Category: অর্থনীতি

  • কারোনার কারণে আর্থিক সংকটের মুখে পড়বে পুরো বিশ্ব

    কোভিড নাইনটিনের কারণে চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যের যে ক্ষতি হবে, তা ২০০৮ সালের চেয়েও ভয়াবহ হবে।এ সংকট ১৯৩০ সালের চেয়েও প্রকট হতে পারে। এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। বাণিজ্যের ক্ষতি নতুন করে আর্থিক সংকটের মুখে ফেলবে পুরো বিশ্বকে। বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতি কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না বলেও সতর্ক করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।

    করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ কমতে পারে ১৩ থেকে ৩২ শতাংশ। যদি এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যের তিন ভাগ কিংবা তার বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে ডব্লিউটিও।

    সুত্র:দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ডেস্ক

  • কভিড-১৯ মোকাবিলায় আর্থিক বিষয়াবলিকভিড-১৯ মোকাবিলায় আর্থিক বিষয়াবলি-হাসান মেহেদী, জিয়াউল হক মুক্তা ও নুরুল আলম মাসুদ

    কভিড-১৯ রোগে বিপর্যস্ত পৃথিবী। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক মাথাপিছু আট লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাষ্ট্র, তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাজ্য আর দুই লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দকারী ইতালিতে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝা যায়। আর ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সম্মেলন, জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন, অলিম্পিক গেমস ও বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ সম্মেলনসহ বহু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সভা। বিশ্বের বেশিরভাগ সীমান্ত বন্ধ এবং দুই-তৃতীয়াংশ শহর হয় অবরুদ্ধ অথবা চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোর কথা ভাবাই যায় না। একটাই আশার কথা, সরকারি হিসাব অনুসারে আমাদের দেশে রোগটি একটু দেরিতে ছড়াচ্ছে। এই অতিরিক্ত সময়টুকু ব্যবহার করতে পারি কিনা, তার ওপরই নির্ভর করছে এই মহামারি আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ হবে।
    ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, স্বাস্থ্য সংশ্নিষ্ট অবকাঠামোর ঘাটতি ও বায়ুদূষণ আমাদের বড় পরীক্ষার সামনে ফেলতে পারে। এ ছাড়া কৃষিসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠী যারা খাদ্যের জন্য নিরন্তর লড়াই করে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি না থাকলে পুরো জাতির সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। সামনের মাসগুলোয় ব্যাপক খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা সতর্ক করেছে। নিকট ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। শুধু খাদ্য নয়, বরং শিল্পপণ্যের আমদানি-রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত তিন মাসে তিন লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন এবং নতুন শ্রমিক অভিবাসনও বন্ধ হয়ে গেছে; এ বছর মার্চ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ কোটি ডলার।

