নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী সাম্প্রতিক আমাবশ্যার জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বেড়িবাঁধ ভাঙন এবং জলাবদ্ধতায় লন্ডভন্ড সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষকে রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে অবস্থায় ও স্মারকলিপি পেশ করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। ২৬ আগস্ট বুধবার বেলা ১টায় উক্ত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর পূর্বে বেলা ১১টা থেকে বৃষ্টির মধ্যে জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচির বক্তারা বলেন, পানিতে ডুবে রয়েছে সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা। লাখ লাখ মানুষ পানির উপর ভাসছে। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, শাকসজ্বিসহ সবধরণের কৃষি খামার সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহু এলাকায় মানুষের রান্না-বান্না করারও জায়গা নেই। মৃত মানুষের দাফন ও সৎকার করতে এক এলাকা থেকে অপর এলাকায় ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশন, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, পানি এখন শুরু উপজেলা ইউনিয়ন গ্রামে নয়, সাতক্ষীরা জেলা শহরে অবস্থিত সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স, বিজিবি ক্যাম্প, টেক্সটাইল মিলস, সদর উপজেলা পরিষদ, জেলা কালেকটারেটও পানিতে ভাসছে। শহরের মানুষও পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান এর পরপরই মাননীয় পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই এই এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করা, দ্রুত বাঁধ নির্মাণসহ সবধরণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। স্থানীয় জনসাধারণ স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেরা অর্থ দিয়ে বাঁশ, বস্তা, পেরেক কিনে সাতক্ষীরা জেলার বড়ধরণের তিনটি পয়েন্ট ছাড়া আর সকল স্থানে রিংবাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ বাঁধার সাথে যুক্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ১০০০ মেট্রিক টন চাল প্রদান করা হয়। কোন কোন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও বাঁশ, বস্তা, পেরেক নিয়ে সহায়তা করা হয় বলে আমরা জেনেছি। কিন্তু স্বেচ্ছাশ্রমে যেনতেনভাবে পানি বন্ধের পর বাঁধগুলো আরও মজবুত করতে আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। ভেঙে যাওয়া এসব বাঁধের অনেকস্থানে পূর্ব থেকেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। অনেকস্থানে ভাঙার পর ডিপিএম এর মাধ্যমে ইমার্জেন্সি কাজ করার জন্য নতুন করে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ইমার্জেন্সি কাজের ও পূর্ব নির্ধারিত অধিকাংশ ঠিকাদার এলাকার কোন কাজ করেননি। এরফলে সাম্প্রতিক অমাবশ্যায় জোয়ারের পানির প্রবল চাপে পূর্বের ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো নতুন করে ভেঙে গিয়ে এলাকায় এক দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবী জানান এবং সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষকে বাঁচানোর আহবান জানান।
এসময় বক্তব্য রাখছেন, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সুধাংশু শেখর সরকার, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, এড, মনির উদ্দিন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, অপারেশ পাল, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, তপন কুমার শীল, সুরেশ পান্ডে, কমরেড আবুল হোসেন, মুনসুর রহমান, কায়সারুজ্জামান হিমেল, কওসার আলী, আব্দুস সামাদ, মমিন হাওলাদার, আলী নুর খান বাবলু, এড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। অবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা পৌরসভায় অবস্থান কর্মসূচি ও স্মরকলিপি পেশ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি সফল করার আহবান জানানো হয়। অবস্থান শেষে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরাবর সাতক্ষীরাসহ উপকূলবাসীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিভিন্ন দাবী দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
Category: উপকুল
-

বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতায় লন্ডভন্ড উপকূলের মানুষকে রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরা পাওবো’র সামনে অবস্থায় ও স্মারকলিপি পেশ
-

উপকূলে মানুষ রক্ষার দাবীতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করলো সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি : প্রাকুতিক দুর্যোগ, নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষ রক্ষার দাবীতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। ২৪ আগস্ট সোমবার বেলা ১টার সময় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি চত্বরে নিজে স্বাক্ষর করে কর্মসূচি উদ্বোধন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. এম শাহ আলম। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম, এড. এম শাহ আলম ও নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ।
বক্তরা ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সাম্প্রতিক আমাবশ্যার জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বিভিন্নস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষা করার দাবী জানান।
বক্তারা আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় আয়লার ক্ষত কাটিয়ে উঠার পূর্বেই আবার আম্পান এই অঞ্চলকে লন্ডভন্ড করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ঘরে ফেরার আগেই আবার নদীতে প্রবল জোয়ারে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই মানুষ ঁেবচে থাকছে। তারপরও আম্পানের পর বেড়িবাঁধ মেরামতে সরকারী বরাদ্দের টাকা যথা সময়ে সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় আর একটি বড়ধরণের দুর্যোগে পড়েছে এই এলাকার মানুষ।
বক্তারা আরো বলেন, মুষ্টিমেয় ঘের মালিক এবং অন্যান্য বিভিন্ন কারণে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ হওয়ায় জেলার হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে পানির মধ্যে বসবাস করলেও কর্তৃপক্ষ তা নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এরফলে এই অঞ্চলে মানুষের বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। বক্তারা জরুরিভাবে মানুষের যান-মাল ও সম্পদ বাঁচাতে সরকারের প্রতি দাবী জানান। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, এড. মোস্তফা নুরুল আলম, এড. ওসমান গনি, সুধাংশু শেখর সরকার, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, নিত্যানন্দ সরকার, এড. মুনির উদ্দিন, আলী নুর খান বাবলু, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সুরেশ পান্ডে, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, এটিএম রইফ উদ্দিন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, অধ্যাপক তপন কুমার শীল, জহুরুল কবির, এড. প্রবীর মুখার্জী প্রমুখ। কর্মসূচির প্রথম দিনে শতাধিক আইনজীবী গণস্বাক্ষর ফর্মে স্বাক্ষর করেন। -

জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভা :‘স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উপকূলে টেকসই ভেড়ী বাঁধ নির্মান এবং বিচার বর্হিভুত হত্যা বন্ধ করুন’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, উপকূলে টেকসই ভেড়ী বাঁধ নির্মান ও বিচার বর্হিভুত হত্যা বন্ধের দাবীতে জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাসদ সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ। জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলীর পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, শ্যামনগর উপজেলা সাধারন সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান, তালা উপজেলা সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন, আশাশুনি উপজেলা সাধারন সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল আলিম প্রমুখ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসের এই সংকট কালে স্বাস্থ্য বিভাগের সীমাহীন দুর্নীতির খরর দেশ বাসীকে উৎবিগ্ন করে তুলেছে। এমনিতেই সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগের দুনীতি ও চিকিৎসা নিয়ে সাতক্ষীরার মানুষরা উদ্বিগ্ন ছিল, তার মধ্যে কেন্দ্রিয়ভাবে বিভিন্ন অপকর্মের প্রকাশিত চিত্র প্রমানিত করে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল স্তরে দুনীতির শিকড় বাসা গেড়ে বসেছে। এ দায় থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রি বাদ পড়তে পারেন না। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ দায় কাধে নিয়ে অবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিত।
সভায় বক্তরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সাতক্ষীরার উপক’লের মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুকিযুক্ত হয়ে পড়েছে। বিগত আম্ফানে বিধ্বস্থ ভেড়ীবাধের অনেক স্থানে এখনও রিংবাধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামপ্রতিক জোয়ারের পানিতে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার ভেড়ীবাধ ভেঙে আবারও ডুবে গেছে বিস্তৃন্য এলাকা। এলাকার মানুষের পক্ষ হতে টেকসই স্থায়ীত্বশীল ভেড়ি বাধের দাবী জানানো হলেও দশ বছরে সেই দাবী প্রতি সামান্য সম্মান দেখানো হয়নি। অথচ সরকারের উর্ধতন পর্যায় থেকে বার বার আশ^াস দেওয়া হয়েছে যে, দ্রুত বাধ নির্মানের কাজ শুরু হচ্ছে। এই বাস্তবতাহীন বক্তব্য সরকারের ভামুর্তিকে আরো ক্ষুন্ন করেছে। মানুষের মধ্যে অবিশ^াসের অবস্থা তৈরী হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর আজ স্থায়ী জলবদ্ধার করাল গ্রাসে আক্রান্ত। শত শত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জলামগ্ন হয়ে থাকলেও বাস্তব সম্মত কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় মানুষের দুর্ভোগ আরো তীব্র হচ্ছে। অথচ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ নানান অপকর্ম ও দুনীতি বিষয় আজ প্রকাশ্য নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করে স্থায়ীত্বশীল ভেড়ী বাঁধ নির্মান করে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাতক্ষীরার সদরকে জলবদ্ধতার অভিসাপ মুক্ত করতে আন্তনদীর সংযোগ সৃষ্টিসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহন করার জোর দাবী জানান।
