Category: অর্থনীতি

  • বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ঝুঁকি থেকে বের হয়নি বাংলাদেশের অর্থনীতি

    বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ঝুঁকি থেকে বের হয়নি বাংলাদেশের অর্থনীতি

    ন্যাশনাল ডেস্ক : মূল্যস্ফীতির হার গত মাসেও ছিল ৯ শতাংশের বেশি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চলতি হিসাবের ঘাটতি। শঙ্কা কাটেনি রিজার্ভ নিয়েও। বরং সামনের দিনগুলোয় আরো অনিশ্চয়তার ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণেও ঠিক এ কথাই উঠে এসেছে। সংস্থাটি মনে করছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের চাপ আগামীতেও থেকে যেতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় বাড়তে পারে টাকার অবমূল্যায়ন, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঠেলে দেবে আরো বড় অনিশ্চয়তার মুখে।
    সংস্থাটির ভাষ্য হলো মহামারীর অভিঘাত পার করে বেশ নির্বিঘ্নেই পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অর্থনীতির বহিস্থ প্রভাবকগুলোর ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপগুলো ছিল অপর্যাপ্ত। দেশে এখন ব্যবসায়িক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও সুদহার পরিস্থিতি। আর্থিক খাতকে দায়গ্রস্ত করছে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধনের অপর্যাপ্ততায় ভুগছে আর্থিক খাত। সব মিলিয়ে এখন টেকসই অর্থনীতির বেশকিছু ঝুঁকির মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে ব্যয় বাড়লে বা নীতিগত সংস্কারগুলো পিছিয়ে দেয়া হলে ভবিষ্যতে বাজেট ঘাটতির মাত্রাও অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে।
    ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে গতকালই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশকালে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের চিফ অর্থনীতিবিদ বার্নাড হ্যাভেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
    প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এতে স্বল্পমেয়াদে কিছু সুফল পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কোনো কাজে আসবে না।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পরিসংখ্যানের সূত্র ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২০-২১ অর্থবছরেও দেশে ব্যালান্স অব পেমেন্টের উদ্বৃত্ত ছিল ৯৩০ কোটি ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আমদানির মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। রফতানিতে চাহিদা বাড়ায় মাধ্যমিক পণ্যের (ইন্টারমিডিয়ারি গুডস) আমদানি বাড়িয়েছিলেন শিল্পোদ্যোক্তারা। আবার তাদের উৎপাদন ব্যয়কে বাড়িয়ে তোলে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে। বেড়ে যায় সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতিও। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩০ কোটি ডলারে।
    এমন পরিস্থিতিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চলতি হিসাবের ঘাটতি সংকোচনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় এলসি খোলার মাত্রা কমে। এর সঙ্গে আবার রফতানির প্রবৃদ্ধিও বজায় থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ। একই সময়ের আবার দেশে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি নেমে আসে ৫০০ কোটি ডলারের ঘরে। যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল হাজার কোটি ডলারের বেশি। গত অর্থবছরে দেশে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
    চলতি হিসাবের ঘাটতি কমলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়েছে। আমদানি কমার পাশাপাশি বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতার মধ্যে বাণিজ্য ঋণের প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে। একই সময় সুদহার বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করায় মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণও কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪০ কোটি ডলারে। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় এর পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি ডলার।
    সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিঃসন্দেহে সংকটে না হোক একটা বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সরকারের আয়-ব্যয় ও ঘাটতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য এবং চলতি, বাণিজ্য ও সামগ্রিক—সব হিসাবেই সমস্যা রয়েছে। সময়মতো মোকাবেলা করা না গেলে এ দুই ধরনের সমস্যা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আমদানি ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে সাময়িক কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি আসবে। কিন্তু আমাদের যে মৌলিক সমস্যা ছিল সেগুলো তো দূর হয়নি। এজন্য যে ধরনের সংস্কার করা দরকার ছিল, সেটা করা হচ্ছে না। এমনটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অঙ্গীকার করেও সরকার পুরোটা করছে না। এর একটি হলো সুদহারকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা এবং টাকার বিনিময় হারকে শিথিল করা। ব্যাংক খাতের সংস্কারের মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার এটি সত্য। কিন্তু যে ধরনের দ্রুততার সঙ্গে ও গভীরভাবে এসব সংস্কার করার কথা ছিল সেটা হচ্ছে না। সমস্যা মোকাবেলার জন্য সরকার যে ধরনের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেনি। ফলে ঝুঁকিগুলো রয়ে গেছে। সরকারের এ মুহূর্তে টাকার অভাব রয়েছে। ব্যাংক খাতে তারল্য ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি টাকা সরবরাহ করে তাহলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। এ ঝুঁকি কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সমস্যা হচ্ছে এগুলো মোকাবেলায় সরকার যেভাবে সংকোচ নিয়ে এগোচ্ছে তাতে ঝুঁকি আরো বাড়ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় যা করছে, তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। নীতি সংস্কারের দুর্বলতার পাশাপাশি নীতি সমন্বয়হীনতাও আমাদের আরো একটি বড় সমস্যা।’
    তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে ছিল। আমরা একটা প্রবৃদ্ধির গল্প রচনা করেছিলাম। কাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়গুলো আমরা স্বীকার করতে চাইনি। এর ফলেই আজকে এ পরিস্থিতি হয়েছে।’
    বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি বাড়ায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে আটকে থাকতে পারে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রকৃত মজুরি ও সঞ্চয় কমায় ভোক্তাব্যয় শ্লথ হয়ে আসতে পারে। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে চাহিদা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা, বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং মূলধনি পণ্যের বর্ধিত দাম। আবার টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং কিছু ভোক্তাপণ্যের ওপর আমদানিতে শুল্কবৃদ্ধি সামনের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাকেও বাড়িয়ে তুলেছে। উচ্চমূল্যস্ফীতি একই সঙ্গে এখন দারিদ্র্য বিমোচনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। আবার দেশের রফতানি আয়কে চাপে ফেলতে পারে বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকিবিশ্বব্যাংকের সুপারিশে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক বিনিময় হার থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য হলো দেশে এখন ডলারের একাধিক বিনিময় হারের জটিল এক পদ্ধতি চালু রয়েছে। এর কারণে রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় নিরুৎসাহিত হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালের জুন থেকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভের ক্রমাগত পতনের মুখে গত পঞ্জিকাবর্ষের জুনের শুরুর দিকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়নের গতি বেড়ে যাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই ফ্লোটিং বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের পথ থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগস্টের মধ্যেই ডলারের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধান ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার ৯৫ টাকায় ধরে রাখলেও কার্ব মার্কেটে তা ১২০ টাকায় উঠে যায়। তবে এক পর্যায়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বিনিময় হার এক প্রকার অকার্যকর হয়ে পড়ে। কারণ বিক্রেতারা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত হারে ডলার বিক্রি করতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। সেপ্টেম্বরের দিকে একাধিক বিনিময় হারের এক জটিল পদ্ধতি চালু করা হয়। এক্ষেত্রে রফতানিকারক, আমদানিকারক ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য ডলারের ভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়।
    একাধিক বিনিময় হারের এ পদ্ধতি এখন ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য হলো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে বিনিময় হারকে নিয়ন্ত্রণ করায় দেশে এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। আবার রফতানিকারকদের আয় নির্ধারণ হচ্ছে বাজারের চেয়ে কম বিনিময় হারের ভিত্তিতে। ফলে তারাও এখন এ আয় দেশে আনার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী না। আবার আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং করেও অনেকে প্রণোদনা পাচ্ছেন বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
    সংস্থাটি বলছে, বর্তমান বাস্তবতায় বাণিজ্য সংস্কারের দিকে এগোতে হবে সরকারকে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাণিজ্য খাতে সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, চাহিদা ও জোগান দুদিক থেকেই সমস্যা রয়েছে। জোগানের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোগানের ক্ষেত্রে আর্থিক নীতিমালা বাজেট ঘাটতি কমাতে কোনো কাজে লাগছে না।
    বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির তিনটি দিক প্রাসঙ্গিক। একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার কোন দিকে যাচ্ছে। আরেকটি হচ্ছে পণ্যবাজারের মূল্য কোন দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, সার, লোহা, সিমেন্ট ও শিল্পের কাঁচামাল। তৃতীয়টি হচ্ছে ডলারের বিনিময় হার কোন দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহারের আভাস সম্পর্কে বলা যায়, যতটা ভাবা হয়েছিল এটি ততটা বাড়বে না। প্রশ্ন হচ্ছে এটি কমবে কিনা কিংবা স্থির থাকবে কিনা? এ দুটি যদি হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো। আর সেটি যদি না হয় এবং সুদহার বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। পণ্যবাজারের দামের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে বলা যায় এটি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল আবার কিছুটা অস্থিরতাও রয়েছে। ডলার নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হলে ডলারের বিনিময় হারেও অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আমাদের কিছু সামষ্টিক নীতি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে যে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে সেটিকে আরো বেগবান করতে হবে। এছাড়া আমাদের বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সংস্কার করতে হবে।’
    তিনি আরো বলেন, ‘সুদহার ও টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। বিনিময় হারে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে রফতানি ও রেমিট্যান্স দুই মাধ্যমেই ডলারের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বিনিময় হারকে যদি বাজারভিত্তিক করা হয় তাহলে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে ডলারের সরবরাহ বাড়বে। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হলো বিদ্যমান বিনিময় হারের কারণে আমরা গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি মাসে ৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স হারাচ্ছি। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে রফতানির অর্থ প্রত্যাবাসন বেড়ে যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ যে আমরা মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বলে বিনিময় হারকে চেপে রাখছি। কিন্তু আমার তো মনে হয় চেপে রাখার কারণেই মূল্যস্ফীতি বেশি হচ্ছে।
    বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে ভুগছে দেশের পুঁজিবাজার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এ বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন একেবারে তলানিতে। গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ার দরের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এতে পুঁজিবাজারের তারল্য দ্রুত কমে যায়। মর্গান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) তাদের ইকুইটি ইনডেক্স হিসাব করার সময় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে। এর ফলে সংস্থাটির ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস ইনডেক্স থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বাদ পড়েছে।
    আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটা বিশ্বেই এখন পুঁজি, পণ্য ও মুদ্রাবাজারের উত্থান-পতন বাজার প্রভাবকগুলোর বিপরীতে স্বাভাবিক আচরণ করছে না। অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে মারাত্মক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির উত্তেজনাও দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। বাস্তব রূপ নিতে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্বিপাক নিয়ে যাবতীয় আশঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ব্যাংক ধসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক আর্থিক খাতে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতি। বাংলাদেশও এখন এর বাইরে নয় বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
    এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আমি বলব যে এটি রক্তক্ষরণ এবং একই সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে হয়তো এ অবস্থাকে আরো কিছু দূর টেনে নেয়া যাবে এবং এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা আরো দুর্বল হতে থাকবে। আমাদের অর্থনীতির ভিতগুলো সার্বিকভাবে সব জায়গাতেই খারাপের দিকেই যাচ্ছিল এবং যাচ্ছে। বাহ্যিক পরিস্থিতির কারণেই যে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়েছে এমনটি নয়। ভারতের ক্ষেত্রেও তো বাহ্যিক ঝুঁকি ছিল কিন্তু তারা তো ভালো করছে।’ সৌজন্যে : দৈনিক বণিক বার্তা

