নিজস্ব প্রতিনিধি : দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর অপেক্ষামান পেয়াজের আমদানী শুরু হয়েছে। গতকাল ভোমরা ও হিলি বন্দর দিয়ে পেয়াজ আসা শুরু হয়েছে।
প্রকাশ, ৫ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে গতকাল দুপুর থেকে পেঁয়াজ আমদানী শুরু করেছে। এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেন ট্রেড এর এক চিঠিতে পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই ফরেন ট্রেড এর অপর এক চিঠিতে শর্ত সাপেক্ষে গতকাল শনিবার থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে বলে ভারতীয় সিএন্ডএফ সূত্রে জানানো হয়। এদিকে,ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে থাকা ২৫৫ ট্রাকের মধ্যে কাগজ পত্র প্রস্তুত রয়েছে এমন ভারতীয় পেঁয়াজবাহি মোট ৩২টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। ভোমরা সিএন্ডএফ পক্ষ হতে জানানো হয়, পূর্বের এলসি করা ২৫৫ টি পেয়াজ ভর্তি ট্রাক ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে রয়েছে। এর মধ্যে কাগজ পত্র প্রস্তুত রয়েছে এমন মোট ৩২টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করবে। প্রতি ট্রাকে ২২ থেকে ২৫ টন পেয়াজ আমদানি হবে বলে জানান এই সিএন্ডএফ নেতা। বাকী গুলো পর্যাক্রমে প্রবেশ করবে। তবে, ভোমরা ও হিলিসহ তিনটি বন্দর দিয়ে মোট ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানীর ঘোষনা দিয়েছে ভারত । সেই হিসেবে ৮ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দর দিয়ে আসার কথা। এই ঘোষনার পর শনিবার দুপুর ১টা থেকে পেঁয়াজ বাহি ভারতীয় ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে। এদিকে, পেঁয়াজ বাহি ট্রাক গুলো ৫দিন আটকে থাকার কারনে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়িরা।
ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ১টা থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। কতটা পেঁয়াজ আসবে তা ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে পাঁচ দিন বন্ধের পর ভারত সরকার অনুমতি দেওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে আটকে থাকা পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজবাহী ট্রাক প্রবেশ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হিলি বন্দর দিয়ে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে শুধু গত রবিবারের টেন্ডারকৃত পেঁয়াজ রফতানি করবেন বলে জানিয়েছেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকদিন আটকে থাকায় অনেক ট্রাকের পেঁয়াজের মান খারাপ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
বাংলা হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ সুত্রে প্রকাশ, ‘গত সোমবার থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। পরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের পর শনিবার বেলা সাড়ে ৩টায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে যে সব পেঁয়াজের ট্রাক রয়েছে, সবগুলো নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। আশা করছি, সবগুলো পেঁয়াজের ট্রাক নিতে সক্ষম হবো।’
Category: অর্থনীতি
-

পাঁচ দিন পর পেঁয়াজ আমদানী শুরু
-

চীনে কাঁকড়া রপ্তানী চালুর দাবীতে সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ী ও খামারীদের মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে টানা প্রায় ৫ মাস রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুনরায় চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী চালুর দাবীতে মানববন্ধন করেছেন সাতক্ষীরার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে দেবহাটার সখিপুরে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে প্রাথমিক পর্যায়ে লকডাউন চলাকালীন দুই মাস এবং সর্বশেষ গত ২৬জুন থেকে সরকারী নির্দেশে আরো প্রায় তিনমাস চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি তীব্র ক্ষতির মুখে পড়েছেন কাঁকড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সাতক্ষীরা জেলার লক্ষাধিক পরিবার। একটানা কয়েকমাস চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকায় ব্যাংক ঋনের চাপ আর পরিবার পরিজনদের অন্নসংস্থান করতে হিমসিম খাচ্ছেন জেলার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা। ইতোপূর্বে প্রতিবছর কেবলমাত্র সাতক্ষীরা জেলা জেলা থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মুল্যের কাঁকড়া চীন দেশে রপ্তানী হলেও সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানীর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেসকল কাঁকড়া নামমাত্র মুল্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। শুধু তাই নয়, কোটি টাকা মুল্যের মজুদকৃত রপ্তানীযোগ্য কাঁকড়া প্রতিনিয়ত খামারেই মারা যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।’ তাই কাঁকড়া শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী ও খামারীদের জীবন জীবিকা স্বাভাবিক করতে অবিলম্বে চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী কার্যক্রম চালুর দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন সাতক্ষীরার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি পরিতোষ মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ ঘোষ, কোষাধ্যক্ষ পরিতোষ বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক ফজলুর রহমান, সদস্য শরিফুল ইসলাম, শাহ আলম, কাঁকড়া খামারী আনারুল ইসলাম প্রমূখ। মানববন্ধনে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি সহ বিভিন্ন উপজেলার কাঁকড়া চাষী, খামারী ও ব্যবসায়ীরা স্বতষ্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করেন।চীনে কাঁকড়া রপ্তানী চালুর দাবীতে সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ী ও খামারীদের মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে টানা প্রায় ৫ মাস রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুনরায় চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী চালুর দাবীতে মানববন্ধন করেছেন সাতক্ষীরার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে দেবহাটার সখিপুরে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে প্রাথমিক পর্যায়ে লকডাউন চলাকালীন দুই মাস এবং সর্বশেষ গত ২৬জুন থেকে সরকারী নির্দেশে আরো প্রায় তিনমাস চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি তীব্র ক্ষতির মুখে পড়েছেন কাঁকড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সাতক্ষীরা জেলার লক্ষাধিক পরিবার। একটানা কয়েকমাস চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকায় ব্যাংক ঋনের চাপ আর পরিবার পরিজনদের অন্নসংস্থান করতে হিমসিম খাচ্ছেন জেলার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা। ইতোপূর্বে প্রতিবছর কেবলমাত্র সাতক্ষীরা জেলা জেলা থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মুল্যের কাঁকড়া চীন দেশে রপ্তানী হলেও সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানীর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেসকল কাঁকড়া নামমাত্র মুল্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। শুধু তাই নয়, কোটি টাকা মুল্যের মজুদকৃত রপ্তানীযোগ্য কাঁকড়া প্রতিনিয়ত খামারেই মারা যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।’ তাই কাঁকড়া শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী ও খামারীদের জীবন জীবিকা স্বাভাবিক করতে অবিলম্বে চীন দেশে কাঁকড়া রপ্তানী কার্যক্রম চালুর দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন সাতক্ষীরার কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও খামারীরা।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি পরিতোষ মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ ঘোষ, কোষাধ্যক্ষ পরিতোষ বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক ফজলুর রহমান, সদস্য শরিফুল ইসলাম, শাহ আলম, কাঁকড়া খামারী আনারুল ইসলাম প্রমূখ। মানববন্ধনে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি সহ বিভিন্ন উপজেলার কাঁকড়া চাষী, খামারী ও ব্যবসায়ীরা স্বতষ্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করেন। -

জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২৪%, মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার
ন্যাশনাল ডেস্ক: গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ। স্থির মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বার্ষিক মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে দুই হাজার ৬৪ ডলারে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রাথমিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘করোনাকালের কঠিন সময়েও এ অর্জন আশাব্যঞ্জক’- এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সমকালকে জানান, প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এটি কম হলেও আশাহত নন তিনি। তার কারণ, গত অর্থবছরের এক-তৃতীয়াংশ সময় তারা কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ছিলেন। চলতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। মার্চ থেকে জুন- এ চার মাস প্রায় সব কিছুই বন্ধ ছিল। তারপরও পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে খুবই ভালো বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার অতিক্রম করা খুশির খবর। এ প্রসঙ্গে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে গত অর্থবছর জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বিশ্বমন্দার কারণে সব দেশেই প্রবৃদ্ধির ব্যাপক পতন হয়েছে। অনেক দেশে ঋণাত্মক হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের অর্জন অবশ্যই ইতিবাচক।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে একটি ‘স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধি’ হবে।
তবে গবেষণা সংস্থা পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, করোনাকালে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে অনুযায়ী অর্জিত প্রবৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্রবৃদ্ধিকে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন. প্রতিবেশী দেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে কীভাবে এই প্রবৃদ্ধি হলো তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু গড় আয় দুই দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪ ডলার। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৭৫১ ডলার; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৬১০ ডলার।
বিবিএস বলেছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা প্রাথমিক। আগামী দুই মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির ধাক্কায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। করোনায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে আট দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়- যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে। করোনার প্রবল ধাক্কায় এ অর্জন ব্যাহত হলেও সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। এ জন্য চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আট দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। যদিও মহামারির সময় উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করায় বাজেট ঘোষণার পরপরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করেন।
মহামারির ধাক্কায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অনেক কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ। দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না। গত ৮ জুন প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০’-এ বলা হয়েছিল, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ছয় শতাংশে নেমে আসতে পারে। গত ৩ জুন প্রকাশিত আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব হবে মারাত্মক। আর এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার তিন দশমিক আট শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বলেছিল, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশের নিচে নেমে আসবে। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ করে একটা সম্মানজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।’ পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশও এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না বলে ধারণা করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জন খুব খারাপ না। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরছে। রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধি হবে। সুত্র: সমকাল -

অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্সের অবিশ্বাস্য চমক
মশাল ডেস্ক: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে করোনাভাইরাস মহামারির চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।জুলাই মাসের আরো দুই দিন বাকি থাকতেই পুরো জুন মাসের চেয়েও বেশি প্রবাসী আয় দেশে আসার রেকর্ড হয়েছে। চলতি মাসের মাত্র ২৭ দিনেই ২.২৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আশা করা যায় মাসের শেষে এটি ২.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। গত জুন মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৮৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং মে মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি ছিল। এখন সেই রেকর্ড ভাঙল চলতি মাসের মাত্র ২৬ দিনেই। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের সময়োপযোগী ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭.১১ বিলিয়ন (২৮.০৭.২০২০ তারিখ পর্যন্ত) মার্কিন ডলারের নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এযাবতকালের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। গত ৩০ জুন ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬.০১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি ছিল সর্বোচ্চ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সেটি পৌছেছে ৩৭.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ডে। বিগত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশের বৈদিমিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২.৭১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ১ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সরকারের এ অভূতপূর্ব সাফল্যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যাদের অক্লান্ত পরিাশ্রমে এ অর্জন সেই সকল প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
-

সাত দাবিতে ডিএসইর এমডিকে বিনিয়োগকারীদের চিঠি
ন্যাশনাল ডেস্ক: ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও টাকা ফিরিয়ে দেয়াসহ সাতটি দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
রবিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে দেয়া চিঠিতে এই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
এ সময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহাদাত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেয়া, আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি, তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অতিদ্রুত সমাধানের জন্য সাতটি দাবি বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হলো। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সম্প্রতি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা ও শেয়ার হাতিয়ে নিয়ে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা লাপাত্তা। এই বিষয়টি সমাধানের জন্য আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই হাউজের বিনিয়োগকারীদের টাকা ও শেয়ার ফিরিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক পক্ষকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের হয়রানি ও অপেশাদারমূলক কাজের জন্য ডিএসইর সার্ভিলেন্স ডিপার্টমেন্ট, মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট, ক্লিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, আইটি ডিপার্টমেন্টের বর্তমান দায়িত্বরতদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর নিয়ন্ত্রিত সব ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও সর্বশেষ টাকার পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের মোবাইল নম্বরে এএমএস বা ইমেইল বা বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানোর দাবি করা হয় চিঠিতে৷
এছাড়া প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকে অবশ্যই এসএমএস, ইমেইলের মাধ্যমে জানাতে হবে৷ বিনিয়গকারীদের আস্থা ধরে রাখতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেস্ট হাউজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে৷ চীনের সঙ্গে ডিএসইর মালিকানার শেয়ার বিক্রি বাবদ অর্জিত প্রায় এক হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার শর্তে সরকার থেকে ট্যাক্স মওকুফের সুবিধা ব্রোকারেজ মালিকেরা নিয়েছিলেন। সেটির কত টাকা প্রকৃতপক্ষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে তা তদন্ত করে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে৷
-

মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাগ প্লান্ট স্থাপন করবে বসুন্ধরা
ন্যশনাল ডেস্ক:
মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাগ প্লান্ট স্থাপন করবে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা। এছাড়া অঞ্চলটিতে অয়েল ডিপো করার পরিকল্পনাও রয়েছে শিল্প গ্রুপটির। মূলত বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের (বিআইসিএল) নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ ব্যাগ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে গ্রুপটি। এ লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ১৬ একর জমি লিজ নিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন (প্রাইভেট) লিমিটেড ও বিআইসিএলের মধ্যে ভূমি লিজ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন (প্রাইভেট) লিমিটেডের গ্রুপ ডিরেক্টর জন হক শিকদার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। এ কারখানা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।
পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন (প্রাইভেট) লিমিটেড দেশের প্রথম কোম্পানি, যাকে ডিজাইন, বিল্ড, ফিন্যান্স, অপারেট ও ট্রান্সফার (নকশা, নির্মাণ, অর্থায়ন, মালিকানা গ্রহণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর) ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য ৫০ বছরের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। বেজার সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মডেলে ২০৫ একর জমিতে অর্থনৈতিক মোংলা অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে।
কৌশলগত অবস্থানের কারণে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। আর প্রস্তাবিত খান জাহান আলী বিমানবন্দর থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ২০ কিলোমিটার দূরে।
-

উন্নয়ন- প্রবৃদ্ধি, বৈষম্য ও বাজেট
জিয়াউল হক মুক্তা
গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার- অর্থনৈতিক ইতিহাস বলে যে, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি কখনোই উন্নয়নের সমার্থক নয়, কিংবা উন্নয়ন পরিমাপের জন্য প্রবৃদ্ধিই একমাত্র সূচক নয়; বরং উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ হারে বৃদ্ধি পায় বৈষম্য। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়; উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতিতে মানুষে-মানুষে বৈষম্য বেড়েই চলছে। তবে চাইলে প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বৈষম্য মোকাবিলা করা সম্ভব।
বৈষম্যের রয়েছে বিবিধ মাত্রা- আয়ের বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, নারী-পুরুষ বৈষম্য, কেন্দ্রিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, নারী-পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, গ্রাম ও শহরের বৈষম্য, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যের বৈষম্য ইত্যাদি। এসব বৈষম্যের মধ্যে আবার রয়েছে ক্রসকাটিং সম্পর্ক; যেমন, আয়ের বৈষম্য প্রভাবিত হতে পারে নারী-পুরুষ বৈষম্য দ্বারা, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বৈষম্য প্রভাবিত করতে পারে আয়ের বৈষম্য ইত্যাদি। বহুমাত্রিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমতার সমাজ নির্মাণ করতে হলে তাৎক্ষণিক এবং আশু বা স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি বহুমাত্রিক নীতি-কৌশল-কর্মসূচি-প্রকল্প গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। যদিও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মতো শোনাবে- আয় বৃদ্ধি পেলে মানুষের ক্ষমতা ও অভিগম্যতা বাড়ে, যা অপরাপর বৈষম্য কমাতে কিছুটা সহায়তা করে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ চমৎকার সাফল্য প্রদর্শন করার সাথে সাথে তীব্রগতিতে নাগরিকদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য বাড়ার কথাটি কোনো নিন্দুকের মনগড়া ভাষ্য নয়, বরং সরকারি পরিসংখ্যানের। ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউসহোল্ড ইনকাম-এক্সপেনডিচার সার্ভে [এইচআইইএস] বা খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং এর অনুসরণে ২০১৬ সালে পরিচালিত আরও একটি জরিপের তথ্য অনুসারে উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এমনকি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও অব্যাহতভাবে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
কোনো দেশের আয়-বৈষম্য কতটা তা পরিমাপ করা হয় জিনি সহগ দিয়ে। জিনি সহগের মান যত কম হয়, আয়-বৈষম্য তত কমে; আর এর মান যত বেশি হয় আয়-বৈষম্য তত বাড়ে। এটা শূন্য হলে বোঝায় যে, দেশের সকলের মধ্যে চরম সমতা বিরাজ করছে; আর এর মান বাড়তে বাড়তে শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) বা বেশি হলে বোঝায় যে, দেশে আয়-বৈষম্য চরমতম অবস্থায় পৌঁছেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৪ সালে দেশে জিনি সহগের মান ছিল ০.২৪। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ০.৪৫৮। ২০১৬ সালে তা আরও বেড়ে হয়েছে ০.৪৮৩। ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ১০% পরিবারের হাতে ছিল আয়ের ৩৮.১৬%। এ সময় সবচেয়ে সম্পদশালী ৫% পরিবারে আয় বেড়ে হয়েছে ২৭.৯%, যেখানে সবচেয়ে গরিব ৫% পরিবারে আয় কমে হয়েছে ০.২৩% মাত্র। আয়-বৈষম্যের এ চিত্র শহরের চেয়ে গ্রামে আরও বেশি তীব্র। এ সময় গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগ ০.৪৩ থেকে ০.৪৫-এ এবং শহরাঞ্চলে ০.৪৫ থেকে ০.৫-এ বর্ধিত হয়। গবেষকরা জানান যে, বাংলাদেশে যেহেতু গবেষণার সময় ধনী পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, সেহেতু বৈষম্যের সত্যিকার চিত্র আরও ভয়াবহ বলে অনুমান করা অসঙ্গত নয়।
২০১৮ সালে আয়-বৈষম্যের উল্লিখিত চিত্রের ওপর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি চারটি পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছে। প্রথমত, দেশে আয়-বৈষম্য ছয় বছরে অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ সময়ে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক অংশটি আরও দরিদ্র হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত আরও সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যেই আয় আরও কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং চতুর্থত, দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি।
আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনের মধ্যে সম্পর্কহীনতার কথা বলছেন; প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসৃজন ও প্রকৃত মজুরি বাড়েনি। ফলে দেশ দারিদ্র্য বিমোচনে শ্নথগতি ও অসমতার বৃদ্ধিতে তীব্রগতির অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আমার দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে কম বরাদ্দের পাশাপাশি সুযোগের অসমতা আর সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিও আয়-বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ। অর্থনীতিবিদদের মতে, আর্থিক খাতে ধনীরা বেইলআউট, ঋণ, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ, কর মওকুফ, ভর্তুকি, লাইসেন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে সহায়তা পান, গরিবরা তা পান না। উপরন্তু গরিবের জন্য যে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে তাও দুর্নীতির কারণে কমে যায়।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের পরও কেন আয়-বৈষম্য বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা হবে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে খতিয়ে দেখার খবরের কথা কারও জানা নেই এবং ২০২০-২১ সালের বাজেটেও আয়-বৈষম্য নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; বরং আয়-বৈষম্য বাড়ানোর পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদ আহরণের জন্য প্রত্যক্ষ করের বদলে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়ানো হয়েছে; সব জনগণের ওপর ভ্যাটের মতো নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মিত আয়কর প্রদানকারীদের ওপর ডাবল ট্যাক্সেশনের নামান্তর ও গরিবের সামান্য আয়ের ওপর হিংস্র থাবা বসানোর নামান্তর। এর পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। করমুক্ত আয়সীমা সামান্য বাড়ানো হলেও নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য তা নাভিশ্বাসের নামান্তর; করমুক্ত আয়সীমা দশ লাখ টাকা করতে হবে। আগে আয়করের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩০%, তা ২৫%-এ নামিয়ে এনে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে; এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ ৩০% আয়কর আদায়ের বিধান পুনর্বহাল করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ও লুটপাটের অর্থ পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বাজেটের আয়ের ক্ষেত্রে উল্লিখিত জনবান্ধব পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরই মধ্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি সংসদে বাজেট আলোচনাকালে চার ধরনের ‘সর্বজনীন’ কর্মসূচি গ্রহণ, তার জন্য বর্ধিত বরাদ্দ প্রদান ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন; এগুলো হলো- সর্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি, সর্বজনীন সামাজিক-সুরক্ষা কর্মসূচি এবং সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি। এবারের বাজেটে এসব খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রুটিন-বৃদ্ধির বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ পায়নি। আয়-বৈষম্য বিবেচনায় জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে নগদ সহায়তা বা কার্ড প্রদানের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা বা নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। জাসদ এসব খাতে বর্ধিত বরাদ্দকে ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং বিনিয়োগ হিসেবে দেখে, যা পরে বহুগুণে ফেরত আসে।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্রভাবে বিরাজমান আয়-বৈষম্য নিরসনে বাজেটের আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রে সমান্তরাল জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি আশু বা স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি নীতিকাঠামো বিবেচনা করতে হবে; গাছের শেকড় কেটে আগায় জল ঢাললে চলবে না; আশু বা স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে দুর্নীতি-দুঃশাসন-লুটপাট-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি-সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের পদক্ষেপ, এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে দেশের সংবিধান নির্দেশিত সমাজতান্ত্রিক নীতি-আদর্শের প্রয়োগ- আয়-বৈষম্যসহ সব ধরনের বৈষম্য মোকাবিলার জন্য।
সাধারণ সম্পাদক, সিএসআরএল; জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
সংগৃহিত: দৈনিক সমকাল
-

