Category: রাজনৈতিক দল

  • যুবলীগ নেতার হাতের আঙুল কেঁটে নিল ছাত্রলীগ নেতারা

    যুবলীগ নেতার হাতের আঙুল কেঁটে নিল ছাত্রলীগ নেতারা

    নিজস্ব প্রতিনিধি : চায়ের দোকানে ছাত্রলীগ নেতাদের খাওয়ার বিল পরিশোধ করা নিয়ে দ্ধন্দের জেরে মুজাহিদুর রহমান অন্তু নামের এক যুবলীগ নেতার হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে নিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবলীগ নেতাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছেন ওই যুবলীগ নেতার বাবা। আহত যুবলীগ নেতা মুজাহিদুর রহমান অন্তু সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইটাগাছা এলাকার আবুল হাসানের ছেলে।
    অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, শহরের ইটাগাছা এলাকার মৃত.গিয়াজউদ্দীনের ছেলে ও ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ হোসেন, একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন এবং শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বাবু তালুকদারের ছেলে সোহেল রানা।
    আহত যুবলীগ নেতা অন্তুর বাবা আবুল হাসান জানান, গত ১৬ সেপ্টম্বর সকালে শহরের বাকাঁল এলাকায় রোজ মার্কেটে এক চায়ের দোকানের বিল পরিশোধের জন্য আমার ছেলে মুজাহিদুর রহমান অন্তুর কাছ থেকে ২০ টাকা দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ হোসেন, জাহিদ হোসেন ও সোহেল রানা। তাদের দাবিকৃত ২০টাকা দেওয়ার পরও তাদের সঙ্গে আমার ছেলের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন দুপুরে অন্তু প্রয়োজনীয় কাজে শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিলে রাস্তার উপর ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ, জাহিদ, রানাসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন অন্তুর পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করে। তিনি আরও বলেন, তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অন্তুর বাম হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে চামড়ার সাথে ঝুলে থাকে। এ সময় তার আতœচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরত্বর আহত অবস্থায় অন্তুকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
    সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, যুবলীগ নেতার বাম হাতের আঙুল কেঁটে নেওয়ার ঘটনায় আহতের বাবা আবুল হাসান বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনজন এজহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে।

  • অবরুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও সংশপ্তক জাসদ: পর্ব ৪


    জিয়াউল হক মুক্তা:

    [জিয়াউল হক মুক্তা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এ রচনায় সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের পারিবারিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-আর্থরাজনীতিক-অন্তঃদলীয়-আন্তঃদলীয়-প্রশাসনিক-গোয়েন্দা-আধাসামরিক-সামরিক-ভূরাজনীতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষ্যের সাথে যোগ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু-হত্যা বিচার-আদালতের বিচারকের পর্যবেক্ষণ ও কিছু সাক্ষ্যভাষ্য এবং বঙ্গবন্ধুতনয়া জননেত্রি প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার ও তাঁর পরিজনদের কিছু বক্তব্য; এবং বর্তমান লেখকের গবেষণালব্ধ কিছু পর্যবেক্ষণ। সবশেষে প্রধানমন্ত্রির সদয় বিবেচনা ও সকলের আলোচনার জন্য যোগ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা সত্যানুসন্ধান কমিশন’ বিষয়ক কিছু বিষয়গত ও কাঠামোগত প্রস্তাবনা। পাঠকদের সুবিধা বিবেচনায় লেখাটি ১৬ কিস্তিতে প্রকাশিত হচ্ছে; আজ প্রকাশিত হচ্ছে চতুর্থ পর্ব।]
    ১৯৭৪ সালে বিজয় দিবসের একদিন আগে ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া এ ভাষণে মূল্যস্ফীতিকে এক নম্বর শত্রু, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে দুই নম্বর শত্রু ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আমাদের নতুন প্রতিরোধ সংগ্রামে সর্ব শেষ ও সর্বপ্রধান শত্রু চোরাকারবারি, কালোবাজারি, মুনাফাবাজ ও ঘুষখোরের দল। মানুষ যখন অনাহারে মারা যায়, তখনও এই সব নরপশুর দল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখের গ্রাস অন্যত্র পাচার করে দিয়ে থাকে। বিদেশ থেকে ধার-কর্জ, এমনকি ভিক্ষা করে আনা পণ্য ও বাংলার সম্পদ মজুদের মাধ্যমে এরা মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। এদের কোন জাত নেই, নেই কোন দেশ।”

    আগে-পরে অন্য অনেক বক্তব্যের মতো, পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গভবনে বাকশাল কমিটির উদ্বোধনী ভাষণেও তিনি বলেন, “আমি সার দিতে পারি নাই। যা সার দিয়েছি, তার থার্টি পারসেন্ট চুরি হয়ে গেছে। স্বীকার করেন? আমি স্বীকার করি। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারবো না। মিথ্যা বলে একদিনও হারাম এ-দেশের প্রেসিডেন্ট থাকবো না। আমার যে সার আমি দিয়েছি, তার কমপক্ষে থার্টি পারসেন্ট ব্ল্যাক মার্কেটিং-এ চুরি হয়ে গেছে। আমি যে ফুড দিই, তার কুড়ি পারসেন্ট চুরি হয়ে যায়। আমি যে মাল পাঠাই গ্রামে গ্রামে তার বিশ পারসেন্ট, পঁচিশ পারসেন্ট চুরি হয়ে যায়। সব চুরি হয়ে যায়। হুইট [গম] আমি তো হুইট পয়দা করি না, খুব কমই করি, তবু কোন বাজারে হুইট পাওয়া যায় না? গভর্নমেন্ট গোডাউনের হুইট? সার তো আমি ওপেন মার্কেটে বিক্রি করি না, তবু কোন বাজারে সার পাওয়া যায় না?” এ সময়, জাসদ ব্যস্ত আত্মরক্ষায়; পলাতক। বঙ্গবন্ধু কথিত চাটার দল আর চোরের দল আর নরপশুর দল ঠেকানোর কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক শক্তি তখন আর প্রকাশ্যে/মাঠে নেই। পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে দশ বছর লড়াই করা আর মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে তাকে তুড়ে মেরে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া ছাত্র-যুব-তরুণরা এ অশনিসংকেত দেখেছিলেন অনেক আগেই। ১৯৭৪ সালের শুরুতেই জাসদ বঙ্গবন্ধু কথিত চাটার দল আর চোরের দল আর নরপশুর দলের দুর্নীতি-লুটপাট-মজুদদারি-কালোবাজারি-পাচারকারিদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’-এর ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি। কর্মসূচির প্রথম দিনে ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়া রক্ষীবাহিনী গুলি করে হত্যা করে ৫০ জন জাসদ নেতাকর্মীকে; তাদের চার জনের লাশ বাদে বাকিদের লাশ গুম করে ফেলা হয়; গ্রেফতার করা হয় শতাধিক। পরের দিন জ্বালিয়ে দেয়া হয় জাসদ কার্যালয়। তছনছ করা হয় জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠের কার্যালয়। ১৭ মার্চ রাত থেকে সারাদেশে শুরু হয় নতুন উদ্যমে জাসদ-দমন; চিরুনী অভিযানের ফলে কারোর এমনকি আত্মগোপনে থাকাও অসম্ভব হয়ে ওঠে। দেশের দুর্ভাগা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল জাসদ একা; আর কেউ দাঁড়ায়নি তাদের পাশে; ন্যাপ-সিপিবি সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, গোপন চীনপন্থী দলগুলো ব্যস্ত কথিত শ্রেণিশত্রু খতমে আর অপরাপর প্রকাশ্য সব সংগঠন নিজেরা একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচি হাজির করতে পারেনি। এককভাবে আন্দোলনে থাকা জাসদকে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনার দাম দিতে হলো কড়ায়গন্ডায়— অত্যাচার-নির্যাতন-জেল-জুলুম-সন্ত্রাস-নিপীড়ন-খুন-গুমের শিকার হয়ে। রাজনীতির মাঠে নিঃসঙ্গ জাসদ যেন হয়ে ওঠলো সংশপ্তক।

