Category: ফিচার

  • ই-ওয়ালেট সেবার লাইসেন্স পেল রিকারশন ফিনটেক

    ই-ওয়ালেট সেবার জন্য পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাই‌সেন্স পেল রিকারশন ফিনটেক লিমিটেড। ‘ক্যাশ বাবা’ নামে প্রতিষ্ঠানটি ই-ওয়ালেট সেবা দিবে।

    বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত  সার্কুলার লেটার জারি করা হয়েছে। এনিয়ে মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান ই-ওয়ালেট সেবা দেওয়ার লাইসেন্স পেল। ই-ওয়ালেট হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে অ্যাপভিত্তিক অর্থ রাখার একটি ব্যবস্থা। এতে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় টাকা জমা রেখে দেশের মধ্যে অনলাইনে লেনদেন করা যায়। 

    বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার, পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর ৭ (এ) (ই) ধারার আওতায় জারিকৃত বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন ২০১৪ অনুসারে দেশে ইলেকট্রনিক লেনদেন প্রসারের লক্ষ্যে রিকারশন ফিনটেক লিমিটেডকে শর্তসাপেক্ষে দেশের অভ্যন্তরে ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানের জন্য পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।

    এর আগে ই-ওয়ালেট সেবার দেওয়ার জন্য আইপে সিস্টেমস লিমিটেডকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম পিএসপি লাইসেন্স দেয়। দেশের প্রথম অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মটি আইপে নামে পরিচিত। এরপর ডি মানি বাংলাদেশ নামের আরকটি কম্পানিকে ই-ওয়ালেট সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বাংক লাইসেন্স দেয়।

    জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাং‌কের লাই‌সেন্স ছাড়াই অনেক প্রতিষ্ঠান ই-ওয়ালেট সেবা দিয়ে আসছিল। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাই‌সেন্স ছাড়া পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরদের (পিএসও) কোনো ধরনের সেবা না দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নি‌র্দেশ দেওয়া হয়। একই স‌ঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না রাখ‌তে নি‌র্দেশ দেয় বাংলা‌দেশ ব্যাংক। এবিষয়ে গত ৬ মার্চ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

  • বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম

    প্রতিটি সংকটে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়। জলবায়ু পরিবর্তনও তার ব্যতিক্রম নয়

    জহুরুল কবীর: ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।

    জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদী বিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ আরও প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। তবে উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগ ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

    বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    অনেক সময় বন্যার কারণে নদী ভাঙন হয়। আবার নদী ভেঙেও লোকালয় প্লাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

    ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

    বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত।

    অতিরিক্ত গরমও জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক ধরনের প্রভাব। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে মানুষের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ, আর এক্ষেত্রে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    এসব লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুদের। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    দুর্যোগের সময়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া, যৌন নিপীড়নের শিকার, শিশু শ্রম, পাচার এবং অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি থাকে

    বাংলাদেশে নারী-পুরুষ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ছেলে ও মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়। শিশুর বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে তাদের অসহায়ত্বও ভিন্ন ধরনের হয়, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েক বছরে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর (ডিআরআর) ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

    উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ বহু ভবন নির্মাণ করেছে যা ঘুর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে দুর্যোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন হারানোর হার ক্রমশ বাড়ছে।

    সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

    এই বিপুল ‍বিনিয়োগের সঙ্গে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি হতে হবে।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণের যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি

    সমাধান

    দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়ায় কমিউনিটির সামলে নেওয়ার সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ

    ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থিতি সামালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগে গতানুগতিক জরুরি ‘সাড়া ও ত্রাণ’ ভিত্তিক কার্যক্রম থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের আরও সমন্বিত ও টেকসই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।

    বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাক্টের আওতায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের একযোগে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

    উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির দিক দিয়ে অনেক কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছে। এসব দুর্যোগ সম্পর্কে জ্ঞান ও জানাবোঝাও বেড়েছে।

    উল্লেখযোগ্য তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার অনেক বিষয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ।

    ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত সাত লাখ রোহিঙ্গার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যখন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা যোগাড় করা হচ্ছিল সেই সময় বাংলাদেশ সরকার শুধু ইউনিসেফ ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার সামান্য সহায়তা নিয়ে খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে বন্যায় বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে রক্ষা করে।

    সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেয়া, সমাজের সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিশুকেন্দ্রিক পরিকল্পনার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজও করা হয়

    এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনার বিষয়গুলো হল-

    # দুর্যোগের সময় ও পরবর্তীতে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।

    # দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণের উৎস নিশ্চিতে বিনিয়োগ।

    # নীতি নির্ধারণ ও উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়াদি ও তাদের প্রয়োজন মেটানোর পদক্ষেপ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।  

    ইউনিসেফের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এজেন্ডায় দুর্যোগকালে সব বয়সী শিশুরা যেসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার সবই  বিবেচনায় নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত প্রয়োজনগুলো যাতে মেটানো যায় সে লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক (ডেটা সিস্টেমের) সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    পানীয় জলের উন্নততর অবকাঠামো এবং স্কুলে স্কুলে পৃথক ল্যাট্রিন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিরাপদ পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মেয়ে ও নারীদের উপযোগী স্থাপনা প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া হয়।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি এবং এমনকি শিশুদেরও সহায়তা নেওয়া হয়।

    নির্দিষ্ট বয়সভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের জন্য ইউনিসেফের কার্যক্রমের কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হল:

    নবজাতক, ছোট শিশু ও তাদের মায়েরা

    বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত সমস্যাগুলো সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ইউনিসেফ। তাপদাহ, নতুন নতুন এলাকায় রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং দুর্যোগকালে আহতদের চিকিৎসা প্রভৃতি বর্তমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় নিয়ে আসা যায়।

    সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের পাঠ্যসূচিতে জরুরি পরিস্থিতির প্রস্তুতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দুর্যোগে অসহায় এলাকাগুলোতে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণে ইউনিসেফের সহায়তা কাজে লাগানো হয়।

    দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে কমিউনিটি রেডিও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ গর্ভধারণকালে হাইপারটেনশন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার জন্য যে সমস্যায় ভোগেন অনেক মা, সে সম্পর্কিত তথ্য ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে।

    দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এইচআইভির ওষুধ ও সেবা সহজলভ্য করার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।

    স্কুলের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। কোনো একটি দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রতিরোধে পাইলট প্রোগ্রামে সহায়তা করা হচ্ছে।

    বাবা-মার সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বাবা-মার প্রশিক্ষণে জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুর সুরক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

    দুর্যোগ পরিস্থিতি ও এর পরেও শিশুর জন্য সেবাগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অংশীদারদের নিয়ে ইউনিসেফ জেলা পর্যায়ে ‘জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার’ জন্য পলিসি ও ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করেছে।

    সংকটের ঝুঁকি বাড়ায় দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে ইসিডি সেবাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও টেকসই পদ্ধতি বের করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করছে ইউনিসেফ।

    শিশুর খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখার উদ্যোগে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। দুর্যোগের সময়ে ভুক্তভোগীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতেও সহায়তা দেওয়া হয়। জলবায়ু সহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবন ও চাষেও উৎসাহ দেয় ইউনিসেফ।

    দুর্যোগকালে দূষিত পানির মাধ্যমে প্রায়ই পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাইজিন (ওয়াশ) স্থাপনা নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্থাপনা যাতে জলবায়ু সহিষ্ণু করা যায় সেজন্য গবেষণা ও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। জলাবদ্ধতা, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা ও খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিতে এমএআর সিস্টেম ও অন্যান্য জলবায়ু সহিষ্ণু পানি প্রযুক্তির উন্নয়নেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইউনিসেফ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে উন্নততর রান্নার চুলার ব্যবহার উৎসাহিত করছে।

    প্রাথমিক স্কুলবয়সী শিশু

    পরিবেশগত জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহীত পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসৃত হওয়া উচিত, যাতে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের জন্য জেলা পর্যায়ে সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাজ করে ইউনিসেফ।

    আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার দ্বিতীয় দফার এই সুযোগে তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির স্থাপনা বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সে বিষয়েও শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়। ‘লিটল ডক্টর প্রোগ্রামের’ আওতায় প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্য বিধি শেখানো হয়।

    বাবা-মার একজন আছেন এমন শিশু এবং দুঃস্থ মায়েদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। সংকটের আগে, সংকটকালে ও পরে এসব সেবা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে কাজ করছে ইউনিসেফ।

    পরিবর্তনের দূত হিসেবে কিশোর-কিশোরী

    মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নাজুক এলাকাগুলোতে) জীবন-দক্ষতা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে ইউনিসেফ। সান্ধ্যকালীন স্কুল ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুল এভাবে বিকল্প উপায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের পরীক্ষামূলক উদ্যোগে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। বিশেষ পরিস্থিতিতে শ্রম বাজারে ঢুকে পড়া শিশুর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যও রয়েছে এই উদ্যোগের পেছনে।

    জীবন-দক্ষতা শিক্ষায় বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেমন পাচার, শহুরে সেন্টারে স্থানান্তর, আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস ও যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেদের রক্ষার কৌশল শেখানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও এইচআইভি নাজুকতার মধ্যে সম্পর্ক বের করতেও কাজ করছে ইউনিসেফ।

    দুর্যোগের পর কিশোরী মেয়েরা বাল্য বিয়ে, শিক্ষার সুযোগ হারানো ও অন্যান্য বঞ্চনার ঝুঁকিতে থাকে। ইউনিসেফ শিক্ষক ও কমিউনিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দেয় যাতে মেয়েদের শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত মোবাইল টিম ও শিশুবান্ধব অন্যান্য উদ্যোগে নিপীড়ন, সহিংসতা ও জরুরি পরিস্থিতিতে উপেক্ষার বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য কিশোরী মেয়েদের সক্ষম করে তোলে।

    আরও কিশোর-কিশোরী এবং রেডিও শোনা গ্রুপগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উদ্যোগগুলোতে আরও সম্পৃক্ততা চায় ইউনিসেফ। শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বড় কারণ। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণে কমিউনিটির সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ সাঁতার প্রোগ্রাম চালানো হয়।

    লোকজনের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামনের কাতারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং শহর ও পৌরসভায় মেগা ফোন, সৌরশক্তি চালিত রেডিওর সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউনিসেফ।

    নীতি ও সচেতনতা

    ইউনিসেফের সংগ্রহে মনস্তাত্ত্বিক ও বিনোদনমূলক নানা ‘কিট’ বা উপকরণ রয়েছে এবং সেগুলো ইতোমধ্যে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে দেওয়াও হয়েছে। এটা জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুদের ‘ন্যূনতম সেবা প্যাকেজের’ অন্তত তিনটি উপকরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।

    ইউনিসেফ শহরাঞ্চলে শিশুদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের শিশুকেন্দ্রিক অভিযোজন ও স্কুল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

    প্রান্তিক লোকজনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিয়ে শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তহবিল সংগ্রহেও সহায়তা করে ইউনিসেফ।

    ইউনিসেফ তার ডিজাস্টার অ্যাক্ট ২০১০ এর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় শিশুবান্ধব প্রস্তুতি, সাড়া প্রদান, সুরক্ষা ও ঝুঁকি প্রশমনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার চালাচ্ছে।

  • করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা: একটি বিস্ফোরণোন্মুখ টাইমবোমা

    করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা: একটি বিস্ফোরণোন্মুখ টাইমবোমা

    নুরুল আলম মাসুদ

    ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা, কৃষির বাণিজ্যকীকরণ, জনগণের খাদ্য অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অনুপস্থিতি এবং রাজনীতিতে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘকাল ধরেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি কেবল সঙ্কটকে আরও উদগিরণ করেছে মাত্র

    ইতোমধ্যে সারা পৃথিবীর দেড় লাখেরও বেশির মানুষের জীবন সংহারি এবং ২৩ লাখেরও বেশি সংক্রামিত করা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে নিজেকে জাহির করেছে। লকডাউনের মধ্যে পড়েছে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ। যদিও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে সামনে এসেছে, এটি সমানভাবে একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট; যা  অনুসরণ করবে মন্দা, খাদ্যাভাব এবং অস্থিতিশীলতা। ইতোমধ্যে  জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বিশ্বজুড়ে জারি করা লকডাউনের জেরেই অনভিপ্রেত খাদ্যের সংকট তৈরি হতে পারে। খাবারের অভাব এখন বোঝা না গেলেও লকডাউনের পর খাদ্যের প্রকট অভাব দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশের জন্য এই সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। পিপিআরসি ও বিআইজিডি করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, “চলমান সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপর্যয়ে পড়েছেন দেশের মাঝারি, অতিদরিদ্র মানুষ। এতে নতুন এক দরিদ্র শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে ৮২ শতাংশ ও গ্রামে ৭৯ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা খাবারের জন্য ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরাঞ্চলে মানুষের খাবারের পরিমাণ কমে গেছে ৪৭ শতাংশ, গ্রামে কমেছে ৩২ শতাংশ।” জরিপের সারাংশ বলছে পরিস্থিতি এমন যে, এ মাসের শেষের দিক থেকে দেশের বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের মানুষ বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়বে।

    তবে, বিশ্বব্যাপী নয়া উদারবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো “করোনাভাইরাস”কে ঘিরেই হুট করে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিবে বলে যে “নতুন আতঙ্ক” আমদানি করছে তা একদমই ভিত্তিহীন। বাস্তবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা, কৃষির বাণিজ্যকীকরণ, জনগণের খাদ্য অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অনুপস্থিতি এবং রাজনীতিতে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘকাল ধরেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আর করোনাভাইরাস মহামারি কেবল সঙ্কটকে আরও উদগিরণ করেছে মাত্র। মনে রাখতে হবে, সরকারি তথ্য মোতাবেকই দেশের প্রায় পৌনে ৪ কোটি মানুষ (দরিদ্র ২১.৮ শতাংশ) পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। আর প্রায় ২ কোটির (অতি দরিদ্র ১১.৩ শতাংশ) কাছাকাছি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আয় করতে পারতেন না। তারমানে, খাদ্য নিরাপত্তার  সঙ্কট আগ থেকেই ছিলো। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০১৯ অনুযায়ী ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম- আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিন্ম।  করোনাভাইরাস দুর্যোগ আমাদের এই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিকে আরও ঘনীভূত এবং দীর্ঘমেয়াদী করবে। দুই হাজার ৬৭৫ জনের ওপর পরিচালিত ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপে  দেখা যায়, জরিপকালীন ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২৯ ভাগের ঘরে ছিল এক থেকে তিন দিনের খাবার-এর তথ্য সেই ইঙ্গিতই বহন করছে।

    বাংলাদেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৯৫ শতাংশের যোগানদাতা কৃষকের মধ্যে খানা হিসেবে তাদের ৮৮.৪৮ শতাংশই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, এপ্রিল ও মে মাস কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম;  এই মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন কৃষিপণ্য বাজারে আসার কথা ছিলো। কিন্তু চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কৃষকের উৎপাদিত বেশিরভাগ ফসলই মাঠে নষ্ট হচ্ছে। দেশের চালের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান আসে বোরো থেকে- সেটিও শ্রমিক না পাওয়ায় কাটতে না পারা এবং আসন্ন পাহাড়ি ঢলের ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে দেশের ডেইরি, পোল্ট্রি  খাতে। ক্ষুদ্র উৎপাদকদের এই অর্থনৈতিক ক্ষতি সন্দেহাতীত ভাবে তাদেরকে আরও দারিদ্র্য অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে,  যা আগামী সময়ে দেশের কৃষিজ উৎপাদন কমিয়ে দেবে। 

    একই সাথে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত তৈরি পোষাক শিল্প এবং প্রবাসী আয়ে ব্যাপক ভাবে ধাক্কা লাগবে। বেকারত্বের শিকার হতে পারেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের মধ্যে আড়াই লাখ প্রবাসী বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। এরা আবার বিদেশে ফেরত যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আবার নতুন করেও কোথায় কেউ যেতে পারছে না। ফলে, বেকার প্রবাসীরাও আমাদের মোট বেকারত্বের মিছিলে যোগ দেবে। 

    কোনো সন্দেহ নেই, ২০০৮ সালের মন্দার চেয়েও আমরা আরও বড় একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। কোভিড-১৯ মহামারির সাথে আসা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থার চরম অস্থিরতা বিগত মন্দার চেয়ে আরও বেশি দুর্বিপাক তৈরি করবে। অতি-উদারবাদী বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্য মানুষের বর্তমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়- তা আমরা সেনাশাসিত সরকারের সময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। সেই সময় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং হাতে টাকা থাকলেও বিদেশ থেকে চাহিদা মতো খাদ্য কিনতে না পারার অভিজ্ঞতা থেকেও আমাদের সরকারগুলো কৃষি এবং খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত নিওলিবারেল প্রকল্পসমূহ নিয়ে কোনো ধরনের সংরক্ষণমূলক কার্যক্রম তো গ্রহণ করেইনি বরং কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হ্রাস এবং বাণিজ্যিকীকরণের জন্য কাজ করছে।

    আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ধান রক্ষা করা যাবে কিনা তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক। ঢাকা ট্রিবিউন

    জনগণের খাদ্যের অধিকারের নিশ্চয়তা এবং খাদ্য সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার প্রদানসহ জননীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না হলে বর্তমান বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কট সম্ভাব্যভাবে ক্ষুধার সংকটে পরিণত হতে পারে। করোনাভাইরাস হয়তো একটা সময় হেরে যাবে, কিন্তু খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং সাধ্যের মধ্যে খাদ্য পাবার নিশ্চয়তা রাষ্ট্র কতটা নিশ্চিত করতে পারবে তা বারবার সামনে চলে আসছে। এ জন্য মহামারির মধ্যেও রাষ্ট্র নাগরিকদের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কিছু নীতিগত প্রস্তাবনা তুলে ধরছি: 

