Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202
সুন্দরবন Archives - Page 3 of 5 - Daily Dakshinermashal

Category: সুন্দরবন

  • সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি

    সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি

     দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ১-২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
    বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চসহ  অন্যন্য দিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার আকাশ মেঘলা ও বাসাতের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
    এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
    বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    সভায় বলা হয়, জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার, শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ওষুধের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়।
    সভায় বলা হয়, ইতোমধ্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্তণ কক্ষের ফোন নম্বর ০৪৭১৬৩২৮১।
    সভায় জানানো হয়, জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩২শ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১১৬ টন চাল, ১ লক্ষ ৯২হাজার টাকা, ১১৭ বান টিন, গৃণ নির্মাণে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুদ আছে।
    সভায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশংকা করে বলা হয়, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর সর্তক সংকেত আসলে উপকূলীয় মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে হবে। যতদূর সম্ভব দ্রুততার সাথে মাঠের ফসল ঘরে তুলতে হবে। সংকেত প্রচারে ইমামদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়ার ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সাতক্ষীরাজেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় একটি করে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।

    এছাড়াও ৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব সরকাবি কর্মকতা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৩ হাজার ৬৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।
    জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের সাইক্লোন সেল্টারগুলো প্রস্তুুত রাখার পাশাপাশি সেগুলোর চাবি দায়িত্বশীল লোকদের কাছে রাখতে হবে। যাতে সময় মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয় এবং মানুষ সঠিকভাবে সেখানে উঠতে পারে। এছাড়া প্রত্যেক মসজিদের মাইকে সতর্কতা বার্তা প্রচারের জন্য ইমাম ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
    এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার পায়ে হেটে উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ এলাকা মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, গাবুরা, রমজাননগর ইউনিয়নের মানুষকে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
    সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে সাতক্ষীরায় ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
    দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা এলাকার আবুল হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে সাতক্ষীরা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে। এই আইলার ক্ষত এখন কাটিয়ে উঠতে পারেন এই এলাকার মানুষ। রাস্তাঘাটের বেহলা দশা, বেঁড়িবাধ ঝুঁকির মধ্যে আকাশে মেঘ দেখলে আমাদের ঘুম হামার হয়ে যায়। আবার শুনতে পাচ্ছি ঘুর্ণিঝড় ‘ফেনী’ আসছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
    বুড়িগোলিনী স্টেশন কর্মকর্তা কবীর উদ্দিন বলেন, বনপ্রহীদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি নিয়ে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। বনের ভেতরে অবস্থান করা নৌযানগুলোকে লোকালয়ে আনার জন্য বনপ্রহরীদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।


    সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার ভাটার তুলনায় পানি দুই ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ১১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলো মেরামতের জন্য জিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
    শ্যানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুুতি আছে। আমাদের ১৪৩টি সিপিপি টিমের ২ হাজার ১০০স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ‘নবযাত্রা’ প্রকল্পের আওতায় আরও ১হজার ১০০জন কর্মী কাজ করছেন। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যদের প্রস্তুত থাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্র ও সাইক্লোন সেন্টারগুলো প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ উদ্ধার কালে সমস্যা না হয় সেই বিষয় মাথায় রেখে ইউপি মেম্বারের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ সদস্যরে একটি টিম করা হয়েছে।
    তিনি আরও বলেন, শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২টি মেডিকেল টিম ও উপজেলায় একটি একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপজেলার সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ১৫৫টি দ্বিতল সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে আমরা নির্দেশনা দেওয়া মাত্র তারা যেন সাইক্লোস সেল্টারে আসে। যারা আসবে না তাদের জোর করে সাইক্লোন শেল্টারে আনা হবে।


    জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম না করা পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দুটি জরুরী সভা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জান মালের ক্ষতি কমাতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং সাথে সাথে উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষ গুলোকে নিরাপদে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। এছাড়ার সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ফোন নাম্বার ০৪৭১-৬৩২৮১।
    প্রসঙ্গত: ২০০৯ সালের ২৫ মে এই দিনে ১৫ ফুট উচ্চতা বেগের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন উপকুলীয় উপকুলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায়। প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় আইলার আঘাতে তছনছ হয়ে যায় দক্ষিণ-উপকুলীয় সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের হাহাকার কমেনি। এর পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলিও ঝুকির মধ্যে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি নামক স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে জনবসতি গ্রাস করছে।
    এছাড়া বুড়িগোয়ালিনী, হরিনগরসহ প্রায় একশ’ কি. মি. বেড়ীবাঁধ হুমকির মুখে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কামালকাটি এলাকায় বেড়ীবাঁধ সংস্কারের কাজ হলে অন্যান্য বাঁধ গুলি কিছুদিন পর বেঙে যায়। আইলার পর থেকে খাবার পানির তীব্র সংকট ভূগছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। গাবুরা ইউনিয়নের ১৫ টি গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রামের মানুষদের খাবার পানির একমাত্র উৎস ‘পুকুর’। অনেকে মহিলাই ২/৩ কিঃমিঃ পাঁয়ে হেটে এক কলস পানি আনেন। নোংরা আবর্জনায় পরিপুর্ন হওয়ায়,এসব পানি পান করে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। কিছুটা স্বচ্ছল লোকেরা বিশ টাকা দরে পানির ড্রাম পাশের উপজেলা কয়রা থেকে কিনে আনছেন।

  • সাংবাদিকতা পেশাকে আইন ও রীতিনীতির মধ্যে থাকতে হবে- মমতাজউদ্দিন আহমেদ

    সাংবাদিকতা পেশাকে আইন ও রীতিনীতির মধ্যে থাকতে হবে- মমতাজউদ্দিন আহমেদ


    নিজস্ব প্রতিনিধি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন সাংবাদিকতা পেশাকে একটি রীতিনীতির মধ্যে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন অপসাংবাদিকতা পরিহার করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চেতনা ধারন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন এসব কারণে দেশের সাংবাদিকদের নিবন্ধনভূক্ত করার চেষ্টা চলছে । তাদেরকে আইন ও আচরণের শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসা হলে সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধিত হবে।
    প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান রোববার সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সাংবাদিকরা স্বাধীনতা ভোগ করছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন এর অর্থ এই নয় যে যেকোনো মিথ্যা বিষয়কে সত্য হিসাবে তুলে ধরা। আমাদের ধারন ও লালন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সাংবাদিকের স্বাধীনতা আইন ও সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মন্তব্য করে তিনি বলেন দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন রয়েছে নানা কারণে । কারণ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতার নামে এক শ্রেণির মানুষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতি ও সমাজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতকগুলি ধারা সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ নয় বরং তা ক্ষতিকর এই বিবেচনায় তা সংশোধন করা হবে। তিনি সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতা পরিহারের আহবান জানিয়ে আরও বলেন আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা অনেক বেশি সর্বনাশ ডেকে আনছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো হু হু করে অনলাইন সংবাদপত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কেউ একটি পত্রিকা খুলে যা ইচ্ছা তাই লিখে ব্লাকমেইলিং করছে। দেশের সব অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন এমনটি হলে লেখাপড়া না জেনে যে কেউ একটি পত্রিকা খুলে সমাজের উপকারের বদলে ক্ষতি করতে পারবে না ।
    সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে ‘সাংবাদিকতায় আইন ও আচরণ বিধি’ বিষয়ক দিনব্যাপী মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন সাতক্ষীরার সাংবাদিকরা সরকারের সব বিষয়কে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরে সমাজের কল্যাণ কাজ করছেন। সাতক্ষীরা কিছুদিন ধরে অন্ধকার সময় পার করেছে , আর এখন পার করছে আলোকিত সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও মুক্ত চিন্তা ধারন করতে হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতার নজির তুলে ধরতে হবে। তারা যেমন গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবেন তেমনি তাদেরও থাকতে হবে জবাবদিহিতা। তিনি বলেন দেশের সবাই যেমন মোনাজাতউদ্দিন নন, তেমনি সবাই আরজ আলি মাতুব্বরও নন। সাংবাদিকরা যেমন তাদের পেশার মাধ্যমে সমাজের বিচার করেন তেমনি সমাজও সাংবাদিকদেরও বিচার করে জানিয়ে তিনি বলেন তারা কখনও প্রশ্নের বাইরে নন। আমরা সবাই সব সময় বিচারের কাঠগড়ায় রয়েছি এমন মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক বলেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে অনেক দুর এগিয়ে দেয়। আর নেতিবাচক কাজ আমাদের সমাজকে কেবলই পিছিয়ে দিতে পারে। জেলা প্রশাসক বলেন সাতক্ষীরার সাংবাদিকরাও যেমন আলোচিত তেমনি তাদের সমালোচনা গ্রহনেরও মানসিকতা থাকতে হবে।
    মত বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রেস কাউন্সিল সচিব শাহ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. ওমর ফারুক, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুতমিস, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম মিনি, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান , ভোরের কাগজের ড. দিলীপ কুমার দেব, দৈনিক দৃষ্টিপাতের আবু তালেব মোল্লা, একাত্তর টিভির বরুন ব্যানার্জিসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
    ঢাকার সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার এথিক্স মেনে চলার আহবান জানিয়ে বলেন হলুদ সাংবাদিকতা থেকে দুরে থাকতে হবে। পিআইবি সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে আর প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের আইন ও আচরনবিধি নিয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তারা বলেন সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। তাদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা অবসর ভাতা পাবেন , তাদের জন্য পেনশন স্কীম চালু হবে এবং অন্যান্য সুবিধাও পাবেন বলে উল্লেখ করেন। তাদের জন্য আবাসন, বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ চলছে। গনমাধ্যম নীতিমালা প্রনয়ণের কাজ চলছে জানিয়ে তারা আরও বলেন ডিজিটাল আইনের ৬৩ টি ধারার মধ্যে ৮ টি ধারা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য অনুকূল নয় জানিয়ে তারা বলেন তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । নানা সময়ে ভুয়া খবর সমাজে জায়গা করে নিচ্ছে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন বস্তুনিষ্ঠতার সাথে সাংবাদিকতা করতে হবে। তাতে কোনো বাধা এলেও রাষ্ট্র ও সমাজ সেই সাংবাদিকরে পক্ষেই থাকে। তারা বলেন রাষ্ট্রের চার স্তম্ভ । এক পার্লামেন্ট দুই বিচার বিভাগ, তিন নির্বাহী বিভাগ ও চার গনমাধ্যম। এর কোনো একটি দুর্বল হলে অথবা অনুপস্থিত থাকলে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। সেই সমাজ আলোকিত হতে পারে না। এজন্য চতুর্থ স্তম্ভ গসমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠতার ভিত্তিতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। মত বিনিময় সভায় সাতক্ষীরার সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি তুলে ধরেন।

  • বনরক্ষাকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সুন্দরবন উজাড়!

     নিজস্ব প্রতিনিধি: শুনতে অবাক লাগলেও বনরক্ষার দায়িত্বে থাকা পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন অফিসার (এসও) কবির উদ্দিনের নেতৃত্বে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। তার প্রতক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বিক্রি হচ্ছে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ গরান কাঠ। আবার তিনিই টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব নিয়ে ট্রলারের মাধ্যমে টেনে জেলেদের ইর্ঞ্জিনচালিত নৌকা পৌছে দিচ্ছেন গহীন বনে ও অভয়ারণ্য এলাকায়। কিন্তু বিধি অনুযায়ী সুন্দরবনের গহীনে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশ নিষেধ।
    এছাড়াও এসও কবিরের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ মাছের পোনা ধরতে সুযোগ করে দেওয়া, জেলেদের বন আইনে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। এসব অভিযোগ ভুক্তোভোগীসহ খোদ সুন্দরবনে যাতায়াতকারী জেলে বাউয়ালীদের। যারা কিনা গোপন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত টিমের কাছে কবীর উদ্দীনের যাবতীয় অপকর্মের সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত। বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন অফিসার (এসও) কবির উদ্দিনের এসব অপকর্মের তথ্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।
    তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনে যোগদান করেন কবির উদ্দিন। যোগদানের পর থেকে তিনি গোটা বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনের নিয়ন্ত্রণভার নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের উপর একক আধিপত্য গড়ে তোলেন।
    পারশে মাছের পোনা শিকার ধরার বন্ধ থাকলেও তিনি যোগদানের পর থেকে আবারও পারশে মাছের পোনার চালান নিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বনে ঢোকার সুযোগ পেয়ে যায়। এছাড়া সিডর ও আইলার পর থেকে গরানের অকশন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কবীর উদ্দীন যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে গরানের অকশন এর প্রচলন ঘটিয়েছেন মূলত তার গরান কাঠ পাচার প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে। যে কারণে নওয়াবেঁকী বাজারে বিভিন্ন সময়ে গরান কাঠ বিক্রি নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও প্রতিবারই কবীর উদ্দীন ঐসব কাঠ অকশন এর বলে দাবি করে চোরাই ব্যবসায়ীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন।
    অভিযোগ রয়েছে, চলতি বছরের গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শ্যমানগরের হায়বাদপুর মোড়ে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীসহ কয়েকজন যুবক গরান কাঠের বিশলাকারের একটি চালানসহ ইঞ্চিন চালিত নসিমন আটক করে। এসময় আটককৃত চালানের মালিক ই¯্রাফিল হোসেন শুরুতে যাবতীয় গরান কাঠ আব্দুল আজিজের জানিয়ে মুটোফোনে আব্দুল আজিজকে ফোন ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ই¯্রাফিল তার ব্যবহৃত মুটোফোন বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন অফিসার কবীর উদ্দীনকে ধরিয়ে দিলে তিনি মুটোফোনের এ পাশে থাকা ব্যক্তিদের জানায়, ‘অল্প কিছু গরান কাঠ হয়তা গোলপাতার নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছিল, তাই তাদেরকে ঝামেলা না করে ছেড়ে দিলে আব্দুল আজিজ পরের দিন সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবে।’
    এসময় সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মী মুটোফোনে কবীর উদ্দীনের কাছে জানতে চান, ‘গোলপাতার নৌকা আনলোড হচ্ছে ঝাঁপালী ও নওয়াবেঁকী, কিন্তু রমজাননগর থেকে সদ্য কাটা গরানের খুঁটি আসার নেপথ্য কারণ কি?’ এসময় চোরাকাঠ শিকারীদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেদককে কবীর উদ্দীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘হয়তো বা তারা কিছু গরান কাঠ চুরি করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং ঐ পথে পাচার হচ্ছে’। তবে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে কার্যক্রম কোন উদোগ নেয়ার বিষয়ে তিনি নুন্যতম আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
    জানা গেছে ওই ঘটনার পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারির রাত নয়টার দিকে কাশিমাড়ির গোবিন্দপুর এলাকায় প্রায় একই ধরনের একটি গরান কাঠের চালান আটক করলেও স্থানীয়রা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এদিনও কবীর উদ্দীনকে মুটোফোনে যোগাযোগ করে কোন প্রতিকার না মেলার অভিযোগ স্থানীয় ঐসব তরুণদের। তাদের দাবি মূলত অর্থের বিনিময়ে কবীর উদ্দীন সুন্দরবন উজাড় করার ‘প্রজেক্ট’ হাতে নিয়ে বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনে যোগদান করেছিলেন।
    এছাড়া সুন্দরবনের গোলপাতা বোঝাই নৌকা ফিরে আসার সময় গোলপাতা পড়ে যাওয়ার শংকায় নৌকার দু’পাশে শত-শত মোটা গরানের খুঁটি ব্যবহারের সুযোগ দানের মাধ্যমে কবির উদ্দিন সুন্দরবন থেকে গরান কাঠ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলেও অনেকের অভিযোগ।
    এসব অভিযোগকারীরা জানান, নওয়াবেঁকী আব্দুল আজিজসহ কয়েকজনের গোলপাতার নৌকা আনলোড হওয়ার সময় সেখানে সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হয়ে গোলপাতার নিচে গরান কাঠ দেখতে পান। এছাড়া নৌকার দুপাশে আরও শত-শত গরানের খুটি দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কবীর উদ্দীনের কাঠে মুটোফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘ভাই, পাতার চাপ রাখার জন্য আমরা রাজস্ব নিয়ে কিছু কিছু গরান কাঠ দিতে বাধ্য হই।’ তবে গরান কাঠ কর্তন নিষিদ্ধ জানাতেই ‘পারলে উচ্চ মহলের কাছে নালিশ করেন’-জানিয়ে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেন।
    আবুল কাশেম ও জবেদ আলী, আব্দুল হামিদসহ অনেকের অভিযোগ কবীর উদ্দীনের প্রত্যক্ষ মদদে গোলপাতা মৌসুমে পাচার হয়ে আসা হাজার হাজার মণ গরান কাঠ এখন নওয়াবেঁকী বাজার ও ঝাপাাঁলীর বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে কবীর উদ্দীনের ষ্পষ্ট জবাব, সবার অকশনের স্লিপ রয়েছে।
    তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান গত জানুয়ারি মাসে কবীর উদ্দীনের তৎপরতায় একটি অকশন হয়। কিন্তু ঐ একটি অকশন এর স্লিপকে পুঁজি করে নওয়াবেঁকী থেকে ঝাঁপালী গোটা এলাকার সকল কাঠ পাচার চক্রের সদস্যরা কবীর উদ্দীনের ছত্রছায়ায় দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
    স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ এসব আড়ৎদাররা প্রশাসনের অভিযানের ভয়ে যৎসামান্য গরান কাঠ সামনে প্রদর্শনীর জন্য রাখলেও তাদের অজ্ঞাত গুদামে হাজার হাজার মন গরান কাঠ পাওয়া যাবে।
    পশ্চিম সুন্দরবনে একক আধিপাত্য বিস্তারকারী কবির উদ্দিন সম্প্রতি সুন্দরবনের দোবেকী টহল ফাড়ির ছোট চোরা খাল এবং বড় চোরা খালের ধার থেকে বড়-বড় ৪০টির অধিক কেওড়া গাছ কেটে নিজে ঠিকাদার হয়ে বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন, কলাগাছি টহলফাড়ি এবং কাঠেরসর টহল ফাড়ির সংস্কার কাজ করেছেন। কিন্তু এ কাজের জন্য ১১ লক্ষাধিক টাকার টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে সুন্দরবন থেকে কেটে নিয়ে আসা এসব কেওড়া গাছের অর্ধেক এসও কবির উদ্দিন বিক্রি করেছেন নোয়াবেকির আশরাফ এবং রফিকের ‘স’ মিলে। এসব অভিযোগের ব্যপারে এসও কবির উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বিকার করেন।
    তবে, পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনির দুর্নীতিবাজ এ ষ্টেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন শত-শত অভিযোগ প্রায়ই স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয় কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।
    স্থানীয় সুধীমহলের দাবি সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে অনতিবিলম্বে এসও কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে অচিরেই সুন্দরবনের মহামূল্যবান অনেক সম্পত্তি হারিয়ে যাবে।

    নরক্ষী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সুন্দরবন উজাড়! (পর্ব-১) নিজস্ব প্রতিনিধি: শুনতে অবাক লাগলেও বনরক্ষার দায়িত্বে থাকা পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন অফিসার (এসও) কবির উদ্দিনের নেতৃত্বে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। তার প্রতক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বিক্রি হচ্ছে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ গরান কাঠ। আবার তিনিই টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব নিয়ে ট্রলারের মাধ্যমে টেনে জেলেদের ইর্ঞ্জিনচালিত নৌকা পৌছে দিচ্ছেন গহীন বনে ও অভয়ারণ্য এলাকায়। কিন্তু বিধি অনুযায়ী সুন্দরবনের গহীনে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশ নিষেধ।
    এছাড়াও এসও কবিরের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ মাছের পোনা ধরতে সুযোগ করে দেওয়া, জেলেদের বন আইনে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। এসব অভিযোগ ভুক্তোভোগীসহ খোদ সুন্দরবনে যাতায়াতকারী জেলে বাউয়ালীদের। যারা কিনা গোপন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত টিমের কাছে কবীর উদ্দীনের যাবতীয় অপকর্মের সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত। বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন অফিসার (এসও) কবির উদ্দিনের এসব অপকর্মের তথ্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।
    তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনে যোগদান করেন কবির উদ্দিন। যোগদানের পর থেকে তিনি গোটা বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনের নিয়ন্ত্রণভার নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের উপর একক আধিপত্য গড়ে তোলেন।
    পারশে মাছের পোনা শিকার ধরার বন্ধ থাকলেও তিনি যোগদানের পর থেকে আবারও পারশে মাছের পোনার চালান নিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বনে ঢোকার সুযোগ পেয়ে যায়। এছাড়া সিডর ও আইলার পর থেকে গরানের অকশন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কবীর উদ্দীন যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে গরানের অকশন এর প্রচলন ঘটিয়েছেন মূলত তার গরান কাঠ পাচার প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে। যে কারণে নওয়াবেঁকী বাজারে বিভিন্ন সময়ে গরান কাঠ বিক্রি নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও প্রতিবারই কবীর উদ্দীন ঐসব কাঠ অকশন এর বলে দাবি করে চোরাই ব্যবসায়ীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন।
    অভিযোগ রয়েছে, চলতি বছরের গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শ্যমানগরের হায়বাদপুর মোড়ে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীসহ কয়েকজন যুবক গরান কাঠের বিশলাকারের একটি চালানসহ ইঞ্চিন চালিত নসিমন আটক করে। এসময় আটককৃত চালানের মালিক ই¯্রাফিল হোসেন শুরুতে যাবতীয় গরান কাঠ আব্দুল আজিজের জানিয়ে মুটোফোনে আব্দুল আজিজকে ফোন ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ই¯্রাফিল তার ব্যবহৃত মুটোফোন বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন অফিসার কবীর উদ্দীনকে ধরিয়ে দিলে তিনি মুটোফোনের এ পাশে থাকা ব্যক্তিদের জানায়, ‘অল্প কিছু গরান কাঠ হয়তা গোলপাতার নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছিল, তাই তাদেরকে ঝামেলা না করে ছেড়ে দিলে আব্দুল আজিজ পরের দিন সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবে।’
    এসময় সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মী মুটোফোনে কবীর উদ্দীনের কাছে জানতে চান, ‘গোলপাতার নৌকা আনলোড হচ্ছে ঝাঁপালী ও নওয়াবেঁকী, কিন্তু রমজাননগর থেকে সদ্য কাটা গরানের খুঁটি আসার নেপথ্য কারণ কি?’ এসময় চোরাকাঠ শিকারীদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেদককে কবীর উদ্দীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘হয়তো বা তারা কিছু গরান কাঠ চুরি করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং ঐ পথে পাচার হচ্ছে’। তবে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে কার্যক্রম কোন উদোগ নেয়ার বিষয়ে তিনি নুন্যতম আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
    জানা গেছে ওই ঘটনার পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারির রাত নয়টার দিকে কাশিমাড়ির গোবিন্দপুর এলাকায় প্রায় একই ধরনের একটি গরান কাঠের চালান আটক করলেও স্থানীয়রা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এদিনও কবীর উদ্দীনকে মুটোফোনে যোগাযোগ করে কোন প্রতিকার না মেলার অভিযোগ স্থানীয় ঐসব তরুণদের। তাদের দাবি মূলত অর্থের বিনিময়ে কবীর উদ্দীন সুন্দরবন উজাড় করার ‘প্রজেক্ট’ হাতে নিয়ে বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশনে যোগদান করেছিলেন।
    এছাড়া সুন্দরবনের গোলপাতা বোঝাই নৌকা ফিরে আসার সময় গোলপাতা পড়ে যাওয়ার শংকায় নৌকার দু’পাশে শত-শত মোটা গরানের খুঁটি ব্যবহারের সুযোগ দানের মাধ্যমে কবির উদ্দিন সুন্দরবন থেকে গরান কাঠ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলেও অনেকের অভিযোগ।
    এসব অভিযোগকারীরা জানান, নওয়াবেঁকী আব্দুল আজিজসহ কয়েকজনের গোলপাতার নৌকা আনলোড হওয়ার সময় সেখানে সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হয়ে গোলপাতার নিচে গরান কাঠ দেখতে পান। এছাড়া নৌকার দুপাশে আরও শত-শত গরানের খুটি দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কবীর উদ্দীনের কাঠে মুটোফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘ভাই, পাতার চাপ রাখার জন্য আমরা রাজস্ব নিয়ে কিছু কিছু গরান কাঠ দিতে বাধ্য হই।’ তবে গরান কাঠ কর্তন নিষিদ্ধ জানাতেই ‘পারলে উচ্চ মহলের কাছে নালিশ করেন’-জানিয়ে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেন।
    আবুল কাশেম ও জবেদ আলী, আব্দুল হামিদসহ অনেকের অভিযোগ কবীর উদ্দীনের প্রত্যক্ষ মদদে গোলপাতা মৌসুমে পাচার হয়ে আসা হাজার হাজার মণ গরান কাঠ এখন নওয়াবেঁকী বাজার ও ঝাপাাঁলীর বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে কবীর উদ্দীনের ষ্পষ্ট জবাব, সবার অকশনের স্লিপ রয়েছে।
    তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান গত জানুয়ারি মাসে কবীর উদ্দীনের তৎপরতায় একটি অকশন হয়। কিন্তু ঐ একটি অকশন এর স্লিপকে পুঁজি করে নওয়াবেঁকী থেকে ঝাঁপালী গোটা এলাকার সকল কাঠ পাচার চক্রের সদস্যরা কবীর উদ্দীনের ছত্রছায়ায় দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
    স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ এসব আড়ৎদাররা প্রশাসনের অভিযানের ভয়ে যৎসামান্য গরান কাঠ সামনে প্রদর্শনীর জন্য রাখলেও তাদের অজ্ঞাত গুদামে হাজার হাজার মন গরান কাঠ পাওয়া যাবে।
    পশ্চিম সুন্দরবনে একক আধিপাত্য বিস্তারকারী কবির উদ্দিন সম্প্রতি সুন্দরবনের দোবেকী টহল ফাড়ির ছোট চোরা খাল এবং বড় চোরা খালের ধার থেকে বড়-বড় ৪০টির অধিক কেওড়া গাছ কেটে নিজে ঠিকাদার হয়ে বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন, কলাগাছি টহলফাড়ি এবং কাঠেরসর টহল ফাড়ির সংস্কার কাজ করেছেন। কিন্তু এ কাজের জন্য ১১ লক্ষাধিক টাকার টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে সুন্দরবন থেকে কেটে নিয়ে আসা এসব কেওড়া গাছের অর্ধেক এসও কবির উদ্দিন বিক্রি করেছেন নোয়াবেকির আশরাফ এবং রফিকের ‘স’ মিলে। এসব অভিযোগের ব্যপারে এসও কবির উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বিকার করেন।
    তবে, পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনির দুর্নীতিবাজ এ ষ্টেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন শত-শত অভিযোগ প্রায়ই স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয় কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।
    স্থানীয় সুধীমহলের দাবি সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে অনতিবিলম্বে এসও কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে অচিরেই সুন্দরবনের মহামূল্যবান অনেক সম্পত্তি হারিয়ে যাবে।

  • শ্যামনগরে বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসে মধু আহরন উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

    শ্যামনগরে বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসে মধু আহরন উদ্বোধন অনুষ্ঠিত


    শ্যামনগর ব্যুরো ঃ “সচেতন বনজীবি নিরাপদ সুন্দরবন”- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জ সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আয়োজনে এবং আই ইউসিএন, কেএফ ডব্লু, সোনার বাংলা শপিং সেন্টার, ওয়ার্ল্ড টিম, আলওয়াল ও বেডস্-এর যৌথ সহযোগীতায় পশ্চিম বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে মধু আহরন উদ্বোধনী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায়ে গতকাল ১ এপ্রিল ১৮ চৈত্র সোমবার সকাল ১০ টায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বসিরুল-আল-মামুন এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন সংরক্ষন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- নব নির্বাচিত শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিন-উল-মুলক, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল, ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জিএম মাছুদুল আলম, বেডস্ এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন শান্তুনু বিশ্বাস, সোনার বাংলা শপিং সেন্টারের পক্ষে নাজমুস-সাদাত পালাশ, ওয়ার্ল্ড টিভির পক্ষে মঈনুল ইসলাম, যমুনা টিভির পক্ষে গাজী আহসান, গাজী সালাউদ্দীন বাপ্পি, বনজীবিদের পক্ষে ইকবাল হোসেন মন্টু। বনজীবিদের পক্ষে ইকবাল হোসেন মন্টু তার বক্তেব্যে বলেন- তারা মহাজনের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন নিয়ে মাত্র ১৫ দিন মেয়াদে পাশ দিলে এবং মাথাপিছু ৫০ কেজি মধু আহরনের টার্গেট বেধে দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারবে না, মহাজনের নিকট ঋণী হয়ে যাবে বলে মেয়াদ বাড়ানো ও টার্গেট বেধে না দেওয়ার দাবি জানায়। তিনি আরও দাবি জানাই, যদি পাশ গুলো দিয়ে তাদের একসাথে ছাড়া না হয় তাহলে যারা পিছে যাবে তারা মধু পাবে না বা কম পাবে। অতিথিগণের বক্তেব্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে মৌয়ালিদের দাবী মেনে নেওয়ার আহবান জানান। সভাপতি তার বক্তেব্যে পরবর্তীতে মৌয়ালীদের উর্থাপিত দাবী রক্ষা করার আহবান জানান। আলোচনা শেষে মধু সম্পর্কে রচনা প্রতিযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরষ্কার দেন অতিথিবৃন্দ। এরপর অতিথিগণ বন বিভাগের সহযোগীতায় মৌচাক থেকে মধু আহরনের দৃশ্য দেখার জন্য কলাগাছিয়া বনফাঁড়িতে যান। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এসও বেল্লাল হোসেন।

  • সুন্দরবন: র‌্যাবের সাথে বনদস্যু বাহিনীর গুলি বিনিময়:বাহিনী প্রধান সহ নিহত-২

    সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছি এলাকায় বনদস্যু সাহেব আলী বাহিনীর সাথে র‌্যাবের গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় বাহিনী প্রধান সাহেব আলীসহ দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় আটক করে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

    ঘটনা স্থল থেকে র‌্যাব সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শ্যামনগর উপজেলার কলাগাছিয়া খালে এ ঘটনাটি ঘটে। এদিকে, গোলাগুলিতে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন কনস্টেবল আরিফ ও শাকিল।
    নিহত বনদস্যুরা হলেন, বাহিনী প্রধান সাহেব আলী (৩৫) ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হাবিবুর রহমান (২৮)।

    র‌্যাব -৬ এর লে. কমান্ডার জাহিদুল কবির জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া খালে বনদস্যু সাহেব আলী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি ও অপারেশন অফিসার এ.এসপি তোফাজ্জেলের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বনদস্যুরা র‌্যাবের উপর গুলি বর্ষণ করে। র‌্যাব ও পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। প্রায় ঘন্টাব্যাপি বন্দুকযুদ্ধে সাহেব আলী বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বাহিনী প্রধান সাহেব আলীসহ দুইজনকে আটক করে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরো জানান, ঘটনা ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবরুদ উদ্ধার করা হয়েছে এবং র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

  • কাঁকড়া শিল্প হুমকির মুখে : নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুন্দরবনে চলছে কাঁকড়া আহরণ

    কাঁকড়া শিল্প হুমকির মুখে : নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুন্দরবনে চলছে কাঁকড়া আহরণ


    শ্যামনগর ব্যুরো :
    প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও চলছে কাঁকড়া আহরণ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কাঁকড়া শিল্প রক্ষা করা কঠিন হবে। প্রতিবছরের ন্যায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ সরকারী ভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বন বিভাগ ও প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে অসাধু বনজীবিরা ও কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া প্রজননকে বাধাগ্রস্থ করছে। নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানাগেছে, পারুলিয়া ও শ্যামনগর কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতি আনুমানিক ৭লক্ষাধিক টাকা উঠিয়ে সংশ্লিষ্ট বন-বিভাগ, স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাঁকড়া আহরণ ও ক্রয়-বিক্রয় অব্যহত রেখেছে। তথ্যনুসন্ধানে জানাগেছে, সুন্দরবনে নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে উঠা সব জাতের কাঁকড়া শুকনা মৌসুমে জানুয়ারী ও ফেব্র“য়ারী দুই মাসের জন্য আহরণ, মজুদ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। বনবিভাগের মতে নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেঁড়ে ওঠা দেশের রপ্তানী পন্য শীলা কাঁকড়া সহ সব জাতের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে অসংখ্যক ছোট ছোট কাঁকড়া জন্ম নেয়। তাই মা কাঁকড়া রক্ষার জন্য প্রতি বছর সুন্দরবনে জানুয়ারী ও ফেব্র“য়ারী এ দুইমাস কাঁকড়া আহরণ সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁকড়া নদী ও খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় গভীর পানিতে। বিশেষ করে সাগরের মোহনায়। তাই এই সময় মা কাঁকড়ার ডিম দেওয়ার জন্য সাগরের দিকে যায়। সাগরের দিকে বা গভীর পানিতে যাওয়ার সময় কেউ ধরতে না পারে সেজন্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মা কাঁকড়া রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা জারী করে বন বিভাগ। কাঁকড়া যখন ডিম দেয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। ওই মুহুর্ত্বে কাঁকড়া গুলো ক্ষুধার্ত ও দূর্বল থাকে। তাদের সামনে যে কোন খাবার দেওয়া হলে তা দ্রুত ক্ষেতে আসে। অপরদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় অসাধু কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা চোরাই কাঁকড়া ক্রয় করে হ্যাচারীতে কিছুদিন রেখে অধিক মুনাফায় বিক্রি করছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কোন আইনগত ব্যবস্থা। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসেন সাগর বলেন, কাঁকড়া প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া ধরা বন্ধ না হলে এ শিল্প রক্ষা করা কঠিন হবে। সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ রফিক আহম্মেদ বলেন, কাঁকড়া আহরণ একেবারেই হচ্ছেনা বলবনা। কিছু অসাধু বনজীবিরা বেশি লাভের আশায় চুরি করে কাঁকড়া আহরণ করছে। তবে ধরতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে বন মামলা দেওয়া হচ্ছে।

  • পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ এর অভয়ারন্য এলাকা থেকে ৬ কাকড়া শিকারী আটক


    সুকুমুর চক্রবর্তি,শ্যামনগর প্রতিনিধি (সাতক্ষীরা)ঃ গতকাল রেঞ্জ এর বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশন অফিসার কে এম কবির উদ্দীন সংঙ্গীয় বন কর্মিদের সাথে নিয়ে সুন্দরবন সাগর সংলগ্ন অভয়ারন্য এলাকা মান্দার বাড়িয়া থেকে নিশিদ্ধ সময়ে কাকড়া ধরার সময় খুলনা জেলার দাকোপ, কালাবগি এলাকার ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। স্টেশন অফিসার কে এম কবির উদ্দীন জানান, নিয়মিত টহলের সময় সাগর সংলগ্ন বাহির মান্দার বাড়িয়া খাল থেকে আসামিদের ব্যাবহৃত দুইটি নৌকা ও একটি ইনজিন চালিত ট্রলার সহ ৬ জনকে আটক করেন। তিনি আরো জানান, বন আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে ।

  • বনবিভাগের উর্দ্ধত্মন কর্মকর্তা নিরব


    রাকিবুল হাসান, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জেররোঠাবেঁকী, দোবেকীসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ অভায়ারণ্য এলাকায় সুন্দরবনের মায়াবী হরিণ, মাছ-কাঁকড়াসহ কাঠ আহারণ করা সম্পূর্ণভাবে রিষিদ্ধ রয়েছে। অথচ স্মার্ট প্রেট্রোল টিমের ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোবারক হোসেন টাকার বিনিময়ের এই সমস্ত নিষিদ্ধ এলাকায় হরিণ শিকারসহ মাছ-কাঁকড়া ধরার টাকার বিনিময়ে অনুমতি প্রদান করছে বলে জানা গেছে এবং বন বিভাগের অসাধু উর্দ্ধত্মন কর্মকর্তারা নিরবে আছেন বলে জানা গেছে। এদিকে স্মার্ট টিম নামক একটি সরকারি বাহীনি সুন্দরবনের অভায়ারণ্য এলাকার জন্য টহলরত দ্বায়ীত্বে থাকলেও এই টিমের দ্বায়ীত্বরত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন ঘুস বানিজ্য স্বর্গ রাজ্য কায়েম করছে বলে জানা গেছে। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে বাউয়ালীরা জানান, সুন্দরবনের নিষিদ্ধ অভায়ারন্য এলাকাগুলোতে মাছ-কাঁকড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্রজনন এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় জেলেদের অনুপ্রবেশ করা নিষিদ্ধ রয়েছে। ওই এলাকা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে মাছ-কাঁকড়া ও হরিণ পাওয়া যায়। যার কারণে অসাধূ জেলে-বাউয়ালীরা সংশ্লিষ্ঠ বন কর্মকর্তাদের সাথে এবং স্মার্ট টিমের দায়ীত্বরত কর্মকর্তা ওসি মোবারক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে প্রতি গনে নৌকা প্রতি ৩-৪হাজার টাকার বিনিময়ে এইসব এলাকায় প্রবেশ করে। আবার যে সমস্ত জেলে-বাউয়ালীরা অসাধু বনকর্মকর্তা ও ওসি মোবারক হোসের সাথে যোগাযোগ না করে ও নির্দ্ধাারিত টাকা দিতে না পারে তাদেরকে আটক পূর্বক বন মামলা দেওয়া হয় এবং জেলে বাউয়ালী সুত্রে জানা যায়, স্মার্ট প্রেট্রাল টিমের দ্বায়িত্বে থাকা ওসি মোবরক হোসেন নৌকা প্রতি জেলেদের কাঝে যে সরকারী পাশ থাকে তার অপরপিঠে একটি গোপন নম্বর বসান। কারণ ওই নম্বর তার একটি গোপন সংকেত। যার বিনিময়ে তিনি আরও ১-২ হাজার টাকা ঘুস নিয়ে থাকেন। এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কথা হয় সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রফিক আহমেদের সাথে। মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, আমি দ্বায়ীত্বভার গ্রহন করার পর আমার অধীনের সকল কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছি কোন প্রকার অনিয়ম চলবে না। অঅমার স্মার্ট পেট্রোল টিম সুন্দরবনের অভায়ারণ্য এলাকায় দ্বায়ীত্ব পালন করছেন। এবং আমি নিজে মাঝে মাঝে অভিযানে যাচ্ছি। যাহা অভারণ্য এলাকার জেলে বাউয়ালীরা অবাদে বিচরণ করছে; এটা সঠিক নয়।

  • পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টুরিস্ট সেণ্টারে বাঘের দর্শণ পাওয়ার সম্ভবনা

    পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টুরিস্ট সেণ্টারে বাঘের দর্শণ পাওয়ার সম্ভবনা


    সুকুমার চক্রবর্ত্তী, শ্যামনগর,সাতক্ষীরা ঃ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টুরিষ্ট সেণ্টারে এই শীত মৌসুমে পর্যাপ্ত পর্যটকের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ওখানে টুরিস্টদের দেখারমত পর্যাপ্ত জংলি মায়াবি হরিণের আনাগোনা রয়েছে যার কারনে পর্যটকরা কলাগাছিয়াতে আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। কলাগাছিয়া টুরিষ্ট সেণ্টারে পর্যটকদের জঙ্গলের ভেতর হাটাহাটি করার জন্য আধা কিলোমিটার ফুট ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, বসার জন্য গোল ঘর আছে দুইটি। সার্বিক বিবেচনায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে টুরিস্ট সেণ্টারটি পর্যটকের জন্য একটি আকর্ষনিয় স্থান। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাযায়, গত কয়েকদিন ধরে ওই টুরিষ্ট রিসোটের ফুট ট্রেইলের আসপাসে দুইটি বাঘ ঘোরাফেরা করার প্রমান পাওয়াগেছে ফুটপ্রিণ্ট দেখে। ফিওে আসা একটি পর্যটক গ্রুফ এর সাথে কথাবলে জানা যায়, কলাগাছিয়াতে প্রচুর বাদরের আনাগোনা লক্ষনিয়। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ঘাটের ট্রলার মাঝি আলমগীর হোসেন জানান, পর্যটকদের নিয়ে কলাগাছিয়া বন টহল ফাড়ীর পল্টনে বোট রাখার সাথে সাথেই প্রচুর বাদর এসে ভিড় করছে এবং তাদের খাওয়ার জন্য কিছু নাদিলে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে থাকে বাদরের দল। ইতিমধ্যেই একজন বন কর্মী সহ কয়েক জনকে কামড়ে দিয়েছে বাদর। বিষয়টি কলাগাছিয়া টহল ফাড়ীর ইনচার্জ মোঃ নূর ইসলাম জানান, অনেকে বেড়াতে এসে অনেগুলো বাদর দেখে তাদের সাথে দুষ্টামি করার কারনে অথিষ্ট হয়ে কামড়ে দিয়েছে। রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশন অফিসার কে এম কবির উদ্দীন এর নিকট বাঘের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুন্দরবন তো বাঘেরি বসবাসের স্থান সেখানেতো বাঘ থাকবেই। আর সেই জন্য ইতিমধ্যেই তিনি কলাগাছিয় বন টহল ফাড়ীর কমর্ রতদের বাঘের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন সহ পর্যটকদের সাথে কথাবলে সংঙ্ঘবদ্ধ ভাবে চলাচলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

  • আজ বিশ্ব বাঘ দিবস : দু’দশকে বনদস্যুদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক বাঘ

    আজ বিশ্ব বাঘ দিবস : দু’দশকে বনদস্যুদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক বাঘ

    নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এদিনে ঘটা করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও নানা সংকটে গত দু’যুগে বনদস্যু ও চোরা শিকারীদের শিকার হয়েছে সুন্দরবনের রেকর্ড পরিমাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বন উজাড়, আন্তর্জাতিক বাজারে বাঘের চাহিদা এর অন্যতম কারণ।
    বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাঘের শাবক সর্বোপরি বাঘ শুমারী তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১৬ বছরে ৫৭ টি বাঘ হত্যার তথ্য থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা অনেক বেশী বলে জানিয়েছেন বনজীবিরা।
    বিভিন্ন সময়ে নানা গবেষণা, ব্যক্তি বা সংস্থা বাঘ হ্রাসের কারণ হিসেবে নানা মন্তব্য করলেও বনজীবি ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা আশংক্সক্ষাজনকহারে বাঘ হত্যার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনবিভাগসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দূর্বলতাকেই দায়ী করছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে গণনা শেষে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে মাত্র ১০৬টি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের শরু হওয়া বাঘ শুমারীর মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয় মে মাসে। তবে এখনো প্রকাশিত হয়নি শুমারীর প্রতিবেদন। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।
    প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে থাইল্যন্ডের হুয়ানে অনুষ্ঠিত হয় টাইগার রেঞ্জ দেশ সমূহের ‘এশিয়া মিনিষ্ট্রয়াল কনফারেন্স’। সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণে ৯দফা পরিকল্পনাসহ সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি বছর ২৯ জুলাই পালিত হবে বিশ্ব বাঘ দিবস। তখন থেকেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা।
    জানা যায়, বিগত ২০১৫ সালে মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে সবোর্চ্চ ৯ টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়। এর মধ্যে কয়রার গোলখালী থেকে অক্টোবর মাসে একসাথে ৩ টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হওয়ায় বনবিভাগের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন দেখা দেয়। ঐ বছরের ৮ আগস্ট ৬৯ পিচ বাঘের হাড়সহ কয়রার এনায়েত হোসেন ও বাবু হোসেন নামে দু’চোরা শিকারীকে খুলনার লঞ্চ ঘাট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের রমজাননগরের টেংরাখালী গ্রামের চোরা শিকারীদের দ্বারা পাচারকৃত ৪ টি বাঘের শাবক উদ্ধার হয় ঢাকার শ্যামলী থেকে।
    ২০১৫ সালের ২৬ জুলাইয়ের ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতির শুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মোট ১০৬ টি বাঘের অস্তিত্ব থাকলেও এর আগে ‘পাগ মার্ক’ পদ্ধতির শুমারী অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫০ টি। শুমারী অনুযায়ী মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবন থেকে বাঘ কমেছে ৩৪৪টি। ২০০৪ সালের এক গবেষনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ ১২১টি, স্ত্রী ২৯৮টি এবং বাচ্চা ২১টি। সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়েক বার বাঘ শুমারী হলেও বাঘের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

    ২০১৫ সালের ৬ জুলাই প্রকাশিত বাঘের ঘনত্ব শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয় অবৈধ শিকার, খাদ্যের অভাব ও প্রকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব কমেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বনদস্যুসহ চোরা শিকারীদের বাঘ শিকার, সুন্দরবনের ভেতরের নদী সমূহে নৌচলাচল ও বনের পাশে শিল্প অবকাঠামো নির্মাণ বাঘের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    ২০১৬ সালে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি অর্থায়নে ‘বাঘ প্রকল্পে’ ক্যামেরার সাহায্যে গণনার জন্য খুলনা বিভাগীয় বণ্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে গণনার কাজ শুরু করে এবং মে মাসে এর কাজ সম্পন্ন করে। এখনো তার ফলাফল পাওয়া যায় নি। তবে বাঘের সংখ্যা বাড়বে না কমতে পারে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও সুন্দরবনের ৩টি অভয়ারণ্য এলাকায় গাছের সাথে ক্যামেরা বেঁধে এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
    বন সংরক্ষক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মন্দিরা বলেন, সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি। খুলনা সার্কেলের উপ-বন সংরক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঘ গনণার প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে এখন অধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গণনা কার্যক্রম হচ্ছে। বাঘ প্রকল্পের গবেষনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল¬াহ আল মোজাহিদ বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাঘের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সরকার। তবে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক।
    পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল-আল-মামুন বলেন, বাঘ শুমারী একটা কঠিন কাজ। আধুনিক পদ্ধতি গনণা হচ্ছে। প্রতিবেদন প্রকাশ না হলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
    সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সূত্র জানায়, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের লোকালয়ে ঢুকে পড়ে গণ পিটুনি, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের জলোচ্ছ্বাসে, বার্ধক্যজণিত কারণে এবং চোরা শিকারীদের হাতে মোট ১৭ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে। এর মধ্যে বন সংলগ্ন মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়লে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা, স্বাভাবিক মৃত্যু হয় ৪ টি ও সিডরের জলোচ্ছ্বাসে ১ টি বাঘ মারা যায়। আর ৮ টি নিহত হয় চোরা শিকারীদের হাতে। একই সময়ে ১ নারী সহ মোট ২৬ জন বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে ময়না নামের মোংলার জয়মনি এলাকার বৃদ্ধা গ্রাামবাসী ছাড়া সবাই বনজীবি।
    সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, গত দু’দশকে পশ্চিম বন বিভাগে ১৫ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিহত হয়। এর মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে গণপিটুনির শিকারে নিহত হয় ৮ টি। এছাড়া ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় দু’দশকে সেখানে ২৩৪ জন নারী-পুরুষ বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই বনজীবি ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণকারী।
    সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(ডিএফও) মোঃ মদিনুল আহসান বলেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে সরকার ‘বাংলাদেশ টাইগার এ্যকশন প্ল্যান ২০০৯-১৭’ বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের আক্রমণ থেকে বন সংলগ্ন লোকালয়ের জানমাল এবং মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ রক্ষায় ৮৯ টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে মানুষের হাতে ৯ টি বাঘ মারা পড়েছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘ রক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআর) কাজ করছে। বাঘ অচেতনে তাদের ৬ টি বন্দুক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
    এদিকে সুন্দরবনের রেকর্ড সংখ্যক বাঘ হ্রাসের জন্য অন্যান্য কারণের সাথে বনজীবিরা জোর দিয়ে যোগ করেছেন বনদস্যুদের কথা। দীর্ঘ দিন সুন্দরবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাছ থেকে দেখেছেন অনেক কিছু। তারা বলছেন, প্রায় দু’যুগ ধরে সুন্দরবনে নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রায় ২ ডজন বনদস্যু বাহিনী। একই বনে বাঘের সাথে বসবাস দস্যুদেরও। সুন্দরবন অভ্যন্তরে অবাধ বিচরণ ও রাত্রি যাপনে বাঘের সাথে দেখা হলেই দস্যুরা তাদের হত্যা করে। এর সাথে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সুন্দরবনের বাঘের চাহিদার বিষয়টিকে যোগ করে এতে বনদস্যুদের দস্যুতা বৃত্তির পাশাপাশি অধিক মুনাফা লাভে বাঘ হত্যার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। অভিযোগ রয়েছে, বাঘ বিলুপ্তির জন্য দায়ী চোরা শিকারীদের গ্রেফতার ও মামলায় র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা দেখালেও বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তেমন কোন সফলতা নেই।

    এব্যাপারে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়ার ষাটোর্দ্ধ আনসার আলী, বনজীবি রাহুল, মান্নান, কওছার, রাশেদুল, আঃ করিম, খালেক গাজী, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামের আমিনুর, নওশাদ, সাত্তার, মুন্সীগঞ্জের দাউদ সানা, মন্তেজ, রাজ্জাক, মুনছুর, রমজাননগর গফুর, সিদ্দিক, জবেদ আলী, সফেদ আলীসহ শতাধিক বনজীবিরা জানান, সুন্দরবন থেকে বাঘ হ্রাসের কারণ হিসেবে গবেষক থেকে শুরু করে বনবিভাগ বা দেশী-বিদেশী সংস্থা যাই বলুক বাঘ হত্যার জন্য বনদস্যুরাই সবচেয়ে বেশী দায়ী।
    জানা গেছে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তে আন্তর্জতিক বাজারে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এ সুন্দরবনের বাঘের চামড়া থেকে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চড়া মূল্য থাকায় মূলত সুন্দরবনে বনদস্যুরা বাঘ হত্যায় মেতে উঠে। সুন্দরবন বনদস্যুদের এক সময়ের অভয়ারণ্য থাকায় ঐসময়ে ব্যাপক সংখ্যক বাঘ শিকার হয় তাদের হাতে। বর্তমানে সরকার সুন্দরবন রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তা বাঘ রক্ষায় ঠিক কি ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নির্ভর করবে চলতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে বাঘ শুমারীতে বাঘের প্রকৃত সংখ্যার উপর। তবে আশার কথা, বাঘ সংরক্ষণে মনিটরিং, টহল ব্যবস্থা জোরদার এবং বনরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কতগুলো বাঘ হত্যা করা হয়েছে বা কতটি মামলা হয়েছে এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও জনববল সংকটের বিষয়টি স্পষ্ট হয় বন কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। সর্বশেষ এমন পরিস্থিতিতে আজ ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।

  • পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ

    পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ

    কলাগাছি ট্যুরিজম সেন্টার

    মোঃ মুশফিকুর রহমান (রিজভি)/রাকিবুল হাসান: সাতক্ষীরা জেলার ব্যাবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন স্থান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে দেশের বৃহত্তম উপজেলা শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ।
    মুন্সীগঞ্জের উপজেলা সদর শ্যামনগর হলেও শিল্প-বানিজ্যে দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের স্থায়ী-অস্থায়ী আগমনের কারণে শ্যামনগর উপজেলা শহরকে টেক্কা দিয়ে মুন্সীগঞ্জ এখন শুধু শ্যামনগর নয় সমগ্র সাতক্ষীরা তথা বাংলাদেশের নাম করা স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। সুন্দরবনের গাঁ ঘেষা এ উপকূলীয় অঞ্চলটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারী কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্য উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নের আকাশ নীলা, বরসা ট্যুরিজম সেন্টার, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রিত কলাগাছি ট্যুরিজম সেন্টার ইতিমধ্যে ভ্রমণ পিঁপাসুদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
    একসময়ের অবহেলিত এ অঞ্চলটি এখন সাতক্ষীরার পর্যটন শিল্প এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। মাত্র দুই যুগের ব্যাবধানে পাল্টে গেছে এ মুন্সীগঞ্জের দৃশ্যপট। ১৯৯৫ সালের দিকে মুন্সীগঞ্জ বাজারে ছিল হাতে গোনা কয়একটি খড় পাতার ছাউনির দোকান ঘর। প্রতি বৃহস্পতিবাওে এখনে বসত সাপ্তাহিক হাট। কিন্তু এখন এখানে প্রতিদিন হাট বসে, পাওয়া যায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল। ১৯৯৫ সালে মুন্সীগঞ্জের অধিকাংশ সড়ক ছিল মাটির। বর্ষা মৌসুমে পায়ে হেটে এবং নৌকাযোগে যেতে হতো নীলডুমুর (বুড়িগোয়ালিনি) গাবুরা ও খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে। শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের যানবহন ছিল বাইসাইকেলের পিছনে টিউব এর গদি বসিয়ে তৈরি হেলিকপ্টার।
    চুনা, খোল পেটুয়া ও চাঁদনী মুখার পূর্বে কপোতক্ষ নদ পেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল না নদী পারাপারের পাঁকা ঘাট ও ট্রলার। নদীর চরে কাপড় গুটিয়ে নৌকায় চড়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার হয়ে জীবনযাপন করছে এই এলাকার মানুষ।

    সেসময় এ অঞ্চলে দেখা মিলতনা পর্যাটকদের। এ অঞ্চলের ৯৫ ভাগ মানুষ ছিল হত দরিদ্র। অধিকাংশ মানুষ ছিল সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের বাঘ-কুমিরদের সাথে লড়াই করেই তাদের জীবন চলত।

    বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়ার ফার্ম।

    কিন্তু মাত্র দু’যুগের ব্যাবধানে এখনকার মুন্সীগঞ্জ এবং ১৯৯৫ এর মুন্সীগঞ্জের মধ্য আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখন মুন্সীগঞ্জের চর্তুপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্য তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পর্যাটন কেন্দ্র ও শিল্প কল-কারখানা।

    এখানে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কাকড়া চাষের ফার্ম। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ কাকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। এখানেই গড়ে উঠেছে বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়ার ফার্ম।

    রয়েছে চিংড়ি চাষের ঘের ও চিংড়ি পোনা উৎপাদনের বিশ্বমানের হ্যাচারী।
    মুন্সীগঞ্জকে কেন্দ্র কওে গড়ে উঠেছে অগ্রনী ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যংক, গ্রামীন ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংক। শতাধিক বিমাসহ ছোট বড় দেশী-বিদেশী এনজিও।

    কাঁকড়ার ফার্ম।

    এখানকার নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও সন্তোষজনক। রয়েছে র‌্যাব-৬ এর ক্যাম্প, রয়েছে বিজিবি ১৭ কোম্পানির হেড কোয়ার্টার (নীলডুমুর)। মুন্সীগঞ্জ বাজারে রয়েছে বিজিবির ক্যাম্প। এছাড়াও নীলডুমুরে রয়েছে নৌ-পুলিশ ফাড়ি। যা এখন নৌ-থানা হিসেবে পরিচিত। এবং বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস ও বুড়িগোয়ালিনি ষ্টেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সহ মুন্সীগঞ্জ বন টহল ফাড়ি।

    মুন্সীগঞ্জে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের রাত্রীযাপনের জন্যও রয়েছে সুন্দর ব্যাবস্থা। ভিআইপি গেস্টরুম বা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল আছে মুন্সীগঞ্জ সুশীলন টাইগার পয়েন্ট, বরসা রির্সোস সেন্টার ও আকাশ নীলায়।

    জেলায় বা উপজেলায় কোন ভিআইপির’র পদার্পণ হলেই তারা বেড়াতে যান মুন্সীগঞ্জে সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য। মুন্সীগঞ্জে চলতি বছরের প্রথম থেকেই দেশী-বিদেশীসহ ভিআইপিদের আগমন ঘটেছে উল্লেখ্যযোগ্য। বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে.এম নুরুল হুদা এবং সর্বশেষ গত ৩১ শে মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুশীলন টাইগার পয়েন্টে রাত্র যাপন করে ১লা এপ্রিল আকাশনীলা, কলাগাছিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেন।
    এখন নিয়মিত দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের পদাচারণায় মূখর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকা। হাজার হাজার পর্যটক ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী-পেশার আগমন ঘটছে মুন্সীগঞ্জ ও নীলডুমুরে। প্রতিদিন দেশী বিদেশী ভ্রমণার্থীরা উপচে পড়া ভিড় জমাচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত মুন্সীগঞ্জের আকাশ নীলা, কলাগাছি ও বেসরকারী সংস্থা বরষা ট্যুরিজম সেন্টারে। সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশ করে সন্দরবন দেখার জন্য সরকারিভাবে কোন লঞ্চ বা ট্রলার না থাকলেও বেসরকারী সংস্থা বরষার রয়েছে ছোট বড় কয়েকটি লঞ্চ। তবে আকাশ নীলা সুন্দরবনের গাঁ ঘেষে চুনা নদীর চর ভরাট করা যাইগায় নির্মিত হওয়ায় এখানের আকর্ষণ আবার পর্যটকদের ভিতর অন্যরকম।
    এ বিষয়ে প্রভাষক ড. এনামুল হক বলেন, সুন্দরবনের গাঁ ঘেষা অঞ্চলে বসে সুন্দরবনের দৃশ্য দেখতে খুব ভাল লাগে। এবং এখানে ভাস্কার্য নির্মিত সুন্দরবনের বাঘ হরিণ কুমিরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রণী পর্যাটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।
    সাতক্ষীরা-৪ আসনের সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন, মুন্সীগঞ্জের নাম আজ আর শুধুমাত্র শ্যামনগর ও সাতক্ষীরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এ মুন্সীগঞ্জ একদিন জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

  • সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দোবেকী এলাকা থেকে ৩ টি হরিণ ও ৩টি অস্ত্রসহ ২ চোরাশিকারী আটক

    সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দোবেকী এলাকা থেকে ৩ টি হরিণ ও ৩টি অস্ত্রসহ ২ চোরাশিকারী আটক

    নিজস্ব প্রতিনিধি: সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দোবেকী এলাকা থেকে ৩টি হরিণ, ৩টি একনালা বন্দুক ও একটি নৌকাসহ দুই চোরাশিকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
    সোমবার ভোর রাতে সুন্দরবনের চুনকুড়ি নদী সংলগ্ন দোবেকী নামকস্থান থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
    আটক চোরাশিকারীরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার কদমতলা গ্রামের ইমান গাজীর ছেলে মঞ্জু গাজী ও পাতাখালি গ্রামের আমজাদ গাজীর ছেলে মহিবুল্লাহ গাজী।
    শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহীনে বনদস্যু জাকির বাহিনীর সদস্যরা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনকুড়ি নদী সংলগ্ন দোবেকী নামকস্থান পুলিশের একটি টহল দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ৩টি জবাই করা হরিণ, ৩টি একনালা বন্দুক ও একটি নৌকাসহ দুই চোরাশিকারীকে আটক করা হয়।
    তিনি আরো জানান, আটক দুই ব্যক্তির নামে শ্যামনগর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

