Warning: Attempt to read property "post_content" on null in /home/dakshinermashalc/public_html/wp-content/plugins/pj-news-ticker/pj-news-ticker.php on line 202 সুন্দরবন Archives - Daily Dakshinermashal
সুন্দরবনের মাউন্দে নদী সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার বিকালে কোস্ট গার্ড কৈখালী স্টেশনের সদস্যরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মাউন্দে নদী সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালীন সময়ে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আত্মসমর্পণ আহ্বানে কোস্টগার্ড দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এসময় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে বনের ভেতর পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ব্যাগটিতে তল্লাশি চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে গিয়ে গোলাম মোস্তফা সরদার (৪৭) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে সহকর্মীরা তার মৃতদেহ লোকালয়ে নিয়ে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের অওতাধীন কদমতলা ফরেস্ট স্টেশনের নোটাবেঁকীর ইলিশিমারি খালে মাছ শিকাররত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত জেলে গোলাম মোস্তফা সরদার খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রার নওশের আলী সরদারের ছেলে।
মোস্তফা সরদারের সহকর্মী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ছোট ভেটখালী গ্রামের ইউসুফ আলীর দাবি, ৪/৫ দিন আগে তারা এক সাথে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান। শুক্রবার বিকালে অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরার সময় সুন্দরবনের বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। এসময় তাদের (স্মার্ট টিমের) ভয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ঢুকে পড়েন তারা। এ সময় স্মার্ট টিমের সদস্যরা তাদের মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত নৌকাটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর সহকর্মী মোস্তফা সরদার হঠাৎ করেই অসুস্থতা বোধ করেন। তার ধারণা সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। পরে মোস্তফা সরদারকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে সুন্দরবনের নদীর পাশে এসে অন্য জেলেদের নৌকা খোঁজ করতে থাকেন। এরপর তাদের অন্য সহকর্মীদের একটি নৌকা দেখতে পেয়ে সেই নৌকার জেলেদের নিয়ে মোস্তফা সরদারের পাশে যান তিনি। সেখানে গিয়ে মোস্তফা সরদারকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে সেখান থেকে সারারাত নৌকা চালিয়ে মোস্তফা সরদারের মরদেহ সকালে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জার সহকারী রেঞ্জার এবিএম হাবিবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়েছি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে মাছ ধরার সময় এক জেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে কোন এলাকায় মারা গিয়েছে এখনও জানতে পারিনি।
সুন্দরবনে প্রবেশে তিন (০৩)মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগ। পহেলা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত উক্ত বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে বলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। এসময়ের মধ্যে কোন বনজীবিকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (পাস) দেয়া হবে না। একইভাবে উক্ত নির্দিষ্ট সময়ে কোন পর্যটকও সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না।
জীব ও প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে এমন সিদ্ধান্ত বলে দাবি বনবিভাগের। ইতিপুর্বে দুই মাস বা ৬০দিনের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে ২০২১সালে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও ৩০দিন বা এক মাস বৃদ্ধি করা হয়।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ ও ইকো ট্যুরিজম বন্ধ থাকবে। খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান স্বাক্ষরিত এতদসংক্রান্ত একটি লিখিত নির্দেশনা তারা গত ২৩ মে তারিখে হাতে পেয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে বনবিভাগের সকল অফিস হতে ২৬ মে থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের পাশ (অনুমতিপত্র) প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। একই সাথে আগে পাশ নিয়ে এখনো যারা সুন্দরবনে অবস্থান করছে তাদের ৩১ মে তারিখের মধ্যে লোকালয়ে ফিরতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সারা বছর হাজার হাজার বনজীবি সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়াসহ গোলপাতা ও মধু আহরণ করেন। তাই সুন্দরবনের বিশ্রাম দেয়ার মাধ্যমে সেখানকার প্রকৃতি প্রতিবেশসহ জীব-প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর তিন মাস এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেয়া
পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের ভিতর থেকে ৬শ’ পিস হরিণ শিকারের ফাঁদসহ ২টি নৌকা উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরের দিকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন টাটের খাল এলাকা থেকে হরিণ শিকারের ফাঁদ ও নৌকা উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের একটি টহল দলের সদস্যরা মঙ্গলবার দুপুরে টাটের খাল এলাকায় পৌঁছালে চোরা শিকারীরা বনকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ব্যবহৃত নৌকা ও হরিণ শিকার করা ফাঁদ ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় সেখান থেকে দুটি নৌকা ও ৬ শ’ পিস হরিণ শিকার কাজে ব্যবহৃত ফাঁদ উদ্ধার করা হয়।
বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, নিয়মত টহল চলাকালীন সময়ে সুন্দরবনের গহীনে টাটের খাল এলাকা থেকে হরিণ শিকারি চক্রর ফেলে যাওয়া দুইটি নৌকা ও ৬শ’ পিস ফাঁদ উদ্ধার করা হয়েছে।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণের
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরার
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি ফরেষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে
এর উদ্বোধন করেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রণী
খাতুন।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বণ কর্মকর্তা (ডিএফও)
এজেএম হাসানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্যামনগর
উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত, শ্যামনগর থানা
ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর, বুড়িগোয়ালিনি ইউপি
চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি
বণকর্মকর্তা মশিয়ার রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রতি বছরের পহেলা এপ্রিল সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু হলেও
রমজান মাসের কারণে সোমবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো।
পরিবেশ রক্ষায় সুন্দরবনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বনদস্যূ ও চোরা
শিকারীদের হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে কোস্ট গার্ড, বণবিভাগ,
র্যাব ও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মধু চুরি ও ভেজাল রোধে বনবিভাগ সব
ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধু সংগ্রহের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের
জন্য মৌয়ালদের সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, আজ পর্যন্ত
৮২টি বিএলসির মাধ্যমে মৌয়ালরা সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। এবারের
লক্ষ্য মাত্রা দেড় হাজার কুইন্টাল মধু ও ৪০০ কুইন্টাল মোম ধার্য করা
হয়েছে।# সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাংÑ ০৭.০৪.২৫ ছবি আছে।
সুন্দরবনে মুক্তিপণের দাবিতে রবিউল ইসলাম (৩৫) নামে এক জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যুরা। রোববার (১ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের কলাগাছিয়া খাল থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত জেলে রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের নীলডুমুর গ্রামের মৃত অছির উদ্দীনের ছেলে।
সহকর্মীদের বরাত দিয়ে অপহৃত জেলের স্বজনরা জানান, রবিউল ইসলাম শনিবার সকালে বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন থেকে কাঁকড়া শিকারের পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। অপর এক সহযোগীকে নিয়ে কলাগাছিয়া খালে কাঁকড়া শিকারের সময় রোববার সকালে সশস্ত্র তিন ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে রবিউলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় নিজেদের মজনু বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে পরবর্তীতে বাড়িতে যোগাযোগ করে বিকাশে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণ করবে বলেও জানিয়ে দেয় তারা।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জে এড হাসানুর রহমান জানান, সুন্দরবনে কোন ছেলেকে অপহরণের বিষয় কেউ তাদেরকে অবহিত করেননি। তবে সম্প্রতি সময়ে সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্লা জানান, অপহরণের শিকার জেলে পরিবারের কেউ থানায় কোন অভিযোগ করিনি।
রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সুন্দরবনের দুবলারচরে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী ‘রাসপূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে। পুর্ণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
পূজা ও পুর্ণ্যস্নানে আগত তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন নদী পথে লঞ্চ, ট্রলার, স্পীডবোট ও দেশি নৌকাযোগে গমন করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনুমোদিত পাঁচটি পথ হলো: বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়-য়া শিবসা-শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর এবং বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।
পুর্ণ্যস্নানে অংশ নিতে দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর-এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায়পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে। অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয় পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ্য করা হবে এবং তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীগণ পছন্দমত একটি রুট বা পথ ব্যবহার করবেন। ১৪ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা আরম্ভ করতে হবে। রাসপূূর্ণিমা পুর্ণ্যস্নানে উদ্দেশ্যে নির্ধারিত নৌযান রুটে শুধু দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইভ জ্যাকেট বা বয়া সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রতিটি জলযানের গায়ে রঙ অথবা স্টিকার দিয়ে বি, এল, সি/সিরিয়াল নম্বর, তীর্থযাত্রী/পুণ্যার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হবে। সুন্দরবনে প্রবেশকালে প্রতি তীর্থযাত্রী/পুণ্যার্থীকে একটি করে টিকেট বা টোকেন প্রদান করা হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন টোকেন বা টিকেট সর্বদা নিজের সাথে রাখতে হবে। প্রতিটি লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারকে আলোরকোলে স্থাপিত কন্টোলরুমে আবশ্যিকভাবে রিপোর্ট করতে হবে। এর ব্যত্যয় করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাসপূর্ণিমা পুর্ণ্যস্নানের সময় কোন বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ। কারো কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অবস্থায়ই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের প্লেট, পানির বোতল, গ্লাস বা চামচ বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুর্ণ্যস্নান স্থলে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ইত্যাদি ফোটানোসহ সকল প্রকার শব্দ দূষণ নিষিদ্ধ। রাসপূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্রের মূলকপি সাথে রাখতে হবে।
তীর্থযাত্রীদের উল্লিখিত নিদের্শনা মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বৈষম্য নিরসন ও
কাঙ্খিত উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের
প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ওই অঞ্চলের সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে স্থানীয় জনগণের
জীবনযাত্রার মান আরো নাজুক হবে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’
এবং ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও
উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী
পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। আলোচনায় অংশ নেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্য সচিব শরীফ
জামিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল, শেরে বাংলা কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ
সম্পাদক আশীষ কুমার দে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও কল্যাণ
সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সাকিলা পারভীন, লিডার্সের
অ্যাডভোকেসি অফিসার তমালিকা মল্লিক প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ কবলিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের (খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট) বিদম্যমান সমস্যা
সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনায় মোহন
কুমার মণ্ডল বলেন, ওই এলাকার সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে দক্ষিণ-
পশ্চিম উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ওই এলাকার
প্রতিটি বাড়ীকে দুর্যোগ সহনশীল করে গড়ে তুলতে হবে। সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধানে বৃষ্টির পানির
সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী ও জলাশয়কে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সুন্দরবন সুরক্ষায়
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই এলাকায় বরাদ্ধ দিতে হবে
এবং তা ব্যবহারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অঞ্চল দেশের
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চল প্রকৃতিগত ভাবে একটি ঐশ্বর্যপুর্ণ এবং ভু রাজনৈতিক ভাবে
গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপকূল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বৈষম্য
নিরসনের পাশাপাশি অনাচার বন্ধ করতে হবে। অন্যত্থায় আমাদেরকে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখী হতে হবে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভয়াবহ ক্ষতির সন্মূখীন হবে।
উপকূলের উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল বলেন,
এই অঞ্চলটি দীর্ঘ অবহেলার শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত
অবকাঠামোর অভাবে মারাত্মক সংকটে আছে সেখানকার জনগণ। তাই উপকূলের উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদি
কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আশা
প্রকাশ করেন তিনি।
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার পর থেকে সাগরে না যাওয়া জেলেদের
জীবন-জীবিকার বিষয়ে ভাবতে হবে। এনার্জির নামে উপকূলের নদীগুলোকে ধ্বংস করায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
ইলিশের উপর নির্ভরশীল জেলেরা। তাছাড়া নদীর ছোট নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জাহাজ চলাচলের
কারণে মাছ ধরাই অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। ফলে ওই নদীর জেলেরা মালিক থেকে সাগরের মাছ ধরা জাহাজের
শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। এ সকল সংকট নিরসনে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার সুন্দরবনে বিভিন্ন সময় আত্মসমর্পন করা ১৫ জন জলদস্যুর মাঝে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে র্যাব-৬। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা ক্যাম্পে এই আয়োজন করা হয়। এসময় র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা কোম্পানী কমান্ডার মেজর গালিব সহ র্যাবের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসব জলদস্যূরা বিভিন্ন সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিলো। বর্তমানে তারা কৃষিকাজ সহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া প্রাক্তন জলদস্যূরা হলেন- সাতক্ষীরার মোঃ সোলায়মান গাজী, মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম গাজী, মোঃ আলম সানা, মুকুল হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, নাজমুল মল্লিক, সাদ্দাম তরফদার, মোঃ মাসুম বিল্লাহ, মোঃ সবুজ হোসেন, মোঃ আব্দুল করিম ওরফে ম্যাজিক, মোঃ সেলিম মোড়ল, মোঃ এবাদুল ইসলাম, তইবুর মোড়ল, শেখ আবু জাফর ও যশোরের অভয়নগরের আমিরুল ইসলাম। র্যাব-৬ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর গালিব বলেন, প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষ্যে র্যাবের উদ্যোগে প্রাক্তন জলদস্যূ ছাড়াও দুঃস্থ ও গরীব সহ বিভিন্ন মানুষের মাঝে এ ধরনের উপহার বিতরন করে থাকে। ১৫ জন বিভিন্ন সময়ে আত্মসমর্পন করা জলদস্যূদের মাঝে আজ এই ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এটি পেয়ে তারা অনেক খুশী হয়েছে। আমরা চাই তারা বর্তমানে যেভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে সেটাই চালিয়ে যাক। তারা যাতে অসৎ পথে পুনরায় পা না বাড়ায় সেজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।
সুন্দরবনের বাঘের মুখ থেকে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বৈশখালী গ্রামের মৃত জব্বার আলী গাজীর ছেলে আব্দুল ওয়াজেদ (৪৫)।
বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে তাঁকে নিয়ে লোকালয়ে ফিরেছেন তার ছোট ভাই লিয়াকত হোসেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাছিকাটার দাড়গাঙে কাঁকড়া আহরণের সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হন আব্দুল ওয়াজেদ।
আব্দুল ওয়াজেদের ছোট ভাই লিয়াকত হোসেন জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাছিকাটার দাড়গাঙে তাঁর বড় ভাই কাঁকড়া শিকার করছিলেন। হঠাৎ করেই মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে একটি বাঘ তাঁর ভাইয়ের ওপর হামলে পড়ে। এ সময় নৌকায় থাকা গরানের লাঠি নিয়ে তিনি উচ্চস্বরে শব্দ করেন এবং সেই সঙ্গে বাঘের চোখে চোখ রেখে মোকাবিলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বাঘটি তাঁর ভাইকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। পরে তিনি ভাইকে উদ্ধার করে লোকালয়ের উদ্দেশে রওনা হন।
তিনি আরও জানান, তাঁর ভাইয়ের পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত লেগেছে। মাথার এক অংশেও সামান্য আঘাত আছে। তাঁকে এখন বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় একজন জেলে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তবে, তার নামে পাস পারমিট ছিল না।
সুন্দরবন পশ্চিম রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আবুল হোসেন একজন মোটরসাইকেলচালক। সে সুন্দরবনের চোরাশিকারীদের কাছ থেকে একটি জবাই করা হরিণ কিনে নিয়ে আসছিল। এ সময় সন্দেহবশত স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পরে বস্তা ভরা হরিণের মাংস দেখে বন বিভাগকে খবর দেয়। বন বিভাগের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে হরিণের মাংস ও মোটরসাইকেলসহ আবুল হোসেনকে আটক করে।
তিনি আরও বলেন, আটক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠানো হবে।
সুন্দরবনের দুবলারচরে শুঁটকি শুকানোর সময় সাপের কামড়ে মনিরুল গাজী (২৪) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। মনিরুল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের মৃত মনোয়ার গাজীর ছেলে।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দুবলারচর থেকে অন্য জেলেরা মোবাইল ফোনে জানিয়েছে মনিরুল গাজী সাপের কামড়ে মারা গেছে। তার মরদেহ নিয়ে দুবলারচর থেকে তারা বাড়িতে রওনা হয়েছে। শুনেছি শুঁটকি পল্লীতে মাছ বিছানোর সময় তাকে সাপে কামড় দেয়। সোমবার রাতে তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছাবে।’
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে থেকে বিষয়টি শুনেছি। মরদেহ পৌঁছানোর পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হবে।
মশাল ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর প্রতি লাল কার্ড প্রদর্শন করেছে সাতক্ষীরার তরুণরা।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা নিউ মার্কেটস্থ শহীদ স ম আলাউদ্দীন চত্বরে সমবেত হয়ে তারা কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর প্রতি এই লাল কার্ড প্রদর্শন করে।
বিশ্ব জলবায়ু কর্মসপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র রক্ষা টিম এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত এই লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, নাগরিক নেতা ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, নাগরিক নেতা ও উন্নয়ন কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লাইলা পারভীন সেজুতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র রক্ষা টিমের সংগঠক হাবিবুল হাসান, বারসিকের সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিহান, যুব সংগঠক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অধিকমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জন্য সমগ্র বিশ^ এখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকির মুখে পড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা রয়েছে আরও ঝুঁকিতে। নানা সময় উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর প্রতিশ্রæতি দিলেও তারা এক্ষেত্রে আন্তরিক নয়। একই সাথে প্রতিশ্রæত ক্ষতিপূরণ প্রদানেও টালবাহনা করে।
বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রতিশ্রæত ক্ষতিপূরণ আদায় ও কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টিতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান।
এই লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি, প্রথমআলো বন্ধুসভা, পিস ক্লাব, রোটার্যাক্ট ক্লাব, টিআইবির ইয়ুথ এনগেজমেন্ট গ্রুপ ইয়েস, নেক্সাস সাতক্ষীরা, রোভার স্কাউট ও আশার আলো কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
এর আগে একই দাবিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি র্যালি নিয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে তরুণরা।
সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু
ন্যাশনাল ডেস্ক : সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষায় তিন বছর মেয়াদি সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বন অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, গত ২৩ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রশাসনিক আদেশে ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে তিন বছর। এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের মার্চে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী শুষ্ক মৌসুম নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে প্রকল্পের কাজ শুরু সম্ভব হবে না। প্রকল্পের অধীনে বাঘ গণনা, বাঘের জীবনাচরণসহ সব ধরনের গবেষণাধর্মী কাজ করা হবে। বাঘের শরীরে বসানো হবে স্যাটেলাইট কলার বা ট্রান্সমিটার। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বাঘ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
মিহির কুমার দো বলেন, যে স্থানগুলোয় বাঘের বিচরণক্ষেত্র সে স্থানগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাঘের সংখ্যা নিরূপণ, বাঘের খাদ্য, নিরাপদ আবাসস্থলসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পানির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; যার কারণে সুন্দরবনের উঁচু স্থানেও জলোচ্ছ্বাসের পানি উঠে থাকে। এতে বাঘের আবাসস্থল ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা মাথায়
রেখে বনের গহিনে ১২টি মাটির ঢিবি নির্মাণ করা হবে। সুন্দরবনের যেসব নদী-খাল মরে গেছে সেসব এলাকায় ৬০ কিলোমিটার জুড়ে ‘স্টিলের নেট’ দেয়া হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় প্রথমত, বন থেকে চোরা শিকারি তাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে হবে। বনের ইকোসিস্টেমে কোনো একটা অংশে ব্যাঘাত হলে তার প্রভাব বাঘের ওপর পড়ে। বাঘের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়।
খুলনা সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন টিকিয়ে রাখতে হলে বাঘ টিকিয়ে রাখা জরুরি। বাঘই সুন্দরবনের বিশ্বস্ত পাহারাদার।
সুন্দরবনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু। চলবে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত। মৌয়ালরা বন বিভাগ থেকে অনুমতিপত্র (পাশ-পারমিট) নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছেন। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবন বিভাগ মধু আহরণ মৌসুম ১ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাস সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার খলসি গাছের ফুলের মধু আহরণ করতে আড়াই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম দুই বিভাগের বনাঞ্চলের ভৌগোলিক অনেক পার্থক্য থাকায় দুই বিভাগের সমগোত্রের গাছপালাও একই রকম জন্মায় না। সুন্দরবনে যে কয়টি প্রজাতির ফুলের মধু পাওয়া যায়, তার মধ্যে খলসি ও গরাণ ফুলের মধু উন্নতমানের। এর মধ্যে আাগাম ফুল আসে খলসি গাছে। সুন্দরবনের দুই বিভাগের মধ্যে পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে খলসি প্রজাতির গাছ বেশি থাকায় সেখানের মৌয়ালরা বন বিভাগ থেকে অনুমতিপত্র (পাশ-পারমিট) নিয়ে ১৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে যাচ্ছেন। তবে, সাতক্ষীরা তুলনায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে খলসি গাছ কম থাকায় বাগেরহাটের মৌয়ালরা এখনও বন বিভাগ থেকে নেননি। এখন সুন্দরবনে মধু আহরণে যাচ্ছে না তারা।
এদিকে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণ মাসের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আয়োজনে মঙ্গলবার দুপুরে বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ কার্যালয়ে মধু আহরণ মাসের উদ্ধোধন করেন,