সভায় নেতৃবন্দ বলেন, দেশে বিচার বহিঃভূত (ক্রস ফায়ার) হত্যার প্রবনতা এত বেড়ে গেছে যে, সাধারন মানুষদের কখন কিভাবে আইন শৃংখলা বাহিনীর এ হত্যার শিকার হতে হয়, এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। একটি স্বাধীন দেশে এটি চলতে পারে না। সম্প্রতি সিনহা হত্যার মাধ্যমে এটির নগ্নতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সকল মহল থেকে আজ এ ধরনের কার্যক্রমের রাশ টেনে ধরার জোর দাবী উঠেছে।
সভায় আগামী ৩১ অক্টোবর জাসদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী যথাযথ ভাবে পালনের লক্ষ্যে পুরা অক্টোবর মাস ব্যপি প্রচার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। -

উপকূলের মানুষ রক্ষায় সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি
প্রেসবিজ্ঞপ্তি :
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভায় উপকূলের মানুষ রক্ষায় সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানানো হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলাসহ শ্যামনগর ও আশাশুনির উপজেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রান্না করা খাবার বিতরণ করা এবং ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করার দাবী জানানো হয়। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরসহ জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কাশনে যেখানে যে ধরণের বাধা রয়েছে তা দ্রুত অপসারণের দাবী জানানো হয়েছে।
আজ ২২ আগস্ট শনিবার বেলা ১১টায় কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম। সভায় আগামী ২৪ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা আইজীবী সমিতি থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি উদ্বোধন, ২৬ আগস্ট সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অবস্থান ও স্মরকলিপি পেশসহ অন্যন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সভায় বিগত একনেকের বৈঠকে কপোতাক্ষ নদ খননে ৫৩১ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাতক্ষীরাবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয় এবং উক্ত প্রকল্পসহ গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প সমূহ দ্রুত শুরু করার দাবী জানানো হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সুধাংশু শেখর সরকার, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, নিত্যানন্দ সরকার, জিএম মনিরুজ্জামান, মাধব চন্দ্র দত্ত, এড. রফিকুল ইসলাম, কমরেড আবুল হোসেন, অপারেশ পাল, এড. মনির উদ্দিন, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জহুরুল কবির, অধ্যাপক তপন শীল, এড. আল মাহামুদ পলাশ, আলী নুর খান বাবলু, আসাদুজ্জামান লাভলু, এড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। -

গাবুরার ৬টি পয়েন্ট বাধার পর আরো ৭টি বিলীন
সংবাদ দাতা প্রেরিত: বৃহস্পতিবার বিকাল ও শুক্রবার সকালে ভাঙন কবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধের ১৫ নং পোল্ডারের নেবুবুনিয়া অংশে ছয়টি পয়েন্ট বাধার পর তিন ঘন্টা পার না হতেই পাশর্^বর্তী আরও সাতটি পয়েন্টের বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিত এসব অংশ দিয়ে অব্যাহতভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় শুক্রবার দুপুরের পর নুতন করে খলিশাবুনিয়া ও লক্ষীখালীসহ গাবুরার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বুড়িগোয়ালীনির দাতিনাখালী অংশের রিং বাঁধের উপর দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশের পাশাপাশি পদ্মপুকুর ইউনিয়নের গড়কোমরপুর অংশের বাঁধ ভেঙে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রামের অর্ধেকটা প্লাবিত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেঙে যাওয়া গাবুরা ইউনিয়নের ১৫ নং পোল্ডারের নেবুবুনিয়া এলাকার বাঁধের ছয়টি পয়েন্ট স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শুক্রবার বেলা এগারটার মধ্যে বেঁধে ফেলা হয়। তবে দুপুরের দিকে নদীতে আবারও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারনে বেলা দুইটার দিকে পাশর্^বর্তী আরও সাতটি পয়েন্ট এর রিং বাঁধ নদীতে বিলীন হয়। যার ফলে আগের দিন প্লাবিত নেবুবুনিয়া ও গাবুরা গ্রামের পাশাপাশি খলিশাবুনিয়া ও লক্ষীখালী গ্রাম দুটি নুতন করে প্লাবিত হয়।
জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত থাকায় শুক্রবার বেলা চারটা পর্যন্ত প্লাবিত চার গ্রামের পাঁচ শতাধিক চিংড়ি ঘের ও প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। নদীতে জোয়ার এর পানির চাপ বেশী থাকার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারনে ভাঙন কবলিত রিং বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না বলেও জানান স্থানীয়রা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরের ন্যায় শুক্রবার দুপুরে নদীতে জোয়ারের পানি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারনে বুড়িগোালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালী মোড়লপাড়া এলাকার উপকূল রক্ষা বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে উপজেলার পদ্মপুকুরের গড়কোমরপুর অংশের ৭/১ নং পোল্ডারের উপকূল রক্ষা বাঁধের একটি অংশ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
এছাড়া পাশর্^বর্তী আশাশুনি উপজেলার চাকলা এলাকার ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ধীরে ধীরে গড়কোমরপুর গ্রামের অন্যান্য অংশেও নদীর পানি ঢুকছে বলে জানান দফাদার আব্দুল জলিল।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, ভাঙন কবলিত অংশে রিং বাঁধ নির্মাণের তিন ঘন্টার মধ্যে নুতন সাতটি পয়েন্ট ভেঙে নুতন দুটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিনাতিপাত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঁধ আমাদের সর্বনাশ করেছে। মাত্র তিন মাস আগে এসব এলাকায় রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়- দাবি করে তিনি জানান টেকসইভাবে বাঁধ নির্মাণ ছাড়া গাবুরা ইউনিয়নকে রক্ষার বিকল্প নেই।
পাউবোর সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের সেকশন অফিসার মাসুদ রানা জানান, জোয়ার এর চাপ আর বৃষ্টির কারনে কাজ করা যাচ্ছে না। পুর্ব নির্ধারিত ঠিকাদারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই সেখানে রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। তবে নুতন করে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে- উল্লেখ করে এ পাউবো কর্মকর্তা বলেন, বার বার ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
-

ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন নাগরিক কমিটি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের আম্পান দুর্গত এলাকায়। পূর্ব থেকে ভাঙা বাঁধ এবং আমাবশ্যার জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বিভিন্নস্থানে নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট মাছের ঘের ফসলের জমি সব একাকার।
জোয়ারের সময় ১২/১৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথায় এক ইঞ্চি জমি জেগে নেই। রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া সবকিছুই প্রায় বন্ধ। মানুষের বেঁচে থাকাটা এখন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। উক্ত দুই ইউনিয়ন ছাড়াও জেলার আশাশুনি শ্যামনগর উপজেলাসহ বিভিন্নস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া ভাদ্র মাসের বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার জলাবদ্ধ এলাকাগুলো নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষের আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলো চিংড়ি ঘেরের বাঁধ দিয়ে বন্ধ করাসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে বন্ধ থাকায় সহসা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এমতাবস্তায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি জেলার মানুষের যান-মালের নিরাপত্তায় জরুরিভাবে১. আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলাসহ শ্যামনগর ও আশাশুনির উপজেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া
২.পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রান্না করা খাবার বিতরণ করা৩. ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা
৪. নতুন করে আর কোন বেড়িবাঁধ যাতে না ভাঙে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া
৫. সাতক্ষীরা শহরসহ জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কাশনে যেখানে যে ধরণের বাধা রয়েছে তা দ্রুত অপসারণের দাবী জানাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সাতক্ষীরা শহরতলীর বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছে। নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলালের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটিতে আরো উপস্থিত ছিলেন সুধাংশু শেখর সরকার, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, এড. মনির উদ্দিন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, জহুরুল কবির, আসাদুজ্জামান সরদার, এড. রফিকুল ইসলাম ও এড. আবুল কালাম আজাদ।
-

গাবুরায় ও আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত
নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্যামনগরের গাবুরায় প্রায় এক’শ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে সহস্্রাধিক বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। গতকাল দুপুরে কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের চাপে গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া গ্রামের ৬ টি স্থানে রিংবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে একই স্থানে বেঁড়িবাধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে হাজার হাজার এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সে সময় রিংবাধ দিয়ে কোন রকম বেঁড়িবাধটি টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ দুপুরের প্রবল জোয়ারে তা আবারও ভেঙে গেছে। তারা আরো জানান, এখনই যদি বেড়িবাধটি সংস্কার করা না হয় তাহলে পরবর্তী জোয়ারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে।
