ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার চেয়ে অপবাদমুক্ত থাকার ওপর জোর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ফলে সিটি নির্বাচনে যেনতেন বিজয় ঘরে তুলতে চান না ক্ষমতাসীনরা। স্থানীয় এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চান দলটির নীতি-নির্ধারকরা। তাই জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে অপবাদ যাতে ঘাড়ে এসে না পড়ে, তা-ই সুনিশ্চিত করতে চান তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো এমনই আভাস দিয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, অপবাদমুক্ত থাকতে চায় বলেই দুই সিটিতে ‘উইনিং’ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ধরনের প্রার্থীই খুঁজে বের করা হবে। আগামী রবিবার (৮ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড তেমন প্রার্থী খুঁজে বের করবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আমরা হেরেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেখানে আমরা বিজয়ী হয়েছি।’ ওই নেতা বলেন, ‘এতে করে আমাদের যেমন সমস্যা হয়নি, সরকারকেও বেকায়দায় পড়তে হয়নি। এই দুটি সিটি নির্বাচনেও আমাদের অবস্থান এবং কৌশল থাকবে একই রকম।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘দুই সিটিতে নির্বাচনের কৌশল হবে জিতে হারা নয়, হেরে গিয়ে যদি জেতা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করবো। কোনও অপবাদ নিয়ে জিতবো না! অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়ে জিতে আসতে যা যা করণীয় আওয়ামী লীগ তা করবে। তবে অপবাদ নিয়ে জয় নয়।’
সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক নেতা দাবি করেন, খুলনা সিটিতে সরকার যে উন্নয়ন সাধন করেছে, তাতে খুলনায় নৌকা জিতবে বলে মনে করছি। আর গাজীপুর নৌকার ঘাঁটি, সেখানে নৌকার বিজয় কঠিন কিছু হবে না।
ওই নেতা বলেন, ‘ভোটারদের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হলে নৌকা ঠেকানো যাবে না এ দুই সিটিতে।’
নৌকার ঘাঁটি বলা হলেও গতবার গাজীপুরে কেন নৌকা পরাজিত হলো জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘গতবার সিটি হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি পায় গাজীপুর। সবকিছু ভালো করে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনের আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করে, তাতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে তারা, যা ওই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এর বাইরে বিএনপি ওই নির্বাচনে অনেক টাকা ছড়িয়েছে। ওই তুলনায় আমরা পরিকল্পিত ছিলাম না। গতবার গাজীপুর নির্বাচনে আওয়াজের ওপর ছিলাম কেবল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এসব নেতা এবার নৌকার প্রার্থী জেতার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তরুণ ভোটারদের; তারা ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এই তরুণ ভোটাররা সন্তুষ্ট বলে তাদের মত। ফলে তরুণরা এবার নৌকার প্রার্থীর ওপর আস্থা রাখবে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হয়তো অনুপস্থিত থাকবেন। কারণ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পেয়ে তিনি কারাগারে আছেন। তার মুক্তির বিষয়টিও অনিশ্চিত। ফলে খালেদাবিহীন নির্বাচন ও প্রস্তুতি বিএনপির জন্য একটি বড় জটিলতা তৈরি করবে। বিএনপিতে সেই মানের নেতার সংকট রয়েছে, যারা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। তাই খালেদার এই অনুপস্থিতি দুই সিটির ভোটের আগে বিএনপির জন্য ‘মাইনাস’ পয়েন্ট, আর এটাই হলো আওয়ামী লীগের জন্য ‘প্লাস’ পয়েন্ট।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করাই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। জয়-পরাজয়কে সরকার যেমন প্রাধান্য দিচ্ছে না, তেমনি আওয়ামী লীগও প্রাধান্য দিচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দুই সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ চায় অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আমরা মানসম্পন্ন নির্বাচন নিশ্চিত করে বিজয়ী হতে চাই।’
Author: dakshinermashal
-

সিটি নির্বাচনে অপবাদ নিতে চায় না আ. লীগ
-

বিএনপির ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল: সেতুমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘বিএনপির ক্ষমতার উৎস হচ্ছে বন্দুকের নল-আওয়ামী লীগের নয়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস দেশ, মাটি ও দেশের জনগণ।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ফেনী সদরের ফতেহপুরে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাস পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগের তা দরকার হয়নি। তারা সামরিক শাসনে থাকার সময় দল গঠন করে রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন।’ খালেদা জিয়ার কারাবাস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে ঢুকিয়েছেন আদালত, আবার আদালতই তাঁকে মুক্তি দিতে পারেন। এখানে সরকারের কিছু বলার নেই।’
নির্মানাধীন ওভারপাসের ব্যাপারে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের ১৫ মে’র মধ্যে এর অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার উক্য সিং, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বিকম, ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুরে রেলওয়ে ওভারপাসটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সহায়তায় আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে।
-

‘খালেদা জিয়ার অবস্থা বেশি ভালো নয়’
ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশি ভালো নয় বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপিপ্রধানের মনোবল শক্ত রয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে দিয়ে করানোর দাবি জানিয়েছেন মহাসচিব।
শুক্রবার বিকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বের হয়ে এসব কথা জানান ফখরুল। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে একাই নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন তিনি।
এর আগে গত ২৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েও পরে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে সাক্ষাৎ স্থগিত করেন ফখরুল।
তারও আগে গত ৭ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এম বি এম আবদুস সাত্তার।
এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও ছেলে অভীক এস্কান্দারসহ পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়াও লন্ডন থেকে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত কোকোর স্ত্রী ও মেয়ে।
এর বাইরে আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান ও এ জে মোহাম্মদ আলীও দেখা করেছেন বিএনপিপ্রধানের সঙ্গে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছর কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
-

