কলারোয়া প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে তিন দিন ব্যাপি খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মেলার উদ্বোধন হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি র্যালি বের হয়ে পৌর শহর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। উত্তরনের সফল প্রকল্পের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহাসিন আলী,সমবায় কর্মকর্তা নওশের আলী সহ উত্তরনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মাঠ সংগঠক বৃন্দ।
Category: কৃষি
-

কলারোয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মেলা
-

সাতক্ষীরায় পাটজাত পন্য ব্যবহারে মতবিনিময় সভা
নিজস্ব প্রতিনিধি : “সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাটপণ্যের বাংলাদেশ“ এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পাটজাত পন্য ব্যবহারে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়।
মুখ্য পাট পরিদর্শক পাট অধিদপ্তর,সাতক্ষীরা আশিষ কুমার দাশের সঞ্চালনায় উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান বলেন, পাটজাত পন্য ব্যবহার এবং পলিথিন বর্জনে সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা অর্জন করতে অন্তত একটি ভালো কাজ করি আমরা। তাছাড়া অতীতের চেয়ে বর্তমান বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পাট অত্যন্ত চাহিদা ও সুনাম অর্জন করে চলেছে।উক্ত মতবিনিময় সভায় জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাইসমিল মালিক, কৃষক, কৃষক নেতাসহ অন্যান্য শ্রেনী পেশার মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। এতে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন, জেলা তথ্য অফিসার মোজাম্মেল হক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক গোলাম সরোয়ার, কৃষি বিপনিন কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান ও পাটচাষি সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি প্রমুখ।মতবিনিময় সভায় অন্যান্য বক্তারা পাটজাত পন্য ব্যবহারের পাশাপাশি প্লাস্টিক বস্তা ও পলিথিন ব্যাগ বর্জন করার আহবান জানান। সেই সাথে আমদানিকৃত চাল ও গমে ব্যবহাহৃত প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহারও বন্ধের দাবি জানান।
-
সাতক্ষীরায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে বাসক পাতা
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাড়িতে-বাড়িতে ঘেরা বেড়া দেওয়ার কাজে বেশ জনপ্রিয় বাসক গাছ। গ্রাম জুড়ে এর ছড়াছড়ি। এক ধরনের বিকট দুর্গন্ধের জন্য এর পাতায় গবাদি পশু মুখ দেয় না। ফলে সহজেই জমি ও বাড়ি ঘেরার কাজ চলে। ঔষধি গুনসম্পন্ন এই বাসক পাতা এখন ঘুরিয়ে দিচ্ছে গ্রামীন মানুষের ভাগ্যের চাকা ।

কাচা বাসক পাতা-দক্ষিণের মশাল
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাসক পাতার কদর রয়েছে বেশ। সর্দি কাশি সারাতে সবুজ বাসক পাতা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায় এ বিশ্বাস রয়েছে এখনও । কিন্তু এই পাতা যে মানুষের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে তা ছিল ধারনার বাইরে।দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে বাসক উদ্ভিদের। ভারতেও বাসক উদ্ভিদের ব্যাপক চাষ রয়েছে। সাতক্ষীরাতে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ঔষধিগুণ সম্পন্ন বাসক। ধারণা করা হচ্ছে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে এ বাসক।

বাসক পাতা সংগ্রহ করছেন গ্রামীণ নারীরা-দক্ষিণের মশাল
সাতক্ষীরার ফিংড়ি গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান আগে মনে করতাম আবর্জনা। এখন তা সংগ্রহ করে বিক্রি করছি। এতে লাভ হচ্ছে বেশ। একই গ্রামের আমিরুন বেগম জানান তিনি প্রতি কেজি কাঁচা পাতা ৫ টাকা কেজি দরে কিনে শুকিয়ে বিক্রি করছেন ৩৫ টাকায়। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত এসব বাসক পাতা এখন ওষুধ কোস্পানিগুলি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর ঔষধিগুন এতো বেশি যে এই পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ নিরাময়ে বেশ উপকারী। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাও বাসক পাতার ব্যবহার রয়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার মাটি বাসক চাষের জন্য উপযোগী। তাই এ অঞ্চলে বাসক উদ্ভিদ জন্মায় প্রচুর পরিমাণে। ঘেরা বেড়ায় ব্যবহার করা এই উদ্ভিদের পাতা ছিড়লে গাছ মরে যায় না। আবারও নতুন নতুন পাতা গজায়। সারা বছর চলে নতুন পাতা গজানো। ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলে হয়ে ওঠে নতুন গাছ। আর্দ্র ও সমতল ভূমিতে এই উদ্ভিদ জন্মায়। বিকট গন্ধের কারণে এতে ছত্রাক জন্মায়না। এমনকি পোকা মাকড়ও ধরে না। এই পাতা দিয়ে ফল মুড়ে রাখলে তা ভাল থাকে।

বাসকপাতা রোদে শুকানো হচ্ছে-দক্ষিণের মশাল
বাসক পাতা সংগ্রহকারী দলের নেতা বিউটি বেগম বলেন, ‘আমরা কাঁচা পাতা রস করে খাই। আগে এর কোনো অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিতাম না। এখন সংগ্রহ করে বিক্রি করছি।’তিনি বলেন, ‘বাড়ির বেড়ার গায়ে থাকে। গাছ বাড়েও বেশ। এখন তা তুলে এনে শুকিয়ে বিক্রি করছি। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। বাসক লাগাতে পৃথক জমির দরকার নেই।’ফিংড়ি গ্রামের সাবিনা খাতুন, ‘বীনা দাস, জোহরা খাতুন, অপর্না দাস, রোহেলা খাতুন, আনোয়ারা বেগম , রেবেকা সুলতানা, নাসিমা খাতুন, নাজমা বেগম, হাফিজুল ইমলাম, আমিনা খাতুন জানান বাসক পাতা সংগ্রহ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের কাঁচাপাকা রাস্তার ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বিপুল পরিমান বাসক উদ্ভিদ। এখানকার কমপক্ষে দশ হাজার বাসক গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে জমির চারধারে কিংবা বাড়ির ঘেরা বেড়ায়। প্রতি বছর একশ’ টন সবুজ পাতা সংগ্রহ হচ্ছে এসব গাছ থেকে। বছরে এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ২৬ টন শুকনো পাতা। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়ও বানিজ্যিকভাবে বাসক উদ্ভিদের চাষ শুরু হয়েছে।

