষিপণ্য সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে অধিক কার্যকর পদক্ষেপ অতি জরুরি।
করোনাউত্তর পৃথিবীতে স্বাস্থ্য সংকটের পর খাদ্য সংকটই মনে হচ্ছে সবার আগে পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। এই নতুন পৃথিবীতে একেটটা দেশ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। অপরের প্রয়োজনের চেয়ে নিজেকে, নিজ দেশকে অধিকতর সুরক্ষিত করতে যাবতীয় উদ্যোগ নেবার প্রচেষ্টাই গুরুত্ব পাবে আগে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যার লক্ষণ এখন খুব স্পষ্ট । আস্থার সংকট আর নিজেকে সুরক্ষার চাদরে ঢেকে নিতে বৃহৎ খাদ্য রপ্তানীকারক দেশগুলো ইতিমধ্যে খাদ্য রপ্তানী বন্ধ করবার আলামত দিতে শুরু করেছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত, মিশর এরই মধ্যে খাদ্য রপ্তানি বন্ধের ইংগিত দিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা শংকা প্রকাশ করছে, করোনা প্রভাবে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’ শুরু হয়ে যেতে পারে, যার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা না হলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সবচেয়ে বিপদে পড়বে দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে।
করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের প্রান্তিক কৃষকেরা কেমন আছেন। মানবিক ত্রাণ কি তাদের দুয়ারে পৌঁছেছে… সম্প্রতি গণমাধ্যম হতে আমরা জানতে পেরেছি, দরিদ্র প্রতিবেশিদের জন্য ত্রাণ সহায়তা চাইতে সরকারি সহায়তার হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বেদম মারধরের শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার বৃদ্ধ কৃষক শহিদুল ইসলাম। মারধরের পর আর কাউকে কিছু বললে আরও খারাপ অবস্থা হবে বলে হুমকি দেন চেয়ারম্যান।
বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান সাত্তার জানান, সোমবার বিকেলে ইউএনও তাকে ডেকেছিলেন, সেখানেই মিমাংসা হয়েছে। অন্যদিকে ইউএনও জানান, ঘটনার জন্য চেয়াম্যানকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একজন কৃষক’কে ত্রাণ চাইবার জন্য বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করাটা কি ফৌজদারী অপরাধ নয়। এই অপরাধের জন্য দেশে কি আইনের শাসন বিদ্যমান.. একজন চেয়ারম্যান কি নিশ্চিন্ত ও ভয়ডরহীন যে, একজন কৃষক’কে রক্তাক্ত করলে আপোষে মীমাংসা করা যায়; কিংবা বড়জোর তিন দিনের জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ। তারপর খবরের পাতা থেকে রক্তাক্ত বৃদ্ধ কৃষক উধাও, আর আইনের চাকার গতি ধীর হতে অতি ধীর…
আমরা যদি উল্টোভাবে ভাবি, ত্রাণ না পেয়ে এই কৃষক বেদম মারধর করেছে চেয়ারম্যানকে। তারপর কি হবে সবারই জানা, চেয়ারম্যানকে রক্তাক্ত করবার অপরাধে পুলিশ এসে অতি দ্রুত কৃষককে জেল হাজতে নিয়ে গেল; তারপর জেল, জরিমানার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত..