    কিন্তু আস্থা রাখার মতো আছে অনেক কিছু। আমাদের আছে প্রধানমন্ত্রীর নেতেৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিন্যস্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। সারাদেশের কমিটিগুলোয় প্রায় দেড় লাখ দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি জড়িত। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আপৎকালীন আশ্রয়কেন্দ্র আছে। এগুলোয় হাজারেরও বেশি রোগীকে আশ্রয় দেওয়া যায়। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সুনাম আছে; অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা বিপুল। দেশের ৮১ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে, যা ভেন্টিলেটর ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি চালাতে সাহায্য করবে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে দু’জন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মী আছেন, যারা সামান্য প্রশিক্ষণেই দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকা নিতে পারবেন। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও আছে বড় আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ইউনিয়ন থেকে আসা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
    এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সারাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি সংগঠন রয়েছে- যাদের কর্মীদলে আছেন ১০ লক্ষাধিক পেশাগত কর্মী। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল হলেও আমাদের আছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষিত তরুণ, যারা সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়ক হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবীরা যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
    আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কিছু জাতীয়তাবাদী সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সহমর্মিতা দেখা যাচ্ছে। চীন ও কিউবা অনেক দেশে স্বাস্থ্যকর্মী ও জরুরি উপকরণ দিয়ে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশও নিজের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কভিড-১৯ মোকাবিলায় চীনকে আপৎকালীন সহায়তা করা ছাড়াও সার্ক তহবিলে ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহূত ভেন্টিলেটরের সূত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক। রোগ উপশমে কোনো অগ্রগতি হলে চিকিৎসকরা সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছেন। টিকা আবিস্কারের প্রক্রিয়ার তথ্য উন্মুক্ত হওয়ায় টিকা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন সব দেশের বিজ্ঞানী।
    কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন জরুরি অর্থ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশে যেখানে বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান সত্যিই কঠিন। চলমান অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা; মাথাপিছু মাত্র এক হাজার ৫৬০ টাকা। অন্যান্য উপখাত ও প্রকল্পগুলো যোগ করলে এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৫০ টাকা; যা ভারতে ৫ হাজার ৭৫৬ টাকা ও শ্রীলংকায় ১৩ হাজার ১৩ টাকা। শ্রীলংকার কথা বাদ দিই; এ সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমান বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হলেও আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ৬৯ হাজার কোটি টাকা দরকার।
    এ বছর খাদ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত যুক্ত করলে মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮৮ টাকা। ভারতে এই বরাদ্দের পরিমাণ তিন হাজার ৬২০ টাকা। দুর্যোগকালে দারিদ্র্যসীমার নিচের তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ভারতের সমান বরাদ্দটুকু নিশ্চিত করতে হলেও এই খাতে আরও ১৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
    এ বছর খাদ্য আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কৃষি খাত থেকেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় কিনা, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কৃষি খাত দেশের সব থেকে বড় শ্রম খাতও বটে। এ খাতে বিনিয়োগের অর্থ চূড়ান্ত বিচারে স্থানীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু রাখতে ভূমিকা পালন করে। এ বছর কৃষি খাতে বরাদ্দ ১৪ হাজার কোটি টাকা মাত্র। প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ কৃষকের জন্য মাথাপিছু বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র সাত হাজার ৮০৫ টাকা। বাজারের ধাক্কা সামলে কৃষক-পরিবারগুলোকে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সেচ, বীজ ও সারের জন্য সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষক যে নতুন ফসল ঘরে তুলবে তার জন্য এখনই জরুরিভাবে ফসলের নূ্যনতম লাভজনক মূল্য ঘোষণার পাশাপাশি সরকারি ক্রয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে কভিড-১৯ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকা দরকার।
    এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৮৫০ কোটি টাকা (১০ কোটি ডলার) অনুদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পেশ করে। গত ৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক সাড়ম্বরে প্রচার করল, তারা বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করছে। এ বিবৃতি ডাহা মিথ্যে। বিশ্বব্যাংকের এই সাহায্য কোনো অনুদান নয় বরং তাদের ঋণ ব্যবসার অংশ। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে সাধারণত বার্ষিক ০.৫ থেকে ১.৫ শতাংশ হারে ঋণ পাওয়া যায়। অথচ বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ৩০ বছর মেয়াদি দুর্যোগকালীন এই ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ, যা সাধারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদের চেয়েও ০.৫ শতাংশ বেশি। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তিন লাখ ডলার অনুদান অনুমোদন করেছে, যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০টি পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কেনা যায়। এডিবি প্রদত্ত ঋণের পরিশোধযোগ্য সুদের হিসাব করলে এটি গরু মেরে জুতো দানের শামিল।
    এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক দেনার পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা (৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার), এ অর্থবছরে যার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৫২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী এই মহাদুর্যোগের সময় বৈদেশিক দেনার কিস্তি স্থগিত করে বিপুল আর্থিক ঘাটতি আংশিক জোগাড় করা সম্ভব। কোনো এক অসাবধান মুহূর্তে সেই পথও দেখিয়ে দিয়েছে স্বয়ং বিশ্বব্যাংক; পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি ধনী দেশের (জি-২০) অনলাইন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এক যৌথ বিবৃতিতে গরিব দেশগুলোর ঋণের সুদ স্থগিত করার জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানায়।
    কভিড-১৯-এর ধাক্কায় বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঋণের কিস্তি শোধ করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি। জুবিলি ডেট মুভমেন্টের পক্ষ থেকেও বহুজাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে ঋণের কিস্তি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আফ্রিকার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও একই দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ দাবিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় দুর্যোগ আইন কার্যকর করে ব্রাজিল অন্তত আগামী ছয় মাস কোনো বৈদেশিক দেনা শোধ করার সামর্থ্য নেই বলে ঘোষণা করেছে।
    বৈদেশিক ঋণের সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি বাতিল করা উচিত জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা চার্জ (ক্যাপাসিটি চার্জ), যা এ বছরের বাজেট অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ভাড়াভিত্তিক ও স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এই অর্থ নিয়ে যায়। বাংলাদেশের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে, তাতে এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বছরব্যাপী সরবরাহে ঘাটতি হবে না। ইতোমধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ও কার্যক্ষমতা দুটোই ফুরিয়ে গেছে। দেশীয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উচিত অন্তত আগামী ছয় মাস সব ব্যক্তিগত ঋণের সুদ ও কিস্তি স্থগিত করা। ইতোমধ্যে ইতালি, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরও) নির্দেশনায় ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় স্থগিত করেছে; এসব প্রতিষ্ঠান যেসব সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদেরও উচিত দুর্যোগকালীন সময়ের সুদ ও কিস্তি মওকুফ করা।
    বৈদেশিক ঋণ ও সক্ষমতা চার্জের সর্বমোট ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি খাদ্য সরবরাহ ও কৃষি খাতে সহায়তা করতে হবে। তার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী দেশে অতি দ্রুত ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করতে হবে, যা একই আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের অধিকার প্রদান করবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে গঠিত কমিটিগুলো অবিলম্বে সক্রিয় করা প্রয়োজন।
    দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, চিকিৎসক ও সব যন্ত্রপাতিসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো দুর্যোগকালীন অধিগ্রহণ করে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিচ্ছিন্নকরণ (আইসোলেশন), সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) বা পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়াও বেসরকারি হোটেলও অধিগ্রহণ করেছে। কভিড-১৯-এর দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ সেগুলো মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের আনতে হবে বড় আকারের বীমার আওতায়, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও প্রণোদনা দেবে।
    দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলায়, এমনকি জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির জন্য দরকার ব্যাপক পরিমাণে সুরক্ষা সরঞ্জাম ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি, যে ক্ষেত্রে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোয় ঘাটতি আছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটরের নির্মাণসূত্র উন্মুক্ত হওয়ায় যে কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি এগুলো তৈরি করতে পারবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি কোম্পানি ওয়ালটন ভেন্টিলেটর উৎপাদন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিকে জরুরি ভিত্তিতে ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন নিয়মানুবর্তিতা দেখানোর নির্দেশ দিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্সের মানের কথা ভুলে গিয়ে দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা, ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো, স্বেচ্ছাসেবীদের চিহ্নিত, তালিকা করা ও সংশ্লিষ্টদের ২-৩ ঘণ্টা মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে জরুরি সময়ে সবাই মিলে ভূমিকা পালন করা যায়।
    আশা করছি, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়াবে না কিন্তু আমরা অন্যান্য দেশের সবচেয়ে ভালো উদাহরণগুলো ব্যবহার করে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকব। তাহলেই দুর্যোগের পাশাপাশি মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ পৃথিবীতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ জন্য বাংলাদেশে কভিড-১৯ সংক্রমণকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল ও সারাদেশে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয়করণের বিকল্প নেই।
    হাসান মেহেদী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট
    জিয়াউল হক মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল)
    নুরুল আলম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক, খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)

    সুত্র : সমকাল

  • গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে হবে

    কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ

    গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে হবে

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাযুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যেমনটি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ছিলেন। করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং মানব স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির চলমানতা বজায় রাখতে রোববার প্রধানমন্ত্রী একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। জাতীয় আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৭৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এর অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে- সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ, বড় শিল্পে চলতি মূলধন, কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা এবং অন্যান্য।
    এখন বাস্তবায়নের পালা। অতীতে অনেক সময় বাস্তবায়নে নানা রকম ঘাটতির কারণে বিভিন্ন ভালো কর্মসূচির পুরোপুরি সফলতা পাওয়া যায়নি। এবার যেন সে রকমটি না ঘটে, সেদিকে সংশ্নিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এ রকম হুঁশিয়ারি তিনি কিছুদিন আগেও উচ্চারণ করেছেন। তার এই হুঁশিয়ারি এবং করোনাভীতি এসব বিপথগামীকে সৎ পথে থাকতে যেন সহায়তা করে। তবে যদি কেউ বিপথগামী হয় তাদের জন্য শাস্তির বিধান করতে হবে।

    প্রথমে যা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে তা হলো, করোনা সংক্রমণ যাতে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করতে না পারে। সেই লক্ষ্যে প্রচলিত ব্যবস্থাগুলো আরও ব্যাপক ও কার্যকর করার দিকে অব্যাহত ও জোরদার নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। 

    দেখা যাচ্ছে, রোগী করোনা লক্ষণ নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এটা চলতে পারে না, একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

    আশা করা অবশ্যই সমীচীন হবে যে, এই বিশ্ব মহামারি বাংলাদেশে বেশি ছড়াবে না; কিন্তু ছড়াবে ধরে নিয়ে তা রোধকল্পে প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে প্রস্তুতি না থাকায় কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। কাজেই প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো দ্বিতীয় চিন্তার সুযোগও নেই।

    এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতা আছে দেশের এমন সব প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে এমন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আরও অনেক বেশি হতে পারে, এ রকম সুযোগ আছে। যে প্যাকেজ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী সেটি বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকিং খাত এবং সংশ্নিষ্ট অন্যদের দায়িত্ব হলো, দ্রুত বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হতে হবে। যেখানে শিল্প শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা, বাস্তবে যেন সে রকমটি ঘটে।

    কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। ঋণ দেওয়া হবে প্রকৃত অর্থে ৪ শতাংশ সুদহারে। ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ সরকার দেবে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। কেননা, এ খাতটি প্রায়ই অবহেলিত থেকে যায়। তবে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মকাণ্ড। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা এবং শ্রমিক সংখ্যা ২৫ থেকে ৯৯ জন। আর মাঝারি শিল্প আরও অনেক বড়।

    অন্যদিক কুটির এবং অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও ব্যবসা অনানুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড। এগুলোই সারাদেশে গ্রামগঞ্জে ও শহরে ছড়িয়ে আছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাঙ্গা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এগুলো বিশেষ অবদান রাখছে। শুধু তাই নয়, দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণে এবং পিছিয়ে পড়াদের আর্থসামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখছে। এগুলোয় বিনিয়োগ এক-দেড় লাখ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা। এদের কাছে প্রণোদনা যাতে পৌঁছে, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে এদের কাছে পৌঁছার সুযোগ তেমন নেই। এখানে উদ্ভাবনী চিন্তা এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অবশ্যই গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে। কাজেই এই প্রণোদনা প্যাকেজ এবং পিকেএসএফ ও অন্যান্য উৎস কুটির এবং অতিক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায়ে সরবরাহকৃত অর্থের লেনদেন চালু রাখা প্রয়োজন। একবার বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্নিষ্টদের ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হবে, ক্ষেত্রবিশেষে সম্ভব নাও হতে পারে।

    খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় বলে প্রধানমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন। বিনামূল্যে ভুক্তভোগীদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত ও জোরদার করা হবে। খুবই জরুরি প্রশংসনীয়। এদিকে খরিফ মৌসুম সামনে। এ ছাড়া বোরো ধানের মৌসুমও আসন্ন। এসব দিকে বিশেষ নজর দেখা জরুরি। বীজ, উপকরণ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবহন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে তথ্য-ঘাটতি বিদ্যমান। দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, বোরো ধান বাংলাদেশে মোট ধান উৎপাদনের ৬০-৬৫ শতাংশ। কাজেই এই ফসলের ক্ষেত্রে সফলতা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

    বিদ্যমান বাস্তবতার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ বাস্তবানুগ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে বাস্তবতার আলোকে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যাতে অর্থনীতি এগিয়ে চলে ও মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। সংশ্নিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়নকারী ও সেগুলো বাস্তবায়নকারীরা অবশ্যই বাস্তবতার আলোকে কাজ করবেন। দেশে ও বিদেশে ঘটমান পরিবর্তন অবলোকন করে সময় সময় গৃহীত পদক্ষেপগুলোয় কিছু কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে।

    এর আগে মহামারি অনেক হয়েছে। তবে সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বা কয়েকটি অঞ্চলে ঘটেছে। মৃতের সংখ্যাও কোটি কোটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তবে গোটা বিশ্বের সব মানুষের জন্য এ রকম টালমাতাল অবস্থা কখনও সৃষ্টি হয়নি। করোনা অবশ্যই একসময় পরাজিত হবে, তবে মানবসমাজ আর আগের মতো থাকবে না। করোনা থেকে যদি মানুষ শিখে যে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই। কেননা করোনা যাকে পায় তাকেই ধরে, সে ধনী হোক, ক্ষমতাবান হোক আর গরিব হোক- সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। এ অবস্থায় মানুষ যদি মানবিক-সামাজিক মূল্যবোধে দীক্ষিত হয় এবং ধান্দাবাজি ত্যাগ করে ‘প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’- মানবতার এই তাগিদ গ্রহণ ও অনুসরণ করে, তাহলে এই পৃথিবী সুন্দর হবে; মানবজীবন সবার জন্য ধন্য হবে এবং বাস্তবে রূপ নেবে- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ আর বাংলাদেশে গড়ে উঠবে সব নাগরিকের সমঅধিকার ও সমসুযোগের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। তবে বর্তমান অবস্থায় প্রথমেই সবাই মিলে করোনা হটাতে হবে।

    আর/০৮:১৪/৭ এপ্রিল

    সুত্র : দেশ বিদেশসুত্র

  • করোনায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে: সিপিডি

    বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

    শনিবার ‘করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

    ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সব সরকারেরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ এর জন্য যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সেটার ওপর একটি বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সঙ্গে স্বাস্থ্য তো রয়েছেই। সবার আগে স্বাস্থ্য, তারপর অর্থনীতি। 

    তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ, রাজস্ব ও মুদ্রানীতির ওপর স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি নানা প্রতিঘাত-অভিঘাত থাকবে। এর জন্য আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে- সম্পদের পুনর্বণ্টন করা, রাজস্ব বাড়ানো এবং মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনা পদক্ষেপ নিতে হবে।

    ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেহেতু আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক সাহায্য ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সুতরাং একটা বৈশ্বিক পর্যায় থেকে অর্থনীতির ওপর একটা অভিঘাত আসবে। আরেকটা হবে দেশের ভেতরে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে একটা প্রতিঘাত আসবে। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্যে যে শ্লথগতি, তার কারণেও একটা প্রতিঘাত আসবে, যার ফলে দেশগুলো কম্পিটিটিভনেস হারাবে। আর যেহেতু বিশ্বের চাহিদাও কমে যাবে, তাই বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে আসবে। এর পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটা শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাবে এবং ইতোমধ্যে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

    এর পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগেও এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা সামনের দিনে বিনিয়োগ করবেন কি করবেন না সেটা একটা বিষয়। আর এখন তো অর্থপ্রবাহের ওপরও একটা চাপ পড়বে। এর পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ের ওপরও একটা চাপ পড়বে, কেননা সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় করতে হবে, অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সে কারণে সরকারের যে নিয়মিত ব্যয়গুলো রয়েছে সেটার ওপর এক ধরনের চাপ পড়তে পারে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর বিরাট চাপ পড়তে পারে।

    উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বড় বড় খাতে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে ছোট ছোট খাতে, বিশেষ করে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রণোদনা দিতে অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন- একথা উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাজস্ব আহরণের বর্তমান যে হার তাতে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব কম আহরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি এখনকার জন্য না হলেও স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি একটি বিষয়।

    তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সংকটের সময় যখন চাহিদা দ্রুত কমে যায়, কর্মসংস্থান হারানোর প্রবণতা বাড়ে ও মানুষের আয় কমে যায়, তখন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতিতে তারল্য বাড়ানো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে তারল্য বাড়ানো যায় তার একটা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে ট্রেজারি বন্ড বা বিল কেনার মাধ্যমে, আরেকটা হতে পারে সুদের হার কমিয়ে।

  • ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন: সংশোধন করা হচ্ছে আইন, আদালতে যেতে পারবেন ভোক্তা


    সংশোধন করা হচ্ছে আইন, আদালতে যেতে পারবেন ভোক্তা


    সংশোধন করা হচ্ছে ভোক্তা আইন। পণ্যে ভেজাল ও বিক্রিতে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণায় আগে শুধু বিক্রেতাকেই শাস্তি দেয়া হতো। এবার উৎপাদনকারী ও আমদানিকারককে শাস্তির বিধান রেখে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সংশোধন করে ২০১৮ খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

    এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর গণমাধ্যমকে বলেন, অধিদফতর ভোক্তার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। সপ্তাহের ৫ দিন দুটি করে ঝটিকা বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তারা যেন আরও বেশি সুফল পান, এ জন্য আইনে বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন ও সংযোজন করা হচ্ছে।

    ইতিমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কেবিনেটে এ আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সেখান থেকে ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। পরে তা জাতীয় সংসদে আইন পাস করা হবে বলে আশা রাখছি। আইনটি চূড়ান্ত হলে ভোক্তা আইন-২০০৯-এর পরিবর্তে ২০১৮ নামে অভিহিত হবে।

    এদিকে খসড়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আইনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নামটি সংক্ষিপ্ত করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান ভোক্তা আইন ২০০৯-এ ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করে।

    কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় দেখা গেছে, ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে পারবে। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার চেয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

    তাছাড়া পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে ভোক্তা চলমান আইনে শুধু বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ করেন। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় বিক্রেতাসহ উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী অথবা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করা যাবে। পরে তাদের কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনে শাস্তি প্রদান করা হবে। এ ছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়কালে বিক্রেতা থেকে একটি রসিদ বাধ্যতামূলকভাবে ক্রেতাকে দিতে হবে।

    না দিলে অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিক্রেতাকে ভোক্তা আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। নতুন আইনে ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিতের কারণ উদ্ঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা জেলা মেজিস্ট্রেট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তার কাছে একজন ভোক্তা অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। খসড়ায় আরও প্রস্তাব করা হয়েছে- ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোষ প্রমাণ হলে ও আইনে জরিমানা করলে তাৎক্ষণিক অর্থ জরিমানা প্রদান করতে হবে। তবে কোনো যৌক্তিক কারণ গ্রহণযোগ্য হলে অধিদফতরের আরোপিত জরিমানা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করতে পারবে।

    অন্যদিকে নতুন আইনের খসড়ায় প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে দোষী ব্যক্তির আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালকে আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করতে পারবেন। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কোনো শাস্তি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন অভিযুক্তরা। তাছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবাগ্রহীতার যে কোনো ক্ষতি হলে ভোক্তা অধিকার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

    এ ছাড়া দেশে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোড়কজাত পণ্যে উৎপাদনের তারিখ মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মডেল বা ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা না দেয়া হলে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনের খসড়ায় দোকান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে মোড়কবিহীন পণ্য অথবা সেবার মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টানাতে বলা হয়েছে।

    যদি তা না করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদের এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উপাদান সংরক্ষণ না করে পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি করলে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড দেয়া হবে। এ ছাড়া উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

    উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক কর্তৃক মোড়কে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ হয়েছে কি না অথবা ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে উৎপাদন, আমদানি বা মজুদ অথবা সরবরাহ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর তদারকি করে প্রমাণ পেলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বিক্রি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

    এদিকে লাইসেন্স বা সরকারের লিখিত অনুমোদন ব্যতীত অবৈধভাবে কোনো পণ্য প্রস্তুত অথবা বিক্রি করা হয়েছে কি না তার তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে প্রতারিত করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক কর্তৃক মোড়কে ঘোষিত নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় তথ্য বা রসিদ প্রদান করা হয়েছে কিনা, তা তদারকি করে দোষ পেলে শাস্তি দেয়া হবে।

    এ জন্য অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। ওজন বা যথাযথ পরিমাপে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি না করলে এক বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

    কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ভোক্তা আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব, সেটা পুরোটাই প্রশংসনীয়।

  • সাতক্ষীরায় পটল চাষে ভাগ্য বদল

    সাতক্ষীরায় পটল চাষে ভাগ্য বদল


    আব্দুল জলিল ঃ সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে পটল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। আর পটল চাষ করে কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পটল চাষ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। এবছর পটলের দাম অন্য বারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে কৃষকদের অভিযোগ উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সহযোহিতা করছে না । তাদের সহযোগিতা পেলে গাছের রোগ বালাই কমতো আরো ফলন বেশি হতো। তবে সাতক্ষীরার পটল যাচ্ছে খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ।
    জানাযায়, সাতক্ষীরায় বারো মাস পটল চাষ হয়। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়,দেবহাটা, কাালিগঞ্জ উপজেলা পটল চাষে সমৃদ্ধ । সবচেয়ে বেশি পটল চাষ হয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায়। সাতক্ষীরার পটল যাচ্ছে খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে । কৃষকরা বলছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে পটল বিক্রি হচ্ছে। আর এই পটল খুজরা ুবাজারে মানুষ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে ক্রয় করছে। কৃষকদের দাবি ব্যবসায়ীরা ক্ষেত ওয়ালার চেয়ে বেশি মুনফা ভোগ করছে। ব্যবসায়ীরা বলছে তারা যে রকম টাকায় কিনে সে রকম টাকায় বিক্রি করে । বর্ষার কারণে এবার ক্ষেতে একটু বেশি রোগ দেখা দিয়েছে। এ জন্য কৃষক বিভিন্ন প্রকার ঔষাধ ব্যবহার করছে । উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা তাদের কোন সহযোগিতা করছে না । কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে ফসলের রোগ বালাই কমতো আর ফলন বেশি হত । কৃষক একদিন পরপর ক্ষেত থেকে পটল উত্তোলন করে । সবমিলে এবার পটল চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হযেছে। কৃষক ব্যবসায়ী, দিন মুজুর সবার মুখে হাসি ফুটেছে ।
    সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুই গাছা গ্রামের মিজানুর, তবিবর, মোশারাফ, ইসমাইলসহ একাধিক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে পটল চাষ আবাদ করতে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয় । আর ফলন ভাল হলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব । পটল চাষে পরিশ্রম করতে হয় বেশি । প্রতিদিন সকালে উঠে ফুলেন পরাগায়ন করাতে হয়। স্থানীয় ভাবে পরাগায়ন ঘটানোকে ফুল ছোয়ানো বলা হয়। একদিন পর পর ক্ষেত থেকে পটল উত্তোলন করা যায়। কেউ পটলের ক্ষেতে দিন মুজুরির কাজ করছে, কেউ পটল কিনে হাট বাজারে বিক্রি করছে, আবার কেউ কেউ পটল কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি জন্য নিয়ে যাচ্ছে । সব মিলে পটল চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে অনেকের ।
    পটল চাষী জিয়াউর, তরিকুল, আহাদ, জামায়াত জানান, এবার বর্ষার কারণে গাছে একটু রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। এজন্য তারা বিভিন্ন ধরণের ঔষাধ ব্যবহার করছে । অনেকের গাছ মারা যাচ্ছে । তবে উপসহকারি কৃষিকর্মকর্তারা তাদের কোন সহযোগিতা করছে না। কৃষকরা আরো বলেন কৃষি অফিস চাষীদের সহযোগিতা করলে গাছের রোগ বালাই দূর হতো। তাদের পটলের ফলন বেশি হলে লাভ আরো বেশি হত। এই তথ্য সংগ্রহ করার সময় সদর উপজেলারা বাশদহা ইউনিয়নের এক উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে কৃষকদের এসব কথা না লেখার জন্য অনুরোধ করেন।
    ঢাকার কারওয়ান বাজারের পটলের আড়তদার মোস্তফা জানান, তিনি সাতক্ষীরায় এসেছেন পটল কিনতে।এখানকার অনেক ব্যবসায়ী তার আড়তে পটল বিক্রি করেন। তার দাবি ক্ষেতওয়ালা ও আড়তদারদের চেয়ে খুজরা বিক্রেতারা বেশি লাভ করে।এবার পটলের দাম ভাল। সাতক্ষীরার পটল খুব সুসাধু।
    সাতক্ষীরা কষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, পটল আবাদ করে চাষী লাভবান হয়েছে । পটল চাষে সাতক্ষীরা জেলা সমৃদ্ধ। জেলা ৬০৫ হেক্টর জমিতে পটল চাষ হয়েছে । পটলের সাথে অনেক সাথী ফসলেরর চাষ হয়।

  • সাতক্ষীরায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে বাসক পাতা

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাড়িতে-বাড়িতে ঘেরা বেড়া দেওয়ার কাজে বেশ জনপ্রিয় বাসক গাছ। গ্রাম জুড়ে এর ছড়াছড়ি। এক ধরনের বিকট দুর্গন্ধের জন্য এর পাতায় গবাদি পশু মুখ দেয় না। ফলে সহজেই জমি ও বাড়ি ঘেরার কাজ চলে। ঔষধি গুনসম্পন্ন এই বাসক পাতা এখন ঘুরিয়ে দিচ্ছে গ্রামীন মানুষের ভাগ্যের চাকা ।

    বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাসক পাতার কদর রয়েছে বেশ। সর্দি কাশি সারাতে সবুজ বাসক পাতা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায় এ বিশ্বাস রয়েছে এখনও । কিন্তু এই পাতা যে মানুষের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে তা ছিল ধারনার বাইরে।দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে বাসক উদ্ভিদের। ভারতেও বাসক উদ্ভিদের ব্যাপক চাষ রয়েছে। সাতক্ষীরাতে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ঔষধিগুণ সম্পন্ন বাসক। ধারণা করা হচ্ছে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে এ বাসক।

    সাতক্ষীরার ফিংড়ি গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান আগে মনে করতাম আবর্জনা। এখন তা সংগ্রহ করে বিক্রি করছি। এতে লাভ হচ্ছে বেশ। একই গ্রামের আমিরুন বেগম জানান তিনি প্রতি কেজি কাঁচা পাতা ৫ টাকা কেজি দরে কিনে শুকিয়ে বিক্রি করছেন ৩৫ টাকায়। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত এসব বাসক পাতা এখন ওষুধ কোস্পানিগুলি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর ঔষধিগুন এতো বেশি যে এই পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ নিরাময়ে বেশ উপকারী। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাও বাসক পাতার ব্যবহার রয়েছে। 

    জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার মাটি বাসক চাষের জন্য উপযোগী। তাই এ অঞ্চলে বাসক উদ্ভিদ জন্মায় প্রচুর পরিমাণে। ঘেরা বেড়ায় ব্যবহার করা এই উদ্ভিদের পাতা ছিড়লে গাছ মরে যায় না। আবারও নতুন নতুন পাতা গজায়। সারা বছর চলে নতুন পাতা গজানো। ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলে হয়ে ওঠে নতুন গাছ। আর্দ্র ও সমতল ভূমিতে এই উদ্ভিদ জন্মায়। বিকট গন্ধের কারণে এতে ছত্রাক জন্মায়না। এমনকি পোকা মাকড়ও ধরে না। এই পাতা দিয়ে ফল মুড়ে রাখলে তা ভাল থাকে।

    বাসক পাতা সংগ্রহকারী দলের নেতা বিউটি বেগম বলেন, ‘আমরা কাঁচা পাতা রস করে খাই। আগে এর কোনো অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিতাম না। এখন সংগ্রহ করে বিক্রি করছি।’তিনি বলেন, ‘বাড়ির বেড়ার গায়ে থাকে। গাছ বাড়েও বেশ। এখন তা তুলে এনে শুকিয়ে বিক্রি করছি। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। বাসক লাগাতে পৃথক জমির দরকার নেই।’ফিংড়ি গ্রামের সাবিনা খাতুন, ‘বীনা দাস, জোহরা খাতুন, অপর্না দাস, রোহেলা খাতুন, আনোয়ারা বেগম , রেবেকা সুলতানা, নাসিমা খাতুন, নাজমা বেগম, হাফিজুল ইমলাম, আমিনা খাতুন জানান বাসক পাতা সংগ্রহ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।

    সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের কাঁচাপাকা রাস্তার ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বিপুল পরিমান বাসক উদ্ভিদ। এখানকার কমপক্ষে দশ হাজার বাসক গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে জমির চারধারে কিংবা বাড়ির ঘেরা বেড়ায়। প্রতি বছর একশ’ টন সবুজ পাতা সংগ্রহ হচ্ছে এসব গাছ থেকে। বছরে  এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ২৬ টন শুকনো পাতা। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়ও বানিজ্যিকভাবে বাসক উদ্ভিদের চাষ শুরু হয়েছে।

    পানিউন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি মো. শামীম আলম জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প ব্লু গোল্ডের আওতায় ২৮৫ জন নারী ফিংড়ি ইউনিয়নে বাসক পাতা সংগ্রহ করছেন। তাদের সংগৃহীত পাতা কিনে নিচ্ছে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি।
    তিনি বলেন, ‘বাসক পাতা যেমন আনতে পারে অর্থনৈতিক বিপ্লব, তেমনি বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারছে।’

    স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘আমরা শুকনো বাসক পাতা কিনে নিচ্ছি। জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে বাসক পাতা কাশির সিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে।’সাতক্ষীরার গ্রামে এরই মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে গেছে বাসক পাতা নিয়ে। গ্রামবাসী নিজ-নিজ বাড়ির চারপাশে বাসক গাছ লাগাচ্ছেন। গ্রামের দরিদ্র নারীরা প্রতিদিনই সংগ্রহ করছেন শত শত বাসক পাতা। পরিচ্ছন্নভাবে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছেন ওষুধ কোম্পানির কাছে। এতে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করছেন। 

    ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জানান এ এলাকায় প্রচুর বাসক গাছ জন্মায়। প্রতি বছর ওষুধ কোম্পানিগুলি তা কিনে নিয়ে যায়। এতে আমার এলাকার সাধারণ মানুষ আর্থিক উপকার পাচ্ছেন। 

    সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা (Adhatoda Vasica)  ঔষধিগুন সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এর পাতা ও ফলে এক ধরনের দুর্গন্ধ আছে। যে কারণে তা ব্যবহার করলে ছত্রাক রোধ করা যায়। তাছাড়া এর ঔষধিগুন খুব বেশি। এসব গুনের কারণে বাসক বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও। ভারতের তামিলনাড়–তে বাসকের চাষ ব্যাপক রয়েছে।’
    তিনি বলেন, ‘বাসক উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরার মাটি অনুকূল। বেশি বেশি করে বাসক গাছ লাগালে এর পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে অবদান রাখা ছাড়াও গ্রামীন অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে।’

  • তালায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে মিলছে সফলতা

    সেলিম হায়দার: সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ঝুকছেন কৃষকরা। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সফলতা মেলায় এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ হয়েছে এ সবজির। চাষের উপযোগী মাটি ও অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় আগামীতে আরো বেশি জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমোটো আবাদ করবেন কৃষকরা এমনটাই ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তার ।
    স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে, তালা উপজেলায় এবছর গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ হয়েছে মোট ৬ হেক্টর জমিতে। গত বছর যার পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ৩ হেক্টর। অসময়ে টমেটোর ভাল ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। তাদের এ সাফল্যে অন্যান্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এ সবজি চাষে।
    কৃষি অফিস এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। যা বিক্রি হয় কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা। অসময়ে বিঘা প্রতি ২ লাখ টাকা লাভ পেয়ে সামগ্রিকভাবে কৃষকদের শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তনই নয়, পরিবর্তন ঘটেছে মানসিক অবস্থারও।
    জানা যায়, উপজেলার কৃষকরা মূলত বারি-৮ ও বারি-৪ জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন। ফলন, মান ও চাহিদা অনুযায়ী ভাল দাম পাওয়ায় মূলত কৃষকরা এ দু’জাতের টমেটো চাষের জন্য বেছে নিয়েছেন।
    এ ব্যাপারে কথা হয় তালা উপজেলার নগরঘাটার কৃষক গাজী রহমানের সাথে। তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে তার ক্ষেত থেকে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে বিঘা প্রতি তার ২ লাখ টাকার উপরে লাভ হবে।
    কথা হয় একই এলাকার আরো কয়েকজন কৃষকের সাথে। যার মধ্যে সফিকুল ইসলাম গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন ৫০ শতক জমিতে, রফিকুল ইসলাম ৫০ শতক, রেজাউল ইসলাম ৩৩ শতক, কালী বাড়ির মাসুদ রানা ৩৩ শতক এবং তৈলকূপির সাইফুর রহমান বাবু চাষ করেছেন ৬৬ শতক জমিতে।
    তারা সবাই জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত থেকে ইতোমধ্যে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে খুচরা ৮০ টাকা এবং পাইকারী ৭০ টাকা দরে। অসময়ে পাকা টমেটোর উপস্থিতি সবজির বাজারেও আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। দাম বেশী হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় আগামীতে আবারও তারা গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চান।
    এব্যাপারে উপজেলার নগরঘাটা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ অজিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার কৃষকদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে আগ্রহ বেড়েছে।
    উপজেলার মাটি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উপযোগী ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে।’
    গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাচের্র প্রথম দিকে বীজ বপন করতে  হয় এরপর মে মাসে বীজতলা থেকে ওই চারা উঠিয়ে ক্ষেতে রোপন করতে হয়। সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা করতে পারলে জুন-জুলাই মাসে গাছে ফল আসতে শুরু করে। যা থেকে একাধারে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যায়।
    তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মামুন জানান, সারা বছরের সবজির চাহিদা পূরণে গ্রীষ্মকালীন টমেটো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। চাষের ক্ষেত্রে বারি-৪ ও বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করা ভালো। সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস টমেটো চাষীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি।
  • টানা ৫ দিন পর ফের ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম শুরু

    টানা ৫ দিন পর ফের ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম শুরু

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে টানা ৫ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে আবারও শুরু হয়েছে সাতক্ষীরার ভোমরাস্থল বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম। ফলে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে। বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে পণ্য বাহী ভারতীয় ট্রাক।

    ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দেলোয়ার রাজু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে গত ২১ আগষ্ট থেকে ২৫ আগষ্ট পর্যন্ত টানা ৫দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম।’

    ভোমরা স্থল বন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারি কমিশনার সাগর সেন জানান, টানা ৫ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে আবারও যথারীতি শুরু হয়েছে ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম।