  • ধরা-ছোয়ার বাইরে সুন্দরবনের দস্যুদের অস্ত্র সরবরাহককারী গডফাদাররা

    ধরা-ছোয়ার বাইরে সুন্দরবনের দস্যুদের অস্ত্র সরবরাহককারী গডফাদাররা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা সময় বনদস্যু বাহিনীর হাতে সম্পূর্ণ জিম্মি হয়ে পড়েছিল সুন্দরবনের পেশাজীবীরা। সরকারের আন্তরিকতায় বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ায় ধীরে-ধীরে দস্যু মুক্ত হচ্ছে গোটা সুন্দরবন অঞ্চল।
    সম্প্রতি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সুন্দরবনের শীর্ষ ২৬টি দস্যু বাহিনী। এই প্রক্রিয়ায় সুন্দরবনে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরমিাণ গোলাবারুদ উদ্ধার হলেও অস্ত্র যোগানদাতা গডফাদাররা গ্রেফতার না হওয়ায় পুরোপুরিভাবে বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনের দস্যুতা। এসব গডফাদাররাই আবারো নতুন নতুন বাহিনী তৈরি করে সুন্দরবনে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ফলে নতুন করে সুন্দরবনের পেশাজীবী জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
    সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট জেলে, বাওয়ালীরা জানায়, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের (সাতক্ষীরা রেঞ্জ) বনজীবীরা বর্তমানে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছোটভাই বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই বাহিনী পরিচালনা করছে শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি এলাকার মাজেদ ভাঙ্গির ছেলে জাকির ভাঙ্গি।
    এই ছোটভাই বাহিনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ জন। তাদের কাছে ডাবল ও সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, টুটুবোর রাইফলেসহ প্রায় ১৫টি অস্ত্র রয়েছে।
    সুন্দরবনের জেলে বাওয়ালীরা বলছেন, এসব বাহিনীর কেউ সরকারে কাছে আত্মসমর্পণ করলে বা সুন্দরবনে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে দস্যুদের দুই-একজন গ্রেফেতার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলওে দস্যুদের অস্ত্র যোগানদাতা গডফাদাররা সব সময় থেকে যায় ধরা-ছােঁয়ার বাইরে। যে কারণে সরকার চাইলেও সুন্দরবন থেকে দস্যুতা একেবারেই নির্মূল হচ্ছে না।
    র‌্যাব, পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব গডফাদারদের তথ্য, এদের মধ্যে কেউ কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও আইনের ফাঁক-ফোকরে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসে।
    সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা ও রমজাননগর ইউনিয়নের কিছু প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র যোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বহু আগে থেকেই। স্থানীয় জেলে বাওয়ালীরা জানায়, কিছু দিন আগে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু আলিফ ও মজনু বাহিনীর অন্যতম গডফাদার ছিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজুল, বকুল মেম্বর, কালিঞ্চি এলাকার জামু ও রমজাননগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লাল্টু। এদর মধ্য সিরাজুল ও জামু আলিফ বাহিনীর সাথ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু লাল্টু মেম্বর গত বছর র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পায়। মুন্সিগঞ্জের বকুল মম্বরকেও একবার আটক করছিল র‌্যাব। বর্তমানে সে ঐ এলাকায় র‌্যাবের সোর্স পরিচয়ে নানা অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
    নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থনীয় এক বনজীবী অভিযোগ করে জানান, অস্ত্র ব্যাবসায়ী রমজাননগর ইউনিয়নর টেংরাখালি গ্রামের লাল্টু মেম্বর র‌্যাবের হাতে আটক হয়ছিল এরপর জামিনে ফিরে আসে। কিছুদিন আগে সে সুন্দরবনে ছোটভাই বাহিনীর কাছে ৪টি অস্ত্র সরবরাহ করছে। সেই অস্ত্রের টাকা নিয়ে ছোটভাই বাহিনীর সাথে তার দন্দ্ব চলছে। ভেটখালি বাজারে লাল্টু মেম্বর ও ছোটভাই বাহীনির প্রধান জাকিরের ভাই ইউনুসের মধ্যে এই টাকা নিয়ে হাতাহাতিও হয়েছে। জেলে বাওয়ালীদর এসব অভিযাগের প্রমাণও মিলেছে অনুসন্ধানে।
    লাল্টু মেম্বরের অস্ত্র ব্যাবসার বিষয়টি জানার পর যোগাযোগ করা হয় বর্তমানে সুন্দরবনে থাকা বনদস্যু ছোটভাই বাহিনীর প্রধান জাকিরের সাথে। জাকির বলেন, কিছুদিন আগে লাল্টু মম্বরের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে চারটি অস্ত্র ও একশত পিছ গুলি কিনেছি। সে নিজে সুদরবনে এসে আমাকে অস্ত্র দিয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি ব্র্যাশ (অস্ত্র) ও কিছু গুলি কেনার জন্য ১০লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে অস্ত্র না দিয়ে তালবাহানা করায় আমি টাকা ফেরত চাইলে সে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে। এ নিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে তার হাতাহাতিও হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে লাল্টু মেম্বর বলেন, আমি এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি। সুন্দরবনের মূল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আমাকে ফাঁসানোর জন্যই র‌্যাবের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। র‌্যাব আমাকে আটক করেছিল। বর্তমানে আমি জামিনে বাড়িতে আছি। ছোটভাই বাহিনীর প্রধান জাকিরের সাথে নৌকার টাকা নিয়ে পূর্বের একটি লেনদেন আছে। এটি জাকির দস্যুতা করতে যাওয়ার আগের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে শ্যামনগর থানাতে বসাবসি হয়েছিল। তার অভিযোগ মিথ্যা আমি কোন অস্ত্রের ব্যাবসা করি না। প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসাতেই তাকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বলেন, আমি সুন্দরবনে কোন ব্যাবসা করি না। বনদস্যুদের সাথেও আমার কোন সম্পর্ক নেই। প্রশাসনের সাথে আমার সু-সম্পর্ক থাকায় অনেকে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে। এলাকার কোন জেলে বাওয়ালী বিপদে পড়লে আমি তাদের সগযোগিতা করি। এমনকি প্রশাসনের কেউ সুন্দরবনে অভিযান চালালেও তারা আমার সহযোগিতা নেয়। তবে সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সুন্দরবনে নিজেদের ব্যবসা ও অধিনস্থ জেলে বাওয়ালীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই দস্যু বাহিনী গঠন ও অস্ত্র সরবারহ করে লোকালয়ের ব্যবসায়ী গডফাদাররা। বনদস্যুদের মধ্যে কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে আবারো নতুন নতুন বাহিনী তৈরি করছে মূলত তারাই। বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্র ব্যাবসায়ি গডফাদাররা পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টর্গাডরে হাতে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে এসে আবারো তাদের কার্যক্রম চলমান রাখে। ফলে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের দস্যুতা একেবারেই বন্ধ হচ্ছে না।
  • দেবহাটায় ইছামতি নদীর ভেড়ীবাঁধ ঝুকিপূর্ণ : বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক্ষা

    দেবহাটায় ইছামতি নদীর ভেড়ীবাঁধ ঝুকিপূর্ণ : বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক্ষা

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার গা ঘেষে বয়ে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত নদী ইছামতির কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
    চলতি বর্ষা মৌসুমে ভেড়ীবাধের ভাঙন ব্যাপক দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী। সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের খাওয়া ঘুম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ভেড়িবাধের সামান্য যে অংশটুকু এখনো অক্ষত আছে যদি পানির চাপে সেটুকুও ভেঙ্গে যায় তাহলে নাংলা, ছুটিপুর, ঘোনাপাড়সহ কয়েকটি গ্রাম ইছামতি নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে ফসলি জমি, প্রানহাণি ঘটতে পারে মানুষ সহ প্রাণী সম্পদের।
    পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রামবাসীর আতংক আরও বেড়ে চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ এবং গুটিকয়েক মানুষের ঠেলা জাল নদীতে ফেলার কারণে দেবহাটা উপজেলার চরকোমরপুর, ভাতশালা, টাউনশ্রীপুর, সুশীলগাতী, শীবনগর ও নাংলা সহ কয়েকটি স্থানের ভেড়ীবাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত বছরে যে সামান্য পরিমানের কাজ করা হয়েছিল সেসব স্থানে ছাড়াও নতুন নতুন স্থানে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
    গ্রামবাসীরা জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীপাড় থেকে বালু তোলার কারণে নদীর বাধঁ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানেও উপজেলার সুশীলগাতি এলাকায় মেশিনের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। বড় কোন জোয়ার বা বৃষ্টি হলেই ভেড়ীবাধঁগুলো যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
    ভেড়ীবাধঁঁ গুলির মধ্যে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ নাংলা ছুটিপুর, সুশীলগাতী এলাকার বিজিবি পোষ্টের সামনে, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা গ্রামের সামনের বাঁধ।
    এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভেড়ীবাধঁগুলো ঝুকির মধ্যে থাকে। পাউবো মাঝে মাঝে সংষ্কার কাজ করে কিন্তু সেটাও নামমাত্র। এর মধ্যে আবার প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও নদীর মাটি কেটে নিয়ে কতিপয় অসাধু মহল।
    গ্রামবাসী আরও জানান, চিংড়ি চাষীরা খেয়ালখুশীমত মূল বাধেঁর গা ঘেষে ছোট-ছোট বাঁধ দিয়ে মূল বাঁধের সর্বনাশ করছে। বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে পোনা ধরা এবং বালু তোলার কারণে বাঁধগুলো ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর আগে শীবনগরের পাশে রাজনগর মৌজা ইছামতির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
    এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
    নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লাভলু বিশ্বাস জানান, নাংলা এলাকার ভেড়ীবাধঁটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় তারা ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
    দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান জানান, নাংলা এলাকার ভেড়ীবাধঁ সংষ্কারের বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক কে সরেজমিনে দেখিয়েছেন। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
    এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ এর আওতাধীন ৩ নং পোল্ডারের কালীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও ওবায়দুল হক মল্লিক জানান, নাংলা এলাকার বাধঁ সংস্কারে এবং পাকা ব্লক দেয়ার জন্য প্রজেক্ট দেয়া আছে। বাজেট পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
    দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল আসাদ জানান, তিনি ইতিমধ্যে ভেড়ীবাধঁ সংষ্কারের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত গ্রামবাসী নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
  • শ্যামনগরের এমপি’র নিকট বাঘ বিধবাদের তালিকা ও তথ্য প্রদান

     

     

     

     

    দিপক মিস্ত্রী, বুড়িগোয়ালিনী: সুন্দরবন প্রভাবিত উপজেলা গুলোর মধ্যে শ্যামনগর একটি উলেখযোগ্য জনপদ। এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বেশীর ভাগ-ই জনগন সুন্দরবনের সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এই ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী সুন্দরবন নির্ভরশীল জনগন বসবাস করে। উপকুলীয় অঞ্চলে লোনা পানির চিংড়ী চাষের কারনে অনেক কৃষি শ্রমজীবি মানুষ বেকার হয়ে পড়ে ফলে তাদের এক মাত্র আয়ের পথ হিসেবে সুন্দরবন নির্ভরশীল হয়ে জীবন জীবিকার পথ বেছে নেয়। এখানে ৭০ ভাগ পরিবার সুন্দরবন নির্ভরশীল। পেশায় এরা সুন্দরবনের জেলে বাওয়ালী, মৌয়ালী, পোনা সংগ্রহকারী। এ সকল পরিবারের আয়ক্ষম সদস্যরা যারা সুন্দরবনে যান তারা অনেকেই বাঘ ও কুমিরের আক্রমনের শিকার হন এবং মৃত্যু বরণ করেন।

    বিভিন্ন গবেষনায় ও পরিচালিত এক জরিপে জুন ২০০৯ তারিখ পর্যন্ত শুধু মাত্র গাবুরা ইউনিয়নে ৩২৮ জনকে বাঘে ধরার তথ্য সংগ্রহ করে যার মধ্যে ৩৭ জন পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছে এবং বাঁকীরা সবাই মারা গেছে। সমগ্র সুন্দরবন প্রভাবিত এলাকায় এ ধরনের ১১৬০টি পরিবার রয়েছে। এলাকার মানুষের বদ্ধূমূল ধারনা যে, অলক্ষ্মী মহিলার জন্যই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এ ধারনা থেকেই একজন মানুষ বাঘের আক্রমনের শিকার হওয়ার পর পরিবার থেকে ঐ বিধবার উপর শুরু হয় মানসিক ও শাররিক নির্যাতন। অনেক বিধবা আছে যারা স্বামী মারা যাওয়ার পর বাবার বাড়িতে এবং বেশী অংশ নদীর চরে সরকারী খাস জায়গায় ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে।

    বাঘ বিধবাদের জীবন কাহিনী নিয়ে কথা বলেন সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক ও বাঘ বিধবা বিশেষজ্ঞ পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু। তিনি সাতক্ষীরা -০৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এস.এম জগলুল হায়দার মহোদয়কে জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের বাঘ বিধবারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা সমাজে সাধারণ মানুষের মত জীপন যাপন করতে পারছে না। অপয়া, অলক্ষ্মী, স্বামীখেগো গালিগালাজ নিয়ে এদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

    পূর্ণবাসন সহ স্থায়ী ভাতা প্রদানের সুব্যবস্থা করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে মাননীয় সংসদ সদস্যের নিকট সুন্দরবন ও বাঘ বিধবাদের জীবন কাহিনী সম্বলিত প্রকাশনা হস্তান্তর করেন। এ সময় মাননীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান আমি প্রতিটি বাঘ বিধবা পরিবারের পূর্ণবাসন ও স্থায়ী ভাতা প্রদান দাবি নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে তুলে ধরবো।

  • শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে কয়রার ১৭ টি গ্রাম

    শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে কয়রার ১৭ টি গ্রাম

    কয়রা প্রতিনিধি: খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাব্বুনিয়া গ্রামে শাকবাড়ীয়া আর কপোতাক্ষ নদীর অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে কয়রার ১৭ টি গ্রাম। অথচ এ বিষয় কোন কার্যকারী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষ।

    জানা যায়, ১৯৭০ সালে ২ টি নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে গাব্বুনিয়া গ্রামের উপর দিয়ে ৫/৬ শত ফুট দৈর্ঘের নদী খনন করে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়ীয়া নদীর সাথে যুক্ত করা হয়। এ সময় দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৩ টি ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামসহ ১৭ টি গ্রাম একটি দ্বীপে পরিণত হয় এবং মানুষ খেয়া নৌকায় চলাচল করত। কয়েক বছর চলার পর খনন করা নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় ১৯৭৪ সালে ২ নদীর পাড়ে আবার বেঁড়ীবাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

    প্রায় দীর্ঘ ৩ দশক চলার পর আবারও শাকবাড়ীয় ও কপোতাক্ষ নদীর অব্যাহত ভাঙনে বেঁড়ীবাঁধ ধ্বসে পড়ায় ১৭ টি গ্রামের ১২ টি ওয়ার্ডের প্রায় ৪২ হাজার মানুষের জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

    এছাড়া দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোলখালি গ্রামের শাকবাড়ীয়া নদীর তীরে কোষ্ট গার্ডের আঞ্চলিক অফিস এবং একই ইউনিয়নের খাসিটানা গ্রামে নৌ পুলিশ ক্যাম্প, পাইলট অফিস, কাষ্টম অফিস সহ আংটিহারা গ্রামে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেষ্ট হাউজ এছাড়া রয়েছে কোবাদাক ফরেষ্ট স্টেশন, বজবজা ও খাসিটানা ফরেষ্ট ক্যাম্প, ঘড়িলাল ও জোড়সিং বৃহত্তর ২ টি বাজার এবং সুন্দনবনের জেলে বাওয়ালী সহ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা নিয়মিত বাজার করেন।

    অন্যদিকে সুন্দরবন বেষ্টিত ১৭ টি গ্রামের মধ্যে রয়েছে গোলখালি, জোড়সিং ও পদ্মপুকুর মাছ বিক্রয় কেন্দ্র, যেখানে প্রতিদিন সুন্দরবনের মাছ সহ স্থানীয় চিংড়ি ঘেরের শত শত মণ মাছ কেনা বেচা হয় এসব বাজারে এবং ব্যবসায়ীদের কয়রা সদর সহ অন্যত্র যাওয়ার একমাত্র যোগাযোগ গাব্বুনিয়া গ্রামের ওয়াপদা বেঁড়ীবাঁধ।

    এলাকাবাসী জানায়, অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়ীয়া নদী মিশে যেতে পারে যে কোন সময়। তারা জানায় ৩ দশক আগে এখানে যাতায়তের জন্য খেয়া নৌকা পারপার ছিল এবং নদী ভাঙন রোধ করতে না পারায় আবারও হয়ত খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হবে ১৭ গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের।

    এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক শাখা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় তাদের কিছু করার নেই বলে জানান।

    উল্লেখ্য গত ১৫ ই রমজান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে টেকসই বাঁধ নির্মানের প্রতিশ্রতি ব্যাক্ত করেন।

    সংসদ সদস্য এ্যাড. শেখ নুরুল হক জানান, তিনি বিষয়টি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন এবং পাউবোর সকল উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছেন। তিনি আশা করছেন জরুরি ভিত্তিতে গাব্বুনিয়া গ্রামে ২ টি নদীর তীরে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

    কিন্তু এসব আশ্বাসের কথা এলাবাসী সহ উপজেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ মানতে নারাজ। সে জন্য উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম মোহসিন রেজা জানান, স্থানীয় জনগন বাচার তাগিদে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করায় বাঁধ কোন রকমে টিকে আছে।

    তিনি বলেন পাউবোর অব্যাবস্থাপনার কারণে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গুরুত্ব না দেওয়ায় কয়রা উপজেলা থকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের ১৭ টি গ্রাম।

  • ঝুকি কম, লাভ বেশি হওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছে চাষিরা

    ঝুকি কম, লাভ বেশি হওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছে চাষিরা

    বিশেষ প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় চিংড়ির পরিবর্তে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস, রপ্তানি হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় জেলায় চিংড়ি চাষিরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন।

    আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সাতক্ষীরাতে ‘কাঁকড়া চাষ’ চাষিদের মাঝে ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়াতে লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন। এমনকি বেকার যুবকরা সরকারিভাবে কাঁকড়া চাষের উপর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে কাঁকড়া চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন।

    সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১১২টি সরকারি ও ৩৪০টি বেসরকারি কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। তৈরির কাজ চলছে আরো কয়েকটি খামার।


    জানা যায়, ২০১৬-১৭ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় কাঁকড়া চাষ হয়েছে ৮৪ দশমিক ২ হেক্টর জমিতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৩ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমিতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৩ দশমিক ৩৯ হেক্টর জমিতে কাঁকড়ার চাষ হয়েছে। এছাড়া জেলায় ২০১৩ সালে দুই হাজার তিনশ’ মেট্রিক টন, ২০১৪ সালে দুই হাজার চারশো’ মেট্রিক টন, ২০১৫ সালে দুই হাজার আটশ’ ১৪ মেট্রিক টন, ২০১৬ সালে তিন হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে তিন হাজার চারশো’ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। যার প্রায় সবটাই রপ্তানি যোগ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায়।

    জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলাতে মোট ৪৫২টি কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। প্রতিবছর এসব ঘেরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪-১৫ সালে জেলায় কাঁকড়ার ঘের ছিল ৩৬৪টি, ২০১৫-১৬ সালে তা বেঁড়ে দাঁড়ায় ৩৮০টিতে এবং ২০১৬-১৭ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৪৫২টিতে। এভাবে অব্যাহত রয়েছে কাঁকড়া ঘেরের সংখ্যা বৃদ্ধি।
    বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। রপ্তানি তালিকায় অপ্রচলিত এই পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে।

    কাঁকড়া চাষিরা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিক ভাবে রেণু থেকে বড় হয়। এ অঞ্চলের লবণাক্ত পানি ১২ মাস কাঁকড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে। যে কারণে চাষিরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।


    চাষিরা জানান, বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে ছোট ছোট খাঁচায় রেখে মোটাতাজা করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২২ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাঁকড়া। এতে প্রতিটি কাঁকড়ার ওজন বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়। পরে এই কাঁকড়া রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে লাভ বেশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় কাঁকড়া চাষ পদ্ধতি।

    সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। দুই বিঘা জমির এই খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার খাঁচায় কাঁকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় বাগদী সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা।

    চাষিরা জানান, খাঁচায় চাষকৃত কাঁকড়ার খোলস নরম থাকে। এ কারণে বাজার চাহিদাও বেশি। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত এসব কাঁকড়া প্যাকেটজাত করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। দামও পাওয়া যায় ভালো, কেজি প্রতি ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কাঁকড়া চাষে। যার ফলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যে জেলায় ৪৫২টি কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আর এ খাত থেকে ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানি আয়।


    দেবহাটার বদরতলা এলাকার কাঁকড়া চাষি মানিক চন্দ্র জানান, তিনি একশ’ খাঁচা নিয়ে কাঁকড়ার চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার ঘেরে ১৫শ’ খাঁচায় কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। ২২ শতক জমিতে তিনি কাঁকড়া চাষ করছেন। তিনি জানান, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষে খরচ কম লাভ বেশি। তাই তিনি চিংড়ির পরিবর্তে খাঁচায় কাঁকড়া চাষ করেন। এ বছর তিনি কাঁকড়া বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভও করেছেন। এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কাঁকড়া চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এই কাঁকড়া চাষ করছেন বলে জানান।
    সরকার কাঁকড়া চাষিদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও মূলধন দিচ্ছে বলে জানালেন মনিকা রানী। যিনি বর্তমানে একজন উদ্যোক্তা। দেবহাটার নোড়ারচক এলাকার কানাই লাল ম-লের স্ত্রী। তিনি স্থানীয় মহিলা সমিতির সভানেত্রী। তার নেতৃত্বে ৫৫ জন নারী পুকুরে খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করেন। সরকার তাদেরকে ১৫০টি খাঁচা দিয়েছে।

    সরকারিভাবে এ উদ্যোক্তা কাঁকড়া চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীদের মাঝে কাঁকড়া চাষের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এতে তার দল কাঁকড়া চাষে সুফল দেখছে। তিনি খুব আনন্দিত। এবার নতুনভাবে কাঁকড়া চাষে সফলতা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।
    এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারি খরচে প্রতিদিন কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

    সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় কাঁকড়া চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ সাতক্ষীরা থেকে যায়। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে।

  • জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    জলবায়ু পরিষদ শ্যামনগরের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত

    শ্যামনগর সংবাদদাতা: শ্যামনগর জলবায়ু পরিষদের উদ্যোগে আইলা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে প্রগতি’র মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জলবায়ু পরিষদ সভাপতি সাবেক উপাধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাসদের সভাপতি শেখ হারুনর রশিদ, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান শাহানা হামিদ, অধ্যাপক দেব প্রসাদ মন্ডল, জাসদ নেতা আলতাফ হোসেন, প্রগতির সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু সাইদ, সাংবাদিক রনজিৎ বর্মন প্রমুখ।
    সভায় বক্তারা বলেন, আইলার আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। উপজেলার নদী সংলগ্ন ইউনিয়ন গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ি রমজাননগসহ উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধের সংস্কার করা হয়নি। এখনও আইলার দুর্গত অনেক পরিবার বেড়ী বাঁধে রয়ে গেছে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউপিতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
    উল্লেখ্য, ২৫ মে ২০০৯ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আইলার আঘাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় উপকুলীয় এলাকা। উপকুলীয় এলাকার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলায় মারাতœক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন তলিয়ে যায় পানির নিচে। অর্ধশত মানুষ মারা যায়। হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প, পুকুর, ফসলের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে যায়। জলচ্ছাসে কাঁচা ও আধা পাকা ঘর বিদ্ধস্ত হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়ে বহু মানুষ।