শুকনা বাসক পাতা-দক্ষিণের মশাল
পানিউন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি মো. শামীম আলম জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প ব্লু গোল্ডের আওতায় ২৮৫ জন নারী ফিংড়ি ইউনিয়নে বাসক পাতা সংগ্রহ করছেন। তাদের সংগৃহীত পাতা কিনে নিচ্ছে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি।
তিনি বলেন, ‘বাসক পাতা যেমন আনতে পারে অর্থনৈতিক বিপ্লব, তেমনি বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারছে।’স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘আমরা শুকনো বাসক পাতা কিনে নিচ্ছি। জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে বাসক পাতা কাশির সিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে।’সাতক্ষীরার গ্রামে এরই মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে গেছে বাসক পাতা নিয়ে। গ্রামবাসী নিজ-নিজ বাড়ির চারপাশে বাসক গাছ লাগাচ্ছেন। গ্রামের দরিদ্র নারীরা প্রতিদিনই সংগ্রহ করছেন শত শত বাসক পাতা। পরিচ্ছন্নভাবে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছেন ওষুধ কোম্পানির কাছে। এতে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করছেন।
ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জানান এ এলাকায় প্রচুর বাসক গাছ জন্মায়। প্রতি বছর ওষুধ কোম্পানিগুলি তা কিনে নিয়ে যায়। এতে আমার এলাকার সাধারণ মানুষ আর্থিক উপকার পাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা (Adhatoda Vasica) ঔষধিগুন সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এর পাতা ও ফলে এক ধরনের দুর্গন্ধ আছে। যে কারণে তা ব্যবহার করলে ছত্রাক রোধ করা যায়। তাছাড়া এর ঔষধিগুন খুব বেশি। এসব গুনের কারণে বাসক বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও। ভারতের তামিলনাড়–তে বাসকের চাষ ব্যাপক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাসক উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরার মাটি অনুকূল। বেশি বেশি করে বাসক গাছ লাগালে এর পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে অবদান রাখা ছাড়াও গ্রামীন অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ -
তালায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে মিলছে সফলতা
সেলিম হায়দার: সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ঝুকছেন কৃষকরা। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সফলতা মেলায় এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ হয়েছে এ সবজির। চাষের উপযোগী মাটি ও অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় আগামীতে আরো বেশি জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমোটো আবাদ করবেন কৃষকরা এমনটাই ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তার ।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে, তালা উপজেলায় এবছর গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ হয়েছে মোট ৬ হেক্টর জমিতে। গত বছর যার পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ৩ হেক্টর। অসময়ে টমেটোর ভাল ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। তাদের এ সাফল্যে অন্যান্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এ সবজি চাষে।কৃষি অফিস এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। যা বিক্রি হয় কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা। অসময়ে বিঘা প্রতি ২ লাখ টাকা লাভ পেয়ে সামগ্রিকভাবে কৃষকদের শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তনই নয়, পরিবর্তন ঘটেছে মানসিক অবস্থারও।জানা যায়, উপজেলার কৃষকরা মূলত বারি-৮ ও বারি-৪ জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন। ফলন, মান ও চাহিদা অনুযায়ী ভাল দাম পাওয়ায় মূলত কৃষকরা এ দু’জাতের টমেটো চাষের জন্য বেছে নিয়েছেন।এ ব্যাপারে কথা হয় তালা উপজেলার নগরঘাটার কৃষক গাজী রহমানের সাথে। তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে তার ক্ষেত থেকে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে বিঘা প্রতি তার ২ লাখ টাকার উপরে লাভ হবে।কথা হয় একই এলাকার আরো কয়েকজন কৃষকের সাথে। যার মধ্যে সফিকুল ইসলাম গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন ৫০ শতক জমিতে, রফিকুল ইসলাম ৫০ শতক, রেজাউল ইসলাম ৩৩ শতক, কালী বাড়ির মাসুদ রানা ৩৩ শতক এবং তৈলকূপির সাইফুর রহমান বাবু চাষ করেছেন ৬৬ শতক জমিতে।তারা সবাই জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত থেকে ইতোমধ্যে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে খুচরা ৮০ টাকা এবং পাইকারী ৭০ টাকা দরে। অসময়ে পাকা টমেটোর উপস্থিতি সবজির বাজারেও আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। দাম বেশী হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় আগামীতে আবারও তারা গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চান।এব্যাপারে উপজেলার নগরঘাটা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ অজিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার কৃষকদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে আগ্রহ বেড়েছে।উপজেলার মাটি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উপযোগী ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে।’গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাচের্র প্রথম দিকে বীজ বপন করতে হয় এরপর মে মাসে বীজতলা থেকে ওই চারা উঠিয়ে ক্ষেতে রোপন করতে হয়। সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা করতে পারলে জুন-জুলাই মাসে গাছে ফল আসতে শুরু করে। যা থেকে একাধারে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যায়।তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মামুন জানান, সারা বছরের সবজির চাহিদা পূরণে গ্রীষ্মকালীন টমেটো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। চাষের ক্ষেত্রে বারি-৪ ও বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করা ভালো। সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস টমেটো চাষীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি। -
সাতক্ষীরায় সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় সপ্তাহব্যাপি বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সকালে এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা অফিসার্স ক্লাব থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহমুদুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সপ্তাহব্যাপী এ বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বৃক্ষ নিধনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি বৃষ্টিপাত কমসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমাদের বেশি-বেশি বৃক্ষরোপন করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে বৃক্ষরোপনের কোন বিকল্প নেই।’অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অমিতা মন্ডল, জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এবছর বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাাঁচাই, নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’। এবারের এ বৃক্ষ মেলায় ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের শতাধিক ষ্টল স্থান পেয়েছে।
-

বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে সাতক্ষীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ এর মূল্যায়ন, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা মৎস্য অফিস।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল হান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম সরদার। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল হান্নান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে সাতক্ষীরা। বর্তমানে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। যেটা ঝুকিপূর্ণ ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। সকলের স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষ করতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনের সাতক্ষীরা জেলার গুরুত্ব অনেক বেশি।’তিনি আরো বলেন, ‘এ জেলায় বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় ১লক্ষ ৩১ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন। যার মধ্যে জনগণের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৮৯২২৩ মেট্রিক টন মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি এবং অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। চিংড়ি চাষে সাতক্ষীরা দেশের প্রথম স্থানে থাকলেও তা এখন নানাভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। এক্ষেত্রে চিংড়ি পোনার ভাইরাস রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী ডা. আবতাবুজ্জামান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. আবুল কালাম বাবলা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ভারপ্রাপ্ত মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।অন্যান্যদে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার মোজাম্মেল হক, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) মো.রাশেদুল হক, সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান, বড় বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব ও খুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা। -

পোকার আক্রমনে দিশেহারা সাতক্ষীরার বেগুন চাষিরা
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বেগুনে ব্যাপক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। হাজার হাজার টাকার কিটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। ফলে এই সবজটি চাষ কওে লোকসানে পড়েছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক।চাষিদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন এলাকার বেগুন ক্ষেত পোকার আক্রামনে নষ্ট হয়ে গেলেও কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠে পাওয়া যায়না পরামর্শ দেয়ার জন্য। ফলে কৃষকরা না বুঝে নানা ধরনের কিটনাশক ব্যবহার করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছেন। না বুঝে কিটনাশক ব্যাবহার করে যেমন মিলছে না কোন প্রতিকার তেমনি এসব কিটনাশক কিনতে খরচও হচ্ছে বেশ।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের বেগুন চাষি জয়নুল আবেদিন জানান, ৩০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ অন্যান্য সবজি’র পাশাপাশি বেগুন চাষ করে আসছেন। চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো এতো পোকার আক্রমন দেখেননি তিনি।তিনি বলেন, ‘গাছে একেকটি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম ওজন হওয়ার পর থেকে পোকায় তা ছিদ্র করে ঝাঝরা করে দিচ্ছে। তাছাড়া ডোগাও কেটে দিচ্ছে পোকায়।’তিনি আরও বলেন, ‘পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ৩ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার টাকার ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে মিমপ্রেক্স কোম্পানীর মানিক, সুরেশ, সেতারা, পাইন, নীল এবং ওয়ান্ডার।’তিনি জানান, ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেচা-কেনা হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যে বেগুন বাজারে প্রতি মন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন পোকার কারণে তা মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে প্রায় ১ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে আশংক্সক্ষা করছেন তিনি।একই গ্রামের চাষি পিন্টু দাশ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্ত ক্ষেতের অধিকাংশ বেগুন হলদে রং হয়ে পচেঁ যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।তিনি বলেন, ‘২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এরমধ্যে কিটনাশকেই খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তার পরও কোনো প্রতিকার পায়নি।’এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় বেগুন চাষ হয়েছে ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৮০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৮৫ হেক্টর, তালায় ১৪৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় মাকড়া, নয়ন কাজল, বারি-৩, বারি-৪, ঝুরি ও অন্যান্য স্থানীয় জাতের বেগুন চাষ করা হয়েছে।সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বেগুনের পোকা আসলে কিটনাশক বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে দমন হয় না। বেগুনের পোকা মারার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেক্সফ্রোমন ফাঁদ। কৃষকরা বেগুন ক্ষেতে এই ফাঁদ বসালে দু‘একদিনের মধ্যে পোকা দমন হয়ে যায়। কিন্ত এই ফাঁদের প্রচলন সাতক্ষীরাতে এখনো সেই ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এই ফাঁদ ব্যবহারের জন্য।’ -

৬ দফা দাবিতে খেতমজুর ইউনিয়নের স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিনিধি: ৬০ বছরোর্দ্ধ খেতমজুর, দিনমজুরদের পেনশন, মাসিক ভাতাসহ ৬ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের কাছে এ স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, খেতমজুর ইউনিয়ন জেলা শাখার সভাপতি অজিত কুমার রাজবংশী, সিনিয়র সহ-সভাপতি কালিপদ, সাধারণ সম্পাদক নির্মল সরকার, সহ-সভাপতি আব্দুল করিম, যুগ্ম সম্পাদক আঃ আহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন সরকার, আইন সম্পাদক প্রফুল্ল মন্ডল(ইউপি সদস্য), হাফিজুল মোড়ল, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাবান আলী, ইউপি সদস্য আশুরা বেগম, অনাদী সরকার, আ: রকিব, মোছা. রহিমা বেগম, প্রকাশ, মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাত আলী, আইয়ুব আলী মোড়ল প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে ৬০ বছরের অধিক বয়সের খেতমজুর-দিনমজুরদের ২ লক্ষ টাকা এককালীন পেনশনভাতা এবং মাসিক ৩ হাজার টাকা ভাতার বরাদ্দ করার দাবি জানানো হয়।
খেতমজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবিদের নিবন্ধন ও কার্ড প্রদান এবং কাজের ব্যবস্থা করা। খেতমজুরদের রেশনিংয়ের ব্যবস্থা রাখা ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। খেতমজুরদের ছেলে মেয়েদের আলাদা শিক্ষা ভাতা প্রদান করা। দরিদ্র শ্রমজীবিদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। খেতমজুরসহ নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থদের বসতবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করার ও দাবি জানানো হয়।
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে খেতমজুরদের ভাগ্যের উন্নয়নের উল্লেখিত দাবি সমূহ জাতীয় সংসদের উত্থাপন ও বাস্তবায়নে সবাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন খেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
-
আশাশুনিতে প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে উপকরণ বিতরণ
আশাশুনি ব্যুরো: আশাশুনিতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের উপকরণ বিতরণ ও প্যাকেজ বাস্তবায়ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফফারা তাসনীন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল, আলমগীর আলম লিটন, প্রভাষক ম মোনায়েম হোসেন, আ ব ম মোছাদ্দেক, শেখ মিরাজ আলি, ভিএফএ গৌরাঙ্গ কুমার রাহা, এস এম তোফায়েল আহমেদ, আঃ রকিব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৯জনকে এলোমিনিয়ামের বালতি, ল্যাকটো মিটার, সিজারিন পট, মুরগির ঠোঁট কাটা মেশিন, অটো ভ্যাকসিনেটর গান প্রদান করা হয়।
-

দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র পাল্টে দিতে পারে ‘লেবুয়াত ধান’
ডেস্ক রিপোর্ট: বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াত শেখ উদ্ভাবিত ‘লেবুয়াত ধান’ পাল্টে দিতে পারে দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। এমনটাই মনে করছে বাগেরহাটের সাধারণ কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
সম্প্রতি এমন একটি বিস্ময়কর জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের কৃষক লেবুয়াত শেখ। আর এই বিশেষ জাতের ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় কৃষক লেবুয়াত শেখের বাড়ি ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক সাধারণ মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও কৃষকরা এই ধানের বীজ সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা নতুন এই জাতের ধানের নামকরণ উদ্ভাবক কৃষক লেবুয়াত শেখের নাম অনুসারে ‘লেবুয়াত ধান’ করেছেন।
এই ধান কেজিপ্রতি ৪’শ টাকা দরে অনেকে সংগ্রহ করেছেন। এখনও তার বাড়িতে শত শত কৃষক এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে ভিড় জমাচ্ছেন। শুধু সাধারণ কৃষক নয় নতুন এই জাতের ধান নিয়ে উৎসুক বাগেরহাটের কৃষি বিভাগও।
মাত্র ৩ ছড়া (ধানের শীষ) ধান দুই বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১‘শ মণ। খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই জাতের ধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলে পাল্টে যাবে খাদ্য উৎপাদনের চিত্র।
কৃষি বিভাগের মতে, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের একজন আদর্শ কৃষক লেবুয়াত শেখ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধান ও মাছের চাষ এবং মাছের ব্যবসা করে জীবন ধারণ করেন। স্থানীয় বেতাগা বাজারে তার একটি মাছের আড়তও রয়েছে। তিনি ও তার স্ত্রী স্থানীয় আইপিএম ক্লাবের সদস্য।
কৃষক লেবুয়াত শেখ জানান, ২০১৬ সালে তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি ক্ষেতে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধানের চাষ করেন। মাঠে ধান কাটতে থাকা দিনমজুরদের তার মা ফাতেমা বেগম পানি খাওয়ানোর জন্য যান। এসময় তিনি (ফাতেমা বেগম) সেই ধানের ক্ষেতের মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে অনেক বড় ধানের শীষ (ছড়া) দেখতে পান। তিনি আর একটু সামনে গিয়ে আরো দু‘টি শীষ দেখতে পান। এই শীষগুলো নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পরে তিনি এই ধানগুলো সংরক্ষণ করার জন্য লেবুয়াতকে নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালে মাত্র ১ শতক জমিতে তিনি ওই ধান রোপন করে সেখান থেকে ২.৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। এবছর তিনি ৭৫ শতক জমিতে সেই ধান রোপন করেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথম থেকেই তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
লেবুয়াতের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘দুই বছর আগে ধানের ভেতর পাওয়া একটি বড় ধরনের ধানের বাইল (শীষ) একটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করি। পরের বছর এই ধান থেকে ৩ আঁটি পোতা হয়। সেখান থেকে যে ধান হয় তা আবার পরের বছরের জন্য বীজ হিসেবে রেখে দেই। সেখান থেকে আজ এতগুলো ধান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যেকোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়। যা বেড়ে ৮/১২টি হয়েছে। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। এক একটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬- ৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১২‘শটি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম। ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিপ ( ছড়ার সাথের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়া দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কা- ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। একর প্রতি ফলন প্রায় ১৩০ মণ। অন্য যেকোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
অপরদিকে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধান প্রতি ছড়ায় ১৮০ থেকে ২৫০টি দানা হয়। এই ধানের বীজ প্রতিবারই বাজার থেকে কিনতে হয়। হেক্টর প্রতি এই ধান উৎপাদন হয় ৫ টন। একই জমিতে কৃষক লেবুয়াত উদ্ভাবিত জাতের ধানের উৎপাদন ১১ টন।
চাকুলী গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, এই ধান নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। মাত্র ৩টি শীষ থেকে আজ ৭৫ শতক জমিতে এই ধানের চাষ করেছেন লেবুয়াত। আর এই ভিন্ন জাতের ধান দেখতে প্রতিদিনই অনেক লোক বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন। এবং তারা ধান সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তিনি সরকারিভাবে কৃষক লেবুয়াতের নামেই এই ধানের নামকরণের জন্য সবার কাছে দাবি জানান।
কৃষানী রীনা বেগম জানান, সকলের আগ্রহ এখন লেবুয়াতের ধানের দিকে। এই ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই অনেক লোক আসছে। তিনি নিজেও প্রতিকেজি ৪শ টাকা দরে ৪ কেজি ধানের বীজ কিনেছেন বলে জানান।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, প্রথমে তারা লেবুয়াতের ধানের ক্ষেতে গিয়ে ধানের নমুনা দেখে অবাক হয়ে যান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে তার পরামর্শে লেবুয়াতকে হাতে কলমে ও সর্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোতাহার হোসেন জানান, স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে খবর পেয়ে তিনি নিজে সার্বক্ষণিক এই ধানের ক্ষেতে বিশেষ নজরদারি করেছেন। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা লেবুয়াতের এই ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করে ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কৃষক লেবুয়াতের উদ্ভাবিত এই বিশেষ জাতের নানা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি অনেক বেশি লবণ সহিষ্ণু জাত। গাছের কা- অনেক বেশি মোটা ও শক্ত, ফলে ঝড়ে হেলে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বৈরী আবহাওয়ায়ও পাতায় কোনো স্পট নেই। এই জাতের ধানের শীষ ( বাইল) অনেক বেশি লম্বা।
গবেষণা করে এটি যদি কৃষকদের জন্য উপযোগী হয় তাহলে সারাদেশে এই জাত ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বাগেরহাট জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত এটি একটি নতুন জাতের ধান। এই ধান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালনো হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে যে এত উন্নত ধরনের ধান উদ্ভাবন হয়েছে তা স্থানীয়দের মাঝে চমক সৃষ্টি হয়েছে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে এটি ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা হবে। -
বাংলাদেশের আমের রাজ্য সাতক্ষীরা
শহর প্রতিনিধি: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকা মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহাসীন বলেন, ‘বাংলাদেশের আমের রাজ্য সাতক্ষীরা। দেশে ও বিদেশে চিংড়ির পাশাপাশি আমে যে সুনাম অর্জন করেছে এটা ধরে রাখতে হবে। সাতক্ষীরার আম, দেশ ও দেশের বাহিরের আমের চাইতে বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি। সাতক্ষীরার আম বিভিন্ন প্রজাতির হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। সঠিক সময়ে এবং বালাই কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করতে হবে আম চাষীদের।’ গতকাল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহযোগ্য বালাইমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদন ও বিপণন শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকা মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহাসীন এ কথা বলেন। সদর উপজেলা মিলনায়তনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকা উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং, পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আজহার আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ^াস, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সলিডারিডাড এর কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান, উত্তণের পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কহিনুর ইসলাম, উপসহকারি কৃষি অফিসার রঘুজিৎ গুহ, আম রপ্তানীকারক মো. আবুল হোসেন, আম চাষী শিখা রাণী, শাহীন বিশ^াস প্রমুখ। কর্মশালায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহযোগ্য বালাইমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদন ও বিপণন বিষয় উপাস্থাপন করেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কালিগজ্ঞ উপজেলা কৃষি অফিসার ফজলুল হক মনি। -

সাতক্ষীরার আম ইউরোপের পথে
ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরার আম বিদেশ পথে যাত্রা শুরু করেছে। শনিবার সদর উপজেলা ধুলিহর গ্রামের আমচাষি জাহাঙ্গীরের বাগান থেকে হিমসাগর আম রফতানির মধ্যদিয়ে এ যাত্রার শুরু। দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আমের এ বিদেশ যাত্রা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক ড. আজাহার আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস, সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান, সলিডারিডাডের কান্ট্রি ডিরেক্টর সেলিম রেজা হাসান প্রমুখ।
চলতি মৌসুমে আমচাষি জাহাঙ্গীরের বাগান থেকে চার মেট্রিক টন আম রফতানির মধ্য দিয়ে জেলার আম রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়। এসব আম যাচ্ছে ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও স্পেনে। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
রফতানি মৌসুমের প্রথম দিনেই আম পাঠাতে পেরে আমচাষি জাহাঙ্গীর হোসেন এক গণমাধ্যমকে বলেন, গত মৌসুমের শেষ দিন থেকেই চলতি মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন ও রফতানি করে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি মণ আম তিন হাজার ২৫০ টাকা দরে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে কিনেছে। লোকাল বাজারে যা দুই হাজার ২০০ টাকা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। এ জেলার আম অন্যান্য জেলার চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে পাকে। খেতেও বেশ স্বুস্বাদু। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রফতানির বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৪০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগান।দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র পাল্টে দিতে পারে ‘লেবুয়াত ধান’
ডেস্ক রিপোর্ট: বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াত শেখ উদ্ভাবিত ‘লেবুয়াত ধান’ পাল্টে দিতে পারে দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্র। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। এমনটাই মনে করছে বাগেরহাটের সাধারণ কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
সম্প্রতি এমন একটি বিস্ময়কর জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের কৃষক লেবুয়াত শেখ। আর এই বিশেষ জাতের ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় কৃষক লেবুয়াত শেখের বাড়ি ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক সাধারণ মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ধানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও কৃষকরা এই ধানের বীজ সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা নতুন এই জাতের ধানের নামকরণ উদ্ভাবক কৃষক লেবুয়াত শেখের নাম অনুসারে ‘লেবুয়াত ধান’ করেছেন।
এই ধান কেজিপ্রতি ৪’শ টাকা দরে অনেকে সংগ্রহ করেছেন। এখনও তার বাড়িতে শত শত কৃষক এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে ভিড় জমাচ্ছেন। শুধু সাধারণ কৃষক নয় নতুন এই জাতের ধান নিয়ে উৎসুক বাগেরহাটের কৃষি বিভাগও।
মাত্র ৩ ছড়া (ধানের শীষ) ধান দুই বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১‘শ মণ। খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই জাতের ধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলে পাল্টে যাবে খাদ্য উৎপাদনের চিত্র।
কৃষি বিভাগের মতে, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামের একজন আদর্শ কৃষক লেবুয়াত শেখ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধান ও মাছের চাষ এবং মাছের ব্যবসা করে জীবন ধারণ করেন। স্থানীয় বেতাগা বাজারে তার একটি মাছের আড়তও রয়েছে। তিনি ও তার স্ত্রী স্থানীয় আইপিএম ক্লাবের সদস্য।
কৃষক লেবুয়াত শেখ জানান, ২০১৬ সালে তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি ক্ষেতে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধানের চাষ করেন। মাঠে ধান কাটতে থাকা দিনমজুরদের তার মা ফাতেমা বেগম পানি খাওয়ানোর জন্য যান। এসময় তিনি (ফাতেমা বেগম) সেই ধানের ক্ষেতের মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে অনেক বড় ধানের শীষ (ছড়া) দেখতে পান। তিনি আর একটু সামনে গিয়ে আরো দু‘টি শীষ দেখতে পান। এই শীষগুলো নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পরে তিনি এই ধানগুলো সংরক্ষণ করার জন্য লেবুয়াতকে নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালে মাত্র ১ শতক জমিতে তিনি ওই ধান রোপন করে সেখান থেকে ২.৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। এবছর তিনি ৭৫ শতক জমিতে সেই ধান রোপন করেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথম থেকেই তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
লেবুয়াতের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘দুই বছর আগে ধানের ভেতর পাওয়া একটি বড় ধরনের ধানের বাইল (শীষ) একটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করি। পরের বছর এই ধান থেকে ৩ আঁটি পোতা হয়। সেখান থেকে যে ধান হয় তা আবার পরের বছরের জন্য বীজ হিসেবে রেখে দেই। সেখান থেকে আজ এতগুলো ধান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যেকোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়। যা বেড়ে ৮/১২টি হয়েছে। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। এক একটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬- ৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১২‘শটি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম। ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিপ ( ছড়ার সাথের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়া দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কা- ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। একর প্রতি ফলন প্রায় ১৩০ মণ। অন্য যেকোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
অপরদিকে আফতাব-০৫ জাতের হাইব্রিড ধান প্রতি ছড়ায় ১৮০ থেকে ২৫০টি দানা হয়। এই ধানের বীজ প্রতিবারই বাজার থেকে কিনতে হয়। হেক্টর প্রতি এই ধান উৎপাদন হয় ৫ টন। একই জমিতে কৃষক লেবুয়াত উদ্ভাবিত জাতের ধানের উৎপাদন ১১ টন।
চাকুলী গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, এই ধান নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। মাত্র ৩টি শীষ থেকে আজ ৭৫ শতক জমিতে এই ধানের চাষ করেছেন লেবুয়াত। আর এই ভিন্ন জাতের ধান দেখতে প্রতিদিনই অনেক লোক বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন। এবং তারা ধান সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তিনি সরকারিভাবে কৃষক লেবুয়াতের নামেই এই ধানের নামকরণের জন্য সবার কাছে দাবি জানান।
কৃষানী রীনা বেগম জানান, সকলের আগ্রহ এখন লেবুয়াতের ধানের দিকে। এই ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই অনেক লোক আসছে। তিনি নিজেও প্রতিকেজি ৪শ টাকা দরে ৪ কেজি ধানের বীজ কিনেছেন বলে জানান।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, প্রথমে তারা লেবুয়াতের ধানের ক্ষেতে গিয়ে ধানের নমুনা দেখে অবাক হয়ে যান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে তার পরামর্শে লেবুয়াতকে হাতে কলমে ও সর্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোতাহার হোসেন জানান, স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে খবর পেয়ে তিনি নিজে সার্বক্ষণিক এই ধানের ক্ষেতে বিশেষ নজরদারি করেছেন। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা লেবুয়াতের এই ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করে ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কৃষক লেবুয়াতের উদ্ভাবিত এই বিশেষ জাতের নানা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি অনেক বেশি লবণ সহিষ্ণু জাত। গাছের কা- অনেক বেশি মোটা ও শক্ত, ফলে ঝড়ে হেলে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বৈরী আবহাওয়ায়ও পাতায় কোনো স্পট নেই। এই জাতের ধানের শীষ ( বাইল) অনেক বেশি লম্বা।
গবেষণা করে এটি যদি কৃষকদের জন্য উপযোগী হয় তাহলে সারাদেশে এই জাত ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বাগেরহাট জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত এটি একটি নতুন জাতের ধান। এই ধান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালনো হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে যে এত উন্নত ধরনের ধান উদ্ভাবন হয়েছে তা স্থানীয়দের মাঝে চমক সৃষ্টি হয়েছে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে এটি ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা হবে। -

দেশের বাইরে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার আম আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
জেলায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন আমের বাজারজাতকরণের জন্য।

গত ৪ বছর যাবৎ সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ইউরোপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সাতক্ষীরার আম। আজ শনিবার সকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আম রপ্তানি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা প্রক্রিয়াগত কোনো জটিলতা তৈরি না হলে শনিবার থেকেই রপ্তানি শুরু হবে সাতক্ষীরার আম। যা যাবে ইতালি, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের অনুকূল হওয়ায় অন্যান্য অঞ্চলে উৎপাদিত আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম বেশি সুস্বাদু। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় সাতটি উপজেলায় চলতি বছরে প্রাায় চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগন রয়েছে ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি আমের বাগান রয়েছে।
এ জেলায় গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, ক্ষিরসরাইসহ নানা জাতের আম বাগান রয়েছে। আমের পরিচর্যার জন্য নানামুখী কর্মযজ্ঞে মেতে উঠেছে জেলার শত শত মৌসুমী শ্রমিক। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও সাতক্ষীরা জেলা থেকে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৭’শ মেট্রিক টন।
কলারোয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছর কলারোয়া উপজেলা থেকে ৪০ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানী হয়েছিল। যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশী। এবার এ উপজেলা থেকে ৮০ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানী করা হবে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলারোয় উপজেলায় আমের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার বাউড়ি বেলতলা ও সিংগা বাজার।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, কলারোয়ার সিংগা আমবাজারে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম বাজারজাত করণের লক্ষ্যে আমের পাইকারী বাজার বসেছে। এই বাজারের আমে কোন রাসায়নিক মেশানো হয় না।
উপজেলার সিংড়া বাজার আম ব্যবমসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কেরালকাতা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ জানান, এখানকার পাইকারী বাজার থেকে আম কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা এখানে অবস্থান করছেন। তিনি আরো জানান, চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আম ব্যবসায়ীরা বর্তমানে এখানে অবস্থান করছেন। এখানকার আম ইউরোপেও রপ্তানি হচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন জানান, কলারোয়া উপজেলায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই আমে যাতে কোন রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয় না হয় সেজন্য আম চাষীদের নিয়ে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা দিলে তারা আরও ভালোভাবে আম চাষ ও আমের ব্যবসার প্রসার বাড়িয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচারক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, গত চার বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজার ১’শ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন আম এবারও ইউরোপের বাজারে রপ্তানী হবে।
-
বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের ব্যাপকতার অভিযোগ, আমলে নিচ্ছে না সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট: এবারের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধানের আবাদে ছত্রাকজনিত ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অনেকে ঋণ নিয়ে বোরো ফসলের আবাদ করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন না পেলে কীভাবে ঋণ শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। তবে সরকার বিষয়টি মানতে নারাজ। সরকারের এ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বলছে, এসব গুজব। এর কোনও ভিত্তি নেই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,প্রতিবছর বোরো ফসলের মাঠের কিছু না কিছু অংশে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এটি ফসলের ক্ষতি ‘স্বাভাবিক নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যাপকতা আকার ধারণ করার কোনও তথ্য নেই। এ বছর বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, জেলা পর্যায় থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লাস্টের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। দেশে এ বছর ১ কোটি ৯০ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদন হবে, যা রেকর্ড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্লাস্টের কোনও খবর আমরা জানি না। যা শুনেছি, তা পত্রপত্রিকায় ও টেলিভিশনে। এসব প্রতিবেদন দেখার পর জেলা কৃষি অফিসগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিবছরের মতো স্বাভাবিক নিয়মে এ বছরও কিছু জমিতে হয়তো ব্লাস্ট রোগ হয়েছে। তবে তা খুবই সামান্য। রেকর্ড করার মতো নয়। এটি এ বছরের বাম্পার ফলনে কোনও প্রভাব ফেলবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ এরপরও আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে সতর্ক রেখেছি, যাতে যেকোনও পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যায়। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ করছে।’
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রতিবছর প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই বোরো ফসল কৃষকের ঘরে ওঠে। এটি নতুন কিছু নয়। এ বছরও উঠবে। এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি, এ বছর ১ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হবে। মাঠের ফসল সম্পূর্ণ উঠলে মোট উৎপাদন পাওয়া যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বোরোর মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি, রোদ-খরা সবই হয় এবং হবে। এর ওপর ব্লাস্ট তো আছেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে এ বছর ব্লাস্ট যা হয়েছে, তা হিসাবে আনার মতো নয়। প্রতিবছর কিছু না কিছু জমিতে হয়। এবারও হয়েছে। এটি মোট উৎপাদনে কোনও প্রভাব ফেলবে না।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে হয়তো বলবেন, বৃষ্টিতে ধান শুকাতে পারেননি কৃষক। আবার কেউ বলবেন, খরার কারণে বোরো ধানের চিটা হয়ে গেছে। আবার কেউ বলবেন, ব্লাস্ট রোগ উৎপাদন ব্যাহত করেছে। এসবই গুজব। এ বছর সবই হবে। তারপরও বাম্পার ফলনের বোরো কৃষকের ঘরে উঠবে।’
সরকার এ বছর ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চাল উৎপাদনে কেজিপ্রতি কৃষকের জন্য মুনাফা বাবদ ২ টাকা যুক্ত করে প্রতি কেজি সিদ্ধ বোরো চাল সংগ্রহ করা হবে ৩৮ টাকা দরে। আর আতপ বোরো চাল সংগ্রহ করা হবে প্রতিকেজি ৩৭ টাকা দরে। আর বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে ২৬ টাকা কেজি দরে। সম্প্রতি সচিবালয়ের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, এ বছর সিদ্ধ বোরো চাল সংগ্রহ করা হবে ৮ লাখ টন এবং আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ টন। বাকি ১ লাখ টন চালের জন্য দেড় লাখ টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে। আগামী ২ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে, চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে গাজীপুর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুরের চাষীরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায়। ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কৃষকের ভুলের কারণে কিছু জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কোনোভাবে আমলে নিচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
জানা গেছে, এসব জেলার কৃষকেরা জমিতে সবুজ ধান গাছের চারা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। কিন্তু ধানের ছড়া বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাতাগুলো বাদামি, আবার কখনও সাদা বর্ণের হওয়া শুরু করে। কিছুদিন পর থেকে ছড়ার গোড়ার অংশে কালো হয়ে ধানের ছড়াটাও বাদামি ও সাদা বর্ণের হতে শুরু করে। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও কাজ হয়নি। ১ একর জমির ধান কাটার খরচ পড়বে ৯ হাজার টাকা। খড় পাওয়া যাবে ৬ হাজার টাকার।কৃষকদের অভিযুক্ত করে কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকেরা নিয়ম মেনে ওষুধ প্রয়োগ করেন না। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হলেও এ রোগের আক্রমণ ঘটে। প্রথমে ধানের পাতা পরে ধান গাছের গিঁটে ও সবশেষে শীষে এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। তাদের মতে, ধান গাছে আক্রমণের পর ন্যাটিভো, ডাইমেনশন, ফিলিয়া জাতীয় ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু কৃষকেরা তা করেননি।
এ বিষয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘এবার শ্রীপুর উপজেলায় ১২ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
বাংলা ট্রিবিউনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। এ বছর বোরো ধান থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭২ মেট্রিক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বোর ধানের বাম্পার ফলন হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণে অর্থাৎ দিনে গরম, রাতে ঠাণ্ডা, মেঘলা আবহাওয়া, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং বাতাসের কারণে কিছু কিছু এলাকার ফসলে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখায় ও পরামর্শ দেওয়ায় এ রোগ বাড়তে পারেনি। এ কারণে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনও প্রভাব পড়বে না।
জামালপুরের ৭ উপজেলায় ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধানক্ষেতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে। অন্য জাতের ফলন ভালো হলেও ব্রি-২৮ জাতের ক্ষেতে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে ব্লাস্ট রোগ। এতে অধিকাংশ জমির ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। আক্রান্ত জমিতে শীষ থাকলেও তাতে চাল নেই।
জামালপুরের কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত রোগ। বোরো ও আমন মৌসুমে সাধারণত এই রোগটি দেখা দেয়। ব্লাস্ট রোগে যেন ক্ষেত আক্রান্ত না হয়, সেজন্য আমরা সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রচারপত্র বিলি করেছি। তারপরও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, এই রোগটি আর ছড়াবে না।’
এদিকে গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোর মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু জেলায় আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ ক ম রুহুল আমীন বলেন, ‘জেলায় মাত্র ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের স্প্রে ব্যবহার করাসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।’ এ রোগে মোট উৎপাদনে কোনও ঘাটতি হবে না, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চালের উৎপাদন অর্জিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউনের রামপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সারাদেশের মতো বিরামপুরেও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। ছত্রাক জাতীয় এ রোগের আক্রমণে ধানের শীষ সাদা ও পাতা ধূসর বর্ণ ধারণ করছে। এ রোগে চিটায় পরিণত হচ্ছে ধান। শেষ সময়ে ধানে ব্লাস্ট রোগ সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় দিশেহারা কৃষক। যখন শীষে সংক্রমণ হয় তখন ছত্রাকনাশক দিয়ে কোনও উপকার হচ্ছে না।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিক্সন চন্দ্র পাল জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৭ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। নেক ব্লাষ্ট রোগে সংক্রামিত জমি থেকে ধানের ফলন কম হলেও সার্বিকভাবে কোনও প্রভাব পড়বে না ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়। -

ইতিহাসখ্যাত আদী যমুনা নদীর চতুর্থ খন্ড
দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলীয় অঞ্চলের ঐতিহাসিক নদী যমুনা। যমুনা নদী সম্পর্কে সতীশ চন্দ্র মিত্র তাঁর যশোর খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন:
‘এ যমুনা সেই যমুনা
যে যমুনার তটে ইন্দ্রপুরী তুল্য রাজপাট বসাইয়া কুরুপান্ডবে ইন্দ্রপ্রস্থ
হস্তিনাপুরে রাঙ্গামেুয় যজ্ঞ সুসম্পন্ন করিয়া ছিলেন,
যে কালিন্দী তটে বংশীবটে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমধর্মের অপূর্ব লীলাভিনয় হইয়া ছিল,
যে যমুনা তীরে দিল্লী-আগ্রায়-মথুরা-প্রয়াগে হিন্দু-মুসলমান
বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান মোঘল-ইংরেজ
শতশত রাজ-রাজেশ্বর সমগ্র ভারতের
রাজদভ পরিচালনা করিতেন
এ সেই একই যমুনা।
সেই তমালকদম্ব পরিশোভিত কোকিল কুজন মুখরিত
নির্ম্মল সলিলে প্রবাহিত
ভটশালিনী সুন্দর যমুনা।’যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে ছিল ঐতিহাসিক ও প্রত্মাত্বিক স্থাপত্য নিদর্শন, ধর্মীয় এবং লোকজ উৎসব ও সংস্কৃতি। এ ক্ষেত্রে যমুনা নদীর চতুর্থ খ-ের বিষয়টা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে চাই। যমুনা নদীর চতুর্থ খন্ডর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য সংযোগ খাল, যা এক সময় স্থানীয় মৎস্য বৈচিত্র্যের আধার ছিল। খালগুলোর মধ্যে অন্যতম-ইছামতি, কদমতলী, সীমানা খাল, সোনার মোড় থেকে শরৎখানা খাল, বংশীপুর থেকে মাহমুদপুর সীমানা খাল, সোনার মোড় শ্মাশনঘাট দিয়ে সরদার বাড়ীর পশ্চিম দিক হয়ে হানারখালীর উপর দিয়ে কদমতলী সীমানা খাল, শরতখানা থেকে ভৈরব আলীর বাড়ীর দক্ষিণ দিক দিয়ে, বংশীপুর বীদগাহ সীমানা হয়ে গজলমারী, কদমতলী সীমানা খাল ও হাফরখালী শিশেল খাল ইত্যাদি।
এ খানে অসংখ্যা বিল আছে। যেমন: নলবিল, হাফরবিল, দিঘীর বিল, কাশিপুরবিল, পশ্চিমবিল, হানরখালী বিল, মৃতঘেরী বিল, কাঁদার বিল, মাহমুদপুর চর, ফুলবাড়ির চরের বিল, চরের বিল, আঠারখানার হুলোর বিল ইত্যাদি।
যমুনা নদীর চতুর্থ খ- ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। কাকশিয়ালী থেকে মাদার নদী পর্যন্ত যমুনা নদীর সর্বমোট ৫টি খন্ডর মধ্যে চতুর্থ খন্ডই প্রত্মাতাত্বিক নির্দশনের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। এক সময় প্রবাহমান যমুনা নদীর চতুর্থ খ-ের দুই তীরে ছিল অনেক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। যার মধ্যে বুরুজপোতা, বংশীপুর শাহী মসজিদ, যশোরেশ্বরী কালিমন্দির, হাম্মাম খান, শরৎবালা পুকুর, ত্রিকণা শিবমন্দির, খৃষ্টান গীর্জা, ধুমঘাট রাজধানী, জমিদারবাড়ীর চাউল ধোঁয়া পুকুর, শরতবালা স্মৃতিস্তম্ভ, জমিদার গোলাবাড়ী, শাহী মসজিদ গোরস্থান ও ঈদগাহ, সোনার মোড় শ্মশান ঘাট ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে ঐ সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন গুলোর অধিকাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যমুনা নদীর চতুর্থ খ-ের বন্দোবস্ত বা ইজারা বাতিল করে প্রবাহ সুষ্ঠ করলে রক্ষা পাবে বিলুপ্ত প্রায় স্থাপত্য নিদর্শনগলো। অন্যথায় ইতিহাসের পাতা থেকে চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে ইতিহাস প্রদিদ্ধ ঐ সমস্ত প্রত্মতাত্বিক স্থাপত্য নির্দশন সমূহ।
যমুনা নদীর চতুর্থ খ-ে হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে অত্যান্ত পবিত্র স্থান। দেবরাজ ইন্দ্রের সহধর্মীনীর নাম বারুনী দেবী। মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে মর্তে আগামন করেন ভক্তদের সাক্ষাতের জন্য। দেবীর আগমন উপলক্ষে উক্ত তিথিতে ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়ে যমুনা নদীতে ¯œান করেন। তাদের ধারনা এই শুভদিনে বারুনী ¯œানমঙ্গল বয়ে আনবে। সেই আবহমান কালের ঐতিহ্য আজও হিন্দু ধর্মালম্বীরা পালন করে আসছে।
নদী শুকিয়ে গেলে সভ্যতা বাঁচেনা। দখল ও দূষণ, নদী ও জলাশয়ের দুশমন। নদীর জীবনের সাথে কৃষি, পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব জড়িত। শ্যামনরের ঐতিহাসিক যমুনা নদীর জীবন ও স্কৃতি আজ ধবংস ও ক্ষত-বিক্ষত।
কাকশিয়ালী থেকে মাদারনদী পর্যন্ত প্রবাহমান যমুনা নদীর সাথে সংযোগ ছিল ৪০টি খাল, ৪৪টি বিল, ৫৪টি স্থাপত্য নিদর্শন, ২৪ প্রকার লোকজ ও ধর্মীয় উৎসব। যমুনা নদী দখলের পূর্বে এ অঞ্চল ছিল স্থানীয় কৃষি প্রানবৈচিত্র্য, গবাদিপশুবৈচিত্র্য, মৎস্যবৈচিত্র্য, উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও অসংখ্যা জলজপ্রালবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। ভূমি, নদী ও জলাশয় দুশমনদের ভোগ বিলাসীতার জন্য চিরতরে ধবংস ও বিলুপ্ত প্রায়া। নদী ভোগ দখলের অধিকার কখনও একজন ব্যক্তির হতে পারে না। তাহলেই নদী বিপন্ন হয়ে পড়ে, যেমনটি হয়েছে যমুনা নদী উপর সকলের অধিকার প্রতিষ্টা হবে, নদী বিপন্ন হয় না, নদী হয় প্রবাহমান ও জীবন্ত। -

সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদে তরমুজ চাষে কৃষকদের বিপ্লব
সেলিম হায়দার: আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ ও গত বছর দাম ভাল পাওয়ায় এবার পাইকগাছায় লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ২শ’ হেক্টর বেশি (৪১০ হেক্টর) জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রথম দিকে পানির অভাবে তরমুজ আবাদ মাজ পথে বিঘিœত হলেও ফলন ভাল হওয়ায় চলতি মৌসুমে ৫০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে উপজেলায় তরমুজের আবাদ আরো বাড়তে পারে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী জানায়, পাইকগাছার ২২ নং পোল্ডার ও গড়–ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া ও কুমখালীতে দীর্ঘদিন যাবৎ তরমুজ চাষ করছেন সেখানকার কৃষকরা। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ ও সেখানকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ঐ এলাকা উপজেলার তরমুজ চাষের জন্য সমৃদ্ধ। এখানকার তরমুজের ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাই এর চাহিদা ও দামও অপেক্ষাকৃত বেশী। সুন্দরবন উপকূলীয় ও চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত জনপদে যখন পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ দিন দিন প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে তরমুজের আশা জাগানিয়া সম্ভাবনা স্থানীয় কৃষকদের পথ দেখাচ্ছে নতুন আলোর।
স্থানীয়রা জানান, তরমুজ চাষে শুধু চাষীরাই নয়, উৎপাদন মৌসুমে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যায় কর্মসংস্থান হয় এলাকার শ্রমজীবিদের।
কৃষি অফিস জানায়, চাষাবাদে গত কয়েক বছরে কৃষকদের সাফল্য ও উৎসাহের উপর নির্ভর করে এবছর পাইকগাছা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কৃষকরা লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ৪১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড পাকিজা ও ড্রাগণ জাতের তরমুজের আবাদ করেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে আবাদ হয়েছে পাকিজা ও ৩০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন জাতের তরমুজ। কৃষি অফিস আরো জানায়, উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারে চাষ হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৮০ হেক্টর ও গড়–ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া কুমখালী এলাকায় বাকি ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস ও সংশ্লিষ্ট চাষীরা জানান, মৌসুমের শুরুতে সেচের জন্য পানির সংকট না থাকলেও এবছর বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় শেষ দিকে পানির চরম সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে ২২ নং পোল্ডার এলাকার চাষীরা রীতিমত বিপাকে পড়েন। মূলত ঐসময় স্থানীয় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পানির এ সংকট বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার কালিনগর গ্রামের মিন্টু বালা জানান, তিনি এবছর ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তবে শেষের দিকে খালে পানি না থাকায় পাইপ দিয়ে কয়েক শ’ মিটার দূর থেকে পানি এনে ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। তবে এবার গতবারের চেয়ে আবাদ ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যে তরমুজ মৌসুম শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। তার ধারণা, বিঘা প্রতি এবছর প্রায় ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে তার। সেখানকার আরেক চাষী পার্বতী সানা জানান, তাদের এলাকা তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হলেও সেচ ব্যবস্থা না থাকায় শুরুতেই নানা মুখী সংকট তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে অনেক দূর থেকে পাইপযোগে পানি এনে চাহিদা মেটাতে হয় তাদের।
এব্যাপারে চাষী ও শ্রমিক লতিকা ও কামনা বালা জানান, তরমুজ উৎপাদন মৌসুমে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যা করে ঘন্টা প্রতি ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন তারা। চাষী মেঘনা বালা জানান, তাদের উৎপাদিত তরমুজ পর্যায়ক্রমে ২/৩ বারে তরমুজ উঠাতে হয়। এরপর তা পাঠানো হয় ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, তার এলাকার ২২ নং পোল্ডার তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। গত বছর ঐ এলাকা থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। দ্বিগুণ আবাদ ও ফলন ভাল হওয়ায় এবছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে তরমুজ চাষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানির জন্য আগ্র হারিয়ে ফেলছেন সেখানকার অনেক কৃষক। বিশেষ করে ২২ নং পোল্ডরের ৫ টি ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে প্রায় ৭ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যরে একটি খাল রয়েছে। জনপদের কৃষকরা বিভিন্ন ফসল আবাদে এই খালের পানি দিয়েই চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। তবে দীর্ঘ দিন সংষ্কারের অভাবে হ্রাস পেয়েছে খালটির পানি ধারণ ক্ষমতা। তাই মৌসুমের শেষের দিকে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষেতের সেচ করাতে অনেক দূর থেকে পাইপ যোগে পানি এনে চাহিদা পূরণ করতে হয় তাদের। এতে খরচের পাশাপাশি ভোগান্তিতে অনেকেই তরমুজ চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন। তার দাবি খালটি খননপূর্বক মিঠা পানির নিশ্চিত উৎস্য তৈরী হলে তরমুজের পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদেও তাদের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রাণ কৃষকরা ঘটাতে পারে এক ভিন্ন মাত্রার বিপ্লব।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএইচ এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলা ঐ অংশে দীর্ঘদিন যাবৎ তরমুজের আবাদ ভাল হওয়ায় সেখানকার কৃষকরা এখন তিল চাষের পরিবর্তে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। যে কারণে এবার সেখানে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কৃষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। তার বিশ্বাস, উপযুক্ত পরিবেশ ও দাম ভাল পাওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের কৃষকরা আশা জাগানিয়া তরমুজ চাষে ঘটাতে পারেন এক নতুন বিপ্লব। -
উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই পাইকগাছায় বাগদা চিংড়িতে মড়কের হানা
বিশেষ প্রতিবেদক: উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই পাইকগাছার অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে মড়ক রোগ। চাষীরা কারণ হিসেবে এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বললেও মৎস্য অফিস মরা চিংড়িতে কোন রোগ বালাইয়ের চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছেননা। অন্যদিকে এনজিও’র দাবি পানি ও খাদ্যই চিংড়ির ব্যাপক মড়কের জন্য প্রধানত দায়ী। তবে কোন পদ্ধতিতেই রোধ করা যাচ্ছেনা বাগদা চিংড়ির এ মড়ক। জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড তাপদাহ চিংড়ির উপযোগী লবন পানির স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ। এমন অবস্থায় চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের ভবিষ্যত নিয়েও নানাবিধ আশংকা তৈরী হয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন লোনা পানির জনপদের অধিকাংশ চাষীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান ৩০ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই আবাদ হয় লবণ পানির চিংড়ির। মৎস্য অফিস জানায়, এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা সংকটে গত দু’বছর উৎপাদন ভাল হয়নি। সেবার মৎস্য অধিদপ্তর চিংড়ি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬ হাজার মেট্রিক টন।
তবে গত বারের ন্যায় এবারো মওসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে চিংড়ির মড়কে একদিকে যেমন আশংকা তৈরী হয়েছে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার, অন্যদিকে শুরুতে পোনার দাম ও জমির হারি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করায় আন্তর্জাতিক বজারে দেশের চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম ভাল না থাকায় আগামীতে চিংড়ি চাষে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটাই মনে করছেন চিংড়ি সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত ৮০’র দশক থেকে সুন্দরবন উপকূলীয় কৃষি অধ্যুষিত এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবন পানির চিংড়ি চাষ। শুরুতেই উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম ভাল থাকায় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চিংড়ির চাষাবাদ। সোনার ধান, সোনালী আঁশ, সবুজ সবজি আর শষ্যের পরিবর্তে দিগন্ত জোড়া মাঠের সব দিকেই বিস্তার লাভ করে রুপালী পানি।
ফসলের জন্য আর দীর্ঘ অপেক্ষা নয়,সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁঝালো গন্ধের চিকচিকে পানির নিচ থেকে উঠতে থাকে সাদা সোনা বাগদা। কিছুদিনের মধ্যে পাইকগাছাকে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিশেষায়িত করা হয় “সাদা সোনার রাজ্য” হিসেবে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কোটি পতি বনে যান চিংড়ি চাষের সাথে সম্পৃক্তদের অনেকেই। তবে মূল জমির মালিকদের অবস্থা চলে যায় আরো তলানিতে। জীবিকার প্রধান মাধ্যম কৃষি শষ্যও আসেনা চাহিদানুযায়ী জমির হারিও পায়না। এক সময় জীবিকার ভিন্ন উপায় ও ঋণের দায় মেটাতে ঘেরের জমিটুকুও বাধ্য হয়ে তুলে দেয় ঘের মালিকদের কাছেই।
তবে ১ থেকে দেড় দশকের মধ্যে ১৯৯৫ সালের পর থেকে চিংড়ি ঘেরে শুরু হয় “ভাইরাস” বা মড়ক রোগ সংক্রমন। ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করায় পুরোপুরি লাভের মুখে থাকা চিংড়ি শিল্পে নেমে আসে আকস্মিক ধ্বস। এভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অনেকেই লাভের আশায় বছরের পর বছর ধার-দেনা করে চাষাবাদ টিকিয়ে রাখে। সফলতা না আসায় এক সময় চাপ সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। মাঝের দু’এক বছর কিছুটা ভাল হওয়ায় ফের কোমর বেঁধে মাঠে নামেন চাষীরা। তবে মাত্র এক বছর পর মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘেরে আবারো মড়ক অব্যাহত থাকায় নতুন করে বন্ধের উপক্রম হয়েছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প।
চিংড়ি চাষী নোয়াকাটির জাহাঙ্গীর আলম,কাশিমনগরের শেখ রবিউল ইসলাম,নজরুল শেখ,জাহাঙ্গীর শেখ,প্রতাপকাটির বজলু জানান, এবছর মওসুমের শুরুতেই তাদের ঘেরে দেখা দিয়েছে চিংড়িতে মড়ক। এখন পর্যন্ত অনেকে দু/এক কেজি মাছও বিক্রি করতে পারেননি তারা। অনেক ঘেরে প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় অবমুক্ত’র সকল মাছই মরে সাবার হয়ে গেছে।
ব্যাপক হারে অব্যাহত চিংড়ি মড়ক আসলে কি ভাইরাস সংক্রমণ? নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব? এনিয়ে চিংড়ি চাষী, মৎস্য অধিদপ্তর ও চিংড়ির উপর মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এনজিও গুলোও পরষ্পর বিরোধী কারণ দাবি করছে। চাষীরা এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বললেও মৎস্য অফিস মৃত চিংড়িতে খুঁজে পাচ্ছেননা কোন সংক্রমণ চিহ্ন। আর এনজিও গুলোর দাবি,পানি ও খাদ্য সমস্যাই প্রধানভাবে চিংড়ির ব্যাপকহারে মড়কের জন্য দায়ী।
এ প্রসঙ্গে চিংড়ি চাষে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বে-সরকারি সাহায্য সেবী প্রতিষ্ঠান নিউ সানের এ্যাকুয়াকালচার প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর সুকুমার অধিকারী বলেন,চিংড়ি চাষে মড়ক রোধ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাটি ও পানি পরীক্ষা এবং তার সঠিক পরামর্শ প্রদানই তাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তারা নিয়মিত চাষীদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে উঠন বৈঠক করছেন। এ উপায়ে সফলতা এসেছে বলেও দাবি এ এনজিও কর্তার। তিনি বলেন, মাটি ও পানি দূষণ এবং চাষীদের অজ্ঞতাই চিংড়ির ব্যাপকহারে মড়কের জন্য প্রধানভাবে দায়ী।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার মন্ডল জানান, মড়ক আক্রান্ত ঘেরের চিংড়িতে এখন পর্যন্ত তারা কোন জীবাণু বা সংক্রমণের চিহ্ন খুঁজে পাননি। তবে চিংড়ির এ ব্যাপক ভিত্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও মহস্য কর্মকর্তা, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড দাবদাহে চিংড়ির লবন পানির উপযুক্ত পরিবেশ বাঁধাগ্রস্থ ও খাদ্য দূষণে মাছের মড়ক লাগতে পারে বলে মনে করেন।
এদিকে চিংড়ির মড়ক রোধে বিভিন্ন কোম্পানি বাহারী সব প্রচারে বাজারজাত করছে নানাবিধ প্রতিষেধক। অনেকে আবার পরিবেশ বান্ধবের ধুয়ো তুলে নিজেদেরকে চিংড়ি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করলেও মূলত তাদের কারো কোন পরামর্শেই চিংড়ির মড়ক রোধ না হওয়ায় মূলত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। -

তালায় বোরোর আবাদ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশক্সক্ষা
সেলিম হায়দার: তালায় আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে বোরোর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। শেষ সময়ের অনাবৃষ্টি ও ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণে এ বছর বোরো উৎপাদনে দেখা দিয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা। এবছর শুরুতে পরিবেশ ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ শ’ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণে এখন লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ থাকার সংশয় দেখা দিয়েছে।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবছর তালা উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৪ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে গতবার বাজার মূল্য ভাল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭৫ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষকরা। এ বছর প্রথম থেকে আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও ধারণা করেছিল এবার তালায় বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তবে উৎপাদন মৌসুমের শেষ সময়ে অনাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণ সবার সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষক ও কৃষি বিভাগ পরষ্পরকে দোষারোপ করছেন। কৃষি বিভাগ বলছেন, ব্লাস্টের ব্যাপারে তৃণমূলের কৃষকদের আগেই সচেতন করা হয়েছিল। আর কৃষকরা বলছেন, ব্লাষ্টের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের থাকলেও এবারের আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষে তৃণমূলের কৃষকদের সচেতনতায় বিশেষ কোন পরামর্শ দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শামছুল আলমের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে তালার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জণে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই কিছুটা ক্ষতি হবে। যেখানে বিঘা প্রতি তাদের পক্ষে ২০ মণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এখন ১৪/১৫ মণ উৎপাদন হবে। এ ব্যাপারে তালার ইসলামকাটির প্রদীপ ঘোষ, হাতবাশের নজরুল ইসলাম, পাঁচরখির কালাম হোসেন, বারুই হাটির সাত্তার সরদার জানান, নানা সংকটে শেষ সময়ে বোরো ধানের উৎপাদন হ্রাসের আশক্সক্ষা তাদের মধ্যে মারাতœকভাবে জেঁকে বসেছে। কোন কোন এলাকায় ধানের উৎপাদন খরচ না উঠারও আশক্সক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি তারা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কোন কোন এলাকায় সার ব্যবসায়ীদেরকেও দায়ী করেছেন। বিশেষ করে কৃষি বিভাগের পক্ষে প্রচারকৃত লিফলেটের সার-ওষুধের পরিবর্তে মুনাফালোভী দোকানীরা কৃষকদের নি¤œমাণের সার-ওষুধ ধরিয়ে দেয়ার বিষয়টিকেও দায়ী করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম আরো জানান, ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্ট ধানের শীষ শুকিয়ে দেয় এবং ধান কাটার পর এতে চিটার পরিমাণই বেশী হয়।
নাব্যতা সংকটে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকায় বছর জুড়ে থাকে পানি বন্দি। তাই জীবিকার একমাত্র মাধ্যম এক খ- জমিতে একমাত্র বোরো ধানের আবাদ তৃণমূলের কৃষকদের বেঁচে থাকার আশা জোগায়। তবে এবার নানামূখী সংকটে অধিকাংশ কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। মৌসুমের চলতি এপ্রিলে মাঠে ধান পাঁকতে শুরু করেছে। কোন কোন এলাকায় কেবল ভারী হয়েছে শীষ। এমন অবস্থায় নানা সংকট উৎপাদনকে বাঁধাগ্রস্থ করায় রীতিমত বপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
তৃণমূলের কৃষকরা জানান,প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার টাকায় হারি নিয়ে ধান চাষ করতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অনেকে আবার মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সূদে ঋণ কিংবা এক মাত্র সম্বল গবাদি পশু,গাছ বিক্রি বা স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে ধান চাষ করায় রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।