    লকডাউন চলাকালীন নাগরিকদের খাদ্য অধিকারের নিশ্চয়তা 

    মহামারির মধ্যেও নাগরিকদের মানবাধিকারে গ্যারান্টি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়। তাই করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মানুষের খাদ্য অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষত: দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, গৃহকর্মী,ভাসমান মানুষ, রিক্সাশ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ছোট দোকানি, হিজড়া-সম্প্রদায়সহ সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং ঝুকিপূর্ণখাতে কর্মরত শ্রমিককে সরাসরি খাদ্যভর্তুকি প্রদান করা। প্রচলিত ত্রাণ কার্যক্রমের বাইরে এইসব মানুষের জন্য পারিবারিক রেশন প্রদান করা যেতে পারে। একই সাথে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী চার কোটি মানুষের জন্য সপ্তাহভিত্তিক নিঃশর্ত নগদ অর্থসহায়তা করা যেতে পারে। শহুরে দরিদ্র এবং গৃহহীন জনগোষ্ঠীর কোয়ারেন্টিন পালন নিশ্চিত করতে হলে, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে।

    আভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন জোরদার করা

    একটিখাদ্য সার্বভৗম এবং শক্তিশালী দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থাই বাজার মূল্যের অস্থিরতার বিরুদ্ধে সেরা সুরক্ষাকবচ হতে পারে। এ জন্য চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করতে হবে। শ্রমিকের অভাবে যেন ধানকাটা ব্যাহত না হয়- সে জন্য সরকারিভাবেই শ্রমিক যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। উৎপাদন চলমান রাখতে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি সরাসরি প্রান্তিক কৃষকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু গত মার্চে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬০ শতাংশ কম, দেশের ফসলের সবচেয়ে বড় এই মৌসুমে মাঠে আলু, সবজি ও সরিষা রয়েছে, যেগুলোতে সেচ দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্র ক্ষুদ্র কৃষকদের যারা নিজেরাই শ্যালো মেশিনে ইরিগেশন করে, তাদেরও ডিজেল ক্রয়ের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা দিতে হবে।

    স্বানীয়ভাবে কৃষক বাজার নির্মাণ এবং সহায়তা

    গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খাদ্য উৎপাদনকারীদের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে বাজার গড়ে তুলতে হবে এবং দলীয় ক্যাডার এবং দালাল/ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রেণর বাইরে এইসব বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এইসব বাজারের মাধ্যমেই কৃষক স্থানীয় কৃষি উপকরণের যোগান দেবে একই সাথে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে শহুরে ভোক্তাদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ তৈরি করতে হবে। বিকেন্দ্রীকৃত পদ্ধতিতে কৃষিপণ্য বিনিময়ের সুবিধার্থে স্থানীয়ভাবে ক্রয়বিক্রয়ের বাজারস্থাপনে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এর সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত সুবিধার্থে ক্ষুদ্র কৃষক এবং ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীদের ছোট শহর এবং নগরকেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে হবে।

    জাতীয় খাদ্য মজুদ জোরদার করা 

    কৌশলগতভাবে জাতীয় খাদ্য মজুদ জোরদার করতে হবে। খাদ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কৌশলগত জাতীয় সংরক্ষণাগার স্থাপন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। সরকারিভাবে এই বছর ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধানচাল ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার স্বার্থে সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ লাখ মেট্রিক টন ধানচাল ক্রয় করা প্রয়োজন। অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, গম, সরিষা, মসুর, ছোলা, মটর, খেসারি তোলার সময়েই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৃষিপণ্যের বাজারজাতের জন্য কোনো ব্যবস্থা সরকার নেয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আলু তোলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকার কারণে ১০৮ লাখ টন আলু তোলার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার মধ্যে ৯৭.৬ লাখ টন তোলা হয়েছে। তবে পেঁয়াজ তোলার সময়ে লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে ২৩.৮ লাখ টন পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তোলা হয়েছে মাত্র ৯.৭৩ লাখ টন। এক্ষেত্রে সরকারকে এই সকল ফসল ক্রয় এবং মজুদের সীমা বাড়াতে হবে। প্রধান খাদ্য নয় এমন শস্য আমদানি এবং জৈব জ্বালানি উৎপাদনে স্থগিতাদেশ প্রবর্তন করতে হবে।

    কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি

    বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকরণ এবং পুঁজি যোগান হলেও তা ক্ষুদ্র কৃষকের নাগাল পায়নি। এমনকি কৃষিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা রয়েছে। প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষিখাতে বরাদ্দ কমছে। আসন্ন মন্দা মোকাবিলায় কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত: দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে; দ্বিতীয়ত: গ্রামভিত্তিক কৃষি অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধি তৈরিতে; তৃতীয়ত: করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বেকরত্ব মোকাবিলায় কৃষিতে কর্মসংস্থান তৈরির করার জন্য কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ জোরদার করতে হবে। জাতিসংঘ ২০১৯-২৮ সালকে পারিবারিক কৃষি দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে পারিবারিক কৃষিতে বিনিয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় কৌশল প্রণয়ন করত হবে। 

    কৃষিজমি সুরক্ষা

    প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। কিন্তু, জমি থাকলে তবেই আবাদের প্রশ্ন আসবে। সরকারি হিসাব মতে, প্রতি বছর কৃষিজমি এক শতাংশ হারে কমছে। কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য সরকার ২০২৫ সালে “কৃষিজমি সুরক্ষা এবং ভূমি ব্যবহার আইন” তৈরি করেছে। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে আইনটি এখনো খসড়াতেই থেকে গেছে, আলোর মুখ দেখেনি। অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে কৃষিজমি অকৃষিতে ব্যবহার রোধ করতে হবে এবং কৃষিজমি সুরক্ষা এবং ভূমিব্যবহার আইন প্রণয়ণ করতে হবে।

    স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা

    খাদ্য নিরাপত্তাহীনদের ক্ষমতায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বৈষম্যহীনতা, সমতা এবং সুশাসনের নীতির ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কোভিড-১৯ সংকটে জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে রাষ্ট্র ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মজুদদারি, ত্রাণ চুরি কিংবা মানুষের খাদ্য অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। খাদ্য সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা কার্যকর করতে হবে। প্রশাসন এবং সরকারদলীয় সংগঠনের মাধ্যমে সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে চাইছে। কিন্তু, এই সংকটকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

    কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক পুঁজিবাদী খাদ্যব্যবস্থার অন্যায্য, অস্থিতিশীল, অসমচরিত্রকে স্পষ্ট করে দিয়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্যব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে, জমিও অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের ন্যায্যবন্টনই হবে মহামারি ও খাদ্য সংকট এড়ানোর অব্যর্থ উপায়। মানুষের খাদ্য পাওয়ার অধিকারকে জোরালোভাবে গুরুত্ব না দিলে বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে খাদ্য সংকট হবে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকা একটি টাইম বোমার মতো।

    নুরুল আলম মাসুদ

    সাধারণ সম্পাদক, খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), বাংলাদেশ

  • ‘কোয়ারানটাইন’ ধারণা’র প্রবর্তক ছিলেন ইবনে সিনা

    ‘কোয়ারানটাইন’ ধারণা’র প্রবর্তক ছিলেন ইবনে সিনা

    ইরানে জন্মগ্রহণকারী ইবনে সিনা ছিলেন মুসলিম দুনিয়া তথা বিশ্বের একজন অগ্রণী বিজ্ঞানী, গবেষক ও দার্শনিক। তাঁর পুরো নাম আবু আলি আল হুসেইন ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবন-সিনা। অবশ্য পাশ্চাত্যে তিনি পরিচিত আভিসিন্নাহ নামে। তার ছিল বিভিন্ন বিষয়ে বিরল প্রতিভা। এককথায় ‘পলিম্যাথ’ বা বহুবিদ্যাধর। ইবনে সিনা ছিলেন একাধারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৪৫০টি গবেষণা গ্রন্থ লিখেছিলেন। তার মধ্যে এখনও ২৪০টি গ্রন্থ পাওয়া যায়।

    ইবনে সিনাকে দুনিয়ার আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়। তার সময়কাল ছিল ৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টা·। যাঁদের প্রতিভার আলোকে বিজ্ঞান ও গবেষণায় ইসলামি সোনালী যুগ উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার মধ্যে ইবনে সিনা ছিলেন অগ্রগণ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর লেখা ৪০টি কিতাব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে খ্যাত হল ‘দ্য বুক অফ হিলিং’ (আরোগ্য পুস্তক) ও ‘দ্য ক্যানন অফ মেডিসিন’ (চিকিৎসাশাস্ত্র)।

    ইবনে সিনা ধারণা করেছিলেন, কিছু রোগ নিশ্চিতভাবে মাইক্রোঅর্গানিজম দ্বারাই ছড়ায়। তাই মানুষ থেকে মানুষে রোগ সংক্রমণ প্রতিহত করতে তিনি যে ব্যবস্থাপত্রের কথা বলেছিলেন তা হচ্ছে, সংক্রমিত বা সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিকে ৪০ দিন ধরে একেবারে আলাদা করে আইসোলেশনে অর্থাৎ নির্জনে রাখতে হবে। আর এর দ্বারাই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তার এই ব্যবস্থাপত্রকে আরবিতে বলা হয়, ‘আল আরবা’ইনিয়া’ (অর্থাৎ ৪০ দিন)।

