আশাশুনি ব্যুরো: বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৫৭ তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আশাশুনিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হল রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা সাহিত্য পরিষদ আশাশুনি উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শহীদুর রহমান। উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কামরুন নাহার কচির সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জি এম সাহিদুল ইসলাম রুবেলের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন, বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য অধ্যাপক সালেহা আকতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ম জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ হুমায়ুন কবীর, উপজেলা সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক তৃপ্তিরঞ্জন সাহা, জি এম মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক সুবোধ কুমার চক্রবর্তী, ফজলুল হক ও শিক্ষক সেলিনা আকতার। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধান চন্দ্র মন্ডল, প্রভাষক ডাঃ শিবপদ সরকার, মনোরঞ্জন সরকার ও এসপি অনীল কৃষ্ণ সরকার। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আলী আসলাম ও গীতা পাঠ করেন মনোরঞ্জন সরকার। অনুষ্ঠানে কবি রুস্তম আলি ও কবি বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব ও প্রফেসর জাফর ইকবাল ও হুমায়ন আযাদসহ অন্যদের উপর হামলার প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। একই সাথে নব-গঠিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।
Author: dakshinermashal
-
আশাশুনিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী পালন
-
জাসদ তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়নের সম্মেলন
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: শুক্রবার বিকালে পাটকেলঘাটাস্থ ডাক বাংলো চত্বরে মোক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সরদার মোঃ মোসলেমের পরিচালনায় জাসদ তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়নের সম্মেলন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু। বিশেষ জাতীয় কৃষক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ কামাল, তালা উপজেলা জাসদের সভাপতি বিশ্বাস আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা কমিটির সদস্য মীর মোর্তুজা, জালালপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম, প্রভাষ ঘোষ জীবন, শেখ হিরো আলম প্রমুখ। সম্মেলনে উপস্থিত সকলের সর্ব সম্মতিক্রমে মোঃ মোক্তার হোসেন কে সভাপতি, সরদার মোসলেম, মীর মোর্তেজা কে সহ-সভাপতি, আবু মুছাকে সাধারণ সম্পাদক, গৌতম দাশকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শেখ আসাদুল ইসলাম কে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট সরুলিয়া ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালা- কলারোয়া সাতক্ষীরা-১ আসনে নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু। -
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলা শাখার জরুরী সভা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টা সাতক্ষীরা পুরাতন উকিলবারে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এড. ফাহিমুল কিসলু। সভায় বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি আবুল খায়ের, রবিউল ইসলাম, ছাদিকুর রহমান, সদস্য আফাজ উদ্দীন মোড়ল, আলী হোসেন, হুমায়ুন কবির, মকবুল হোসেন। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম। আগামী ১৪জুলাই’১৮ তারিখ শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং একটি ৯ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
-

সাতক্ষীরায় আমের বাজারে বেচাকেনার ধুম
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় আমের বাজারে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। জমে উঠেছে আমের বাজার। চারিদিকে আম আর আম। আম কিনতে দেশের পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধুম পড়ে গেছে আম কেনা বেচায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আম চাষীদের কর্মব্যস্ততার যেন শেষ নেই। আম পাকতে শুরু করায় আম পাড়া এবং বেচাকেনার উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার ব্যবসায়ীরা এ মৌসুমের আমের প্রথম চালান ঢাকাতে পাঠিয়েছে। প্রথম দিনে জেলা থেকে প্রায় ১০ ট্রাক গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ঢাকার শতাধীক ও সাতক্ষীরার সহ¯্রাধীক পাইকারী আম ব্যবসায়ী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আম প্রকিয়াজাতকরণে। চলতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার আম ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে আম ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তবে বাজার মনিটরিং ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। এবার আমপাড়া কোন নির্ধারিত দিন ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। জেলা কৃষি অধিদপ্তর খামারবাড়ির পক্ষ থেকে বিষমুক্ত আম সংগ্রহের জন্য গাছে পাকা শুরু করলেই আমই পাড়া যাবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর গরমের তীব্রতায় আগেভাগেই আম পেকেছে। বুধবার সাতক্ষীরার বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজার জুড়ে আম। সারি সারি ইঞ্জিনভ্যান আম নিয়ে ছুটছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরার বাজারের গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম উঠতে শুরু করেছে। বড় জাতের গোবিন্দ ভোগ আম ১৫শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা দরে মণ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গোপালভোগ আমের দাম তুলনামূলক কম। বরাবরের মতো এবারও সবার আগে বাজারে উঠেছে সাতক্ষীরার আম। সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আমের আড়তে গেলে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। ভ্যানে করে ঝুড়ি ঝুড়ি আম নিয়ে আসছেন চাষিরা। ক্যারেট ভর্তি করছেন কেউ কেউ। কেউবা ব্যস্ত ট্রাক লোডে। আর লোড করা ট্রাক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৫ তারিখের পর থেকে ন্যাংড়া আম বাজারে উঠতে পারে। একইভাবে ১৫ মে’র পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কোয়ারেন্টাইন বিভাগ, বাংলাদেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসলাম এন্টারপ্রাইজও দীপ ইন্টারন্যাশনাল, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ও এফএওসহ সংশ্লিষ্ট চাষিরা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও জেলা থেকে প্রায় ১০০০ মেট্রিক টন আম বাইরে রপ্তানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৭০০ মেট্রিক টন ।