সত্যটা হচ্ছে, আইন কখনোই সকলের জন্য সমান ছিলনা। আইনের প্রয়োগ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন হয়ে দেখা দিয়েছে বারংবার। আর আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি, আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। আমাদের মাটির কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আমরা ভুলে গেছি। কৃষকদের আমরা কখনো সেভাবে সম্মান দেইনি। কৃষি আমাদের প্রাণ, সেটা শুধু আমাদের বইয়ের পাতাতেই… সেই প্রাণ আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, কিন্তু সে নিজে বাঁচার মত বেঁচে আছে কিনা সেই খোঁজ আমরা কখনো রাখিনি, রাখবার প্রয়োজনও সেভাবে বোধ করিনি।
আমরা অনেকেই হয়তো ভাবছি, করোনাউত্তর নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থায় খাদ্য আমদানী ব্যাহত হলেও কৃষিপ্রধান দেশ হওয়াতে আমরা খাদ্য-সংকটে ভুগব না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্বেও অধিক জনসংখ্যা এবং দারিদ্র্যের কারণে ২০১৯সালের বৈশ্বিক খাদ্য-নিরাপত্তা সূচকে ১১৩ দেশের মধ্যে আমরা ৮৩ তম অবস্থানে। সার্বিক বিচারে আমরা খাদ্য আমদানিকারক দেশ, আমরা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় অন্যের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি আমাদের খাদ্য নির্ভরশীলতার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। আসল কথা, খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা খুব একটা ভালো নেই।
সার্বিক বিচারে, আমাদের কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতেই হবে; এর কোন বিকল্প নেই। শুধু কৃষকদের স্বার্থে নয়, আমাদের সবার স্বার্থেই। কৃষকরা যেন সুন্দর করে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করাটা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে ছিল না। আমরা অক্ষম ছিলাম অন্যের অনুভূতি আর অধিকার’কে নিজের করে ভাবতে। এটা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা…
আমাদের বিদ্রোহী কবি সেই কবে বলে গিয়েছিলেন,
“আসিতেছে শুভদিন; দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।”
স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলল… কৃষকদের প্রতি আমাদের সেই ঋণ আর শোধ করা হয়ে উঠেনি। কৃষকদের প্রতি আমাদের এতদিনের ঋণ শোধ করবার সময় এখন। সরকার ও নীতি-নির্ধারকের সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব দ্রুত। কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে।
বাংলার সকল কৃষকদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, কৃষকদের অধিকারের বিষয়ে আমাদের সকলেরই সোচ্চার হতে হবে। কৃষকের জীবন-জীবিকা, সম্মান আর অধিকারের বিষয়টি শুধু নীতি-নির্ধারকদের উপরে ছেড়ে দিলেই হবে না। বাংলার কৃষকদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায় মেটাতে, কৃষকদের দাবীর কথা আমাদের সকলেরই উচ্চকন্ঠে উচ্চারণ করতে হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারকে কৃষিকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। সরকার ঘোষিত এই প্রণোদনার বাইরেও কৃষি ও প্রান্তিক কৃষককে বাঁচাতে করণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে বলিষ্ঠ দাবী জানাই, নাটোরের লালপুরের কৃষক শহিদুল ইসলামসহ সকল কৃষক নির্যাতনের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষকদের প্রাপ্য সম্মান প্রদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। গাইবান্ধার কৃষক আমির হোসেন সহ সকল কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবার সাথে সাথে কৃষকদের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে সকল ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষিপণ্য সুরক্ষায় খাদ্য সংরক্ষণাগার ও হিমাগার বাড়ানো, কৃষি বিপণন ব্যবস্থা কৃষকবান্ধব করা, প্রান্তিক কৃষকদের অর্থের সংস্থান করা, কৃষি ও কৃষকদের সুরক্ষা দেয়ার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমেই আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ফিরে যাই আমাদের কৃষক আমির হোসেনের কন্ঠে, “সরকার যদি সব টেকেল করতে পারে, তো গাড়ি পাঠায় দেখ, আর আলগোছ বিভিন্ন জেলা থেকে শহরে (সকল কৃষিপণ্য) নিয়ে যাক… না হলে আমাদের মরণ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই… সরকার যেন কৃষক বাঁচায়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে রুই-কাতলা বাঁচবে। তা না হলে এই দেশে আর থাকা যাবে না…।”
কৃষি না বাঁচলে কৃষির সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ আমির হোসেন’রা তা নাহলে যাবেন কোথায়….আর নতুন পৃথিবীতে আমরা ও আমাদের বেঁচে থাকবার খাদ্য কোথায় পাব..
———–
আদিল মুহাম্মদ খান,
নগর পরিকল্পনাবিদ ও উন্নয়ন গবেষক;
adilmdkhan@gmail.com.