  • সোনালী ব্যাংকে পদোন্নতির নীতিমালা পরিবর্তনে ক্ষোভ

    সোনালী ব্যাংকে পদোন্নতির নীতিমালা পরিবর্তনে ক্ষোভ

    মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা করার উদ্যোগে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নতুন নীতিমালায় একটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজনকে সাক্ষাৎকারে ডাকা হবে। বর্তমানে এক পদে তিন বছর পূর্ণ হলেই তিনি সাক্ষাৎকারের যোগ্য হন। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে পদোন্নতিতে মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতা গুরুত্ব পাবে। নীতিমালা কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

    জানা গেছে, সাক্ষাৎকার নেওয়ার খরচ কমানোর যুক্তিতে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির সভায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন হয়। সেখানে বলা হয়েছে, অফিসার থেকে ডিজিএম পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে প্রণীত জ্যেষ্ঠ তালিকা থেকে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন সাক্ষাৎকারের জন্য বিবেচিত হবেন। এতে ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে কেবল জ্যেষ্ঠ ৩০০ কর্মকর্তা ডাক পাবেন। অধিকতর যোগ্য হলেও তাঁদের পদোন্নতির জন্য ডাকাও হবে না। তাতে তুলনামূলক পরের দিকে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ভালো কাজের আগ্রহ হারাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে।

    সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে ১০০ শূন্য পদের জন্য হয়তো ৫০০ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে ডাক পান। বিভিন্ন এলাকা থেকে যাঁরা সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকায় আসেন, প্রত্যেকে টিএডিএ বাবদ হয়তো তিন থেকে চার হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। সোনালী ব্যাংকের সামগ্রিক খরচ বিবেচনায় এটা খুব সামান্য। তিনি বলেন, এখন নিচের দিকে থাকা কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান না। তবে তাঁদের মধ্যে ভালো কাজের একটা প্রতিযোগিতা থাকে। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে সেটি বন্ধ হতে পারে।

    সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে একই পদে তিন বছর হলেই তিনি পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার যোগ্য হন। সেখান থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কাজ, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কিনা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় কারও অবস্থান দুর্বল হলে তিনি জ্যেষ্ঠ হলেও পদোন্নতি পান না। এতে করে সব পর্যায়ে ভালো কাজ করার এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে।

    স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালা ২০২২ অনুযায়ী. ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেওয়া হইবে’ এবং ‘কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদায়ন বা পদোন্নতি দাবি করিতে পারিবেন না’ উল্লেখ আছে। অথচ নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে জ্যেষ্ঠরা অগ্রাধিকার পাবেন। মেধাকে পাশ কাটিয়ে কেবল জ্যেষ্ঠতাকে প্রধান্য দিলে সোনালী ব্যাংকের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংক খাতে সুশাসন, দক্ষতা, আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষ ব্যাংকার গড়ার ক্ষেত্রে যা অন্তরায়। এ অবস্থায় শূন্য পদে সর্বোচ্চ তিনজন ডাকার বিধান কার্যকর না করে বিদ্যমান নিয়মে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

  • বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন

    বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন

    স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন

    কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ বর্তমানে প্রায় ৯৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
    টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ আজ বাসসকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের নির্মাণ কাজ ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। যান্ত্রিক স্থাপনার কাজ এখনো চলছে। এরই মধ্যে এপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।’
    তিনি বলেন, ক্রস প্যাসেজ ও টানেল সম্পর্কিত টোল প্লাজার নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে।
    ‘টানেলের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক ও সিভিল ওয়ার্ক চলছে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে’- জানিয়ে রশিদ আশা প্রকাশ করেন, টানেলের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
    প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এছাড়া, ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি একটি ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ রয়েছে, যার মাধ্যমে মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
    বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
    চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।
    টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে।
    বঙ্গবন্ধু টানেল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে এই ঋণ দিয়েছে ।
    নদীর নিচ দিয়ে এই ধরণের টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। প্রকল্পের বাকি ৪ শতাংশ কাজ শেষ করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রকল্পে শ্রমিকদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি  প্রকৌশলীরা সম্পৃক্ত রয়েছেন।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বন্দরনগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে পরিণত করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
    জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাল্টি-লেন রোড টানেল প্রকল্পটি অনুমোদন করে এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।
    পরবর্তীতে খরচ বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
    সর্বশেষ সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যয় ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
    টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে, বছরে  ৬.৩ মিলিয়ন যানবাহন এই টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে। সে অনুযায়ী দিনে প্রায় ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলতে পারবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে।

  • মার্চের মধ্যে খানা আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকাশ

    আগামী মার্চের মধ্যে খানা আয় ও ব্যয় জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ জরিপ করছে। দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। গত ১ জানুয়ারি এ কার্যক্রম হয়।

    দারিদ্র্য পরিস্থিতি, মাথাপিছু মাসিক আয়-ব্যয়, ভোগের তথ্য এবং এসব বৈষম্যের চিত্র জানা যাবে।

    প্রতি পাঁচ বছর পরপর খানা আয় ও ব্যয় জরিপ হওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে করোনার কারণে এবার ছয় বছর পর এ জরিপ হচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালে সর্বশেষ জরিপ করা হয়। এতে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

    এবারের জরিপে কিছু নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ল্যাপটপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরিবারের খাদ্যগ্রহণের সঠিক তথ্য পেতে তথ্য সংগ্রহকারীরা ওজন পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করেছেন।

    টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে নতুন কিছু প্রশ্ন যুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার ও করোনার টিকা সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে।

    এ প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা।

    জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, জরিপের গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা পর্যন্ত সব পর্যায়ে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

    বিশ্বব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর দ্রুততম সময়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

  • ‘প্রতি ৪ সেকেন্ডে অনাহারে একজনের মৃত্যু’

    ‘প্রতি ৪ সেকেন্ডে অনাহারে একজনের মৃত্যু’


    আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বে প্রতি চার সেকেন্ডে অনাহারে একজনের মৃত্যু হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে দুই শতাধিক এনজিও। মঙ্গলবার তারা এই সতর্কতা জানিয়ে বৈশ্বিক ক্ষুধা সংকটের অবসানে নিষ্পত্তিমূলক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

    এক বিবৃতিতে এনজিওগুলো বলেছে, ৭৫টি দেশের সংস্থাগুলো এক খোলা চিঠিতে অনাহারের মাত্রা বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

    বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখন তীব্র অনাহারে ভুগছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

    এনজিওগুলো উল্লেখ করেছে, বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একবিংশ শতাব্দীতে দুর্ভিক্ষ হতে তারা দেবেন না। কিন্তু আবারও সোমালিয়াতে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। বিশ্বের ৪৫টি দেশে ৫ কোটি মানুষ অনাহারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

    প্রতিদিন অনাহারে ১৯ হাজার ৭০০ মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে এনজিওগুলো বলছে, এর অর্থ হলো প্রতি চার সেকেন্ডে অনাহারে একজনের মৃত্যু হচ্ছে।

    বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা ইয়েমেন ফ্যামিলি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহান্না আহমেদ আলি এলজাবালি বলেন, কৃষি ও ফসল উৎপাদনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পরও একবিংশ শতাব্দীতে আমরা এখনও দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলছি। এটি কোনও একটি দেশ বা মহাদেশের বিষয় নয়, অনাহারের কখনও নির্দিষ্ট একটি কারণ ছিল না। এটি পুরো মানবতার অবিচারের বিষয়।

    এর আগে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলে সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বের প্রায় ৩৪ কোটি মানুষ অনাহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । বিশ্বের ৮২টি দেশের ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে রয়েছে। করোনা মহামারীর আগের তুলনায় চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

  • ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

    ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: গত ১৫ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ৫৭২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। 

    ডলারের বিপরীতে রুপির মান পতন ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ে। আর এর জেরেই রিজার্ভ এতটা কমেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

    টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫৭২ বিলিয়ন ডলার। যদিও এরপর থেকে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছিল এবং ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৬৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ ব্যাংক ৫০ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে। আর এর জেরেই রিজার্ভের এই অবনমন হয়েছে। 

    করোনা মহামারির মোকাবিলা করে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে। বিশেষ করে জ্বালানির মূল্য বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ডলারে বিপরীতে রুপির মূল্যহ্রাসের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ীকে করেছেন বিশ্লেষকরা। এতদিন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল। এবার এই অঞ্চলের বৃহৎ শক্তি ভারতের নাম এলো।

  • সাতক্ষীরায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে টিসিবি’র পণ্যাদি বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন

    সাতক্ষীরায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে টিসিবি’র পণ্যাদি বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন


    নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে টিসিবি’র পণ্যাদি বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২২ জুন) বিকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের আয়োজনে সদর উপজেলা চত্বরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য নৌ কমান্ডো ০০০১বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইয়ারুল হক, সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সফিউল আজম, সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার দাস, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর বিন সেলিম যাদু, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী হাশিম উদ্দিন হিমেল, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান শোভন, মেসার্স নোমান এন্টারপ্রাইজ’র সত্ত্বাঅধিকারি শেখ নাঈম আহমেদ প্রমুখ। এসময় সদর উপজেলার ১৭ হাজার ১৪৪ টি স্বল্প ও নিন্মআয়ের পরিবারের মাঝে ১ কেজি চিনি ৫৫ টাকা দরে, মুশুরী ডাল ২ কেজি ৬৫ টাকা দরে, সোয়াবিন তেল ২ লিটার ১১০ টাকা দরে, এসব পণ্যাদি যার বাজার মূল্য ৭১৫ থেকে ৭৩০ টাকা হতে পারে। সেখানে উপকারভোগীরা ৪০৫ টাকায় এসব পণ্যাদি পাচ্ছে স্বল্প ও নিন্ম আয়ের মানুষেরা।

  • সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে ২২ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা

    সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে ২২ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা

    ইব্রাহিম খলিল : কল্যানী ঘোষ বয়স ৮৩ বছর। বাড়ি বুধহাটা হাবাসপুর গ্রামে। বয়সের ভারে একাবারে ন্যুয়ে পড়েছেন। দালাল ছাড়াই মেয়েকে সাতে নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছেন সাতক্ষীরা আঞ্চলীক পাসপোর্ট অফিসে। সরাসরি এডি (সহকারি পরিচালক) রুমে এসে আবেদনটি জমা দিলেন। ফরমে ভুল থাকলেও এডি নিজেই সেটি ঠিক করে হাতে দিয়ে বললনে ছবি তুলে চলে যান। কারোর কাছে টাকা পয়সা দেবেন না। এভাবে একেরপর আবেদনকারি এসে তাদের পরামার্শ ভুল হলে সেগুলো কিভাবে সংশোধন করতে হবে সব কিছু একাই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। আবেদন কারিদের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার জায়গা থাকলেও সবাই চায় এডির সাথে দেখা করতে। তার আচার ব্যাবহার সু-পরামার্শ আবেদন কারিদের জন্য স্বস্তিকর। আবেদনকারিরা সবাই হাসিমুখে রুম থেকে তাদের সমাধান করে বের হয়ে যাচ্ছেন।
    সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিস থেকে সরকার ২২ মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ২১৮ টি। পাসপোর্ট বিতরন করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫১২টি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ আবেদন জমা পড়ে।
    সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, লোকবল সংকট থাকলেও আমি গত ২৪,০৯,২০২০ সালে যোগদান করার পর থেকে সরকার প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে ২৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারি থাকার কথা কিন্তু আছে মাত্র ১১ জন। আমরা অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
    তিনি পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট অফিসে গুনগত কিছু পরিবর্তন এনেছেন,দালালমুক্ত ও কোন কর্মকর্তা কর্মচারি যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য পুরো পাসপোর্ট অফিস সিসি ক্যামেরাদারা বেষ্টিত। সপ্তাহে প্রতি সোমবার গনশুনানির ব্যাবস্থা। বীর মুক্তিযোদ্ধা , বয়স্ক ও অসুস্থ্যদের জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে বিশেষ সেবা দেওয়া। প্রতিবন্ধিদের জন্য হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা প্রদান। হেল্প ডেস্ক, জবাবদিহি বক্স ও যে কর্মকর্তা কর্মকারি আবেদন কারিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবে মাসে পুরস্কারের ব্যাবস্থা করা। এছাড়া রয়েছে অসুস্থ্য ও প্রতিবন্ধিদের জন্য কলিংবেল এর মাধ্যমে সেবা দেওয়া। নিচ থেকে কলিংবেল চাপতেই সরাসরি এডি নিজে এসেই সেবা দিয়ে যান।
    কথা হয় আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা রাজ কুমারের সাথে, তিনি বলেন, আমি নিজে সরাসরি এসেছি পাসপোর্ট করতে। সহকারি পরিচালক মহোদয় আমার আবেদনটি দেখে সই করে দিলেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। তার ব্যাবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি অফিসের প্রধান কর্মকর্তা হয়ে সেভাবে হেল্প করলেন সত্যিই অবিশ^স্য।
    সহকারি পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, প্রতিটা আবেদনকারি আলাদা আলাদা কাউন্টার থাকা সত্বেও সবাই আপনার কাছে আসে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবাই আমার কাছে আসতে পারে কোন বাাঁধা নেই। আমি যতটুকু সম্ভব মানুষকে আমার সাধ্যমত সেবা দিয়ে থাকি। কারোর পাসপোর্ট আসতে কেন দেরি হচ্ছে,আবেদনে ফরমে কোন সমস্যা আছে কিনা, সমস্যা থাকলে কি ভাবে সমাধান করতে হবে সবকিছু আমি করে থাকি।