খুলনা বিভাগীয় বনসংরক্ষক (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহাম্মাদ মহসীন হোসেন। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন, খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মিহির কান্তি। বিশেষ অতিথি ছিলেন,উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তারুজ্জামান, ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) এম.এ হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, এবার সুন্দরবনের মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১হাজার ২শত কুইন্টাল এবং মোম আহরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২৬৫ কুইন্টাল। প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ১হাজার ৬শত টাকা এবং মোমের জন্য ২হাজার ২শত টাকা রাজস্ব নির্ধারিত করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বাওয়ালীরা সুন্দরবনে পুষ্পকাটি, নোটাবেকী, দোবেকি ও কাচিকাটা স্পট হতে মধু আহরণ করতে পারবেন।
প্রতি নৌকায় ১০-১২ জন বাওয়ালী অবস্থান করতে পারবেন। ১জন বাওয়ালী ১৫দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু ও ১৫ কেজি মোম আহরণ করতে পারবেন। ১৫দিনের বেশি কোন বাওয়ালী সুন্দরবনে অবস্থান করতে পারবেন না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৫জন বাওয়ালীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মধু আহরণের অনুমতি প্রদান করা হয়। চলতি বছর ১৫দিন আগেই সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু হয়েছে। আজ ১৫ মার্চ হতে আগামী ১৫ মে আড়াই মাস ব্যাপী বাওয়ালীরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এলাকা হতে বাওয়ালীরা অংশ গ্রহণ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদলে বাঁধের তাৎক্ষণিক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের স্থানীয় সরকারকে বেড়িবাঁধ বাজেট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ এমপি রবি’র
জহুরুল কবীর:
উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য রাজস্ব থেকে জলবায়ু পরিববর্তন মোকাবেলায় সক্ষম বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ, জনপ্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজ। গতকাল আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাবৃন্দ বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন। ‘বাজেট ২০২১-২২: উপকূলীয় সুরক্ষা’ শীর্ষক এই সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্ট একশান নেটওয়ার্ক (ক্লিন)।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। সেমিনারে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন নারায়ণ চন্দ্র এমপি (খুলনা-৫), বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোশতাক আহমেদ রবি এমপি, (সাতক্ষীরা-২), জনাব নুরুন্নবী চৌধুরী এমপি (ভোলা-৩), নাহিম রাজ্জাক এমপি (শরীয়তপুর -৩), আশেক উল্লাহ রফিক এমপি (কক্সবাজার -২), শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি (গাইবান্ধা -২), জাফর আলম এমপি (কক্সবাজার -২)। সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আইনুন নিশাত, সিপিআরডির মোঃ শামসুদ্দোহা এবং ক্লিন-খুলনার হাসান মেহেদী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সৈয়দ আমিনুল হক।
এছাড়া প্রগতি পরিচালক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, দৈনিক দক্ষিণের মশালের বার্তাসম্পাদক জহুরুল কবীর প্রমুখ।
সৈয়দ আমিনুল হক উল্লেখ করেন, প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য দুর্যোগ উপকূলীয় এলাকার জীবিকার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং দরিদ্র লোকেরা সবচেয়ে ঝুঁকির থাকা উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাস করায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এরপরেও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার বাজেট বরাদ্দ গতানুতিক এবং সংকট মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত। তিনি তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেন: (১) বাঁধ নির্মাণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা হিসেবে সরকারকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে, (২) তাৎক্ষণিক বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকারকে বাজেটসহ দায়িত্ব দিতে হবে এবং (৩) উপকূলীয় সুরক্ষা, বিশেষত প্রাকৃতিক সুরক্ষা, উপকূলীয় মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে একটি কার্যকরী বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে এবং শহরের পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনীকায়নের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, যে একটি জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রয়োজন, যা সরকারকে উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দের দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। বেড়িবাঁধ উন্নয়ন নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি আমরা এই বিষয়ে একটি রোডম্যাপের জন্য কাজ করছি। এটি সত্য ডে, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যতীত উন্নত বাংলাদেশের কল্পনা করা অসম্ভব, তাই উপকূলের সমস্যাকে কোনও অঞ্চলের আলাদা কোনও সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করে এটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ডাঃ আইনুন নিশাত বলেন, বাজেট বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে, বাঁধ বিষয়ক পরিকল্পনায় এই পরিস্থিতি অনুপস্থিত। ‘ডেল্টা