    ভেনিসের ব্যবসায়ীরা রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের এই সফল পদ্ধতির কথা শুনেছিলেন এবং তারা অর্জিত এই জ্ঞানকে বর্তমানের ইতালি ভূ-খণ্ডে নিয়ে যান। তারা আরবি থেকে অনুবাদ করে ইতালিতে এই পদ্ধতিটির নামকরণ করেন ‘কোয়ারানটেনা’ (অর্থাৎ ইতালি ভাষায় ৪০ দিন)। আর এ থেকেই ইংরেজি ‘কোয়ারানটাইন’ শব্দটির উদ্ভব।

    আধুনিক পৃথিবীতে এই যে প্রণালীটি ‘বৈশ্বিক-মহামারি’ রুখতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার শিকড় রয়েছে ইসলামি দুনিয়ায়। এ ছাড়া মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. তাঁর জীবিতকালেই নির্দেশ দিয়ে গেছিলেন যে, ‘যদি কেউ কোনো মহামারি আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে, তবে মহামারি চলাকালীন তার ওই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র আসা উচিত নয়। অন্যদিকে, মহামারি আক্রান্ত নয়, এমন স্থান থেকে কোনো সুস্থ ব্যক্তির মহামারিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া সমীচিন নয়।’

    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘যদি কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করে, তাহলে তা সমগ্র মানবতাকে রক্ষা করার সমান।’ আজকের দিনেও ইবনে সিনার পদ্ধতিটি লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করছে। ইবনে সিনার এই প্রণালীটি মাশাআল্লাহ্ বিশেষ বরকতময়। আজকের করোনার সময়েও পৃথিবীর নানা দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিটিকেই খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

    তথ্য সম্পাদনা : আহমদ হাসান ইমরান

    আধুনিক পৃথিবীতে এই যে প্রণালীটি ‘বৈশ্বিক-মহামারি’ রুখতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার শিকড় রয়েছে ইসলামি দুনিয়ায়। এ ছাড়া মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. তাঁর জীবিতকালেই নির্দেশ দিয়ে গেছিলেন যে, ‘যদি কেউ কোনো মহামারি আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে, তবে মহামারি চলাকালীন তার ওই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র আসা উচিত নয়। অন্যদিকে, মহামারি আক্রান্ত নয়, এমন স্থান থেকে কোনো সুস্থ ব্যক্তির মহামারিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া সমীচিন নয়।’

    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘যদি কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করে, তাহলে তা সমগ্র মানবতাকে রক্ষা করার সমান।’ আজকের দিনেও ইবনে সিনার পদ্ধতিটি লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করছে। ইবনে সিনার এই প্রণালীটি মাশাআল্লাহ্ বিশেষ বরকতময়। আজকের করোনার সময়েও পৃথিবীর নানা দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিটিকেই খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

    তথ্য সম্পাদনা : আহমদ হাসান ইমরান

    সুত্র: এখন সময়

  • করোনার জন্য প্রস্তুতি

    করোনার জন্য প্রস্তুতি

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা করোনাভাইরাসের কথা বলে আসছিলাম। আমি বিষয়টাকে কতটুকু গুরুত্ব দেব বুঝতে পারছিলাম না। সাংবাদিকরা এক-দুবার আমাকে করোনাভাইরাস নিয়ে কী করা উচিত, সেটা জিজ্ঞেস করেছেন, আমি যথেষ্ট বিনয় সহকারে বলেছি, আমি এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নই, কিছু একটা বলে ফেলা উচিত হবে না। জনস্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কী বলেন সেটাই আমাদের শোনা উচিত।

    এ রকম সময়ে আমার কাছে একটা গ্রাফ এসে পৌঁছেছে। এটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যার একটা প্লট। বিভিন্ন দেশের তথ্য দেওয়া আছে এবং আমি অবাক হয়ে দেখলাম, সব দেশের রোগী বেড়ে যাওয়ার হার হুবহু এক। শুধু তা-ই নয়, ইতালির সঙ্গে তুলনা করে দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর কোন দেশ ইতালি থেকে কত দিন পিছিয়ে আছে এবং সেই দেশগুলোর অবস্থা কত দিনের ভেতর ইতালির মতো ভয়াবহ হয়ে যাবে। আমি একটু বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করেছি, সত্যি সত্যি তা-ই ঘটতে শুরু করেছে। একটুখানি চিন্তা করার পর বুঝতে পেরেছি, আসলেই তো এটাই ঘটার কথা। করোনাভাইরাসটি অসম্ভব ছোঁয়াচে এবং তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক গড়ে ছয় দিনের ভেতর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এভাবে বেড়ে যাওয়ার হারটার নাম ‘এক্সপোনেনশিয়াল’—বাংলায় ‘জ্যামিতিক হার’। বিজ্ঞান করতে গিয়ে এই গাণিতিক প্রক্রিয়াটি আমাকে অসংখ্যবার ব্যবহার করতে হয়েছে; কিন্তু মজার ব্যাপার, সব সময়ই এটা ব্যবহার করা হয়েছে কমে আসার জন্য। যখনই গাণিতিক সমাধানে এভাবে বেড়ে যাওয়ার সমাধান এসেছে, আমরা যুক্তি দিয়েছি, এটি বাস্তব সমাধান নয় এবং সেই সমাধানটিকে আক্ষরিক অর্থে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। এই প্রথমবার আমি বাস্তবজীবনে একটা উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি, যেটা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না এবং আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।

    এক্সপোনেনশিয়াল কিংবা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাওয়া একটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়। প্রথমে যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তখন আলাদা বা বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুটি রোগী পাওয়া যায়। তাদের যদি ঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন করে সারিয়ে তুলে নেওয়া যায়, তাহলে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। একবার যদি কোনোভাবে এটা এক্সপোনেনশিয়াল বা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে, তখন সেটা থামানোর কোনো উপায় নেই। শুধু চীন সেটা করতে পেরেছে, ইউরোপের কোনো দেশ পারেনি। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং—এই দেশগুলো খুবই বুদ্ধিমানের মতো সময়মতো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে করোনাভাইরাসকে জ্যামিতিক হারে বাড়তে দেয়নি। সারা পৃথিবীতে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন দায়িত্বহীন দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। আমরা এখন আমাদের চোখের সামনে এ দুটি দেশকে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফল ভোগ করতে দেখব।

    করোনাভাইরাস এখন আর একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এখন এটি সারা পৃথিবীর সমস্যা। সব দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই তথ্যভাণ্ডারে জমা হচ্ছে এবং সবাই সেটা দেখতে পাচ্ছে। তবে একজন সত্যি সত্যি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা জানতে হলে একটা জটিল ও খরচসাপেক্ষ পরীক্ষা করতে হয়। (সত্য-মিথ্যা জানি না, খবরের কাগজে দেখেছি, আমাদের দেশে এ পরীক্ষা করার উপযোগী কীট নাকি রয়েছে মাত্র হাজারখানেক) কাজেই এই দেশে এখন খুব ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব বলে মনে হয় না। তাই এ দেশের জন্য আমরা যে সংখ্যাটি দেখছি, তার বাইরেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ আছে কি না সেটা নিয়েও একটু দুর্ভাবনা থেকে যায়। এ দুর্ভাবনাটা বিশেষ করে শুরু হয়েছে, যখন আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে কিংবা বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিক্ষোভ করে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এই অবিবেচক মানুষ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেশের কোনো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্ফোরকের মতো করোনাভাইরাসের রোগী জমা করে যাচ্ছেন কি না সেটি কে বলবে? এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটে। যখন সবাই ধরে নিয়েছে, সেখানে মাত্র অল্প কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী, তখন আসলে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসে আছে। হঠাৎ করে অনেক মানুষ মারা যেতে শুরু করেছে।

    আমি এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নই, তবে গণিত, বিজ্ঞান বা পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো সংখ্যা বিশ্লেষণ করতে পারি এবং সেটাই করার চেষ্টা করছি। গত কয়েক দিন এ বিষয়টি নিয়ে লেখাপড়া করে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি যে ‘আমাদের কিছুই হবে না, সব কিছু নিয়ন্ত্রণের মাঝে আছে এবং সব কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে’—এটা ধরে নেওয়া মোটেও ঠিক নয়। আমাদের দেশ গরম এবং এখানে জলীয়বাষ্প বেশি, তাই এই দেশে করোনাভাইরাস টিকতে পারে না, সেটা ভেবে নিশ্চিন্তে থাকাও মনে হয় ঠিক হবে না। কারণ মালয়েশিয়ার তাপমাত্রা ও জলীয়বাষ্পের পরিমাণ আমাদের দেশের মতোই; কিন্তু সেখানেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, সময়মতো সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা হাল ছেড়ে দিয়ে হতাশ হয়ে বসে নেই, তারা সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়েছে, নিজেরা ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ তৈরি করছে, সেটা চমৎকার একটা ব্যাপার। একজন মানুষ বিদেশ থেকে এসে কোয়ারেন্টিনে সময় না কাটিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে, সে জন্য প্রামের মানুষ তার বাড়ি ঘেরাও করে ফেলেছে, সেটাও একটা ভালো লক্ষণ। বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলোও সময়মতো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের অসংখ্য অনুষ্ঠান কোনো রকম ভাবাবেগ ছাড়াই মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে—সেটি অনেক বড় দায়িত্বশীল একটি ঘটনা। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগী বিদেশ থেকে আসছে, তাই সব ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এই পৃথিবীতেই অনেক দেশ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, তাই চাইলে আমরাও নিশ্চয়ই পারব। একটা ঘূর্ণিঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ তছনছ হয়ে যায়; কিন্তু আমরা ঠিকই সেটা সামলে উঠে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাই। তবে ‘আমরা কিছুই করব না, নিজে নিজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে’—সেটা কেউ যেন বিশ্বাস না করে। সামনের কয়েকটি সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়, এই সময়ে জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু দায়িত্বশীল তার একটা প্রমাণ আমরা পেয়ে যাব।

    সারা পৃথিবী যখন একটা বিপদের সম্মুখীন, তখন আমরা নিরাপদে থাকব—সেটা কেউ আশা করে না। তবে এ ভাইরাসে শতকরা ৮০ জনের উপসর্গ হয় খুবই সামান্য। বিশেষ করে অল্প বয়সী শিশুদের বিশেষ কোনো সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। কাজেই আতঙ্কের কোনো বিষয় নেই; তবে অবশ্যই সতর্কতার ও প্রস্তুতির বিষয় আছে। প্রস্তুতিটির কথা সবাই জানে, সেটি হচ্ছে—সামাজিকভাবে নিজেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলা।

    আমরা জানি, ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার একজন গবেষকের লেখার একটি অংশ এ রকম—

    ‘করোনাভাইরাস তোমার দিকে এগিয়ে আসছে। এটি ছুটে আসছে এক্সপোনেনশিয়াল গতিতে। প্রথমে ধীরে ধীরে, তারপর হঠাৎ করে। এটি আর মাত্র কয়েক দিনের ব্যাপার কিংবা বড়জোর কয়েক সপ্তাহের। যখন এটি আসবে, তখন তোমার হাসপাতাল, ক্লিনিক থমকে যাবে। তোমার দেশের মানুষের তখন চিকিৎসা হবে হাসপাতালের মেঝেতে, করিডরে। অতি পরিশ্রমে ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত হয়ে যাবে ডাক্তার-নার্স। অনেকে মারা যাবে। তাঁদের তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন দেবে আর কাকে মারা যেতে দেবে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায়, সেটা হচ্ছে আজকেই নিজেদের সামাজিকভাবে আলাদা করে ফেলা। আগামীকাল থেকে নয়। আজকেই।

    তার অর্থ হচ্ছে, যত বেশি মানুষকে সম্ভব ঘরের ভেতর রাখা। এখন থেকেই!’

    আমরা অবশ্যই চাই, আমাদের অবস্থা যেন ইউরোপের মতো না হয়। আমরা চাই সবাই দায়িত্বশীল হয়ে যেন এই বিপর্যয় ঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি।

    লেখক : কথাসাহিত্যিক। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

    সুত্র: দেশ-বিদেশ

  • করোনা ভাইরাস কী একুশ শতকের প্রথম বিপর্যয়

    করোনা ভাইরাস কী একুশ শতকের প্রথম বিপর্যয়

    শেখ আবিদ হোসেন

      

      পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার রব মাঝে মাঝেই শোনা যায়। গত ২০ বছরে সব থেকে আলোচিত দুইটা সংবাদ ছিল ২০০০ এবং ২০১২ সালের পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যৎ বাণী। কিছু কিছু লোক তা নিয়ে মাতামাতি করলেও তার প্রভাব ছিল নগণ্য। তবে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে হলিউড যতগুলো সিনেমা তৈরি করেছে তা এ সংক্রান্ত ঝুঁকির ঘটনা থেকে অনেক বেশি।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অনেক বারই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা এসেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত না হলেও পৃথিবীকে আতঙ্কিত করার মতো ঘটনা কম ছিল না। দেশে দেশে যুদ্ধ, চেরনোবিল দুর্ঘটনা, সোভিয়েত বনাম যুক্তরাষ্ট্রের শীতল যুদ্ধ, অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সুনামির মতো ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

    ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পরে বিশ্ব ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, পররাষ্ট্র এবং সামাজিক ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক আগ্রাসন চলেছে। সঙ্গে আরব বসন্ত ছিল। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রে বড় বিপর্যয় হয়েছে। এ ঘটনাগুলোর কোনোটাই সারা বিশ্বকে এক যোগে সম্পৃক্ত করে নি। ঘটনাগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। কোনো একটা দেশে বা কোনো একটা অঞ্চলেই শুধু আক্রান্ত করেছে। বিগত বছরগুলোতে সারা বিশ্বকে সম্পৃক্ত করার মতো সম্ভবত একটাই ঘটনা ছিল সেটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু যারা এর জন্য দায়ী তারা এটা অস্বীকার করে এসেছে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা বুঝতেই পারেনি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে বোঝা কঠিন।

    তবে বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বকে এক যোগে আতঙ্কিত করতে পেরেছে একমাত্র করোনা ভাইরাস এবং এর দ্বারা সংঘটিত কোভিড-১৯ রোগ। ধনী থেকে দরিদ্র সকলেই এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষ কেউই করোনা ভাইরাসের থেকে নিরাপদ নয়।

    ছবি: রয়টার্সসারা বিশ্বের অর্থনীতি হঠাৎ করে থমকে দাঁড়িয়েছে। বিনোদন জগৎ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে শুধু ইন্টারনেট। খাদ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটনায় খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষেরা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা এতটাই যে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিনই পরিসংখ্যানের খাতায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব থেকে বিপদে পড়বেন। কারণ তাদের পক্ষে ধনীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সব থেকে বিপদে পড়বেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই মহামারি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেবে। কারণ তখন আক্রান্ত না হয়েও খাদ্য বা চিকিৎসা সংকটে আরও অনেক মানুষ মারা পড়বেন। আর আমাদের মতো দুর্বল অর্থনীতি বা চিকিৎসা সেবার দেশে এই মহামারি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা ভাবতে গেলেও শিউরে উঠতে হয়।

    এই বিপর্যয় কত বিস্তৃত হবে বা কত দিন ধরে চলবে তা সময়েই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে সবার এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। এই এগিয়ে আসা মানে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। নিজেরা যাতে এই ভাইরাসের বাহক না হয়ে যাই তার জন্য জন সমাগম এড়িয়ে চলা, নিজেদের গৃহবন্দী করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। আর একান্ত আক্রান্ত হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসাটা জরুরি।

    *লেখক: প্রভাষক, তড়িৎ ও প্রকৌশল বিভাগ, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা

    রয়টার্সসারা বিশ্বের অর্থনীতি হঠাৎ করে থমকে দাঁড়িয়েছে। বিনোদন জগৎ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে শুধু ইন্টারনেট। খাদ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটনায় খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষেরা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা এতটাই যে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিনই পরিসংখ্যানের খাতায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব থেকে বিপদে পড়বেন। কারণ তাদের পক্ষে ধনীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সব থেকে বিপদে পড়বেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই মহামারি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেবে। কারণ তখন আক্রান্ত না হয়েও খাদ্য বা চিকিৎসা সংকটে আরও অনেক মানুষ মারা পড়বেন। আর আমাদের মতো দুর্বল অর্থনীতি বা চিকিৎসা সেবার দেশে এই মহামারি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা ভাবতে গেলেও শিউরে উঠতে হয়।

    এই বিপর্যয় কত বিস্তৃত হবে বা কত দিন ধরে চলবে তা সময়েই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে সবার এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। এই এগিয়ে আসা মানে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। নিজেরা যাতে এই ভাইরাসের বাহক না হয়ে যাই তার জন্য জন সমাগম এড়িয়ে চলা, নিজেদের গৃহবন্দী করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। আর একান্ত আক্রান্ত হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসাটা জরুরি।

    *লেখক: প্রভাষক, তড়িৎ ও প্রকৌশল বিভাগ, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা

    (নাগরিক সংবাদ)

  • ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

    ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

    ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

    বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সে বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। এইদিন স্বাধীন বাংলার নতুন সূর্যালোকে সূর্যের মতো চির ভাস্বর-উজ্জ্বল মহান নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসেন তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। জনগণনন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

    যুদ্ধবিধ্বস্ত ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ তীতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বির্জয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাঙালির ইতিহাসের বরপুত্র শেখ মুজিবুর রহমান। সে থেকে প্রতিবছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

    আজ ১০ জানুয়ারি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। পূর্ণতা পায় বাঙালির বিজয়।

    স্বাধীন বাংলাদেশে মহান এই নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। এরপর প্রতি বছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি স্বাধীন দেশের মাটিতে আসবেন। পুরো দেশের মানুষই যেন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস পাক হানাদাররা যার গায়ে আঁচড় দেয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন। সুত্র: দৈনিক যুগান্তর।

  • দশকের শেষ সূর্যগ্রহণ চন্দ্র-সূর্যের ১৭২ বছরের বিচ্ছেদাবসানের সাক্ষী ‍‍`অগ্নি অঙ্গুরী‍‍`  : এস এম সাব্বির খান

    দশকের শেষ সূর্যগ্রহণ চন্দ্র-সূর্যের ১৭২ বছরের বিচ্ছেদাবসানের সাক্ষী ‍‍`অগ্নি অঙ্গুরী‍‍` : এস এম সাব্বির খান