তবে বাজার মনিটারিং এ সরকারের নেই তেমন তদারকি। চলতি মৌসুমে জেলাতে কোটি টাকার আম বেচা কেনার পরিকল্পনা থাকলেও বাজারে নেই কোন নিরাপত্তা কর্মী। ফলে চরম উদ্বিগ্নতার মধ্যে নগদ লেনদেন করতে হচ্ছে এ খাতে সংশ্লিষ্টদের।
বড় ধরণের কোন পাইকারী বাজার না থাকায় সুলতানপুর বড় বাজারের দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা বড়বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে মন্টু মিয়ার জমি ইজারা নিয়ে আম প্রক্রিয়া জাতের কাজ করছে। অর্ধশাধিক ব্যবসায়ী জমি ইজার নিয়ে আড়ত ঘর তৈরি করেছে। এখানে প্রতিদিন দুই শতাধিক শ্রমিক আমের ক্যারেট করে ট্রাক সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
কয়েক জন ব্যসায়ীর সাথে কথা হয়, তারা জানান কয়েক বছর ধরে তারা সাতক্ষীরা থেকে আম কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতে বিক্রয় করে। কিন্তু তারা যথেষ্ট নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে সাতক্ষীরাতে অতিবাহিত করেন।
আবার জেলার অনেক আম ব্যবসায়ী বাজারের আড়তদারদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ব্যবসা করার কারণে বাগানের সমস্ত আম উঠার পর আড়তদারদের কাছে সেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। ফলে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় জেলার গোটা আম ব্যবসায়ীদের।
একটি আম উৎপান থেকে চুড়ান্ত ভোগ পর্যন্ত কয়েকবার হাত বদল হয়। এতে আমের দামকয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু আড়তে আম উঠানোর করণে আড়তদারদের শতকরা আট টাকা হারে খরচ দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরাতে যে আমের মণ ২ হাজার টাকা ঢাকাতে তা বেড়ে দাড়ায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আবার জেলার গ্রাম পর্যায়ে আমের মণ ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় জেলার পাইকারী বাজারে তা ২ হাজার থেকে ২২শত টাকা। ফলে প্রকৃত চাষীরা আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় চলতি বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগান রয়েছে ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি আমের বাগান রয়েছে। সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের অনুকূল হওয়ায় অন্য অঞ্চলে উৎপাদিত আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম বাজারে উঠতে থাকে সবার আগে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। গত চার বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য। তিনি জানান আম দ্রুত পাকানোর জন্যে যদি কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নেয় তবে কয়োর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সুনাম ক্ষুণœ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তার অধিকার ক্ষুণœ করে আম পাকাতে কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নিলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করা হবে। সাথে থাকবে জরিমানার ব্যবস্থা। -
নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের মতবিনিময়
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানির সঙ্কট, ড্রেনেজ সমস্যা নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মধুমোল্লারডাঙ্গীতে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৭টায় স্থানীয় বাসিন্দা সাতক্ষীরা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার অলোক তফরদারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার আহ্বায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, যুগ্ম আহ্বায়ক শুধাংশু শেখর সরকার, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবেদুর রহমান, আনোয়ার জাহিদ তপন, নিত্যানন্দ সরকার, সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি এড. ওসমান গণি, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রেজোয়ান উল্লাহ সবুজ, সাতক্ষীরা পৌর আ. লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সদস্য মো: রাশেদুজ্জামান রাশি, হাফিজুর রহমান মাসুম, ইকবাল লোদী প্রমুখ।
স্থানীয় নাগরিক সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এড. জিল্লুর রহমান (২), এড. রুহুল আমিন, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার, আবু তালেব মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. ইউনুস আলী, মধুমোল্লারডাঙ্গী উন্নয়ন কমিটির আশরাফ আলী, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় বক্তারা সাতক্ষীরা পৌরসভার সাপ্লাই পানির নি¤œমান ও অপর্যাপ্ততা, দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা প্রভৃতি বিষয় সমাধানে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করার প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এসব সমস্যা নিয়ে নাগরিকরা চরম ভোগান্তিতে থাকলেও পৌরসভা ও স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অবহেলার তা সমাধান করা হচ্ছে না। বরং দিনদিন নাগরিক সুবিধা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এবং মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। তারা দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ সাতক্ষীরা পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক। -
তমিজ উদ্ দীন লোদী’র কবিতা : সন্ধ্যা ঠেলছি রাত্রি ঠেলছি
সন্ধ্যা ঠেলছি রাত্রি ঠেলছি
তমিজ উদ্ দীন লোদী
সেই কখন থেকে আমারা সন্ধ্যা ঠেলছি রাত্রি ঠেলছি
স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা অন্ধকার ঠেলছি
জড়ানো আঁধারকুচি ঠেলে-ঠেলে আমরা প্রত্যুষ ও আলো খুজছি।
সেই ধ্বনি, বাতাস আর সমুদ্রের নীল খুঁজছি।স্তব্ধতা ফুঁড়ে বুনো ফুলের সৌরভ খুজছি
চকিতে দেখা একটি মায়া হরিণের অবয়ব
পিক শব্দে উড়ে যাওয়া একটি কোকিল
অদৃশ্য ভাস্কর্যের মনোদর্পণ খুঁজছি।খুঁজছি প্রায় হারানো একটি তাম্প্রলিপি
আঁধারের পলেস্তরায় যা ঢেকে গেছে দীর্ঘকাল
খুঁজছি বৃষ্টিস্নাত ফুলসমেত একটি কদম শাখা
খুঁজছি আমাদের দোআশঁলা ভ্রান্তিবিলাস
ভাঙা আয়না, ভুলের টুকরো, উন্মাদোপম কথামালা
খুঁজছি রক্তক্রোধ ও রুপোলি আগুন
খুঁজছি হারানো ছন্দমাত্রা মিল-অন্ত্যমিল
চতুর্দিক ঘন হয়ে আসা ঠান্ডা মেঘময়তা
আর তার থেকে ঝরে যাওয়া শ্রাবণ কি আষাঢ়ের বৃষ্টি।
খুঁজছি একটি হারানো কৌটো যা প্রত্যুষ আলো ও উজ্জ্বলতার প্রতীক।
খুঁজছি একটি গ্রামফোন রেকর্ড যাতে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে
আমাদের হারানো সব গান। -
দেবহাটার খেজুরবাড়ীয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে নলতা বিজয়ী