অর্থ পাচার: সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়?
কাদির কল্লোল
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের পাচার করা অর্থের ব্যাপারে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত কোন তথ্য নেই।
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক বলেছে, গত বছর অর্থপাচার নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মুখে তথ্যের জন্য সুইজারল্যান্ড ব্যাংকের সাথে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে দুদক সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু এক বছরেও অগ্রগতির কোন খবর মেলেনি।
সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচার হওয়ার পর এর তথ্য জেনে বাংলাদেশে তা ফেরত আনার ক্ষেত্রে তৎপরতায় এখনও দুর্বলতা রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবছর যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে সেখানে ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৫হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। যা এর আগের বছর থেকে দেড়শ কোটি টাকা কমেছে।
কিন্তু সামান্য কমার এই ধারা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচার এবং সেই অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না।
“যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটার প্রবাহ বন্ধ করা এবং অর্থ ফিরিয়ে আনা-এই দু’টোর জন্যই যে ধরণের রাজনৈতিক এবং আইনি কাঠামো দরকার, সেটা আমাদের এখানে অনুপস্থিত রয়েছে।”

বিদেশের ব্যাংকে কাদের অর্থ, কীভাবে যায়?
বিদেশের ব্যাংকে জমা হওয়া এবং পাচার হওয়া অর্থের উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, “যে অর্থ বিদেশে যায়, তার বেশিরভাগই অপ্রদর্শিত বা দুর্নীতির অর্থ। আরেকভাবে যায়, সেটা হচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে। এসব উপায়ে যে টাকা চলে গেছে, সেটা কিন্তু সুইস ব্যাংক এবং গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির রিপোর্টেও দেখা যায়।”
গত বছরও সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা রাখার বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যদিও সংশ্লিষ্ট আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কারও বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে তাদের দেখার ক্ষমতা নাই। এরপরও গত বছর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এক বছরেও তিনি কোন অগ্রগতি জানতে পারেননি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, “আমরা গত বছরই বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখেছিলাম, ভারত যেমন একটা সমঝোতা স্মারক করেছে, যার মাধ্যমে তারা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের সাথে তথ্য বিনিময় করে থাকে। আমরাও বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র দিয়েছিলাম সুইস ব্যাংকের সাথে তথ্য বিনিময়ের সমঝোতা করার জন্য। আজকেও আমি আমার অফিসকে বলেছি যে, একটা রিমাইন্ডার দেন যে কী করলো তারা?”
তবে তথ্য জানার জন্য সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় এক বছরেও যে কোন অগ্রগতি হয়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সেই ধারণা পাওয়া যায়।
অর্থ পাচার বন্ধের জন্য গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো: রাজি হাসান বলেছেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশি যাদের টাকা জমা আছে, তাদের বেশিরভাগই বিদেশে থাকেন।
“এর আগেও আমরা সুইস ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে বা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, ব্যক্তিগত যে অর্থ সেখানে জমা আছে, সেটাও কিন্তু যারা বিদেশে বা বাইরে আছেন, তাদের অর্থ। এটা নয় যে সব টাকাই মানি লন্ডারিং হয়ে গেছে। যাই হোক মেকানিজম যেগুলো করতে হয়, সেগুলো কিন্তু আমরা করছি।”

বাংলাদেশে থেকে টাকা পাচার হয় বিভিন্ন উন্নত দেশে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আরও বলেছেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে মনে হয়েছে পাচারের বিষয় থাকতে পারে, কিছু কিছু চিহ্নিত করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। আরও কীভাবে এটা কমানো যায়, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।”
কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন,অর্থ পাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দূর্বলতা আছে।
“বিশ্বব্যাপী যে আজকাল টাকার চলাফেরা হচ্ছে আন্ডার গ্রাউন্ডে বা ওভার গ্রাউন্ডে, সেখানে আমাদের মতো একটা অর্থনীতি বা ব্যবস্থাপনার পক্ষে তা তন্ন তন্ন করে ফলো আপ করার ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতাও আছে।”
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতেই শুধু নয়, এখন কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে কঠোর বার্তা না থাকায় টাকা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
-