স্থ’ানীয় গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত লেবুবুনিয়ার এই বেড়িবাধটি সংস্কারের জন্য সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারা এখনও কাজ শুরু করেননি। তার মধ্যে আজ দুপুরের জোয়ারে রিংবাধটি ভেঙে আবার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। তিনি আরো জানান, দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হলে গোটা গাবুরা ইউনিয়ন প্লাবিত হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ইতিমধ্যে বেঁড়িবাধ ভাঙন কবলিত লেবুবুনিয়ায় বালুর বস্তা পাঠানো হয়েছে। এখন জোয়ার চলছে। ভাটা শুরু হলেই বাধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, এখন বর্ষকাল চলছে। এ সময় নদীর পানি বেশী থাকার কারনে সেনাবাহিনী এখনও বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ শুরু করেননি। তারা শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সেখানে টেকসই বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে এই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা জানান।আশাশুনি সদর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রতিরক্ষা রিং বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নে নদীর পানির তোড়ে নতুন এলাকা প্লাবন শুরু হয়েছে। ৩ মাস পরে পুুরনো প্লাবিত এলাকাকে ছাড়িয়ে নতুন এলাকায় পানি ঢুকে শত শত নতুন ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের প্লাবিত করে পানি ছুটে চলেছে। উপজেলার আশাশুনি, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি গত ২০ মে আম্পানের তান্ডবে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আাসছে। বাঁধ সংস্কারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলেও গত ঈদ উল আযহার পূর্বে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। অনেক এলাকা রিং বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া মূল বাঁধেও ইতিমধ্যে কাজ করা হয়েছে। এতে এই ৩ ইউনিয়নের কিছু অংশের মানুষ প্রাথমিক ভাবে রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে নদীর পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুষুল ধারা বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, হরিশখালি, চাকলা এলাকায় প্রচুর পানি ঢুকে রিং বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। যার ফলে প্রতাপনগর ইউনাইটেড স্কুলের পেছনের কার্লভাটটির পাশের কার্পেটিং সড়ক ভেঙ্গে এলাকায় দুর্বার গতিতে পানি প্রবেশ করছে। হলদেপোতা-তেঁতুলিয়া-প্রতাপনগর মেইন সড়কের প্রতাপনগর অংশের উপর দিয়ে পানি অপর পাশে ঢোকায় সড়ক যোগাযোগ হুমকীতে পড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করে মানুষকে নাকানি চুপানি খাওয়াচ্ছে। এদিকে আশাশুনি সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাট গ্রামের পাউবো’র ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ২০ মে এলাকায় পানি প্রবেশ করে একাকার করে দিয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে রিং বাধ দিয়ে বিশাল এলাকাকে রক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে দয়ারঘাট হ্যাচারি ও স্কুলের সামনে রিংবাধ ভেঙ্গে এবং আরো কয়েকটি স্থানের বাধ ভেঙ্গে প্রচুর গতিতে নদীর পানি ভিতরে ঢুকছে। ফলে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০ মে’র পর থেকে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীও এলাকা ত্যাগ করেছেন। তারা শীত মৌসুমে বাঁধ নির্মানের জন্য আবার ফিরবেন বলে জানাগেছ। গত ২ দিনের নদীর পানির চাপ এতটা বেড়েছে যে, আগের তুলনায় বেশী গতিতে পানি ভিতরে ঢুকে ইতিমধ্যে মহিষকুড়, নাকতাড়া, বকচর ও বুড়াখারাটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। রাতের জোয়ারে শ্রীউলা গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ফলে ৩ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে আশাশুনি সদর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রতিরক্ষা রিং বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নে নদীর পানির তোড়ে নতুন এলাকা প্লাবন শুরু হয়েছে। ৩ মাস পরে পুুরনো প্লাবিত এলাকাকে ছাড়িয়ে নতুন এলাকায় পানি ঢুকে শত শত নতুন ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের প্লাবিত করে পানি ছুটে চলেছে। উপজেলার আশাশুনি, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি গত ২০ মে আম্পানের তান্ডবে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আাসছে। বাঁধ সংস্কারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলেও গত ঈদ উল আযহার পূর্বে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। অনেক এলাকা রিং বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া মূল বাঁধেও ইতিমধ্যে কাজ করা হয়েছে। এতে এই ৩ ইউনিয়নের কিছু অংশের মানুষ প্রাথমিক ভাবে রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে নদীর পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুষুল ধারা বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, হরিশখালি, চাকলা এলাকায় প্রচুর পানি ঢুকে রিং বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। যার ফলে প্রতাপনগর ইউনাইটেড স্কুলের পেছনের কার্লভাটটির পাশের কার্পেটিং সড়ক ভেঙ্গে এলাকায় দুর্বার গতিতে পানি প্রবেশ করছে। হলদেপোতা-তেঁতুলিয়া-প্রতাপনগর মেইন সড়কের প্রতাপনগর অংশের উপর দিয়ে পানি অপর পাশে ঢোকায় সড়ক যোগাযোগ হুমকীতে পড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করে মানুষকে নাকানি চুপানি খাওয়াচ্ছে। এদিকে আশাশুনি সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাট গ্রামের পাউবো’র ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ২০ মে এলাকায় পানি প্রবেশ করে একাকার করে দিয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে রিং বাধ দিয়ে বিশাল এলাকাকে রক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে দয়ারঘাট হ্যাচারি ও স্কুলের সামনে রিংবাধ ভেঙ্গে এবং আরো কয়েকটি স্থানের বাধ ভেঙ্গে প্রচুর গতিতে নদীর পানি ভিতরে ঢুকছে। ফলে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০ মে’র পর থেকে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীও এলাকা ত্যাগ করেছেন। তারা শীত মৌসুমে বাঁধ নির্মানের জন্য আবার ফিরবেন বলে জানাগেছ। গত ২ দিনের নদীর পানির চাপ এতটা বেড়েছে যে, আগের তুলনায় বেশী গতিতে পানি ভিতরে ঢুকে ইতিমধ্যে মহিষকুড়, নাকতাড়া, বকচর ও বুড়াখারাটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। রাতের জোয়ারে শ্রীউলা গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ফলে ৩ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরন চক্রবর্তী জানান, তার উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হিজলিয়া ও কোলা এবং আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত রিংবাধ ভেঙে দুটি ইউনিয়নের ৪/৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি।
তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহি প্রকৌশলী সুধায়শ কুমার সরকার জানান, তিনি বর্তানে ট্রলার যোগে তার বিভাগের অশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন। পরিদর্শন শেষ না হলে তিনি কিছুই বলতে পারবেননা। -
সাতক্ষীরা উপকূল থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত হবে সুপার ড্রাইভওয়ে
মশাল ডেস্ক : দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ কারণে ঝুঁকিতে আছে উপকূলীয় ২৫ জেলার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। সেই ঝুঁকি মোকাবেলায় নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। বাঁধ টেকসই করতে নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আর বাঁধ নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও নেওয়া হবে নতুন পরিকল্পনা। এজন্য কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত সুপার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের পাঁচ হাজার ৭৫৭ কিলোমিটার বাঁধের পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর গত ডিসেম্বরে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এরপর ২০ মে আঘাত হানে আম্ফান। এসব দুর্যোগ খুলনার কয়রা-পাইকগাছা ও দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এবং বাগেরহাটের মোংলাসহ অন্যান্য উপজেলা ল-ভ- করে দেয়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। উপকূলের মানুষ শুরু থেকেই বলে আসছে, তাদের ত্রাণের প্রয়োজন নেই; দরকার টেকসই বাঁধ।
মেগা প্রকল্প সম্পর্কে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে আট হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ১৪ নম্বর পোল্ডারে ৯৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ৩১ নম্বর পোল্ডারে এক হাজার ২০১ কোটি ১২ লাখ টাকা, সাতক্ষীরার ৫ নম্বর পোল্ডারে তিন হাজার ৬৭৪ কোটি তিন লাখ এবং ১৫ নম্বর পোল্ডারে ৯৯৭ কোটি ৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। শেষ হবে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে।’
উপমন্ত্রী জানান, ওই চারটি প্রকল্পের বাইরে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে আরো কয়েকটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধ সুরক্ষায় কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত সুপার ড্রাইভওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু বেড়িবাঁধ নয়, পুরো উপকূলের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মতো উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি বিবেচনাধীন।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য পলাশ আহসান বলেন, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন এবং বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ওয়াপদা বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি বা কাঁকড়ার ঘের তৈরিতে সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উপকূলের নদ-নদীর পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। -
নাগরিক কমিটির মানববন্ধন: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দুই মাসেও ভেঙে যাওয়া বাঁধ বাঁধতে না পারার এবং পিসিআর ল্যাবসহ ৫০০ শয্যার সামেক হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার দাবী