বিশেষ প্রতিনিধি: পারুলিয়ার খেজুরবাড়িয়া দক্ষিণা কানন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ২য় সেমিফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খেলায় সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব আবুল হোসেন।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আল-ফেরদৌস আলফা। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন ২নং পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও পারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন হিরা, বিশিষ্ট সমাজসেবক সাইফুল ইসলাম ও দেবহাটা সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সভাপতি, আনন্দ টিভির জেলা প্রতিনিধি প্রভাষক সুজন ঘোষ। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কামরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান আসাদ, শরিফুল ইসলাম, আলহাজ্ব মোক্তার আলী প্রমুখ। টসে জিতে সখীপুর মিতালী সংঘ ক্রিকেট একাদশের সংগ্রহ ১১০ রান। নলতা ক্রিকেট একাদশ ৮ উইকেট বিজয়ী হন। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন নলতা ক্রিকেট একাদশের শাওন (২৫বলে ৫৫রান)। উক্ত মাঠে আগামী সোমবার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। -
কাশিমাড়ীতে চার দলীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ফাইনাল অনুষ্ঠিত
কাশিমাড়ী প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী পল¬ীর জয়নগরে চার দলীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে উক্ত খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। জয়নগর চারদলীয় শাপলা স্মৃতি কাপ টুর্নামেন্ট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে জয়নগর শাপলা জাতীয় সংঘ। উক্ত খেলায় রানার্সআপ হয় এ.আর দুরন্ত কিংস। ম্যানঅফদা সিরিজ নির্বাচিত হয় ইয়াসিন আরাফাত। উক্ত খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন কাশিমাড়ী ইউপি সাবেক সদস্য আনোয়ার হোসেন, বিশেষ অতিথি আব্দুল গফুর, কাশিমাড়ী ৪নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি হাবিবুল¬াহ পাড়, সাংবাদিক ডি এম আব্দুল¬াহ আল মামুন, আমির হোসেন ঢালী, আবু হীনা মিন্টু, মাহমুদ শেখ, গাজী আব্দুর রহমান, মোহর আলী শেখ, ফজলুর রহমান প্রমুখ। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক দেলোয়ার হোসেন ও রানার্সআপ দলের অধিনায়ক রায়হান হোসেন এর হাতে পুরুষ্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। উক্ত খেলার সার্বিকভাবে পরিচালনা ও আয়োজনে ছিলেন জয়নগর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ চেয়ারম্যান দেরোয়ার হোসেন। সমগ্র খেলা পরিচালনা করেন, রবি দাস ও জাহিদ হাসান।
-
আশাশুনিতে আদালতের আদেশের ভুল ব্যাখার দিয়ে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে চিংড়ি ঘেরে লুটপাট
বিশেষ সংবাদদাতা: আদালতের আেেদশের ভুল ব্যাখা দিয়ে এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এক লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এক চিংড়ি ঘেরে হামলা চালিয়ে ২৫ হাজার হাজার টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাব্যাপি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গাবতলা গ্রামে এ হামলা চালানোর পর থানায় অভিযোগ দেওয়ায় হামলাকারিরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে ঘের জবরদখল করে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দাবিকৃত চাঁদার এক লাখ টাকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উত্তম দাসের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য ইব্রাহীম হোসেন, গাবতলা গ্রামের দেবব্রত সানা, অনির্বান দাস, রাজ্যেশ্বর দাস, কাটাখালির ইসমাইল গাজী , আমিনুর সরদারসহ ২০/২৫জন সন্ত্রাসী নারায়ন সরকার ও কালিপদ দাসের ঘেরে লুটপাট শুরু করে। জাল দিয়ে মাছ ধরা ও ঘেরের বাসা ভাঙচুরের চেষ্টার প্রতিবাদ করায় গাবতলা বাজারের মাসুম বিল্লাহ, আমিরুল সানা ও হামিদ গাজীকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তারা কালিপদ ও নারায়নকে যেখানে পারে সেখানে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে আশাশুনি ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনার রাতেই কালিপদ দাস বাদি হয়ে উত্তম মেম্বরসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তারা আরো জানান, নারায়ন সরকারের পৈতৃক পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত গাবতলা মৌজার সাড়ে সাত বিঘা জমি ২০০২ সাল থেকে নারায়ন সরকার ও তিনিসহ পাঁচজন একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে তারা আবারো টাকা জমা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর সার্ভেয়র বিমল গাইন ও সেকশান অফিসার মাদকাসক্ত মোখলেছুর আর্থিক সুবিধা নিয়ে দেবব্রতসানা সহ ১১জনের একটি সুফলভোগী দলকে ইজারা দেন। ২০১৭ সালের ১৬ মে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সুফল ভোগী কমিটির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইজারা ও চুক্তি বাতিলের জন্য কালিপদ দাস সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আবেদন করলে ২ আগষ্ট বন্দোবস্তের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। বিগত ইউপি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন করায় গত বছরের ১৮ জুন উত্তম মেম্বরের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা কালিপদ দাস ও নারায়ান সরকারের ওই ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও মাছ লুটপাট করে পাঁচজনকে পিটিয়ে জখমকরে । পরে তারা ঘের জবরদখলে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে কালিপদ দাস বাদি হয়ে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া মামলা করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যেিজষ্ট্রট আদালতে। আশাশুনি সহকারি ভূমি কমিশনার কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকারের অনুকুলে দখল স্বত্ব প্রদান করলে আদালত তাদের পক্ষে রায় প্রদান করে। এ ছাড়া এ নিয়ে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী ২৬/১৬ দেওয়ানী মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সরকারি আইনজীবী অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহ জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে গত ১৮ এপ্রিল সুফলভোগী কমিটির দলনেতা দেবব্রত সরকারের পক্ষের আইনজীবীরা সহকারি ভূমি কমিশনারের দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন না আসায় দেওয়ানী আদালতে মামলা চলমান থাকার কারণ দেখিয়ে বন্দোবস্ত স্থগিতাদেশ বাতিলের দাবি জানান। বিচারক স্থগিতাদেশ বাতিল না করে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার আদালতে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। সেক্ষেত্রে বনেদাবস্ত স্থগিতাদেশ বাতিল না হওয়ায় দেবব্রত সরকার ও তার কমিটির সদস্যদের ওই ঘেরে যেতে পারবে না। এমনকি আগামি ১৫ মে পরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই জমি নতুন বন্দোবস্ত দিতে পারবে না।
কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকার জানান, আদালতের আদেশের ভুল ব্যাখা দিয়ে গত ৮ মে উত্তম মেম্বরের নেতৃত্বে তাদের ঘেরে হামলা চালিয়ে ২৫ হাজার টাকার বাগদা লুটপাট করা হয়েছে। বাসা ভাঙচুর ও মাছ ধরায় বাধা দিলে মাসুমসহ তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করায় আহতের কাল্পনিক নাটক সাজিয়ে পাল্টা মামলা করার চেষ্টা করছেন উত্তম দাস।