বিদেশী বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ গড়তে ব্যাংকিং জটিলতা কমানোর নির্দেশ
বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিনিয়োগকারীরা যাতে তাদের অর্থ-লভ্যাংশ সহজে নিজ দেশে বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকিং জটিলতা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির একদিকে যেমন জীবন-জীবিকার ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনা। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিনিয়োগ দেশে আনতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এবার অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-সচিব মু. শুকুর আলী গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এবং অর্থমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শুরু হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, কর ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজতর করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোয়, নীতিসহায়তায়, ব্যাংকিং নিয়মনীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে সহজে প্রত্যাবাসন তথা নিজ দেশ বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগীকরণ এবং তার বাস্তব প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
চিঠিতে বলা হয়, গত ৮ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘেœ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ-লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের সহজলভ্য দক্ষ শ্রমবাজার, বর্তমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা, উদীয়মান ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর ক্রমাগত উন্নয়ন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে। এছাড়া এনআরবি বা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের শিল্প, কৃষি এবং সেবাখাতে বিনিয়োগে অধিক হারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমানতের সুদের হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় অধিক হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় তারা ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারেন, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুততর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর এবং যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেয়া হবে। তারা ২১ দিনের মধ্যে মতামত দেবেন। তারা যাতে মতামত দিতে পারেন, সেজন্য সংশোধিত আইনের খসড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার জন্য এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থা যেমন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় এবং পরামর্শক্রমে চূড়ান্ত করে ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে দ্রুত এ আইনটি যাতে জাতীয় সংসদে পাস হয়ে আইনগত বাধা দূর হয়, সেই উদ্যোগ এ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সেজন্য ব্যাংকিং প্রক্রিয়া সহজতর ও গতিশীল করা অতি প্রয়োজন বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে বা অন্যত্র সহজে প্রত্যাবাসনের সুযোগ প্রদান করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এ চিঠিটির ব্যাপারে এখনো আমি কিছু জানি না। তবে এ ধরনের চিঠি যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসে তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে চীন থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে তাদের বাংলাদেশে আকৃষ্ট করতে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়ে সম্প্রতি জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি। যেসব কোম্পানি চীন থেকে রিলোকেট (সরে যাচ্ছে) করার চিন্তা করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের আলাপ করার জন্য জানিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের জানিয়েছি যে, আপনারা যেসব কোম্পানি চীন থেকে চলে যেতে চায় তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছেও এসব তথ্য দিয়েছি। আমরা চাই, বিশেষভাবে বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক। তাদের বলা হোক, বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আমাদের ১০০টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে, ২৮টি হাইটেক পার্ক হচ্ছে। এসব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য দেশ বিনিয়োগ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একটি করে ইকোনমিক জোন নিয়ে নির্দ্বিধায় বিনিয়োগ করে তাদের ফ্যাক্টরিগুলো চালু করতে পারে। আমরা এসব দেশকে বলেছি যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বাণিজ্যবান্ধব দেশ। বর্তমানে সরকার স্থিতিশীল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এর লভ্যাংশ সহজেই নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুব ভালো-এসব তথ্যই তাদের জানাচ্ছি।
ক্রবার ২৬ জুন ২০২০ | প্রিন্ট সংস্করণ
-

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘুর্নিঝড় আম্পান দুর্গত এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ
এলাকা ঘোষনা, উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, ঝড়-জলোচ্ছাস,
নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষকে
রক্ষার দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে
জেলা নাগরিক কমিটি। সোমবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে
বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, মমতাজ আহমেদ বাপী,
এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, আবুল হোসেন, আব্দুল
বারী, এম কামরুজ্জামান, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছাস ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর বাঁধ
ভেঙে প্লাবিত হওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত
যুদ্ধ করে চলেছে। এক সময় অন্য জেলা থেকে লোক না এলে এ এলাকার ধান কাটা
হতো না সেই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের নানামুখি উদ্যোগ নেয়ার সত্বেও এই এলাকায় দারিদ্র
পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষাসহ অন্যান্য সূচকেও এই এলাকা
পিছিয়েই থাকছে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
মানববন্ধন থেকে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ
প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন এবং
সেই অথরিটিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এবং বিভিন্ন
দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর
প্রদান করা হয়। -

প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল
ন্যাশনাল ডেক্স : ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতিয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরেরে জন্য ৫৬৮,০০০ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তাকে করোনাকালে দেশের অর্থনীতির সকল খাতের চাকাকে সচল রাখার একটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হিসেবে দেখছে দেশের ব্যবসায়ীমহলের একাংশ। তাদের মতে অপ্রদর্শিত অর্থবিনিয়োগের সুযোগ অর্থ পাচারের প্রবণতা কমাবে। তবে পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বাজেটকে ইতিবাচক বললেও উৎসে কর না বাড়ানো এবং নগদ প্রণোদনায় কর অব্যাহতি চেয়েছে।
এদিকে, তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল করোনাকালে তাদের ভাষায় অবাস্তব এবং অবাস্তবায়ন যোগ্য এই বাজেট প্রস্তাবে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে প্রস্তাবিত বাজেটের ৯৯ শতাংশই মানুষের স্বার্থ বিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন। এটি একটি আশান্বিত বাজেট হলেও তা বাস্তবায়ন দুরূহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি এক অনলাইন ব্রিফিং সদ্য ঘোষিত এই বাজেটকে গতানুগতিক বলে আখ্যায়িত করে বলেছে করোনার ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে ধরনের ইনোভেটিভ বাজেট দরকার ছিল সেটি হয়নি। করোনাকালে সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বাস্থ্যখাতকে বিবেচনা করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে এবারের বাজেটে অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয় । দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন বাজেটে এ বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয় নাই। বাজেট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সরকারের নির্দেশে মোবাইল সেবায় বর্তমান ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি হারে সম্পূরক শুল্ক কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এর প্রতিবাদ করে গ্রাহকরা বলেছেন এর ফলে সাধারন মানুষ দুর্দশায় পড়বে।
-