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দুই মাস পূর্তির পরও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ বাঁধতে না পারার ব্যর্থতার প্রতিবাদে এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষার পিসিআর ল্যাবসহ ৫০০ শয্যার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ২০ জুলাই ২০২০ খ্রীঃ সোমবার বেলা ১০.৩০টা হতে ১২.৩০টা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপি সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্তরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের দুই পর্বে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম ও যুগ্ম-আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল।
মানববন্ধনের বক্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল নির্ভর করে তোলার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহবান জানান। বক্তারা সরকারি হাসপাতাল থেকে আর কোন রোগীকে যাতে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পাঠানো না হয় সেব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
মানববন্ধনের বক্তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা ঘোষণা, উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা, ভাঙন কবলিত ও জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা এবং ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই বেড়িবাঁধসহ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবী জানান।
মানববন্ধনের বক্তারা জরুরি ভিত্তিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মানববন্ধন থেকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে পক্ষকালব্যাপি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, এড. আবুল কালাম আজাদ, সুধাংশু শেখর সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, এড. আল মাহামুদ পলাশ, মোহন কুমার মন্ডল, নিত্যানন্দ সরকার, জ্যোৎন্সা দত্ত, মিজানুর রহমান, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, প্রভাষক তপন কুমার শীল, এড. মনির উদ্দিন, এড. প্রবীর কুমার মুখার্জী, সাংবাদিক মুনসুর রহমান, কওসার আলী, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুস সামাদ, আব্দুস সাত্তার, মো. রোকনুজ্জামান সুমন, ইয়ার আলী, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ। -

এসজিডির সফল বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রের বিশেষ মনোযোগ
আশেক-ই-এলাহী: বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার থেকে সম্পূর্ন পৃথক এক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। যে এলকাটি বিশ্বব্যাপি সাম্প্রতিক মহাসংকট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। সাগরের নোনাপানি আর উজানের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা উপকূলীয় এ অঞ্চলের ভুমি গঠনের সাথে রয়েছে জোয়ার ভাটার প্রভাব। জোয়ারে পলি অবক্ষেপনের মাধ্যমে ভূমির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার আগেই ষাটের দশকে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ করায় ভূমি বসে যেয়ে নদী পাড় অপেক্ষা বাঁধের মধ্যের জমি নিচু হয়ে যায়। পাশাপাশি পলি জমিতে (প্লাবনভুমিতে) না পড়তে পেরে নদীর মধ্যে পড়ায় নদীর তলদেশ উচু হতে শুরু করে। উপকূলীয় বাঁধ এর নির্মাণকালীনগলদরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ৭০ দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে আশি সালে মারাত্মক আকার ধারণ করে। কৃষি উৎপাদন নেমে আসে নিন্মস্তরে আর তৈরী হতে থাকে অঞ্চল ভিত্তিক জলাবদ্ধতা।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবণতা অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় দেশ সমুহের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুকিতে আছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ-পচিম উপকূলীয় অঞ্চল। সমুদ্রপৃষ্ঠে ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছ্বাস প্রায়শ তৈরী হচ্ছে। আগে যেটি দশ বছরের অধিক সময়ে একবার ঘটতো, বর্তমানে সেটি প্রায় প্রতি বছর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে উপক’লের মানুষ ফণি, বুলবুল ও সর্বশেষ আম্ফানে আক্রন্ত হয়েছে। ২০০৯ আইলায় প্রচন্ড বিপর্যস্তার সম্মুখিন হয় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষ। দশ বছরের পরও আইলার ক্ষতির রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আম্ফান আইলায় বিধ্বস্ত এলাকাকে আবারও বিধ্বস্ত করে। আম্ফানে সরকারের সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে প্রানহানি প্রায় শুন্যের কোটায় থাকলেও সম্পদের ক্ষতি হয় মারাত্মক। এমনকি সরকারের গত দশ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ডও প্রায় বিলীন হয়ে যায়।
অন্য যে কোন এলাকার দুর্যোগের থেকে পৃথক দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দূর্যোগের বাস্তবতা। এখানে দুর্যোগ এলাকার মানুষদের প্রতিদিন দু বার করে দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। জোয়ারভাটার কারনে দুর্যোগ কবলিত এলকার মানুষদের কোনধরনের সহযোগীতা টেকসই হয় না, যদি না দুর্যোগ কবলিত এলাকায় জোয়ারের নোনা পানি উঠা বন্ধ করা না যায়। যার প্রধান অনুসঙ্গ হচ্ছে উপক’লীয় টেকসই বাঁধ। আইলার পর দু বছর জোয়ার ভাটার মধ্যে কাটানোর দুর্ভোগ সরকার প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে।
ষাটের দশকে অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে সম্পন্ন উপকূলীয় বাধঁ নিয়ে পরে আর কোন স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বর্তমানে যে ভেড়িবাঁধটি আছে সেটি বতমান জলবায়ু পরিবর্তনের সহযোগী জলোচ্ছ্বাস ঘূণিঝড় থেকে রক্ষায় অকার্যকর। শুধুমাত্র সুন্দরবনের কারনে সকল দুর্যোগে উপকূলের মানুষের জীবন ও সম্পদ ও সরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড আজও ধ্বংশের শেষ প্রান্তে এসেও টিকে আছে। এহেন বাস্তবতায় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড, স্থানীয় মানুষের সম্পদ ও জীবিকার উৎস্য স্থায়ীত্বশীল করতে উপকূলের নদী প্রবাহ, পলি অবক্ষেন, জোয়ারভাটার প্রভাব, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জীববৈচিত্রসহ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতাকে যুক্ত করে টেকসই উপকূলীয় বাধ নির্মানের বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী যেটি ২০১০ শ্যামনগরের হরিচরন হাইস্কুলের মাঠে ঘোষনা করেন।দূর্যোগ প্রবণ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাতে প্রকৃতিগত ভাবে প্রধান সংকট সাধু পানি। নোনা কবলিত ও সুমুদ্র এর কাছাকাছি হওয়ায় এখানে সাধু পানি বা নিরাপদ পানির সংকট মারাত্মক। শুধুমাত্র খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে নারী ও শিশুদের ৫ থেকে ৬ ঘন্টা বাড়ীর বাইরে থাকতে হয়। এবং শরীরের ওজনের অধিক ওজনের পানি পাত্র নিয়ে কিশোরীদের কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে শুধু খাওয়ার ও ব্যবহারের পানি সংকট এলাকার দারিদ্রতার হার অন্য এলাকার প্রায় দ্বিগুন করেছে। সরকারের ভীষন বাস্তবায়নে মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত, দরিদ্রমুক্ত সমতার বাংলাদেশ গড়তে উপকূলের পানির স্থায়ী সমাধন হওয়া জরুরী।
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল একটি শৃজনশীল ব্যতিক্রমধর্মি এলাকা। বাংলাদেশের এমনকি উপকুলের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পৃথক একটি অঞ্চল। বর্তমানে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল এটি। দরিদ্রের হার বেশী, শিক্ষায় পিছিয়ে, মানুষের এলাকা ত্যাগের প্রবনতাও অধিক। সরকারকারের নানামুখি কর্মকান্ডও উপকূলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কর্মরত সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতাও এলাকাতে মাঝে মধ্যে বিপর্যয় তৈরী করে, যেজন্য এখানে, হাওড়, বরেন্দ্র, পার্বত্য অঞ্চলের মত একটি কতৃপক্ষ হওয়া খুবই জরুরী। এখানের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়, কৃষি বিভাগ, মৎস্য, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, পানি সম্পদসহ সকল মন্ত্রনালয়কে সমন্বিত করে কাজ করা জলবায়ু ঝুকিতে থাকা এলাকা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এলাকার বিপর্যয়ের আরো একটি কারণ অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ। কৃষি জমিতে গড়ে তোলা চিংড়ী প্রকল্পের মালিকরা যথেচ্ছার ভাবে উপকূলীয় বাঁধকে নিজের ঘেরের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজেনে ভেড়িবাধ কাটা, ফুটো করে এবং প্রকল্পের নোনা পানি অরিকল্পিত ভাবে নিস্কাশন করা ইত্যাদির ফলে বাঁধ ও পরিবেশের ঝুঁকি উত্তোর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম বিশেষ করে সাতক্ষীরার উপকূলের কর্মক্ষম মানুষদের এলাকা ত্যাগের হার অনেক বেশী। কৃষি জমিতে নোনা পানি থাকায় কাজের সন্ধানে কেহ মৌসুম ভিত্তিক আবার কেহ কেহ স্থায়ী ভাবে এলাকা ত্যাগ করছে। ফলে পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধিদের ভার পরে পরিবারের নারীদের উপর। যা খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলে দেয়। শিশু শ্রম ও বাল্য বিবাহের প্রবনতা তৈরী করে।
দুর্যোগ আর সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের জীবন জীবিকা ও প্রশাসনিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। যা স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পক্ষে একটি বড় অন্তরায়। ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’- এ ধারার সফল বাস্তবায়নে দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূলের নাগরিকদের সংকট নিরসনের ও দ্রুত বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের জরুরী কর্মসুচি ও কার্যক্রম দরকার। এসজিডির সফল বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জন্য দরকার সরকারে বিশেষ মনোযোগ।
-
সাতক্ষীরার মানুষ মনে করে: সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্থায়ত্বশীল হবে জীবন-জীবিকা