  • অর্থনীতির রূপান্তর ঘটছে দুর্বল ভিত্তিতে ভর করে

    অর্থনীতির রূপান্তর ঘটছে দুর্বল ভিত্তিতে ভর করে

    বদরুল আলম : এক পণ্যের ওপর নির্ভরশীল বৈচিত্র্যহীন রফতানি খাত। রাজস্ব আহরণের উৎস সীমিত। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম। বিনিয়োগ আকর্ষণে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির ভিত্তিগুলো এখনো দুর্বল রয়ে গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে রূপান্তরের কালে অন্য কোনো দেশেই অর্থনীতির এমন দুর্বলতা দেখা যায়নি।

    বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার শর্ত পূরণ করে ২০১৫ সালে। ওই সময়ে দেশের মোট জাতীয় আয় (জিএনপি) মাথাপিছু ছিল ১ হাজার ২২০ ডলার। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনার ভিত্তিতে কোনো দেশকে এলডিসির তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি)। সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক সভায় সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও উল্লিখিত দেশকে উত্তরণের যোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথম দফায় ২০১৮ সালে ও দ্বিতীয় দফায় গত বছর উত্তরণের যোগ্য হিসেবে সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। স্বীকৃতি পাওয়ার পরের তিন বছরকে ধরা হয় রূপান্তরকালীন প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত দেশগুলো উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের ২০২৪ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার কথা। তবে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সিডিপি বাংলাদেশের রূপান্তরকালীন প্রস্তুতি পর্বের সময় নির্ধারণ করেছে পাঁচ বছর। সে হিসেবে ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছারও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসেই এসব লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্য উপায় এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তুলনামূলক বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ।

    নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যম আয়ে রূপান্তর ঘটানো কয়েকটি দেশের পাঁচ বছরের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এতে দেখানো হয়েছে, বাণিজ্য, রফতানি, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স, শুল্ক কাঠামো, করসহ সব সূচকেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

    এ বিষয়ে আইএমএফের বক্তব্য হলো রফতানি এবং প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ নিম্ন ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিতে বড় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস এখনো পোশাক রফতানি। এখানে মোট রফতানির ৮০ শতাংশই আসে পোশাক পণ্যের মাধ্যমে। দেশে প্রবৃদ্ধির আরেক চালিকাশক্তি প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় এ রেমিট্যান্সপ্রবাহও কমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

    অর্থনীতির রূপান্তরে কাঠামোগত শক্তিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কাঠামোগত শক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে রূপান্তর হলে যেকোনো দেশ সমস্যায় পড়তে বাধ্য। রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জন্য সুদহার বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে ঋণসেবার দায়ও। এ সমস্যা এড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ বাড়াতে হলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন করার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পরিবর্তন আনা সম্ভব হলে অর্থনীতির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে রফতানি ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতাও।

    সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে বাজার সুবিধানির্ভরতা থেকে সরিয়ে এনে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতানির্ভর করতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে এগুলো আমাদের করতেই হবে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের কারণে আমাদের ঋণের সুদ বেড়ে যাবে। এ দুই চ্যালেঞ্জের মুখে কাঠামোগত পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় আহরণ বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি—এগুলো যদি আমরা করতে না পারি তাহলে আমাদের মধ্যম আয়ের ফাঁদ ও ঋণ ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামী দিনের কৌশলগুলো নির্ধারণ করতে হবে।

    তিনি আরো বলেন, যেসব দেশের এ ঘাটতিগুলো রয়ে গিয়েছে, তারা ঋণের ফাঁদে পড়েছে। কেউ ফিলিপাইনের মতো নিম্নমধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে। আবার কেউ উচ্চমধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে, যেমনটা লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে ঘটেছে। বাংলাদেশের যাতে এমন পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার শক্তিশালী করা, কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, সুশাসন, অর্থনীতির সক্ষমতার মতো প্রতিবন্ধকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

    আইএমএফের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাণিজ্য জিডিপি অনুপাত ৩৯ দশমিক ৯। নিম্নমধ্যম আয়ের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এ অনুপাতের রূপান্তকালীন গড় ৭৬ দশমিক ৮। রফতানি জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ১। নিম্নমধ্যম আয়ের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে অনুপাতটির রূপান্তরকালীন গড় ৩৩।

    মোট প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ২। নিম্নমধ্যম আয় থেকে রূপান্তরকালে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এর গড় ২ দশমিক ৫। আবার বাংলাদেশের শুল্কহারও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কাস্টমস ও অন্যান্য আমদানি শুল্ক এবং কর আয় অনুপাত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৬, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যা মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরকালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর এক্ষেত্রে গড় অনুপাত ৮ দশমিক ৩। উচ্চ আয়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এ অনুপাত ২ দশমিক ৭।

    কর জিডিপি অনুপাতের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা অনেক বেশি। রূপান্তরকালে বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাত যেখানে ৮ দশমিক ৬, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে রূপান্তরকালে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এ অনুপাতের গড় ১৬ দশমিক ২। আবার উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরকালীন গড় অনুপাত ১৯ দশমিক ৪। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এর গড় ২০ দশমিক ৫০।

    সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বর্তমান কর জিডিপি অনুপাত দ্বিগুণ করতে হবে। রফতানি বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রেও আমাদের পারদর্শিতা খুব দুর্বল। অন্যান্য দেশের মতো আমরা রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারছি না। অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীভবন অনেক কম, অন্যদিকে আমাদের কেন্দ্রীভবন অনেক উচ্চমাত্রার। কেউ বলতে পারে, কর জিডিপি অনুপাত কম রেখেও বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হবে। সেক্ষেত্রে আমি বলব, আয়ের সীমা হয়তো পার হলো, কিন্তু কর জিডিপি অনুপাত যদি বাড়াতে না পারে, তাহলে শিক্ষায় সরকার কীভাবে খরচ করবে? স্বাস্থ্যে কীভাবে খরচ করবে? অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোয় এত কম কর জিডিপি অনুপাত দিয়ে সরকার কীভাবে ব্যয় করবে?