সিরাম না
ছায়েদ বিশ্বাসের তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলের নাম সুখচাঁন। ছোটছেলে বিধায় অতি আদরের কিন্তু সবার ধারণা সে পাগল। এই পাগল ভাবার কারণ- সুখচাঁনের কাছে তারা কয় ভাই জিজ্ঞাসা করলেই বলে, আব্বার দিয়ে আমরা চার ভাই। সুখচাঁনের একটাই কাজ সারাদিন ঘুরে বেড়ান।
আশির দশকে মদনপুর গ্রামে প্রতিবছর যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, ম্যাজিক দল নিয়ে আসতো। উদ্দেশ্য ছিল মদনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সাধন। স্কুলের উন্নয়ন না হলেও কিছু লোকের পকেট ভারি হতো। এসব তথ্য সুখচাঁনের জানার কথা না। সেই বয়সও তার হয়নি। প্রতিবাদি মেধাও সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে সে বঞ্চিত। তবে সুখচাঁন খুব আনন্দ পেত। সারাদিন প্যান্ডেলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সুন্দর সময় পার হতো। একবার সার্কাস পার্টি এলে সুখচাঁনের আনন্দ আরও বেড়ে গেল। বানর, বাঘ, ভালুক আরও কত কি এসেছে। একটা মস্ত বড় হাতি এসেছে। দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় ছোটখাট একটা কালা পাহাড়। সকালবেলা হাতি আশপাশের পাড়াগায়ে গামালে (বেড়াতে) যায়। হাতি দেখে গ্রামের লোক ধান, চাল, টাকা-পয়সা দেয়। কলাগাছ ফ্রি, হাতি যত খেয়ে পারে। কেউ বাঁধা দেয় না; বরং খুশি হয়। সুখচাঁন সারাদিন হাতির পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়ায়। পনের দিনের একদিনও সে ঘুরতে মিস করিনি বরং সার্কাস পার্টি চলে যাওয়ার সময় সুখচাঁন খুব কষ্ট পেয়েছিল। অনেকদিন যাবৎ অনেকের কাছে তার দেখা বিশাল হাতির বর্ণনা দিয়ে তৃপ্তি বোধ করেছে।
সুখচাঁনের কাছ থেকে ধীরে ধীরে শৈশব কৈশোর বিদায় নিয়েছে। অকর্মণ্য শরীরে যৌবন এসেছে। বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। মা-বাবার দুশ্চিন্তা তাদের মৃত্যু হলে পাগল সুখচাঁনের কি হবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল সুখচাঁনের বিয়ে দাও। কলে পড়লে সব পাগলামি ছুটে যাবে।
সুখচাঁন বিয়ে করল কিন্তু সংসারী হল না। এর মধ্যে তার বাবা মাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। সুখচাঁন বাবাও হয়ে গিয়েছে। এবার কলে পড়ে রিকসা-ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে হল। পাগলামিও কিছুটা ছুটে গেল।
সুখচাঁন বেশ বুড়িয়ে গিয়েছে। গ্রামের বাজারে ভ্যান নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকে। যাত্রী খোঁজার থেকেও চলমান মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। হাসির অর্থ বুঝা মুশকিল।
ফাগুনের প্রথম দিকে গ্রামময় হৈ চৈ পড়ে গেল মুড়াগাছা বাজারে সার্কাস পার্টি এসেছে। খবর শুনে সুখচাঁনের ছোটবেলার ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। একদিন ভ্যান না চালিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল। সারাদিন সার্কাস প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি করল। একটা হাতি এসেছে কিন্তু হাতি দেখে সুখচাঁনের মন ভরল না। হাতিটা রোগা, দূর্বল, আয়তনে খুব ছোট। কেউ এখন আর কলাগাছ ফ্রি দেয় না। এককাঁদি কলার দাম শতশত টাকা। কে দেবে?
শেষ বিকেলে সুখচাঁন মদনপুর বাজারের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরছে। বাজারে চায়ের দোকানে বহুলোক। সেখান থেকে হোসেন আলি সুখচাঁনকে ডাক দিল। কোথায় গিয়েছিল জানতে চায়লো। সুখচাঁন বলল, মুড়াগাছায় সার্কাস প্যান্ডেলে গিলাম।
হোসেন বলল, হাতি দেখিছিস?
সুখচাঁন বলল, দেখিছি তবে সিরাম ( সেই রকম ) না।
হোসেন বলল, সিরাম না মানে?
সুখচাঁন একগাল হাসল। হাসিতেই বুঝা গেল শৈশবে যে হাতি মদনপুর গ্রামের সার্কাস প্যান্ডেলে এসেছিল সে তুলনায় এ হাতি যেন মরা হাতি। এখন সুখচাঁনের যে যেখানে দেখা পায় সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে- ‘সিরাম না।’
সুখচাঁনের কথাটা মানুষের কাছে জীবন্ত হয়ে গেল। এখন এলাকায় তুলনামূলক ভাল কিছু না হলে একগাল হেসে বলতে শুনা যায়-সিরাম না। -

ভুলে গ্যাছি
ভুলতে ভুলতে ভুলে গ্যাছি
প্রিয় নাম ধরে ডাকতে’
ভুলে গ্যাছি প্রিয় কবিতার ঘ্রাণ
ভুলে গ্যাছি নিজেকেও
ভুলিনা কেবল তার অব্যক্ত চোখের
সেই ব্যাকুলতা
যে ব্যাকুলতা আর কারো মাঝে দেখিনা
এমন কি তার মাঝেও না
ঘর গৃহস্থলী জীবনে যে আমার
চিরোকালীন পথের সাথি কাগজে কলমে
ভুলেগ্যাছি কাঁদা জল মাখা পথের প্রান্তে -

খোঁড়া বসন্তের কবিতা
বসন্তের কথা বলেছিলে তুমি
বসন্তে ফুল ফোটার কথা বলেছিলে
দগ্ধ দুপুরে দুরন্ত পথিকের কথা বলেছিলে
মেঘের ঘরে বৃষ্টির ঘুমিয়ে থাকার গল্প বলেছিলেসবুজ আনন্দে নতুন পাতারা জেগে ওঠে
ভাটিয়ালি গন্ধে দুলে ওঠে বাতাসের বুকপলাশের ঝরে পড়া মুগ্ধতায় তুমি
রক্তের উচ্ছ্বাসে জেগে ওঠা মানুষের কথা বলেছিলে
অথচ তোমার বসন্তে
কোকিল ডাকার কোনো কথা বলতে পারোনিযে বসন্তে কোকিল ডাকে না
আমি তাকে খোঁড়া বসন্ত বলেই ডাকি। -