আশেক-ই-এলাহী : সাতক্ষীরার মানুষ মনে করে সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ পারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনপদের উন্নয়নের চাকা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। বার বার দুর্যোগে বিপযস্ত জনপদটি হয়ে পড়েছে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। যার প্রধান অনুসর্গ হয়ে আছে উপক’লীয় বাঁধের সংস্কার নিয়মিত না হওয়ায়। জীর্ণবাধ বছওে কয়েকবার ভেঙ্গে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষের বাসকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বার বার প্রধানমন্ত্রির হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে স্থায়ী টেকসই বাধ নির্মানের।
গত ২০ মে উপক’লে আঘাত হাতে আমফান। আমফানের ফলে বিধ্বস্থ হয় শ্যামনগর ও আশাশুনির ৫৭ কিলোমিটার ভেড়ী বাধ। পানিতে ভেসে যায় গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুডিগোয়ালীনী, কাশিমাড়ী, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, আশাশুনি সদরসহ ১০ টির অধিক ইউনিয়ন। বাধ ভেঙে শত শত কোটি টাকার কৃষি, মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়। মানুষের বসত বাড়ী বিধ্বস্ত হয়। নোনা পানিতে ধ্বংশ হয়ে যায় খাবার ও ব্যবহারের পানির উৎস্য। প্রায় দু মাস শেষ হতে চললেও এখনো আশাশুনির দ ুইউনিয়নের মানুষের বাড়ীতে পানি উঠা বন্ধ হয়নি। অন্যান্য এলাকার মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে রিং বাধ করে কোন রকমে নোনা পানি উঠা ঠেকাতে পারলেও সম্পদসব গেছে নষ্ট হয়ে। ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষ বার বার দাবী তুলেছে স্থায়ী বাধের জন্য। কিন্তু দশ বছরে কোন বাস্তব সম্মত কাজ হয়নি। বাস্তবে ২০০৯ সালে যে এলাকা গুলো ভেঙ্গে ছিল, এবারও অধিকাংশ সেই একই এলাকা। ভেড়ী বাধ ভাঙা একটি সাধারন বিষয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিযন পরিষদেও পক্ষ হতে বার বার সমস্যাটি উপজেলা পরিষদের মিটিংএ তুলে ধরা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডেও পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি।
উপক’লের ভেড়ী বাধ তৈরী, মেরামতের একমাত্র অথরিটি পাই উন্নয়ন বোর্ড। অন্যকোন দপ্তর এখানে কোন কাজ করতে পারে না। এমনকি স্থানীয় ইউপি, যাদেরকে বেশী কৈফিয়াত দিতে হয় স্থানীয় জনগনের কাছে, তাদেরও বাধে হাত দেওয়ার সুযোগ নেই। এই সুযোগ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোড এর একশ্রেনীর কর্মকর্তারা সাধারন মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ্য সুযোগ গ্রহন করে থাকে। পাউবো এর বিরুদ্ধে সীমাহীন অনৈক ভাবে অর্থ আত্মসাদের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় মানুষদের। অন্যদিকে পাউবোর স্থানীয় অফিসের সহযোগিতায় চিংড়ী প্রকল্প মালিকরা যথেচ্ছার ভাবে উপক’লীয় বাধকে নিজের ঘেরের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা, প্রয়োজনে অপ্রয়োজেনে ভেড়িবাধ কাটা, ফুটো করে, প্রকল্পের নোনা পানি অরিকল্পিত ভাবে নিস্কাশন করা ইত্যাদিও ফলে বাধ ও পরিবেশ ঝুকি তৈরী হয়।
দুর্যোগ ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের জীবন জীবিকা ও প্রশাসনিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। ফলে প্রতিবছর একব্যপক সংখ্যক কর্মবঞ্চিত কর্মক্ষম মানুষ এলাকা থেকে মাইগ্রেট করছে। এলাকাতে নারী প্রধান পরিবার যেমন বাড়ছে, তেমনি শিশু, বৃন্ধ ও প্রতিবন্ধিদের জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এহেন বাস্তবতায় স্থানীয় মানুষের অভিমত, স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই ভেড়ী বাধসহ এ জনপদকে বাস যোগ্য রাখতে সরকার প্রধানের আশু হস্তক্ষেপ জরুরী। স্থানীয় মানুষ মনে করে উপকূলের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সরকার প্রধান কার্যকর ভুমিকা রাখবেন। -

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উপকূলীয় বোর্ড গঠন
আশেক-ই-এলাহী : শৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী এলাকা উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন জন্য একটি শক্তিশালী বোর্ড, অধিদপ্তর বা মন্ত্রানালয় গঠনের দাবী জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ঠ এলাকার সুধী মহলের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ঠদের মতামত যে, দেশের অন্যান্য বিশেষ এলাকা যেমন হ্ওাড়, পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য একক কতৃপক্ষ আছে। তেমনি একটি একক কতৃপক্ষ উপকূলের জন্য দরকার।
বাংলাদেশের উপকূল বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল প্রাকৃতিক ভাবে দেশের অন্য এলাকা থেকে পৃথক। নোনা পানি ও জোয়ার ভাটার কারনে এ এলাকার একটি শৃজনশীল ও পৃথক বৈশিষ্ঠ তৈরী হয়েছে। দুর্যোগ প্রবন এ এলাকা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ঝুকিপূর্ণ। পূর্বে দশ বছরের মধ্যে একবার যে দুর্যোগের মুখোমুখি হতো উপকূল বাসী বর্তমানে তা প্রায় বাৎসরিকে পরিনত হয়েছে। এমনকি কোন কোন সময় এক বা একাধিক দূর্যোগ এক বছওর দেখা গেছে। বড় দূর্যোগের বাইরে অতিরিক্ত জোয়ারের চাপও মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ঝৃঁকিময় করে তোলে। প্রাকৃতিক এ দূর্যোগের ফলে এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা, সম্পদ বার বার ধ্বংশের মুখোমুখি হয়। পরিনতিতে এলাকা দেশের অন্য এলাকাতে দারিদ্রতার হাওর পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষার হারও কম। কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ায় এবং সম্পদ ও আবাসিক এলাকা নিরাপত্তা কম হওয়ার কারনে মানুষের এলাকা ত্যাগের প্রবনতা অত্যাধিক। কর্মক্ষম মানুষের এলাকা ত্যাগের ফলে পরিবারের নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধিদের জীবন খুব দূর্বিসহ হয়ে পড়ে।
উপকূল অঞ্চল দিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সুন্দবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষন তথা এলাকার ইকোলজিক্যাল ব্যবস্থাপনা অধিকাংশ সময় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়। কৃষি, প্রানী সম্পদের দারুন সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় মানুষের উপকারে আসছে না। পর্যটনের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে সম্ভবনাময় এলাকা হলেও কোন সুদুর প্রসারী প্ররিকল্পনা না থাকায় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেনি পর্যটন ক্ষেত্র। অন্যদিকে দূর্যোগের প্রধান রক্ষা কবচ উপকূলীয় বাধ এর তৈরীর পর আর কোন সংস্কার বা গবেষনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি সহনশীল কারার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রায়শঃ বাধ ভেঙ্গে জনপথ প্লাবিত হয়।
সামগ্রিক বিচেনায় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল তথা উপকূলের জন্য পৃথক একটি কতৃপক্ষ কার ছাড়া পিছিয়ে ও ঝুকিতে থাকা এলাকাটিকে উন্নয়ন সমতা নিশ্চিত করে মানুষের বসবাসের উপযুক্ততার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এলাকার সুধি মহল মনে করেন উপকূলে জন্য পৃথক স্বয়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কওর তার মধ্যে উপকূলের বৈশিষ্ঠ অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-মধ্যভাগ চিহ্নিত করে উন্নযন কর্মকান্ডের মাস্টারপ্লান তৈরী করা জরুরী।
স্থানীয় ভুক্তভোগি মানুষ মনে করেন সরকারের নীতি নির্দ্ধারকরা বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে অবিলম্বে পৃথক স্বায়ত্বসাশিত একটি অথরিটি গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। -
আশাশুনির প্রতাপনগরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দেড়মাস পার হলেও বন্ধ হইনি জোয়ার-ভাটা
আশাশুনি প্রতিনিধি: গত ২০ মে আশাশুনি উপজেলায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ওই সময় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার বেশ কিছু এলাকা। তেমনই এলাকা হচ্ছে প্রতাপনগর ইউনিয়ন। আম্পানের ৪২ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতাপনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পানির সঙ্গে বসবাস করা মানুষের চরম দুর্ভোগের চিত্র। শুক্রবার প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রতাপনগর, কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, চিংড়ীঘের, পুকুর, পানির আধার সবকিছুই নিশ্চিহ্ন করে উপকূলবাসীকে নিঃস্ব করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। গৃহহীন জনসাধারন কবে বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে, তা কেউ বলতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত এখনো শুকায়নি, এর ধারাবাহিকতায় আম্পানের হামলায় দিশেহারা মানুষ। জনসাধারণ জানান, গত ২০ মে-’২০ আম্পানে জলোচ্ছ্বাসের পর প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের সবকটি গ্রাম কমবেশি এখনো পানিতে ডুবে আছে। জোয়ার-ভাটা খেলছে ১১টি গ্রামের ওপর দিয়ে দিনে দুবার করে। কাঁচা ঘরবাড়ি একটিও দাঁড়িয়ে নেই।শ্রীপুর গ্রামে ট্রলারে করে যাওয়ার সময় কোনটি খাল, কোনটি নদী, কোনটি মাছের ঘের আর কোনটি ফসলের ক্ষেত, তা বোঝার উপায় ছিল না। সবই পানিতে একাকার প্রতাপনগর পাকা সেতুটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। একই অবস্থা কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুর, সনাতনকাটি, বন্যাতলা, হরিষখালী, চাকলা, কোলা, প্রতাপনগর, রুইয়ারবিল দিঘলারআইট সহ গ্রামের পর গ্রাম। প্রতাপনগর ইউনিয়নের পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদী আর পূর্বে কপোতাক্ষ নদের মাঝখানে গ্রমগুলো জোয়ারের পানিতে ডুবছে আর ভাসছে। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাকনা গ্রামের সাহানারা খাতুন বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে এলাকায় বড় কর্তাব্যক্তিরা এসে প্রতিবারই বলে যান টেকসই বাঁধ হবে। কোনো সমস্যা থাকবে না। আম্পানের আগে গত দুই মাসে তিনবার বাঁধ ভেঙে অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ত্রাণের চেয়ে আগে দ্রুত বাঁধ তৈরির ব্যবস্থা না করলে তাঁদের ঠিকানা পরিচয় সব হারিয়ে যাবে। শ্রিপুর গ্রামের আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, কপোতাক্ষ নদের পাড়ে মাটির ঘর বেঁধে বাস করতেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় তাঁর বসতঘর। আইলার পর বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আইলার সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আম্পানের আঘাতে আবার তাঁরা জর্জরিত। বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, ঘর ভেসেছে, উড়ে গেছে ঘরের চাল। নিত্য প্রয়াজনীয় জিনিসপত্র সব ভেসে গেছে পানির ¯্রােতে। থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই। স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই নেই। শ্রীপুর গ্রামের আবুল কাশেম মোড়ল ও জুলফিকার মোল্যা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন তাঁদের রোজগার বন্ধ। তারপর আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। তাঁরা আশ্রয়
নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, তা অনিশ্চিত। বললেন, দ্রুত বাঁধ তৈরির ব্যবস্থা হলে সবাই বাঁচবেন। প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, এ ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে মাটিতে শক্তি কমে গেছে। ফলে বেড়িবাঁধ টেকসই হচ্ছে না। আইলার পর থেকে প্রায় ৫০০ পরিবার চাকলার উঁচু বাঁধের ওপর বসবাস করছে। তাদের সেই ঠিকানাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে আম্পানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০ স্থান দিয়ে এ ইউনিয়নে পানি ঢুকছিল। ইতিমধ্যে চাকলায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ হয়েছে। তবে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে আগামীতে ভেঙে যেতে পারে। তিনি জানান, হরিষখালীতে বাঁধের একটি স্থানের মেরামতের চেষ্টা চলছে। সাত আট স্থান দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্ল¬াবিত হচ্ছে। আর কত দিন এভাবে ভাসতে হবে আর ডুবতে হবে তা অজানা। সবার আগে টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান গ্রামবাসী। আশাশুনি উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৗশলী নাহিদুর ইসলাম জানান, কুড়িকাহুনিয়ার বাঁধ নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী। আর হরিষখালীর দুটি স্থানে ঠিকাদার কাজ করছে। আর একটি স্থানে ঠিকাদারের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বোপরি এ অঞ্চলের মানুষ টেকসই বেড়ীবাধ এর দাবী জানান। -
আশাশুনিতে ইউএনও’র ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন
আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে ভেড়িবাঁধ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী ভেড়িবাঁধ ভাঙ্গন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি বন্দি মানুষের খোঁজ খবর নেন। পরিদর্শনকালে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং হাজরাখালি, কুড়িকাহুনিয়া সহ যে সমস্ত ভেড়িবাঁধ গুলো ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে সে সমস্ত ভেড়িবাঁধ গুলো টেকসই ও মজবুত ভেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কাজী আব্দুর রহমানকে অবহিত করেন। এ সময় জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, বাপাউবো’র কর্মকর্তা, এসডিও কর্মকর্তা, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল উপস্থিত ছিলেন।
-
একজন দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সাধারণ মানুষের কথা ও প্রত্যাশা
অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীপৃথক সৃজনশীল প্রাকৃতি বৈশিষ্ঠ মন্ডিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলীয় এ অঞ্চলের ভুমি গঠনের সাথে রয়েছে জোয়ার ভাটার প্রভাব। সাগরের লবণপানি আর উজানের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা পৃথক এক প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকার বিকাশ ঘটে। পলি অবক্ষেপনের মাধ্যমে গঠিত ভূমির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার পূর্বে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ করায় ভূমি বসে যেয়ে নদী পাড় অপেক্ষা বাঁধের মধ্যের জমি নিচু হয়ে যায়। পাশাপাশি পলি জমিতে না পড়তে পেরে নদীর মধ্যে পড়ায় নদীর তলদেশও উচু হতে শুরু করে। যা আজ এলাকার জন্য ভয়াবহ অবস্থা তৈরী করেছে।
ষাটের দশকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উপকূল অঞ্চল দিয়ে ভেড়ীবাধ নির্মানের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি জমিতে নোনা পানি উঠা বন্ধ করা ও অধিক ফসল উৎপাদন। কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন কাঠামো গড়ে তোলা। রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষের এ দপ্তরের নাম ছিল ইপি-ওয়াপদা { ইস্ট পাকিস্তান ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভল্পমেন্ট বোর্ড সংক্ষেপে ইপি-ওয়াপদা। পরবর্তিতে পাওয়ার ডেবলম্পমেন্ট বোর্ড কে পৃথক করা হয়। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড – পাউবো কিন্তু এখনো ওয়াপদা নামে সমাধিক প্রচারিত}। উপকুলীয় বাঁধ নির্মানের সময়ে ফসল উৎপাদন, কৃষির ফলন বৃদ্ধি, নোনা পানি ঠেকানো নানান কথা বলা হলেও বলা হয়নি এ বাঁধ নির্মানে এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় কোন বিরূপ ক্রিয়া তৈরী হবে কিনা ? কতদিন নোনা পানির প্রভাব মুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে ?
উপকূলীয় বাঁধ এর নির্মানকালিন ত্রুটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ৭০ দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে ৮২-৮৩ সালে মারাত্মক আকার ধারন করে। কৃষি উৎপাদন নেমে আসে নিন্মস্তরে আর তৈরী হতে থাকে অঞ্চল ভিত্তিক জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে চিংড়ী চাহিদা তৈরী হয়। ব্যবসায়ীরা তখন চিংড়ী উৎপাদনে কৃষি জমির উপর নজর দেন। যে জমিতে সারা বছর শ্রম ও অর্থ ঘাটিয়ে দেড় হাজার টাকা পাওয়া ছিল কষ্টকর সেখানে ৩০০০ টাকা অগ্রিম জমির মালিককে প্রদান করার প্রলোভনে পড়ে বৃহৎ জমির মালিকরা (এ শ্রেনী ছিল সরসরি জমি বিচ্ছিন্ন), চিংড়ী ঘের করার জন্য কৃষি জমি লীজ প্রদানে আগ্রহী হয়ে উঠে। ফলে ক্ষুদ্র কৃষক, মাঝারী কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও অল্প জমির মালিকরা বিপদে পড়ে। এসময় এলাকাতে চিংড়ী বিরোধী আন্দোলনও গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা অবস্থায় বাঁঁধ বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রধান অনুসংগ হিসেবে আজ উপক’লীয় বাঁধ প্রতীয়মান। আর সে কারনে স্থায়ীত্বশীল পরিবেশ বান্ধব, জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু বাঁধ নির্মানের দাবী দক্ষিণ পশ্চিম উপক’লীয় ভুক্তভোগিক সকল পর্যায়ের মানুষের।
মুলতঃ উপক’লীয় বাঁধ নির্মানের পিছনে বৈশি^ক অনৈতিক বানিজ্যিক আকাংখায় কাজ করে। ফলে ষাটের দশকের নির্মিত উপকূলীয় বাঁধ তৈরীর ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ, নদীর প্রবাহ, ভুমি গঠন প্রক্রিয়া, পলি অবক্ষেপন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ঠ এলাকার জীববৈচিত্র ইত্যদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় না। নদীর সাথে প্লাবনভুমির সংযোগ খাল সমুহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। নদীর মধ্যে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া, কোথাও প্রবাহবান নদীর দু মুখ বেধে দেওয়া হয়। অভ্যন্তরিন যে গেট সমুহ নির্মাণ করা হয়, তা আকারে অনেক ছোট । এবং শুধু মাত্র একমুখ ফ্লাসগেট তৈরী করা হয়।
ভেড়ী বাঁধ নির্মানের পে এটিকে টেকসই করা বা কোন জটিলতা ঘটলে নিরসনের পন্থা বিষয় নিয়ে কোন স্থায়ীত্বশীল কর্মপন্থা প্রস্তুত করা হয় না। পাউবোর মত অনুযায়ী, প্রতিবছর বাঁধের ১০ হতে প্রায় ২০ পার্সেন্ট পর্যন্ত মাটির ক্ষয় হওয়ার প্রবনতা থাকে। অন্যদিকে চিংড়ী চাষের কারনে বাঁধের অপ-ব্যবহার করা হয়। নিবিচারে বাঁধ কাটা, নিজেদের মত নিজস্ব পানি উত্তোলন পথ নির্মাণ, নদীর চরের বনাঞ্চল ধ্বংশ করা কারনে বাধঁ পুবোপুরি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ২০০৯ এর আইলায় দেখা যায় যেখানে যেখানে চিংড়ী ঘেরে পানি উত্তোলনের জন্য ভেড়ীবাধ কাটা হয়েছিল, সেই সকল স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। পাউবোর কিছু বিধি আছে বাঁধকে এ ধরনের অপ-ব্যবহার রোধ করার জন্য। কিন্তু পাউবোর অসৎ ব্যবস্থাপনা এ সকল বিধিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে চিংড়ী চাষ বিরোধী সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে।
বাঁধ ভাঙ্গন একটা নিত্য সঙ্গি হলেও ২০০৭ সিডোর ও ২০০৯ এর আইলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে ভঙ্গুর বাঁধ ব্যবস্থাপনার অবস্থা মানুষ অনুধাবন করা শুরু করে। বিশেষ করে ২০০৯ আইলার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্থায়ী বাধ নির্মানের প্রয়োজনীয়তার দাবীটি প্রাধান্য পায়। ২০০৯ মে তে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নভেম্বরের মধ্যে নির্মান করা হবে বলে প্রত্যশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু ডিশেম্বর শেষে এসে যখন বাঁধ নির্মানের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হয়, তখন স্থানীয় ভুক্তভোগি মানুষের নেতৃত্বে ‘আইলা বিধ্বস্থ বাঁধ নির্মান গণ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ভাঙ্গা বাধ নির্মানের দাবী বাস্তবায়নের দাবী তোলা হয়।এ কমিটির উদ্যোগে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ১০ জানুয়ারী২০১০ প্রথম সংবাদ সম্মেলন কওে বাধ নির্মানের দাবী করা হয় এবং ১৪ জানুষায়ী ২৪ ঘন্টায় দু বার জলে ডুকে যাওয়া গাবুরা পদ্মপুকুরের হাজার মানুষ শ্যামনগর সদরে বাঁধ নির্মানে দাবীতে মানব বন্ধন করে। এখানে তৎকালিন সাতক্ষীরা -৪ এর এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আসেন এবং দ্রুত বাধ ভেঙ্গে থাকা স্থান সমুহ সংযুক্ত কওে মজবুত স্থায়ী বাধ দেওয়ার উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেন। এর পর থেকে প্রতিশ্রুতি আসতে থাকে। আন্দোলনের তীব্রতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপন্ াসংসদীয় কমিটি, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ঠ বক্তিরা আসেন আর প্রতিশ্রুত ব্যক্ত করেন। কিন্তু কাজের গতি না হওয়ায় মানুষের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সাতক্ষীরা গণ অনেশন, ঘেরাওসহ সকল ভুক্তভোগি মানুষর কর্মসুচির সাথে স্থানীয় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানায়। এ সময় দাবী তোলা হয় প্রধানমন্ত্রিকে দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনের। জনদাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রি ২৩ সেপ্টেম্বর১০ শ্যামনগরে আসেন। নকিপুর হরিচরন হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি ১৫ জানুয়ারী ১১ মধ্যে বাধ নির্মান সম্পন্ন হবে বলে ঘোষনা দেন। কিন্তু বাঁধের ভাঙ্গা সমুহে ক্লোজার দিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে মধ্যে নির্মান শেষ হয়।
