শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমাদের বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিভিত্তিক। এ কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি সময় খোলা রাখতে হচ্ছে। ফলে ছুটি ঠিক রাখা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
রবিবার (২ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সারাদেশের মাদরাসায় আয়োজিত বইপড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, মেধাবৃত্তি প্রদান এবং ফাজিল ও কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
রমজান মাসের ছুটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি রমজান মাসে কোরআন শিক্ষা নেন অনেকে। অনেকে কোরআনের হাফেজ, তারা এ মাসে বেশি বেশি তেলাওয়াত করেন, নামাজ পড়ান। এজন্য ছুটি চান। আগামী রমজানের আগেই আমরা এটা নিয়ে একটা প্রস্তুতি নেবো। রমজানে যেন কোরআন শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটা আমাদের মাথায় রয়েছে।’
আরবি ভাষায় যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছেন আরবি ভাষায় অনেক দক্ষ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের দক্ষ হতে হবে। আমরা কোরআন প্রতিযোগিতা অবশ্যই করবো, আমি নিজেও শৈশবে কেরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। আমার বাবা আমাকে মাখরাজ শিখিয়েছিলেন এবং কীভাবে উপস্থাপনা করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আরবিতে একটুও কথা বলতে পারবো না। এত সুন্দর করে মাখরাজ শেখার পর ভাষাটা রপ্ত করতে পারিনি।’
মাদরাসা শিক্ষকদের উদ্দেশে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের কাছে একটা আবেদন, আমরা যেন শিক্ষার্থীদের দক্ষতানির্ভর করতে পারি। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় যেন থাকে। আমরা যা-ই পড়াচ্ছি, সেটা হোক ইংরেজি কিংবা আরবি, যে ভাষাটা শিখলো, তা দিয়ে শিক্ষার্থী যেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে। অমুসলিম দেশেও কিন্তু আরবি ভাষা শেখানো হচ্ছে। সেটা আমাদের খেয়াল করতে হবে। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার প্রতিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে উপস্থিত বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, যারা অবসর নিয়েছেন, তাদের অনেকে দ্বীনি শিক্ষার জন্য কাজ করছেন। যার যার অবস্থান থেকে আমাদের দ্বীনি শিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে, আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সারাদেশ থেকে আসা মাদরাসা শিক্ষকরা অংশ নেন।




ঝড়ে কম বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় দুইলাখ ২১ হাজার ১৭৬ জন মানুষ। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলে পল্লীর শতাধিক পরিবার। একই সাথে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলাতে অসংখ্য গাছপালার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন ৬৮০ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ রয়েছে। যা ষাটের দশকে নির্মিত। এর মধ্যে উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির ১০টি পয়েন্টে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। যার মধ্যে উক্ত দুই উপজেলায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাধ অতিঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব ঝুকিপূর্ণ বেঁড়িবাধের কয়েকটি পয়েন্টের উপচে পড়া পানিতে ভেসে গেছে ২০০ হেক্টর জমির মৎস্য ঘের ও ৬০৬ হেক্টর ফসলি জমি। এছাড়া কয়েক’শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঝুকিপূর্ণ বেঁড়িবাঁধ গুলোতে জিও ব্যাগ ও বালি দিয়ে উপচে পড়া পানির প্রবাহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে ঘুর্ণিঝড় আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, ২৬ ও ২৭ মে তাদের কাছে সামান্য শুকনো খাবার পর্যন্ত পৌঁছায়নি।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন কক্ষের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার ৪৩ টি ইউনিয়নে কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১১৯২টি ঘরবাড়ি ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। এছাড়া ৬০৬ হেক্টর ফসলি জমির ও ২০০ হেক্টর জমির মাছের ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট বেড়িবাঁধ, শ্রীকলস, তুয়ারডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প, প্রতাপনগরের চাকলা বেড়িবাঁধ সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। চাকলায় ২০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২৭ টন চাল ও ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।