চা-বাগানের কাছে
ঝিমিয়ে পড়ো না, চা-বাগান।ভোর নামছে একশোটি রঙে।
সূর্য ছুঁয়েছে ব্যস্ত হাত।
শ্রমজীবীদের কোলাহলে স্তব্ধতা ভাঙছে।
তাপে ও উত্তাপে আবহাওয়াবার্তা স্বাভাবিক আছে।
গৃহমুখী অভিপ্রায় আবাসন খুঁজছে।
প্রিয় মগ্নতা, থেমে যেও না।ঝিমিয়ে পড়ো না, ছায়াভালোবাসা চা-বাগান।
এককাপ প্রণোদনা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
জড়ত্বের কোল থেকে আশ্রয় চাইছে শিশু,
যুবক, যুদ্ধাহত তরুণ, যাবতীয় প্রেম।
কারখানা জাগছে নতুন করে।
সঙ্গে নিয়ে এসেছে শুভ্র পার্থিবতা।
দ্যাখো তার ঘরবাড়ি, আশ্রয়,আহবান।
প্রিয় স্থিরতা, হৃদয়ের লেনদেন বন্ধ করো না।ঝিমিয়ে পড়ো না নিবিড় চা-বাগান।
তোমার পুষ্পিত হৃৎকম্পন থামিয়ে দিও না। -

ঘুনপোকা
আমার আজকের সুন্দর সবুজ সময়গুলো
ঘুনপোকার মতো রোজ একটু একটু করে খেয়ে যাচ্ছো তুমি।
বুকের বাম পাশটায় করেছো ক্যাকটাস চাষ
যেখানে প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াতাম আমি।
আজ আর কোন অতীত আমার চোখে কাটা হয়না
বর্তমানে ঘুমে কাতর আমার সাজানো স্বপ্নেরা।
তুমিও কি এমনিই অতীত
বর্তমানের বর্তমান? -

মধ্যরাতের পিং
রাত রেখে গেলাম
হাত রেখে গেলাম
রাত নিয়ে নেড়োচেড়ো
হাত নিয়ে নেড়োচেড়ো
বন্ধু!
ক্লান্ত এসময়,
রাতে হাত
হাতে রাত
নষ্ট করা ঠিক হবে না … -

তালিম
রোজ সন্ধ্যায় মেয়েটি হারমোনিয়াম নিয়ে বসে
তোমার আঙুল তখন তবলার সমকেন্দ্রিক বৃত্তের পরিধির উপর
খুলে যায় বিস্তৃতির জানালা…
আমাদের পূর্ব অথবা পরজন্মের যুগ্ম সমমেলআমরা কিভাবে সমস্ত প্রাণীদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে
ঢুকে গেছি অন্য গ্রহে
কিভাবে বেয়াদপ সমুদ্রের ভেতর হতে বেরিয়ে
মেয়েটি নিয়মিত রেওয়াজ করেতাল আর সুরের যুগলবন্দী হলে
নতুন রাগের শরীরজাত তরঙ্গ
কয়েক আলোকবর্ষ দূর থেকে এগোয় আমাদের দিকে
গন্তব্যহীন…বন্দরের ঠিকানা হারিয়ে গেলে এভাবেই প্রজন্মের শরীরে মরক আসে…
-

নন্দনব্রত
কানা-গলির মেয়েরা কানা কি না দেখা হয়নি তো, মা
ধুলোখেলার ছলে যা দিয়েছ তা তো অনুৎসবের পাঁতাবাাঁশি
ধরলেও না ধরালেও না, বাজাতেও শেখালে না
রুপনন্দনে জমলে আর্শিবাদ কে করবে তোমার কচ্ছ মুক্তশুনেছি বেলারুসে সূর্যোদয় দেখলে পর চোখ শাস্ত্রের উন্নতি হয় আর
বেহিসেবিরা কুমিরসঙ্গবাসে করে পথের শিলান্যাশ
তালো মা রুপ দক্ষ তালুতেই তোলো বন-তুলসি, বেঘোরে না ঘুমিয়ে করক্ষেপে
মুক্তো ফলাও, তোমার দ্বারে পা বুনে আমিও শিখি উরুস্বর্ণ-ঠোঁটের মধু
কলালক্ষীর নাভী খাজে দিতে শিখি বর্ণ-প্রলেপ মা’গোতবুও যদি দেবেই
শরীর দিলে দাও ভূষণশিল্প জল দিলে দাও জলকন্যা, ওঠাতে দাও সিংহ ভূমে
কোলজে ভরে বিলাস ফসল, নইলে কিন্তু যষ্ণবরাত নিকুচি করে আমি মা মরু গড়বো
রোদে রোদে, বালিতে বালিতে, রোদবালিতে রোদবালিতে…। -

একাত্তরের রঙ্গ ব্যঙ্গ
যুদ্ধ নিঃসন্দেহে অমানুষের পরিচয়। যুগে যুগে যত যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে তার ভয়াবহতা যেমন আছে তেমনি কিছু রঙ্গ রসিকতাও হয় যা যুদ্ধ পরিবর্তীতে চায়ের আসর জমে ওঠে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের দেশেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে ছিল যা দাদী নানীরা তাদের নাতি নাতনিদের এখন গল্প আকারে বলে শোনায়।
গল্পগুলো সত্য তবে ক্ষেত্র বিশেষ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
একাত্তরের যুদ্ধের সময় পাকিস্থানী আর্মিরা যে এলাকা দখল করে রাখত সেখানে বাঙ্গালীদের অবাঁধে চলাফেরা করতে হলে তৎকালীন আঞ্জুমান অফিস থেকে পাকিস্থানীদের পক্ষে আছি এই মর্মে আইডেনটিটি কার্ড বা পরিচয় পত্র দিত। এটা জীয়ন কাটি হিসাবে জীবন বাঁচাত। পাকিস্থানী সাধারণ সৈন্যেরা অধিকাংশ গজ মূর্খ ছিল। তারা বলত ডান্ডি কার্ড। যশোর জেলার ঝিকরগাছা বাজারের কপোতাক্ষ নদের রেল ব্রীজের উপরে আর্মি টহল দিত। সাথে থাকত গন্ডমূর্খ রাজাকার, মুজাহিদ, আলবদর। গ্রাম গঞ্জ থেকে যেই বাজারে আসত তার ডান্ডি কার্ড দেখাতে হতো। না থাকলে মার, নির্যাতন তো থাকতোই, সন্দেহ হলে অনেক সময় ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলত।
একদিন কাশেমপুরের ইচড়েপাঁকা দীন মোহাম্মদ রেশন কার্ড নিয়ে ডিলারের কাছ থেকে চাল আটা তুলতে এল। পাকা উপাধি পাওয়ার কারণ মূর্খ হলেও উপস্থিত বুদ্ধি ছিল খুব বেশি। এলাকার লোকে তাকে উপাধি দিল, “ইচড়েপাঁকা” দীন মোহাম্মদ।
প্যাকেট হাতে দীন মোহাম্মদকে দেখার সাথে সাথে এক পাঞ্জাবী সৈন্য ডাক দিল এ ……….. বাঙ্গালী এদার আও। দীন মোহাম্মদ লক্ষ্মী ছেলের মত কাছে চলে এল। তোম ডান্ডি কার্ড কই হায়? দীন মোহাম্মদ মনে মনে বলল, সর্বনাশ কার্ড তৈরিতো করিনি, এখন উপায়! তাড়াতাড়ি প্যাকেট থেকে রেশন কার্ড বের করে দিল। পাঞ্জাবী সৈন্য গোঁপ পাকিয়ে, চোখ রাঙ্গিয়ে বলল, এ ………….. কিতনা ডান্ডি কার্ড হ্যায়? দীন মোহাম্মদ হাসি হাসি মুখ করে বলল, “স্যার এ ……….. হোল ফ্যামিলিকা ডান্ডি কার্ড হ্যায়”। সৈন্য তো গ-মূর্খ, পাশে তখন রাজাকার নেই। সৈন্য বলল, হোল ফ্যামিলিকা ডান্ডি কার্ড, ঠিক হ্যায় যো”। দীন মোহাম্মদ উপস্থিত বুদ্ধিতেই সে যাত্রা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল।
বিশু মোড়ল যশোর জেলার মনিরামপুর থানার এনায়েতপুর গ্রামে বাড়ি। এখনো জীবিত আছেন। সকাল বেলা পান্তা ভাত আর খেজুরের গুড় হলে যথেষ্ট। সারাদিন মাঠে কাজ করে বেড়ায়। যুদ্ধের সময় একদিন গ্রামে পাকিস্থানী সৈন্যসহ রাজাকারেরা চলে এল। যে যেভাবে পারে জীবন বাঁচাতে পালায়ে গেল। বিশু মোড়ল বাড়ীর কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ তাকে ঘেরাও করে ধরল। ধরেই বুঝতে পারল, দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষ। তবুও পুকুর পাড়ের সেই ব্যাঙ ও দুষ্টু ছেলেদের মত দুষ্টামী শুরু করে দিল। গাছের সাথে বেঁধে গুলি বিহীন রাইফেল নিয়ে গুলির প্রস্তুতি নিল। গাছের সাথে পাথরের মত বিশু মোড়ল দাঁড়িয়ে আছে। বিশু মোড়লের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা একবার সমস্বরে অ্যা—করে কেঁদে উঠেছিল। পাঞ্জাবীদের তাড়া খেয়ে চুপ করে বসে আছে। স্ত্রী চিকন সুরে একবার কান্নার চেষ্টা করে ছিল। রাজাকারের থাপ্পড় খেয়ে মাথা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে। অপলক চোখে চেয়ে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই। এবার রাইফেল বুকে চেপে ধরে ঘোড়াকল কট করে টান দিল। গুলির শব্দ হল না। হাসির রোল উঠল। তবে বিশু মোড়লের দ’ুকান দিয়ে চো ……….. করে শব্দ বের হল। সেই থেকে বিশু মোড়ল কালা হয়ে স্বাধীন দেশে এখনো বেঁচে আছে।
এনায়েতপুর গ্রামে বক্স নামের একজন আঁধা পাগল ছিল। সারাদিন খাওয়ার ধান্দায় এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াত। একদিন এনায়েতপুর বাজারে বসে আছে এমন সময় পাকিস্থানী সৈন্যরা তাকে ধরে ফেললো। উর্দুতে যা কিছু জিজ্ঞাসা করে, না বুঝে শুধু বলতে থাকে, স্যার নৌকায় ভোট দিছি। স্যার নৌকায় ভোট দিছি।। মনে করেছে এতেই সে রক্ষা পাবে। সৈন্যরা বাংলা কথা বললেও বুঝতে পারে এ নৌকায় ভোট দিয়েছে। রাজাকারদের হুকুম দেয় ইনকো মুমে (মুখে) লাথ মার। লাথি খেতে খেতে মুখ ফুলে গেল। এবার হুকুম দিল গান্ধা মাট্টি মুমে মারদো (পঁচা কাদা মুখে মাখাও)।
আচ্ছামত কাঁদা মাখিয়ে ছেড়ে দিল। বক্স বাড়ি ফিরে এলে নিজের ছোট সন্তানেরাও ভূত মনে করে ভয়ে চিৎকার করে ওঠলো।
মদনপুর গ্রামের আব্দুল গফুর। এখন শিক্ষকতা করেন। গফুর মাষ্টার বললে সকলেই চেনে। যুদ্ধের সময় গফুর মাষ্টার যুবক। যুদ্ধে যাওয়ার সময় কিন্তু এত ভীত ছিল যে সারাদিন ঘরের ভিতর লুকিয়ে থাকত। গ্রাম গঞ্জে তখন প্রায়ই রাত হলে গুজব ছড়াত রাজাকার এসে গেছে। আর যায় কোথায়। যে যে দিকে পারে ভোঁ দৌড়। তখন গ্রাম গঞ্জে স্যানিটারী পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না। খড় গাদা, বিচালি গাদা, ঝোপ ঝাড়ের পাশেই পায়খানা করে রাখত। গফুর মাষ্টার প্রায়ই দৌড়ে খড় বিচালি গাদার পাশে পালাত। ভয় কেটে গেলে দেখা যেত গফুর মাষ্টারের গায়ে পায়খানা লেগে আছে। মাষ্টারের মা সেই রাতে গালি গালাজ করে গোসল করায়ে তবে ঘরে তুলতো।
মদনপুর গ্রামের কাদের সরদার পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে করে সকাল বেলা গরু ছাগল নিয়ে মাঠে ঘাস খাওয়াতে যেত। তখন ফসল উঠার পর মাঠ পড়ে থাকত, ঘাস জম্মাতো। শুকনো বিলের মধ্যে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার গরু ছাগল ছেড়ে দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাস খাওয়াতো রাখাল ছেলেরা। একদিন বিকেলবেলা বিলের ধারের রাস্তা দিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যসহ রাজাকারের দল যাচ্ছে। কাদের সরদার দেখতে পেয়ে ওরে বাবারে বলে দিল দৌড়। সাথে তার সহকর্মীরাও দৌড় ধরলো। রাখাল দৌড় দিলে তার গরু ছাগল ও কিছুই না বুঝে দৌড়াতে থাকে। সমস্থ বিলের গরু ছাগল আর রাখালেরা প্রাণপণে গ্রামের দিকে দৌড়াচ্ছে। চৈত্রের ধুলায় মানুষ পশু চেনা যাচ্ছে না। রাজাকারেরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খিল খিল করে হাসছে। পাঞ্জাবী সৈন্যরা অনর্গল গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে দৌড়ের বেগ আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুলির শব্দে গ্রামও জনশূণ্য হয়ে গেল। অস্থিরতার মধ্যে রাত এসে শেষ হয়ে গেল। সকাল বেলা পরিস্থিতি শান্ত হলে দেখা গেল বিলের মধ্যে কয়েকটা গরু ছাগল গুলি খেয়ে মরে পড়ে আছে।
কাদের সরদারের সমবয়সী সাত্তার সরদার। জন্মের পর মাকে হারায়। মা বিষাক্ত সাপের কামড়ে রাতে মরে ছিল। সকালবেলা সাত্তার সরদার মৃত মায়ের বুকের দুধ খেয়ে ছিল। এই জন্য নাকি পাগলাটে এবং গোয়ার স্বভাবের হয়েছে। যুদ্ধের সময় সাত্তার কিশোর বয়সের। একদিন শেষ বিকেলে বাঁশগাছে উঠে গরুর জন্য বাঁশের পাতা ভাঙছে। এ কারণে বাঁশগাছ বেঁকে এসেছে। মনের আনন্দে গুন গুনিয়ে গান গাইছে আর পাতা ভাঙছে। এমন সময় দেখে একটা গেছো সাপ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাত্তার সাপের খুব ভয় পেত। কারণ তার মা সাপের কামড়ে মারা গিয়েছে। উরি— উরি— শব্দ করতে করতে বাঁশের শেষ মাথায় সরে আসছে। গাছ ক্রমে মাটির দিকে নুইয়ে আসছে। এক সময় ধপ করে মাটিতে এসে পড়ল। ঐ সময় একদল রাজাকার ঐ পথ দিয়ে অতি গোপনে গ্রামের স্কুলের মাঠের দিকে এগুচ্ছিল। সাত্তারকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেললো এবং স্কুলের মাঠে নিয়ে গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম মার দিয়েছিল। পরে গ্রামের লোকের অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে পাগল প্রমাণ করায় ছাত্তার এযাত্রা মাফ পায়। এখনও সাত্তার সরদার আমাবস্যা পূর্ণিমায় রাজাকারের মার খাওয়া ব্যথা অনুভব করে। আজও বলে বেড়ায় সাপের হাত থেকে মুক্তি পেলেও রাজাকারের হাত থেকে সেদিন মুক্তি পায়নি।
একাত্তরের যুদ্ধের সময় বিহারীদের সাথে যোগ দিয়ে কিছু বাঙালি বিহারী সেজেছিল। ঐ সময় ঝিকরগাছার পুরন্দপুরের রউফ ছিল পেশায় নাপিত (নরসুন্দর)। ওর ভীমরতি ধরল, বিহারীদের সাথে যোগ দিয়ে মুজাহিদ হয়ে গেল। কালো প্যান্ট শার্ট পরে রাইফেল কাঁধে নিয়ে বাংলাকে উর্দ্দুতে রূপ দিয়ে কথা বলতে শুরু করল। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে ডাক দেয় ভাইও এদারছে আও। গুল্লি¬ করে গা ইত্যাদি। বেনেয়ালী স্কুলে অধিকাংশ সময় থাকে। একদিন রাতে মুক্তিসেনা রকেট জলিলের অতর্কিত আক্রমনে দিশেহারা হয়ে বুদিহাটা বিলের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। দেশ স্বাধীনের পর মাথা খারাপ হয়ে যায়। লোকে ক্ষ্যাপাত ‘গুল্লি করেগা’ বলে। পিছন দিক থেকে কাছে গিয়ে গুল্লি করেগা বললে পাগলামী শুরু করে দিত। যতদিন বেঁচে ছিল সবাই গুল্লি করেগা রউফ বলে ডাকত।
যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল। বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য আসতে লাগল। রিলিফ চুরিও হতে লাগল। যশোর জেলার আঞ্চলিক ভাষায় এই চুরিকে বলে মেরে খাওয়া। গম, কম্বল যে যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে মেরে খাচ্ছে। আছর আলী বাজার থেকে শুনে এসেছে চীন ভেটো দিয়েছে। বাড়ী এসে প্রতিবেশীদের সামনে বলল, দেশ চলবে না, চীন ভেটো দিয়েছে, তাও মেরে খেয়ে ফেলেছে। -

কবিতার জন্মঘর
ভাবনার অভিব্যক্তিকে শিল্পিত রূপে প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো কবিতা। যাতে মনের আলো আঁধারি ক্যানভাসে নান্দনিকতার আঁচড়ে জীবন কথনের ছবি আঁকা হয়। আর সে ছবিতে থাকে আস্বাদনের ব্যঞ্জনায় চির নতুনের এক অনিবার্য সন্নিবেশ। যা বুঝবার কোনো চূড়ান্ত পর্যায় থাকে না। বিজ্ঞান অঙ্ক বা অন্য কোনো বিষয় একবার বুঝে গেলে তার মধ্যে নতুন করে বুঝবার আর কিছু থাকে না। কিন্তু কবিতা বোদ্ধা পাঠক যতোবার পড়বেন বা গুণি আবৃত্তি শিল্পীর কন্ঠে যতোবার শুনবেন ততোবার বোধের সীমানা প্রসারিত হতে থাকবে। সেক্ষেত্রে কবিতা বুঝবার চূড়ান্ত কোনো পর্যায় থাকে না। কবিতা পড়লে বা আবৃত্তি শুনলে মনের মধ্যে যে অনুভূতির নীরব বা সরব উপস্থিতি টের পাওয়া যায় তাই হলো ওই কবিতার অর্থ। সেখানে একটা কবিতার অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকমের হতে পারে। মূলত চেতনার অভিব্যক্তিকে নাড়া দিয়ে মনের ঘুমান্ত সত্তাকে জাগিয়ে তোলে কবিতা। দেহ ও মন নিয়ে যেমন পুরো একটি মানুষ, তেমনি কাব্যভাষাও কাব্য ভাবনা নিয়ে গোটা একটা কবিতা। কবিতা তৈরি হয় ভাব, ভাষা, ছন্দ অলঙ্কারের পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্যদিয়ে; আর কবির তৃতীয় নেত্রের প্রসাদে ব্যঞ্জনায় ও ইঙ্গিতে ধীরে ধীরে কাব্যশরীরের সঞ্চারিত হয় মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণ যা শুধু কবির একার নয়। লক্ষ জনের প্রাণেও স্বোত্তরণের প্রেরণা জোগায়। কিন্তু কবিতার সেই মৃতুঞ্জয়ী প্রাণ, প্রতিষ্ঠায় কবির যে ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয় তা নিতান্তাই এক আধ্যাত্মিক পথে হেঁটে পৌঁছাতে হয় সেই মহাশক্তির মুখোমুখি। তারপর যন্ত্রণা আর নিজের ভেতর উথাল পাথাল এক ভাবনা জ্বালাতে থাকে।
একজন কবি যখন কবিতা রচনা করেন তার অনেক আগে থেকে তাঁর ওপর ভর করে শৈল্পিক এক ভাব। আর সে ভাব কোথা থেকে আসে, কী ভাবে আসে সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়তো কোনো দিনই হবে না। তবে একথা সত্য কবি কখনো ইচ্ছে করলেই কবিতা লিখতে পারেন না। তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন রাতের পর রাত। সাধনা করতে হয় অনিন্দ্য এক সুন্দরের। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীতে তার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। তিনি লিখলেন, ‘বসে আছি হে কবে শুনিব তোমার বাণী/তুমি যাহা বলিবে তাই বলিব আমি কিছুই না জানি।’ ভাব না আসা পর্যন্ত তাঁর কিছুই করার থাকে না। ইচ্ছে করলেই লেখা যেতে পারে, তবে তা কতোটা কবিতা হয়ে ওঠে তা পাঠকই ভালো বুঝবেন। চলতে থাকে তার ভাবের একাগ্র সাধনা।
তারপর এক শুভক্ষণে যখন কুয়াশাছন্ন ধোঁয়াশার মধ্যদিয়ে সেই অলৌকিক ভাবের রশ্মি কবির মনমন্দিরে প্রবেশ করে। আর তখনি শুরু হয় কবির অন্তর্সত্তার অমীমাংসিত ব্যবচ্ছেদ। তখন ভাবকে বাণীতে রূপান্তরের জন্য তিনি পাগল হয়ে ওঠেন। সৃষ্টির তাড়নায় আত্মহারা হয়ে যান। নিজেকে ভাব আর বাণীর সেতুতে বাঁধতে মরিয়া। পৃথিবীর আর কোনো ভাবনা স্পর্শ করতে পারে না তখন কবিকে। পুড়তে থাকেন অলৌকিক এক সৌন্দার্যের আগুনে। আর সে যন্ত্রণা ঘণিভূত হতে থাকে বোঝা না বোঝার আলো আঁধারি ক্যানভাসে। নিজেকে হারিয়ে কবিমন মুহূর্তে ঈশ্বর হয়ে, ভাঙাগড়ার খেলায় মেতে ওঠেন। বারবার নিজেকে ভেঙে গড়তে থাকেন আপন মনে। কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নিজের প্রতি। কী এক সুন্দর যেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন, বুঝতে পারছেন অথচ ধরতে পারছেন না। এই না ধরতে পারার যন্ত্রণা তাকে সমাজ থেকে ছিটকে ফেলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে তখন তিনি হয়তো পাগল। যে সুন্দরের আরাধনায় তিনি পাগল, যার রূপ নির্মাণে দিন নেই রাত নেই নাওয়া নেই খাওয়া নেই। তাকে ধরতেই হবে। সমস্ত পৃথিবী এমনকি তার বাইরেও কবিমন দৌড়াতে থাকে। তারপর এক সময় ধরা দেয় সেই কাক্সিক্ষত সুন্দর। ভাব রূপ পায় বাণীতে। রচিত হয় কবিতা। কবি মুক্তি পান সৃষ্টির যন্ত্রণা থেকে। হেসে ওঠে তাঁর নতুন পৃথিবী।
মনের নান্দনিক নির্যাস আর ঐশ্বরিক ভাবের মিলনক্ষেত্রে শিল্পের যে সুন্দর ধরা দেয়, তার অনিবার্য গাঁথুনি কবিকে মুক্তি দেয় সব অন্তর ব্যবচ্ছেদের অমীমাংসিত যাতনা থেকে। আর তখন সমুদ্র মন্থনের মতো নিজেকে আবিষ্কার করেন মহাজাগতিক এক পবিত্রতায়।
এখানেই শেষ নয়। চলতে থাকে অলঙ্করণের কাজ। নিজের শব্দভা-ার থেকে শব্দ সাজাতে চলে ভাঙাগড়ার আরেক খেলা। যতোক্ষণ না অনিবার্য শব্দের সন্নিবেশে সব চাইতে সুন্দরতম উপস্থাপন ধরা না দিচ্ছে ততোক্ষণ কবি নিজের প্রতি কোনোভাবেই সন্তুষ্টু নন। এক্ষেত্রে একটা কবিতার জন্য কবিকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শ্রম দিতে হয়। সে শ্রম নির্মোহ এবং একান্তই শিল্পর জন্য দিয়ে থাকেন। তারপর আবার একদিন কবি নিজেকে আবিষ্কার করেন তাঁর পূর্ণ সৃষ্টির মধ্যে। সব থেকে বেরিয়ে এসে আবার মিশে যান সামাজিক মিছিলে। তখন তিনি নিজের লেখা কবিতা পড়ে অবিভূত হন। কী তাঁর সৃষ্টি। এযেন তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিলো না। যতোবার পড়েন নিজের কবিতা ততোবারই আবিষ্কার করেন নতুন নতুন বিষয়। প্রসারিত হতে থাকে ভাবনার মহাজগৎ। এভাবেই সাধারণ মানুষ থেকে একজন কবি আলাদা।
ব্যাপারটা যদি ধর্মের সাথে বিচার করি তবে দেখবো কবি আর নবী দুজনের কাছে আসে ঐশ্বরিক শিল্প। নবীর কাছে আসে বাণী। যা হুবহু লিপিবদ্ধ করতে হয়। তার কোনো অংশ বা অংশবিশেষ কোনোভাবেই পরিবর্তন পরিমার্জন বা সংশোধনযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে কবির কাছে আসে ভাব। আর সে ভাবকে বাণীতে রূপন্তরের দায়িত্ব কবির। ভাবকে বাণীতে রূপান্তর এবং তাতে অলঙ্করণের নেশা যখন কবিকে গ্রাস করে তখন তিনি শুধু ঐশ্বরিক ভাবের বাহন নন, নিজেও ঈশ্বর হয়ে ওঠেন। নবীর জগৎ সসীম, কবির জগৎ অসীম। নবী শুধু স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর বাণী প্রচার করেন। আর কবি ভাবের রথের সারথী হয়ে চষে বেড়ান বিশ্বব্রহ্মা-। চাষ করেন অনাগত শিল্পের। -
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বোরো ধানে বাম্পার ফলনের আশা
নিজম্ব প্রতিনিধি: জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে বৈরী আবহাওয়া দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকেরা। সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে, কি না জলপনা কল্পনার অন্ত নেই। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন সময় বোরো রোপন করা হয়। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকের মনে যথই শঙ্কা থাকুক না কেন মৃদু মনানন্দও কাজ করছে। কৃষক-কৃষাণীরা ব্যাস্থ হয়ে পড়েছে ধান উত্তোলনে। কৃষকদের সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামারাও। সদরের পরানদাহ কামার পাড়া ঘুরে দেখা গেছে কাঁচি তৈরীতে খুবই ব্যাস্ত সময় পার করছে কামাররা। অধিকাংশ কৃষক ধান কাটার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সদরের পরানদাহ বাজারের নিতাই কামার দিনে ৫০ টি করে কাঁচি তৈরী করেও ক্রেতা চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ধান মাড়াই মেশিন তৈরীতেও ব্যস্ত কারিগররা। কারো মেরামত করোর নতুন তৈরী করে হিমশিম খাচ্ছে শ্রমিকরা। আবাদের হাটস্থ হাজী আব্দুল গফ্ফরের লেদে গিয়ে দেখা গেছে শ্রমিকরা ধান মাড়াই মেশিনে তৈরীতে খুবই ব্যস্ত তিনি। এখান থেকে প্রতি মৌসুমি ৫০Ñ৬০ টি ধান মাড়াই মেশিন তৈরী হয়।
জেলায় ৭৬৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। রোপন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কোন অসুবিধায় পড়েনি। কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে ফসলে সবুজ আর সোনালী রংয়ের সমারহ। কৃষক ব্যস্ত শেষ মূহুর্তের পরিচর্যায়। গত বছর ৭৪৪৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৩০৮৭৪২ মেট্রিক টন ধান। চলতি বছরে আবাদ বেশী হয়েছে। কৃষি অফিস বলছে, সুষ্ঠ ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে ৭৩০৪২০ মেট্রিকটন উৎপাদন আশা করছি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বেশী বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সদরে ২৩৯২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। লোনা পানির প্রভাবে এবারও শ্যামনগরে অর্থাৎ ২১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছে। সদর উপজেলার বাখারঘোজ গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, এ বছর কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি ২৮ – ৩০ মণ ধান আশা করছি। সবার মুখে মুখে এখন বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ার গল্প। তবে শঙ্ক একটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, এবার এখানো পর্যন্ত জেলায় বোরো ধানের ফলন ভাল লক্ষ্য করছি। আকাশের মাঝে মেঘের ঘনঘাটা দেখে একটু চিন্তিত। সুষ্ঠ ভাবে কৃষকের ঘরে ধান উঠলে আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।
সদর উপজেরার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এখনো পর্যন্ত ফলন ভাল আশা করছি। তবে এবার ধানে বিক্রয় বাজার যদি ভাল না থাকে তবে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে।
উপজেলার টেংরাভবানীপুর গ্রামের লিয়াকত হোসেন জানান, এই মৌসুমে ধান কাটা, বাঁধা শ্রমিক ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। যদিও পাওয়া যায় তবে শ্রমিক মুজুরী বাজার ছাড়া অনেক বেশী। ধানের দাম ভাল পাওয়া গেলে খরচ পুশিয়ে লাভের আশা করা যায়।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফসলের ফলন ভাল হলে কৃষক খুশি হয়। কিন্তু কিছু আসাধু ব্যবসায়ীর করনে নায্য মূল্য থেকে কৃষক বরাবরই বঞ্চিত হয়। প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। কৃষকদের একটি দেশের প্রাণ বলা হয়। তাদের অধিক কষ্টের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান করছে কৃষকেরা -
ক্ষুদে বিজ্ঞানীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী
শহর প্রতিনিধি: জেলায় তিন দিনব্যাপি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, বিজ্ঞান মেলা এবং জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়েছে। ‘মেধাই সম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই ভবিষ্যৎ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি যাদুঘরের তত্বাবধানে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনষ্ক পাঠদানের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। শুধু পুথিগত শিক্ষা নয় বিশে^র বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের নতুন উদ্ভাবন ও সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী তৈরী হবে।’
জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনডিসি মোশারেফ হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রধান শিক্ষক সুকৃতি কুমার রায়, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিসেস মনোয়ারা খাতুন প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার অলোক কুমার তরফদার, নবজীবন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ শেখ রফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের পরিচালক কামাল উদ্দিন ফারুকী প্রিন্স প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে তিনদিনব্যাপি ৩৯ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, বিজ্ঞান মেলা এবং জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড-২০১৮ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। জেলা পর্যায়ে তিন দিনব্যাপি এ মেলায় ৪৪টি স্টল স্থান পেয়েছে। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মীর রাফিউল ইসলাম।
জেলা আইনজীবী
জেলা আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত কমিটির অভিষেক
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সালের নব-নির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির ২নং ভবনে অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি এ্যাড. শাহ আলম। সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ওসমান গণির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নব নির্বাচিত সভাপতি এ্যাড. আবুল হোসেন-২, সহ-সভাপতি এ্যাড. গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জিয়াউল হক জিয়া, অর্থ সম্পাদক এ্যাড. জাহিরুল হক, ক্রীড়া সম্পাদক স ম মমতাজুর রহমান মামুন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফেরদৌস লতা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা নব নির্বাচিতদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, নব-নির্বাচিত কমিটি আইনজীবীদের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে। আদালতে বিচার চাইতে এসে কেউ যের প্রতারিত না হয় বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য নব নির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। -

রথিশকে হত্যার পর আলমারিতে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়-র্যাব
ডেস্ক রিপোর্ট: রংপুরের জজ আদালতের বিশেষ পিপি রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনাকে ২৯ মার্চ রাতেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার ‘কথিত প্রেমিক’ কামরুল ইসলাম জাফরী। হত্যার পর রাতে লাশটি বাড়িতে রাখা হয়। পরদিন সকালে আলমারিতে ভরে লাশটি নিয়ে গুম করা হয়। রংপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
বুধবার (৪ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১২টায় রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় র্যাব-১৩ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে স্ত্রী দীপা ভৌমিক তার স্বামী রথিশ চন্দ্রকে হত্যা করে। এই কাজে সহায়তা করেন তার কথিত প্রেমিক কামরুল মাস্টার।’
র্যাবের ডিজি বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক ১০টার শয়নকক্ষে রথিশ চন্দ্রকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়। এ সময় তিনি অচেতন হলে স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর তার লাশ শয়নকক্ষেই রাখা হয়।’
র্যাব ডিজি আরও বলেন, ‘পরের দিন শুক্রবার কামরুল মাস্টার ভোর ৫টায় ওই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে সকাল ৯টায় কামরুল একটি রিকশাভ্যান নিয়ে আসে। পরে তারা লাশ গুম করার উদ্দেশে একটি আলমারি পরিবর্তনের নাম করে সেখানে লাশ ভরে রংপুর নগরীর তাজহাটের মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে বালু খুঁড়ে পুঁতে রাখে। আলমারি বহন ও লাশ ভ্যানে তোলার কাজের জন্য তিনজনকে কামরুল মাস্টার আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন।’
বেনজির আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ১১টায় তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে রথিশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিককে ঘটনাস্থলে নেওয়া হলে তিনি তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বালু খোঁড়াখুঁড়ি ও লাশ লুকানোর সঙ্গে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান। তাদের বাড়ি তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায়।’
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা ২৬ মার্চ কামরুল মাস্টারের নির্দেশে ৩০০ টাকার বিনিময়ে মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন ভবনের নিচে বালু খুঁড়ে রাখে। পরবর্তীতে ৩০ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ওই লাশ বালু দিয়ে গর্তে ঢেকে রাখে তারা। কামরুল মাস্টার তাদের শিক্ষক হওয়ায় তারা আদেশ পালন করেছে বলে জানায়।’
বেনজির আহমেদ বলেন, ‘এই ঘটনায় রথিশের স্ত্রী দীপা ভৌমিক, তার কথিত প্রেমিক কামরুল এবং লাশ লুকিয়ে রাখার সঙ্গে জড়িত মোট চারজনকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এ সময় র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রংপুর রেঞ্জর ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। -

প্রত্যেক জেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে-প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের সকল জেলা-উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করবে। যেগুলো এসএমই শিল্পের প্রসারে উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসের সেবা প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘দেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশে জেলায় এবং উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো এসএমই শিল্প প্রসারে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসাবে কাজ করবে।’
উদ্যোক্তাগণ ব্যবসা স্থাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা স¤প্রসারণ, ব্যবসায়িক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা, পরামর্শক সেবা ইত্যাদি এই ওয়ানস্টপ সেন্টার থেকে গ্রহণ করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলা-২০১৮’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির লিখিত ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শারিরীক অসুস্থতার দরুণ তাঁর ভাষণ প্রদান করেননি। এর পরিবর্তে তাঁর ভাষণের লিখিত কপি অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে এসএমই’র গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমই সবচেয়ে শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজি নির্ভর খাত হওয়ায়, এই খাতের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর সরকার ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬’ -তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গণ্য করেছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। উদ্যোক্তাবান্ধব নীতির কারণে প্রতিনিয়ত নারীরা ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এফবিসিসিআই যৌথভাবে আজ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় পাঁচদিন ব্যাপী এই মেলার আয়োজক।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শিল্প সচিব মো. আব্দুল্লাহ এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন কেএম হাবিবুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে পুরস্কারও বিতরণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যবৃন্দ এবং ক্ষুদ্র,মাঝারি এবং কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অনেক দেশ বিশ্বমন্দার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত।
সরকার প্রধান বলেন, বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানির হার বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২১ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইকোনমিক জোনসমূহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশে কুটির শিল্পের সুদীর্ঘ গৌরবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশিকাঁথা এবং সিলেটের শীতল পাটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-তালিকায় স্থান পেয়েছে।
উদ্যোক্তাগণ এ সকল পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর পাশাপাশি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে পারেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পায়নের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কাঁচামালের সহজলভ্যতা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সরকার উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রদান করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী সে সব পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
এসএমই খাতের সম্প্রসারণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার নিজেরা ব্যবসা করে না। সহায়কের ভূমিকা পালন করে। ফলে আজ দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।
তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ২৬৭টি এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ৬৭ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্বকরণ এবং পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান আশা প্রকাশ করেন- এসএমই মেলা দেশে উৎপাদিত এসএমই পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণ ও বাজার স¤প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ধরনের মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এসএমই খাতের অনেক সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবে এবং যথাযথ স্বীকৃতি পাবে।
আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ। -

মোবাইল ফোনের কারণে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে: রাষ্ট্রপতি
ডেস্ক রিপোর্ট: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘এখন মোবাইল ফোন নিয়ে সবাই ব্যস্ত। এ কারণে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ বুধবার (৪ এপ্রিল) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) তৃতীয় সমাবর্তনে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মনে করেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের সহায়ক। তবে এই প্রযুক্তি যেন সর্বনাশের কারণ না হয় সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একটা কথা পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ার জন্য প্রযুক্তি বা মোবাইল ফোন কোনোভাবেই দায়ী নয়। বরং এর দায়দায়িত্ব ব্যবহারকারীর। আমাদের ইতিবাচক পরিবর্তন ও মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানোর মধ্যেই প্রযুক্তির সার্থকতা নিহিত।’সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞানী ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আসগর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।