বাংলাদেশে ৫,৬৮,০০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা জুন ১২, ২০২০ জহুরূল আলম শেয়ার করুন
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরেরে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের জন্য মোট ৫৬৮,০০০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন মোট বাজেটে রাজস্ব ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৬২,৮৫৫ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০৫,১৪৫ কোটি টাঁকা। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরেরে বাজেটে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। বৈশ্বিক মহামারীর কারনে থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করার মত পরিস্থিতি কবে হবে সেই নিশ্চয়তা না থাকলেও তিনি আগামী অর্থ বছরেরে জন্য ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা স্থির করেছেন। তবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্যও ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা স্থির করা হলেও অর্থমন্ত্রী বলেন করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতির হিসেব-নিকেশ সম্পূর্ণভাবে ওলটপালট করে দেয়ায় প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে তা ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভয়েস অফ অ্যামেরিকার সাথে কথা বলেছেন বেসরকারি অর্থনৈতিক থিংক ট্যাঙ্ক পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বাজেটকে বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে গতিশীল হতে হবে এবং একই সাথে দুর্নীতিকে নির্মূলের প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে হবে।
-

বাজেটে চার খাতে গুরুত্ব দিবেন অর্থমন্ত্রী
নভেল করোনাভাইরাসের এই মহামারীতেই বসেছে বাজেট অধিবেশন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একাদিক্রমে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা দ্বিতীয় বাজেট। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালে এটি দ্বিতীয় বাজেট। আসন্ন বাজেটে চারটি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার অর্থমন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এবারের বাজেটটি গতানুগতিক ধারার কোন বাজেট নয়। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নানা ধরনের কষি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা থাকছে।
করোনার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবারের অধিবেশনে মিডিয়া কাভারেজের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার থাকছে না। এমতাবস্থায় সাংবাদিকদেরকে বাজেট ডকুমেন্টস সংসদ ভবনের বাইরে পশ্চিম পার্শ্ববর্তী মিডিয়া সেন্টার থেকে সোয়া ৩টায় বিতরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘বাজেট ডকুমেন্টস’ শিরোনামে বাংলা ও ইংরেজি লেখা আলাদা আলাদা প্যাকেটে বাজেট বক্তৃতা, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে।
বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd -এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে। প্রাপ্ত সকল মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।
ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত সরকারি ওয়েবসাইট লিংক এর ঠিকানাগুলোতেও বাজেট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। www.bangladesh. gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.bdpressinform.portal.gov.bd, www.pmo.gov.bd বাজেট উপস্থাপনের পরদিন অর্থাৎ আগামী আগামী ১২ জুন ২০২০ শুক্রবার বেলা ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জুমের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে অংশগ্রহণ করা যাবে।
-

আজ মহান মে দিবস
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে ওই শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকদের দমাতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১১ শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন আরও বহু শ্রমিক। পরে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে পহেলা মে-কে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন হয়ে আসছে। -

আন্তর্জাতিক সহায়তা না পাওয়া গেলে করোনা মহামারী মোকাবেলা গভীর সংকটে পড়বেঃ জাতিসংঘ
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ এবং এর অন্যান্য সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম সংকটে পড়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার কাছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছিল তার এক-চর্তুথাংশও পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত। ফলে করোনা মহামারী মোকাবেলায় জাতিসংঘের যেসব কর্মসূচি রয়েছে তাও পড়েছে ঝুঁকির মুখে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনি গুতেরেস গত ২৫ মার্চ কোভিড-১৯ তহবিলের জন্য ২শ’ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানালেও জাতিসংঘের ওয়েব সাইটের তথ্য মোতাবেক এই ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাহায্য মিলেছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
করোনাকালীন সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘের সংস্থা অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এপ্রিল পর্যন্ত সহায়তা চেয়েছিল ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অথচ এ পর্যন্ত এ সাহায্য মিলেছে মাত্র ১১ কোটি ডলার। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি ৩৫ কোটি ডলার সাহায্য চেয়েছিল, এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র ২২ শতাংশ। ইউনিসেফ জানিয়েছিল করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি শিশুকে সহায়তার জন্য ৬৫ কোটি ডলারের প্রয়োজন। অথচ এ পর্যন্ত তারা সাহায্য পেয়েছে ১১ কোটি ডলার। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সহায়তা চেয়েছিল ২৫ কোটি ডলারের, অথচ সহায়তা পেয়েছে অনেক কম। এ কারণে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাম যেমন- ডব্লিউএইচও, ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর প্রধানগণ এক আন্তর্জাতিক বিবৃতিতে গভীর ও সুস্পষ্ট শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা না পাওয়া গেলে করোনা মহামারী মোকাবেলা গভীর সংকটে পড়বে।
এদিকে, জাতিসংঘসহ এর সংস্থাগুলো কেনো আন্তর্জাতিক সাহায্য পাচ্ছে না- সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, অনেক দিন ধরেই দাতারা সাহায্য দিতে অনীহা দেখাচ্ছিল এবং তারা সাহায্য দেয়ার ক্ষেত্রে অবসাদগ্রস্ত।. -