প্ল্যান’ এর আওতাধীন প্রকল্পগুলি পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের দুর্যোগ পূর্বাভাসকে বিবেচনা না করেই গ্রহণ করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোশতাক আহমেদ রবি এমপি বলেন, উপকূলীয় সুরক্ষায় বিনিয়োগ করলে সেটা জাতীয় অর্থনীতিতে দ্বিগুণ ফেরত দিতে পারে। আমরা স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদলে বাঁধের তাৎক্ষণিক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের স্থানীয় সরকারকে বেড়িবাঁধ বাজেট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করেন। আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে আমরা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিতে পারছি না। এ কারণেই কক্সবাজার জেলার কিছু অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সময়োপযোগী এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে। সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, উপকূলীয় বিপর্যয়ের প্রভাব হ্রাস করতে পানি ব্যবস্থাপনার ও পরিকল্পনার জন্য ব্যাপক আয়োজন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটিই সম্ভব আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
আমরা এই বিষয়ে নীতি প্রণয়ন জোরদার করতে উপকূলীয় সাংসদদের নিয়ে একটি ‘ককাস’ গঠন করতে পারি। সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন যে, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কৌশল এবং পদ্ধতিকেসরকারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটা করা সম্ভভ হলে এটি অগ্রাধিকার পাবে। এর জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় প্রয়োজন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এই নীতিমালায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প আয় তৈরিতে সক্ষম শিক্ষা বিস্তারকেও অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।
দুর্যোগের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে বাঁধগুলোর একটি মূল্যায়ন হতে হবে, এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রতিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনা করেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এনজিও, জনপ্রতিনিধি এবং সরকার- সকালের অংশ্রগহণের ভিত্তিতে একটি সুসংহত পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ছাপিয়ে আবারো বিস্তীর্ণ প্রতাপনগর অঞ্চল প্লাবিত হতে হয়েছে। জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বেড়িবাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছে উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা। ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসী। উপকূলীর মানুষেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করছে।
উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এশিয়ার বৃহত্তম সবুজ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন এই জেলায় অবস্থিত। এই উপকূলের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। শক্ষিাঙ্গণরে মহা পুরুষ খানবাহাদুর আহসান উল্লাহ এই শহরের গর্ব। তাছাড়া শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যপক ডাঃ এম আর খান, ডাঃ রুহুল হক (সাবেক মন্ত্রী) (অর্থপেডিক্স), শৈল্য চিকিৎসক ডাঃ শ্যামাপদ পাল, ডাঃ আজিজার রহমান; বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানি ড. এম মতিয়ার রহমান; বিশ্ব বিখ্যাত বাঘ শিকারী পচাব্দী গাজী; প্রথম মুসলিম মহিলা কবি আজিজুননেছা খাতুন; বাঙালি লেখক/কবি মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী; বিশিষ্ট সাহিত্যিক সিকান্দার আবু জাফর; সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবেদ খান; বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আব্দুল মোতালেব; বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব অমর মিত্র (৩০ আগস্ট, ১৯৫১) ও আবুল কাশেম মিঠুন, পরীমনি; প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও নীলুফার ইয়াসমীন; চিত্রনায়ক আমিন খান ও রানী সরকার; নাট্যশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তারিক আনাম খান, আফজাল হোসেন, ফাল্গুনী হামিদ ও মৌসুমী হামিদ; বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী (একুশে পদকপ্রাপ্ত) সৈয়দ জাহাঙ্গীর; আব্দুল জলিল (ঈশিকা); ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার; নারী ফুটবলার সাবিনা; রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীন (সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ-১৯৭০ ); এম মনসুর আলী (সাবেক মন্ত্রী), সৈয়দ কামাল বখত সাকি, সৈয়দ দীদার বখত; পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়; সাবেক সেনা প্রধান ভারতের শঙ্কর রায় চৌধুরী প্রমুখ জ্ঞানী-গুণিজন এই জেলার অহঙ্কার। ভোমরা স্থল বন্দর, চিংড়ি ও কাকড়া শিল্প এই জেলার বৃহৎ রাজস্ব আয়ের উৎস। কপোতাক্ষ, ইছামতি (আদি যমুনা), কালিন্দী, কাকশিয়ালী, বেতনা(বেত্রাবতী), খোলপেটুয়া, গলঘেসিয়া, মরিচ্চাপ এই জেলার প্রধান প্রবহমান নদ-নদী সমুহ। এছাড়া প্রাণসায়র খাল জেলা শহরের প্রধান জল প্রবাহ।
