ধরুন মেট্রোয় উঠেছেন। যাত্রাপথ মাত্র ১৫ মিনিটের। ভাবলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় নজর রাখতে রাখতেই সেই সময় কাটিয়ে নেবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। কারণ, বাধ সাধল ইন্টারনেট। তাতেই বিরক্ত হয়ে যাই আমরা। তবে বিরক্ত হলেই তো আর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। বরং খুঁজতে হবে বিরক্তি কাটানোর অন্য রাস্তা। তেমনই লকডাউনের আবহে অনলাইন ক্লাস করাতে গিয়ে ইন্টারনেটের পরিষেবা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন এক শিক্ষক। ঠিকঠাক ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে বাধ্য হয়ে নিম গাছের ডালে চড়েই কাজ সারতে হচ্ছে তাঁকে।
সারাদিন বই-খাতায় মুখ গুঁজে কেটে যেত সময়। সঙ্গে ছিল ছাত্রছাত্রীদের কৌতূহল মেটানো। তারপর আর বিশেষ সময় পেতেন না পেশায় শিক্ষক সুব্রত পতি। কলকাতার দুটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। সে কারণে কলকাতাতেই থাকতেন তিনি। তবে বর্তমানে বাঁকুড়ার ইন্দপুরের আহন্দায় গ্রামের বাড়িতেই দিন কাটছে তাঁর। মোবাইলে কখনও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। তো কখনও পাওয়া যায় না। সে কারণে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ঘেঁটে সময় নষ্টের সুযোগ বিশেষ পাচ্ছেন না। ইতিমধ্য জানতে পারেন তাঁকে অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে। প্রথম কয়েকদিন অনলাইন ক্লাস নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, ইন্টারনেট তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ছাত্রদের নিয়ে ক্লাস করাবেন সেই চিন্তায় পাগলপারা সুব্রত পতি। বাড়ির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু বাড়ির যেকোনও জায়গাতেই নেটওয়ার্কের সেই একই অবস্থা। ইন্টারনেট পেতে পেতেই প্রায় শেষ হয়ে যায় ক্লাস নেওয়ার সময়।
এরপর একদিন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের এক নিমগাছে উঠে পড়েন। দেখেন সেখান থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা মিলছে একেবারে ঠিকঠাক। তাই বাধ্য হয়ে ওই নিমগাছে উঠেই ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষক। কাঠ, গাছের ডাল দিয়ে গাছেই বসার জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। যাকে চলতি কথায় বলে মাচা। গ্রামের ছেলে সমস্যার দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয়রা। মাচা বাঁধতে সাহায্যও করে দেন তাঁরা। যাতে কোনওভাবে নিচে না পড়ে যান তাই গাছের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছেন নিজেকে। লাঠির সাহায্যে তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার।
সুব্রত বলেন, “আমি কলকাতাতেই থাকতাম। তবে বর্তমানে গ্রামে আছি। কিন্তু কিছুতেই ইন্টারনেট পাচ্ছি না এখানে। তবে আমি চাই না কোনওভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ব্যাহত হোক। তাই নিমগাছ থেকে আমি নামবো না। ওখানে বসেই ওদের পড়াব। রোদে কষ্ট হয়। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমি তা সহ্য করে নিতেই পারি।” সুব্রতর পড়ুয়া মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। শিক্ষকের এমন কাণ্ড দেখে অবাক তারা। সুব্রতর দায়বদ্ধতা মুগ্ধ করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকেও। এমন কাণ্ড যে কেউ করতে পারে, তা যেন আশাই করেননি তাঁরা। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সেই প্রবাদ বাক্যকেই বাস্তব রূপ দিয়েছেন সুব্রত।
সুত্র: সংবাদ প্রতিদিন
Leave a Reply