উত্তম দাস সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামলা খারিজ করে দেওয়ায় নারায়ন ও কালিপদ দাসের ওই ঘেরে থানার এক্তিয়ার নেই । তাই তারা গত ৮ মে ওই ঘের দখলে নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি ওই সুফলভোগী কমিটির কেউ না হলেও জবরদখলে অংশ নিয়েছিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনস্বার্থে অনেক কিছুই করতে হয়।
আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন জানান, কালিপদ দাসের অভিযোগ অনুযায়ি গত বৃহষ্পতিবার উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়। ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কালিপদ দাসের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলেও উত্তম দাস ও তার পক্ষের লোকজন বিষয়টি খারিজ হয়ে গেছে বলায় আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি আনার জন্য কালিপদ দাসকে আগামি মঙ্গলবার সময় দেওয়া হয়েছে। তবে গত ৮ মে কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকারের দখলীয় ঘের উত্তম মেম্বরের উপস্থিতিতে জবরদখল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। -
প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বড় বাজারে ফরমালিন দিয়ে পাকানো হচ্ছে অপরিপক্ক আম
শহর প্রতিনিধি: প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বড় বজারে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ীরা অপরিপক্ক আম বাজারজাত করছে। গত ৯ মে জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে আম ব্যাবসায়ী, আমচাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দেন ১৫ মে হিমসাগর ও ২৫ মে ন্যাংড়া আম বাজারজাত করতে হবে। কিন্তু বড় বাজর ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন হাজার হাজার মন অপরিপক্ক আম বড় বাজারে বাজারজাত হচ্ছে। এবং তা ফরমালিন দিয়ে পাকিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
শুক্রবার বড় বাজর ঘুরে দেখা দেখা গেছে অপরিপক্ক হিমসাগর আম সয়লাব। ঝুড়ির উপর কিচু পরিপক্ক আম দিয়ে তলায় সব অপরিপক্ক আম। প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভুগিরা।
বড় বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আবু সালেহ জানান, অপরিপক্ক আম বাজারজাত মোটেও কাম্য নয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানতে হবে। তিনি বলেন, আনঅফিসায়ালি একটি কথা হয়েছে পরিপক্ক আম ব্যাবসায়িরা ভাংতে পারবে। তবে ১৫ তারিখে আম ভাঙ্গার নির্দেশ রয়েছে। -

কয়রাতে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : কয়রা উপজেলার বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক পবেষণাপত্রের প্রকাশনা অনুষ্ঠান
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: সম্প্রতি কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মিলনায়তনে জলবায়ু পরিষদ, কয়রার উদ্যোগে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : কয়রা উপজেলার বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বাবু অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ ও লেখক অধ্যাপক আ.ব.ম. আব্দুল মালেক, কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রভাষক কাজী বাহরুল ইসলাম, সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মি ইমদাদুল হক টিটু, আইসিটি ও স্কাউট শিক্ষক মেসবা উদ্দীন, আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের নেতা নিরাপদ মুন্ডা, উন্নয়ন কর্মি শাহানারা বেগম ও আরিফা খাতুন।
সভায় বক্তাগণ বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি থাকা এলাকার মধ্যে কয়রা উপজেলা সবার সামনে। প্রকাশিত গবেষনাপত্রটি এ বাস্তবতার বিবেচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিষদ কয়রার সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর স্বাগত বক্তব্যবের মাধ্য শুরু হওয়া প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মিসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। -

সায়েম ফেরদৌস মিতুল এর কবিতা
ভূত
এসেই চলেগেল
কয়েক লক্ষ পদ্ম ফুটিয়ে সর্ষের ভেতর দিয়ে চলে গেল ভূত, বললো যাই
আর অমনি ভিন্ন ছায়াপথ থেকে খসে পড়লো ছত্রিশখানা তারা, তা থেকে একটির বীজ সংগ্রহ করে বাঁকল ছাড়ানো দেহে রুয়ে দিতেই চোখ ভরে দেখলাম দুরে কেউকারাডঙের চুড়োয় বহুদিনের ফেলে আসা বৃক্ষীটি হয়েছে স্তনবতী
অমরাবতী..
বিশ^াস করো আমি তার দুধ পান করিনি একটুও, আমি তার দীর্ঘিকারের মতো অতলে চুবিয়ে ধরিনি কোন শুড়, শুধু বাঁকল ছাড়ানো দেহটির লেবুঠোঁট চক্ষুআষ্টে আর তন্তুচুল জমিয়েছি, ভেবেছি অঞ্জলী দেবো তাই
অমনি সারা গায়ে নৈশ মেখে স্বপ্নের ঝোলের ভেতর নাভি রেখে চলেগেল
বললো যাই…।বুলড্রেজার প্রীতি
ভাঙারও একটা শিল্প আছে
যাপিত জীবনে ঠেস দিয়ে বুঝেছি কেবল নির্মান নয়, কেবল আঙুলের উত্তাপে
বীজ জড়ো করলেই বা´বন্দি হয় না অমৃতের দৈত্য
অমরাবতী…
বুলড্রেজার প্রীতিই জম্ম রসায়ন, ভাঙতে ভাঙতে অলক্ষে গড়ে তুললে প্রতœজীব তার প্রতিবিম্বে বৃক্ষলগ্ন হয় গুল্মেরা, সেই সব বৃক্ষের সবুজাভ ছায়া নিয়ে পাখিরা গড়ে সমবায়ী জীবন, শে^তকুষ্ঠহীন ধোয়ামুখ গুলো ত্বক ভরে পান করে ঋতুরন্ধ্রের বাতাস, ঠিক ঐ সময়ই কবিদের পিঠের খোলায় জমা হয় হলুদ ঘিলু তা কি চেঁখে দেখেছে স্তন্যপায়ী মানুষেরা
অথচ ধ্বংস বলছো কেন ধ্বংসতো হয় না কিছুই
পৃথিবীর মুদিতপদ্মচোখে সবিতো নিষ্ঠার চুম্বন, অবশেষে মিলে যায় সকল গাণিতিক ফল অবিরল, কেবল ভাঙলেই প্রসারিত হয় শিল্পের দরজা..।আবেদন
মাননীয়া উত্তরা…
দক্ষিণা দিতে এসে ফিরতে হবে, দেবী
পা-এতে ফেনা উঠে গেল অথচ এমন করে দিতেন আর্শিবাদ
এমন করে চুলের ভিতর বিলিকাটা মাথায় রাখা হাত
এমন করে মন্ত্র করে দিতেন জপে আর অমনি হতেম কবি থেকে পুরুষ
ভালোবাসার রামধনু আর খুলে ছিলেন ধনুক থেকে তীরের যত ফলা
শিখিয়ে ছিলেন যজ্ঞ শেষে উতলে ওঠে বর্ণমালা তাদের ছলাকলা
লাগিয়ে দিলেন সমস্ত গায় দূর্বা রঙের সবুজ
তাইতে আমি শিশুর চেয়ে সরল, লোকালয়ে আমিই বোকা, আমি কেবল অবুঝকেন তবে ফিরতে হবে, দেবী
লগ্ন শুরুর ভূমিই তো শেকড়ে গেছে পুতে
ঘুরছে কেবল বিষ বিহীন চ্যালা, আমার সকল জঙ্ঘা ফুঁড়ে কেবলই কাঞ্চন
সাতমনিহার, দুধ মাখা চাঁদ, সর খাওয়ার বেলা
এমন পাতের বাড়া থালা ঠেঁলে দিবেন বলেন
আয় দেবী আয় টিটি টিটি, স্বর্গ গড়ি চলেন…..। -

কুড়িয়ে পাওয়া গল্পের মতো
সৌহার্দ সিরাজ
সন্ধ্যাশ্রী বলত-দুপুর হাতে নিও না,
মনে রেখ গল্পের উপাদানে ব্যাসবাক্য দিলে ক্ষতি নেই।আমি দেখলাম প্রথম প্রথম যারা প্রেম করতে শিখেছিল
তাদের সবারই একবার দুঃখ সরোবারে ¯œান করতে হয়।মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসার মধ্যে একটা সৌন্দর্য আছে মানতে হবে
হিসেব বৈচিত্রে পথযাত্রা বহুমাত্রিক হলে