    ড. সেলিম রায়হান আরো বলেন, বাণিজ্য জিডিপি অনুপাতেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে। তিন বছর ধরে বাণিজ্য জিডিপি অনুপাত কমছে। আমরা যদি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সমন্বিত হতে না পারি, তাহলেও একই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। নামে আমরা ধনী হলাম, কিন্তু কার্যত কি আমরা ধনী হচ্ছি? উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোর যে চেহারা, যেমন আমরা যদি মালয়েশিয়ার কথা চিন্তা করি বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলো, যেমন সিঙ্গাপুর—এ দেশগুলোর মতো আমরা হব না। দেখা যাবে আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর মতোই আছি, কিন্তু আয়ের ক্ষেত্রে দেখাচ্ছি আমরা ধনী হয়েছি।

    অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়ের সীমা পার করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন রফতানি বৈচিত্র্যকরণ কেমন হয়েছে, বিদেশী বিনিয়োগ কতটা আকৃষ্ট করা যাচ্ছে, কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানো যাচ্ছে কিনা, বাণিজ্য জিডিপি অনুপাত কেমন—এসব বিষয়ও পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

    সার্বিক বিষয় নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের আয় হয়তো বাড়ছে, কিন্তু আমাদের সরকারের আয়ের আকার সে হিসেবে বাড়ছে না। সরকার দুর্বল অবস্থায় আছে, সরকারের টাকা কম। রাজস্ব আহরণের উৎস খুবই কম। ফলে সরকারের সেবা প্রদানের সক্ষমতা থাকবে না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে; যেমন ঋণসেবার ব্যয়। আবার সরকারের বেতন-ভাতা ব্যয় বাড়ছে, পেনশন ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সরকারের আয় সেভাবে বাড়ছে না। ফলে সামগ্রিকভাবে সমস্যাগুলো আরো ঘনীভূত হবে। বিষয়গুলোয় আমরা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারি, তাহলে দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যেতে পারে। কারণ আমাদের দুর্বলতাগুলোও বাড়ছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে টেনে ধরবে। পাশাপাশি আছে আয়বৈষম্যের মতো সমস্যা। আছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মান, সরকারি ব্যয়ের মান নিয়ে সমস্যা। এগুলো বিবেচনায় নিতে প্রথমেই অর্থের দরকার। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। এগুলো করতে না পারলে দেশ এগিয়ে যাবে কীভাবে? সুত্র : বণিক বার্তার সৌজন্যে।

  • পার্কিং চার্জ নিয়ে জটিলতা

    যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি

    বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছানোর আগে বনগাঁর মিলন পল্লি মাঠের পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেনাপোল বন্দরে পণ্য-পরিবহণকারী ট্রাকের পার্কিং চার্জ দিন প্রতি ৮০ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে ৮০০ টাকা হওয়ায় ক্ষুব্ধ ভারতীয় রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকেরা। পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে ওপারের বন্দর ব্যবহারকারী ৯টি সংগঠনের ব্যানারে পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। অবস্থান-বিক্ষোভ করেন তারা। দিনের পর দিন পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় বহু ট্রাকের পার্কিং বিল ছুয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না-থাকায় শুক্রবার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিং থেকে বের হয়নি। রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তরের এই পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জেরেই যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

    ভারতের বনগাঁ শহরের উপর দিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে পৌঁছনোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওই মিলন পল্লি মাঠের পার্কিং থেকেই। এতদিন এই পার্কিং দেখত বনগাঁ পৌরসভা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই পার্কিং অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তর। তার পরেই পার্কিং চার্জে বদল এনে জারি করা হয় নয়া নির্দেশিকা। ওই নির্দেশিকায় পার্কিং চার্জ দিনের হিসেবে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ করা হয়। ট্রাকভেদে কোথাও কোথাও তা ৯৬০ টাকা থেকে এক হাজার টাকাও হয়েছে। রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকদের বক্তব্য, কোনো পণ্যবাহী ট্রাক মিলন পল্লি মাঠে এলেই তো তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। অন্তত ৩০-৩৫ দিন পার্কিংয়ে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থাকে। তার পর মেলে ছাড়পত্র। আগে যেখানে পার্কিংয়ের জন্য সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা মতো গুনতে হত, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।

    ওপারের বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, কালিতলা টার্মিনালের পার্কিং চার্জ অতিরিক্ত বৃদ্ধি করায় ওপারের বন্দর ব্যবহারকারী ৯টি সংগঠনের ব্যানারে পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। রবিবার (১৩ মার্চ ) মাইকিং করে আন্দোলনের ডাক দেয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (১৪ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিং এন্ট্রি করবে না বলে বনগাঁর সমস্ত ট্রান্সপোর্টস, ট্রাকের মালিক ও ড্রাইভারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে রাতে সবাই বসে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে তারা হুশিয়ারি দেন। পণ্য পরিবহনের ভাড়ার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে পার্কিং চার্জ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ পার্কিং চার্জ কে বহন করবে। কোথা থেকে টাকার জোগান আসবে। কে পেমেন্ট করবে এই টাকা। এসব নিয়ে মূলত ক্ষোভ বন্দর ব্যবহারকারীদের।

    পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট মেনটেন্যান্স কমিটির সদস্য অসীম সেন বলেন, রাজ্য সরকারের যে কর্মকর্তারা এই নির্দেশিকা জারি করেছেন, তারা হয়তো জানেন না, এখানে কোনো কোনো ট্রাক ৪০-৪৫ দিনও দাঁড়িয়ে থাকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে কালীতলা (মিলন পল্লি মাঠ) পার্কিং থেকে কোনো ট্রাক বের করা যায়নি। কারণ, কারও কাছে এত টাকা ছিল না। এত দিন কোভিডের কারণে এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে পার্কিংয়ের জন্য এত টাকা কি দেওয়া সম্ভব?

    রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকদের আরও দাবি, শুধু পেট্রাপোলে যাওয়ার জন্যই মোটা টাকা দিতে হচ্ছে। ঘোজাডাঙা হিলির মতো অন্য সীমান্তে যাওয়ার জন্য পার্কিং চার্জ বাড়ানো হয়নি। তাদের হুঁশিয়ারি, রাজ্য পরিবহণ দপ্তর যদি পার্কিং চার্জ না কমায়, তা হলে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা পণ্য রপ্তানি করবেন না। অন্য সীমান্তে চলে যাবেন। নয়তো জাহাজ বা রেলে পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।

    পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও বৈঠক করেছেন রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকেরা। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে। জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে খবর, পার্কিং চার্জ বাড়ানো হলেও পেট্রাপোলে যাওয়ার ছাড়পত্র যাতে এক-দেড় মাসের পরিবর্তে দু’তিন দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাই করছে রাজ্য সরকার।

    ব্যবসায়ীদের পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার যদি দু-তিন দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবে, তা কার্যত অসম্ভব। কারণ, তার জন্য যশোর রোডের রাস্তা যতটা চওড়া হওয়া বাঞ্ছনীয়, বাস্তবে তা নয়। ফলত, দিনের সংখ্যা কমে দশ হলেও আগের তুলনায় সেই মোটা টাকাই গুণতে হবে রপ্তানিকারণ সংস্থার মালিকদের।

    পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল বলেন, বনগাঁর অর্থনীতি সীমান্ত-বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে। সেখানে এত টাকা পার্কিং চার্জ! কেউ দিতে পারে নাকি! রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে বনগাঁ ব্যবসায়ীদের।

    পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, রপ্তানি পণ্য পার্কিংয়ে রাখলে তার খরচ আমাদের দিতে হয়। পার্কিংয়ে ট্রাক রাখার পরে পেট্রাপোল বন্দরে আসতে ৩৫-৪০ দিন সময় লাগে। বর্তমানে রাজ্য পরিবহন দপ্তর এই টার্মিনালের দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্কিং চার্জ যে ভাবে বৃদ্ধি করেছেন সেটা পরিশোধ করা কোন ট্রাক চালক বা মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে পার্কিং ফি বাড়ানোর ফলে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। প্রশাসনের কাছে আবেদন, ফি কমানো হোক।

  • ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি

    ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি

    ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি

    মশাল ডেস্ক: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বেড়েছে। এতে করে বেড়েছে নির্মাণ খাতের পণ্যটি থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এ বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৭ টন পাথর আমদানি হয়েছে, যা থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

    ভোমরা শুল্কস্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১৭ লাখ ৭০ হাজার ২১০ টন পাথর আমদানি হয়েছিল। সে সময় এটি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের পাথর আমদানিতে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। একইভাবে পণ্যটির আমদানি বেড়েছে ২৩ হাজার ৫০৭ টন।

    বন্দরসংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, করোনার মধ্যেও বন্দর দিয়ে নির্মাণ খাতের পণ্যটির আমদানি বেড়েছে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ ট্রাক পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে। আমদানি হওয়া এসব পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।

    বন্দরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের অন্যসব বন্দরের তুলনায় ভোমরা বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা সবচেয়ে সহজ। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ভালো, তেমনি পরিবহন খরচেও অনেক সাশ্রয় হয়। যানজট থাকে না। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকার আমদানিকারক এখন ভোমরা বন্দর দিয়ে পাথর আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন।

    ভোমরা স্থলবন্দরের অন্যতম পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোহিত ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি আমদানীকৃত পাথর দেশের বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, ভারতের ঝাড়খণ্ড এলাকা থেকে নির্মাণকাজে ব্যবহূত পাথর আমদানি করেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক পাথর আমদানি করে। বর্তমানে আমদানির পরিমাণ আরো বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

    ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, এ বন্দর দিয়ে ৭৩ প্রকার পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আমদানি করা হয় পাথর। প্রতিদিন ১৮০-২০০ ট্রাক পাথর আমদানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে।

    এ বিষয়ে ভোমরা শুল্কস্টেশনের দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, এ বন্দর দিয়ে যে পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আসে পাথর। গত অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে পাথরের আমদানি বেড়েছে।

  • কালো টাকা সাদা হওয়ায় অর্থনীতি বেগবান হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

    কালো টাকা সাদা হওয়ায় অর্থনীতি বেগবান হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

    অনলাইন রিপোর্টার ॥ কালো টাকা সাদা হওয়ায় অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আনুষ্ঠানিকভাবে টাকাগুলো আসায় অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

    সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বুধবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে অনলাইনে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মুস্তফা কামাল।

    ছয় মাসে কালো টাকা সাদা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে, করোনার মধ্যে এটা কীভাবে হলো জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সাদা করতে চাই বলে সাদা হলো। আমাদের বাজেটে আছে। বাজেট বক্তৃতায় আছে, আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অ্যাডড্রেস করতে চাই। প্রথমেই আমাদের রেমিট্যান্সে প্রণোদনা চালু করেছি। আরো একটা ক্ষেত্র রয়েছে, যেটা প্রতিটা দেশের জন্য বড় এলাকা। সেটা হলো আবাসন খাত।

    এই আবাসন খাতে স্ট্যাম ফি ও ডিউটি বাড়তি থাকার কারণে কোনো রেজিস্ট্রেশন হয় না। ফলে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। বাড়ি বিক্রি হচ্ছে অর্থচ বিক্রি দেখাচ্ছে না। আর বিক্রি যেখানে ১০ টাকা সেটা দেখাচ্ছে এক টাকা। ১০ টাকার উপরে গেলে স্ট্যাম ডিউটি দিতে হয়, সেজন্য স্ট্যাম ডিউটি কমিয়ে দিয়েছি। এরকম যেখানে যেখানে হাত দেওয়া দরকার সেখানে সেখানে করেছি। সেগুলো করার কারণেই এখন কালো টাকা সাদা হচ্ছে।

    মুস্তফা কামাল বলেন, গত এক বছরে বা ছয় মাসে আমাদের রেমিট্যান্স অর্জন হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পুরো বছরে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি আসবে। এই টাকাগুলো কোথায় যাবে, পুঁজিবাজারে যাবে।

    অফিসিয়ালি এ টাকাগুলো আসাতে আমাদের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই টাকাগুলোর মাল্টিটেরিফাই অনেক বেশি। এতে একজনের একটা ট্রানজেকশন ১০ হাত ঘুরে।

    এতে অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও বেশির ভাগই আমরা সফল হয়েছি। আমরা চাই কালো টাকা সাদা হোক। যখন কালো হয়ে গেছে তখন সাদা হবে। আর কালো হওয়ার কারণ নিয়ে অনেক বার ব্যাখ্যা দিয়েছি।

    অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা আমাদের পলিসিগত কারণে কালো হয়। অনেকেই ট্যাক্স দেয় আবার অনেকেই ট্যাক্স দেয় না। আবার ট্যাক্স রেট অনেক বেশি ছিল। আস্তে আস্তে যদি এগুলো কমিয়ে আনতে না পারি তাহলে হবে না। আমাদের সুদের হার অনেক বেশি ছিল। এত বেশি সুদহারে কোনো দেশে শিল্পায়ন হয় না। পাশাপাশি কোনদিন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না।

    আমরা সেখানেও সফল, মোটামুটি আমরা যেটি করে দিয়েছি সেটা সবাই গ্রহণ করেছে। এখন যে ৬ শতাংশে ঋণ পাচ্ছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশে টাকা রাখলে উল্টো টাকা দিতে হবে। সেখানে লাভ পায় না, যদিও পায় সেটা এক থেকে দেড় শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে ৬ শতাংশ পাচ্ছে। এটা হলো আমাদের ইতিবাচক দিক। এটা আমাদের দেখতে হবে।

    তিনি বলেন, আমাদের অনেকের টিআইএন নম্বর আছে কিন্তু আমরা ট্যাক্স পাচ্ছি না। টিআইএন নম্বর দিয়ে কী হবে যদি ট্যাক্স না পাই। সেই কাজটি করার জন্য আমরা ফুল অটোমেশনে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত অটোমেশন শেষ করতে না পারি ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ সমস্যা থাকবে। সেজন্য সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রাজস্ব খাতে অটোমেশনের।

    বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার দুই বছর পূর্তি হলো— এটাকে কীভাবে মুল্যায়ন করবেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কতটা করলাম আর কতটা করতে পারলাম না সেটা মূল্যায়ন তো আপনারা করবেন। আমার কাজ হচ্ছে কাজ করা দেশ ও দেশের প্রতিটা নাগরিকের জন্য।

    তিনি বলেন, আমাদের আমদানি কমে গেছে, যদি আমদানি বেশি থাকতো তাহলে আমাদের ডিউটি বাড়তো। আমাদের আয়করের হার ভালো আছে। তুলনামূলক আমরা অনেক দেশের থেকে ভালো আছি।

    পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারে যদি বিদেশি বিনিয়োগ থাকতো তাহলে তারা যেকোনো মুহূর্তে পুঁজি তুলে নিতে পারতো। যেটা আমরা ১৯৯৭ সালে দেখেছি। সাউথ এশিয়ার সাথে যেটা হলো। সে সময় বিদেশিদের টাকা তারা তুলে নিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বসে গেছে।

    আমাদের এ ধরনের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ, আমাদের ফিসক্যাল পলিসি ও মনিটরি পলিসি, বাজেট, পঞ্চবার্ষিক প্ল্যান সঠিক আছে। সেজন্য আমরা ভালো আছি।

  • ভাল নেই বই বিক্রেতারা

    ভাল নেই বই বিক্রেতারা

    রোয়ার হোসেন: সদর উপজেলার কদমতলা বাজারসহ আবাদের হাট বাজার, বাঁশদহা বাজার, ঝাউডাঙ্গা বাজার এলাকার বই বিক্রেতারা ভাল নেই। বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় বাংলাদেশেও স্কুল, কলেজগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আর এ বন্ধ থাকায় বই বিক্রেতাদের বই ব্যবসায় নেমেছে ধস। দীর্ঘ আট থেকে দশ মাস স্কুল কলেজ মাদরাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় নেই কোন বই বিক্রয়, নেই খাতাকলমসহ স্টেশনারী দ্রব্যাদি বিক্রয়। দোকান ঘর খোলা আর বন্ধ করা ছাড়া নেই কোন তাদের কাজ। কদমতলা বাজারের ন্যাশনাল বুক ডিপোর স্বত্বাধীকারী আব্দুল আলিম বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল কলেজগুলো বন্ধ থাকায় দোকানে নেই কোন বেচা-বিক্রী, বাড়ি থেকে আসা ও যাওয়া ছাড়া নেই কোন গতি। তাই খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি। এদিকে হতাশার প্রহর গুনে দিন যাপন করছেন বই বিক্রেতারা। অপেক্ষায় আছে কবে স্কুল কলেজগুলো আগের ন্যায় চলবে এই আশায়। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। আবাদের হাট বাজারের জ্ঞান তীর্থ লাইব্রেরীর জ্ঞান তীর্থ রায় প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান তার হতাশার কথা। তিনিও একই কথা জানান, দোকানে আসা-যাওয়া ছাড়া নেই কোন কাজ, নেই কোন বিক্রী ও। তিনি আরও জানান, ব্র্যাক থেকে লোন নিয়েছেন তিনি, লোনের কিস্তী পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। কখনও কখনও অন্যের কাছ থেকে ধার/ঋন নিয়ে কিস্তি পরিশোদ করতে হয়। কখনও কিস্তি দিতে বিলম্ব হওয়ায় কটু কথা শুনতে হয় তাকে। বাঁশদহা বাজারের বই ব্যবসায়ী নুর আলী মাষ্টার বলেন, দোকান খুলে কি হবে নাই কোন বিক্রী, তাই বাড়িতে অলস সময় পার করছি। ব্যবসায় নাজুক অবস্থা। এদিকে বই ব্যবসা না থাকায় তাদের সংসারেও টানাপোড়েন অবস্থা, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বই ব্যবসা না থাকায় সংসার এবং ব্যবসায়িক ভাবনা তাদের দুঃচিন্তায় পরিণত হয়েছে। মানসিক চিন্তা আর হতাশা বিরাজ করছে তাদের মাঝে। ব্যবসা এখনও সচল না হওয়ায় হতাশা অপেক্ষার পালা বেড়েই চলেছে। তবে তাদের কথা ভাবে না কেউ, তবে ভাবতে হবে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে, শোনাতে হবে শান্তনার বানী, অপেক্ষার পালা বদল হবেই।

  • এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের কদমতলা উপ-শাখা উদ্বোধন

    এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের কদমতলা উপ-শাখা উদ্বোধন

    কদমতলা প্রতিনিধি: এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাতক্ষীরা কদমতলা উপ-শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১১টায় কদমতলা বাজারস্থ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাবিব হাসনাত। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকের এডিশনাল এমডি ও ডিএডিসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
    এসময় উপস্থিত ছিলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক সাতক্ষীরার শাখা ব্যবস্থাপক শাহীন মোখলেছুর রহমান, কদমতলা উপ-শাখা ইনচার্জ সুমন রেজা, প্রধান শাখার কর্মকর্তা হাবিব মোহাম্মদ, মিজবাউদ্দীন, অফিসার এটিএম গোলাম কিবরিয়া, আবিদ আহসান, উপ-শাখার অফিসার নাজমুল হোসেন, আক্তার হোসেনসহ ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাসহ আমন্ত্রিত অতিথি ও গ্রাহকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন জেলা শাখার কর্মকর্তারা।
    ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, মানুষের সেবা দিতে আমরা সদা প্রস্তুত। গ্রাহকরা যাতে কোন হয়রানি না হয় সেটাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের দোড় গোড়ায় সেবা পৌছে দিতে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠে কদমতলা উপ-শাখার যাত্রা শুরু হলো।

  • ৪ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রফতানি আয়

    ৪ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রফতানি আয়

    অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে তলানিতে নেমে যাওয়া রফতানি আয় এখন প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়াচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ।

    সোমবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ হিসাবেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ।

  • আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

    আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ


    ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থুলতা ও অপুষ্টিজনিত জটিলতার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৫ সাল থেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ^ খাদ্য দিবস পালন করে আসছে। এই বছর বিশ^ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘এৎড়,ি ঘড়ঁৎরংয, ঝঁংঃধরহ. ঞড়মবঃযবৎ’। আমাদের সরকার এই বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে, “সবাইকে নিয়ে একসাথে বিকশিত হোন, শরীরের যতড়ব নিন, সুস্থ থাকুন, আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ”।
    একই সাথে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হয়েছে “কৃষি ও গ্রামীণ উনড়বয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে নৃ-গোষ্ঠীর নারীসহ গ্রামীণ নারীর ভূমিকা ও অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ”। এছাড়া প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর বিশ^জুড়ে আন্তজার্তিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস পালিত হয়। সেই সাথে প্রতি বছরের এই মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও)-র ’খাদ্য নিরাপত্তা কমিটি’ এবং ‘খাদ্য বিষয়ক সিভিল সোসাইটি ম্যাকানিজম’-এর ক্সবশি^ক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    তাই বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য সাং¯‥ৃতিভেদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাংলাদেশে খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পক্ষে জনমত, আগ্রহ ক্সতরি এবং আইনপ্রণেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক পর্যায়ে সংবেদনশীলতা ক্সতরির জন্য অক্টোবর মাসজুড়ে দেশব্যাপী খাদ্য অধিকার প্রচারাভিযান করছে।
    খাদ্য অধিকার প্রতিটি মানুষের ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পুষ্টি বিষয়ক অধিকার রক্ষা করে। খাদ্য অধিকার একজন মানুষের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, নাগরিকের খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ২৫ অনুচ্ছেদে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১১তম অনুচ্ছেদে খাদ্য অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য দেশের সংবিধানে খাদ্য অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে।
    সাংবিধানিকভাবে খাদ্যের অধিকার অর্জন এবং জনগণের পুষ্টিমান উনড়বয়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদস্য এবং ভিয়েনা ঘোষণা ১৯৯৩, ইকোসোক-সহ বিভিনড়ব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে সমর্থন প্রদান করেছে। কিন্তু, এখনো বাংলাদেশের সংবিধান ১৫(ক) অনুচ্ছেদে খাদ্যকে জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র। যার কারণে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কোন জায়গায় আবেদন-নিবেদন করার বা দাবি করার মতো কোনো সুযোগ নেই। যদিও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি চাহিদা পূরণের জন্য বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার কৃষিঋণ, কর্মসৃজন কর্মসূচি, দু:স্থভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ও নীতিমালা গ্রহণ করেছে, কিন্তু খাদ্যের অভাবে অমানবিক ও অসহায় অবস্থায় উপনীত হবার পরও কাউকে দায়বদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক সুযোগ নেই, যতদিন না খাদ্যকে অধিকার হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ইক্যুয়েডর, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, প্যারাগুয়ে, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, উগান্ডা, নেপাল ও ভেনেজুয়েলা ইত্যাদি দেশে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
    জাতিসংঘে গৃহীত টেকসই উনড়বয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো, ক্ষুধার সমাপ্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অধিকতর পুষ্টি অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রবর্তন। এছাড়া লক্ষ্য ৩-এর আওতায় সবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন, লক্ষ্য ৬-এর আওতায় পানীয় জলের সরবরাহ, লক্ষ্য ১০-এ আভ্যন্তরীণ অসমতা দূরীকরণ,
    লক্ষ্য ১২-তে টেকসই উৎপাদন ও ভোগ, লক্ষ্য ১৫-তে স্থলজ প্রতিবেশ ও বন সংরক্ষণ এবং লক্ষ্য ১৬-তে জবাবদিহিতা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এ দলিলে ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের ক্ষুধা নির্মূল করা, অপুষ্টি দূর করা, প্রাকৃতিক সম্পদসহ সব সম্পদে ক্ষুদ্র কৃষকদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার দেয়া, কর্মসংস্থান ও আয়ের ক্ষেত্রে ক্সবষম্য দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
    কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়। তারপরও বৈশিক বিবেচনায় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক-২০১৯ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩ তম। যা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে। এই সূচক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষক ও ভবিষ্যৎ খাদ্য সঙ্কটের চিত্রও তুলে ধরে। ২০১৯ এর সূচক অনুযায়ী, পুষ্টিকর খাদ্যের μয়ক্ষমতা, প্রাপ্যতা ও গুণমানের সমন্বয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৫৩.২। সামগ্রিকভাবে তা সন্তোষজনক হলেও খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য মানে অনেকখানি পিছিয়ে (৩০.৬ পয়েন্ট)১।
    বাংলাদেশ যখন এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পিছনে ছুটছে, তখন এই দেশেরই খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অধিকার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি) এবং বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ‘খাদ্যের সহজলভ্যতা ও μয়ক্ষমতা’ বিষয়ক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জনের পুষ্টিকর খাবারের μয়ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র সঠিক পুষ্টির অভাবে দেশের ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ হয় না২। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মোট খাদ্যেও প্রায় ৩০ ভাগ বিভিনড়বভাবে নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার এবং প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দুর্গম এলাকার দলিত, আদিবাসী, বিভিনড়ব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শহরের নিমড়বআয়ের মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেশি৩। একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রথম শর্ত হলো, খাদ্যের জোগানের সাথে সে দেশের জনসাধারণের μয়ক্ষমতার সমন্বয় থাকা। বাংলাদেশ দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
    গবেষণা বলছে, করোনার বিপর্যয় ঠেকাতে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে লকডাউন থ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দরিদ্র-অতি দরিদ্র মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এই সময়ে দেশে নতুন করে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার (২২.৯%) মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে সবমিলিয়ে ৭ কোটি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্য অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৪। এশীয় উনড়বয়ন ব্যাংক বলেছিলো, করোনা লকডাউনের লম্বা প্রভাবে চলতি অর্থবছরে ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হারাবে বাংলাদেশ এবং চাকরি হারাবে অন্তত: ৯ লাখ মানুষ৫।
    দক্ষিণ এশিয়ার উনড়বয়নশীল এই দেশটির অর্থ‣নতিক ভিত্তি মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশের ৮৮ শতাংশ শ্রমশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিখাতে। বাংলাদেশের জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে৬। তাই করোনাভাইরাসের সংμমণ রোধে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণার নামে কার্যত লকডাউন করে দেওয়ার ফলে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষগুলোবিআইডিএস-এর ধারণা করেছে, করোনার প্রভাবে মার্চের শেষদিক থেকে আগস্ট পর্যন্ত, টানা লকডাউনে বছরের দ্বিতীয় ক্সত্রমাসিকে দেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। শহুরে শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ, গ্রামীণ শ্রমিকের কমেছে ১০ শতাংশ৭ সেই সাথে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের পরিবারগুলোর আয় ২০.২৪ শতাংশ কমেছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে বলতে গেলে, কৃষির ক্ষতি এক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। করোনাকালীন কৃষিখাত ও সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে ব্র্যাকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পরের দেড় মাসে কৃষি পণ্যের ক্ষতি, কম মূল্য; ইত্যাদির কারণে কৃষকের গড় আর্থিক লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা। সারা দেশের বিবেচনায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা৮।
    পিআিরসি ও ব্আিই্জিডির হিসাব মতে, করোনাকালীন সময়ে দেশে শহরাঞ্চলে মানুষের ৪৭ শতাংশ ও গ্রামের মানুষের ৩২ শতাংশ খাবারের পরিমাণ কমেছে। সরকারি তথ্য মোতাবেকই দেশের প্রায় পে․নে ৪ কোটি মানুষ (দরিদ্র ২১.৮ শতাংশ) পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। আর প্রায় ২ কোটির (অতি দরিদ্র ১১.৩ শতাংশ) কাছাকাছি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আয় করতে পারতেন না। তারমানে, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট আগ থেকেই ছিলো৯। করোনাভাইরাস দুর্যোগ আমাদের এই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিকে আরও ঘনীভূত এবং দীর্ঘমেয়াদী করবে। দুই হাজার ৬৭৫ জনের ওপর পরিচালিত ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, জরিপকালীন ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২৯ ভাগের ঘরে ছিল এক থেকে তিন দিনের খাবার-এর তথ্য সেই ইঙ্গিতই বহন করছে।
    করোনাকালীন লকডাউনে এই খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপের মধ্যে ছিল ক্ষতিগ্রস্থদের ২,৫০০ টাকার নগদ অর্থ প্রদান, ১০ কেজি চাল প্রদান, অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর ত্রাণ প্রদান, খাতভিত্তিক প্রণোদনা ইত্যাদি। এইসকল উদ্যোগ লকডাউন চলাকালীন সময়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং কার্যকর ভূমিকা পালনা করেছে। তবে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অভাব, কার্যকারীতা ও সমন্বয়হীনতার ঘাটতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি; ইত্যাদি কারণে এই সকল উদ্যোগে বিশৃঙ্খলা এবং সমালোচনাও ক্সতরি করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৮২ শতাংশ এলাকায় সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে রাজ‣নতিক বিবেচনাকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে এবং ৪২ শতাংশ এলাকায় ত্রাণ বিতরণে কোন তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬০ শতাংশ এলাকায় বিচ্ছিনড়বভাবে ত্রাণ বিতরণের কারণে, ত্রাণ পাওয়ার প্রকৃত উপযুক্ত ব্যক্তিরা ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া, গবেষণা অন্তর্ভুক্ত এলাকার শতভাগ ক্ষেত্রেই অতি দরিদ্রদের নগদ সহায়তা (২,৫০০ টাকা) প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। ত্রাণ বিতরণে ২১৮টি দুর্নীতির ঘটনায় মোট ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কেজি ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়েছে১০। পার্বত্য এলাকায় করোনাকালীন ত্রাণ বিতরণে বড় ধরণের অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। কম প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক পরিবার ৩-৪ বার সরকারি খাদ্য সহায়তা পেলেও, বেশি প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে অনেক পরিবার একবারও পাননি।
    করোনার মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও দীর্ঘমেয়াদী চার দফা বন্যায় আবারও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষিখাত, যা পুরো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ৪৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আম্ফানের কারণে সারা দেশের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির বিভিনড়ব ফসল নষ্ট হয়। আম্ফানের পরপরই দেশের ৩৭টি জেলায় তিন দফার বন্যায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রত্যন্ত অঞ্চল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কৃষিতেই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার কৃষক। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ এক লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা১১।
    বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে, সরকারি ত্রাণের এই হিসেব অনুযায়ী এই ৫০ লাখ বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৩ কেজি চাল। যেখানে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে আড়াই কেজি। অন্যদিকে, মাথাপিছু নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৮ টাকা মাত্র, বিতরণকৃত অর্থের হিসেব ধরলে দাঁড়ায় ৫.৮৯ টাকা১২। শুধু তাই নয়, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে প্রবল খাদ্য সঙ্কট এলাকার চেয়ে তুলনামূলক কম সঙ্কটাপনড়ব এলাকায় বেশি ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। যে কারণে এই সময়ে প্রত্যক্ষভাবেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে।
    দেশের হত-দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য সরকার প্রায় ১৩০টির মতো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করলেও করোনা মহামারীর চলকালীন সময়ে দেখা যাচ্ছে সকল মানুষ খাদ্য ও জীবিকা সুরক্ষার জন্য এই জাতীয় কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। এছাড়াও করোনাকালীন সৃষ্ট নব দরিদ্র, নিঃস্ব মধ্যবিত্ত, বিদেশফেরত শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেকারদের জন্য এসএসএসপি’তে কোন নির্দেশনা বা কর্মসূচিও নেই। সেই সাথে, রাষ্ট্র জনগণের খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়টিকে মে․লিক চাহিদা হিসেবে স্বীকার করলেও ‘অধিকার’ হিসেবে গণ্য না করার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সাধারণত দান বা সেবামূলক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেজন্য সমগ্র বিষয়টিকে ‘অধিকারভিত্তিক’ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেখা প্রয়োজন। অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের স্বীকৃতি থাকলে বাধ্যবাধকতা ক্সতরি হয় বিধায় ‘খাদ্য অধিকার’র প্রয়োজন রয়েছে।
    এই প্রেক্ষাপটে আমরা জনগণের খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি এবং সকল মানুষের জন্য ১. খাদ্য প্রাপ্যতা (Availability), ২. স্থিতিশীলতা (Stability), ৩. অভিগম্যতা (Accessibility), ৪. স্থায়িত্বশীলতা (Sustainability) ও ৫. পর্যাপ্ততা (Adequacy) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন’ প্রবর্তনের নিমিত্তে সকলের সμিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য, পুষ্টি এবং জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ২০১৫ সালের ৩০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
    আমরা মনে করি, খাদ্য প্রত্যেক মানুষের প্রাথমিক ও প্রধানতম অধিকার। খাদ্য অধিকার পূরণ না হলে মানুষের অস্তিত্বই বিপন্নব হয়ে পড়ে। তাই জনগণের খাদ্য প্রাপ্তিকে রাষ্ট্র দান বা সেবামূলক কর্মসূচি পরিবর্তে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিবে এবং এই সকল নাগরিকের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার প্রণয়ন করা দাবি জানাই।
    খাদ্য অধিকার নেটওয়ার্ক-খানির সৌজন্যে