    অধ্যায় আট. এ ব্যাটলফিল্ড অব দ্য প্রক্সি ওয়ার?
    সে সময়টা ছিল শীতল যুদ্ধের কাল। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। পারমাণবিক যুদ্ধের শংকায় কম্পমান মানব সভ্যতা। পাকিস্তান সমাজতন্ত্র মোকাবেলার সামরিক জোট সাউথইস্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা সিয়াটো ও দি সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা সেনটো’র সদস্য; উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে পেয়েছে চীন ও আমেরিকাকে। ইউরোপের অনেক দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক হস্তক্ষেপে; এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় সমাজতন্ত্র এসেছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হাত ধরে। ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোও চেষ্টা করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা পেতে; কিন্তু সহায়তা গ্রহণের পাশাপাশি তাদেরকে ঝুঁকিও নিতে হয়েছে অনেক। ১৯৫৪ সালে ভিয়েতনাম দ্বিখন্ডিত হয়েছিল ও ১৯৬২ সালের অক্টোবরে কিউবা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল ১৩ দিনের স্নায়ু-ছেঁড়া পারমানবিক যুদ্ধের মিসাইল সংকট।

    এদিকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্টরা চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ে বিভক্ত ছিলেন। ফলে চীনপন্থীদের কেউ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ও কেউ জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মূলধারার বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেছেন; আর সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুসারীরাও ন্যাপ-সিপিবিতে বিভক্ত ছিলেন। এসব বামপন্থীদের কেউ বাঙালির জাতীয় মুক্তির দিকে পরিকল্পিত আন্দোলন সংগ্রামের অংশ ছিলেন না। এরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ঔপনিবেশিক সরকার ও তাদের শাসনকে নিজেদের অবস্থান দ্বারা প্রকারান্তরে সহায়তাই করে গিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরশাসন ও সামরিক শাসনের বেলায়ও এরা আপোষই করেছেন প্রায় সকল সময়। বঙ্গবন্ধু তাই বলতেন যে বাংলাদেশ কোনো আমদানি করা সমাজতন্ত্র চলবে না। স্বাধীনতা-সমাজতন্ত্রের অগ্রবাহিনী নিউক্লিয়াসপন্থীরাও বলতেন যে আমদানি করা সমাজতন্ত্র নয়, বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকশিত জাতীয় সমাজতন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক প্রভাববলয়ের বাইরে থেকে কায়েম করবেন শোষণমুক্ত সমাজ ও দেশ। দেশজ বাস্তবতার বৈজ্ঞানিক অনুধাবন থেকে পরিচালনা করবেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের আন্দোলন ও নির্মাণ করবেন সমাজতান্ত্রিক সমাজ। কোন দেশ বা সামরিক জোটের অনুসরণ নয়, জোট নিরপেক্ষতা হবে ভূরাজনীতিগত অবস্থান। জাসদ তৎকালীন জাতীয়-আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সা¤্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জাতীয় সার্বভৌমত্বকে বিপদমুক্ত রাখতে; আজ ২০২০ সালে এসে এ কথাগুলো হাস্যকর শোনাতে পারে, কিন্তু প্রক্সি ওয়ারের যুগে স্বাধীন ও সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেই এসব রাজনৈতিক টার্ম তৈরি হয়েছিল। জাতীয় সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণা থেকে গঠিত জাসদ স্বাধীন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, আর তাই চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নপন্থী সমাজতান্ত্রিক দলগুলো মনে করতো জাসদ তাদের সমাজতান্ত্রিক জমিদারি ধ্বংস করে দিয়েছে; আর তাই তারা জাসদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত সর্বদা সর্বত্র।

    বঙ্গবন্ধু যখন দল ও দলের বাইরের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি দ্বারা অবরুদ্ধ ও জাসদ যখন রাজনৈতিকভাবে ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণ করে মিত্রহীন নিঃসঙ্গ, ওই ন্যাপ-সিপিবি সুযোগটি নিলো পুরোপুরি, অনপ্রবেশ করলো আওয়ামী লীগের ঘরে; সরকারের সমর্থক থেকে পরিণত হলো সরকারের অংশে। দেশে একদল বাকশাল গঠন করা হলে সোভিয়েত ইউনিয়নপন্থী সিপিবি ও ন্যাপ নিজেদের দল বিলোপ করে এতে ঢুকে পড়লো। ন্যাপ-সিপিবি বাকশালে বিলুপ্তির ফলে— বিশেষত ন্যাপ-সিপিবির জাতীয়তাবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিকতাবাদের রাজনীতি, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে এদের পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর নির্দেশ পালনকারী বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাথে এদের সম্পর্ক বিবেচনায়— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনে হতেই পারে যে বাংলাদেশ বুঝি জোট নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সোভিয়েত ব্লকে ঢুকে গেল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অগত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হলেও, বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেনি কখনোই; বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি কখনোই।

    কোমিতেত গোসুদার্স্তভেন্নয় বেজোপাসনস্তিবা কেজিবি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। কেজিবি’র পক্ষত্যাগী সাবেক আর্কাইভ কর্মকর্তা ভাসিলি মিত্রোখিন ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এন্ড্রু কেজিবির নথিপত্রের ভিত্তিতে রচনা করেন ‘দি মিত্রোখিন আর্কাইভ: দি কেজিবি অ্যান্ড দি ওয়ার্ল্ড’ নামের গ্রবেষণাগ্রন্থ। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্সের তদারকিতে ২০০৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এটা পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হয়। দি মিত্রোখিন আর্কাইভ, বাংলাদেশে পরিচালিত আরও কিছু গবেষণাকর্ম এবং ন্যাপ-সিপিবি’র নেতাদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ২০০৬ সালের মার্চ মাসে নিজ পত্রিকায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ও কেজিবির নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা বিষয়ে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

    এ প্রতিবেদনে বলা হয় যে ১৯৭৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরো কেজিবিকে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে নির্দেশ দেয়। কেজিবি আওয়ামী লীগ ও এর মিত্র সিপিবি-ন্যাপ-এর নির্বাচনী প্রচারণায় তহবিলের যোগান দেয়। দি মিত্রোখিন আর্কাইভ জানায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে কেজিবি মিশনের আনুষ্ঠানিক বাজেট ছিল ৫২ হাজার ৯০০ রুবল। কেজিবি একটি দৈনিক পত্রিকা ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দৈনিক পত্রিকাটিকে ছাপাখানা কেনার জন্য ৩ লাখ রুবলের সমপরিমাণ অর্থ দেয়। বইটির এক ফুটনোটে লেখা হয়েছে যে বাকশালে একীভূত আওয়ামী লীগকেও কেজিবি গোপনে তহবিলের যোগান দিয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা তোফায়েল আহমেদ বিদেশী অর্থ নেয়ার বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন; কিন্তু ন্যাপ-সিপিবি তা করেনি।