চাওয়া পাওয়ার একটা ব্যাবস্থা শেষ পর্যন্ত হয়ে যায়।নাবিকদের চোখের মধ্যে থাকে পথ
পথের কী কথা বলছে দু’জন ছন্দ প্রকরণ
কুড়িয়ে পাওয়া গল্পের মতো ছাইরঙ স্মৃতি আজও ভীষণ টানে
সহজে কেউ কি মাটির মায়া ছাড়ে!ভোরের ঘরে নতুনত্ব সোহাগী ভোগের বীজ
খসড়া দলিলে হাত তো নিজেদেরই খেলা
মনটা ছায়ার উপর ঘোরাঘুরি করে
স্মৃতি ভেঙে ছুটে যায় দিন
সন্ধ্যাশ্রী আজ আমাদের নতুন পরিচয়। -

শ্যামল সেই ইচ্ছেটুকু খুঁজে পেয়েছেন তাই পৃথিবীর রহস্যের কাছে পায়ে হেঁটে যেতে তাঁর দ্বিধা নেই
স ম তুহিন
কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ স্যার বাংলা পড়াতেন একটা বড় কলেজে। ভাষার পরে বিশেষ করে উপভাষা নিয়ে কাজ করেছেন। অনেক মেধা আর মানসিক পরিশ্রমের চিহ্ন তার ‘সাতক্ষীরার উপভাষা স্বরূপ ও স্বাতন্ত্র্য’ বইটি। অনেকেই বলেন এ কাজটি অনেক টিকে থাকা কাজের মধ্যে একটু বেশি রকমের ভাব নিয়ে টিকে থাকবে। কবিতা লিখতে কষ্ট হয় বলে কবিতা লেখেন না, চেষ্টাও করেন না। তারমানে অন্য যে কোনো কাজের চেয়ে কবিতা লেখা বা সাজানো অনেক কঠিন কাজÑঅনেকবার শুনেছি এ কথা তাঁর মুখে। যদি তিনি কবিতা লিখতেন, তাহলে ভালো কিছু কবিতা আমরা পেতাম, আমার ধারণা। কবিতা সবাই লিখলেও কবিতার সাথে মিশে যেতে পারে না কিংবা কবিতা ধরতে পারে না বেশিরভাগ কবিতার লেখক। এমনকি কবি হিসেবে সবাই চেনে এমন কবিতা লেখকও কবিতা কী, কবিতার বাঁকবদল, কোন সময়ের কবিতা কেমন হবে…ইত্যাদি বিষয়গুলো ঠিক ঠিক ধরতে পারেননি, এমন উদাহরণের উপস্থাপন করা যাবে অনেক। আমার মনে হয়, কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ স্যার কবিতাটা ধরতে পারেন (একাডেমিক ধাঁচের প্রচলিত বর্ণনার বাইরেও আলাদা-আলাদা ভঙ্গিমায় বুঝিয়ে দিতে পারার অনবদ্য ক্ষমতা তাঁর সহজাত, তাই এমন বলা)
কথা বলতে বলতে স্যার বলেছিলেন, একটা মিছিল বা প্রোসেশন-এ অনেক লোক থাকে। অনেক মাথা-মুখ, শরীর থাকে। সামনে থেকে কাউকে কাউকে দেখা যায়, পেছন থেকেও দেখা যায় কিছু জনকে, আবার ধার থেকেও দেখা যায় বেশ কিছু জনকে। একেবারে উপর থেকে চোখ মেললে অন্য রকমের ছবি দেখা যায়Ñ সব মাথাগুলোর ছবি।
স্যার যেটা বলতে চেয়েছিলেন, সম্ভবত এ রকমÑ যে কোন এলাকায়, যে কোনো দেশে শিল্প-সাহিত্যের কোনো একটা আন্দোলন সমবেত প্রচেষ্টার একটা মিছিল বা প্রসেশন। যে যে কোণ থেকে যেভাবে দেখবে সে সেভাবেই মনে মনে ধরে নিতে পারবে, ঐ প্রসেশনটা কী বলতে চেয়েছিল। কী বলার জন্যে তারা চলছিল সময়ের সাথে, সময়ের রাস্তা ধরে। সবাই ছিল। কেউ সামনে কেউ পেছনে কেউ ধারে। একটু সময়ের হেরফেরে কেউ দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়…। আমাদের খুজে নিতে হয়, কষ্ট করে খুজে নিতে হয়Ñ
স্যারের বলা কথার ধার ঘেঁষা এমন কিছু কথা ঔপন্যাসিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে বলেছেন, সুপরিচিত মননশীল লেখক গোলাম মুরশিদÑ ‘সবাই স্বীকার করবেন না, কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে। সেই ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ তরতর করে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান। ডান হাতে, বাঁ হাতে পুরস্কার নিতে থাকেন। আবার কেউ কেউ উজান ঠেলে প্রতিকূল ¯্রােতে প্রাণপণ বৈঠা টেনেও জনপ্রিয়তা অথবা জনস্বীকৃতির প্রত্যাশিত বন্দরে পৌঁছাতে পারেন না। তাঁর কপালÑ শ্যামলদা দূর্ভাগ্যক্রমে এই দ্বিতীয় দলের নিবন্ধিত লোক।১
কয়েকদিন আগে সকালে দেখি চকচকে স্ট্যাম্প পড়ে আছে রাস্তায়।
রেভিনিউ স্ট্যাম্প, তুলে নিলাম। মনে পড়ে গেল ছেলেবেলায় একবার একটা টিঠি পাঠাতে খামের ওপর সেঁটে দিয়েছিলাম বাড়িতে থাকা রেভিনিউ স্ট্যাম্প। বাছাইয়ের সময় বোধহয় পোস্টমাষ্টার কাকা সেটা দেখেছিলেন। পোস্টম্যানকে দিয়ে ডেকে নিয়ে বুঝিয়েছিলেন কোন্ স্ট্যাম্প কোন্ কাজে ব্যবহার করতে হয়। তখন ভালোভাবে বুঝিনি। এখনও বুঝি এমন না। তবে এটা বুঝি সব স্ট্যাম্প সব কাজে লাগে নাÑ
অন্যরকম একটা রেভিনিউ স্ট্যাম্প আছে, সেটি শুধুমাত্র জীবনের সাথে সেঁটে নেওয়া যায় বা যেতে পারে। অমৃতা প্রীতমের আত্মজীবনী ‘রেভিনিউ স্ট্যাম্প’। আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যে অমৃতা প্র্রীতম জনপ্রিয় এবং বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি নাম। সাহিত্যিক হিসেবে বৈপ্লবিক চেতনা ও দৃঢ়তায় সমাজকে যতটা না শৃঙ্খল-মুক্ত করতে পেরেছেন, তার চাইতে নিজের একক বিদ্রোহে নিজেই বিধ্বস্ত হয়েছেন অনেক বেশি। তবে কোনো কৃত্রিমতা বা আড়াল দিয়ে তিনি নিজেকে কখনও ঢেকে রাখেন নি, রাখার চেষ্টাও করেন নি এবং তার এই অকপট স্বীকারোক্তিই অমৃতা প্রীতমের সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট, সম্ভবত এরই জন্যে বিতর্কিত হয়েও সাহিত্যিক হিসেবে তিনি আজও অনেক জনপ্রিয়।
ছেলেবেলায় চিঠির খামে না জেনে রেভিনিউ স্ট্যাম্প সেঁটেছিলাম, সেটি আমার এক বন্ধুর কাছে পাঠাতে চেয়েছিলাম। নিছক অফিসের কাজের জন্যে ছাড়া এখন আর কাগজে লেখা চিঠি কেউ কাউকে লেখে না। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এ অনুভূতি এখন রূপান্তরিত হয়েছে এস এম এস কিংবা চ্যাটিং-এ। কলম ধরে না লিখলে লেখকদের ভাব আসে না, অনেকে বলেন। এখন অনেক লেখকই অভ্যস্ত হয়ে গেছে কম্পিউটারের কী-বোর্ডে। কী-বোর্ডের সামনে না বসলে তাদের এখন আর ভাব আসে না। কাজে লাগে এমন যা কিছু প্রযুক্তির হাত আসছে যা কিছু আসবে সে সব হাতে হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানানোই ভালো। স্ট্যাম্প বদলের পর চিঠিটা গিয়েছিল আমার বন্ধুর কাছে।
বন্ধুত্ব নিয়ে সন্দিপন চট্টোপাধ্যায়-এর ডায়েরিতে ১৯৯৩ সালের ৩০ জানুয়ারির পাতায় চোখ রাখি ‘বন্ধুতা ব্যাপারে এক-একজনের একটা নিজস্ব খেলা আছে। শতরঞ্চের ওপর চার আনা দান ফেলে কেউ বলে, ‘এই ষোলো আনা ফেললাম।’ বিশ^াস করে যারা ষোলো আনা খেলে (অনেকে ডাবল দেয়), তারা পরে বুঝতে পারে, তারা ষোলো আনা খেলেছে মাত্র চার আনার ওপর। এদিকে সেই বাকি বারো আনা তো নিস্কর্মা হয়ে বসে থাকতে পারে না। তারা, ইন স্পাইট অফ দেমসেলভস প্রতারক বন্ধুটির সঙ্গে অবুঝ অপ্রণয় শুরু করে। এই কারণেই তাঁর সমসাময়িক বন্ধুরা কেউ জীবনানন্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছিলেন, এমন শোনা যায়নি। কারণ, উনি চার আনা ফেলতেন। শক্তি কিন্তু বছরে একবার দেখা হলেও ষোলো আনা বন্ধুত্ব দিয়ে গেছে। সুনীলও ষোলো আনা দেয়, তবে তার বন্ধুত্ব আঠারো আনা। দু আনা নিজের কাছে থেকে যায়।’২
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বন্ধু সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে যান নার্সিংহোমে। ১৪ জুলাই ২০০১ তারিখে ডায়েরির পাতায় লেখা ‘কাল শ্যামলকে (সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়) দেখতে গিয়েছিলাম। সিঁথির নার্সিংহোমে। লোকে বলল চিনতে পারছে। আমি টের পেলাম, পারছে এবং পেরেছে।’ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০১।*
সাহিত্যিক বন্ধু শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আরও লিখেছেন
‘… শ্যামল হচ্ছে সেই লেখক যার যে কোনো এক্সপেরিমেন্ট বিনা পরিকল্পনাতেই ভূখ- জয় করে নিতে পারে। ওর লেখক সত্ত্বাকে বোঝাবার জন্য বই পড়বার দরকার নেই, ওর পিছু পিছু ঘুরে বেড়ালেই হবে। একদম শ্যামলের মতো আনপ্রেডিকটেবল। কোনো তত্ত্ব দিয়ে বেশিক্ষণ একটা কুকুরকে বেঁধে রাখা যাবে না। পরের মুহূর্তেই আরেকটা আরেকভাবে চিৎকার করবে। এতে বিপদও আছে। কোনোভাবেই কুকুরটাকেই বুঝতে পারা যায় না ঠিক করে যাতে ধরা পড়ে চিহ্নিত করার মত অপরাধচিহ্ন। ওর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী লেখাগুলো ছোট ছোট। ‘কুবেরের বিষয় আশায়’-এর মত। ‘শাহজাদা দারাশুকো’ সবচেয়ে ফালতু। ওর কিন্তু ধারণা সেটাই সবচেয়ে ভালো। যে কাজটা বিমল মিত্রের সে কাজটা শ্যামল করতে গেল কেন বুঝলাম না। তবে খুব পরিশ্রম করে ইসলামি ব্যাপারগুলো জেনেছে। চাল টিপে দেখলেই বুঝতে পারা যায়। এ চালে কোনো পাইল নেই, না খুদ, না কাঁকর।
আমার মনে হয় ঐতিহাসিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস যেমন আর লেখার দরকার নেই, তেমনি দরকার নেই আড়াইশ, তিনশ, পাঁচশ পাতার ভল্যুম। কেবল পাতার পর পাতা লিখেই যাব এমন মানত না থাকলে দু’শ পাতার উপন্যাস মানে মহাকাব্য লেখা হল। হ্যাঁ, আমি কখনও দু’শ পাতাও লিখিনি। সেটা কেবলমাত্র কুঁড়েমির জন্য নয়, দৃষ্টিভঙ্গির জন্যও।৩
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে বলেছেন, লিখেছেন অনেকে। আবার তার গল্প নিয়ে গল্প বলেছেন মানে সমালোচনা করেছেনও অনেকে, সে সব সমালোচনা সোনায় মোড়ানো। সব লেখা হয়তো সবার পড়া হয়ে উঠবে না। ছোট পরিসরে তাই আমরা এ লেখাটা পড়ে নিতে পারি
‘হালফিল বাংলা গল্পের অনেকটাই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। শুধু ঘরের ভেতরে নয়, একেবারে খাটের ওপরে। মনস্তত্বের গুপ্ত গহ্বরে তার চলাফেরা। এ নিয়ে কিছু ভাল গল্প লেখা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার সংখ্যা সামান্য। এ ধরণের অধিকাংশ লেখা লেখকের অভিজ্ঞতা ও উপকরণ-সংগ্রহের দূর্বলতাকে স্পষ্ট করে তোলে। ফলে গল্পগুলোকে ছক-বাঁধা ও কৃত্রিম বলে মনে হয়। এসব লেখকের ভেতর কেউ কেউ অবশ্যই শক্তিমান।যে-ভঙ্গি, বিষয়বস্তু এস্টাব্লিস্মেন্টের প্রিয় শ্যামল তাকে পরোয়া করেন না। এস্টাব্লিস্মেন্টের নির্দিষ্ট কিছু থিয়োরি থাকে। সেই থিয়োরীর মাপের সঙ্গে পোষমানা লেখক মানিয়ে চলতে চান। এ থিয়োরী কখনো রুগ্ন বিকৃত মানসিকতাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে তোলে, আবার কখনো দেশকালের অনুপযোগী তত্ব-কে প্রকাশ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। শ্যামল এসব থিয়োরী মানেন না। তাই নিজেকে চার দেয়ালের মাঝে আটকে রাখেন না তিনি।
বাঙলা গল্পের প্রধান ধারা একদিন গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পদ্মাপাড় থেকে বিভূতি-মানিক-তারাশঙ্করের হাটে ঘাটে তার সাবলীল পদসঞ্চার। সে-ধারাই নতুন স্বাদে ও বিন্যাসে শ্যামলের গল্পে ধরা দিয়েছে। উপকরণের জন্য তাঁকে বানিয়ে-তোলা মানসিক সমস্যার কাছে হাজির হতে হয়নি।
স্বাধীনতার আগে গ্রাম শহরে বিচ্ছেদ এখনকার মতো এমন প্রবল ছিল না। বেড়া ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু এপার-ওপার যাতায়াত খুব কঠিন হয়ে দেখা দেয়নি। এখন কলকাতার আধিপত্যে বাঙলা সাহিত্য থেকে গ্রাম প্রায় নির্বাসিত হতে চলেছে। গ্রাম জীবন নিয়ে গল্প-উপন্যাস লেখা হয়ত চলছে আজও, কিন্তু তার স্পন্দনে স্বাভাবিকতা কমেছে। অথচ গ্রামের রঙ এখনো বাঙলার মানচিত্রের অনেকটাই দখল করে আছে। এ গরিষ্ঠ জনম-লীকে শ্যামল অস্বীকার করেন নি। তিনি সরাসরি তার ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। এমন লেখকের পক্ষে এস্টাব্লিস্মেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকা কঠিন।
এখানে কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত করা হচ্ছে না যে গ্রাম-জীবন নিয়ে লিখলেই লেখা ভালো হবে। আসলে আমাদের শহরকেন্দ্রিক জীবন-বৃত্তের একটু বাইরেই বানিয়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় কোন অস্তিত্বই নেই। অথচ অসংখ্য ইচ্ছাশক্তি সেখানে ভালোমন্দের কাটাকুটি খেলে। এবং সব কিছুর কাটাকুটির পর হাতে থাকে মানুষ। এসব মানুষকে শ্যামল দেখেছেন নানাভাবে। কোনো অনুকম্পার চোখ দিয়ে নয়। গুরুমশায়ের ভঙ্গিতে শেখাতেও বসেন নি কিছু। অর্থনৈতিক কোনো শস্তা সমাধানেও পৌঁছোতে চান নি তিনি। যে-জবিনকে কেন্দ্রে রেখে মহাকাল অতি ধীরে পাশ ফেরে, শ্যামল নিস্পৃহ আবেগে তার আবর্তনকে ধরে রাখতে চেয়েছেন তাঁর লেখায়।
‘লক্ষণ তখনো দেখছিল, ছেচতলান নিচেই ঘন ঘাস হয়েছে। সবুজ আর বিনবিনে। সাদা ন্যাড়া উঠোনের লাগোয়া এই সবুজ জায়গাটুকুতে ঘরের চাল ধুয়ে নাগাড়ে বৃষ্টির জল এসে পড়ে। সেখানটায় মাথা দিয়ে সে শুয়ে আছে। চোখের পাশেই ঘাসের গোড়া। পরিস্কার দেকতে পাচ্ছিল লক্ষণ। সিধে সিধে সব ঘাস দাঁড়ানো। সবাই তার চোখের সমকক্ষ। সেই পরিমান লম্বা। ঘাসগুলো যে বাড়ছে তার আওয়াজও শুনতে পাচ্ছিল লক্ষণ।’ (লক্ষণ মিস্ত্রির জীবন ও সময়)
শুনতে পান শ্যামলও। প্রাকৃতিক শক্তির মতো অনিবার্য জীবনপ্রবাহের স্বরগ্রাম তাঁর কানে পৌঁছোয় অনায়াসে। তাই নিস্পৃহবাবে লিখতে পারেন, ‘যখন এখানে এভাবে থাকতেই হবে তখন আর পাম্পসু খুঁজে লাভ নেই বুঝে যেকানে ছিল টিক সেখানেই ক্ষীরোদ একটুও না নড়ে বসে গেল। কোথাও অন্ধকারের ছিটেফোঁটা নেই। বাদা ভর্তি জ্যোৎ¯œা। ডোঙ্গার চড়ে পোড়ো গায়েন ইচ্ছে করলেই ফিরতে পারে এখন।’ (রাখাল কড়াই)
এ নিস্পৃহতা কিন্তু একেবারেই লোকঠকানো। তাই দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়। অর্থাৎ ঠকে। শ্যামলের নিস্পৃহ নীলপর্দা সরিয়ে আগুনের গোলাগুলোকে চিনে নিতে সময় লাগে। অথচ একটু সরালেই দেখতে পাওয়া যাবে, দাক্ষী দুটি যুযুধান পুরুষকে বন্ধ দরজার বাইরে রেখে ‘পা’ গুটিয়ে অন্ধকার মেঝেয় ধামাটা খুঁজে বেড়াচ্ছে’ (দখল)। তার উন্মুখ প্রতীক্ষা সাপের সান্নিধ্য খুঁজছে।
শ্যামলের গল্পে সাপ ঘুরে ফিরে দেখা দেয়। এ মসৃণ সুন্দর ভয়ঙ্কর সরীসৃপটি নানা পাকে পাঠককে জড়িয়ে ধরতে চায়। কোন এক অতলস্পর্শী রহস্য জীবন অথবা মুত্যুর রূপ ধরে দূরে যায়, আমাদের অন্ধ নিয়তি ! সাপের ছিলায় ভাগ্যের তীর কোন্ দিকে ছুটে যায় ?
আর তার পাশেই থাকে ‘গত জন্মের রাস্তা’।
শৈশবকে কেন্দ্রে রেখে দুটি পৃথক জীবনবোধের ধনুকে গুনপরানো সহজ নয়। সাপের ছিরাও সেখানে হার মানে। কিংবা সাপের চিলা বলেই হয়ত। শহুরে মন। এমন জীবন অস্বীকার তো করবেই। নব-ভালোবাসার বৃত্তে না ফিরলেও বাঘা কিন্তু ঠিক ফিরে আসে। কুকুর কিনা !
শ্যামল ব্যঙ্গ করেন কম। করেন যখন, তখনো কাঠখোট্টা হতে পারেন না। নিপুণ শল্য চিকিৎসকের মতো তাঁর ছুরির ফলা কখন হৃদ্পি-ের গভীরে ঢুকে যায়, ঠাহর পাওয়া যায় না। অপারেশনের আগে অনুরাগের আরকে তিনি অ্যানাস্থাসিয়া সেরে নেন। তাই ‘গত জন্মের রাস্তা’য় নব’র চলে যাওয়া আর বাঘার ফিরে আসার মধ্যে কোনো চোখ বেঁধানো চমক থাকে না। প্রমীলাকে নিয়ে হাজরা যকন বাদা দিয়ে করো খরো চলে যায়, তখন ‘অন্য বছর এই সময় বাদায় এক হাঁটু জল থাকে। এখন প্রায় শুকনো। পৃথিবী তার নিজের সুখে মাঠ ঘাট ছাড়িয়ে ঠা-া খাচ্ছিল। চাঁদ তার পচন্দ মত জায়গা তেকে জ্যোৎ¯œা ঢালছিল। হাজরার পেছন পেছন প্রমীলা। সামনেই নবীনবাবুদের আবাদ। দুধারে শুঁটকো শুঁটকো ধান চারা। চরাচর জুড়ে ধামা-ওলাটানো কুয়াশায় ওরা মুছে গেল’। (অন্নপূর্ণা)
প্রমীলা যাবে হিগ্গাড়ির বাজারে। রাতের বেলা ব্যাপারিদের কাছে দেহের মজুরি খেটে পয়সা এনে উপুসী স্বামী সন্তানকে খাওয়াবে সে। হাজরা তার চলনদার। অথচ এ-হাজরাই সীতাকু-ে যাবে না পাছে চোর সম্বন্ধীর সান্নিধ্যে এসে সে-ও চোর বনে যায়। জীবনের গভীর থেকে উৎসারিত এ ব্যঙ্গ। প্রচলিত কোনো হাস্যরসের কাপে একে এঁটে দেওয়া শক্ত।
কত ধরণের মানুষ। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে গল্প আছে। প্রত্যেকটি গল্প আলাদা। উপলব্ধি আলাদা। এক সমতলে বাস করেও বিভিন্ন জীবন ধাপে ধাপে উঠে গেছে। নেমে গেছে। সেখানে কখনো দেখা দেয় বিপিন। কখনো গনেশ। এই সব মানুষ পরিচিত দুঃখসুখের রঙ মেখে অপরিচিত হয়ে দেখা দেয়।
আমাদের জামায় মোড়া ভদ্রতা থেকে মাত্র পনেরো মাইল দূরে এমন জীবন অজ¯্র ফলে আছে। সকালের পয়লা রেলগাড়ীতে তরিতরকারির সঙ্গে তার কিছু চালানও আসে কলকাতায়। ততক্ষণে অবশ্য তার রঙ যায় পাল্টে। প্যাকেটে গুঁড়ো মশলার কারি বানিয়ে তার টাটাকা স্বাদ পাওয়া তখন অসম্ভব। শ্যামল তাই সেই টাটকা স্বাদের কাছে আমাদের সোজা চালান দিতে চান। সরেজমিনে।
পথগুলো কাছাকাছি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দূরে দূরে চলে গেছে। কখনো কখনো একে অপরকে জড়িয়েও গেছে। সাপের মতন। সে-পথে শুধু হাজরা-প্রমীলা হাঁটে না। রিক্সা চালায় অমৃতও। অমৃত ভগবান দেখে বেড়ায়। ভগবান কোথায়? অমৃতের ভগবান কোনো গুহানিহিত তত্বে বাস করেন না। তার ভগবান প্রসারিত পৃথিবীতে, প্রকৃতির আলোছায়ায় বিছিয়ে থাকেন। চন্দনেশ^রের মাচানতলায় গিয়ে ‘অমৃত দেখল এখানে ভগবানের কোন শেষ নেই। যতই এগোয় ততই বেড়ে যায়। মনটা কিসে তরে যাচ্ছে। … বাতাসে কিসের সুবাস। … অমৃত একবার ফিরে তাকাল। পেছনেও সেই একই ছবি। হলুদ ফুল। গুঁড়ো গুঁড়ো পরাগ-মাখানো কেশরগুলি ফুরের লাল জন্মভূমি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভোরের বাতাসে দুলছে। মাচানের পর মাচান ফেলে এসেছে অমৃত। তার শেষে রিক্সাখানা কত ছোট দেখাচ্ছে। সিটে সাদাপানা একটা মানুষ বসে। ধুতি পাঞ্জাবি পরেছে। এখান থেকে কুচো-পাখির চেয়ে ছোট দেখাচ্ছে শ্যামলবাবুকে। মানুষটা বড় ভাল। তাঁর জন্যেই ওর আজ এখানে আসা হল’। (চন্দনেশ^রের মাচানতলায়)
সহজ সুন্দর সহাস্য ভগবান অমৃতকে দেখা দেন এমন আয়োজনহীন অবহেলায়। মন্ত্রের মতো অমোঘ তার আবেদন। অথচ অমৃতের শ্যামলবাবু কিন্তু যাতয়াতে ষোল মাইল বিনে ভাঢ়ায় ওই রিক্সায় চড়ে পটলের চাষীদের দাদান দিতে গেছেন।
এখানেই শ্যামলের জিৎ। তিনি ইচ্ছে করলেই দূরে বসে থাকতে পারেন। অকুস্থল থেকে তাঁকে হয়ত কুচো-পাখির থেকেও ছোট দেখায়। তাই বলে তিনি কখনো মিলিয়ে যান না। চলমান জীবনের দ্রুতমন্থর ছবি তাই তাঁর ফ্রেমে ধরা পড়ে অনায়াসে। প্রবহমান ¯্রােত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন বলেই তাঁর তট-স্থ দৃষ্টি এমন গভীরতায় পৌঁছে যেতে পারে।
‘এ জীবন কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়। মাত্র পনেরো মাইল। আমার জন্য এই পৃথিবীটুকু আলাদা করা ছিল। ইস্ জীবনের কতখানি ব্যয় করার পর তবে আমি এলাম। আগে যদি জানতাম সবাই একে একে খসে যাবে। শেষ অবধি ওই শিরীষ গাছের ছায়াটুকু এত আপন মনে হবে’। (কন্দর্প)
ঈশ^রের তাড়াহুড়ো নেই। একেকটি প্রাণ মাখানো পৃথিবী তৈরি করতে তিনি কাটিয়ে দিতে পারেন অনন্তকাল। তাকে ইচ্ছে দিয়ে মুড়ে দিতেও সময় লাগে অনেক।
শ্যমল সেই ইচ্ছেটুকু খুঁজে পেয়েছেন। তাই পৃথিবীর রহস্যের কাছে পায়ে হেঁটে যেতে তাঁর দ্বিধা নেই। আর এ জন্যেই তাঁর বিস্ময় কখনো শেষ হতে চায় না : ‘তুই কে দাক্ষী ? তুই আসলে কে?’
এ জিজ্ঞাসা সন্তোষ টাকির। হয়ত শ্যামলের। এবং আমাদেরও।৪
১. ঔপন্যাসিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়: আলোকিত মুখচ্ছবি: গোলাম মুরশিদ: অবসর, ফেব্রুয়ারি ২০১৭। পাতা- ১২২।
২. সন্দিপন চট্টোপধ্যায়ের ডায়েরি: অদ্রীশ বিশ^াস সম্পাদিত: প্রতিভাস, কলকাতা: পাতা-১৫৭
৩. সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি: সম্পাদনা- অদ্রীশ বিশ^াস: প্রতিভাস, কলকাতা: পাতা- ১৯২
৪. শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প (ভূমিকা): ড. বিষ্ণু বসু: শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পসংগ্রহ: তিন সঙ্গী, কলকাতা, এপ্রিল ১৯৮০। -

রোদ্দুর : আ হ মে দ রি য়া জ
রোদ্দুর
আ হ মে দ রি য়া জ
রোদ্দুর নেবেন গো, রোদ্দুর? খাঁটি রোদ্দুর লাগবে কারো? নির্ভেজাল রোদ্দুর।
ফেরিঅলার হাঁকডাকে চমকে ওঠলেন বুড়োবুড়িরা। খাঁটি রোদ্দুর! এখনকার ছেলেপুলেরা তো রোদ্দুরই চেনে না। চিনবেই বা কেমন করে? তাঁরা যখন সেই ছোট্টটি ছিলেন, তখনই রোদ্দুর ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। তারাই ঠিক মতো মনে করতে পারেন না রোদ্দুর কেমন ছিল। ক’দিন আগে এমনি এক ফেরিঅলা এসেছিল রোদ্দুর নিয়ে। আহা! টাইটানের বুড়োবুড়িরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সে রোদ্দুর কেনার জন্য।
দরদামও শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। অনেকে আবার কিনেও ফেলেছিলেন। ভাগ্যিস সেই বুড়োটা হঠাৎ কোত্থেকে এসে হাজির হয়েছিল। থুত্থুরে বুড়ো। বয়স যে তার কতো নিজেও জানে না। মহাশূন্যের দীর্ঘ ভ্রমণের ধাক্কা সামলিয়ে কেমন করে টাইটানে হাজির হয়েছিল, কেউ জানে না।
লাঠিতে ভর দিয়ে ঠক ঠক শব্দে রোদ্দুরঅলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন বুড়ো। থমথমে গলায় বললেন, দেখি খানিকটা রোদ্দুর।
ফেরিঅলা এক মুঠো রোদ্দুর দিলেন বুড়োর হাতে। নাকের কাছে নিয়ে মুঠোভরা রোদ্দুরের গন্ধ শুঁকলেন বুড়ো। অনেকক্ষণ ধরে। সবাই বুড়োর দিকে তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে।
গন্ধ শোঁকা শেষ করে রোদ্দুরের দিকে তাকালেন পিট পিটে চোখে। এই প্রথম সবাই বুড়োর চোখ দুটো দেখল। আধবোঁজা। বুড়োর গলা আগের চেয়েও থমথমে শোনাল, এই বুঝি তোমার খাঁটি রোদ্দুর?
ফেরিঅলার কথা শোনা গেল না। চুপটি করে আছে সে।
বুড়ো আবার বললেন, সব আলো রোদ্দুর হয় না। এটা রোদ্দুর নয়। আলো। শুধুই আলো। এক বিন্দু রোদ নেই এটায়। পারমাণবিক বিস্ফোরণের আলোকে রোদ্দুর বলে চালিয়ে দিতে চাইছ? খাঁটি রোদ্দুরে কখনো ঘ্রাণ থাকে না। কিন্তু এই রোদ্দুরে আছে। দ্যাখো, তোমরা শুকে দ্যাখো।
সবাই শুঁকলো। সত্যিই তো! রোদ্দুরটাতে অনেক ঘ্রাণ। রোদ্দুরে যে ঘ্রাণ হয় না, এটাও ওদের মনে ছিল না। থুত্থুরে বুড়োটা এতকিছু মনে রাখল কেমন করে?
আজও রোদ্দুরঅলার চারপাশে ভিড়। সেই থুত্থুরে বুড়োটাও আছেন। আজও রোদ্দুরের ঘ্রাণ শুঁকলেন সেদিনের মতো। আজও সেদিনের মতো আধবোঁজা চোখের সামনে নিয়ে ভালো মতো দেখলেন মুঠোভরা রোদ্দুরটাকে। সঙ্গে সঙ্গে বুড়োর চোখ দুটো পাঁপড়ি মেলে দিল। বড় বড় চোখে বুড়ো তাকিয়ে রইলেন রোদ্দুরের দিকে। তারপর কাঁপতে কাঁপতে বললেন, হুঁ। একেবারে খাঁটি রোদ্দুর। এক বিন্দু ভেজাল নেই।
ফেরিঅলার দিকে তাকিয়ে বললেন, কোথায় পেলে ভাই এমন খাঁটি রোদটুকু?
ফেরিঅলার মুখে রহস্যময় হাসি। আর যারা ভিড় করেছিল, তারা এবার হুমড়ি খেয়ে পড়ল রোদ কেনার জন্য। এবার বেঁকে বসল ফেরিঅলা, আমি রোদ বেচব না।
সে কি! অবাক হলো সবাই। রোদ বেচবে বলে ফেরি করল এতক্ষণ, আর এখন বলছে বেচবে না। মগের মুল্লুক নাকি? মগের মুল্লুকখানা তো সেই কবে পৃথিবীতেই রেখে এসেছে সবাই। তবে?
শুরু হয়ে গেল হইচইÑকেন বেচবে না, শুনি?
Ñএকটুখানি বেচো না ভাই? আমার নাতিটাকে দেখাবো। ও জীবনে রোদ দেখেনি।
Ñএমন মিঠেরোদ ছোটবেলাতেও দেখিনি। মিঠেরোদের সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকতাম। দেখার সুযোগ পাইনি।
Ñবললেই হলো বেচবে না? জোর করে কিনব।
হঠাৎ খেপে উঠতে শুরু করল টাইটানের মানুষরা। এমনকি যারা জীবনে রোদ দেখেনি, তারাও খেপতে শুরু করল। তখনই হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ল রোদঅলাÑপৃথিবীটা যখন রোদে রোদে ভরা ছিল, তখন কোথায় ছিলে সবাই? কী করেছিলে মনে নেই? এই বুড়োরা, তোমাদের বলছি, ছোট থাকতে তো খুব রোদ ভালোবাসতে। আর বড় হয়ে কী হয়ে গিয়েছিলে সবাই, মনে নেই? এতটুকু দয়া দেখালে না গাছেদের। ছোটগাছ-বড়গাছ কেটে সাফ করে ফেললে। বড় বড় দালান বানালে। রোদ্দুরদের কথা একটুও ভাবলে না। এখন রোদের জন্য হাহাকার করছ। কেন? সরে যাও সবাই। এক ফোঁটা রোদও আমি বেচব না কারো কাছে। চলে যাও।
মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল সবাই। এমনকি সেই থুত্থুড়ে বুড়োটা পর্যন্ত। হঠাৎ থুত্থুড়ে সেই বুড়োটার হাত টেনে ধরল ফেরিঅলা। বলল, আপনি যাবেন না দাদু। আমি সবটুকু রোদ আপনাকে দিয়ে যাবো।
সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ভরে ওঠল থুত্থুরে বুড়োর মুখ। অবাক হয়ে ফেরিঅলার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, সত্যি!
ফেরিঅলা বলল, সত্যি।
হঠাৎ থুত্থুরে বুড়োর মুখটা মলিন হয়ে গেল। একরাশ কালো মেঘ যেন জড়ো হয়েছে বুড়োর চোখে-মুখে। বুড়োর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জানতে চাইল ফেরিঅলা, দাদু খুশি হননি?
বুড়ো বললেন, হয়েছি।
ফেরিঅলা বলল, তবে মুখটা অমন মলিন কেন?
বুড়ো বললেন, কিন্তু আমি যে তোমার ওই রোদটুকু কিনতে পারব না দাদু। আমার তো অতো টাকা নেই। টাইটানে আসতে গিয়ে সব খরচ হয়ে গেছে। তবে ওই রোদটুকু আমার দরকার। ভীষণ দরকার।
ফেরিঅলা বলল, এই সামান্য রোদ্দুরের বিনিময়ে আপনাকে কিছু দিতে হবে না দাদু। আপনি নিলেই আমি খুশি হবো। রোদ্দুরের ব্যবসা করে অনেক কামিয়েছি। আর চাই না।
আবার রোদ্দুরঅলাকে ঘিরে ভিড়টা জমে ওঠল। সবাই অবাকÑকেন ওই থুত্থুড়ে বুড়োটাকে এমনি এমনি রোদটুকু দিয়ে দিতে চাইছে?
কে যেন জানতে চাইল, কেন? রোদ দিয়ে কী করবে বুড়ো?
রোদ্দুরঅলা বলল, পৃথিবীতে যারা গাছ ভালোবাসতেন, এ বুড়ো তাদের একজন। এ বুড়োর মতো মানুষ না থাকলে পৃথিবীর বাকি রোদটুকুও থাকত না। তারই সামান্য প্রতিদান।
রোদ্দুর পেয়েই বুড়োর খুশি কে দেখে? সবার চোখের সামনে গায়ের ওপর মুড়ে রাখা চাদরের তলা থেকে একটা ছোট্ট চারা গাছ বের করল বুড়ো। চারাগাছটাকে মুখের সামনে তুলে এনে বলল, এবার তুই বড় হবি। রোদ ছাড়া তো এতদিন বড় হতে পারিসনি। এবার পারবি।
চারাগাছ দেখে সবার চোখ উঠে গেল কপালে। নতুন এ গ্রহটায় কেমন করে চারা গাছ নিয়ে এসেছে বুড়োটা?
সবার কাছে সেটাই একটা রহস -
নেই
রুমান হাফিজ
নদীর ঘাটে নাও নেই
সবুজ শ্যামল গাঁও নেই।
ফলফলাদির গাছ নেই
খালবিলেতে মাছ নেই।শস্য ভরা মাঠ নেই
জমজমাট আর হাট নেই।
রাখাল বাঁশির সুর নেই
পাখির গানে ভোর নেই।আম কুড়ানোর দিন নেই
কিচ্ছা বলা জিন নেই।
পিঠা পুলির ধুম নেই
নেই সাথে চাষ জুম নেই।ঢেউ ভরা আর নদ নেই
গ্রাম্য মোড়ল পদ নেই।
কানামাছির খেল নেই
শর্ষে ক্ষেতের তেল নেই।ছন-চালের ঐ ঘর নেই
ধূ-ধূ বিশাল চর নেই।ছয় ঋতুর আজ দেশ নেই
‘নেই সবই’ তার শেষ নেই। -
চালায় গুলি
সিরাজ উদ্দিন শিরুল
রাত গভীরে সবাই ঘুমে
হায়না দানব আসে
বুকের উপর চালায় গুলি
দাঁত কেলিয়ে হাসে।দানব ছিলো মানব তো নয়
রক্ত খেলায় মাতে
হায়নাদেরই দোসর ছিলো
সব রাজাকার সাথে।লাশের উপর লাশের সারি
শহর নগর গাঁয়ে
জাগলো মানুষ মুক্তিকামী
জাগিয়ে দিলো মায়ে।ঘুমের মানুষ জাগলে পরে
ক্যামনে দাবায় রাখে
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটলো সবাই
হাজার হাজার লাখে।বীর বাঙালি উঠলো জেগে
হায়নারা সব পালায়
দু’হাত তুলে কান ধরেছে
পিন্ডি লাহোর হালায়।মারের উপর মারতে থাকে
শত্রু ঘাঁটি উড়ায়
মুক্তিসেনার সাহস বলেই
বীরের খেতাব কুঁড়ায়। -

এসো পরিচিত হই রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’র সাথে
রোকনুজ্জামান দাদাভাই সাংবাদিক, শিশুসংগঠক। তার জন্ম ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে, নানার বাড়িতে। তার নানা রওশন আলী চৌধুরী আবার ছিলেন ‘কোহিনূর’ পত্রিকার সম্পাদক। তার বাবার নাম মৌলভী মোখাইরউদ্দীন খান, মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাংশায়, নানাবাড়িতে। শৈশবকালে সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ‘দাদাভাই’ ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন।
১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করে ‘দাদাভাই’ ছদ্মনামে শিশুদের পাতা ‘কচি-কাঁচার আসর’ সম্পাদনা শুরু করেন এবং আমৃত্যুর এ পত্রিকায় জড়িত ছিলেন। আর এ থেকেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন।
তার প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থ হচ্ছে হাট্টিমাটিম (১৯৬২), খোকন খোকন ডাক পাড়ি, আজব হলেও গুজব নয় প্রভৃতি। তার সম্পাদিত ঝিকিমিকি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিশুসংকলন। এসব রচনার মাধ্যমে তিনি কোমলমতি শিশুদের মনে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করেন।
রোকনুজ্জামানের অপর একটি বড় অবদান ‘কচি-কাঁচার মেলা’ (১৯৫৬) নামে একটি শিশুসংগঠন প্রতিষ্ঠা। তিনি সৃজনশীল ও সাংগঠনিক কর্মের পুরস্কারস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৪), একুশে পদক (১৯৯৮), স্বাধীনতা পদক (১৯৯৯), জসিমউদ্দীন স্বর্ণপদক এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টির পল হ্যারিস ফেলো সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর, মারা যান সবার প্রিয় দাদাভাই। তাকে পরদিন বিকালে মেলা ভবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে সমাহিত করা হয়।