    চোখ ধাঁধানো জোৎসনায় যেন উদ্ভাসিত আলোর প্লাবনে উথলে পড়ছে ভরামাসি পূর্ণ শশীর নিখাঁদ রূপের জোয়ার। আর সেই অপরূপা চন্দ্রাবতীর চারপাশ ঘিরে তেজস্বী পৌরষ্যে রুদ্র বহ্নিবলয় গড়ে তুলেছে অনির্বাণ প্রভাকর। দিন-রাতের মোহনায় রবি-শশীর এমনই অনিন্দ্য সঙ্গমের চিত্র ফুটে উঠেছিল পৃথিবীর আকাশে। বিজ্ঞানের কাছে এক বৈচিত্র্যময় সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক চিত্রায়ণ হলেও পৃথিবীর মানুষের কাছে মহাজাগতিক মহাশক্তির এক অলৌকিক নিদর্শন- আকাশের বুকে ধিক ধিক জ্বলতে থাকা এই ‘অগ্নি অঙ্গুরী’! অবশেষে প্রকৃতির এই অপূর্ব দৃশ্য অবলোকনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হলো যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছিল গোটা বিশ্ব। 

    ২০১৯ সালের শেষ তথা দশকের সর্বশেষ সূর্যগ্রহণ উপস্থিত ২৬ ডিসেম্বর। আর এমন দিনে যে আরব সাম্রাজ্যের দুবাই অভাবনীয় একটি দৃশ্য ১৭২ বছর পর দেখবে, তা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল। তবে সেই দৃশ্য সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি সকলের। কিন্তু কেমন ছিল মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত রাষ্ট্র দুবাইয়ের আকাশে ফুটে ওঠা সেই ‘অগ্নি অঙ্গুরী’র তাক লাগানো দৃশ্য। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের কয়েকটি অঞ্চল থেকে এই সূর্যগ্রহণ দেখতে জড়ো হন মানুষ । এমনটাই জানানো হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র প্রকাশিত সংবাদে।

    কেমন ছিল সেই দৃশ্যপট
    সূর্যের তেজ যেন ঢেকে দিয়ে ছিল চাঁদের শান্ত স্নিগ্ধ ছায়া। আর সেই ছায়ার চারপাশ ঘিরে দেদীপ্যমান দৃপ্ত আলোকবলয়! এই অপূর্ব দৃশ্যেরই নামকরণ করা হয়েছে ‘অগ্নি অঙ্গুরী’ বা ‘আলোর আংটি’। আর বিজ্ঞানীদের ভাষায় ‘দ্য রিং অফ ফায়ার’। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে বহু আলোচনা হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহলে। 

    বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ। চলে বেলা ১১টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এই গ্রহণ।

    এই অনবদ্য দৃশ্য রচনায় যেন খেয়ালি হয়ে উঠেছিল প্রকৃতিও। আর তাই হয় তো এদিন দিবা-রাত্রির চিরন্তন বিধান লঙ্ঘণ করে সকাল বেলাতেই এক ভরামাসি পূর্ণিমা রাতের সাক্ষী হয়ে থাকলো দুবাইবাসী! ক্রমশ সূর্যগ্রাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো-আধারির ধূসরতায় ঢাকা পরতে থাকতে চাঁদের আলো। যা সকালের নিশিকালো অন্ধকারের বুক চিঁড়ে মধ্য আকাশে এক মহাজাগতিক দৃশ্যের আবির্ভাব ঘটায়, যার লৌকিক বর্ণনা স্বার্থক করোতে পারে এমন কোনো ভাষাই যেন এই মাটির পৃথিবীতে নেই।

    বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রকৃতির এই দুর্লভ দৃশ্য কালচিরের বুকে পুনরাবর্তিত হলো সুদীর্ঘ ১৭২ বছর পর। শুরুর সময়! কার্যত ইতিহাসকে আরও একবার বাস্তবের মাটিতে দেখতে পেয়েছে দুবাই। সুদীর্ঘ ১৭২ বছরের বিচ্ছেদ শেষে এ যেন চন্দ্র-সূর্যের প্রেমোহিত সঙ্গমের এক অতুলনীয় কালচিত্র পুরনো দৃশ্য ফের একবার ২০১৯ সালের শেষ সূর্যগ্রহণে উঠে আসতেই তা ক্যামেরাবন্দি হয়।

    সুত্র: জাগরন

  • সাতক্ষীরার রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জনপ্রত্যাশা

    সাতক্ষীরার রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জনপ্রত্যাশা


    অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী
    সাতক্ষীরা দেশের শেষ প্রান্তের উপকূলীয় জেলা। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেসে গড়া ওঠা বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুরোটা শ্যামনগর উপজেলাতে বিদ্যমান। চিংড়িচাষকে কেন্দ্র সংঘটিত নানা ঘটনার কারনে পরিবেশ-প্রতিবেশবাদীদের আলোচনায় থাকলেও উৎপাদনশীলতা ও সম্ভবনাময় আর্থিক ক্ষেত্র হওয়ার বাস্তব অবস্থা এখানে বিদ্যমান। প্রবাহমান প্রধান দুই নদী ও সাগরযুক্ত সাতক্ষীরার মাটির উর্ব্বরতা দেশের অন্য যে কোন এলাকা থেকে অনেক বেশি।
    মাছ, গোলপাতা, গরান, মোম, মধু নিয়ে বিশাল সম্পদের ভান্ডার সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে ১০ লক্ষাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকা আর্বতিত হয়ে থাকে। কৃষি ফসল বিশেষ করে ধান চাষে জেলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমি চিংড়িচাষ ও জলবদ্ধতার কবলে বছরের বেশির ভাগ সময় থাকলেও জেলার চাহিদার অনেক বেশি ধান উৎপাদন করে কৃষকরা। আম উৎপাদন ও সরবরাহে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা সাতক্ষীরা। বর্তমানে আমা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্বের সিংহ ভাগ অর্জনকারী জেলা সাতক্ষীরা। সাদা মাছও দেশের চাহিদার বেশিটা সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হয়। আর্ন্তজাতিক স্তরে মাটির টালির প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া শক্তিশালী অবস্থানে। কুল, খেজুরের গুড় তো আছেই। কাঁকড়া উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র সাতক্ষীরার শ্যামনগর অঞ্চল। কাঁকড়া আজ দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য।দেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহারকৃত ব্যান্ডেজের পুরোটা সাতক্ষীরার নলতায় উৎপাদিত হয়। দেশের বিখ্যাত জামদানি শাড়ির কারচুপি ও চুমকির কাজে নিয়োজিত সাতক্ষীরার বিপুল সংখ্যক নারী। পর্যটনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে সরাসরি সড়ক পথে সাতক্ষীরা একমাত্র এলাকা। প্রাকঐতিহাসিক নিদর্শনের অবস্থান দেশের অন্য যেকোন প্রান্ত থেকে কম দূরত্ব নয়, বরং সেখানে অনেক ক্ষেত্রে বেশি। মুঘল আমলের বারো ভূঁইয়ার অন্যতম এক ভুইয়ার রাজ্য সাতক্ষীরা অঞ্চলে। আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের জনপদ। এক নান্দনিক স্থাপত্য শিল্প নলতাতে খানবাহাদুর আহসান উল্লাহ (র:) মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে।
    সাতক্ষীরার সম্ভবনাময় চিত্র সরকারের উর্দ্ধতন মহলে তুলে ধরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এমন দৃশ্যমান ঘটনা বিরল। বিগত সময়ে তৎকালিন বস্ত্রমন্ত্রী সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস এবং সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও নলতায় প্রতিষ্ঠিত সরকারি নাসিং ও ম্যাট প্রতিষ্ঠায় তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। অবশ্য ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। যেমন এল্লাচরে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র, শহরের তালতলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিনেরপোতায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ট্রেনিং একাডেমীসহ বিনেরপোতায় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রসহ বেশ কয়েটি স্থাপনা। এছাড়া সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকগুলো স্থাপনা। স্থাপিত এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের রুটিন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকা আছে এমনটি সাধারন মানুষ মনে করেন না। বরঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনৈতিক খরর অনেক বেশি প্রচার হয়।
    সাতক্ষীরা এখন রাষ্ট্র কতৃক প্রকাশিত দরিদ্রতম জেলাগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে। সম্ভবনা থাকা স্বত্ত্বেও সরকারি বিশেষ পরিকল্পনার সাথে স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সম্পর্কযুক্ত না করতে পারায় এক বিপুল সংখ্যক পুরুষ জনসংখ্যা এলাকা থেকে চলে গেছে দূর দেশে কাজের সন্ধানে।
    জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিতে থাকায় সরকারের বিশেষ দৃষ্টি এখানে আকর্ষিত হওয়া স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক কাজটি ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত নীতিনির্ধারক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা করছেন, সাধারন মানুষ এমনটা মনে করেন না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত কাজগুলোর মধ্যে সরচেয়ে প্রয়োজনীয় নাভারণ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন বিষয়ে কোন খবর নেই। অথচ ইতোমধ্যে সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে।
    জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে সরকারি বরাদ্দের যে নায্য পাওনা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেশির ভাগ অন্য এলাকায় চলে গেছে বিগত সময়। এবারের বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের কর্মসংস্থান, জলবায়ুসহিষ্ণু স্থাপনা নির্মাণের জন্য ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেছে। অথচ সাতক্ষীরার নীতিনির্ধারক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সে খবর রাখেন কি-না সেটা একটি কঠিন প্রশ্ন। সরকার জেলা বাজেটের বিষয়ে বেশ আন্তরিক। কিন্তু সাতক্ষীরা একটি পিছিয়ে থাকা ও জলবায়ু ঝুকিতে থাকা জেলা হিসেবে জাতীয় বাজেটের ন্যায্য হিস্যা সাতক্ষীরার যেটুকু পাওনা সেটুকুর অর্ধেকও আজ অবধি সাতক্ষীরায় আসেনি, উন্নয়ন কার্যক্রম হিসেবে বাস্তবায়িত হয়নি।
    সুন্দরবন জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় ররাদ্দের সিংহভাগ নিতে একটি জোরালো জনবান্ধন ও পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। জরুরি দরিদ্রতম জেলার দারিদ্র বিমোচনে সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি গ্রহণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ-খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজন জোরদার প্রচারণা ও কর্মসুচি গ্রহণ।
    রাজনৈতিক ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে জেলাকে সামনে নিতে, এলাকায় কর্মসংস্থানের পথ উম্মুক্ত করে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের এলাকা ত্যাগ বন্ধ করা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, ডেল্টা প্ল্যানের সাথে সঙ্গতি রেখে নদ-নদীর স্থায়ী নাব্যতা সৃষ্টি ও জলবদ্ধতামুক্ত জনপদ গড়েতে একটি মাস্টার প্লান তৈরির দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের প্রতি সাতক্ষীরাবাসীর প্রধান চাওয়া।
    সাতক্ষীরার জনগণের প্রত্যাশাজেলার নীতি প্রণেতা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরকারের উর্দ্ধতন মহলে সাতক্ষীরার সংকট ও সম্ভবনার ক্ষেত্র তুলে ধরতে জাতীয় সংসদসহ সকল মহলে চিঠি দিয়ে (ডিও) নজরে আনা এবং একই সাথে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সারসংক্ষেপ তৈরি করা এবং তা প্রেরণে যতœশীল হবেনÑজনপ্রতিধি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি এমটাই প্রত্যাশা সাতক্ষীরাবাসীর।
    সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক দক্ষিণের মশাল

  • বদলে গেল বাংলা বর্ষপঞ্জি, বুধবার ৩১ আশ্বিন

      

    ডেক্স রিপোট : নতুন নিয়মে বুধবার হবে ৩১ আশ্বিন

    বদলে গেছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এতদিন ৩০ দিনে গণনা করা হলেও চলতি ১৪২৬ সাল থেকে আশ্বিন মাস গণনা করা হচ্ছে ৩১ দিনে। এ হিসাবে বুধবার হবে ৩১ আশ্বিন। বৃহস্পতিবার পয়লা কার্তিক।

    নতুন নিয়মে বুধবার হবে ৩১ আশ্বিন

    ২০২০ সাল অধিবর্ষ (লিপইয়ার) হওয়ায় এ বছর ফাল্গুন মাস পূর্ণ হবে ৩০ দিনে। তবে আগামী বছর থেকে ফাল্গুন মাস গণনা করা হবে ২৯ দিনে।

    বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখ থেকে আশ্বিন- বছরের প্রথম ছয় মাস গণনা করা হবে ৩১ দিনে। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও চৈত্র- এই পাঁচ মাস গণনা করা হবে ৩০ দিনে। ফাল্গুন মাস গণনা করা হবে ২৯ দিনে। লিপইয়ারে ফাল্গুন মাস পূর্ণ হবে ৩০ দিনে। বাংলা একাডেমির অভিধান ও বিশ্বকোষ উপবিভাগের কর্মকর্তা রাজীব কুমার সাহা সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

    আগে বৈশাখ থেকে ভাদ্র- এই পাঁচ মাস ৩১ দিনে গণনা করা হতো। আশ্বিন থেকে চৈত্র- এই সাত মাস গণনা করা হতো ৩০ দিনে। লিপইয়ারে ফাল্গুনে মাস গণনা করা হতো ৩১ দিনে। এ কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে বাংলা ও ইংরেজি তারিখে পার্থক্য দেখা দেয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ ফাল্গুন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল ১ পৌষ। কিন্তু ইংরেজি বছরের মিল রাখতে গিয়ে গত কয়েক দশক ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ৯ ফাল্গুন, বিজয় দিবস পালন করা হয় ২ পৌষ।

    জাতীয় দিবসগুলো যে দিনে সংঘটিত হয়েছিল, সেই বাংলা তারিখ ঠিক রাখতে ২০১৫ সালে অধ্যাপক অজয় রায়কে প্রধান করে কমিটি গঠন করে বাংলা একাডেমি। কমিটির সুপারিশ মেনে ২০১৯ সালে করা ছুটি তালিকায় বাংলা তারিখ সংস্কার করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকায় দেখা যায়, এ বছর ১৬ ডিসেম্বর পালিত হবে ১ পৌষ। তবে পহেলা বৈশাখ হবে আগেই মতো ১৪ এপ্রিলে।

    অজয় রায় কালকে বলেন, তাদের সুপারিশ মানা হয়েছে, জেনে ভালো লাগছে।

    রাজীব কুমার সাহা জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ছিল ১২ চৈত্র। কিন্তু এতদিন ১৩ চৈত্র স্বাধীনতা দিবস পালিত হতো। বর্ষপঞ্জি সংশোধনের ফলে এখন থেকে ১২ চৈত্র স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে। ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী ও ১১ জ্যৈষ্ঠ নজরুলজয়ন্তী পালিত হবে যথাক্রমে ৮ মে ও ২৫ মে।

    বাংলা বর্ষপঞ্জি এর আগেও দুই দফা সংস্কার হয়েছে। পঞ্চাশের দশকে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী ড মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে এবং ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে এ সংস্কার হয়। মেঘনাদ সাহার সুপারিশে বৈশাখ থেকে ভাদ্র ৩১ দিন, আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিন ছিল, অধিবর্ষে একদিন যুক্ত হতো চৈত্র মাসে। ( সুত্র: দৈনিক সমকাল অনলাইন )

  • পিছিয়ে পড়া দলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নেওয়ার এখনই সময়

    পিছিয়ে পড়া দলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নেওয়ার এখনই সময়


    এসএম শহীদুল ইসলাম:

    রোমানদের ছিল ক্রীতদাস, স্পার্টার্নদের ছিল সেবাদাস, ইংরেজদের ছিল ভূমিদাস, আমেরিকানদের ছিল নিগ্রো, জার্মানদের ইহুদি আর হিন্দুদের আছে অস্পৃশ্য দলিত। ভারতীয় উপমহাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি জাত-পাত তথা জন্ম পরিচয় ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য এবং তাদের ব্যাপারে সামাজিক মনোভাব সম্পর্কে দলিত আন্দোলনের নেতা ড. আম্বেদকর উচ্চারণ করেছিলেন এই অমোঘ বাণী।
    গ্রামের শেষ প্রান্তে ঠিকানা হয় পিছিয়ে থাকা দলিতদের। হাটের শেষ মাথায় বসার জায়গা হয় তাদের। পিছাতে পিছাতে তারা চলে গেছে শেষ প্রান্তে। সেখান থেকেই এগিয়ে আসার পথ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় সরকারের এসডিজি ও এমডিজির বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থমকে যেতে পারে। কেননা সমাজের একটি বিরাট অংশ দলিত সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করে জাতীয় উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাই সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার এখনই সময়।
    দলিত নারীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তাদের বাসস্থান ও পয়:নিস্কাশণ সুবিধার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দলিত জনগোষ্ঠী সাধারণত নোংরা পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয় এবং চরম দারিদ্র্য যেহেতু তাদের নিত্যসঙ্গী, ফলে তারা নানারকম রোগ-শোকে; যেমন-ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পেটের পিড়া ও ত্বকের অসুখে ভুগতে থাকে। উপরন্তু নারী হওয়ার কারণে পুরুষতান্ত্রিক চর্চাও তার দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণ হিসেবে ক্রিয়াশীল। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। তেমনি চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী হওয়া একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, যদি কেউ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যায়ও, অস্পৃশ্যতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়।
    যে জনগোষ্ঠী সাধারণত রাস্তাঘাট পরিস্কার ও অন্যদের টয়লেট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও পয়:নিস্কাশণ সুবিধার অভাবে তাদের কলোনিগুলো থাকে সবচেয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কোন গ্রামে পানির লাইন নেই। এখানে খাবার পানির একমাত্র উৎস টিউবওয়েল। একটি থেকে প্রায় ৫-১০টি পরিবার পানি সংগ্রহ করে। ফলে তারা পানি সংকটে বেশি করে ভোগে। এই পানির অভাবে তাদের পয়:নিস্কাশণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে দলিত নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। কারণ, পানি সংগ্রহের পুরো দায়িত্ব নারীর উপর।
    সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ১৩টি পাড়ার ৭৩১টি পরিবার এখনো নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দ্রিরা গোলদারপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবানীপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার নারী-শিশুরা সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবানীপাড়ার মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুগছেন নানা রোগে। এছাড়া ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া গোলদারপাড়ার পিছিয়ে পড়া মানুষ ভুগছেন নানা রোগে। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হাপানীসহ চর্মরোগে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় ৪ হাজার মানুষ ব্যবহার করছেন আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা। এসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পায়খানা ব্যবহার করেন না। এক সময় খোলা আকাশের নিচে বনে-বাদাড়ে ঝোপের আড়ালে তারা মলত্যাগ করতেন। এখন সে অবস্থা না থাকলেও যে পায়খানা ব্যবহার করেন তা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ৪ থেকে ৫টি রিং স্লাব বসিয়ে তা বস্তা কিংবা কাপড় দিয়ে ঘিরে সেখানেই মলত্যাগ করেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। একটি পায়খানা ৩-৪টি পরিবার ব্যবহার করছেন। এলাকার অধিকাংশ মানুষ অতি দরিদ্র শ্রেণির। অন্যের ক্ষেতে খামারে কামলা খেটে সংসার চলে তাদের। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাঁশ সংগ্রহ করে ঝুড়ি ডালা বুনে অনেকেই কোন রকমে সংসার চালান। গরীব শ্রমজীবী এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করা দু:সাধ্য। পাকা পায়খানা নির্মাণ করার সক্ষমতা নেই তাদের।
    উপরোক্ত পরিস্থিতি এই জনগোষ্ঠীকে এমন এক জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে তাদের মানবিক মর্যাদা চরমভাবে ভুলুণ্ঠিত। সামাজিকভাবে মর্যাদাহীন, অনিরাপদ ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরেক ধাপ পেছনে থাকা দলিত নারীদের বিকাশের জন্য পানি ও পয়:নিস্কাশণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে দলিতদের জীবনকে বিকাশ যোগ্য করতে হবে। লেখক: সংবাদ কর্মী।

  • রঙ্গ রসে ‘ফণী’ ফের যেনো না দেখি —————–সুভাষ চৌধুরী


    সনাতন ধর্মবলম্বীরা সর্পদেবী মা মনসাকে তুষ্ট করতে তার পূজো দেন প্রতিবছর। আমিও তাদেরই একজন হয়ে মা মনসা দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
    আজ যে নাগ নিয়ে কথা বলতে চাই তার নাম ফণী। অভিধান ঘেটে জানলাম যার ফণা তুলবার ক্ষমতা আছে সে ফণী। ফণা বিশিষ্ট এই প্রাণির নাম ফণী। এই ফণী নামের সাথে আমাদের তেমন পরিচয় না থাকলেও আগেই বলেছি ফণী অর্থাৎ সর্পদেবীকে পূজো দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে এখনও রাস্তার ধারে দেখি কন্টকযুক্ত ফণী মনসার ঝাড়। সংসদ বাংলা অভিধান বললো ফণী মনসা আসলে নাগমাতা।
    হঠাৎ এমনই এক ফণীর আগমন ঘটেছিল এই উপমহাদেশে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ফণী কুন্ডলী পাকিয়ে ফণা তুলেছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম। ক্ষিপ্রবেগে ফণী প্রথম ছোবল মারে ভারতের ওডিশ্যায়। এরপর তামিলনাড়–, অন্ধ্র , পশ্চিমবঙ্গ সবখানে আঘাত করে তার শেষ লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ। ভারতে আঘাত হানার আগে আবহাওয়াবিদরা বলেন তার শক্তি নাকি ১৮৯১ ও ১৮৯৬ সালে আঘাত হানা সুপার সাইক্লোন অপেক্ষা বেশি। বলা হয়েছিল বাংলাদেশে ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা আইলার শক্তি অপেক্ষা তা ছিল দ্বিগুন। ভারতের আকাশ আট টেলিভিশন খবর দিয়েছে যে ভারতে ফণীর শক্তির মদমত্ততা এতোটাই বেশি ছিল যে সেখানে গোটা রেলবগি শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু যে ফণীর গায়ে এতো জোর , যার শক্তি একটি গোটা বিল্ডিং উপড়ে তুলে ফেলতে পারে যে ফণী রেলের বগি ধরে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই ফণী বাংলাদেশে এসে সত্যিই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যেনো হাত পা ভেঙ্গে পড়েছিল। কেনো।
    এই ফণী নিয়ে কথা শুরু হয় চারদিন আগে থেকে । সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ফণী মোকাবেলায় নানা কৌশল ফন্দি ফিকির চলতে থাকে। কিভাবে ফণীকে মোকাবেলা করা হবে তা নিয়ে সরকার এমনকি দেশের মানুষের কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। সরকার সর্বত্র নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামায় সরকারি বাহিনী , স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। মেডিকেল টীম, বিপদ মোকাবেলা টীম। পুলিশ ,বিজিবি, কোস্টগার্ড , আনসার, জনপ্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট , প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এমন কোনো সংস্থা নেই যারা ফণী মোকাবেলায় কাজ করেনি। গত ১ মে থেকে শুরু হয়ে যায় ফণী মোকাবেলায় আমাদের আনাগোনা। শেষতক বলবো ফণী মোকাবেলায় আমরা সফল হয়েছি । আর ফণী ব্যর্থ হয়েছে আমাদের দিকে ফণা তুলে কঠিন ছোবল মারতে। তারপরও স্বীকার করতে হবে দেশের কয়েকটি স্থানে ফণী সত্যিই কিছু কিছু ক্ষতি করে দিয়ে গেছে । বিশেষ করে বাড়িঘর ভাংচুর হয়েছে। দোকানপাট উড়িয়ে নিয়ে গেছে । ফসল নষ্ট করে দিয়ে গেছে।
    এই ফণী নিয়ে নানা কথা। কে এই ফণী । কেনো এই ফণী। ফণী বাংলায় এই বানান লিখলেও ইংরাজীতে লেখা হয়েছে ঋঅঘও । আর এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিপত্তি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয় ফণী না ঋঅঘও (বাংলা উচ্চারণে ফেণী অথবা ফাণি ) তা নিয়ে শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ । অবশেষে মল্লযুদ্ধ । আর এই মল্লযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রুপ নিয়েছে শক্তি প্রদর্শনে। ফলাফল দুই পক্ষে নয়জন আহত হয়েছেন। তাহলে বলা যায় ফণীর গায়ে শক্তি না থাকলেও ফণী আর ফানির যুদ্ধ কিন্তু শক্তি প্রদর্শন করে দেখিয়ে দিল আমরা ফণি অপেক্ষা বেশি শক্তি রাখি। কথায় কথা আসে। আজ ফণী উপদ্রুত এলাকা গাবুরা যাবার পথে কেউ কেউ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নাম উচ্চারণ করে বললেন জানেন তারা প্রস্তুত ছিল বলে ফণী আঘাত করতে সাহস করেনি। রসিকতা করে অনেকে বললেন ফণী ভয় পেয়েছে তো তাই পালিয়েছে। কারও কারও ভাষায় ফণী নাম তো হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত নাম। সূতরাং তার স্থান ভারতে হওয়াটাই শ্রেয়ঃ। তাদের প্রশ্ন ফণী কেনো বাংলাদেশে আসবে । অবশ্য এর জবাব পাওয়া গেলো এই ভাবে যে বাংলাদেশই তো ফণী নামকরণ করেছে। এর জন্য ভারত দায়ী হবে কেনো। সূতরাং বাংলাদেশে আসার অধিকার তো ফণীর আছেই। দুর্বল ফণী পালিয়েছে এমন খবর নিয়ে যখন রঙ্গ রস চলছে তখন যশোর থেকে ফোন এলো আমার কাছে। জানতে চাইলাম আপনার এলাকার ফণীর খবর কি। তিনি বললেন আমরা ফণীকে খুঁজছি । তাকে দেখিয়ে দেবো কত ধানে কতো চাল। আর আমি বললাম কোথায় ফণী। সকাল থেকেই তো দেখছি ঝলমলে রোদ। রাতের আঁধারে ফণী অবশ্য কিছুটা ভয় দেখিয়েছিল । টালমাটাল দমকা হাওয়া দিয়ে । সাথে ছিল বৃষ্টি। ফণী আমাদের বেড়ি বাঁধগুলি ধসে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা পারে নি। ওই যে বললাম কারা যেনো প্রস্তুত ছিল তাই। এই ফণী নিয়ে কত কথা শুনছি । কেউ বলছেন ফণী বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় ঢুকে নতুন বাইপাস রোড দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে। তাই সে এই পথ ধরে সোজা চলে গেছে উত্তর স্থল ভাগে। আর স্থল ভাগে ফণী যে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তাতো আমরা জানি। কারণ জলেই ফণীর জন্ম। আর স্থলেই ফণীর মরণ। এই জন্যই বোধ হয় যশোর থেকে বলা হয়েছিল ফণী কই , আমরা তাকে খুঁজছি।
    ফণী তোমাকে বলে দিলাম বাংলাদেশে তুমি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ ভূখন্ডে তোমাকে পেলে কিন্তু তোমার খবর আছে। তার থেকে সাবধান হয়ে যাও। আর কখনও বাংলাদেশে আসার চিন্তাটি করোনা। এই তোমাকে বলে দিলুম।
    —- সুভাষ চৌধুরী , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, দৈনিক যুগান্তর ও এনটিভি