-

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা: একটি বিস্ফোরণোন্মুখ টাইমবোমা
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা, কৃষির বাণিজ্যকীকরণ, জনগণের খাদ্য অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অনুপস্থিতি এবং রাজনীতিতে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘকাল ধরেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি কেবল সঙ্কটকে আরও উদগিরণ করেছে মাত্র
ইতোমধ্যে সারা পৃথিবীর দেড় লাখেরও বেশির মানুষের জীবন সংহারি এবং ২৩ লাখেরও বেশি সংক্রামিত করা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে নিজেকে জাহির করেছে। লকডাউনের মধ্যে পড়েছে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ। যদিও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে সামনে এসেছে, এটি সমানভাবে একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট; যা অনুসরণ করবে মন্দা, খাদ্যাভাব এবং অস্থিতিশীলতা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বিশ্বজুড়ে জারি করা লকডাউনের জেরেই অনভিপ্রেত খাদ্যের সংকট তৈরি হতে পারে। খাবারের অভাব এখন বোঝা না গেলেও লকডাউনের পর খাদ্যের প্রকট অভাব দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশের জন্য এই সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। পিপিআরসি ও বিআইজিডি করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, “চলমান সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপর্যয়ে পড়েছেন দেশের মাঝারি, অতিদরিদ্র মানুষ। এতে নতুন এক দরিদ্র শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে ৮২ শতাংশ ও গ্রামে ৭৯ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা খাবারের জন্য ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরাঞ্চলে মানুষের খাবারের পরিমাণ কমে গেছে ৪৭ শতাংশ, গ্রামে কমেছে ৩২ শতাংশ।” জরিপের সারাংশ বলছে পরিস্থিতি এমন যে, এ মাসের শেষের দিক থেকে দেশের বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের মানুষ বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়বে।
তবে, বিশ্বব্যাপী নয়া উদারবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো “করোনাভাইরাস”কে ঘিরেই হুট করে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিবে বলে যে “নতুন আতঙ্ক” আমদানি করছে তা একদমই ভিত্তিহীন। বাস্তবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা, কৃষির বাণিজ্যকীকরণ, জনগণের খাদ্য অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অনুপস্থিতি এবং রাজনীতিতে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘকাল ধরেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আর করোনাভাইরাস মহামারি কেবল সঙ্কটকে আরও উদগিরণ করেছে মাত্র। মনে রাখতে হবে, সরকারি তথ্য মোতাবেকই দেশের প্রায় পৌনে ৪ কোটি মানুষ (দরিদ্র ২১.৮ শতাংশ) পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। আর প্রায় ২ কোটির (অতি দরিদ্র ১১.৩ শতাংশ) কাছাকাছি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আয় করতে পারতেন না। তারমানে, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট আগ থেকেই ছিলো। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০১৯ অনুযায়ী ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম- আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিন্ম। করোনাভাইরাস দুর্যোগ আমাদের এই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিকে আরও ঘনীভূত এবং দীর্ঘমেয়াদী করবে। দুই হাজার ৬৭৫ জনের ওপর পরিচালিত ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, জরিপকালীন ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২৯ ভাগের ঘরে ছিল এক থেকে তিন দিনের খাবার-এর তথ্য সেই ইঙ্গিতই বহন করছে।
বাংলাদেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৯৫ শতাংশের যোগানদাতা কৃষকের মধ্যে খানা হিসেবে তাদের ৮৮.৪৮ শতাংশই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, এপ্রিল ও মে মাস কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম; এই মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন কৃষিপণ্য বাজারে আসার কথা ছিলো। কিন্তু চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কৃষকের উৎপাদিত বেশিরভাগ ফসলই মাঠে নষ্ট হচ্ছে। দেশের চালের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান আসে বোরো থেকে- সেটিও শ্রমিক না পাওয়ায় কাটতে না পারা এবং আসন্ন পাহাড়ি ঢলের ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে দেশের ডেইরি, পোল্ট্রি খাতে। ক্ষুদ্র উৎপাদকদের এই অর্থনৈতিক ক্ষতি সন্দেহাতীত ভাবে তাদেরকে আরও দারিদ্র্য অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে, যা আগামী সময়ে দেশের কৃষিজ উৎপাদন কমিয়ে দেবে।
একই সাথে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত তৈরি পোষাক শিল্প এবং প্রবাসী আয়ে ব্যাপক ভাবে ধাক্কা লাগবে। বেকারত্বের শিকার হতে পারেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের মধ্যে আড়াই লাখ প্রবাসী বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। এরা আবার বিদেশে ফেরত যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আবার নতুন করেও কোথায় কেউ যেতে পারছে না। ফলে, বেকার প্রবাসীরাও আমাদের মোট বেকারত্বের মিছিলে যোগ দেবে।
কোনো সন্দেহ নেই, ২০০৮ সালের মন্দার চেয়েও আমরা আরও বড় একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। কোভিড-১৯ মহামারির সাথে আসা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থার চরম অস্থিরতা বিগত মন্দার চেয়ে আরও বেশি দুর্বিপাক তৈরি করবে। অতি-উদারবাদী বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্য মানুষের বর্তমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়- তা আমরা সেনাশাসিত সরকারের সময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। সেই সময় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং হাতে টাকা থাকলেও বিদেশ থেকে চাহিদা মতো খাদ্য কিনতে না পারার অভিজ্ঞতা থেকেও আমাদের সরকারগুলো কৃষি এবং খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত নিওলিবারেল প্রকল্পসমূহ নিয়ে কোনো ধরনের সংরক্ষণমূলক কার্যক্রম তো গ্রহণ করেইনি বরং কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হ্রাস এবং বাণিজ্যিকীকরণের জন্য কাজ করছে।

আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ধান রক্ষা করা যাবে কিনা তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক। ঢাকা ট্রিবিউন
জনগণের খাদ্যের অধিকারের নিশ্চয়তা এবং খাদ্য সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার প্রদানসহ জননীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না হলে বর্তমান বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কট সম্ভাব্যভাবে ক্ষুধার সংকটে পরিণত হতে পারে। করোনাভাইরাস হয়তো একটা সময় হেরে যাবে, কিন্তু খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং সাধ্যের মধ্যে খাদ্য পাবার নিশ্চয়তা রাষ্ট্র কতটা নিশ্চিত করতে পারবে তা বারবার সামনে চলে আসছে। এ জন্য মহামারির মধ্যেও রাষ্ট্র নাগরিকদের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কিছু নীতিগত প্রস্তাবনা তুলে ধরছি:
লকডাউন চলাকালীন নাগরিকদের খাদ্য অধিকারের নিশ্চয়তা
মহামারির মধ্যেও নাগরিকদের মানবাধিকারে গ্যারান্টি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়। তাই করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মানুষের খাদ্য অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষত: দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, গৃহকর্মী,ভাসমান মানুষ, রিক্সাশ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ছোট দোকানি, হিজড়া-সম্প্রদায়সহ সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং ঝুকিপূর্ণখাতে কর্মরত শ্রমিককে সরাসরি খাদ্যভর্তুকি প্রদান করা। প্রচলিত ত্রাণ কার্যক্রমের বাইরে এইসব মানুষের জন্য পারিবারিক রেশন প্রদান করা যেতে পারে। একই সাথে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী চার কোটি মানুষের জন্য সপ্তাহভিত্তিক নিঃশর্ত নগদ অর্থসহায়তা করা যেতে পারে। শহুরে দরিদ্র এবং গৃহহীন জনগোষ্ঠীর কোয়ারেন্টিন পালন নিশ্চিত করতে হলে, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে।
আভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন জোরদার করা
একটিখাদ্য সার্বভৗম এবং শক্তিশালী দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থাই বাজার মূল্যের অস্থিরতার বিরুদ্ধে সেরা সুরক্ষাকবচ হতে পারে। এ জন্য চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করতে হবে। শ্রমিকের অভাবে যেন ধানকাটা ব্যাহত না হয়- সে জন্য সরকারিভাবেই শ্রমিক যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। উৎপাদন চলমান রাখতে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি সরাসরি প্রান্তিক কৃষকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু গত মার্চে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬০ শতাংশ কম, দেশের ফসলের সবচেয়ে বড় এই মৌসুমে মাঠে আলু, সবজি ও সরিষা রয়েছে, যেগুলোতে সেচ দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্র ক্ষুদ্র কৃষকদের যারা নিজেরাই শ্যালো মেশিনে ইরিগেশন করে, তাদেরও ডিজেল ক্রয়ের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা দিতে হবে।
স্বানীয়ভাবে কৃষক বাজার নির্মাণ এবং সহায়তা
গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খাদ্য উৎপাদনকারীদের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে বাজার গড়ে তুলতে হবে এবং দলীয় ক্যাডার এবং দালাল/ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রেণর বাইরে এইসব বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এইসব বাজারের মাধ্যমেই কৃষক স্থানীয় কৃষি উপকরণের যোগান দেবে একই সাথে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে শহুরে ভোক্তাদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ তৈরি করতে হবে। বিকেন্দ্রীকৃত পদ্ধতিতে কৃষিপণ্য বিনিময়ের সুবিধার্থে স্থানীয়ভাবে ক্রয়বিক্রয়ের বাজারস্থাপনে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এর সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত সুবিধার্থে ক্ষুদ্র কৃষক এবং ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীদের ছোট শহর এবং নগরকেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে হবে।
জাতীয় খাদ্য মজুদ জোরদার করা
কৌশলগতভাবে জাতীয় খাদ্য মজুদ জোরদার করতে হবে। খাদ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কৌশলগত জাতীয় সংরক্ষণাগার স্থাপন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। সরকারিভাবে এই বছর ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধানচাল ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার স্বার্থে সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ লাখ মেট্রিক টন ধানচাল ক্রয় করা প্রয়োজন। অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, গম, সরিষা, মসুর, ছোলা, মটর, খেসারি তোলার সময়েই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৃষিপণ্যের বাজারজাতের জন্য কোনো ব্যবস্থা সরকার নেয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আলু তোলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকার কারণে ১০৮ লাখ টন আলু তোলার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার মধ্যে ৯৭.৬ লাখ টন তোলা হয়েছে। তবে পেঁয়াজ তোলার সময়ে লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে ২৩.৮ লাখ টন পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তোলা হয়েছে মাত্র ৯.৭৩ লাখ টন। এক্ষেত্রে সরকারকে এই সকল ফসল ক্রয় এবং মজুদের সীমা বাড়াতে হবে। প্রধান খাদ্য নয় এমন শস্য আমদানি এবং জৈব জ্বালানি উৎপাদনে স্থগিতাদেশ প্রবর্তন করতে হবে।
কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকরণ এবং পুঁজি যোগান হলেও তা ক্ষুদ্র কৃষকের নাগাল পায়নি। এমনকি কৃষিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা রয়েছে। প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষিখাতে বরাদ্দ কমছে। আসন্ন মন্দা মোকাবিলায় কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত: দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে; দ্বিতীয়ত: গ্রামভিত্তিক কৃষি অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধি তৈরিতে; তৃতীয়ত: করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বেকরত্ব মোকাবিলায় কৃষিতে কর্মসংস্থান তৈরির করার জন্য কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ জোরদার করতে হবে। জাতিসংঘ ২০১৯-২৮ সালকে পারিবারিক কৃষি দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে পারিবারিক কৃষিতে বিনিয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় কৌশল প্রণয়ন করত হবে।
কৃষিজমি সুরক্ষা
প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। কিন্তু, জমি থাকলে তবেই আবাদের প্রশ্ন আসবে। সরকারি হিসাব মতে, প্রতি বছর কৃষিজমি এক শতাংশ হারে কমছে। কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য সরকার ২০২৫ সালে “কৃষিজমি সুরক্ষা এবং ভূমি ব্যবহার আইন” তৈরি করেছে। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে আইনটি এখনো খসড়াতেই থেকে গেছে, আলোর মুখ দেখেনি। অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে কৃষিজমি অকৃষিতে ব্যবহার রোধ করতে হবে এবং কৃষিজমি সুরক্ষা এবং ভূমিব্যবহার আইন প্রণয়ণ করতে হবে।
স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা
খাদ্য নিরাপত্তাহীনদের ক্ষমতায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বৈষম্যহীনতা, সমতা এবং সুশাসনের নীতির ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কোভিড-১৯ সংকটে জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে রাষ্ট্র ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মজুদদারি, ত্রাণ চুরি কিংবা মানুষের খাদ্য অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। খাদ্য সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা কার্যকর করতে হবে। প্রশাসন এবং সরকারদলীয় সংগঠনের মাধ্যমে সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে চাইছে। কিন্তু, এই সংকটকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক পুঁজিবাদী খাদ্যব্যবস্থার অন্যায্য, অস্থিতিশীল, অসমচরিত্রকে স্পষ্ট করে দিয়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্যব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে, জমিও অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের ন্যায্যবন্টনই হবে মহামারি ও খাদ্য সংকট এড়ানোর অব্যর্থ উপায়। মানুষের খাদ্য পাওয়ার অধিকারকে জোরালোভাবে গুরুত্ব না দিলে বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে খাদ্য সংকট হবে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকা একটি টাইম বোমার মতো।
নুরুল আলম মাসুদ
সাধারণ সম্পাদক, খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), বাংলাদেশ
-

করোনা ঠেকাতে দেবহাটায় কৃষকের বাড়িতে বীজ পৌঁছে দিলেন কৃষি অফিস
দেবহাটা প্রতিনিধি: উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে ধান ও পাটের বীজ প্রদান করেছেন কৃষি অফিস। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুলিয়া ও পারুলিয়া ইউনিয়নের মোট ৬০জন কৃষকের মাঝে এ বীজ বিতরন করা হয়। এতে প্রতি ইউনিয়নে ৩০জন চাষিকে পাট ও আউশ ধানের বীজ প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোঃ তিতুমীর, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শওকত ওসমান, উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শাহজাহান আলী, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম, আহম্মদ সাঈদ প্রমুখ। কৃষি অফিসার বলেন, চলমান এই দূর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ফসলের আবাদ করতে হবে। কোন জমি ফেলে রাখা যাবে না। চাষের জমির পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির আবাদ করতে হবে। যাতে জরুরী মুর্হূতেও খাদ্যের ঘাটতি পুরণ করা যায়। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকার বীজ ও সার প্রদান। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা চালু করা হয়েছে। কৃষক এখন ক্ষেতে বসে অনলাইনে সমস্যা সমাধানের সুবিধা, ফসল ক্রয়-বিক্রয় সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়া কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এদিকে কৃষি অফিসের মাধ্যমে বর্তমান করোনা পরিস্থিতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত প্রদর্শনী ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান কর্মকান্ড চলমান রয়েছে জানা গেছে। -
অবশেষে বেতন পেল জাতীয় ক্রিকেটার সাকিবের কাকড়া ফার্মের শ্রমিকরা
স্টাফ রিপোটার ঃ নানা জল্পনা কল্পনা শেষে অবশেষে বেতন পেল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে প্রতিষ্ঠিত জাতয়ি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের শ্রমিকরা।
বুধবার বিকালে ১৫০জন শ্রমিকের যাবতীয় পাওনা হিসেবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। যার সম্পূর্ণটাই সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে সেখানে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে মধ্যস্থতা করেন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল ফেডারেশন ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরু হক, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্সসহ চিংড়ি বাংলা একাডেমির তিনজন কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি মিডিয়ায় আসলে ঢাকা থেকে একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল ফেডারেশন ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হকের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখভাল করার অনুরোধ জানান। নির্দেশনা পেয়ে তিনি মঙ্গলবার সাকিবের কাকড়া ফার্মে যান এবং সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে আসেন। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো তিনি সেখানে যান এবং ১৫০জন শ্রমিককে ডেকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন। এসময় সেখানে ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক সগীর হোসেন পাভেল ও ম্যানেজার সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত ঃ ২০১৬ সালে আইলা বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে বুড়িগোয়ালিনীতে রপ্তানিমুখী কাকড়া ফার্ম গড়ে তোলেন সাকিব। গত ৪ বছর ভালই চলেছে। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ বেতন পায় শ্রমিকরা। এর মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য কয়েকবার দিনও পরিবর্তন করে ফার্ম সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল বকেয়া পরিশোধের জন্য সময় নিয়েছিল তারা। এর মধ্যে হঠাৎ সোমবার (২০ এপ্রিল) বকেয়া পরিশোধের দাবিতে ফার্মের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। যা ভিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে, শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না সাকিব আল হাসান। যা তিনি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান দিয়েছেন।