    উল্লেখ্য, গত ৫ দিন আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ভোমরা ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা যথারীতি যাতায়াত করেছেন।

  • জনতা ব্যাংকের নির্বাহী পদে লিখিত পরীক্ষা বাতিল

    ঢাকা ব্যুরো : গত বছরের ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এ পরীক্ষা বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে নতুন করে একই পদে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

    আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট সুপ্রকাশ দত্ত ও রিপন বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

    এর আগে ২০১৭ সালের ২২ মে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা বাতিলে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

  • রাতেই বাড়ছে মোবাইল কলরেট

    ঢাকা ব্যুরো : মোবাইল ফোন অপারেটরদের দেয়া সর্বনিম্ন কলরেট ২৫ পয়সা আর থাকছে না। আজ মঙ্গলবার মধ্যরাত (১২টা ১ মিনিট থেকে) সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা কলরেট করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।সোমবার (১৩ আগস্ট) পাঠানো এই নির্দেশনায় সর্বনিম্ন কলরেট ৪৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ কলরেট হচ্ছে ২ টাকা করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল ফোনকলে অফনেট ও অননেট পদ্ধতিও থাকছে না।

    বর্তমানে একই অপারেটরে অননেটে কথা বলা যায় সর্বনিম্ন ২৫ পয়সায় আর অফনেটে অর্থ্যাৎ অন্য অপারেটরে কথা বলতে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৬০ পয়সা।

    ফলে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে যেকোনো মোবাইল অপারেটরেই কথা বলা যাবে একই রেটে। নতুন এই নির্দেশনার ফলে গ্রাহক প্রতি খরচ বাড়বে প্রায় ৩০ শতাংশ।

    ইতিমধ্যে অপারেটরগুলো এই নির্দেশনা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের প্রায় ১৪ কোটি গ্রাহকের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ কলরেট ১.৫০ টাকা করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি ২ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    মূলত মোবাইল নাম্বার পোর্টেবেলিটি (এমএনপি) বা একই নম্বরে থেকে অন্য অপারেটরের সুবিধা চালুর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই এমএনপি চালুর আগেই এটি কার্যকর হচ্ছে।

    এ ব্যাপারে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, অফলাইন-অনলাইন ভয়েস কলে ন্যুনতম ৪৫ পয়সা রেট ও সর্বোচ্চ দুই টাকা রেট নিশ্চিত করতে সবগুলো মোবাইল টেলিফোন অপারেটরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

    এ ব্যাপারে বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তৈমুর রহমান  বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্তের ফলে একজন গ্রাহক নিজ অপারেটর বা অন্য অপারেটরে কল করতে পারবেন একই রেটে। যা আগে সম্ভব ছিল না।

    তিনি বলেন, আজ (সোমবার) বিকেলে বিটিআরসি থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হাতে পেয়েছি। আমরা বিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি।

  • সাতক্ষীরা পৌরসভায় ৬০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা পৌরসভার ৬০ কোটি ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৪ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন হয়েছে। রোববার দুপুরে ‘চাই পৌর সেবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে জন সম্মুখে সাতক্ষীরা পৌরসভার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব তাজকিন আহমেদ চিশতি।

    সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাতক্ষীরা রোববার দুপুরে পৌরসভা মিলনায়তনে এ বাজেট অধিবেশনের আয়োজন করে। বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব তাজকিন আহমেদ চিশতি।

    বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট্য শিক্ষাবিদ সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার অব্দুল হামিদ, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা ও পৌর কাউন্সিলর জোছনা আরা, পৌর কাউন্সিলর অনিমা রানী মন্ডল, শফিক-উদ-দৌলা সাগর, শেখ আব্দুস সেলিম, কাজী ফিরোজ হাসান, শাহিনুর রহমান শাহিন, শফিকুল আলম বাবু প্রমুখ।

  • বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে সাতক্ষীরা

    বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে সাতক্ষীরা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ এর  মূল্যায়ন, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা মৎস্য অফিস।

    জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল হান্নান।
    জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল হান্নান।

    অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম সরদার। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল হান্নান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে সাতক্ষীরা। বর্তমানে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। যেটা ঝুকিপূর্ণ ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। সকলের স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষ করতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনের সাতক্ষীরা জেলার গুরুত্ব অনেক বেশি।’
    তিনি আরো বলেন, ‘এ জেলায় বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় ১লক্ষ ৩১ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন। যার মধ্যে জনগণের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৮৯২২৩ মেট্রিক টন মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি এবং অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। চিংড়ি চাষে সাতক্ষীরা দেশের প্রথম স্থানে থাকলেও তা এখন নানাভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। এক্ষেত্রে চিংড়ি পোনার ভাইরাস রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
    অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী ডা. আবতাবুজ্জামান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. আবুল কালাম বাবলা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ভারপ্রাপ্ত মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
    অন্যান্যদে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার মোজাম্মেল হক, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) মো.রাশেদুল হক, সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান, বড় বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব ও খুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা।
  • পোকার আক্রমনে দিশেহারা সাতক্ষীরার বেগুন চাষিরা

    পোকার আক্রমনে দিশেহারা সাতক্ষীরার বেগুন চাষিরা

    নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বেগুনে ব্যাপক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। হাজার হাজার টাকার কিটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। ফলে এই সবজটি চাষ কওে লোকসানে পড়েছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক।
    চাষিদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন এলাকার বেগুন ক্ষেত পোকার আক্রামনে নষ্ট হয়ে গেলেও কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠে পাওয়া যায়না পরামর্শ দেয়ার জন্য। ফলে কৃষকরা না বুঝে নানা ধরনের কিটনাশক ব্যবহার করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছেন। না বুঝে কিটনাশক ব্যাবহার করে যেমন মিলছে না কোন প্রতিকার তেমনি এসব কিটনাশক কিনতে খরচও হচ্ছে বেশ।
    সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের বেগুন চাষি জয়নুল আবেদিন জানান, ৩০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ অন্যান্য সবজি’র পাশাপাশি বেগুন চাষ করে আসছেন। চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা  জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো এতো পোকার আক্রমন দেখেননি তিনি।
    তিনি বলেন, ‘গাছে একেকটি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম ওজন হওয়ার পর থেকে পোকায় তা ছিদ্র করে ঝাঝরা করে দিচ্ছে। তাছাড়া ডোগাও কেটে দিচ্ছে পোকায়।’
    তিনি আরও বলেন, ‘পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ৩ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার টাকার ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে মিমপ্রেক্স কোম্পানীর মানিক, সুরেশ, সেতারা, পাইন, নীল এবং ওয়ান্ডার।’
    তিনি জানান, ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেচা-কেনা হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যে বেগুন বাজারে প্রতি মন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন পোকার কারণে তা মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে প্রায় ১ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে আশংক্সক্ষা করছেন তিনি।
    একই গ্রামের চাষি পিন্টু দাশ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্ত ক্ষেতের অধিকাংশ বেগুন হলদে রং হয়ে পচেঁ যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
    তিনি বলেন, ‘২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এরমধ্যে কিটনাশকেই খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তার পরও কোনো প্রতিকার পায়নি।’
    এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় বেগুন চাষ হয়েছে ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৮০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৮৫ হেক্টর, তালায় ১৪৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।
    সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় মাকড়া, নয়ন কাজল, বারি-৩, বারি-৪, ঝুরি ও অন্যান্য স্থানীয় জাতের বেগুন চাষ করা হয়েছে।
    সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বেগুনের পোকা আসলে কিটনাশক বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে দমন হয় না। বেগুনের পোকা মারার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেক্সফ্রোমন ফাঁদ। কৃষকরা বেগুন ক্ষেতে এই ফাঁদ বসালে দু‘একদিনের মধ্যে পোকা দমন হয়ে যায়। কিন্ত এই ফাঁদের প্রচলন সাতক্ষীরাতে এখনো সেই ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এই ফাঁদ ব্যবহারের জন্য।’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা ‘ঠিক আছে এবং ঘরেই আছে’ বলে আশ্বস্ত করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

    RELATED STORIES
  • সাতক্ষীরায় বছরে মাছ উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৫১৬ মেট্রিকটন

    সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় জাতীয় মৎস সপ্তাহ পালন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্যাপন কমিটি সাতক্ষীরার আয়োজনে বুধবার সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা মৎস্য অফিসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, সদর উপজেলা মৎস্য অফিসার রাশেদুল হক, সহকারী মৎস্য অফিসার লুৎফর রহমান প্রমুখ।

    সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় বছরে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫১৬ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৮৫ হাজার ৯৬৮ মেট্রিকটন সাদা মাছ ও চিংড়ি মাছ বিদেশে রপ্তানী এবং দেশের অন্যান্য জেলায় সরবারহ করা হয়।

    বক্তারা আরো বলেন, এ বছর ‘স্বয়ং সম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ পালিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

  • বেনাপোল-পেট্রাপোলে আমদানি-রফতানি বানিজ্য বন্ধ।।কাস্টমসের কাজে বিজিবি‘র হস্তক্ষেপ

    ভারত থেকে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের পরিমাপ (ওজন) করা নিয়ে কাস্টমস ও বিজিবি‘র মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় রোববার দুপুর থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বন্দরের দু‘দেশের উভয় পাশে শত শত ট্রাক পণ্য নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে রফতানিকৃত পোষাক শিল্পের উপকরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেমিকেল ও কাঁচামাল রয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

    সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ভারত থেকে মাত্র ৩০ গাড়ি আমদানি পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের পর চেকপোস্ট কাস্টমস ও সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায় বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। স্বাধীনতার পর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যে সকল পণ্য ভারত থেকে আমদানি-রফতানি হয় চেকপোস্টে তার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও রোববার সকাল থেকে ওইসব পণ্যের ওজন তদারকি করার জন্য চেকপোস্টে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর ফলে কাস্টমসের কাজে বিজিবি‘র হস্তক্ষেপে কাস্টমস তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

    এদিকে বিজিবি বলছে, মন্ত্রনালয় থেকে আমদানি পণ্যের ওজন করার জন্য চেকপোস্ট ও টিটিআই গেটে কাস্টমসের পাশাপাশি দেখার দায়িত্ব নিলে কাস্টমস তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অপর দিকে কাস্টমস বলছে, রাজস্ব সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমসের তদারকি করার কথা। আর বিজিবির সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানি পণ্য নিয়ন্ত্রনের কথা থাকলেও বিজিবি আমদানি পণ্য দেখাশুনার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা কাজ বন্ধ করে দিলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

    বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল শত শত গাড়ি আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদি সময় মত গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করতে না পারে তবে ট্রাক প্রতি ২/৩ হাজার টাকা প্রতিদিন ডেমারেজ দিতে হবে। তাছাড়া রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পচনশীল পণ্যের ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, ফল, পেঁয়াজ, মাছসহ নানা ধরনের পচনশীল পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অপেক্ষা করছে।

    বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত বিষয়ে একমাত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর মধ্যে বিজিবি‘র হস্তক্ষেপ সাংঘষিক। এ ঘটনার ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। সুষ্ঠু সমাধান না হলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি-রফতানি করবে না বলে তিনি জানান।

    এ ব্যাপারে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্ণেল আরিফুল হক বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাপ নির্ধারনের করার জন্য চেকপোস্টে স্থাপিত কাস্টমসের উইনিং স্কেলে বিজিবি সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত পণ্য আমদানি হচ্ছে বলেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকার সঠিক রাজস্ব পাবে। আমরা কাস্টমসের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করছি না।

    বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারেন্টেন্ড) হারুনর রশিদ বলেন, আমদানি- রফতানি বাণিজ্যে বিজিবির তদারকির বিষয়ে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা অফিস বন্ধ রেখেছেন।

    এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন জানান, আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব আদায় নিয়ন্ত্রণ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর থেকে বিজিবি‘কে এমন কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তারপরও তারা চেকপোস্ট কাস্টমসের উইনিং স্কেলে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাপের দায়িত্ব পালন করছেন। এর প্রতিবাদে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেস্টা চলছে।

  • হলমার্ক চেয়ারম্যান জেসমিনের ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ

    ঢাকা ব্যুরো : হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের সম্পদের হিসাব দাখিল না করার মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। আজ বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রাায় ঘোষণা করেন।

    কারাগারে থাকা জেসমিন ইসলামকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়। রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে অর্থদণ্ডের ২০ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    মামলাটিতে আদালত ৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর মামলা পরিচালনা করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম।

    মামলাটিতে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক মনজুর মোরশেদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত চার্জগঠন করে আসামির বিচার শুরু করেন। দণ্ডিত জেসমিন ইসলাম হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদের স্ত্রী। তারা উভয়ই হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায়ও আসামি।

    মামলার অভিযোগে জানা গেছে, জেসমিন ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্ত পায় দুদক। এরপর দুদক তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী জমা না দিয়ে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তবে সময় বাড়ানোর পরও সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়নি। এ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন রমনা থানায় নন-সাবমিশন মামলা দায়ের করেন।