করোনা প্রশমিত হলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পুনর্জাগরণ লক্ষ করা যাবে: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কলাম
ঢাকার একটি দৈনিকে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ‘করোনা জয় ও মানবতা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি করোনাভাইরাসের হামলা থেকে সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়ে ভবিষ্যতে করোনা আমাদের জন্য কী পরিণতি বহন করে আনবে তারও স্পষ্ট আভাস দিয়েছেন। তাঁর এই পাণ্ডিত্যপূর্ণ মননশীল প্রবন্ধে একজন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টি দ্বারা বর্তমান অবস্থার যে বিশ্লেষণ করেছেন তার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। কিন্তু অর্থনীতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান গ্রামের নকুল দাসের মতো, এ কথা স্বীকার করে বলছি, এক স্থানে এই প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদের সঙ্গে সহমত পোষণ করি না।
এই বিষয়টি হলো, তিনি মনে করেন, ‘করোনা-পরবর্তী বিশ্বে নিউ লিবারেলিজম বা নয়া উদারতাবাদের জয় হবে। নামে উদারতাবাদ। আসলে এটি হচ্ছে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম ও মার্কেট ইকোনমিরই মিলিত নাম। নিউ কনজারভেটিজম বা ‘নিউকন’ নামে এই মানবতাবিরোধী শক্তিই এখন আমেরিকায় ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমান বিশ্ববিধ্বংসী করোনা-হামলার পর এই আগ্রাসী বিশ্বধনতন্ত্রই আরো শক্তিশালী হবে এবং শোষিত মানবসমাজ আরো শোষিত এবং দুঃখ-কষ্টের ভাগী হবে বলে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বলেছেন, সমাজতন্ত্রী বিশ্বের নব উত্থানের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
তাঁর নিজের ভাষায় বলি, ‘…নব্য উদারতাবাদ শনৈ শনৈ এগিয়ে চলে। এই প্রক্রিয়ার আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে ২০০৮ সালে বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় ধস নামে এবং বিশ্বমন্দা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই অবস্থা সত্ত্বেও নব্য উদারতাবাদ সাময়িক সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ায় এবং এগিয়ে চলে। পাশাপাশি কোনো কোনো দেশকে সময় সময় বাম রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে দেখা গেলেও তার অগ্রগতি হয়নি।’
অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদকে আমি শ্রদ্ধা করি। আলোচিত প্রবন্ধটিতেও তিনি করোনা-জর্জরিত বিশ্বের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিস্থিতি চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তবে তিনিও সম্ভবত মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার মতো নব্য উদারতাবাদের চূড়ান্ত বিজয়ে বিশ্বাস করেন। যদি করেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। কাজী খলীকুজ্জমানই বলেছেন, ১৯৯০ সালে ফুকুয়ামা উদারতাবাদের চূড়ান্ত বিজয়ের কথা বলেছেন। ২০০৪ সালে তিনিই আবার নব্য উদারতাবাদের গ্রাসে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বিপুলভাবে বাড়ছে দেখে রাষ্ট্র তথা সরকারের শক্তি বাড়ানোর কথা বলেছেন। অর্থাৎ উদারতাবাদের অবাধ আগ্রাসন থেকে জনগণের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারের হাতে আবার অনেকটা ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া দরকার।
আমি এই অর্থনীতিবিদের আলোচ্য বিশ্লেষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করি; কিন্তু তাঁর প্রেডিকশনের সঙ্গে নয়। ২০০৮ সালে বিশ্বধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের ত্রুটির জন্যই মন্দা দেখা দেয়। বড় বড় ব্যাংকে ধস নামে। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে থাকে। এই ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক বিধান মেনে রাষ্ট্র বা সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে করপোরেট পুঁজি বাধ্য হয়। ব্রিটেনের তৎকালীন লেবার দলীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সরকারি ফান্ড থেকে পড়ন্ত অবস্থার ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে (সাময়িকভাবে) কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে বাঁচানো হয়, শেয়ারবাজারের ধস থামানো হয়। অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক কম্যান্ড অর্থনীতি বিশ্বপুঁজিবাদকে রক্ষা করে। লন্ডনের ডেইলি টাইমস একে আখ্যা দিয়েছিল, ‘Sociolistic Prescription for capitalist illness’ (ধনতন্ত্রের রোগ সারানোর জন্য সমাজতান্ত্রিক চিকিৎসাপত্র)।
আমরা সবাই জানি, নয়াচীন অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কমিউনিস্ট রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি গ্রহণ করেছে এবং একটি অর্থনৈতিক সুপারপাওয়ার হয়েছে। ফলে এটিকে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ সোশ্যালিজম ও কমিউনিজমের সম্পূর্ণ পরাজয় বলে বিশ্বময় প্রচার করছে। কিন্তু ধনতান্ত্রিক বিশ্বের অর্থনীতিবিদরা যে কথাটি সযত্নে লুকিয়ে রেখেছেন তা হলো, বিশ্বধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এখন যতই আগ্রাসী মূর্তিতে দেখা যাক, এটি তার ভয়াল প্রেতমূর্তি। অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ে তারও বিশাল পরাজয় ও পতন ঘটেছে, যা কয়েক দশক ধরে চেপে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের শক্তিশালী অভ্যুদয়ে পশ্চিমা ধনতন্ত্রের পতনের সূচনা হয়। পশ্চিমা দেশগুলো এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় তার বিশাল বাজার হারায়। ধনতন্ত্রের পতন ঠেকাতে আমেরিকায় রিগ্যান প্রেসিডেন্সির আমলে যে ‘রেগানোমিক্স’ অর্থনীতির কথা বলা হয়, তা নব্য উদারতাবাদের পূর্বসূরি। ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের টোরি সরকারের আমলে অর্থনীতির পতন ঠেকানোর জন্য পোল ট্যাক্স নামে এক নতুন কর জনসাধারণের ওপর চাপানো হয়। জনগণ বিদ্রোহী হয়। মার্গারেট থ্যাচার দ্রুত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারা অনুসারে চিকিৎসা, আবাসন ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘোষণা করেন, ক্যাপিটালিজম এখন আর ধনীদের হাতে বন্দি নয়, তা এখন জনকল্যাণেরও বাহন। তার নাম পিপলস ক্যাপিটালিজম বা জনগণের ধনতন্ত্র।
কট্টর ক্যাপিটালিজমের পথ থেকে সরে এসেও মার্গারেট থ্যাচার রক্ষা পাননি। পোল ট্যাক্সের জন্য অসন্তুষ্ট জনসমাজের বিক্ষোভের ফলে তাঁর পতন হয়। তাঁরই শিষ্য জন মেজর পরবর্তী টোরি প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়ে থ্যাচারপন্থীরা ভেবেছিল, জন মেজর মার্গারেট থ্যাচারের ‘অস্টারিটির’ পথ ধরবেন। অর্থাৎ জনকল্যাণ খাতে সরকারি খরচ বিপুলভাবে কমাবেন। প্রথম দিকে জন মেজর তা-ই ছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তিনি তাঁর চরিত্র পাল্টে রাষ্ট্রের হাতে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়ান এবং ওয়েলফেয়ার খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করার নীতি গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচার যে পিপলস ক্যাপিটালিজমের কথা বলেছিলেন, তা আসলে কিছুটা বাস্তবায়ন ঘটে জন মেজরের প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলেই।
পশ্চিম ইউরোপে যে সোশ্যাল ডেমোক্রেসির বিস্তার ঘটে, তা আসলে ধনবাদ ও সমাজবাদের মিশ্রণ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন অধিকৃত পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের নামে একনায়কত্বমূলক অত্যাচারী শাসন চাপাতে গিয়ে জনগণের মনে সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থার আবেদন নষ্ট হয়। আমেরিকার পাতা আফগান যুদ্ধের ফাঁদে পা দিয়ে দ্বিতীয় সুপারপাওয়ার হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর পতন হয়। মানুষ ধরে নেয়, বিশ্বে সমাজতন্ত্রের পতন ও পরাজয় ঘটেছে।
এই সুযোগে ইউরোপের ধনবাদী রাষ্ট্রগুলো আমেরিকার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। চীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী প্রণোদনা থেকে কৌশলগত কারণে আমেরিকার Valued ally বা দামি মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ধনবাদ ধরে নেয়, তার আর কোনো প্রতিযোগী নেই। তার হাতে তিন মারণাস্ত্র। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, সামরিক ক্ষেত্রে ন্যাটো। রাজনীতির ক্ষেত্রে বশংবদ জাতিসংঘ। এই তিন বাহুর শক্তিকে ভিত্তি করেই আমেরিকার হাতে চলে যায় গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের নেতৃত্ব। আমেরিকায়ই সামরিক শক্তিনির্ভর নিও-লিবারেলিজমের উদ্ভব। তারা বুশ পরিবারের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউসে বসার পর প্রথম শক্তি পরীক্ষা চালায় মধ্যপ্রাচ্যে। লিবিয়ার গাদ্দাফি ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করে তারা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
নব্য উদারপন্থী পশ্চিমা ধনবাদী অ্যাক্সিসের বিরুদ্ধে প্রথম চ্যালেঞ্জ আসে আন্তর্জাতিক ইসলামিস্ট ও জিহাদিস্টদের তরফ থেকে। তারা পশ্চিমা ধনবাদী ব্যবস্থাকে নয়, পাশ্চাত্য সমাজব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ জানায়। নিজের সৃষ্ট পোষা দৈত্যের বিদ্রোহে পশ্চিমা রাষ্ট্রশক্তি প্রথমে ভীত হয়নি। তারা ভেবেছিল, জিহাদিস্টদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সন্ত্রাস দমনের নামে বিশ্বের সব রাষ্ট্রকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে। জিহাদিস্টরা পরে চূড়ান্তভাবে পরাজিত না হলেও তাদের সাময়িকভাবে দমন করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় না হলেও ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর ওপর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ আসে মার্কিন সহায়তায় সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পুষ্ট নয়াচীনের কাছ থেকে। ওবামা আমল পর্যন্ত আমেরিকার নীতি ছিল চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ইসলামী শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠা ইরানকেও বেশি না খোঁচানো। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতেই নব্য উদারবাদীরা আরো শক্তিশালীভাবে ক্ষমতায় আসে।
তারা নয়াচীনকে দমনের জন্য তার সঙ্গে ট্রেড ওয়ার শুরু করে এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে। প্রকাশ্য আণবিক যুদ্ধে জড়ানোর চেয়ে (কারণ চীনের হাতেও আণবিক বোমা এবং ইরানেরও আণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষমতা আছে) প্রয়োজনে গোপন জীবাণুযুদ্ধে নয়াচীনকে কাবু করার প্রস্তুতি আমেরিকার আছে। কয়েকটি ল্যাবরেটরিতেই বিষাক্ত জীবাণু নিয়ে তাদের গবেষণা চলছে। অন্যদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের গবেষণাগারটি যে বিষাক্ত জীবাণু নিয়ে, তা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
গত ১৯ এপ্রিল সানডে টাইমস হুবেই প্রদেশের গবেষণাগার নিয়ে একটি বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছে। বিবরণটির শিরোনাম :Curse of the Bat woman what went on in Wuhan lab? (ব্যাট ওম্যানের অভিশাপ—উহান ল্যাবরেটরিতে কী চলছে?) এই ল্যাবরেটরির জীবাণুবিদ শি ঝেঙলি (She Jhengli) প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন, চীনা ল্যাবরেটরি থেকেই ভুলক্রমে এই দৈত্য মুক্তি পেয়েছে। এখন তা মনে করছেন না। তাহলে কি কোনো মার্কিন গবেষণাগার থেকে তা মুক্তি পেয়েছে? এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে? দুই পরাশক্তির গোপন প্রতিযোগিতা থেকে এই মারণদূতের জন্ম, তাতে সন্দেহ পোষণ করা চলে কি?
আমার মতো এক অভাজনের বক্তব্য, এই যুদ্ধেও নয়া উদারতাবাদীদের একচেটিয়া জয়লাভের সম্ভাবনা কম। তবে এই যুদ্ধে মানবতা ধ্বংস হতে পারে। এই যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে, তা আমি মনে করি না। তবে করোনাভাইরাসের বর্তমান হামলা থেকে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের ওপর অর্থনৈতিক মন্দার বেশে যে প্রচণ্ড আঘাত আসবে, তা সামলানোর জন্য ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে ২০০৮ সালের মতো সমাজতান্ত্রিক প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে হবে। আরো সহজ কথায়, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বহু বিষয় গ্রহণ করতে হবে।
এই করোনাভাইরাস প্রশমিত হলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পুনর্জাগরণ লক্ষ করা যাবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যেমন সাম্রাজ্যবাদ ও ধনতন্ত্রকে পিছু হটতে হয়েছিল, এবারের করোনা-হামলার পরও নব্য উদারতাবাদীদের বেশ কিছুটা পিছু হটতে হবে।
লন্ডন, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ / আজকের সূর্যোদয় অনলাইন।।
-

বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে : ডব্লিউএফপি
করোনার কারণে দরিদ্রদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার ব্যবস্থা জাতিসংঘ করতে না পারলে অন্তত তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বেসলে।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জেরে থমকে যাওয়া বিশ্বব্যবস্থায় গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘ তহবিল গঠন না করলে এ ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। কানাডিয়ান সংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে এ কথা বলেন তিনি।
ডেভিড বেসলে আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারের আর্থিক সহায়তায় বিশ্বে অন্তত ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয় ডব্লিউএফপি।
এর মধ্যে অন্তত তিন কোটি (৩০ মিলিয়ন) মানুষ খাবার না পেলে অনাহারে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। জীবন বাঁচাতে হলে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডব্লিউএফপি প্রধান ডেভিড বেসলে আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি থমকে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ ডব্লিউএফপিকে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে। আর এতে বিপর্যয় আরও বেড়ে যাবে।
শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডব্লিউএফপি অর্থায়ন বন্ধের কবলে পড়লে সর্বনিম্ন তিন কোটি মানুষ মারা যাবে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে দিনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এ কারণে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনার সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনা করার কথাও বলেন তিনি।
সুত্র: বিনিয়োগ বার্তা