    ন্যাপ-এর সাবেক নেতা মোনায়েম সরকার জানিয়েছেন যে সোভিয়েত সহায়তায় ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে ন্যাপ পরিচালিত সমাজতন্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৭ হাজার ৭০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সিপিবি সূত্র থেকে মিজানুর রহমান খান জানান যে আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক তাদেরকে দেয়া অর্থের পরিমাণ হয় সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রায় ৫০ হাজার ডলার। ন্যাপও সিপিবির মতো অনেকটা সমপরিমাণ অর্থ পেত; সিপিবি-ন্যাপ-এর সাথে যুক্ত অন্যান্য গণসংগঠনও আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা পেত। অন্যান্য সহায়তার মধ্যে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে ছাত্র পাঠানো, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণ ইত্যাদি। সিপিবির এ বছরভিত্তিক তহবিল দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ বিশেষভাবে নিজস্ব এখতিয়ারে দেখভাল করতেন। সিপিবির সাবেক নেতা অজয় রায়ও একই তথ্য প্রকাশ করে বলেন, ‘দলীয় তহবিলের হাঁড়ির খবর একমাত্র জানতেন দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ ফরহাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত যৌথভাবে গৃহীত হলেও তহবিল ব্যবস্থাপনা কিন্তু যৌথ নেতৃত্বাধীন ছিল না।’ ১৯৮৭ সালে মোহাম্মদ ফরহাদের মৃত্যুর পর থেকে ১৯৯১ সালে সিপিবি বিভক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেজিবিপ্রদত্ত সে অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭২ সালে কেজিবির আবাসিক মিশন ঢাকা রেসিডেন্সি ‘মুজিবের সচিবালয়ের একজন উর্ধতন সদস্য, দুজন মন্ত্রি ও দুজন ঊর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে [তাদের এজেন্ট হিসেবে] নিয়োগ’ করে। এটা আরও জানায়, ১৯৭৫ সালে ‘সন্দেহাতীতভাবে মস্কোর উৎসাহে’ শেখ মুজিব বাংলাদেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। দি মিত্রোখিন আর্কাইভ-এর মতো অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামানের স্বতন্ত্র একটি গবেষণাও তা বলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের নাম উল্লেখ না করে নিজের একটি বইয়ে তিনি বলেন যে ‘দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাস’ ১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে মস্কোপন্থী দলগুলোর নেতৃত্বে সংসদীয় গণতন্ত্র বাতিল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার কথা বলছিল; আওয়ামী লীগের দুজন বড় নেতাকে তারা একদল বাকশাল গঠন করতে প্রভাবিত করেছিল। [আগামী কাল পঞ্চম পর্ব]

  • স্থানীয় সরকারসহ উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

    স্থানীয় সরকারসহ উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

    মশাল ডেস্ক: স্থানীয় সরকারসহ সব উপনির্বাচনের বিএনপির অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

    মির্জা ফখরুল বলেন, গত দুটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়ে পরবর্তীতে করোনার কারণে আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করবো সে সিদ্ধান্তই আছে। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে অংশ নেব। আগামী ১০ তারিখে নমিনেশন ফরম বিক্রি করা হবে। ১২ তারিখে পার্লামেন্টারি বোর্ড সাক্ষাৎকারে বসবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য।

  • সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি অনুমোদন:ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রশিদ॥সম্পাদক শাহজাহান

    সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের বিগত ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কাউন্সিল অধিবেশনে আংশিক কমিটি গঠনের পর মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার ও শাহজাহান আলীর দাখিলকৃত কমিটি সাময়িক অনুমোদন দিয়েছেন।

    উদ্ধর্তন সহ-সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী, সহ-সভাপতি গোলাম মোরর্শেদ, আসাদুজ্জামান অছলে চেয়ারম্যান, সরদার নজরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, ফারুক হোসেন, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মোশা, এড. স্যামুয়েল ফেরদৌস পলাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনছান বাহার বুলবুল, মোস্তাফিজুর রহমান নাছিম ও গনেশ চন্দ্র মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শফিউদ্দীন, শেখ মনিরুল হোসেন মাছুম, প্রভাষক হাসান মাহমুদ রানা, আইন সম্পাদক এড. হাসান উল্লাহ, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মহসীন কবির পিন্টু, তথ্য গবেষণা সম্পাদক আব্দুল জলিল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ গোলাম মোস্তফা বাবু, দপ্তর সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ক্বারী মিজানুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ মোনায়েম হোসেন, বন পরিবেশন সম্পাদক আমিনুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মহিলা সম্পাদিকা এড. ইরানী, মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল হান্নান, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক প্রভাষক আফাজ উদ্দীন, শ্রম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ আব্দুল হামিদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক শাহীনুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক রহমত আলী, কোষাধ্যক্ষ জি এম আমীর হামজা, নির্বাহী সদস্যবৃন্দ আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম, আলহাজ¦ এস এম শওকত হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, আলহাজ¦ আসাদুজ্জামান বাবু, এড. আব্দুল লতিফ, ডাঃ মুনসুর আহমেদ, আশরাফুজ্জামান, স ম জালাল উদ্দীন, ডাঃ মহিয়ূর রহমান ময়ুর, রহেল উদ্দীন, হাবিবুর রহমান হবি, লুৎফর রহমান, বজলুর রহমান, রমজান আলী, এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ, শওকত আলী, ইউসুফ আলম, এস এম মোশারফ হোসেন, তাপস কুমার আচার্য্য, নুর ইসলাম মাগরেব, শামছুর রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিক, অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ, ওবায়দুর রহমান লাল্টু, মিজানুর রহমান বাবু সানা, ওবায়দুল ইসলাম মানি, মাস্টার মফিজুল ইসলাম, শাহীনুর ইসলাম শাহীন, আজহারুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, লোকমান হোসেন, মোঃ ইশারুল, মশিয়ার রহমান ঈদুল, আছাদুজ্জামান ও প্রভাষক এম সুশান্ত।

  • সাতক্ষীরার বাঁকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক মান্নান বহিষ্কার

    সাতক্ষীরার বাঁকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক মান্নান বহিষ্কার

    নিজস্ব প্রতিনিধি : বাঁকাল জেলেপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (হিন্দুদের) বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে।
    প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের বাড়ি দখল ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো। যার স্মারক নং- বা,আ,যু-০০৮/২০২০, তারিখ-০৩.০৮.২০২০ ।
    উল্লেখ্য , গত ৩০ জুন বৃহস্পতিবার রাতে যুবলীগ নেতা মান্নানের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার মুজিবর পেশকারের পক্ষে সদর উপজেলার বাঁকাল জেলেপাড়ায় নিরঞ্জন মাখাল ও পূর্ণিমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে বাধা দেওয়ায় নিরঞ্জন মাখাল, তার স্ত্রী অহল্যা, সহদেব মাখাল ও বলরাম মাখালকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এঘটনায় স্থানীয়রা ওই রাতেই সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে ঝাঁটা মিছিল করলে পুলিশ মুজিবর ও তার ছেলে শুভকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর অদৃশ্য কারনে ওই রাতেই তাদের আবার ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টায় বিষয়টি নিয়ে থানায় বসাবসির কথা থাকলেও বেলা ১২ টা পর্যন্ত হামলাকারি পক্ষ থানায় আসেননি। এক পর্যায়ে নিরঞ্জন মাখাল বাদি হয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানসহ পাঁচজনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ১৬জনকে আসামী করে থানায় একটি এজাহার জমা দিলে পুলিশ গত পহেলা আগষ্ট মামলাটি রেকর্ড করেন। যার মামলা নং-২। এ ঘটনায় জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানসহ পাঁচ আসামীর গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গত সোমবার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি প্রাণনাথ দাসের সভাপতিত্বে মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রণজিৎ ঘোষ, জেলা যুব মহাজোটের সভাপতি সন্দীপ বর্মণ, যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য মিলন রায়, মিঠুন ব্যাণার্জী প্রমুখ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।

  • জাসদের শোক: বীর মুক্তিযোদ্ধা  দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু

    জাসদের শোক: বীর মুক্তিযোদ্ধা দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক শোকবার্তায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিল্পপতি ব্যবসায়ী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা, একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন চ্যানেলের মত দুইটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম গড়ে তোলার জন্য নুরুল ইসলাম বাবুলকে দেশবাসী স্মরণে রাখবেন।

  • জাসদের নবীনদের জন্য…

    জিয়াউল হক মুক্তা

    এক.
    সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে সর্বদলীয় বিপ্লবী সরকার গঠনের আহ্বান ও দেশ পুনর্গঠনের ১৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-যুব-তরুণশক্তি। বঙ্গবন্ধু তা শোনেন নি। ফলে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। জাসদ একটি সমাজতান্ত্রিক গণসংগঠন; এর লক্ষ্য সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আনুষ্ঠানিকভাবে দল গঠনের আগে থেকেই জাসদ-ছাত্রলীগ-শ্রমিকলীগ-কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের ওপর শাসকদের খড়্গ নেমে এসেছিল— এরপর তা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭৪-এর ১৭ মার্চের পর। ১৯৭৩-এর নির্বাচনে জাসদ মাত্র দুটি আসন পায়— জাসদের প্রার্থীদেরকে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে অপহরণ করা, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা, ভোট ডাকাতি করা আর ভোটের ঘোষিত ফলাফলও পাল্টে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে— যেমন, খোন্দকার মোশতাকের বিপরীতে আব্দুর রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে বেতারে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, কিন্তু পরে হেলিকপ্টারে করে সব ব্যালটবাক্স ঢাকায় এনে পুনর্গণনার মাধ্যমে মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় । ১৯৭৫-এ বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে আইনী রাজনীতির অধিকার হরণ করা হয়। পুরো সময়জুড়ে খুন-গুম-সন্ত্রাস-নিপীড়ন-রক্তক্ষরণ হয়ে ওঠে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ভাগ্য। সমাজতন্ত্রের পথে এ বৈপ্লবিক সংগ্রামের সময় দলের নেতাকর্মীগণ দল ত্যাগ করেন নি।

    দুই.
    ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খোন্দকার মোশতাকের আমলে খুন-গুম-সন্ত্রাস-নিপীড়ন-রক্তক্ষরণ থেমে থাকে নি। আওয়ামী লীগের তখন কোন অস্তিত্ব ছিল না। জাসদকে মোকাবেলা করতে হয়েছে মোশতাকের আক্রমণ [যারা ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘প্রেরণার মুখ’ নামে জাসদের শহীদদের অসম্পূর্ণ তালিকাটি দেখেছেন— দেখতে পাবেন খোন্দকার মোশতাক কোথায় কাদের হত্যা করেছেন। এখানে অন্য একটি উদাহরণও দেয়া যাক। বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ দিন পর ১৯৭৫ সালের ৩০ আগস্ট খোন্দকার মোশতাকের শাসনামলে জাসদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার তার বেইজ-এলাকা রংপুর থেকে গ্রেফতার হন ও অমানুষিক নিপীড়নের শিকার হন। ২৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয় এক সপ্তাহ ও ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার জেল-হত্যার পরপরই তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে জিয়ার সামরিক আদালতের রায়ে তাকে দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৭৭ সালের ১৩ জুলাই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।] এ সময়ও দলের নেতাকর্মীগণ দল ত্যাগ করেন নি। এ পর্যায়ে বিপর্যস্ত জাসদ পুরোপুরি উঠে দাঁড়াতে না পারলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বক্তব্য রেখেছে। তাত্ত্বিকভাবে মনে করেছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে অন্যদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

    তিন.
    ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের নেতৃত্বে ও জাসদ-গণবাহিনী-সৈনিকসংস্থার উদ্যোগে সংঘটিত মহান সিপাহী-জনতার বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেন। সুপরিকল্পিতভাবে দলকে ছিন্নভিন্ন নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেন। কর্নেল তাহেরকে হত্যা ও দলের প্রধান নেতাদের কারাগারে অন্তরীণ করেন। সারা দেশে গুপ্তহত্যা, বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা, হুমকি, বিনা বিচারে আটক ও লোভ দেখানোর মাধ্যমে জাসদের অনেককে জিয়া নিজ শিবিরে সমবেত করেন। এমনকি নেতৃত্বের কারো কারো মধ্যে জিয়ার সাথে আপোষের প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। দলে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। জিয়া এমনকি একটি শিখন্ডি জাসদও বানানোর চেষ্টা করেন। জিয়ার বিরুদ্ধে দল কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নি। দলের হাজারো নেতা-কর্মী জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে নিজেদের জীবন রক্ষা করেন। ৭ নভেম্বরের মহান সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার পর জাসদ এসময়ও গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। ১৯৭৯-র সংসদে জাসদ ৮টি আসন পায়।

    চার.
    ১৯৮০ সালে দল ভেতর থেকে দ্বিমুখী সংকটে পড়ে। একদিকে, সিরাজুল আলম খানের গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব ও কর্মসূচি— যা কাউন্সিলে [এর সুবিধাবাদী অংশগুলো বাদ দিয়ে] সংশোধন করে গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে, জাসদ মেজর এম এ জলিল ও আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে ১০ দলীয় ঐক্যজোট গঠনের উদ্যোগ নিলে ‘চেতনার আশি সাল, জাসদ হলো বাকশাল’ শ্লোগান দিয়ে দলের একটি অংশ সে ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সে সময় মতাদর্শ ও অতীত আন্দোলনের মূল্যায়ন নিয়ে দলে একটি অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম চলমান ছিল। সে সংগ্রামের একটি ধারা— দল ও ছাত্র সংগঠনের জনপ্রিয় নেতা আফম মাহবুবুল হক ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সামনে রেখে খালেকুজ্জামান ও মুবিনুল হায়দার চৌধুরীরা— আওয়ামী লীগ আমলে নিগৃহীত নেতা-কর্মীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ১০ দলীয় ঐক্যজোট গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁরা আরও বলেন জাসদের ভেতরে থেকে বিপ্লব করার প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব নয়। তাঁরা দলত্যাগ করেন। ব্যাপক সংখ্যক তরুণের দলত্যাগে দলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাঁরা বাসদ গঠন করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে আওয়ামী লীগের সাথে ঐক্যকে নাজায়েজ বলে যাঁরা বাসদ গঠন করলেন, ১৯৮৩ সালে তাঁরাই আবার জাসদ ও আওয়ামী লীগের সাথে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটে যোগ দিলেন।

    পাঁচ.
    ১৯৮১ সালে সিরাজুল আলম খান দলে দ্বিতীয় আঘাত হানেন— তিনি তত্ত্ব দেন, দেশ ও জাতি গঠনে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিঃশেষিত হতে চলেছে এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। জাসদ তার মতের দ্বিতীয় অংশ গ্রহণ করলেও প্রথমাংশ গ্রহণ করে নি। ১৯৮১-র বিশেষ কাউন্সিলে দল ‘সমন্বয় কমিটির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ ও ‘১৮ দফা কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবের আলোকে পেশাজীবীদের একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে সংসদে ২০০ প্রতিনিধি প্রেরণের রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৮০ সালে মেজর এম এ জলিল ত্রিদলীয় ঐক্যজোট থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পর থেকে মেজর এম এ জলিল ও আসম আব্দুর রবের দ্বন্দ্ব তীব্রতর হতে থাকে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখলের জন্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন; আসম আব্দুর রব তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, গর্ত থেকে মাথা বের করলে তা ফাটিয়ে দেয়া হবে।

    ছয়.
    ১৯৮২ সালে সাত্তার সরকার উচ্ছেদ করে এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর জাসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৩-র মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিরাজুল আলম খান ও জলিল-রব সর্বাত্মক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন; এ আন্দোলনকে সিরাজুল আলম খান ক্ষমতার অংশীদার হবার জন্য এরশাদের সাথে দরকষাকষির উপায় হিসেবে ভাবছিলেন। কিন্তু দলের অপরাপর নেতৃত্ব দলের তাত্ত্বিক নির্দেশনা অনুযায়ী ‘গণঅভ্যুত্থান’-এর মাধ্যমে এরশাদকে উৎখাতের পক্ষে অবস্থান নেন; কোনো দরকষাকষির মাধ্যমে নয়। ১৯৮৩-র মার্চের প্রথম দিকে সিরাজুল আলম খান সব পক্ষকে ‘ধৈর্য ও সহনশীলতা’র মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান ও পরে সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বাড়াবাড়ি বলেন; রাষ্ট্র ও দেশ পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্বের তত্ত্ব হাজির করেন; এবং ক্যান্টনমেন্টগুলোতে বৈঠক করতে থাকেন। আসম আব্দুর রবও ১৯৮৩-র ছাত্র আন্দোলনের ওপর থেকে আগ্রহ হারান; যদিও তিনি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার জন্য ইতোমধ্যে গঠিত ১৫ দলের ১১ দফায় জাসদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন। আসম আব্দুর রব— মেজর এম এ জলিলকে নেতৃত্ব থেকে অপসারন করতে— সিরাজুল আলম খান [তাঁর দিক থেকে দলের ওপর তাঁর তৃতীয় আঘাত], শাজাহান সিরাজ ও মীর্জা সুলতান রাজার সমর্থন পান।

    সাত.
    দলের ওপর সিরাজুল আলম খানের চতুর্থ আঘাত— ১৯৮৩-র মার্চের শেষের দিকে তিনি আকস্মিকভাবে জাতীয় কমিটির সভায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে জাসদ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের সকল কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কমিটি তাঁর এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে জাতীয় কমিটির সভায় এসে মতামত জানানোর অনুরোধ করে তাঁর কাছে প্রতিনিধি-দল পাঠায়। তারপরও তিনি সে সভায় আসেন নি। এদিকে জলিল-রবের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে দল কর্তৃক মেজর জলিলের এককভাবে বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দানের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। রব তাতেও সন্তুষ্ট হন নি। পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন— পত্রিকায় বলেন যে তিনি মনযোগ দিয়ে সংসার করবেন, সাংবাদিকতা করবেন ও চাকুরি করবেন। জাসদ অপরাপর দলকে নিয়ে ১৫ দলের নেতৃত্বে সামরিক শাসন বিরোধী গণ-আন্দোলন অব্যাহত রাখে।

    আট.
    এর মধ্যে মেজর এম এ জলিলও জাসদ ত্যাগ করেন ও অন্য দল গঠন করেন। তাঁর দলত্যাগ দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো প্রভাব না ফেললেও এতে দলের ইমেজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

    নয়.
    পদত্যাগের কিছু দিন পর আসম আবদুর রব পাল্টা ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৮৪ সালে আবার জাসদ গঠন করেন ও উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এরশাদের শাসনপ্রক্রিয়াকে বৈধতা দেন । সিরাজুল আলম খানও তাঁকে সহায়তা দিতে থাকেন; এটা দলের ওপর তাঁর পঞ্চম আঘাত। খান-রব তাঁদের কাল্টের অনুসারীদেরকে সাথে পান। খান-জলিল-রবের দলত্যাগে দলের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হয় ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কিন্তু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাসদের আপোষহীন আন্দোলনের ফলে সারা দেশে তরুণদের মধ্যে জাসদ আবারও জায়গা করে নেয়।

    দশ.
    ১৯৮৬ সালে শাজাহান সিরাজ ও মীর্জা সুলতান রাজা আওয়ামী লীগ ও সিপিবিকে অনুসরণ করে এরশাদের অধীনে সংসদ নির্বাচনে যেতে দল ত্যাগ করেন ও আলাদা জাসদ গঠন করেন। জাসদের মতো ১৫ দলও ভেঙে যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল নির্বাচনে যায়; জাসদের নেতৃত্বে ৫ দল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৯৮৮-র সংসদ নির্বাচনে ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দল অংশগ্রহণ করে নি। আসম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজ প্রমুখগণ তাতে অংশগ্রহণ করেন ও ধিকৃত হন।

    এগারো.
    ১৯৯০ সালে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতনে দল একটি রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব প্রদান করার পরও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল কোনো আসন না পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মীগণ আশাহত হন। এ প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীন সাংগঠনিক বিরোধে ঢাকায় ছাত্রলীগের শক্তিশালী অবস্থান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    বারো.
    ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে— দলের বড়-মাঝারি-ছোট নেতা এবং আগের এক দশকের বেশি সময়ের ছাত্রলীগের বিখ্যাতসব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ প্রায় সকলে— আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেন। যাঁদের কাছে দলের প্রত্যাশা ছিল যে তাঁরা জাসদ নেতৃবৃন্দের টিম-মেট হয়ে দলকে নেতৃত্ব দেবেন— তাঁরা ব্যবসা, চাকুরি ও পড়াশোনার জন্য দল ছেড়ে চলে যান। ওই এক দশকের সকল ছাত্রনেতৃত্বের মধ্যে দলে রয়ে যান একমাত্র একজন— শিরীন আখতার। দলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ নূরুল আম্বিয়াও সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবসা করতে চলে যান। কাজী আরেফ আহমেদ ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে দল হতাশার-সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন সারাদেশের তরুণ-সংগঠকদের নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্দোলন এগিয়ে নিতে দল সারাদেশে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। জাসদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী আরেফ আহমেদ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতৃত্ব হিসেবে ভূমিকা রাখেন।

    তের.
    শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলতে জাসদ বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করে। বাম ফ্রন্ট নিয়ে দলে ভিন্ন মত থাকলেও দলকে সে প্লাটফর্মে যুক্ত থাকতে হয়েছে। বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য এক ধরনের ‘মার্কটাইম’ নীতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ১৯৯৬-এর নির্বাচনেও দল কোন আসন না পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে হতাশা আরও গভীর হতে থাকে।

    চৌদ্দ.
    ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আসম আবদুর রবের একটি নির্ধারক ভোটের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায়। আসম আবদুর রব সরকারের মন্ত্রীসভায় স্থান পান। জাসদ ১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ও বাসদ (মাহবুব)-এর একাংশকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাসদের যাত্রা শুরু করে। দল বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। সারা দেশে দলে সাড়া পড়ে।

    পনের.
    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা, ৩ নভেম্বরের ক্যু ও ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার পর থেকে জাসদ সবসময় যে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে— তা হলো, আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার ঐক্যের রাজনীতি। আসম আবদুর রব মন্ত্রীসভায় থাকলেও সে ঐক্যকে আদর্শিক ভিত্তি দিতে এবং রাজনৈতিকভাবে কাঠামোবদ্ধ করতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। দলের সভাগুলোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সে আদর্শিক-রাজনৈতিক-সাংগঠনিক চুক্তির উদ্যোগ নেয়ার ফলে— জাসদ ঐক্যের মাত্র চার বছরের মাথায় ২০০১ সালে আসম আবদুর রব আবারও আগের বারের মতোই রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। দলের কাউন্সিলে তাঁর চেয়ার ফাঁকা রেখে অধিবেশন সম্পন্ন হয়। তিনি দলে ফিরে আসেন নি। অনেক পরে, আগের মতোই, আবার তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি নামে একটি দল গঠন করেন।

    ষোল.
    ২০০১ সালের পর থেকে জাসদ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক-কৌশলগত কর্মসূচি পালনের ধারাবাহিকতায়— আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে, জাসদ ও ১১ দলের মধ্যে এবং জাসদ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও ১১ দলের মধ্য ২৩ দফার রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে— জামাত-যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্লাটফর্ম ১৪ দল গড়ে তোলায় উদ্যোগী ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। এক সাথে আন্দোলন, এক সাথে নির্বাচন ও এক সাথে দেশ পরিচালনার জন্য ১৪ দল ঐকমত্যে পৌঁছে।

    সতের.
    ২০০৮ সালে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাসদ তিনটি আসন পায়; এর মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী না দিয়ে জাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়; একটিতে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে জাসদ নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। সরকার পরিচালনার এক পর্যায়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কৃষিতে সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বর্ধিত বরাদ্দ, পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এবং স্বনির্ভর জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মতো জাতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়; সংবিধান বাহাত্তরের মূল চেতনায় ফেরত যায়। কর্নেল তাহের হত্যার বিচার হয়। যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী-আগুনসন্ত্রাসী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিরোধ আন্দোলন ও বিচারিক উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়।

    আঠারো.
    ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদ পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে; সাথে যোগ হয় একটি সংরক্ষিত আসন— শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম-এর স্ত্রী লুৎফা তাহেরকে দলের পক্ষে সে সংরক্ষিত আসনে মনোনীত করা হয়। পূর্বোক্ত আন্দোলন ও উদ্যোগগুলো অব্যাহত থাকে।

    উনিশ.
    ২০১৫ সালে দলের জাতীয় কমিটির এক সভায় দলের নাম পরিবর্তন ও সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে পরিত্যাগের দাবি জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব শরীফ নূরুল আম্বিয়া; তাঁর সাথে যোগ দেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জনাব নাজমুল হক প্রধান— তিনি দলের নাম পাল্টে ‘জাতীয় সমতা দল’ রাখার প্রস্তাব করেন। অবিলম্বে সরকারের মন্ত্রীসভা ও ১৪ দল থেকে দলকে সরে এসে বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলন করার দাবী জানান ডা. মুশতাক হোসেন। এবং জাগতিক সুবিধার জন্য এ দুই পক্ষের সাথে যোগ দেন জনাব মইনউদ্দিন খান বাদল। সব মিলিয়ে তাঁরা তিন পক্ষ এক হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০১৬ সালের কাউন্সিলে দলের ঘোষিত রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। দলের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন অনুমোদন না করে তা প্রত্যাখ্যান করে। দলে আদর্শহীন-সুবিধাবাদী ধারার জনাব মইনউদ্দিন খান বাদল, সমাজতন্ত্র-বিরোধী পুঁজিবাদী আদর্শের প্রতিভু জনাব শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও জনাব নাজমুল হক প্রধান এবং অতি-বাম চিন্তার ডা. মুশতাক হোসেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মধ্য-বাম চিন্তার নেতা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে হাসানুল হক ইনুকে ব্ল্যাকমেইল করতে তারা কাউন্সিল কক্ষ ত্যাগ করেন এবং মাঝরাতে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। দলের অফিস, নির্বাচনী প্রতীক এবং এমনকি নামও [যা তারা পরিবর্তনের দাবি করেছিলেন] দখলের জন্য তারা বিবিধ প্রয়াস চালান। কিন্তু আইন প্রত্যেক ক্ষেত্রে জাসদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা এখন বাজাসদ নামে নিবন্ধনহীন একটি কথিত রাজনৈতিক দল।

    কুড়ি.
    ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী-আগুনসন্ত্রাসী ও এদের জন্মদাত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে রাজনৈতিক প্রতিরোধ আন্দোলন ও বিচারিক উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়— তাতে এরা কিছুটা পিছু হঠেছে; কিন্তু বিপদ কাটে নি। যে কোনো সময় এরা চাকু মারতে পারে। তাই জাসদ মনে করে এ আন্দোলন একদম ছেড়ে দেয়া যাবে না; বরং এখন দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হব। এখন লড়াইয়ের প্রথম ফ্রন্ট হবে দুর্নীতি-দুঃশাসন-অপশাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সুশাসন-সমতা-সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম।

    একুশ.
    কালের যাত্রায় অনেকে হারিয়ে যাবেন— এই স্বাভাবিক। কিন্তু জাসদকে হারাতে হয়েছে অনেক অনেক বেশি। জাসদ নেতাকর্মীগণ যেমন হত্যা-খুনের শিকার হয়েছেন; তেমনি পথ চলতে গিয়ে ভিন্নমতের কারণেও অনেকে পথহারা হয়ে হারিয়ে গিয়েছেন। অনেকে হারিয়ে গিয়েছেন জীবন-জীবীকার কঠিন সংগ্রাম করতে গিয়ে। কেউ কেউ ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন সুবিধাবাদের হাত ধরে। অতীতে আন্দোলনে যে যতোটুকুই ভূমিকা রাখুন না কেন— জাসদ তাঁদের প্রত্যেকের ভূমিকাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। জাসদ তাঁদের প্রত্যেককে নতশীরে ভালোবাসা জানায়। যাঁরা এখনও বেঁচে আছেন কিন্তু নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন কিংবা অন্য দলে আছেন— তাঁদের সকলের জন্য জাসদের দরজা সকল সময় খোলা। কারোর প্রতি জাসদের কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই; কষ্ট-অভিমান থাকলেও থাকতে পারে। জাসদের প্রধান দুটি চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য হলো— (১) অন্যান্য দল যখন পুরো-দল একসাথে মিলেমিশে আপোষের পথে যায় [যেমন ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ ও সিপিবির নেতৃত্বে ৮ দল এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যোগ দেয়], জাসদ-কর্মীগণ তখন যেটাকে ন্যায্য মনে করেন, তার সাথেই থাকেন; বারবার ভাঙন ও দলত্যাগের মধ্য দিয়ে শক্তিক্ষয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও গণমানুষের অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলনে এ পর্যন্ত জাসদ কখনো অনুপস্থিত থাকে নি। এটা জাসদের একটি সাংগঠনিক-দুর্বলতাও বটে। আর— (২) এই দলে কাল্ট বা ব্যক্তিপূজার কোনো জায়গা নেই; যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নির্মাণ করেছিলেন, তাঁরা সে বঙ্গবন্ধু ও ক্ষমতার মোহ ছেড়ে ১৯৭২ সালে জাসদ গঠন করেন। তাঁরা আবার তাঁদের একচ্ছত্র নেতা সিরাজুল আলম খানের সব সিদ্ধান্তকেও অন্ধভাবে অনুসরন করেন নি। জাসদ আপোষহীন কর্মীদের দল।

    বাইশ.
    ফলে আজকাল যাঁরা জাসদের প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্য চান, তাঁরা কি ১৯৯৭ সালের ঐক্যের কথা ভুলে গিয়েছেন? দেখেছেন, আসম আবদুর রব কীভাবে তাঁর প্রথম দলত্যাগকে দ্বিতীয়বার অনুসরণ করেছেন? তাই বলি— রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া সাংগঠনিক ঐক্য অর্থহীন; অকার্যকর; এমনকি ক্ষতিকরও বটে!!!

    জিয়াউল হক মুক্তা
    প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ
    কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি
    ৮ জুলাই ২০২০; ঢাকা।

  • সুপরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে: জাসদ

    সুপরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে: জাসদ


    পাটখাতের পুনর্জাগরণের চেষ্টার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে বর্ণনা করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
    দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার রোববার এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল গুলোকে ‘এন্টারপ্রাইজ’ হিসাবে পরিচালনারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
    বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে যখন পাটের জিনোম আবিস্কৃত হয়েছে, পাটের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে, তখন পাটকল বন্ধ করে দেওয়া এবং পাট অর্থনীতিকে পরিত্যক্ত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”
    সরকার লোকসানে থাকা ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘দ্রুত’ এ পাটকল গুলো সচল করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। পিপিপির উদ্যোগের সমালোচনা করে জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আদমজী বন্ধ হবার পর সেখানে আধুনিক পাট কারখানা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, আদমজীর জমিতে শিল্প প্লট করে আর কারখানার সবকিছু স্ক্র্যাপ করে জমি আর স্ক্র্যাপের হরিলুট হয়েছে। পিপিপির অধীনে সরকারের পাটকলগুলো চালু করার সদিচ্ছাও আদমজীর মত হরিলুটের খেলায় হারিয়ে যাবে।”
    আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে।
    “গত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে পুঞ্জীভূত লোকসান ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিমান বা বিদ্যুতের কুইক রেন্টালসহ বড় লোকসানি খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ লোকসান বা অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা পাটশিল্পের ৫০ বছরের পুঞ্জিভূত লোকসানের চাইতেও বেশি।”
    পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে যে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা থেকে মাত্র ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং ২৫ হাজার শ্রমিককে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে মজুরি দিয়ে লাভজনকভাবে ‘পরিচালনা করা সম্ভব’ ছিল বলে মনে করেন জাসদ নেতারা।

  • পাটকল বন্ধ করার পায়তারার প্রতিবাদ জাসদের

    পাটকল বন্ধ করার পায়তারার প্রতিবাদ জাসদের

    প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে সরকারের ভিতরের একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের পায়তারা তীব্র প্রতিবাদ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি।