জলবদ্ধতা, লোনা পানি, আন্তর্জাতিক সীমানা এই জেলার প্রধান সমস্যার উৎস। জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়ন মিষ্টি পানির অভাবে বছরের বার মাস খাওয়ার পানি সঙ্কটে ভোগে। জেলার নদীগুলোয় চলমান প্রবাহ না থাকায় প্রতিনিয়ত পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য ঘেরে লোনা পানি উঠানোয় বসতি এলাকাও লবনাক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে খাওয়ার জন্য মিষ্টি পানির প্রচ- অভাবী এই উপকূল।
নদীগুলোয় চলমান প্রবাহ না থাকায় নদীর তলদেশ উচুঁ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে নদীর পানি উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বসতি এলাকা অপেক্ষা নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদীগুলো ওভারফ্লো হয়ে পানি বসতি এলাকায় প্রবেশ করায় বছারের প্রায় ১২মাস উপকূলের অধিকাংশ ইউনিয়ন পানির নিচে থাকে। ফলে পয়নিষ্কাশনের মারাত্মক অসুবিধায় ভোগে এলাকার মানুষ। গৃহপালিত পশুর জীবন যাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এলাকায় কৃষি উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়েছে খুলনা সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। হাতে গোনা কিছু মানুষ জলে এবং জঙ্গলে কাজ করলেও তাতে পরিবারে স্বচ্ছতা ফেরে না। অভাবের তাড়ণায় পিতামাতা শিশু কিশোরদের লেখাপড়া বন্ধ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকের কাজে পাঠাতে বাদ্য হচ্ছে। গত বছর শ্যামনগরের কয়েকটি পরিবারের একাধিক শিশু ঢাকা গাজীপুর ইট ভাটায় দাদন খাটতে যেয়ে প্রাণ হারায়। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ হারে হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার হার। কর্মহীনতা যার প্রধান কারণ। সাতক্ষীরা উপকূলের নিন্ম শ্রেনীর বড় একটা গোষ্টি সুন্দরবন নির্ভর হয়ে হরে পড়েছে। কাঠ ও গোলপাতা কাটা, মধু আহরণ, পশু শিকার, মাছ ধরা ইত্যাদি এদের প্রধান পেশা হয়ে উঠেছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবন। জঙ্গলের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ায় জনপদে চলে আসছে বাঘ, হরিণসহ বনজ প্রাণী। যার জন্য বনজীবীরা বাঘের মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। সাতক্ষীরা এমন একটা জেলা যেখানে সরকারি বে-সরকারি কোন কলকারকাখা নেই। আশির দশকে তৎকালিন বস্ত্রমন্ত্রী এম মুনছুর আলী একটি টেক্সটাই মিল (সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস) প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তি সরকারের বাটপারেরা লুটপাট করে ধ্বংস করে দেয়। বর্তমানে এর (সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস) বিশাল জায়গা ছাড়া আর কিছু নেই। জেলার সামন্য একটা জনগোষ্টি ভোমরা স্থল বন্দরের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য এই জেলায় কোন কর্মসংস্থান না থাকায় বৃহত্তর চাকরী প্রার্থি রাজধানি মুখি হয়ে ওঠে। সাতক্ষীরা ভারত সীমান্ত ঘেসা হওয়ায় উৎপাদন মুখি অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান মূল্য সংকটে পড়ে। রাজধানি ঢাকা থেকে কাচামাল এনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে যে খরচ পড়ে দেখা গেছে পাশের রাষ্ট্র ভারতে তার দাম অনেক কম। আবার চায়না পণ্যের মূল্য আরো কম হওয়ায় ঢাকার মার্কেটেও স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য বেঁচা যায় না। এরকম নানান সমস্যা ও জটিলাতার জেলা উপকূলীয় সাতক্ষীরা। শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা থেকে সাতক্ষীরা বঞ্চিত। বিভিন্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সারা বছর আন্দোলন করলেও অদ্যবধি কোন জাতীয় বাজেটে দক্ষিণ উপকূলের জন্য বিশেষ কোন প্রকল্প গ্রহণ বা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এমতাবস্থায় সাতক্ষীরাবাসীর প্রধান দাবীসমুহ উপকুলীয় নদ-নদীসমুহে প্রবাহ বাড়াতে নদী খননসহ আন্তনদী সংযোগ সৃষ্টিতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণপূর্বক বরাদ্ধ দিতে হবে। মাওয়া থেকে সুন্দরবন (লিঙ্ক মোংলা, ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর) মহাসড়কের আওতায় হাইওয়ে সড়ক ও রেল লাইন নির্মান করতে হবে। পদ্মার এপারে খুলনায় আন্তর্জাতিক আমদানি নির্ভর মার্কেট তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিকৃত পণ্য খুলনা থেকে দেশব্যাপী সরবরাহ করতে হবে। ভোমরা স্থল বন্দরকে পূর্ণাঙ্গতা দিয়ে রাষ্ট্রীয় সকল আমদানী এখান দিয়ে করতে হবে। জেলার সাত উপজেলায় সাতটি পৃথক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সাতটি ২০ লাখ শ্রমিক নির্ভর ইকোনোমিক জোন তৈরি করতে হবে। ভারতের বিভিন কোম্পানীর ম্যানুফ্যক্সারিং কারখানা উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে স্থাপন করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা প্রধান স্থপনা সুন্দরবনের শক্তি বৃদ্ধিতে বনের ঘনত্ব বাড়াতে হবে। বিশাল বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষা সুন্দরবনের পরিধি দিনকিদিন সাগরে ভেঙে যাচ্ছে। বঙ্গপসাগরে সুন্দরবনের ভাঙন রোধে বিশেষ বাধ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এশিয়ার বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরকে পর্যাটন নগর ঘোষণা করতে হবে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতালে উন্নিত করতে হবে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী এমএলএসএস পদে প্রশাসনিক স্থায়ী নিয়োগ দিতে হবে।