বাঁধ নির্মানের আন্দোলন দু পবে বিভক্ত করা যায়। ২০১০ হতে ২০১৪ পর্যন্ত এবং ২০১৬ থেকে ২০২০। প্রথম পর্বে শুধু আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ সংস্কারের দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে সাতক্ষীরাতে আইলা বিধ্বস্থ বাধ নির্মান গণসংগ্রাম কমিটি ও খুলনাতে আইলা সংহতি পরিষদ এবং ঢাকাতে সিএসআরএল এর নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন করা হয়। এ সময় স্মারক লিপি প্রদান, সমাবেশ, মানববন্ধন, নীতি নির্দ্ধারকদের সাথে ঢাকাতে সংলাপ, গণশুনানী, খুলনা-৫, খুলনা-৬ এর এমপি মহোদয়দের ঢাকাতে সংলাপ, টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নেওয়া, ঢাকা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে প্রথীক অবস্থান, থালা বাসন নিয়ে পিকসারপ্যালেসের সামনে ভুক্ষাদের অবস্থান, জাতীয় দৈনিকে জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন, সকল তথ্য নিয়মিত প্রধান মন্ত্রির দপ্তরে সংরক্ষন, ৩০ হাজার পোস্ট কার্ডএ ভুক্তভোগিদের প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি, দুযেৃাগ মন্ত্রি, পরিবেশ মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী, জাতীয় বিশেজ্ঞ নেতৃৃন্দেও সাথে স্থানীয় ভুক্ত ভোগি মানুষদের সংলাপ প্রভৃতি । এ পর্যায়ে বাধের ডিজাইন পরিবর্তন করা ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ নির্মানের দাবীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্বে আন্দোলনটি দেশের খ্যাতনামা গবেষকবৃন্দ যুক্ত করে শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) কয়রা (খুলনা)তে বাঁধ, খাওয়ার পানি সহ স্থানীয় প্রধান সমস্যগুলো সামনে নিয়ে আসা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি সমুহ চিহ্নিত করা হয়। যেখানে স্থায়ী বাঁধ ও নিরাপদ পানিকে গুরুত্ব প্রদান করে দলিল তৈরী করা হয়। এ র্পায়ে উপক’ল ও উত্তোর বঙ্গেরবাধ নিয়ে যৌথ সামাজিক আন্দোলন শুরু করা হয়। এ আন্দোলনের সুচনা স্থানীয় জলবায়ু পরিষদ’র নেতৃত্বে করা হয়। এক্ষত্রে স্থায়ী বাধ নির্মান ও বাঁধ তদারকির সাথে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করা এবং প্রধান সমস্যা হিসেবে সুপেয় পানির চাহিদাকে চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায়ে ৩০ জন ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, তিন জন জাতীয় সংসদ সদস্যদেও মাধ্যমে জাতীয় সংসদে বক্তব্য প্রদান, জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নীতি নিদ্ধারকদের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংলাপ ইত্যাদি।
ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের ফলে আমফানের পরে প্রধান সমস্যা হিসেবে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী প্রচারনার প্রথমে চলে আসে। নিরাপদ পানির সংকটও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের কর্মসুচি বাস্তবায়ন কতৃপক্ষকে মূল কর্মসুচি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভবনা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। সফলতার জায়গা হচ্ছে এতদিন শ্যামনগর, কয়রার মানুষের প্রধান দাবী থাকলেও শহর কেন্দ্রিক নাগরিক আন্দোলনের দাবীর সাথে এটি কম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল কিন্তু এ বাওে প্রথম থেকেই সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি স্থায়ী বাধ নির্মানের দাবীকে এক নম্বও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত কওে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। যা সাতক্ষীরা সকল সুধি ও প্রশাসনকে দাবীর পক্ষে ঐক্যমত্য হতে সহায়ক হয়।উপকূলের প্রধান সমস্যা সমুহ বলতে গেলে আজ চিহ্নিত। প্রয়োজন এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে যথাযত কতৃপক্ষের কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ। এক্ষত্রে জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রির হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে কোন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ফলে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের স্থায়ীত্বশীল টেকসই ভেড়ী বাধ নির্মান ও নিরাপদ পানির স্থায়ী সমাধান বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রিও হস্তক্ষেপ এর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সৃষ্টি। আর এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ সৃষ্টি কর্মসুচি।
জলবায়ু পরিবর্তরেনর ঝুঁকি এর আজ উপক’লের একটি জীবন্ত সমস্যা। উপক’লের মানুষদের এ ঝুঁকির সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে হবে। বড় প্রাকৃতিক দুযোগ বাদ দিয়েও নদীর জোয়ারের পানির প্রভাবে প্রায়শঃ বাঁধ ভেঙ্গে এলাকার সকল উন্নয়ন জীববন-জীবিকাকে ধ্বংশ করে দিয়ে থাকে। গত দশ বছরে শুধু পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের ভেড়ীবাধ ভেঙ্গেছে ১০ বারের মত নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে, ১৮টি অধিক স্পটে। ফলে বর্তমান ভঙ্গুর বাঁধ দিয়ে কোন মতেই উপক’লের জীবন-জীবিকা ও সরকারী উন্নয়ন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
পাউবোর নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমুহ একমাত্র উপক’লীয় ভেড়ীবাধে কাজ করার অধিকার প্রাপ্ত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিজেরা কাজ করে না। লীজ, সাব লীজ কখনো কখোনো লেবার সরদার দিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে। কাজের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যান্ত নিন্মমানের হয়। আবার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে না পাওয়ায় কাজের বিষয়ে কথা কলার সুযোগও থাকে না। পাউবো ঝুকিপূর্ণ বাধ নিয়ে বার বার স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ হতে তাগাদা দিলেও কোন কাজ কওে না। তাদের নিয়ম বাধ ভেঙ্গে গেলে তবে দরপত্র প্রদানের মাধ্যমে কাজ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ কাউকে কাজের বিষয়ে জ্ঞাত করা হয় না।
বর্তমান আম্ফানে ভেঙ্গে যাওয়া অধিকাংশ স্থানগুলো স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে জনগন স্বর্তফুর্ত ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাধ দিয়ে পানি আটকেছে। বরাবরেরমত পাউবো একইস্থানে ডিপিএম এর মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ কয়েক সপ্তাহ ধরে পানির সাখে লড়াই করে যে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পানি আটকালো তাদেও নুন্যতম আর্থিক সহযোগিতা করা বা নুন্যতম আলোচনা করার ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে ৬৬ সালে বাঁধ নির্মান সম্পন্ন হওয়ার পর হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আজকের অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে অগনিতবার বাঁধ ভেগে গেছে। বাঁধ ভেগে গেলে বাধ সংলগ্ন এলাকার মানুষদের জমি ছেড়ে দিয়ে পিছনে চলে আসতে হয়। ভাঙ্গন থেকে শত শত মিটার পিছন দিয়ে রিং বাধ কার হয়। এ রিং বাধ করার জন্য যাদেও জমি নেওয়া হয় বা বাধ ভেঙ্গে নদীর গর্ভে যাদেও জমি চলে যায় সে সকল ক্ষতিগ্রস্থ বা নিঃশ^ মানুষদেও ক্ষতিপূরনের কোন ব্যবস্থা পাউবোর নেই। অথচ সরকারের সকল নির্মানে ক্ষতিপূরন করার বিধি ব্যবস্থার আইন রয়েছে।
সামগ্রিক বিচেনায় পাউবোর ভেড়ী বাধ ব্যবস্থার পদ্ধতি, নিয়মিত সংস্কার ও তদরকির বিষয় দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লীয় অঞলের জীববৈচিত্র, প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির আলোকে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয় দাবী একজন উপক’লের মানুষ হিসেবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। গবেষনা ভিত্তিক নয়, অভিজ্ঞার আলোকে স্বচোখে দৃশ্যমান সংকটের নিরসনে নিন্ম লিখিত প্রস্তাব সমুহ দাবী হিসেবে উপস্থাপন ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করার প্রয়োজনী কর্মসুচি গ্রহণ জরুরী।
১. দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’ল তথা উপক’লের জন্য পৃথক একক কতৃপক্ষ তৈরী বা গঠন
২. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে
৩. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারকে প্রদান ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে;
৪. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে;
৫. বাধঁ ভেঙ্গে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ জমি ও মানুষের তালিকা প্রস্তুত ও প্রয়োজনীয় ক্ষতি পূরন প্রদান ও পূর্ণবাসন করতে হবে।
৬. . জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে;
৭. পাউবো কতৃক টেন্ডার পদ্ধতি পরিবর্তনসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৮. উপক’লে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির স্থায়ী সমাধানের পন্থা জাতীয় নীতিমালায় সম্পৃক্ত করা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. উপক’লের সাথে যুক্ত সকল মন্ত্রনালয়কে সংযুক্ত করে আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে (ভুমি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, পানি সম্পদ, জলবায়ু ও পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, স্ব-রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মন্ত্রনালয়)
১০. বিশেষ দুর্গত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা ও বিশেষ বরার্দ্দ এডিবিতে রাখা। -

বৃষ্টি আরও ৩ দিন, ভূমিধসের শঙ্কাও
জার্নাল ডেস্ক
সাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত আরও ৩ দিন থাকতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
এছাড়া দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা আছে- মৌসুমী বায়ুর অক্ষ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
এই সময়ে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
-

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘুর্নিঝড় আম্পান দুর্গত এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ
এলাকা ঘোষনা, উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, ঝড়-জলোচ্ছাস,
নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষকে
রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে
জেলা নাগরিক কমিটি। সোমবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে
বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, মমতাজ আহমেদ বাপী,
এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, আবুল হোসেন, আব্দুল
বারী, এম কামরুজ্জামান, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছাস ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর বাঁধ
ভেঙে প্লাবিত হওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত
যুদ্ধ করে চলেছে। এক সময় অন্য জেলা থেকে লোক না এলে এ এলাকার ধান কাটা
হতো না সেই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের নানামুখি উদ্যোগ নেয়ার সত্বেও এই এলাকায় দারিদ্র
পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষাসহ অন্যান্য সূচকেও এই এলাকা
পিছিয়েই থাকছে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
মানববন্ধন থেকে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ
প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন এবং
সেই অথরিটিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এবং বিভিন্ন
দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর
প্রদান করা হয়। -

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধ ব্যবস্থাপনা
জিয়াউল হক মুক্তা
বাংলাদেশে কিছু হলেই আজকাল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়; এতে নিঃন্দেহে তার ওপর বাড়তি দায়বদ্ধতা ও চাপ আরোপ করা হয়। তার পরও তাকে উদ্দেশ করেই এই লেখা। লিখছি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। শুধু একটি এলাকার বাঁধের কথাই বলছি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে, আমাদের আইলা-পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রেক্ষাপটে রেখে।
একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৯ সালে আইলার পরপরই দ্রুততর-পুনর্বাসন কার্যক্রমের তদারকি করতে গিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও এর ইউনিয়নগুলোর সকল চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর-মেম্বার ও ভুক্তভোগী জনগণ এক আলোচনায় আমাকে জানান যে তারা ত্রাণসাহায্য চান না, বরং চান যত দ্রুত সম্ভব আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত, যাতে তারা ঘরে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ প্লাবিত, ঘরবাড়ি জমিজিরাত ফেলে বিভিন্ন বাঁধ ও সড়কের অস্থায়ী ঝুপড়িতে আর বিভিন্ন শহরের বস্তি এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন।
আইলার আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ও খুলনার কয়রা উপজেলার বাঁধগুলোর অনেক স্থানে ভেঙে গিয়েছিল: যেগুলোর কিছু মেরামত করা সম্ভব হলেও শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকার ভাঙনগুলো মেরামত করতে আমাদের বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএলের পক্ষ থেকে আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্থানীয়, জেলা, বিভাগীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে ও ইউএনও-ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
অগত্যা আমাদের সংবাদ সম্মেলন, মিডিয়া ভিজিট, সমাবেশ, মিছিল, বাস্তুচ্যুতদের শোভাযাত্রা, কলসি নিয়ে সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট আর খুলনায় সাত দিনব্যাপী আইলা-মঞ্চ সংগঠিত করতে হয়েছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলী পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট ২৪ জনকে আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বাঁধ ভাঙন-মেরামত আর ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন-অভিবাসন বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার সমস্ত সংবাদের কপি পাঠিয়েছি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আর তার সারবক্তব্য পাঠিয়েছি ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে। নিজে তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির সঙ্গে দেখা করেছি দু’বার। আমাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি ওইসব এলাকায় পরিদর্শনেও গিয়েছেন।
তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাউবোর খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে পাঁচবার কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বিভাগীয় প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছিল দু’বার। আমাদের অনুরোধে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল বাঁধ মেরামতের জন্য। কিন্তু তারও কোনো সুষ্ঠু ব্যবহার হয়নি। এজন্য মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তার দ্বিতীয় পরিদর্শনে প্রকাশ্যে-জনসমক্ষে উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছিলেন।
সবশেষে, অগত্যা আমরা বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরের সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন; তারা বাঁধ মেরামত করেছিলেন এবং তিনি নিজে সে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উপরন্তু পরিবারপিছু ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিলেন ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য।
ষাটের দশক থেকে নির্মিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধগুলোর একটা সমস্যা আছে। এগুলোর ডিজাইনে জোয়ার-ভাটাকে বিবেচনায় না নেওয়ায় নদীর তলদেশগুলো উঁচু হয়ে গেছে; ফলে নদীর বাইরের বসতভিটা-জমিজিরাতের উচ্চতা নদীপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে কমে গেছে; আর তার ফলে বাঁধ ভাঙনের মতো ঘটনা ঘটলে সহজেই বসতভিটা-জমিজিরাতে দিনে দু’বার নদীর লবণ-পানি ঢোকে আর বেরোয়; আর তার ফলে ভাঙনগুলো আরও প্রসারিত হতে থাকে। আগে প্রয়োজনে পানি ঢোকানো আর বের করার জন্য স্লুইচগেট ছিল, দেখভালের জন্য লোকও ছিল; বর্ণিত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সে লোকবলও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পাউবো বাংলাদেশের বাঁধগুলোর নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এর কাঠামোগত সমস্যা হলো ভাঙন-নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মেরামতের জন্য বাজেট তৈরি করে প্রকল্প দাখিল করলে এটা সরকারের বরাদ্দ পায়; এ প্রক্রিয়ায় বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু বাস্তবে ভাঙন একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা, কোন ঘূর্ণিঝড়ে কোন বাঁধের কোথায় কতটুকু বিস্তৃতিতে ভাঙবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। এ কাঠামোগত বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার ফলে পাউবো বাঁধ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এর ফলে অবশ্য তাদের দুর্নীতি করার সুযোগও বেড়ে যায়।
বাঁধগুলো ভেঙে যায় প্রধানত সেসব স্থানে যেখানে এটা দুর্বল থাকে। নিজে অসংখ্য স্থানে ঘুরে ঘুরে বাঁধগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। বাঁধগুলো দুর্বল হয় মূলত দুই জায়গায়; যেখানে বাঁধ ফুটো করে পাইপ ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের জমিতে পানি আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, আর যেখানে নলকূপ বসানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় ক্ষেত্রে পাউবোর কর্মকর্তারা চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা পান।
আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা। বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের যারা ঠিকাদার, তারা স্থানীয় নন। ফলে যে ঠিকাদার কাজ পান, তিনি ‘বিক্রি’ করে দেন আরেক ঠিকাদারের কাছে। আবার তিনি আরেকজনের কাছে। এভাবে ঠিকাদার রি-চক্রে বাঁধের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট কাজটি আর হয় না; ড্রেজিংয়ে যেমন তেলচুরি, বাঁধ সংস্কারেও তেমনি মাটি চুরি হয়। নদীতে বা বাঁধ-ভাঙন স্থানে মাটি ফেলার হিসাব রাখার কোনো উপায় নেই। বাঁধের উচ্চতা, উপরে-নিচে তার প্রশস্ততা ও বরাদ্দের তথ্য দিয়ে আমরা একবার ৩০টি স্থানে সাইনর্বোড স্থাপন করেছিলাম, যদিও তা পাউবো বা ঠিকাদারের করার কথা, ঠিকাদাররা সেগুলো তাদের নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে অপসারণ করেছিল।
দুর্যোগকালে বসতভিটা-জমিজিরাত রক্ষায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগে জনগণ সবার আগে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে যান। এসময়কালে আমরা দেখেছি, চেয়ারম্যান-মেম্বার-জনগণ সকলে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মজুরের মতো গায়ে-গতরে খেটে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। তারা কখনও সফল হন, কখনও হন না। তাদের পরিশ্রমকে নিজেদের কাজ বলে চালিয়ে দেয় পাউবো। আম্পান-পরবর্তীকালেও জনগণ ও স্থানীয় সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁধ মেরামত করেছেন। এর বাইরে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে পাউবোও কাজ করছে; শ্যামনগরের কাশিমারী ইউনিয়নে রিং বাঁধের কাজ অংশত সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন এখনও পুরোটা প্লাবিত। এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আশা করছি।
আর দীর্ঘমেয়াদে, আমরা দাবি করছি, ১. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের কাজ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে প্রদান করতে হবে ও তার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে; ২. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে; ৩. রিং বাঁধের বাইরে জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও পুনর্বাসন করতে হবে; ৪. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে; ৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে; ৬. সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
এসব প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করেছি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ও সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দুটি শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ক্ষমতাসীন দল ও জোটের সংসদ সদস্য ও সংশ্নিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি, অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি আর ভুক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে।
সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএল