Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202 উপ-সম্পাদকীয় Archives - Page 5 of 7 - Daily Dakshinermashal
পৃথিবীজুড়ে কান্না আর লাশের মিছিল ! লাশ রাখার জায়গা নেই। ভয়ে বাকরুদ্ধ শোকস্তব্ধ পৃথিবী। ইতালি থেকে আমেরিকা প্রতিটি আক্রান্ত দেশে লড়তে লড়তে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে চিকিৎসক , নার্সরা হাসপাতালের মেঝেতে একজনের গায়ে আরেকজন শুয়ে পড়ছে। উন্নত দেশগুলো আজ সব প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আকাশের মালিকের দিকে তাকিয়ে। তবুও থামছে না ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে জীবাণু করোনা। চীনের উহান থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আজ গ্রাস করেছে বিশ্বজুড়ে । বাংলাদেশও আক্রান্ত বিশ্ব মহামারিতে। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছয়শ’ ছাড়িয়েছে। গতকাল রোববার নতুন করে আরও ১৩৯ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক দিনে এটিই আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এদিন মৃত্যু হয়েছে আরও ৪ জনের। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২১ এবং মৃতের সংখ্যা ৩৪-এ পৌঁছাল। নতুন করে দেশের আরও চার জেলায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৩৫ জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়াল। সাতক্ষীরায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ১৫৫ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকা ও খুলনাতে। স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে রিপোর্ট এসেছে মাত্র ৯ টি। ১৪৬টি রিপোর্ট গতকাল রোববার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মানুষ দ্রুত ফলাফল জানতে চায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, যে ৯টি রিপোর্ট পাওয়া গেছে তাতে এখনও করোনা সনাক্ত হয়নি। কিন্তু আতংঙ্কের কথাটি হলো, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ যেসব করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ সাতক্ষীরাতে প্রবেশ করছে। কোন ভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা গ্রামে গিয়ে মানছে না হোম কোয়ারেন্টাইন। হাট-বাজারে তাদের অবাধ চলাফেরা। প্রাত:ভ্রমনের অভ্যাসটা আমার অনেক আগের। সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে প্রতিদিন সকালটা আমার কাটে। এই পার্কে ১/২ দিন পর পর টিসিবির মালামাল বিক্র করা হয় থাকে। দেয়া হয় তেল,চিনি ও ডাল। বাজার দর ছাড়া কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে তা বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতাকে দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি ও ২ থেকে ৫ লিটার সয়াবিন তেল। এক সপ্তাহ আগেও করোনা প্রতিরোধে নিরাপদ দূরাত্ব বজায় রেখে মালামাল ক্রয় করতে দেখেছি মানুষকে। ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু দিন দিন করোনা পরিস্থিতি যতোই ভয়াবহ হচ্ছে, ততোই বাড়ছে টিসিবির মালামাল ক্রেতাদের সংখ্যা। সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গিয়ে যে দৃশ্য চোখে পড়লো তা রিতিমতো আতঙ্কের। ভয়ঙ্কর এবং আঁতকে উঠার মতো দৃশ্য। সেখানে কমপক্ষে পাঁচ’শ নারী-পুরষের দীর্ঘ লাইন। লাইন সাতক্ষীরা সদর থানার মেইন গেট প্রায় ছঁই ছুঁই। গায়ে গায়ে মানুষ। সামাজিক দূরাত্ব তো দূরের কথা, যেন সারি-সারি সাজানো। কথা বলে জানতে পারলাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বাঁচানোর জন্য ফজরের পর থেকে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ক্রেতাদের লাইন দেয়া শুরু হয়। আর টিসিবির সংশ্লিষ্ট ডিলার ট্রাকভর্তি মালামাল নিয়ে বেশ আরাম-আয়েশে হাজির হন সকাল ১০ টার পরে। এযেন পতানো ব্যবসা। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ক্রেতাদের অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ সময় অবাধে ঘুরাফেরার পর তারা মালামাল কেনার সুযোগ পান। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানকে সবিনয় বলতে চাই- এখুনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। মানুষ লাইনে দাঁড়ানোর আগেই তাদের হাতে টিসিবির মালামাল পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। সংশ্লিষ্ট ডিলারকে নির্দেশনা দিন। ক্রেতা পৌঁছানোর আগেই যেন ডিলাররা মালামাল নিয়ে সেখানে হাজির হয় সে ব্যবস্থা করুন। এতো কঠোরতার মধ্যেও জেলা শহরের দৃশ্য যদি এমনটি হয় তাহলে গ্রামের দৃশ্যপট সহজেই অনুমেয়। করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে ওরা। ওদেরকে থামানো দরকার। সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাবসহ প্রশাসন তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষজনকে ঘরে ফিরাতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমাদেরকে আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। হাতে সময় একেবারেই নেই। এখুনি শহর-গ্রাম-মহাল্লার মানুষকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ইমাম,পরোহিত, গ্রাম পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সমাজপতিসহ এলাকার সচেতন মহাল ও যুব সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস একটি শক্তিশালী ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ব্যাধী। এ থেকে মুক্তিপেতে সকলের সম্লিত প্রচষ্টা ছাড়া কখনই সম্ভব নয়। যারা দেশ-বিদেশ থেকে এখনও এলাকায় প্রবেশ করছে তাদের দিকে কঠোর নজর রাখুন। প্লিজ..প্লিজ নিজেকে বাঁচাতে বজায় রাখুন সামাজিক দূরত্ব।
চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে আমি বুঝতে পারলাম যে, মেডিকেল কলেজগুলো থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী সম্ভবত প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার জন এখন বেকার, বা যথাযথ কর্মসংস্থান তাদের নেই। বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলো প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে এবং এর মধ্যে মাত্র আড়াইশ জনের মতো পছন্দসই সরকারি চাকরি পেয়ে থাকে। বাকিরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতনের বেসরকারি চাকরিতে যোগ দেয়।
বেশ কিছু কারণে এই চাকরিগুলোকে কাঙ্ক্ষিত বা আদর্শ কর্মসংস্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার সুযোগ সীমিত। এমআরসিপির চূড়ান্ত পরীক্ষার কেন্দ্রটি বাংলাদেশে নেই, অথচ ভারত এবং মিয়ানমারে এই পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হিসেবে তরুণ ডাক্তারদের জন্য এফসিপিএস খুব আকর্ষণীয়, তবে এর সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন।
তরুণ মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটরা তাদের সিনিয়র এবং নেতাদের ওপর মোটেও সন্তুষ্ট নন, কারণ উত্তসূরীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরির জন্য এই সিনিয়র এবং নেতাদের উদ্যোগ অপ্রতুল। প্রায়ই নবীন চিকিৎসকেরা পূর্বসূরীদের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন এই বলে যে, নবীনরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করুক, সিনিয়ররা সেটা খুবই কমই চান, কারণ তারা মনে করেন এতে করে তাদের বাজার নষ্ট হবে!
স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের বাজেটের আকার কতো? আমাদের আইইডিসিআর, বিএসএমপিজিএমআর এবং মেডিকেল কলেজগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। চিকিৎসার কিছু ইস্যু খুবই স্থানীয় এবং আমাদের চিকিৎসা গবেষকদের এগুলো নিজেরাই শনাক্ত করতে সক্ষম হওয়া উচিৎ।
আমি একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী না হয়েও বর্তমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসরণ করছি এবং লক্ষ করছি যে, করোনা ভাইরাস সঙ্কট বিষয়ে, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার এবং মৃতদেহের সৎকারের ক্ষেত্রে, তাদের অবস্থানে কোনো সামঞ্জস্য নেই। সংস্থাটি একেক সময় একেক ধরনের পরামর্শ দিয়েছে, যা আমাদের জন্য বিভ্রান্তিকর। প্রথমে তারা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চীনের প্রশংসা করলো, অথচ সারা দুনিয়া জানে যে, চীন তথ্য গোপন করছে। দ্বিতীয়ত সংস্থাটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের পক্ষে ছিল না, সংস্থাটির শীর্ষ ব্যক্তি বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণাটিকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিলম্বিত করলো। চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের একটি মহামারীর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা এক বছর আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিল, কিন্তু ট্রাম্প বিষয়টিকে পাত্তাই দেননি।
আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি যে, কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চোখ বন্ধ করে অনুসরণ না করেও, নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজস্ব গবেষণা ও উদ্যোগ দিয়ে নিজেদেরকেই খুঁজে বের করার সক্ষমতা আমাদের থাকা উচিৎ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন রোগ ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে।
উল্লেখ্য, উহান গত কয়েক বছরে রফতানি বাড়াতে প্রযুক্তি উন্নয়নে বেশি ব্যয় করতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক বাজেট কমিয়েছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারীর মুখোমুখি হয়ে তারা এখন এর মূল্য পরিশোধ করছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, কভিড-১৯ পরবর্তী নতুন বিশ্বে আমাদের কাছে আরো অনেক বেশি অগ্রীম তথ্য থাকতে হবে, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আঁচ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। এই ধরনের সক্ষমতা অর্জিত হতে পারে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের নিজস্ব গবেষণা এবং উন্নয়ন থেকেই।
করোনার ভয়াল তান্ডবে পৃথিবী এখন মৃত্যুর অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে। পৃথিবীজুড়ে কান্না আর লাশের মিছিল ! লাশ রাখার জায়গা নেই। এমন মর্মান্তিক মৃত্যু যেনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে কান্নারও সুযোগ নেই। সন্তানের কাছে মা যায় না। সন্তান যায় না মার কাছে। দাফনে এতো আত্মীয় বন্ধু পরিচিতজন কেউ নাই ! অপরিচতরাই শেষ বিদায় দিচ্ছেন। ভয়ে বাকরুদ্ধ শোকস্তব্ধ গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশও আতঙ্কের বাইরে নয়। শক্তিশালী ভাইরাস করোনা আস্তে আস্তে বাংলাদেশকেও গ্রাস করতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যু থেমে নেই। করোনা থেকে বাঁচতে চারিদিকে যখন একের পর এক ঘোষিত, অঘোষিত লকডাউন তখনও খেটেখাওয়া অনেক মানুষ তার প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে নিজের কর্মস্থল ছেড়ে ছুটে চলেছে। কোন ভাবেই তাদেরকে থামানো যাচ্ছে না। অবিরাম ছুটে চলা । সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোস্তফা কামাল গত ৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে যাতে কোন মানুষ সাতক্ষীরাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জেলার সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পণ্যবাহী ট্রাক,জরুরী মালামাল সরবরাহ ছাড়া সবই বন্ধ। এ আদেশ জারির পর ওই দিনই সাতক্ষীরা-যশোর, সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কসহ জেলার সকল প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে পুলিশের পাহারা। কিন্তু আইন প্রয়োকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে গত ৩/৪ দিন ধরে ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ সাতক্ষীরাতে প্রবেশ করছে। কেউ ট্রাকেই উপর ড্রামের ভিতর লুকিয়ে, কেউ ট্রাকে পণ্য সেজে, কেউবা এ্যামম্বুলেন্সের ভিতর রোগি সেজে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে বাড়িতে ফিরছেন। বাড়িতে পৌছানোর আগেই পথিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে শত শত মানুষ আটকও পড়ছে। গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুরে দুই ট্রাক ভর্তি ৭৬ জন , শুক্রবার ৫টি ট্রাক ও ১টি বাস ভর্তি প্রায় দু’শ ঘরমুখো মানুষকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালে খবর এলো দেবহাটায় আরও ২ ট্রাক ভর্তি মানুষকে স্থানীয় জনতা আটক করে প্রশাসনের কাছে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে এদের বেশির ভাগ মানুষের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। দরিদ্র ও অসহায় এসব মানুষগুলো কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিল। করোনার কারণে তারা কর্মহীন হয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের কাছে ফিরছে। কথা হয় এদের কয়েক জনের সাথে । তারা জানালো- এলাকাতে কাজ নেই। তাই প্রতিবছর নভেম্বর মাসে আইলা দুর্গত শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ থেকে লক্ষাধিক মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতে ইটের ভাটায় তারা কাজ করতে যায়। সেখানে টানা ৫/৬ মাস কাজ করার পর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে অথাবা মে মাসের প্রথম দিকে আবার গ্রামে ফিরে আসে। ঈদুল ফিতরের আগেই তারা বাড়েিত ফিরে স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু এবার করোনার থাবা তাদের সেই আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। করোনার কারণে সব কাজ বন্ধ। মালিকরা তাদের ঠিকমত বেতন বা মজুরির টাকা পরিশোধ করেনি। হাতে-গাটি যা ছিল তাই নিয়েই তারা স্ত্রী, সন্তানদের কাছে ফিরছে। পরিবহন বন্ধ, যে যেভাবে পারছে সেভাবেই গ্রামে ছুটে চলেছে। তাদের এই যাত্রা অমানবিক হলেও তারা চায় পরিবার পরিজনের কাছে ফিরতে। কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া মানুষগুলো এই মুহুর্তে এলাকায় ফিরে আসাটা রীতিমতো আতঙ্কের। করোনা ঝুকি বাড়াচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। খরবটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের, উৎকণ্ঠার। কিন্তু মানবিকও বটে। তারা কোথায় যাবে। স্ত্রী সন্তানেরা গ্রামে। কর্মস্থলে থেকেও কর্মহীন, খাদ্য সংকট। পরিবার পরিজন গ্রামে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গণপরিবহন বন্ধ তাতে কি ! যেভাবেই হোক তাদের ফিরে আসা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। জীবন ও জীবিকার তাড়নায় ফিরে আসা এই মানুষগুলোকে নিয়ে ফেসবুকে নানা কথাবার্তা, মন্তব্য চোখে পড়ছে। কেউ বলছেন তাদেরকে জরিমানা করা হোক। কেউ বলছেন আইনের আওতায় আনা হোক। আবার কেউ কেউ বলছেন এদেরকে সাতক্ষীরার প্রবেশদ্বারে আটকিয়ে রাখা হোক। আবার কেউ বলছেন দরিদ্র এই মানুষগুলোকে আটকিয়ে রাখাটা অমানবিক হবে। নানা জনের নানা মন্তব্য, নানা কথা। কিন্তু এদের জরিমানা বা শাস্তির দেয়ার আগে তাদের মানবিক বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার। কর্মহীন মানুষগুলো কোথায় যাবে ? জরিমানা বা শাস্তি দেয়া বড় কথা নয়, এই মুহুর্তে প্রয়োজন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শতভাগ নিশ্চিত করা। যারা গ্রামে ফিরছে তারা হোম কোয়ারেন্টাইন একেবারেই মানছে না। প্রতিদিনই এ ধরনের খবর আসছে পত্রিকা অফিস গুলোতে। কোয়ারেন্টাইন মানার ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসন নয়, আশপাশের মানুষ গুলোকেও সচেতন হতে হবে। যারা এখনো বাইরের জেলা থেকে সাতক্ষীরাকে প্রবেশ করছে তাদের বাড়িতে বাড়িতে লাল পতাকা উড়িয়ে দিতে হবে। যারা কোয়ারেন্টাইন মানছে না তাদেরকে মানাতে বাধ্য করাতে হবে। এটা শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন , পুলিশ প্রশাসন তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষজনকে ঘরে ফিরাতে। কিন্তু প্রশাসনের লোক চলে আসার পর আবারও যা-তাই অবস্থা। আমাদেরকে আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না, কে কি মনে করল্লো তা দেখার সময় নেই। হাতে সময় একেবারেই কম। এখুনি প্রতিটি গ্রাম-মহাল্লার মানুষকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ইমাম,পরোহিত, এলাকার সচেতন মহাল ও যুব সমাজকে দায়িত্ববান হতে হবে। নোভেল-১৯ করোনাভাইরাস একটি শক্তিশালী সংক্রমন ব্যাধী। মানুষকে ঘরের ভিতর রাখাই এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক। বিশ্ব গবেষকরা করোনো নামের এই মরণ ভাইরাসের ওষুধ এখনো তৈরী করতে পারেনি। বিধায় আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে করোনা প্রতিরোধে এখুনি ঝাপিয়ে পড়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আজ পর্যন্ত যারা বিদেশ বা সাতক্ষীরা জেলার বাইরে থেকে এলাকায় প্রবেশ করেছে বা করছে তাদের দিকে কঠোর নজরদারি শুরু করুন। আসুন আমরা সাবই মিলে তাদের বাড়িতে লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে ঘরের ভিতর রাখা নিশ্চিত করি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক জনাব এস এম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার জনাব মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে সবিনয় বলতে চাই, করেনা আক্রান্ত জেলা থেকে এখনো যারা প্রবেশ করছে তাদেরকে ১৪ দিনের আগে বাড়িতে ফিরতে দেয়াটা ঠিক হবে না। তাদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিক করুন। কোন কারনে সেটা সম্ভব না হলে হোম কোয়ারেন্টাইন শতভাগ নিশ্চিত করতেই হবে। আর এলকাবাসীর কাছে কড়জোড়ে মিনতি, আদেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে কঠোর হন, প্রশাসনকে তথ্য দিন, করোনা রুখতে সহযোগিতা করুন।
করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মরণব্যাধি করোনার ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচার জন্য সারা বিশ্ব যখন লকডাউন তখনও বাংলাদেশের অসচেতন মানুষকে ঘরে ফিরাতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তখনও সেদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রবেশ করছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কোন শেষ নেই। গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১১২ জন। এনিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩০ জন। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা জেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার জন্য ৯১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার নতুন আরও ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এনিয়ে মোট নমুনা সংগ্রহ করা হলো ১১৪ জনের। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৮টি নমুনা রিপোর্ট সাতক্ষীরা স্বাস্থ বিভাগের হাতে এসেছে। বাকী রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে আজ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় কোন করোনা আক্রান্ত রোগি সনাক্ত হয়নি। গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে করোনার শক্তিশালী আক্রমন-ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকার কারণে গ্রামের মানুষ স্থানীয় হাট-বাজারে এসে আর আড্ডা দিচ্ছে না। বিকেল বা সন্ধ্যার আগেই গ্রামের হাট-বাজার গুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মসজিদে না গিয়ে তারা বাড়িতে নামাজ আদায় করছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য আসছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই আশা জাগানোর খবর। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার একাধিক মসজিদের ইমাম ও মুসল্লির সাথে কথা বলছিলাম। হতাশা নয়, তারা আশার কথা শুনালেন। তারা বললেন শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত অধিকাংশ মসজিদ ফাঁকা হয়ে গেছে। মুসল্লিরা এখন আগের যেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। বাড়িতেই নামাজ আদায় করছে। একজন ইমাম বললেন ‘ধর্মমন্ত্রনালয় এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন যে আদেশ দিয়েছে আমরা সে-টি পালন করছি। মুসল্লিদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ওয়াক্তিয় নামাজে ইমাম, মোয়াজ্জিন এবং মসজিদের সবচেয়ে নিকটবর্তী ৩ জন মুসল্লি ছাড়া আর কেউ আসতে পারবেন না। মুসল্লিরাও সেটা মেনে নিয়েছে। বাড়িতেই তরা নামাজ আদায় করছেন’। কথা বলছিলাম সনাতন ধর্মের একজন পুরোহিতের সাথে। তিনি জানালেন ‘পূঁজাসহ ধর্মিয় কোন অনুষ্ঠানে আমরা আর যাচ্ছি না। গোটা মানবজাতির কল্যানে, করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমাদেরকে ঘরে অবস্থান নেয়া খুবই প্রয়োজন’। আর এক মুহুর্ত দেরী নয়, করোনা প্রতিরোধে ইমাম পুরোহিতসহ সব ধর্মের দর্মীয় নেতাদেরকে সচেতন হতে হবে। করোনার কোন ওষুধ এখনও আবিস্কার হয়নি। সচেতনতাই একমাত্র প্রতিষেধক। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করি। আসুন করোনা প্রতিরোধে নিজে ঘরে অবস্থান করি, অন্যকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করি। এর পরও ঘরে থাকতে যারা রাজি নয়, তাদেরকে ঘরে থাকতে বাধ্য করি।
কভিড-১৯ রোগে বিপর্যস্ত পৃথিবী। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক মাথাপিছু আট লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাষ্ট্র, তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাজ্য আর দুই লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দকারী ইতালিতে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝা যায়। আর ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সম্মেলন, জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন, অলিম্পিক গেমস ও বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ সম্মেলনসহ বহু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সভা। বিশ্বের বেশিরভাগ সীমান্ত বন্ধ এবং দুই-তৃতীয়াংশ শহর হয় অবরুদ্ধ অথবা চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোর কথা ভাবাই যায় না। একটাই আশার কথা, সরকারি হিসাব অনুসারে আমাদের দেশে রোগটি একটু দেরিতে ছড়াচ্ছে। এই অতিরিক্ত সময়টুকু ব্যবহার করতে পারি কিনা, তার ওপরই নির্ভর করছে এই মহামারি আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ হবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, স্বাস্থ্য সংশ্নিষ্ট অবকাঠামোর ঘাটতি ও বায়ুদূষণ আমাদের বড় পরীক্ষার সামনে ফেলতে পারে। এ ছাড়া কৃষিসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠী যারা খাদ্যের জন্য নিরন্তর লড়াই করে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি না থাকলে পুরো জাতির সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। সামনের মাসগুলোয় ব্যাপক খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা সতর্ক করেছে। নিকট ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। শুধু খাদ্য নয়, বরং শিল্পপণ্যের আমদানি-রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত তিন মাসে তিন লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন এবং নতুন শ্রমিক অভিবাসনও বন্ধ হয়ে গেছে; এ বছর মার্চ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ কোটি ডলার।
কিন্তু আস্থা রাখার মতো আছে অনেক কিছু। আমাদের আছে প্রধানমন্ত্রীর নেতেৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিন্যস্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। সারাদেশের কমিটিগুলোয় প্রায় দেড় লাখ দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি জড়িত। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আপৎকালীন আশ্রয়কেন্দ্র আছে। এগুলোয় হাজারেরও বেশি রোগীকে আশ্রয় দেওয়া যায়। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সুনাম আছে; অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা বিপুল। দেশের ৮১ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে, যা ভেন্টিলেটর ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি চালাতে সাহায্য করবে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে দু’জন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মী আছেন, যারা সামান্য প্রশিক্ষণেই দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকা নিতে পারবেন। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও আছে বড় আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ইউনিয়ন থেকে আসা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সারাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি সংগঠন রয়েছে- যাদের কর্মীদলে আছেন ১০ লক্ষাধিক পেশাগত কর্মী। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল হলেও আমাদের আছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষিত তরুণ, যারা সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়ক হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবীরা যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কিছু জাতীয়তাবাদী সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সহমর্মিতা দেখা যাচ্ছে। চীন ও কিউবা অনেক দেশে স্বাস্থ্যকর্মী ও জরুরি উপকরণ দিয়ে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশও নিজের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কভিড-১৯ মোকাবিলায় চীনকে আপৎকালীন সহায়তা করা ছাড়াও সার্ক তহবিলে ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহূত ভেন্টিলেটরের সূত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক। রোগ উপশমে কোনো অগ্রগতি হলে চিকিৎসকরা সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছেন। টিকা আবিস্কারের প্রক্রিয়ার তথ্য উন্মুক্ত হওয়ায় টিকা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন সব দেশের বিজ্ঞানী। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন জরুরি অর্থ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশে যেখানে বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান সত্যিই কঠিন। চলমান অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা; মাথাপিছু মাত্র এক হাজার ৫৬০ টাকা। অন্যান্য উপখাত ও প্রকল্পগুলো যোগ করলে এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৫০ টাকা; যা ভারতে ৫ হাজার ৭৫৬ টাকা ও শ্রীলংকায় ১৩ হাজার ১৩ টাকা। শ্রীলংকার কথা বাদ দিই; এ সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমান বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হলেও আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ৬৯ হাজার কোটি টাকা দরকার। এ বছর খাদ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত যুক্ত করলে মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮৮ টাকা। ভারতে এই বরাদ্দের পরিমাণ তিন হাজার ৬২০ টাকা। দুর্যোগকালে দারিদ্র্যসীমার নিচের তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ভারতের সমান বরাদ্দটুকু নিশ্চিত করতে হলেও এই খাতে আরও ১৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ বছর খাদ্য আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কৃষি খাত থেকেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় কিনা, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কৃষি খাত দেশের সব থেকে বড় শ্রম খাতও বটে। এ খাতে বিনিয়োগের অর্থ চূড়ান্ত বিচারে স্থানীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু রাখতে ভূমিকা পালন করে। এ বছর কৃষি খাতে বরাদ্দ ১৪ হাজার কোটি টাকা মাত্র। প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ কৃষকের জন্য মাথাপিছু বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র সাত হাজার ৮০৫ টাকা। বাজারের ধাক্কা সামলে কৃষক-পরিবারগুলোকে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সেচ, বীজ ও সারের জন্য সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষক যে নতুন ফসল ঘরে তুলবে তার জন্য এখনই জরুরিভাবে ফসলের নূ্যনতম লাভজনক মূল্য ঘোষণার পাশাপাশি সরকারি ক্রয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে কভিড-১৯ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকা দরকার। এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৮৫০ কোটি টাকা (১০ কোটি ডলার) অনুদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পেশ করে। গত ৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক সাড়ম্বরে প্রচার করল, তারা বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করছে। এ বিবৃতি ডাহা মিথ্যে। বিশ্বব্যাংকের এই সাহায্য কোনো অনুদান নয় বরং তাদের ঋণ ব্যবসার অংশ। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে সাধারণত বার্ষিক ০.৫ থেকে ১.৫ শতাংশ হারে ঋণ পাওয়া যায়। অথচ বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ৩০ বছর মেয়াদি দুর্যোগকালীন এই ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ, যা সাধারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদের চেয়েও ০.৫ শতাংশ বেশি। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তিন লাখ ডলার অনুদান অনুমোদন করেছে, যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০টি পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কেনা যায়। এডিবি প্রদত্ত ঋণের পরিশোধযোগ্য সুদের হিসাব করলে এটি গরু মেরে জুতো দানের শামিল। এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক দেনার পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা (৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার), এ অর্থবছরে যার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৫২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী এই মহাদুর্যোগের সময় বৈদেশিক দেনার কিস্তি স্থগিত করে বিপুল আর্থিক ঘাটতি আংশিক জোগাড় করা সম্ভব। কোনো এক অসাবধান মুহূর্তে সেই পথও দেখিয়ে দিয়েছে স্বয়ং বিশ্বব্যাংক; পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি ধনী দেশের (জি-২০) অনলাইন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এক যৌথ বিবৃতিতে গরিব দেশগুলোর ঋণের সুদ স্থগিত করার জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানায়। কভিড-১৯-এর ধাক্কায় বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঋণের কিস্তি শোধ করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি। জুবিলি ডেট মুভমেন্টের পক্ষ থেকেও বহুজাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে ঋণের কিস্তি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আফ্রিকার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও একই দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ দাবিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় দুর্যোগ আইন কার্যকর করে ব্রাজিল অন্তত আগামী ছয় মাস কোনো বৈদেশিক দেনা শোধ করার সামর্থ্য নেই বলে ঘোষণা করেছে। বৈদেশিক ঋণের সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি বাতিল করা উচিত জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা চার্জ (ক্যাপাসিটি চার্জ), যা এ বছরের বাজেট অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ভাড়াভিত্তিক ও স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এই অর্থ নিয়ে যায়। বাংলাদেশের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে, তাতে এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বছরব্যাপী সরবরাহে ঘাটতি হবে না। ইতোমধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ও কার্যক্ষমতা দুটোই ফুরিয়ে গেছে। দেশীয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উচিত অন্তত আগামী ছয় মাস সব ব্যক্তিগত ঋণের সুদ ও কিস্তি স্থগিত করা। ইতোমধ্যে ইতালি, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরও) নির্দেশনায় ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় স্থগিত করেছে; এসব প্রতিষ্ঠান যেসব সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদেরও উচিত দুর্যোগকালীন সময়ের সুদ ও কিস্তি মওকুফ করা। বৈদেশিক ঋণ ও সক্ষমতা চার্জের সর্বমোট ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি খাদ্য সরবরাহ ও কৃষি খাতে সহায়তা করতে হবে। তার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী দেশে অতি দ্রুত ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করতে হবে, যা একই আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের অধিকার প্রদান করবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে গঠিত কমিটিগুলো অবিলম্বে সক্রিয় করা প্রয়োজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, চিকিৎসক ও সব যন্ত্রপাতিসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো দুর্যোগকালীন অধিগ্রহণ করে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিচ্ছিন্নকরণ (আইসোলেশন), সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) বা পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়াও বেসরকারি হোটেলও অধিগ্রহণ করেছে। কভিড-১৯-এর দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ সেগুলো মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের আনতে হবে বড় আকারের বীমার আওতায়, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও প্রণোদনা দেবে। দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলায়, এমনকি জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির জন্য দরকার ব্যাপক পরিমাণে সুরক্ষা সরঞ্জাম ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি, যে ক্ষেত্রে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোয় ঘাটতি আছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটরের নির্মাণসূত্র উন্মুক্ত হওয়ায় যে কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি এগুলো তৈরি করতে পারবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি কোম্পানি ওয়ালটন ভেন্টিলেটর উৎপাদন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিকে জরুরি ভিত্তিতে ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন নিয়মানুবর্তিতা দেখানোর নির্দেশ দিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্সের মানের কথা ভুলে গিয়ে দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা, ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো, স্বেচ্ছাসেবীদের চিহ্নিত, তালিকা করা ও সংশ্লিষ্টদের ২-৩ ঘণ্টা মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে জরুরি সময়ে সবাই মিলে ভূমিকা পালন করা যায়। আশা করছি, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়াবে না কিন্তু আমরা অন্যান্য দেশের সবচেয়ে ভালো উদাহরণগুলো ব্যবহার করে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকব। তাহলেই দুর্যোগের পাশাপাশি মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ পৃথিবীতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ জন্য বাংলাদেশে কভিড-১৯ সংক্রমণকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল ও সারাদেশে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয়করণের বিকল্প নেই। হাসান মেহেদী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট জিয়াউল হক মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) নুরুল আলম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক, খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাযুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যেমনটি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ছিলেন। করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং মানব স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির চলমানতা বজায় রাখতে রোববার প্রধানমন্ত্রী একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। জাতীয় আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৭৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এর অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে- সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ, বড় শিল্পে চলতি মূলধন, কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা এবং অন্যান্য। এখন বাস্তবায়নের পালা। অতীতে অনেক সময় বাস্তবায়নে নানা রকম ঘাটতির কারণে বিভিন্ন ভালো কর্মসূচির পুরোপুরি সফলতা পাওয়া যায়নি। এবার যেন সে রকমটি না ঘটে, সেদিকে সংশ্নিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এ রকম হুঁশিয়ারি তিনি কিছুদিন আগেও উচ্চারণ করেছেন। তার এই হুঁশিয়ারি এবং করোনাভীতি এসব বিপথগামীকে সৎ পথে থাকতে যেন সহায়তা করে। তবে যদি কেউ বিপথগামী হয় তাদের জন্য শাস্তির বিধান করতে হবে।
প্রথমে যা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে তা হলো, করোনা সংক্রমণ যাতে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করতে না পারে। সেই লক্ষ্যে প্রচলিত ব্যবস্থাগুলো আরও ব্যাপক ও কার্যকর করার দিকে অব্যাহত ও জোরদার নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, রোগী করোনা লক্ষণ নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এটা চলতে পারে না, একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
আশা করা অবশ্যই সমীচীন হবে যে, এই বিশ্ব মহামারি বাংলাদেশে বেশি ছড়াবে না; কিন্তু ছড়াবে ধরে নিয়ে তা রোধকল্পে প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে প্রস্তুতি না থাকায় কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। কাজেই প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো দ্বিতীয় চিন্তার সুযোগও নেই।
এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতা আছে দেশের এমন সব প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে এমন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আরও অনেক বেশি হতে পারে, এ রকম সুযোগ আছে। যে প্যাকেজ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী সেটি বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকিং খাত এবং সংশ্নিষ্ট অন্যদের দায়িত্ব হলো, দ্রুত বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হতে হবে। যেখানে শিল্প শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা, বাস্তবে যেন সে রকমটি ঘটে।
কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। ঋণ দেওয়া হবে প্রকৃত অর্থে ৪ শতাংশ সুদহারে। ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ সরকার দেবে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। কেননা, এ খাতটি প্রায়ই অবহেলিত থেকে যায়। তবে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মকাণ্ড। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা এবং শ্রমিক সংখ্যা ২৫ থেকে ৯৯ জন। আর মাঝারি শিল্প আরও অনেক বড়।
অন্যদিক কুটির এবং অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও ব্যবসা অনানুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড। এগুলোই সারাদেশে গ্রামগঞ্জে ও শহরে ছড়িয়ে আছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাঙ্গা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এগুলো বিশেষ অবদান রাখছে। শুধু তাই নয়, দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণে এবং পিছিয়ে পড়াদের আর্থসামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখছে। এগুলোয় বিনিয়োগ এক-দেড় লাখ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা। এদের কাছে প্রণোদনা যাতে পৌঁছে, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে এদের কাছে পৌঁছার সুযোগ তেমন নেই। এখানে উদ্ভাবনী চিন্তা এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অবশ্যই গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে। কাজেই এই প্রণোদনা প্যাকেজ এবং পিকেএসএফ ও অন্যান্য উৎস কুটির এবং অতিক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায়ে সরবরাহকৃত অর্থের লেনদেন চালু রাখা প্রয়োজন। একবার বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্নিষ্টদের ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হবে, ক্ষেত্রবিশেষে সম্ভব নাও হতে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় বলে প্রধানমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন। বিনামূল্যে ভুক্তভোগীদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত ও জোরদার করা হবে। খুবই জরুরি প্রশংসনীয়। এদিকে খরিফ মৌসুম সামনে। এ ছাড়া বোরো ধানের মৌসুমও আসন্ন। এসব দিকে বিশেষ নজর দেখা জরুরি। বীজ, উপকরণ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবহন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে তথ্য-ঘাটতি বিদ্যমান। দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, বোরো ধান বাংলাদেশে মোট ধান উৎপাদনের ৬০-৬৫ শতাংশ। কাজেই এই ফসলের ক্ষেত্রে সফলতা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বিদ্যমান বাস্তবতার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ বাস্তবানুগ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে বাস্তবতার আলোকে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যাতে অর্থনীতি এগিয়ে চলে ও মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। সংশ্নিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়নকারী ও সেগুলো বাস্তবায়নকারীরা অবশ্যই বাস্তবতার আলোকে কাজ করবেন। দেশে ও বিদেশে ঘটমান পরিবর্তন অবলোকন করে সময় সময় গৃহীত পদক্ষেপগুলোয় কিছু কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে।
এর আগে মহামারি অনেক হয়েছে। তবে সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বা কয়েকটি অঞ্চলে ঘটেছে। মৃতের সংখ্যাও কোটি কোটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তবে গোটা বিশ্বের সব মানুষের জন্য এ রকম টালমাতাল অবস্থা কখনও সৃষ্টি হয়নি। করোনা অবশ্যই একসময় পরাজিত হবে, তবে মানবসমাজ আর আগের মতো থাকবে না। করোনা থেকে যদি মানুষ শিখে যে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই। কেননা করোনা যাকে পায় তাকেই ধরে, সে ধনী হোক, ক্ষমতাবান হোক আর গরিব হোক- সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। এ অবস্থায় মানুষ যদি মানবিক-সামাজিক মূল্যবোধে দীক্ষিত হয় এবং ধান্দাবাজি ত্যাগ করে ‘প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’- মানবতার এই তাগিদ গ্রহণ ও অনুসরণ করে, তাহলে এই পৃথিবী সুন্দর হবে; মানবজীবন সবার জন্য ধন্য হবে এবং বাস্তবে রূপ নেবে- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ আর বাংলাদেশে গড়ে উঠবে সব নাগরিকের সমঅধিকার ও সমসুযোগের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। তবে বর্তমান অবস্থায় প্রথমেই সবাই মিলে করোনা হটাতে হবে।
আজ ১০ জানুয়ারি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। পূর্ণতা পায় বাঙালির বিজয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে মহান এই নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। এরপর প্রতি বছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি স্বাধীন দেশের মাটিতে আসবেন। পুরো দেশের মানুষই যেন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস পাক হানাদাররা যার গায়ে আঁচড় দেয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন। সুত্র: দৈনিক যুগান্তর।
আজ ২৫ ডিসেম্বর, প্রভু যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন । আজ শুভ বড়দিন ,বিশ্বের শত কোটি মানুষ আজ মহানন্দে যীশুর জন্মতিথি উৎসবটি উদ্যাপন করছে। বাংলাদেশের খৃষ্টভক্তগণও এ উৎসবমুখর দিনটি অতি আনন্দের সাথে উদ্যাপন করছে । পবিত্র বাইবেলে পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর মানুষের মুক্তির জন্য বার বার পৃথিবীতে ভাবাবাদীদের পাঠিয়েছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মুক্তি কারও দ্বারা সম্ভব হয়নি। তাই ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দেন তাঁর পুত্রকে পাঠাবেন বলে। ফলে মানুষ তার মুক্তি দাতাকে দেখার জন্য বিভিন্ন ভাবে খুজে বেড়াতে থাকে । এই ত্রানকর্তা, মুক্তিদাতার আগমন প্রতিক্ষাই বহু বছর ধরে প্রবক্তাগন ভবিষৎ বানি করেছিলেন ভাবী ত্রানকর্তা যে একজন কুমারীর গর্ভে জন্ম গ্রহন করবে, সে সমন্ধে প্রবক্তা ইসাইয়া বলেছিলেন,কোন একটি যুবতি (কুমারী) এখন সন্তান সম্ভব্য। সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে। সে তার নাম রাখবে ইন্মানুয়েল অর্থৎ আমাদের সহিত ঈশ্বর (ইসাইয়া৭:১৪) ভাবী ত্রাণকর্তা সমন্ধে ইসাইয়া আরও বলেছিলেন তার নাম: অনন্য মন্ত্রনাদাতা, শক্তিমান ঈশ্বর, শাশ্বত পিতা, শান্তিরাজ (ইসাইয়া ৯:৬)। আজ থেকে দু’হাজার বছরের ও অধিক কাল পূর্বে প্যালেষ্টাইন দেশের এক মফঃস্বল শহর বেথলেহেমের পান্থশালায় স্থান না পেয়ে যোসেফ তার অন্ত:স্বত্ত্বা স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে এক গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেয়। এই গোয়াল ঘরেই কুমারী মারিয়ার গর্ভে জন্ম নিলেন এক নবজাতক, তিনি হলেন ত্রাণকর্তা , কাল জয়ী যীশুখ্রিস্ট। খ্রিস্টের জম্মের সাথে সাথেই সমগ্র ধরনীতে শান্তি ও আনন্দবারি বর্ষিত হল। সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পন্ডিতগণ ছুটে এলেন। স্বর্গদূতেরা তাঁর প্রশংসা ও জয়ধ্বনি করতে লাগলো। তখন স্বর্গের এক দূত এই সংবাদ দিয়া রাখালদের বললেন আমি এক মহা আনন্দের সংবাদ তোমাদের জানাতে এসেছি। আর এই আনন্দে সমগ্র জাতির মানুষ আনন্দিত হবে। আজ দায়ুদ নগরীতে তোমাদের ত্রাণকর্তা জন্মেছেন-তিনি সেই খ্রিস্ট,স্বয়ং প্রভু (লুক ২: ১০.২১) পবিত্র বাইবেল অনুসারে এইতো বড়দিনের আসল ঘটনা। আমরা খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণ প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর মানব মুক্তিদাতা যীশু খ্রিস্টের জম্মোৎসব বা বড়দিন উৎসব পালন করে থাকি। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠতম অবদানের, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রগাঢ় ভালবাসার অনন্য এবং অনবদ্য স্বাক্ষর পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা মানুষের আনন্দের সর্বোৎকৃষ্ট উপলক্ষে এই বড়দিন। খ্রিস্ট বিশ্বাসী রূপে আমরা জানি ও বিশ্বাস করি প্রভু যীশু খ্রিস্ট হলেন মানুষের জন্য ঈশ্বরের অধিকৃত মক্তিদাতা। যীশু খ্রিস্টের জন্ম গোটা মানবজাতির ইতিহাসকে ‘দু’ ভাগ করে দিয়েছে। খ্রিস্ট পূর্ব ও খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ যীশু খ্রিস্ট জন্মের পূর্বে ও পরের ইতিহাস। যারা খ্রিস্ট বিশ্বাসী নন তারাও মানব ইতিহাসের এই বিভাগকে মেনে নিয়েছেন। এখানেই খ্রিস্ট জন্মের গুরুত্ব ও বিশেষত্ব। যীশুর জন্মের আগে ঈশ্বর,স্বর্গ, নরক বিচার , মুক্তি ইত্যাদি নমন্ধে মানুষের ধারনা ছিল অস্পষ্ট এবং জটিল। যীশু জন্মগ্রহণ করে মানুষকে নতুন ধারনা দিলেন যে, তিনি প্রেমময়, ক্ষমাশীল ও দয়ালু পিতা মুক্তিলাভ বা স্বর্গে প্রবেশাধিকার অসাধ্য কোন ব্যাপার নয়। এজন্য প্রয়োজন পাপ থেকে মন ফিরানো এবং ঈশ্বর ও মানুষকে ভালবাসা। যীশুর জন্মের ফলে মুক্তির দ্বার উম্মুক্ত সকল মানুষের কাছে। যীশু সার্বজনীন মুক্তিদাতা ,যারা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে ও তার শিক্ষা মেনে চলে, তিনি তাদের জন্য সবার মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খ্রিস্টের জন্মের মূল অর্থ হচ্ছে যারা অসহায়, বিচলিত,যারা বেদনার্ত, তাদের প্রতি প্রেম ,প্রীতি ও ভালবাসা প্রকাশের এবং যারা পরিশ্রান্ত ও যারা অন্ধকারে আছে তাদেরকে আলোর পথে আনার উদ্দেশ্যেই খ্রিস্টের আবির্ভাব। প্রভু যীশু খ্রিস্টের প্রধান আদেশ হলো প্রতিবেশীকে আপনার মত প্রেম কর। তিনি এসেছিলেন প্রেম প্রদর্শণ করতে। বিশ্রাম বারে ধর্মীয় নীতি ছিল। সব কাজ থেকে বিরত থাকা, এমনকি অসুস্থকে সুস্থতা প্রদান আইনে দন্ডনীয় ছিল। কিন্তু সেখানেও খ্রিস্ট অসুস্থকে সুস্থতা প্রদান আইনে দন্ডনীয় ছিল। কিন্তু সেখানেও খ্রিস্ট অসুস্থকে সুস্থতা প্রদান করে দেখিয়েছিলেন। নিয়মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য নিয়ম। তেমনিভাবে ধর্মীয় গোড়ামিতে ধর্মের জন্য মানুষ নয় বরং মানুষের জন্য ধর্ম। যীশু খ্রিস্ট চান প্রত্যেকে যেন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে খ্রিস্টের মত মানুষের সেবায় জীবন বিলিয়ে দেয়। যে প্রয়োজনে প্রভু যীশু এ পৃথিবীতে জন্ম নিলেন ও মানবীয় জীবন যাপন করলেন—-তা হলো আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করে শাশ্বত জীবন দান করা বড়দিনের মাহাত্ব্য, স্বার্থকতা ও সাফল্য এখানেই। খ্রিস্ট জীবনে চলার পথে অনেক উপদেশ দিয়েছেন। তোমরা আপনার জ্ঞানে বুদ্ধিমান হইও না, মন্দের প্রতিশোধে কাহারও মন্দ করিও না। সকল মানুষের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর। যদি সাধ্য হয় তোমাদের যতদূর হাত থাকে মনুষ্য মাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। এই জন্ম উৎসবের অন্তরালে একটি বিষয় হচ্ছে খ্রিস্ট রাজা ধীরাজ হয়েও দীন বেশে পৃথিবীতে নেমে এলেন। মানবীয় দুরদর্শিতায় ও পৃথিবীর বন্ধনে নিজেকে বাঁধলেন। খ্রিস্ট ছিলেন জগতের জ্যোতি ও সত্যের আলো। খ্রিস্ট আমাদের পাপের জন্য নিজেকে নত করলেন। তিনি নিজেকে মানবের সেবায় বিলিয়ে দেবার জন্য মাটির জীবন বেছে নিলেন। আসলে এ দিনটি বড়দিন তার কারণ এদিন এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যা আর কোনদিন ঘটেনি ও ঘটবেও না। এই ঘটনাটি হলো; ঈশ্বর আকারে প্রকারে মনুষ্যবৎ হইলেন। তিনি মাংসে মূর্তিমান হইলেন। পৃথিবীতে মনুষ্যদের মধ্য প্রবাস করিলেন। আর এটাই হলো বড়দিন উৎসবের মূল তাৎপর্য। পরিশেষে বড়দিনের শুভেচ্ছা প্রত্যেকের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বড়দিনের স্বার্থকতা কোথায় যদি না ঈশ্বরীয় প্রেম,শান্তি ও সুখের স্পর্শ আমাদের হৃদয়ে না থাকে, তাই আসুন যথাযথ মর্যাদায় প্রভু যীশুর এই জন্ম উৎসবকে পালন করি এবং ঈশ্বরীয় প্রেমে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের প্রতি সহনশীল হই। বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করি। আজ এ বড়দিনে শান্তির রাজপুত্রের জন্মদিনে অশান্তির কালো ছায়া দূর করি খ্রিস্টের আলো দ্বারা এবং অর্জন করি প্রেম আনন্দ, মৃদতা, সহিষ্ণুতা এবং আত্ম সংযম, তবেই আমাদের বড়দিন হবে স্বার্থক ,সুন্দর এবং শ্রেষ্ট বড়দিন।
অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী সাতক্ষীরা দেশের শেষ প্রান্তের উপকূলীয় জেলা। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেসে গড়া ওঠা বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুরোটা শ্যামনগর উপজেলাতে বিদ্যমান। চিংড়িচাষকে কেন্দ্র সংঘটিত নানা ঘটনার কারনে পরিবেশ-প্রতিবেশবাদীদের আলোচনায় থাকলেও উৎপাদনশীলতা ও সম্ভবনাময় আর্থিক ক্ষেত্র হওয়ার বাস্তব অবস্থা এখানে বিদ্যমান। প্রবাহমান প্রধান দুই নদী ও সাগরযুক্ত সাতক্ষীরার মাটির উর্ব্বরতা দেশের অন্য যে কোন এলাকা থেকে অনেক বেশি। মাছ, গোলপাতা, গরান, মোম, মধু নিয়ে বিশাল সম্পদের ভান্ডার সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে ১০ লক্ষাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকা আর্বতিত হয়ে থাকে। কৃষি ফসল বিশেষ করে ধান চাষে জেলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমি চিংড়িচাষ ও জলবদ্ধতার কবলে বছরের বেশির ভাগ সময় থাকলেও জেলার চাহিদার অনেক বেশি ধান উৎপাদন করে কৃষকরা। আম উৎপাদন ও সরবরাহে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা সাতক্ষীরা। বর্তমানে আমা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্বের সিংহ ভাগ অর্জনকারী জেলা সাতক্ষীরা। সাদা মাছও দেশের চাহিদার বেশিটা সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হয়। আর্ন্তজাতিক স্তরে মাটির টালির প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া শক্তিশালী অবস্থানে। কুল, খেজুরের গুড় তো আছেই। কাঁকড়া উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র সাতক্ষীরার শ্যামনগর অঞ্চল। কাঁকড়া আজ দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য।দেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহারকৃত ব্যান্ডেজের পুরোটা সাতক্ষীরার নলতায় উৎপাদিত হয়। দেশের বিখ্যাত জামদানি শাড়ির কারচুপি ও চুমকির কাজে নিয়োজিত সাতক্ষীরার বিপুল সংখ্যক নারী। পর্যটনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে সরাসরি সড়ক পথে সাতক্ষীরা একমাত্র এলাকা। প্রাকঐতিহাসিক নিদর্শনের অবস্থান দেশের অন্য যেকোন প্রান্ত থেকে কম দূরত্ব নয়, বরং সেখানে অনেক ক্ষেত্রে বেশি। মুঘল আমলের বারো ভূঁইয়ার অন্যতম এক ভুইয়ার রাজ্য সাতক্ষীরা অঞ্চলে। আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের জনপদ। এক নান্দনিক স্থাপত্য শিল্প নলতাতে খানবাহাদুর আহসান উল্লাহ (র:) মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে। সাতক্ষীরার সম্ভবনাময় চিত্র সরকারের উর্দ্ধতন মহলে তুলে ধরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এমন দৃশ্যমান ঘটনা বিরল। বিগত সময়ে তৎকালিন বস্ত্রমন্ত্রী সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস এবং সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও নলতায় প্রতিষ্ঠিত সরকারি নাসিং ও ম্যাট প্রতিষ্ঠায় তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। অবশ্য ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। যেমন এল্লাচরে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র, শহরের তালতলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিনেরপোতায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ট্রেনিং একাডেমীসহ বিনেরপোতায় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রসহ বেশ কয়েটি স্থাপনা। এছাড়া সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকগুলো স্থাপনা। স্থাপিত এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের রুটিন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকা আছে এমনটি সাধারন মানুষ মনে করেন না। বরঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনৈতিক খরর অনেক বেশি প্রচার হয়। সাতক্ষীরা এখন রাষ্ট্র কতৃক প্রকাশিত দরিদ্রতম জেলাগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে। সম্ভবনা থাকা স্বত্ত্বেও সরকারি বিশেষ পরিকল্পনার সাথে স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সম্পর্কযুক্ত না করতে পারায় এক বিপুল সংখ্যক পুরুষ জনসংখ্যা এলাকা থেকে চলে গেছে দূর দেশে কাজের সন্ধানে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিতে থাকায় সরকারের বিশেষ দৃষ্টি এখানে আকর্ষিত হওয়া স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক কাজটি ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত নীতিনির্ধারক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা করছেন, সাধারন মানুষ এমনটা মনে করেন না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত কাজগুলোর মধ্যে সরচেয়ে প্রয়োজনীয় নাভারণ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন বিষয়ে কোন খবর নেই। অথচ ইতোমধ্যে সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে। জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে সরকারি বরাদ্দের যে নায্য পাওনা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেশির ভাগ অন্য এলাকায় চলে গেছে বিগত সময়। এবারের বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের কর্মসংস্থান, জলবায়ুসহিষ্ণু স্থাপনা নির্মাণের জন্য ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেছে। অথচ সাতক্ষীরার নীতিনির্ধারক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সে খবর রাখেন কি-না সেটা একটি কঠিন প্রশ্ন। সরকার জেলা বাজেটের বিষয়ে বেশ আন্তরিক। কিন্তু সাতক্ষীরা একটি পিছিয়ে থাকা ও জলবায়ু ঝুকিতে থাকা জেলা হিসেবে জাতীয় বাজেটের ন্যায্য হিস্যা সাতক্ষীরার যেটুকু পাওনা সেটুকুর অর্ধেকও আজ অবধি সাতক্ষীরায় আসেনি, উন্নয়ন কার্যক্রম হিসেবে বাস্তবায়িত হয়নি। সুন্দরবন জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় ররাদ্দের সিংহভাগ নিতে একটি জোরালো জনবান্ধন ও পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। জরুরি দরিদ্রতম জেলার দারিদ্র বিমোচনে সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি গ্রহণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ-খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজন জোরদার প্রচারণা ও কর্মসুচি গ্রহণ। রাজনৈতিক ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে জেলাকে সামনে নিতে, এলাকায় কর্মসংস্থানের পথ উম্মুক্ত করে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের এলাকা ত্যাগ বন্ধ করা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, ডেল্টা প্ল্যানের সাথে সঙ্গতি রেখে নদ-নদীর স্থায়ী নাব্যতা সৃষ্টি ও জলবদ্ধতামুক্ত জনপদ গড়েতে একটি মাস্টার প্লান তৈরির দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের প্রতি সাতক্ষীরাবাসীর প্রধান চাওয়া। সাতক্ষীরার জনগণের প্রত্যাশাজেলার নীতি প্রণেতা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরকারের উর্দ্ধতন মহলে সাতক্ষীরার সংকট ও সম্ভবনার ক্ষেত্র তুলে ধরতে জাতীয় সংসদসহ সকল মহলে চিঠি দিয়ে (ডিও) নজরে আনা এবং একই সাথে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সারসংক্ষেপ তৈরি করা এবং তা প্রেরণে যতœশীল হবেনÑজনপ্রতিধি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি এমটাই প্রত্যাশা সাতক্ষীরাবাসীর। সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক দক্ষিণের মশাল
প্রজন্ম চিনো??
শাফী ইমাম রুমী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বল বীর
গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের
টর্চার সেলে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রুমীকে অমানুষিক অত্যাচার করে। রুমীর দুই
পা শিকল দিয়ে বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে ফেলে
দেয়, আবার ওপরের দিকে তুলে ঝুলিয়ে রাখে। তার পরও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখ
থেকে নরপশুরা কোনো কথা বের করতে পারেনি। পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন
রুমী। স্বাধীনতার পর শহীদ রুমী বীরবিক্রম (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত হন।
জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে রুমী অন্যতম প্রধান
চরিত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি
পান।দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা গর্ভধারিণীকে কষ্ট দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ১৯৫১
সালের ২৯ মার্চ পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। ডাক্তার এ কে.খান বাবার বন্ধু
ছিলেন। বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার; তাই তিনি সদ্যোজাত শিশুটির দুই পা ধরে, মাথা
নিচের দিকে ঝুলিয়ে পিঠে চাপড়ে বলেছিলেন “এটা ১৯৫১ সাল, ১৯৭১ সালে এই ছেলে
ইঞ্জিনিয়ার হবে।” তার পিতা শরীফ ইমাম ও মাতা জাহানারা ইমাম প্রিয় কবি
জালালুদ্দিন রুমীর মতো জ্ঞানী ও দার্শনিক হবে এই চিন্তা করেই শিশুটির
ডাকনাম রাখা হয়েছিল রুমী।
পিতামাতা
ও পরিবার পরিজনের স্নেহছায়ায় ক্রমশই শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে উপনীত
হয়েছিলেন। পড়াশুনা ও খেলাধুলায় অসম্ভব প্রতিভাবান ও চৌকস সেই তরুণ ছিলেন
স্পষ্টভাষী, সাহসী, ও দৃঢ় চিত্তের অধিকারী। ঢাকার আজিম পুরের একটি কিন্ডার
গার্টেন স্কুলে রুমীর লেখা পড়ার হাতে খড়ি। ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তান শিক্ষা
বোর্ডের অধীন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট ইস্কুল এ্যান্ড কলেজ থেতে ম্যট্রিকুলেশন
পরীক্ষায় ৩য় স্থান অধিকার করে উর্ত্তীন হন। কলেজে পড়ার সময় রুমী তার কিছু
বন্ধুর সাথে ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর এ ভর্তি হন। এই ট্রেনিংএ
তিনি সার্জেন্ট পদবী লাভ করেন। এর পর আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানের বুয়েট) ভর্তি
হন।এর পর আমেরিকার বিখ্যাত ইলিনয়স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে চান্স পান।
সেখানে পড়াশুনা করে স্বচ্ছল ও নির্ঝন্ঝাট জীবন গড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু সে সময় বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আদর্শগত কারণে দেশকে
যুদ্ধের মধ্যে রেখে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে
যাননি। একাত্তরের ২৫মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলায়
যেদিন ঘুমন্ত বাংলা ক্ষতবিক্ষত হয়, সেদিনের সেই কালোরাতকে চিরতরে দূর করে
প্রিয় দেশকে উজ্জ্বল আলোর মুখ দেখাবে বলে যাঁরা মনে মনে দৃঢ় সংকল্প
করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে তরুণ রুমী ছিলেন অন্যতম।
কুড়িতে পা রাখা অসম্ভব প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর সেই তরুণ তাঁর প্রাণপ্রিয়
পিতামাতার মতই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তাই আমেরিকার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের
হাতছানি উপেক্ষা করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ রুমী মায়ের কাছে অনুমতি
চেয়েছিলেন যুদ্ধে যাবার। দেশের মানুষকে বর্বর পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত
করে এক টুকরো মানচিত্র উপহার দেবেন জন্য মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের
যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। কাতরভাবে বলেছিলেন,
‘আম্মা, দেশের এ রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও,
আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী
করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়তো বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব;
কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনো দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।
তুমি কি তাই চাও, আম্মা? কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায়
উজ্জ্বল তারকা রুমী কোনদিনই হারেনি প্রতিপক্ষের কাছে। সেদিন ও মায়ের কাছে
বিজয়ী হয়েছিলো রুমী। ছেলের অটল দেশপ্রেমের প্রতিজ্�
দেখে মা জাহানারা ইমাম বলেছিলেন ‘যাহ, তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিলাম।’
১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মায়ের অনুমতি নিয়ে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের
প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাঁকে ফেরত আসতে
হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। দৃঢ়চেতা শাফী ইমাম রুমী পিতামাতার
আশীর্বাদ নিয়ে একাত্তরের ১৪জুন যুদ্ধে যাবার প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা ছেড়ে
মেলাঘরের উদ্দেশে পাড়ি জমান। ভারতের মেলাঘরে তিনি ২নং সেক্টর এর সেক্টর
কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হায়দারের
অধীনে আনুমানিক দেড় থেকে প্রায় দুই মাস কমান্ডো টাইপ গেরিলা ট্রেনিংসহ
সুপার এক্সপোসিভ বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে অন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে তরুণ রুমী ঢাকায়
প্রবেশ করে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন।’আমাদের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেদ
মোশাররফ কী বলেন,জানো? তিনি বলেন, “কোনো স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না;
চায় রক্তাক্ত শহীদ।” অতএব মামনি, আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাব, এই কথা ভেবে
মনকে তৈরি করেই এসেছি।’
ইস্পাতসম এই কঠিন কথাগুলো ঢাকায় এসেই রুমী তার মাকে বলে!
ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ
পরিচালনাকারী একটি সংগঠন।রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান
উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাকে
ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ
ছিল উল্লেখযোগ্য। ২৫ আগস্ট রুমীসহ আরও পাঁচজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা
ধানমন্ডির ২৮ নম্বরে দুর্ধর্ষ গেরিলা অপারেশন সম্পন্ন করেছিলেন। সেদিন বেশ
কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা হত্যার পর পাকিস্তানি আর্মিদের একটি জিপ তাদের
অনুসরণ করলে রুমী তাঁর স্টেনগানের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে ফায়ার
করে আর্মির চালককে গুলিবিদ্ধ করেন। এর ফলে পাক আর্মির জিপটি নিয়ন্ত্রণ
হারিয়ে উল্টে যায়। রুমীর সাহসিকতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিতার কারণে সেদিন তাঁর
সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার
সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
এই অ্যাকশনের পর ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান। এদিন
রুমী তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাসায় গিয়েছিলেন। পাকিস্তান হানাদার
বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাদের
বাসভবন থেকে বেশ কিছুসংখ্যক গেরিলা যোদ্ধার সাথে রুমীকে পাকিস্তানি আর্মিরা
গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক,
আজাদ ও জুয়েল, রুমীর বাবা শরীফ ইমাম, ছোট ভাই জামী, বন্ধু হাফিজ, চাচাতো
ভাই মাসুম প্রমুখ। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাক আর্মির অমানুষিক অত্যাচার,
নির্যাতন সহ্য করেও তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের নাম-অবস্থান প্রকাশ করেননি। ২০
বছরের টগবগে তরুণ সাহসী বীর রুমী অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েও তাঁর
পরিবারের অন্য সদস্যদের কোনো কিছু স্বীকার করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। তিনি
ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব
দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। সকল দায়ভার নিজের ওপর নিয়ে রুমী তাঁর
পরিবারের অন্য সদস্যদের ছেড়ে দেবার জন্য হানাদারদের সম্মত করতে পেরেছিলেন।
তাইতো ধরা পড়ার দুই দিন পর হানাদার বাহিনী সবাইকে ছেড়ে দিলেও তরুণ রুমীকে
আর ফিরিয়ে দেয়নি। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট সহযোদ্ধাদের সাথে রুমীর সমস্ত
যোগাযোগ বন্ধ হয় যায়। এদিনের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর
দেখা যায়নি। তাঁর সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন লেখায় জানা যায়- ত্রিশ আগস্টের পর
আর তাঁরা রুমীর দেখা পাননি।ধরা পড়ার আগে কোলে মাথা রাখা রুমিকে মা বলেছিলো
কত বয়স তোর।পৃথিবীর কিছুই তো দেখলি না,জীবনে কিছুই তো জানলিনা।রুমী মুখ
তুলে কি একরকম যেন হাসি হাসল,মনে হলো অনেক বেদনা সে হাসিতে।একটু চুপ থেকে
বললো,
বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন একটা কথা আছে না আম্মা হয়তো জীবনের পুরোটা তোমাদের
মত জানি না,ভোগও করিনি কিন্তু জীবনের যত রস-মাধুর্য-তিক্ততা সব কিছুর স্বাদ
আমি এর মধ্যেই পেয়েছি আম্মা।যদি চলেও যাই কোন আক্ষেপ নিয়ে যাবো না ।রুমি
আর ফিরে আসেনি। কখনো না।
ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক
আত্মীয় তাঁর জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের
সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমাম রাজি ছিলেন না।রুমী বুকের রক্ত দিয়ে লিখে
গেছেন বাংলাদেশের নাম। যার চিত্র ফুটে উঠেছে তাঁর মায়ের লেখা বিখ্যাত বই
একাত্তরের দিনগুলিতে।আর এই বীর শহীদদের মহান আত্নত্যাগের ফলেই আমরা পেয়েছি
আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।এই সকল বীর শহীদদের প্রতি রইলো আমাদের অতল
শ্রদ্ধা।আসলে কিভাবে শ্রদ্ধা জানালে এই বীর শহীদদের সঠিক প্রাপ্য
সম্মানটুকু জানানো হবে সেটা আমার জানা নেই!কি করলে এই বীর শহীদদের ঋণ শোধ
হবে তাও জানা নেই! জানা থাকবে কিভাবে!?কোনো ভাবেই যে এই বীর শহীদদের ঋণ শোধ
করা যাবে না।
সর্বশেষে শুধু এতটুকুই বলতে চাই
“এক নদী রক্ত পেড়িয়ে,
বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা,
তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না,
না না না শোধ হবে না।
মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে,
সাত কোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা,
তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না,
না না না শোধ হবে না।
মো: সাজ্জাদুর রহমান-এর শিক্ষাজীবনের ফলাফল ছিল সাড়া জাগানো । বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । নিজ পেশায় দক্ষতরা পরিচয় দিয়ে তিনি পুলিশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন । সারা দেশে সর্বোচ্চ সম্মান অর্জনকারী পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনি অন্যতম । সততার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানব সেবায়ও তিনি পিছিয়ে নেই । তিনি কখনও অসহায় এতিমদের পাশে, কখনও গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্যে, কখনও ছিন্নমূল মানুষের পাশে থেকে, আবার কখনও সমাজ উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । সাজ্জাদুর রহমান ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকলাশ গ্রামের মরহুম ছবেদ আলী মন্ডলের ছেলে। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন ।
পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে তাঁর জন্ম ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে । বাবা মায়ের ৬ সন্তা নের মধ্যে তিনি সকলের বড় । বোন নাদিরা খাতুন ও নাছিরা খাতুন – এর বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই । ভাই আতাউর রহমান, রবিউল ইসলাম ও আমিরুল ইসলাম সকলেই পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছেন । পারিবারিক সুত্রে আরও জানা গেছে ২০০০ সালে সাজ্জাদুর রহমান মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জনাব মো: কোহিনুর হোসেনের কন্যা আকিদা রহমান নীলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । বর্তমানে তাদের ৩ সন্তানের মধ্যে সাদিক-বিন-সাজ্জাদ ঢাকা সিটি কলেজে এইচএসসি’র মেধাবী ছাত্র । ২য় পুত্র হৃদিক-বিন-সাজ্জাদ দিনাজপুর বিকেএসপি’তে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে ও ক্রিকেট খেলে, কন্যা নাফিসা-বিনতে-সাজ্জাদ সাতক্ষীরা নবজীবন ইনষ্টিটিউটে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে । সাজ্জাদুর রহমান শিক্ষা জীবন ঐতিহ্যবাহী কোলাবাজার স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হণ কোলাবাজার ইউনাইটেড হাই স্কুলে । এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৯০ সনে এসএসসি’তে যশোর বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান লাভ করেন । ১৯৯২ সনে যশোরের এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি’তে একই বিভাগ হতে মেধা তালিকায় ১৫তম স্থান পান । এরপর তিনি ১৯৯৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজ কল্যান ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে এমএসএস – এ প্রথম শেণীতে ৫ম স্থান অধিকার করেন । ২০০৩ সনে ২১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরেই বাংলাদেশ পুলিশে এএসপি পদে যোগদান করেন । এরপর সময়ের সাথে সাথে তিনি পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলায় পুলিশ সুপার-এর দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি ২০১০ সালে লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে টঘচঙখ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘ পদক লাভ করেন ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, এসপি সাজ্জাদুর রহমান নিজ এলাকায় বাবার নামে খুলেছেন ছবেদ আলী ফাউন্ডেশন। উক্ত ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে এলাকার দু:স্থদের মাঝে প্রতি বছর শীতবস্ত্র সরঞ্জাম বিতরণ, গরীব মেধাবী শিক্ষার্র্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন । নিজ এলাকায় এসে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন । এছাড়াও এলাকায় উক্ত ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী র্যালী, বাল্য বিবাহ রোধে বিভিন্ন প্রকার কর্মসুচীর মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করে থাকেন । তিনি এলাকায় এসে খোঁজ নিয়ে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী ছাড়াও ছিন্নমুল মানুষদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন ।
মো: সাজ্জাদুর রহমানের বর্তমান কর্মস্থল সাতক্ষীরা’র চাকুরীর সুবাদে তিনি বেশ কিছুদিন সাতক্ষীরাতে আছেন । এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মত তিনি সাতক্ষীরা’র সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে নানা কর্মসূচী পালনসহ বিভিন্ন ধরণের ভালো কাজ করে আসছেন । তার ধারাবাহিকতায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাতক্ষীরা শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছেন । পেশাগত দায়িত্ব পালনে সঠিক জবাবদিহিতার জন্যে এবং জনসাধারণের অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স্র স্থাপন করেছেন । সম্প্রতি তিনি একশত টাকায় পুলিশে চাকুরী দিয়ে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন । নিজ অর্থায়নে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের দু-পাশে প্রায় ১০(দশ) হাজারসহ সারা জেলায় ৩০ হাজার বৃক্ষরোপন করে বিরল
নজির স্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে কল করলে মিলবে প্রয়োজন মোতাবেক রক্ত এবং সকল প্রকার সহযোগিতা । এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে খাবার নিয়ে তিনি চলে যান এতিমখানায় অথবা দু:স্থদের মাঝে । এছাড়াও চরম অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়া ছাড়াও নিজের টাকা খরচ করেন তিনি । সর্বোপরি মানবতার সেবায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন ।
কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব কওছার আলী জানান, সাজ্জাদ ছাত্রজীবনে অত্যান্ত মেধার সাক্ষর রেখেছে । এছাড়াও সে ছিল সর্বদা জ্ঞান পিপাসু, নম্র, ভদ্র প্রকৃতির ছেলে । তখন তাকে দেখে মনে হত সে বড় হয়ে কিছু একটা হবে । কথায় আছে, সকালের সূর্য্য দেখে দিনটা কেমন যাবে তা অনুমান করা যায় । সাজ্জাদের ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে । বর্তমানে পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা হয়ে দেশ সেবা করার সাথে সাথে সমাজ উন্নয়নে ও মানবতার সেবায় যেভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সেজন্য আমি তার শিক্ষক হিসেবে নয়, ঝিনাইদহ জেলার একজন মানুষ হিসেবে গর্ববোধ করি । কালীগঞ্জ কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আইয়ুব হোসেন জানান, সাজ্জাদুর রহমান তার গ্রামের ছেলে, ছোটবেলা থেকেই তার চলাফেরা ছিল অন্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা । এ এলাকার অনেক মেধাবী ছেলে লেখাপড়া শেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে । তবে সাজ্জাদ তাদের চেয়ে আলাদা, বেশ ভিন্ন । কেননা ছুটিতে যখন সে বাড়ী আসে তখন এলাকার সকল জায়গায় সে ঘুরে বেড়ায় । শিক্ষাজীবনে সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল তাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশি করে খোঁজ নিয়ে থাকে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে লেখাপড়ায় উৎসাহ ও সহযোগিতা করে থাকে । অসহায় গরীব দু:স্থদের পাশে দাঁড়ায় সাজ্জাদ । মুঠোফোনে সাজ্জাদুর রহমানর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও লেখাপড়ায় মধ্যবিত্ত ছিলাম না । পড়াশুনা শেষ করার পর এদেশ আমাকে কর্মসংস্থান দিয়েছে । আমি ভাবি সমাজের অনেক মানুষের চেয়ে শারিরীক ও মানসিক ভাবে ভালো আছি । কিন্তু সবাই মিলে ভালো থাকতে পারলে সেটাকেই ভালো বলা যাবে । পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে আমি কিছুটা কাজ তরি । তারপরও সমাজের একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু করা প্রয়োজন তার সবটুকু আমি করতে পারি না । বর্তমানে আমার ভাইয়েরাও আমাকে কিছুটা আর্থিকভাবে সাহায্য করে থাকে । সে কারনেই আমার জন্য এ ধরণের কাজ করা সহজ হচ্ছে, তিনি আরও বলেন, সমাজের একজন মানুষ হিসেবে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অনেক কিছু করতে হয় । সবটা করতে না পারলেও অসহায়দের জন্য কিছুটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র ।
মো: সাজ্জাদুর রহমানকে আমরা সাধুবাদ জানাই । একজন পুলিশ কর্মকর্তা’র এ ধরণের মহতী কর্মকান্ড আমাদের উজ্জিবীত করে । তিনি আগামীতে মেহনতি মানুষের কল্যানে আরও অনেক কিছু করবেন – এ আশাবাদ ব্যক্ত করি । আমাদের তাঁর আদর্শে অনুপ্রানিত হওয়া দরকার ।
সংগ্রাম ও প্রতিবাদ আর আত্মত্যাগ। এ ভাবেই পৃথিবীতে শ্রমজীবি মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আদায় করেছে অধিকার। মানুষের কোন অধিকার সাধারণভাবে অর্জিত হয়েছে, এমন নজির পৃথিবীতে বিরল। আর এ সংগ্রাম একদিনের আকর্ষিক কোন বিষয় ছিল না। ছিল মানুষের পুঞ্জিভুত তীল তীল ক্ষোভের সম্মিলিত বহিপ্রকাশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার সুত্রপাত একক থেকে শুরু হয়ে লক্ষতে পৌঁছেছে। বেশীর ভাগের ক্ষেত্রে প্রথম বিদ্রোহী একককে জীবন দিয়ে অন্যদের বুঝাতে হয়েছে, শ্রমজীবিদের স্বাধীনতা নেই, মর্যাদা নেই, বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আর একক রক্ত ত্যাগ, রক্ত বীজ হয়ে সমাজ অভ্যন্তরে, রাস্ট্র অভ্যন্তরে বৃহৎ মহির জন্ম দিয়েছে। ১৮৫৭ সালে ৮ মার্চ সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা কাজের ঘন্টা কমানো, কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তাপূর্ণ মজুরীর দাবীতে রাস্তায় মিছিল করে। এ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় ও গুলি করে। ফলে নারীর রক্তে রাজপথ ভিজে যায়। মার্কিন রাস্ট্রের নিউওয়ার্ক শহরে রাস্তায় নারীদের এ মিছিল ও আত্মত্যাগের ঘটনাটি ঘটে। আসলে এ দিন কি প্রথম নারী শ্রমিকরা নির্যাতিত হয়েছিল ? না, সেটি নয়। অর্থাৎ কারাখানা শুরু থেকে কম মজুরি দেওয়া আর বেশী সময়ে কাজ করিয়ে ঘটনা শুরু হয়। শ্রমিকদের সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ করার বাস্তবতা না থাকায় একক প্রতিবাদ আর নিগৃত হতে হতে এক সময় রাজপথে নামে নারী শ্রমিকরা। উনবিংশ শতাব্দির শুরুর সময়কাল। শ্রমিকরা তখন গড়ে ১২ ঘন্টার অধিক সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হতেন। বিনিময়ে যে মজুরী প্রদান করা হতো তা খুবই নগন্য। মালিকরা পুরা লাভটি নিয়ে নিত। শ্রমিকদের জীবনযাবন ছিল মানবেতর। উপরন্ত ছিল মালিকদের সীমাহীন নির্যাতন। কখনো কখনো তার রুপ ছিল ক্রীতদাসসম। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চের আন্দোলন তখনকার শাসকগোষ্টি ও মালিকপক্ষ পুলিশ আর প্রশাসনকে দিয়ে সাময়িক ভাবে নির্মম নির্যাতনের স্ট্রীম রোলারের চাকায় পিষ্ট করতে পারলেও যে রক্তবীজের জন্ম হয়, তা পরবর্তিতে পৃথিবীব্যপি ছড়িয়ে পড়ে। অর্জিত হয় দাবী সমুহ। ১৮৬০ সালে ৮ মার্চ নিউওয়ার্কের সুতা কারখানার শ্রমিকরা ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ স্মরণে প্রথম শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলে। এ ভাবেই সুতা কারখারার নারী শ্রমিকের রক্ত দানের ঘটনার মধ্যদিয়ে শ্রমিক আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে। এক সময় এ আন্দোলন কারখানার গন্ডি পেরিয়ে, দেশ পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক মহলে ঝড় তোলে। এ সময় পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের আন্দোলন গড়ে উঠা শুরু হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে কমিউনিস্ট পাটির জন্ম হয়েছে। জার্মান কমিউনিস্ট পাটির নেত্রী ক্লারা জেটকিনের উদ্যোগে প্রথম আর্ন্তজাতিক নারী সম্মেলন জার্মানীতে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে নারী শ্রমিকদের নায্য মুজুরী, কর্মঘণ্টা ও ভোটধিকারের দাবী উত্থাপন করা হয়। ১৯১০ সালে ২য় আর্ন্তজাতিক নারী সম্মেলন ডেনমার্কেও কোপেনহেগেন এ অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ৮ মার্চকে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর থেকে পৃথিবীর কমিউনিস্ট পাটি সমুহ স্ব স্ব দেশে ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসতে থাকে। রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে সামাজতান্ত্রিক দেশ গুলো বেশ গুরত্ব দিয়ে দিবসটি পালন করা শুরু করে। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের প্রভাবে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করা শুরু করে। তবে জাতীসংঘের সাধারন পরিষদে দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করে ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিশেম্বর। এ সময় জাতীসংঘ সদস্য দেশ সমুহকে দিবসটি তাৎপর্য তুলে ধরে পালনের অনুরোধ করে। ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্তনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সগম হয়। আর্ন্তজাতিক ভাবে নারীর অধিকার মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমমর্যাদার কথা বলা আছে। কেবলমাত্র নারী হওয়ার কারনে কেউ যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় তার সুরক্ষা আইনে দেওয়া হয়েছে। নারী নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রনয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল, বাংলাদেশে বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউ ইউয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই সুত্রে গাঁথা। সময় ঘন্টা, মজুরী আর কাজের পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন এখনও করতে হয়, রাজপথে রক্ত দিতে হয়। বাংলাদেশ প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়। বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই। তালিকাভুক্ত নয় এমন শিল্প কারখানার নারী শ্রমিকেরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা পায় না। তাদের ন্যায্য মজুরীর অভাব, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। জাতীসংঘের সদস্য রাস্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে দিবসটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় বর্নাঢ্য ভাবে পালিত হওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নারী দিবসের আবেদন ও মূল্যবোধ এ সকল অনুষ্ঠানগুলোতে পাওয়া যায় না। বিষয়টা হচ্ছে বৈষম্যে কারণ যে বৈষম্যযুক্ত রাস্ট্র কাঠামো, তা পূর্বের অবস্থায় বিদ্যমান রেখে নারীর প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা সম্ভব নয়। আবার এই বৈষম্যময় রাস্ট্র কাঠামো টিকিয়ে রেখেছে বর্তমান আমলাতন্ত্র ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাস্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা সকল গণ আন্দোলন, নায্য আন্দোলন এ পেটোয়া বাহিনী কতৃক নিয়ন্ত্রন করে থাকে শাসক মহল। তা সে শাসক যে দলের হোক না কেন ? আসলে বৈষম্যময় রাস্ট্র কাঠামো টিকিয়ে রেখে, বর্তমান আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য থেকে নারীর সামগ্রিক মুক্তি আনা সম্ভব নয়। প্রয়োজন মনন জগতের পরিবর্তন। মানুষ হিসেবে দেখার মানুষিকতা। যা মুনাফা ভিত্তিক সমাজে বহুলাংশে কাঠালের আমসত্ত্ব। নারীর সামগ্রিক মুক্তি নিহিত আছে পুরুষতান্ত্রিক শোষন মুলক বর্তমান রাস্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্যে। সে জন্য প্রয়োজন সাম্যের নৈতিক মুল্যবোধ ধারনকৃত রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে নিরবিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের মাধ্যমে বর্তমান রাস্ট্র কাঠামো ভেঙ্গে মানবিক, বৈষম্যহীন রাস্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা। সকল মানুষের মৌল অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানের। জাতী, গোত্র, বর্ন ও লিঙ্গ ভেদের বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
দেশ এগুচ্ছে।সমৃদ্ধি মানুষ
দেখচ্ছে।মানুষের মনে যে স্বস্তি থাকার কথা সেটি মানুষ পাচ্ছে না। কোথায় যেন একটু
অতৃপ্তি থাকচ্ছে।কেমন যেন ‘নিজের মনে পুড়ি—গন্ধ বিধুর ধুপ।’ এ অবস্থা কোন সময়ের
জন্য ভালো নয়।মানুষ পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রাণী থেকে পৃথক তার চিন্তা শক্তির জন্য,
চিন্তার স্বাধীনতার জন্য। চিন্তাকে মুক্ত রাখা জন্য মানুষ সংগ্রাম করে, লড়াই
করে।বাঙালীরাও সে চিন্তা মুক্তির লড়াই সংগ্রাম করেছে।তবে বাঙালী লড়াই ছিল
দ্বিমাতৃক।চিন্তার স্বাধিনতার সাথে অথনৈতিক মুক্তির লড়াইটাও ছিল।
বৃটিশ, পাকিস্থান কারো সময় কথা বলার
স্বাধীনতা ছিলনা।বাংলার মানুষ, বাঙালী মানুষ দীঘ সংগ্রাম শেষে স্বসস্ত্র যুদ্ধের
মধ্যে স্বাধীনতা আনে মুক্ত চিন্তা আর অথনৈতিক সমতার লক্ষ্যে।স্বাধীনতার পরে চিন্তার স্বাধিনতার আস্তে আস্তে যাত্রা শুরু
করে, অথনৈতিক বৈষম্য কমানোর নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়।কিন্তু সরিশার ভুত থেকে যায়
সরিসার মধ্যে।যে ব্যক্তিরা একদম শেষ দিন পযন্ত পাকিস্তানীদের সাথে ছিল।নিজেকে কখনই
স্বাধীনতার স্বপক্ষে নিয়ে যেতে সামান্য উদ্যোগ গ্রহন করেনি।যে মানুষগুলো গনতন্ত্র
আর অথর্নৈতিক সাম্যে বিপক্ষে ছিল তারাই এখন স্বাধীন দেশের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রক।আর
যারা এর বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে লড়াই করলো তাদের কে রাখা হলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার
বাইরে।ফলে পরিনতি যা স্বাভাবিক ছিল তাই ঘটলো।যারা কখনো বঙ্গবন্ধুকে কখনো মেনে নিতে
পারেনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কমকান্ডকে নিমূল করার পার শাসক শ্রেনীর পরিচালিত
কর্মকান্ডের সাথে ছিল, তারা প্রশাসনিক ক্ষমতা করায়ত্ব করে পরিকল্পিত ভাবে এগুয়ে
সুযোগ বুঝে একদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা করে জাতীকে আবার পাকিস্থান মুখি করার উদ্যোগ
গ্রহণ করলো।রাষ্ট্র ক্ষমতা নিযন্ত্রনে নিতে র্বণচোর মুক্তিযোদ্ধা এক সেক্টর
কমান্ডারের নেতৃত্ব পাকিস্থানী পন্থার দল বিএনপি জন্ম দিল।মানুষ আবার সংগ্রাম করে
সে অব্যহত যাত্রাকে প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দল গুলোকে এক কাতারে
নিয়ে এসে রুখে দিল।ঘৃন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো।পাকিস্থানীর পন্থার বিপরিত
রাজনৈতিক শক্তি ক্ষতায় এলো।নানান ষড়যন্ত্র হলো কিন্তু তারপরও মুক্তিযুদ্ধে চেনতার
পক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ক্ষমতা নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম হলো।পরপর
তিনবার ক্ষমতায় এলো। ইতোমধ্যে প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রধান দল
আওয়ামীলীগের মধ্যে চেতনাগত কিছু পরির্বতন ঘটে।দলের মধ্যে ত্যাগি অপেক্ষা তারুনের
উত্থান ঘটে।
তৃতীয় পরবের এ যাত্রা পথে টিকে থাকতে
অনেক অনিয়মের সাথে আপোষ করতে হয়েছে বর্তমান আওয়ামীলীগ ও তার জোটকে।ফলে অনেক
চ্যালেন্জ তৈরী হয়ে গেছে। প্রধান প্রতিপক্ষ ও পাকিস্থানী পন্থার ধারক জামাত-বিএনপি
এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে কার্যত অনুপস্থিত।ফলে প্রতিপক্ষ নিয়ে যে ঝামেলাটা ছিল তা এখন
বিতাড়িত। মানুষ উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির পক্ষ নেওয়ায় অনেক বিষয় কে গুরুত্বে আনেনি।
কিন্তু এখন দেশ যেহেতু উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত, সেহেতু মানুষ এখন
প্রত্যাসা করে সমাজের সকলস্তরে সুশাসন নিশ্চিত হোক। সমৃদ্ধির প্রয়োজনে সৃষ্টি হোক
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, প্রগতির পক্ষের যাত্রা অব্যহত রাখতে চিন্তার স্বাধীনতার ফুল
ফুটুক সমাজ অভ্যন্তরে।সাধারণ মানুষের এ প্রত্যাশার কতটা আলোর মুখ দেখবে বর্তমান
সকল ধরনের অনৈতিকতার মধ্যে নিমজ্জিত প্রশাসনকে ব্যবহার করে।বর্তমান সরকারের যেমন
এটি চ্যালেন্জ, তেমনি চ্যালেন্জ সরকারের জোট বদ্ধ প্রগতিশীল দল সমুহের জন্য।
গৌরব অহংকার আর গরিমার আরও একটি দিন পার করছি আমরা। ভূবনজোড়া একুশে উদযাপন আমাদের গরিমাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। অহংকারে আমরা আরও বিকশিত হয়েছি , পুস্পের মতো আরও সহ¯্র পাপড়ি নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছি আমরা, বাঙ্গালিরা। মহান একুশে পালিত হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে। আফ্রিকার দেশ সিওরলিয়ন পালন করছে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে মর্যাদা পাওয়া আমাদের বাংলা ভাষার জন্য আত্মদানকারীদের স্মরণ করে। ভাষা ক্রমবিকাশশীল, ভাষা ক্রমসম্প্রসারনশীল, ভাষা ক্রমবর্ধনশীল। ভাষা ক্রমবিবর্তনশীল। ভাষার আদান প্রদান ,ভাষার চর্চা, ভাষার অনুশীলন, ভাষার প্রকাশ, ভাষার গবেষণা ভাষাকে আরও বিকশিত করে। ভাষার ডালপালা বিস্তৃত হয়। ভাষা নিঃসন্দেহে পূর্নাঙ্গভাবে প্রস্ফুটিত হয়। ভাষার অবিরাম চর্চায় শব্দকোষ বাড়ে, ভাষার বাঁধন বলিষ্ঠ হয়। একদিন এই ভাষা বাংলা নিশ্চয়ই খিড়কি পুকুর থেকে নদী, নদী থেকে সাগর , মহাসাগরে পরিণত হবে। এ কারণেই তো একুশের জন্ম হয়েছিল। এই একুশে নিয়ে আমাদের কত যে ভালবাসা তার পরিমাপ নিশ্চিত করা যাবেনা। এই ভাষা নিয়ে আমাদের কত যে প্রেম , কত যে ভালবাসা , কত যে আশা প্রত্যাশা তারও শেষ নেই। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’। সালাম, জব্বার,রফিক ,সফিক, বরকতরা তো সে কারণেই বুক পেতে দিয়েছিল। তাদের ঝরা রক্তে প্রস্ফুটিত হয়েছে শাপলা , শতদল। ‘যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে , যে শিশুর মায়া মমতায় আমার বিশ্ব ভোলে , সেই শান্তির প্রহর গুনি’ । মাতৃভাষার জন্য সেদিনের ছাত্র জনতা এই জন্যই তো প্রাণ দিতে পিছ পা হয়নি। মাতৃভাষাকে মায়ের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অবিরাম সংগ্রাম আমাদের চলার পথকে সুগম করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। অস্ত্র হাতে আমাদের লড়তে শিখিয়েছে। একাত্তরে মহান স্বাধীনতার লাল সৃুর্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার শক্তি সাহস যুগিয়েছে। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার সাহস দেখিয়ে আমরাই চুড়ান্ত মুক্তির পথের সিঁড়ি বেয়ে চলতে শিখেছি। আমরাই বিশ্বকে শিখিয়েছি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আমরা। কারণ বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণ, বাংলা আমাদের মান, বাংলা আমাদের অহংকার। এই ভাষায় কথা বলি, এই ভাষায় মা ডাকি, এই ভাষায় প্রেম নিবেদন করি , এই ভাষায় শিশুকে আদর ¯েœহ করি, শিশু এই ভাষায় মা ডাকে । এই ভাষায় আমরা খুনসুটি পাড়ি, এই ভাষায় আড্ডাবাজি করি, এই ভাষায়ই আমাদের রং তামাশা । এই বাংলা ভাষায় প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করি, এই ভাষায় আমাদের হাসি আমাদের কান্না। এই ভাষায় গান গাই, এই ভাষায় বাঁশের বাঁশরী বাজাই। এই ভাষাই আমাদের সভ্যতা গড়েছে , সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ গড়েছে। বাংলা ভাষা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। বাংলা ভাষাতেই আমরা ডুবে যাই সঙ্গীত ভূবনে। মহান একুশে পালনে সে কি উচ্ছাস। রাজশাহী কলেজে মানব মিনার তৈরি করে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন ৫২ তে ,তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আমরা মানব প্রাচীর দেখেছি। মহান বিজয় দিবসে কোটি জনতা বাংলাদেশের মানচিত্র রচনা করেছে, এক কন্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গেয়ে উঠেছে । রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা মানব প্রাচীর তৈরি করে তাদের প্রাণোচ্ছাস প্রকাশ করেছে। সেখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এই ভাষার সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের রক্ত ,হাসি, কান্না , ভালবাসা ও অহংকার। দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের দাসিয়ারছড়া ও পাটগ্রামে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীও বিন¤্র শ্রদ্ধায় পালন করছেন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। তারা ইট মাটি কাগজ কিংবা কদলি বৃক্ষ দিয়ে হাতে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভাষা শহীদদের প্রতি । যশোরের বেনাপোল সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন দুই বাংলার মানুষ। ভাষার জন্য , মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা জানাতে , বাংলাভাষাকে তার যথাযথ মর্যাদা দিতে , ভাষা শহীদদের সম্মানিত করতে দুই দেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল হাতে নিয়ে ভুলে যান সব সীমারেখা। তারা একাকার হয়ে প্রত্যুষে গেয়ে ওঠেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি’। বাংলা ভাষা আমাদের সকল শক্তির উৎস। বাংলা ভাষা আমাদের সাহস, আমাদের প্রেরণা , বাংলা আমাদের ভালবাসা। গত বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে আমি উত্তরবঙ্গের বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে বাসে চড়েছিলাম সাতক্ষীরার উদ্দেশে। পথে পথে আমি দেখেছি অগনিত মানুষকে ভাষা শহীদদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাতে। শত শত শিক্ষার্থীর হাতে ফুল। তারা ফুল দিচ্ছে শহীদ বেদিতে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে চলা শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রজ রফিক শফিক জব্বার বরকত সালামদের সালাম জানাতে কেমন এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুখে বাজছে ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। স্কুল কলেজ মাঠে কাগজের তৈরি শহীদ মিনার গড়ে ফুল দিচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। পাশেই মাইকে ক্ষনে ক্ষনে বেজে উঠছে ‘ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে , তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’। ‘আমরা হারবোনা হারবোনা , তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না’। শহীদ মিনার চত্বরে মাটিতে নুইয়ে পড়ে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা দেখেছি। তারা তাদের তুলির আঁচড়ে গড়ে তুলছে এক একটি শহীদ মিনার , কখনও বা ভাষা শহীদদের অবয়ব। পথের ধারে পাশে উন্মুক্ত প্রান্তরে আলোচনা সভা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আবারও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার জোরালো দাবি। ইংরাজী নয়, বাংলায় আদালতের রায় লেখার দাবিতে সোচ্চার তারা। সকল বিষয়ের পাঠ্যকে বাংলায় উন্নীতকরনের দাবি। গৃহ কোণ থেকে বাংলাকে পূর্ন মাত্রায় খোলা বাতাসে নিয়ে আসতে হবে। সব সরকারি অফিস আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বাংলাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যে উদভাসিত ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু মাত্র একটি দিনেরই নাম নয় ,বাঙ্গালির জাগরনের একটি স্মারক। এই প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে ধারাবাহিকভাবে এই স্মারক বয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যেই বাংলাকে আরও উন্মুক্ত প্রান্তরে নিয়ে যেতে হবে। পথে পথে আমি দেখেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতা, নান্দনিক হস্তলেখা প্রতিযোগিতা , দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতা। জাতীয় পতাকাকে অর্ধনমিত রেখে শহীদদের প্রতি জাতির বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন দেখেছি আমি। ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দেখেছি বিশেষ প্রার্থনা। হাতছানি দিয়েছে। আমার প্রাণ ভরে উঠেছে যখন দেখেছি চার দিকে ফুলের পাহাড় , এক একটি ফুলই যেনো এক একটি শহীদ মিনার, ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে যে মিনার। সাতক্ষীরায় শহীদ বেদিতে জমেছে ফুলের পাহাড়। শহীদ রাজ্জাক পার্কে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা , সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শিশুদের আবুত্তি,সুন্দর হাতের লেখা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার চিহ্ণ। ততক্ষণে নিজের মোবাইল ফোনে ছোট্ট একটি বার্তা পৌঁছেছে ‘ জান দিয়েছি ,দেইনি তবু বাংলা ভাষার মান, নির্ভয়ে তাই গাইতে পারি এমন ভাষার গান’। পত্র পত্রিকায় পড়েছি ‘সেই পাকিস্তান, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, যারা আমাদের ভাষা শহীদদের বুকে গুলি করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল, এবার তারা করাচি , ইসলামাবাদ ও লাহোরে নানা আয়্জোনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বলে বিবিসিকে খবর দিয়েছেন পাকিস্তানি সাংবাদিক মনির আহমেদ’। বহু ভাষার দেশ প্রতিবেশি ভারতও পূর্ন মর্যাদায় পালন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমার প্রত্যয় জেগেছে বাংলা তার আপন মহিমায় এভাবেই হয়ে উঠবে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ, একটি মহাসমুদ্র । আর মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ২১ ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলা ভাষার জয়গান গেয়েছেন। তারা বলেছেন বাংলা ভাষায় আমরা এক । আমি দেখেছি ইট কাদামাটি কলাগাছ আর লাল কালো কাপড়ের ক্যানভাসে ঘেরা নিজেদের হাতে তৈরি শহিদ মিনারে শিশু কিশোরদের পুস্পার্ঘ অর্পণের সেকি উচ্ছাস। কন্ঠে তাদের কালজয়ী গান ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি’। ——– সুভাষ চৌধুরী , সাতক্ষীরা করেসপন্ডেন্ট , এনটিভি ও দৈনিক যুগান্তর।
দক্ষিণে সাগর। সাগর পাড়ে সুন্দরবন। অসংখ্য নদী সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান। যা সাগর থেকে উৎপত্তি এবং সুন্দরবন সংলগ্ন। এ নদীসমূহ উত্তর মুখে সাগরের জোয়ারের বর্ধিত পানি নিয়ে ধাবিত হয়েছে। আবার সাগরের ভাটার টানে উপরের সকল পানি নিয়ে সাগরের বুকে ফিরে এসেছে। এটাই এলাকার নদী সমূহের বৈশিষ্ট্য।
উত্তরে হিমালয় পর্বত। হিমালয়ের বরফগলা পানি নীচের দিকে নেমে দক্ষিণ দিকে ধাবিত হয়েছে। নানান বাক নিয়ে বাধা পেরিয়ে দক্ষিণের সাগরের স্রোতধারার সাথে মিলিত হয়েছে। দক্ষিণ-উত্তর এ দু’ধারার মিলনের গতিপ্রগতিতে সৃষ্ট হয়েছে অসংখ্য নদী, খাল, ভ‚মি, জনপদ আর সভ্যতা। বাংলাদেশ এ দু’ধারার মধ্যবর্তী। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লীয় অঞ্চল গড়ে উঠেছে সাগর-পর্বতে অপূর্ব জলকেলির মধ্য দিয়ে।
হিমালয় পর্বত থেকে নেমে আসা প্রধান জলধারাটি গঙ্গা। গঙ্গার প্রধান শাখা ভাগিরথি নদী। ভাগিরথির প্রধান ধারা নানান বাঁক ও স্থান ঘুরে শ্যামনগরের (সাতক্ষীরা) মধ্যদিয়ে সাগরের সাথে মিলেছে। আর এই যাত্রা পথে কখনও যমুনা, কখনও ইছামতি, কখনও আদি যমুনা হয়ে ছুটেছে সাগরের দিকে। ভাগিরথির এ চলার পথে গড়ে উঠেছে নানান সভ্যতা, জনপদ ও ঐতিহ্য। গঙ্গা-ভাগিরথির প্রধান ধারা সাতক্ষীরার আদি যমুনা নদী। ফলে শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী হচ্ছে গঙ্গা-ভাগিরথির সাগর সংগমের শেষ প্রান্ত।
অনেকের মধ্যে সংশয় আছে যমুনা নদী নিয়ে। মূলত; সিরাজগঞ্জের পার্শ্বদিয়ে প্রবাহিত বিশাল ও প্রবাহময় যমুনা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। যমুনা ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গার সাথে উত্তরবঙ্গের বঙ্গবন্ধু সেতুর যমুনার কোন সম্পর্ক নেই। ইতিহাস বলে সিরাজগঞ্জ সংলগ্ন যমুনার উৎপত্তি সাতক্ষীরার যমুনার অনেক পরে। সে কারণে বর্তমানে সাতক্ষীরার যমুনাকে আদি যমুনা বলা হয়। আজ অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অস্তিত্ব সংকটে আদি যমুনা। অবশ্য এলাকাবাসীর আন্দোলনের ফলে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে আদি যমুনা।
শ্যামনগর-কালিগঞ্জের (সাতক্ষীরা) আদি যমুনা নদী পরিচয় তুলে ধরতে এ অঞ্চলের প্রথম ঐতিহাসিক সতীষ চন্দ্র মিত্র তাঁর যশোর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন:
“এ যমুনা সেই যমুনা।
যে যমুনা তটে ইন্দ্রপুরিতুল্য রাজপাট বসাইয়া কুরুপাবে ইন্দ্রপ্রস্ত
হস্তিনাপুরে রাজুসুয়া যজ্ঞ সুসম্পন্ন করিয়াছিলেন,
যে কালিন্দীতটে বংশীবটে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমধর্ম্মের অপূর্ব্ব লীলাভিনয়
হইয়াছিল,
যে যমুনা তীরে দিল্লী-আগ্রায় মথুরা-প্রয়াগে হিন্দু-মুসলমান,
বৌধ্য-খৃষ্টান, মোঘল-ইংরেজ
শত শত রাজরাজেস্বর সমগ্র ভারতের
রাজদণ্ড পরিচালনা করিতেন,
এ সেই একই যমুনা।
সেই তমালকদম্ব পরিশোভিত, ককিল-কুজন-মুখরিত,
নির্মল সলিলে প্রবাহিত
তটশালিনী সুন্দর যমুনা।”
গঙ্গা, ভাগিরথি নামে সপ্তগ্রাম (পশ্চিমবাংলা) পর্যন্ত আসে। এখান হতে যমুনা নামে প্রথমে চব্বিশপরগানা ও নদীয়া এবং পরে চব্বিশ পরগানা ও যশোরের সীমানার মধ্যবর্তী দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। যমুনা ক্রমে চৌবাড়িয়া, জলেশ্বর, ইছাপুর ও গোবরডাঙ্গা ঘুরে চারঘাটের কাছে টিপির মোহনায় এসে ইছামতি নাম ধারণ করে। ইছামতি সোজা দক্ষিণ দিক দিয়ে যাত্রা শুরু করে বশিরহাট, টাকি হয়ে বাংলাদেশের দেবহাটার ধার দিয়ে কালিগঞ্জের বসন্তপুর-দমদমের মধ্য দিয়ে নাজিমগঞ্জের পূর্বধার হয়ে শ্যামনগরে ভুরুলিয়া দিয়ে শ্যামনগরে প্রবেশ করে। এখান থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে বংশীপুর (যেখানে বারুণের-ন হয়) যেয়ে দু’ভাগ হয়ে যমুনা নামে ডানমুখো হয়ে রমজাননগরের সোনাখালী ও শ্যামনগরের চিংড়ীখালির মধ্য দিয়ে মাদার নদীর সাথে মেলে। বংশীপুরে যমুনার অপর এক অংশ ইছামতি নাম নিয়ে বাম দিয়ে কদমতলী হয়ে মালঞ্চ হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনে প্রবেশ করা দু’ধারাই মালঞ্চ নামে আড়পাংশিয়া নদী হয়ে সাগর সংগমের প্রাক্কালে আবার যমুনা নাম ধারণ করে।
ইছামতির বসন্তপুর-দমদম এলাকা হতে শুরু করে মাদার নদীর সংযুক্তি পর্যন্ত আদি যমুনা প্রায় ৩২ কিলোমিটার। এ নদীর সাথে ৪০টির বেশী বিল ও একই পরিমান খালের সংযোগ রয়েছে। মূলত উপকূলীয় বাঁধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ পথ দিয়ে ইছামতির মিষ্টি পানির প্রবাহ সাগরে এবং সাগরের প্রবাহ ইছামতিতে আসা যাওয়া করতো। এ আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে নদী ও সংযুক্ত খালসমূহের নাব্যতা স্বভাবিক, পরিবেশ সহিষ্ণু ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত ছিল।
আদি যমুনা নদী হলো সবচেয়ে ঐতিহ্য ও ইতিহাসখ্যাত নদী। এক সময় ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী হয়ে জাহাজ ভরে সওদা আসতো। বারো ভূইয়ার অন্যতম স্বাধীন নৃপতি প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল এ যমুনা কূলে। ‘যমুচ্ছোপ্রসঙ্গমে প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসপ্রসিদ্ধ যশোহর ও ধুমঘাটের রাজধানী ছিল।’ এখনও টিকে আছে নৌপ্রতাশ্রয় জাহাজ ঘাটা। সনাতনী ধর্ম বিশ্বাসীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বারুণের ¯œান এ যমুনাতে হয়ে আসছিল। এ যমুনা কূলে গড়ে উঠেছিল যশোরেশ্বী কালি মন্দির, ঐতিহাসিক মসজিদ ও উপমহাদেশের প্রথম র্গীজা। আদি যমুনা নদী সংলগ্ন জমিদার বাড়ি। শ্যামনগরের প্রধান মহাশ্মশান। এই যমুনা কূলে ছিল দোলযাত্রা উৎসব। যমুনা নদী থেকে মোঘল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তৈরি করা ‘মাটির গড়’।
ইছামতির কালিগঞ্জের দমদম (ভাড়াশিমলা) ও বসন্তপুর (মথুরেশপুর) মধ্য এলাকা হতে শুরু হওয়া আদি যমুনা নদী দু’কিলোমিটর পর নাজিমগঞ্জের পার্শ্ব দিয়ে দক্ষিণ মুখো বাঁক নিয়ে শ্যামনগরের মধ্যদিয়ে সাগর মুখে ধাবিত হয়েছে। নাজিমগঞ্জের পার্শ্বের এ বাঁক হতে সোজা পূর্ব দিক মুখ করে বৃটিশ নীল কুঠিয়ালরা ব্যবসার সুবিধার জন্য আঠারো শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে একটি সংযোগ খাল খনন করে। যেটি পরবর্তীতে কাকশিয়ালী নদী নামে পরিচিতি পায়। যোগাযোগের জন্য এ নদীটি কাটলেও পরবর্তীতে এ নদী উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীর প্রবাহ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। তৈরী করে উপক‚লীয় এলাকার আন্তঃনদী সংযোগ।
ইছামতি নদীর আদি যমুনা ছাড়াও আরো একটি ক্ষীণ শাখা ছিল। যেটা কালিন্দি নামে রায়মঙ্গলের সাথে যুক্ত হয়েছে। বসন্তপুরের উত্তর-পশ্চিম ধার দিয়ে চলে যাওয়া কালিন্দি প্রতাপাদিত্যের সময়ে সাধারণ খাল ছিল। বৃটিশ সরকার ১৮১৬ সালে কোলকাতার সাথে যোগাযোগ সহজ করতে কালিন্দি হতে একটি খাল কেটে বড় কলাগাছির নদীর প্রবাহের সাথে যুক্ত করে। এটি সাহেবখালির খাল নামে পরিচিত। এ খাল কাটার ফলে ইছামতির পানি ভাটায় এ পথে যাওয়া শুরু করলে কালিন্দি বড় হতে শুরু করে। এর আগেই গুড্ডল্যাড সাহেব যখন চব্বিশ পরগানার কালেক্টর তখন যমুনা থেকে একটি খাল কেটে বাশতলা দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর সাথে যুক্ত করে। যা কাকশিয়ালীর খাল (এড়ড়ফষধফ পৎববশ) বলে পরিচিত। এরপর আরো নদীপথ সংক্ষিপ্ত করতে হাসনাবাদ খাল খনন করা হয়। বৃটিশ সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক কারণে এ তিনটি সংযোগ খাল কাটায় আদি ইছামতি-যমুনা নদীর প্রবাহ অনেকাংশে কমে যায়।
গুড্ডল্যাড সাহেব ইছামতি হতে আসা আদি যমুনা নদীর নাজিমগঞ্জ বাজারের উত্তরপূর্ব ধার হতে কাকশিয়ালী খালটি খনন করে চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুরের ত্রিমোহনীতে গুতিয়াখালী ও হাবড়া নদীর সাথে যুক্ত করে। আগেই এখান থেকে ধারা ছিল। ফলে এলাকাটি ত্রিমোহনী হিসেবে পরিচিত ছিল। এ সংযোগে ইছামতির সাথে হাবড়া ও গুতিয়াখালী নদীর সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পথ তৈরী হয়। সংযুক্ত খালটি গুতিয়াখালি নদীর সাথে মিশে ঘুরে দক্ষিণ মুখো হয়ে (উপরে বর্ণিত) কালিগঞ্জের বাঁশতলা ও আশাশুনির শ্রীউলার মধ্যবর্তী নদী গলঘেসিয়ার সাথে মিশে খোলপেটুয়ার সাথে যুক্ত হয়।
আদি যমুনা নদী হতে খনন করে কাকশিয়ালি খালকে চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুরের ত্রিমোহনীতে গুতিয়াখালী ও হাবড়া নদীর সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে এখানে এসে কাকশিয়ালির মাধ্যমে ইছামতি-যমুনার সংযোগ সংযুক্ত হয়। কাকশিয়ালির একটি ধারা গুতিয়াখালি নদীর সাথে মিশে ঘুরে দক্ষিণ মুখ্ োহয়ে কালিগঞ্জের বাঁশতলা ও আশাশুনির শ্রীউলার মধ্যবর্তী নদী গলঘেসিয়ার সাথে মিশে খোলপেটুয়ার সাথে যুক্ত হয়। খোলপেটুয়া সাগর থেকে উঠে আসা অন্যতম প্রধান জোয়ার ভাটার নদী। আর একটি ধারা উজিরপুরের নিকট হাবড়া নদীর সাথে মিলিত হয়ে উত্তর-পশ্চিম মুখো হয়ে দেবহাটার কুলিয়াব্রিজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত লাবণ্যবতী নদীর সাথে মিলিত হয়। লাবণ্যবতী নদী ইছামতির কোমরপুর (দেবহাটার) হতে উঠে আসা একটি প্রবাহমান সংযোগ নদী।
আগে থেকেই উজিরপুরের নিকট হতে হাবড়া নদী উত্তর-পশ্চিম মুখো হয়ে দেবহাটার কুলিয়া ব্রিজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত লাবণ্যবতী নদীর সাথে মিলিত ছিল। লাবণ্যবতী নদী ইছামতির কোমরপুর (দেবহাটার) হতে উঠে আসা একটি প্রবাহমান সংযোগ নদী। (ইছামতি নদীর কোমরপুর ***(যেখানে ¯øুইসগেট) কুমরোর খাল কুলিয়া ব্রিজের কাছে লাবণ্যবতী, টিকেট হয়ে কোলকাতার খাল হয়ে কদমখালি হয়ে বাকালের খাল মরিচ্চাপ নদীর সাথে যুক্ত। মরিচ্চাপের এল্লারচর এলাকা হতে খাজুর ডাঙ্গি পর্যন্ত কেটে বেতনার সাতে যুক্ত) লাবণ্যবতী নদী সাতক্ষীরা শহরের পশ্চিমাংশের খালসমূহের সাথে সংযুক্ত। কাকশিয়ালী ত্রিমহোনীতে যুক্ত হওয়ায় হাবড়ার এ শাখার প্রবাহ আরো গতিশীল হয়। ইছামতি নদীর পানি কোমরপুর দিয়ে ঘুরে আবার মরিচ্চাপে পড়ার পথ তৈরী হয়। দু’ধারার হাবড়া নদীর অপর ধারা উত্তর-পূর্ব মুখী হয়ে বদরতলা, শোভনালী, ব্যাংদহ হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত ছিল। মরিচ্চাপ সাগরযুক্ত খোলপেটুয়ার সাথে মিলিত প্রবাহমান নদী। অন্যদিকে মরিচ্চাপ নদীর সাথে সাতক্ষীরার বেতনা নদীর সংযোগ আগে থেকে ছিল।
কাকশিয়ালী নদীর ধারা ত্রিমোহনীতে যুক্ত হওয়ায় মরিচ্চাপের প্রবাহ ইছামতির (কালিগঞ্জ) প্রবাহের সংযোগে সকল নদীর সংযোগ তৈরি করে। নদীসমূহকে প্রবাহময় করে। নদীপথে যোগাযোগের একটি আন্তঃঅঞ্চলীয় ব্যবস্থাপনা তৈরী হয়। পরবর্তীতে প্রাণসায়ের খনন করা হলে এ সংযোগ আরো গতিময় হয়। তখন বেতনা প্রবাহ খেজুর ডাঙ্গি হয়ে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে এল্লাচ্চর হয়ে মরিচ্চাপে পড়া সহজ হয়।
ইছামতি, বেতনা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, লাবণ্যবতী, যমুনা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে সাতক্ষীরা, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর এ অঞ্চলের নদীর প্রবাহের মধ্যে একটি আন্তঃসংযোগ তৈরি করে। ফলে সাগরের সংযোগের সাথে ইছামতি, বেতনা ও মরিচ্চাপের সংযোগ তৈরি হয়। অন্যদিকে ইছামতি প্রবাহ সরাসরি সাতক্ষীরার বিভিন্ন নদীর মাধ্যমে মরিচ্চাপে পড়ে। ফলে এলাকাতে একটি সৃজনশীল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে। এক নদীতে জোয়ার হতো তখন অন্যটায় ভাটা হতো। আর এভাবেই নদীসমূহে সকল সময় জোয়ার-ভাটার প্রবাহ থাকায় শুধু প্রধান নদী নয় অভ্যন্তরীণ সকল নদী খালের সচল ও গতিশীলতা তৈরী করে।
উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ করার সময় এ নদীসমূহের প্রবাহ বিবেচনা না করে, নদীর পানির সাথে আসা পলি ব্যবস্থাপনার বিষয় এবং এলাকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিবেচনা না করে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও ¯øুইস গেট নির্মাণ করে এ অঞ্চলের নদীর প্রবাহ ধ্বংস করা হয়। উপকূলীয় অঞ্চলকে নিক্ষেপ করা হয় এক বৈরী পরিবেশের মধ্যে। ভেঙে যায় সৃজনশীল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। নষ্ট হয় খাদ্য নিরাপত্তা বলয়।
আগেই বলা হয়েছে, ইছামতি-আদি যমুনা নদী শুধু শ্যামনগর-কালিগঞ্জ উপজেলার নদী নয়, আজ সাতক্ষীরা, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও পানি প্রবাহের একমাত্র সম্ভাবনাময় ধারা। আর এ বাস্তবতার নিরিখে ইছামতি-যমুনার প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জেলার ঝুঁকিতে থাকা প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করা অনেকাংশে সম্ভব। এই সঙ্গে ইছমতির কোমপুরের দেবহাটার নিকট নির্মিত ¯ইসগেটটিও পরিবর্তন করে প্রবাহ স্বাভাবিক চলাচলের ব্যবস্থা করলে সামগ্রিক সাতক্ষীরা নিরাপদ হতে পারে জলাবদ্ধতার হাত থেকে।
ইছামতির জলধারাকে ব্যবহার করে কালিগঞ্জ-শ্যামনগরকে যেমন প্রবাহময় করা যায়, তেমনি ত্রিমোহনীর মাধ্যমে দেবহাটা, সাতক্ষীরা ও আশাশুনির নদীসমূহের প্রবাহ পূর্বের ন্যায় সচল করা গেলে আজকের সবচেয়ে বড় সংকট জলাবদ্ধতার অভিশাপ মুক্ত করা সম্ভব। পাশাপাশি নদীসমূহের নাব্যতাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
২
নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে সভ্যতা। উপক‚লীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনাও তৈরি হয় নদীর প্রবাহের মধ্য দিয়ে। কিন্তু উন্নয়ন পরিকল্পনায় কখনও নদীর অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সড়ক পথের উন্নয়নের নামে ব্যাপকভাবে নদীকে আটকে দেওয়া হয়। উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীকে ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় আয়োজন হলো ষাটের দশকের উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ।
আবহমান কালধরে জোয়ার ভাটার প্রবাহের সাথে আসা পলি উপক‚লীয় অঞ্চলে ভ‚মি গঠন করে। পলি ভ‚মি গঠন যেমন করেছে তেমনি জমির উর্বরতাকে ধরে রাখতেও ভ‚মিকা রেখেছে। সাগরের লোনা পানি আর উপরের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা তৈরি। যার শুরু এলাকার ভ‚মিগঠন হতে। জোয়ার ভাটার প্রবাহ নদীসমূহের নাব্যতা বজায় রাখে। প্রবাহের কারণে নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা স্বাভাবিক থাকায় প্রাকৃতিক কারণে নদী গতিপথ পরিবর্তন না করলে সে নদী মরে যাওয়া ঘটনা ছিল বিরল।
দেশ বা রাষ্ট্রের উন্নয়নে সড়ক, রেল ও আকাশপথ নিয়ে যত তোড়জোড় করা হয়েছে নদীপথ নিয়ে তার সিকিও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নদী সকল সময় থেকেছে আলোচনার বাইরে। অথচ স্বল্প ব্যয়ে ও পরিবেশ সহযোগী হিসেবে যোগযোগের মাধ্যম হিসেবে নদী পথের বিকল্প নেই। দেশের নদীর পানিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে যে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল সেটি কখনও নেওয়া হয়নি। বিবেচনায় নিয়ে আসা হয়নি যে প্রবাহময় নদীর পানিও সম্পদ। মাছে ভাতে বাঙালির মাছের অস্তিত্ব যে নদী কেন্দ্রিক সেটি ভুলে আছেন তথাকথিত উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। এ বনের জীববৈচিত্র্যের স্থায়ীত্ব নির্ভরশীল নদীর প্রবাহের উপর। লোনা ও মিষ্টি পানির সংমিশ্রণ সুন্দরনের সম্পদের বিকাশের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনের সকল এলাকায় একই ধরনের বৃক্ষ হয় না। পানির মান তথা লোনার তীব্রতার কম বেশীর কারণে অঞ্চল ভেদে বৃক্ষের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে থাকে। কিন্ত দেশের উন্নয়নের ধারক ও পরিবেশ সংরক্ষণের সিলমারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে নদী মারা ও নদীর প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করার কোন উদ্যোগ প্রতিরোধে ভ‚মিকা না নিয়ে আজ জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার নানান আয়োজনে ব্যস্ত। মিষ্টি পানির প্রবাহ সাগরের লোনা পানির সাথে মিশ্রণে প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক রেখে যে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা আবহমান কাল ধরে চলে আসছিল, তা বন্ধ করার মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুরু করা হয়েছে ব্যাপকভাবে সুন্দবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সোচ্চার হয়ে উঠার আহŸান।
মানুষ বসতি গড়ে ওঠে নদীর প্রবাহকে বিবেচনায় করে। নদীক‚লে মানুষ নির্মান করে আবাস, বাজার ইত্যাদি। পৃথিবীর সকল প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে প্রবাহময় নদীর সন্নিকটে। তেমনিভাবে উপক‚লে যখন মনুষ্য বসতি নির্মিত হয়েছে তখনও নদীর প্রবাহ ও নদীপথকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাগর, বন আর ভ‚মি সমানভাবে বিচরণ ক্ষেত্র ছিল উপক‚লীয় মানুষের। এককভাবে কোনটির উপর নির্ভর থাকেনি। একটা সময় বন তার জীবিকার ক্ষেত্র, একসময় নদীসাগর আর এক সময় ভ‚মি বা কৃষি। তবে কৃষিতে বেশী সময় থাকতো মানুষ। নদীর প্রবাহ কেন্দ্র করে শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-সভ্যতা, পেশা তৈরি করে নিয়ে আবহমানকাল ধরে উপক‚লে বসবাস করে আসছে মানুষ। কিন্তু মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পেশা কোনটাই বিবেচনা করা হয়নি উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণের সময়।
যোগাযোগের উন্নয়ন, অধিক ফসল ফলানো, বসতি নিরাপদ করা, নানান মিষ্টি কথার মালা সাজিয়ে জোয়ার ভাটার প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করে নদী মারার আয়োজন শুরু করা হয়। নদী মারার আয়োজনে পথ প্রশস্ত হয় বহুজাতিক কোম্পানির বাজার সম্প্রসারণের। টেকসই দেশীয় ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া থামিয়ে রাসায়নিক সার-কীটনাশক যুক্ত হইব্রিড বীজ আমদানি করা হয়। দেশীয়ভাবে উৎসাহিত করা হয় নদী দখলের। ভ‚মি দস্যুদের দখলে চলে যায় নদীরক‚লসহ প্রবাহ বিচ্ছিন্ন অধিকাংশ নদী। সম্পদশালীদের সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্র হয়ে যায় অবৈধভাবে নদী দখল। আর সব সময় এ দখলের সহযোগী হয়েছে প্রশাসন বা রাষ্ট্রযন্ত্র। রাজস্ব আয়ের নামে নদী, জলাশয় সব সময় বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমির পরিমান স্ফীত করার ক্ষেত্র হলো মরে যাওয়া নদী খাল আর মজে যাওয়া নদীর চর।
উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরার ভ‚মির গঠনে প্রধান ভ‚মিকা রাখে গঙ্গা-পদ্মা-গড়াই-ভৈরব-কপোতাক্ষ এবং গঙ্গা-ভাগিরথি-যমুনা-ইছামতি-যমুনা-মাদার, এ দু’প্রবাহ। গঙ্গার প্রধান এ দু’শাখার পানি সাগরে গেছে সাতক্ষীরার উপর দিয়ে। পশ্চিমে কালিন্দি আর পূর্বে কপোতাক্ষ এবং মধ্যে খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, মাদার সাগর সংযুক্ত নদী। আর এ নদীগুলোর শেষ ভাগে সাগরক‚লে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। সুন্দরবন যখন সমগ্র এলাকা ঢেকে রাখে তখনও এ ধারার অস্তিত্ব ছিল। তবে মাঝে মধ্যে নদীর প্রবাহ কোনটার বেশী কোনটার কম হয়েছে। যে কালিন্দি একসময় খাল ছিল এখন সেটি বড় নদী। আবার আদি যমুনা ছিল সবচেয়ে বৃহৎ, সেটি আজ অস্তিত্বের লড়াই করছে। চুনার নদী উৎস বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কপোতাক্ষ ভৈরবের সাথে সংযোগ হারিয়ে মরতে বসেছে। মরিচ্চাপ প্রবাহহীন প্রায়। এসকল ঘটনার পিছনে মনুষ্য সৃষ্ট নানান ঘটনা যেমন ছিল, তেমনি প্রাকৃতিক ঘটনাও ভ‚মিকা রাখে। তবে সকল ক্ষেত্রে ছিল নদীকে পরিকল্পনাহীনভাবে ব্যবহার করা। নদীর পানির প্রবাহমানতাকে বিবেচনা না করা। নদীর পলির বিষয় মাথায় না রাখার বাস্তব বিবর্জিত কর্মকাÐ বাস্তবায়ন।
৩
উপক‚লীয় নদীর প্রবাহের সাথে পানি ও পলি ব্যবস্থাপনা বিবেচনা না করার ফলে আজ জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি। এ অঞ্চলের উপর দিয়ে গঙ্গার প্রধান দু’শাখার জলধারা সাগরে যুক্ত হয়েছে। আবার সাগর যুক্ত থাকায় জোয়ার ভাটার প্রভাবে নদীসমূহ ছিল প্রবাহমান। গঙ্গার পানি সাগরে যাওয়া ও সাগরের জোয়ার ভাটার প্রবাহের অসংখ্য নদী খাল তৈরি হয় এলাকাতে ।
সংকটের পটভ‚মি তৈরি হয় নদীর উপর অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বন্ধ করা, নদী-খাল মাছ চাষের নামে লিজ দেওয়া ও অবৈধ দখল হওয়ার ফলে। পানি নিষ্কাশনের নদীসমূহ লিজ দেওয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে উন্নয়নের নামে অপ-উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মাধ্যমে উপক‚লীয় বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধ্বংস করার মধ্যদিয়ে। নদীর করুণ মৃত্যু শুরু এ প্রতিষ্ঠানটির হাত দিয়ে। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের নামে নদীর বুকে নির্মাণ করে স্থাপনা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এলাকার জীববৈচিত্র্য, স্থায়ীত্বশীল জীবন জীবিকার বিষয় অজ্ঞতা হেতু স্থাপনা নির্মাণে একের পর এক অনুমতিপত্র প্রদান করেন। নদী ধ্বংসের আরো একটি কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একমুখী ¯ইস্যু গেট। সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা তৈরির সময় নদীর প্রশস্ততা বিবেচনা না করে নদী অপেক্ষা অনেক ছোট করে কালর্ভাট ও পুল নির্মাণ করে।
এলাকার প্রধান দু’নদী কপোতাক্ষ ও ইছামতি এ অঞ্চলের ভ‚মি গঠনে ভ‚মিকা রাখে। সাগর সংলগ্ন হওয়ায় জোয়ার ভাটার প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে এ দ্বীপাঞ্চল গঠনে। সাগরযুক্ত নদীগুলো হলো- খোলপেটুয়া, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ, চুনা, আড়পাংশিয়া প্রভৃতি। কপোতাক্ষ ইছামতির যুক্ত নদীসমূহ বেতনা, শালিখা, লাবণ্যবতী, আদি যমুনা, মরিচ্চাপ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি খাল কেটে নদী প্রবাহের সাথে যুক্ত করা হয়, যেগুলো পরবর্তীতে আন্তঃনদী সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। যেমন- প্রাণ সায়ের (বেতনার সাথে মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ), কোলকাতার খাল (লাবণ্যবতীর সাথে এল্লারচর হয়ে মরিচ্চাপ নদীর সাথে যুক্ত), কাকশিয়ালী (কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ এলাকার আদি যমুনা নদী হতে শুরু হয়ে উজিরপুরের ত্রিমোহনীর সাথে যুক্ত)। এর বাইরে আরো অসংখ্য নদী খাল রয়েছে। সকল খাল নদী পরস্পর যুক্ত এবং একে অন্যের পানি কখনও নিজে ধারণ করেছে, কখনও বহন করে নিয়ে প্রবাহের ধারা সচল রেখেছে। মিষ্টি ও লোনা পানির সংমিশ্রণে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে।
বর্তমানে প্রবাহমান একমাত্র নদী ইছামতি। উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় বছরের ৭-৮ মাস উজানের পানি প্রবাহ থাকে এই নদীতে। ১৯৭২-৭৩ সালে স্থানীয় জনগণের প্রবল বাধা উপেক্ষা করে ইছামতি-লাবণ্যবতী নদীর সংযোগস্থল দেবহাটার শাখরায় ১৫ ভেন্টের একটি ¯øুুইস গেট নির্মাণ করা হয়। একই সময়ে ইছামতির ভাতশালা নামক স্থানে সাপমারা নদীর সংযোগ স্থলে আরো একটি ¯øুইস গেট নির্মাণ করা হয়। লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর অপর প্রান্তে মরিচ্চাপের সংযোগস্থলে টিকেট, কামালকাটি, শালখালী, বালিথাসহ বিভিন্ন স্থানে আরো অসংখ্য ¯øুইস গেট নির্মাণ করা হয়। আর এ কারণেই অল্প দিনের মধ্যেই লাবণ্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ নদী এবং তার অসংখ্য শাখা খাল অস্তিত্ব হারায়। যার প্রভাবে বেতনা ও খোলপেটুয়া নদীও নাব্যতা হারায়। ইছামতির কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুরের উত্তর ধারা আদি যমুনা নাম নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারের পূর্ব পার্শ দিয়ে শ্যামনগরের মধ্যদিয়ে মাদার নদীর সাথে মিশে সাগরে যুক্ত হওয়ায় প্রবাহময় ছিল। উপক‚লীয় বাধ নির্মাণের সময় কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ বাজারের পাশে আড়াআড়ি আদি যমুনার উপর বাধ নির্মাণ করে এবং সেখানে ৪ ফ্কোরের একটি ¯ইস্যু গেট নির্মাণ করে নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। আদি যমুনা ও মাদার নদীর সংযোগস্থলে আড়াআড়ি বাধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে আদি যমুনা নদীর প্রবাহ নষ্ট হয়ে যায় এবং নদী নাব্যতা হারায়। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক নির্মাণের সময় শ্যামনগর শ্মশানের সামনে আদি যমুনার উপর কোনধরনের পানি চলাচলের পথ না রেখে রাস্তা তৈরি করে। যা নদীকে দু’খণ্ড ভাগ করে দেয়।
ইছামতির বাংলাদেশে প্রবেশস্থলই একমাত্র যায়গা যেখানে উপক‚লীয় বাধ হয় নি। ফলে এ পথে ইছামতির প্রবাহ সচল আছে। ইছামতির সম্মুখ ভাগ কালিন্দি নামে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে রায়মঙ্গলে যুক্ত হয়ে সাগরে মিশেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ মুন্সিগঞ্জ-যশোর সড়ক নির্মাণকালে সাতক্ষীরার বেতনা, লাবণ্যবতী, কোলকাতার খাল, প্রাণসায়ের ও আদি যমুনাসহ অসংখ্যা নদী খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে ও কোথাও পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় গত দুই দশক ধরে মানুষ ইছামতি নদীর সাথে সাতক্ষীরার অন্যান্য নদীগুলোর পূর্বের ন্যায় জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। কারণ ইছামতির জোয়ারের পানি ভাটি হয়ে নামতো লাবণ্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, আদি যমুনা ও মাদার নদী দিয়ে। আবার এসব নদীর জোয়ারের পানি ইছামতি নদীতে ভাটি হয়ে নামতো। আর এর সাথে দূরবর্তী হলেও সংযোগ ছিল বেতনা এবং কপোতাক্ষের। যত প্রকল্পই নেয়া হোক না কেন জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি ছাড়া বর্তমান সমস্যা সমাধান নয়।
বেতনা নদীর একটি শাখা সাতক্ষীরার খেজুর ডাঙ্গি এলাকা হয়ে কদমতলা ঝাউডাঙ্গা হয়ে সোনাই নদীতে যুক্ত হয়। এ নদী থেকে একটি খাল কেটে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে এল্লাচর হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়। যেটি প্রাণ সায়ের নামে পরিচিত। বেতনার পানি প্রাণসায়ের দিয়ে মরিচ্চাপে ও একইভাবে সোনাই নদীর পানিও প্রাণসায়ের হয়ে চলাচল করায় সাতক্ষীরা সদরের লাবসাসহ সমগ্র এলাকা ছিল অবাধ প্রবাহ যুক্ত এলাকা। এলাকাতে আগে কখনও পানি জমা হয়নি বা জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। কিন্তু বেতনা ও প্রাণসায়ের এই সংযোগ খালের খেজুরডাঙ্গিতে ৬ ভেন্টের ¯øুইস গেট নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই নদী মরে স্থায়ী জলবদ্ধতার দিকে এগুতে থাকে।
সামগ্রিক ভাবে সাতক্ষীরাকে বিরূপ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, নদীর ধ্বংস আর জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে ইছামতি নদীর প্রবাহ সাগরে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করে জোয়ার ভাটার প্রবাহের বাধা অপসারণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি পথই জলমগ্ন অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এটা নীতি নির্ধারক মহল যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন তত দ্রুত মানুষ নিষ্কৃতি পাবে এই সংকট থেকে। গড়ে উঠবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সক্ষম পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। এ জন্য প্রয়োজন সামগ্রিক মাস্টার প্লান। গবেষণা ও অব্যাহত প্রচার ধর্মী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নীতি নির্ধারকদের উপর চাপ রাখতে হবে।
বর্তমানে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
১. নাজিমগঞ্জের পাশের ¯øুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার ভাটার প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
২. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী গুতিয়াখালি-গলঘেসিয়া-খোলপেটুয়া নদীর প্রবাহকে সচল করা।
৩. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী-হাবড়া-লাবণ্যবতী(কুলিয়া ব্রিজের নীচ দিয়ে)-ইছামতি নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
৪. ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী-হাবড়া-(বদরতলা, শোবনালী, ব্যংদহ হয়ে)-মরিচ্চাপ নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
৫. বেতনা-প্রাণসায়ের-মরিচ্চাপ নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক করা।
৬. বেতনা-খোলপেটুয়া নদীর প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
৭. কোমপুরের ¯øুইস গেট অপসারণপূর্বক সরাসরি পানির প্রবাহ চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৮. ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী সংযোগ সচল করে সাগরে যুক্ত করা।
৯. হাবড়া-বদরতলা-শোভনালী-ব্যাংদহ হয়ে মরিচ্চাপের সংযোগ গতিময় করার ব্যবস্থা করা
১০ এসএ খতিয়ান অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহ্নিত করে, সরকারি দখলে নিয়ে আসা।
১১. দেবহাটার শাখরা-কোমরপুরে ¯øুইস গেট অপসারণ করে লাবণ্যবতী নদী হয়ে টিকেট এবং কোলকাতার খাল সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়রের মধ্য দিয়ে খেজুরডাঙ্গির ¯øুইস গেট অপসারণ করে বেতনার সাথে যুক্ত করা।
১২. দেবহাটার হাড়দ্দহা ¯øুইস গেট অপসারণ করে ইছামতির প্রবাহ সাপমারা হয়ে পারুলিয়া ব্রিজের নিচ
দিয়ে কামালকাটি হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত করা।
১৩ . কালিগঞ্জের ইছামতি-আদি যমুনা-মাদার নদী সংযোগ সচল করে সাগর যুক্ত করা।
১৪. কালিগঞ্জে ইছামতি-আদি যমুনা-কাকশিয়ালী নদী চাম্পাফুলের পাশ দিয়ে বুধহাটা খাল হয়ে মরিচ্চাপের সাথে যুক্ত করে প্রবাহ বাধা মুক্ত করা।
১৫. বেতনা-প্রাণসায়র-এল্লারচর হয়ে মরিচ্চাপ সংযুক্ত প্রবাহ সচল করা।
১৬. নদীগুলোর জোয়ার-ভাটার বাধা অপসারণ করা এবং যেখানে সম্ভব সেখানে একটির সাথে অন্যটির
পূর্বের মত সংযোগ স্থাপন করা।
১৭. অপরিকল্পিত ¯ø্ইুস গেট, কালর্ভাট, ব্রিজ ও বাঁধ অপসারণ করা।
১৮. এলাকাতে কোন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হলে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে অবকাঠামো
নির্মাণ করা।
(উপরিউক্ত বিষয়ে তথ্যভিত্তিক সমালোচনা প্রত্যাশা রইলো) লেখক: সম্পাদক, দৈনিক দক্ষিণের মশাল
213 Views
২০১৩ সাল থেকে নিকোলাস মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাবা ছিলেন শ্রমিক নেতা। পারিবারিকভাবেই মানুষটির রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পড়াশোনায় খুব বেশি এগোতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে ড্রাইভারের কাজ করেছেন। রাজনীতির কারণে খেটেছেন জেলও। পরবর্তীতে সেই মানুষটি হন ভেনেজুয়েলার ৬৫তম প্রেসিডেন্ট। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি আজ রাষ্ট্রের অধিপতি।
প্রবাদ আছে ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে শুধু ইচ্ছা থাকলে এগিয়ে যাওয়া যায় না। ইচ্ছা পূরণের জন্য থাকতে হয় আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। তেমনি হয়তো তুমুল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন বাসচালক থেকে প্রেসিডেন্ট। তিনি নিকোলাস মাদুরো।
১৯৬২ সালে নিকোলাস মাদুরো ভেনেজুয়েলার কারাকাসে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে তার তিন বোন এবং তিনি একমাত্র ভাই। তার বাবার নাম গার্সিয়া। ১৯৮৯ সালে মোটর গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। বাবা শ্রমিক নেতা ছিলেন। পাশাপাশি বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। সেই সুবাদে তার পরিবারে চলত রাজনীতি চর্চা। পড়াশোনা তেমন করতে পারেননি। কর্মজীবী সন্তানদের এল ভ্যাল রাজ্যের লিসিও জোস আভালোসের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। রাজনীতির সঙ্গে প্রথম যুক্ত হন ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংঘের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে। তার রাজনীতি হাতেখড়িটা হয়েছিল পারিবারিকভাবেই।
জীবন চলার তাগিদে তিনি জীবিকা শুরু করেন বাসচালক হিসেবে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট মাদুরো জীবিকার তাগিদে বেশ কয়েক বছর কারাকাস মেট্রো সিস্টেমে বাস ড্রাইভারের চাকরি করেন। ভাবতেই অবাক লাগে যে, বাস চালক থেকে প্রেসিডেন্ট। এটা কোনো রূপকথার গল্প নয়। এটা একটা স্বপ্ন পূরণের গল্প। রাজনীতির ফাস্ট ইস্যু শুরু হয় ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে। তুমুল ভাবেই শুরু করেন আন্দোলন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নেমে পড়েন রাজপথে। এক পর্যায়ে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করে দেয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হোসে ভিনসেন্তে র্যাঞ্জেলের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে মাদুরো মূলধারার রাজনীতিতে আসেন ১৯৯০ সালে। হুগো শ্যাভেজের সামরিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে। সেই আন্দোলনের বেসামরিক শাখা এমবিআর-২০০’র সদস্য হন মাদুরো।
১৯৯২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় শ্যাভেজের কারাদ- হয়। ১৯৯৪ সাল, শ্যাভেজ কারাবন্দী। দেশের অস্থির অবস্থা। আর এই অস্থির অবস্থার মুক্তির উপায় দেখতে পান শ্যাভেজের মুক্তি। শ্যাভেজকে তিনি পিতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। তার কারাবন্দী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। শ্যাভেজের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন। তুমুল আলোচিত হয়ে লাইমলাইটে আসেন নিকোলাস মাদুরো। সৌভাগ্যক্রমে ওই বছর মুক্তি পান শ্যাভেজ এবং ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন তিনি।
তখনকার সময় প্রথমবারের মতো ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য হন মাদুরো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে তিনি ভেনেজুয়েলার সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে মনোনীত হন মাদুরো। ২০০৬ সালে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাদুরো। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদের কড়া সমালোচক ছিলেন হুগো শ্যাভেজ। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশকে ‘খুনি’ এবং ‘রক্ত পিপাসু’ বলে অভিহিত করেছিলেন শ্যাভেজ। সেই একই আদর্শ এবং মানসিকতার অনুসারী নিকোলাস মাদুরো।
২০০৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তৎকালীন আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইসকে ‘হিটলার’ এবং ‘ভ-’ বলে উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাদুরো নিজের মুনশিয়ানার পরিচয় দেন প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে। এ ছাড়াও তারই সময়ে ইরান এবং অন্য কমিউনিস্ট শাসিত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়। ২০১২ সালে হুগো শ্যাভেজ পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান মাদুরো। ক্যান্সার আক্রান্ত শ্যাভেজের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা গণমাধ্যমে মাদুরোই প্রকাশ করতেন। শ্যাভেজের কাছে মাদুরো ছিলেন সন্তানতুল্য।
৫ মার্চ, ২০১৩ তারিখে শ্যাভেজ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর নিকোলাস মাদুরো ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিজে নেন। তার এই দায়িত্বকে ভেনেজুয়েলার সংবিধান অমান্য এবং ভঙ্গ করার অভিযোগ তোলেন বিরোধীদলীয় নেতারা। বিরোধীদলীয় নেতাদের মতে শ্যাভেজের মৃত্যুর ফলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণের মাধ্যমে তিনি ভেনেজুয়েলার সংবিধানের ২২৯, ২৩১ ও ২৩৩ নং ধারা ভঙ্গ করেছেন। ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত বিশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি নতুন রাষ্ট্রপতিরূপে অত্যন্ত স্বল্প ১.৫% ভোটের ব্যবধানে সরাসরি নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টির পক্ষাবলম্বন করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তার প্রধান ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মিরান্ডার গভর্নর হেনরিক ক্যাপ্রিলস। মাদুরোর স্ত্রী সিলিয়া ফ্লোরেস ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল কংগ্রেসের স্পিকার এবং একজন আইনজীবী।
১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের চত্বরে সংঘটিত শ্রমজীবি মানুষের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে বিশ্বশ্রমিকের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার দিনটাকে স্মরণ এবং তাদের সেই চেতনায় নতুন ভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে জাগ্রত থাকার শপথ গ্রহণের একটা বিশেষ দিন এই মে দিবস।
নানাবিধ উপাধিতে আজকের দিনটিতে এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। মে দিবসকে বলা হয় – আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস। তাছাড়া ও এ দিবসটি – আন্তর্জাতিক শ্রমিক হত্যা দিবস , লেবার ডে , ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কার ডে ইত্যাদি। মেহনতি জনতার আন্তর্জাতিক সংহতি ও সংগামের স্মৃতিস্মারক এই দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন এ দিবস।
মে দিবস কেন?
শ্রমিকদের অধিকার আদায় এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ দিবসের আয়োজন। মালিক শ্রমিক সম্পর্ক , দায়িত্ব ও কর্তব্যকে স্মরণ করার জন্য এ দিবস। মালিক পক্ষের শোষণ , বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের মুক্তির আকান্খা নিয়ে ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র সেই সংগ্রামের স্মৃতি ও চেতনায় নতুন ভাবে জাগ্রত হবার লক্ষ্যে এ দিবসের আয়োজন।
মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১২৬ বৎসর পূর্বে ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার শিকগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস ও কর্মক্ষেত্রে মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে হে মার্কেটের চত্বরে সমাবেশ করতে গেলে রাষ্ট্র শক্তির নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিকাগোর হে মার্কট চত্বরে পুলিশের বন্দুকের গুলি বুকে ধারণ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১১ জন শ্রমিক বিশ্ব শ্রমিক জাতিকে নতুনভাবে বাঁচবার পরণা ও শিক্ষা দিয়ে চলে যান পৃথিবী থকে চিরদিনের জন্য। প্রতিষ্ঠা করে যান আজকের মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস।
এ ঘটনার পূর্বে শ্রমিকদের করতে হতো দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম। করতে হতো তাদের মানবেতর জীবন যাপন। মিলতো নগণ্য পারিশ্রমিক। দাসত্ব জীবন ছিল কারো কারো। মালিক পক্ষের ইচ্ছায় শ্রমিকদের উপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন।
সে সময় ছিলনা বিশ্বের কোথাও শ্রমিক আইন। শ্রমিকদের মানবিক অধিকার , অর্থনৈতিক অধিকার বতে কিছুই ছিলনা। ছিলনা তাদের স্বাধীনতা। ছিলনা চাকরীর স্থায়িত্ব ও ন্যায় সঙ্গত পারিশ্রমিকের কোন নিশ্চয়তা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এইসব মানবতা বিরোধী কর্মের অবসান এবং শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণ , প্রাপ্য অধিকার আদায় , মর্যাদা সমুন্নত রাখতে তথা মেহনতি মানুষদের জন্য মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৪ সালে শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা ১৮৮৬ সালর ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
তাদের এ দাবী মালিক পক্ষ মেনে না নিলে ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে সন্ধ্যায় শিকাগোর হে মার্কেট চত্বরে আমেরীকা ও কানাডার প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক জোটবদ্ধ হয়ে সমাবেশ করে। শ্রমিকদের সমাবেশের মুল কার্যক্রম শুরু হবার অল্প কিছুক্ষণ পরই অদূরে দন্ডায়মান পুলিশ বাহিনীর নিকটে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরিত হলে এক পুলিশ তাতে নিহত হয়। সাথে সাথেই পুলিশ বাহিনী সমাবেশের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকলে তাতে ১১ জন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় আরো ৮ জনকে শ্রমিককে।
১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর এক প্রহসনমুক বিচার আয়োজনের মাধ্যমে উক্ত ৮ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের ফাঁসী কার্যকর করা হয়। বাকী দুইজনের মধ্যে একজনকে দেয়া হয় ১৫ বৎসরর কারাদন্ড, আর অপর জন কারাগারের ভিতরেই আত্মহত্যা করেন। বোমা বিষ্ফোরণকারীর পাওয়া যায়নি কোন হদিস।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে‘কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে প্রতি বৎসর ১লা মে’কে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বিশ্ববাসী।
পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালের ২৬শে জুন পুলিশ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত ৮ জন শ্রমিককে নিরাপরাধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার গণকবর, বধ্যভূমিগুলো উদ্ধার পূর্বক সংরক্ষণ ও সাতক্ষীরা পৌরসভাধীন খড়িবিলা বিল আবাদানীর ১০০ একর খাস জমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ স্মারক লিপি প্রদান করেন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সাতক্ষীরা’র নেতৃবৃন্দ। গত রোববার সকালে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জী, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের যুগ্ম আহবায়ক সুধাংশু শেখর সরকার, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, নিত্যানন্দ সরকার, চারুশিল্পী এম এ জলিল, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ’র সদস্য সচিব আলীনুর খান বাবুল, এড. মুনির উদ্দিন, রওনক বাসার, লোকী ইকবাল প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করেন, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল খুলনা, বাগেরহাট, ৯৬ গ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ৬০০-৭০০ নির্যাতিত মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। পরদিন সন্ধ্যায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা স্কুলের পিছনে দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে গিয়ে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। বর্তমানে ওই স্থানে বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। দীনেশ কর্মকার তার পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। এই পুকুর ও ডোবার অংশটুকু চলে গেছে জনৈক ব্যক্তির দখলে। বর্তমানে সেখানে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের বাঁকাল ব্রিজ ছিল পাক হানাদারদের আর একটি হত্যাযজ্ঞের স্থান। মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা করে নিচে ফেলে দিত। এ অংশটুকু এখন এক প্রভাবশালীর দখলে চলে গেছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়ুখালী-মাহমুদপুর স্কুলের পেছনের পুকুর থেকে স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয় কয়েকশত মানুষের কঙ্কাল ও মাথার খুলি। সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় বৃহৎ গণকবর হিসেবে এটি চিহ্নিত হলেও এখন এর কোনো অস্তিত্ব নেই। এছাড়া সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গায় স্বাধীনতা লাভের কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে যাওয়ার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় শত শত বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশু শরণার্থীকে। পরে তাদের গোবিন্দকাটি খালপাড় ও রূপালী ব্যাংকের পেছনে গণকবর দেয়া হয়। এসব গণকবরগুলোরও কোনো চিহ্ন নেই। শহরের সুলতানপুর পালপাড়া খালের ধারে হত্যা করা হয় সুরেন, নরেন ও কেষ্টপদ নামে তিন মুক্তিকামী যুবককে।
গত ৯ বছর ধরে মহাজোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও এখানকার গণকবর এবং বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। নতুন প্রজন্মসহ অনেকে জানেনা মুক্তিযুদ্ধের ওই ইতিহাসের কথা। এসকল গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারিভাবে আজও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমানে ইতিহাস গাঁথা ওই সব গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো চলে গেছে বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে। সাতক্ষীরার গণকবর ও বধ্যভূমির বিষয়টি বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো। আর বধ্যভূমির বিষয়গুলো যেন নতুন প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের পলাশপোল মৌজার খড়িবিলা বিল আবাদানির ১০০ একর সরকারি খাস সম্পত্তি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন কর্তৃক উদ্ধার করা হয়েছে। উক্ত খাস জমি সাতক্ষীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি প্রতিটি জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ইতোমধ্যে অনেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অথচ এখনো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের জন্য সুদুর রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রামে যেতে হয়। যা এ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ব্যয় বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই সাতক্ষীরায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি পূরণ হবে বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ।