নিজস্ব প্রতিবেদক: ২৩ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কলারোয়া উপজেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল কলারোয়া পাবলিক ইনস্টিটিউট চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি এড. রবিউল আলম, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সফি উদ্দীন মোল্যা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নু, সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লস্কর শেলি,জাতীয় কৃষক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই- এলাহী, জাতীয় নারী জোট সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বিনা,তালা উপজেলা জাসদের সভাপতি বিশ্বাস আবুল কাশেম, জাতীয় যুবজোট সাতক্ষীরা জেলার সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তালা উপজেলার সভাপতি এস এম আব্দুল আলিম। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন কলারোয়া উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। জঙ্গীবাদ-ধর্মীয় উগ্রবাদকে পরাজিত করতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই অব্যাহত রাখা, দুর্নীতি-বৈষম্যের অবসান করা, সুশাসন-অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কাউন্সিলে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কলারোয়া উপজেলা কমিটি গঠিত হয়।
Author: dakshinermashal
-
দেবহাটায় ক্যান্সার রোগী ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ
দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটায় ক্যান্সারে আক্রান্ত রুগীদের আর্থিক সহায়তা এবং প্রতিবন্ধীদের মাঝে ক্রেস ও ওয়াকার বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে এসব সহায়তা প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ-আল-আসাদের সভাপতিত্বে সহায়তা বিতরণ করেন নবগত জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার বদরুজ্জামান, এলজিইডি অফিসার মোমিনুল ইসলাম, উপজেলা সাব-রেজিস্টার পার্থ প্রতিম মুখার্জ্জি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর লতিফ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, সমাজসেবা কর্মকর্তা অধির কুমার গাইন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই, শিক্ষা অফিসার প্রণব কুমার মল্লিক, যুব উন্নয়ন অফিসার ইসমোত আরা বেগম, বিআরডিবি অফিসার ইসরাইল হোসেন, পল্লী দারিদ্র বিমোচন অফিসার অসিত বরণ রায়, সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহফুজ রঞ্জু, কুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ সরকার, খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম, হাজী কেয়ামউদ্দীন মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম, দেবহাটা কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আনিসউজ্জামান, আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম, মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল, ডিআরআরএ’র জেলা ম্যানেজার আবুল হোসেন, কমিউনিটি মবিলাইজার করবি স্বর্ণকার প্রমুখসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষার্থী ও ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীরা। অনুষ্ঠানে ৫জন ক্যান্সারের আক্রান্ত রুগীকে ৫০ হাজার করে মোট আড়াই লক্ষ টাকার সহায়তা প্রদান এবং ২৪ জন প্রতিবন্ধীকে ক্রেস (হাটার উপকরণ) এবং ২৪জন প্রতিবন্ধীকে ওয়াকার (দাঁড়ানোর উপকরণ) প্রদান করা হয়।
-
সর্বসাধারণের জন্য সব সময় আমার দার খোলা-জেলা প্রশাসক
দেবহাটা প্রতিনিধি: ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে এসে কেউ যেনো অযাথা হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে সব সময় খেয়াল রাখা হচ্ছে। জনগনকে সেবা দেওয়ার জন্য সরকার আমাদের নিয়োগ করে রেখেছেন। তাই কারোর অসাহয়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক লেনদেন কিংবা কোন প্রকার অপরাধের আশ্রায় নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দেবহাটায় এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের স্বপ্ন ডিজিটাল সোনার বাংলা গড়া। আর আমাদের দায়িত্ব উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা। আমাদের দায়িত্বের স্থানগুলোতে যত বেশি সেবা দিতে স্বক্ষম হব তত তাড়াতাড়ি উন্নত দেশে রুপান্তিত হতে পারব। সর্বসাধরণের জন্য আমার দার সব সময় খোলা থাকবে। আপনাদের প্রয়োজনমত আমাকে সরকারের উন্নয়ন বাস্তবায়নে পাশে পাবেন।’
সোমবার অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল-আসাদ। উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী কামাল হোসন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার জিন্নাত আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ইয়াসিন আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল ওহাব, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, দেবহাটা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম, সখিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরদার আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তাদের দাবির ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন বলেন, কোন কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। নষ্ট রাস্তা সংস্কারের জন্য অধিকাংশ রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। তিনি আগামীতে বালু মহলের ইজারা বাতিল করে নদীর বাধ ভাঙ্গন রক্ষা এবং স্থানীয় রাস্তা নষ্ট রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া রাস্তার পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে স্পিড ব্রেকার, পারুলিয়া ইউনিনের পোষ্ট অফিস নির্মাণের কাজ সমাপ্ত, দেবহাটা প্রেসক্লাব সংস্কার, ম্যানগ্রোভ বিনোদন কেন্দ্রে রেস্ট হাউস নির্মাণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। একই সাথে জলাবদ্ধতা নিরাসনে এবং কৃষি, মৎস্য চাষের জন্য জোয়ার-ভাটা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ খালগুলো খননের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে নথি প্রেরণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। তিনি সরকারের উন্নয়নকে বাস্তবায়ণ করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার বদরুজ্জামান, এলজিইডি অফিসার মোমিনুল ইসলাম, উপজেলা সাব-রেজিস্টার পার্থ প্রতিম মুখার্জ্জি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর লতিফ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, সমাজসেবা কর্মকর্তা অধির কুমার গাইন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই, শিক্ষা অফিসার প্রণব কুমার মল্লিক, যুব উন্নয়ন অফিসার ইসমোত আরা বেগম, বিআরডিবি অফিসার ইসরাইল হোসেন, পল্লী দারিদ্র বিমোচন অফিসার অসিত বরণ রায়, সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহফুজ রঞ্জু, কুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ সরকার, খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম, হাজী কেয়ামউদ্দীন মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম, দেবহাটা কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আনিসউজ্জামান, আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম, মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পালসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষার্থী ও ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীরা। -

পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াতের নেতাসহ আটক-৪০
নিজস্ব প্রতিনিধি: পুলিশের সন্ত্রাস, নাশকতা ও মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে জামায়াতের ১ নেতাসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।
গত রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পযর্ন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে, সদর থানা থেকে ৫ জন, কলারোয়া থানা থেকে ১১ জন, তালা থানা ৪ জন, কালিগঞ্জ থানা ৩ জন, শ্যামনগর থানা ৭ জন, আশাশুনি থানা ৪ জন, দেবহাটা থানা ৩ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। -
এনইউবিটি’তে সামার সেমিষ্টার এ্যাডমিশন ফেয়ার
এনইউবিটি প্রতিনিধি: নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেজ এন্ড টেকনোলজি খুলনাতে সামার সেমিষ্টারের এ্যাডমিশন ফেয়ার শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া এ ফেয়ার চলবে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারি ছুটির দিনসহ সপ্তাহে ৭দিন এ ফেয়ার চলবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাডমিশন অফিস খোলা থাকবে। এ্যাডমিশন ফেয়ার উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লি¬ন এর অধ্যাপক ও এন ইউ বি টি খুলনার এ্যাডভাইজার প্রফেসর ড. এ.টি.এম জহিরউদ্দীন, বিশেষ অতিথি ছিলেন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. ইব্রাহীম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ইনচার্জ) জনাব এ.এইচ.এম. মনজুর মোর্শেদ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ফেয়ার চলাকালীন ভর্তি ফির উপর ৬০% সহ টিউশন ফির উপর বিশেষ ছাড় থাকবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাাতক পর্যায়ে বিবিএ, ইংরেজী, সি.এস.ই, ই.ই.ই, সিভিল , আর্কিটেকচার ও অর্থনীতি বিষয়ে অর্নাস কোর্স চালু আছে। এছাড়া স্মাতকোত্তর পর্যায়ে এম.বি.এ (রেগুলার ও এক্সিকিউটিভ), এম.এ (ইংরেজী)ও এম.এস.এস (অর্থনীতি) কোর্স চালু আছে। -
কলারোয়া সীমান্ত থেকে ইয়াবাসহ ৬ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কলারোয় প্রতিনিধি: কলারোয়া সীমান্ত থেকে সাড়ে ৩’শ পিস ইয়াবাসহ ৬ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। সোমবার ভোরে উপজেলার সীমান্ত গ্রাম কুমারনাল এলাকা তাদের আটক করা হয়।
আটক মাদক ব্যবসায়ীরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার গদোখালী এলাকার মৃত রফিকুল মোড়লের ছেলে মোঃ কাবিরুল ইসলাম কালু (২৮), একই উপজেলার কুমারনাল গ্রামের মৃত নুরল ইসলাম মোল্যার ছেলে আরিফুল ইসলাম মোল্যা (২১), ইসহাক বিশ্বাসাসের ছেলে আরিফুল বিশ্বাস (২৭), সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে মোঃ মাহামুদুল হক বাবু (৩৫), একই গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক দালালের ছেলে মশিউর রহমান মনি ৩৩), মৃগীডাঙ্গা গ্রামের রয়িচ উদ্দিনের ছেলে আনারুল ইসলাম সরদার (৪৭)।
ডিবি পুলিশের ইনেসপেক্টার জুলফিকার আলী জানান, কলারোয়া উপজেলার কুমারনাল সীমান্ত দিয়ে মাদকের একটি চালান আনা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে সাড়ে ৩’শ পিস ইয়াবাসহ উক্ত ৬ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তিনি আরো জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। -

দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গণি সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১৯এপ্রিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ৪৬.০৪৬.০২৭০০.০০.১৬৯.২০১৪-৬০৩ নং স্মারকে উপ-সচিব ড.জুলিয়া মঈন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন পত্রে জানানো হয়েছে দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গণির বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় গত ২১ জুন ২০১৭ তারিখের অভিযোগ পত্র নং- ৯৩, ধারাঃ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯-ক/২১ এবং অভিযোগ পত্র নং- ৯৩ক, ধারাঃ দ-বিধি ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬/১১৪ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক যথাক্রমে গত ১৯.০২.২০১৮ গৃহিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের কৃত মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় তার দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী বলে সরকার মনে করেন। তাই উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮[উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত]- এর ধারা ১৩(খ)(১) অনুসারে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গণিকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হলো।
-
দেবহাটা হিরারচক প্রাইমারি স্কুলে মিড-ডে মিল চালু ও পানির বোতল প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের হিরারচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শতভাগ মিড-ডে মিল চালু, পরিচয়পত্র বিতরণ প্রদান ও ওয়াটার পট বিতরণ করা হয়েছে।
গত শনিবার সকালে এ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি এ্যাড. ওসমান গণি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে শতভাগ মিড-ডে মিল চালু, পরিচয়পত্র বিতরণ ও পানির পট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডেইলি সাতক্ষীরার সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ রফিকুর রহমান মিন্টু। অতিথিবৃন্দ বিদ্যালয়ের শতভাগ মিড-ডে মিল কর্মসূচি উদ্বোধন করেন এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরিচয়পত্র প্রদান করেন ও তাদের হাতে নিরাপদ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে ওয়াটার পট তুলে দেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ ওয়েলফয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষে রবিউল ইসলাম, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষিকা দীপালী ঘোষসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। -
তালার মাগুরায় পিচের কার্পেটিং সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক: তালা উপজেলার মাগুরায় পিচের কার্পেটিং সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের দলুয়া বাজার টু মাদরা সড়কটি এলাকাবাসী কিছু ইটের কার্পেটিং ও কিছু মাটির সড়ক হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি সড়কটি পিচের কার্পেটিং বাজেট হয়। স্থানীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কল্যাণ বশু সড়কটির পাঁকাকরণ কাজ করার চুক্তিবদ্ধ হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কটির কাজ শুরু করতে না করতেই সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করতে শুরু করেছেন। সড়ক নির্মাণ কাজে যে ইটের খোয়া ব্যবহার হচ্ছে তার অধিকাংশই ২ ও ৩নং ইটের খোয়া। সড়কের ধারে যে ইট ব্যবহার হচ্ছে তার অবস্থাও একই। এছাড়া সড়কটির প্রতিমধ্যে মাদরা ও পার-মাদরার মাঝখানে একটি ঢালাই ব্রীজ আছে। ব্রীজের সংযোগ সড়কের সাথে মিল না রেখেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিচু করে সড়কটি নির্মাণ করছেন। এতে করে কোন ভারী যানবহন ব্রীজে উঠতে ও নামতে গেলেই উল্টে পাশের গভীর খাদে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংঙ্খা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মান কাজ হলেও ঠিকাদার বা উপজেলার কোন কর্মকর্তা কাজ পরিদর্শনে তেমন আসেন না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার আবু সাইদ মোহাম্মদ জসিম বলেন, কয়েকদিন আগে কাজের সাইডে গিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কল্যাণ বশু’র সাথে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলেন’। এমতাবস্থায় ব্রীজের সাথে সড়কের সঠিক সংযোগ স্থাপন এবং সড়ক নির্মাণ কাজের অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
-
সাতক্ষীরার ছেলে হ্যালো’র শান্ত খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ বাংলাবিদ
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র এহসানুল কাদির শান্ত খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ বাংলাবিদ নির্বাচিত হয়েছে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি গ্রুপের কর্মকর্তা তাহের শিপন জানান, খুলনা বিভাগের দশটি’র জেলার সেরা আট হাজার প্রতিযোগিকে সাথে নিয়ে খুলনা সরকারি করোনেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় তুমুল প্রতিযোগিতা। সেখানে নিজের সেরাটি দিয়ে এহসানুল কাদির শান্ত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। প্রথম স্থান অধিকারী এহসানুল কাদির শান্ত শিশুদের সংবাদ ভিত্তিক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিক। সে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামের এ্যাড. মো. আনিসুর কাদির ও মিসেস রোকেয়া কাদিরের দ্বিতীয় সন্তান। তার বাবা মা ও হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাতক্ষীরা কো অর্ডিনেটর শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন সকলের কাছে শান্ত’র জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যে’র জন্য সকলের শুভ কামনা চেয়েছেন।
এদিকে, চ্যানেল আই ও ইস্পাহানি বাংলাবিদের আরেকটি আয়োজন সুন্দর হাতের লেখা বিভাগীয় সেরা এবং যশোরে এইচএসবিসি ও প্রথম আলো’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত ভাষা প্রতিযোগিতায় বিভাগের সেরা দশ বানানবিদের একজন নির্বাচিত হয়েছে। -
উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই পাইকগাছায় বাগদা চিংড়িতে মড়কের হানা
বিশেষ প্রতিবেদক: উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই পাইকগাছার অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে মড়ক রোগ। চাষীরা কারণ হিসেবে এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বললেও মৎস্য অফিস মরা চিংড়িতে কোন রোগ বালাইয়ের চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছেননা। অন্যদিকে এনজিও’র দাবি পানি ও খাদ্যই চিংড়ির ব্যাপক মড়কের জন্য প্রধানত দায়ী। তবে কোন পদ্ধতিতেই রোধ করা যাচ্ছেনা বাগদা চিংড়ির এ মড়ক। জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড তাপদাহ চিংড়ির উপযোগী লবন পানির স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ। এমন অবস্থায় চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের ভবিষ্যত নিয়েও নানাবিধ আশংকা তৈরী হয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন লোনা পানির জনপদের অধিকাংশ চাষীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান ৩০ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই আবাদ হয় লবণ পানির চিংড়ির। মৎস্য অফিস জানায়, এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা সংকটে গত দু’বছর উৎপাদন ভাল হয়নি। সেবার মৎস্য অধিদপ্তর চিংড়ি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬ হাজার মেট্রিক টন।
তবে গত বারের ন্যায় এবারো মওসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে চিংড়ির মড়কে একদিকে যেমন আশংকা তৈরী হয়েছে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার, অন্যদিকে শুরুতে পোনার দাম ও জমির হারি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করায় আন্তর্জাতিক বজারে দেশের চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম ভাল না থাকায় আগামীতে চিংড়ি চাষে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটাই মনে করছেন চিংড়ি সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত ৮০’র দশক থেকে সুন্দরবন উপকূলীয় কৃষি অধ্যুষিত এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবন পানির চিংড়ি চাষ। শুরুতেই উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম ভাল থাকায় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চিংড়ির চাষাবাদ। সোনার ধান, সোনালী আঁশ, সবুজ সবজি আর শষ্যের পরিবর্তে দিগন্ত জোড়া মাঠের সব দিকেই বিস্তার লাভ করে রুপালী পানি।
ফসলের জন্য আর দীর্ঘ অপেক্ষা নয়,সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁঝালো গন্ধের চিকচিকে পানির নিচ থেকে উঠতে থাকে সাদা সোনা বাগদা। কিছুদিনের মধ্যে পাইকগাছাকে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিশেষায়িত করা হয় “সাদা সোনার রাজ্য” হিসেবে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কোটি পতি বনে যান চিংড়ি চাষের সাথে সম্পৃক্তদের অনেকেই। তবে মূল জমির মালিকদের অবস্থা চলে যায় আরো তলানিতে। জীবিকার প্রধান মাধ্যম কৃষি শষ্যও আসেনা চাহিদানুযায়ী জমির হারিও পায়না। এক সময় জীবিকার ভিন্ন উপায় ও ঋণের দায় মেটাতে ঘেরের জমিটুকুও বাধ্য হয়ে তুলে দেয় ঘের মালিকদের কাছেই।
তবে ১ থেকে দেড় দশকের মধ্যে ১৯৯৫ সালের পর থেকে চিংড়ি ঘেরে শুরু হয় “ভাইরাস” বা মড়ক রোগ সংক্রমন। ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করায় পুরোপুরি লাভের মুখে থাকা চিংড়ি শিল্পে নেমে আসে আকস্মিক ধ্বস। এভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অনেকেই লাভের আশায় বছরের পর বছর ধার-দেনা করে চাষাবাদ টিকিয়ে রাখে। সফলতা না আসায় এক সময় চাপ সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। মাঝের দু’এক বছর কিছুটা ভাল হওয়ায় ফের কোমর বেঁধে মাঠে নামেন চাষীরা। তবে মাত্র এক বছর পর মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘেরে আবারো মড়ক অব্যাহত থাকায় নতুন করে বন্ধের উপক্রম হয়েছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প।
চিংড়ি চাষী নোয়াকাটির জাহাঙ্গীর আলম,কাশিমনগরের শেখ রবিউল ইসলাম,নজরুল শেখ,জাহাঙ্গীর শেখ,প্রতাপকাটির বজলু জানান, এবছর মওসুমের শুরুতেই তাদের ঘেরে দেখা দিয়েছে চিংড়িতে মড়ক। এখন পর্যন্ত অনেকে দু/এক কেজি মাছও বিক্রি করতে পারেননি তারা। অনেক ঘেরে প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় অবমুক্ত’র সকল মাছই মরে সাবার হয়ে গেছে।
ব্যাপক হারে অব্যাহত চিংড়ি মড়ক আসলে কি ভাইরাস সংক্রমণ? নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব? এনিয়ে চিংড়ি চাষী, মৎস্য অধিদপ্তর ও চিংড়ির উপর মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এনজিও গুলোও পরষ্পর বিরোধী কারণ দাবি করছে। চাষীরা এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বললেও মৎস্য অফিস মৃত চিংড়িতে খুঁজে পাচ্ছেননা কোন সংক্রমণ চিহ্ন। আর এনজিও গুলোর দাবি,পানি ও খাদ্য সমস্যাই প্রধানভাবে চিংড়ির ব্যাপকহারে মড়কের জন্য দায়ী।
এ প্রসঙ্গে চিংড়ি চাষে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বে-সরকারি সাহায্য সেবী প্রতিষ্ঠান নিউ সানের এ্যাকুয়াকালচার প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর সুকুমার অধিকারী বলেন,চিংড়ি চাষে মড়ক রোধ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাটি ও পানি পরীক্ষা এবং তার সঠিক পরামর্শ প্রদানই তাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তারা নিয়মিত চাষীদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে উঠন বৈঠক করছেন। এ উপায়ে সফলতা এসেছে বলেও দাবি এ এনজিও কর্তার। তিনি বলেন, মাটি ও পানি দূষণ এবং চাষীদের অজ্ঞতাই চিংড়ির ব্যাপকহারে মড়কের জন্য প্রধানভাবে দায়ী।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার মন্ডল জানান, মড়ক আক্রান্ত ঘেরের চিংড়িতে এখন পর্যন্ত তারা কোন জীবাণু বা সংক্রমণের চিহ্ন খুঁজে পাননি। তবে চিংড়ির এ ব্যাপক ভিত্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও মহস্য কর্মকর্তা, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড দাবদাহে চিংড়ির লবন পানির উপযুক্ত পরিবেশ বাঁধাগ্রস্থ ও খাদ্য দূষণে মাছের মড়ক লাগতে পারে বলে মনে করেন।
এদিকে চিংড়ির মড়ক রোধে বিভিন্ন কোম্পানি বাহারী সব প্রচারে বাজারজাত করছে নানাবিধ প্রতিষেধক। অনেকে আবার পরিবেশ বান্ধবের ধুয়ো তুলে নিজেদেরকে চিংড়ি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করলেও মূলত তাদের কারো কোন পরামর্শেই চিংড়ির মড়ক রোধ না হওয়ায় মূলত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। -
তালার বেগুনদাড়া খালের মাটি যাচ্ছে জামায়াতের অর্থ যোগানদাতার ইটভাটায়!
বিশেষ প্রতিবেদক: তালা উপজেলার খলিষখালি ইউনিয়নের বেগুনদাড়া খালের মুখ বেধে পানির প্রবাহ বন্ধ রেখে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে উপজেলার ইসলামকাটি মোড়ের মেসার্স রাণী এন্ড সানি ব্রিকস মালিক জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা আব্দুল খালেক স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ৩-৪টি এক্রাভেটর (খনন যন্ত্র) দ্বারা প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে ইট তৈরী করছেন ।
এ নিয়ে খালের পশে বসবাসকারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মাসখানেক পূর্বে ঐ খালের কৃষ্ণনগর ব্রীজের নিচে মুখ বেধে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে ঐ এলাকার চিংড়ি ঘেরগুলো পানির অভাবে কোটি কোটি টাকার মৎস্য চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ৩-৪টি এক্্রাভেটর মেশিন দ্বারা মাটি কেটে ৫-৬ টি ট্রাকে ভর্তি করে এলাকার একমাত্র চলাচলের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে অবিরাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। গ্রামের ছোট রাস্তা দিয়ে বার বার ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে পিচের উপর কাদামাটি পড়ে পথচারিদের চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া মাটি ভর্তি ট্রাকের চাপে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে তীরবর্তী বসবারত বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা আতঙ্কে রয়েছেন। তীরে বসবাস কারি গাছা গ্রামের যমুনা রাণী, (৬৫) অভিযোগ করে বলেন, এভাবে খালের মাটি কেটে নিলে বর্ষাকালে জলে ডুবে মরতে হবে। তাছাড়া রাস্তা নষ্ট হয়ে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির অন্ত থাকবে না। কৃঞ্চনগর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার, রাহুল সরকার, তন্ময় সরকার,ও অভিজিৎ সরকারসহ অনেকের অভিযোগ, খালের মুখ বেধে পানির প্রবাহ বন্ধ করে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় এলাকার মৎস্য চাষে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে মৎস্য ব্যবসায়ী ওয়ার্কাস পার্টির নেতা মাধবচন্দ্র মন্ডলের অভিযোগ, সরকারের পরিকল্পনা ছাড়া খালের মাটি কেটে ইট ভাটায় নেয়ার কোন সুযোগ না থাকলেও জামায়াত নেতার অদৃশ্য শক্তিতে খালের মাটি কেটে ইট ভাটায় নেওয়ায় তিনি বিস্মিত হন । প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবির হোসেনের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা বিহীন খালের মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। খলিষখালি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান জানান, এলাকার জলবদ্ধতা দুরীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে সিন্ধান্ত নিয়ে ইটভাটা মালিককে মাটি কেটে নিতে বলা হয়েছে। খালের মাটি কর্তনকারী ইটভাটা মালিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি যথাযত কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়েই মাটি কাটছেন বলে জানান ।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখছি বলে এড়িয়ে যান। জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেন জানান, সরকারি খালের মাটি কাটার সুযোগ কারও নেই, যদি কেও এধরণের কাজ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. মুস্তফা লুৎফল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জামায়াতের অর্থযোগান দাতা একাধিক নাশকতা মামলার আসামী খালেক কি অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছে? সরকারি খালের মাটি কাটার ক্ষমতা তাকে কে দিয়েছে ? আমি দেখছি।
স্থানীয় জনসাধারণ অতিসত্বর অবৈধ্যভাবে মাটি কাটা বন্ধ ও এ কাজের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। -

তৈলকূপীতে জোরপূর্বক মৎস্যঘের দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি: পাটকেলঘাটার তৈলকূপীতে অবৈধ্যভাবে মৎস্যঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তৈলকূপীর বিলনটাডাঙ্গা মৌজায় বিশ্বজিৎ সাধুর ইজারা নেওয়া ঘের অতর্কিত দখল করে নেয় প্রতিপক্ষ। এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্বজিৎ সাধুর ভাগ্নে অমিত কুমার সাধু।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০০১ সাল থেকে বিলনটাডাঙ্গা মৌজার কামারাবাদ নামক এলাকায় বিশ্বজিৎ সাধু ৩০০বিঘা ঘের ইজারা নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করে আসছিল। ২০১৬ সালে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তিনি তার ভাগ্নে অমিত কুমার সাধূর উপর ঘের পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তারপর থেকে অমিত কুমার সাধু উক্ত ঘের পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু গত ১৩ এপ্রিল নগরঘাটার আয়জুদ্দিন গাজীর ছেলে হান্নান গাজী, হান্নান গাজীর ছেলে মহিবুল্লাহ, সুলতানপুর এলাকার মৃত আনসার গাজীর ছেলে আওয়াল গাজী, মিঠাবাড়ীর আতিয়ার রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান তাদের দলবল নিয়ে বিশ্বজিৎ সাধুর ঘেরের মাঝখানে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে ভেড়ি বাধ দিতে থাকে। ঘেরের মাঝখান দিয়ে অবৈধ্যভাবে ভেড়ি বাধ দিতে বাধা দিলে তারা অমিত সাধুকে জীবন নাশের হুমকি দেয়।
এব্যাপারে অমিত কুমার সাধু গত ১৩ এপ্রিল পাটকেলঘাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তাদের ইজারা নেওয়া মৎসঘের অবৈধ্য দখলদারদের কাছ থেকে ফিরে পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। -

শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়া পাউবো’র ভেঁড়ীবাঁধে ফাটল
আশাশুনি প্রতিনিধি: শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়ায় লঞ্চ ঘাটের দুই পার্শ্বে ২টি পয়েন্টে ভেঁড়ীবাঁধে ফাটল ধরে ভেঁড়ীবাঁধ ১/৩ অংশ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার শংকায় স্থানীয়রা।
জানা যায়, প্রতাপনগর শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে পাউবো’র ভেঁড়ী বাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভাঙ্গন কবলিত অবস্থায় পড়ে আছে। বাধে ফাটল ধরায় যে কোন মূহুর্তে পাউবো’র ভেঁড়ীবাঁধ ভেঙ্গে কপোতাক্ষ নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে এলাকার ফসলী জমি, মৎস্যঘেরসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের যান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বুলি স্থানীয় গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণে বাঁেশর পাইলিং দিয়ে মাটিভরাট এবং বস্তাদিয়ে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয় উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তার সাথে মুটোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ভেঁড়ীবাঁধ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে ২৩ তারিখ ওপেনিং হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ভেঁড়ীবাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে। সংস্কার কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অযথা সময় নষ্ট করছেন। তাদের সময় ক্ষেপণ ও অবহেলার কারণে ভেঁড়ীবাঁধের আজ এ অবস্থা। -

দুই সীমান্ত থেকে ৯৯ পিস স্বর্ণের গহনা ও ৭৫ টি উট পাখির বাচ্চা জব্দ
নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারত থেকে অবৈধভাবে আনার সময় জেলার পৃথক দুটি সীমান্ত থেকে ৯৯ পিস স্বর্ণের গহনা ও ৭৫ পিস উট পাখির বাচ্চা জব্দ করেছে বিজিবি।
শনিবার ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী ও পদ্ম শাখরা সীমান্ত থেকে এগুলো জব্দ করা হয়। তবে এ সময় কোন চোরাকারবারীকে আটক করতে সক্ষম হয়নি বিজিবি।
জব্দকৃত স্বর্ণের গহনার মধ্যে রয়েছে, লকেটসহ ১১পিস চেইন, ১১ জোড়া নাকফুল, ৭৭পিস আংটি এবং ৭৫ পিস উট পাখির বাচ্চা। জব্দকৃত স্বর্ণের গহনার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভোরে সদর উপজেলার কুশখালী বিওপির টহলরত বিজিবি সদস্যরা সীমান্তের ছয়ঘরিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত স্বর্ণের গহনা গুলো জব্দ করে। এদিকে, পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে ৭৫টি উটপাখির বাচ্চা জব্দ করা হয়। তিনি আরো জানান, জব্দকৃত বাচ্চাগুলো প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। -
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য রসুলপুর খাঁ বাড়িতে ঈক্ষণ’র নজরুল অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি: ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংসদের আয়োজনে শনিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য রসুলপুর খাঁ বাড়িতে নজরুল অনুষ্ঠান হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনের জলছবি’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘মওলানা আকরম খাঁর সঙ্গে যোগসূত্রের কারণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সঙ্গীত সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিকদের অনেকেই রসুলপুর গ্রামে এসেছিলেন। ফলে রসুলপুর আরও আলোকিত হওয়ার সুযোগ পায়। সেই সূত্র ধরে অগ্রসর হয়ে জানা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম রসুলপুর খাঁ বাড়িতে এসেছিলেন। এই স্মৃতিকে উজ্জীবিত করতে ঈক্ষণ সংসদের নজরুল অনুষ্ঠানের আয়োজন। ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি পলটু বাসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান যখন বলেছেন তখন এটাকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংসদ যে শুরুটা করল তাকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব আমাদের, গবেষকদের সকলের। এটা এ এলাকার মানুষের জন্য একটি ভাল খবর। আমরা এই ঐতিহাসিক একটি ঘটনার অংশীদার হলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, খুলনা বি এল কলেজের অধ্যাপক(অব:) আব্দুল মান্নান ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. রুবেল আনছার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন খাঁ বাড়ির পক্ষ থেকে আলীমুজ্জামান খান টালু। তিনি কবির আগমনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন এবং ঈক্ষণ সংস্কৃতিক সংসদের এই অনুসন্ধানি উদ্দ্যোগকে স্বাগত জানান। একই সাথে দেশ ও সমাজে রসুলপুর খাঁ বাড়ির আলোকিত অংশগ্রহণের বর্ণনা উপস্থাপন করেন। কবির আগমনের পর এই প্রায় একশত বছর পর ঈক্ষণই প্রথম এই উদ্দ্যোগ গ্রহণ করল। বক্তারা ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংসদের এই আয়োজনকে এক ঐতিহাসিক উদ্ঘাটন হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, এটি সাতক্ষীরাবাসী তথা দক্ষিণ বাংলার মানুষের জন্য এক আনন্দময় মুহূর্ত।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদুল হক। আলোচনা সভা শেষে নজরুল সংগীত পরিবেশন ও কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন করবী, শ্রেয়াণসহ বিভিন্ন শিল্পীরা। -

পূর্ণজ্ঞান সূত্র
চিরকাল মনে করি একটি আকাশ আমাদের আছে
অতি দূরে নয় , অতি কাছেও নয়, অস্তিত্ব রয়েছে
বহুকাল আকাশ দেখা হয় নি, অনেকের দেখা হয় নি
আমি গরমের রাতে চিৎ হয়ে ছাদে শুয়ে আকাশ দেখে
খুব বোকা হয়ে ভাবি, এতো তারা ভরা আকাশটা নিজের
তবু আমি ক্যানো প্রতি রাতে নিয়ম করে আকাশ দেখি না
ভাবলেই অবাক হয়ে ভাবি, গত রাতেও আকাশে নক্ষত্র ছিলো
কেউ দেখেছিলো, কেউ কেউ উঠোনে মাদুর পেতে
একসাথে আকাশ দেখে অনেক নক্ষত্রের নাম বলে পুরুষের বুকে
মেয়েটি আকাশ এঁকে অনেক নক্ষত্র বসিয়ে মুখ ঘষে বলেছিলো, তুমি আমার আকাশ হবে?
এ ভাবে কেউ কেউ কোনো কোনো রাতে কারো কারো আকাশ হয়ে যেতে পারে
লাভ ক্ষতি কিছু নেই, আমিও পাহাড়ে উঠে এক রাতে
ওই একটাই আকাশ একই লম্ব ও কৌণিক দূরত্বে দেখে এ কথা ভেবেছি
আকাশ থেকে মানুষের সরল দৃষ্টির দূরত্ব একই সমান থাকে।
তারাগুলি একই ভাবে সবখানে একই দূরত্বে আলো দেয়
আমি যতো উপরে গিয়েছি, আকাশ আমার কাছ থেকে সমান দূরে চলে গেছে
সারস পাখি দেখেছি অনেক, সিন্ধুসারস কোথা থাকে
অথবা আমাদের বিলের সারসগুলি কোথায় বাস করে
দেখি নি কখনো, পথের মানুষের বাড়ি কোনখানে কে ভাবে এতোটা ?
এসব নিয়ে চিন্তা করার মানুষ আলাদা,
ভাবনা ক্ষনেক হলেও চিন্তার পথ, অনেক চিন্তা করে চলে
অবিরত চিন্তাগুলি সামনে গিয়ে বাঁক বদলাতে পারে
আমিও হয়তো চিন্তা করি কিছুটা সময়, ভালোবাসি
কিছুটা সময়, কাজ করি কিছুটা সময়, ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন দেখি কিছুটা সময়
সব মিলে একাকার একটা জীবন সারসের বাড়ি না চিনে মরে যেতে পারে
অপূর্ণতা চিরকাল পূর্ণতা পাবার আশা করে কি করে না
এ কথাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না,
খন্ডে খন্ডে মানুষের সব কিছু একটি এককে নিলে মনে হয়
সকল অভিজ্ঞতা সেলাই করে একটি একক পূর্ণতা পায়
অথচ ভালো করে ভেবে নিলে অপূর্ণতাই পূর্ণ জ্ঞান মনে হয়। -
ম্যাজিক মেডেল
মাহফুজা নামটির প্রতি কি যেন এক সান্ধ্যকালীন ছাতিম সন্ধ্যার দরদ আজীবন চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে। শুধু আদর কেন? যখন কবিতার লাইন হয়ে ওঠে মাহফুজার প্রেম ও বন্দনার একমাত্র শব্দ তখন অন্য এক আবহ তৈরি হয় আজীবন।
‘মাহফুজা তোমার শরীর আমার তসবির দানা
আমি নেড়েচেড়ে দেখি আর আমার এবাদত হয়ে যায়।’
কিন্তু আজ হঠাৎ মাহফুজা নামের ওপর আরশ হতে কি এক লানত বর্ষিত হতে থাকে! অথচ মাহফুজা যখন এসএ ফেডারেশনের প্রশিক্ষণে ঢুকছিল তখনও ওর মন ছিল চনমনে। শরীর ছিল ঝরঝরে। ও সকালে ঘড়ি ধরে এক ঘন্টা ঘাম ঝরিয়ে হেঁটেছে আজ। যদিও অন্যদিন ঘরোয়া প্রশিক্ষণের সময় সকালে আলাদা করে হাঁটতে বের হয় না। কিন্তু এখন ওর ছিল বাড়তি মনোযোগ। যে করেই হোক ওকে ডিঙোতে হবে বাঁধার প্রাচির!
অনুশীলনের পুরো সময়টা জুড়েই ছিল আলাদা রকম কারসাজি। মনের ওপর চাপবিহীন ভার মুক্ত অবস্থায় ও অনুশীলন করেছে এবং সর্বক্ষেত্রেই ও হায়েষ্ট স্কোর নিয়ে প্রশিক্ষকদের হাসিমুখের জবাবে প্রতিবারই হাসিমুখ দেখাতে পেরেছে। ও প্রায় সিওর। অলিম্পিকে যাচ্ছে অভয়কন্যা মাহফুজা।
কিন্তু শেষ মূহুর্তের কানাঘুষাÑ ‘মাহফুজা বুড়িয়ে গেছে’! ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ওর বাঁধহীন চক্ষু মাধবকুন্ড জলপ্রপাত আনে। ছলাৎ ছলাৎ গড়িয়ে পড়ে অভিমানের- কষ্টের- লজ্জ্বার- অশ্রু। ওর চিরচেনা কবিতার লাইনগুলো কুকড়ে যায়!
ওর খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ও এ কথাও জানে, কান্না করবার মত বিশ^স্ত একটি কাঁধ লাগে। যেটি এই মূহুর্তে ওর কাছে নেই। তবে ওর ইদানীং কান্নার জন্য কাঁধ লাগে না। আর কান্নার মাধ্যমে সে নিঃস্ব হয় না। বরং শক্তিশালী হয়। শক্তি সঞ্চয় করে। ইদানিং কান্নার জন্য ধাতব পদার্থই যথেষ্ট। রক্তমাংসের কাঁধের যে বড় অভাব! তাই ধাতব পদার্থের তৈরি মেডেলটা ধরেই তার কান্নার আয়োজন শুরু হয়। শেষ হয়। মেডেলের কথা মনে আসতেই ওর চোখে হাজার ঝরনা সিরিয়াল দেয়। হাজির হয়। ১৯৯৯ সালে পাওয়া শিশু একাডেমীর প্রতিযোগিতায় জীবনের প্রথম বড় মেডেল। এটি শুধু সোনার একটি ধাতব মেডেলই ছিল না। বরং সেটি ছিল ওর জীবনের মোড় ঘোরানোর ম্যাজিক মেডেল। লড়াই করা শিখতে পারার মেডেল। যুদ্ধ যুদ্ধ জীবনের মধ্যে ঢুকে পড়ার মেডেল। যুদ্ধে জয়ী হবার মেডেল। সব মিলিয়ে জীবনটার প্লাটফ্রম চেঞ্জ করার মেডেল। সেটি ধরে সে তার কান্নার শখ মেটাতো। কান্নার দুঃখ ঘোঁচাতো। কান্নার তৈজস আঞ্জাম দিতো। সে মেডলটির কথা মনে হতেই আবার মাহফুজার চোখে বাণ ডাকে। শত চেষ্টাতেও জীবনের প্রথম পাওয়া মেডেলটি ও আর ফিরে পাবে না। কারণ তার মা করিমুন্নেসা বাধ্য হয়ে মেডেলটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাবা আলী আহমেদ গাজী অসুস্থ হয়ে খুলনার হাসপাতালে জীবন মৃত্যূর সন্ধিক্ষণে পড়ে ছিলেন দীর্ঘদিন। বাবার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে যেয়ে মা হিমসিম খেয়েছেন। অবশেষে বাধ্য হয়েই মেয়ের জেতা জীবনের প্রথম পথ প্রদর্শক পরশ পাথর হীরক খ-ের ওজ্জ্বল্যে বিচ্ছুরিত সোনার মেডেলটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
খবরটি প্রথম শুনে মাহফুজা বাকরুদ্ধ হয়ে অনেক কান্না কাটি করে। পরে সে এক সময় টের পায় যদি মায়ের কাছে তখন তার বিশেষ কারো দেয়া কোন লকেটও থাকতো কিংবা ছবির ফ্রেম। সেটিও বেঁচতে মায়ের কুণ্ঠা হতো না। কারণ সবকিছু ছাড়িয়ে বাবার সুস্থতা ছিল মায়ের কাছে সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত। সে জানে জীবন সব কিছুকেই হার মানিয়ে ছুটে চলে তারই নির্ধারিত গন্তব্যে। জীবন সাহিত্যকেও হার মানায়। ও কয়েকদিন আগে একজন বিখ্যাত লেখকের একটি উপন্যাস পড়ছিলো। সেখানে ও দেখেছিল নায়িকার মা কিভাবে তার অভাবের সংসারে তার প্রথম প্রেমিকের দেয়া সোনার ছবির ফ্রেমটি অবলীলায় পানির দরে বিক্রি করে তার সন্তানের চিকিৎসা করেছিল। যখন মাহফুজা উপন্যাসটি পড়ছিলো, তখন তার মধ্যে এক ধরনের ক্ষরণ হচ্ছিল। জীবন কি এতটা নিষ্ঠুর!
কিন্তু বাস্তব জীবনে যখন ওর নিজের মেডেলটি বিক্রি হবার কথা শুনলো ততক্ষণে ও বেশ খানিকটা ধাতস্থ হয়েছে, নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। ওর দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করেছে ওর পঠিত উপন্যাস। ওর পঠিত উপন্যাসের সাথে আগেই ভাগ করে নিয়েছিল ওর বোধের গভীরতা। তাই উপন্যাসটি পড়ে তখন ওর যতটা কষ্ট হয়েছিল, তার মেডেল বিক্রির দুঃখের ভার ততটা হয় নি। ও আগেই যেহেতু উপন্যাস পড়াকালীন সময়ে সেটি পেয়েছিল তাই সহজেই মেডেল হারানোর দুঃখ নিজে নিজে সামলে নেয়। কারণ জীবনের অপর পৃষ্ঠা- অন্য রূপের নামই তো সাহিত্য!
তাছাড়া চিকিৎসা বলে কথা! বাবা না থাকলে কি কখনো কোনদিন ওর পক্ষে এখানে আসা সম্ভব ছিল। ও বাবার অসুস্থতা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ে। বাবার চেয়ে কি মেডেলের গুরুত্ব তার কাছে বেশি! বাবা যদি সুস্থ হয়ে ওঠে তো সে আবার এ রকম সোনার মেডেল দেশ বিদেশ থেকে বহুবার বহুভাবে অর্জন করতে পারবে।
মেডেলের কথা মনে আসতেই আবারও ওর বর্তমান ছিটকে পড়ে শৈশবের ঝিনুক মুঠোয়। সেখানে বহুবর্ণিল সংগ্রাম আর কষ্টের ঝিলিকে নিজেকে আবার ঝলসে নেয়। ওর জন্ম হয়েছিল যশোরের অভয়নগরের এক কৃষক পরিবারে। বাবা একজন সামান্য বর্গাচাষী। মা বাবা, পাঁচটি ছেলেমেয়েসহ নিজেরা দুজন। মোট নয়জনের সংসার চালাতে বাবা সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। সেখানে বড় মেয়ে মাহফুজা হতে চায় সাঁতারু। গ্রামবাসীর চোখে যা গরিবের ঘোড়া রোগ। আহলাদ!
যেখানে আজীবন মেয়েরা গোসল সারে পর্দার ঘেরাটোপে। সেখানে এই মেয়েটা আঁটসাঁট হাফ- প্যান্ট, গেঞ্জি পড়ে হদ্দমদ্দ হয়ে সাঁতার কাটে পুকুরে। সারা গ্রাম রাষ্ট্র হয়ে গেল। মেয়ে কোথায় যায়, না যায়। ছেলেদের মত ছোট করে চুল ছাটে। বুক উঁচু করে হাঁটে। হাতের পেশি ছেলেদের মতো, পায়ের মাসল ছেলেদের মতো, বুকের গভীরে ছেলেদের রেখা! বলে কি- এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
সেটাই মাহফুজার কাছে শিকল ভাঙার গান! সামাজিক বঞ্চনা আর দারিদ্রের মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তাঁকে হতে হবে সাঁতারু। সাঁতারের মধ্যেই সে খুঁজে পায় প্রাণ। খুঁজে পায় জীবনের ঘ্রাণ! এর জন্য অভয়নগর থেকে প্রতিদিন আঠার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নওয়াপাড়া শহরে এসে শুরু হলো নতুন অভিযান। শুরুটা ছিল লুকোচুরি করেই। খেলাধুলা- সাতারের পোশাক ট্রাউজার- টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর কোন উপায় নেই। তাই সাধারণ পোশাক পরেই চলতে থাকলো অভয়নগর টু নওয়াপাড়া সাঁতার অভিযান। তবুও কি থেমে থাকে গ্রামের মানুষের কটু কথার অমানিশা?
মেয়ে কোথায় যায় রোজ ব্যাগ ঘাড়ে করে? খোঁজ খবর রাখো না কি, শিলার বাপ?
শিলা মাহফুজার ডাক নাম। বাবা মা তাকে আদর করে শিলা নামেই ডাকে।
হ, জানি তো। মেয়ে আমার সাঁতার শিখে।
ও বাবা! সে ডলফিন নাকি? সারাদিন পানিতে ভিজে থাকে? এই গ্রামের মেয়ে হয়ে অর্ধ উলঙ্গ সেজে সাঁতার শিখবে? এ রকম চলতে পারে না। মেয়েকে ঠেকাও। এ রকম বেপরোয়া চলতে থাকলে তোমার মেয়েকে তো বিয়ে দিতে পারবা না। সমাজ নষ্ট হবে। কে বিয়ে করবে তোমার ঐ পুরুষালি মেয়েকে?
মেয়ে আমার এখনো ছোট। এখনি ওর বিয়ের কথার কি হলো?
কি কথা বলো মুখে মুখে শিলার বাপ? মেয়ে এখন ছোট তা বড় কি হবে না? তাকে কি বুড়ি বানাতে চাও?
মেয়ের আমার সাঁতার শেখার ইচ্ছে। সবার তো সব রকম ইচ্ছা থাকে না। তাছাড়া…
গ্রামের নানা জনের নানান কথা- প্রশ্নের মধ্যে আলী আহমেদ গাজী খেঁই হারিয়ে ফেলেন।
নানান কথার মাঝেই তার মনে হয় নিজের জীবনের কথা। শৈশবে সেও ভাল হা-ড-ুডু খেলতো। তারও ইচ্ছে ছিল দিগি¦জয়ী খেলোয়াড় হবার। কিন্তু কঠিন জীবন তাকে তার স্বপ্নের দুয়ার খুলতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তো সে তার লড়াকু মেয়েটার দু’চোখের স্বপ্ন পড়তে পারে। স্বপ্নের মাঠে হেঁটে বেড়ায়। পূর্ণতা দিতে চায়। সে বুঝতে চায়, যে কোন মূল্যে তার লড়াকু মেয়ের স্বপ্নের দরজায় পৌঁছে দেবার দায়িত্ব তার। তাই তো সে গ্রামের মুরব্বীদের অকারণ নানা প্রশ্নের জবাব দেয়, আবার দেয়ও না। এ কান দিয়ে শোনে আর ও কান দিয়ে বের করে দেয়। খুঁজতে থাকে অন্য পথ। এ ভাবে বাড়ি থেকে আসা যাওয়া সম্ভব নয়।
তাই তো ওর জন্মদাত্রী মা- বাবা বেঁচে থাকতেও ওর আশ্রয় হলো এতিমখানায়। বেচে বর্তে থাকা মা বাবাকে ছেড়ে জায়গা করে নিতে হলো অনাথ আশ্রমে। ও নিজের কাছেই নিজে কৈফিয়ত দেয়। স্বপ্ন পূরণের জন্য মানুষ কত ত্যাগই তো করে। যে নারী অন্দরমহল ছেড়ে পথে নামে, সেই জানে তাকে ঠিক কতটা বাঁধন ছিড়তে হয়! আর এ তো মাত্র বাবা মা থাকতেও অনাথ আশ্রমে জায়গা পাওয়া! কে দেবে তাকে এইখানে থাকা খাওয়ার খরচ। কে দেবে তাকে নিরাপত্তার চাদর। কারণ এ সমাজ পারতপক্ষে কাউকে নিরাপত্তা দেয় না। খুবলে খায়। এক মূহুর্ত সময় পেলে খুবলে খায়। এই তো মাত্র সেদিন। মেধাবী এম. এ পাশ রুপা। মেধাবী রুপা। ঢাকায় একটি এনজিওতে চাকরিরত রুপা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে বাসের মধ্যেই খুন হয়। রুপা নামের মেধাবী, শিক্ষিত নারী শরীরটি চলন্ত বাসেও অরক্ষিত হয়ে খুন হয়েছে। শুধু কি খুন! তার আগে তাকে ধর্ষণ করেছে হেলপার, কনডাকটর, ড্রাইভার। তখনও কিন্তু সে বাঁচার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছিল। চেষ্টা করেছিল। তার কাছে থাকা দামী মোবাইল ফোন এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছিল। হাতে পায়ে ধরেছিল। (এই কথাগুলো পরে আসামীরা নিজেরাই আদালতে স্বীকার করেছে।) কিন্তু তারা তা শুনবে কেন? এই তো আমাদের সমাজ। মাহফুজা ভাবে আর নিজেকে প্রবোধ দেয়। কেঁদো না, মাহফুজা! বেঁচে যে আছো এর জন্য শুকরিয়া আদায় করো। এই সমাজ যে অন্তত তোমাকে বেঁচে থাকতে দিচ্ছে! তুমি তো মানুষ নও। জীবন্ত ডলফিন! যে পানিতে উপুড় হয়ে বাঁচতে চায়! জীবন চায়!
তো এত ত্যাগ, এত সংগ্রাম বৃথা যাবার নয়। সাফল্য ধরা দেয় জালে মাছ আটকে পড়বার মতো আনন্দে। ঢাকায় ১৯৯৯ সালে শিশু একাডেমী আয়োজিত আন্তজেলা মহিলা সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হলেন মাহফুজা। জয় করলেন সোনার মেডেল। বয়স তখন মাত্র নয় বছর। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার কারণেই তাকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সাঁতার প্রশিক্ষণে ভর্তির সুযোগ করে দেয়। সেই জলভরা সাঁতারের সমুদ্রে মাহফুজা সাঁতরায় আর ভাবে- আহা! জলপূর্ণ সাঁতারের নদীতে সাঁতার কাটবার মত জলহীন এক ঝাঞ্ঝ্্ার জীবন সাগরে সাঁতরানো এত সহজ নয় কেন?
সব ঠিকঠাক। কিন্তু ভর্তির টাকা? কে দেবে তাকে এত টাকা? জলপূর্ণ সাঁতারের এত পানির মতো জীবনের সাতারে এত পানির অভাব কেন?
না! জোয়ারের পানি যেমন নির্ধারিত সমুদ্রের পানির সকাল সন্ধ্যা বৃদ্ধি ঘটায় সে রকম জীবন নদীতেও কি কখনো সময় মেপে মেপে জোয়ার কিংবা শুকনো নদীতে ঢল ঢল করে উছলে ওঠে জোয়ারের পানি? নাকে মুখে ঢোকে অন্তহীন। হাবুডুবু খায়। তারপর সব কিছুর মধ্যে থিতু হয়ে ভাসতে থাকে সে উচ্ছ্বল পানির বন্যায়? হ্যাঁ। কখনো সখনো। তাই তো জীবন এতো মধুর। জীবন এতো সাফল্য মন্ডিত! জীবন এতো ব্যাপক! জীবন এতো অর্থময়!
চাচা চিন্তা করবেন না। শিলার ভর্তির টাকা আমি দেবো। বিকেএসপি তে ভর্তি হতে কত টাকা লাগবে, চাচা?
কি বলো বাবা? তুমি দেবে আমার শিলার ভর্তি খরচ?
হ্যাঁ চাচা। শুধু ভতির্র খরচ নয়। আমি ওর যাবতীয় খরচের ভার নিতে চাই।
কি বলে যে তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো, বাবা। মহাচিন্তায় ছিলাম।
কোন কৃতজ্ঞতা নয় চাচা। এতো আমাদের দায়িত্ব। শিলার মত এ গ্রামের হাজারো মেয়ে আমার গার্মেন্টস এ সেলাই করে সুঁইতে সুতো ভরে জীবন পার করে দিচ্ছে। সেখানে আমাদের শিলা যদি সাঁতরে আমাদের গ্রামের, আমাদের জেলার, আমাদের বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে তো আমরা হবো সত্যিকার অর্থেই গর্বিত।
সেই থেকে শিলার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। কিন্তু এখানেও আসে কত রকম নোংরামি। কত রকম কুৎসা?
ফেরদৌসের কি এমন লাভ আছে আলী আহমেদের মেয়ের পড়ার খরচ যুগিয়ে? আর মেয়েই বা এইখান ছেড়ে, যশোর ছেড়ে ঢাকায় থাকে? কি এমন কাজ তার? ঢাকায় মেয়ে কি করে? আরও কত কি?…
সময় এক সময় শান্ত হয়!
যখন সে ২০০৩ এর বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতে নেয়। জিতে নেয় জাতীয় প্রতিযোগিতায় জ্যেষ্ঠ সাঁতারুদের পেছনে ফেলে।
টিভির স্ক্রীনে দশমুখে হেসে ওঠে মাহফুজা। যখন হেসে ওঠে তার হাতের ফুলের গুচ্ছ, হেসে ওঠে তার গলার সোনার মেডেল, হেসে ওঠে তার চুলের গুচ্ছ, চোখের দ্যুতি এবং দাতের হীরক। তখন হেসে ওঠে তার গ্রামের সেই সারাজীবনের সমালোচনায় ব্যস্ত মানুষগুলোও।
যারা কোনদিন তার সাথে কথা বলে নি তারাই সেধে এসে কথা বলতে শুরু করল।
তারাও আড়ালে আবডালে আলী আহমেদের কাছে খোঁজ নেয়, কি করে তাদের মেয়েকেও সাঁতারু বানানো যায়। বিশ^ব্যাপী টিভির পর্দায় ফুলের ঘ্রাণে ঢেকে থাকা হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখানো যায়। সোনার মেডেলের চমকে চমকিত করাতে পারে সারা দেশ। সারা বিশ^!
এবার গ্রামের মানুষের ভুল ভাঙলো। অপবাদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকা মাহফুজা রাতারাতি হয়ে ওঠে সে গ্রামের গর্ব। এভাবেই এগিয়ে যায় মাহফুজার দিন রাত। বুনতে থাকে স্বপ্ন। বাড়তে থাকে স্বপ্নের বীজ তলা। ২০০৬ এর কলম্বো সাফ গেমসে প্রথমবার পুলে নেমেই জিতে নিল দুটি ব্রোঞ্জ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মাহফুজার প্রথম প্রতিভার ঝলক। এবার তার লক্ষ্য। ব্রোঞ্জকে বানাতে হবে খাঁটি সোনা।
তাই তো কঠোর পরিশ্রম শুরু করলেন মাহফুজা। দিনকে রাত। রাতকে দিন। চললো এভাবেই প্রতিদিন।
ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে। সাংবাদিকতা বিভাগে শুরু হলো নতুন অধ্যায়। পড়াশুনা চালিয়ে নেবার জন্য নতুন সংগ্রাম হাসিমুখে মেনে নিলেন। জীবন, সাতারের পুল আর পড়াশোনা। তিনটি একইসাথে চালিয়ে নিতে বিকেলে প্রতিযোগিতা করে রাতের বাসে চট্টগ্রাম যেতেন। সকালে পরীক্ষা দিয়েই ঢাকায় ফিরে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন আবার। আলস্য কখনো তাকে ছুঁতে পারে নি। না পেরেছে ক্লান্তি! টাইমিংয়ের প্রভাব পড়তে দেননি জীবনের কোন অসতর্ক মূহুর্তে। টাইমিংয়ের টাইটানিক ঠিক ঠিক ভেসে চলেছে জীবনের গভীর সমুদ্রে।
শুরু হলো এসএ গেমস্। মেলে ধরলেন নিজেকে। ২০০৬ এ জিতেছিলেন দুটি ব্রোঞ্জ। এবার জিতে নিলেন দুটি সোনা! উন্নতির গ্রাফটা ঠিকপথেই চলছিল। কিন্তু তৃপ্ত ছিল না সে। তার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক আসরে সোনা জেতার আকাক্সক্ষা। এরইমধ্যে একটি ইভেন্টে ফটোফিনিশিংয়ে সোনা হাতছাড়া হয়েছে। এই দুঃখবোধ মাহফুজাকে আরও তাতিয়ে দিল। কে যেন বলল-
মেয়েটার উচ্চতা কম। অত খাটো না হলে ফটোফিনিশিংয়ে সেই এগিয়ে থাকতো।
কানে ভেসে বেড়াতে লাগলো সহমর্মিতার সুর! না কি তার সামর্থ্য? নাকি খোঁটা?
এই উচ্চতা দিয়ে কত কত বাঁধার দেয়াল টপকেছেন! আর আজ? তাকে যোগ্য জবাব দিতেই হবে। প্রতিক্ষায় থাকেন সুযোগের! প্রতিক্ষায় থাকলে আসলেই সুযোগ এসে ধরা দেয় একদিন। মাহফুজার ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তার সুযোগ এসেছে দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০১৬ তে।
৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১৬ খ্রি.। সেদিনও গুয়াহাটির সোনামাখা সূর্য রং টকটকে লাল ছিল। ছিল অবারিত প্রান্তরে নানা রংয়ের বর্ণিল প্রভা! সূর্যের সোনা মাখা রং যখন চারিদিকে চিকচিক হেসে উঠছিল তখন সারুসাজাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের জাকির হোসেন সুইমিংপুলে বাংলাদেশের সাঁতারুদের নিয়ে কারো তেমন কোন আগ্রহ নেই। তারা তো এসেছে ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’ এই শ্লোগানে মাতোয়ারা হতে- অন্যদের ভাবখানা এমনই! কিন্তু মাইকের একটি ঘোষণা চারিদিকে অন্য রকম সুরের মোহনীয় উচ্ছাসে ভেসে গেল। চারিদিক নিস্তব্ধ। সবাইকে স্তব্ধ করে দিলো একটি ঘোষণা। ‘১০০ মিটার ব্রেষ্ট ষ্ট্রোকে সোনা জিতেছেন বাংলাদেশের মাহফুজা খাতুন।’ সময় নিলেন মাত্র ১ মিনিট ১৭ দশমিক ৮৬ সেকেন্ড। গেমসে সোনাজয়ী বাংলাদেশের প্রথম নারী সাতারু! একদিন পরেই সেই সুইমিংপুলে ৫০ মিটার ব্রেষ্ট ষ্ট্রোকে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতলেন আবারো। ভাঙলেন ১০ বছর পুরনো গেমস রেকর্ড।
অথচ এখানে পাঠানো নিয়েই কর্তৃপক্ষ ঘোলা করেছিল জল। ‘মাহফুজা বুড়িয়ে গেছে!’ ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভারতে আনা হয়েছে তাকে।’ ইত্যাদি শুনতে শুনতে তার মাথায় বিজয়ের মুকুট রেখা তড়পরায় রাতদিন। অবশেষে জীবনের শেষ জ¦ালানিটুকু দিয়ে লড়াই করার তাগিদ অনুভব করে সে। এবং এক সময় নিজের দিকে ফিরে তাকাবার অবকাশ পায় এক সন্ধ্যায়Ñসময় করে একান্ত নিজের জন্য। কথা হয় একান্ত একান্তজনের সাথে। সে কি আজ বড় বেশি অসহিষ্ণু?
আর কত অপেক্ষা পৃথিবী?
আর একটু সূর্য!
অস্ত যে যেতে চায় সূর্য, তর সয়না আর আমার পৃথিবী। গণগণে তাপ যে আমার মাথায়। সে শান্তি চায়, শান্ত হতে চায়।
দিনের শুরুতেই অস্ত যেতে চাইলে পৃথিবী যে কোনদিন পরিপূর্ণ অন্তরাপার্তায় নিমজ্জ্বিত হতে পারে না সূর্য!
আজ চৌদ্দ বছর ধরে অপেক্ষার পর আজ পৃথিবীর কি কথা শুনি?
তাই! ওভাবে ঘড়ির আহ্নিক গতির রেখা ধরে হিসাবে বসিনি কোনদিন।
মেঘে মেঘে বেলা তো অনেক হলো। এখন সময় হিসাবের।
বাহ! ভারী হিসাব শিখে যাচ্ছো মনে হচ্ছে।
শিখে যাচ্ছো মানে কি? শিখে ফেলেছি ঠিকঠাক। আর নয় কোন অযুহাত। এবার তাড়া আমার তাড়া করে ফেরে। কিছু বলো পৃথিবী।
চৌদ্দ বছর সংগ্রাম করে মাহফুজার শরীর আজ ধারণ করে পৃথিবীর রং। আর সূর্য তো অপেক্ষায় থাকে অনন্তদিন!
আর অপেক্ষা নয়। এবার নতুন জীবনের শুরু।
চলো রচি নতুন জীবনের গন্তব্য এক! সূর্যের সাথে তাল মেলায় পৃথিবীর কণ্ঠস্বর।
অতঃপর এক শুভ ক্ষণে চৌদ্দবছর ধরে ভালবাসার মানুষ আরেক সোনাজয়ী সাতারু শাজাহান আলী রনির সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসলেন মাহফুজা। যোগ দিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চিফ পেটি অফিসার পদে। দিন গড়াতে থাকে তার আপন মহিমায়Ñ
আজ সকাল থেকেই অভয়নগরের আকাশে বাতাশে এক নতুন আশা- নতুন গুঞ্জন- নতুন শব্দধ্বনি। জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ। তারা এক নজর দেখতে চায় এ গ্রামেরই গর্ব অহঙ্কার শিলাকে। শিলা আজ আসছে অভয়নগরের মাটিকে ধন্য করতে। নিজেকে ধন্য করতে। তার ধুলোবালির গ্রামের মানুষের চেয়ে তাকে আর কে ভাল চেনে?
যারা একদিন তার নামে নাক সিটকাতো তারাই আজ গোলাপ-বকুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করছে রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল, তার আঙিনায়! অদূরে দাঁড়িয়ে আছে এ গ্রামের সম্ভ্রান্ত অভিভাবক লিয়াকত চাচা। পাশে তার সুন্দরী শিক্ষিত মেয়ে নাজনীন। হাজারো ভিড় ঠেলে মাহফুজার চোখ যায় নাজনীনের দিকে। হাত ইশারায় কাছে ডাকে তাকে। সে ধীর পায়ে ছুটে আসে মাহফুজার কাছে। আর তার বাবা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকে। নিমগ্ন। একদিন সেও যে তাকে অপমান করতে এতটুকু পিছপা ছিল না! অথচ মাহফুজার চোখ যায় সেখানেই আগে।
আসুন চাচা। কেমন আছেন? কিভাবে যাচ্ছে দিনকাল।
লজ্জায় সমস্ত রক্ত মুখে উঠে আসে লিয়াকত চাচার।
এই তো মা। তোমাকে দেখতে এলাম। তুমি আজ গর্ব আমাদের!
মাহফুজার নির্মল, গর্বের, বিজয়ের হাসিতে লিয়াকত চাচার মুখের সমস্ত রক্ত নামিয়ে সেখানে দরদ এনে দেয়।
ভালো আছি মা। তুমিও ভালো থেকো চিরদিন এভাবেই।
নিন্দা আর শ্লাঘার ঝড়কে জয় করে আজ চারিদিকে মাহফুজার জয়গান- দরদের দাপাদাপি- অভয়নগর গ্রামে ভেসে বেড়ায়। আসলে সময় এরকমই। সুসময় এবং দুঃসময়Ñ সব সময় শত্রুকে বন্ধু বানায়। মানুষ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একাকার হয়। তাই তো অভয়নগর গ্রামের সব মানুষ আজ একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। সব কিছু সম্ভব করে মাহফুজার ম্যাজিক মেডেল! মাহফুজা হঠাৎ খেয়াল করে তার ম্যাজিক মেডেলের দ্যুতি ঝিলিক দেয় চারিদিক–অভয়নগরের সমস্ত ধুলোমাটি, আকাশ, বাতাশ, নদী, সমুদ্র, মানুষের মুখ আর বৃক্ষের বাকলে বাকলে।