    শনিবার (২৭ জুন) এক বিবৃতিতে জাসদ নেতৃবৃন্দ এ প্রতিবাদ জানান।

    নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ বছরে পাটকলগুলিকে লাভজনকভাবে পরিচালনা বিষয়ে সরকার, বিজেএমসি, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দফায় দফায় আলোচনায় পাট ক্রয়ে লোকসান-দুর্নীতি বন্ধে মৌশুমে যথাসময়ে কাঁচাপাট ক্রয় করা, কারখানা পরিচলন ব্যয়ে দুর্নীতি বন্ধ, পণ্য মোড়কে পাট ব্যবহার আইন ২০১০ প্রণয়ন করা, পাটকলগুলিকে আধুনিকায়ন করা, পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণসহ বাস্তবসম্মত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও প্রবস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু সরকারের ভিতরের এক গোষ্ঠী সেই সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করে পাটকলগুলিকে অচল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। পাটগুলিকে অচল রেখে অলাভজনক করে ফেলার দায়িত্ব শ্রমিকদের না। পাটক্রয়, কারখানা পরিচালনা করা, উৎপাদিত পণ্য বিপননের কোনো ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

    তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে পাটের জেনোম আবিস্কার হয়েছে ও প্রধানমন্ত্রী যখন পাটের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন তখন পাটকল ও পাটশিল্প ধ্বংসের জন্য অন্তর্ঘাত চালানো হচ্ছে। তারা পাটকল বন্ধ করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা, পাটকলগুলিকে আধুনিকায়ন, পাট ক্রয়ে দুর্নীতি বন্ধ, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ করা, পণ্যের মোড়কে পাট ব্যবহার আইন ২০১০ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনভাতাসহ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যায়াচুইটির টাকা পরিশোধ করার দাবি জানান।

  • মানুষ বাঁচানোই এখন একমাত্র রাজনীতি : ওবায়দুল কাদের

    মানুষ বাঁচানোই এখন একমাত্র রাজনীতি : ওবায়দুল কাদের

    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের এই সংকটকালে সরকার ও আওয়ামী লীগ কোনও রাজনীতি করছে না। করোনার সংক্রমণ রোধ ও মানুষ বাঁচানোই হচ্ছে এখন একমাত্র রাজনীতি।

    বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনস্থ সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব বরাবরের মতো সরকারের বিরুদ্ধে বিরূপ সমালোচনা করতে গিয়ে বিরাজনীতি করণের অভিযোগ এনেছেন। এ সংকটকালে সরকার তো কোন রাজনীতি করছে না? এমন কি আওয়ামী লীগও এ সময়ে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম করছে না।’

    তিনি বলেন, যদি কোন রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থে ভালো পরামর্শ দিতে চায়, সেটা সরকার গ্রহণ করবে। কোন ভুল হলে ভুল সংশোধন করার সৎ সাহস সরকারের রয়েছে।

    ‘সরকারের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে’ বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক ও অন্ধ সমালোচনা নির্ভর রাজনীতির জন্য বিএনপিরই পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বক্তৃতা, বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করা ছাড়া বিএনপির এখন আর কোন রাজনীতি নেই। অসহায় মানুষ থেকে তাদের অবস্থান এখন যোজন যোজন দূরে।

    ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সরকারি ও অনেক বেসরকারি হাসপাতালগুলো যখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ফ্রন্টলাইনে কর্মরত যোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে কাজ করছেন। তখন কিছু হাসপাতাল-ক্লিনিক যেকোনো সাধারণ সেবায় গেলেও বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করানোর কথা বলছে, কিংবা করোনা রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা দিচ্ছেন না। এমনকি কোনও কোনও হাসপাতাল রোগী ভর্তি না করার জন্য নানান ছলচাতুরী আশ্রয় নিচ্ছে, এ মুহূর্তে এটা সমীচীন নয়।

    তিনি বলেন, আবার করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান স্মার্ট এবং দ্রুত সেবা দিলেও কারো কারো বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে টেস্টের সিরিয়াল পেতে সময় লাগে অন্যদিকে নমুনা দেবার পর রেজাল্ট পেতে লাগছে কয়েক দিন। অহেতুক এ সময়ক্ষেপণে রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনরা যেমন উদ্বিগ্ন হচ্ছে, তেমনি মনোবল হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আবার অনেকে মৃত্যুর মুখেও পতিত হচ্ছেন। এসকল প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ে রিপোর্টদান এবং নমুনা সংগ্রহের সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

    বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল যারা মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে বাণিজ্য করছে। তাদের এব্যাপারে সর্তক হওয়া উচিত। এ দুর্যোগে মানবিক হওয়া উচিত। অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা পরিহার করে সঠিক সেবা দান করুন। জটিল রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান দেরি হলে তা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পতিত হবে।

    রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যারা সমন্বয়ের কথা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোথাও কি এমন নজীর আছে? করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসা সেবা প্রদান রাজনীতিবিদের কাজ নয়, যাদের দরকার, সেসব বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে, তাদের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ৬৬টি পরীক্ষাগারে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকার পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় নমুনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

    ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতি যেমনি লক্ষ্য অর্জন করেছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পারস্পরিক সহমর্মিতা,ত্যাগ ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের মাধ্যমে উত্তরণের পথে জাতি এগিয়ে যাবে।

  • কামাল লোহানীর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা জাসদের শোক

    কামাল লোহানীর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা জাসদের শোক


    সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা জাসদ।

    বিবৃতিতে জেলা জাসদের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, কামাল লোহানী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন প্রগতীশীল লেখককে হারাল। দেশে তার অভাব কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।

    বিবৃতি দাতারা হলেন সাতক্ষীরা জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লস্কর, সমাজসেবা সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বীনা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পাপিয়া আহমেদ, তালা উপজেলা জাসদের সভাপতি বিশ্বাস আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, কলারোয়া উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, দেবহাটা উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওহাব, আশাশুনি উপজেলার আহবায়ক মো. সুরাত উজ্জামান, সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম রুবেল, কালিগঞ্জ উপজেলা জাসদের সভাপতি শেখ মোদাচ্ছের হোসেন জান্টু, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, শ্যামনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম কামরুজ্জামান, যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি অনুপম কুমার অনুপ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম আবদুল আলীম প্রমুখ।

  • জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডাক্তার রফিকুল হায়দার লিটনের মৃত্যুতে জাসদের শোক

    জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডাক্তার রফিকুল হায়দার লিটনের মৃত্যুতে জাসদের শোক



    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ শুক্রবার ১৯ জুন ২০২০ এক শোক বার্তায় এনাম মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে ডাক্তার ও ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে সিলেট এমএওজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ডা. রফিকুল হায়দার লিটনের করোনায় মৃত্যুতে গভীর শোক এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার-স্বজন-সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক সমদেনা জ্ঞাপন করেন। তারা ডা. রফিকুল হায়দার লিটনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ডা. রফিকুল হায়দার লিটন জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও সিমিটারসহ তেল-গ্যাস লুন্ঠণকারী মাল্টিন্যাশনাল বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের আন্দোলনে সাহসী ভুমিকা পালন করেছেন।

  • কামরানের মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের শোক

    কামরানের মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের শোক



    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেট
    সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরানের
    মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি
    সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি,
    সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ এবং সাধারণ
    সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
    সোমবার এক বিবৃতিতে তারা এই শোক প্রকাশ করেন। প্রেস
    বিজ্ঞপ্তি

  • বাংলাদেশের ইতিহাস মোহাম্মাদ নাসিম

    বাংলাদেশের ইতিহাস মোহাম্মাদ নাসিম

    ডেক্স রিপোর্ট :

    মোহাম্মদ নাসিম (২ এপ্রিল ১৯৪৮ – ১৩ জুন ২০২০) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালেও স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে ছিলেন।

    জন্ম ও শিক্ষা জীবন

    মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী[৩] এবং মাতা আমেনা মনসুর। পিতা মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[৪]

    পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

    রাজনৈতিক জীবন

    ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

    ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

    ১৯৮৬ সালে নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। ঐ নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিমকে মনোনয়ন পান এবং বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

    ব্যক্তিগত জীবন

    পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ।

    মৃত্যু

    রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। ওই দিনই কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এর চার দিন পর, চিকিৎসার সময় তার ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এরপর ৪ জুন অবস্থার উন্নতি হয়, তবে পুনরায় ৫ জুন ভোরে তিনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে আইসিইউতে রাখা হয়। তার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বোর্ড গঠিত হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস অনুপস্থিত পাওয়া যায়। ১২ জুন পরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পরে পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ ১৩ই জুন ঢাকায় বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

  • মোহাম্মদ নাসিম: রাজনীতিতে পাঁচ দশকের বেশি পথচলা

    মোহাম্মদ নাসিম: রাজনীতিতে পাঁচ দশকের বেশি পথচলা

    ন্যাশনাল ডেক্স : সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

    সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

    রাজনীতির সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম সম্পৃক্ত হন ষাটের দশকে। শুরুর দিকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ করতে শুরু করেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

    মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের দোসরা এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায়। তার পিতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।Image caption জনসভায় ভাষণ দানরত মো. নাসিম।

    উনিশশো পঁচাত্তর সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের হত্যাকাণ্ড ও জেলখানায় আরো তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর পিতা এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন।

    পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।

    ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেকজন নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছেলে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’১৯৭৫ সালের পর তাকে বেশ একটা দুঃসময় পার করতে হয়। আমাদের সবাইকেই সেটা করতে হয়েছে। ৭৮ সালের দিক থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। নেত্রী আসার পর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে আসার পর) তিনি সবসময় নেত্রীর সঙ্গেই থেকেছেন।‘’

    ‘’একাত্তর সালে মুক্তিসংগ্রামের সময় কলকাতায় আমরা এক বাড়িতে থাকতাম। জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে আমরা তাকে আমাদের বড় ভাইয়ের মতো মনে করতাম। তিনিও সেভাবেই আমাদের খোঁজখবর রাখতেন। তাকে দেখেছি, যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশেও শক্ত মন নিয়ে দাঁড়াতে পারতেন, কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রশাসক হিসাবেও তাকে সফল দেখতে পেয়েছি।‘ছবির কপিরাইট Facebook Image caption প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মো. নাসিম।

    ‘’তিনি অনেক সময় গর্ব করেই বলতেন,আমি কোন বেঈমানের সন্তান নই, আমি বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত আদর্শের সৈনিক, তার সন্তান।‘’ বলছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

    উনিশশো একাশি সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে মোহাম্মদ নাসিম যুব সম্পাদক হন। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসেন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ১৯৮৭ তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

    তার আগের বছর, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।

    আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতির ক্ষেত্রে সারাজীবন সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ষাটের দশক থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একটা রাজনীতিক পরিবারের বেড়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে সাজা পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সম্মুখ সারিতে ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটা সংগ্রামের সাথে তিনি সামনের কাতারে ছিলেন।‘’

    আওয়ামী লীগের ‘৯২ ও ‘৯৭ সালের জাতীয় সম্মেলনে তাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালে কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।ছবির কপিরাইট Facebook

    উনিশশো ছিয়ানব্বই, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একসময় তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

    রাজনীতিতে তাদের পরিবারের ভূমিকা নিয়ে ‘সংসদে তিন প্রজন্ম’ নামের একটি বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের ভূমিকা নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। তিনি তিন সন্তানের জনক।

    তাঁর নির্বাচনী এলাকা কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’তার পিতাকে যেমন এলাকার লোক দরকারের সময় পেতো, তেমনি তাকেও আমাদের যেকোনো দরকারে সবসময় কাছে পেয়েছি। প্রতিমাসে কয়েকবার তিনি এলাকায় আসতেন। তিনি বিদেশে থাকলেও আমাদের ফোন করে এলাকার খোঁজখবর নিতেন। দলমত নির্বিশেষে এখানকার সবাই জানে, তার মতো নেতা পাওয়া যায় না।‘’

    ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

    রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি এইচএসসি পড়ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। একবছর পরে তিনি ছাড়া পান।

    ১৯৭৫ সালে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিযানে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

    সেই সময় অবৈধভাবে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালে মোহাম্মদ নাসিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত ওই সাজা ও মামলা বাতিল করে দেন।

    কিন্তু মামলায় সাজা হওয়ার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। সেই আসনে তার ছেলে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। মামলা ও সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকেন।

    ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রী না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মুখপাত্র হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

  • সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

    ন্যাশনাল ডেক্স : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই। তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আজ শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। 

    গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন।মোহাম্মদ নাসিম স্ত্রী, তিন ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।

    ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ নাসিম।

  • ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ৪টি ইউনিয়নের ১৫’শ পরিবারের মাঝে বিএনপির খাবার বিতরন

    স্টাফ রিপোটার ঃ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ৪টি ইউনিয়নের হতদরিদ্র এক হাজার ৫’ শ পরিবারের মাঝে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ¦ রাকিবুল ইসলাম বকুলের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার শ্রীফলকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উক্ত খাবার বিতরনের উদ্বোধন করেন, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী।
    উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জি.এম লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে উক্ত খাদ্য বিতরন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম, যুগ্ম-আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা যুবদল সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি সোহেল আহমেদ মানিক, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মুকুল, স্বেচ্ছাসেবক দল সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাসুদুল আলম, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এড. সোলায়মান কবীর, সদস্য আশেক ইলাহি মুন্না, যুবনেতা হাসান শাহারিয়ার রিপন,সিটি কলেজ সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা প্রমুখ।
    সাবেক ছাত্র নেতা বোরহান উদ্দীন সেতুর সার্বিক সহযোগিতায় এ সময় উপজেলার ইশ^রীপুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র এক হাজার ৫’শ পরিবারের মাঝে উক্ত খাবার বিতরন করা হয়।
    বক্তারা এ সময় বলেন, বিএনপি রাজনীতি করে জনগণের কল্যানের জন্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সহযোগিতা করে যাচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। আগামীতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তারা আরো জানান।

  • পীর সাহেব চরমোনাইয়ের পক্ষ থেকে আম্পান ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ টাকা প্রদান

    প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আজ মঙ্গলবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর আলহাজ্ব হজরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদরেজাউল করীম,পীর সাহেব চরমোনাই এর পক্ষ থেকে আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মানুষের মাঝে নগদঅর্থ প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর অধ ̈ক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালসাহেব, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারন সম্পাদক অধ অধ্যপক আব্দুল করীম শাহিন, ইসলামীযুব আন্দোলনকেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক খুলনা বিভাগ ডাঃ কাজী মো: ওয়েজকুরণী।প্রধান অতিথি তার বক্তবে ̈বলেন- সাতক্ষীরাতে মজবুত, টেকশই ও স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই। সাতক্ষীরা জেলাকে বন্যা মুক্ত রাখতে সরকারকে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের আহবান জানান। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি সাতক্ষীরা জেলা ছদর (সভাপতি) আলহাজ্ব শেখ আব্দুর রাজ্জাক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মুহাদ্দিস মোস্তফা শামছুজ্জামান, সেক্রেটারী মো: ছারোয়ার আলম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তোছাদ্দেক হোসেন খোকা, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মহিউদ্দীন আল ফারুক, ইসলামী যুব আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো: মুবাশশীরুল ইসলাম তকী,ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মো: কবিরুল ইসলাম, মাওঃ আব্দুল হান্নান, মাওঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, হাফেজ মোখলেছুর রহমান, মো: মনিরুল ইসলাম সহ শ ̈ামনগর উপজেলার নেতৃবৃন্দ। ইসলামী আন্দোনল বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে ঘূর্ণীঝড় আম্পানে দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের পাশে দাড়ানোর জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে। সেই সাথে সরকারকে দুর্গত মানুষের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থথা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।